৫ ডিসেম্বর ১৯৪৫।

ইউএস নেভাল এয়ার স্টেশন, পোর্ট লাউডেরডাল, ফ্লোরিডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বিকাল ২ টা ১০ মিনিট।

পাঁচটি টিবিএম আভেঞ্জার টর্পেডো বম্বার প্রশিক্ষণের জন্য একসাথে উড়ে গেল। এই ফ্লাইটের কোডনেম ছিল ফ্লাইট ১৯।

বিমানগুলোর কোর্স ছিল প্রথমে ৫৬ মাইল উড়বে, এরপর স্বল্প উচ্চতায় বোমাবর্ষণ করবে এরপর ৬৭ মাইল উড়বে তারপর ৩৪৬ ডিগ্রি ঘুরে ৭৩ মাইল উড়বে এরপর ২৪১ ডিগ্রি ঘুরে  ১২০ মাইল উড়ে নিজের বেস পোর্ট লাউডেরডালে ফিরে আসবে।

ফ্লাইট ১৯ এর নেতৃত্বে ছিলেন অভিজ্ঞ লেফটেন্যান্ট চারলস টেইলর। বাকি বিমানগুলো পাইলটরা ছিল অভিজ্ঞ। বাতাসের গতি ছিল স্বাভাবিক। সেদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির ভিতর দৃষ্টিসীমা ছিল ৬ থেকে ৮ মাইল।

বিকাল ৩ টা ৪৫ মিনিটে  টেইলর ১ম মেসেজ পাঠান, “We lost our way”
কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়, “Where are you now? Which place?”
তারপর টেইলর উত্তর দেন “we don’t understand anything”
বোঝা গেল ফ্লাইট ১৯ বিপদে পড়েছে। টেইলরের সাথে আরেক বিমানের পাইলটের যোগাযোগ থেকে বুঝতে পারা গেল টেইলর পথ হারিয়েছেন এবং ফ্লোরিডা উপকূল খুঁজতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাদের কম্পাসেও সমস্যা দেখা গিয়েছে।

এর মধ্যে বিকাল গড়াল সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে |এই অবস্থায় সূর্য দেখে দিক নির্ণয় খুব সহজ হয় ।

শেষে ৫ টা ১০ মিনিটে মেসেজ এল, “All planes close up tight… when the first plane drops below 10 gallons, we all go down together.”

এরপর বেতার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফ্লাইট ১৯ এর সাথে আর যোগাযোগ স্থাপন করা গেল না। বেতার বার্তা থেকে বোঝা যায় ফ্লাইট ১৯ ফ্লোরিডা অন্তরীপের পূর্বদিক থেকে হারিয়ে গিয়েছে। সেই ফ্লাইট ১৯ এর এই ছিল শেষযাত্রা। এরপর আর তাদের কাছ থেকে কোন শব্দও শোনা যায় নাই।

এটা ধারণা করা হল তারা সাগরের বুকে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে। তাদের ৮ টা পর্যন্ত চলার জ্বালানী ছিল। অন্ধকার যত হচ্ছিল সাগর ততই উত্তাল হচ্ছিল।

সাড়ে সাতটার দিকে একটি পিবিএম পেট্রোল বিমান উড়ে গেল ফ্লাইট ১৯ এর খোঁজে। সেই মারটিন মেরিনার শী প্লেনটিও ১৩ জন ক্রু নিয়ে হারিয়ে যায়।  ফ্লাইট ১৯ এর ১৪ এবং মারটিন মেরিনারের ১৩ মোট ২৭ জন যাত্রী সেদিন অদৃশ্য হয়ে যায়। তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নাই।

এটি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা অমীমাংসিত রহস্য। এই ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে।

১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিমান আর নৌবাহিনী আগর চষে ফেলে। কিন্তু ৬ টি হতভাগ্য বিমানের কোন খোঁজ আর মিলে না।

মারটিন মেরিনার যখন অদৃশ্য হয় তখন কাছাকাছি দিয়ে গাইনেস মিলস নামে একটি বিমান উড়ে যাচ্ছিল। সে বিমানের পাইলট আকাশে একটি অগ্নিগোলক দেখেন যা উল্কার মত পানিতে পড়ছিল। মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস সলোমনের নাবিকরা ঐ একই সময়ে আকাশে একটি আগুনের গোলক দেখেন। ইউএসএস সলোমনের সলোমনের রাডার অপারেটর মারটিন মেরিনার যখন আকাশে উড়ে তা রাডারে দেখছিলেন। তিনি দেখেন সাড়ে সাতটার দিকে রাডারের পর্দায় বিমানের কাছে একটি আগুনের গোলক এবং তারপরই বিমানটি রাডারের পর্দা থেকে অদৃশ্য হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন ঐ আগুনের গোলকই মারটিন মেরিনার।

তাহলে ফ্লাইট ১৯ এর ভাগ্যে কি ঘটেছিল?

এখানে কতগুলো ব্যাখ্যা এসেছেঃ

১। টেইলর ভুলবশত বিশ্বাস করেছিলেন যেই ছোট দ্বীপগুলো তিনি পার হয়েছিলেন সেগুলো ফ্লোরিডার দ্বীপ। তাই তার ভাবনা ছিল তিনি এখন গালফ অভ মেক্সিকোর উপর এবং উত্তরপূর্বে উড়ছিলেন যেন তিনি ফ্লোরিডা পৌঁছান। এটা প্রমাণিত টেইলর বাহামা ঠিক সময়ে পার হন এবং উত্তরপূর্বে উড়ছিলেন যা তাকে বিশাল অ্যাটলান্টিকের বুকে পৌঁছে দেয়। এরপর জ্বালানী শেষ হয়ে তারা মহাসাগরের বুকে পতিত হন।

২। টেইলরের কম্পাসের কাঁটা ছিল ক্রুটিপূর্ণ।

৩। আবহাওয়া সন্ধ্যা ঘনানোর সাথে সাথে খারাপ হতে থাকে।

৪। কিউবার বেতার ব্যবস্থা এবং আবহাওয়ার কারণে বেতার সংযোগ স্থাপনেও ঝামেলা হচ্ছিল।

১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সেদিন উড্ডয়নের ৭৩ সেকেন্ড পর যান্ত্রিক সমস্যার কারণে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার ভেঙে টুকরো হয়ে যায়, এবং এর আরোহী সাত জন মহাকাশচারী মারা যান। এর ধ্বংসাবশেষ পতিত হয় আটলান্টিক মহাসাগরেযুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে। দূর্ঘটনটি ঘটার সময় ছিলো উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক সময় সকাল ১১টা ৩৯ মিনিট, বিকাল ৪টা ৩৯ মিনিট। চ্যালেঞ্জারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে যাওয়ার সময় পাওয়া যায় একটি আভেঞ্জার বিমানের ধ্বংসাবশেষ। ১৯৯০ সালে তা সাগরবক্ষ থেকে তোলা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত হওয়া যায় নাই ওটা ফ্লাইট ১৯ এর বিমান কিনা?

১৯৯১ সালে ফ্লোরিডার উপকূলে পাঁচটি আভেঞ্জার বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। কিন্তু সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে দেখা যায় ওগুলো ফ্লাইট ১৯ এর বিমান নয়।

ফ্লাইট ১৯ এর ক্রুরা ছিলেন হতভাগ্য। বিমান থেকে বের হওয়ার আগেই তারা সাগরের বুকে আঁচড়ে পরেন এবং মারা যান। তাদের তো প্রিয়জন ছিল? কেমন লেগেছিল স্বজনহারা সেই সব মানুষদের?