নারী-স্বাধীনতা বিষয়ক একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো। বলিউড খ্যাত নায়িকা দীপিকা পাদুকোনের এই বিজ্ঞাপন অনুসারে নারীর নিজের অধিকার আছে তার শরীরের । একান্তই তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে যে, সে তার শরীর নিয়ে কি করবে — বিয়ের আগে সেক্স করবে, নাকি বিবাহ-বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক তৈরি করবে। “শরীর আমার, চয়েশ আমার” নামক এই ধরনের একটি অত্যন্ত ক্যাচি এবং বোল্ড মেসেজ ছড়িয়ে আছে এই বিজ্ঞাপনী বক্তব্যে ।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই ধরনের বক্তব্যের বিরোধী। মনে হতে পারে, একজন শিক্ষিত নারী হয়ে কেন আমি এর বিরোধিতা করছি ? নারীর শরীরের অধিকার কি নারীর নেই ? গালাগালি দিন , অপমান করুন ক্ষতি নাই। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন অন্তত সবদিকটা। ভেবে দেখুন আমরা বিজ্ঞাপনের অর্ধসত্য এবং চাকচিক্যে নিজের বিচারের ক্ষমতাকে হারিয়ে ফেলতে শিখে যাইনি তো ? এমন নয় তো, যে, এই আপাত নারীবাদী বিজ্ঞাপন সত্যি্কারের নারীবাদী নয় ? এমন নয় তো যে, এটি নারীবাদের আড়ালে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের চাহিদার প্রকাশ ? এর পিছনে সত্যিই পুরুষের নারী-শরীরের খিদে লুকিয়ে নেই তো ?
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বলি , দীপিকার এই আপাত-স্বাধীনতার বানীও আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হর্ত্তা কর্তা বিধাতা পুরুষের উদগ্র কামনারই প্রকাশ। কেন ? কারণ, দেখতে পাচ্ছি নারী স্বাধীনতার নামে এই বিজ্ঞাপনে অদ্ভুত ভাবে শরীরের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। কেননা নারী স্বাধীনতার এই বিজ্ঞাপনেও নারীর সত্তাকে নারী শরীরের সমতুল্য করে দেখা হয়েছে। নারী মানেই যেন নারীর শরীর। তাই শরীরের স্বাধীনতাতেই নারীর স্বাধীনতা । আর একথা যুক্তি–বহির্ভূত ভাবে কেবল স্কুল কলেজের মেয়েদের আবেগে সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য বারবার সমস্ত চ্যানেলে বলা হচ্ছে। আচ্ছা, নারীর স্বাধীনতার কথা কেন শরীরে এসেই থেমে যাবে? কেন শিক্ষার স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতা পর্যন্ত পৌঁছাবে না ?
হয়ত বলবেন, অবশ্যই পৌঁছানো উচিত। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, এই বিজ্ঞাপনে অন্তত তেমন ইঙ্গিত নেই । কেন ? কেননা, হর্তা কর্তা বিধাতারা মনে করেছেন যে, নারীর মনস্তত্ত্বকে যদি তার নিজের কাছেই ‘কেবল নারী শরীর’ – প্রতিপন্ন করে দেওয়া যায়, তাহলে নারী তার স্বাধীনতা বলতে বুঝবে ‘শুধুমাত্র তার শরীরের স্বাধীনতা’। অবাধ যৌনতাই তখন তার স্বাধীনতার প্রকাশ হয়ে দাঁড়াবে। যেদিন এই কাজে সফলতা আসবে সেদিন পুরুষকে নারী শরীর পেতে আর কষ্ট করতে হবে না। নারী হয়ে উঠবে শরীর মাত্র। শরীরের কি আর বোধ আছে? শরীরের আছে খিদে। খিদে মেটাতে গিয়ে সে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যের খাদ্য হয়ে উঠবে। আর নারীর কাছ থেকে শুধু এটাই তো চায় পুরুষ সমাজ। তাই না ?
প্রসঙ্গক্রমে একটু মনে পড়িয়ে দিতে চাই, সতীদাহ সংক্রান্ত যে সব তথ্য বর্তমান গবেষনায় বেরিয়ে আসছে, তাতে প্রমানিত হয়েছে যে, সতীদাহের জন্য খুব একটা জোর করে করা হত না। মেয়েরাই স্বেচ্ছায় সহমৃতা হত। এনিব্যাসান্তদের লেখা থেকে একথা প্রমানিত হয় যে, সেইসময় নারী সমাজের সামনে সহমরণকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হর্তাকর্তা পুরুষেরা এতো উচ্চ মর্যাদার স্থানে স্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছিল যে, মেয়েরা সতী হওয়াকেই পরম পুণ্যের কাজ বলে মনে করতো । এইভাবেই সেদিন নারী চিতায় উঠেছিল স্রেফ পুরুষের প্রচারণার ফাঁদে পা দিয়ে । আজো দীপিকাদের দিয়ে পুরুষ সমাজ এমন কিছুই করাতে চাইছে না তো, যাতে করে নারী নিজেই সহজলভ্যা হয়ে ওঠে পুরুষ সমাজের কাছে ?
বিষয়ের জটিলে না গিয়ে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে, নারীবাদের সৃষ্টি কিন্তু নারীকে পুরুষের মর্যাদায় তুলে আনার জন্য বা নারী পুরুষের সমান অধিকারের দাবীতে এবং নারীর প্রতি শারীরিক ( বিশেষত যৌন) ও মানসিক অপরাধ কমানোর লক্ষ্যে । কিন্তু নারীবাদী চেতনার মধ্যে দিনের পর দিন ধীর গতিতে স্থান করে নিয়েছে একটি শরীর কেন্দ্রিক চেতনা, যা নারীকে আবার শরীরমাত্র করে তুলছে। কৌশলে অসম্ভব করে তুলছে নারীর সত্যিকারের স্বাধীনতার সম্ভবনাকে।
একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শরীরকেন্দ্রিক চেতনা, তা সে যৌনশিক্ষাই হোক, অবাধ যৌনতা বা নারী শরীরের অকারন প্রদর্শন – কোনটাই কখনোই যৌন অপরাধকে কমাতে সক্ষম হয়নি। বরং বৈষম্য-জনিত অপরাধকে বাড়িয়ে তুলেছে অনেক। নারীকে পুরুষেরসমান মর্যাদায় স্থাপন করতেও এই চেতনা সম্পুর্ন ব্যর্থ হয়েছে। পাশ্চাত্য দেশগুলি এই বিষয়ে আমাদের কাছে শিক্ষা হতে পারে। তাই ‘শরীর প্রদর্শনে আমার অধিকার আছে’ , ‘বিবাহ বহির্ভুত শারীরিক সম্পর্ক রাখার আমার অধিকার আছে’ জাতীয় সস্তা কথাগুলি কখনোই ‘নারী স্বাধীনতার প্রকাশ’ হিসাবে মেনে নেওয়া যায় না ।
চোখ ধাঁধানো চাকচিক্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা নারীর আজ বোঝা অত্যন্ত দরকার যে স্বাধীনতা আসলে কি । দর্শনের তথা নীতিবিদ্যার আধুনিক পাঠগুলি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, স্বাধীনতা মানে হল নির্বাচনের ক্ষমতা। একাধিক কর্তব্য বা বিষয়ের মধ্যে ইচ্ছামতো নির্বাচন করার সামর্থ্যই হল স্বাধীনতা। আর স্বাধীনতাই আমাদের অস্তিত্ত্বের প্রকৃত প্রকাশ। রাস্ট্রবিজ্ঞান যারা পড়েছে তারা জানে যে, স্বাধীনতা কখনো অবাধ হতে পারে না। প্রাচীন ভারতের মুনি-ঋষিরা মনে করতেন যে, স্বাধীনতা মানে স্ব-নিয়ন্ত্রন বা আত্মনিয়ন্ত্রন। নারীর আজ সেইটে শেখা উচিত। ‘আত্ম’নিয়ন্ত্রনের অধিকার – কেবল ‘ আপন শরীর নিয়নন্ত্রনের অধিকারমাত্র’ নয়। মনে রাখতে হবে শরীরটা যন্ত্রমাত্র। তার খিদে আছে, বোধ নেই, নেই নিজেকে নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা। আজ তাই সমস্ত প্রভাবমুক্ত হয়ে নারীকে ধ্যানমগ্ন হতে হবে। নিজেকে খুঁজতে হবে। নিজের মধ্যের ‘নারী সত্তা’কে আবিষ্কার করতে হবে। তবেই সে নিজেকে বুঝতে পারবে, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। ঠিক-ভুলকে নির্ধারন করে নির্বাচন করতে পারবে। তবেই তো সে প্রকৃত স্বাধীন হবে । ‘দীপিকার স্বাধীনতা’ আসলে স্বাধীনতা নয়, স্বাধীনতার মুখোশের আড়ালে পরাধীনতা — তবে সে তো কেবল আমার মত, সামগ্রিকভাবে নারী সমাজকে নির্বাচন করতে হবে, দীপিকার স্বাধীনতা কি আসলেই স্বাধীনতা ? নারী সমাজের উপরেই এটা ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এই বিষয়ে নির্বাচনের অধিকার কেবল নারীর, আর কারো নয় ।
আমি লেখকের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত । কারণ নারী স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কখনই কাম্য নয় । নারী স্বাধীনতা মানে তার অর্থনৈতিক , সামাজিক , সমাজ প্রগতির আন্দলনে অংশ গ্রহণের অধিকার । সামাজিক উৎপাদনে ভূমিকা গ্রহণের অধিকার । এটা ব্যতিরেকে খোলামেলা পোশাকপরা , ইচ্ছামত সেক্স করা আধুনিকতার মোড়কে চেতনার দাসত্বকে বরণ করা ছাড়া ভিন্ন কিছু না ।
একজন স্বাধীন মানুষ তার শরীরে ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না? আমরা রক্ষনশীল সমাজে বড় হতে হতে মনটা এতোটাই রক্ষনশীল হয়ে পরে যে এধরনের সাহসী উচ্চারনে আমরা কেঁপে উঠি। স্বাধীনতার নাম এটা না সেটা না বলে, মাত্রা টানতে থাকি। স্বাধীনতার মানে স্বাধীনতা, মাত্রা টানার কেউ নেই তাহলে আর স্বাধীনতা কিসের।
আমার সাথে একমত আপনি না হতেই পারেন। কিন্তু স্বাধীনতা বা তার ইংরেজি প্রতিশব্দ ফ্রীডোম লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে একটু এই বিষয়ক প্রবন্ধগুলোতে চোখ রাখুন দেখি ! দেখুন তো স্বাধীনতা মানে মাত্রা টানার কেউ নেই, এমন কিনা !
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্লেষণ ও মননঋদ্ধ আলোকপাত বিষয়টি নিয়ে নতুন ভাবে ভাবাল।
নববর্ষে বৈশাখী অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে এ নিয়ে মহসিনা খাতুনের মন্তব্য শোনার কৌতূহল হচ্ছে। সাথে এ লিংকটি পড়তে বলছি।
http://womenchapter.com/views/11184
এটা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। তবু আপনি যখন জানতে চাইলেন, বলি! নববর্ষের অনুষ্ঠানে যা হয়েছে তাকে ব্যাখ্যা করতে গালাগালি যথেস্ট নয় বলে দেই নি। আমার প্রোফাইলে আগে এই ধরনের ঘটনার বারবার প্রতিবাদ করা হয়েছে। পরে মনে হয়েছে হায়েনারা যুক্তি বোঝে না। তাই এইসব না বলে যদি কিছু করতে পারতাম ভাল হত। এখানে অবাধ যৌন স্বাধীনতার বিরোধিতা করা হয়েছে। আর যৌন স্বাধীনতার সাথে যৌন অপরাধের বিশেষ সম্পর্ক নেই , সেটাই বলা হয়েছে।
নারীশরীরে পুরুষের অলিখিত যতেচ্ছ অধিকার আমাদের সমাজের একটি লজ্জাজনক দুর্বল দিক। তাই, নারী যেমন বাহিরে ধর্ষিত হচ্ছে, তেমনি ধর্ষিত হচ্ছে নিজ সংসারে স্বামীকর্তৃক। এ অবস্থা পরিবর্তনে “শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার” একটি সাহসী স্লোগান। দীপিকার সাহসী উচ্চারনে তাই সাধুবাদ।
দীপিকার স্লোগানে অনেকেই পুরুষের ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছে, ঠিক যেমন ইসলামী সন্ত্রাসে মডারেট মুসলমান খুঁজে পায় ইহুদী/আমেরিকার ষড়যন্ত্র। এ সব ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী লোকেরাই বোধকরি সমাজ সংস্কারের প্রধান বাধা।
“শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার” – কোন স্বাধীন নারী যদি এই কথাটা স্বাধীনভাবে বলেন তাতেও কেন পুরুষেরই দোষ হবে? নারীর যৌনচেতনা থাকতে পারে না? যৌন স্বাধীনতা থাকতে পারে না? আর যৌন স্বাধীনতা থাকলেই সবাই যে শুধু সেই কর্মেই নিযুক্ত হবে তা ভাবা হচ্ছে কেন? আমার তো মনে হয় উল্টোটাই সত্য। যৌনতার ব্যাপারে আমরা যদি নারীর সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতাকে সম্মান করতে জানতাম, সমাজ থেকে ধর্ষণ ব্যাপারটাই উঠে যেতো।
আলোচনা চলুক। কলম চলুক।
আমার কাছে দীপিকার করা বিজ্ঞাপনটি চমৎকার লেগেছে। বিজ্ঞাপনটি না দেখে কেবল আপনার লেখাটি পড়লে মনে হতে পারতো যে শুধু মেয়েদের স্বাধীন যৌনাচারের পক্ষে প্রচারণা চালানোই বিজ্ঞাপনটির প্রতিপাদ্য বিষয়। অথচ বিষয়টি তা নয়; আমার কাছে বরং বিজ্ঞাপনটি নারীর নিজের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার দৃপ্ত ঘোষণা বলেই মনে হয়েছে। আমাদের দেশে (এবং আরও অনেক জায়গাতেই) মেয়েদের উপর অনেক কিছুই আমরা জোর করে চাপিয়ে দেই, যেমন সময় মতো মেয়েদের বিয়ে করতে হবে, সন্তান ধারণ করতে হবে, কাজের আগে সংসারকে গুরুত্ব দিতে হবে, রাতে দেরী করে বাড়ী ফেরা যাবে না, অনিচ্ছুক-ভাবে প্রেগন্যান্ট হলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও ভ্রূণ নষ্ট করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো বিধি নিষেধ। প্রাক-বিবাহ বা বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেদের যতোটা ছাড় দেয়া হয়, আমাদের সমাজে মেয়েদের ততোটা ছাড় দেয়া হয় না। এসব আচার ভাল কি মন্দ সে আলোচনায় না গিয়েও বলা যায় যে আমরা যদি ছেলে আর মেয়েদের প্রতি ব্যবহারে সমতা আনতে চাই, তাহলে এই বিষয়-গুলোসহ আরও অনেক বিষয়ে মেয়েদের ইচ্ছাকে ছেলেদের ইচ্ছার মতই, বা একজন স্বাধীন মানুষের ইচ্ছা হিসাবে গুরুত্ব দিতে হবে, আমার মনে হয়েছে এটাই এই বিজ্ঞাপনের মূল বক্তব্য।
লিঙ্ক দুটি দেখার অনুরোধ রইলো !
এই লিঙ্ক দুটি দেখার অনুরোধ রইলো
http://indiatoday.intoday.in/story/my-choice-video-sonakshi-sinha-doesnt-agree-with-deepika-padukone/1/426797.html
http://www.bbc.com/news/world-asia-india-32126807
আমি দীপিকা পাদুকোনের ভিডিওটি দেখেছি। অভিভূত হয়েছি এর সাহসী উচ্চারণে। সাধারণ নারী যা বলতে পারে না,অথচ বলতে চায় ভিডিওটিতে তাই বলেছে—-“শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার।” Right to the body স্লোগান তো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। মহসিনা খাতুন বলেছেন —“”‘দীপিকার স্বাধীনতা’ আসলে স্বাধীনতা নয়, স্বাধীনতার মুখোশের আড়ালে পরাধীনতা”। কীভাবে? কোন মনোভাব নিয়ে মহসিনা ভিডিওটি দেখেছেন বুঝতে পারছি না।নারী আন্দোলন চায় নিজের সম্পদ, সন্তান ও শরীরের উপর নিজের অধিকার। নিজের শরীরের ওপর অধিকার মানে যার তার সাথে শুধু শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন নয়,যার তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন না করার অধিকারও।
@ মহসিনা খাতুন , দেখুন দেখি আপনি বিষয় টা তোলার আগেই ক্ষমা চাচ্ছেন। ( “ গালাগালি দিন , অপমান করুন ক্ষতি নাই”।) আপনার মনের কথা বলতে গিয়েও আপনার লজ্জা লাগছে। এমন ভাবে একটা হেজিমনি তৈরী করা হয়েছে যে বিরুদ্ধ যুক্তি, যদি ভুল হয় তাহলেও, রাখতে গিয়ে ভয় করছে। আপনাকে ধন্যবাদ আপনি সাহস দেখিয়ে বিষয়টা তুলেছেন।
আমার মতে স্বাধীনতা হলো সেটাই যেটা মানুষ স্ব ইচ্ছায় করবে। এখন প্রশ্ন হলো স্ব ইচ্ছা বলতে কি বোঝায় ? যে নারী স্ব ইচ্ছায় বোরখা পরছে সে যেমন স্বাধীন ভাবে পরছে আবার যে আধুনিক খোলামেলা পোশাক পরছে সেও স্বাধীন ভাবে পরছে । তা হলে তফাত কি হলো ? স্ব ইচ্ছা সেটাই যেটা কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ভাবে সে গ্রহণ করবে। কোনো ধর্মের দ্বারা অথবা বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। কিন্তু আমাদের বেশির ভাগ ইচ্ছাই বাজার অথবা ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিচ ভলিবল খেলায় পুরুষরা যত খাটো পোশাক পরে মেয়েরা তার চেয়ে বেশি খাটো পোশাক পরে তার কারনটা কি খুব দূরবোধ্য ? স্বাধীন ভেবে আমরা যা পোশাক পরি (নারী পুরুষ নির্বিশেষে ) তা কিন্তু ফ্যাশন শিল্প দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সত্যি যদি তেমন দিন আসে যখন মুনাফার উদ্দেশে পরিচালিত না হয়ে সৃষ্টির আনন্দে ইচ্ছা পরিচালিত হবে সেই দিন বলা যাবে আমাদের চিন্তা স্বাধীন।
“এমন নয় তো যে, এটি নারীবাদের আড়ালে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের চাহিদার প্রকাশ ? এর পিছনে সত্যিই পুরুষের নারী-শরীরের খিদে লুকিয়ে নেই তো ?”
সত্যিই অসাধারন, লেখিকাকে ধন্যবাদ এই সূত্রটির অবতারনা করার জন্য। নারী-স্বাধীনতার প্রশ্নে নারীর যৌন স্বাধীনতাকে উপস্থাপন করা অথবা এই ব্যাপারটিকেই বিকশিত হতে দেয়া হয় আসলে অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
আমাদের দেশের মত একটি পশ্চাদপদ সমাজে, যেখানে মুক্তচিন্তা প্রসারের স্বপ্ন এখনও হামাগুড়ি দিয়ে চলছে, সেখানে মৌলবাদী এবং রক্ষনশীল ভাবধারার শক্তিগুলো ‘নারী-স্বাধীনতা’ প্রশ্নে এই দিকটিকেই তাদের প্রপাগন্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে।
নারী তার শরীর নিয়ে কি করবে এটাও তার স্বাধীনতার অংশ। এটা নিয়ে ত্যানা প্যাঁচানো মোল্লাগিরির পর্যায়েই পরে।
শরীর প্রদর্শন এবং বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অধিকারের কথা বিজ্ঞাপনটিতে বলা হয়েছে, কিন্তু এগুলোকেই ‘নারী স্বাধীনতার প্রকাশ’ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে দেখলাম না কোথাও। বিজ্ঞাপনটির কত মিনিটের জায়গায় এটাকে নারী স্বাধীনতা বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে জানতে পারি কি? যদি কোথাও করা না হয়ে থাকে তাহলে আমার মনে হচ্ছে, এটা আপনার নিজের সাধারণীকরণ, যা আমার মতে ঠিক নয়।
বিজ্ঞাপন সংস্কৃতি আমি পছন্দ করি না, এবং সেটার খারাপ দিক অবশ্যই আছে। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনের যে কথাগুলো সেগুলোকে নারী স্বাধীনতার বিজ্ঞাপন হিসেবে না দেখে কেবল যৌন স্বাধীনতার বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখলেই হয়ে যায়। উনারা তো কেউ বলছেন না যে, উনারা যা বলছেন সেটাই পুরোপুরি “নারী স্বাধীনতা”, সেটা যদি বলতেন তাহলে তো ব্যাপারটা ভয়াবহ হাস্যকর হয়ে যেত। যৌন স্বাধীনতা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার অধিকার। কিন্তু ভারতের মতো সমাজে যেহেতু এখনো যৌন বিষয়গুলোতে পুরুষের চেয়ে নারীকে বেশি দোষ দেয়া হয় সেহেতু নারীরা আলাদা ভাবে যৌন স্বাধীনতার কথা বলতেই পারেন। তাতে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না, যতক্ষণ উনারা সেটাকেই গোটা নারী স্বাধীনতা বলে সাব্যস্ত না করছেন।
কেবল নারী নয়, সকল মানুষের স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে সম্ভাব্য সবকিছুতে স্বাধীনতা। কিন্তু সবাই তো আর সবসময় সব স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে না। ধরুন আমি আজকে বাকস্বাধীনতা নিয়ে একটি মিছিলে অংশ নিলাম। এখন কেউ যদি আমি কেন ভোট দেয়ার স্বাধীনতা নিয়ে মিছিল করলাম না বলে আমাকে গালমন্দ করা শুরু করে তাহলে কি সেটা ঠিক হবে? আমি বাকস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি মানে কি আমি অন্য স্বাধীনতাগুলো নিয়ে চিন্তিত নই? তেমনি এই বিজ্ঞাপনে যৌন-স্বাধীনতা এবং প্রণয়-স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, যেটা খুবই দরকারি একটা জিনিস, এবং এর মানে মোটেও এ নয় যে, তারা এটা হলেই নারীরা স্বাধীন হয়ে যাবে বলছেন, বা এটাকেই নারী স্বাধীনতার প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। তেমন সরলীকরণ এই বিজ্ঞাপনের কোথাও আমার চোখে পড়েনি।
এটা “নারী স্বাধীনতা” বিষয়ক বিজ্ঞাপন নয়, এটা “নারীর যৌন/প্রণয় স্বাধীনতা” বিষয়ক বিজ্ঞাপন। এবং আমার মতে এই স্বাধীনতাকেও খাটো করে দেখার কিছু নেই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার যৌন-স্বাধীনতা আমার মতে একটি মৌলিক মানবাধিকার।
নারীর স্বাধীনতার সঙ্গে নারীর শরীরের প্রসঙ্গ টানা ঠিক বলে মনে করিনা। নারী জন্মদাত্রী মা, প্তনী/ ভার্য্যা, ভগিনী, কন্যা। নারীর স্থান সমাজের উচ্চাস্নে রাখা উচিত। পৌরানিক কাল থেকে ভারতব্ররষে নারীকে স্নমানের আস্নে রাখা হতো। নারীকে কেব্ল ভোগ্য বলে দেখা হতো না। নারী হচ্ছে প্রকৃতি,এই বিশ্ব / পৃথিবী নারী, উৎপাদন ক্ষমতা এক্মাত্র নারীর আছে। সেইজন্য হিন্দু শাস্ত্রে নারীকে উচ্চাস্নে স্থান দিয়েছে। নারীর শক্তির মিলন না হ্লে,পুরুষের শক্তি পূর্নতা পায়না। প্রকৃতির শক্তি না পেলে শিব শব হয়ে থাকে। স্কতিরুপিনী দূর্গা আসুরদের প্রাজিত ক্রেছিল। সুত্রাং নারীকে শুধু নারী হিসাবে দেখা উচিত নয়। ব্ররত্মান যুগে বিজ্ঞয়াপ্নে নারী শরীরকে ব্যবহার করে,নারীর স্নমান হানি ক্রছে। কিছু নারী টাকা-প্যসার লোভে নিজকে বিজ্ঞয়াপ্নে তুলে ধরে। পুরুস্তান্ত্রিক সমাজে নিজেদের বিকিয়ে দেবার সামিল। নারীকে নিজের স্নমান রক্ষা করতে হবে। নারীর শরীর কেব্ল মাত্র ভোগ্য বস্তু নয়, ইহা একটি ম্নদির। পুরুষরা প্রকারভেদে কারো পুত্র, কারো সবামী, কারো ভ্রাতা আবার কারো পিতা। পুরুস্কেও নারীকে স্নমান দিতে হবে।
নারীর স্বাধীনতা থাকা দরকার। নারীর স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়? নারীর স্বাধীনতা হচ্ছে, বাক্ সবাধীন্তা, সিক্ষয়ায় স্বাধীনতা, ক্ররমে স্বাধীনতা, কোন কার্য্যে সিদ্ধান্ত গ্রহ্নের স্বাধীনতা, নির্বাচনের স্বাধীনতা।
সুত্রাং নারীর স্বাধীনতার সাথে নারীর শরীরকে এক্মাত্রায় টেনে এনে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
মৌলবাদী মুসলমান ও মৌলবাদী হিন্দুর মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নাই৷ নারীর যৌন স্বাধীনতার কথা শুনলে মৌলবাদী মুসলমানরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, এই লেখাটিও ঠিক সেই রকমের হয়েছে৷
এই লেখা পড়ে মৌলবাদী হিন্দুর লেখা মনে হলে, আমার ব্যাখ্যার দোষ ! উল্টা বুঝিলি রাম !
“এমন নয় তো যে, এটি নারীবাদের আড়ালে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের চাহিদার প্রকাশ?”
কিছু কিছু চিন্তা থাকে যেগুলো কেউ ধরিয়ে দেবার পর মনে হয়, ইস এই সহজ জিনিসটা আমি নিজে নিজে কেন বুঝলাম না! লেখককে ধন্যবাদ, ধরিয়ে দেবার জন্য। বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিকতার অভ্যাসে এরকম অনেক ব্যাপারই আছে যেগুলো বেশিরভাগ পুরুষের চোখে ধরা পড়বে না। অগ্রসর চিন্তার কোন নারীকেই এগিয়ে এসে দেখিয়ে দিতে হবে। আবারো ধন্যবাদ।
(এই লেখায় প্রথম মন্তব্যটা বেশ মজা লাগলো। ‘পুরুষ চিরশিশু’, ‘নারী পুরুষ দ্বারা নিপীড়িত হতেও পছন্দ করে’… যাব্বাবা.. এসব কী!)
ধন্যবাদ আপনাকে । আগের মন্তব্যে আমিও চমৎকৃত !
সম্মানিত লেখিকা আপনার লেখার মাধ্যমে আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটি বোঝা গেলনা । তবে নারীর স্বাধীনতা বলতে একজন নর হিসাবে আমি যা বুঝি ১। নারীর শিক্ষার স্বাধীনতা ২। নারীর কর্মের স্বাধীনতা ৩। নারীর সিন্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা ৪। নারীর সম্পদ অর্জনের স্বাধীনতা ইত্যাদি ।
কিন্তু নারীস্বাধীনতার সাথে তার শরীরের কোন সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করিনা । কারন উভয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নরনারীর মিলন সম্ভব নয় । ধর্ষণ কতিপয় পুরুষের এক ধরনের মানসিক রোগ এর চিকিৎসা আইনের সঠিক প্রয়োগ ।
নারীর ভিন্ন ভিন্ন রূপই নারীর সমস্যার অন্যতম কারণ যেমন মা রূপে নারি, প্রেমিকা বা স্ত্রী রূপে নারী, ভগ্নী রূপে নারী ও কন্যা রূপে নারী । আর পুরুষ হচ্ছে চিরশিশু তাই সবসময় সে নারীর বুকেই তার নিরাপত্তা খুজে বেড়ায় ।
আবার পুরুষের সহজাত আকর্ষণ হবে নারী যেহেতু সে তার গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছে । নর আর নারী আলাদা কেউ কি ? নারীরা যদি তাদের ম্যাসেল শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে তখন পুরুষের কিছুই করার থকবে না । সব নারী নিশ্চিয় এমনটা চাইবে না কারণ নারী পুরুষ দ্বারা নিপীড়িত হতেও পছন্দ করে ।