বাঙ্গালী বিশ্বস্ত প্রজার জাত। রাজার প্রতি তার ভক্তি শ্রদ্ধা অপরিসীম। বাংলাভাষার শব্দসম্ভারে তাই রাজা বা রাজসম্পর্কিত শব্দের বিপুল সমাহার। শুধু অভিধানের প্রমিত শব্দাবলী নয় আঞ্চলিক শব্দেও রাজার উপস্থিতি একেবারে অনুল্লেখযোগ্য নয়। বাঙ্গালী ব্যাপকভাবে শ্রুত বা কথিত যে শব্দটির প্রতি অধিকমাত্রায় আসক্ত সে শব্দটি হল রাজনীতি।ইংরেজি পলিটিক্স শব্দের বাংলাকরণ হয়েছে রাজনীতি অথচ পলিটিক্স শব্দ এসেছে গ্রীক পলিটিকা থেকে যার অর্থ নগর সংক্রান্ত বিষয়।কিন্তু বাংলাতে পলিটিক্সে নগর নেই আছে রাজ বা রাজা সংশ্লিষ্টতা। দেশের শাসনকার্য পরিচালিত হয় যে শহর থেকে ইংরেজিতে তার নাম ক্যাপিটেলসিটি কিন্তু বাংলায় আমরা বলি রাজধানী।এখানে রাজা থাকেননা তবুও তা রাজধানী।ইংরেজিতে বড় বড় রাস্তা বুঝাতে ‘কিংস ওয়ে বা ‘রয়েল ওয়ে’ বলে কোনো শব্দ নেই আছে ‘ফ্রী ওয়ে’ বা ‘হাই ওয়ে’ কিন্তু বাংলা বড় বড় সড়ককে বলে রাজপথ।রাজপথ মানে রাজার পথ।রবীন্দ্রনাথ শব্দটাকে ভেঙ্গেই বলেছেন-‘রাজার পথে লোক ছুটেছে। আর বর্তমান রাজনীতির সাথে এই রাজপথতো অঙ্গে অঙ্গে জড়িত। রাজনীতির নেতা কর্মীরা তাদের নেতা নেত্রীদের অভয়দান করে শ্লোগান দেন-নেত্রী তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।রাজপথ দখলে রাখা আর রাজসিংহাসন দখলে রাখা প্রায় সমার্থক। যারা এই শ্লোগান দিচ্ছেন অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে তাদের নামের আগে যুক্ত হবে অমুক দশকের রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা বা যুবনেতা ইত্যাদি  বিশেষণ।আবার এই রাজপথ কাঁপানোরা যখন জেলে যায় তখন তারা হয়ে যায় রাজবন্দি।রাষ্ট্রীয় কোষাগারের নাম রাজকোষ।হবেইতো।রাষ্ট্র আর রাজাতো সমার্থক।যাহা রাষ্ট্রের সম্পদ তাহাইতো রাজার সম্পদ। যারা ইট পাথর সিমেন্ট বালু দিয়ে নির্মাণের কাজ করেন ইংরেজিতে তাদের বলা হয় মেসন কিন্তু বাংলায় তারাই রাজমিস্ত্রি। মেসন কেন রাজমিস্ত্রী? কারণটা সহজেই অনুমেয়। আমাদের অকুল দারীদ্রতা।খড় বাঁশের ঝুপড়িতে থেকে ইট পাথরের গৃহনির্মাণকে রাজকর্ম ভাবাটাই এককালে স্বাভাবিক ছিল আর যারা এই কর্ম করে স্বাভাবিকভাবে তারাই হবে রাজমিস্ত্রি বা রাজার মিস্ত্রি।

বাংলাতে বৃহৎ বা শ্রেষ্ট অর্থে রাজা শব্দের ব্যবহারও লক্ষণীয়।এটা খুবই স্বাভাবিক। রাজার চেয়ে কেউ বড় হবে শ্রেষ্ট হবে অথবা সুন্দর হবে এটা অকল্পনীয়।রাজা মানেই বিপুল বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক তাই আদরের সন্তানকে বলা হয় সাতরাজার ধন। অগাধ ধন সম্পদের মালিক হলে বলা হয় রাজকপাল। গ্রামদেশে একটা কথা প্রচলিত আছে ‘রাজার সাথে হাজা ধরা’ অর্থাৎ রাজার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করা এক  মহা মুঢ়তার কাজ।রাজা আর রাজপুত্র রাজকন্যাগণ সৌন্দর্যের চূড়ান্ত ইউনিট তাই বিয়ের পাত্র পাত্রীর উপমাতে আসে রাজপুত্র রাজকন্যার কথা।বিলাস ব্যাসন আনন্দ উপভোগের উপমায়ও আসে রাজার কথা তাই বিত্ত বৈভবে বাস করাকে বলা হয় রাজার হালে থাকা।অতি উত্তম খাবারদাবারকে বলা হয় রাজভোগ।দর্শনীয় বাড়ি তৈরি করলে বলা হয় রাজবাড়ি।এই সূত্রেই নাগকেশরের নাম রাজপুষ্ফ,উন্নত গ্রীবা এবং আকারে বৃহৎ হাঁসের নাম রাজহাঁস।হিংস্র এবং মহা শক্তিমান সিংহকে বলা হয়ে থাকে বনের রাজা। প্রকান্ডদেহী বিষধর সাপের নাম রাজগোখরা এমনকি এক সময়ের দুরারোগ্য এবং আতঙ্কজনক রোগ যক্ষার নাম রাজরোগ।বিখ্যাত খনার বচনে প্রাকৃতিক আনুকুল্যেও খোঁজা হয়েছে রাজার কৃতিত্ব যেমন ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ,ধন্য রাজার পূণ্য দেশ’ইত্যাদি।বিশাল কর্মকান্ড বুঝাতে বলা হয় রাজসোয় যজ্ঞ।এর সমার্থক আরেক শব্দ ‘রাজা রাজরার কাজ।কোর্ট কাছারিতে যদিও রাজদন্ডকে সরিয়ে কারাদন্ড স্থান করে নিয়েছে কিন্তু রাজস্বাক্ষী আছে বহাল তবিয়তে। অবশ্য রাজা নিয়ে নেতিবাচক শব্দও আছে যেমন ‘রাজার বান্দর’। ধুরন্ধর চরিত্রকে বুঝাতে এই বিশিষ্টার্থক শব্দটির ব্যবহার হয়ে থাকে।আছে ‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট প্রজা কষ্ট পায়’ এমন আপ্তবাক্যও। রাজা মহারাজা নিয়ে উচ্ছসিত সকল শব্দের বিপরীতে  ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতবাহী শব্দও আছে যেমন-‘রাজা উজির মারা’ যদিও এটি মৌখিক আস্ফালনকেই নির্দেশ করে কিন্তু রাজা উজিরকে মারার সাহসী ইঙ্গিতটিও এর মাঝে সুপ্ত আছে হোকনা তা চাপাসর্বস্ব। চিরকালের রাজভক্ত এবং ভীরু বাঙ্গালীর মাঝে রাজাকে মারারও যে ভাবনা থাকতে পারে তাও চাট্টিখানি কথা নয়।

 

 

 রাজা আর ধর্ম পরস্পরের ঘোড়া

রাজা আর ধর্ম চিরকালই গলাগলি করে চলেছে।রাজা রক্ষা করেছে ধর্মকে।ধর্ম রাজাকে বানিয়েছে ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রতিনিধি।ধর্ম শিখিয়েছে ‘রাজ-দর্শন’ অতিশয় পূণ্যের কাজ এমনকি রাজাকে স্বপ্নে দর্শনও সৌভাগ্যের লক্ষণ।বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই এই সাম্প্রতিক সময়ের কথাই ধরুন। কাবা মসজিদের গ্রান্ড ইমাম যুবরাজ সালমানকে আল্লাহ প্রেরিত ঘোষণা করে জুম্মার খুৎবা দিয়েছেন।এতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন প্রতি শতাব্দীতেই মুহাম্মদ(দঃ) এর মত মুজাদ্দিদ পৃথিবীতে আগমন করেন।যুবরাজ সালমান বিন তেমনি আল্লাহর বিশেষ সওগাত, ইত্যাদি।এটাই স্বাভাবিক।গ্রান্ড ইমাম রাজপরিবারের বেতনভুক কর্মচারী। তার ভরনপোষণে অবদান রাখছেন রাজা সুতরাং রাজপুত্রের দুর্দিনে তাকে অবশ্যই ধর্মের বর্ম নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।প্রয়োজনে ধর্মের নতুন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবেন।এমনকি দরকার হলে মৌলিক অনেক কিছু বদলে ফেলতেও পিছপা হবেননা।যার জন্য ধর্ম টিকে আছে তাকে ধর্মের প্রয়োজনেইতো রক্ষা করতে হবে।আমাদের দেশেও এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।বঙ্গবন্ধু সেক্যুলার রাজনীতি করতেন তাই ডানপন্থীদের কাছ থেকে তিনি কখনও ভাল মুসলমানের  স্বীকৃতি পাননি।তাঁকে হিন্দুস্থানের দালাল কাফের ইত্যাদি নানাবিধ নেতিবাচক উপমায় গালাগাল করা হয়েছে।কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর নীতি আদর্শ আর ব্যক্তিগত আমল আখলাক দ্বারা পিতৃদেবের অপবাদ অনেকটাই ঘুচাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁকে আলিম সমাজের বড় একটি অংশ আনুষ্টানিকভাবে ‘কওমি জননী’ উপাধীতে ভূষিত করেছেন। এমনকি আলিমদের যে অংশটি এর বিরোধিতা করেছেন তারাও বলছেন-মুসলমান কওমের পিতা ইব্রাহিম (আঃ) সুতরাং কওমি জননী হতে হলে শেখ হাসিনাকে ইসলামে আরও বেশি পা-বন্দ হতে হবে।আলিম সমাজের প্রতি আরও বেশি উদার হতে হবে।তিনি হবেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।রবীন্দ্রনাথের ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ কৌতুক নাটিকার একটি ঘোর তাৎপর্য আছে।একবার ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ খ্যাতি পেয়ে তিনি যে উদারতা দেখিয়েছেন তার খেসারত এখন শুরু হয়েছে।রোহিঙ্গারা আর নিজভূমে ফিরে যেতে চাইছেনা।‘আরাকানে নো যাইয়ুম’ শ্লোগান দিয়ে ওরা বিক্ষোভ মিছিল করছে।বাধ্য হয়ে তাই ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়াটিই লম্বা সময়ের জন্য স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। এবার ‘কওমি জননী’ হয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়েন তাই দেখার বিষয়। তবে বিড়ম্বনা যদি শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করতেন আমাদের বলার কিছু ছিলনা কিন্তু এই দুর্বহ পাথরটি যে দরীদ্র জাতির শ্বাসনালীর উপর চেপে বসছে তাই উদ্বেগের বিষয়।অবশ্য ধর্মের টিকাদারগণও এখানে বিপুল সম্ভাবনা দেখে  ডালা উজাড় করে দিতে প্রস্তুত।সোসাল মিডিয়ায় দেখলাম কেউ কেউ এখন কোরান হাদিসের আলোকে বঙ্গবন্ধুকে ‘খলিফাতুল মুসলেমিন’ হিসেবেও আখ্যায়িত করতে শুরু করেছেন।এই স্তবগান আগেও হয়েছে।তার আগেও হয়েছে।

ইউরোপ রাষ্ট্রকে চার্চ নামক এনাকুন্ডার আলিঙ্গণ থেকে মুক্ত করেছে অনেক বছর আগে।আমাদেরও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বিনির্মাণের শুরুটা হয়েছিল সেই প্রত্যয় নিয়েই।ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল।কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই সেই ‘পুরনো শকুন’ ফিরে আসে নতুন উদ্যমে।ধর্মের লেবাসযুক্ত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা হুহু করে বেড়ে যায়।এখন এই ধর্ম সওদাগরদের প্রভাব এতই প্রবল যে এদের অঙ্গুলি নির্দেশে অনেক রাষ্ট্রীয় ঘোষণা মুহুর্তে ইউটার্ন হয়ে যায়।ধর্ম আর রাজনীতি এখন এক দেহে লীন হয়ে গেছে।

 

হালের রাজা,কালের রাজা ;

বাংলা অভিধান ও ভাষায় রাজাসংক্রান্ত শব্দ বা বিশিষ্টার্থক শব্দাবলীকে রাজা আর রাজত্বের ধ্বংসাবশেষ ভাবার অবকাশ নেই।রাজাগণ ভিন্ন মোড়কে রাষ্ট্রে এখনও অস্থিত্বশীল।আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ হলেও এর পোষাকি নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। ইংরেজি রিপাবলিকের বাংলাকরণ করা হয়েছে প্রজাতন্ত্র। ল্যাটিন রেস পাবলিকা থেকে রিপাবলিক শব্দের উদ্ভব।লেস পাবলিকার সংজ্ঞানুসারে রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তি বা শাসকের সম্পত্তি নয় জনগণের। অথচ এই শব্দের বাংলায়ন হয়েছে প্রজাতন্ত্র।প্রজার মূল অর্থতো রায়ত।পাবলিকের বাংলা জনগণ হলেতো হওয়া উচিৎ ছিল জনতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র কেন? প্রজাতন্ত্র শব্দের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের নিভৃত রন্ধ্রে অদৃশ্য রাজার অস্থিত্ব স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই আমাদের দেশের শাসকবর্গ নিজেদের মাঝে মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাহর নিরব অস্থিত্ব অনুভব করেন।গণতান্ত্রিক থেকে শুরু করে সামরিক স্বৈরশাসক সবার মাঝেই এই রাজা সিম্পটমের অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।একমাত্র বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের কয়েকটি বছর এর কিঞ্চিত ব্যতিক্রম ছিল।বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে রাজার সিম্পটম ছিলনা তা নয় কিন্তু তার চারপাশে এমন কিছু ঋজু মেরুদন্ডধারী মানুষের অস্থিত্ব ছিল যারা তাঁর মুখোমুখি বসে কথা বলতে বা ভিন্নমত প্রকাশ করার সাহস রাখতেন বা বলা যায়  প্রশ্রয় পেতেন।কিন্তু পঁচাত্তরের ট্রাজিডি শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি রাষ্ট্রযন্ত্রের আশপাশে থাকা দেশের মেরুদন্ডওয়ালা মানুষদেরও বিলুপ্ত করে গিয়েছে।পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ যে কজন শাসক পেয়েছে তারা ক্ষমতায় স্পর্ধায় যথাযতই মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাহর আক্ষরিক প্রতিচ্ছবি।তারা এক একজন ঈশ্বরের চেয়েও ক্ষমতাবান এবং সার্বভৌম।ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করা যায় ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় কিন্তু এই মহাশক্তিমান শাসকদের ক্ষমতা জ্ঞান গরিমা অস্বীকার করার ক্ষমতা কারোরই নেই।বিলাস ব্যসন রূঢ়তা এবং দাম্ভিকতায় যতাযত একজন প্রবল প্রতাপান্বিত সম্রাজ্ঞির প্রতিমূর্তি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।দলের সিনিওর নেতাগণ তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম না করলে তিনি রুষ্ট হতেন।মহিলা নেত্রীগণ তাঁর পা ম্যাসেজ করতেন।রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক এমনকি প্রতিষ্টানকেও তিনি চাকর-বাকরের পর্যায়ে মনে করতেন।তাঁর ধমক থেকে স্বয়ং আদালতও রক্ষা পায়নি।তাঁর ব্যক্তিগত বিলাস বৈভব সাজ সজ্জা কিংবদন্তিতুল্য। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি মিসরীয় সম্রাটদের মমির মত ব্যক্তিগত পরিচারিকা নিয়ে কারাগমন করেছেন। আচার আচরণ দাম্ভিকতায় রকমফের থাকলেও অতীত বা বর্তমানের সকল শাসকের মাঝেই এই সম্রাট বা সম্রাজ্ঞির অস্থিত্ব ষোল আনা উপস্থিত।এই শাসকগণ ছাড়া দেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্টান পূর্ণ স্বাধীন নয় এবং প্রতিটি নাগরিক বা প্রতিষ্টান শাসকের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের অঙ্গুলি ইশারামাত্র দেশের সবচেয়ে  খাঁটি এবং পন্ডিত ব্যক্তিটিও মুহুর্তে তস্করে পরিণত হতে পারেন। শাসকের চারপাশের বিভিন্ন পদ পদবীধারী রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে মন্ত্রী সাংসদ আমলা পুলিশ সকলেই দমদেয়া পুতুলের মত প্রধানের আজ্ঞা পালনের জন্য একপায়ে খাড়া। অভিজ্ঞ নাবিক যেমন বাতাসের বাও দেখে অকূল দরিয়ায় নৌকা ভাসায় তেমনি এই পারিষদদলও তাকিয়ে থাকে শাসকের মুখের দিকে।কী করলে শাসকের মুখে হাসি ফুটবে কোনটি তাকে ক্রোধান্বিত করবে তার হিসেবনিকেষ করে তাদেরকে কাজ করতে বা কথা বলতে হয় এই অর্থে এদের শতভাগই হল তোষামোদে আচ্ছন্ন।এদের সার্বক্ষণিক কাজ হল শাসকের তুষ্টিদান।

সুতরাং বলা যায় আমাদের দেশে রাজা ছিলেন রাজা আছেন। ছিলেন বিজাতীয় ভিনদেশী  আছেন স্বজাতীয় স্বদেশী,পার্থক্যটা এখানেই। পাঁচ বছর পরপর জনগণ ছাগলের কসাই নির্বাচনের মত তাদের দন্ডমুন্ডের কর্তা নির্বাচন করে।রাজা যায় রাজা আসে।জনগণ অধীনস্ত প্রজা হয়ে যথার্থই চলছে রাজার পথে।পুরো দেশটাই তাই তাদের পথের অনুসঙ্গি।দেশ এখন রাজাবদল বা রাজানির্বাচনের ঘোর সন্ধীক্ষণে। বাংলাদেশ রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে একটি মহা দ্বৈরতের।“ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে……….গুরু গর্জনে নীল অরণ্য শিহরে।জাতিও অধীর আগ্রহ নিয়ে রোমাঞ্চিত শিহরিত।রাজায় রাজায় যুদ্ধে একজন জয়ী হবে পরাজিত হবে অপরজন এতে  কী পরিমান উলুখাগড়ার প্রাণান্ত হয় তাই শেষপর্যন্ত দেখার বিষয়।