এই তো বেশি দিন নয়, এক বছরও হয় নি এখনো। মাথার ভিতরে গোলমাল বয়ে চলছে। ছোট থেকেই কেমন যেন ধর্মীয় উপসনার ফাপানোফুলানো নিয়মগুলো পন্ডশ্রম মনে হত। কিন্তু ঘুরেফিরে প্রতিদিন এসব পালন করার তাগিদ পড়েছে, এখনো পড়ছে পরিবেশগতভাবে। যেকোন কারনে ধর্মগুলোর কেন বারো রাজপুতের তের হাড়ীর অবস্থা তা জানার জন্য ঝাপ দিলাম ইন্টারনেটের কুলকিনারাহীন জ্ঞান সাগরে।

কাকতালীয়ভাবে একদিন এসে পড়লাম মুক্তমনা ব্লগ সাইটে। কয়েকটা লেখা পড়লাম। সেই থেকে মস্তিস্কের কোষগুলো কেমন যেন স্বাধীন হয়ে উড়তে চাইছে, জানতে চাইছে, জানার পিপাসা বেড়ে গেছে বহুগুণ। কয়েকটা লেখা পড়ার পর মনে হল বই চাই। অভিজিৎ রায়ের “অবিশ্বাসের দর্শন”, অনন্ত বিজয়ের “ভগবত গীতায় বিজ্ঞান অন্বেষণ” আরজ আলী মাতুব্বর এর “সত্যের সন্ধান” “সৃষ্টির রহস্য”সহ তিন খন্ড রচনাসমগ্র, হুমায়ন আজাদের “আমার অবিশ্বাস”- আরো কিছু বই ডাউনলোড দিয়ে পড়লাম। তারপর বুঝতে পারলাম আসলে মানুষ এখনো চরম সত্যের কাছে পৌছাতে পারে নি। এভাবে গভীর চিন্তায় ডুবে ছিলাম আর পড়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন স্ক্রিনের পাতায় ভেসে উঠল মহা এক দুঃসংবাদ “অভিজিৎ হত্যা”। কি হল? কেন হল?? যুক্তিতর্কের বিরুদ্ধে পেশীচর্চা কেন? হত্যা কেন? সমালোচনায় যার দাবীকৃত সত্যতা বজায় থাকে না তা নিয়ে এত মাথ্যাব্যাথ্যা কেন? মানুষগুলো এত বোকা কেন? তারা মিথ্যাকে মাথায় করে চিরদিন আবদ্ধ থেকে মরতে এত ভালবাসে কেন? ভাবতে ভাবতে কিছুদিন পরেই আরেকটা নিউজ “অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার”। ওয়াশিকুরের কোন লেখা তো নজরে পড়ে নি, তারপরেও তাকে হত্যা! এরপর নিলয় হত্যা। মনের ভিতরে গোল বাধতে লাগল। মনে হতে লাগল আরো বেশি জানা দরকার।

ঘাটতে ঘাটতে পেয়ে গেলাম ধর্মকারী ব্লগে যাবতীয় লেখার সংগ্রহসংবলিত “নাস্তিকপিডিয়া” টোটাল ১৯০০+২২২৪+৩৩০২=৭৪২৬ পেজের ৩ টি পিডিএফ ফাইলে সবার ভাল ভাল লেখাগুলো সেখানে মন্তব্যসহ রয়েছে। অন্যদিকে ম্যাজিক এবং অলৌকিক ব্যাপারগুলোর রহস্য সম্পর্ক জানার জন্য প্রবীর ঘোষের লেখা বই পড়তে থাকলাম। কোনটা রেখে কোনটা যে পড়ি। কখন সকাল, দুপুর ফাকি দিয়ে চলে যায়, রাত কেটে যায় তার কোন হিসাব থাকে না। বাট কমেন্ট করা হয় নি কোথাও, লিখতে চায় নি ভয়ে – এখন অনেক কিছু ইচ্ছে করে। জেনেই যেন শান্তি, কেবল পড়েই যাচ্ছি। তো এসব হত্যাকান্ড আর হঠাৎ নতুন জগতের জ্ঞান আমার তরুণ মনকে নানাভাবে জাগিয়েছে, জ্বালিয়েছে। জাগা থাকা অবস্থায় যেসব লেখা পড়েছি ঘুমের ভিতেরেও সেসব বিষয় নিয়েই মস্তিস্ক ব্যস্ত থেকেছে। বদ্ধবুদ্ধির নিগড় থেকে উঠিয়ে নিয়ে মুক্তচিন্তা করা শিখিয়েছে অভিজিৎ রায়, অনান্ত বিজয় দাশের মত মুক্তবুদ্ধির মহাৎ হৃদয়ের মানুষেরা। আমি ঐসব মুক্তবুদ্ধির মানুষগুলোর কাছে চির ঋণে ঋণী। যদিও আমি এখনো পরিবেশগতভাবে ধর্মীয় নির্দেশনা থেকে মুক্ত হতে পারে নি, তবুও আমি ভ্রান্তবিশ্বাস থেকে চিরমুক্ত। অভিজিৎরা অমর, অক্ষয়- তারা বেচে থাকবে মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে, জন্ম নেবে শত অভিজিৎ, হাজারো মুক্তমনা। তাদের লেখাগুলো থেকে ছড়ানো জ্ঞান চিরহুংকার দিয়ে পৃথিবী থেকে কুসংস্কারকে ঝ্যাঁটাপেটা করে হটাবে।