টিভিতে দেখলাম ভোটের দিন রাতে অভয়নগরে হিন্দুরা বাঁচার জন্য অন্ধকারে নদীতে ঝাপ দিয়েছে। দিনাজপুরে এক প্রাইমারি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু হিন্দু পরিবার। আভয়নগরের এক বৃদ্ধ দেখলাম ঘটনা বর্ণনা করছে এভাবে “শালা মালাউনের বাচ্চা, বলে দিছে ঘায়”। এক মহিলা দেখলাম বলছে আমাদের বর্ডারে দিয়ে আসেন।সাঈদীর রায়ের পর থেকে যে কত হিন্দু বাড়ি পোড়ানো তার কোন হিসাব নেই। নোয়াখালি,চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা,লালমনিরহাট, যশোর,বরিশাল মোটামুটি সব জয়গাতেই হামলা হয়েছে।তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বোধহয় সাতক্ষীরার হিন্দুদের।

কাদের মোল্লার ফাঁসির রাতে আমাদের থানার নতুন বাজারের হিন্দুদের দোকান গুলোতে বেছে বেছে হামলা করা হয়, এক কসমেটিকস দোকান ভাঙচুর করে সারা রাস্তায় ছড়িতে ছিটেয়ে রাখা হয় ঐ দোকানের যত মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি, যে কসমেটিকসটি দোকান ভাঙচুর করা হয় তার পাশেই ছিল এক হুজুরের হারবাল ওষুধের দোকান, হামকারীরা ঐ দোকানের দরজাও ভাঙে, তবে ভেতরে ঢুকে বোধহয় ভূল বুঝতে পারে, তাই কোন রকম ভাঙচুর করেনি, ঐ হুজুরের দোকানের শুধু দরজাই ভাঙ্গা হয়েছিল আর কোন ক্ষতি তারা করে নি। এছাড়া তারা কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেয়। অনেক হিন্দুরে বলতে শুনি তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, কারণ প্রতিবার একটা করে রায় হয় আর তাদের উপর অত্যাচার শুরু হয়।

এমনিতেই এদেশের হিন্দুদের মাঝে এক ধরণের ভারত ম্যানিয়া কাজ করে,সেই পালে হাওয়া লাগাবে এই সহিংসতা।তবে অনেকে হিন্দুদের ইচ্ছে থাকলেও ভারতে যাতে পারছে না ,কারণ হিন্দুদের জমি জমা এখন কেউ কিনছে না।সবাই অপেক্ষায় আছে চলে গেলেই দখল করে নেবে,সেই সুযোগের।তারপরও প্রতিদিন মানুষ ভারতে চলে যাচ্ছে,যারা পাসপোর্টে যাচ্ছে তারও আর ফিরছে না।অনেকেই ভারতে সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছে, শুধু অপেক্ষা করছে দেশের পরিস্তিতি একটু হওয়ার।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান হিন্দুদের সংখ্যার ব্যাপারে যে হিসাব দেয় তা খুবই আশংকাজনক।
উইকির এই হিসাব মতে ১৯৪১ এ ২৮%,৬১তে ১৮%, ৭৪এ ১৩%,৯১এ ১০%,০১এ ৯.২% এবং ১১তে ৮.২% বা তার চেয়ে কম হিন্দু জনসংখ্যা আছে। বর্তমানে হিসাব করলে কি ফিগার আসবে জানি না কিন্তু এই হারে কমতে থকালে বিলুপ্ত হতে বেশী দিন লাগবে না।

এদেশের হিন্দুদের প্রায়ই বলতে শুনি “ভাই আমি হিন্দু মানুষ, ভিড়ের মধ্যে যাব না।”এদেশে হিন্দুরা সবসময় কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকে,কখন কি হয়ে যায়। অনেকে অপরিচিত এলাকার রাস্তা ঘাটে নিজের হিন্দু পরিচয় দিতে চায় না, হোটেল ঢুকে সচেতন ভাবেই জলকে পানি বলে। স্বাধীন দেশে এভাবে নিজের পরিচয় গোপন করতে চাওয়া নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক।

কিছু রোমান্টিক মানুষরা অবশ্য বলেন এটা নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ। কিসের সম্প্রতি, কিসের আম্লিগ, কিসের বিম্পি – হিন্দুদের জমি দখলের সময় এদের একতার শেষ নেই। কেউ কেউ বলে নির্বাচনী সহিংসতা,কেউ বলে আম্লিগরে ভোট দেয় বলে,এসব না বরং, এক বিশেষ চেতনায় বলিয়ান হয়ে কিছু লোক এসব কাজ করে আর কিছু চালাক এই সুযোগে লুটপাট করতে থাকে। এদেশের চোর ডাকাতরাও সহজ টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় কোন হিন্দু বাড়ি বা দোকান। কেন শুধু শুধু বাড়তি রিক্স নেবে।এরা যে শুধু টাকা পয়সা লুটে তাই না সাথে আরও কিছু লুটে নিয়ে যায়।

জানি না ভারতে চলে যাওয়াই একমাত্র সমাধান কিনা, এত লোক ভারতে গিয়ে খাবেই বা কি করে!
আমি এক হিন্দু ভদ্রোলোককে চিনতাম যিনি তার ভিটে বাড়ি বেচে দিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন,উনি মাঝেমধ্যে তার আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। উনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক কলা বাগানে দাঁড়িতে থাকতেন, যে বাগানটা এক সময় তার নিজের ছিল।

নিষ্ঠুর এই দেশে জন্মানোর জন্য হিন্দুদের হৃদয়ের মৃত্যু হয়ে গেছে অনেক আগেই,বাকী ছিল শুধু শারীরিক মৃত্যু,তার ব্যাবস্থাও পাকাপাকীভাবে করা হয়ে গেল।

হিন্দু বাড়ী ঘর পোড়ানোর খরব শুনতে শুনতে এখন যেন সব সয়ে গেছে, দেখেও কোন অনুভূতি হয় না, যেন ওরা কারও বন্ধু না, যেন ওরা কারও বাবা না, যেন ওরা কারও সন্তান না,যেন ওরা কোন মানুষ না, যেন ওরা শুধুই মালাউন।