হাজারী কলেজের সুভাকাঙ্খী কুসুম হাজারী এইমাত্র তার বক্তৃতা শেষ করে মঞ্চে সার বেঁধে বসে থাকা বিশিষ্টজনদের মাঝখানে গিয়ে বসে পড়লেন। তিনি এলাকার কান্ডারী নেতা, সরকারের খাস লোক। এবার মঞ্চে এসে মাইক্রোফোন ধরলেন অধ্যাক্ষ সাহেব। লোকেরা পিন-পতন নিরবতায় অধ্যাক্ষ মহাশয়ের কথা শুনছে- হাজারী সাহেব আমাদের আঁধার রাতের দিশারী, শিক্ষার মশাল বর্দার, আমাদের ভাঙ্গা ঘরে চান্দের আলো, গর্ব।

প্রিন্সিপাল সাহের কথার মাঝে খেই হারিয়ে শব্দ খুঁজছেন, তাই কয়েক মুহুর্তের বিরতি আসলো বক্তৃতার মাঝখানে। পড়বি পড় মালির ঘাড়ে- এই সুযোগে শ্রোতা হয়ে ঘাপটি মেরে থাকা মনা পাগলা বেজে উঠল জনতার নিরবতার মাঝখানে।
-তাইলে নামাজে বইসা কুসুমের নামে দুরুদ শরীফ পড়লে তো সব ল্যঠা চুইকা যায়। আর কলেমা তৈয়বাটারেও বদলাইয়া ফালান- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, কুসুম হাজারী রসুগোল্লা।

মনা পাগলার কথা শুনে হো-হো করে হেসে দিল দর্শক। কে একজন শন্ডা মার্কা লোক এসে মনা পাগলাকে পাজাকোলা করে সরিয়ে নিলো জনতার মাঝখান থেকে। আজ মনা পাগলার কি শেষ দিন? লোকজনের কপালে প্রশ্ন চিহ্ন। ঠোট কাটা গহর মুদী একটা ফোড়ন কাটলো- আগে শুনতাম পাগলের শত্রু নাই, এহন দেখছি তাও আছে। আমরা তাইলে যাই কই?

অধ্যক্ষ সাহেব এতক্ষণে শব্দ খুজে পেয়েছেন- বক্তৃতা আবার শুরু হলো।
-হাজারী সাহেব আমাদের পিতা-মাতার মতন- দরকার পড়লে শাসনও করেন। তার নামে মানুষ আকথা কুকথা বলে বেড়ায়। তিনি নাকি গড ফাদার, হেনতেন। গড আবার ফাদার হয় ক্যমনে? তিনি আসলে ফাদার, আমাগো পিতার মতন। এই মাত্র তা আপনারা দেখলেন।

অনুষ্ঠান শেষ, অধ্যক্ষ সাহেবের বক্তৃতাও শেষ। লোকজন সব শীতলক্ষার কোল ঘেষা পাকা রাস্তাটা ধরে যার যার বাড়ীর দিকে হাটা শুরু করে দিয়েছে। বাড়িতে তাদের ঘর-গেরস্তির দায়। ঠায় বসে আছে সেখানে শুধু গহর মুদী। বিরক্ত হয়ে প্রিন্সিপাল সাহেব জিজ্ঞেস করলেন- তুই কি চাস গহর?
-কুসুম হাজারী হ্যান-ত্যান, তারপর কি মাস্টার সাব? আপনের বক্তিমার শ্যষটা শুইনা যাইতে চাই।
গহর মুদির চোখে ছাইচাপা আগুন। মনেমনে হোচট খেলেন অধ্যক্ষ সাহেব। ছোট লোকের বাড়-বাড়ন্ত! কত হাতি-ঘোড়া গেল তল, চামচিকা বলে………। অধ্যক্ষ সাহেবের দাতে দাত পেশা থেমে যায় আচাণক।

আবারো সেই শন্ডা মার্কা লোকটা এসে গহর মুদিকে পাজাকোলা করে নিয়ে গেল। গহর মুদী কি এবার সত্যি সত্যিই বক্তৃতার শেষটা দেখতে চললো? আরো অনেক কৌতুহলীর মতন তারও আশ্রয় মিলবে নাকি মা শীতলক্ষার শীতল কোলে!