(১)
আমাদের একটা জেনারেশন গড়ে উঠেছে তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে! সেই স্কুল লাইফে তসলিমা নাসরিনকে পেয়েছি, তারপরে একে একে তার লেখা গোগ্রাসে গিলেছি! তারচেয়ে বেশি হয়েছে ডিবেট! প্রচুর ডিবেট করেছি- এই এক তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে! স্কুল বন্ধুদের সাথে সেই ডিবেট, বাসায় ডিবেট, পাড়ায় ডিবেট, শীতে নানাবাড়িতে বেড়াতে গেলে মামা-খালাদের সাথে ডিবেট- কাজিনদের সাথে ডিবেট! এই ডিবেট এ তসলিমা নাসরিনকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আরো বেশি করে তসলিমা নাসরিন পড়া! যাযাদি-র মত প্রতিক্রিয়াশীল পত্রিকা তসলিমা নাসরিনের কলাম ছাপাতো- সে “প্রেমলীলা” নামে আরেকটা রগরগে টাইপের ছোট ফিচার ছাপাতো- আমাদের টিনেজার বন্ধুদের কেউ কেউ ‘প্রেমলীলা’র আকর্ষণেই যাযাদি কিনতো, সাথে তসলিমা নাসরিনও পড়তো- পড়ে এসে ডিবেট করতো- তাদের ডিবেটের কিছু রসদ ঐ যাযাদিতেও থাকতো- কেননা তারা পাঠকদের চিঠি ছাপাতো- যার একটা বড় অংশই ছিল তসলিমাকে করা সমালোচনা!
একবার এক বন্ধু লাফাতে লাফাতে এসে বললো- তসলিমা লিখেছে, সেও পুরুষদের মত গরম লাগলে গায়ের জামা খুলে ফেলতে চায়- তো তাকে পুরুষদের মত জিন্স পরতে বইলো আর রাস্তায় হিসি পেলে জিপার খুলে দাঁড়িয়ে যেতে বইলো! বলেই- বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে দিলো! যাযাদি-তে ঠিক এইরকম সমালোচনা তারা স্থান দিত! ‘প্রেমলীলা’র পাঠকেরা ঐসব পড়ে দাঁত বের করে হাসতো, পারলে তাদের দাঁতের ফাক গলে রস বের হয়ে যেত- কেননা তারা রাস্তার পাশে নারীর হিসি করার দৃশ্য কল্পনা করে সুখ পেতে চাইতো! বন্ধুরে বললাম- দাঁড়িয়ে হিসি করবে কেন, বসেই করবে! তোদের মত লোলুপ পুরুষদের কারণে যেমন গরমে কাপড় খোলা তো দুরের কথা- গেঞ্জি টাইপের হালকা কাপড় পরার জো নেই, তেমনি রাস্তার পাশে অতি জরুরি প্রয়োজনে হিসি করারো উপায় নেই …
তসলিমা নাসরিন আমাদের কৈশোরে ছিল ঝড়ের অপর নাম! যেমন তেমন ঝড় না, একেবারে কালবৈশাখী ঝড়! সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিত, উড়িয়ে নিয়ে যেত! অনেক বই ছিল খোলামেলা, অভিভাবকের চোখে নিষিদ্ধ, অনেক সময় তার বই পড়তে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে, কিন্তু পড়তাম! স্কুল লাইফের বই পড়া মানে- হুমায়ুন আহমেদ, তসলিমা নাসরিন আর সেবা প্রকাশনী পড়া (তার আগে ফেলুদা সিরিজ, আরেকটু পরে সুনীল- সমরেশ- শীর্ষেন্দু)! হুমায়ুন পড়তাম, কারণ পড়তে ভালো লাগতো- তাড়াতাড়ি শেষ হতো- একটানে শেষ হয়ে যেত, এবং সহজলভ্য ছিল- কিছুদিন পর পর একেকটা বই আসতো! আর তসলিমা নাসরিনের বই হাতে পেতাম অনেকদিন পর পর- পড়তে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে- পড়তে একটু বেশি সময় লাগতো কেননা একাধিকবার পড়তে হতো- তবে এটাও একটানা না শেষ করে ওঠা যেত না! কিন্তু, এটা মাথায় থাকতো অনেকদিন! কেননা, একেকটা লেখায় থাকতো মারাত্মক সব ধাক্কা, কি তার ঝাঁজ, কি তার তেজ! শুরুতে মানতে পারতাম না, পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যেত, কিন্তু ফেলতেও পারতাম না, ফলে আবার পড়তে হতো! আবার পড়তাম! অস্বস্তি হতো! অস্বস্তি নিয়ে পড়তাম, একসময় মেনে নিতেও বাধ্য হতাম! সে অন্য এক অনুভূতি …
আমার নাস্তিকতার পাঠ আরেকটু আগে! ফলে, তসলিমা নাসরিনকে আমার নাস্তিকতার গুরু বলা যাবে না! তারপরেও আমার নাস্তিক হওয়ার পেছনে তার বিশাল ভূমিকা আছে। একটা পর্যায় ছিল যখন সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাসের সমস্ত যুক্তি আমার কাছে মজুত, তর্কের ময়দানে আল্লাহকে নাই করে দিলাম, নবীকে আমাদের মত মানুষ বানিয়ে দিলাম, কোরানকে নবীর লেখা বই প্রমান করে দিলাম- কিন্তু কোথায় যেন একটা ভয়- একটা দোদুল্যমানতা, একেবারে মন থেকে দূর করতে পারছিলাম না- কোনকারণে যদি আল্লাহ থেকে থাকেন! এই অবস্থাটা কাটাতে সাহায্য করেছেন- তসলিমা নাসরিন! আল্লাহকে- নবীকে যেভাবে সরাসরি আক্রমণ করেছেন, সাহস পেলাম! সাহস ঐ জায়গায় যে, আল্লাহ- নবী যদি থেকেও থাকেও- তারা নপুংসুক ধরণের- কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না, রাখলে তাদের গজব সবার আগে সরাসরি তসলিমা নাসরিনের উপরে পড়তো, তিনি ধ্বংস হয়ে যেতেন! ফলে, একদম ঝাড়া হাত-পা হয়ে ধর্মকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করার সাহস দিয়েছেন আমাকে তসলিমা নাসরিনই! আমার নাস্তিকতা প্রচার/ তর্ক-বিতর্কের একটা পর্যায়ে তসলিমা নাসরিনের প্রভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলাম- ফলে ধিরে ধিরে দেখা গেল- আমার সাথে বন্ধু বান্ধবরা তর্ক আর করতে চাইতো না, কদাচিৎ হলেও একদম শুরুতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু হয়ে যেত! আরজ আলী মাতুব্বরের শিষ্যত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত আমার ধরণ কিছুটা এগ্রেসিভ ছিল- স্বীকার করছি! তা মূলত তসলিমা নাসরিন এবং পরে হুমায়ুন আজাদের প্রভাবেই! এখনো মাঝে মধ্যে যে, রাগ তৈরি হয়, মুখ ফসকে ক্ষোভে গালি দিয়ে ফেলি- সবই তসলিমা নাসরিন আর হুমায়ুন আজাদের প্রভাব (প্রোফাইলের ছবিটা ঐ কারণে রেখে দিয়েছি- গুরুর ছবি দেখি আর নিজেকে ঠান্ডা করার চেস্টা করি) …
যাহোক- যেটা বলছিলাম, তসলিমা নাসরিনের লেখা পড়ে ধাক্কা খেতাম, মানতে কষ্ট হতো- কিন্তু ফেলতে পারতাম না! ধর্ম সংক্রান্ত লেখা পড়ে নিশ্চয়ই এই অনুভূতি হতো না! কেননা নাস্তিকতা আমার কাছে নতুন ছিল না- প্রবল বেগে ধাক্কা খেতাম তার ঠিক অন্য লেখাগুলোতে! হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনই আমাকে প্রথম জানিয়েছে, ‘পুরুষ’ একটা গালির নাম! যে ‘পুরুষ’ নিয়ে হয়তো গর্ব ছিল- সেই ‘পুরুষ’ পরিচয় হয়ে দাড়ালো লজ্জার! পুরুষের মাঝে হিংস্রতা- ক্ষুদ্রতা- নীচতা- নোংরামি সব দেখিয়ে তো ছাড়লোই- কিন্তু, সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে দাঁড়ালো তখনই যখন দেখি- আমি নিজেও সেই হিংস্র, ক্ষুদ্র, নীচ, নোংরা, লোভী এক পুরুষই! এভাবে আমাকে চেনানোর, নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রামে লিপ্ত করার কাজটি যিনি করেছেন- তিনি আর কেউ নন, তিনি তসলিমা নাসরিন! এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই সংগ্রামটি এত সহজ নয়- এ সংগ্রাম সারাজীবনের বোধ হয়! এই সংগ্রামের শুরু যার হাত ধরে সেই তসলিমা নাসরিনের প্রতি শ্রদ্ধার শেষ নেই! তার কিছু কিছু বিষয়ের সাথে একমত নই- কিছু কর্মপদ্ধতি অন্যরকম হলে আরো ভালো হতো বোধ করি; কিন্তু আমাদের কালে মুক্তচিন্তা প্রসারে এবং নারীবাদী চিন্তার প্রসারে তিনি অদ্বিতীয়! আজো তিনি প্রলয়ংকরী ঝড়! যে ঝড়কে ভয় পায় পুরুষবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা!
তার জন্মদিনে অনেক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শুভকামনা জানাই! আসুন, তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে সামিল হই!
(২)
অদিতি ফাল্গুনী তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে একটা কমেন্ট করেছেনঃ
///ব্যক্তি সম্পর্কের কথা বাজারে প্রকাশ করা কতটা সঠিক ও সেসব কাহিনী কতটা সত্য সেসব বিতর্কে না গিয়ে বা কেন কলামিস্ট হিসেবে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে উত্থানের সময় ঠিক সবচেয়ে বাজার কাটতি দুই পত্রিকার সম্পাদকেরই প্রেমিকা ও পরে স্ত্রী হয়েছিলেন (প্রেম বা বিয়ে অ-সম্পাদক কোন প্রাণীর সাথেও হতে পারতো)///
অদিতি ফাল্গুনীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেখে খুব অবাক হলাম! এটা আবার এমন একটা নোংরা পোস্টে (https://www.facebook.com/priyomanush/posts/814705295240948?comment_id=815089575202520¬if_t=like) করা, যেখানে পোস্ট লেখক বলেছেনঃ
///যে সমস্ত শ্রদ্ধেয়, সর্বজনমান্য লেখক, কবি, শিল্পীর কাছ থেকে( উভয় বঙ্গেরই ) সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিয়ে, নামধাম ফাটিয়ে তিনি(নৗচ রুচির পরিচয় হবে, তাই বলতে চাইনে কিসের বিনিময়ে) নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন, যে বা যাঁরা বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থৗ গন্ডমূর্খ মৌলবাদৗদের আক্রোশ থেকে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়ে তাঁকে ভারত হয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করলেন, পরবর্তীতে একের পর এক আত্মজীবনী লিখে সেই সকল পুরুষের আগ্রাসী যৌনতার ষষ্ঠীপুজো করলেন এই লেখিকা! যৌন ক্ষুধা নাকি তাঁর নিজের একেবারেই ছিলনা! তিনি সুযোগ বুঝলেই ধোয়া তুলসীপাতাটি হয়ে যেতে পারেন৷ তিনি হলেন বিশ্বসুন্দরৗ এবং এতটাই তিনি যৌন আকর্ষণ সম্পন্না যে সব পুরুষমানুষ তাঁকে দেখা মাত্রেই যৌনতার জন্য অধৗর হয়ে পড়ে! তখন তিনি অবলা নারী হয়ে যান! বাংলাদেশের কিছু নামজাদা লেখকের মানমর্যাদা সব তাঁরই যৌবনের কারণে তেনার পায়ে লুটিয়েছে৷///
এই নোংরা পোস্টলেখক সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়কে “সুপ্রিয় দা” সম্বোধন করে অদিতি ফাল্গুনি সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়ের নোংরামিকেই ফুলিয়ে ফাপিয়ে তার মন্তব্যটি উপস্থাপন করলেন! যে দুই সম্পাদকের কথা অদিতি বললেন- তাদের মধ্যে নাঈমুল ইসলাম খানের ‘খবরের কাগজ’ এই তসলিমা নাসরিনের প্রথমদিককের লেখাগুলো ছাপানো হয়! নাঈমুল ইসলাম খানের অবদান বলতে গেলে এটাই যে, তার প্ররোচনা বা উতসাহেই তসলিমা নাসরিন প্রথম প্রবন্ধটি লেখেন! মূলত ছিলেন কবি- একটা কবিতার বই ছাপা হয়েছে, কবিদের আড্ডায় মাঝে মধ্যে যান- নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে পরিচয়, নাঈমুল ইসলাম খান খাটা খাটনি করে “খবরের কাগজ” নামে নিখাদ প্রবন্ধের সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করছেন- সেখানে ব্যক্তিগত পরিচিতির সুবাদে তসলিমা নাসরিনকে প্রবন্ধ লেখতে বলা! তার তাগাদায় তসলিমা নাসরিন প্রবন্ধ লিখতে বসেন- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রবন্ধ একটা লিখেও ফেলেন! ভয়ে ভয়ে সেটা দেন, ছাপাও হয়, এভাবে আরো কিছু প্রবন্ধ ছাপা হয়! বিষয়টা এনেকটা এরকম পরিচিত একজন একটা লেখা দিতে বলেছে, তাই লিখেছে, দিয়েছে। যেখানে ভালো হবে কি না- প্রকাশের যোগ্য হবে কি না- এসবই তখন তসলিমা নাসরিনের জানা ছিল না, সেখানে বিখ্যাত হওয়ার উদ্দেশ্য/ লক্ষ/ বিধেয়! এগুলো অদিতি ফাল্গুনীদের সব অতিকল্পনা ছাড়া আর কি! হ্যাঁ, নাঈমুল ইসলাম খানের পত্রিকায় তসলিমা নাসরিনের প্রবন্ধ ছাপার পরে তা সাড়া ফেলে দেয়। পত্রিকার কাটতিও বাড়তে থাকে! পক্ষে বিপক্ষে প্রচুর চিঠি আসতে থাকে! একটা সময়ে দেখা গেল- তসলিমা নাসরিন ঐ পত্রিকায় লেখার আগ পর্যন্ত সব মিলে যতগুলো চিঠি এসেছিল- তসলিমা নাসরিনের কোন একটি লেখাকে কেন্দ্র করে তার কয়েকগুন বেশি চিঠি আসতে লাগলো! এদিক দিয়ে দেখলে বলতে হবে- নাঈমুল ইসলাম খান যেমন তসলিমা নাসরিনকে প্রথম প্রবন্ধ লেখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছিল- তেমনি তসলিমার লেখা প্রবন্ধগুলোর কারণে পত্রিকার কাটতি কেবল বাড়া না- পত্রিকাটি একটা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলো! কেননা, নাঈমুল ইসলাম খানের ঐ “খবরের কাগজ” পত্রিকাটি সে সময়ে মোটেও খুব জনপ্রিয় কিছু ছিল না, কিছু দিন আগে কেবল যাত্রা শুরু করেছে- এমন একটা পত্রিকাই ছিল! ফলে, অদিতি ফাল্গুনী যেটা বলেছেন- ঐ সময়ের সবচেয়ে বাজার কাটতি দুটো পত্রিকার দুই সম্পাদকের প্রেমিকা আর স্ত্রী হয়েছেন- এটা অসত্য! আর, এ বলার মধ্য দিয়ে যে নোংরা ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন- অর্থাৎ বাজার কাটতি সম্পাদকের সাথে প্রেম বিয়ে করার মাধ্যমে তসলিমা নাসরিন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, সেটা অদিতি ফাল্গুনীর নোংরা মনের পরিচায়কও শুধু নয়, তার ইর্ষাপরায়নতারই বহিপ্রকাশ শুধু নয়, নিজের লিপ্সা- অভিপ্রায়- স্বভাবের মত করে আর সকলকে দেখার নামান্তর!
ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই!
(৩)
তসলিমা নাসরিনের ক্রিটিকদের অনেককেই দেখি শুরু করেন এভাবে- তসলিমা নাসরিন কি বস্তাপচা লেখা লিখেছে, না আছে কোন সাহিত্যমান, না আছে তাতে কোন শালীনতা- ভদ্রতা, ভব্যতা! অনেকে আবার তার পুরস্কার প্রাপ্তিকেও সমালোচিত করেন! তুলনা দেন- তারাশংকর, মানিকের সাথে- বলেন, তারাশংকর- মানিক পুরস্কার পায় না, পায় হলো তসলিমা নাসরিন! বেশ চতুর ক্রিটিক বলতে হবে তাদের! তসলিমা কি বলছেন, কি নিয়ে বলছেন- তার ধারে কাছে না গিয়ে প্রথমেই লেগে পড়ছেন- কেমনে কি বলছেন তা নিয়ে! এবং একদম প্রথমেই ধরাশায়ী করে দিচ্ছেন- এসব কোন সাহিত্যই না! তসলিমা যা লিখেছেন, তা সাহিত্য নয়- ভালো কথা, কিন্তু সেসব তাহলে কি? জবাব আসে- ওসব কিছুই না!
-আপনি তাহলে পড়েছেন কি করে?
– নাহ! আমি পড়তেই পারিনি! ওসব কি আর পড়া যায়!
– না পড়েই তাহলে কিভাবে বলছেন, এগুলো সাহিত্যই না!
– না, মানে কিছু তো পড়েছি, মানে পড়ার চেস্টা করেছি- কিন্তু পড়তে পারিনি!
– পড়তে পারেন নি মানে? কেন? পড়ার মত না? কি লিখেছে তা বুঝা যাচ্ছিল না? বাক্য গঠন উল্টাপাল্টা ছিল? বানান ভুলে ভরা? মানে, যতটুকু পড়েছেন- তাতে এরকম কোন সমস্যা পেয়েছেন?
– না ওই সমস্যার কথা বলছি না, ওগুলো কোন সাহিত্য হলো? পড়ার মত?
– না, আপনি তো পেপার পত্রিকাও পড়েন দেখি, বিনোদন পাতাও পড়তে দেখি! সেসবের সাহিত্য মানও তো আর রবীন্দ্রনাথ- মানিকের মত না! কিন্তু পড়ে শেষ করতে পারেন, তসলিমা নাসরিনেরটায় কি সমস্যা?
বাস্তবে, বুঝা যায়- মূল সমস্যা তাদের ঐ কন্টেন্টেই- কিন্তু মুখে বলে সাহিত্যমান খারাপ! তারই নানা ফন্দি ফিকির!
আমার সোজাসাপ্টা হিসাব! গল্প- উপন্যাস- কবিতা এসব হৃদয়বৃত্তিক সাহিত্যের পাশাপাশি আরেক ধরণের সাহিত্য আছে মননশীল- চিন্তাশীল সাহিত্য! যা মনকে জাগিয়ে তুলে, চিন্তাকে নাড়া দেয়! প্রবন্ধ হতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে গল্প- উপন্যাস- কবিতার মাধ্যমেও তা হতে পারে! এনাদের কাছে, সেই প্রবন্ধ- কবিতা- উপন্যাস কোন মহান সাহিত্য রচনার মাধ্যম না, বরং নিজের কথা, কোন বিষয়ের প্রতি তার সাবমিশন, সেই বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরার তাগিদ থেকেই তারা এসব সাহিত্য রচনা করেন! তসলিমা নাসরিন হচ্ছেন- দ্বিতীয় ধারার মননশীল সাহিত্যিক! তার লেখায় রবীন্দ্রনাথ, তারাশংকর, মানিক খুজতে যাওয়া আহাম্মকি অথবা কুটনামো ছাড়া আর কিছুই না! যেমন করে বেগম রোকেয়ার সাহিত্যমানের সাথে তারাশংকর- বিভূতিভূষণের সাহিত্যমানের তুলনা হতে পারে না, যেমন করে সিমন দ্য বেভয়ারের লেখার মধ্যে- মেরি ওলস্ট্যানক্রাফট এর মধ্য শেক্সপিয়ার, দস্তয়ভস্কিরে কেউ খুজতে যায় না! রোকেয়া, সিমন, ওলস্ট্যানক্রাফটকে সবাই স্মরণ করে- তারা কি বলেছেন- কি নিয়ে ফাইট করেছেন তা নিয়ে, কেমন কি সাহিত্য করেছেন তা নিয়ে নিশ্চয়ই নয়!
(৪)
আরেক গাদা সমালোচনা দেখি- তার লেখায় নাকি যৌনতার ছড়াছড়ি! এসব নাকি চটি টাইপের লেখা! পুরাই পর্ণো!
এক হচ্ছে- যৌনতার ছড়াছড়ি, কতটুকু যৌনতা থাকলে পার্মিটেড- আর কতটুকু থাকলে সেটা ছড়াছড়ি পর্যায়ে যাবে, সে এক প্রশ্ন! আদৌ যৌনতার ছড়াছড়ি আছে কি না তা আরেক প্রশ্ন! আর যৌনতার ছড়াছড়ি থাকলেই সেটা চটি বা পর্ণো হয় কি না সে প্রশ্নও সাথে সাথে চলে আসে!
প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলবো- তার লেখাগুলোতে যৌনতার উপস্থিতি পরিমিত এবং প্রয়োজনীয়! যদিও অধিকাংশ পড়া অনেক কাল আগের এবং তার পরে কিছুদিন আগে তার দ্বি-খন্ডিত বইটি পড়েছি- এই বই বা আগের বইগুলোর পড়ার অভিজ্ঞতায় আমার এমনই মনে হয়েছে! ছড়াছড়ি বলতে তাই আমি রাজি নই! এমনটা মনে হওয়ার কারণ- যতটুকু অংশে এই যৌনতার বিষয় আছে- সেটা খুব স্ট্রাইকিং এবং বিশেষ করে উপন্যাসের ক্ষেত্রে সব ছাপিয়ে ঐ যৌনতার বিষয়টাই মূল ভরকেন্দ্রে চলে আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কের তৈরি করে বলে- যৌনতাপ্রধান লেখা বলে পরিচিতি ঘটে! যেমন লজ্জার সেই দাঙ্গায় ধর্ষণের শিকার হিন্দু মেয়ের দাদার এক মুসলিম নামের পতিতাকে টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে এসে ধর্ষণ, ভ্রমর কইয়ো গিয়াতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনক্রিয়ায় বাধ্য করা তথা ধর্ষণ, কিংবা দ্বিখন্ডিততে বিভিন্ন সম্পর্কের কিছু বর্ণনা- সবই বিতর্ক তৈরি করেছিল!
এবারে যদি আসি- এগুলো পর্ণো কিনা, চটি কি না- এককথায় বলবো, এসবের কোনটির উদ্দেশ্য যৌন সুড়সুড়ি দেয়া নয়- বরং ধাক্কা দেয়া, অস্বস্তি তৈরি করে দেয়া! এমনকি সুনীল, সৈয়দ হক, মাল্টো প্রমুখের সাহিত্যে যে পরিমাণ যৌনতা আছে, যৌনতার যেসমস্ত ডিটেইলিং আছে, যেরকম মনভুলানো বর্ণনা আছে- তার ছিটেফোটাও নেই তসলিমা নাসরিনের লেখায় (স্মরণশক্তিতে লেখছি, আবার পড়তে হবে। আপনারা পেলে বইয়ের নাম সাজেস্ট কইরেন, সেই বই আগে শুরু করবো)। যতদূর মনে পড়ে- আমি একটা লেখাতেও এমন একটা যৌনতা পাইনি- যেটা দুজনের স্বাভাবিক প্রেমের আকর্ষণের সম্পর্কের যৌনতা, যে যৌনতায় সমস্যা নেই! ফলে- যারা দাবী করছে, এসব পর্ণো ধরণের লেখা- তারা হয় তার লেখা ভালোকরে পড়েননি, অথবা সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েই এসব দাবী করেছে, আগেই বলেছি যে- তসলিমা নাসরিনের লেখার পরতে পরতে তীব্র আঘাত আছে- সে আঘাত ‘পুরুষ’ এবং ‘পুরুষবাদী নারী’ উভয়কেই জর্জরিত করতে সক্ষম!
আর যে বলবে- যেকোন ধরণের যৌনতা ভিত্তিক লেখা মাত্রই বাজে, যৌনতা গোপন বিষয়- সাহিত্য করার বিষয় না, তাকে সাহিত্য পাড়ায় পা না রাখার অনুরোধ জানাবো! এমনকি ধর্মগ্রন্থসমুহও আপনাদের পড়া ঠিক হবে না! আপনারা ধারাপাত পড়তে পারেন!
(৫)
আরেক পদের সমালোচনা আছে! তসলিমা নাসরিন গোপন সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে বলেন! বেডরুমের বিষয় বাইরে আনা কেমন নৈতিকতা? এমনকি আমাদের সন্যাসী সন্ন্যাসীও বলছেনঃ
নারী-পুরুষ এক বিছানায় শুয়ে সুখলাভ করলে তা কক্ষের বাইরে না আনাই যুক্তিসংগত। যদি জোর করে বা সিডিউস করে কিছু করা হয় তবে সেটা প্রকাশ করা উচিত, কিন্তু নিজে আনন্দ নিয়ে পরে তা প্রকাশ করে আলোচনায় থাকা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য!
প্রথমত, তসলিমা নাসরিন বেডরুমের কতটুকু বিষয় বাইরে এনেছেন? দ্বিতীয়ত, বিছানার সুখলাভের অভিজ্ঞতা আদতে তিনি বাইরে বর্ণনা কি করেছেন? আত্মজৈবনিক দ্বি-খন্ডিত বইটি এবং রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সাথে বাসর রাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখাটা আমার পড়া হয়েছে! দ্বি-খন্ডিত বইটিতে একটি ঘটনা নেই যে- যেখানে বেডরুমের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আছে! সৈয়দ হকের সাথে পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা এভাবে আছে যে, হক দুজনের জন্যে আলাদা রুম না নিয়ে এক রুম নেন এবং সারারাত তসলিমা নাসরিন তটস্থ থাকেন- ফেরার পরে বা কখনোই হক তসলিমাকে তার বাড়িতে এলাউ করেন না! নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে বিয়ের পরে বা আগের যে সম্পর্কের আলোচনা আছে, সেখানে কোন যৌনতা নেই- বিয়ের পরে কিভাবে খান কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে উঠছিল সে বর্ণনা আছে! তৃতীয় স্বামীর সাথে আকস্মিক বিয়ের পরেও এরকম কোন যৌনতার বর্ণনা দেখিনা, দেখি দেখি দিনের পর দিন তসলিমা নাসরিনের উপর মারপিট-অত্যাচার। শেষে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে যখন মিনার মাহমুদ বিদেশ চলে যাওয়ার খবরে বাসায় দেখা করতে আসে- সেখানে তসলিমাকে অপমান করে- সেটা আছে, কিন্তু যৌন রগরগে বর্ণনা তো নেই! হ্যাঁ, একটা আপত্তি অনেকে তুলতে পারেন- ইমদাদুল হক মিলনের সাথে ভারত ভ্রমণে গিয়ে যৌনতায় লিপ্ত হয়েছিলেন- সেটা অকপটে স্বীকার করেছেন! সন্যাসীর কথানুসারে- বিছানার ‘সুখ-লাভ’ও হয়েছিল, কিন্তু সে যৌনতার কোন বিবরণ কিন্তু দ্বি-খন্ডিত’তে নেই! তসলিমা জানায়, একসময় তার শরীরও এটা চায় এবং তাদের মধ্যে যৌনতা হয়ে যায়! কিন্তু, তাকে নিয়ে কলকাতার এক পার্টিতে যেতে সাহস পায়না মিলন, বাংলাদেশে এসে বলতে গেলে ভুলেই যায়! এখন কথা হচ্ছে, বেড রুমের ঘটনা বাইরে না আনা নিয়ে আপত্তি, নাকি- বেডরুমের পার্টনার কে ছিল সেটা জানানোয় আপত্তি? নিশ্চিতভাবেই তসলিমা নাসরিন এমন কোন নাকে খত দিয়ে মিলনের সাথে বেডরুমে ঢুকেননি যে, মিলনের সাথে যৌনসম্পর্কের কথা বলা যাবে না! তসলিমা নাসরিন অনেক আগে থেকেই যৌনতার স্বাধীনতার কথা বলছেন, লিভ টুগেদারের কথা বলছেন এবং বলছেন- লুকিয়ে চুপিয়ে লিভ টুগেদার করার কোন মানে নেই! বিয়ে করলে কেউ লুকিয়ে চুপিয়ে করি না, প্রতিটা মানুষ জানে- দুটো মানুষের মধ্যে কি সম্পর্কের চর্চা হচ্ছে, একইভাবে এই মিলনের সাথে যে তার যৌন সম্পর্ক আছে সেটা বলতে তিনি কোন বাঁধা দেখেন না, তার যে একটা শরীর আছে, সেই শরীরেরও একটা চাহিদা আছে, আর সব মানুষের মত- যে চাহিদা কেবল পুরুষের একক সম্পত্তি নয়- তা অকপটে বলাটা আমার মতে সাহসী এবং দরকারী!
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাথে তার বাসর রাতের বর্ণনা নিয়ে লেখাটাতেও যৌনতার সবিস্তার বর্ণনা নেই, যতটুকু আছে তাতে একতা পরিমিতি আছে! এবং একেও ‘বিছানার সুখলাভ’ এর ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না! কেননা- এই রাতই ছিল তসলিমা নাসরিনের জন্যে সবচেয়ে ভয়ংকর রাত! কেননা, সে রাতেই তিনি আবিস্কার করেন রুদ্র যৌনরোগে আক্রান্ত, সেটা তিনি রুদ্র পুরুষাঙ্গ চুলকানো ও তাতে মলম লাগানো দেখে বুঝতে পারেন- সেটাই তিনি বলেছেন! এবং জেরায় রুদ্র স্বীকার করেন- তার নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত ছিল! ফলে এখানকার বেডরুমের বর্ণনাকেও স্বাভাবিক বলা যাবে না! আরেকটি প্রবন্ধে সুনীলের সাথে একটা ঘটনার কথা বলেছেন। সেটা বেডরুমের না- একটা হোটেল রুমে যেখানে ডিনারের পরে বিদায় নেয়ার সময়ে হঠাত করেই সুনীল তসলিমার গায়ে আপত্তিকরভাবে হাত দিয়েছিলেন! সেই বর্ণনাতেও কোন ডিটেইলিং নেই, কেবল জানিয়েছেন- আপত্তিকরভাবে গায়ে হাত দিয়েছেন! সুতরাং, কোন স্বাভাবিক সম্পর্কের বেডরুমের ঘটনা কখনোই প্রকাশ্যে আনেন নি। এ বিষয়ে মুজিব মেহেদীর একটি দারুন কমেন্ট আছেঃ
প্রায় পৃথিবীজুড়েই বন্ধ দরজার ওপারে দুজন নারী-পুরুষ যা করে, তা-ও আজকাল মনিটরিংয়ের বিষয় বলে স্বীকৃত হয়েছে ও হতে চলেছে। কারণ, এক্ষেত্রে মনিটরিং জারি না রাখলে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স দমানো যাবে না বলে বুঝতে পেরেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
(৬)
একটা অভিযোগ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকের মুখেই শুনি! তসলিমা নাসরিন মারাত্মক পুরুষ বিদ্বেষী! তার চোখে সমস্ত পুরুষই লম্পট! অনেকেই এসে আগ বাড়িয়ে জানিয়ে যান, সব পুরুষ ভক্ষক নন- সমাজে রক্ষক পুরুষও আছে!
ভালো, তার মানে একথাটা স্বীকার করছেন যে, সব পুরুষ রক্ষক নন- সমাজে ভক্ষক পুরুষও আছে! আর স্বীকার যদি করেই থাকেন- তাহলে এক তসলিমা নাসরিন শুধু ভক্ষক পুরুষদের নিয়ে যদি লিখেনও- তাতে আপনাদের এত গোস্বা কেন? আপনারা বাকি তাবতেরা লেখুন না- সমাজের বাকি রক্ষক পুরুষদের নিয়ে! কেউ তো নিষেধ করছে না?
দ্বি-খন্ডিত পড়ে একটা মজার বিষয় দেখলাম- সেখানে নির্মলেন্দু গুনের আলোচনা আছে, সেখানে বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশনীর প্রকাশকের কথা আছে, তাদের পুরো বইয়ের কোথাও ভক্ষক হিসেবে বলা হয়নি; এরকম আরো কিছু ক্যারেক্টার আছে! অন্য বইগুলোতে খুঁজলেও হয়তো পাওয়া যাবে! আর পাওয়া যদি নাও যায়, তসলিমা নাসরিনের লেখার বিষয় যখন নারীর উপর নির্যাতন, তখন তার লেখায় ঘুরেফিরে ‘ভক্ষক’ ক্যারেক্টার চলে আসে! তার মানে কি এই দাঁড়ায়- সব পুরুষই ভক্ষক? না, তসলিমা নাসরিন কখনো এমনটা দাবী করেছেন? বাস্তবে, এ হচ্ছে- পাঠকের সিদ্ধান্ত! মূলত পুরুষ পাঠক- নিজেকেও যখন একই রকম হিসেবে আবিস্কার করে, তখন নিজেকে ভক্ষক হিসেবে মিলিয়ে ফেলে- নচেত তসলিমার লেখার কোন একটি ক্যারেক্টারের ভক্ষক হওয়াকে নিজের দিকে টেনে এনে ‘সব পুরুষ’কে কেন দেখবে?
পুরুষ পাঠকের ক্ষেত্রে এমনটা হতেই পারে, নারী পাঠকের ক্ষেত্রে এরকম অভিযোগের কারণ কি? মনস্তত্বটাও কি? আমার ধারণা, এই মনস্তত্বের সাথে ইনসিকিউরিটি ধারণা জড়িত! একবার একবাসে এক মাঝবয়েসি ভদ্রলোক নিজের স্ত্রীকে একপাশে রেখে পাশের এক নারীর গায়ে হাত দিতে গিয়ে সেই নারীর হাতে ধরা খেয়েছিলেন! পরে দেখা গেল- ঐ লম্পট পুরুষটির পাশে সবচেয়ে বেশী তার হয়ে ফাইট করছেন তার গুনধর স্ত্রীটি! একেবারে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন- তার স্বামী নিতান্তই ভদ্রলোক ও ভালো মানুষ, যেনবা ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারে না! কেন এমন করলো তার স্ত্রী? ঐ যে, ইন্সিকিউরিটি ফিলিংস! আমাদের সমাজের অনেক নারীই তার স্বামীর বাজে অভ্যাস আছে, সেটা বিশ্বাস করতে পারেন না, আসলে চান না! কেননা- এতে তার দুনিয়া জগতটা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়! আমি দেখেছি- অনেক নারী তার স্বামীর এরকম কুকীর্তি হাতে নাতে ধরার পরেও- ডুকরে ডুকরে কাঁদার পরে স্বামীর সামান্য অযুহাত বিশ্বাস করে একদম শান্ত হয়ে যাচ্ছেন, যেন বা স্বামীর যেনতেন একটা অযুহাত শোনার জন্যে বা বিশ্বাস করার জন্যেই অপেক্ষায় ছিলেন!
ফলে, নারী পাঠকেরা যখন পুরুষের সুরে জানায়- সব পুরুষ ভক্ষক নন- তখন বুঝতে হবে- এ আসলে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেস্টা ছাড়া কিছুই না!
(৭)
বাকিসব সমালোচনাগুলো আমার চোখে প্রশংসা, ওগুলোর জন্যে আমি বরং শ্রদ্ধা করি! ফলে বিস্তারিত কিছু বলার নেই- সংক্ষেপেই বলছি …
ধর্ম নিয়ে আক্রমণাত্মক লেখেন, খুব ধর্মবিদ্বেষীঃ ধর্মের বিরুদ্ধে না লেখার কোন কারণ খুজে পাই না!
চরিত্র খারাপ, বারে বারে সঙ্গী পরিবর্তন করেনঃ যৌনতা একটা স্বাভাবিক চাহিদা, এই চাহিদা পূরণের অধিকার সবার আছে বলে আমি মনে করি! তিনি কাউকে জোর করেন নি বা সিডিউস করেননি, কোন সঙ্গীর প্রতি কমিটেড থাকার পরে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করেছেন- এরকম প্রতিশ্রুতিভঙ্গেরও কোন ঘটনা জানা নেই! ফলে, কি সমস্যা?
লিভ টুগেদারের পক্ষে প্রচার চালানঃ ভালো তো!
(৮)
পরিশেষে, তিনি সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকারের অনুকম্পায় ভারতে থাকছেন, বিজেপি সরকারের অনুকম্পার জন্যে তাকে হাত পাততে হয়েছে, হচ্ছে- এ আমায় খুব কষ্ট দেয়! যখন বিরোধীপক্ষ বলে তসলিমা নাসরিন হিন্দুবাদী বিজেপি আরএসএস এর পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে- তখন সহসাই জবাব খুজে পাই না! না পেরে পাল্টা আক্রমণ করি, আপনারাই তাকে দেশে আসতে দিচ্ছেন না, ছি! বারেবারে মনে হয়- অন্তত ইউরোপেই তিনি ভালো ছিলেন! বড় গলায় তা বলতেও পারি না- খুব লজ্জা লাগে, কেননা নিজ দেশে এখনো আমরা আনতে পারিনি, পারছি না …
আমরা কি এ লজ্জার হাত থেকে মুক্তি পাবো না?
আমি বিশ্বাস করি, তসলিমা নাসরিন ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের জন্য রহমত স্বরূপ
@নাস্তিকের ধর্মকথা:
Can you please fix the image link? Please upload it directly instead of linked facebook photo. Thanks
তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত নারীবাদী মুক্তচিন্তার লেখক ।তসলিমা নাসরিন নিজে নারী হোয়ার কারনে বিভিন্ন সময় আমাদের পুরুষ প্রাধান্য সমাজে নারীর কি আকাংখা বা কি চাহিদা তা তিনি নিজেকে দিয়েই উপলব্ধি করতে পেরে নিজের সাহিত্য কর্মের মাধ্যমে সে চাহিদা বা আকাংখার কথা প্রকাশ করতে বিন্দু মাত্র কুন্ঠাবোধ করেন নি আর তাতে আমাদের অসামাজিক সমাজের সমাজপতিদের আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে । ধর্মকে পুজি করে সমাজের সমাজপতিরা নারীকে কিভাবে ভোগ্যপণ্যের মত ভোগ করছে তাই তসলিমা নাসরিন তার বিভিন্ন সাহিত্য কর্মে প্রকাশ করতে স্বফল হয়েছেন । আর তাতে গা জ্বালা শুরু হয়ে যায় আমাদের দেশের তথা কথিত ধর্মিক সমাজের তসলিমা নাসরিন একের পর এক অত্যাচারের শিকার হতে থাকেন ধর্মিয় উগ্রবাদীদের । ধর্মিয় উগ্রবাদীদের দ্বারা একের পর এক মামলার শিকার হতে হয় তসলিমা নাসরিন কে এতে আদালত তাঁর বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারী । অবশেষে ১৯৯৪ সালে তসলিমা নাসরিনকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয় অদ্যবধি তিনি নিবার্সিত জীবন যাপন করছে । কি অপরাধ ছিল তসলিমা নাসরিনের ? মুক্তচিন্তা মুক্ত মত প্রকাশ ই তার এক মাত্র অপরাধ ।একটি স্বাধীন গনতান্ত্রিক দেশে মুক্তচিন্তা মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার সবার ই আছে আর সে অধিকারের জন্য কাউকে নির্বসনে যেতে হবে তা কোন সভ্য বিবেক কি মানতে নারাজ । অতি সম্প্রতি তসলিমা নাসরিন তার ফেইসবুক স্টাটাসে বাংলাদেশে ফেরার যে আকুলতা প্রকাশ করেছেন তাতে প্রত্যেক মানব বিবেক ই তার দেশে ফেরার আকুতিকে সমর্থন করে । তাই তসলিমা নাসরিন যেমন আছেন স্বদেশের মাটিতে ফেরার প্রতীক্ষায় ঠিক তেমনি তার স্বদেশের প্রতিটি মানব বিবেক আছেন তার স্বদেশের মাটিতে ফেরার প্রতীক্ষায় ।
প্রখ্যাত পাকিস্থানি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীম আজ স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য মৃত্যুবরণ করেছেন।
বাঙ্গালীরদের লজ্জা পাওয়া উচিৎ; লেখা-লেখির অপরাধে তারা মেধাবী বাঙালীদের দেশ ছাড়া করতে পারে। তারা বিদেশে বসে দেশের নাম সমুজ্জল করে; অথচ রাজাকাররা আনন্দে সরকারের টাকায় হাস্পাতালে বসে ভালো মন্দ খেয়ে মড়তে পারে।
এর চাইতে লজ্জার আর কি আছে???
আরও মজার কথা হল এই রাজাকারদের কবর কিনা হবে এই বাংলাতেই; যারা কোনোদিন বাংলাই চায়নি।
অথচ যারা বাংলার নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের নিজের বলতে কোন দেশ নেই; তাদের দেশ ছাড়া করেছিল কিন্তু এই রাজাকার গুলোই।
আক্ষেপটা সেখানেই!!!
সকল রাজাকারদের ফাঁসী এবং দাউদ হায়দার এবং তসলিমা নাসরিনকে অবিলম্বে দেশের মাটিতে দেখতে চাই।
@এম এস নিলয়,
সহমত।
অসাধারণ…অসাধারণ…অসাধারণ…
প্রগতিশীল বলে পরিচিত যারা তসলিমা নাসরিনের ব্যাক্তিজীবন ও তা নিয়ে লেখালেখি নিয়ে মাতামাতি করেন, তারা আসলে তা করেন- কাঠবলদীয় মানসিকতা, ইর্ষা, ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সিটি, নিজেদের কুকর্ম আড়াল করার অপপ্রয়াস থেকে…
অদিতি ফ্লাগুনীর বক্তব্য পড়ে দু:খ পেলাম, এমনটি তাদের থেকে আশা করি না।
অচিরেই কোনো সম্ভাবনা দেখছি না…. 🙁
তসলিমার অপরাধ হয়েছে তসলিমা তার আত্মজীবনীতে খোলামেলা ভাবে বহু কিছু উপস্থাপন করেছেন যা আটপৌরে বাঙালিরা শুনতে অভ্যস্ত নয়। বাংলাদেশে আত্মজীবনী মানে নিজেকেই নিজের প্রশংসার প্রশস্তিমালা। সম্ভবত: হুমায়ুন আজাদই বলেছিলেন, ‘বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী। বাঙালি তাই কেবল সেই ছকেই আত্মজীবনী শুনতে চায়। অথচ বাইরে তা নয়। আজ সুষুপ্ত পাঠক ফেসবুকে একটি চমৎকার স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেখানে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন তা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারলাম না:
পাবলো নেরুদা তাঁর আত্মজীবনীতে গোপন যৌন জীবনকে খোলামেলা তুলে ধরেছেন। ধানকাটা দেখতে গিয়ে গৃহস্থের মুখ না দেখা বউয়ের সঙ্গে রাতের অন্ধকারে খড়ের গাদায় সংগম পর্ব মনে আছে নিশ্চয় সবার। এক বিধবা সুন্দরীর সঙ্গে তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার মিলন- তা নিয়ে মহিলার সেকি কান্না মৃত স্বামীর কথা স্মরণ করে- অকপটে বলেছেন নেরুদা! সবচেয়ে বড় যে ঘটনাটা প্রকাশ করেছেন সেটা একটা ধর্ষণ! বার্মা থাকাকালে তার বাংলোর কাজের মহিলাটিকে জোর করে সম্ভোগ করা। নিশ্চল পাথরের মত মুখ করে থাকা অসহায় গরীব মহিলাটির মুখ বাকী জীবন নেরুদা আর ভুলতে পারেননি। নিজের উপর আত্মধিক্কারও দিয়েছেন এই ঘটনার জন্য।…আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে নেরুদা এই ঘটনাকে অনায়াসেই বাদ দিতে পারতেন। দুনিয়ার কারুর পক্ষেই জানার কথা নয় নেরুদা কবে কাকে জোর করে ভোগ করেছিলেন। …তলস্তয় যদি ডাইরি না লিখতেন তাহলে দুনিয়ার তাবৎ মানুষের জানার কথা ছিল না তার যৌন জীবনের অন্ধকার দিকের কথা। ফুপুর বাসার সেই কাজের মেয়েটির কথা পৃথিবীবাসী জেনেছে তার ডাইরি পড়েই- যে তলস্তয়ের কারণেই অন্ধকার জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তলস্তয় সারা জীবন এসবের জন্য মরমে মরেছেন। কিন্তু লিখতে গিয়ে ভণ্ডামি করে নিজের পুরস্কার প্রাপ্তি আর বিদেশ ভ্রমণের কিচ্ছা শুনাননি।
আমি আরো কিছু উদাহরণ হাজির করি। উদাহরণগুলো তসলিমা নাসরিনই লিপিবদ্ধ করেছিলেন দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত তার ‘সকল গৃহ হারালো যার’ নামের প্রবন্ধে – ‘পৃথিবীর কত লেখকই তো লিখে গেছেন নিজের জীবনের কথা। জীবন থেকে কেবল পরিশুদ্ধ জিনিস ছেঁকে নিয়ে তারা পরিবেশন করেননি। জীবনে ভ্রান্তি থাকে, ভুল থাকে, জীবনে কালি থাকে, কাঁটা থাকে, কিছু না কিছু থাকেই, সে যদি মানুষের জীবন হয়। যাদের মহামানব বলে শ্রদ্ধা করা হয়, তাদেরও থাকে। খ্রিষ্টান ধর্মগুরু অগুস্ত (৩৩৫-৪৩০ খ্রি.) নিজেই লিখে গেছেন তার জীবনকাহিনী, আলজেরিয়ায় তিনি যেভাবে জীবন কাটাতেন, যেরকম অসামাজিক অনৈতিক বাঁধনহীন জীবন – কিছুই প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। তাঁর যৌন স্বেচ্ছাচারিতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, জারজ সন্তান জন্ম দেয়ার কোন কাহিনীই গোপন করেননি। মহাত্মা গান্ধীও তো স্বীকার করেছেন কী করে তিনি তার বিছানায় মেয়েদের শুইয়ে নিজের ব্রহ্মচারিতার পরীক্ষা নিতেন। ফরাসি লেখক জ্যঁ জ্যাক রুশোর (১৭১২-১৭৭৮) কথাই ধরি- তাঁর ‘স্বীকারোক্তি’ গ্রন্থটিতে স্বীকার করে গেছেন জীবনে কী কী করেছেন তিনি। কোন গোপন কৌটায় কোন মন্দ কথা নিজের জন্য তুলে রাখেননি তিনি। সেই আমলে রুশোর আদর্শ মেনে নেয়ার মানসিকতা খুব কম মানুষেরই ছিল। তাতে কি! তিনি তার পরোয়া না করে অকাতরে বর্ণনা করেছেন নিজের কুকীর্তির কাহিনী। মাদমাজোল গঁতো তো আছেই, আরো অনেক রমণীকে দেখে, এমনকি মাদাম দ্য ওয়ারেন, যাঁকে মা বলে ডাকতেন, তাঁকে দেখেও, বলেন যে, তাঁর যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগতো। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৯ – ১৭৯০ খ্রি.) তাঁর আত্মকথায় যৌবনের উতল উন্মাতাল সময়গুলোর বর্ণনা করেছেন, জারজপুত্র উইলিয়ামকে নিজের সংসারে তুলে এনেছেন তাও বলেছেন। বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর জীবনীগ্রন্থে লিখে গেছেন বিভিন্ন রমণীর সাথে তাঁর অবৈধ সম্পর্কের কথা। টি এস এলিয়টের স্ত্রী ভিভিয়ানের সঙ্গে, লেডি অটোলিন মোমেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা কে না জানে। লিও তলস্তয় লিখেছেন চোদ্দ বছর বয়সেই তাঁর গণিকা-গমনের কাহিনি, সমাজের নীচুতলার মেয়ে, এমনকি পরস্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক, এমনকি তার যৌনরোগে ভোগার কথাও গোপন করেননি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন তারা, সমাজ যা মেনে নিতে পারে না, এমন তথ্য পাঠককে শোনাতে গেলেন? শোনানোর নিশ্চয় কোন কারণ আছে। নিজেদের আসল পরিচয়টি তারা লুকাতে চাননি, অথবা এই অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ, তাই শুনিয়েছেন। এতে কি তাদের জাত গিয়েছে, নাকি মন্দ বলে কেউ? কেউই তাঁদের মন্দ বলে না, যে অবস্থানে ছিলেন তারা সে অবস্থানেই আছেনই, বরং সত্য প্রকাশ করে নিজেদের আরো মহিমান্বিত করেছেন। …
মুশকিল হচ্ছে বাঙালি পাঠকেরা এগুলো শুনতে অভ্যস্ত নয়। সমস্যাটা এখানেই। বাঙালি একে না পারে গিলতে না পারে উগরাতে। ওয়লস্টোনক্র্যাফট কিংবা ভার্জিনিয়া উলফের মত নারীদের জন্ম এই বাংলায় হয়নি। বাঙালি অভ্যস্ত পতিব্রতা হিজাবি নারী দেখে, কিংবা বড়জোর কপালে টিপ আর মাথায় সিঁদুর দেয়া রাবিন্দ্রিক নারী কল্পনা করে, যারে ‘পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি’ আর যে নারী ‘অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক কল্পনা’। তাই তসলিমার নির্জলা কাঠখোট্টা কথাবার্তায় স্বভাবতই মারাত্মক অস্বস্তি হয় ছকে বাঁধা বাঙালির। আমরা যেমন চাই তসলিমা ঠিক তেমন পুরুষতন্ত্রের ছাঁচে গড়া নয়। সে যেন কেমন কেমন। চান্স পাইলেই খালি বেলাইনে চলে যায়!
আমি হইনি। সেই শাহবাগ আন্দোলনের সময় হাসনাত আব্দুল হাই আর অদিতি ফাল্গুনী খুব নীচুমানের দুটো গল্প লিখে প্রচণ্ড সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন, এর পরেও অদিতি অনেক কিছু লিখেছেন যেগুলোতে কেবল তার অজ্ঞতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতাই প্রকাশ পেয়েছে। একটা স্ট্যাটাসে লিখলেন নারীদের ‘খুল্লাম খুল্লা’ পোশাকের কারণেই নাকি দিল্লিতে এতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। তারপরে দেখলাম সমকামী আর সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির মানুষদের নিয়েও তার বিরূপ মন্তব্য করা এক উত্তেজক স্ট্যাটাস। সমকামী হলে নাকি এইডস হয়, হ্যানো তেনো। অদিতির মতো লেখাপড়া জানা সাংস্কৃতিক একজন নারী যদি এই স্টেরিওটাইপে বিশ্বাস করেন তাহলে সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির মানুষদের জন্য বাংলাদেশে আসলেই দুর্দিন। কি করে এরে বোঝাই, এইডসের পেছনে দায়ী হচ্ছে একটি ভাইরাস, নাম – হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস সংক্ষেপে এইচআইভি , সমকামিতা নয়। পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেই সমকামীদের চেয়ে বিষমকামীদের মধ্যে এইডসের হার বেশি। আফ্রিকা মহাদেশটির কথা ভাবা যাক। হতদরিদ্র মহাদেশ – অথচ এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ওখানে সমকামিতার জন্য এইডস ছড়ায়নি। বোতসোয়ানার শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ যুবক-যুবতী এখন এইডস আক্রান্ত। সাউথ আফ্রিকায় শতকরা প্রায় ১৯ ভাগ। তাঞ্জানিয়ায় এমন গ্রামও আছে যেখানে গ্রামের প্রায় সবাই এইডস-এ আক্রান্ত। সেই হতভাগ্য শিশুটির কথা ভাবুন, যে কিনা এইচআইভি জীবাণু নিয়ে জন্মেছে, কেবল তার বাবা মায়ের এইডস সংক্রমণের কারণে। আমি কি সেই শিশুগুলোর ভাগ্যহীনতার জন্য বাবা-মা’র বিষমকামকে দায়ী করব? সেই এইডস আক্রান্ত হতভাগ্য শিশুগুলোর বাবা মা তো আর সমকামী ছিল না। তাহলে গ্রাম কে গ্রাম এইডসে উজাড় হয়ে যাচ্ছে কেন? যুক্তি মানতে গেলে আফ্রিকার এইডসের বিস্তারের পেছনে তাহলে বিষমকামকে দায়ী করা উচিৎ। কারণ, আফ্রিকায় বিষমকামীদের মধ্যেই এইডস সংক্রমণ অনেক বেশি। শুধু আফ্রিকা নয়, বিশ্ব জুড়েই বিষমকামীদের মধ্যে এখন এইডসের প্রকোপ সমকামীদের থেকে অনেক বেশি দেখা যায়। সত্যি বলতে কি – এইডস আসলে সমকামিতা-বিষমকামিতায় কোনো বাছ বিচার করে না। আগেই বলা হয়েছে, এইডস সংক্রমণের কারণ এইচআইভি ভাইরাস। আপনার বা যৌনসঙ্গীর দেহে এই জীবাণু না থাকলে এইডস আপনার মাধ্যমে ছড়াবে না, তা আপনি সমকামীই হোন, আর বিষমকামীই হোন। কিন্তু এগুলো বলে আর কি লাভ। অদিতি তার স্বল্পজ্ঞানে বড় উপসংহারে যেতে পারঙ্গম।
তারপরেও আমার এ নিয়ে সমস্যা ছিল না, কিন্তু এখন দেখলাম তসলিমা নাসরিনকে নিয়েও তার এন্তার দুর্ভাবনা। আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম অদিতিকে নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সময়, যদিও তার নামোল্লেখ করিনি, কিন্তু অবধারিতভাবে কিছু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল সেখানে।। তাতে তিনি আর তার দিদি ভয়ানক গোস্যা করেছিলেন আমার উপর। আমি নাকি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তার মতো নারীদের যৌনসামগ্রী বানিয়ে দিয়েছি। কি জানি! তারপরেও আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করার সৌজন্যতাটুকু দেখিয়েছিলাম। তবে মুশকিলটা হল, যে বিশেষণগুলো অদিতির উপর প্রয়োগ করার জন্য আমি বিরাগভাজন হয়েছিলাম, তার চেয়ে ঢের বেশি বিশেষণ উনি দেদারসে তসলিমার উপর প্রয়োগ করে চলেছেন। এবং তা করছেন তিনি নারী হয়েই। ‘তসলিমার যৌনক্ষুধা’, ‘যৌনতার ষষ্ঠীপুজো’ থেকে শুরু করে ‘বাজার কাটতি পত্রিকার দুই সম্পাদকের প্রেমিকা’ র লেভেল – কোন কিছু দিতেই অদিতি বাদ রাখেননি তসলিমাকে। তবে বোধ করি অদিতি তসলিমার মত ‘বিখ্যাত’ হবার জন্য করেছেন না। তা করবেন কেন, অদিতি তসলিমার চেয়ে এমনিতেই বিখ্যাত।
@অভিজিৎ,
তসলিমা আত্মজীবনীতে প্রকাশ্যে নিজের আন্তর্বাস কেচেছেন বলে, আক্রমন এবং অবহেলার শিকার-এই তত্ত্ব অতিসরলীকরন হবে। বাঙালী সমাজের নতুন প্রজন্ম অনেকটাই লিব্যারাল-তাদের মধ্যেও তসলিমা লেখিকা হিসাব জনপ্রিয় হন নি-কারন তার কোন লেখাই সাহিত্য মার্গে উচ্চমানের না। প্রটাগনিস্ট হিসাবে তসলিমা অগ্রগন্য। তাকে নিয়ে কিছু হিন্দুত্ববাদি রাজনৈতিক কারনে নাচানাচি করেছে।
তবে এটাও ঠিক আঙ্কল টমস কেবিন কি সাহিত্য হিসাবে উচুমানের? আমার মনে হয় নি। কিন্ত ওই একটি লেখা, আমেরিকাতে গৃহযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছিল। তাই তা কালোত্তীর্ন সাহিত্য। তসলিমার লজ্জাও হয়ত সাহিত্য না-কিন্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থান পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে লজ্জার রাজনৈতিক মূল্য আছে-অনেকটা আঙ্কলস টমস কেবিনের মতন।
@বিপ্লব পাল,
আমি দ্বিমত করব। কোন সাহিত্য ভাল আর কোন সাহিত্য খারাপ তা বিচারের কোন সার্বজনীন মাপকাঠি নেই। আমার সমরেশকে যাচ্ছেতাই মনে হয়, তার মানে এই না যে আমার মাপকাঠিটাই একমাত্র সত্য। তসলিমার অনেক কাজই আমার কালোত্তীর্ণ মনে হয়। যদি গল্প উপন্যাসের কথা বাদও দেই, কেবল কবি হিসেবেই তিনি অসামান্য প্রতিভাধর, এবং সফল। এই যে কবিতাটা –
এ ধরণের অসংখ্য অসামান্য লাইন তসলিমা আমাদের উপহার দিয়েছেন। তার ‘নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে’, ‘আমার কিছু যায় আসে না’, ‘অতলে অন্তরিন’, ‘বালিকার গোল্লাছুট’ এর মত কাব্যগ্রন্থ বাংলাভাষায় এর আগে লেখা হয়নি। হয়নি ‘পরিচয়’, ‘শুভ বিবাহ’, ‘ঘর গেরস্থি’, ‘দুধরাজ কবি’, ‘সীমান্ত’, ‘ নিয়তি’, ‘আত্মচরিত’, কিংবা ‘ চরিত্র’ এর মতো কবিতা লেখা হয়নি তসলিমার আগে –
কোন মেয়ে এত স্পষ্ট করে বলতে পারেনি –
এ সমস্ত অসমান্য লাইনের জন্যই তসলিমা টিকে থাকতে পারেন নির্দ্বিধায়। এর বাইরে তার কলামগুলো আমার এখনো অনবদ্য মনে হয়। তার ‘নির্বাচিত কলাম’ কিংবা ‘নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য’ ছিল পুরুষতন্ত্রের উপর যেন চপোটাঘাত। কেবল নারী কেন, নারী-পুরুষ মিলিয়ে কেউ এত স্পষ্টবাদিতার সাথে নারী অধিকারের পক্ষে দাঁড়ায়নি। তসলিমা একাধারে আক্রমণ করেছে পুরুষতন্ত্রকে, ধর্মকে, কুসংস্কারকে, অপবিজ্ঞানকে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকেও। বাংলাদেশের মত জায়গায় একা যুদ্ধ করাটা মোটেও সোজা ছিল না।
আর লজ্জা উপন্যাসটার কথা তুমি বলেই দিয়েছ। এই যে হিন্দুরা বাংলাদেশে লাগাতারভাবে নিগৃহীত, অপাংক্তেয়। প্রতিটি দাঙ্গায় যেখানে হিন্দুদের হার কমতে কমতে তলানিতে চলে যাচ্ছে, বিমানবাহিনী, আর্মি কিংবা নৌবাহিনীতে হিন্দুদের ইচ্ছে করে নেয়া হচ্ছে না – এটা নিয়ে তসলিমার আগে কেউ উপন্যাস লেখেনি। এত বর বড় সাহিত্য-মানে উত্তীর্ণ লোকজন গিজ গিজ করছে বাংলাদেশে কিন্তু কাউকে দেখলাম না তসলিমার আগে সংখ্যালঘুদের এই তীব্র ব্যথাকে উপন্যাসে রূপ দিতে। এখানেই তসলিমা সফল। সেজন্যই বোধ হয় শিবনারায়ন রায় ‘বন্য গোলাপের সুগন্ধ’ প্রবন্ধে বলেছেন – ‘সমকালীন দুই বাংলা মিলিয়ে মেরি ওয়লস্টোনক্র্যাফটের যোগ্যতমা উত্তরসাধিকা হচ্ছেন স্বদেশ থেকে নির্বাসিত তসলিমা নাসরিন’। কথাটা আমার অত্যুক্তি মনে হয়নি।
@বিপ্লব পাল,
সাহিত্যিক হিসেবে খুব উচুমানের হওয়াটা কি জরুরি? (যদিও সাহিত্যমানের বিচার আমার কাছে খুব কমপ্লিকেটেড এবং আপেক্ষিক মনে হয়)
@অভিজিৎ,
আপনার চমৎকার মন্তব্য এই পোস্টের বড় পাওনা। প্রায় পুরো একমত! শুধু একটা ব্যাপারে কিছু যোগ করি …
যৌনতা নিয়ে বাঙালির ট্যাবুর কথা স্বীকার করে বলছি- আমার মনে হয়, তসলিমা বিদ্বেষ কেবল এই ট্যাবু ভাঙ্গার কারণে নয়! যৌনতা আরো অনেকের লেখাতেই বিভিন্ন এসেছে, এ বাংলার- ও বাংলার … কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এভাবে বিদ্বেষ দেখেছি কি আমরা? এ জায়গাটিতেই আমি বিশেষ করে আলো ফেলতে চাই … হ্যাঁ পুরুষের যৌনতা কেন্দ্রিক লেখা, তার যৌনাকাংখা- লুচ্চামি এসবের সবিস্তার বিবরণের চাইতে একজন নারীর যৌনতাকেন্দ্রিক লেখা গ্রহণে ট্যাবু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, দাঁড়িয়েছেও … কিন্তু, তসলিমার ক্ষেত্রে বিদ্বেষের মূল জায়গা আমার মতে- তার যৌনতা কেবল যৌনতা হয়ে থাকেনি- যৌনতাকে ছাপিয়ে সে যৌনতার রাজনীতিকে সামনে এনেছে, যেখানে পুরুষের চরিত্রকে উন্মোচন করেছে … আর এ কারণেই এই মেল ডমিনেন্ট সোসাইটি সেটা মানতে পারেনি …
‘রগরগে’ যে অভিধা দেয়া হয়- সেটা আদতে কতখানি? হ্যাঁ, একজন নারী যখন তার নিজের যৌন চাহিদার কথা বলে, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের কথা বলে, বিয়ে বহির্ভুত সম্পর্কের কথা যখন বলে- সেটা মানতে আমাদের পুরুষবাদী মন সাড়া দেয় না- পুরুষের তৈরি ট্যাবু তাকেই রগরগে বলে ট্যাগ করে দেয়- কিন্তু, কোন পুরুষ যদি তার যৌনাকাংখা চরিতার্থ করার সবিস্তার বর্ণনা দেয়- সেটা আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হয়- সেটা আমাদের চোখে উত্তম সাহিত্য হয়ে যায়! সুনীল গাঙ্গুলীর লেখাতে যৌনতার যে বর্ণনা আছে, নারীর যৌনাঙ্গের যে মনভুলানো বিবরণ আছে, সৈয়দ হকের খেলারাম খেলে যা তে লুচ্চার লুচ্চামির যেসমস্ত বিবরণ আছে, বিনয় মজুমদারের ভুট্টা সিরিজে যেসব বিবরণ আছে- সেগুলো কিছু না … তুলনায়, তসলিমা নাসরিনের লেখায় এই রকম কোন ডিটেইলিং পাওয়া যায়? তাহলে কেন তা রগরগে হবে? ‘ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে শুভ্র সাবানের ফেনা বা তুলার মধ্যে মুখ ডুবিয়ে থাকা পুরুষ ঘুম ভেঙ্গে দেখে তার নারীর স্তন মুখ ডুবিয়ে আছে’ (সুনীলের কোন একটি উপন্যাস থেকে)- পুরুষের দিক থেকে এই যৌনাকাঙ্ক্ষা, যৌনাবেগ যদি সাহিত্যে আসতে পারে, তাহলে যে নারীর স্তনে তার পুরুষ মুখ রেখেছে- সেই নারী কেন তার অভিজ্ঞতা লিখতে পারবে না? সে অভিজ্ঞতা যদি হয়- বিরক্তির, ঘুম নষ্টকারক, দাড়ি-মোচের খোচা আর লালায় মাখামাখি হওয়া ঘৃণার, সেটা কি সে চেপে যাবে? তসলিমা সেটাই করেছেন- কিন্তু করেছেন, পুরুষকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে! আমার ধারণা, তসলিমা যদি পুরুষকে চ্যালেঞ্জ না করে যৌনতার আমদানি করতেন- তাহলে, এত বাঁধা তিনি পেতেন না! তিনি ধর্মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন- পুরুষকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, একদম উপযুক্ত জায়গায় ঢিল দিয়েছেন বলেই তার প্রতি এত চারদিকে এত ক্ষোভ!
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
কমেন্ট এডিট করে কিভাবে? অপশন খুজে পাচ্ছি না … 🙁
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
লেখাটিতে তসলিমা নাসরীনের সমালোচনাকারীদের সমালোচনা নিজে করতে গিয়ে বাক্য ব্যবহারে তসলিমা নাসরীনের সমালোচনাকারীদেরই অনুসরণ করেছেন। আরেকটু আবেগ সংযত করলে পারতেন।
@গীতা দাস,
আপনার সমালোচনা মাথা পেতে নিচ্ছি- মূল লেখায় (২ নম্বর পয়েন্টে) অদিতি ফাল্গুনির উপর আসলেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে, বিশেষ করে – ///নিজের লিপ্সা- অভিপ্রায়- স্বভাবের মত করে আর সকলকে দেখার নামান্তর/// এই লাইনটি লেখার সময়ে নিজেও একটু কনফিউজড ছিলাম- অদিতি ফাল্গুনী যা লিখেছেন, তা কুরুচিপূর্ণ, তার নিন্দা জানানোই হয়তো যথেস্ট ছিল- কিন্তু অদিতি কোন জায়গা থেকে এসব লিখেছেন- তার ঈর্ষা নাকি নিজের স্বভাব- এর মধ্যে যাওয়াটা প্রকারান্তরে একরকমের নোংরামিই বটে (নোংরামির জবাব নোংরামিতে হলে আদতে নোংরামিকেই জাস্টিফাই করা হয়)… আসলেই লেখার ক্ষেত্রে আবেগ সংযত রাখা কর্তব্য! আপনার গঠনমূলক সমালোচনার জন্যে কৃতজ্ঞতা …
তবে, বাক্য ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার জায়গাটা যদি আরেকটু পরিস্কার করতেন তাহলে আমার বুঝতে আরো সুবিধে হতো! আপনি যে মন্তব্যের জবাবে এই মন্তব্য লিখেছেন- সেটির ব্যাপারে, নাকি ওভারল মূল পোস্টের ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন? আমার কমেন্টে সুনীল গাঙ্গুলিকে নিয়ে কথাবার্তা, বা কিছুটা খোলামেলা শব্দপ্রয়োগকে কি এন্ডিকেট করেছেন? এমনিতে আমি এরকম খোলামেলা বাক্য/ শব্দ প্রয়োগে খুব একটা আপত্তি দেখিনা … তারপরেও আপনার সমালোচনার জায়গাটা আরেকটু পরিস্কার হলে উপকৃত হতাম …
@অভিজিৎ,
আপনার আলোচনার অন্যান্য বিষয়ে একমত হলেও —- তা করছেন তিনি নারী হয়েই বাক্যটিতে আমার আপত্তি। একজন পুরুষ যে কোন ইস্যুতে আরেকজন পুরুষের সমালোচনা করতে পারেন। তা যৌনতা, রাজনীতি, সাহিত্য —– যাই হোক না কেন। তাহলে একজন নারী আরেকজন নারীর সমালোচনা করতে পারবে না — এমন বাক্য গ্রহণযোগ্য কি?
@গীতা দাস,
গীতাদি, সমালোচনাতে আপত্তি ছিল না, কিন্তু আপত্তি বিশেষণ প্রয়োগে। আমি করলে সেটা নাকি হয় নারীদের ‘যৌনসামগ্রী বানানো’ (যদিও আমি অদিতির নামোল্লেখ পর্যন্ত করিনি), অথচ ‘তসলিমার যৌনক্ষুধা’, ‘যৌনতার ষষ্ঠীপুজো’, ‘বাজার কাটতি পত্রিকার দুই সম্পাদকের প্রেমিকা’ ইত্যকার বিশেষণ প্রয়োগের পরেও সেটাকে স্রেফ ‘একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সমালোচনা’ হিসেবে দেখা যায় কিনা ভেবে দেখবার অনুরোধ রইলো।
@অভিজিৎ দা,
আমার মনে হয়েছে, গীতাদির অভিযোগটা ঠিক বুঝতে পারেন নি … গীতাদি’র ///আপনার আলোচনার অন্যান্য বিষয়ে একমত হলেও/// লাইনটিই বলে দেয়- অদিতি ফাল্গুনিকে করা আপনার সমস্ত সমালোচনাকে গীতাদি সমর্থনই করেছেন- আপত্তি ঐ অদিতি ফাল্গুনীর “নারী” পরিচয়টি সামনে আনাটায় … গীতাদির মন্তব্য পড়ার পরে আপনার মন্তব্য পড়তে গিয়ে মনে হলো- আপনার মন্তব্যে ঐ বাক্যটা না থাকলেই বরং ভালো হতো! গীতাদির সূক্ষ্ম চোখে এটা ধরা পড়েছে …
আর, আপনার শেষ প্রশ্নটিও মনে হয়েছে- গীতাদির বক্তব্যের সাথে মিলে না … অদিতি ফাল্গুনির ঐ নোংরা বিশেষণগুলোকে গীতাদি স্রেফ ‘সমালোচনা’ হিসেবে দেখতে বলেছেন মনে হয়নি- বরং আপনি যখন অদিতির নারী সত্ত্বাকে সামনে এনে বলেছেন- ///তা করছেন তিনি নারী হয়েই///- সেটার লেজ টেনেই গীতাদি সম্ভবত বলতে চেয়েছেন- ///একজন নারী আরেকজন নারীর সমালোচনা করতে পারবে না — এমন বাক্য গ্রহণযোগ্য কি?///
অর্থাৎ, আমি যেভাবে বুঝিছি- অদিতি ফাল্গুনী যে নোংরা মন্তব্য করেছেন- সেটা “নারী” হয়ে করতে পারবেন না, “পুরুষ” হলে করতে পারতেন- এমন যদি মনে না করেন- তাহলে অদিতির “নারী” পরিচয় এখানে অপ্রাসঙ্গিক! তসলিমা নাসরিন প্রসঙ্গে অদিতির একটা অবস্থান আছে, এবং সেটাই তিনি ঐ পোস্টে রেখেছেন! এবং যত কদর্যই হোক- অদিতির সেই আলোচনাটা তো সমালোচনামূলকই! সেই সমালোচনা আমাদের চোখে কদর্য, কুৎসিত, নোংরা- সে কারণেই কিন্তু তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান বা সমালোচনা! অদিতি’র নারী হওয়াতে তো কিছু যায় আসে না! ‘নারী’ অদিতি’র সমালোচনা করা যদি অগ্রহণযোগ্য না হয়- তবে তার “নারী” হয়ে নোংরা কথা বলাতেও তো আপত্তি থাকার কথা নয়!
নোংরা, অশ্লীল, বাজে, ফালতু কথা বলার বা আচরণ করার অধিকার তো কেবল পুরুষের এক চেটিয়া নয়, কি বলেন?
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
ওয়েল, আমার প্রসঙ্গ সেটা ছিল না। সমালোচনার ক্ষেত্রে কে নারী আর কে পুরুষ সেটা প্রাসঙ্গিক নয় সত্য, কিন্তু অদিতির মত শক্তিমান লেখকেরাও আমার শাহবাগ স্ট্যাটাসের পর ‘আমি নারী’ ট্রাম্পকার্ড খেলা শুরু করলেন। পুরুষতন্ত্রের কাজই হচ্ছে নাকি তার মতো মেয়েদের ‘নোংরা ভাষায়’ আক্রমণ – এই ছিল ফাল্গুনীর (এবং তার দিদির) যুক্তি। মজার ব্যাপার হচ্ছে তসলিমার ক্ষেত্রে সেই দাবার ছকটা উল্টে গেলো। ামার চেয়েও ঢের বেশি নোংরা বিশেষণে পারঙ্গম তারই প্রমাণ দিলেন নারীবাদী অদিতি। আমার প্রশ্ন সেখানেই। আমি আমার কমেন্টের মাধ্যমে মূলত প্রশ্ন রেখেছি এই নারীবাদীর দ্বিচারিতার। আর কিছু নয়।
বুঝবেন আশা করি।
@অভিজিৎ,
তসলিমার অনেক লেখা ও কিছু ব্যাপার আমার বিশেষ ভাল লাগে। কিন্তু দ্বিমতও আছে অনেক। যেমন;
দু’পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে যদি কোনো সম্পর্ক হয়, এবং একপক্ষ যদি চায়- এ সম্পর্কের ব্যাপারে তৃতীয় কেউ না জানুক এবং সেটা জেনেও অন্যপক্ষ যদি তা সবাইকে জানিয়ে দেয় তা এক প্রকার অসততা নয় কি?
@তামান্না ঝুমু,
আসলে এমন কাজ তসলিমা কোথায় কবে করেছেন একটু জানাবেন?
তসলিমা নাছরিনের লেখায় রবিন্দ্রনাথের কাব্য, সুনীলের উপন্যাস খুঁজতে যান, পাবেন না, তসলিমার লেখা পড়তে হলে মনে রাখতে হবে তসলিমার লেখাই পড়ছেন, কারন তার লেখা গুলোর সাথে অন্য কারও লেখা মিলবে না, আর সে কারনেই সে বাংলাদেশে শুরুতেই এতো জনপ্রিয় হতে পেরেছিলেন, আজ সে পৃথিবির মধ্যে একজন জনপ্রিয় নারীবাদি লেখক, আজ কাল পুরষ্কার গাছে ধরে ঠিক তসলিমা যে সব পুরষ্কার গুলো পেয়েছেন তা আমাদের দেশের কয়জন, ভারতের কয়জন পেয়েছেন তা কি আপনি জানেন ? তসলিমার লেখা দুই ধরনের মানুষ এই বাংলাদেশে পড়ে, এক দল মানুষ তার লেখায় যৌনতা খুঁজে, আর এক দল তার লেখায় বক্তব্য খুঁজে, কি লিখতে চেয়েছেন তা বুঝতে চেষ্টা করেন,বিদেশে তার বক্তব্য মানুষ পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে শুনতে যায়। আর দাড়িঁয়ে হাততালি কম পক্ষে পনের/ কুড়ি মিনিট ধরে পেতে থাকেন, বাংলাদেশের কজন মানুষ তা জানেন।আমরা যারা অল্প বিদ্যার জাহির করি তাদের বলছি তসলিমা জানতে হলে তসলিমাকে পড়তে হবে। তাহলেই আপনি তসলিমাকে নিয়ে কথা অথবা তর্কে যেতে পারেন, আর যদি তসলিমা মানেই যৌনতা খুঁজে বেড়ান তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে ছোটবেলা থেকেই আপনি বোধ হয় চটি বই পড়েছেন, ভালো কনো সাহিত্য পড়ে দেখনি,তাই
আজও চটি খুঁজে ফিরছেন।মনে রাখতে হবে এখন তসলিমা একটি আর্দশ, একটি স্তম্ভ। একদিন আসবে যেদিন এই আর্দশের পিছনে থাকবে লাখো মানুষের ভীর।
তসলিমা নাসরিন কে নিয়ে লেখকের বক্তব্য বেশ পরিষ্কার । আমিও বাক্তিগত ভাবে তসলিমা কে পছন্দ করি তার লেখার সাহিত্য গুনের জন্য নয় তার লেখার বিষয় বস্তু নির্বাচনে এবং তার সাহসিকতার জন্য। মৌলবাদের বিরুদ্ধে এবং পুরুষ তন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানর জন্য। এটা সত্যি কথা বর্তমানে হিন্দুত্ত বাদি বিজেপির সাহায্য নিয়ে তাকে ভারতে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে যে রাজনৈতিক দল দু বেলা বিজেপি কে গালি না দিয়ে দিন শুরু করে না সেই দল রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্তেও তাকে বাংলা তথা দেশ ছাড়তে হয়েছিল কেন? কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে প্রধানত অবাঙ্গালি মুসলিম রা থাকে তারা বাংলা লিখতে পড়তে পারে না এমনকি বাংলা ভাল করে বলতেও পারে না প্রধানত তাদের বিরধিতায় তাকে রাজ্য ছাড়তে হয়েছিল। আরও অবাক লাগে বাঙালি মুসলমান শিক্ষিত সম্প্রদায়ও তসলিমার সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। তবু তার লড়াকু, হার না মানা মানসিকতাকে সেলাম।
তবে কয়েকটি প্রশ্ন রাখছি
ইমদাদুল হক মিলনের সাথে তার সম্পর্কের কথা তিনি অকপটে বলেছেন। ঠিক কাজ করেছেন কি না সেটা নিয়ে আমি কিছু বলছি না। তবে তিনি নিশ্চয় জানতেন মিলন বিবাহিত । একজন বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রী কে প্রতারনা করছেন আর তিনি তাকে সেই কাজে সহযোগিতা করলেন। এটাকে তিনি কি চোখে দেখেন? আমি তো একথাও বলতে পারি মিলন না বরং তিনিই মিলনকে ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষণ শুধু গায়ের জোরে হয় না পরিস্থিতির সুযোগেও হয়। আমাদের দেশে আইন লিঙ্গ নিরপেক্ষ নয় বলেই কি তার বিরুধে অভিযোগ আনা যাবে না।
সুনিল গাঙ্গুলি সম্পর্কে আমার বিশেষ কোন শ্রদ্ধা নেই। তবু এখানেও বলা যায় সুনিল যদি অভিযোগ করত আসলে তিনিই সুনিলের গায়ে আপত্তি জনক ভাবে ধরেছেন। এখানেও আইন লিঙ্গ নিরপেক্ষ নয় বলেই তিনি তার সুযোগ নিচ্ছেন। আসলে প্রমান ছাড়া অভিযোগ বেশ বিরক্তিকর।
@অনিন্দ্য পাল,
এটি আপনি বলতেই পারেন! আমিও মনে করি, সঙ্গী সিলেকশনের ক্ষেত্রে পুরুষ/ নারীর এক্সিস্টিং সম্পর্কচ্ছেদ ঘটিয়েই হওয়া উচিত! নচেত এতে প্রতারণার বা জেনেশুনে প্রতারণায় সহায়তা করার সুযোগ চলে আসে। এদিক থেকে, আপনি যদি বলেন- মিলন তার স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করেছেন এবং তসলিমা নাসরিন তাতে সহযোগিতা করেছেন- এর সাথে দ্বিমত করা মুশকিল!
কিন্তু, দায় যদি একা তসলিমার ঘাড়ে দেন- তাহলে অবশ্যই আপত্তি করি! প্রতারণা যদি করে থাকেন- সেতো মিলনই করেছেন! রুদ্র’র সাথে ছাড়াছাড়ির পরে তসলিমা একা ছিলেন, এবং তার মানসিক- শারীরিক চাহিদাও ছিল! এই সুযোগে মিলন কিছুটা কাছাকাছি হতে চেয়েছেন- তসলিমাকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে যান। তসলিমা নাসরিনও সায় দিয়েছেন!
এখানে ধর্ষণের অভিযোগ তো কেউ করেনি! পরিস্থিতির সুযোগ যদি নেওয়ার কথা বলেন- তবে সেটাও মিলনের ঘাড়েই বর্তায়! মিলনের স্ত্রী বর্তমান থাকার পরেও সে নিসঙ্গ তসলিমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে! তসলিমা নাসরিনের চাহিদা ছিল- এবং সেটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু সে চাহিদা তো শুধু দৈহিক নয়, মানসিকও ছিল- যা মিলন দৈহিক সম্পর্ক হওয়ার আগে যতখানি পূরণে উদ্যোগী ছিল- পরে একেবারেই ছিল না! তসলিমা নাসরিনের অভিযোগের জায়গাটা মনে হয়েছে এতটুকুই!
আর, ধর্ষণের অভিযোগ এখানে কেউ করেনি- আপনি জোর করে আনছেন কেন? আপনার উদ্দেশ্য কি?
এবার হাসালেন! সুনীল গাঙ্গুলি অভিযোগ যদি করতেন? সুনীল গাঙ্গুলি এমন অভিযোগ তো করেনি! আসলে, আপনার কথার সুরে নারীকেই কমনলি একিউজ করার সেই প্রচলিত ধ্যান ধারণা খুজে পাচ্ছি! নারী একা একা কলকাতার হোটেলে উঠেছে- মানে সুনীলদের মত পুরুষদের পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে- তার গায়ে ইচ্ছেমত হাত দেয়ার! এমন কি বলতে চান নাকি? ইমদাদুল হক মিলনের ক্ষেত্রেও তসলিমা কর্তৃক ধর্ষণের গালগল্প টানলেন দেখি!
আর যে প্রমাণের কথা বললেন- সেটা কেমন ধরণের? সাক্ষী-সাবুত চান? পুরুষেরা সাক্ষী সাবুত রেখে নারী নির্যাতন করেন, ধর্ষণ করেন?
@নাস্তিকের ধর্মকথা, প্রথমত আমি দুজনকেই দায়ী করতে চাই। দ্বিতীয়ত পদস্থলন হলেই দোষ শুধু নারীর এটা যেমন ঠিক না আবার একজন নারী অভিযোগ করলেই সত্যি ধরে নেওয়া কেই লিঙ্গ বৈষম্য বলতে হয়।
সাহিত্যমানের বিচার কিভাবে করতে হয়? আর এ মানের বিচার কারা করেন? বিচারকেরই বা কী কী যোগ্যতা থাকতে হয়? এমন জাতীয় প্রশ্ন আমার মনে প্রায়ই আসে। রবীন্দ্র, নজরুল, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ এদের লেখাগুলো সাহিত্য মানের বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে কেউ কেউ তসলিমা নাসরিন কিম্বা হুমায়ুন আহমদের লেখাগুলোকে সাহিত্য মানের বলছে না। কিন্তু কেন? আমার জবাব পেতে ইচ্ছে করে।
ধরুন, নাস্তিকের ধর্মকথার এই আর্টিকেলটা কি সাহিত্যমানের? কীভাবে বিচার করবেন।
সাহিত্য হোক বা না হোক যা দিয়ে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব তা খুবই দামী। তসলিমা নাসরিনের নির্বাচিত কলাম দিয়ে তার রচিত বই পড়ার যাত্রা শুরু করেছি। অসম্ভব বিদ্রোহী। বেগম রোকেয়ার আমলে বেগম রোকেয়া সাহসী। ঐ সময় কি বেগম রোকেয়াকে সকলে গ্রহণ করেছে? না করেনি। এখন বেগম রোকেয়া নমস্য। তসলিমা নাসরিন মোল্লা ছাড়াও আস্তিকদের নিকট কিম্বা কিছু কিছু মডারেটদের নিকট কাঁটার মত, গোদফোড়ার ন্যায়।
একটা সময় আসবে যখন তসলিমা থাকবেন না, তখন তাকেই হয়ত সমাজ পরিবর্তনের অবদানের জন্য ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হবে যেমন করে করা হচ্ছে রোকেয়ার।
অদ্বিতি ফাল্গুনি তসলিমাকে যে দোষে দোষী করছেন, সেই একই দোষ তো তিনি করতে যাচ্ছেন, আমি যদি বলি অদ্বিতি নিজেকে হাইলাইট করার জন্য এমন করছেন, তাহলে কি কম বলা হবে?
নাস্তিকের ধর্মকথা, আপনি আরো লিখুন। আপনার লেখার পাঠকও অনেক রয়েছে; যারা আপনার লেখা পড়ে নাস্তিকের পথে হাটা দিয়েছে।
তসলিমা অত্যন্ত বুদ্ধিমান। বিদ্রোহিনী। তার দৃষ্টি এবং পর্যবেক্ষন সজাগ।
তবে তার সাহিত্য নিয়ে অতটা উচ্ছ্বাসিত নই। কারন মন এবং শব্দের যে গভীরে ডুব মারলে, মনিমুক্তো উঠে আসে-তসলিমা ওই কোয়ালিটির ডুবুরী নন। অবশ্য সে জাতের সাহিত্যিক বাংলাতে আছেই বা কে! সুনীল বা হুমায়ুন আহমেদের লেখাকেও আমি বেশ নিকৃষ্টমানের সাহিত্য বলেই ধরি-অন্তত আন্তর্জাতিকতার স্কেলে।
@বিপ্লব পাল,
ধরে নিলাম কথাটা না ভেবেই বলে বসেছেন!
সুনীল আর হুমায়ূনের মধ্যে একটাই মিল আছে- দুজনেই অনেক জনপ্রিয়, এছাড়া আর কোন মিলই নেই। সুনীল কবি, উপন্যাসিক…। তার পূর্ব-পশ্চিম, সেই সময়, প্রথম আলো’র মত উপন্যাস সাহিত্যমান কেমন করে নিকৃষ্টমানের হলো বুঝা গেলো না। সুনীলের কবিতাগুলো? সনাতন পাঠকের কলামগুলো? নীললোহিতের লেখাগুলো? নিজ ভাষার সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাঙালীরা আঁতলামীতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন…।
তাসলিমা নাসরিনের সমাজ, ধর্ম, নারীর অধিকার নিয়ে লেখা কলামগুলো তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেককাল…।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আমি খুব ভেবে, উপলদ্ধি থেকেই লিখেছি। রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ ছারা, আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্য বাংলায় কেওই লেখে নি। একটা বাক্য, একটা শব্দ, একটা ভাব গভীরে না ঢুকলে ঠাকুরমার ঝুলি হয়। সুনীলের ঠাকুরমার ঝুলি মার্কা সাহিত্যকে উচ্চমার্গের কিছু মানতে আমি নারাজ।
আসলে কাওকেই দোষ দিচ্ছি না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা,সমাজটাই এমন– গভীর ভাবে ভাবতে চিন্তা করতে শেখায় না। ফলে গভীর ঘন বাংলা সাহিত্য বলতে আদিতেও ররীন্দ্রনাথ, অন্তিমেও রবীন্দ্রনাথ। আর কেও জন্মান নি। বিচ্ছিন্ন ভাবে ভাল অনেকেই লিখেছেন- যেমন নরেন মিত্রর ছোট গল্প অমর মিত্রর গল্প। এরা উচ্চমানের সাহিত্যিক-কিন্ত বাংলায় সেই অর্থে উচ্চমানের পাঠক নেই-তাই এদের খ্যাতিও নেই। নেহাত সত্যজিত নরেন মিত্রের ভক্ত ছিলেন, তাই তার গল্পগুলির দু একটি সিনেমার মাধ্যমে অমর করে রেখেছেন। বাংলায় পাঠকদের যা লেভেল তাতে সুনীল, হুমায়ুনরাই বিখ্যাত হবেন।
তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষন বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাল সাহিত্যিক মানতে রাজী আছি-কিন্ত কেওই আন্তর্জাতিক মানে না। ওই অনেকটা অরুনলালের মতন- রঞ্জি লেভেলে বড় প্লেয়ার ছিলেন-কিন্ত আন্তর্জাতিক মানে কখোনই বসানো যাবে না।
@বিপ্লব পাল/সুষুপ্ত পাঠক,
আলোচনাটা ইন্টারেস্টিং দিকে টার্ণ নিচ্ছে দেখছি- এই টার্ণের জন্যে আপনাদের ধন্যবাদ!
সাহিত্যমানের বিচার আমার কাছে বেশ কমপ্লিকেটেড মনে হয় এবং অবশ্যই কিছুটা আপেক্ষিক- কেননা এর কোন সার্বজনীন পাল্লা নেই!
এর সাথে মোটামুটি একমত, যদিও এভাবে একেবারে ‘নিকৃষ্টমান’ আমি হয়তো বলবো না … আমার কাছে দুজনের সাহিত্যই চটুল সাহিত্য (বাজারিও বলা যেতে পারে, কেননা বাজার চাহিদাকে সামনে রেখে তারা লিখে গেছেন) … চটুল বা জনপ্রিয় সাহিত্য হওয়াটা খুব সমস্যার না, চটুল হলেই নিকৃষ্টমানের বলতে পারি না- কেননা এত মানুষের কাছে যেতে পারার জন্যেও কিছু না কিছু যোগ্যতা লাগে, কিন্তু এদের সাহিত্যের মধ্যে স্ট্রাইকিং তেমন কিছু পাইনি … দাগ রেখে যাওয়ার মত এদের কোন সাহিত্যকর্ম তেমন আছে বলে মনে হয় না … যা এবং যত লিখেছেন এই দুজন তার খুব ক্ষুদ্র অংশই পাঠককে নাড়া দিতে পেরেছে … আহমদ ছফা হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্য নিয়ে বলেছিলেন- চানাচুর সাহিত্য- যতক্ষণ মুখে থাকে চাবাতে ভালো লাগে- এর বাইরে আর কোন তার কার্যকারিতা নেই … সুনীলের অধিকাংশ সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এটা খাটে …
এই ভালো সাহিত্য আর আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্যের বিবেচনাটা বা পার্থক্যটা পরিস্কার না … ‘আন্তর্জাতিক মানে’র হতে কি লাগে, কে সেই সার্টিফিকেট দিবে- এই প্রশ্ন যদিও ‘ভালো সাহিত্য’এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তারপরেও আমার মনে হচ্ছে- ‘আন্তর্জাতিক মানে’র হওয়ার চাইতে ভালো সাহিত্য কি না এইটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ …
আমি অনেককেই দেখি … তবে আরো বেশি হতে পারতো …
আন্তর্জাতিক মান বলায় মুশকিলে পড়ে গেলাম- কেননা এই ‘আন্তর্জাতিক মান’ বস্তুটার মর্মই তো এখানে উদ্ধার করতে পারছি না … তবে, যদি বলেন রবীন্দ্রনাথ- জীবনানন্দের মানের সাহিত্য কেউ রচনা করেননি- তাহলে নিশ্চয়ই আপত্তি করবো …
রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প অনন্য- কিন্তু রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস? আমার কাছে খুবই সস্তা ধরণের মনে হয়েছে বেশিরভাগকেই … মানিক, তারাশংকর, বিভূতিভূষণ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অবশ্যই অনেক শক্তিশালী … ওয়ালিউল্লাহ, দেবেশ রায়দেরও একেবারে ফেলতে পারি না … হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্পগুলো? অমিয়ভূষণ, কমলকুমার মজুমদার? অনেক নামই আসতে পারে। জীবনানন্দের কবিতা অবশ্যই অন্য লেভেলের! কিন্তু, মাইকেল মধুসুদন- নজরুল বা অক্ষয়কুমার বড়াল থেকে শুরু করে বিনয় মজুমদার, পুরভী বসু, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনী রায় …(আরো অনেক নাম আছে- মনে আসছে না, আমি কবিতার খুব ভালো সমঝদার নই যদিও) … দের কিভাবে বাতিল করে দিবেন?
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
তসলিমা নাসরিনের কাছ থেকে আমার কিছু শেখার নেই। না জ্ঞান, না কবিতা, না লেখার স্টাইল। আমি কি লিখবো না, কি বলবো না, কি হতে চাইবো না, এমনকি কি ভাববো না, তা জানার জন্যই আমার কাছে তসলিমা নাসরিন জরুরি। তসলিমা সর্ম্পকে আমার খুব আগ্রহও নেই। কিছুটা কৌতুহল আছে। এর বেশী কিছু নয় [দেখেুন: সাম্প্রতিক টিভি সাক্ষাৎকার, ফারজানা রূপার এক্সক্লুসিভ fb.me/2JnpeEQT7 ]
গুলি ফোটানো মানেই যেমন রাষ্ট্র বিপ্লব নয়, তেমন তসলিমা জাত নারী মুক্তির বোলচাল, আর তীব্র মৌলবাদের বিরোধীতা [শুধু মুসলিম মৌলবাদ] মানেই নারী মুক্তি নয়। তসলিমা ব্যক্তিজীবনে যেমন প্রতারিত, সাহিত্যিক জীবনেও প্রতারিত। এ কারণেই শুধু পশ্চিমাদের বাহবা কুড়ানোর জন্য, নিশ্চিত নিরাপত্তার প্রবাস জীবনের জন্য, এমনকি ভারত সরকারের সুদৃষ্টির স্বার্থে তিনি জোর গলায় নারী মুক্তির পাশাপাশি মুসলিম মৌলবাদের বিরোধীতা করেন। কিন্তু হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করেন না। মুসলিম মৌলবাদকে তসলিমা জিকির তুলে দমে দমে গাল দেন বলে তিনি ভারতে হিন্দু মৌলবাদীদের খুব প্রিয়।
এখন তো দেখি দীর্ঘ মেয়াদ ভারতবাসের জন্য মোদি সরকারের কাছে তিনি সকাল-বিকাল ধর্ণা দিচ্ছেন! [দেখুন: http://t.co/J3KK9mCcLx%5D
তসলিমা আসলে পশ্চিমাদের গুটি, এমনকি ভারতের আনন্দবাজার গোষ্ঠিরও। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমানে এই দুই দুষ্ট চক্রের কিছু ফায়দা হয় বৈকি। এ কারণেই “লজ্জা”র মতো একটি নিম্নমানের রচনা আনন্দবাজার পুরস্কার লাভ করে। তলসিলামাকে সমর্থন দিলে ভারতের হিন্দু মৌলবাদের মুসলিম বিদ্বেষ চাঙ্গা থাকে, বামপন্থার চুলকানির আরাম হয়, বেশ একটি প্রগতিশীলতার ভেক থাকে। [খুব খেয়াল করে]। আর মিডিয়ায় তসলিমা “পাবলিক খায় ভালো” [সুধীজন, মাফ করবেন, শেষ কথাটিকে শাব্দিক অর্থে না নেওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাই; এটি নিছকই একটি মিডিয়া-টার্ম, অপশব্দ, কিছুটা যৌনগন্ধী তো বটেই]।
@বিপ্লব পাল,
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক লেখাই কিন্তু উঁচুমানের , তবে সব নয়। কাজেই তাকে এভাবে ফেলে দেয়ার সাথে আমি একমত নই।
কিছু লেখক না পাওয়ার বেদনা আর একরাশ হতাশা থেকে তসলিমা নাসরিনকে গালাগালি করে। তারা মনে করে তাদের সাহিত্য মান ভাল, কিন্তু কেউ তাদের পাত্তা দিচ্ছে না কেন? তসলিমা এত এত পুরষ্কার পাচ্ছে, তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না! তবে লাকি আক্তারকে নিয়ে পত্রিকায় নোংরা অশ্লীল গল্প লিখলে সেটা সাহিত্য হয়ে ওঠে, মেয়েরা কেন বিড়ি খাচ্ছে তা নিয়ে তাদের ওয়াজ নসিহতের অন্ত নেই, আর তসলিমার লেখা কোনকালেই সাহিত্য বলে গণ্য হয় না। এরা নারীবাদী হলে নারীবাদের সকল পুস্তক আবার লিখতে হবে মনে হয়। তাদের সমালোচনার নামে কুটনামি আর নষ্টামি হাস্যরস উৎপাদন করে যখন তারাশঙ্কর, মানিকের সাথে তুলনা করতে বসে।
@আসিফ মহিউদ্দীন,
পুরো অংশটুকু কমপ্লিটেড …
@নাস্তিকের ধর্মকথা, পড়েছি। খুব আশা করি আপনি মাসে অন্তত একটা হলেও লেখা দিন।
@আসিফ মহিউদ্দীন,
:guli:
এভাবে কেউ হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়?