[মিশরে গন আন্দোলন নিয়ে ফাহিম রেজা একটি ভাল এবং সময়োপযোগী পোষ্ট দিয়েছিলেন। ফাহিম রেজার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্বগোক্তি ছিল –“মিশরের ভবিষ্যত এখন কোন দিকে যাচ্ছে? বলা মুশকিল।” আমি ভেবে ছিলাম আরও কিছু পোষ্ট হবে বিষয়টা নিয়ে। সম্ভবত বই মেলা এবং ডারউইন দিবস কর্মসূচীর চাপে তা হয়নি। বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই ক্ষুদ্র পোষ্টিংটির অবতারণা।]
মধ্যপ্রাচ্যে গন্ডগোল – গন্ডগোল? মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে তাকে গন্ডগোল নামে অভিহিত করা মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছাড়াই মিশরের গনআন্দোলন আপাতত শেষ হয়েছে প্রশংসনীয় ভাবে। । “আপাতত” শব্দটি ব্যবহার করার উত্তর ফাহিম রেজা রেখে গেছেন – –“মিশরের ভবিষ্যত এখন কোন দিকে যাচ্ছে? বলা মুশকিল।”
মিশরে রাজনীতির খেলা এবং পটপরিবর্তনের পালা সবে শুরু এটা অনুমান করা যায়। এসব জটিল বিষয় বাদ দিয়েও অন্য আলোচনা করা যায়। মিশরের মানুষ পুব আকাশে রক্তিম সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করেছেন। ইতিহাসে এই প্রথম বারের সারা মধ্যপ্রাচ্য যা লক্ষ্য করছে যার নাম – জন্মগত মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, নিজের ইচ্ছে প্রকাশের ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় কাজে সবার অংশ গ্রহণের অধিকার।
মধ্যপ্রাচ্য ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্র। রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম স্বয়ং আল্লাহ কোরাণ মারফত ঠিক করে দিয়েছেন। গনতন্ত্র? সে তো মানুষের তৈরী আইন। আজ এটা, কাল ওটা। নিত্য বদলায়। নিজের হাতে সৃষ্ট মানুষ স্বয়ং আল্লাহর চাইতে ভাল কিছু ভাববেই বা কীভাবে? আল্লাহর কোরাণের উপর প্রতিষ্ঠিত শরীয়া আইন। শরীয়া আইনের সাথে গনতান্ত্রিক আইনের তুলনা? স্বয়ং হযরত মুহম্মদ থেকে শুরু করে ইসলামী রাষ্ট্র আল্লাহর আইনেই চলে আসছে। ইসলামী বিশ্বে আলেম-বাদশাহগন সেই নিয়মেই দেশ চালিয়েছেন। ব্যক্তি এবং পরিবার রাষ্ট্রের একচ্ছত্র মালিকানা ভোগ করেছেন। নারী গনের স্থান পুরুষগনের নীচে। দুই নারী সমান এক নর। কেউ কি ভেবেছ মধ্যপ্রাচ্যের সেই নারীগন কোন একদিন আন্দোলনে রাস্তায় নামবে?
মনে হচ্ছে মিশরের গন আন্দোলন শরীয়া শাসন অবসানের প্রথম সূর্যোদয়।
আজ একই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে – ইয়েমেন, লিবিয়া, বাহরাইন, ইরান, মরক্কো, তিউনিসিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া। এই আন্দোলন আর থামবে না। মানুষ স্বাধিকারের স্বাদ পেয়ে গেছে। মুসলিম নারীরা বোরখা পড়েই, চোখে কালো চশমা লাগিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তাদের মুখে স্বাধীনতার হাসি, হৃদয়ে পুলকের শিহরণ, শরীরে তৃপ্তির নাচন।
দিন বদলাচ্ছে। নতুন নতুন টেকনোলোজি পৃথিবীটাকে ছোট করে ফেলছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, এক সৌরজগত থেকে আর এক সৌর জগতে। যে যুগের মানুষ সৃষ্টিকর্তা এবং ধর্ম সৃষ্টি করেছিলেন তারা সমতল পৃথিবীতে বাস করতেন। তাদের কল্পনায় পৃথিবীর বয়স দশ হাজার বছরের বেশী মনে হয়নি। আর আজ মানুষ চৌদ্দ বিলিয়ন বছর আগে শুধু পৃথিবী নয়, মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কাদা মাটি থেকে রাতারাতি মানুষ তৈরী হয়নি। বিবর্তনের পথ ধরেই জীবজগতের সৃষ্টি। সেই মানুষ কীভাবে দেড় দুই হাজার বছরের মর্চে ধরা পুরাতন ধর্মীয় আইন মেনে চলবে?
শরীয়া আইন আর মানুষের গনতান্ত্রিক আইনের সঙ্ঘাত শুরু হল স্বগৃহে। ঘাত-প্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত চলবে। মানুষ তার নিজতন্ত্র গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেই।
২০ ফেব্রুয়ারী ২০১১
টেক্সাস।
@রৌরব,
ঠিক এই দেখাটা নিয়ে আমার দ্বিমত আছে। ইসলামকে ভাঙ্গার জন্যে এই দেখাটাকে ভাঙ্গাটা জরুরি। আমার দেখাটায় রাজনৈতিক এলিমেন্টও থাকতে পারে। তবে, চেষ্টা করছি আমরা যে ইসলাম বলতে একটা ভরকেন্দ্রবিশিষ্ট ও তার চারপাশে সন্নিবিষ্ট একটা বিশ্বাসকে কল্পনা করি, সেই দেখাটাকে মৌলিকভাবে ও যৌক্তিকভাবে দুর্বল করার। যখন আমরা ইসলামকে এভাবে আটকে ফেলি, তখন এর বিপরীতে বলা যেকোন কথাই আমাদের বিপক্ষেই কাজ করে।
এখানে মূলত আমি ওই আর্গুমেন্টের বিপরীতে কথাগুলো বলছিলাম, যেটা বলে যে ইসলাম মানেই কোরানের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস। কিন্তু সেখানে আবার ইসলামকে ডিফাইন করা হয় যারা স্বঘোষিত মুসলমান তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিশ্বাস হিসাবে। কিন্তু খেয়াল করলাম, “ইসলাম মানেই কোরানের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস” এমনটা আপনি বলেন নি। তবে ‘গোড়ার কুযুক্তিটা একবার গিলে ফেল’ার কথা বলেছেন। আমি ধরেছি যে আপনি মিন করছেন, ইসলামের গোঁড়ার কিছু ডিফাইন্ড ব্যাপার বিদ্যমান আছে এমন উক্তি দিচ্ছেন। আমার কথা হচ্ছে সেরকম কিছু নাই। কিছু থাকার অর্থ হল সেটা ব্যাক্তিনিরপেক্ষভাবে বিদ্যমান। কিন্তু পুরোটাই ব্যাক্তির তৈরি, ফলে ইসলামকে একটা ব্যাক্তিনিরপেক্ষ বস্তু হিসেবে দেখা, কিন্তু সেটাকে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠের বিশ্বাস দিয়ে ডিফাইন করা, সেটাতে যে তালগোল পাকছে, সেটার সমাধানে আমরা যদি প্রতিটি বিষয়ের পেছনে মানুষগুলোকে দেখি বা “ইসলাম মানে অমুক, ইসলাম মানে তমুক”, এই প্রকারের বয়ান পরিহার করি, তাহলে বোঝা সুবিধা হয় যে মুসলমানের বিশ্বাস কুযুক্তিতে ভরা বলা গেলেও এই বিশ্বাসের একটা গোঁড়ার বা সলিড মূলের অস্তিত্ব আছে, সেটা আর বলা যাচ্ছে না।
আর সহি হাদিসের অস্তিত্বে বিশ্বাস আমার মনে হয় বিশ্বাসের সংখ্যাকে এক দিয়ে বাড়ালেও এটা একটা প্রকাণ্ড আকারের বিশ্বাস। পরিমাণে কোরানের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাসের চেয়ে অঢেল বেশি। বিশ্বাস হিসেবেও এটা প্রায় পুরোপুরিই ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতো বড় বিশ্বাস যোগ করাটা যে মোল্লাদের দুর্বলতা, সেটা আমরা আনক্রিটিকালি বেশ এড়িয়ে যাই মনে হয়। ফলে, যেটা বললেন, মডারেটরা হাদিসে বিশ্বাস না আনলে অবশ্যই। বাহ্বা পেত।
তবে, এর মাঝামাঝিও একটা রিজনেবল অবস্থা বিদ্যমান থাকতে পারে। হাদিস তো আছে। সেগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন। ফলে মডারেট চাইলে হাদিস উল্লেখ করতে পারে বিশেষ কিছুর সম্ভাব্য বোধনের জন্যে। কিন্তু কোনো হাদিসের বস্তুগত প্রয়োগের ব্যাপারে সে যদি সতর্ক হয় সহিত্বের ব্যাপারে নি:সন্দেহ না হতে পারার কারণে, সেই ব্যাপারটা বোধনের কাজে হাদিসের আনয়নের সাথে যৌক্তিকভাবে সাংঘর্ষিক ঠিক বলা যাচ্ছে না। বুঝতেই পারছেন, এখানে আমরা যতটা ভাবি, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রকারের বিভিন্ন অবস্থান নেয়া রিজনিংয়ের অস্তিত্ব সম্ভব।
একেবারেই জানি না ব্যাপারটা। আমি এমনিতে একটা জীবনে মডারেট আর মোল্লা উভয় গোছের সাথে তর্কবিতর্ক করেছি। কোনপক্ষকে গুণগভাবে বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক সুপিরিয়র মনে হয় নি। দুদলেরই মূল বৈশিষ্ট্যে দেখেছি অঢেল আকারের বিশ্বাস আর কুযুক্তি (মূলত সার্কুলার)।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক চিন্তা আছে আমার। একটা হল মডারেটকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উন্নত করা। তার রিজনিংকে শক্তিশালী করা। এটার সমস্যা হল, আমি অবিশ্বাসী। অবিশ্বাসী তার অবিশ্বাস ঘোষণা দিয়ে আবার বিশ্বাসীর স্তরে নেমে এসে বিশ্বাসের বিষয় আলোচনা করছে, এমনটা বিরল চর্চা। এতে বিশ্বাসীরা তাকে অবিশ্বাস করে, উশখুশ করে। আর অবিশ্বাসীরা তাকে দুই নম্বরী বলে। কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও আনরিজনেবল লাগে না।
আরেকটা দিক হল, রিজনিংগুলো যেহেতু জঞ্জালের (বিশ্বাস) একটা বিশেষ স্তরে দাঁড়িয়ে শুরু, এটা নিয়ে কাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য। মূলত জানা থাকে না যে রিজনিংয়ের এন্ডটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। উদ্দেশ্যের বিপরীতেও ফল আসতে পারে। ফলে সেটাকে অ্যাকোমডেট করার জন্যে বিশ্বাসের পরিমাণকে অ্যাডজাস্ট করা যেতে পারে। সালাফিদের বিশ্বাস আর রিজনিংয়ের কম্বিনেশানটা যেমন সমস্যাজনক। বিশ্বাস আর রিজনিংয়ের সঠিক কম্বিনেশান বের করা যেতে পারে। মানে মডারেটের মডারেট বিশ্বাসগুলোকে রিজনিং ছাড়াই মর্যাদা দেবার চর্চা করা যায়। মূলে যেহেতু অন্ধবিশ্বাস আছেই, ‘অমুকটা সহি হাদিস’ এই অন্ধবিশ্বাস আর ‘জানি না কেমনে কিন্তু আল্লা মানব হত্যা সহ্য করেন না’ এই অন্ধবিশ্বাসের মধ্যে আমি গুণগত পার্থক্য করতে চাই না। আছে বলেও মনে করি না। দু’টাই প্লেইন অন্ধবিশ্বাস। কেউ বেশি খাটো না এখানে। মানে মডারেট যদি ব্যাক্তিস্বাধীনতাকে তার অঘোষিত অন্ধঈমানের অঙ্গ বানাতে পারে, সেটাকে ইসলামের দৃষ্টিতে অমূলক দেখানোর চেষ্টাটা আমার কাছে একটা আকাজ মনে হয়। প্রথমত, এ কারণে যে রাজনৈতিকভাবে উদারপন্থায় তার সাথে আমার মিলছে। আমাদের উদারপন্থাটাও এক ধরনের বিশ্বাসভিত্তিকই বলা যায়, বা মানুষের ঐকমত্যে গড়ে ওঠা, কিছু রিজনিং এলিমেন্টও আছে। আর বিশ্বাসীরটা হল তার নিজস্ব অন্ধবিশ্বাসের ফ্রেইমওয়ার্কে গড়ে ওঠা। সেটার পেছনে সে অতিরিক্ত বিশ্বাস – ঈশ্বরের অস্তিত্ব – এর প্রয়োজন অনুভব করে দেখে সেটা ভেঙ্গে রাজনৈতিকভাবে মনে করি না প্রয়োজনীয়। আর দ্বিতীয়ত, ‘ইসলামে আসলে অমুকটা আছে’ জাতীয় যে কথাগুলো অবিশ্বাসীরা মোল্লাদের হয়ে মডারেটদের বলে দেয়, সে ধরনের আর্গুমেন্টের যে ভিত্তিহীনতা সেটা তো উপরে শুরুতেই ব্যাখ্যা করেছি।
[১] মিশরে যে সংবিধান কমিটি গঠিত হয়েছে-তাতে কোন নারী নেই। নেই কোন বুদ্ধিজীবিও। আছে শুধু সুন্নী আর কপটিক ক্রীষ্ঠান মোল্লারা। ইরাণের মতন এখানেও বিপ্লবের আগে মেয়েদের যেটুকু অধিকার ছিল, সেটুকুও থাকবে না। আল্লার আইন প্রতিষ্ঠার সব আয়োজনই সেখানে পাকা করা হয়েছে। ইরানেও বিপ্লবের সময় প্রগতিশীল এবং ধর্ম বিপ্লবীরা দল করেছিল একসাথে। তারপর ইরানে খেমেইনি কমিনিউস্টদের দশফুট চিলেকোঠাতে কয়েদ করে শান্ত করে দিয়েছিল-“বিপ্লবী” কন্ঠ। দশ বছরে আনুমানিক এক লক্ষ ইরানিয়ান বামপন্থীকে জেলে ভরেছিল খেমেইনি। মিশরেও সেই ইরানিয়ান বিপ্লবের পদধ্বনি শুনি।
[২] গদ্দাফির পতনে একনায়কতন্ত্রের পতন হয়েছে বলে, অনেক বাম বাঙালী উচ্ছাস প্রকাশ করছেন। ্কিছুদিন আগে ্গদ্দাফি ছিল এদের হিরো!-কারন গদ্দাফি আমেরিকা এবং ইস্রায়েলের বিরোধিতা করেছেন! বাম বাঙালীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এত দুর্বল-তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাস্যকর।
তবুও যা হচ্ছে, তা ভাল। পরিবর্তনেই নতুন পৃথিবীর জন্ম হয়। গণতন্ত্র সেখানে আসছে না-ইরানের ধাঁচের মোল্লাতন্ত্রই আসছে-সে্টা নিশ্চিত। তবুও, সেটা ভবিষয়তের গণতন্ত্রের পথ খুলে দিতে পারে।
মধ্যে খান থেকে মুসলিম মেয়েরা আরো বেশী অত্যাচারিত হবে বেশ কিছুদিন। জাসমিন বিপ্লব থেকে এটাই মুসলিম মেয়েদের পাওনা।
শাহকে দেশ ছারা করতে পথে নেমেছিল লাখে লাখে ইরানিয়ান তরুনী। তারা কি জানত, তাদের আন্দোলনের ফলশ্রুতি স্বরূপ বা পুরস্কার স্বরূপ তারা তাদের সন্তানের ওপর আইনি অধিকার হারাবে?
গাদ্দাফি যদি নিজেকে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান মনে করেন, তাহলে উসমানের শেষ পরিণতিটা তার অজানা থাকার কথা নয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বারবার শুনতে হবে- “History repeats itself”.
‘গণতন্ত্র’ আর ‘কোরান বা শরিয়ত’ সম্পূর্ণ বিপরিতধর্মী দুই মতবাদ। একটি আল্লাহর তৈরী অপরটি মানুষের। এখানে সঙ্ঘাত অনিবার্য, পুরোপুরি গণতন্ত্র অসম্ভব। আরব দেশগুলির নতুন সংবিধান কী হবে কেমন হবে, জনগনের কথা মাথায় রেখে লেখা হবে, না মুহাম্মদের সংবিধান অনুসরণ করা হবে, তার উপর নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যত।
@আকাশ মালিক,
মন্তব্যে ইসলাম বিশেষজ্ঞের পরিচয়। 🙂
ইসলামের আকরে বেড়ে ওঠা কেউ ইসলামশূন্যভাবে গণতন্ত্রভোগ করতে পারবে চিন্তা করাটা হয়তো কঠিন। তথাকথিত সুফি-বাউলের দেশের আমরাই পারলাম না!
দুয়ের সংকর ভাবাটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এখানে দোষটা হচ্ছে, ইসলামকে মোল্লাদের মত করে দেখাটায়। জিনিসটার যেহেতু কোন দেখারই ভ্যালিডিটি নাই, মোল্লাদের দেখাটার আলাদা করে বিশেষ মর্যাদা পাবার দরকার কি? কিন্তু তেমনটা পেয়ে আসছে ভিন্নধর্মী ও বিশ্বাসীদের কাছ থেকে। মোল্লাদের দেখায় ইসলাম অনেক বড় বড় লোহার দরজা, উঁচু দূর্গ বানিয়ে দুর্ভেদ্য হয়ে বসে আছে। সেই দেখায় কোরানের বিশুদ্ধতা আছে। বিশেষ বাণীর বিশেষ বয়ানে পাওয়া সুনির্দিষ্ট অর্থ জানা আছে। মুরব্বি স্থানীয়দের চিহ্নিত ক্রমিক স্থান আছে। আছে, কোরানের পর হাদিস ইজমা কিয়াসের লেয়ার। সবই আপনার আমার মত লোকজন করলো, সেটাও মোল্লাতন্ত্রানুসারীসহ সবারই জানা। কিন্তু মোল্লাদের বানানো এই সমগ্রখণ্ড ইসলামটা নাম হলো গিয়ে ‘আল্লার’ বিধান। কিন্তু সুফিদের দেখা ইসলামটা কি দোষ করলো? ভুল যখন সবই, সুফির ইসলামটা যদি ডিফেন্সলেস হয়, মোল্লাদের দেখা ইসলামটাও সমান ডিফেন্সলেস।
ফলে নামটা ইসলাম রেখেও নানান রকম দেখা, সৃষ্টি, আনয়ন, এর মাঝে সম্ভব। খালি মোল্লাদের দেখা ইসলামের বাইরে আসতে হবে। মুসলমানদের। বা আমাদেরও। ইস্, যদি বিশ্বাস করতাম। ইসলামকে মানবতার, ব্যাক্তিস্বাধীনতার পক্ষের দৃষ্টি দিয়ে দেখাটা (যেভাবে হোক) সম্ভব করতাম। বিশ্বাসী তো বিশ্বাস ছাড়বে না। ব্যাক্তিস্বাধীনতার জন্যে আরামদায়ক একটা কিছুতেই নয় বিশ্বাস করলো। এরপর আর আপনার আমার দু:খ কিসে?
@রূপম (ধ্রুব),
একমত নই। মোল্লাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাই সবচেয়ে যৌক্তিক, যদি আপনি গোড়ার কুযুক্তিটা একবার গিলে ফেলতে পারেন। “কোরআন আল্লাহর বাণী”, এটা মোল্লাও মানে, সুফীও মানে, মানে “মডারেট”-ও। একবার যেই মানল, অমনি মোল্লার অবস্থান বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে শক্তিশালী। ওই প্রথমবারের অন্ধ বিশ্বাসের পরে মোল্লাকে রীতিমত rationalist বলা যায়। কিন্তু মডারেট বা সুফী পদেই পদেই এডহক। অমুক বাণী বিশেষ সময়ের প্রেক্ষাপটে এসেছে, তমুক হাদিস দুর্বল, আবার আমার পছন্দসই দুর্বল হাদিস পদে পদে উদ্ধৃত করা চলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। সে হিপোক্রিট, বৌদ্ধিক যুদ্ধে তার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
তার মানে অবশ্য এই নয় যে এর মধ্যেও একধরণের গণতন্ত্র, প্রভূত বাকস্বাধীনতা (সম্পূর্ণ না হলেও) এসব সম্ভব নয়। বাংলাদেশই তো এর উদাহরণ।
সুফী বিষয়ক একটি মন্তব্য। এদেরকে মুক্তমনায় খুব বেশি ছাড় দেয়া হয়। সুফী একটি আধ্যাত্মিক দর্শন, অর্থাৎ ঈশ্বরলাভের একটি রাস্তা। এই রাস্তাটা অনেক ক্ষেত্রে মানবতাবাদ ঘেঁষা, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। সুফী মত, আর “ধর্মত্যাগীর মুণ্ডু কেটে ফেলতে হবে” এদুটির বিরোধ অবশ্যম্ভাবী নয়।
@রৌরব,
এটা আমাদের প্রচলিত পার্সেপশন হলেও আমি এটাতে ভাঙ্গা দিতে চাই। আমি বলবো মডারেট বা সুফির তুলনায় মোল্লাদের বৌদ্ধিক উৎকর্ষটা একটা ভ্রম। আগে যেমনটা বলেছি, দুটোই সমান দুর্বল। সেই অবস্থানটা এখনও ধরে রাখছি। আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি।
দুটো অংশ, একটা হল অনুমান বা বিশ্বাস, আরেকটা হল তার ভিত্তিতে রিজনিং। এখন কতটুকু মিনিমাম বিশ্বাস ইসলামের জন্যে জরুরি সেটা কি আপনি বলতে পারবেন? খুব সাধারণ চিন্তায় আমরা ধরে নেই যে সেটা সহজে নির্ণয়যোগ্য। আসলে কিন্তু তা না। অনেক ভাগাভাগি আছে। এর মধ্যে বিশেষ একটা মত নিবেন কিভাবে বা সংখ্যাগরিষ্ঠেরটাই বা নিবেন কেন? দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠেরই কিন্তু প্রথমের সাথে পার্থক্য আছে। মানে ইসলামের মূল বিশ্বাস সংজ্ঞায়নে আমাদেরই সমস্যা আছে। সেই সমস্যার ফাঁক গলে আমরা বলে ফেলতে পারি যে ‘ইসলামে কোরানের বিশুদ্ধতা বিশ্বাস অবিচ্ছেদ্য’। কিন্তু ব্যাপারটা হল, সেটা হয়তো ৯৯% মুসলমান দাবীদারের বিশ্বাস। সেটাকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলার মধ্যে সমস্যা আছে। আমরা ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনাতে গোঁড়াতেই এই সমস্যা করি। আলোচনা হওয়া উচিত মানুষ আর তার বিশ্বাস নিয়ে।
সেটা করা গেলে একজন মুসলমান কোরানের বিশুদ্ধতা বিশ্বাস করতে বাধ্য কথাটা সেভাবে বলা চলে না। বরং বলতে হয়, সে তার বিশ্বাসের ফ্রেমওয়ার্কে মনে করে সে বাধ্য। আমার মনে হয় না কেউ ব্যাক্তি ও জনমত-নিরপেক্ষভাবে দেখাতে পারবে যে ইসলাম মানে কোরানের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস।
এবার পড়ের স্তরে ঢোকা যায়, যে স্তরে আপনি বলছেন। অর্থাৎ
সেখান থেকেও যে মোল্লাকে র্যাশনালিস্ট দাঁড় করাতে পারছি না, সেটা নিয়ে বলি। কোরান মানার পর সম্পূর্ণ কোরান বিশ্বাস নির্ভর রিজনিং করে কি সহি হাদিসের নির্ণয়ে আসা যায়? সুন্নিদের মোল্লা আছে, শিয়াদেরও মোল্লা আছে। তারা কোরান বিশ্বাস + বাকিটা সম্পূর্ণ রিজনিংয়ের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন সহি হাদিসে কিভাবে আসে? মোল্লাতন্ত্রে রিজনিংয়ে সমস্যা আছে অথবা তারা হয়তো অতিরিক্ত বিশ্বাস ব্যবহার করে। তাতে তাদের র্যাশনালিস্ট মর্যাদাটা খাটোই হয়। সেখানে কোন সুফি যদি বলল যে, না দুশ বছর পরে লেখা হাদিসের সহিত্ব নিয়ে জোরদার দাবীতে বিপদ আছে, তার এই কথার রিজনিংকে মোকাবিলা করার বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি কোন প্রকার মোল্লা স্ট্যান্স থেকেই আমি দেখতে পাই না। এর উত্তরে মোল্লা যে সহি হাদিসই দাঁড় করাক, সেটার পক্ষে তাকে আরও দশটা ভুলভাল বলেই আগাতে হবে। কিন্তু মূলত তারা ব্যবহার করবে গলা বা তলোয়ারের জোর, ভয়। তাতে বুদ্ধিবৃত্তিক পরাজয় তাদেরই হয়।
বিশেষ কোন সুফি মতবাদের প্রতি আমার সমর্থন দিয়ে রাখছি না। তাদের সকলে হয়ত বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্বল পথ ধরেই হেঁটেছে। কিন্তু তাতে মোল্লার মোকাবিলায় বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অধিক শক্তিশালী পথের উপায় নাকচ হয়ে যাচ্ছে না। খালি মোল্লা নয় বলে আমি সেই কল্পিত ইসলাম দর্শনকে সুফিভুক্ত করে দিচ্ছি।
মোল্লারা রিজনিংভিত্তিকভাবে আগানোর একটা ছায়া তৈরি করলেও তাদেরকেই এভাবে মোটা মাপের রিজনিং হিপোক্রিসি করতে দেখতে পাওয়া যাবে। চিন্তা করুন, কোরানের স্ববিরোধী অংশগুলো তারা মেটাবে কিভাবে? জাকির নায়ক যেমন। র্যাশনালিস্টের ছায়াই তৈরি করে সে। কিন্তু সেই বেশি হিপোক্রিট হয়ে ধরা দেয়। সেটা মোল্লাদের অ্যাপ্রোচের কারণে। সেখানে সুফিরা যদি এই স্ববিরোধের জায়গাগুলোতে সতর্কতার অবস্থান নেয়, তখন তাদের সেই অ্যাপ্রোচটাই তো গিভেন সেট অফ নলেজের বেসিসে সবচেয়ে রিজনেবল মনে হয়।
ব্যাপারটা আমার অতটা জানা নেই। কিন্তু সমস্যাটাও তাতে বুঝতে পারছি না। সমস্যার কিছুটা ইঙ্গিত হয়ত পরের বাক্যগুলোতে।
সুফির কোন মতবাদে মুণ্ডুপাতের ইন্ধন আছে আমি মনে করতে পারছি না। কিন্তু বিরোধ অবশ্যম্ভাবী হওয়াটা ঠিক জরুরি দেখছি না। বরং এভাবে দেখছি যে মোল্লাতন্ত্রে মুণ্ডুপাতের দর্শনের যে লালন পালন হয়, সুফিদের প্রভাবটা যদি মোল্লাদের চেয়ে মুসলমান জনগোষ্ঠিতে বেশি থাকতো, মুণ্ডুপাতের দর্শনের লালন পালন তার চেয়ে ঢের কম হত, তেমনটা হলফ করেই বলা যায়। সেটাতো অবস্থার উন্নয়নই ধরা যায়, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ইসলামের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছি, সে প্রেক্ষিতে।
@রূপম (ধ্রুব),
দ্বিমত পোষণ করব না। সালাফিদের মধ্যেও তর্কবিতর্ক হয় নিশ্চয়ই। কিন্তু the quantitative is the qualitative। ইসলামী ধর্মতত্বের একটা সুস্পষ্ট ভরকেন্দ্র আছে। ওর আশপাশে কিছু বৈচিত্র তার কাঠামোর মূল বৈশিষ্ট্যকে নস্যাৎ করে বলে মনে হয় না।
আমি কিন্তু ঠিক বুঝতে পারলাম না এ জায়গাটা। আপাত-স্ববিরোধী ঠেকছে, হয়ত বুঝতে ভুল করছি। ৯৯% মুসলিমের বিশ্বাস নিয়েই তো কথা বলছি!
কিন্তু এই ক্রাইটেরিয়াটা আসল কোথা থেকে? “ব্যাক্তি ও জনমত-নিরপেক্ষভাবে” একটা বিশ্বাসকে বিশ্লেষণ কতটুকু উপযোগী? আমি তো চাইব জনমতকে বিশ্লেষণের অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান হিসেবে নিতে। নাকি আপনি বলছেন ইসলামের মূল পুস্তকগুলিকে মুসলিমদের বিশ্বাস নিরপেক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করতে। সেটা বৈধ পদ্ধতি, কিন্তু তার ফলাফল খুব ভিন্ন হবে বলে আমার মনে হয়না।
ভাল পয়েন্ট। দুভাবে এটাকে মোকাবেলা করা যায়। এক, যেটা সহজ পথ, সেটা হল সহি হাদিসকেও বিশ্বাস হিসেবে ধরে নেয়া। এতে অপ্রমাণিত বিশ্বাস একটা বাড়ল বটে, কিন্তু বেড়ে হল দুই। অর্থাৎ, দু-তিনটে মৌলিক বিশ্বাস থেকে reasonable ভাবে (অবধারিত ভাবে যদি নাও হয়) সালাফি মনোভঙ্গিতে পৌঁছনো যায়। মডারেটরা যদি হাদিস পুরো ছেড়ে দিত, অথবা সে বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট মনোভাবের পরিচয় দিত, তাহলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানকে আমি সম্মান করতে পারতাম। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এদের অবস্থান casuistry জর্জরিত আবর্জনা।
দ্বিতীয়ত, যদিও আমি ইসলাম বিশেষজ্ঞ নই, আমি যতদূর জানি কোরান দিয়ে অন্তত হাদিসের প্রয়োজনীয়তা “প্রমাণ” করা যায় (যদিও বিশেষ বিশেষ হাদিসের সত্যতা নয়)। এক কথায়, মোল্লার বয়ানটাতে বাজে assumption-এর সংখ্যা কম (শূণ্য নয় অবশ্যই)। মডারেট যদিও মোল্লার শেষ সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণকারী, কেন যে সে দ্বিমত পোষণকারী, তার হদিস পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই কষ্টকর। উল্লেখ্য, মোল্লা বলতে আমি জাকির নায়েকের কথা ভাবছিলাম না। সে একটা আধা-মডারেট আধা-সালাফি জোঁকের তেল।
মানছি পুরোপুরি। আমার একটাই বক্তব্য, মোল্লার অবস্থান তুলনামূলক ভাবে যৌক্তিক, যুক্তিবিদ্যার আধুনিক মাপকাঠির তুলনায় নয় অবশ্যই।
আবারও একমত। আসলে এদের ব্যাপারে একটা পুরোপুরি uncritical দৃষ্টিভঙ্গি খুব প্রচলিত বলে মন্তব্যটা করেছিলাম। অবশ্যই সুফী মতামত মওদুদীবাদের চেয়ে ঢের ঢের ভাল।
@রূপম (ধ্রুব),
ঠিক বলেছেন আপনি। (Y)
মুক্তকামী জনতার জয় হোক!! (Y)
সব বিপ্লবই যে মানুষের মুক্তি নিয়ে আসে তা মনে হয় না। ইরানের ইসলামী বিপ্লব ইরানিদের কতটুকু মুক্তি দিয়েছে তা সবাই জানে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশীর ভাগ লোক মনে হয় গণতন্ত্রের চেয়ে ইসলামী-তন্ত্রকেই বেশী উপযোগী মনে করে। তাছাড়া আমেরিকা-ইংল্যান্ড মনে হয় না মধ্যপ্রাচ্যের প্রকৃত গণতন্ত্র চাইবে। তারা ভাল করেই জানে জনগণ কতটুকু পশ্চিমা ভক্ত। হঠাৎ গণতন্ত্র আমেরিকার জন্য অশনি সংকেতও ডেকে আনতে পারে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ শুধু তাদের সরকার থেকে মুক্তি চাঁচ্ছে না ,চাঁচ্ছে পশ্চিমাদের হাত থেকেও।
আবুল কাশেম এবং ভবঘুরের সংগে আমিও একমত।
মধ্যপ্রাচ্যের বিষয় আরো কিছু পোস্ট চাই ।
নৃপেন্দ্র সরকারকে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন ।
লিবিয়ার অবস্থা সঙ্গীন। আশা করছি গাদ্দাফিরও পতন ঘটবে। উত্তর আফ্রিকা মুক্ত হোক!
@রৌরব
আমেরিকার বন্ধু মুবারক যেখানে টিকতে পারলো না সেখানে গাদ্দাফির টিকে থাকা আমার মতে অসম্ভব। তবে সেই পতন অনেক রক্ত ঝরাবে সেটাও বুঝা যাচ্ছে। ভয় হচ্ছে গৃহযুদ্ধের দিকে না চলে যায়।
@স্বাধীন,
হুম। কিন্তু আমেরিকার বন্ধু হওয়াটাকি আসলে টিকে থাকার জন্য অতটাই সহায়ক? উত্তর কোরিয়া দেখুন।
@রৌরব,
সেটা নির্ভর করছে উত্তর কোরিয়ার পেছনে কে আছে :)) । যদি চীন না থাকতো তবে ঠিকই উত্তর কোরিয়াও যেতো। একই কথা প্রযোজ্য ইরানের ক্ষেত্রেও।
@রৌরব,
লিবিয়ার অবস্থা বেশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
@স্বাধীন
গাদ্দাফির একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আপনাদের মনে আছে হয়ত বা এই অসভ্য ইতরটা বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল। এখনও মনে হয় সেখানে খুনীদের কেউ কেউ আছে।
@রৌরব, নাহ আমার মতে লিবিয়ার গাদ্দাফির পতন সহজে হবে না, অন্ততপক্ষে অনেক রক্ত না ঝরা পর্যন্ত এ ছাগলটা ক্ষমতা ছাড়বে না। আমেরিকার সমর্থনের যে ব্যাপারটা স্বাধীন বলেছেন তা এবারের অন্দোলনগুলোতে এক্টূ অন্যভাবে কাজ করেছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রথমত আমেরিকার অবস্থা সেই ৭০ দশকের মত আর নেই, আর বুশ সরকার ক্ষমতায় থাকলে ঠিক কী হত জানি না, তবে ওবামা সরকার কিঞ্চৎ হলেও একটু উদার এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে ব্যাপারগুলো দেখছে। এর পিছনে শুধু সদিচ্ছা ছাড়াও আরও অনেক কারন আছে, সেগুলোতে আর ঢুকছি না। এই ইন্টারনেটের যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নতি ঘটেছে তাতে করে এগুলো আর ধামাচাপা দিয়ে রাখারও উপায় নেই। আমেরিকার অতি রক্ষণশীল দল্গুলো এ নিয়ে যে মাতম করছে তা দেখলে এদেরকে কষে দুটো থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে। কয়েকদিন আগে একজন রিপাব্লিকান শন হ্যানিটির অনুষ্ঠানে এসে বলেই ফেললো, ‘তোমরা এরকম করছো কেন? রিপাব্লিকান পার্টি কী তাহলে জনগনের স্বাধীনতার বিপক্ষে?’
নৃপেন সরকারকে ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্য। লিবিয়া নিয়ে কেউ একটা পোষ্ট দিবেন আশা করছি। আর ভবঘুরের মন্তব্যটা পড়ে কেন জানি তাকে শন হ্যানিটিদের দলে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি ;-( ।
@ফাহিম রেজা,
(Y)
@ফাহিম রেজা,
(Y) একমত। মোবারক গাদ্দাফীর মত করতে না পারার একটা কারণ কিন্তু এই যে সে “আন্তর্জাতিক কমিউনিটি”-এ একজন সদস্য, সেই কমিউনিটির যত যাই দোষ থাকুক না কেন।
@ফাহিম রেজা, @ রৌরব
লিবিয়াকে নিয়ে কেউ কি লেখা দিবেন?
আবুল কাশেম ভাইয়ের সাথে কিছুটা একমত। মরুর রুক্ষবুকে যা হবার তা ধর্মকে কেন্দ্র করেই হবে।
তবুও চাই মানুষ মুক্ত হোক মুজিব-জিয়ার মতো বর্বর একনায়কদের নখর থেকে।
মানুষ মুক্ত হোক। একদিন তারা হয়তো ধর্ম থেকে দূরে সরে আসবে, মানুষের মতো বাচঁতে শুরু করবে। মানুষ মুক্ত হোক। বিশ্বময় মানুষ মুক্ত হোক।
@আদনান,
দিলেন তো সাবজেক্ট ডাইভার্ট করে অন্য দিকে। মুজিবের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের) বর্বরতা নিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট দিয়ে দিন, আমরা পড়ে কৃতার্থ হই।
@আদনান,
এ কী লিখলেন? এ যে দেখি গরম তেল থেকে আগুনে ঝাঁপ!
এই সব বোরখা পরা মেয়েরা কি চাচ্ছে তা কি জানেন? তারা চাচ্ছে ১০০% শারীয়া।
আমি ত দেখছি মধ্যপ্রাচ্য সেই নবীজির যুগে চলে যেতে ব্যাগ্র। গণতন্ত্র? আমি ত তার কোন ঘ্রাণই পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে গণতত্রের হাত ধরে ইসলামীরা ক্ষমতায় যাবে—আর কায়েম করবে ্পূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র। এই সব ইসলামী দেশের সাধারণ জনগণ কুমীর ছেড়ে বাঘের পেটে যাচ্ছে।
@আবুল কাশেম,
আমি আপনার সাথে ১০০% ভাগ একমত।
মধ্য প্রাচ্যের কোন দেশেই গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সাধারন জনগনের মধ্যেও কোন গনতান্ত্রিক ভাবধারা নেই। আবার তাদের ধর্ম ইসলাম গনতন্ত্রকে অনুমোদনও দেয় না। এমত অবস্থায় হোসনি মোবারকের পতনের পর, সেখানে গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে, তা আহাম্মকরা ছাড়া আর কেউ ভাবতে পারে না। স্বৈরতন্ত্রের যাতাকলে সেখানকার মানুষ হয়ত অতিষ্ট, তাই বলে গনতন্ত্রকেও তারা স্বাগত জানাবে না, এটা নিশ্চিত। বরং তারা এখন শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই এক কাট্টা হবে বলেই আমার ধারনা। কারন তাদের দৃঢ় বিশ্বাস সেটাই হলো সর্বোচ্চ ও শুদ্ধতম পদ্ধতি।
@ভবঘুরে, @ আবুল কাশেম
মধ্যপ্রাচ্যের এই নিরস্ত্র মানুষগুলো নিজেদের মুক্তির জন্য যখন জীবন দিয়ে লড়াই করছে তখন আপনাদের এই মন্তব্যগুলো তাঁদের প্রতি চরম অপমানের প্রতীক। এই মানুষগুলোর সাথে সহমর্মিতা দেখাতে না পারুন, ক্ষতি নেই। তারা আপনাদের বা আমাদের জন্য বসে নেই। কিন্তু দয়া করে অপমান কইরেন না।
ইসলামে মৌলবাদের বীজ রয়েছে সত্য। কিন্তু সময়ের পরিক্রমাতে মুসলিমদের মাঝেও পরিবর্তন আসবে যেমন এসেছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। এই লেখার সাথে আমিও সহমত যে এই আন্দোলন সেই পরিবর্তনেরই শুরু। এই ধারণা থেকে পশ্চিমা বিশ্বের সরে আসতে হবে যে এই লোকগুলো মানেই আল-কায়দা বা মুস্লিম ব্রাদারহূড নয়, বা আরব বিশ্ব মানেই গণতন্ত্রের যোগ্য নয়। এই এক অজুহাত দেখিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্রের ধারক হয়েও আরব বিশ্বে স্বৈরশাসন এবং রাজতন্ত্রকে এতোদিন ধরে মদত দিয়ে এসেছিল। সময় এসেছে সেই দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনের। সময় এসেছে আপনাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের।
সময় এসেছে নুতন যুগের। এটি ব্লগ, ফেইসবুক, উইকিপিডিয়া, উইকিলিক্স, ইউটিউব, খান একাডেমি, সর্বোপরি, ইন্টারনেটের যুগ। সর্বোপরি ডিরেক্ট ডেমক্রেসীর যুগ। ইন্টারেন্ট আজ সাধারণ মানুষকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। আগামী বিশ্ব তাই সাধারণ মানুষই শাসন করবে এ বলতে পারি।
জয় হোক গণতন্ত্রকামী সাধারণ জনগণের। জয় হোক গণতন্ত্রের। পরিবর্তনের ছোঁয়া ছড়িয়ে যাক সারা বিশ্বে।
@স্বাধীন,
(Y)
সমস্যা দেখার আগে চিহ্নিত করার মানে হয় না। যে শাসন তারা পছন্দ করে না, সে শাসনের বিরুদ্ধে তাদের যে প্রতিবাদ ঘটছে, সে প্রতিবাদে আমাদের পাশে থাকা উচিত। এরপরে কোন অন্যায় শাসন কায়েম করে যদি আবার মানুষকে নিপীড়ন করা হয়, তখনও আমাদেরকে নিপীড়িত মানুষগুলোর পাশেই থাকতে হবে।
@স্বাধীন,
মোটাই সত্য নয়। আমরা কোনভাবেই এই গণজাগরণকে অপমানের দৃষ্টিতে দেখছিনা। মধ্যপ্রাচ্যের নিরীহ জনগণ এক শক্তিশালী সাঁড়াশির মধ্যে আছে। উপরে একনায়কত্ব আর নীচে ইসলামী মৌলবাদ (যা জনগণকে প্রলোভন দিচ্ছে এক ইসলামী স্বর্গের)। তাই এই নিরূপায় জনগন ছুটে চলেছে এক দেওয়াল থেকে আরেক দেওয়ালে—কুমীর থেকে বাঘের কাছে।
সব চাইতে বড় উদাহরণ হচ্ছে ইরান। এখন মধ্যপ্রাচ্যে যে ক্ষমতার শুন্যতা দেখা যাবে—তা পূরণ করার মত তেমন শক্তিশালী সেকুলার দলই নাই। মিশরের আল–বারাদে সম্পর্কে শুনেছি সে মুসলীম ব্রাদারহুডের সদশ্য। এই শুন্যতা পুরণের জন্যে কে বা কারা প্রস্তুত তা কি বলে দিতে হবে? ইরান থেকে কী শিক্ষা লাভ করেছি?
আমরা জনগণের সাফল্য কামনা করছি—দেখা যাক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।
@আবুল কাশেম,
(Y)
@স্বাধীন,
আরব দেশ গুলোর মানুষগুলোকে কখনই সভ্য মনে করি না। অন্তত তারা এ পর্যন্ত প্রমান করতে পারে নি যে তারা সভ্য। বর্তমানে যে আন্দোলন চলছে তার মাধ্যমেও যে তারা সভ্য হবে তার কোন লক্ষনও দেখা যাচ্ছে না। তার কারনও তারা নিজেরাই। কারন তারা ইসলামের মধ্যে থেকে শত শত বছর ধরে হুর পরী সমৃদ্ধ বেহেস্তের স্বপ্ন দেখে আসছে, তাই দুনিয়ার এ জীবনকে তারা করেছে অবহেলা। তা করে তারা কোন দিন গনতন্ত্রের চর্চা করে নি , করেনি জ্ঞান বিজ্ঞানের সাধনা। তাহলে এক মুবারকের পতনে আর এক মুবারক বা তার চাইতেও কট্টর পন্থি কেউ ক্ষমতায় চলে আসবে , যেহেতু সেখানে গনতন্ত্র নেই। ইরানের মত কট্টর পন্থিরা ক্ষমতায় এসে তারা ফিরে যেতে পারে শত শত বছর পিছনে। আর সে সম্ভাবনাই সব চাইতে বেশী । আপনি যদি সে দেশে গিয়ে একটা জরীপ করেন – দেখবেন যারা আন্দোলন সংগ্রাম করছে, তারা নিজেরাই গনতন্ত্র চায় না, গনতন্ত্র বোঝে না। তাহলে তাদের এ আন্দোলন সংগ্রামে আহ্লাদিত হওয়ার অন্তত আমি কোন কারন দেখি না। তারা বাঘের খাচা ছেড়ে এখন সিংহের খাচায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে- বড়জোর এটুকুই বলা যায় তাদের সম্পর্কে।
@ভবঘুরে,
কারও সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখা ঠিক না। ইন্টারনেটের যুগ এখন। ওদেরকে হুর পরীর স্বপ্ন দেখা জাতি বললে নিজেদেরকেও অশিক্ষিত অসভ্যজাতিই বলতে হয়।
তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেই যে আন্দোলনকারীরা সেই হুর পরীর স্বপ্ন দেখা গোষ্ঠীভুক্ত, গণতন্ত্রেই তাদের সবাইকে একলাফে যেতে পারতে হবে কেন? তারা যে বর্তমান শাসন-ব্যবস্থায় খুশি নয়, তাদের নিজেদের পছন্দের কোন ব্যবস্থা তারা চাইছে, সেটার প্রতি তো স্বকীয়ভাবেই শ্রদ্ধাশীল হতে পারার কথা। তারা যদি এরপর ধরা যাক ইসলামি শাসন ব্যবস্থাই কায়েম করলো, তাতে যদি মানুষের নিপীড়ন ঘটে তবে এখনের মতই নিপীড়িতরা তখনও বিদ্রোহ করতে পারবে না কেন? শিক্ষা তো এটাই যে বিশ্বমহাজনের কন্ট্রোল্ড সেকুলার শাসন একটা জনগোষ্ঠির উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। একটা জাতির শাসনের ভার তার নিজের হাতেই শ্রেষ্ঠ, কোন বহি:শক্তি বা স্বৈরশাসকের হাতে নয়। সে নিজেই নানান তন্ত্রের মধ্যে দিয়ে নিজের জন্যে স্বস্তিকর শাসনটা বের করে নিক। আমরা আস্থা রাখতে পারি যে মুক্ত তথ্যের এই সমাজে মানুষের মুক্তিকে রুদ্ধ করে রাখার ক্ষমতা যেকোন তন্ত্রেরই কেবল ক্ষীণ হয়ে যেতে থাকবে। আর বহি:শক্তির কন্ট্রোল্ড শাসনে আমরা কোন অবস্থাতেই আস্থা রাখতে পারি না।
আমার নিজের দেশের মুক্তিটাই তো সবার আগে। যুদ্ধ শেষ হবার একাত্তরে কে জানতো দেশটা ইসলামি ডান হবে বাম না মধ্যপন্থী। তাতে কিছু কি এসেও গেছে? মুক্তিটাই তখন আসল। আর আমাদের প্রয়োজন ছিল কিছু দেশের সমর্থন আমাদের পাশে থাকবে। বিশ্বের বহু বিদ্রোহ সফল হবার পর ভিন্ন দিকে চলে গেছে। কিন্তু মানুষের মুক্তির সংগ্রামে সমর্থন স্বকীয়ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু কি অবাক না যে আরবদের মুক্তিটাকে খাটো করে দেখা সম্ভব হচ্ছে তারা মুসলমান বলে? বিশ্বাসী বলে? বর্বর ধর্মে বিশ্বাসী বলে। বিশ্বাসের সমস্যা, বিশেষ করে মানুষের ব্যাক্তিস্বাধীনতায় আঘাতের যে উপসর্গগুলো, সেগুলো উন্মোচন খুবই জরুরি। কিন্তু সেই আলোচনাটা করা দরকার মানবতার প্রতি, মানুষের নিজস্বতার প্রতি শ্রদ্ধার পাত্রে রেখে। এই বোধ বা চেতনার সাথে সহাবস্থানে যে সবশেষে একজন নিরপরাধী বিশ্বাসী মানুষ একজন অবিশ্বাসীর চেয়ে কোনভাবেই হীনজন নয়। সে-ও মানুষের সমান মর্যাদাসম্পন্ন। এই বোধের অভাবে যেটা হয়, বিশ্বাসীকে হীনজন ভাবা সম্ভব হয়, যেমনটা অনেক গোঁড়া বিশ্বাসী অবিশ্বাসীকে ভাবে। আরও সম্ভব হয় বিশ্বাসীকে ডেমনাইজ করা, যার ফলে তার প্রতি সহমর্মিতার ঘাটতি পোষণ করা সহজ হয়। সে তো বিশ্বাসী, সে চুলোয় যাক তার ইসলাম নিয়ে।
অনেক পশ্চিমা মিডিয়াও এই উত্থানগুলো নিয়ে দোনোমনা করে করে অবশেষে মুক্তিকামী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
কারাগারে আটকে রাখা নিরপরাধ যদি মুক্তির জন্যে ছটফট করতে থাকে, সে বিশ্বাসী হলেও তো সে অন্য যে কারও মতো তার মুক্তির সমান অধিকারী!
মুক্তমনা মানুষের মুক্তি চাক, তা সে যেমন মুক্তিই মানুষ কামনা করুক না কেন।
@রূপম (ধ্রুব),
উগ্র ডানপন্থীদের মনোভাবটা দেখেছেন নিশ্চয়ই। Alan Dershowitz, পেলিন এদের কথাবার্তা এত লজ্জাজনক যেটা ভাবা যায় না।
@রূপম (ধ্রুব),
(Y)
@রূপম (ধ্রুব),
যারা বর্বরতায় বিশ্বাসী তাদের কে বর্বর ছাড়া আর কি বলা যায় ? আর বর্বরদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। বর্তমানে যাকে মুক্তির আন্দোলন ভাবা হচ্ছে, তা আসলে আর একটা শৃংখলে আবদ্ধ হওয়ার শুরু মাত্র তা সে আপনি যতই আশাবাদ ব্যক্ত করুন না কেন। আমার ধারনা ভুল হলে আমি সব চাইতে বেশী খুশী হবো।
@রূপম (ধ্রুব),
আফগানরা, তালেবানদের হাত থেকে, আর ইরানীরা খমেনিতন্ত্রের হাত থেকে মুক্তির জন্য কতটা বিদ্রোহ করতে পেরেছে? তুরস্ক আগে ছিল সেকুলার।তথাকথিত গণতন্ত্রই কিন্তু আবার সেখানে ইসলাম কে বিজয়ী করতে চলেছে।এগুলো আশা করি আপনার নজর এড়িয়ে যায় নি।
ইউরোপ আর আমেরিকাতে কিন্তু গণতন্ত্রের হাত ধরেই ইসলামের আমদানী হয়েছে, বোঝেন নিশ্চয়ই?
ইসলামে বউ পেটানোর অনুমতি আছে।সেটা কি ধর্ম পালনের স্বাধীনতার নামে এড়িয়ে যেতে হবে?আপনি নিশ্চয় সেটা বলছেন না তা আমি জানি।কিন্তু মুসলিমদের জন্য ইউরোপের কিছু দেশে শারিয়াহ কেন ঢুকে পড়ল?
এটাও কি সেই গণতন্ত্রের আর ব্যক্তিস্বাধীনতার বাড়াবাড়ির জন্যেই নয় কি?
আর ইউরোপ এর কিছু দেশে বোরখা নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে কি মানবতাবাদি একটি সেকুলার সংগঠন প্রতিবাদ করেনি, এই ধুয়া তুলে যে এতে মুসলিম দের ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে, আর ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে?
মোডারেট ইসলাম ( উগ্রবাদি মুসলিম রা খুন করে, আর মোডারেট মুসলিম করে মগজ ধোলাই; তাই উগ্রবাদি ইসলামকে আমি কোন হুমকি বলে মনে করি না, শুধু অদেরকে আমি একদল দাকাত বলেই ভাবি) নামের, সেই বিষাক্ত সাপ টাই কিন্তু ছেলেভুলানো কথা দিয়ে ইসলাম কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এখন,আর অতি ব্যক্তি স্বাধীনতাবাদীরা কোন কিছু না বুঝেই তাদের সপক্ষে নাচানাচি করছে, বুঝেন এটা আশা করি।
@ভবঘুরে,
আপনার এই মন্তব্যের প্রতি জবাবে আমার কিছু বলার নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি এক সময় গ্রীক জাতি মনে করতো অ-গ্রীকরা সভ্য নয়, এক সময় রোমানরা মনে করতো তারা বাদে আর কেউ সভ্য নয়, এক সময় সাদারা মনে করতো সব কালোরা অসভ্য, এক সময় ব্রিটিশরা মনে করতো উপমহাদেশের সব মানুষ অসভ্য, এক সময় পাকিরা মনে করতো আমরা অসভ্য, আজ একবিংশ শতাব্দীতে আপনার মতো একজন মুক্তমনায় এসে বলতে পারে আরবরা সব অসভ্য। কেন? শুধুমাত্র তারা মুসলমান বলে?
আপনার এই মন্তব্য প্রমান করে আপনি আসলে একটা নিজস্ব ধারণা বা বিশ্বাসের উপর থেকে মন্তব্য করছেন যে বিশ্বাসের কোন ভিক্তি আপনার কাছে নেই। এটা ধর্ম বিশ্বাসীদের মতই আরো একটি বিশ্বাস মাত্র। আপনি আগে থেকেই বিশ্বাস করে বসে আছেন যে জরীপ করা হলে কি হবে আপনি আগে থেকেই জানেন। বাহঃ বেশ মজার তো।
সেই সাথে আমার ধারণা আপনি আসলে এই আন্দোলন কিভাবে শুরু হলো, কারা এর পেছনে, এ সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। যে যুব সংগঠনটি মিশরে এই যাত্রা শুরু করেছে তাদের গণতন্ত্র সম্পর্কে বেশ ভাল জ্ঞান রাখে, নন-ভায়ালেন্স আন্দোলন কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে। আমি তাদের উপরে আল-জাজিরার একটি ডকুমেন্ট দেখেছিলাম। তাই বলছিলাম একটু জানুন ভালো করে।
ডিরেক্ট ডেমোক্রেসীর পথে এই বিশ্বাসটি একটি বড় বাধা যে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা অশিক্ষিত, তারা গণতন্ত্র বুঝে না, তারা কি করতে হবে সেটা ভালো ভাবে বুঝে না। তাই তারা যতদিন শিক্ষিত না হচ্ছে তারা গণতন্ত্রের জন্য যোগ্য নয়। আমাদেরকে এই ধারণা হতে বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ মাত্রেই বুঝে তার নিজের জন্য এবং তার পরবর্তী বংশধর রক্ষার জন্য কোনটা ভালো। এটাই গণতন্ত্রের চালিকা শক্তি। আমার গণতন্ত্রের ইতিবৃত্ত এই লেখাটায় এ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছিলাম। ইচ্ছে আছে এ নিয়ে পরে আরো লেখার। আপাতত থিসিস লেখা শেষ করি।
@স্বাধীন,
অবশ্যই আমার একটা নিজস্ব ধারনা আছে আর তা হলো আরবরা প্রকৃতপক্ষে এখনও সভ্য হয় নি। সে কারনেই দেখবেন এই একবিংশ শতাব্দীতেও সেখানে কোথাও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় নি। সহসা তা প্রতিষ্ঠিত হবে তারও কোন সম্ভাবনা নেই। কি কারনে হয় নি সেটা বিশ্লেষণের দাবী রাখে। ধর্ম হতে পারে একটা উল্লেখযোগ্য উপাদান, সেটাই মূল তা বলা যায় না। তাই বর্তমানে এসব অসভ্য আরবরা গোটা মানব জাতির জন্য একটা জঞ্জাল ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা তাদের তেল বেচা টাকার একটা অংশ ইদানিং তাদের জঞ্জাল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার পায়তারা করছে যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তবে বলাই বাহুল্য, ইসলাম তাদের অসভ্যতার একটা বড় কারন। এটা শুনতে আপনার যতই খারাপ লাগুক, এটাই সত্য আর সত্য সব সময় শুনতে মধুর নাও লাগতে পারে।
@ভবঘুরে,
আপনার কথা শুনে একটি বুদ্ধি আসলো। চলেন আমেরিকাকে বলি ইসরাইলের মানুষগুলোকে কিছুদিনের জন্য অন্যত্র সরিয়ে, একটি পারমানবিক বোমা ফেলে দেই বাকি আরব আর আফ্রিকার মানুষগুলোর জন্য। জঞ্জাল দূর করা তো লাগবে, কি বলেন? অসভ্য মানুষ সব। খালি এইডস বাঁধায়।
চলুন ফেইস বুকে একটি গ্রুপ খুলে ক্যাম্পেইন শুরু করি। :guru: । এটা শুনতে যতই খারাপ লাগুক, আমাদের করতেই হবে। আমি আছি আপনার সাথে।
মুসলিম দেশ আর কি কি আছে সেগুলোকেও খুঁজে বের করতে পারি। বর্বর ধর্ম যারা বেছে নিয়েছে তারা তো আসলে বর্বরই বটে। আরব, আর আফ্রিকা শেষ হলে এশিয়ার দিকে নজর দিতে হবে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, পাকিস্থান, আফগানিস্থান সব ধরতে হবে। উহু ভুলে গিয়েছিলাম, বাংলাদেশ বা কাশ্মীর এরাও বাদ যাবে কেন? :-Y
ফেইসবুক গ্রুপ খুললে আমারে লিঙ্ক দিয়েন, জয়েন করবো নে।
আসলেই আরো কিছু পোস্ট আসা উচিৎ ছিলো এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে। তিউনিশিয়া আর মিশরের পর লিবিয়া আর বাহারাইনে যা হচ্ছে তা একই ধারার ক্রমবর্ধিত রূপ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে সাড়া বিশ্ব এখন একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়েছে। আগে এ ধরনের একটি ঘটনা কোথাও ঘটলে আমরা খবর পেতাম তিন দিন পরে। এখন ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার, মোবাইল স্ট্রিমিং সব কিছুই এত তাৎক্ষনিকভাবে সবাইকে ঘটনাপ্রবাহ জানিয়ে দেয় যে, কাউকে আর অন্ধকারে থাকতে হয় না। মিশরে মুবারকের পতনে ফেসবুক টুইটার যে ভূমিকা রেখেছিলো তা নজিরবিহীন। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, এমনকি মার্কিন মুল্লুকে মিডিয়ার চরিত্রও অনেকটাই বদলে গেছে দেখছি। সিএনএন এখন যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা দিন রাত প্রচার করে চলেছে, যেভাবে বিপ্লবী মানুষদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, তা কিছুদিন আগেও দেখা যায়নি।
পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।