লিহন! তুই কী একটা কুত্তার বাচ্চা? ইয়েস! আমি শেয়াল-কুকুরের জন্ম। আমার ভাগ্য ভালো যে, আমাকে কোনো ঈশ্বর জন্ম দেয়নি। আমি শেয়াল-কুকুরের ডিএনএ থেকেই এসেছি। শেয়াল আর কুকুরের সাথে আমার ডিএনএর ৮০% মিল।

আমি কলা, গাজর, টমেটো ও ভাত কারণ তাদের সাথে আমার ৪০-৬০% জেনেটিক মিল। আমি একটা করোনা ভাইরাসের অংশ কারণ আমাদের ACE2 রিসেপ্টর সমান।

আমি একটা বিষাক্ত সাপ! কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ আইল্যান্ড তাইপান, যার সাথে আমার ডিএনএ সিকোয়েন্সের ৬০% মিল পাওয়া যায়। আমি একটা শূয়রের বাচ্চা কারণ শূয়রের সাথে আমার ৯৮% জেনেটিক মিল।

আমি যদি নজরুল হতাম, তবে আমি বলতাম, আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস! কিন্তু এখন আমি বলি, আমি শিম্পাঞ্জি, আমি গোরিলা, আমি ওরাংওটাং, আমি বিড়াল, আমি বাঘ, আমি কুমির কারণ তাদের সাথে আমার ৭৫% থেকে ৯৮% জেনেটিক মিল পাওয়া যায়।

আমি একটা তাল গাছ কারণ একটা তাল গাছের সাথেও আমার ১৮% জেনেটিক মিল আছে। আমি শামুক, ঝিনুক, নীল তিমি ও হাঙ্গর! মহাসমুদ্রের সকল জীবনের সাথে আমার ৫০০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো জেনেটিক কানেকশন, ফ্রেন্ডশিপ। পৃথিবীতে আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন প্রজাতির জীবন থাকার সম্ভাবনা আছে, যার মধ্যে আমরা ২.৩ মিলিয়ন প্রজাতির নামকরণ করেছি। আমি লিহন! আমি পৃথিবীর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন প্রজাতির জীবনের বাচ্চা, আমি তাদের সবার সাথে ডিএনএ শেয়ার করেছি, আনুমানিক এক ট্রিলিয়ন প্রজাতির জীবনের মধ্যে আমার শরীরে মানুষের ইউনিক ডিএনএর পরিমাণ ১.৫% থেকে ৭%।

আমি মানুষের বাচ্চা নয়। আমি ৯৮% অমানুষের বাচ্চা কারণ পৃথিবীর আনুমানিক এক ট্রিলিয়ন প্রজাতি একটি ইউনিভার্স্যাল কমন এনসেস্টর শেয়ার করেছি, যার নাম লুকা। আর তুমি এসেছ সপ্তামাকাশ থেকে, ঈশ্বরের নিজ হাতে গড়া তুমি। আমাকে তৈরি করেছে পৃথিবীর ইকোসিস্টেম ও দেড় ট্রিলিয়ন জীব, আমি সকল জীবনের জীবন।

সবাই বলে, লিহন! তুই দিন দিন অমানুষ হয়ে যাচ্ছিস! আমি তোদের সাথে একমত । আমি আসলেই দিন দিন অমানুষ হয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বিশ্বের সাথে আমার জিন ও মস্তিষ্ক নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে পারছে না, আমার মস্তিষ্ক আইফোন, ইন্টারনেট অথবা কম্পিউটার চালানোর জন্য বিবর্তিত নয়, আমি প্রস্তর যুগের মানুষ, গুহাবাসী। আর্টিফিশিয়াল বিশ্বের সাথে আমার ডিএনএ পুরোপুরি কানেকশন খুঁজে পাচ্ছে না। ডিজিটাল বিশ্বের স্ট্রেস, টেনশন ও প্রেসার আমাকে দিন দিন অমানুষ করে তুলছে, আমি আগ্রাসী, সাংঘর্ষিক, টক্সিক, নার্সিসিস্ট ও সাইকোপ্যাথ হয়ে যাচ্ছি।

আমার ডিএনএর ১.৫% মানুষ দিন দিন পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে, আগামী এক হাজার বছর পর আমি মানুষ থেকে অনেক বেশি অমানুষ হয়ে যাব, হোমো ইরেক্টাস যেমন হোমোস্যাপিয়েন্স হয়েছিল, আমিও হোমোস্যাপিয়েন্স থেকে ট্রানসেন্ডিসেপিয়েন্স হয়ে যাব।

 

আমি কন্ট্রোল, অল্টার, এন্টার… তখন একদল মানুষ চেঁচিয়ে বলে, তুই একটা ডাস্টবিন, তুই একটা পাবলিক টয়লেট… তুই স্যানেটারি ন্যাপকিন।

 

আমার বুক কেঁপে ওঠে, আমি ব্যাথায় কুচকে যাই। এই মহান সত্য, তোমাদের কারণেই আমি অনুভব করেছি। তোমাদের ধন্যবাদ। আমি অনুভব করি, আমি একটা ডাস্টবিন কারণ একটি ডাস্টবিন যে ইলেক্ট্রন, প্রোটন, ফোর্সফিল্ড ও ফিজিক্সের ইকুয়েশন মেনে চলে, আমি তার সাথে একই ইকুয়েশন শেয়ার করেছি। মহাবিশ্বের সাথে আমি ১০০% ফিজিক্সের ইকুয়েশন শেয়ার করি। এখান থেকে ১০- ১৩ বিলিয়ন লাইট ইয়ার্স দূরের একটি কোয়েসার ও গ্যালাক্টিক ক্লাস্টার যে কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও রিলেটিভিটির নিয়ম মেনে চলে, আমিও একই নিয়ম মেনে চলছি। তখন একদল আমাকে বলে, তোকে খুন করে ফেলব। তোর এ জগতে থাকার কোনো অধিকার নেই। তখন আমি আবারও ধাক্কা খাই! আমি কী এ মহাবিশ্বের নাকি আমি মাল্টিভার্স ও প্যারালাল ইউনিভার্সের? কোয়ান্টাম এন্ট্যাংগেলমেন্ট থিওরি বলছে, দুটি মহাবিশ্বের ইলেক্ট্রন কোয়ান্টাম স্তর থেকে কানেক্টেড। অন্যকথায় মহাবিশ্বগুলোর মধ্যে কোয়ান্টাম স্তরে স্পেস-টাইম নেই, আছে ইনফরমেশনাল ও কোয়ান্টাম কানেকশন। ওহ! আমি ও মাল্টিভার্স একই ইনফরমেশন ফিল্ডে বাঁধা! স্পেস-টাইম আমার মস্তিষ্ক ও কোয়ান্টাম স্তরের ইন্টারেকশন থেকে তৈরি একটি এমার্জেন্ট প্রোপার্টি। ওরা আমাকে ব্রুনোর মতো আগুনে পুড়িয়ে দিল। তারা বলল, তুই অবিশ্বাসী, তুই একটা নাস্তিক!