[মিশরে গন আন্দোলন নিয়ে ফাহিম রেজা একটি ভাল এবং সময়োপযোগী পোষ্ট দিয়েছিলেন। ফাহিম রেজার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্বগোক্তি ছিল –“মিশরের ভবিষ্যত এখন কোন দিকে যাচ্ছে? বলা মুশকিল।” আমি ভেবে ছিলাম আরও কিছু পোষ্ট হবে বিষয়টা নিয়ে। সম্ভবত বই মেলা এবং ডারউইন দিবস কর্মসূচীর চাপে তা হয়নি। বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই ক্ষুদ্র পোষ্টিংটির অবতারণা।]

মধ্যপ্রাচ্যে গন্ডগোল – গন্ডগোল? মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে তাকে গন্ডগোল নামে অভিহিত করা মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছাড়াই মিশরের গনআন্দোলন আপাতত শেষ হয়েছে প্রশংসনীয় ভাবে। । “আপাতত” শব্দটি ব্যবহার করার উত্তর ফাহিম রেজা রেখে গেছেন – –“মিশরের ভবিষ্যত এখন কোন দিকে যাচ্ছে? বলা মুশকিল।”

মিশরে রাজনীতির খেলা এবং পটপরিবর্তনের পালা সবে শুরু এটা অনুমান করা যায়। এসব জটিল বিষয় বাদ দিয়েও অন্য আলোচনা করা যায়। মিশরের মানুষ পুব আকাশে রক্তিম সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করেছেন। ইতিহাসে এই প্রথম বারের সারা মধ্যপ্রাচ্য যা লক্ষ্য করছে যার নাম – জন্মগত মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, নিজের ইচ্ছে প্রকাশের ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় কাজে সবার অংশ গ্রহণের অধিকার।

মধ্যপ্রাচ্য ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্র। রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম স্বয়ং আল্লাহ কোরাণ মারফত ঠিক করে দিয়েছেন। গনতন্ত্র? সে তো মানুষের তৈরী আইন। আজ এটা, কাল ওটা। নিত্য বদলায়। নিজের হাতে সৃষ্ট মানুষ স্বয়ং আল্লাহর চাইতে ভাল কিছু ভাববেই বা কীভাবে? আল্লাহর কোরাণের উপর প্রতিষ্ঠিত শরীয়া আইন। শরীয়া আইনের সাথে গনতান্ত্রিক আইনের তুলনা? স্বয়ং হযরত মুহম্মদ থেকে শুরু করে ইসলামী রাষ্ট্র আল্লাহর আইনেই চলে আসছে। ইসলামী বিশ্বে আলেম-বাদশাহগন সেই নিয়মেই দেশ চালিয়েছেন। ব্যক্তি এবং পরিবার রাষ্ট্রের একচ্ছত্র মালিকানা ভোগ করেছেন। নারী গনের স্থান পুরুষগনের নীচে। দুই নারী সমান এক নর। কেউ কি ভেবেছ মধ্যপ্রাচ্যের সেই নারীগন কোন একদিন আন্দোলনে রাস্তায় নামবে?

মনে হচ্ছে মিশরের গন আন্দোলন শরীয়া শাসন অবসানের প্রথম সূর্যোদয়।

আজ একই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে – ইয়েমেন, লিবিয়া, বাহরাইন, ইরান, মরক্কো, তিউনিসিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া। এই আন্দোলন আর থামবে না। মানুষ স্বাধিকারের স্বাদ পেয়ে গেছে। মুসলিম নারীরা বোরখা পড়েই, চোখে কালো চশমা লাগিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তাদের মুখে স্বাধীনতার হাসি, হৃদয়ে পুলকের শিহরণ, শরীরে তৃপ্তির নাচন।

দিন বদলাচ্ছে। নতুন নতুন টেকনোলোজি পৃথিবীটাকে ছোট করে ফেলছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, এক সৌরজগত থেকে আর এক সৌর জগতে। যে যুগের মানুষ সৃষ্টিকর্তা এবং ধর্ম সৃষ্টি করেছিলেন তারা সমতল পৃথিবীতে বাস করতেন। তাদের কল্পনায় পৃথিবীর বয়স দশ হাজার বছরের বেশী মনে হয়নি। আর আজ মানুষ চৌদ্দ বিলিয়ন বছর আগে শুধু পৃথিবী নয়, মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কাদা মাটি থেকে রাতারাতি মানুষ তৈরী হয়নি। বিবর্তনের পথ ধরেই জীবজগতের সৃষ্টি। সেই মানুষ কীভাবে দেড় দুই হাজার বছরের মর্চে ধরা পুরাতন ধর্মীয় আইন মেনে চলবে?

শরীয়া আইন আর মানুষের গনতান্ত্রিক আইনের সঙ্ঘাত শুরু হল স্বগৃহে। ঘাত-প্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত চলবে। মানুষ তার নিজতন্ত্র গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেই।

২০ ফেব্রুয়ারী ২০১১
টেক্সাস।