বলতে দ্বিধা নেই কোনো, আমার দেখা সমসাময়িক অনেকের মাঝে প্রয়াত ডঃ অভিজিৎ রায় ছিলেন সব থেকে বেশী ধৈর্য্যশীল একজন মানুষ । আমি তাঁকে অভিজিৎ দা বলে ডাকতাম । প্রায় বছর চারেক আগের কথা, আমি যখন কানাডা পাড়ি জমাই, লেখক কাজী মাহবুব হাসান আমাকে মুক্তমনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন । আমি অভিজিৎ দাকে ছোট্টো একটা ইনবক্স করি, তাঁর উদ্যেগের প্রসংশা করে । আর শেষ বারের মতো গত ২৪ ফেব্রুয়ারী অভিজিৎ দা আমাকে ইনবক্স করেন । তিনি ঢাকাতে জানতে পেরে আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন হই কিন্তু তাঁকে তেমন কিছু জানতে না দিয়ে শুধু সংক্ষেপে বলি ‘সাবধানে থাকবেন’ । সেই হবে শেষ কথা দু:স্বপ্নেও ভাবিনি ।
বলতে সংকোচ বোধ করছি, অভিজিৎ দা আমাকে বহুবার লেখার অনুরোধ জানিয়েছেন আমি সময়ের অভাবে পারিনি তাঁর অনুরোধ রাখতে । তবে হয়তো আমি একজন ভিজ্যুয়াল মানুষ হিসেবে খুব দ্রুত ইমেজ নিয়ে কাজ করতে পারি বিধায় দাদা যখনই পোস্টার করে দিতে বলেছেন আমি চেষ্টা করেছি , আর নিজের মধ্যকার অপরাধবোধকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেছি । আজ আমার লেখা অভিজিৎ দা দেখতে পাবে না সে কষ্টের থেকে বড় কষ্ট হয়তো আর কিছু হবে না । তবে আমি এতটুকু সৎ ছিলাম যে আমার পুরাতন কোনো লেখা দিয়ে মুক্তমনাতে লেখা শুরু করতে চায়নি বলেই সময় নিচ্ছিলাম । মনে মনে এমন একটা বিষয় খুঁজছিলাম যা কিনা, শিল্পকলা ও মুক্তচিন্তা বা বিজ্ঞান মনস্কতা কে একই সরল রেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারবে । এমন একটা বিষয় বস্তুকে মাথায় রেখে আমি ধারাবাহিক ভাবে লিখে যাবো । আমাকে যারা অল্প বিস্তর জানেন, তারা জানবেন আমি হলাম হাজার আইডিয়ার মানুষ , যার বেশির ভাগই শেষ করতে পারি না সময়ের অভাবে । যদিও আমি আমার পুরাতন একটা লেখা দিয়ে শুরু করছি কারণ এটাকেই আমার সময় উপোযোগি মনে হয়েছে, তবে আমি অবশ্যই আমার পুরাতন পরিকল্পনা অনুযায়ি লিখবো মুক্তমানাতে ।
আবারো বলছি অত্যন্ত সংকোচিত মনে ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে যে, আমরা হয়তো কারো উপস্থিতি বা তার কর্মতৎপরতা ততটা বুঝে উঠতে পারি না যতক্ষন না তাকে আমরা হারায় আমাদের জীবন থেকে । অভিজিৎ দা কে এমন অকালে হারাবো আমি হলফ করে বলতে পারি মুক্তমনা পরিবারের কোনো সদস্যই ভাবতে পারেননি। আমিও না, মনে হতো বা জানতাম দাদা আছেন কাজ করছেন, যে কাজ কেউই করেনি বাংলাদেশে, যে কাজ দাদা ছাড়া কারো পক্ষেই করা সম্ভব নয় ; এমন সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দক্ষতা খুব কম মানুষের মধ্যে মেলে, আমাদের সমসাময়িক বাংলাদেশীদের মধ্যে । জানতাম দাদা আছেন পাশে, প্রয়োজন হলে আমি কাজ করে দেই; অপ্রয়োজনেইও দাদা কে বিরক্ত করবো; দাদা তো পাশেই আছেন । যেদিন দাদাকে হারালাম মনে হলে চোখের মনি থেকে একটা আলো হারিয়ে গেলো । আরো মনে হলো মাথার উপরের ছায়াটা হারিয়ে গেলো । ভয় হতে লাগলো, আমাদের মুক্তচিন্তার ও যুক্তির কথা বলার আর কাজ করবার প্লাটফর্মটা হারিয়ে যাবে না তো ?
আমরা জানি অভিজিৎ দা এর শূন্যতা আমরা পূরণ করতে পারবো না তবে, আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে তার চিহ্নিত অন্ধকারকে কিছুটা হলেও দূর করতে পারবো । আমাদের যে যার অবস্থান থেকে সেই কাজ গুলো করে যেতে হবে । আমার মনে হয় ব্যক্তিগত ভাবে যে আমরা ইতিমধ্যেই অন্ধকার বা অন্ধারের কারণগুলো কে চিন্হিত করেত পেরেছি, আমাদের উচিৎ এখন আলোর সন্ধান দেয়া । সেটা আমরা যে যার কাজের মধ্যমে করতে পারবো । যিনি লেখক তিনি লিখবেন , যিনি ভাস্কর তিনি ভাস্কর্য গড়বেন, যিনি চিকিৎসক তিনি চিকিৎসা করবেন, যিনি প্রকৌশলী তিনি নির্মাণ করবেন, যিনি দাশর্নিক তিনি চিন্তা করবেন, যিনি শিল্পী তিনি সৃষ্টি করবেন, সবাই কে অন্ধকারের পিছে ছুটতে হবে এমন কেনো কথা নয় বা সবাইকেই যে লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে সেটাও নয়, অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রতিকার করা সম্ভব । আমি আমার সৃষ্টির মাধ্যমে সেই অন্ধকার দূর করতে চেষ্টা করি, যার মাঝে আমি নিজেই একদিন শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছিলাম ।
অভিজিৎ দা এর এমন অকাল অপমৃত্যু প্রথম নয় এবং এটাই শেষ নয়। আমার অনেক দিন সময় লাগবে এই ঘটনাকে সত্য বলে মেনে নিতে বা আমি হয়তো কখনই পারবো না মেনে নিতে । আমি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একজন মানুষ, যার কারণে হয়তো আমি শিল্পী । আমি যেমন মেনে নিতে পারিনি আমার সহপাঠি ও বন্ধু ইসমত মনির মৃত্যুকে, ১৯৯৮ সালে এক সড়ক দূর্ঘটনায় সে প্রাণ হারায় । আমার শিল্পী বন্ধুটি ছিলো আমার দেখা প্রথম মুক্তমনা একজন মানুষ । সে আসলে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়নি, ভুল হবে সেটা বললে । সে মারা গিয়েছিলো রাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবহেলার কারণে ঠিক যেমন দাদার ক্ষেত্রে হয়েছে । মনি দূর্ঘটনার পরে বেঁচে ছিলো, ফার্মগেটে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিলো কিন্তু কোনো দায়িত্ব পালন করেনি , দায়িত্ব পালন করেনি ঢাকা মেডিকেলের কোনো চিকিৎসকও, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মনির মৃত্যু হয় রাত ৯টার সময়, তার দূর্ঘটনা ঘটেছিলো দুপুর ২ টা সময় । সেই উনিশ বিশ বছর বয়সে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ,স্বরাষ্ট মন্ত্রির কাছে গিয়েও কোনো বিচার না পেয়ে আমি বুঝে গিয়েছিলাম এ সমাজে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই ….
আমি আজো মানতে পারিনি সেই অকাল মৃত্যুকে । মনির অর্পূণ রয়ে যাওয়া স্বপ্নকে আমি সফল করার চেষ্টাকরি আমার সৃষ্টির মাধ্যমে , আমি চেষ্টা করি যে অদ্ভুত আধাঁর দেশটাকে ঘিরে ধরেছে সেটার চাদরটাকে ছিড়ে ফেলতে । আমি চেষ্টা করে যাবো অভিজিৎ দা এর যে স্বপ্ন ছিলো মুক্তমনের সমাজ গড়ে তোলা, সেই স্বপ্নের কিছুটা দায়ভার নিতে । অভিজিৎ দাকে হারিয়ে আমারা যেনো হরালাম আমাদের এক সক্রেটিসকে এবং বড্ড অসময়ে ! আমার আজ শিল্পী জাক-লুই ডাভিড এর আঁকা ‘দ্যা ডেথ অব সক্রেটিস’ চিত্রকর্মটির কথাই মনে পড়ছে বার বার ।
নিওক্লাসিসিজমের ফরাসী শিল্পী জাক – লুই ডাভিড (১৭৪৮-১৮২৫) এর আঁকা
দি ডেথ অব সক্রেটিস, ১৭৮৭, ৫১ বাই ৭৭ ১/৪ ইঞ্চি, ক্যানভাসে তৈলচিত্র
ফরাসী বিপ্লবের অনুসারী শিল্পীদের অনেকেরই গ্রীক ও রোমান থীমের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিলো। শিল্পী জাক-লুই ডাভিডও প্রাচীন সেই ক্লাসিকাল পিরিয়ডের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী ছিলেন । তিনি প্লেটোর রচনা ‘ফিডো ’ এবং সমসাময়িক বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জ্ঞান লাভ করে তবে ‘দি ডেথ অব সক্রেটস’ চিত্রটি নির্মাণ করেন।
সেই ক্লাসিকাল সময়ের অনেক ব্যক্তিত্ব ও মহাপুরুষদের মধ্যে তারা তাদের আদর্শের প্রতিবিম্ব খুঁজতেন । বিপ্লবী দার্শনিক সক্রেটিস ( খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৪৬৯-৩৯৯ ) তাদের মধ্যে অন্যতম যিনি তাঁর আর্দশকে টিকিয়ে রাখতে আপোষ করেননি এবং অন্যায় ও অবিচারের শিকার হয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করার দন্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন।
এই চুড়ান্ত দন্ড তিনি মেনে নিয়েছিলেন ঠিকই, তাঁর নিজস্ব দর্শনকে পরিত্যাগ করার কোন চেষ্টা করেননি। অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসী বিপ্লবের অনুসারী এই শিল্পী নিজেকে খুঁজেছেন সেই ঐতিহাসিক ঘটনার মাঝে, নিজেকে অভিব্যক্ত করেছেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত সব অন্যায়ের কেন্দ্র আদর্শে অনঢ় বীররুপে ।
এথেন্সের রাষ্ট্রপরিচালনাকারীরা সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে, সক্রেটিস কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করে না এবং তাদের পুর্বপুরুষের ধর্মেও বিশ্বাসী নয়, এবং তিনি তার জ্ঞানের মাধ্যমে তরুণদের বিভ্রান্ত করছে সুতরাং তারা দাবি করেছিলো যে হয় সক্রেটিস তার ধর্ম বিশ্বাসের কথা সবাইকে ব্যক্ত করবে অথবা হেমলক বিষপানে আত্মহত্যা করবে । শিল্পী ডাভিড ১৭৮৭ সালে চিত্রটি নির্মাণ করেন এবং এটা সম্ভবত শিল্পী ডাভিডের আঁকা দার্শনিক ধ্যানধারণা নিয়ে সব থেকে সুনিপূন নিউক্লাসিসিজমের উদাহরণ ।
‘দি ডেথ অব সক্রেটিস’ তৈলচিত্রটিতে আমরা দেখতে পাই, নির্ভিক দার্শনিক সক্রেটিস এক হাতে বিষের পেয়ালা তুলে নিচ্ছেন। অন্যহাতে তুলে প্রকাশ করছেন নিজের দৃঢ়তাকে । তাঁর হাতে বিষ তুলে দিচ্ছে একজন কারারক্ষী। টকটকে লাল টিউনিক পরিহিত রক্ষী লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে, হাতে চোখ ঢাকা তার, যেনো অত্যন্ত অনিচ্ছা ভরে সে এই অসীম জ্ঞানী আর সৎ মানুষটি হাতে হেমলকের বিষ মেশানো শেষ পান-পাত্র তুলে দিচ্ছে । তার গায়ের লাল যেনো মৃত্যুর কথাই ঘোষনা করছে ।
বিছানার প্রান্তে বসা ছাই রঙা চাদরে মোড়া ফিগারটিকে প্লেটো বলে ধরে নেয়া হয় কারণ, তাঁর পায়ের কাছে লেখার কাগজ , কালির দোয়াত ও কলম পড়ে আছে । যদিও প্লেটোর মতে, সেদিন তিনি সেখানে উপস্হিত ছিলেন না ; তবুও শিল্পী শোকে মুহ্যমান সক্রেটিস এর ছাত্র প্লেটোকে দিখিয়েছেন কাতর ও অবশ হয়ে বসে থাকতে । যেনো বোঝার উপায় নেই তিনি জীবিত, নাকি জীবিত অবস্থায় মৃতের মত অসাড় হয়ে আছেন ।
বাদামী-লাল চাদরে মোড়া ফিগারটি সক্রেটিস ছাত্র ক্রিটো । যে সক্রেটিসের হাটুতে হাত রেখে আছে যেনো, শেষবারের মতো চেষ্টা করছে, তার গুরুকে বিষ পান থেকে বিরত করতে ।
আর্চের মধ্য থেকে দুরে অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে সক্রেটিসের পরিবার –পরিজনেরা ফিরে যাচ্ছে ঘরে। প্লেটোর ভাষায়, সক্রেটিস চাননি আপনজনদেরকে নিজের মৃত্যুর সাক্ষী রাখতে !
যদিও চিত্রটিতে বেশ নাটকীয়তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন শিল্পী জাক-লুই ডাভিড । প্রধান চরিত্র ও ব্যাকগ্রাউন্ডের ফিগারগুলোর সাথে সম্পর্ক বেশ কনট্রাস্ট বা বিভেদ সৃষ্টিকারী ও আবেগঘন । আর আবেগকে সক্রেটিস কখনই প্রশ্রয় দিতে পচ্ছন্দ করতেন না ।
তাঁর মতো আদর্শবান যুক্তিবাদী দার্শনিকের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক ছিলো । এই অসাধারণ চিত্রটিতে সক্রেটিস এর সেই চারিত্রিক বলিষ্ঠতা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন শিল্পী ।
আমাদের বড় বেশী ক্ষতি হয়ে গেছে সন্দেহ নেই।
অভিজিৎ যুগ যুগ বেঁচে থাকবে তাঁর চিন্তাশীল লেখার কারণেই।
এই দেশের মোল্লাতন্ত্র যেভাবে দেশটাকে মধ্য যুগে নিয়ে যাচ্ছে তাতে আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ দেখছি না।
তবুও এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এর কোন বিকল্প নেই।
বাংলার জাগড়নের আদি পুরুষ যদি রাজা রামমোহন হন ,তবে ড . অভিজিত রায় বাংলার জাগরনের প্রাণ পুরুষ । অভিজিতরা যুগে যুগে আসে না এবং যখন প্রস্থন করে তখন সেই শুন্যতা অন্য কেউ পূরণ করতে পারে না ।তা কখনো পূরণ হবার নয় ।
ছোট মানুষ অনেক কথা বলে ফেললাম ।
”যুগে যুগে আমি আসবো আর যুগে যুগে এরা আমায় শাস্তি দেবে তবে তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রোইলো যদি অমার সন্তানেরা নৈতিকতার সীমারেখা বিশ্বাস দিয়ে টানে নিজের থেকে দেবতার উপর বেশি বিশ্বাস আনে” তাহলে দোহাই তোমাদের আমার সন্তানদের যেন একই ভাবে শাস্তি দিও” ।………..সক্রেটিসের
(১) আসলেই আমরা কেউ বেঁচে থাকতে তার কর্মোদ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের কাজ করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারি না। যার উৎসাহে অনেক কিছুর শুরু তাকেই সবকথা জানানোর সুযোগটা একসময় হারিয়ে যায়।
(২) প্লেটোর সংলাপ ‘ক্রিটো’ পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। ‘সক্রেটিসের মৃত্যু’ ছবিতে যে সে-ও আছে তা জানা ছিল না। ছবিটা বরাবরই প্রিয়।
(৩) জাক-লুই দাভিদ এর The Death of Marat এবং Oath of the Horatii ছবি দুটো সম্পর্কেও কিছু লেখার অনুরোধ জানিয়ে গেলাম।
ধন্যবাদ । অবশ্যই লিখবো ।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য ।
মোহাম্মদে কে গালি দিলে তারা জবাই করবে । মোহাম্মদ যখন সারা বিশ্বকে গালি দিয়েছে, তখন আসলে সারা বিশ্বের মানুষের কি করা উচিৎ ? কোরান যখন গালি দিতে পারে, ভয় দেখাতে পারে, লোভ দেখাতে পারে তখন সেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে কি করা উচিৎ ?
খুন -ধর্ষণ-অন্যায় কে যারা ধর্ম মনে করে তাদের কে ঘৃনা করতেও ক্লান্ত বোধ করি আমি ।
অভিজিৎ দা সত্যিই একুশ শতকের সক্রেটিস। আমি তার লেখা যতই পড়েছি ততই আমার সকল না জানা প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। এখন অনেক কাঠমোল্লা জাতিয় মুমিন বান্দারা বলতেছে তিনি নাকি সবসময় মুহাম্মদ কে বাজে ভাসায় গালি দিয়েছে, কিন্তু আমি তার কোন লেখায় আক্রমণ দেখিনি। হ্যা তিনি কুসংস্কার কে তীব্রভাবে প্রতিবাদ করেছে। তার এভাবে নির্মম ম্রিত্যু তে আমিও নিজেকে নিয়ে খুব সংকিত। একজন মেয়ের জন্য সংশয়বাদি হয়ে বেচে থাকা খুবই ভয়ের। আমি তার খুনিদের এভাবেই নির্মম শাস্তি চাই।
তুলনাটা দারুণ টেনেছেন। ছবির বিবরণও অসামান্য।
অভিজিতের লড়াই চলবেই।
@স্যাম (ভিরাকোচা) সিনহা,
ধন্যবাদ । আমাদের আরো হাজার মাইল পথ চলতে হবে ঘুমিয়ে পড়ার আগে….
এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না! কত পরিশ্রম করে, মেধা আর মনন দিয়ে, তিনি তাঁর অবস্থানে পৌঁছেছেন, মুক্ত-চিন্তার বিকাশে কাজ করেছেন, প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার গড়েছেন, সন্তানের স্নেহময় পিতা হয়েছেন; অথচ এই প্রতিভাবান, ক্ষণজন্মা লোকটির জীবন নৃশংসভাবে কেড়ে নিতে ঘাতকদের এতোটুকু দ্বিধা হয় নি! ধিক, শত ধিক সেই সৃষ্টিনাশা আদর্শের যা মানুষকে এরকম কাপুরুষ দানব বানায়।
@মনজুর মুরশেদ,
সহমত ।
অনেক জ্ঞ্যান বিষয়ক পোষ্ট। মুক্তমনার কাজইতো জ্ঞ্যান বিতরন করা, যা অভিজিত করে গেছেন।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
ধন্যবাদ ।
খুব সুন্দর লেখা
@তপন চক্রবর্তী,
অনেক ধন্যবাদ ।
শোককে শক্তিতে পরিনত করে কাজে নেমে পড়বার জন্য ধন্যবাদ মিতা।
@কাজী রহমান,
ধন্যবাদ ভাইয়া । কাজ থামানো চলবে না । কাজই আমাদের অস্ত্র !
প্রচলিত সময়ের ধ্যান ধারণার চেয়ে অগ্রসর কাউকে সমাজ সহ্য করতে পারে না। নিজেদের হীনমন্যাতার কারণে যে আক্রোশ তৈরি হয়, সেই আক্রোশের বিষে নীলকণ্ঠ হয় সক্রেটিস, ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে মারা যায় হাইপেশিয়া, সেই ঘৃণার আগুনে পোড়ে ব্রুনো, সেই অন্ধকারের কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে হয় গ্যালিলিওকে, সেই পাশবিক শক্তির চাপাতির কোপে অকালে বিদায় নেয় অভিজিৎ।
@ফরিদ আহমেদ,
একমত ভাইয়া এবং এই তালিকায় আরো বহু মানুষ আছে । তবে আমাদের লড়াই চলবেই ….
এখানে সক্রেটিসকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়নি যা করা হয়েছে অভিজিৎ দাদা কে। আচ্ছা ফারাবী নামক সেই লোকটা যে কিনা তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছিলো যে অভিজিৎ এখন দেশের বাইরে দেশে আসলে তাকেও হত্যা করা হবে। আর তার অনেক পোস্টেই দেখেছি দাদাকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা লিখতে। তো কেন তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হচ্ছেনা?
@ফলো দ্যা লাইট,
অপরাধিদের শাস্তি হোক সেটাই সবাই প্রত্যাশা করছে ।
@আসমা সুলতানা মিতা, এখন পর্যন্ত কোন আশার কথা শুনলামনা। চারদিন হয়েই গেল… ভাল্লাগেনা…
@ফলো দ্যা লাইট,
আমাদের অভিজিৎ দা এর মত ধৈর্য্যশীল হতে হবে ।
আপনি ঠিক বলেছেন, আসমা। অভিজিৎ সক্রেটিসই। তাই তাঁকে প্রাণদণ্ড দিতে হয়েছে। আপনার বানানো ব্যানারগুলো বরাবরই চমৎকার। অভিজিতের অনুরোধে আপনি মুক্তমনার জন্য ব্যানার বানাতে শুরু করেন। এবার আপনি অভিজিতের জন্যই ব্যানার বানালেন। মুক্তমনার ব্যানারে অভি, আমাদের অভি, আমাদের চেতনা, প্রেরণা। এর মত কষ্টের আর কিছু নেই। নিয়মিত লিখুন, প্লিজ।
@তামান্না ঝুমু,
গত দু’দিন দাদার জন্য পোস্টার বানানো যে কত কষ্টকর ছিলো বা এখনও হচ্ছে, হয়তো আপনি বুঝবেন। আমি সব সময় নিজে থেকেই প্রতিবাদ পোস্টার/ মূলক পোস্টার বানাই কাউকে বলতে হয় না ; এবার ফরিদ ভাই অনরোধ করলেন বলে আমি শুরু করলাম; তা নাহলে আমি দাদার খবরটা শোনার পর থেকে কোনো কিছুই করতে পারিনি ।
আমার লেখাটা পড়ার জন্য ও আমাকে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । মুক্তমনার সবাই যে যেখানে থাকবেন নিরপদ থাকবে সেই কামনাই করছি সারাক্ষন ।
প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায় মুক্তচিন্তার দর্শণের ধারণা যিনি দিয়েছিলেন, প্রশ্ন করবার মাধ্যমে জ্ঞান অন্বেষণের পথ প্রদর্শণ যিনি করেছিলেন সেই সক্রেটিস হচ্ছেন আমার চোখে এমন একজন সৃষ্টিশীল মানুষ যিনি নিজের আদর্শকে অস্তিত্বময় করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যার সৃষ্টির বড় জায়গা জুড়ে আছে তার দিকপাল সব শিষ্য যারা তার মুক্তবুদ্ধির আদর্শকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে গেছেন। সেই সক্রেটিস থেকে শুরু হয়ে হাজারো সৎ মনীষীর চৈতন্য-শ্রম-প্রাণের বিনিময়ে আজকের সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শত অন্ধবিশ্বাস-প্রসূত বর্বরতার সাথে লড়াই করে। মুক্ত চিন্তকরা লড়েছেন তাদের মেধা-মননে কলমে-তুলিতে, আর ধর্মান্ধ বর্বররা আঘাত হেনেছে তলোয়ারে-বন্দুকে। কয়েক হাজার বছরের এই যুদ্ধ এখনও শেষ হয় নি।
অন্ধবিশ্বাস-মৌলবাদের নাগপাশে বন্দী বাংলাদেশের তেমনি এক মনীষী অভিজিৎ রায়, যার আদর্শিক সততা-জ্ঞান-মেধা-মনন-সাহসিকতার আলোকে ভয় পেয়ে তার জীবন কেড়ে নিয়েছে বর্বর অন্ধকারের হায়েনারা। কিন্তু তারা জানে না সক্রেটিসের মত অভিজিতেরও মরণ নেই। অভিজিতেরা মরে না। নক্ষত্রের মত আলো দিয়ে পথ দেখায় সত্যানুসন্ধানী অভিযাত্রীদের যারা আগামীর সভ্যতা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
@আসমা সুলতানাঃ আপনার শিল্পী সত্ত্বার প্রতি অভিবাদন জানাই, এত আন্তরিকভাবে অভিজিৎ দাদাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি বেদী তৈরী করে দেবার জন্য।
@হিরন্ময় দিগন্ত,
ধন্যবাদ হিরন । তোমার আরো নিয়মি লেখা উচৎ ।
রবিউল ইসলাম,
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার অনুপ্রেরণামূলক লেখার জন্য । আসলে, আমার মনটা বেশ ভারাক্রান্ত । অভিজিত বাবুর সঙ্গে এক সময় আমি বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কে গিয়েছিলাম আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে । তাঁর মতো প্রজ্ঞা সমসাময়ক কালে খুব কম লোকেরই আছে বাংলাদেশে ।উনি এথিস্ট-হিউম্যানিস্ট আর আমি নিজে সংশয়বাদী এবং কমিউনিস্ট মতাদর্শী । তাই, অক্টোবর বিপ্লব, মার্ক্সবাদ এসব নিয়ে ওনার সঙ্গে অনেক দ্বিমত ছিল । ধর্মবাদীদের জন্য এই সাইটটি উম্মুক্ত করার ব্যাপারেও আমি কখনোই মনে মনে সায় দিতে পারিনে । তবে, প্রকাশ করিনি । যাই হহোক, অভিজিত বাবুর এই হত্যার প্রতিবাদে আমি ঠিক করেছি আমার পূর্বে লেখা একটি নিরীশ্বরবাদী কবিতা প্রকাশ করব ছদ্মনামে ।
মুক্তচিন্তার মানুষদের পেছানোর আর সুযোগ নেই । এই মৌলবাদীদের ছাড় দিতে দিতে এখন তাঁরা মহীরুহে পৌছেছে, দুঃসাহস দেখাচ্ছে । ওদেরকে দেখাতে হবে, যে আমরা ভয় পাইনা, আমাদের মুক্তচিন্তার গতি এই অন্ধকারের শক্তি থামাতে পারবেনা । ধন্যবাদ, অনেক কথা বলে ফেললাম । ইতি-রবিউল ইসলাম, প্রকৌশলী, কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ।
@রবিউল ইসলাম,
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ।
যে সমাজের মানুষ গেয়েবি জ্বিন্দের টেলিফোন সংলাপে সারাদিয়ে রাতের অন্ধকারে গোপনে সোলায়মান বাদশার সোনার কলশী পেতে চায়, যে সমাজের মানুষ গাভিন গাইায় বিক্রি করে ফকির বাবার আস্তানায় চিকিৎসা নিতে যায়, যে সমাজে গন্ডমূর্খ মৌলনার ওয়াজ মহফিলে মানুষ হাত তালি দেয়, যে সমাজে টাই-স্যুট পরা লোকজন হেফাজতের লংমার্চে পানির বোতল হাতে নিয়ে ভিস্তি সেজে যায়, যে সমাজের ৯০% ধর্মপ্রান মানুষ অসৎ, যে সমাজে হতদরিদ্র মানুষগুলো পরলৌকিক সুখের আশায় মরার জন্য নিরুপায় বেঁচে আছে…………..
আমাদের অভিজিৎ দা সেই সমাজকেই হেঁচকা ঝাকুনি দিয়ে ছিলেন।
ব্যক্তির হত্যা করে হয়ত আগামী সৃষ্টির অন্তরায় ঘটানো সম্ভব কিন্তু তার দর্শন কে , তার ধারনাকে কখনওই হত্যা করা যায় না । বরং যত আঘাত আসবে , যত প্রতিরোধ আসবে ততই তার দর্শন বা চিন্তাকে সত্য বলে প্রমানিত হবে । যারা আজও অন্ধকারে থেকে হাতিয়ার নিয়ে কন্ঠ রোধ করতে চায় , যারা চিন্তার মধ্যেও বেরি বাধতে চায় আমি তাদের প্রতি করুনা বোধ করি , তাদের জন্য আমার দুঃক্ষ হয় । আমি অভিজিতের মৃত্যুতে হয়ত অতটা শোকাহত নই যতটা শোকাহত আসহায় সেসব অন্ধকারের মানুষ গুলোর প্রতি । অভিজিত হয়ত চলে গেছেন তবে সত্যটা হয়ত তিনি জেনে গেছেন কিন্তু অন্ধকারের ঐ মানুষ গুলো যে কখনওই সত্য গুলো জানতে পারবে না , তারা এতটাই দূর্ভাগা যে কার জন্য এসব করছে , কিসের জন্য এসব করেছে সেটাই জানে না । আমি অবশ্যই শোকাহত , তবে তা অভিজিতের জন্য নয় , শোকাহত সেসব মানুষ রুপি পুতুল গুলোর জন্য যারা হয়ত কোনদিনও জানতেও পারবে না কোন যুক্তিতে তারা অভিজিতের শরীরে ছুরি চালিয়েছিল , তারা তো নিজেদের কেই জানে না কেন তারা জন্মেছিল , কেন তারা এখনও বেঁচে আছে ।
@ফুলবানু,
একমত ।