লতিফ সিদ্দিকী, উনি একজন টিপিকাল আওয়ামিলীগার। জীবনে উনাকে দেখা যায় নি দলের মধ্যের গণতন্ত্রহীনতায় উদ্বিগ্ন হতে, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ব্যাংকলুট, হরিলুট, শেয়ারলুট নিয়ে বিচলিত হতে। হঠাৎ করে উনার আধুনিক মানুষ হবার বাসনা বা উনি যে একজন আধুনিক মানুষ তা জানান দেবার বাসনার কারণ আমার বোধগম্য হলো না। একটা কারণ হয়তো, এখন সব কথাই ‘হয়তো’ লাগিয়ে বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। উনি পাট মন্ত্রী থেকে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ে বদলি হয়ে আসাতে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। সরকার, মোটামুটি প্রধানমন্ত্রী একাই চালিয়ে থাকেন। একাত চালানো কঠিন তাই কিছু বেতনভুক্ত উপদেষ্টা রাখা আছে। সিনিয়র মন্ত্রীদের কাজের উপরে খরবদারি করাতে এর আগে অর্থমন্ত্রীর সাথে অর্থ উপদেষ্টার এক চোট হতে দেখা গেছে। অন্যান্ন মন্ত্রণালয়েও মন্ত্রী বনাম উপদেষ্টাদের মধ্যেকার টেনশনের খবর বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াতে এসেছে। লতিফ সিদ্দিকীর নতুন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়। এতক্ষণে আপনারা নিশ্চই বুঝে গেছেন সমস্যা। তারপরও আমি আরেকটু বলিঃ ধরেন এলাকার নেতা, পাতি নেতা, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ঠিকাদাররা নিশ্চই জয় ভাই বলেছেন এটা করতে, ওটা করতে, বলে বলে উনার মাথার স্ক্রু ঢিলা করে ফেলেছিলো আরো আগেই। বৃদ্ধ বয়সে বিষয়গুলি মানতে পারা খুব কঠিন। অন্য কোন উপদেষ্টা হলে, মানে জয় না হয়ে অন্য কেউ তাহলে এতদিনে উনি সেই উপদেষ্টার খবর করে ছেড়ে দিতেন।উনার আবার লোকজনকে পানিতে চুবানো, চড়-চাপড় মারার অভ্যাস আগে থেকেই আছে। আবার বলাও যায় না, মুক্তবিশ্বের অতিরিক্ত সুবিধার কারণে পান করার পরিমান বেশি হওয়াজনিত হ্যাংওভার থেকে প্রাপ্ত হিরোইজমের অবশেষ থেকেও ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উনি বলেছেন, ভেবেছিলাম মুক্তবিশ্বে এসেছি কিন্তু এখানে যে এত কালো বিড়াল আছে, তা কে জানতো। আইনি ভাষায় উনাকে ফাসানোর সুযোগ আছে কিনা সেটা আইনজিবিরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে আমার মনে হয় প্রথম দিনের ভিডিও ক্লিপে সেই সুযোগ ছিলো না। উনি প্রেসকে ডেকে উনার মতামত দেননি। অর্থাৎ ইচ্ছা করে ছড়াননি যাতে সমাজকে একেবারে ছাতু ছাতু করে দেবার উস্কানি উনি দিয়েছেন সেটা বলা যায়। কেউ একজন গোপনে ঐ কাজ করেছে। জিনি গোপনে কাজটা করেছেন অপরাধটা তার। এইখানে ‘অপরাধ’ শব্দটা আমার না। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন কি মন করে তাই বললাম। যাই হোক, লতিফ সিদ্দিকী খুবই সত্যকথা বলেছেন যদিও উনার কাজ সত্য কথা বলা নয়। রাজনীতি কোন সত্য কথা বলার যায়গা না বরং অর্ধ সত্য বলার যায়গা। নিজেদের পক্ষে যাবার মত সত্যটুকু প্রকাশের অনুমতিই তার পেশা তাকে দেয়। আমাদের মত প্রবল অনুভুতিসম্পন্ন দেশের নিয়ম হলো, কথা কম কাজ বেশি। উনারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করলে মাদ্রাসাগুলি ছাত্র পেতনা। আধুনিক মানুষ হিসাবে এবং আধুনিক রাজনীতিবিদ হিসাবে উনার উচিৎ ছিলো দলের মধ্যে এই জাতীয় প্রাচরণা জোরদার করা ( অবশ্যই মাদ্রাসা প্রসঙ্গ উহ্য রেখে) এবং সরকারি সীদ্ধান্ত প্রণয়নে প্রভাব সৃষ্টি করা যাতে ধীরে ধীরে দেশটাও আধুনিক হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু উনি যা করলেন তাতে উনি নিজেই সকল ক্ষমতার উর্দ্ধে চলে গেলেন। এখন উনি দেশে ফিরতে পারেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

আমি আসলে লতিফ সিদ্দিকী কি করলো না করলো সেটা নিয়ে মোটেই ভাবিত ছিলাম না কিন্তু তার ভিডিও ক্লিপটি দেখার পরে আমরা যা যা করলাম তা খুবই আতংকজনক কৌতুকের সাথে দেখলাম। সবাই আমরা লতিফ সিদ্দিকীর বিচার চাইছি সেটাও কোন সমস্যা না। অনুভুতি যেখানে আহত সেখানে বিচারতো চাইতেই হবে। কিন্তু সকলে সমস্বরে বিচারটি চাইতে লাগলাম শরিয়া আইনে। যে আইন আমাদের দেশে নেই। দুঃখিত, কেউ আমরা তার বিচার চাইলাম কথাটা ঠিক না, আমরা মোটামুটি সবাই সরাসরি সাজা ঘোষণায় লেগে গেলাম। কাকতালীয়ভাবে সেই সাজা গুলি দোররা ও প্রকাশ্যে কতলে গিয়ে ঠেকলো। এই পর্যায়ে আময়ামিলীগের সমর্থকগোষ্ঠীকেও মারাক্তক রকমের ক্ষিপ্ত হতে দেখা গেছে। তাদের ভাবটা এমন যে, এই সব বুড়া-টুরার পাকনামিতে ক্ষমতার চেয়ারটাইনা উলটে যায়। তারা এই সব আগাছাদের থেকে দলকে মুক্ত হবার পরামর্শ দিচ্ছে।সহি ইমেজের এবং ইসলামি আকিদায় পূর্ণ ব্যাক্তিদের দিয়ে সেই আগাছার শূন্যস্থান পূরণের কথা বলছে। জয় ভাইয়ের প্রতি আনুগত্য দেখাবারও এহেন সুযোগ কোন কামেল আদমিই ছেড়ে দিতে পারে না। সেই সুযোগ ছাড়ার জন্য তারা রাজনীতিতে আসেনি। সেকুলার বাংলাদেশের একটা রাজনৈতিক দলও বলেনি লতিফ সিদ্দিকী ঠিক কথা বলেছেন। কেউ তার বাক স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে আসেন নি।আবারো ভুল বললাম, বাক স্বাধীনতা নামে যে একটা কিছু আছে সেই কথা উচ্চারণের সাহস কোন রাজনৈতিক দল দেখায়নি।

শেষ করার আগে শুধু বলবো, লতিফ সিদ্দিকীর একটা স্যালুট প্রাপ্য। তিনি জাতির মধ্যে একটা অভূতপূর্ব ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। জাতি তার এই অবদান কোনদিনও ভুলতে পারবেনা।