সৌদি আরবের সম্রাট তার দেশে “নাস্তিকদের” সন্ত্রাসবাদি বলে আইনজারি করছেন। সৌদি আরবের আইনে যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, এখন থেকে তাকে সোজা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০ বছর কয়েদ করা যাবে। গত দুদিন আগে চট্টগ্রামে দুটি কিশোরকে ফেসবুকে নাস্তিকতা প্রচারের অভিযোগে পরীক্ষাগার থেকে তুলে পিটিয়ে থানায় ভরা হয়েছে। তারাও বাংলাদেশের ধর্মবিরোধি আইনে এখন জেলে।

ইসলামিক দেশগুলি নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। নাস্তিকরাও নিশ্চয় বসে থাকবে না। পাল্টা দাবি হিসাবে, আমরা কি তাহলে আমেরিকাযতে সব মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদি বানানোর আইন আনতে আন্দোলন করব?

অবশ্যই না। কারন কোন মানবাধিকার ভঙ্গের আইনের বিরুদ্ধে আরেকটা মানবাধিকার ভঙ্গ করে, মানবাধিকারের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করা হয়-মানবাধিকারের উন্নতি হয় না। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের লেখা এবং আন্দোলন এতে আরো তীব্র হবে।

আমি নিজে কোনদিন ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলাম না-কারন আমার পরিবার আমাকে ধর্মাচারনে বাধ্য করে নি। রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা করে, ধর্মের ব্যপারে আমার জ্ঞানের উন্নতি হয়েছে, ধর্মকে আমি পজিটিভ দিক দিয়ে দেখা শুরু করি-কিন্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস ফেরে নি। ঈশ্বরে বিশ্বাসের জন্ম নেয় পরিবার থেকে।কোন পরিবারে যদি আল্লার বদলে স্পাইডারম্যান বা এলিয়েনদের পুজো পার্থনা চালু থাকে, সেই পরিবারের ছেলে মেয়েরা তাতেই বিশ্বাস করবে। ছোটবেলাতে ভয় দেখিয়ে মাথায় ঢোকালে তবে লোকে ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়। আমার ছেলে পাঁচ বছর বয়স থেকে নিজেই বুঝতে শিখেছে ঈশ্বর মেক বিলিফ স্টোরি। এর জন্যে বেশী বুদ্ধি লাগে না।

ধর্ম যখন আইন এবং সমাজকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে-যেটা ইসলামের সব থেকে খারাপ দিক-তখন সেই ধর্ম পচতে বাধ্য। কারন আইন, রাজনীতি ও সমাজকে নিয়ন্ত্রন করে কিছু স্বার্থান্বেশী গোষ্টি-যারা এই নিয়ন্ত্রন থেকে নিজেদের ক্ষমতা ও অর্থ অর্জন করতে চায়। এক্ষেত্রেও সৌদিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাজা এইসব আইন তৈরী করছেন, নিজের গদি টেকাতে। ফলে এদের হাতে যখন ধর্ম চলে- সেই ধর্ম পচতে বাধ্য। হিন্দু ধর্ম, যা প্রাচীন ভারতের নানান দর্শন দিয়ে তৈরী-সেটাও রাজা এবং সমাজচালিকাদের হাতে ঐতিহাসিক ভাবে পচেছে।

অন্যান্য সব ধর্মের মতন ইসলামের শিক্ষাতেও ভাল খারাপ দিক আছে। কেও ইসলাম পালন করলে খারাপ হবে, সেটা ঠিক না। সমস্যা হচ্ছে তাদের নিয়ে যারা ইসলামিক আইন চাইছে-ইসলামিক সমাজ চাইছে। এই চাওয়াটা খুব সাংঘাতিক জিনিস। কারন ইসলাম এতটাই মনোলিথিক, তাতে বহুত্ববাদ নেই। এটা কমিনিউজমের মতন একটা টোটাল্টারিয়ান ককটেল। ফলে যেখানেই ইসলাম, সেখানেই গন্ডোগল। যদি অমুসলিম থেকে থাকে, তাহলে এরা তাদের ওপর অত্যাচার করবে-আর যদি না থেকে থাকে, নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে। এবসলিউটিজমের এটাই সমস্যা-সঠিক ইসলাম বা সঠিক কমিনিউজম বলে কি হয় সেটা কোনদিনই বার করতে পারবে না। সম্ভব না। ভেজাল বা মিথের সঠিক ভার্সন বলে কিছু হতে পারে না। সব ধর্মের জন্যই তা সত্য। কিন্ত যখন একটা গোষ্ঠি সঠিক ইসলাম বা সঠিক কমিনিউজম বলে একটা ইলুসিভ হ্যালুসিনেশনে ভোগে, সেখান থেকে কোটি কোটি লোকের মানবাধিকারহরন আর দুর্দশা ছারা কিছু পাওয়ার নেই।

অনেকেই হয়ত এই ফোরামে লিখবে, নরেন্দ্র মোদি আসলে ভারতের নাস্তিকদের কি হবে? আমি এটাই জানাতে চাই, হিন্দু ধর্ম মনোলিথিক না। হিন্দু ধর্মে ছয় ধরনের নাস্তিক আছে। হিন্দু ধর্মের সব থেকে এলিট ব্রাঞ্ছ , যেটাকে সৎনামী বলে-যা আদি শঙ্করাচার্য্যের তৈরী এবং রামকৃষ্ণ মিশনও যে মতের অধিকারি-
সেই শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। তারা নাস্তিক।
সুতরাং নাস্তিকতার প্রশ্নে হিন্দু ধর্মের সাথে ইসলামের তুলনা হয় না-এবং করাটাও মূর্খামি।

তবে বস্তুবাদি দৃষ্টিতে এসব প্রশ্ন ফালতু। সমস্যাটা সেই রাষ্ট্রর ক্ষমতার স্ট্রাকচারে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে।
সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে স্বৈরাচারি শাসকদের গণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধটাই চোখে পরে। সেটাই বোধ হয় একমাত্র বাস্তব। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেও বন্দুক দিয়ে, কেও টাকা দিয়ে, কেও ইসলাম দিয়ে করে। ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে, তারা হিন্দু ধর্ম দিয়েই গণতন্ত্রকে দাবানোর চেষ্টা করবে। যদিও বহুত্ববাদি হিন্দু ধর্মদিয়ে সে কাজ করা কঠিন।