আমাদের দেশের মানুষ ভারতবিদ্বেষী। সেটা অবশ্য মুখে মুখে। হিন্দি গান ছাড়া আজকাল দেশে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান হয় বলে মনে হয় না। আর ঘরে ঘরে ভারতীয় সিরিয়াল তো অসম্ভব জনপ্রিয়। আমাদের দেশে বলিউডি সিনেমা যে কত জনপ্রিয় তার একটা সহজ উদাহরণ হচ্ছে আমাদের সিনেমাহলগুলোতে ভারতীয় ছবি মুক্তি দেয়ার বিরুদ্ধে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পীদের কঠোর অবস্থান। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এর ফলে এদেশের মানুষ শুধু ভারতীয় সিনেমা দেখতেই হলে যাবে, দেশী চলচ্চিত্রশিল্প একেবারে মুখ থুবড়ে পড়বে। এ থেকে বুঝা যায় আমাদের দেশে ভারতীয় সিনেমা কতটা জনপ্রিয়। আর ঈদ আসলেই বলিউডি ফ্যাশনের পোশাক, গহনা এগুলোর বাজারের রমরমা অবস্থা দেখি আমরা। এ থেকে বুঝা যায় মুখে আমরা ভারতবিরোধিতা করলেও আদতে এটা ভন্ডামি ছাড়া কিছু না। আমার কাছে মনে হয় এই নাচা-গানা আর মৌজ মাস্তিতে যেহেতু পাকিস্তানের কোন কিছু নাই তাই ভারত ছাড়া এদেশের মানুষ অসহায়। কিন্তু ক্রিকেটে ব্যাপারটা অন্য। ক্রিকেটে পাকিস্তান অন্যতম পরাশক্তি, এজন্য ক্রিকেটের ব্যাপারে এলেই ভারত-বিদ্বেষের কদর্যরুপটা বোঝা যায়। বোঝা যায় যে এই ভারতবিদ্বেষটা দেশপ্রেম থেকে উত্থিত নয়, এর পেছনে রয়েছে স্রেফ সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা। ক্রিকেটে ভারতবিদ্বেষটা হালাল করার জন্য যে যুক্তিগুলো দেয়া হয় সেগুলো যে আসলে খোড়া এবং পাকিপ্রেমকে আড়াল করার জন্যই-এটা নিয়েই এ পর্যালোচনা।

শুরুতেই বলেছি, ক্রিকেট আসলেই একমাত্র ভারতবিদ্বেষের চরম কদাকার রূপটি আমরা দেখতে পাই। এর কারণ হিসেবে আমাদের দেশের প্রতি ভারতের অনাচারের কথাটা তোলা হয়। যেমন, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না করা, ফেলানি হত্যা ইত্যাদি। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই লোকগুলোই এতোদিন পাকিস্তান সমর্থন করার সময় বলত খেলার সাথে রাজনীতি মেশানো ঠিক না! অথচ ইন্ডিয়ার বেলায় রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধনীতি সবই মেশাচ্ছে! এটা হচ্ছে ভন্ডামির প্রথম প্রমাণ। আসল কথা হচ্ছে, তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে ধর্মের জন্য, ইন্ডিয়াকে ঘৃণা করে ধর্মের জন্য; এখন ধর্মের কথাটা তো সরাসরি বলা যায় না, তাই ফেলানি, তিস্তা এসব এনে সেই বিরোধিতাকে হালাল করা হয়। সেক্ষেত্রে এই পুরোনো প্রশ্নটাই থেকে গেল-

পাকিস্তানের বেলায় খেলার সাথে রাজনীতি মেশানো যায় না, তাহলে ভারতের বেলায় কেন?

এই প্রশ্নের জবাবে ২য় আরেক ধরণের চতুর ভন্ডদের খোজ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যে যুক্তিটি দেয়া হয় সেটি হচ্ছে, যেহেতু ইন্ডিয়া ক্রিকেটে আমাদের সাথে অনাচার করে সেহেতু ক্রিকেটেই আমরা শুধু তাদের বিরোধিতা করি। এই যুক্তিটা হচ্ছে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ যুক্তি। কারণ কথা সত্য, ইন্ডিয়ার সাথে ২০১৫ এর বিশ্বকাপ ম্যাচটা বিতর্কে ভরা। আর ইন্ডিয়া আমাদেরকে কখনই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানায় নি। কাজেই ওরা আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। সেইসাথে ক্রিকেটে কুলীনতত্ত্ব বা বিগ-থ্রি এর নামে তারা বাংলাদেশের উত্থান থামাতে চায়। এই যুক্তির সবচেয়ে নিরাপদ জায়গাটি হল, এখানে ফেলানির নাম নিতে হয় না, সীমান্তের অস্থিরতার ব্যাপারটাগুলো আনতে হয় না। ফলে এই মাধ্যমে শুধু ক্রিকেটে ইন্ডিয়াকে গালি দেয়া, আর সেই সুযোগে পাকি ভাই ব্রাদারকে পশ্চাদদেশ লেহন করার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল চলছে। পাকিস্তান মোটামুটি বিশাল ব্যবধানে জিততে চলেছে। হোমপেজে যেরকম উল্লাস দেখছি তাতে মনে হচ্ছে পাকিস্তান নয়, যেন বাংলাদেশ জিততে চলেছে। বাবা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন, আশেপাশের বিল্ডিং থেকে মুহুর্মুহু উল্লাসধ্বণি শুনেই বুঝতে পা্রছিলেন ইন্ডিয়ার একেকটা উইকেট পড়তেছে। বুঝলাম ইন্ডিয়া অনেক খারাপ, কিন্তু বিপক্ষের দলটা তো পাকিস্তান। ২৪ বছরের অর্থনৈতিক শোষন, এরপর ৩০ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, এথনিক ক্লিনসিং, ২ লক্ষ ধর্ষণ-এসবেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, গত ৪০ বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে কিভাবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা যায়, সেটার জন্য নানা পদক্ষেপ, ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত ছিল। সেই দেশের প্রতি তো আমাদের এতো ঘৃণা আমরা দেখি না! সেই দেশের জয়ে এমন উল্লাস? হোক বিপক্ষের দলটা ইন্ডিয়া!

এই লেখা লিখতে লিখতেই পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে গেল, বন্ধুদের কাছে শুনলাম তারা নাকি বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানের জয় উদযাপনে মিছিল বের হতে দেখেছে!

তো শুধু ক্রিকেটের বেলাতেই যদি আসি, যেখানে প্রতি পদে পদে ইন্ডিয়া আমাদের অপমান করেছে, সেক্ষেত্রে পালটা প্রশ্ন পাকিস্তান কি খুব ভাল ব্যবহার করেছে আমাদের সাথে?

শোয়েব আক্তার, ইউনুস খান থেকে শুরু করে রমিজ রাজা, আমির সোহেল বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে নানা ঠাট্টা মশকরা করেছে, আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সেগুলোর কারণে তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও আমাদের ঘৃণা থাকার কথা ছিল, সেটা নেই কেন? রশিদ লতিফ তো সোজা কথায় চৌর্যবৃত্তি করে আমাদের প্রথম টেস্ট জয় থেকে বঞ্চিত করেছিল, এবং এরপর তার শাস্তি চেয়ে বাংলাদেশ আইসিসি কাছে আবেদন করলে পুরো পাকিস্তান পারলে একরকম আমাদের উপর হামলেই পড়েছিল। এরপরও পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা এতো ঘৃণা দেখি না যতটা না ভারতের বিপক্ষে দেখি। একমাত্র সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা ছাড়া এই ধাঁধাঁর তো আর কোন সমাধান খুঁজে পাই না আমি।

এবার আসি সেই চতুর ভন্ডদের বেলায়, যারা মোটামুটি এই নিরাপদ যুক্তিটা বেছে নিয়েছে যে ক্রিকেটের বেলায় ইন্ডিয়াকে গালি দিয়ে উদ্ধার করাটা জায়েজ কারণ তারা আমাদের ক্রিকেটের উত্থানকে অবদমিত করতে চায়।

যে কথাটা তারা উহ্য রাখে সেটা হচ্ছে, তারা হিন্দি সিনেমা দেখবে, গায়ে হলুদে হিন্দি আইটেম সং এ নাচা-গানা করবে, এতে কোন সমস্যা নাই। বিষয়টা হচ্ছে, এতে মারাত্মক সমস্যা আছে।

অনেক বেশি সমস্যা আছে। ক্রিকেটে ইন্ডিয়ার আগ্রাসন আমাকে আলাদা করে খুব একটা চিন্তিত করে না। কারণ এটি সমানভাবে সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশকেই প্রাভাবিত করছে, বরং বাংলাদেশে এর অর্থনৈতিক প্রভাব কম পড়বে কারণ বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ক্রিকেট অসম্ভব জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং ক্রিকেটের উপর নির্ভর করে অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা এখন এতোই উর্ধ্বমুখী যে শুধুমাত্র দেশিয় জনপ্রিয়তাকে পুজি করে আমাদের ক্রিকেট এখন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। ক্রিকেট নির্ভর অর্থনীতির তাই বাড়তি কোন চালিকাশক্তির প্রয়োজন নেই। ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠী এবং ক্রিকেটের অসম্ভব জনপ্রিয়তা যেমন তাদের ক্রিকেট নির্ভর অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে ফেলেছে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সেই পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। এবং দেশের ভিতরে ক্রিকেটের এই অফুরান জনপ্রিয়তাকে বাইরের প্রভাব দিয়ে অবদমিত করা প্রায় অসম্ভব। কাজেই ক্রিকেটের ভারতের আগ্রাসন নিয়ে আপাতত আমাদের অত চিন্তা না করলেও চলবে। আমরাও হতে পারি আইসিসির পরবর্তী অক্সিজেন।

ক্রিকেট নিয়ে ইন্ডিয়া কি করল সেটা নিয়ে ঢাকঢোল না পিটিয়ে আমাদের বরং হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসন নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া উচিত। অথচ দিনকেদিন আমরা আরও বেশি হিন্দি সংস্কৃতির কাছে নিজেদেরকে সপে দিচ্ছি। যত দেশপ্রেম আমাদের ক্রিকেট ঘিরেই (এটা দেশপ্রেম না জিঙ্গোইজম নাকি স্রেফ ভারবিদ্বেষ সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে), আর যেখানে আসলেই দেশপ্রেমের পরিচয় দেয়া দরকার সেখানে আমরা লবোডঙ্কা।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক আগ্রাসনের ভিত্তিভূমি হিসেবে কাজ করে। একটা দেশের অর্থনীতি দখল করার জন্য রণাঙ্গনে যাওয়া কৌশল এখন পুরনো হয়ে গেছে। বরং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অনেক বেশি ফলদায়ক। তারই নিদর্শন কিন্তু আমরা দেখিছিই। যেমন বলিউডি সিনেমা ও ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব আমাদের সমাজে পড়ছে মারাত্মকভাবে, আমাদের সংস্কৃতি, রুচি, আচার আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ফ্যাশন ঐ সংস্কৃতি দ্বারা চরমভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এরই বাস্তব দৃশ্যায়ন হচ্ছে ঈদের বাজারে ইন্ডিয়া থেকে আমদানিকৃত পাখি ড্রেস, সানি লিওনি ড্রেস, মাসাককালি আমাদের বাজার দখল হয়ে যাওয়া। মুজিব কোট এখন হয়ে গেছে মোদি কোট। আমাদের ঈদের বাজার কতটা ভারতকেন্দ্রিক তার একটা বিশ্লেষণ দেখতে পাচ্ছি এখানে

ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় হাই-কমিশন গত বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ভিসা দিয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি মানুষ সেখানে কেনাকাটা করতে যাবে উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যেকে যদি সর্বনিম্ন এক হাজার ডলারের (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭৮ হাজার টাকা) পণ্য কেনাকাটা করে তাহলে দেশ থেকে এবারের ঈদে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা চলে যাবে। তবে অনেকে ভারতে গিয়ে দুই হাজার ডলার থেকে পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত কেনা-কাটা করছে। এই হিসাবে দেশ থেকে অর্থ চলে যাওয়া পরিমাণটা আরও বাড়বে।

এদিকে ভারতীয় ভিসার সহজলোভ্যতার কারণে দেশিয় সোনার ব্যবসায়ীদেরও অবস্থা সঙ্গিন। লিঙ্ক এখানে
“হেনা জুয়েলারি’তে ঈদের শুরুতেই নতুন গয়না আনা হয়েছে। ব্যবস্থাপক ইয়াকুব শরীফ বলেন, ‘আমাদের গয়না সব ইন্ডিয়া থেকে আসে। কিন্তু এবার আমাদের কাস্টমাররা ইন্ডিয়া গিয়ে কিনে আনছেন। গতবার থেকেই এ অবস্থা শুরু হইছে। এবার আরও বেশি বাড়ছে।’

কাজেই আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি আমাদের বাজারের কতখানি ইন্ডিয়া ইতিমধ্যে দখল করে ফেলেছে এবং প্রতিবছর শুধু বিলাসী পণ্যের জন্যই আমরা কত টাকা ভারতের অর্থনীতি যোগ করছি। বিলাসী এ কারণে বললাম, ঈদের পোশাক আর গহনা তো ভারতীয় পিয়াজ বা কোরবানির গরুর মত অবশ্য প্রয়োজনীয় কোন দ্রব্যাদি না। ক্রিকেটের সময় ‘দেশপ্রেম’এর কারণে আমরা যে ভারতবিদ্বেষ দেখি তার তার ছিটেফোটা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে আমরা এই বিলাসী ভারতীয় পণ্যগুলো না কিনে দেশি পণ্যের দিকে ঝুকতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা করছি না। কারণ

ভারতীয় সিনেমা ও সিরিয়ালের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির যে আগ্রাসন আমাদের মাঝে হচ্ছে, তাতে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেই পণ্যগুলো কেনার প্রতি আমাদের একটা ঝোঁক তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অর্থনৈতিক বাজার দখলের জন্য একটি খুবই কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেয়। কাজেই ক্রিকেটে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধচারণের থেকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরোধিতা করা আরও বেশি জরুরী।

কিন্তু এই ভন্ড জাতি ক্যাটরিয়া কাইফ আর শাহরুখ খানকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে বলে মনে হয় না। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় ভারতবিদ্বেষের জন্য আমরা যে দেশপ্রেমের বুলি আওড়াই, আর ফেলানির নাম তুলে জিকির তুলি তার পুরোটাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার একটা নির্লজ্জ অপচেষ্টা।

ভারতীয় সংস্কৃতিক আগ্রাসন কিভাবে আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তার আরেকটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিচ্ছি। এখন জি বাংলা বা স্টার জলসাতে আমাদের দেশের অনেক কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যদি হত তারা ওখানে রপ্তানি করছে এবং ওদের বাজার ধরতে চায় তাহলে ব্যাপারটা ইতিবাচক হিসেবে নিতাম, কারণ তাহলে বোঝা যেত আমাদের বাজার প্রসারিত হচ্ছে। সেটা ক্ষেত্রবিশেষে সত্য, কিন্তু আরও নির্মম সত্যটা হচ্ছে আমাদের নিজেদের দর্শকদেরই ধরার জন্য এখন ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে এদেশের কোম্পানিগুলোর!!! ফলে দেশের অর্থ চলে যাচ্ছে ভারতে! এভাবেও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ভারত লাভবান হচ্ছে। আর শুরুতে যেটা উল্লেখ করেছি, আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প ধ্বংস হওয়ার জন্য শুধু একটা পদক্ষেপই যথেষ্ট, সেটা হচ্ছে আমাদের হলগুলোতে ভারতীয় সিনেমা রিলিজ করার অনুমতি দেয়া। এরপর দেশপ্রেমিক বাঙালি নিজের হাতে নিজের দেশের চলচ্চিত্রশিল্প ধ্বংস করে দিবে। আর ওদিকে ফেলানি হত্যার প্রতিশোধ নিবে কোহলি কুত্তা বলে গালি দিয়ে।

সুতরাং আমি মনে করি ভারতের ক্রিকেট আগ্রাসন নিয়ে চিন্তিত হওয়ার আগে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে চিন্তিত হওয়া বেশি জরুরী। কাজেই যারা ‘ভারত ক্রিকেটে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে দেখে ক্রিকেটে ওদের গালি দিব কিন্তু ভারতীয় সিনেমা ঠিকই দেখবো’ এই কথা বলেন তারা আসলে এর মাধ্যমে দেশের কোন উপকার করছেন না।

আপনার ভারতবিদ্বেষ যদি সত্যিই দেশপ্রেম থেকে উত্থিত হয়ে থাকে তাহলে সবার আগে হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ করেন। আর সেজন্য সবার আগে হিন্দি সিনেমা দেখা বন্ধ করেন, বিয়ে বাড়িতে হিন্দি গান বন্ধ করেন, ঈদে মাসাক্কালি, সানি লিওনি আর মোদি কোট কেনা বন্ধ করেন, সে চিকিৎসা দেশেই করা যায় সে চিকিৎসার জন্য মাদ্রাজে যাওয়া বন্ধ করেন। এইসব না করে শুধু কোহলিকে কুত্তা বলবেন, আর পাকিস্তানের জয়ে বিজয়োল্লাস করবেন-সেইটাকে দেশপ্রেম বলে না, বলে সাম্প্রদায়িকতা।