সেদিন জাফর ইকবালের একটা কলাম (খুব সম্ভবত সমকালে) পড়লাম যেখানে তিনি লিখেছেন সেই ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মা যখন একটা বিপদগ্রস্ত হিন্দু পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করছিলেন তখন তাদের প্রতিবেশী মহিলা বলেছিলেন, সাহায্য করতে হয় কোন মুসলমানকে করুন, হিন্দুদের করলে কোন সোয়াব পাবেন না…। আমি যতদূর জানি কোন অমুসলমানের জন্য দোয়াও করা যাবে না এইরকম মত আছে ইসলামে। ছোটবেলায় দেখতাম বিটিভিতে দিনের শুরুতেই কোরআন পাঠ হতো, তারপর বাংলা তরজমা ও মোনাজাত। তারপর উদার ইসলামী রাষ্ট্রের” প্রতীক হিসেবে গীতাপাঠ নয়ত ত্রিপিটক পাঠ দেখানো হতো। সেই ছোটবেলায় একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম, কোরআন পাঠের পর যে বাংলা তরজমা হতো তার শেষে জোব্বা পরা মৌলবী শুধু মুসলমানদের জন্য হাত তুলে দোয়া করছেন (কেউ লিঙ্ক চাইলে দেখাতে পারবো না), পক্ষান্তরে গীতা বা ত্রিপিটক পাঠের শেষে বলা হচ্ছে, জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক’। জগতের সকল প্রাণীর মধ্যে মুসলমান-খ্রিস্টান-ইহুদীও পড়ছে। হুজুর কিন্তু খুব সেয়ানা, পাছে হিন্দু মূর্তি পূজারী, ইহুদী, খ্রিস্টানের কল্যাণ হয়ে যায় তাই শুধু মুসলমানের জানমালের জন্য ফরিয়াদ জানাচ্ছেন!
যাই হোক, হিন্দুরা যে খুব অসাম্প্রদায়িক এ কথা এখানে বলা হচ্ছে সেরকম মনে করার কোন কারণ নেই। ধার্মীকরা পরস্পরকে কি পরিমাণ ঘৃণা আর বিদ্বেষের চোখে দেখে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা আমার আছে। অনেক বছর আগে এক হিন্দু বন্ধুর সঙ্গে তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছি। সন্ধ্যেবেলা সে বাড়িতে কীর্তন হয়। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ… হরে রাম হরে রাম…। অনুষ্ঠান শেষে প্রসাদ আসে, বাতাসা, ফলমূল, সন্দেস… খেতে দারুণ লাগে। একটা হিন্দু পরিবারে থাকছি খাচ্ছি আমার কোন সমস্যা নেই। তারাও আমি মুসলমান বলে কোন সমস্যা দেখছি না। কিন্তু এক সন্ধ্যাবেলা প্রচন্ড এক ধাক্কা খেলাম। সেদিন সারা রাত পূজা দেখতে বের হবো গ্রাম ঘুরে ঘুরে, যে বাড়িতে উঠেছি সেই বৌদি জোর করে ভাত খেয়ে যেতে বলছিলেন। আমার একদম ইচ্ছা ছিল না। তার জোরাজুরিতে বললাম আচ্ছা দেন এখানেই চট করে খেয়ে নেই…বলেই ভাতের থালাটা বিছানায় রেখে খেতে যাবো, ওমা, বৌদিসহ উপস্থিত আরো দুই-একজন মহিলার চোখগুলো সব বিস্ময়ে গোল হয়ে গেলো! একজন তো জিভে কামড় দিয়ে চেয়ে রইল। আমি আমার জীবনে এতটা অবাক কোনদিন হইনি। ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না কি। চেয়ে রইছি বিব্রতভাবে। কিছু একটা ভয়াবহ অন্যায় করে ফেলেছি বুঝছি কিন্তু কি সেটা বুঝতে পারছি না। শেষে বৌদি বললেন, তুমি শেখের পো?
তখনো বুঝলাম না কি বলছে এই মহিলা। আমার মুখ দেখে এবার বললেন, তুমি মুসলিম?
বললাম, হ্যাঁ!
বৌদির মুখ পাংশু হয়ে গেলো। বললেন, ও!
পুরো ঘর জুড়ে তখন নিরবতা। আমার বন্ধুটি কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে আমার দিকে তাকাতে পারছে না। আমার মেজাজ সে জানে। ইডিয়েটটা আমার পরিচয় গোপন করেছে। সম্ভবত আমার তথাকথিত “মুসলিম” পরিচয় দিলে আমি এখানে গৃহিত হতাম না। পরে জেনেছি বিছানায় বসে ভাত খেতে চেয়েছি জেনে তাদের মনে প্রথম সন্দেহ ঢুকে আমি বিধর্মী। গ্রামদেশে খুব গোঁড়া হিন্দু পরিবারে ভাত-মাছ নিয়ে বিছানায় বসে খাওয়া নাকি এখনো কল্পনা করা যায় না। যাই হোক, আমি নিশ্চিত এই অভিজ্ঞতা আমার জায়গায় অন্য কারুর হলে সে প্রচন্ডভাবে হিন্দু বিদ্বেষী হয়ে উঠতো। কিন্তু আমি তখনই পুরোপুরি নাস্তিক, কোন রকম ধর্মীয় ভাবাবেগ নেই। আমি এটাকে দেখেছি আমাদের হিন্দু-মুসলিম সামগ্রিক চিত্র হিসেবে। এটা কোন বিছিন্ন ঘটনা ছিল না। আমরা আসলে কোনদিনই অসাম্প্রদায়িক ছিলাম না। আমরা একটা প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক জাতি। গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষই ঘোর সাম্প্রদায়িক। এদের কাছে পোষা ককুর-বিড়ালের মর্যাদা আছে কিন্তু ভিন্ন সম্প্রদায়ের কোন মর্যদা নেই। আমি এখনো শুনি বহু শিক্ষিত সজ্জন মানুষ এভাবে বলে, লোকটা হিন্দু হলেও খুব ভাল! (দয়া করে কেউ এর স্বপক্ষে কোন লিঙ্ক দেখতে চাইবেন না আশা করি )।
আমি যে অফিসে কাজ করি সেখানে গত রমজান মাসে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। হিন্দু স্টাফরা খাবার এনে ক্যান্টিনে বসে খাবে সেটাও কর্তৃপক্ষর সহ্য হয়নি। নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে ক্যান্টিন বন্ধ রাখা হলো। হিন্দু কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ অফিসের বাইরে গিয়ে যেন লাঞ্চ সারে ইত্যাদি, এইরকমই ছিল তাদের বক্তব্য। এখনো পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে হাজার অভিযোগ থাকার পরও এসব আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়নি। রাষ্ট্র পুরোপুরি ধর্মান্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু তাতে আমাদের ধর্মান্ধ হতে বাঁধা নেই। এরকম হাজার হাজার বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, মালিকের ইচ্ছা, উৎসাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশে এসব ঘটে চলেছে রোজ। আমার মুসলিম কলিগদের দেখলাম এহেন ইসলামী সিদ্ধান্তে তাদের সহমত জানাতে। স্বাভাবিকভাবে আমার হিন্দু কলিগ বেজায় মন খারাপ করলেন। আমি জানি এখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে আর এই অফিসে এরকম কোন হিন্দুবান্ধব সিদ্ধান্ত হলে এই কলিগই সেটাকে স্বানন্দে গ্রহণ করতো সহমত জানিয়ে। কারণ আমার এই হিন্দু কলিগ আর আমার মুসলিম কলিগরা একই ছাঁচে গড়া। কেবল বিশ্বাসের পার্থক্যর কারণে একজন ফেঁসে গেছেন। নইলে এরা একই রকম সাম্প্রদায়িক চরিত্রের মানুষ। আর কেনই বা হবে না বলুন। এই সমাজের তো সবাই। একই শিক্ষা, সমাজ, রাষ্ট্র তাদের। এই পরিবেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছাড়া আর কি-ই বা গ্রহণ করার আছে তাদের?
এসব কথা চিন্তা করেই নিজের মধ্যে একটা প্রচন্ড তাগিদ অনুভব করলাম যে, এ খাঁচা ভাঙ্গতে হবে। কিন্তু “এ খাঁচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে?“ মনে করলাম আমি নিজে কিভাবে ভেঙ্গে ছিলাম? তবুও কাজটা কঠিন মনে হলো। সব মানুষ এক রকম না। সবার চিন্তার ক্লাশ এক রকম থাকে না…।
চিন্তা করলাম লোকজনকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যে দেশের রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে সে দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার কথা বলাটা বোধহয় দম্ভই হলো! কিন্তু যারা শিক্ষিত বলতে সর্টিফিকেট ও স্কুল-কলেজের প্রথা মাফিক শিক্ষায় শিক্ষিত বুঝেন না বা মানেন না তারা আমার সঙ্গে একমত হবেন যে আমার ধারনাই সঠিক। সেই লক্ষ্যে আমি আমার পরিচিত গন্ডিতে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করলাম।
বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, সেই রুশ বিপ্লবের সময়ে বিপ্লবীরা যেমন গোপনে বইপত্র চালাচালি করতো, ইংরেজ আমলে স্বদেশীরা যেমন শরৎচন্দ্রর “পথের দাবী” আদান প্রদান করতো সেরকম করে আমি বইয়ের মলাট ফেলে দিয়ে আগ্রহীদের দিতে লাগলাম। ফলাফল হাতে হাতে পেলাম: “তোমার এই বিশ্বাস নিজের মধ্যেই রেখো, অন্যকে এর মধ্যে টেনো না!”-অগ্রজদের সদুপোদেশ আমার প্রতি। তাদের মতে আমার আদর্শ-বিশ্বাস খুবই ক্ষতিকারক সমাজের জন্য। আমি আমার সমবয়েসী অনেককেই বিদ্রোহী করে তুলেছি। অনেক পরিবারের অশান্তির কারণ আমি! আমি তাই অনেকেরই চক্ষুশূল…।
বছর পাঁচেক আগের কথা এসব। আমাকে নিয়ে এসবই ছিল পরিচিত মহলের মূল্যায়ন। আমার অপরাধ কি ছিল? আমি আমার পরিচিত মহলে বইয়ের ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। জানার অদম্য কৌতূহ সৃষ্টি করে ছিলাম। অন্ধ বিশ্বাসের বদলে যুক্তিকে একমাত্র পাথেয় করতে শিখিয়েছিলাম। কুসংস্কারের বদলে বিজ্ঞানমনস্ক হতে শিখিয়ে ছিলাম। পাবলিক লাইব্রেরীর সদস্য করে দিয়েছি ধরে ধরে। খুবই সাধারণ এইসব মানুষ হঠাৎ বদলে যাওয়ায় প্রথা প্রিয়, সংস্কার প্রিয়দের চোখে পড়ে যায়। বিনা বাক্য ব্যয়ে এতদিন এই সুবোধ ছেলেরা যা করে এসেছে এখন তারই প্রশ্ন করছে, কি, কেন, কিভাবে? সমাজ তো ক্ষেপে যাবেই!
সত্যি সত্যি ক্ষেপে উঠেছিল আমার উপর অনেক মানুষ। (সত্যি সত্যি যে সমাজ আমার উপর ক্ষেপে গিয়েছিল এরকম কোন লিঙ্ক কিন্তু আমি দেখাতে পারবো না [মন খারাপের ইমো হবে])। যাই হোক, ব্যাপারটা যে সিরিয়াস সে সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল না। তাদের ছেলে নামাজ পড়ে না, তাদের ছেলের দেবদেবীতে এখন ভক্তি নেই, নানা রকম উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে। সবচেয়ে বড় কথা তারা অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে! এখানে বলে রাখি এমনিতে আমরা ভদ্রজন অসাম্প্রদায়িকতার কথা খুব বলি কিন্তু বাস্তবে যখন একজন মানুষ অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠে (যে নিজেকে কোন সম্প্রদায়ের মনে করে না) সেটা হজম করার মানসিকতা আছে কতজনের?
যাই হোক এলাকার সমাজপতিদের কাছে আমার নামে বিচার যেতে লাগলো। তারা ক্রুদ্ধ হয়ে জানতে চাইলেন, তুমি আল্লাহ-খোদা মানো না? কি আশ্চর্য, এই ছেলে ধর্ম মানে না! …
আমার অনেক বন্ধুর বাড়ির দরজাই আমার জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। প্রচলিত ধর্ম ও প্রথাকে যে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে, এতদিন ধরে চলে আসা সিস্টেমকে যে বাঁধাগ্রস্ত করে তাকে তো এসব পোহাতেই হবে। লোকজনের অবস্থা দেখে অবাক হলাম। যেন ছেলে ধর্মান্তরিত হয়ে যাচ্ছে সেরকমই তাদের উদ্ববেগ। এক বন্ধুর বাবা শপথ করালেন ছেলেকে নামাজ পড়ার। শুনতে যতই অবাস্তব লাগুক, আরেক বন্ধুকে নতুন করে কলেমা পড়ানো হলো। আমার আরেক হিন্দু বন্ধু “ইয়াং বেঙ্গলদের” অনুকরণে প্রকাশ্যে গরুর বিরিয়ানী খেয়েছে বিদ্রোহের অংশ হিসেবে। তাকে বাড়িতে কান্নাকাটি করে গোবর খাওয়ানো হলো। আমি জানতাম এর মধ্যে কিছু “ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাবে”। হয়েছিলও তাই। তারা শেষ পর্যন্ত ঘরেরই শুধু ফিরে যায়নি উগ্র ধর্মবাদী হয়ে উঠেছিল। বিদ্যাকে গিলে ফেললে হজম হয় না, তাকে আত্মস্থ করতে হয়। শুনেছি ইয়াং বেঙ্গলদের অনেকেই শেষ বয়েসে ধর্মের দিকে ঝুঁকে গিয়েছিলেন। মাইকেল মধুসদন দত্ত ইয়াং বেঙ্গলদের কার্যকলাপ নিয়ে ব্যঙ্গ করে প্রহসন লিখেছিলেন “একেই কি বলে সভ্যতা” নামে। আমার এক বন্ধু সদ্য নাস্তিক হয়ে ঈদে নতুন জামাই নিবে না! ঈদের দিনে বাড়িতে সেমাই খাবে না! মা কাঁদে ছেলের কীর্তিতে। তাকে বললাম, হারামজাদা, আমি আমার মার জন্য ইফতারি কিনে নিয়ে যাই। ঈদে একটা পাঞ্জাবী পেয়েছি মার কাছ থেকে সেটাও পরবো। ধর্মকর্ম করি না বাড়িতে সবাই জানে, তাই ঘাটায় না। খ্রিসমাস দেখেছিস, সারা দুনিয়ার মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উৎসব হিসেবে নিয়ে একটা দিন আনন্দ হৈ-হল্লা করে কাটায়। ঈদকে সেরকম করতে পারিস কিনা সেটা চেষ্টা কর। এগুলো রাতারাতি উঠে যাবে না। বরং এই উৎসবগুলোকে একটা সেক্যুলার চরিত্র দেয়া যায় কিনা সেই চেষ্টা করতে হবে। সে আমার সঙ্গে একমত হতে পারলো না। বরং আমাকেই সে ভন্ড বলে অভিহত করে ফেলল। অথচ আমার সঙ্গে চলেই তার নাস্তিকতার হাতেখড়ি। এই ২০১৩ সালে তার সঙ্গে আমার দেখা। সে এখন সাচ্চা মুসলমান। এই নাস্তিক সরকার যে সাঈদীর মত আলেমকে ফাঁসি দিচ্ছে এটা সে কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না। বললাম, নামাজ পড়িস? সে অতান্ত দৃঢ়তা সঙ্গে বলল, নিশ্চয়! যতবার আল্লাহো আকরব বলি ততবার বুকের ভেতরে আল্লাকে অনুভব করি…।
ধর্ম মানুষের মনে ঘৃণা আর আক্রোশ কতটা এনে দিতে পারে টের পেলাম যখন আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বসন্ত নামের রোগটা দুনিয়া থেকে চিরতরে চলে গেছে শুনেছিলাম। যদিও শীতলা দেবীর পূজা আজো ধুমধাম করে হয়। তো দেবীর যে পুরোপুরি প্রসার এখনো যায়নি বোধহয় সেটা জানান দিতেই আমাকে গিয়ে পাকড়াও করলো। একদিন দুপুরের পর মাথা আর শরীরের ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম। একটু জ¦র জ্বর লাগছিল। কর্মক্ষেত্র থেকে বিকেলের আগেই বাড়ি চলে এলাম। শরীর খুব খারাপ লাগছে, শুয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি পিঠে একটা গোটার মত, চুলকাচ্ছে, আঙ্গুল লেগে গলে গেলো। বুকের কাছেও একটা দেখতে লাগলাম। লোকে ধারনাও করতে পারলো না পক্স যে একালে এতটা ভয়াবহ হতে পারে। সেই ষাট-সত্তর বছর আগের ভয়ংকর রূপে যেন ফিরে এসেছে সে! খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। কারণ গলার ভেতরও গোটা উঠেছে। সারা শরীরের গোটা। বেশির ভাগ সময় চেতনা থাকে না। অনেকেই ভাবলো আমি মারা যাচ্ছি। হাত তুলে অনেকেই বলল, শুকুর আলাহামদুরিল্লাহ! আল্লাহ গজব নামছে! আল্লা খোদারে নিয়া আকথা-কুকথা কইলে এইরকমই হইব…।
আল্লাহ বলেন, আবু লাহাব তুমি ধ্বংস হও! আল্লাহ কেন আমাদের মত তুচ্ছ মানুষের সঙ্গে দ্বৈরথে নামেন? চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন অতিতের ভয়ংকর সব রোগ মামুলি হয়ে পড়েছে। ডায়রিয়া, কলেরায় এক সময় বাংলার গ্রামকে গ্রাম ছাফ হয়ে গেছে। মানুষ মানুষকে অভিশাপ দিতো, তুই ওলাউঠা হয়ে মরবি! এখন কলেরায় টিকা আবিষ্কার হয়েছে। ডায়রিয়ায় পাঁচ টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনে চিকিৎসা করা যায়। আল্লাহ হাতে যতগুলো মরান্ত্র ছিল তার বেশির ভাগ মানুষ ভোঁতা করে ফেলছে। কারণ তিনি বলেন, এসব দিয়ে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। শাস্তি দেন। যাক এসব কথা। শেষ পর্যন্ত আমি মরলাম না। বেঁচে উঠলাম।
মানুষ জন্ম থেকে সাম্প্রদায়িক হয় না, তাকে বানানো হয়। মুসলমান বাড়ির তরকারী হিন্দু বাড়িতে গেলে সেটা নির্ঘাত ড্রেনে যাবে। মুসলমানের বাড়িও একই কথা খাটে। খাবারের মধ্যে কি লেগে থাকে? আমার এক বন্ধু হিন্দুদের দেয়া কোন খাবার খায় না। তার নাকি বমি আসে। কিরকম একটা গন্ধ পায় সে। হিন্দুদের দোকানের দই-মিষ্টি অবশ্য রাক্ষসের মত খায়। মানুষের ধর্মটা আসলে কি? আমার এই বন্ধুই যখন পতিতালয়ে গেলো তখন তার মুখ থেকেই শোনা গল্পটা বলি। যে মেয়েটাকে ফূর্তি করার জন্য নিয়েছে সে যখন জানলো তার খরিদদার আর তার বাবার নাম একই তখন সে কাজ করতে অস্বীকার করলো। বাবার নামের কাউকে সে কাজ করতে দিবে না। আমার বন্ধুটি জোর করে তার কাছ থেকে শরীর আদায় করে নিলো। হতভাগ্য মেয়েটির শিশুটি তখন চৌকির এক কোণায় খিদের জ্বালায় চিৎকার করে কাঁদছিল। মেয়েটা বিধ্বস্ততা শেষে উঠে বাচ্ছাটাকে দুধ খাওয়ায়।…মানুষের ধর্ম আমার কাছে এইরকমই। সমাজ বিতাড়িত, পাপীষ্ঠ, পতিত এই মেয়েটির ধর্ম আসলে আমার ধর্ম। বিবেক, বিবেকই ধর্ম…। যে বন্ধুটির কথা বললাম, সে রমজানের এক মাস কোন রকম “পাপ কাজ” করে না। যেমন, হিন্দী সিনেমা দেখা, রাতের বেলা মেয়েদের সঙ্গে ফোনে আলাপ, অনলাইনে এডাল্ট সাইটে যাওয়া, এই সময় সে সেভ না করে একমাস দাড়ি রাখে, সবক’টা রোজা রাখে তারাবিসহ… টিপিক্যাল বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেরা যেমন হয় আর কি। আমাকে সে মনে মনে অপছন্দ করে জানি। সে আড়ালে আমাকে “হিন্দুদের দালাল” বলে উল্লেখ করে। তার কারণ আছে অবশ্য, একটা উদারহরণ দেই।
পাড়ায় দূর্গা পূজা হচ্ছে। মুসলমান পাড়ায় হিন্দুর পূজা তাও আবার রমজান মাসে! এই মাসে ইবলিশের মাথায়ও টুপি উঠে। মুসলমান হয়ে উঠে খুবই স্পর্শকাতর। কোন রকম কাফিরী কাজ কারবার সে সহ্য করতে পারে না। এলাকার হিন্দু বড়ভাই যারা পূজাটা করছেন তাদের দেখলাম জুনিয়র থেকে জুনিয়র ছোট ভাইদেরকে পূজাটা ভালভাবে শেষ করার জন্য বিনীত সহযোগীতা চাচ্ছেন। আমার দেখে খারাপই লাগে। সেই বড়ভাই ( বিকাশদা) ভারতে চলে গেছেন কতদিন হয়। সেখানে কি তাকে এভাবে করজোরে পূজা সমাপ্ত করতে কারুর সহযোগিতা চাইতে হয়? দাদা কি সেখানে কঠিন মুসলিম বিদ্বেষী হয়ে গেছেন? খুব সম্ভব হয়েছেন। আগেই বলেছি বেশির ভাগ মানুষ সাম্প্রদায়িক অভিজ্ঞতাকে এভাবেই নেন। যাই হোক, পাড়ার মসজিদ কমিটি থেকে পূজা কমিটিকে বলা হলো, মাগরিবের নামাজের সময় ঢোলঢোক্কর বন্ধ রাখতে হবে (এটাই হিন্দুদের দেবীর আরতির সময়, আচ্ছা ভাবুন মুসলিম সম্প্রদায়কে বলা হচ্ছে মাগরিবের নামাজটা আরতির সময় বন্ধ রাখা হোক!), দশমী করতে হবে বাজনা ছাড়া, যতটা কম আড়ম্বনা ছাড়া, সেটা অবশ্যই সন্ধ্যার আগে কারণ তখন সেটা ইফতারির সময়, নামাজের সময়, নয়তো রাত দশটার পর যেন করে। পূজা কমিটি এক কথায় রাজি।
নবমীর দিন পূজা মন্ডবে গিয়েছি, হিন্দু বন্ধুরা, মুসলিম বন্ধুরা আড্ডা মারছি। দশভূজা দেবী ও তার কন্যা-সন্তানসহ জাঁকজমক ভাবে হাসি হাসি মুখে চেয়ে আছেন, আসলে চেয়ে আছেন কিন্তু কিছু দেখছেন না যেন। সরস্বতী দেবীকে আমার খুব পছন্দ। তার রূপ আর স্টাইলের জন্য। এক মুসলিম বন্ধু ফিসফিস করে দেবী ও দেবী কন্যাদের নারীত্বেও চিহ্নগুলোকে নিয়ে আদিরসাক্তক মন্তব্য করতে লাগলো। আমার সেই বন্ধুটি আলোচনায় যোগ দিয়ে বলল, দোস্ত দেখ, এই চুতমারানী মাগীগুলির নিচ দিয়া (আসলে লেখার অযোগ্য একটা শব্দ ছিল সেটা) বাঁশ গাঁইত্থা খাড়া কইরা রাখছে, এই গুলির নাকি কত ক্ষমতা! অহন গিয়া লাত্থি মাইরা আয়, দেখ অরা নিজেরা নিজেগো বাঁচাইতে পারে কিনা…। মুসলিমরা সবাই একমত হলো। আমি বললাম, কাবাঘরও তো কতবার ভাঙ্গলো। বন্যায় একবার, একবার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। হজরে আশওয়াদ যেইটারে হজে গিয়া চুমা খাও, চুরি গেলো কাবা ঘর থিকা, কই আল্লায় তো রক্ষা করতে পারলো না তার ঘর আর তার ইজ্জত! …
বলুন, এরপরও ওরা আমাকে দালাল বলবে না কি বলবে?
তাহলে হিন্দুরা কি আমাকে বন্ধু মনে করে? আমার ইসলাম বিরোধী কথাগুলোর যেগুলো তাদের পক্ষে যায় তখন আমি তাদের কাছের মানুষ। কিন্তু যখন আমি বলি রামচন্দ্র হচ্ছে একটা গল্পের চরিত্র, তার ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। অযোধ্যার মাটি খুঁড়ে ফ্যালা ফ্যালা করে ফেললেও তার কোন প্রত্ত্বতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যাবে না…। উচিৎ কথায় মানুষ বেজার, গরম ভাতে বিড়াল বেজার। আমি হিন্দু-মুসলিম দুটোর শত্রু। এটা আরো বেড়ে গেলো যখন কথিত মা কালির আর্বিভাবে আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম।
১৫-১৬ বছরের এক যুবতী মেয়ের উপর হঠাৎ মা কালি ভর করেছেন দয়া করে। ক্ষণে ক্ষণে মায়ের আবির্ভাবে যুবতীর ভাবসমাধি হয়। মুখ দিয়ে গেঁজলা বের হয়। তখন মেয়েটি যা বলে সব ফলে যায়। আশির্বাদ দিলে লেগে যায়! সন্ধ্যার পর মূর্খ হিন্দু নারী-পুরুষরা ভিড় করতে লাগলো এই হিস্টরিয়া রোগী মেয়েটির কাছে অথবা অভিনয় করে প্রতারণা করা মেয়েটার কাছে। তবে প্রতারণা করার সম্ভবনাই যথেষ্ট কারণ সে আমার চ্যালেঞ্জে রাজি হয়নি। আমার কলেজ জীবনে পড়া প্রবীর ঘোষের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি মেয়েটিকে বলেছিলাম, আমার পকেটে একটা একশো টাকার নোট আছে, মা জননী যদি কষ্ট করে নোটের নাম্বারটা হুবহু বলে দিতে পারেন, কথা দিচ্ছি নাস্তিকতা তো ছেড়েই দিবো, ইসলাম ছেড়ে হিন্দু হয়ে যাবো! সে আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি কিন্তু তার বদলে ব্রাহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করেছে। অভিশম্পাত করলো, এই বেয়াদপীর ফল ভাল হবে না দেখিস!
হিন্দুরা সত্যিই আমার এই বেয়াদপীকে ভালভাবে নেয়নি। চোখ-মুখ কুঁচকে সেটা তারা প্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে। আড়ালে সবাই বলেছে, এই মুসলমানটা কেন আমাদের এইখানে আসে! আমাদের ধর্মকর্ম নিয়ে সে কেন মাথা ঘামায়…।
এই ঘটনায় আরো একটা অভিজ্ঞতা যেটা আমার হলো সেটা চমৎকৃত। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অলৌকিত্বে যে আমাদের বংশ পরম্পরায় কুসংস্কার আছে তা ধর্ম চেতনাকেও হার মানায়। যে মেয়েটির উপর কথিত কালির আবির্ভাব হয়েছে সে থাকতো এক মুসলমান বাড়িঅলার বাড়িতে ভাড়া। প্রায় মন্দির হয়ে পড়ায় বাড়িঅলা যখন এদের বাসা ছেড়ে উঠে যেতে বললেন তখন আড়ালে বলা হলো, মাকে এভাবে অপমান করে তাড়ালে ঝাঁড়ে নিবর্ংশ হয়ে মরতে হবে। মায়ের রোষ তো জানে না…। চট্টগ্রামের কি এক পীরের মুরিদ এই বাড়িঅলা এই কথা লোকমুখে শুনে দমে গেলো। যত যাই হোক, কার মধ্যে কি আছে কে জানে, যদি সত্যি সত্যি নিবর্ংশ হয়ে মরতে হয়! বাড়িঅলা চরম অস্বস্তিতে পড়ে চুপ করে গেলেন। দেখলাম চুপি চুপি অনেক মুসলমান বাড়ি থেকে নানা রকম মানত করে লোক মারফত টাকা-পয়সা পাঠানো হচ্ছে এই মা কালির মন্দিরে! এক বছরের মধ্যে ভাল দেখে একটা জায়গা বেছে পাকা মন্দির করে এই স্বঘোষিত মা কালি” এখান থেকে উঠে চলে যান। শুনেছি তার প্রসার এখনো ভাল। রোজ দুই-আড়াইশো ভক্ত এসে জুটে। মানুষের নানারকম দুঃখ-কষ্ট আর অভাবঅনটনের জীবন। মায়ের কাছে এসে সমাধান চান। বলে, মা রক্ষা করো, আর যে পারছি না!…
এই অসহায় মানুষগুলিকে আমি গালি দিতে পারি না। রাগ করে থাকতে পারি না বেশিক্ষণ। এই দরিদ্র, বিপুল জনসংখ্যার একটা দেশে, যেখানে সম্পদের তুলনায় চাহিদা ব্যাপক, আছে অশিক্ষা আর কুশিক্ষা, তারা তো প্রতিদিনের জীবনের কাছে হেরে গিয়ে এইরকম আল্লা আর মা জননীর কাছেই দিন শেষে ধরনা দিবেই। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে কি বলা যাবে, যাও, তোমার আল্লার কাছে যাও, তিনি সব পারেন! কিংবা আল্লা ভগবানই তো খাওযায় পরায় তার কাছেই যাও…। অসহায় মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। তাই এই মানুষগুলোই যখন “নাস্তিক ব্লগারের” ফাসি চায়-আমি তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে যাই না। যারা রোজ আমাকে ফেইসবুকের ইনবক্সে গালাগালি করে তারাও এই সমাজ ব্যবস্থার শিকার। আমি খুব পরিস্কারভাবে বলি ও লিখি ইসলামী জংঙ্গিবাদের আতুরঘর খোদ ইসলাম! তাতে আমি ইসলাম বিদ্বেষী কিন্তু আমি মুসলিম বিদ্বেষী নই তাই ফারাবী ও নাফিসের জন্য আমার মনে কোন অন্ধ ক্রোধ নেই কারণ আমি জানি তারা এই ইসলাম দ্বারা শিকার হয়েছেন মাত্র। এইমাত্র যে কিশোরটি শিবিরে যোগ দিতে মনোস্থির করলো আমার লেখালেখি তার জন্য। আমার যোগ্যতা ও ক্ষমতা সীমিত আমি জানি। কিন্তু ব্লগে যারা স্বনামধন্য লেখক আমার বিশ্বাস তারা এজন্যই আয়ু পুড়িয়ে লিখে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক ইসলাম মাথাচাড়া দিয়ে না উঠলে হয়ত এসব নিয়ে আমাদের লিখতে হতো না। এমন একটা সময় এখন আমাদের সামনে যখন “সুধাংশু তুই পালা”র মত লেখা লিখতে হয়। বডার্র পার হয়ে যে হিন্দু পরিবারটি চিরদিনের জন্য দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে তাদেরকে আটকান। অভয় দিন। প্রতিটি মুক্তমনা, নাস্তিক নিজেকে প্রশ্ন করুক কেন সে ব্লগে-ফেইসবুকে লিখতে এসেছে? নাস্তিকতা কি ধর্ম যে সেটা প্রচার করতে হবে? সারা দুনিয়ার মানুষ নাস্তিক হয়ে যাবে এরকম যারা বিশ্বাস করে তাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে বিড়াট ভুল আছে।আমরা শুধু তাদের ভাবনার খোরাক জুগিয়ে দিবো।তাদের একটা বিড়াট অংশ প্রচলিত বিশ্বাস ও সংস্কার থেকে বেরিয়ে আসবে না ঠিকই, তবে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিগুলো ভোতা হয়ে যাবে।“সুধাংশুকে” তখন আর পালাতে হবে না। আয়েশাদের পাশে আরতীরাও তখন নিশ্চিন্তে বাস করতে পারবে।সেই সুদিনের প্রত্যাশায় আমরা নাস্তিক-মুক্তমনারা লিখি কারণ লেখার চাইতে অন্য কোন যুদ্ধ শুধু রক্তই ঝরাবে ।কারুর রক্ত তো চাইতে আসিনি…।
শেয়ার করলাম ফেসবুকে। দারুন শক্তিশালী লেখা। অভিনন্দন। মনের কথা গুলো লিখেছেন। (Y)
*কলকাতা থেকে ফিরছি গ্রামে। ফাঁকা ট্রেন। কয়েকটি যুবক উঠেছে। তাদের কিছু টুকরা কথা থেকে বুঝলাম তা্দের জীবিকা আসলে মোবাইল ফোন চুরি। ওই দিন যে কয়টি ফোন তারা চুরি করেছিলো এলাকার ভারপ্রাপ্ত কোনো পুলিশ অফিসারের কাছে তার বখরা হয়। বখরায় কোনো এক চোরকে তারা কম দেয় ওই পুলিশ অফিসারের নির্দেশে কারণ সে ছিলো মুসলমান । তাদের যুক্তিও আমার কানে এলো। মুসলমান কখনো হিন্দুর বন্ধু হয়না।
** আমার মেয়ের সহপাঠিনীর বাবা লালবাজারে কর্মরত একজন পুলিশ অফিসার । তাঁর নানা অভিজ্ঞতার কথা তিনি শোনাচ্ছিলেন।তাঁর কিছু কথায় আমি ভেবেছিলাম তিনি বোধহয় নাস্তিক। সে ভুল ভেঙ্গেছিলো অবশ্য অচিরেই। তিনি ধর্মপ্রাণ নন , কিন্তু কোনো মুসলমানের কাছে তিনি ঘুষ নেন না। তিনি কথায় কথায় জানালেন, হিন্দু কখনোই মুসলমানের ভালো চায় না, চাইতে পারেইনা। একমাত্র মুসলমানই মুসলমানের ভালো করতে পারে।
*** দুটো সুরই যে আমার কানে এক লাগলো।
***** ধর্ম যতদিন থাকবে ততদিনই এই বিভেদ থাকবে। আসলে ধর্মের জন্মই হয়েছে এই বিভেদ করার জন্য। একে অপরকে ঘৃণা আর হিংসা করবে । হায় পৃথিবী থেকে যেদিন এই ধর্ম উঠে যাবে সে দিনটা যদি আমি দেখতে পেতাম!
lলেখাটা শুধু সাবলীল নয় – একটা বাস্তব ছবি তুলে ধরা হয়েছে । ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও মানুষের মনে অন্য ধর্ম সম্পর্কে অসূয়া ভাব রয়েছে। আমি ব্যক্তি জীবনে মার্কস বাদী ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মতের সমর্থক। ” ধর্ম হোল নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস ; যে জগত দয়াহীন, ধর্ম হোল তার দাক্ষিণ্য; যে, পরস্থিতিতে আধ্যাত্মিকতা নেই, ধর্ম হোল তার আত্মা । তাই যে দুঃখ উপত্যকায় ধর্মের দিব্য জ্যোতির আশ্বাসে মানুষের প্রিক্রমা , ধর্মের সমালোচনা হল সেই দুঃখ উপত্যকার সমালোচনা । যে কল্পনা-সৃষ্ট কুসুমাবলী মানুষের বন্ধনশৃঙ্খল্কেই অলংকৃত করে রাখে , এই সমালোচনা তাদের ছিন্ন ভিন্ন করেছে। এবম্বিধ প্রয়াসের উদ্দেশ্য এই নয় যে মানুষ তার ঐ শিকল পরে থাকুক অথচ মোহাবেশের আরামটুকু থেকে বঞ্চিত হোক । উদ্দেশ্য এই যে , মানুষ যেন তার এই বাঁধন ছিঁড়ে ফেলতে পারে আর আহরণ করে এমন ফুল যা জীবন্ত । ধর্মের সমালোচনা মানে মোহমুক্তি ; আর সেই মোহমুক্তির ফলে সম্বোধি পেয়ে মানুষ চিন্তা, কর্ম এবং আত্মসত্তা গঠনে ব্যাপৃত হতে পারে। মানুষ তখন নিজেই নিজের সুর্য, স্বকীয় অক্ষপ্টে তার গতিবিধি । ধর্ম হল সেই কপট সুর্য যা পূর্ণ আত্মসচেতনা বঞ্চিত মানুষের চারপাশে পরিক্রমণ করতে পারে” । যতদিন ধর্ম থাকবে উদিন এর হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই
মুক্তমনাদের এই ব্লগটি আমি অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছি। এই ব্লগ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। এতদিন কোন কিছু বলিনি। ভাবছি এবার কিছু বলবো।
আসলে ধর্ম রুপকথা হলেও বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ তা মেনে নেয়। যুক্তিবাদ যতই ধাঁরালো হোক না কেন, অনেক মানুষ তা মেনে নিতে চায় না। রুপকথাগুলোকে মেনে নিতে চায়। দ্যা ফ্যাক্ট ইজ, ধর্মের কাহিনীগুলো একটি মানুষকে তার ছোটবেলা থেকে শুনানো হয়। আর এমনভাবে শুনানো হয় যে তার অন্তরে তা একদম গেঁথে ও জেকে বসে। স্বর্গ ও নরখের ব্যাপার তো আছেই, সাথে মানসিক কিছু ব্যাপারও এখানে আছে।
ধর্মের রুপকথা যখন শুনি তখন মনে অনেক প্রশ্ন আসে। ধার্মিক মানুষগুলোর মনের কষ্টের কথা ভেবে কিছু বলতে পারি না। অনেক কিছু সইতে হয় বটে। বড়ই অবাক লাগে যে ধর্মের এইসব রুপকথা কীভাবে মানুষকে একে অপরের থেকে আলাদা করে দেয়।
আসলে যারা সত্যিকার অর্থেই যুক্তিবাদকে সমর্থন করে থাকেন তাদের উচিৎ তাদের সন্তান কিংবা পরিবারের ছোট কাউকে তার শিক্ষার শুরুতেই যুক্তিবাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। সেই সাথে বৈজ্ঞানিক যেসব উল্লেখযোগ্য কাহিনী রয়েছে তা তাকে জানিয়ে ও বুঝিয়ে দেয়া। এখনও খুব কম মানুষই জানে গ্যালিলিওর কাহিনী।
সাধারণ মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে কর্মের মাধ্যমে তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া যে তাদের বিশ্বাস যে আসলেই নিছক রুপকথা যা একদিনে কখনও সম্ভব না। অনেক সময়ও লাগবে বটে এবং ধৈর্যও লাগবে সাথে। তবে এটাও মাথায় রাখা দরকার যে এসব করতে গিয়ে তাদের প্রতি যেন কোন ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষ যেন তৈরী না হয়। আর যদি তাই হয় তাহলে কোন লাভ হবে না। উল্টো আরও হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
আমি আর কি বলব ভাই !! এই লেখার কয়েকটা লাইন আজীবনের জন্য কপি মেরে রাখলাম । সময় সুযোগ মতন পেস্ট করব ।
নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কয়েকটা ঘটনার সাথে কিছুটা মিলে যাওয়ায় কিছুক্ষনের জন্য থমকে গিয়েছিলাম লেখাটা পড়ার সময় । এতদিন ভাবতাম, এই কথাগুলোকে প্রাণ দেওয়ার দরকার । মনের এই কথাগুলো ভাষা পাক । আমার লেখনী তো আর এত ভালো না। সাবলীলভাবে এত সুন্দর করে বলতে পারব না। যেটি আপনি পেরেছেন ।
পাঠক ভাই, অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি লেখার জন্য । 🙂
@বাউন্ডুলে বাতাস, ওহে বাতাস, ঠিকাচে ঠিকাচে, দেখা হলে এরকম গল্প আরো করা যাবে।
অনেক দেরীতে পড়লাম লেখাটি। লেখাটির জন্য লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তার লেখার উপকরণ এবং উদাহরণ খুব প্রবলভাবেই বাস্তব। ধর্মের কারণে সামাজিক বৈষম্যগুলো এত পরিস্কার যে অস্বীকার করা বোকামি। ধর্র, মানুষকে মানুষ দিসেবেই চিন্তা করতে বাধা দেয়। ধর্মের রীতি নীতি আর অপবিশ্বাসগুলো যেন ভাইরাস, মানবতা বিসর্জন দিয়ে হলেও এরা নিজেদের রক্ষা করে যায় আর ছড়িয়ে পড়ে হোস্ট থেকে হোস্টে।
আপনাদের মত লেখকেরা যত সামনে এগিয়ে আসবেন, তত আমি এই ভাইরাস থেকে মুক্তির আলো কিছুটা হলেও খুঁজে পাই।
মুক্তমনায় স্বাগতম। আরো লিখুন।
@অভিজিৎ, অশেষ ধন্যবাদ আমার লেখায় কমেন্ট করার জন্য। বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্তি না পেলে সভ্যতাই টিকবে কিনা সন্দেহ। কাজেই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তো লড়তেই হবে।… আছি আছি, থাকবো, থাকবো।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আপনি ইমেইল চেক করেন। লেখাটা অতিথি ব্লগাররের একাউন্ট হতে আপনার একাউন্টে নিয়ে যাওয়া হল। সব ঠিক আছে কিনা লগ ইন করে দেখুন।
@মুক্তমনা এডমিন, ধন্যবাদ এডমিন।
চমৎকার এই লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। ধর্মীয় বিভাজন থেকে বেরিয়ে আসা যে কত কঠিন, তা এই লেখার উপর করা মন্তব্যসমূহ পড়লে বুঝা যায়। যত যাই বলা হউক, জন্মের পর থেকে একটি প্রবল ও উগ্র ধর্মীয় বলয়ে বেড়ে উঠার ফলে আমাদের এ দেশে প্রকৃত অর্থে মানুষ না হয়ে আমরা সবাই হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান হিসেবে বেড়ে উঠছি। ধর্ম বিশ্বাস, অনুশাসণ ও চর্চা কোনভাবেই একজন মানুষকে অসাম্প্রদায়িক করতে পারে না। ধর্মকে আধুনিক মানুষের উপযোগী করার জন্য ধর্মের অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হলেও ধর্মই সাম্প্রদায়িকতার মূল ভিত্তি। মানুষের চিরন্তন অন্তর্নিহিত ভয় ও আশ্রয় আকাঙ্খা মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের জায়গাকে প্রবল করে চলছে যুগ যুগ ধরে। ফলে এই বিজ্ঞানের প্রবল প্রতাপের যুগে শিক্ষিত মানষও ধর্মকে আঁকড়ে ধরে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতকে শক্তিশালী করে সমাজে ধর্মের অবস্থানকে নিরাপদ ও সংহত রাখছে। ধর্মের দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আরো সময় দরকার।
@মোহন, আপনার সুচিন্তিত মতামত দানের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
নজরুলের মৃত্যুক্ষুধায় চেই ছুৎমার্গ নিয়ে চমৎকার কিছু বর্ণনা আছে। খেরেস্তান ছুঁলে জাত যায় না, কিন্তু হিন্দু-মুসলিম পরস্পর ছোঁয়াছুঁয়ি বারণ
ছোঁয়াছুঁয়ির ছুৎমার্গ তো বোধহয় বৃটিশদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল থিয়রী চালু করার আগে ততটা প্রকট ছিলো না, তাইনা? শুদ্রের ছোঁয়া বারণ বা চকোত্তি মশাই, আচাযযি মশাই কারো ছোঁয়া বরদাস্ত করবেন না এরকমটা ছিলো। কিন্তু নেড়ে ছুঁলে জাত যাবে এটা বোধহয় বৃটিশদের মাথা থেকে বের হওয়া। আমার ভুলও হতে পারে, ততটা পড়াশুনা করা নেই।
@ইমরান ওয়াহিদ, সিরাজ সাই (লালনের গুরু), লালন সাই, তাদের গানে যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে চেতনা, ক্ষোভ, ধিক্কার, হতাশা দেখি তাতে বুঝা যায় সেই যুগে বদ্ধ গ্রামেও মারাত্মক সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দু-মুসলমান সমস্যা ছিল। “জলের উপর পানি, না পানির উপর জল”- এই গান একশো-দেড়শো বছর আগের হবে হয়ত, স্পষ্ট বুঝা যায়, কার ধর্ম সর্বচ্চে তাই নিয়ে টানাটানির উত্তেজনা কবিয়ালের মনটা কতটা নাড়া দিয়েছিল।
@সুষুপ্ত পাঠক,
ভাইরে, সিরাজ সাঁই, লালন সাঁই তো দেবেন ঠাকুরের আমলের লোক। ডিভাইড অ্যান্ড রুল তো তার অনেক আগেই শুরু হয়েছে। কোম্পানির পিছু পিছু মিশনারিরা এসেই তো বিষবাষ্প ছড়ানো শুরু করেছিলো।
@ইমরান ওয়াহিদ, আপনার কথাই সত্য। তবে কি জানেন, নাফিসকে এফবিআই প্ররোচণা করেছিল বোম্বিং করার জন্য, এর জন্য এফবিআইকে দোষী করা যেতে পারে এ জন্য যে তারা ব্লাকমেইল করেছিল। কিন্তু নাফিসের মধ্যে সেই পয়জন না থাকলে সে কি আর রাজি হতো? …. ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সকল শিশুর অন্তরে… বুঝলেন না, সেটাই আর কি…।
@সুষুপ্ত পাঠক,
২০১২ সালের নাফিস আর ১৮১২ সালের আহম্মদ আলী কি এক বলেন? হিন্দু-মুসলিমে ধর্মীয় রাজনৈতিক মারামারি গোড়া থেকেই ছিলো। কিন্তু আমি স্পেসিফিকালি ছোঁয়াছুঁয়ির কথা বলতে চাইছি।
আমাদের গ্রামের প্রতিবেশি হিন্দু ছেলেমেয়েরা আমাদের বাড়িতে চাপাকলের পানি নিতে আসতো। আমরা কখনও দুষ্টুমি করে তাদের পানিভরা কলসি ছুঁয়ে দিলে ওরা সেই পানি সাথে সাথে ফেলে দিয়ে আবার কল চেপে কলসি পানিতে ভরতে শুরু করতো। কারণ মুসলমানের ছোঁয়া পানি খেলে নাকি জাত যায়।
@তামান্না ঝুমু, এখন মনে হয় ওসবও ভাল ছিল। ওসব করতো ধর্মীয় নিয়ম বা বাধ্যবাধকতা ভেবে। ধর্ম এখন রাজনৈতিক হয়ে উঠেছে। জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র এসবের জন্য ভবিষ্যতে আরো কোটি কোটি মানুষ দেশান্তরিত হবে। পৃথিবীর অনেক মানুষ স্বদেশ, গৃহ হারিয়ে উদ্ববাস্তু হয়ে যাবে…।
দুনিয়ার তাবৎ প্রাণীর মধ্যে জাত ২ টি; মানুষ ও পশু।
মানুষের জাত আবার ২ টা; নারী মানুষ ও পুরুষ মানুষ।
এই ২ জাতের মধ্যে আবার যারা জাত খোঁজে (হিন্দু-মুসলিম-খৃস্টান বা ইহুদী আরকি) তারা নিঃসন্দেহে পশু।
পশুর জাত ওই ২ টাই, নারী পশু ও পুরুষ পশু। সুতরাং পৃথিবীতে নারী ও পুরুষ ছাড়া অন্য কোনো জাত নেই।
যারা এর পরেও বলে জাত আছে; তাদের নিজেদেরই আসলে কোন জাত নাই। তারা না মানুষ না পশু।
এরা যাতে আস্তিক; কামে কীট 🙂
আমার জাত “পুরুষ মানুষ”; আপনার জাত কি ???
____________________________________________
লেখাটি ভালো হয়েছে 🙂
(F) ফুলেল শুভেচ্ছা (Y)
@এম এস নিলয়, নিজেকে অমানুষ ভাবতে ভাল লাগে। 🙂
লেখাটা আগে কোথাও যেন পড়েছি বলে মনে হয়। যাই হোক,লেখককে ধন্যবাদ এত সুন্দরভাবে কিছু ঘটনার বিবরন তুলে ধরার জন্য। ইতোপূর্বে ফেসবুকে লেখকের কিছু পোস্টের বিষয়ে আমি দ্বিমত পোষন করে কমেন্ট করেছি। ইসলামকে কটাক্ষ করে কিছুটা একপেশে লেখার জন্য কেউ কেউ ফেসবুকে লেখকের পরিচয় জানতে চেয়েছেন এবং বিরূপ কমেন্ট করেছেন দেখেছি। এই ব্লগে লেখাটার সাথে তার ফেসবুকের সাম্প্রতিক পোস্টগুলো অনেকটাই বৈসাদৃশ বলে মনে হয়েছে। যাই হোক এই লেখাটি ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সুশুপ্ত পাঠককে।
@বাকীদুল ইসলাম,
ফারাবী ও তার মাল্টি নিক আমার পরিচয় জানতে চেয়েছে এবং বিরূপ কমেন্ট করেছে। ইনবক্সে ভয়াবহ গালাগালির স্রোত বইয়ে দিয়েছে কেউ কেউ।…
জনাব বাকীদুল ইসলাম, এটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমি আসলে “ইসলামকে কটাক্ষ” করেই লিখে থাকি। সেই কটাক্ষ ও একপেশে লেখাগুলোর মধ্যে কোন কোনটা কারুর কারুর ভাল লেগে যায়। বেশির ভাগ নিন্দাই জোটে।
@সুষুপ্ত পাঠক, আমি বিশেষ কোন ধর্মের প্রতি সহানুভূতির কারনে কথাগুলো বলিনি। আপনি কোন বিষয়ে পোস্ট করবেন, কতটুকু করবেন- সেটা আপনার নিতান্তই নিজস্ব ব্যাপার। আমি কৌশলগত বিষয়ে আপনার সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষন করেছিলাম। ধর্মাচ্ছন্ন এই সমাজে ধর্মবিরোধী মত প্রকাশের ক্ষেত্রে অবশ্যই কৌশলী হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তা না হলে হিতে বিপরীত হবার ঝুকি থাকে। কেননা, আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, লেখনীর জবাব তো লেখনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ধন্যবাদ।
@বাকীদুল ইসলাম,
ঠিক তাই, যে কারণে ব্লগে আর ফেইসবুকের ইনবক্সে বারবার আমাকে বলা হয়, সাহস থাকলে তোর ছবি দেখা। যদি সাহস থাকে তাহলে নিজের ছবি প্রকাশ করে লিখবি! দেখবো তুই কত বড় নাস্তিক! … ভাই বাকীদুল, তাই বলে কি সত্য প্রকাশ বন্ধ থাকবে? ইমরান ওয়াহিদ নিচের কমেন্টে যা লিখেছে আমার নিজেও মতামত তাই। ধন্যবাদ আপনাকে।
@সুষুপ্ত পাঠক,
মেসেজ অপশন ব্লক করে দিলেই পারেন। শুধুমাত্র বন্ধুরা ছাড়া কেউ মেসেজ দিতে পারবে না, এমন করে সেট করে ফেলেন প্রাইভেসী। তাইতো এইসব আজেবাজে লোকদের যন্ত্রনা থেকে বেঁচে যাবেন, খুব সোজা উপায়, তাই না:-)
@অর্ফিউস, কথাটা বলেছিলাম সম্ভবত কোন একটা প্রসঙ্গ ধরে। নইলে উল্লেখ করতাম না। আর আমি পরতো পক্ষে কাউকে ব্লক করি না নিতান্তই বাধ্য হলো। কেউ মন ভরে গালি দিয়ে যাক, কিন্তু এদের মধ্যেই হাজারে একজন যদি পড়তে পড়তে যুক্তি আর চিন্তার মুক্তি পায় আমার গালি খেতে আপত্তি নেই। এমন বদলে যাওয়া ছেলেমেয়েকে আমি জানি।… আমি দরজা-জানালা বন্ধ করার পক্ষে নই। ওই যে বললাম, একান্তই বাধ্য না হলে। ধন্যবাদ আপনাকে।
@সুষুপ্ত পাঠক, বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন। 🙂
@বাকীদুল ইসলাম,
যে জন্মসুত্রে যে ধর্ম পেয়েছে, সেই ধর্ম নিয়েই তার জ্ঞান সবথেকে বেশি। সুতরাং একজন জন্মসুত্রে মুসলিমের কাছ থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, শিখ, ইহুদী, শিন্টো, তাও ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা আশা করাটা আসলে বোকামী। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমের দেশে যাঁরা ধর্মবিরোধীতা করবেন তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ট তো মুসলিমই হবে। আর তাঁরা ইসলামের বিপক্ষেই লিখবেন। এখন ব্যালান্স চাইলে তো মুশকিল।
ব্যালান্স চাইলে, ইসলামের বিপক্ষে একটা লেখা পড়ে মেজাজ খারাপ হলেই, অভিজিত রায়ের বিবেকানন্দ নিয়ে লেখা পড়বেন, এম এস নিলয়ের খ্রীষ্টান ধর্ম নিয়ে লেখা বা নিলয় নীলের বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে লেখা পড়বেন। ব্যস মন খুশ।
সুষুপ্ত পাঠক বোধহয় সবচেয়ে বেশি যি গালি শুনেছেন তা হচ্ছে, ইহুদী
লেখাটা আগে অন্য ব্লগে প্রকাশিত সেটা বলে দেওয়া উচিত। মুক্তমনায় রিপ্রিন্ট নিষিদ্ধ নাহলেও নিরুতসাহিত করা হয়।
যেখানে যে ধর্মানুসারী সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে সে ধর্মীয় কালচার প্রাধান্য পায়, সেটাই স্বাভাবিক। একেবারে শতভাগ ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ বলতে কিছু নেই। আমার জানা মতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও অনেকে নানান দিবসে রোজার মত উপবাস করেন। কতটা ধর্ম সম্মত নিঃসন্দেহে জানি না। ছেলেবেলায় নামাজ পড়তাম না, কিন্তু রোজা রাখার উতসাহ ছিল প্রবল। তখন আমাকে নামাজে উতসাহিত করার জন্য বলা হত নামাজ বিহীন রোজার তেমন মূল্য নেই, কারন সেটা হিন্দুদের উপবাস তূল্য।
বাংলাদেশে প্রশ্নই আসে না; ভারতে কি উপবাস করা হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন আমাদের দেশের রোজা নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি করা হয় তেমন কিছু করে? ভারত সম্পর্কে আমার কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই, এসব ব্যাপার সমাজে কিছু সময় সশরীরে বসবাস না করলে ইন্টারনেট ঘেঁটে বোঝা যায় না।
@আদিল মাহমুদ,
এটা নিয়ে তো কোন কথা নেই। সেটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আপনি অন্যের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করবেন সেটা আর স্বাভাবিক থাকে না। এটা সমস্ত দেশে দেশে ঘটলোও স্বাভাবিক নয়। দেশে দেশে অন্যায় করলেই সেটা তো স্বাভাবিক হয় না। আর ভারতে তো হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা হয়, ৪০-৬০ না হলে সেটা দাঙ্গা হয়র কি করে? বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর গল্প অন্যরকম, ভারতের মত নয় নিশ্চয়। অবশ্য আমিও ভারতের ব্যাপারে আপনার মতই।
সেরকম ইচ্ছাই ছিল, কিন্তু লেখাটা পোস্ট করে মনে পড়ল, যাহ্! এই কথাটা তো উল্লেখ করে দেইনি!
@সুষুপ্ত পাঠক,
আপনি লেখাটা মুক্তমনায় মেইল করে পাঠানোর বেশ কিছুদিন পরে ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে আপনি জানাতে পারতেন বোধ করি। যা হোক, ভবিষ্যতে সতর্ক হবার অনুরোধ করা যাচ্ছে। 🙂
@মুক্তমনা মডারেটর, 🙂
সুন্দর লিখেছেন। জীবনের বাস্তবচিত্রকে একেবারে অল্প কথায় সম্পুর্ন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।শুভেচ্ছা (F)
এখনো এমন হয় নাকি? আমি কিন্তু যথেষ্ট রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারেই জন্ম নিয়েছি এবং বেড়ে উঠেছি। কিন্তু অনেক হিন্দু বাড়ির খাবার খেয়েছি, আর আমাদের পাঠানো খাবারও কেউ ফেলে দিয়েছে বলে মনে হয় না। অবশ্য আমরা কি করেছি এটা জানি, অন্যরা ফেলে দিলেও আমার টের পাবার কথা নয়।
আমার হিন্দু বন্ধুরা ঈদের মধ্যে আমাদের বাসায় আসে নিয়মিত, খাসি বা মুরগীর ব্যাবস্থা থাকে তাদের জন্য , তাদের কখনও ছোক ছোক করতে বা কাজ বা ব্যস্ততার অজুহাতে নিমন্ত্রন প্রত্যাখ্যান করতে দেখিনি।
পুজার সময়ে তাদের বাসায় গিয়েও খেয়েছি।
@অর্ফিউস, ওহ্ না ভাই, ব্যাপারটা ভয়াবহ। এটা তো ঘৃণার। আমার বাসায়ও আমার হিন্দু বন্ধুরা আসে খায়, সেটা উপর থেকে হিন্দু-মুসলমানের উদার চেহারা হতে পারে, কিন্তু মনে রাখবেন, আগের কালের ছুতমার্গের ভয়ে হিন্দু-মুসলমানের খাওয়া-বসা ঢের ভাল ছিল। সেটাকে তারা ধর্মীয় নিয়ম মনে করতো, আজকের মত মনের গভীরে ঘৃণা রাখতো না। যাই হোক, ভাল ছবিও আছে আমি জানি, তা অস্বীকার করছি না। ধন্যবাদ আপনাকে।
শক্তিশালী লেখনী (Y)
আর ধর্ম, জাত-পাত – এসবে মানুষরা যা করে সবকিছুই “সিলেক্টিভ” নিজেদের সুবিধা এবং ইচ্ছা অনুযায়ী!! – ৯৯.৯৯ শতাংশ ব্যাপারে ভণ্ডামি খুঁজে পাওয়া যাবে!!
@সংবাদিকা, ধন্যবাদ আপনাকে।
সাবলীল লেখা। জীবনের চারপাশের চরিত্র এবং ঘটনা গুলোকে চমৎকার তুলে এনেছেন যুক্তির বিচারে। ঘটনাগুলো সবার চারপাশে ঘটছে। কেউ সম্ভাবনা কে সম্ভব না হিসেবে বুঝে নিচ্ছেন কেউবা ভিন্ন ভাবে। ব্যক্তি জীবনে ধর্মের এই অত্যাচারটা মাঝে মাঝে অসহনীয় হয়ে উঠে।
আমার প্রথম ইস্যু মিসকারেজ হবার পর আমার জীবনাচারকে দায়ী করেছিলো আমার চারিপাশটা। দ্বিতীয়বার জটিলতা শুরু হলে একই অভিযোগে সন্তানের প্রতি আগ্রহহীন পাষণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করে খুঁচিয়েছে দীর্ঘ সময়। এইসব অর্থহীন সংস্কার থেকে মুক্তি পাক চারপাশটা।
অভিনন্দন আপনাকে সাবলীল লেখনীর জন্য। (F) (F) (F)
@দেব প্রসাদ দেবু, অনেক অনেক দিন পর মুক্তমনায় লিখলাম। যে আশাবাদ জানিয়েছেন, আমিও তা কামনা করি মনে-প্রাণে। লেখা ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।