“পহেলা বৈশাখে সমকামীদেরপ্রথম প্রকাশ্য র্যালি” – শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছে প্রিয় ডট কম। এ খবর নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রিয় ডট কমের এই নিউজটি আবার শেয়ার করেছে “বিডি ন্যাশনালিস্ট” নামের বিএনপিপন্থী একটি ফেসবুক পেজ। যেমনটা ধারণা করা যায়, তারা ইস্যুটিকে আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
সমকামীদের অধিকারের বিষয় নিয়ে এখন আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। একদিকে কাঠমোল্লারা ছি ছি করে চলেছে, সমাজের “অবক্ষয়”কে দায়ী করছে সমকামীদের এই উত্থানের পেছনে। তাদের সাথে তাল দিচ্ছে সরকারের বিরোধীপক্ষ, কারণ তাদের এখন আন্দোলনের নতুন ইস্যু দরকার। অন্যদিকে প্রগতিশীলেরা, যারা এখনো বাংলাদেশের সমাজের খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ, সমকামীদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এটি খুবই আশার কথা যে আমাদের নতুন প্রজন্ম থেকে বুদ্ধিজীবী একটি অংশের সৃষ্টি হয়েছে, যারা এখন কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের মতকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারছেন।
আমার এই লেখা সেইসব পাঠকের উদ্দেশ্যে যারা সমকামিতাকে প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক অংশ বলে মনে করেন। সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ কিংবা ধর্মীয়/ সামাজিক দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ধ্যান ধারণা নিয়ে যারা বসে আছেন তাদের এই পোস্ট না পড়াই মঙ্গল। সব কিছু ইহুদী/ নাসারা/ ইন্ডিয়া/ আওয়ামী সরকারের ষড়যন্ত্র নয়, এর বাইরেও আরো অনেক কিছুই আছে।
“গে প্রাইড প্যারেড” সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন। পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন এলাকায় (বিশেষত যেসব দেশে সমকামিতা আইনের দৃষ্টিতে বৈধ) LGBT (Lesbian, Gay, Bisexual & Transgender) গ্রুপগুলো এই প্যারেডের আয়োজন করে। এই প্রাইড প্যারেডগুলোর মূল লক্ষ্য সমাজকে জানানো যে সমকামীরা যে ভিনগ্রহ থেকে উড়ে আসা কোন গোষ্ঠী নয়, বরং সমাজেরই একটি অংশ। এই বৈচিত্র্য লুকিয়ে রাখার কোন বিষয় নয়, বরং এটি প্রকাশ্যেই উদযাপন করা উচিত। এই “Pride” এর প্রতীকস্বরূপ ব্যবহার করা হয় রংধনু রঙের পতাকা।
পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব। নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে সারা দেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সবচেয়ে বড় আয়োজন থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা এবং রমনা এলাকায়। এবারের পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার পরপরই আরেকটি র্যা লি বের হয়। সেই র্যাুলিতে অংশ নিয়েছিলেন সমকামীরা এবং সমকামীদের সমানাধিকার সমর্থন করেন এমন অনেকে। রংধনুর সাত রঙে মেলানো সেই র্যাালি অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। প্রাইড প্যারেড সম্পর্কে সিংহভাগ মানুষের ধারণা না থাকায় তারা বুঝতে পারেন নি আসলে কি হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখে এ ধরনের আয়োজন নিয়ে নানাজনের নানামত থাকতে পারে। আমার মতে এ ধরনের আয়োজনের ধনাত্বক ঋণাত্বক দুটি দিকই আছে। ভালো দিকটি হল, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে সমাজকে সমকামীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দেয়া হল। সমাজ এখন আর আগের মত এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারবে না। সেই সাথে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে সমাজের ভয়ে লুকিয়ে থাকা সমকামীদের জানানো হল – তুমি একা নও। আর এ বিষয়টি আলোচনায় আসাতে অনেকে হয়তো বিষয়টি নিয়ে একটু পড়াশোনা করবে। “ছিছি” রব তোলা অনেকেরই হয়তো দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঋণাত্বক প্রভাবের সংখ্যা একটু বেশি। আমাদের সমাজ এখনো সমকামীদের প্রকাশ্যে দেখতে প্রস্তুত নয়। যখনই সমকামীরা প্রকাশ্য হতে শুরু করবে, আমাদের সমাজ তার ভঙ্গুর ইমেজ (যে ইমেজ দাবী করে এই দেশে কোন সমকামী নেই) রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। সে যাকেই হাতের কাছে পাবে তাকেই আহত করতে চাইবে। সরকারবিরোধী পক্ষ বিষয়টিকে সরকারের বিরুদ্ধে ডাইভার্ট করতে চাইবে আর সরকার ইস্যুটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ হয়তো নেবে। সমকামীদের মত সমাজের অত্যন্ত ভালনারেবল একটি অংশ যদি মহাশক্তিধর সরকারের আক্রোশের শিকার হয় তাহলে তার ফলাফল কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এ প্রসঙ্গে হেফাজত বনাম নাস্তিক ব্লগারদের ইস্যুটির কথা মনে করা যেতে পারে। সরকার হেফাজতকে ছেড়ে দেয় নি একথা যেমন সত্য, তারা তিনজন নাস্তিক ব্লগারকে জেলে ভরেছিল একথাও তেমন সত্য।
“সমকামিতা পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন” – পহেলা বৈশাখে প্রাইড প্যারেড/ রংধনু র্যাতলির আয়োজন করার আগে আয়োজকেরা এ বিষয় কি ভেবেছিলেন কে জানে। আমার মনে হচ্ছে এ ধরনের অযৌক্তিক দাবিকে আরেকটু উস্কেই দিলো এই র্যােলিটি। সমকামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল/ পর্যবেক্ষক একটি গোষ্ঠীও কিন্তু আছে আমাদের সমাজে। সমকামীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদের সম্পৃক্ততা চাইলে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরেকটু গভীরভাবে চিন্তার প্রয়োজন আছে।
আমি নিজে সমকামী এবং আমারও স্বপ্ন আছে একদিন এই মিছিলে যোগ দেবার। কিন্তু আমার এই উৎকীর্ণ অভিলাষকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে আমি কাউকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাই না। রূপবানের দ্বিতীয় সংখ্যা আসছে। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলতেই থাকবে। এবং আমি বিশ্বাস করি শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবেই; সমস্ত অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে আমাদের এই দেশ একদিন আলোর সমুদ্রে ভাসবে। কিন্তু সেই কন্টকাকীর্ণ যাত্রায় রক্ত যত কম ঝরে ততই মঙ্গল।
লেখকঃ তন্ময়
সমকামের আবার অধিকার কি ? এই বিষয়টাই আমার কাছে পরিস্কার নয় । এই পৃথিবীতে যার যে ভাবে ভাল লাগবে তারা সে ভাবে যৌন আনন্দ উপভোগ করবে এটাইতো স্বাভাবিক। যতক্ষন না উক্ত ব্যপারটি যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষন এর পর্যায়ে পৌছায় । ততক্ষ পর্যন্ত এর মধ্যে কোন অবৈধতা আছে বলেতো আমার মনে হয়না। অার সমকামিতা বা বিপরিতগামীতা এটি ব্যক্তির নিজর্স্ব একটি বিষয়। যে যে লিঙ্গের প্রতি যৌন আর্কষন অনুভব করবে সে তার সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলবে এটা প্রকৃতিরই নিয়ম ব্যক্তির ইচ্ছাধিন নয়। তবে , বাংলাদেশ সরকারের আইনে সরকার কতৃক ঘোষিত পতিতালয় ব্যতিত আইনত স্বামী স্ত্রী নয় এমন পুরুষ বা নারী কে অন্য যে কোন স্হানে গোপনে বা প্রকাশ্যে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়াটা ফৌজদারী আইনে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সমকামিতা অবৈধ এমন কোন আইন বালাদেশে আছে কিনা আমার জানা নেই।
তবে সমকামিদের অধিকার বলতে যদি তারা বুঝাতে চায় পশ্চিমাদেশ গুলির মত তারা পরস্পর যুগলবন্ধী হয়ে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়াবে , বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রীর মত জীবণ যাপন করবে সে ক্ষেত্রে আমার পক্ষে এতটা মেনে নেওয়ার মত উদার হওয়া কখনও সম্ভব হবে বলে মনে হয় ন।
সমকামিতা যৌক্তিক ভাবে সমাজিক জীবনে কোন ক্ষতিসাধন করে না। সমস্যা হচ্ছে মানুষের পূর্ব থেকে ধারন করে আসা বিশ্বাস।কোন কিছু যাচাই বাছাই না করে পূর্বের বিশ্বাস আঁকড়ে থাকার অভ্যাস আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।
(Y) [img]http://www.fuccha.in/wp-content/uploads/2014/03/lgbt-flag.jpg[/img]
চমৎকার এই সাহসী লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা আপনাদের ইস্যুগুলো নিয়ে এভাবে প্রকাশ্যে এগিয়ে এলে বাধাগুলো দূর করা কঠিন হবে না।
তবে কারো কারো মনের অন্ধকার কখনোই দূর হবে না। এরা সমকামিতার অধিকারের কথা আসলেই জুফেলিয়া, পেডোফেলিয়া, ধর্ষণ এসমস্ত বিষয় নিয়ে আসবেন (প্রথম মন্তব্যকারীর মন্তব্যটি এখানে প্রাসংগিক)। এদের মনোবৃত্তি আপনি বদলাতে পারবেন না। আপনি নারী-পুরুষ নিয়ে প্রেমের একটা গল্প ফাঁদলে দেখতেন তখন জুফেলিয়া, পেডোফেলিয়া, ধর্ষণ এগুলো এনে ত্যানা প্যাচাতেন না। এ থেকে প্রকারন্তরে এটাই তারা বলতে চান যে সমকামিতা অস্বাভাবিক, কিংবা অপরাধ।
কিন্তু মুশকিল হল – আধুনিক চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরা এখন সমকামিতাকে একটি স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি মনে করেন। সেই ১৯৭৩ই American Psychiatric Association অভিমত এবং বিবৃতি দিয়েছিলো যে সমকামিতা নোংরা ব্যাপার নয়, নয় মানসিক ব্যাধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association একই রকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলো। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালে ‘স্টেটমেন্ট অন হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শিরোনামে যে বিবৃতি জনসমক্ষে প্রকাশ করে, তার প্রথম দুটো অনুচ্ছেদ এখানে প্রণিধানযোগ্য –
এমনকি সমকামিতা বিষয়টি কারও পছন্দ বা চয়েসের ব্যাপারও নয়। গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, সমকামী প্রবৃত্তিটি জীবনের প্রাথমিক পর্যায়েই তৈরি হয়ে যায় এবং সম্ভবত তৈরি হয় জন্মেরও আগে। জনসংখ্যার প্রায় দশভাগ সমকামী এবং এটি সংস্কৃতি-নির্বিশেষে একই রকমই থাকে, এমনকি নৈতিকতার ভিন্নতা এবং মাপকাঠিতে বিস্তর পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। কেউ কেউ অন্যথা ভাবলেও, নতুন নৈতিকতা আরোপ করে জনসমষ্টির সমকামী প্রবৃত্তি পরিবর্তন করা যায় না। গবেষণা থেকে আরও বেরিয়ে এসেছে যে, সমকামিতা ‘সংশোধন’-এর চেষ্টা আসলে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কুসংস্কার ভিন্ন আর কিছু নয়’। এনিয়ে বিডিনিউজে প্রকাশিত আমার এই লেখাটি এবং নীচে মন্তব্যগুলো দেখতে পারেন।
যা হোক, ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। মুক্তমনায় আপনার আরো বেশি অংশগ্রহণ কামনা করছি।
চমৎকার একটি সংবাদ! বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ইতিবাচক প্রকাশ। জ্ঞান, যুক্তির নিরীখেই দেখতে হবে। ব্যক্তি অধিকার আর মানবতা সবার উপড়ে থাকুক, এইটেই অগ্রগতি…..
@তন্ময়, আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে| সমকামিদেরকেই প্রকাশ্যে এসে সমাজে সমকামীদের উপস্থিতি সম্পর্কে সমাজকে জানান দিতে হবে, কিন্তু একটু সতর্ক থাকতে হবে | কারণ বিএনপি-জামাত অর্থাৎ এদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকেরা এখন মুখিয়ে আছে আবারও সেই পূর্বের ন্যায় সমকামিতার বিপক্ষে ধর্মের কলকাঠি নেড়ে ধর্মান্ধদের উস্কানি দিতে …
আপনারা এগিয়ে যেতে থাকুন … আমরা আছি আপনাদের এই গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের দাবিকে সাপোর্ট দিতে | ভাল থাকুন | 🙂
@তারিক, ধন্যবাদ সমকামীদের সমানাধিকারে সমর্থন দেওয়ার জন্য। সমকামীরা যে বাইরের কেউ নয়, এই সমাজেরই একটা অংশ – এটা সমাজকে বোঝানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একজন bisexual কিংবা উভকামীর অধিকার বলতে কি বলবেন? এটা কি দ্বিচারিতার মধ্যে পড়ে না? আর এইটা কি ভালোবাসার কোন শ্রেনীতে পড়ে?
@দেবাশীষ দেব, বাইসেক্সুয়াল মাত্রই বহুগামী নয়। আর পার্টনারের সাথে সৎ থাকলে আমি একই সাথে একাধিক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে জড়ানোতে সমস্যা দেখি না। আমাদের সমাজ একগামিতাকে অনেক মহান ব্যাপার বলে প্রচার করলেও সবাইকে তা অনুসরণ করতে হবে এমন কোন কথা নেই।
বাইসেক্সুয়ালের অধিকার বলতে আমি বুঝি তার ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ানোর অধিকার – তা যে লিঙ্গের ব্যক্তির সাথেই হোক না কেন।
তন্ময়
বি এন পি আন্দোলনের আর ইস্যু খুঁজে পেল না? অবশ্য ব্যক্তির যৌন জীবন আর ধর্মীয় জীবনকে রাজনীতির সাথে গুলানোর খেলা চলছে সারা বিশ্বেই।
যাহোক, লেখাটি ভাল লেগেছে এবং রংধনু রঙের পতাকা নিয়ে এগিয়ে যান।
জেনে ভালো লাগলো, সমকামী-সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে ইতিবাচকভাবে। তারাও সম-অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন রাজপথে। শাবাশ! (Y)
ধন্যবাদ। সমকামীরা সমাজের ছোট একটি অংশ। আমাদের অধিকার রক্ষায় বিষমকামীদেরও পাশে চাই।
তন্ময়
যারা সমকামিতা করেন – ঐ প্র্যাক্টিস করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পর্যায়ে পরে; যদিও আমি সমকামিতা কে যৌন অজাচার হিসেবেই দেখি যেমন দেখি পেডোফিলিয়া, থ্রি সাম কিংবা জু-ফিলিয়াকে। আমার ক্যাপাসিটির মধ্য আমি এর বিরোধিতা করেই যাবো। তবে তার মানে এই নয় যে জোর করে – আমি যুক্তিতে বিশ্বাস করি এর মাধ্যমেই আমি এর বিরোধিতা করি। সমকামীদের সাথে প্রফেশনাল কাজ কিংবা সামাজিক যোগাযোগেও আমার সমস্যা নেই বাট এটা আমার কাছে এক রকম প্যারাফিলিয়া। আর, আমি মোটেও চাইনা আমাদের দেশে সমকামিতা কোন আইনি ভিত্তি পাক যেমন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক অঙ্গ রাস্ট্রে পেয়েছে।
খেয়াল করে – যুক্তরাষ্ট্রে কেউ একের অধিক বিয়ে করলে জেলে যেতে হবে এমনকি তা বিবাহিত তিন জন পার্টির কন্সেন্টে হলেও – সো যারা এক্ষেত্রে আমাদের দেশে মানবাধিকারের সবক শোনায় তাদের কথা কান দিয়ে ঢোকানোরও প্রয়োজন মনে করিনা। সামাজিক বিষয়ক আইনে – কালচারও একটা ফ্যাক্টর।
@সংবাদিকা, “যারা সমকামিতা করেন” উক্তিটাই তো অযৌক্তিক। একজন ব্যাক্তির পেডোফিলিক মনোভাব একটি আক্রান্ত শিশুর জন্য বিপজ্জনক আর অন্য দিকে থ্রিসাম আর জু-ফিলিয়া ভিন্ন ধরনের যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কৃত কর্ম যেটা না করলে আগ্রহী ব্যাক্তিটি মানসিক আর শারীরিক ভাবে ভেঙে পরবে না। দুইজন সমকামী ব্যাক্তির মধ্যে সম্পর্ক হয় (প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবৃত্তির অনুসরণ করেই, শুধুমাত্র যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যে নয়) দুইজনেরই সম্মতির মাধ্যমে যেখানে নিঃসন্দেহেই একপক্ষ মানসিক ও শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হয় না। সেই সম্পর্ক কখনো শুধু মানসিক বা শুধু শারীরিক বা উভয়ের সংমিশ্রণও হতে পারে। কিন্তু অপরদিকে নিজের সেক্সুয়ালিটির বিপরীতে গিয়ে (সমাজের অগ্রহনযোগ্যতার কারনে) “সামাজিক কালচার”-এর অনুসরণ করলে ঐ ব্যাক্তিটির উল্ল্যেখিত দুই প্রকারেরই ক্ষয় শুরু হয়। সবগুলোকে যদি একই কাতারে ফেলে ঘৃণা করেন তাহলে এটা ধরে নেয়া বৈধই হবে যে সবগুলোকে আপনি একই “ধরন”-এর প্রবিত্তির মধ্যে বিবেচনা করেন। যেখানে কিনা একটা মানুষের সেক্সুয়ালিটি আর অন্যগুলো ভিন্যধর্মী যৌন কার্যকলাপ যেটাকে ইংলিশে খুব সুন্দর ভাবে বলা যায় “এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাক্টিভিটি”। দুইটার যুক্তি ভিন্ন। তাহলে একটার যুক্তি দিয়ে আরেকটা বিবেচনা করা যুক্তিবাদীতার পরিচায়ক কিভাবে হল? আর সমাজে প্রচলিত সব নীতিই ঠিক এটা কোন কথা না (যেমন এটাও ঠিক না যে প্রচলিত সবিই ভুল)। তা হলে “সমাজ সংস্কারক” শ্রেণীর কোন শব্দের অস্তিত্বও থাকতো না।
আর “আজ সমকামীদের বৈধতা দিলে কাল মানুষ গরু-ছাগল বিয়ে করা শুরু করবে”, এই ধরনের চিন্তা করা মনে হয় না কারোর জন্যই ঠিক হবে। কারন সেটা সুস্থ বুদ্ধির পরিচয়ের বিপক্ষে যাবে। যদি যুক্তিবাদী মনে করে থাকেন নিজেকে তাহলে সমকামীতার “পক্ষের” যুক্তিগুলোও ঘেটে দেখা উচিৎ হবে যেহেতু মনে হচ্ছে এর বিপক্ষের যুক্তিগুলো সম্পর্কে আপনি সম্পূর্ণ অবগত।
@আহসান জামান,
এই উক্তিটা অযৌক্তিক কেন বুঝিয়ে বলবেন।ধন্যবাদ।
@অর্ফিউস,
কারণ সমকামিতা “করা” যায় না। “সমকামিতা করা” বলতে বুঝায় এটি কোন প্রবৃত্তি নয়, বরং আর দশটা দৈনন্দিন কার্যকলাপের মত। আপনি কি কখনো বলেন “আমি বিষমকামিতা করি”? সমকামী যেমন “হওয়া” যায় না, তেমনি সমকামিতা “করা” যায় না।
লেখার এই অংশটা কি নজর এড়িয়ে গেছে?
@তন্ময়,
বিভিন্ন উদাহরন সহকারে খুব সহজেই আপনার এই দুর্বল যুক্তি খন্ডানো যায় কিন্তু সেটা আর করলাম না কারন
আপনি বলেছেন যে,
সেক্ষেত্রে ধরেই নিচ্ছি যে সেই সব ধ্যান ধারনা নিয়ে বসে না থাকলেও, এমনকি সহজ ছোট কোন প্রশ্ন করাটাই আপনার লেখায় ব্লাস্ফেমী।প্রকৃত সমকামীরা সহনশীল আর সাহসী হবে,প্রশ্ন করলে রেগে যাবে না না বিরক্ত হবে না, ধন্যবাদ।
@আহসান জামান,
‘সুস্থ বুদ্ধি’র স্টান্ডার্ডটা কে নির্ধারন করবে? অতীতে যেগুলোকে সুস্থ বুদ্ধি বলা হত না, বর্তমানে তার অনেক কিছুকেই সুস্থ আর স্বাভাবিক বলা হচ্ছে। এখন অনেক কিছুকেই ‘সুস্থ বুদ্ধি’র পরিচায়ক না বলা হলেও ভবিষ্যতে তো হতেও পারে!
@আহসান জামান,
আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছি 🙂
পেডোফিলিয়া আর থ্রিসাম যদি আপনার কাছে এক হয় তাহলে আপনার জ্ঞানের পরিধি আরো বাড়ানো আবশ্যক। অযৌক্তিক ঘৃণার চাষাবাদ করা যতটা সহজ, অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করা ততটাই কঠিন।
আপনি বলেছেন, “সমকামীদের সাথে প্রফেশনাল কাজ কিংবা সামাজিক যোগাযোগেও আমার সমস্যা নেই বাট এটা আমার কাছে এক রকম প্যারাফিলিয়া।” ঠিক তার আগের লাইনেই আবার বলেছেন, “তবে তার মানে এই নয় যে জোর করে – আমি যুক্তিতে বিশ্বাস করি এর মাধ্যমেই আমি এর বিরোধিতা করি।” কোন যুক্তি না দেখিয়ে নিজের মতকে চাপিয়ে দেওয়া, আবার দাবি করা যে “আমি যুক্তির মাধ্যমেই এর বিরোধিতা করি”! হাসির খোরাক জোটালেন বটে।
যুক্তরাষ্ট্রে একের অধিক বিয়ে করলে জেলে যেতে হয়, আর আমাদের দেশে সমলিঙ্গের অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলেই জেলে যাবার ঝুঁকি থাকে। কোনটা বেশি খারাপ? আর এলজিবিটি রাইটস বা হিউম্যান রাইটসের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোন আদর্শ নয়।
কালচারালি সমকামিতার বিরোধিতা এক জিনিস আর সমকামীদের প্রতিনিয়ত জেলে পোরার হুমকির মধ্যে রাখা অন্য জিনিস।
তন্ময়
@তন্ময়,
আপনার এই কথাটি আমার খুব ভাল লেগেছে। অন্তত আপনি যে পশ্চিমকে অনেকের মতই পুজা করেন না জেনে ভাল লাগলো। আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন।
@তন্ময়,
আমি শুধু আমার ব্যাক্তিগত মত প্রকাশ করেছি 🙂
@তন্ময়,
(Y)
আমি ভেবেছিলাম অন্ততঃ মুক্তমনা ব্লগ অন্যান্য বাংলা ব্লগগুলো থেকে স্বতন্ত্র থাকবে অনেক দিক থেকেই। কিন্তু এখানেও সমকামিতা কিংবা সমকামীদের অধিকার নিয়ে কোন লেখায় কারো কারো পেডোফেলিয়া, জুফেলিয়া, ধর্ষণ নিয়ে আসা ত্যানা প্যাচানোমূলক মন্তব্য দেখে মনে হয় রাত পোহাতে এখন বহু দেরী, পাঞ্জেরি।