লিখেছেন: সৌহার্দ্য ইকবাল

পর্ব-২ (প্রথম পর্ব এখানে)

কামাল হোসেন যে এপার্টমেন্টে থাকেন, তা ১৪ তলা। এই ১৪ তলা বিল্ডিং-এর ১২ তলায় সে থাকে। তাই লিফট ছাড়া ভাবা যায় না। অথচ লিফট দুই দিন থেকে নষ্ট, এটা কিভাবে হয় ? লিফট ছাড়া কিভাবে এত উপরে ওঠা যায় কিংবা নামা যায় ? শুধু কি তাই, পানির সাপ্লাইয়ে সমস্যা, গ্যাসে সমস্যা। এপার্টমেন্টের মালিক সমিতির বলেছে যে সবই আল্লাহর ইচ্ছা, বড় শহরে নাকি এসব নিয়েই বসবাস। কামাল হোসেন সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। এই শহরের সবকিছুই এই শহরের মত এবং কোন কিছুই যদি তার চাওয়ামত না হয়, তাহলে সে এখানে আছে কেন ? কম্প্রোমাইজ হয় দুইদিক থেকে, ঢাকা শহরের কোন কিছুই তার সাথে কম্প্রোমাইজ করে না, সে-ই শুধু কম্প্রোমাইজ করে যাবে ? সেই সাতসকালে বের হয়েও জ্যামে, এরপর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ক্লাস নেয়া এবং একেবারেই আগ্রহ নেই এমন একটা ক্লাসের ক্লাস নেয়া। একটু বেলা হলেই কলিগদের অর্থহীন সুখ-দুঃখ, পরিবারের গল্প,বিদ্বেষ বা রাগের কথা মুখ হাসি হাসি করে শুনতে থাকা। এদের কিছুই বলা যায় না, মুখ ভার করে থাকলে বলবে যে ভাব নেয়া হচ্ছে বা অসামাজিক; আগ্রহ নেই এই কথা বললে তো তাকে অফিস থেকেই বের করে দেয়া হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে গ্রুপিং আছে ভালই, কামাল হোসেন সব গ্রুপ’কে একইভাবে খাতির করেন যেন কোন গ্রুপে না পড়ে যান, খুব সুবিধে অসভ্য হয় নি এতে; অফিসের কলিগরা তাকে শেষপর্যন্ত মনে হয় না কেউ পছন্দ করে তেমন। সে যে কথা বলার মিথ্যে আগ্রহ দেখায়, এটা সম্ভবত তারা ধরে ফেলেন। সে যে রুমে বসে, সেখানে সে-সহ মোট ১০ জন বসে। দশজনের মাঝেও গ্রুপ আছে। এদিকে কামাল হোসেনের স্ত্রী জয়োস্মিতার নানা আবদার চলে ফোনে এর মাঝেই। জয়োস্মিতা প্রতিদিন তাকে ফোন করে পানি নেই কেন, গ্যাসের চাপ কম চুলায়, পাশের বাড়ির ভদ্রমহিলা কি বলেছে তার আপডেট দেয়। কামাল হোসেন এসব সব শুনে,তার এসব ব্যাপারে যে কোন আগ্রহ নেই, তা সে জয়োস্মিতা’কে বলতে পারে না। চুপ করে থাকলেও জয়োস্মিতা রাগ করবে, তাই কামাল হোসেন জয়োস্মিতার কথার পিঠে কথা বলে, প্রশ্ন করে। জয়োস্মিতা আরও আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে শুরু করে এবং কামাল হোসেন ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে; কারও কথার বাইরে সে তেমন কিছু বলতে পারে না। তার স্ত্রী’কে সে প্রচণ্ড ভালবাসে মনে হয়, না হলে সে কেন কখনও জয়োস্মিতা’কে বলতে পারে না যে সে ব্যস্ত বা শুনতে আগ্রহী নয় ! কলাবাগান থেকে মোহাম্মদপুরে সে বিকেলে রাশ আওয়ারে আসে পাক্কা এক ঘন্টা সময় নিয়ে। অফিসের বাস যেখানে নামিয়ে দেয়, সেখান থেকে কামাল হোসেন’কে আরও ১৫ টাকা রিক্সা ভাড়া দিতে হয়; কামাল হোসেন সাধারণত এই রাস্তা’টা হেঁটেই যান। কামাল হোসেন আজ একটু আগেই বের হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, মঙ্গলবার তার স্রেফ দুইটা ক্লাস, কোন ল্যাবে ডিউটি নেই। বের হয়ে অফিসের বাসের অপেক্ষা না করেই একটা লোকাল বাসে উঠে বসলো সে, সিটও পেয়ে গেল। সবুজ ছোটখাট একটা সিটে কামাল হোসেন গা এলিয়ে দিয়ে সাদা রুমাল বের করে ফেলল পকেট থেকে।

এই বিকেলে মানুষের ঘামের মাঝেও কামাল হোসেন প্রশান্তি পাচ্ছে, সে তার কালো ফ্রেমের চশমা বুকপকেটে নিয়ে কপালের সূক্ষ্ম ঘাম মুছে নেয় রুমাল দিয়ে। কামাল হোসেন’কে সুদর্শন বলা চলে, তার উচ্চতা ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি, শ্যামলা গায়ের রঙ। মাথা ভর্তি চুল এবং চাপ দাঁড়ি। জুলফি নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নেই তবে জয়োস্মিতার কথামতো সে জুলফি রেখেছে। ফোন বের করে সে দ্যাখে ১৭টা মিসকল, একটা মেসেজ। সুলগনা মেসেজ করেছে। কামাল হোসেনের মাথা কিছুক্ষণ কাজ করলো না, সুলগনা তাকে ফোন করতে বলেছে মেসেজ দেখামাত্রই, কামাল হোসেন ফোন করে সুলগনার ফোন বন্ধ পেল। সে আর কিছু করতে না পেয়ে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে একটু চোখ বন্ধ করে। সে মনে করলো সুলগনার কথা – কতদিন সে দ্যাখে নি মেয়েটাকে! আর কিছু না, কামাল হোসেনের মনে পড়ে সুলগনার সাথে প্রথমদিকের দিনগুলোর কথা। এই মেয়েটা তাকে কি অপমানই না করেছিল ভালবাসার প্রস্তাব করায়। সেই সময় কামাল হোসেন ব্যবহার করতো ফেইসবুক বেশ। ফেইসবুকে পরিচয় সুলগনার সাথে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একই শিক্ষাবর্ষে হলেও অন্য বিভাগে পড়তো মেয়েটা। অনলাইনে পরিচয়ের পড়ে কামাল হোসেন মেয়েটাকে দেখেই প্রেমে পড়ে যায়, তারা দুইজনই তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। মেয়েটা তাকে প্রথমে ভদ্রভাবে এড়িয়ে যায়, কামাল হোসেন বোকা ধরণের মানুষ। বারবার সে নক করতে থাকে তাই সুলগনা-কে, লাভ নেই জেনেও। এক পর্যায়ে সুলগনা তাকে উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দেয়। মাঝে মাঝে ‘হ্যাঁ’ ‘হু’ বা ‘আচ্ছা’ – এইরকম কথা লিখতো উত্তরে। সে’সব দেখে কামাল হোসেন কিছুদিন আত্মহত্যা করার কথাও ভাবে, এমনকি সুলগনা’কে সে সুইসাইড করার কথা বললে সুলগনা তাকে উৎসাহিত করে। সুলগনা জানতো যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঁতেল ধরণের, জীবনবাদী একটা ছেলে হুট করে আত্মহত্যা করবে না। কামাল হোসেনও জানতো যে তার এত সাহস নেই আদতে। সুলগনা’কে সে একটা ছোট করে চিঠি লিখে শেষ পর্যন্ত। সেই চিঠির কথাগুলো কামাল হোসেনের আজ আর মনে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটা প্রেমের চিঠি কেমন আর হবে, সবাই জানে। তবুও পাঠকের কথা ভেবে চিঠি’টা দেয়া হল। অনেকের আগ্রহ হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক প্রেমিকের চিঠি পড়তে, ফিরে যেতে নিজেদের অতীতে। দ্বিতীয় আরেকটা কারণ অবশ্য আছে। সেটা কামাল হোসেনেরও তেমন জানা নয়; কিন্তু আপনাদের বলে রাখি, এই চিঠি লিখে কামাল হোসেন সুলগনা নিয়ে তার যাবতীয় অবসাদ দূর করে ফেলে এবং আবার ফিরে আসে স্বাভাবিক জীবনে।

প্রিয় সুলগনা,
আমি নিতান্তই তোমার অপরিচিত, অন্য জগতের এক মানুষ। আমি মরে গেলে কিছুই আসবে যাবে না, যেমন তুমি বলেছো যে তোমার তরকারিতে লবণ কম বা বেশি হবে না। আজকাল একের পর এক ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনে যাই আর তোমাকে কল্পনায় ভেবে যাই আমার পাশে। ক্লাসিক্যাল মিউজিকের সাথে বাঙালি তরকারি রান্নার আসলেই সম্পর্ক নেই। তুমি আমাকে ভালবাসো না কেন তার হাজারটা কারণ থাকলেও হয়তো একটাও আসলে সত্যিকারের বাঁধা নয় – সেরকম কিছু থাকলে তো বুঝতাম এবং তোমাকে লিখতাম না। কিন্ত পৃথিবীতে আমাদের যাপন ঠিক তেমন হতে বাধ্য না, যেমন আমরা সবসময় ভাবি… আর তাই হয়তো আমি আফ্রিকায় না জন্মে এশিয়ায় কিংবা ‘On the Hills of Manchuria’- নামক Russian waltz অনেকের কাছেই অর্থহীন। আমি ভেবে দেখছি যে আমি তোমার কাছে কি চাইছি… এবং অবশেষে আবিষ্কার করেছি, তোমার কাছে ভালবাসা চাই আমি, আর কিছুই না। কিন্ত আবারও একই সমস্যা – তুমি কিভাবে আমাকে ভালবাসবে, তাই না ? আমি এই পর্যায়বৃত্তিক অবস্থা থেকে বের হতে একটা সরল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জগতের সবকিছু’কেই মেনে নিব। চারপাশের সবকিছু’কেই – কারণ আমার মনে হয় কিছু মানুষের যাপন স্রেফ মেনে নিতেই।

ভাল থেকো​

কামাল

চিঠিটা পড়ে সুলগনা অনেক কিছুই ভাবে। কামাল হোসেন নামের এই সরল মানুষের আসলে তার সমস্যা কোথায়, সে আসলেই বুঝতে পারে না কিন্ত এটাও সত্যি যে সে এই সম্পর্ক’টা চায় না, তার কাছে কোন সত্যিকারের অজুহাত আসলেই নেই কিন্ত ভালবাসা এমন একটা জিনিস যেখানে অজুহাত লাগে না ভালবাসার, তেমনি ভালবাসতে না পারারও অজুহাত লাগে না। কিন্ত একটা মানুষ জীবনের সবকিছুই এভাবে মেনে নিবে ? সুলগনা স্রেফ একটা মানুষের জীবন ঠিক এভাবে দেখাতে চায় না। সুলগনা কামাল হোসেনের সাথে দেখা করে। তারা নানা অর্থহীন কথা বলতে থাকে কফির টেবিলে বসে, একসময় কফিও শেষ হয়ে যায়। কামাল হোসেন এবং সুলগনা নিয়মিত কফি খেতে যায়, এমনকি বৃষ্টির একটা দিনেও একসাথে সিনেমাও দেখতে চলে গেল। ঠিক কখন কামাল হোসেন সুলগনার বন্ধু হয়ে পড়েছিল, সুলগনা জানে না। তার ছেলেটার সাথে থাকতে ভালোই থাকতো কিন্ত ভালবাসার কথা সে ভাবতো না, কামাল হোসেনও বলতো না। হয়তো বলতো না বলেই সুলগনা স্বস্তি পেত কিংবা বের হতো কামাল হাসানের সাথে নির্দ্বিধায়। একদিন এক বিকেলে কামাল হাসান’কে সুলগনা বলে রমেশের কথা, অল্পদিনের পরিচয়েই সে পছন্দ করে ফেলেছে রমেশ’কে। কামাল হোসেন কিছুই বলে না, চুপচাপ সুলগনার বিয়ের দাওয়াতে যায়। যেন সে জানতো যে এইদিন সে এভাবেই সুলগনার বিয়ে’তে চলে আসবে ভালমন্দ খেতে। সুলগনা’কে সেই চিঠি লেখার পর কামাল হোসেন নিজের জীবন’কে মেনে নিতে এমনভাবেই অভ্যস্ত করে তুলেছিল যে সে আসলে ভালবাসার চাহিদাসহ আর সব চাহিদাই সে সফলভাবে হত্যা করতে পেরেছিল। সে হয়ে পড়েছিল এমন এক তরুণ যার কোন উচ্চাশা ছিল না, কোন সফল মানুষ হবার অভিপ্রায় ছিল না। সুলগনা মাঝে মাঝে তাকে বিয়ের পরেও বাসায় দাওয়াত করেছে, পুরনো বন্ধু হিসেবে সে বাসায় গিয়ে চা খেয়ে এসেছে; সুলগনার মেয়ে (রুনী)-কে একবার বেশ বড় একটা খেলনাও কিনে দিয়েছিল। সেও বছর দেড়েক আগের কথা ! কামাল হোসেন দিনের পর নিজেকে এমনভাবে টেনে নিতে শিখেছিল যে যেখানে কেবল বেঁচে থাকাটাই ছিল জীবন। সে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করে এবং দেশের একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সুযোগ পায়। পরিবারের কথায় বিয়েও করে একটা। জয়োস্মিতা নামের এমন একটা মেয়ে’কে যে কখনই স্বামীর সংসার যাপনের বাইরে কিছু ভাবে নি এবং তার কাছে জীবন মানে ছিল শেষপর্যন্ত কামাল হোসেনের সাথে একছাদের নিচে পার করে দেয়া। কামাল হোসেনের সাদাসিধে যাপনের আস্তরণের নিচে চাপা পড়ে থাকা বিপুল জীবন কখনও সে খোঁজ করে নি। কামাল হোসেন একসময় বাম রাজনীতি করেছে, মিছিলে গিয়ে মাথা ফাটিয়েছে শ্রমিকদের জন্য এবং এসবের পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে তর্কে-বিতর্কে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। ঠিক সেই মানুষটাই সবার সামনে বদলে গেল, কাছের বন্ধুরাও ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি পরিবর্তনটা; কামাল হোসেন নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে ছিল খুবি চাপা স্বভাবের। কামাল হোসেনের সেই বিপুল যৌবন যাপন জয়োস্মিতা কখনই জানে নি, সে ভাবে মানুষটাই এমন। ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করে সে স্বামীর সংসার করে যাচ্ছে এবং এই সংসারই তার কাছে কর্মক্ষেত্র, সে ভাবে নি হিন্দি বা বাংলা সিরিয়ালের ঘরের মাঝে থাকা মহিলাদের বাইরের যাপনের কথাও। সে পরিবারের কথা অনুসারে কামাল হোসেন’কে বিয়ে করেছে এবং কলেজে পড়াকালীন সময়ে নানা ছেলে দেয়ার চিঠি সে বিয়ের আগের রাতে কুচি কুচি করে কেটে ফেলে দেয়। বেশিভাগ চিঠিই সে অর্ধেক পড়ার পর আর পড়ে নি কারণ সব চিঠির কথাই ছিল প্রায় একইরকম। জয়োস্মিতা শিখেছিল পরিবার থেকে যে সুন্দরী মেয়েরা এভাবে চিঠি পায় এবং যারা চিঠি দেয় তাদের বেশিরভাগই বখাটে ছেলেপেলে, তাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। কামাল হোসেন, এই অতি সরল মেয়ে’র ভাবনাচিন্তার জগত অতিক্রম করে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে কিছুদিনেই। তবুও সে এই সরল চিত্রনাট্যে হাঁপিয়ে ওঠে নি বরং আমরা বলতে পারি, এতকিছুর পরেও, কামাল হোসেন জয়োস্মিতা’কে ভালবাসে। মনেপ্রাণেই ভালবাসে। সেই ভালবাসায় খাঁদ নেই এতটুকুও। কামাল হোসেন এসব ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেছে কখন তার বাসার সামনে নিজেও খেয়াল করে নি। এপার্টমেন্টের লিফট ভাল হয়ে গিয়েছে, এই ভয়াবহ আনন্দের ব্যাপার সে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস দিয়ে গ্রহণ করে ফেলে এবং বাসায় কলিংবেল টেপে খানিকটা নির্ভার মন নিয়েই। জয়োস্মিতা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে। কামাল হোসেন একটা আশ্বস্ত হাসি দেয় তার দিকে, কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে সে চলে যায় সোজা শোবার ঘরে। জয়োস্মিতা পিছনে পিছনে এসে শুয়ে পড়ে। তার গাল খানিকটা লালচে লাগছে আর ফোলা ফোলা। কামাল হোসেন কাপড় ছাড়তে ছাড়তে জয়োস্মিতার মুখের কাছে নিজের মুখ’টা নিতেই জয়োস্মিতার গরম নিঃশ্বাস পেল, সে জয়োস্মিতার গালে হাত দিয়েই চমকে ওঠে, বেশ জ্বর। জয়োস্মিতা হাসে, সে নির্ভার হয়ে কামাল হোসেনের গাল স্পর্শ করে; কামাল হোসেন জয়োস্মিতার হাতের উত্তাপ টের পায়। ওর যে জ্বর এসেছে, সে বুঝতে পারে। সে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে, জয়োস্মিতার মাথা’টা কোলে নেয়,জয়োস্মিতার অসম্ভব সুন্দর নাকে আর কপালে চুমু খেয়ে তার চুলে বিলি কাটতে থাকে।

“প্যারাসিটামল দেব?”​

“খেয়েছি একটা। তেমন কিছু না, তুমি কাছে থাকো এখন, কোথাও যেও না”​

“আচ্ছা, লিফট ঠিক হয়ে গ্যাছে”​

“হোক, তাতে কি আর সব ঠিক হবে, বলো? এই যে জ্বর, রান্না করতে হবে, কালকে ফ্রিজে রাখা মাছ দুপুরে খেয়েছি,
রাতের জন্যে কিছু আর নেই”​

“আমি আছি কেন, ভাবতে হবে না। ঘুমাও তুমি একটু, বাইরে খেয়ে নেব দরকার হলে”​

“বাইরে কি খাবে! তোমার জন্য নাস্তা আছে টেবিলে আর শোন আমাকে ডেকে দিও এক ঘন্টা পরে; তুমি যে মাছ আনলে, ঐ যে রুই একটা আড়ং থেকে, ওইটা তো কেটেই ফ্রিজে রেখেছে বুয়া, আমি রান্না করব। মাছ’টা ভালই মনে হয়েছে, গতবারের মত পচা গন্ধ নেই এবার”

কামাল হোসেন জয়োস্মিতা’কে বুকে টেনে নেয় কিছু না বলে, এত কথা কিংবা সংসার – সবকিছু মুলতবি আপাতত। একটু পরে দুইজন নির্বাক মানুষ শামুকের মত আলিঙ্গন করে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ন’টায় কামাল হোসেনের ঘুম ভেঙে গেল। ফোনে সময় দেখতে গিয়ে সে দেখে সুলগনার আরও কয়েকটা মিসড কল। সুলগনা’কে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত একটা কণ্ঠ ভেসে এলো।

( চলবে…)