প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব হিরোর প্রয়োজন হয়। তেমনি ৭১-এ আমাদেরও হিরোর প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনীয়তার তাগিদ থেকে আমরা একজন বিদেশী শাসককে হিরোতে রূপ দিই। হ্যাঁ জনাব, আমি নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র কথা-ই বলছি। একজন বিদেশী শাসক হয়ে তিনি আমাদের কাছে হিরো। মজার বিষয় হল নবাব সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলা হয়! এই বলা হয়টাও সত্য নয়। কারণ তিনি বাংলার স্বাধীন নবাব ছিলেন না। তিনি নিয়মিত দিল্লীর বাদশাহদের কর দিয়ে গদি ঠিক রাখতেন। তিনি বহিরাগত ছিলেন এই সত্যটা জানার পরও আমরা তাকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করি। অনেকে হয়তো ভাবছেন; হিরো নিয়ে এতো কথা বলার কী আছে? রাষ্ট্রের হিরো থাকা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদ বধ’ সৃষ্টি করেছেন ভারতীয় অনার্যদের হিরো সৃষ্টি করার প্রয়াসেই। বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে গদি থেকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে ইংরেজরা। এই চিত্র এই বাংলার মানুষের কাছে একটি স্বাভাবিক বিষয় ছিল। কারণ এই দেশের সাধারণ মানুষের নবাবও ছিলেন বিদেশী। আগত মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ হয়েছে, মুসলিম কবিরাও বাঙলাভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধী করেছেন তা সত্য কিন্তু এই দেশের মানুষের ভাগ্যের তেমন উন্নতি হয়নি। এর জন্য অবশ্য আগত মুসলিম শাসকদের অর্থনৈতিক জ্ঞানের সীমাবন্ধতাই দায়ী। তাই তো সামন্তবাদী সমাজ থেকে তারাও বের হতে পারেনি।
এই বঙ্গে যখন হিন্দু শাসকদের বর্ণ প্রথা, ধর্মীয় কুসংস্কার ও আগাছায় হিন্দু সভ্যতার গতি রুদ্ধ হয়ে গেল, নিন্মশ্রেণির মানুষগুলোর যখন মনুষ্য বলেও গন্য হতো না বরং ম্লেচ্ছ হিসেবে গন্য হতো তখন মুসলিম শাসকদের আগমনে ও ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে সমাজের ম্লেচ্ছ’রা মানুষ হিসেবে অন্তত সামাজিক মর্যাদাটুকু পেল। এছাড়াও হিন্দু ধর্মের অনেক আগাছা, কুসংস্কার ধ্বংস হয়ে যায়। এতো কিছুর পরেও এই অঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেনি। তবে যারা মুসলিম শাসিত সাত’শ বছরের ইতিহাসকে স্বর্ণযুগ আক্ষায়িত করে মুসলিমদের অবিস্মরণীয় গৌরবের ঢোল পেটান তাদের জন্য বলতে চাই মুসলমানরা অধিকাংশ ছিলো নিন্ম বর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী। সামাজিক ভাবে তারা ছিল অবহেলিত। তাই নিপীড়িত মানুষগুলোর অর্থনৈতিকভাবে এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বিকশিত হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। তাছাড়া ভারতীয় সভ্যতার চেয়ে উন্নত কোন সভ্যতা মুসলিমরা নিয়ে আসতে পারেনি। বরং ইউরোপীয়ান সভ্যতা থেকে আরবীয় সভ্যতা ছিল অনেক পিছিয়ে। প্রকৃত পক্ষে ইংরেজদের হাতে ছিল ভারতবর্ষ অপেক্ষা উন্নত সভ্যতা। কিন্তু ইংরেজরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এই দেশের যা কিছু মহৎ ও উন্নত ছিল সব ধূলিসাৎ করে দেয়। বিখ্যাত মসলিন কাপড় শিল্প ধ্বংস করে দেয়। অথচ ফ্রান্সের পরিব্রাজক ফ্রাঁসোয়া বার্নি তার ভ্রমণ কাহিনিতে উল্লেখ করেন;- এই বাংলা ছিল আশেপাশের সকল দেশের এবং ইউরোপের কাপড়-চোপড়ের বড় আড়ৎ। এই বাংলার কাপড় শুধু ইউরোপে নয় জাপানেও চালান হতো। বাংলার অফুরন্ত সম্পদ শুধু ইংরেজরা লুট করেনি, লুট করেছে আর্যরা, মোঘলরা, মগদস্যুরা, বর্গীরা। তবে ইংরেজদের লুণ্ঠন সব শোষকদের ছাড়িয়ে যায়। ছোট বেলায় একটি ছড়া মনে হয় সবাই শুনেছি-খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাঁজনা দিবে কিসে……এছাড়াও অজস্র লোকসাহিত্যে বিদেশীদের অত্যাচারের বর্ণনা, শোষণের বনর্না ফুটে ওঠে।
এতো কিছুর মধ্যেও কলকাতায় রেনেসাঁসের জন্ম হয়। যদিও বাঙলার রেনেসাঁস নিয়েও অনেকে দ্বিমত পোষণ করে। কারণ বাঙলার নবজাগরণ মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক শিক্ষিত এলিট শ্রেণির রেনেসাঁস। কারণ ইউরোপের মতন বাঙলার রেনেসাঁস দরিদ্র মানুষের মুক্তি ঘটাতে পারেনি। তবে যাই হোক এ কথা অস্বীকার করার জো নেই যে; এই বাংলা ছিল ইংরেজ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। কলকাতা কেন্দ্রিক জমিদাররা এই বাঙলাকে মূলত উপনিবেশিক অঞ্চল রূপেই দেখত। যদি তাই না হতো, তাহলে এই বাঙলায় শিল্প কারখানা ও বিদ্যালয় গড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত। এক্ষেত্রে শুধু হিন্দু জমিদারদের গালাগালি করলেই চলবে না কারণ কলকাতায় বড় হওয়া শিক্ষিত মুসলিম এলিট শ্রেণি এর ব্যতিক্রম ছিল না। যদিও ৯০% জমিদার ছিল হিন্দু। এই অঞ্চলের মানুষদের পিছিয়ে পড়ার আরেকটি কারণ ছিল ধর্মতাত্ত্বিক গোঁড়ামী। শুধু ইংরেজ শাসন আমলে নয় বিশ শতকের দেখা যায় মোল্লরা ফতোয়া দিচ্ছে- বিজ্ঞান ও ইংরেজী পড়লে আল্লাহ গজব পড়বে, জিহ্বায় ঘা হবে। তবে কিছু কিছু মানুষ এই অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারে আগ্রহী হয়ে অনেক বিদ্যালয় নির্মান করেন। তবে বিদ্যালয় নির্মান অপেক্ষায় মসজিদ নির্মানেই এই অঞ্চলের মানুষ বেশি আগ্রহী ছিল। নানান জ্বরে আক্রান্ত, অর্থনৈতিক-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এই বঙ্গ; পূর্ব বাঙলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান নামান্তর হয়ে ৪৭ সালে পাকিস্তানের উপনিবেশিক অঞ্চল হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। উপনিবেশিক অঞ্চল হওয়ায় পাকিস্তান শাসকদের কাছে এই বাঙলা ছিল চূড়ান্তভাবে উপেক্ষিত। এই বাঙলাকে তারা ব্যবহার করত উৎপাদনের অঞ্চল হিসেবে। ১৯৬৮-৬৯ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল ২০,৬৭০ মিলিয়ন রূপী। আর পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ২৭,৭৪৪ মিলিয়ন। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয়ক ছিল জাতীয় বাজেটে এই বাঙলা ছিল সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকেই এই বাঙলার মানুষ স্বাধীনতার স্পৃহায় ৭১-সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। স্বপ্ন ছিল একটাই; এই অঞ্চলকে একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু হায়! স্বাধীন দেশটি বেশিদূর টলে টলে কিংবা হামাগুড়ি দিয়ে চলতে পারেনি। কয়েক বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে। স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় ৭৪ সালে এর দুর্ভিক্ষে পতিত হয়। তেতাল্লিশের মন্বন্তরে হাজারো মানুষ মারা যায়। তেতাল্লিশের মন্বন্তরে বিদেশী প্রভুদের উদাসীনতা, ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশের লোভ, দেশীয় কালো বাজারীদের লুণ্ঠন ছিল দায়ী। অথচ স্বাধীন দেশে আমরা দেখতে পেলাম বিদেশী প্রভু না থাকলেও তাদের উচ্ছিষ্টভোগী দেশীয় দলীয় চাটুকার বাহিনীর প্রভাবে মানুষদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। স্বাধীনতার ৪২ বছরপরও স্বাধীনদেশে ভিন্নধর্মালম্বীরা অনিরাপত্তায় ভোগে, আদিবাসীরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দরজায় আহাজারি করে। প্রতিদিন বিচার বর্হিভুত রাষ্ট্রিয় হত্যা চলছে, দেশদ্রোহীরা রাজপথে গণতন্ত্রের চর্চা করছে! সাধারণ মানুষ দেশ থেকে দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে, স্বাধীন ও সভ্য রাষ্ট্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে অথচ স্বাধীনতার ৪২ বছরেও সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার অধরাই রয়ে গেল।
কিছুদিন আগে বর্তমান সরকারের এক নেতা সাম্প্রদায়িক হামলা প্রসঙ্গে বলেন; আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের পাশের দেশ ভারতেও মুসলিম ভাইয়েরা আছে। টেলিভিশনে এই বক্তব্য শোনার পর মনে হল এটা ২০১৪ সাল নয় হয়তো ১৯৪৬-৪৭ সালের কোন এক মাস। ধর্মীয় আইডেন্টির ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য ধর্ম কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যা ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য। হ্যাঁ, অস্বীকার করছি না যে, সাম্প্রদায়িক চর্চা ছিল না। তবে মূল সমস্যা ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যকে কেন্দ্র করে। সাম্প্রদায়িক সামাজিক চর্চাটার আলোকে পাকিন্তান আর ভারত ভূ-খণ্ডের মানুষেরা একে অপরের জিম্মি হিসেবে কাজ করত। বর্তমান সরকারী নেতার কথাটা কাঁটাছেড়া করলে এই অর্থ দাড়ায়- হিন্দুরা এদেশের নিরাপদ থাকলে ভারতেও মুসলিমরা নিরাপদ থাকবে। তা না হলে ঐ দেশের মুসলিমদের উপরও আঘাত আসতে পারে। ভাবতে কষ্ট হয় একটি সম্প্রদায় এই যুগেও আরেকটি সম্প্রদায়ের জিম্মি হিসেবে কাজ করছে। রাষ্ট্র হিসেবে এ কী আমাদের ব্যর্থতা না? একটা রাষ্ট্র কাঠামো কী আমরা আজো সুস্থভাবে তৈরি করতে পেরেছি? রাষ্ট্র নাগরিককে একচোখা দৈত্যের মতন যখন দেখতে শুরু করে তখন তা আসলেই ভয়ংকর ব্যাপর হয়ে দাঁড়ায়। কার্ল মার্কস বলে গেছেন, “একটি সমাজ কতটা উন্নত, তা বোঝা যায় এর নারীর দিকে তাকালে। আর একটি সমাজ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যাবে এর সংখ্যালঘুর দিকে দৃষ্টি দিলে। নানা ধরনের সংখ্যালঘু থাকে সমাজে। চিন্তার দিক দিয়ে সংখ্যালঘুরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। এক অর্থে এদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।” এই কয়েক মাসে আদিবাসী বসতিতে হামলা, ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে হামলা, রাষ্ট্র কর্তৃক নীরব সম্মতিতে বিচার বর্হিভুত হত্যায়, পুলিশ হেফাজতে আসামীর মৃত্যু, সাম্প্রদায়িক হামলা বিচারহীন থাকে তখন একজন সাধারণ নাগরিকের মধ্যে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে।
রাষ্ট্র যেখানে জনগণকে আইনের প্রয়োগ ও ব্যবহার শিখাতে উদ্দোগী হবে সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র উল্টো আইন বর্হিভুত কাজে লিপ্ত হচ্ছে। র্যাব-এর ক্রসফায়ারের গল্প শুরু করলেও এই গল্প এখন পুলিশে গিয়ে ঠেকেছে। পুলিশও র্যাবের মতন একই গালগল্প জনগণকে শুনিয়ে যাচ্ছে। একটি ভয়ংঙ্কর বিষয় হল ক্রসফায়ার নীতি জনগণ মেনে নিয়েছে। একটু তলিয়ে দেখা যাক জনগণ কেন ক্রসফায়ারে বিশ্বাসী হয়ে উঠছে! এর প্রধান কারণ বিচার ব্যবস্থার অক্ষমতা ও দূর্বলতা। যে কোন ভয়ংকর আসামী যখন আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে বারবার অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিচার কার্যের দীর্ঘ মেয়াদী সময়ের ফলে অপরাধী পুনঃরায় অপরাধ করে যাচ্ছে এর ফলেই কিন্তু ক্রসফায়ার জনগণের মনে বৈধ হিসেবে স্থান করে নেয়। যেহেতু আটক করলেও সাজা হয় না বা মুক্ত পেয়ে যাচ্ছে সেহেতু ক্রসফায়ারে জনগণ সাময়িক স্বস্তি লাভ করছে। তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি ক্রসফায়ায় সুস্থ রাষ্ট্র কর্তৃক কোন সভ্য আচরণ নয়। বরং এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রের তৈরি নগ্ন ব্ল্যাকহোলে হয়তো রাষ্ট্রই একদিন তলিয়ে যাবে।
কয়েক হাজার বছর ধরে এই বঙ্গের মানুষেরা নির্যাতন-নিপীড়ন, শোষণ সহ্য করে যে রাষ্ট্র লাভ করছে সেই রাষ্ট্রটি দিনদিন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথেই হাঁটিহাঁটি পা-পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক চর্চাকেন্দ্র, রাষ্ট্রিয় দমন-পীড়ন সবকিছু এই দেশের সাধারণ মানুষদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। বাকস্বাধীনতার নামে মাঝরাতে বিভিন্ন টিভি সেটে যা হয় তা আরো ভয়ংকর। টক শো তে বাকস্বাধীনতার নামে টকশোজীবীরা বিচার বর্হিভূত হত্যার বৈধতা দিচ্ছে, আন্দোলনের নামে পেট্রোল ও বোমাবাজির বৈধতা দিচ্ছে, বুদ্ধীবিত্তিক চর্চার নামে জঙ্গিবাদের বৈধাত দিচ্ছে! তবে এতো কিছুর পরও আশাবাদী মানুষের কণ্ঠেই বলতে চাই এই বঙ্গের মানুষ হাজারো নিপীড়নে, হাজারো অত্যাচারে শেষ হয়ে যায়নি বরং প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হয়তো এই রাষ্ট্রের সু-বুদ্ধি না হলে একদিন জনগণ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে আবারো সংগ্রামে লিপ্ত হবে আবারো সৃষ্টি করবে এক মানব সভ্যতা। জন্ম দেবে নতুন ইতিহাস।
এসব নেতারা এদেশের হিন্দুদের এদেশের নাগরিকই মনে করেন না। যদি করতেন তাহলে অন্য কোন দেশে কে কার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হল তা চিন্তা করে এদেশের হিন্দু নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিহ্নিত করতেন না।
অন্যদিকে উর্দুভাষী সিরাজউদ্দৌলাহকে মুসলিম বলেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলা যে উচিত নয় তা বহুল আলোচিত।
– অনেকে ভুল বুঝতে পারেন। বর্গী ইংরেজ নয়, মারাঠা দস্যু।
সিরাজউদ্দৌলাহ মুঘল শাসকদের মতই বাংগালী ছিলেন না। পলাশীতে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত ঠিক কিভাবে হল আমি বুঝি না। মুঘল শাসকরা ভারতীয় আদিবাসীও ছিলেন না, সকলেই ছিলেন বস্তুতঃ ভিনদেশী। সে আমলে ধর্মীয় জাতীয়তাবোধ ছিল অনেক বড়, ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে সংস্কৃতি আইন ব্যাবস্থা নির্ধারিত হত। এর প্রভাবে তারা বিদেশী হয়েও দেশীয় শাসকের মতই ইতিহাসে ঠাই পেয়েছেন। অন্যদিকে ইংরেজও বিদেশী হয়ে ধর্মগত পার্থক্যের কারনে বিদেশীই থেকে গেছে। আওরংগজেবের পর থেকেই মুঘল শাসন সমগ্র ভারতবর্ষেই শিথিল হয়ে আসা শুরু হয়। আনাচে কানাচে স্থানীয় শাসকরা ধীরে ধীরে স্বাধীন হয়ে উঠতে শুরু করে। সে হিসেবে সিরাজের নানান নবাব আলিবর্দীও হয়ে ওঠেন স্বাধীন, তার আমল থেকেই সম্ভবত মুঘলকে কর দেওয়া বন্ধ হয় (ঠিক নিশ্চিত নই এখনই)। কিন্তু মুঘল শাসন আংশিক হলেও ছিল যার প্রমান ইংরেজকে বাংলায় বিনা শুল্কে বানিজ্যের অনুমতি রাজকীয় ফরমান বলে দিয়েছিলেন দিল্লীর মুঘল শাসকরাই। এই নিয়েই মূলত শুরু হয়ে দ্বন্দ্ব।
মুসলিম এলিট শ্রেনীর উদ্ভব আরো গভীর। এটা সকলের জানা যে মুসলমানদের ভেতর ধর্মীয় পরিমন্ডলের সীমাবদ্ধ জগত থেকে ইউরোপী আধুনিক শিক্ষা গ্রহন শুরু হবার চল শুরু হয়েছিল হিন্দু সমাজের পর; যার মূল্য আজও উপমহাদেশের মুসলমানদের দিতে হচ্ছে। মুসলমান সমাজে এই মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব আজকের দিনেও আছে, এর শুরু সে আমল থেকেই। সে আমলে আলীগড় ছিল আধুনিকপন্থীদের স্কুল অফ থট, স্যার সৈয়দ আহমেদ ছিলেন সংস্কারপন্থীদের অন্যতম, অন্যদিকে সনাতনী বা গোঁড়াদের আখড়া ছিল দেওবন্দ। এ আমলে যেমন ধর্মনিরপেক্ষ ধারার মুসলমানদের কট্টরপন্থীরা কাফের মুরতাদ এসব বলে সে আমলেও স্যার সৈয়দ আহমেদদের কপালেও সংস্কারপন্থী হবার কারনে কাফের গাল জুটেছিল। মাওলানা আবুল কালাম আজাদও ছিলেন এই ধারার, এই ধারার লোকেরা এমনকি স্রোতের বিপরীতে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ গঠনের অবাস্তব চিন্তারও বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। এই দ্বন্দ্ব নিরসনের তেমন কোন উপায় নেই।
বাংলার দূর্ভাগ্য ছিল এ অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কারনে মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটেছিল জোতদার তালুকদার শ্রেনীর মধ্য থেকে যাদের জ্ঞানচর্চার দিকে তেমন আগ্রহ ছিল না। আলীগড়ি প্রভাব উত্তর ভারত, পাঞ্জাবের মুসলমানদের মধ্যেই পড়েছিল বেশী যার কারনে ‘৪৭ এর দেশবিভাগে বাংলা ব্রেন ড্রেন জনিত সমস্যায় পড়ে ব্যাপক ভাবে।
ক্রশফায়ার প্রথম থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যুদ্ধপরাধী বিচার কেন্দ্র করে এর অবস্থান মোটামুটি পৌঁছে গেছে বিতর্কের ঊর্ধ্বে। আসলে যুদ্ধপরাধী বিচার কেন্দ্র করে জটিলতা থেকে এ জাতীয় আরো বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা ধীরে ধীরে সময়ের সাথে দেখা যাবে।
@আদিল মাহমুদ,
মূলবান মন্তব্যের জন্য থেংক্স 🙂
আর বর্গী আর ইরেজটা এক নয় তা মনে হয় সবাই অবগত আছে।
@সুব্রত শুভ,
যেভাবে এক লাইনে লিখছেন তাতে আমিই প্রথম চমকায় গেছিলাম, আমিই কি ভুল জানতাম নাকি??
ইরেজের সাথে বর্গীর তুলনা সমীচিন নয়। বর্গী, হার্মাদ এরা দস্যু শ্রেনীর; ইংরেজ হল শাসক শ্রেনী।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি ভুল জানেন না। ইংরেজ ও বর্গীয়দের এক শ্রেণিতে ফেলি নাই।তবে লুটেরা হিসেবে এক শ্রেণিতে। তবে সভ্যতার বিচারে বর্গীয়দের থেকে ইংরেজ অবশ্যই উন্নত লুটেরা শ্রেণিতে পড়ে।
@আদিল মাহমুদ,
এক্ষেত্রে একটি আর্গুমেন্ট ইদানিং দেয়া হয়, আমি জানিনা আপনি অবহিত কিনা। মোঘল সম্রাটেরা শাসন করলেও তারা ভারতের উপমহাদেশের অর্থ বাইরে পাচার করতেন না। অর্থাৎ বলা হয় তারা ভারতবর্ষকে নিজের দেশ হিসেবেই বিবেচনা করে নিয়েছিলেন। হ্যা তারা ভোগ বিলাস দুর্নীতি শাষণ শোষণ সবই করেছিলেন, কিন্তু কোহিনুর হীরে বিলেতে পাঠিয়ে দেননি, ইংল্যান্ডে ধন সম্পদ পাচার করে ভারতবর্ষকে ছিবড়া বানিয়ে দেননি, যা ইংরেজেরা করেছিল। সে হিসেবে ধর্মের বাইরেও অর্থনৈতিক বিচারে কিছুটা পার্থক্য আছে এই দুই শাসকগোষ্ঠীর।
আমার এই আর্গুমেন্টের বিরুদ্ধে কিছু উত্তর আছে যদিও, কিন্তু আপনার অভিমতটা জানতে আগ্রহী।
@অভিজিৎ,
আর্গুমেন্ট খুব মন্দ নয়।
এ আর্গুমেন্টের আদলে বলা চলে পাকিস্তানী শাসকরাও আসলে এদেশীই ছিলেন, তারাও টাকা পয়সা বিদেশে পাচার করেননি, আমাদের ততকালীন দেশ পাকিস্তানেই রেখে দিয়েছিলেন। কাজেই ‘৭১ এর আগে আমাদের স্বাধীনতা ছিল না এমন ধারনা ভ্রান্ত। ‘৭১ এর আগেও আমরা স্বাধীনই ছিলাম।
@আদিল মাহমুদ,
ওয়েল, খুব বেশি কনভিনসিং হল না। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল একটা বড় বাস্তবতা। পূর্বপাকিস্তানের আয়ের বড় অংশই পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত। বৈদেশিক সাহায্যের বেশিরভাগ অংশ বরাদ্দও পেত পশ্চিম পাকিস্তান। পাট কিংবা চা থেকে পাওয়া আয়ের পুরোটাই পাঠানো হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। মোট জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ থাকত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। কাজেই পাকিস্তানীদের বেনিয়া ইংরেজদের সাথে বেশি তুলনা করা যায়, মুঘলদের থেকে।
যাই হোক আবারো দেই আগেকার লাইন অব আর্গুমেন্ট: ইংরেজরা ধনসম্পদ ভারতবর্ষের বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। মুঘলরা নেয় নি। সে হিসেবে ইংরেজদের কেউ বিদেশি শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করলে আর পলাশিতে ‘স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল’ ভেবে নিলে এর বিপক্ষে আপনার শক্ত প্রত্যুত্তর কি হতে পারে?
@অভিজিৎ,
:))
আপনার এনালজির বেসিকেই তো ভুল। আপনি পাকিস্তান আমলকে স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে তূলনা করছেন। মনে রাখতে হবে যে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছিল একই দেশ। কাজেই তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চীম পাকিস্তানে সম্পদ পাচারকে বিদেশে পাচার হয়েছে বলা চলে না, দেশেরই এক অংশ থেকে আরেক অংশে স্থানান্তর করা হয়েছিল বলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনজ সম্পদ দিয়ে ঢাকার ধনীরা ড্রইং রুম সাজালে সেটা কি সম্পদ পাচার নাকি?
যাই হোক, সিরিয়াস থট হল দুই শাসকই মূলত বিদেশী হলেও ইংরেজদের তূলনায় মুঘল শাসকরা ধর্মগত কারনে উপমহাদেশের সাথে এটাচড ছিল বেশী। সে কারনেই হিন্দুরা কিন্তু সুলতানী বা মুঘল যেই বংশই হোক তাদের সব সময়ই বিদেশী শাসক হিসেবে দেখে এসেছে। হাজার হোক ইংরেজ তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উপমহাদেশ কখোনই চিন্তা করেনি, মুঘল শাসকরা কিন্তু এই ভীন দেশকেই স্থায়ী ঠিকানা করেছিল।
কথা হল স্বাধীন চিন্তা করতে গেলে কি কেবল কে কোথায় অর্থ পাচার করেছিল তাই চিন্তা করতে হবে? অন্য আর কিছু চিন্তা করার নেই? ধর্মগত মিল থাকলেও অন্য অনেক ব্যাপার চলে আসে। পাকিস্তানী শাসকদের যে কারনে একই দেশ হলেও আমাদের বিদেশী শাসক হিসেবে চিন্তা করতে হয়েছিল। সম্পদ একই দেশে কাগজে কলমে থাকলেও তাতে কোন লাভ হয়নি। শোষন বঞ্চনা ঠিকই চলেছে, চুড়ান্তভাবে ধর্মগত নয়, ভাষাগত জাতীয়তাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। মুঘল শাসকরা এ দেশের স্থায়ী হলেও লং টার্মে একই ঘটনাই হত। শাসক শ্রেনী নিজ অঞ্চলের এবং ভাষী না হলে মনে হয় ঔপনিবেশিক শাসনের ছাপ যায় না।
@আদিল ভাই,
মুঘলদের আমলে রাজপুত, মারাঠা এরাতো অনেক বিদ্রোহ করেছে, কিন্তু পেরে ওঠেনি। পেরে উঠলে মনে হয় না মুঘল সাম্রাজ্য এতদিন টিকে থাকত কি বলেন আপনি? মনে হয় আকবরই একমাত্র শাসক জিনি সব ধর্মের মধ্যে একটা সমন্বয় স্থাপন করতে পেরেছিলেন। আর আওরঙ্গজেব জিনি কিনা এদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ফেরেশ্তা, তিনিই কিন্তু আবার ধর্মের বৈষম্যগুলি ফিরিয়ে আনেন, আর তার ফলেই কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই না? হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলিম শাসকের জিজিয়া কর, খুব মারাত্বক সন্দেহ নেই।
@আদিল মাহমুদ,
উহু, উল্টো। মুসলিম শাসন লং টার্মেই ঘটেছিল। শাসনের সূত্রপাত তো সেই ৭১২ সালে মোহাম্মদ বিন কাসিম দ্বারা সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যেমে তারপর চলেছিল বলা যায় ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ পর্যন্ত প্রায়। অপরদিকে ব্রিটিশ উপনিবেশিক দখল শুরু হয় ১৭৫৭ সালে; শেষ হয় বলা যায় ১৯৪৭ সালে। অর্থাৎ মুসলিম শাসন প্রায় হাজার বছর শাসন করেছে, সেখানে ইংরেজরা দু’শ বছরের মতো।
মুসলিমরা ভারতবর্ষ দখল করে বহুদিন ধরে খুঁটি গেঁড়ে ছিল বলেই শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষ নিজেদের দেশ বলে মনে করতে পেরেছিল। তাদের আর অর্থ সম্পদ বাইরে পাচার করার দরকার পড়েনি। য়াপনি বলতে পারতেন, ইংরেজরাও যদি অতদিন থাকতো, হয়তো তারাও ভারতকে নিজের দেশ বানিয়ে ফেলত, কে জানে।
এখন আসি সেই লাইন অব আর্গুমেন্টে। “মোঘল সম্রাটেরা শাসন করলেও তারা ভারতের উপমহাদেশের অর্থ বাইরে পাচার করতেন না। অর্থাৎ বলা হয় তারা ভারতবর্ষকে নিজের দেশ হিসেবেই বিবেচনা করে নিয়েছিলেন।” এটা আমার কথা নয়, তাজ হাসমির মত একাডেমিকও তা মনে করেন (দেখুন এখানে), “unlike the British invaders, Muslim rulers considered India home, as they did not have any metropolis like London to siphon off Indian wealth and resources.”
কিন্তু মুসলিম শাসনের সূচনা যদি দেখা যায় দেখা যাবে ৭১২ সালে মোহাম্মদ বিন কাসিম ভারতবর্ষ আক্রমণ করে বিপুল সম্পদ আহরণ করেছিলেন। নারী আর শিশুকে দাস হিসেবে বন্দি করেছিলেন। য়ার সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুদ্ধের লুন্ঠিত দ্রব্য (আনফাল) এর একপঞ্চমাংশ মালামাল আর নাড়ি-শিশুর বহর নাকি দামেস্কের খলিফার কাছে প্রেরণ করতেন।আল কাফির ‘চাচানামায়’ নাকি আছে, লুন্ঠিত দ্রব্য আর ২০,০০০ জন বন্দিকে নাকি খলিফার কাছে ট্যাকস হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। কে এস লালের ‘Muslim Slave System in Medieval India’ বইয়ে এর উল্লেখ আছে। আবুল কাশেমের এই লেখাটিতেও এর উল্লেখ আছে-
আর কাসিম হিন্দু প্রজাদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করেন কোরান আর সুন্নাহর ভিত্তিতেই। এ সব কর থেকে আদায়কৃত বড় একটা অংশ রাস্ট্রের হিস্যা হিসেবে খলিফার কোষাগারে পাঠানো হত। পরিমান ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ দিরহাম। জিজিয়া, খারাজ আর আবগারি শুল্ক।
এটা তো কেবল কাসিম। এর পরে সুলতান মাহমুদ, মোহাম্মদ ঘোরী কিংবা ফিরোজ শাহ তুঘলকে আর না যাই…
কি বুঝলেন? মহান দেশপ্রেমিক শাসক না, যারা ‘ভারতবর্ষকে নিজেদের দেশ বলে মনে করতে পেরেছিল’ 🙂
@অভিজিৎ,
উপমাদেশে মুসলমান শাসন বলতে কিন্তু এখন সাধারনভাবে মুঘল শাসনকেই মিন করা হয়, সম্ভবত শেষ এবং সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্বাধীন শাসকের বংশ বলে। এটা মনে রাখতে হবে। উপমহাদেশের মুসলমান আগ্রাসন এবং শাসনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ হলেও মুসলমান শাসক বলতে আমাদের মানসে প্রথমেই মুঘলদের কথাই মনে আসে। মুহম্মদ বিন কাশিমকে মনে হয় না কেউ স্থানীয় স্বাধীন শাসক দাবী করবে, করলে করবে মুঘলদেরই। মুসলমান শাসক মানেই এক বংশ বা একই মানসিকতার এমনো নয়। মুসলমান শাসকরাও নিজেরা নিজেদের মাঝে প্রবল বিক্রমে পাওয়ার ফাইট করেছে।
প্রথম দিককার এবং তারপরের মধ্যযুগের যেসব অত্যাচার নিপীড়নের বর্ননা দিলেন সে ইতিহাস কিছুটা জানি। আবুল কাশেমের রেফারেন্স না দিয়ে সাধারনভাবেই বললে পারতেন, আমাদের এসব কথাবার্তা অনেকেই পড়ে। ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ হিসেবে ব্র্যান্ডেড কারো রেফারেন্স দেখলে অনেকে আর নিজে জানারও আগ্রহ বোধ করবে না। প্রথম দিককার আরব হানাদেরদের (তাদের অবশ্যই স্থানীয় স্বাধীন শাসক বলা যায় না, তারা এসে আক্রমন, লুটপাট করে স্থানীয় একজন শাসক রেখে চলে যেতেন) প্রাঅথমিক ন্সল্টের পর কিছু মুসলমান বংশ বিদেশী হয়ে রাজ্য দখলের পর এখানেই থিতু হয়। এদের সাথে আরব আগ্রাসনকারীদের তূলনা সঠিক হয় না। বিন কাশেম গং উপমহাদেশে বসবাস করে রাজ্য বংশ বিস্তার করেননি। করেছিল দাস বংশ, খিলজী বংশ পরে মুঘল এরাই।
ইতিহাস বিশ্বাস করলে প্রাথমিক যুগের এসব বয়ানে সাধারনভাবে অবিশ্বাসের তেমন কিছু নেই।
তেমনি এটাও সত্য যে মুঘল শাসকদের সাথে সুলতান মাহমুদ (ইনি উপমহাদেশের শাসক নন, আফগানি, লুট তরাজের খাতিরে বারে বারে হানা দিতেন এবং ধর্মের নামে নানান অনাসৃষ্টি করতেন) বা ঘোরি তোঘলোকিরদের তূলনা চলে না। তাদের আমল মোটামুটি শান্তিপূর্ন ছিল, অন্তত যাদের বর্ননা দিলেন তাদের তূলনায় মুঘলরা ধোয়া তুলসী পাতা বলাটা মনে হয় অত্যূক্তি হবে না। অবশ্য যাদের মাঝে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ প্রবল তারা দুবৃত্ত লুলেরা সকলকেই ডিফেন্ড করা ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখেন।
সংক্ষেপে উপমহাদেশে ইসলাম আগমনের প্রাথমিক যুগ থেকে কয়েকশো বছরের শাসকদের সাথে পরবর্তি শাসক বিশেষ করে শেষ বংশ মুঘলদের ধর্মগত মিল থাকলেও শাসনগত পার্থক্য কিন্তু আছেই। মুঘলরা লুটপাট করে উপমহাদেশের বাইরে সম্পদ পাচার করেনি এটা অস্বীকারের উপায় নেই, প্রাথমিক যুগের হানাদাররা করেছে।
ইংরেজের শাসনকাল মুসলমান শাসনের তূলনায় অনেক সংক্ষিপ্ত হলেও আমার মনে হয় না যে দীর্ঘ মেয়াদেও ইংরেজ মুসলমান শাসকদের মত একসেপ্টেন্স পেত বলে। আগেই বলেছি যে উপমহাদেশে ধর্ম এখনো সংস্কৃতি গঠনে বড় ফ্যাক্টর, সেই আমলে আরো অনেক শক্তিশালী ছিল। উপমহাদেশের এক বড় সংখ্যক লোকে মুসলমান হওয়াতে মুঘলরা যত সহজে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে ইংরেজদের বেলায় ততটা হত না। তাও দেখেন হিন্দুরা মুঘলদের চিরকাল বিদেশী শাসক হিসেবেই দেখবে। এই মোটে সেদিন মনমোহন প্রথম যেবার প্রধানমন্ত্রী হয় তখন প্রথম হওয়ার কথা হচ্ছিল সোনিয়া গান্ধীর। তার বিরুদ্ধে সেক্যুলার ভারতেই ম্যাতকার শুরু হল, ছূতাটা অবশ্য ধর্ম দিয়ে নয়, তিনি ‘বিদেশী’ এই ধূয়া ধরে। মনে আছে বিজেপির এক নেত্রী মনে হয় সুষমা ভরদ্বাজ না কি যেন নাম উনি সোনিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে নিজের চুল কেটে ফেলবেন ঘোষনা দিয়ে প্রবল সাড়া ফেলেছিলেন। কংগ্রেস বিচক্ষনতার সাথেই সোনিয়াকে নিয়ে আর এগোয়নি। রাহুলের বেলায় অবশ্য এই কায়দা তেমন কাজ করবে না।
লেখায় বেশ কিছু, মানে আসলেই বেশকিছু ইতিহাসগত ভুল তথ্য আছে!
কোন লেখা লেখকের নিজ মনের সরল কথা হলেও – সাধারন তথ্যগত শুদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়।
@সংবাদিকা,
একটু বিস্তারিত বললে কেমন হয়?
@সৈকত চৌধুরী,
বিস্তারিত লেখা না লেখা একই কথা – কেননা এখানে তথ্যের ব্যাপার কোন আর্গূমেন্ট নয়। একটু খোজলেই পাওয়া যাবে।
শুধু একটা উদাহরণ দেই। লেখক বলেছেন –
সিরাজদ্দৌলাকে নিয়ে আমার মাঝে কোন রোমান্টিসিজম নেই – তবে তার পূর্ববর্তী শাসক বোধয় দিল্লীতে কর প্রদান বন্ধ করে দেন। যদিও নমিনালি নিজেকে সোভারেন ঘোষণা করেননি, তবুও করও দিতেন না।সিরাজদ্দৌলাও এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করেননি। এজন্যই “স্বাধীন নবাব” বলা হয়!
@সংবাদিকা,
লেখায় ভুল নাকি অমত বেশি? নবাবের বিষয়টা তো উল্লেখ করলেন।
@সুব্রত শুভ,
আপনার মূল ভাব এবং উদ্দেশ্যর সাথে সহমত।