বিএনপি-জামাতের পাতা ফাঁদে পা দিলো আওয়ামীলীগ !!!
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরনে বিএনপি-জামাত অত্যন্ত কূটকৌশলে
ইসলাম ধর্ম ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে রাজনীতির
সমরেশ বৈদ্য, চট্টগ্রাম থেকে:
বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১ সালের শেষ দিকে ক্ষমতায় আসার পর অত্যন্ত ক’টকৌশলের মাধ্যমে সারা দেশেই তারা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে দেয়।এক্ষেত্রে তারা ইসলাম ধর্ম আর মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর সেনানীদের হীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করেনি।চট্টগ্রামেই বিএনপি-জামাতের এই হীন চক্্রান্তের অন্তত: দুটি জলজ্যন্ত নমুনা দেখছে চট্টগ্রামসহ দেশবাসী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠকারী আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নানের নামে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিব বিমান বন্দরের নামও তারা পরিবর্তন করে ‘শাহ আমানত বিমান বন্দর’ নামকরন করে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ধর্মপ্রান মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এই পীর-আউলিয়া হযরত শাহ আমানতের নাম পরিবর্তন করতে গেলেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়বে যে কেউ। তাই অত্যন্ত ক’টকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বিএনপি-জামাত জোট সরকার। বাংলাদেশের একটু সাধারন সচেতন জনগনমাত্রেই এই বিষয়টি বুঝতে পারছেন।
আবার এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিনকে ব্যবহার করেছে বিএনপি-জামাত জোট সরকার । যাতে করে এনিয়েও অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করা যায়। আর বিএনপি-জামাতের পাতা ফাঁদেই পা দিলো বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার এমনই মনে করছেন অনেকে।প্রসঙ্গত: গত ১ জুলাই বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামের নাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ,স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শ্রম,স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর নামেই পুনর্বহাল করা হয়।জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত সাবেক এই মন্ত্রীর ৩৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সেদিন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামের পরিবর্তে তাঁর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল বলে আওয়াশীলীগ নেতা সহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের। এই নতুন নামফলক উন্মোচন করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান।
কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৌশলে জহুর আহমদ চৌধুরীরনাম ফেলে দিয়ে নাম পরিবর্তন করে ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম’ নামকরণ করে।
এর আগে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকায় প্রায় ৩০ একর জায়গার উপর নির্মিত এই বিভাগীয় স্টেডিয়ামের নাম জহুর আহমদ চৌধুরীর নামেই করা হয়েছিল সে সময় ২০০০ সালের ১৭ নভেম্বর স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর এবং নির্মান কাজ শেষে ২০০১ সালের ১৭ জুন নামকরন করা হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম’।
কিন্তু ২০০১ সালের শেষদিকে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এই নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম নামকরন করে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ৫ বছর এবং গত ২ বছর মোট ৭ বছর স্টেডিয়ামটি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম নামেই পরিচিতি পায়। সম্প্রতি বর্তমান সরকার দেশের ১২ টি ক্রীড়া স্থাপনাকে পূর্বের নামে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে গত ২৫ জুন এক প্রঞ্জাপনের মাধ্যমে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ীই আজ চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামের নাম বদলে আগের নামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা।
তবে সচেতন দেশবাসীর অনেকেই মনে করছেন যে, আওয়ামীলীগের মত মত ৬০ বছরের একটি অভিঞ্জ পোড়খাওয়া রাজনৈতিক দল কেন বিএনপি’র পাতা ফাঁদে পা দিতে গেলো । এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একটু চিন্তা করলেই পারতেন ণীতিনির্ধারকরা। বিএনপি-জামাত যে অগনতান্ত্রিক- অশালীন-অসাংবিধানিক কাজ করতে পারে তা বাংলাদেশের জনগন জানে। আর তাই বিগত সংসদ নির্বাচনে সাধারন জনগন তাদের এতদিনকার ক্ষোভ ঢেলে দিয়েছে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে। বিপুল ভোটে জয়ী করেছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সঠিক পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
এদিকে চট্টগ্রামে ‘শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন বিভাগীয় স্টেডিয়াম’-এর নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরীর নামে নামকরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেছেন, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করে আবার তা প্রত্যাহারের মাধ্যমে তার মহান কীর্তিকেই অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। শুক্রবার( ৩ জুলাই ২০০৯ ইং) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের দু’মেয়ে নূরজাহান আমিন ও রিজিয়া আমিন এই অভিযোগ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তারা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি নয়, তিনি সমগ্র জাতির গৌরব। একজন জাতীয় বীরের নাম এভাবে মুছে ফেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
রুহুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা দাবী করেন এই স্টেডিয়ামের নামটি পূর্বে যে জহুর আহমদ চৌধুরীর নামে ছিল তা তারা জানতেন না। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী আমাদের সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। তার নামে দেশে আরও অনেক কিছু হতে পারে ; যে সুযোগ এখনও রয়েছে। যাদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ, এই ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছে তাদেরই একজন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামটি মুছে ফেলার এমন কি প্রয়োজন ছিল–এই প্রশ্ন তোলেন তারা।email— [email protected]
# ০৩.০৭.০৯ইং
*সমরেশ বৈদ্য– সংবাদকর্মী, লেখক
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
জনাব সমরেশ বৈদ্য,
প্রথমেই ধন্যবাদ বিষয়টির অবতরণার জন্যে। আসলে বিষয়টি কিছুই নয়, এ হচ্ছে জেদ এর প্রকাশ। ক্ষমতা প্রদর্শন! দেখে নেবার ব্যপার। বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন এবং জনাব জহুর আহামদ চৌধুরী উভয়ই এদেশের কৃতী সন্তান, আমাদের জাতীয় গৌরব, আমাদের অহংকারেরই নামান্তর। কিন্তু কিছু ঘৃন্য রাজনীতিক আর কিছু সুবিধা ভোগী আমলা মিলে এসব কার্যক্রমে নিরন্তর যুক্ত থেকে গাছেরটাও খায় তলেরটাও কুড়ায়। এরা এদের এসব কার্যক্রম দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যের অনিষ্ট সাধন করে। এরা নানান কৌশলে আমাদের এসব অহংকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, সাহিত্য, গান, কবিতা, ক্রীড়া, স্হাপনা সহ সব কিছুরই রাজনীতি করণ করে। চরিত্রগত ভাবেতো আওয়ামিলীগ আর বি. এন. পি. এই দুদলের সাম্প্রতিক রাজনিতিক, এদের মাঝে পার্থক্য নেই, কাজেই যা দেখছেন, তাতে অনেকে আশ্চর্য হলেও আমি হইনা। এদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী আর কিইবা প্রত্যাশার আছে? কাজেই যা প্রত্যাশিত ছিলো তাইতো হয়েছে! তবে, আপনার দেয় সংবাদের ভিত্তিতে, এটুকুও সংযোজিত করা জরুরী মনে করছি। সেটা হলো, বীরশ্রেষ্ঠ রূহুল আমিনের দুই কণ্যা স্টেডিয়ামটির পূর্বতন নামটি জানতেননা এবং এতথ্য নাজেনেই সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আমার কাছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। যদি তাঁরা ত্রিশোর্ধ বয়েসী হন, তবে নাজেনে সংবাদ সম্মেলন করাটা ঠিক হয়নি। তাঁরা যদি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে জাতীয় সম্পদ (অতি অবশ্যই জাতীয় সম্পদ এবং জাতির অহংকার) মনেই করবেন তাহলে নীরব থাকাটাই বাঞ্ছনীয় ছিল। এব্যাপারে পরিবারের বাইরে থেকে আমরা কথা বলবো, এটিই হতো সুন্দর। আর, কোন গনতান্ত্রিক সরকার যখন কোন সিদ্ধান্ত নেন, এবং যদি তা তেমন বিতর্কিত কোন বিষয় না হয়, পরবর্তী গনতান্ত্রিক সরকারের উচিৎ তার ধারাবাহিকতা ধরেরাখা। এতে করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং সম্ভ্রম দুইই বাঁচে। যদি কেউ তা আমলে না নেয়, অথবা অনুরূপ প্রবনতা দেখায়, তবে জনগনের কোন মোক্ষম সময়ে তাদের নাক কেটে, কান কেটে, মাথা ন্যড়া করে ঘোল ঢেলে তা শেখানো উচিৎ। বিগত বি. এন. পি. সরকার জনাব জহুর অহমদ চৌধুরীর নামটি বাদ দিয়েছিলো নিছক তিনি আওয়ামিলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে। এবং সম্ভবতঃ আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতায়। জনাব চৌধুরীর কীর্তি এবং মননকে স্বীকার করতে চায়নি। কাজেই যা ঘটেছে এর চেয়ে ভালো আর কিইবা প্রত্যাশিত ছিলো?