ভারতীয় পুরাণ ঘাঁইটা ইতিহাস খুঁজতে যাওয়ার সব থিকা বড়ো ঝামেলাটা হইল এইসব পুরাণের রচয়িতা ঋষি কিংবা কবিদের অন্য কোন বিষয়ে কোন জ্ঞান আছিল আর কোন বিষয়ে আছিল না সেইটা নিশ্চিত না হইলেও একটা বিষয় পরিষ্কার যে তাগো মধ্যে বিন্দুমাত্র সময়-সংখ্যা কিংবা ইতিহাস জ্ঞানের কোনো অস্তিত্ব আছিল না; অথবা অদরকারি মনে কইরা তারা এই তিনটা জিনিসের লগে বাচ্চাপোলাপানের মতো খেলানেলা কইরা গেছেন। সময় মাপতে গিয়া তারা ষাইট বচ্ছর আর ষাইট হাজার বচ্ছরে যেমন কোনো ফারাক করেন নাই; তেমনি সৈন্যসংখ্যা একশোরে একশো কোটি কইতেও আপত্তির কিছু দেখেন নাই। একইভাবে নতুন কবিরা যখন সাহিত্য রচনা করছেন কিংবা পুরানা সাহিত্য সম্পাদনা করছেন তখনো কিন্তু আশপাশের ঐতিহাসিক উপাদানগুলারে বাদ দিয়া কোন কালের সেই কল্পিত ঐতিহ্যর লোকস্মৃতি ঢাইলা সাজাইছেন নিজের পুস্তকের সমাজ বাস্তবতা। যার লাইগা দুই হাজার বছর আগের আর পরের সাহিত্যে সমাজ বাস্তবতা মূলত কপিপেস্ট ছাড়া কিছু না…

ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইতিহাস চর্চার মূল কনসেপ্টাই হইল কাল্পনিক এক সমৃদ্ধ অতীতের কাবিক্য চিত্রকল্প নির্মাণ। অনেকটা শাহ আবদুল করিমের গানের মতো- আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম-এর নস্টালজিয়া অথবা জীবনানন্দের মতো কোনো এক শ্রাবস্তির কারুকার্য কল্পনা কইরা তাব্দা খাইয়া বইসা থাকা। সকলেই মনে করে আগের দিনগুলা আছিল বড়োই দারুণ। মূলত এইটা একটা নতুনত্বভীতি আর বুড়ামির প্রতীক। এর লাইগা সকলেই খালি কল্পিত এক আগিলা দিনের সাধনা করে; আর কবিরা সেইটা নতুন কইরা রচনা কইরা আবার প্রচারও করেন নতুনের মতো। কল্পিত রঙিন অতীত নির্মাণের এই বাজে অভ্যাসটা এখনো আছে আমাগো সংস্কৃতির মাঝে। বর্তমান সময়ে রচিত আমাগো গানগুলায় এখনো নদীর পাড়ে বইসা রাখাল বাঁশি বাজায় আর মেয়েরা কলসি নিয়া পানি তুলতে নদীঘাটে যায়। অথচ গত তিন দশক ধইরা যেমন রাখাল পেশাটাই বাংলাদেশ থাইকা নাই হইয়া গেছে আর চল্লিশ বছর ধইরা বাংলাদেশের মানুষ নদীর পানি খাওয়া বন্ধ কইরা দিছে সেইটার কোনো সংবাদ নাই এইসব লোক সাহিত্যের পাতায়…

পুরাণগুলার মইদ্যে যে টুকটাক ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায় সেইগুলা পাওয়া যায় মূলত সাহিত্যে ছড়ানো ঘিন্নার বাক্য কিংবা লেখকের মূর্খতার ফাক ধইরা। রামায়ণে যখন রামের মুখ থাইকা জাবালিরে বৌদ্ধ কইয়া গালি শুনি তখন আমাদের বুইঝা নিতে হয় যে যেই সমাজে বইসা রামায়ণ লেখা হইছে সেই সমাজে তখন বৌদ্ধ বিপ্লবের ঠেলায় বামুনধর্ম বিপন্ন। আবার বিশ্বামিত্রের লগে যুদ্ধ করতে গিয়া যখন বশিষ্ঠের কামধেনুরে যবন সৈন্য উৎপাদন করতে দেখি তখন আমাদের ধইরা নিতে হয় যে মহাভারতের এই বশিষ্ঠ-বিশ্বামিত্র যুদ্ধটা হয় হইছে ভারতে গ্রিকদের আগমণের পর না হয় যারা এই গপ্পটা মহাভারত-রামায়ণে ঢুকাইছেন তারা ভারতে গ্রিক অভিবাসনের পরের মানুষ। অথচ ঘটনার বর্ণনাগুলা কিন্তু সেই আদি কাল্পনিক। বশিষ্ঠ সেইখানে যেমন তার আদি কাল্পনিক অলৌকিকত্ব নিয়া বইসা আছেন তেমনি তার কামধেনুও কাল্পনিক; তার অস্ত্রপাতিও কাল্পনিকতার কপি পেস্ট…

মহাভারতে কুরুযুদ্ধ হউক বা না হউক; যুদ্ধ শেষে পাণ্ডবপক্ষ জিতুক বা কুরুপক্ষ জিতুক; যুধিষ্ঠিরের কিন্তু ঐতিহাসিকতা আছে। আর সেই ঐতিহাসিকতার হিসাবে যুধিষ্ঠির ভারতে লোহার ব্যবহার শুরু হইবার আগের যুগের মানুষ। অথচ যুধিষ্ঠিররে ঘিরা কবিরা যে কুরুযুদ্ধ রচনা করছেন তাতে পুরা লোহার খনি ঢাইলা দিছেন। পুরা কুরুযুদ্ধখানই লোহার অস্ত্রে ঝনঝন। অথচ যুধিষ্ঠিরের সমসাময়িক মানুষ মইরা গেছে লোহা আবিষ্কাররে বহুত বহুত যুগ আগে; কিন্তু সেই হিসাবটা আছিল না কবিগো মাথায়…

ভারত অঞ্চলে পয়লা শকাব্দ ক্যালেন্ডারট বহিরাগত কুশানদের দান। আর্যগো কোনো ক্যালেন্ডার জ্ঞান আছিল না। বছর মাস এবং সপ্তা গণনার কোনো ধারণা আছিল না তাগো। সপ্তার সাত দিনের নাম জানত না তারা। কিন্তু সংখ্যা আর গণিতের ধারণা ভারতে বহুত প্রাচীন। তাইলে আর্যগো সাহিত্যে সংখ্যায়ও অত ঘাপলা কেন?

এইটার একটা কারণ হইতে পারে যে; আর্যভট্ট সংখ্যা এবং গণিতের যে হিসাব দিয়া বিজ্ঞান চর্চা করতেন কিংবা বরাহমিহির অপবিজ্ঞান চর্চা করতেন; সেইগুলা মূলত সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে আছিল। মানে শতকিয়া সাধারণ লোকজন জানত না। সাধারণ লোকজনের হিসাবের মাধ্যম আছিল গণ্ডাকিয়া; যেইটা মূলত হাত পায়ের আঙুলের সর্বোচ্চ চাইর কি পাঁচ গুণিতকের হিসাব; দশক বা শতকের না; হালি-কুড়ি-গণ্ডা-পণ…

সুকুমারী ভট্টাচার্যের কথা যদি মানি তবে স্বীকার কইরা নিতে হয় যে পুরাণ লেখক বা সম্পাদক কেউই উচ্চ শিক্ষিত মানুষ আছিলেন না; এরা বরং মূর্খ শ্রেণির দুর্বল পেশাদার লেখকই আছিলেন। বিভিন্ন স্থানীয় সামন্তগো পৃষ্ঠপোষকতায় সেই সামন্তের পূর্ব পুরুষের ইতিহাস রচনা করতে গিয়া কিংবা সেই সামন্তের বিধি বিধানরে ধর্মশাস্ত্রর চেহারা দিতে গিয়া নিজস্ব মূর্খতা আর দুবর্লতা নিয়াই তারা পেশাজীবী হিসাবে এইসব পুরাণ রচনা কইরা গেছেন। এবং তারা নিজেরাও নিজেদের অতই নগণ্য আর ক্ষুদ্র মনে করতেন যে কোনো রচনাতেই নিজের নাম পর্যন্ত দিতেন না; নিজের রচনাগুলারে আগের কোনো বিখ্যাত লেখকের নামে চালায়া দিতেন। পুরাণগুলারে ভজঘট করার লাইগা মূলত দায়ী এইসব দায়িত্বহীন আর অস্তিত্বহীন পেশাদার লেখকের দল। এদের না আছিল ভূগোল জ্ঞান; না সংখ্যা; না ইতিহাস। এগোর থাকার মধ্যে আছিল শুধুই দুর্বলভাবে কিছু একটা কল্পনা করা আর স্থানীয় সামন্তরে খুশি করার ক্ষমতা…

রামায়ণের ঘটনা ঘটছে মহাভারতের পরে; এই কথাটা প্রচলিত যুক্তি আর পৌরাণিক বিশ্বাসের সরাসরি বিরুদ্ধে যায়। প্রচলিত যুক্তি আর বিশ্বাসরে এক্কেবারে উড়ায়া না দিয়া রমিলা থাপার একটা শর্ত জুইড়া দিছেন। তিনি কন- যদি রামায়ণের ঘটনারে মহাভারতের আগে বইলা মাইনা নিতে হয় হয় তবে কিন্তু ধইরা নিতে হবে যে রাম-রাবণের যুদ্ধ আছিল গাঙ্গেয় উপত্যকার কৃষিজীবী আর বিন্ধ্য অঞ্চলের আদিবাসী শিকারী মানুষের যুদ্ধ। পরে কেউ এইটারে আরো দক্ষিণে সরায়া লঙ্কা জুইড়া দিছে। মানে রমিলা থাপারের এই শর্ত মাইনা রামায়ণরে মহাভারতের আগে কইতে গেলে পয়লাই রামায়ণ থাইকা অত ঘটনার লঙ্কাখানই বাদ দিয়া দিতে হয়। আর পণ্ডিতগো কথামতো রামায়ণের আদি রচনাকাল খিপূ ৪র্থ শতক ধইরা নিলে লেখক বাল্মিকী আর তার পোলার বয়েসি রামরে কোনোভাবেই গৌতম বুদ্ধের পরের যুগের মানুষ ছাড়া অন্য কিছু ভাবা অসম্ভব…

বাল্মিকীরে চতুর্থ শতাব্দির মানুষ ধইরা নিবার পক্ষে আরো বহুত যুক্তি আছে। এর পয়লাটা হইল রামায়ণের ভাষা। রামায়ণের ভাষা যে আধুনিক সেইটার বিষয়ে বহুত আলোচনা আছে। কারো কারো মতে খিপূ ৪র্থ শতকে পাণিনি যে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ সংগঠিত করছিলেন; রামায়ণ রচিত হইছে সেই ব্যাকরণ মাইনা। মানে বাল্মিকী পাণিনির পরের মানুষ; যেইটার লগে আবার মিলা যায় বিপ্লব মাজীর দাবি- বাল্মিকী কালিদাসেরও পরের কবি…

অন্য অনেকের মতো কেদারনাথ মজুমদারও কন- রামায়ণের ভাষা মহাভারতের থাইকা অনেক আধুনিক। ছন্দগুলাও আধুনিক। রামায়ণের অনুষ্টুপ ছন্দ বয়সে প্রাচীন হইলেও রামায়ণে ব্যবহৃত অনুষ্টুপ আধুনিক ফর্মে গাথা। এই কথা বলার লগে লগে কেদারনাথ মজুমদার বাল্মিকীর আদি কবিত্বের দাবি এক টোকায় উড়ায়া দেন। এক্কেবারে সোজা বাংলায় কইয়া দেন যে বাল্মিকী আদি কবি নহেন। শিকারিতে পক্ষি মাইরা ফালানোয় যে শ্লোকটা তিনার মুখ থাইকা বইর হইছিল; যেইটারে কওয়া হয় আদি কবিতা। সেইটার ছন্দ বিশ্লেষণ কইরা কেদারনাথ সোজা কন- যে ধরনের অনুষ্টুপ ছন্দে ওই শ্লোকটা লেখা; সেই ছন্দে ঋগবেদ ভরপুর। অনুষ্টুপ ছন্দটা বাল্মিকীর আবিষ্কার; এইটাও ফালতু কথা। তাছাড়া বিষ্ণু পুরাণ রামায়ণের পরে হইলেও সেইখানে কিন্তু কেউ বাল্মিকীরে আদি কবি না কইয়া ব্রহ্মারে কইতেছে আদি কবি। সুতরাং বাল্মিকীর আদি কবিত্ব সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য না…

এই কয়েকটা যুক্তি দিয়া কিন্তু রামায়ণরে মহাভারতের আগে দাবি করার সবগুলা দাবি উড়ায়া দেয়া সম্ভব না। বিষয়গুলা ডিম আগে না মুরগি আগের মতো জট পাকায়া আছে দুইটা পুস্তকে। খোদ রামায়ণের ভিতরেই এমন কিছু উপাদান আছে যেইগুলারে যুক্তিতে গেলে অবশ্যই প্রাচীন উপাদান কইতে হয়…

প্রায় একশো বছর আগে ১৯২৭ সালে অমানবিক পরিশ্রমের গবেষণা কইরা কেদারনাথ মজুমদার রামায়ণের সমাজ নামে একটা বই প্রকাশ করেন ময়মনসিংহ থাইকা। রামায়ণ সোসাইটিরে ধইরা ধইরা সহজ ভাষায় এত ভালো বিশ্লেষণ খুব কমই পাইছি আমি। কেদারনাথ রামায়ণরে মহাভারতের পরের ঘটনা কইতে রাজি না। তিনি বরং মহাভারতরেই রামায়ণের পরের ঘটনা বলেন। তিনি বৈদিক ঘটনার উত্তরাধিকারগুলারে আলোচনা করার লাইগা ঋষি যুগ আর লৌকিক যুগ নামে ক্যালেন্ডাররে দুইটা ভাগে ভাগ করেন…

কেদারনাথের ভাগ অনুযায়ী খিপূ ১০০০ সালের আগের সময় ঋষি যুগ আর খিপূ ১০০০ সালের পরের ঘটনা; তার মতে ভারতে গ্রিকদের আগমনের পরের সময়কালরে তিনি বলেন লৌকিক যুগ। তো রামায়ণের সময়কাল আলোচনা করতে গিয়া তিনি রামায়ণের মইদ্যে ঋষি আর লৌকিক দুই যুগের উপাদান নিয়াই আলোচনা করেন। তিনি যদিও রামায়ণের নতুন ঘটনা চিহ্নিত কইরা বলেন যে সেইগুলা পরে প্রক্ষিপ্ত; মানে আদি কাণ্ড আর উত্তরকাণ্ড যখন যোগ হয় তখনকার সংযোজন। তবুও তার তালিকা দুইটা নিরপেক্ষভাবেই খুব সমৃদ্ধ…

তিনি রামায়ণরে মহাভারতের আগে কইতে গিয়া যেইসব যুক্তি দেখান তার মধ্যে তিনি কন যে রাম হইলেন ভারতে লিপি বা লেখা প্রচলিত হইবার যুগের আগের মানুষ। রামায়ণে রামের লেখাপড়া শিক্ষার কোনো বিবরণ নাই। অথচ বুদ্ধদেবের শিশুকালে তার পড়ালেখা শিখার বিবরণ আমরা পাই। অবশ্য মহাভারতেও কারো লেখাপড়া শিখার কোনো উদাহরণ নাই। তিনি বলেন যে রামায়ণে লৌকিক দেবতা; মানে বাল্মিকী রামায়ণে ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব কিংবা আরো পরের নারী দেবীরা নাই; রামায়ণে আছে খালি বেদের ৩৩ দেবতার কথা। রামায়ণে লিঙ্গপুজা মূর্তিপুজা নাই। রাময়ণে ৪ বেদের কথা নাই; আছে ৩টা বেদের কথা। মানে রামায়ণের পরে লৌকিক যুগে তৈরি হওয়া অথর্ববেদের কথা রামায়ণে নাই। তিনার আরেকটা যুক্তি হইল রামায়ণকালে সপ্তা এবং বারের নাম এবং মাসের গণনা পদ্ধতি চালু হয় নাই। ধাতুর রাসায়নিক বা যৌগ ব্যবহার শুরু হয় নাই তখনো…

রামায়ণের লঙ্কায় গাদা গাদা স্বর্ণের বিষয়ে তিনি সন্দেহ করেন। তিনি কন যে সেইকালে কবিরা স্বর্ণ বস্তুটাই চিনত না। কারণ তারা যদি স্বর্ণ চিনত তাইলে হনুমান পুরা লঙ্কা পুড়াইয়া দিবার পরে আবার অক্ষত স্বর্ণ লঙ্কার বর্ণনা দিত না। স্বর্ণ চিনলে তারা নিশ্চয়ই জানত যে আগুনে পুড়লে স্বর্ণের কী অবস্থা হয়। এর থাইকা তিনি সিদ্ধান্ত করেন যে হয় সেইযুগে অন্যকিছুরে কবিরা স্বর্ণ কইত; যেইটা আগুনে পুড়লেও গলে না বা বদলায় না; অথবা খাপছাড়াভাবে এইগুলা পরে কেউ ঢুকাইয়া দিছে লঙ্কায়। অবশ্য এর লগে তিনি এইটাও বলেন যে বর্তমান রামায়ণে রাবণের যে দানবীয় চেহারা আমরা দেখি; সেইটা আদৌ বাল্মিকী রামায়ণের রাবণ না। বাল্মিকী রামায়ণের রাবণ এক সাধারণ রাজা…

কেদারনাথ বলেন রামায়ণ সমাজে মেয়েরা সিঁন্দুর পরত না। সকলেই বেদ পড়তে পারত। তখন পর্যন্ত কাচ আর পারদের সংমিশ্রণে আয়না প্রস্তুতি শুরু হয় নাই। কোনো ধরনের মুদ্রা আবিষ্কার হয় নাই এবং সমাজে গোত্রপ্রথা চালু হয় নাই…

রামায়ণ সমাজে গোত্র প্রথা চালু হয় নাই এই কথাটার লগে কিন্তু আমার ব্যক্তিগত দ্বিমত যেমন আছে তেমনি সুকুমারী ভট্টাচার্যের গবেষণাও এই বিষয়ে দ্বিমত করে। রামায়ণের সময়কালে বরং ব্রাহ্মণ শূদ্র ক্ষত্রিয় এইগুলা বড়োই প্রকট আছিল…

রামায়ণের প্রাচীনত্বের পক্ষে তিনার আরো যেইসব যুক্তি আছে তার মইদ্যে আছে- কৈকেয়ীরে রাজা দশরথ বর দিতে চাইলে তিনি সব দেবতারে ডাইকা সাক্ষী মানলেন কিন্তু ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবের মতো কোনো দেবতারে ডাকেন না। তেমনি পোলার বিদায়ের সময় মা কৌশল্যা যে দেবতাগো নাম ধইরা পোলারে রক্ষা করার লাইগা প্রার্থনা করেন সেইখানেও তিনি বহু দেবতা এমনকি বনের পশু পাখির পর্যন্ত শরণাপন্ন হইলেও কিন্তু ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবের মতো পৌরাণিক দেবতার নাম নিবার ধারে কাছেও যান না…

রামের বিদায়ের সময় কৌশল্যার বিষ্ণু পূজার একটা বিবরণ বর্তমান রামায়ণগুলায় আছে; কেদারনাথ সরাসরি এইটারে প্রক্ষিপ্ত কইয়া ফালায়া দেন। কেদারনাথ পরিস্কার বইলা দেন যে বুদ্ধদেব যখন হিন্দুর চিন্তায় অবতার তালিকার মইদ্যে ঢোকেন; সেই সময়েই মূলত রামও অবতারের মর্যাদা পান। বৌদ্ধ যুগের পূর্বে রাম বা বৌদ্ধ কেউই হিন্দু সাহিত্যে অবতার বইলা গৃহীত হন নাই; মানে কেদারনাথের হিসাব আর ভবানীপ্রসাদ সাহুর হিসাব প্রায় একই; আর্যগো দাক্ষিণাত্য বিজয়ের কাছাকাছি সময়…

রামায়ণের প্রাচীনত্বের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়া কেদারনাথ কন যে রামায়ণ সমাজে কোনো ঈশ্বর কনসেপ্টএর অস্তিত্ব নাই। যেইটা বেদেও আছিল না। হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর কনসেপ্টটা মূলত রাজা প্রবাহণের উপনিষদভিত্তিক ব্রহ্মতত্ত্বরে ধইরা গীতায় দানা পাকাইছে। এইটা তুলনামূলক নতুন জিনিস। তাছাড়া রামায়ণে আমরা দেখি রাজা জনক নিজে মন্ত্র পইড়া নিজের মাইয়ার বিবাহ সম্পন্ন করতেছেন। এইটা আগের যুগের নিদর্শন; পরবর্তী যুগে এইসব কাম চইলা গেছিল বামুনগো হাতে…

চতুরাশ্রম কনসেপ্টের একটা অংশ হইল বাণপ্রস্থ। যেইটা বৌদ্ধ বিপ্লব পরবর্তী একটা সংযোজন। মহাভারতে আমরা এই বাণপ্রস্থের দেখা পাই; যা কোনোভাবেই কিন্তু রামায়ণে নাই। তবে এইটাও ঠিক যে সব নিয়ম একই লগে সব অঞ্চলে চালু হয় নাই বা মানা হয় নাই; হইতও না। মহাভারত আর রাময়ণের রচনাকাল খালি আলাদা না; বরং মানুষগুলার ঐহিত্যও আর ব্যকগ্রাউন্ডও আলাদা। কোনোভাবেই বলা যাবে না যে মহাভারতের সামাজিক নীতি আর রামায়ণের সামাজিক রীতি এক…

কেদারনাথ নিজে রামায়ণরে মহাভারতের আগের ঘটনা হিসাবে সমর্থন করলেও যেইসকল উপাদানের কারণে রামায়ণরে মহাভারতের পরের ঘটনা বইলা সন্দেহ হয় সেইগুলারও একটা বিশাল তালিকা করেন। যেইগুলার মইদ্যে তিনি এইটাও উল্লেখ করেন যে রামায়ণের বিবাহ পদ্ধতি অনেক আধুনিক। মহাভারতে উত্তরার বিবাহের লগে রাম সীতার বিবাহের কিছু মিল আছে। এর বাইরে মহাভারতে বেদ নির্দিষ্ট প্রাচীন পদ্ধতির দেবর-ভাসুর দ্বারা ভাইবৌর গর্ভে সন্তান উৎপাদন এবং এক নারীর একাধিক স্বামী দুইটাই আছে; যা কি না রামায়ণ সমাজে নাই…

বাল্মিকীরে আদি কবি হিসাবে চিহ্নিত করারটা বেশ ঝাপসা বিষয়। কোনোভাবেই মিলে না যে বাল্মিকী আদি কবি। হইলে হইতে পারে রামায়ণের উত্তর কবি; যিনি রামায়ণ এডিট করছেন তিনি রামায়ণ বা পৌলস্তবধ কাব্যের প্রথম রচনাকার বুঝাইতে গিয়া বাল্মিকীরে রামায়ণের আদি কবি কইছেন। যেইটা পরে সংক্ষিপ্ত হইয়া খালি আদি কবি হিসাবে টিকা আছে এখন….

রামায়ণ বহুত এডিট হইছে। হইতে হইতে রামায়ণে অবতারবাদ ঢুকছে। ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব ঢুকছে। নারায়ণ পূজার কথা ঢুকছে। লক্ষ্মী মূর্তির বর্ণনা আছে। মনুস্মৃতি আর গৌতম বুদ্ধের কথা ঢুকছে। রাশিচক্র এমনকি মাসের নামও ঢুকছে রামায়ণে। নাম খোদাই করা আংটির কথাও আছে। সমুদ্র বিদ্যার বর্ণনা আছে। বৌদ্ধ যুগের শ্রমণী বা ভিক্ষুণিগো কথাও আছে…

আরো অনেকের মতো এইগুলাও কেদারনাথ তালিকাবদ্ধ করেন। তবে এইগুলা যে আরোপিত আর বহুত পরে ঢোকানো জিনিস সেই বিষয়ে তর্ক করার কোনো যুক্তি নাই। রামায়ণ আর মহাভারত যত আধুনিকই হউক না কেন এইগুলা যে লৌকিক ধর্ম শুরু হইবার পরে কিংবা সংস্কৃত লিপি আবিষ্কর হইবার পরে রচিত হয় নাই সেইটা নিশ্চিত। তবে রামায়ণে বৌদ্ধ বিরোধীতার ঢং দেইখা একটা কথা ফালায়া দেয়া যায় না যে; হইলে হইতে পারে বৌদ্ধ বিপ্লবে হিন্দু ধর্মরে দুরবস্থা থাইকা উদ্ধারের যে সকল প্রচেষ্টা নেয়া হইছিল; তারই একটা ধাপ হইল রামরে অবতার বানানোর লগে লগে এই রামায়ণ রচনা…

রামায়ণের ভাষা মহাভারতের ভাষা থাইকা বহুত আধুনিক। এই একটা বিশ্লেষণ থাইকাই মহাভারতরে রামায়ণ থাইকা পুরানা বইলা ধইরা নেয়া যাইতে পারে; যদি না আরো কিছু ফ্যাক্টর এইখানে হিসাবে আনা হয়…

কথা হইল সংস্কৃত ভাষার কোনো লিখিত রূপ আছিল না বহুত শতাব্দি। মাত্র খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে পাওয়া যায় প্রাচীনতম ভারতীয় লিখিত ভাষার ইতিহাস। তবে সেইটা সংস্কৃত না; পালি ভাষার লিখিত ফর্ম ব্রাহ্মী লিপি; যেইটা দিয়া বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার হইছে; মৌখিকভাবে আবার লিখিতভাবেও। তামিল ব্রাহুই ভাষার লিখিত ইতিহাসও প্রায় সমান। কিন্তু সংস্কৃত ভাষার দেব নাগরী আসে আরো পরে। মূলত বৌদ্ধ ধর্মের লিখিত রূপ দেইখাই সংস্কৃত সাহিত্য কিংবা যোগাযোগে লিখিত ফর্ম ব্যবহার করার লাইগা শুরু হয় দেব নাগরী বা সংস্কৃতের লিখিত ফর্মের যাত্রা। যার মূল কিন্তু গুপ্তযুগের গুপ্ত লিপি। মানে গুপ্ত লিপি থাইকাই উৎপত্তি হইছে সংস্কৃতের লিখিত ফর্ম দেব নাগরির। আর সেইটা পয়লা দিকে আবোল তাবোল চলার পর সংস্কৃতের ব্যবহারিক ব্যকরণ সংগঠিত করেন পাণিনি। এর পর থাইকাই মূলত সংস্কৃত একটা সংগঠিত ভাষা…

কথা হইল সংস্কৃত লিপি আবিষ্কার এবং পাণিতি দ্বারা সংগঠিত হইবার পরেই এই গুপ্ত যুগে লিখিত হইতে থাকে প্রাচীন সব পুস্তকবাবলী; ঋকবেদ থাইকা শুরু কইরা সর্ব সাম্প্রতিক পুরাণ উপখ্যান পর্যন্ত…

এই যুক্তিটারে স্বীকার কইরা রামায়ণের প্রাচীনত্বের পক্ষের লোকজন বলেন- যে রামায়ণ লিখিত হইবার সময় লেখকরা ভাষা বদলাইয়া নতুন নতুন সাম্প্রতিক শব্দবন্ধ ব্যবহার করায় রামায়ণ প্রাচীন হইবার পরেও এর ভাষা নবীন হইয়া গেছে। কিন্তু কথা হইল এই একই সময়ের লেখকরা তো একই সময়ে বইসা স্মৃতি থাইকা ঋকবেদসহ সকল বেদ এবং মহাভারতেরও লিখিত রূপ দিছেন। সেইখানে তো তারা সাম্প্রতিক নতুন শব্দ দিয়া ঋকবেদের ভাষাও পাণিনির ব্যাকারণ অনুযায়ী কইরা দেন নাই। তাইলে শুধু রামায়ণের ক্ষেত্রে এইটা ঘটল কেমনে?

রামায়ণও তো তারা লিখছেন স্মৃতি থাইকা। অবশ্যই কিছু কিছু বাক্য শব্দ তারা বদলাইছেন; কিন্তু এক্কেবারে পুরা কাহিনিটা তারা নতুন ভাষায় অনুবাদ করছেন তা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য না। সবচে বড়ো কথা রামায়ণ তো একজন কবির একটা কাব্য; মহাভারতের মতো জনজাতির আখ্যানও না; বেশিরভাগ গদ্যও না; যেইখানে যার ইচ্ছা সে কাহিনি ঢুকাইতে পারে। একটা সম্পূর্ণ কাহিনি কাব্যে নতুন শব্দ ঢোকানো অত সহজ না। পুরা নতুন অনুবাদ তো দূরের কথা। আমার হিসাবে লিখিত রূপ পাইবার সময় রামায়ণ নতুন ভাষায় লিখিত হইছে এইটা একটা ল্যাংড়া যুক্তি। মূলত এইটা রচিতই হইছে বহুত পরের সংস্কৃত ভাষায়…

দ্বিতীয় আরেকটা বিষয়; মহাভারতের মূল কাহিনিতেই একটা বিষয় পরিস্কার যে মহাভারতকার দ্বৈপায়ন লিখতে পারতেন না। তার কোনো শিষ্যর লেখার ইতিহাসও নাই। বহুদিন মুখে মুখে চলার পর মহাভারতের লিখিত রূপ দিবার লাইগা তাগোরে গিয়া আদিবাসী গণেশরে তেলাইতে হইছে। শেষ পর্যন্ত যে গণেশরে আগে সিদ্ধি-নাশক কওয়া হইত তারে দেবতার স্থান দিয়া; সিদ্ধিদাতা উপাধি দিয়া; সকলের আগে তার পূজা করার নিশ্চয়তা দিয়া মহাভারত লেখানো হইছে। কিন্তু রামায়ণে দেখেন; শিকারি পক্ষী মারায় বাল্মিকী দুঃখু পাইয়া কাব্য করলেন আর লগে লগে তার শিষ্য ভরদ্বাজ তা লেইখা ফালাইলেন। তার মানে রামায়ণ রচনার যুগে বাল্মিকী এবং তার শিষ্যগো মাঝে লেখার চর্চা আছিল; সময় হিসাবে যেইটা কোনোভাবেই খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতকের আগে না। গুপ্ত যুগেই। এবং মহাভারতে লিপিকার গণেশ দেবতা হইছেন এই গুপ্তযুগেই; এই সময়েই মহাভারতে ঢুকছে গণেশ আখ্যান। শিবপুত্র টুত্রের কাহিনি এই সময়কারই। অবশ্য শিবও মহাদেব বেশি আগে হন নাই…

কেদারনাথ একটা কঠিন প্রশ্ন করেন- রাবণ কি বৌদ্ধ আছিল? রামের অভিযানটা কি মূলত আছিল বৌদ্ধ খেদানোর উদ্যোগ?
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া না গেলেও এইটা ভোলা সম্ভব না যে বৌদ্ধ রামায়ণ কাহিনি অনুযায়ী রাবণ কিন্তু বৌদ্ধ। আবার বিশ্বামিত্রের লগে গিয়া তাড়কা তাড়ানো থাইকা রাবণ হত্যা; রামের সব কামের লগেই কিন্তু আদিবাসী আর স্থানীয় মানুষ তাড়ানো-খেদানোর পাশাপাশি সাম্রাজ্য বিস্তার কিংবা শাসন পোক্ত করার একটা বিষয় রামায়ণের আগাগোড়া জুইড়াই অতিশয় প্রকট…

কেদারনাথের বইটা অসাধারণ। তিনি উপাদানগুলা তুইলা ধইরা তিনার মতামত দিছেন। একমাত্র রামায়ণে গরু খাওয়ার ইসু ছাড়া কোথাও কোনো কিছুরে তিনি টুইস্ট করেন নাই তার পুস্তকে…

কেদারনাথের অসাধারণ বিশ্লেষণের বাইরেও আরো কিছু উপাদান শেষ পর্যন্ত মহাভারতরেই প্রাচীনত্বের দিকে নিয়া যায়। মহাভারতে বৈদিক দেবতারা তাগো বৈদিক চরিত্র নিয়াই প্রায় সবাই উপস্থিত; মানে মাইনসের লগে মারামারি করা- এর তার বৌর ঘরে ঢুইকা যাওয়া কিংবা মাইর খাইয়া নতি স্বীকার করা; বৈদিক দেবতাগো এইসব চরিত্রই কিন্তু মাহভারতে উপস্থিত। রামায়ণে কিন্তু তিনাগো তেত্রিশজনের কথা শোনা গেলেও বড়োই নিস্ক্রিয় তারা। মেঘনাদের হাতে কোনো এক কালে ইন্দ্রের মাইর খাওয়া ছাড়া বৈদিক দেবতাগো সক্রিয় সংশ্লিষ্টতার কোনো সংবাদ নাই রামায়ণে। মানে তিনারা তখন রিটায়ার বা পরিত্যক্ত হইয়া গেছেন প্রায়। মহাভারতে কিন্তু বৈদিক দেবতাগো থাইকা শৈব ঘরানায় ট্রানকিজশনের একটা ট্র্যাক পাওয়া যায়। মহাভারতে শেষ পর্যন্ত বড়ো দেবতা হইলেন শিব। বৈষ্ণব সেইখানে শুরু হইছে মাত্র। অন্যদিকে রামায়ণ প্রায় পুরা বৈষ্ণব…

মহাভারতের যুগে মানুষের গুহাতে বাস করার প্রচলনও আছিল। যেইটা অনেক প্রাচীনতার সন্ধান দেয়। বিদুর বারণাবতে একটা মিস্ত্রি পাঠায় পাণ্ডবগো লাইগা গুহা খুইড়া ঘর বানাইবার লাইগা। গুহা খুইড়া ঘর বানাইবার এক্সপার্ট মিস্ত্রির অস্তিত্ব যেই যুগে আছিল সেই যুগে নিশ্চয়ই গুহার মইদ্যে বসবাসের প্রচলনও আছিল। পোশাক আশাকের দিকেও মহাভারত অনেক প্রাচীন। পাণ্ডবরা যখন বনে যায় তখন ছাল বাকলা পইরাই গেছিল। এবং বনবাসের সময় ছাল বাকলাই পরছিল। কিন্তু রাম বনে যাইবার সময় সীতার অতি রাজকীয় পোশাক ছাড়াও রাম লক্ষ্মণ যে দরিদ্র পোশাক পইরা গেছে; সেইটাও কিন্তু তাঁতে বোনা সুতার কাপড়। আরো সোজা কইরা কইলে কইতে হয় রাম লক্ষ্মণের পরনের পোশাকটা আছিল বৌদ্ধ চির অজীন। মহাভারতের সময় কাপড়ের প্রচলন নিঃসন্দেহে আছিল; কিন্তু একই সাথে পশুর চামড়া বা গাছের ছাল পরার অভ্যাস বা প্রচলনও আছিল নিশ্চিত। একটা জায়গায় এমনো দেখা যায় যে গাছের ছাল তুইলা অর্জুন পোশাক বুনতাছে। মানে জীবনের পয়লা চৌদ্দ পনেরো বছর বনে কাটানো পাণ্ডবরা গাছের ছাল পরাও জানতো ঠিকমতো। আশপাশে এইটার প্রচলন না থাকলে কিন্তু অত সহজে তা বানাইয়া পরতে পারার কথা না…

মহাভারতে রাজপুত্ররা প্রাচীন গদাযুদ্ধ মল্লযুদ্ধই শিখত; রামায়ণে গদার উল্লেখ নাই। তীর ধনুকের ব্যবহারই বেশি। মহাভারতে চতুবর্ণ আছিল না। কিন্তু রামায়ণে পরিষ্কার। ভীম রাক্ষস বিবাহ করে। কুন্তীসহ পাণ্ডবেরা সকলের ঘরে খায়। কুমারের বাড়ি থাকে। নিজেগোরে ব্রাহ্মণও পরিচয় দেয়; কিন্তু রামায়ণ সমাজে বর্ণ বিভাজনটা পরিষ্কার। রাম কিন্তু বালি কিংবা বিভীষণের ঘরে কিছুই মুখে দেয় না। শূদ্র রাজা গুহকের দেওয়া খাবার নিজে মুখে না দিয়া ঘোড়ারে খাওয়ায়। আবার বেদ পড়ার অপরাধে শূদ্র শম্ভুকরে মাইরা ফালায়। মানে রাম পুরাই চতুবর্ণী রাজা…

হরপ্পায় পাথরের দালান ছিল; খ্রিপূ ২৫০০ সালে। আর্য প্রভাবিত ভারতীয়রা যখন আবার স্থাপনা বানাইতে শুরু করে তখন সেটা অলরেডি খ্রিপূ ২৫০। তবে সেইটা শুরু হয় কাঠের দালান দিয়া। পাথর না। ভারতে আর্যগো হাতে পয়লাবারের মতো পাথরের দালান বানানো শুরু হয় গুপ্ত যুগে; ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। তাইলে রাবণের বাড়িতে অত দালান আসে কেমনে?

মহাভারতে কোনো স্থাপনার কথা কিন্তু আছিল না। রামায়ণে ইটের দালানের কথা আছে কিন্তু পুরা মহাভারতে কোনো বাস্তুশিল্পের উদাহারণ নাই। পুরোচন বারণাবতে সম্রাজ্ঞী আর যুবরাজের লাইগা যে ঘরটা বানায় সেইটা কিন্তু কিন্তু বাঁশ-বেত শনের ঘর। অন্যদিকে রামায়ণে স্থপতিরা বেশ উপস্থিত। ইটের ব্যবহারও আছে। দালানও আছে। তবে লঙ্কায় ইটের দালান আছিল বইলা মনে হয় না। লঙ্কার সবগুলা বাড়িঘর প্রাচীরই আছিল সাধারণভাবে দাহ্য; মানে কাঠ বাঁশের স্থাপনা। যদিও রাবণের দশটা গুণ বা দক্ষতার মইদ্যে একটা আছিল বাস্তুশিল্প বা আজকের যুগের স্থাপত্যশিল্প…

ময় দানব নামে মাত্র একজন স্থপতির কথা মহাভারতে শোনা যায়; কাব্যিক বর্ণনায় ময় দানবের তৈরি ইন্দ্রপ্রস্থের প্রাসাদ অনেক বিশাল আর উজ্জ্বল বইলা মনে হইলেও আসলে কিন্তু তা না। কারণ যুধিষ্ঠির সম্রাট হইবার পরে কিন্তু এই প্রসাদে থাকে নাই। আবার বলা হয় দুর্যোধন এই প্রাসদ দেইখা হিংসায় জইলা গেছিল; অথচ পাশা খেইলা জিতার পর কিন্তু প্রাসাদটা দিয়া দিছে দ্রোণাচার্যরে। ইন্দ্রপ্রস্থের দালান যদি অতই আকর্ষণীয় হইত তবে কিন্তু তা দুর্যোধন রাখত; না হইলে যুধিষ্ঠির নিজেই রাখত। কিন্তু তা হইল না…

এক নারীর একাধিক স্বামী- আনুষ্ঠানিকতা বর্জিত বিবাহ- বরের বাড়ি পাত্রী আইনা বিবাহ; এইগুলা যেমন পুরানা প্রথা তেমনি সন্তানের মায়ের নামে পরিচিতি বহুত প্রাচীন প্রথা। এইগুলা সবই মহাভারত সোসাইটির উপাদান। মহাভারত সোসাইটিতে লোকজনরে আমরা মাত্র বাপের নামে পরিচিত হইতে শুরু হওয়া দেখি। এবং সেইখানে বলতে গেলে মাত্র একজন মানুষই মোটামুটি বাপের নামে পরিচিত। তিনি কৃষ্ণ। কৃষ্ণরে মহাভারতে খুব অল্প ক্ষেত্রে তার মায়ের নামে ডাকা হইছে। পাণ্ডবগো বাপের নামে ডাকা হইলেও বহুবার আমরা কৌন্তেয়- মাদ্রেয় কথাগুলা শুনি। মানে দুইটাই প্রচলিত আছিল। অন্যদিকে ভীষ্ম পুরাই গাঙ্গেয়…

রামায়ণ কিন্তু পুরাই বাপকেন্দ্রিক। বাপের নামে সন্তানের পরিচয় তুলনামূলক বহুত আধুনিক বিষয়। মূলত নারীর সারা জীবন এক স্বামীর লগে থাকার বিধান প্রচলিত হইবার পরেই বাপের নামে পরিচিতিটা প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা হয় ঋষি উদ্দালক আরুণি; যিনি পাঞ্চাল রাজা প্রবাহণের শিষ্য হইয়া ব্রহ্মের তত্ত্ব প্রচার করছিলেন; তার ক্ষেত্রজ পুত্র শ্বেতকেতুই হইলেন নারীদের এক স্বামীর অধীন করার পয়লা প্রচেষ্টাকারী। পরে সেইটারে মোটামুটি পাকাপোক্ত করেন অঙ্গিরা বংশের আন্ধা ঋষি দীর্ঘতমা…

রামায়ণে নারীর এক স্বামী- আড়ম্বরপূর্ণ বিবাহ অনুষ্ঠান- পাত্রীর বাড়িতে বিবাহ এই সকলই আছে সন্তানের পিতার নামে পরিচিত হইবার লগে লগে। পাশাপাশি মরার লগে শবানুগমন জিনিসটা আর্য সমাজে আছিলই না; মহাভারতেও নাই। শবানুগমনের মতো এই নতুন সিস্টেমটাও কিন্তু রামায়ণ সমাজে আছে…

বলা হয় বেদ আগে বামুন ছাড়া শূদ্র আর নারীগো লাইগা নিষিদ্ধ আছিল। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তার মহাভারতের ছয় প্রবীণ গ্রন্থে কন যে দ্বৈপায়নই পয়লা ব্যক্তি যিনি নারী আর শূদ্রগো লাইগা বেদ উন্মুক্ত কইরা দেন। রামায়ণে আমরা অনার্য বংশজাত বালির স্ত্রী তারারে বেদ পড়তে দেখি। এই হিসাবে তো অবশ্যই এগোরে দ্বৈপায়ন পরবর্তী মানুষ বইলা ধইরা নিতে হয়। আবার রামায়ণের শেষ দিকে খালি বেদ পড়ার অপরাধে রাজা রামরে আমরা দেখি এক শূদ্রবংশজাত শম্ভুকের মাথা কাইট্টা ফালইতে। তবে কি বেদ শূদ্রগো লাইগা আবার নিষিদ্ধ হইছিল রামের হাত ধইরা?

চতুর্বেদ কথাটা দ্বৈপায়ন থাইকা শুরু। বলা হয় অগোছালো বেদের মন্ত্রগুলারে তিনি চাইর ভাগে ভাগ করেন বিষয় অনুযায়ী। যদিও বেদগুলার মইদ্যে প্রচুর রিপিটেশন আছে আর অথর্ব বেদরে ঠিক অন্য তিনটা বেদের সম পর্যায়ে ধরা হয় না। তবুও আমরা রামায়ণে কিন্তু বিভাজিত বেদের রেফারেন্সই শুনি। অন্তত তিন বেদ সেইখানে পরিষ্কারভাবে উল্লিখিত। আখ্যানমতে দ্বৈপায়নের পুত্র শুকদেবই হইলেন দুনিয়ার পয়লা চতুর্বেদী মানুষ। বাকি যারা ত্রিবেদী বা চতুর্বেদী তারা সকলেই হয় শুকদেবের শিষ্য না হয় তস্য শিষ্য। কিন্তু রামায়ণে আমরা দেখি সুগ্রীবের মাইয়ার জামাই আর মন্ত্রী হনুমান একজন ত্রিবেদী বা চতুর্বেদী পর্যায়ের মানুষ। যদিও হনুমানের শিক্ষা বিষয় রামায়ণে পরিষ্কার নাই; তবু এই অনার্য মানুষটার মুখে নির্ভুল সংস্কৃত আর বৈদিক বিষয়ের উল্লেখ শুইনা রাম পর্যন্ত লক্ষ্মণের কাছে বিস্ময়ে হনুমানের বিদ্যার প্রশংসা করেন। সারা রামায়ণে আমরা রামরে কি অন্য কারো গুণের প্রশংসা করতে শুনি? মনে হয় না…

কেউ কেউ মহাভারতে কুরুপক্ষে যুদ্ধ করা বৃহদ্বলরে রামের উত্তর পুরুষ কইয়া যুক্তি দেখান যে মহাভারত রামায়ণের পরে। কারো যুক্তিতে রামপুত্র কুশের ধারায় বৃহদ্বল রামের ১৫তম আর কারো তালিকায় ২৮তম উত্তর পুরুষ। কিন্তু রামায়ণের সমাজ বইয়ের লেখক কেদারনাথ মজুমদার পরিষ্কার কইয়া দেন যে লব কিংবা কুশ আদৌ রামের কেউ না; পুত্র তো দূরের কথা। মূলত উত্তরকাণ্ড যারা লেখছে; তারাই রামায়ণ গানের কথক লব আর কুশেরে রামের পুত্র বানায়া দিছে। মানে লব আর কুশ সম্পর্কে সেই ছোটবেলার গ্রামের ধাঁধা আরকি- ছেলের যখন জন্ম হলো মা ছিল না ঘরে/ জন্মদাতা জন্ম দিলো না জন্ম দিলো পরে…

মানে লব আর কুশের জন্ম বাপেও দেয় নাই; মায়েও না; জন্ম দিছে কবিরা। মূলত রাম আর সীতা নিঃসন্তানই ছিলেন। বৃহদ্বল কাশির রাজা আছিল ঠিক। বৃহদ্বলরে বোধহয় বংশ গৌরব বাড়াইবার লাইগা কেউ মহাভারতে ঢুকাইছে পরে। কারণ তখনকার দিনে রাজা বাদশাগো নিজের বংশ গৌরব বাড়াইবার লাইগা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পূর্ব পুরুষরে ঢোকাইয়া মাইরা ফালানো থাইকা সহজ কোনো পদ্ধতি আছিল না। বৃহদ্বলের লগে আসলে রামায়ণ মহাভারতের আগে-পরের কোনো সম্পর্ক নাই…

একইভাবে বিশ্বামিত্র-মেনকার মাইয়া শকুন্তলার স্বামী রাজা দুষ্মন্তর পোলা ভরত হইল মহাভারতের শান্তুনু কিংবা কুরু বংশের পূর্ব পুরুষ; এইটা দিয়া রামায়ণরে আগের ঘটনা কইতে যাওয়া একটা ফালতু বিষয়। কারণ বেদে রাজা সুদাসের পুরোহিতের চাকরি হারায়া সুদাসের রাজ্য দখল করার লাইগা যে বিশ্বামিত্র আক্রমণ কইরা বসছিলেন তিনি যেমন বিশ্বামিত্র; তেমনি ঋগবেদের গায়ত্রী বা সাবিত্রী মন্ত্রসহ বহুত শ্লোক; বিশেষত তৃতীয় মণ্ডল এর রচয়িতাও বিশ্বামিত্র; আবার গৌতম বুদ্ধের জীবনী ললিত বিস্তারেও কিন্তু দেখা যায় যে তিনি যার কাছে লেখাপড়া শিখছেন তার নামও বিশ্বামিত্র…

ঋগবেদে বিশ্বামিত্রের চাকরি খাইয়া রাজা সুদাসের পুরোহিতের চাকরি যে বশিষ্ঠ নিছিলেন তিনি হইলেন মিত্রবরুণের ঔরসে উর্বসীর পোলা বশিষ্ঠ। আর রামায়ণের বশিষ্ঠের বাপের নাম ব্রহ্মা। অন্যদিকে মহাভারতের বশিষ্ঠ কিন্তু বিশ্বামিত্রের লগে যুদ্ধে নির্বংশ হইয়া যান; তার পোলার গর্ভবতী স্ত্রীর গর্ভে একমাত্র বংশ টিকা থাকে পরাশর; যে কি না দ্বৈপায়নের পিতা। অন্যদিকে রামায়ণের বশিষ্ঠের পোলা রীতিমতো এক চ্যাংড়া পুরোহিত; যে রাম বনবাসে যাইবার আগে তার সমস্ত দান খয়রাতের তদারকি করে…

বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠ এইগুলা মূলত গোষ্ঠী নাম; আইজকার যুগের চৌধুরী কিংবা ব্যানার্জিগো মতো। ঋগবেদে যত জায়গায় এইসব ঋষির নাম আছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু তা বহু বচনে আছে; মানে বশিষ্ঠগণ বিশ্বামিত্রগণ আর যজুর্বেদে ভৃগুগণ অঙ্গিরাগণ এই রকম। মানে ঋগবেদের কালেই এরা বংশ বা গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত আছিলেন। সুতরাং এইসব ঋষি পুরোহিতগো নাম দিয়া ইতিহাস বাইর করার কোনোই সুযোগ নাই। এবং তা অর্থহীনও…

একইভাবে রামায়ণে জন্মেজয় আর পরীক্ষিতের উল্লেখ আছে; পরীক্ষিৎ হইল অর্জুনের নাতি; এইরকম রেফারেন্স দিয়া আসলে রামায়ণ মহাভারত আলোচনা করার সুযোগ নাই। কারণ একই নামের ব্যক্তি হাজারে হাজার থাকে। বর্তমানে খুজলেও কয়েক লক্ষ রাম আর কৃষ্ণ পাওয়া যাবে দুনিয়ায়…

গীতায় কিন্তু বেশ কয়েকটা শ্লোকে বেদ বিরোধীতা বা বেদনিন্দা আছে। মহাভারতেও আছে বেদবিরোধীতা এবং বেদনিন্দা। তো বঙ্কিমচন্দ্র তার ভগবৎগীতায় গীতার সেই বেদবিরোধী শ্লোকগুলার মইদ্যে ৪২-৪৬ তিনটা বেদ বিরোধী শ্লোকরে বহুত ঘুরাইয়া প্যাচাইয়া মুচড়াইয়াও বেদের পক্ষে আনতে না পাইরা বেশ চমৎকার একটা কথা কইছেন অপারগ হইয়া। সেইটা হইল-
“ভারতবর্ষ এই উনবিংশ শতাব্দিতে বেদ শাসিত। আজিও বেদের যে প্রতাপ, ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের তাহার সহস্রাশের এক অংশ নাই। সেই প্রাচীনকালে বেদের আবার ইহার সহস্রগুণ প্রতাপ ছিল। সাংখ্যপ্রবচনকার ঈশ্বর মানেন না- ঈশ্বর নাই, এ কথা তিনি মুক্তকণ্ঠে বলিতে সাহস করিয়াছেন, তিনিও বেদ অমান্য করিতে শাহস করেন না- পুনঃ পুনঃ বেদের দোহাই দিতে বাধ্য হইয়াছেন। “শ্রীকৃষ্ণ মুক্তকণ্ঠে বলিতেছেন, এই বেদবাদীরা মূঢ়, বিলাসী; ইহারা ঈশ্বর আরাধনার অযোগ্য”…

এর পরেও তিনি বহুত পৃষ্ঠা খর্চার করছেন জোর কইরা এই শ্লোগুলারে বেদের লগে লাইনআপ করতে। কিন্তু তিনি একটা কথা পরিষ্কার কইরা কইয়া দিছেন যে গীতায় যে বেদ বিরোধীতা আছে সেইটা পণ্ডিতেরা কিন্তু চাইপা গেছেন জানের ডরে; কিলের ভয়ে। হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর না মানলে সমস্যা নাই কিন্তু বেদ না মানলে বহুত ঝামেলা…

তিনটা শ্লোকরে বেদের পক্ষে আনার বহু চেষ্টা করার পর আবার ৫৩ শ্লোকে গিয়া বঙ্কিম পড়েন আবার বিপদে। আবারো বহুত প্যাচাল পাড়েন এইগুলারে বেদের পক্ষে আনতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার অপারগ হইয়া ফট কইরা বইলা দেন-
“এখন বেদে কিছু প্রয়োজন নাই, এমন কথা, আমরা ঊনবিংশ শতাব্দির ইংরেজ শিষ্য, আমরা না হয় সাহস করিয়া বলিতে পারি, কিন্তু শঙ্করাচার্য্য কি শ্রীধর স্বামী এমন কথা কি বলিতে পারিতেন?… প্রাচীন ভারতবর্ষীয়েরা বেদকেই একটা ঈশ্বররূপে খাড়া করিয়া তুলিয়াছেন। কপিল ঈশ্বর পরিত্যাগ করিতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু বেদ পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। বৃহস্পতি বা শাক্যসিংহ প্রভৃতি যাঁহারা বেদ পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তাঁহারা হিন্দু-সমাজচ্যুত হইয়াছিলেন। অতএব শঙ্করাচার্য্য, কি শ্রীধর স্বামী হইতে এমন উক্তি কখন সম্ভব না যে, ব্রহ্মজ্ঞানী হউক বা যেই হউক, কাহারো পক্ষে বেদ নিষ্প্রয়োজনীয়। কাজেই তাঁহাদিগকে এমন একটা অর্থ করিতে হইয়াছে যে, তাহাতে বুঝায় যে, ব্রহ্মজ্ঞানেও যা, বেদেও তা, একই ফল। তাহা হইলে বেদের মর্যাদা বহাল রহিল।”…

এক্কেবারে পরিষ্কার। শঙ্কাচার্য কিংবা শ্রীধরের মতো মানুষেরা সাহস কইরা কইতে পারেন নাই যে গীতায় বেদনিন্দা বা বেদ বিরোধিতা আছে। তাগো ডর আছিল; সমাজচ্যুত হইয়া একঘরে হইবার। ডর আছিল মাইর খাইবার। যেমন ঘটছিল বৃহস্পতি বা শাক্যসিংহের বেলায়…

তো কেদারনাথ মজুমদার পুরা রামায়ণখান দুর্ধর্ষভাবে বিশ্লেষণ কইরা সাইরা একটু মিন মিন কইরা যুক্তি দেখান যে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রামের গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরু খাওয়ার কথা তো পাই নাই। মনে হয় এইটা বঙ্কিমের সেই বিশ্লেষণের ধাচেই পড়ে। আমরা বুঝতে পারি কেদারনাথ কেন সেইটা পাশ কাইটা যান বা কমজোর গলায় কন- না তো। নাই তো। গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরুর মাংস দিয়া মাখাইয়া ভাত খাইবার কথা তো নাই। যাউকগা। রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়ার প্রচলন তো আছিলই উল্টা গরুর মাংসটাই আছিল শ্রেষ্ঠ মাংস বইলা গণ্য। গরু খাওয়া বন্ধ হয় মূলত বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে…

রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়া হইত না; গোসব যজ্ঞ কইরা মূলত মধু দিয়া রান্না করা গরুর মাংস গাঙে ফালায় দেয়া হইত দেবতাগো খাইবার লাইগা; এইসব কথা কেউ কইলে অন্যদিকে ধইরা নিতে হইব যে তিনি বা তিনারা রামের বয়স বুদ্ধদেবের থাইকা কমাইয়া নিয়া আসছেন। আর রামায়ণরেও কইরা দিতে চাইছেন বৌদ্ধ উত্তর সাহিত্য…

#####
তথ্যসমর্থন:
কাহিনিসূত্র: প্রচলিত বাল্মিকী-প্রাদেশিক-আঞ্চলিক এবং উপজাতি রামায়ণ আখ্যান। কালীপ্রসন্ন মহাভারত। রাজশেখর বসুর সংক্ষিপ্ত মহাভারত ও রামায়ণ। প্রচলিত বেদ উপনিষদ এবং পুরাণ সংগ্রহ;

যুক্তিসূত্র: রামায়ণের সমাজ- কেদারনাথ মজুমদার। ভারতবর্ষের ইতিহাস-রোমিলা থাপার। বাল্মিকীর রাম ও রামায়ণ, মহাভারতের ভারতযুদ্ধ এবং কৃষ্ণ-নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী। বাল্মিকী রামায়ণে রাম আদিবাসী রামায়ণে রাম- বিপ্লব মাজী। ভারতের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, মহাভারত ও সিন্ধু সভ্যতা, ভারতের বিবাহের ইতিহাস- অতুল সুর। প্রবন্ধ সংগ্রহ- সুকুমারী ভট্টাচার্য। ধর্মের উৎস সন্ধানে- ভবানীপ্রসাদ সাহু। কৃষ্ণ চরিত্র, শ্রীমদভগবদগীতা- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মহাভারতের কথা- বুদ্ধদেব বসু। মহাভারতের মূল কাহিনি ও বিবিধ প্রসঙ্গ- শিশির কুমার সেন। ধর্ম ও প্রগতি- জয়ন্তানুজ বন্দোপাধ্যায়। রামায়ণ: খোলা চোখে, কৃষ্ণ কাহিনী মহাভারত- হরপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়