দুই

বঙ্গোপসাগরের ঊর্মিল তটরেখা পরিবেষ্ঠিত সবুজ-শ্যামল বেলাভূমি-পতেঙ্গা। কর্ণফুলী নদী যেখানে সাগর বক্ষে মিশেছে, সেখানে এ বেলাভূমির উৎপত্তি। কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে পতেঙ্গা আরবী ফতেহ-গাঁ শব্দের বিবর্তিত রূপ। ফতেহ অর্থ বিজয়, গাঁ হল গ্রাম; ফতেহ-গাঁ হল-বিজিত গ্রাম। ইতিহাসবিদদের মতে, খৃষ্টীয় অষ্টম শতক থেকে দশম শতকের মধ্যবর্তী কালে এ বেলাভূমিতে তৎকালীন আরাকানী শাসকের সাথে আরব বণিকদের যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে বিজয়ী হন আরব বণিকেরা। এ বিজয়ের পথ ধরেই আরাকান শাসকদের কাছ থেকে ক্রমে তারা সারা চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসাবে তারা এ বেলাভূমির নাম রেখেছিল ফতেহ-গাঁ। পরবর্তীকালে লোকমুখে বিবর্তিত হয়ে তার নাম হয়ে গেল পতেঙ্গা। এ জনপদের পশ্চিমে, উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত দিগ্চিহ্নহীন উত্তাল বঙ্গোপসাগর; পূর্বে, উত্তর-দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে কিঞ্চিৎ বাঁক নিয়ে সরীসৃপের মত এঁকে বেঁকে বয়ে চলা কর্ণফুলী, যার তীর ঘেঁষে শহরের সংযোগ সড়ক এবং সড়ক ঘেঁষে কিছু শিল্প কারখানা-বার্মা অয়েল কোম্পানী (BOC), এসো, (ESSO) দাউদ পেট্রোলিয়াম, ইন্টারন্যাশনাল ট্যাংক টার্মিনাল, ইন্টারন্যাশনাল অয়েল মিলস, সাইলো (সরকারী খাদ্য গুদাম), চিটাগাং স্টিল মিলস্ লিঃ, চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার লিঃ। জনপদটির অভ্যন্তরে একাধিক পাড়ার মধ্যখানে বিশাল বিশাল ফসলী মাঠ। মাঠের বুক ছিঁড়ে মেঠো পথ। দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে পতেঙ্গা বিমান বন্দর, তৎসংলগ্ন বৃটিশরাজ পরিত্যক্ত সামরিক বিমান ঘাঁটি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বৃটিশ সরকার কর্তৃক যুদ্ধের প্রয়োজনে আবাদী জমির মধ্যদিয়ে মাইজপাড়া ও চৌধুরীপাড়াকে বিভক্ত করে বিমান বন্দরের পশ্চিম-উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে পূর্ব কাটগড় সড়ক পর্যন্ত নির্মিত চওড়া একটি পাকা সড়ক-এম,ই,এস সড়ক নামে যা খ্যাত। চৌধুরী পাড়ার রাজারপুকুরের উত্তর পাশ দিয়ে নাজির পাড়ার সাথে চাটিহালদা নামক সংযোগ সড়ক, সে সড়ক ঘেষে একটি নাপিত পাড়া। পূর্বকাটগড় কৈল্লার হাট(কমল মহাজনের নামের অপভ্রংশ) থেকে লীগাবিস (লীগ অফিসের অপভ্রংশ) এবং লীগাবিস থেকে সোজা দক্ষিণে নাজির পাড়া ও পশ্চিমে সমুদ্রতীর পর্যন্ত কাঁচা সড়ক। সড়কের পশ্চিমে প্রান্তে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে জেলে পাড়া। জনপদের অধিকাংশ বাড়িঘর ছনের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ছোট্ট পর্ণকূটির, মাঝে মধ্যে হাতেগোনা দু’একটি আধাঁ-পাকা দালান। এদিক সেদিক কিছু মাটির ঘরও চোখে পড়ে। অধিবাসী অধিকাংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক কৃষক, ক্ষেতমজুর, কিছু কারখানার শ্রমিক। জাহাজে চাকুরীরত নাবিকের সংখ্যা অপরাপর পেশাজীবির চেয়ে বেশী। একটি শীল পাড়া, দু’টি হিন্দু পাড়া। পশ্চিমে সমুদ্র পাড় ঘেসে একটি জেলে পাড়া। অধিকাংশ মানুষ নিন্ম-মধ্যবিত্ত হলেও বনেদি দু’একটি মধ্যবিত্ত পরিবারও আছে। এ জনপদের সহজ সরল মানুষগুলো আত্মীয়তার মায়া-মমতাময় বন্ধনে জড়াজড়ি করে আছে। পতেঙ্গা বিমান বন্দর ছাড়াও আরো একটি কারণে জনপদটির পরিচয় আছে, তাহল-মিষ্টি তরমুজ। এ জনপদে ফি বছর প্রচুর তরমুজ উৎপাদিত হয়, মিষ্টি স্বাদে এ তরমুজ গুলো অনন্যÑসারা দেশে যার সুখ্যাতি। তাই অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের তরমুজ অন্য জায়গার হওয়া সত্ত্বেও তাকে পতেঙ্গার তরমুজ বলে বিক্রি করার চেষ্টা করে। গোটা চারেক প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন চারেক মক্তব এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে ষাটের দশকে পরিত্যাক্ত একটি দালানে চালু হওয়া পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি মাত্র বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও বিমান বন্দর এলাকায় একটি জুনিয়র হাই স্কুল। শিক্ষিতের হার খুব কম। হাতেগোনা দূ’এক জন উচ্চ শিক্ষিত। কেউ একজন এন্ট্রাস পাশ করলে গ্রামের মানুষ দল বেঁধে তাকে দেখতে যায়-শুভেচ্ছা জানায়-নিজ গ্রামের একটি ছেলে এন্ট্রাস পাশ দিয়েছে ভেবে ভিতরে ভিতরে গর্ব অনুভব করে। জনপদটি শহর-সংলগ্ন হলেও এখনো পুরো গ্রাম। মুড়ির টিনের মত পতেংগা সার্ভিসের বাসে করে সল্টগোলা, সেখান থেকে শহর সার্ভিসের বাসে ওঠে শহরে যেতে হয়। কর্ণফুলীর তীর ঘেষেই শহরের সংযোগ সড়ক। নদী থেকে একটি খাল প্রবেশ করেছে জনপদে। সে গুপ্তখাল নামক খালের পাড়ে একটি মাত্র হাট, সপ্তাহে দু’দিন-রবিবার ও বুধবার-হাট মিলে। কমল মহাজন নামক ব্যক্তি ঐ হাটের মালিক ছিল বলে লোকমুখে তা কৈল্লার হাট নামে পরিচিতি পেয়েছে। পরে মালিকানা পরিবর্তনের পর-ইসলামিয়ার হাট নামকরণের প্রাণান্তকর চেষ্টা সত্ত্বেও আদি কৈল্লার হাট নাম আর ঘুঁচেনি। সমুদ্র পতেঙ্গাবাসীর জন্য কখনো কখনো চরম অভিশাপ হয়ে ওঠে। কলেরা,বসন্ত সহ নানা মহামারীর উপর লেগে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-ঘুর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস। ষাট ইংরেজীর এ রকম এক জলোচ্ছ্বাসের কথা এখনো আব্ছা আব্ছা মনে পড়ে আলমের। মধ্য রাতে তুফানের সাথে যখন জলোচ্ছাসে হয় তখন মা-বাবা-ভাই-বোনসহ বাড়ির লোকদের সাথে আলমও ঘরের দমদমায় (কাঁচা ঘরের ছালের নীচে বেড়া দ্বারা নির্মিত ছাদ) উঠে আশ্রয় নিয়েছিল। ঘরের ভিটায় ভাসমান ভাতের হাড়ি পাতিলের দৃশ্য, পরদিন সকালে বাড়ির ওঠানে বড় বড় মাছ যে ধরা পড়েছিল সে দৃশ্যগুলো এখনো আলমের চোখে ভাসে। সে জলোচ্ছাসে পুরা গ্রাম বিরানভূমিতে পরিণত হয়। প্রচুর মানুষ, গরু-ছাগল এক সাথে মারা যায়। মানুষ আর গরু-ছাগল এক কাতারে কবর দেওয়া হয়। অনেক গরু-ছাগলের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। খাদ্য ও পানির তীব্র অভাবে মানুষের মধ্যে হাহাকার। হররোজ সকাল সন্ধ্যায় বুভুক্ষু মানুষ, সানকি হাতে রাস্তায় লাইন দিয়ে বসে থাকত, কখন খাবারের ও পানির গাড়ী আসবে, এ আশায়। যেদিন গাড়ী আসত না, ছোট বাচ্চারা খালি থালা-বাসন-মগ হাতে ফিরে আসত। সেদিন হয়ত তাদের পেটে কোন দানাপানি পড়ত না। সরকারী ত্রান তৎপরতা ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল। একদিনের কথা আলমের খুব মনে পড়ে। চমৎকার রোদ। কোন বাতাস নেই। রাস্তা থেকে কে একজন চিৎকার করে বলছে- পানি আসছেরে, পানি আসছে। যে যেখানে ছিল আতঙ্কগ্রস্থ মানুষ সেকি ভোঁ দৌড়-উঁচু কোন জায়গায় আশ্রয়ের জন্য। কিছুক্ষণ পর জানা গেল, এ পানি সমুদ্রের জলোচ্ছাসের পানি নয়, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ীতে করে খাবার পানি। সুপেয় পানি ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব-অত:পর শুরু হল মহামারি-ডাইরিয়া, কলেরা ইত্যাদি। মানুষ মরতে লাগল শ’য়ে শ’য়ে। জলোচ্ছাস ছাড়াও ফি বছর গ্রামে কলেরা বসন্ত দেখা দেয় মহামারি আকারে। গ্রামের মানুষ এ মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দল বেঁধে নেমে পড়ে পাড়া ‘বন্ধ’ করতে। বাঁশের কঞ্চিতে বাঁধা কিছু সাদা কাপড়ের কোণাকৃতির পতাকা, যাতে আবার আরবীতে বিভিন্ন দোয়া লেখা, সাথে একটি কাল রঙের পাঁঠা ছাগল, ঝুঁড়ি ভর্তি মাসকলাই নিয়ে দল বেঁধে গ্রামের যুবকেরা যার যার পাড়া বন্ধ করতে লেগে যায়। বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পড়ার সাথে সাথে ছাগলটাকে পিঠানো হয়, যাতে এটা ম্যা ম্যা করে ডাক দেয়, অত:পর কিছু দূর গিয়ে হুজুর একটি আজান দেওয়ার পর একটি পতাকা মাটিতে পূতাঁ হয়। এভাবে সমগ্র পাড়া সাদা পতাকায় ঘিরে ফেলা হয় যাতে ‘ওলা বিবি’ গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে। সহজ সরল গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, যত নষ্টের মূল এ অদৃশ্য ‘ওলাবিবি’। সবশেষে মাঠের মাঝখানে নিয়ে সোল্লাসে ছাগলটাকে জবাই করে সানন্দে উদরপূর্তি করে গ্রাম্য যুবকেরা। এভাবে গ্রাম বন্ধ করার পরও যখন কারো কারো কলেরা, ডাইরিয়া হয়,তখন ধারণা করা হয়, অন্যগ্রামের কোন মহিলার বোরকার অন্তরালে ‘ওলা বিবি’ গ্রামে ঢুকে পড়েছে। তাই পাড়া বন্ধ করার পর এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতে কোন মহিলা বোরকা পড়ে আসতে না পারে, সেজন্য গ্রামের যুবকেরা রীতিমত গ্রাম পাহারা দেয়। তাদের অতন্দ্র পাহারা বেদ করে ‘ওলাবিবি’ আসতে পারলেও কোন মহিলা কিন্তু কখনো বোরকা পড়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আসতে পারত না-অন্তত যত দিন ‘ওলা বিবির’ উৎপাত আছে গ্রামে। তবুও ‘ওলাবিবি’ আসে গ্রামে; গ্রামকে গ্রাম, পরিবারকে পরিবার, উজাড় করে দিয়ে যায়। গ্রামের মানুষকে ভীতবিহ্বল করে কেবল গোরস্তানে কাঁচা কবরের সংখ্যাই বাড়ে। তাতেও সে অদৃশ্য নিষ্ঠুর ‘ওলাবিবির’ প্রাণ একটুও সদয় হয় না। এছাড়া প্রতি বছর বসন্ত রোগে প্রচুর লোক মারা যায়। আলমের এক দূর সম্পর্কীয় খালা বিয়ের দু’দিনের মধ্যে গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে এক সমপ্তাহের মধ্যে মারা যায়, সে ঘটনা আলমকে খুব ব্যথিত করে। এভাবে সুখ-দু:খ হাসি কান্না নিয়ে দিনাতিপাত করছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও দুর্যোগের অপরূপ লীলাভূমি পতেঙ্গা নামক জনপদের মানুষগুলো।
সে জনপদের একটি অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আলমের । পিতা একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কেরানী। তখন পর্যন্ত দু’ মেয়ে দু ছেলের জনক। পিতা মাতার দ্বিতীয় সন্তান আলম। জন্ম ১৯৫৫ ইং সাল। একটি মোটা পুরানো খাতায় বাবার সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা-“আমার প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম ১৯৫৫ ইং সাল” এভাবে সালটি লেখা থাকলেও তারিখটা কেন লেখা হয় নি, সেটা আলমের বোধগম্য হয় না। অবশ্য গ্রামের মানুষ তখন, ছেলে-মেয়ের জন্ম তারিখ কিংবা সাল নিয়ে তেমন উৎসাহী ছিল না। সন্তান হিসাবে দ্বিতীয় হলেও মা বাবার বড় ছেলে আলম। তার বড় বোন খুরশেদা, তার চেয়ে ২ বৎসরের বড় হলেও তারা দু’জন এক সাথে একই ক্লাসে পড়ত । তারা দুই ভাইবোনের লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার মায়ের হাতে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো কলম, কালির বড়ি পানিতে গুলে বানানো কালি ও আগুনে স্যাঁকা কলাপাতায় মায়ের হাতে অ, আ, ক,খ, লিখতে শিখে আলম ও তার বড় বোন। তখন অবশ্য কাগজ-কলম-কালি এত দুর্লভ্য ছিল না। কিন্তু অনেকের মত আলমের মা-বাবারও ধারণা ছিল, প্রথমে লেখা শিক্ষার শুরুটা এভাবে করলে হাতের লেখা ভাল হয়।
আলমকে ঘিরে তার বাবা-মার অনেক স্বপ্ন। গ্রাম্য মধ্যবিত্তের স্বপ্ন। লেখা পড়া করাবে, ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার বানাবে ছেলেকে। আলমকে শুনিয়ে শুনিয়ে সে প্রায় তা বলত। আলম ও স্বপ্ন দেখে। বড় হওয়ার স্বপ্ন। আলমের বড় বোনকেও লেখা-পড়া করানোর প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল তাদের বাবা-মার। বাড়ি থেকে অনেক দূরে পোড়াপাড়া ইয়াকুবিয়া প্রাইমারী স্কুলে পড়তে যায় দু’ ভাই-বোন। তারা একই ক্লাসে পড়ে। তার বড় বোন খুরশেদা লেখা পড়ায় তার চেয়ে মেধাবী। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত আলম লেখা পড়ায় তেমন ভাল ছিল না। একদিন তৃতীয় শ্রেণীতে তার ইংরেজি হোম-ওয়ার্ক নিয়ে ক্লাসশুদ্ধ সকল ছাত্র-ছাত্রীর হাসা-হাসি তার আত্মসম্মানে এমন ঘা দিয়েছিল যে, সেদিন সারা রাত জেগে আদর্শ লিপি শিক্ষা দেখে সে হাতের লেখা অনুশীলন করে। পরদিন তার ইংরেজী হোমওয়ার্ক দেখে শিক্ষক সহ কেউ তা বিশ্বাস করছিল না বিধায় আলমকে ব্ল্যাক বোর্ডে গিয়ে লিখে প্রমাণ করতে হয়েছে, এ লেখা তার হাতের। এ ঘটনার পর সে অবশ্য লেখা পড়ায় খুব মনোযোগী হয়ে ওঠে এবং সে প্রথম সাময়িকী, দ্বিতীয় সাময়িকী ও বার্ষিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছে।
* আমার কৈফিয়ত-
(বহুদিন পূর্বে স্বপ্নভঙ্গের ইতিকথা নামে আমার একটি ধারাবাহিক লেখা-যার ব্যাপ্তি সেই ১৯৬৫ ইং সালের পাক-ভারত যুদ্ধকালীন সময় থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালীন সময় পর্যন্ত বিস্তৃত-লিখেছিলাম। সাধ থাকা সত্বেও সাধ্যের অভাবে অদ্যাবধি তা ছাপার মুখ দেখেনি। ইদানীং মুক্তমনায় লেখার সময়ও পাই না। হঠাৎ মনে হল মুক্তমনায় ধারাবাহিকভাবে লেখাটি দিই না। পাঠক বিরক্ত না হলে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাব। তবে এ লেখাটি একজন কিশোর কিভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মী থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধায় রুপান্তরিত হল এবং একটি নতুন স্বদেশের স্বপ্ন দেখেছিল এবং স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছিল, অনেকটা তার আত্মজৈবনিক স্মৃতি কথা-অবশ্যই কোন ইতিহাস নয়। মোটা দাগে এখানে সময়-কালের উল্লেখ থাকলেও ইতিহাসের সন-তারিখ খোঁজা সমীচিন হবে না।)