সুইডিশদের কাছে হ্রদটির নাম ট্রলশোন (Trollsjön) কিন্তু আদিবাসী ’সামি’ সম্প্রদায় অনেক আগেই এর নাম দিয়েছে সামি ভাষায় রিস্সাআউরে (Rissajaure)। সামি সম্প্রদায়ের মানুষই হ্রদটি প্রথম আবিষ্কার করে। সুইডেনের শত শত হ্রদ থাকতে এই হ্রদ তাহলে কেন গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক। কিরুনা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ট্রলশোন হ্রদের বৈশিষ্ট্য হল এটি স্বচ্ছ ও এর পানি বিশুদ্ধ! হ্রদটির গভীরতা ৩৪ মিটার (১১২ ফুট) এবং সারফেস- ৮১৫ মি (২,৬৭৪ ফুট)। হ্রদটি এতোটাই স্বচ্ছ যে এর তলদেশ অনায়াসে দেখা যায়। বছরের ৯ মাস হ্রদের পানি বরফে পরিণত হয়। তাই সামারের মাত্র তিন মাস এই হ্রদে পানি থাকে।

মাস খানেক আগে যখন গেলাম তখন এতো বেশি বাজে আবহাওয়া ছিল যে হ্রদ দেখার কোন উপায় ছিল না।

”Trollsjön” অর্থ হল দৈত্য কিংবা অদ্ভুত আকৃতির মানুষের হ্রদ। Troll হল নর্স পুরাণ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান লোকাচারের এক প্রকার অদ্ভুত কুৎসিত মানব। পাহাড়ের এমন নির্জন এলাকায় ট্রলরা হয়তো বসবাস করতে এমন ধারণা থেকে হয়তো হ্রদটির নাম করণ ট্রলশোন করা হয়।

ট্রল সম্প্রদায়

ট্রলশোনে যেতে হলে মাত্র ৫ কি.মি পথ অতিক্রম করতে হয়। সমস্যা হল, পাহাড়ের অবস্থানের কারণে এর আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। প্রতি ঘণ্টায় আবহাওয়া পরিবর্তন হতে থাকে। প্রথমবার যখন আমি ট্রলশোনে যাই তখন সমগ্র হ্রদ দেখার সৌভাগ্য হয়নি! কারণ এতো বেশি ধোঁয়াশা যে সমগ্র হ্রদ দেখার লোভে প্রায় ৬ ঘণ্টা আমরা বসে ছিলাম। হঠাৎ মিনিট দুয়েকের জন্যে সূর্যের আলোয় হ্রদ দেখার সৌভাগ্য হয়। সে দিন ৮ ডি.সে মধ্যেও আমরা এই পরিষ্কার পানিতে ঝাঁপ দিই। সালমান খানের মতন ফিগার না হওয়ায় স্নানের কোন ছবি এখানে শেয়ার করছি না। তবে আজকে ভাগ্য দেবী কোন এক কারণে আমাদের সাথে ছিল। তাই বৃষ্টি ও ধোঁয়াশা আবহাওয়ার পর হঠাৎ করেই কয়েক ঘণ্টার জন্যে আকাশে সূর্য্যের দেশা মেলে।


পাহাড়ি হরিণ

ভাগ্য ভাল হলে ট্রলশোনে যাবার পথে হরিণের সাথে আপনার মোলাকাত হতে পারে। এখানকার মানুষ অকারণে কোন প্রাণীকে বিরক্ত করে না বিধায় বেশ কাছ থেকেই হরিণের কার্যক্রম অবলোকন করা যায়। হাঁটতে হাঁটতে অসংখ্য ঝর্ণার দেখা মিলবে। তাই পাহাড়ি ঝর্ণার বিশুদ্ধ পানি এবং পাহাড়ের বিনে ব্রুবারি সংগ্রহ করে খুব সহজে ক্লান্তি দূর করা যায়। সামারের তিন মাসে অসংখ্য মানুষ এই ট্রলশোন দেখতে আসে। ছুটির দিনগুলোতে তো কথাই নেই। এতো মানুষ আসার পরও এই পানি ও হ্রদের আশে পাশে এক চিমটে ময়লা নেই! কারণ মানুষ এখানে যা নিয়ে আসে ঠিক তা নিয়েই ফেরত যায়। ট্রলশোন থেকে মানুষ নিজেদের জন্যে শুধু নিয়ে যায় স্বচ্ছ হ্রদের বিশুদ্ধ পানি ও অপরূপ সৌন্দর্যের স্মৃতি।