বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটা বিপ্লবের জন্য কি কি প্রয়োজন?
১। জনসমর্থন
২।বিপ্লবী বাহিনী।
৩।সরকারের তার নিজের বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা অথবা জনবিচ্ছিন্নতা।
৪।বর্হিবিশ্বের সমর্থন।
জনসমর্থনের দিক থেকে দেখতে গেলে হেফাজতে ইসলামের কোন জনসমর্থন ছিল না। আমাদের দেশের মানুষ ধার্মিক। তারা ধর্ম পালন করার চেয়ে বিশ্বাস ধার্মিক পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করে। প্রতিটা গ্রাম থেকে শহরে মসজিদের হুজুরকে দাওয়াত করে ভাল ভাল খাবার দেয় । ঈদে তাদের জামা কাপড় ও দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এই হুজুরদের পছন্দ করে না। সমাজে মসজিদ ভিত্তিক তাদের সম্মান করা হলেও কোন প্রভাব খাঁটানোর অবস্থা কোথাও নাই। বেশির ভাগ মসজিদের ইমামরাই বেত ভুক্ত কর্মচারী। এবং এই বেতন কাঠামো একজন শ্রমিকের চেয়ে খুব তফাৎ নাই। একজন আমলার মতো বাড়তি টাকা উপার্জনের জন্য তার অনেক খাত নাই। তাই সে হয়তো ওয়াজ মাহফিল করে নয়তো এলাকার ধনী কোন ব্যক্তির তাবেদারি করে। এই রকম একটা পরনির্ভরশীল মানুষের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে নেয়া কতটা বাস্তব সম্মত?
একটু যদি তাকাই দেখতে পাই,কোন শ্রেণির মানুষ তার সন্তানদের এই হেফাজতী মাদ্রাসায় পাঠায়? আমাদের দেশটা দরিদ্র হওয়ার কারনে, এবং সরকারের অবহেলার কারনে এই দেশে দরিদ্র মানুষ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।নিজের সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য সব অভিভাবকই তো চায়। এই দেশে লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য খরচ কিভাবে যোগাড় করবে?
আর অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য সব কিছুই ফ্রি। থাকা খাওয়া এমন কি লেখা পড়ার সকল সরঞ্জাম সব কিছুই মাদ্রাসা বহন করে থাকে। কি ভাবে বহন করে সেটা অন্য প্রসঙ্গ। আর অশিক্ষিত বাবা তার সন্তানকে নিজের কাঁধ থেকে নামিয়ে হেফাজতী মাদ্রাসায় পাঠাতে পারছে। সাথে তার সন্তান যদি একটা মোল্লা হয়ে বের হয় তাহলে পরের বাড়ি খাওয়ার একটা উপায় তো হবে! এটাও কম কি?
তো সমাজে এই নিম্ন শ্রেণী থেকে গড়ে উঠা আলেমের দল সমাজের উন্নয়নে কোন প্রভাবই রাখতে পারেনা।তাই সমাজেও তার কোন প্রভাব থাকে না? এই দেশের একটা মসজিদের ইমামকে যদি ইউনিয়ন পরিষদের একটা মেম্বার দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় সে পাস করতে পারবে না। কারন এই শ্রেনীর উপর মানুষের কোন আস্থা নেই।আর জনগনের ভিক্ষার টাকায় যে চলে সে জনসাধারনের শাসকই কি করে হবে? তার তো শাসক হওয়ার মেরুদণ্ডই নাই।
শিক্ষার বিষয়টা এখানে মুখ্য না কারন গ্রামের অনেক অশিক্ষিত ব্যক্তি দক্ষতার সাথে গ্রাম্য বিচার সালিশ চালিয়ে যাচ্ছে। তাই হেফাজতী মোল্লারা যে অশিক্ষিত জাতি এটা আমার কাছে বড় কোন বাঁধা বলে মনে হয় না।
সোয়াবের লোভে হেফাজতীদের দান খয়রাত করলেও আমাদের দেশের মানুষ মোল্লাদের উপর বরাবরই নাখুশ। তারা থাকে তাদের নিজস্ব গণ্ডিতে। সমাজের মানুষের সাথে তাদের সম্পর্কও থাকে খুবই কম। সমাজে ভিক্ষুক থাকতেই পারে কিন্তু ভিক্ষুক তো সমাজের কোন অপরিহার্য এলিমেন্ট হতে পারে না। হেফাজতীদের অবস্থান সমাজের সাধারণ মানুষের চোখে এই রকমই। ভিক্ষুকেরা ও তো সমাজে খেয়ে পরেই বাঁচে। কিন্তু তারা সমাজের ভেতরে থেকেও যেমন সামাজিক না তেমনি হেফাজতীরা সমাজের ভেতর থেকে গড়ে উঠলেও তারা সামাজিক নয়।
চে গুয়েভারা শেষ জীবনের বিপ্লবকেও এখন সমালোচকেরা জনবিচ্ছিন্ন বিপ্লব বলে মনে করেন। ১৯৭৫ এর পরে এই দেশে যত অভ্যত্থান হয়েছে সবই ছিল জনবিচ্ছিন্ন। এমন কি জাসদের যে বিপ্লব হয়েছে তাও জনবিচ্ছিন্নতার ছিল।
এই পর্যন্ত হেফাজতের কোন আন্দোলনে আমি সাধারণ মানুষদের কোন সম্পৃক্ততা দেখতে পাই নি।সমাজের মানুষ তাদের আন্দোলন দেখে ,হাসে অথবা বিরক্ত হয় কিন্তু সম্পৃক্ত হয় না। আর জনবিচ্ছিন্ন একদল মানুষ যদি কোন ক্রমে এই দেশের ক্ষমতা দখল করতেও সমর্থ হতো কিন্তু কোন ভাবেই টিকে থাকতে পারত না।
বিপ্লবী বাহিনী।
একটা সরকার যেমনই হোক তার একটা সশস্ত্র বাহিনী অবশ্যই থাকবে। আর বিপ্লবীদের এই বাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে। কেউ যদি মনে করে সরকার তার বাহিনীকে ধর্মবাদী বলে তাদের উপর ব্যবহার করবে না এটা চরম ভুল। একটা সরকার যদি পতনের আন্দোলন সরকার অবশ্যই প্রতিহত করবে। যে কোন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তারা সময় মতো মাঠে নামনে। লক্ষ মানুষ মারা গেলেও সরকার তার পতনকে সহজে মেনে নেবে না। আর অল্প সময়ের ব্যবধানে বিদ্রোহী দমনে এই অঞ্চলটা অনেক সাহসী হয়ে উঠেছে। শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহী, ভারতে লাল গড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ঐ দুই দেশের সরকার যে ভাবে দমন নীতি চালিয়েছে এটাও মাথায় রাখতে হবে। মাও বাদী,তামিল বাহিনির মতো সশস্ত্রবাহিনী টিকতে পারেনি। আর হেফাজত আসলে লাঠি বল্লাম দিয়ে একটা আধুনিক সেনাবাহিনী বিশাল বহর থাকা একটা সরকারকে পরাজিত করতে। এটা খুবই হাস্যকর। যে সরকার মাত্র ১৫ মিনিটে একটা আন্দোলনকে ধুলিসাৎ করে দিতে পারে তার বিরুদ্ধে হেফাজতী প্রস্তুতিটা কি রকম ছিল সহজেই বুঝা যায়।
যে কোন দেশে বিপ্লব করতে গেলে সেই দেশের সরকারের অবস্থানটাও খুব জরুরি। দেশের বেশির ভাগ জনগন যদি সরকারের বিরুদ্ধে থাকে তবেই তা সম্ভব হবে। কিন্তু এই দেশের সরকারের বিরুদ্ধে জনগনের এই অবস্থান ছিল? জনগনের কাছে কি সরকার পতন কোন গুরুত্ব পূর্ন ইস্যু হিসেবে কেউ নিতে পেরেছে? পারেনি। হেফাজতীরা যে সব দাবী নিয়ে আন্দোলন করেছে তার সাথে তো সরকার পতনের কোন সম্পর্ক আগে ছিলই না। হঠাৎ তাদের মাথায় কেন এই দুর্বুদ্ধি এল আমার মাথায় আসে না।
আমি সরকারের দুর্বলতা বলতে বুঝি, সরকারের বাহিনীর উপর তার নিয়ন্ত্রণ না থাকা। কিন্তু এই দেশে এই অবস্থা এখনো হয় নি। সরকারের কোন সশস্ত্রবাহিনী এখনো পর্যন্ত সরকারের কোন নির্দেশ অমান্য করেনি। অতএব খুব সহজেই বুঝা যায় সরকার টিকিয়ে রাখতে এই বাহিনী অবশ্যই কাজ করবে। আর কোন বিপ্লব করতে হলে এই বাহিনীকে পরাস্ত করেই আসতে হবে। এই ক্ষেত্রে হেফাজতীদের তুলনা করলে বড় জোর একটা পাগলামী হতে পারে অন্য কিছু নয়।
স্বাধীনতার পর থেকে এই ছোট দেশটা কখনোই খুব সুশৃঙ্খল ছিল এটা বলা যায় না। তাহলে এখন যদি বলি দেশে বিশৃঙ্খলা চলছে তার কোন অর্থ থাকে না। জমাতী ছাগুরা কয়েক দিন তান্ডব চালিয়েছে এবং সরকার তা শক্ত হাতে দমন করেছে। দমন না করতে পারলে সেই পরিবেশটা হয়তো যে কোন বিপ্লবের জন্য সহায়ক হতো। এখন এই পরিস্থিতিতে কোন ভাবেই জোর করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার চিন্তা একমাত্র হেফাজতীদের এবং পাগলের থাকতে পারে। বিএনপি আধা পাগলা বলে হয়তো তারা এটা বিশ্বাসও করেছে।
বাংলাদেশের মতো ছোট,দরিদ্র একটা দেশ কোন ভাবেই বিশ্বের বড় বড় দেশের থ্রেড মোকাবিলা করে গুয়ার্তুমি করে এগিয়ে যেতে পারবে না। এই দেশের সরকার গঠনে ভোটের প্রভাব এবং বিদেশী রাষ্ট্রদূতের প্রভাব প্রায় সমান। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে হাসিনা খালেদা যতবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে তার চেয়ে বেশি বৈঠক করেছে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সাথে। অতএব সহজ কথায় প্রভাবশালী দেশ গুলোর সমর্থন না পেলে এই দেশে সরকার টিকে থাকতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমনিতেই জঙ্গিবাদ একটা ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ইসলামী জঙ্গি ব্যপারে সারা পৃথিবীতে মানুষের খারাপ ধারনা আছে। দেশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য গোপনে কিছু সমর্থন দিলেও প্রকাশ্যে কোন রাষ্ট্র এখন এই ইসলামী জঙ্গিদের সমর্থন দিতে পারবে না। বিএনপি ,জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে দেখা গেলেও তারা এখন হেফাজতী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে এই কথাটা স্বীকার করতে রাজি নয়। বিএনপি,জাতীয় পার্টি ভালই জানে এদের সমর্থন দিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে কোন সমর্থন আদায় করা যাবে না। তাই সময় মতো তারা পিছু হটে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে এশিয়াতে অনেক সুশৃঙ্খল বিপ্লবী বাহিনী পরাস্ত হতে হয়েছে। অনেক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও মাওবাদী,তামিল টাইগার এমন কি নির্বাচন করে নেপালে ক্ষমতায় আসা বামপন্থীরাও টিকে থাকতে পারেনি। আর হেফাজত তো সেই তুলনায় তেলাপোকা।
কিছু কিছু অন্ধ রাজনীতিক কর্মীদের হেফাজতি আন্দোলনে সমর্থন দিতে দেখি। আমি যখন প্রশ্ন করি আপনার ছেলে বা মেয়েকে নিশ্চয় সামনের বছর হেফাজতী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিবেন। সে রাজী হয়না। হেফাজতী মাদ্রাসায় পরে যদি দেশের প্রখ্যাত আলেম হওয়া যায়, তাদের সমাজে যদি উঁচু অবস্থান থাকে তবে আপনার সন্তানকে কেন দিবে না?
আমি উত্তর দিচ্ছি, আপনি ঘটনাসূত্র গেথে একটি কনসিসটেন্ট কাহিনী বলুন।
১ আল-কায়দা, তালেবানরা বৈশ্বিক ফেনমেনন কবে থেকে? – তালেবানের উথ্থান ৯০ দশকের মাঝখানে, মূলত পাকিস্তানের হাত ধরে। রাশিয়া আফগানিস্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে আমেরিকাও আফগানিস্থান থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। এই সময়ে বিভিন্ন সাবেক মুজাহেদীন বাহিনী আর ওয়ারলর্ডরা নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি করতে করতে আফগানিস্তানকে পুরো ধ্বংসস্তুপ করে ফেলে। পাকিস্তান সেসময়ে আফগানিস্তানের উপরে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্যে সীমান্তবর্তী পশতুন তরুন মাদ্রাসা ছাত্রদের সংগঠন করে তালেবান বাহিনীর প্রতিষ্ঠা করে যা কয়েক বছরের মধ্যে আফগানিস্তানের ৮০% জায়গা দখল করে নেয়।
আলকায়েদার উথ্থান ৯০ দশকেই। প্রথমে আলকায়েদার সংগঠন ছিলো আরব দেশগুলিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে। মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকায় বিভিন্ন মার্কিন টার্গেটে হামলার মাধ্যমে ৯০ দশকের শেষভাগে আলকায়েদা ও বিন লাদেন দুনিয়ার শিরোনাম হয়ে আসে।
২ ওদেরকে টেররিস্ট বলে দুনিয়ার মানবতা রক্ষায় আম্রিকা উদগ্রীব হয়ে উঠেছে কবে থেকে?
৯০ দশকেই আলকায়েদা আমেরিকার বড়ো টার্গেট হয়। কিন্তু এই লড়াই ছিলো এফবিআই সিআইএ দ্বারা নানা রকম গোপন অপারেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাঝে মাঝে কয়েকটি ঘাটিতে বিমান হামলা। কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ, দেশদখল সবই শুরু হয় ২০০১ এর সেপ্টেম্বর থেকে।
৩ ইসলাম দুনিয়ার শত্রু এই চেতনা তথাকথিত যুক্তিবাদীদের মুখে খই ফোটাচ্ছে কবে থেকে? ইসলাম আর আধুনিক বিশ্ব যে সংঘর্ষের মুখোমুখি এটা অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছিলো। কিন্তু যেহেতু মুসলিম দেশগুলো শক্তিহীন, বিভক্ত এইকারনে এই ধারনাকে তেমন পাত্তা কেউ দেয় নি। ১৯৯২ এ স্যামুয়েল হান্টিংডনের The Clash of Civilizations বইটি একটি ল্যান্ডমার্ক। এই বিখ্যাত বই এর পরেই মুসলিম বনাম পশ্চিম সংঘর্ষের আলোচনা বেগ পায়। তবে আবারো ২০০১ এর আগে এই ধারনা জনমধ্যে তেমন প্রসার পায়নি।
৪ লাদেন বিশ্বের এক নাম্বার টেরোরিস্ট কবে থেকে?
১৯৯৭-৯৮ সালে ইয়েমেন, আফ্রিকায় বিভিন্ন আমেরিকান টার্গেটে বোমা হামলার পর থেকেই।
৫ সার্বিকভাবে আফগানিস্তান শব্দটা রাজনীতি অসচেতন মানুষের মনেও ধাক্কা লাগায় কবে থেকে?
৮০ এর দশকে। আফগানিস্তানে রুশ দখলের পর থেকেই আফগান মুজাহিদ বনাম রুশ বাহিনী’র যুদ্ধ সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্টোরী লাইন। আপনি যদি বাংলাদেশে ৮০ এর দশকের পত্রিকাগুলো ঘাটেন তবে দেখবেন দিনের পর দিন কেমন করে আফগান কাহিনী পত্র পত্রিকায় বিপুল ভাবে আসছে। অনেক বাংলাদেশীই সে সময়ে আফগানযুদ্ধে যোগদানের জন্যে গিয়েছিলো। সেগুলি শুধু মাদ্রাসার ছাত্র নয়, আমি এমনকি মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারের দুইজনকে ভালোভাবে চিনি যারা সে সময়ে আফগানিস্তান গিয়েছিলো।
এখন আমাকে বলুন এই প্রশ্নের উত্তরগুলোর ধারাবাহিকতা কি?
@সফিক,
আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইনভেশন হয় ১৯৭৯ তে। ঠাণ্ডা যুদ্ধকে একটা আলাদা মাত্রা দেয় এই ঘটনা।
সোভিয়েত ঠেকাতে আম্রিকা সামনে নিয়ে আসে আল কায়দাকে। আল কায়দার শুরু।
আল কায়দার সর্বশেষ পরিবেশনা ৯/১১/২০০১। এই সময়টুকু সম্পর্কেই আমি এতক্ষন বলে যাচ্ছি খেয়াল করে থাকবেন। ঠান্ডা যুদ্ধে যার উৎপত্তি ৯/১১তে তার সবচাইতে বড় বিস্ফোরন। এখব কোন ধারাবাহিকতা দেখতে পাচ্ছেন?
আমার এক নাম্বার পয়েন্টের উত্তরে আপনার বলার সাথে আমি যততুকু যোগ করতে চাই সেটা করতে গেলে এখানে কুলাবে না। শুধু মাদ্রাসা দিয়েই হয় নি, সাধারন মানুষের কাছেও তালেবানরা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। এই ইতিহাস অনেক ব্যাপক। তারপরেও আপনার ব্যাখ্যা মেনেই নিয়েই আমার কথার সাথে এবং আপনার দেয়া টাইম লাইনের সাথে সমন্বয় করতে কোন সমস্যা হবার কথা না।
@সাইফুল ইসলাম, “সোভিয়েত ঠেকাতে আম্রিকা সামনে নিয়ে আসে আল কায়দাকে”-আল কায়েদার সৃষ্টি ৯০ এর দশকে। ৭৯ এ আফগানিস্তানে রুশ অভিযানের পরে সেখানে মুজাহেদীন রা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। আমেরিকা মুজাহেদীনদের নানা প্রকার সাহায্য প্রদান করে কারন রুশদের ঠেকানো অবশ্যই আমেরিকার লক্ষ্য ছিলো। আমেরিকা ইনভলভড না হলেও সেখানে মুজাহেদীন প্রতিরোধ চলতো। কারন আফগানিস্তান ২০০ বছরে কখনো বাইরের শক্তির আধিপত্য মেনে নেয় নি। আর আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যেখান দখল বজায় রাখা যেকোন শক্তির পক্ষে খুব কঠিন।
আপনার কথাগুলো পরে মনে হয় আপনি মনে করেন পুরো বিশ্ব হলো বিভিন্ন পরাশক্তির দাবার বোর্ড। আর আমরা সবাই নীরব পুতুল।
এই একই যুক্তিতে বলা যায়, ভিয়েতনামে আমেরিকাকে ঠেকাতে রুশ-চীনা রা সামনে নিয়ে আসে ভিয়েতকং দের। আরো বলা যায় পাকিস্তানকে ঠেকাতে ভারতে সামনে নিয়ে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের।
পারবেন এই কথাগুলো বলতে?
@সফিক,
দেশের ক্ষমতা দখলের মত বড় ব্যাপার বাহ্যিক কোন শক্তির প্রভাব ছাড়া হওয়া সহজ নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সফলতাও ভারতের সহায়তা ছাড়া সম্ভব হত আমার কাছে এখন পর্যন্ত তেমন প্রতীয়মান হয়নি, যদিও অনেকে অনেক রকম দাবী করেন। তাই বলে কেউ যদি পাকিস্তানী ভার্ষান মত দাবী করে যে মুক্তিযুদ্ধে আসলে বাংগালী জাতীয়তাবাদ ফাদের কোন ব্যাপার ছিল না, সবই ছিল ভারতীয়/রুশ ষড়যন্ত্র (পাকিস্তানীরা এখন দাবী করে সাথে মার্কিন/ইসরায়েলী ষড়যন্ত্র) তবে বলতে হয় যে সে মূল্যায়ন এক্কেবারেই কাগুজে এবং অসম্পূর্ন। মুক্তিযুদ্ধ সফল না হলেও বাংগালী জাতীয়তাবাদ থেকেই যেত। তার প্রকাশ হয়ত সময়ের সাথে অন্যভাবে ঘটত। আফগানিস্তানও তেমনি এখনো রুশ অধীনে থাকলেও সেখানে ধর্মীয় মৌলবাদ অবশ্যই থেকেই যেত।
আমি এখনো সোজা কথায় বুঝতেই পারছি না যে আল কায়েদা, প্যালেষ্টাইন এসব সমস্যার সাথে বাংলাদেশের মৌলবাদের সম্পর্ক ঠিক কতটা যে সমস্যার আসল যায়গা আলোচনার জন্য এক্কেবারে গৌণ বিবেচনা করে মধ্যপ্রাচ্য আফগানিস্তানে দৌড় দিতে হবে। সম্পর্ক অবশ্যই অল্প হলেও আছে, বাংলাদেশের মৌলবাদীরা সেখানকার মৌলবাদীদের সফলতায় উদ্দীপ্ত হচ্ছে (ইরান বিপ্লব, ৯১১ বয় উদ্দীপকের ভূমিকা রেখেছে) সেখান থেকে বেশ কিছু লজিষ্টিক সাপোর্টও আসছে। এসব বড়জোর টেনে টুনে ‘৭৫ পর্যন্ত হয়ত যাওয়া যায়। এসব লজিষ্টিক সাপোর্ট/উদ্দীপনা আগে থেকেই থেকে থাকা মৌলবাদকে সহিংস দিকে নিতে সহায়তা করছে, এই যা। কিন্তু তাই বলে আমাদের দেশে মৌলবাদ সেসব প্রভাব ছাড়া কোনদিন ছিল না এমন ভাবনা খুবই ভ্রান্ত এবং চরমভাবে পক্ষপাতপূর্ন।
আগেই বলেছি যে আমার কাছে বোমাবাজি জাতীয় মৌলবাদের চেয়ে সংস্কৃতির সাথে মিশে থেকে নিত্য দিন অবাধে মৌলবাদের যে চর্চা চলছে তা অনেক বেশী বিপদ জনক মনে হয়। বোমাবাজি জাতীয় মৌলবাদ নিয়ন্ত্রন অনেক সহজ সরকার কঠোর হলে যা আমাদের দেশেই প্রমানিত হয়েছে। এই জাতীয় মৌলবাদী হামলা বাইরের লজিষ্টিক, আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক সাহায্য ছাড়া হয় না। নিত্যদিনের মৌলবাদী চর্চা নিয়ন্ত্রন আইন আদালত পুলিশ র্যাব দিয়ে সম্ভব নয়, সেসবের পেছনে বাইরের ভূমিকা গৌণ। ঘোর কট্টরপন্থী লোকেও প্রকাশ্যে সহজে বলবে না যে বোমাবাজি করে নিরীহ মানুষ মারা ধর্ম সম্মত (যদিও এ জাতীয় আলামতও কিছু আছে)। কিন্তু ধর্মের নামে মহিলা বিদ্যালয় বন্ধ করার ফতোয়া বুক ফুলিয়ে প্রকাশ্যেই দেবে এবং আরো বিপদজনক হলে ধর্মের প্রতি মায়া বশত লোকে সেসবের শক্ত প্রতিবাদ/প্রতিরোধ করতে দ্বিধায় ভুগবে। বর্তমানে যা লিখছি সেজন্য হালে বিখ্যাত হয়ে ওঠা আল্লামা শাফির কিছু কথাবার্তায় আমি চরমভাবে বিস্মিত হয়েছি, বিস্মিত হয়েছিল তার কথাবার্তার কারনে নয়, এমন ধ্যানধারনা পূর্ন একজন লোকের নেতৃত্বে দেশের এক বড় সংখ্যক লোকে দেশে ধর্মীয় চেতনার জাগরন হয়েছে দাবী করে তৃপ্তিতে ভুগছে দেখে।
বোমাবাজি জাতীয় মৌলবাদ নিয়ে দুটো কথা বলি। আমেরিকা খারাপ মেনেই নিলাম। আমেরিকা পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে তাই পাকিস্তানী জেহাদী এসে আমাদের দেশে জেহাদী বোমাবাজ তৈরী করেছে এ ঘটনার জন্য আমি দেশীয় বোমাবাজ বা পাকিস্তানীক্যা পাশ কাটিয়ে আমেরিকাকে দোষ দিলে আমার মাথার সূস্থতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেবে। পাকিস্তানী ভাই আমেরিকায় গিয়েই তার হিসেব মেটাক না, আমার কিছু বলার নেই। আমার দেশে কেন? ৯১১ এর পর দোষারপের ব্যাপারে এই হিসেবই অনেকের মাঝে কাজ করছে। বাংলা ভাই বাহিনী দেশে বোমাবাজি করেছে, এখন সে বোমাবাজির মূল উদ্দীপক আলোচনায় আনা যাবে না, ব্যাখ্যা করতে হবে আমেরিকা প্যালেষ্টাইনে মুসলমান হত্যায় ইন্ধন দিচ্ছে, ইরাক আফগানিস্তান দখল করেছে তাই আমাদের দেশে এ জাতীয় সমস্যা তৈরী হচ্ছে? বাংলা বাহিনী জাতীয় দলের লোকজন ধরা পড়লে তাদের কাছে সিআইএ এফবিআই এর দলিল পাওয়া যায় নাকি অন্য কিছু পাওয়া যায়?
ভারতেও মৌলবাদ আছে, সে মৌলবাদ কোন বহিঃশক্তি বানিয়েছে জানতে ইচ্ছে করে। রাশিয়া, আমেরিকা, ইসরায়েল – ? নাকি আসলে উমহাদেশের সংস্কৃতিতেই থেকে থাকা মৌলবাদ নিজে থেকেই ভারতে আছে? ভারতীয় মৌলবাদীরা গোষ্ঠিগত সংঘাতে ইন্ধন দেয় , কিন্তু তারা কি দেশের প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান পালটে তাদের ৩ হাজার বছর আগের লিখিত ধর্মগ্রন্থ দিয়ে দেশ চালাবে এমন মেনিফেষ্টো প্রকাশ করে? নাকি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদী এসব দেশে মৌলবাদ বিদেশীদের সৃষ্টি এবং ভারতের মৌলবাদ নিজেদের প্রোডক্ট?
@আদিল মাহমুদ,আপনি এতো বড়ো বড়ো কমেন্ট করতে পারেন আর একটা ছোট খাটো পোস্ট লিখতে পারেন না? এটা কিন্তু খুবই অন্যায় হচ্ছে। মার্চে লেখা আপনার “ব্লগার রাজীব ও দ্বিখন্ডিত গণআন্দোলন” (http://blog.mukto-mona.com/?p=34254) আমার পড়া এই বছরের অন্যতম সেরা একটি অনুসন্ধানী কলাম। বলতে গেলে বাংলাদেশে সবার আগেই, আপনিই হেফাজত, যুদ্ধাপরাধ ও জামাতের সম্ভাব্য মিলন মেলার বিশ্লেষন করেছিলেন। সেই মার্চের পর আর কোন লেখা নেই!!
এই কমেন্টে আপনি যা বলতে চেয়েছেন সেটার সাথে পূর্ন সহমত। মুসলিম বিশ্ব ও আমাদের নিজের দেশের পশ্চাৎপদতা আর হীনমন্যতার একটা বড়ো কারন হলো আমরা কখনোই নিজেদের রেসপন্সিবিলিটি নিতে রাজী নই। সবকিছুই আমরা বাইরের শক্তির উপরে চাপিয়ে নিজেদের দ্বায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করি। একসময়ে ছিলো ইংরেজ আর এখন আমেরিকা।
কেউ যদি বলে যে ৭১ এর যুদ্ধ ছিলো ভারত-পাকিস্তানের একটি দ্বন্দ্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার সেই দ্বন্দ্বেরই ক্রীড়নক মাত্র, সেটা যেমন হাস্যকর অতিসরলীকরন হবে ঠিক তেমনি কেউ যদি বলে ৭১ এ বাংলার দামাল ছেলেরাই পাকিস্তান আর্মীকে পরাজিত করে দেশকে মুক্ত করেছে, সেটাও হবে সরলীকরন। বাস্তবতা এই দুই এক্সট্রীমের মধ্যে কোথাও, নট নেসেসারি একদম মধ্যখানে।
আমার ঠিক এই কারনেই বার বার বিরক্ত লাগে যে বলা হয় আমেরিকা রাশিয়াকে হারানোর জন্যেই তালেবান, আল কায়েদা, মৌলবাদ সৃষ্টি করেছে আর এখন নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। এই কথার সাথে এটাই তুলনা করা যায় যে ভারত নিজের প্রয়োজনেই বাংগালী জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করেছে এরকম কথার। এসবরেই উদ্দ্যেশ্য হলো কষ্টকর আত্মবিশ্লেষন এড়িয়ে বাইরের উপরে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়া। ইতিহাসের যেকোনো পরাশক্তির মতই আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্যে নানা রকম কূটকৌশল, সমরনীতি অনুসরন করে ও করবে। একথাও কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান ও ইস্রায়েলী আগ্রাসন ইসলামী মৌলবাদকে উস্কে দিয়েছে বিপুলভাবে। কিন্তু মৌলবাদের আন্তজাতিক ডাইমেনশনের চেয়ে যে দেশীয় ডাইমেনশনই বেশী গুরুত্বপূর্ন, সেটাই যে দেশে দেশে রাজনীতির বড়ো একটা নিয়ামক, এটা অনেকের চোখ এড়িয়ে যায়।
সমস্যার মূল হলো যে ইসলামী সমাজগুলো এখনো মডার্নিটিকে মেনে নিতে পারেনি। চিরকালের জন্যে অক্ষয় পার্ফেক্ট জীবনধারা আর বিংশ শতাব্দীর অভূতপূর্ব দ্রূত সমাজ, জীবন, রাজনীতির পরিবর্তনের মধ্যেকার দ্বন্দ্বটাই যে মৌলবাদের মূল সূত্র, এটা মানুষকে বোঝানো মুস্কিল। এমনকি আধুনিক আল কায়েদা, সন্ত্রাসী মৌলবাদের মূল দীক্ষাগুরু সাইয়িদ কুতব (https://en.wikipedia.org/wiki/Sayyid_Qutb) এর লেখাগুলো থেকেও স্পষ্ট হয়ে উঠে যে পশ্চীমের রাজনীতি নয় বরং পশ্চীমের মুক্ত জীবনের প্রতিক্রিয়াই মৌলবাদীদের তীব্র আতংকের মূল উৎস। কোন এক পরাশক্তি যত শক্তিশালীই হোক, তাকে কোনভাবে না কোনভাবে একসময় হারিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু সেকুলার ভোগবাদী গনতন্ত্রকে কিভাবে ঠেকানো যেতে পারে এর কোন দিশা কারো কাছে নেই। একসময় তাও কমিউনিজম একটা বিকল্প ছিলো, এখন সেটাও নেই।
আফগানিস্তানে আমেরিকার মুজাহেদীন পোষন আর ৭১ এ বাংলাদেশে ভারতের মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করার মধ্যে একটা মিল আমাকে বেশ মজা দেয়। কথায় আছে যে কাউকে শত্রু বানোনোর সবচেয়ে সোজা উপায় হলো তার উপকার করা। আমেরিকা মুজাহেদীনদের সাহায্য করেছিলো রাশিয়ান শক্তিকে একটা বড়ো আঘাত করা জন্যে। সেই মুজাহেদীন দের বড়ো অংশই পরে আমেরিকার জন্মশত্রু হয়ে দাড়ায়। এর পিছনে আরো অনেক কাহিনী অবশ্যই আছে তবে আমেরিকার সাহায্যই যে একসময়ে তার বিরুদ্ধে ব্লোব্যাক হিসেবে ঘুরে আসে এটা মোটাদাগে সত্যি।
ঠিক এমনটিই দেখা যায় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। ভারত নিজস্বার্থেই মুক্তিযোদ্ধাদের লালন করেছিলো এবং যুদ্ধের ওভারওল নীতি নির্ধারন করেছিলো। কিন্তু এটাও ঠিক যে ভারতের সাহায্য না পেলে বিশ-তিরিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কখনোই এক-দুই বছরে পাকিস্তান বাহিনীকে হারানো সম্ভব হতো না। হয়তো মুক্তিযুদ্ধ ৭০-৮০ দশকে বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম অন্চলের সর্বহারা জনযুদ্ধের মতোই কিছু একটা হয়ে থাকতো।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাসে একটা জিনিষ খুবই স্পষ্ট যে যুদ্ধের পর থেকেই প্রকৃত যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের এক বড়ো অংশের মধ্যে ভারত বিরোধীতা কি পরিমানে প্রবল হয়ে উঠে। মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ আর্মী তো বটেই এমনকি সবরকমের বাম ধারার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ভারতবিরোধীতা ছিলো তীব্র প্রকট। আমি এটাও পড়েছি যে প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী সেনা কর্মকর্তা দের বড়ো অংশের (মন্জুর এবং অন্যান্য) অন্যতম একটা অভিযোগ ছিলো যে তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেশী শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন না। জিয়া, যিনি বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন, তিনিও অভিযুক্ত হয়েছেন ভারত তোষনকারী হিসেবে! ৭০-৮০ দশকের লেখালেখি থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে সেই সময়ে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতবিরোধীতা, সমাজের উচ্চ থেকে মধ্য শ্রেনী ব্যাপি, এখনকার চেয়ে বেশী বই কম ছিলো না। ৭৫ এ তাহের এর বিপ্লবের মূল চালক প্রেরণা ছিলো সেনাবাহিনীর ভারতবিরোধীতা, শ্রনীহীন সমাজের স্বপ্ন নয়। আমার তো মনে হয় যে শেখ মুজিব নিহত না হলেও বাংলার রাজনীতির এই মেরুকরন একই রকমই হতো হয়তো। হয়তো শেখ মুজিব নিজেই হতেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রূপকার। ৭৪-৭৫ এ তার রাজনীতি অনেকটা সেই রকমই পথ দেখায়।
অনেকেই খুব সহজে অবলীলায় বলে ফেলেন যে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে দ্বিজাতি তত্বের কবর রচনা করেছিলো। ৭৫ এর পরে সামরিক একনায়কেরা সেই ভুতকে পুনরুথ্থান ঘটায়। এটা আমার কাছে আরেকটা অতি সরলীকরন মনে হয়। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। জিয়া-এরশাদ-খালেদা কেবল সেটাকে কাজে লাগিয়েছে নিজ সুবিধায়।
৮০ এর দশকে কোন এক ভারতীয় কলামিস্ট লেখেছিলেন যে ১৯৭১ এ ভারত এক পাকিস্তান ভেংগে দুটো পাকিস্তান বানিয়েছে। এই কথাটা সরলীকরন হলেও সারবত্তাবিহীন নয়।
@সফিক,
একটা নুতন লেখা আসছে, আজকালের মধ্যেই নামবে, দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি বেশ পুষিয়ে যাবে, কারন মেগা সাইজের লেখা হচ্ছে, পার্ট করে দিলে কন্টিনিউটি নষ্ট হয়। সেটার মূল বক্তব্য আপনার এ লেখার বেশ কিছু অংশ নিয়ে লেখা, যেমনঃ
– মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মাঝেই আবেগের পরিমান বেশী, তাই ফ্যান্টাসির জগতে বিচরনের প্রবনতাও বেশী। তারাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন যে জলপাই ওয়ালারাই মৌলবাদীদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাই মৌলবাদের উত্থানের জন্য তারাই দায়ী, নইলে বাংগালী অতি উদার……ঈদে পূজায় একে অপরের অনুষ্ঠান উপভোগ করে……ইংরেজ আমলের আগে কোন সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়নি ইত্যাদী ইত্যাদী……
যেটা বাস্তব তা হল সমাজে উদার/কট্টর দুই ধরনের মূল্যবোধেরই সহাবস্থান বহু আগ থেকেই আছে। জিয়া/এরশাদ সেটাকে সফল ভাবে ব্যাবহার করেছে মাত্র। এরপর নানান এলিমেন্টের প্রভাবে কট্টরপন্থীরা দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়েছে। পাকিস্তান আমলে বাংগালী জাতীয়তাবাদের প্রভাবে সাময়িকভাবে মৌলবাদ ছিল সুপ্ত। বিপদ ঘাড় থেকে নামার পর সুখে থাকলে ভুতে কিলায় নীতিতে সেই মৌলবাদকে ঘটা করে তোষন করার নীতি বলতে গেলে আম জনতাই গ্রহন করেছে, শুধু সেনা শাসকদের দোষ দিয়ে নিজেরা সাধু সাজা অন্যায়।
দুই ধরনের মূল্যবোধের সহাবস্থান দিনে দিনে বিরাট হয়ে দেখা দিচ্ছে, জন্ম দিচ্ছে মারাত্মক মেরুকরনের যার প্রভাব দেখা গেছে এবারের শাহবাগ আন্দোলন কেন্দ্র করে হেফাজতের আন্দোলনের প্রতি ব্যাপক সমর্থনের মধ্য দিয়ে। প্রমান হয়েছে যে দেশে যুদ্ধপরাধী ইস্যু নিয়ে আসলে বিভাজিত নয়, বিভাজিত হল ধর্মীয় মূল্যবোধ কেন্দ্র করে। সবচেয়ে মারাত্মক হল ধর্মকেন্দ্রিক ব্যাবস্থায় যারা বিশ্বাসী তারা ধর্মের বিজয়ের নেশায় রাজাকার, চরম মৌলবাদীদের সাথে জোট বাধা ধর্মনিরপেক্ষ ধারা ঠেকাতে খুশী হয়েই বেছে নেবে।
মুসলমান সমাজ, বিশেষ করে যেসব সমাজে কিছুটা হলেও বাক স্বাধীনতা আছে সেসব সমাজেই মূল্যবোধের সঙ্ঘর্ষ দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে, আরো হবে, ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন অতিরঞ্জন শোনালেও বাস্তব। মৌলবাদের তোষন করা এরই প্রক্রিয়া।
স্বাধীনতা পরবর্তি লোকের ভারত বিরোধী হয়ে ওঠার কারন ছিল, লোকেরও দোষ দেওয়া যায় না, তবে যেটা আমাদের দোষ, এটা বিরোধীতা থেকে পরিনত হয়ে গেছিল বিদ্বেষে। খালেদ মোশারফের বিপ্লব যেভাবে রাতারাতি ব্যার্থ হয়ে তাকে ভারতীয় দালালে পরিনত করে তা রীতিমত অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্য। ঘটনাক্রমে ৬ই নভেম্বর ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্টে ফুলের বুকে নিয়ে গেছিলেন আগে থেকে নির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য, সেটা ছিল আক্ষরিক অর্থে খালেদের কফিনের শেষ পেরেক…এর আগে ছিল তার মা ভাই এর আওয়ামী মিছিলে শরিক হওয়া।
বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাও স্বাধীনতার পর নিজেদের ভেতর হানাহানি খুনাখুনী এরপর বিশ্বময় সন্রাস করে বেড়ালে আমরাও মনে হয় ভারতেরই দায় আগে দিতাম। আমরা তো সাধু, ভারতীয়রাই না সন্ত্রাসী বানিয়েছে। আমেরিকা যখন রুশ ঠেকাতে আফগানদের পাকিস্তানের থ্রুতে সাহায্য দেয় তখন আজকের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে ত্যাক্ত, বিশ্ব সন্ত্রাসের জনক আমেরিকার সেই সহায়তা প্রদানে আপত্তি কে কে করেছিলেন তা জানতে বড় সাধ হয়। কয়টা মুসলমান দেশ থেকে সেই মার্কিন নীতির বিরোধীতা করেছিলেন? তালেবানের উত্থানে উদার বাংগালী জাতির প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তারা তখন জানত না যে তালেবান বিশ্ব শয়তান মার্কিনীদের সৃষ্টি? আমেরিকা সম্ভবত বলেছিল রুশ হঠিয়ে এরপর তোমরা নিজেদের ভেতর হানাহানি কর, শুধু তাই নয় দেশে দেশে জেহাদ রফতানী শুরু কর। অবশ্য পাকিস্তানের আবার কোনই দায় নেই, আল কায়েদা = আমেরিকা। পাকিস্তান গৌণ। কারন পাকিস্তানের প্রসংগ আসলে একচেটিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ওপর দায় চাপানো খানিকটা হলেও থমকে যায়, পাকিস্তান যেহেতু মুসলমান দেশ তাই তারা ভিক্টিম। ভিক্টিমকে কিভাবে একিউজের তালিকায় ফেলা যায়?
@সফিক,
আমাদের দুইজনের কথাই বলা হয়ে গেছে। প্রশ্ন হল, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আল কায়দার সৃষ্টি আম্রিকার হাতে কমিউনিজমের জুজুর ভয়ে, এই সর্বজনীন ঐতিহাসিক সত্য আপনি মানেন কী না। আর এটাতো আমার দৃষ্টিভঙ্গী না যে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যুক্তির নির্দিষ্ট কাঠামো দিয়ে বিচার করব। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। বাঙলাদেশ আর ভিয়েতনামে কেউ টাকা খরচ করে কোন বাহিনী বানিয়েছে এই অভিযোগ কেউ করেছে কোন দিন? আমার জানা নাই। প্রভাব খাটিয়েছে। রনতরী নিয়ে খেলাধুলা করা আর নিরাপত্তা কাউন্সিলে ভেটো দেয়া যার প্রমান। কিন্তু টাকা দিয়ে ভিয়েতকং বা মুক্তিযোদ্ধাদের নামানো হয়েছে এই কথা কেউ বলা তো দূরের কথা কেউ ভেবেছে কী না সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।
নীচে ভিডিও লিঙ্ক দিয়েছি একটা দেখুন। হিলারী ক্লিনটন কী বলছে দেখুন। তারপরেও না মানলে সেটা আপনার স্বাধীনতা। বাড়তি কিছু বলার নাই। আমি আপনাকে ইতিহাসের বই পড়তে বলব না কারন আমি উপদেশে বিশ্বাসী না। প্রত্যেকেরই যা ইচ্ছা তা মানা, না মানার অধিকার আছে। ভিডিওটা দেখার পরে হিলারি ক্লিনটনকে বোঝান। সে বেটি না জেনে বুঝে বলে ফেলেছে তারাই মুজাহিদিনদের রিক্রুট করেছে, বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। মহিলা মনে হয় আসল ঘটনা জানে না।
লিঙ্ক এখানেঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=Dqn0bm4E9yw
এমবেডেড হয়ে না আসলে আসল লিঙ্কঃ
https://www.youtube.com/watch?v=Dqn0bm4E9yw
আমি কি মনে করি সেটা বিবেচনার বিষয় না। বিবেচনার বিষয় হল আসলেই কি তা ঘটছে কী না। আমার আপনার মতন পাবলিকের কথায় দুনিয়া চলছে এই স্বপ্নে আপনি বিভোর থাকতেই পারেন, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের যাতাকলে পড়া ভুক্তভোগীরা আপনার মতন সুখস্বপ্ন নাও দেখতে পারে। তাদের ভাবনার সেই সুযোগও আপনাকে দিতে হবে। এটাই আমার বক্তব্য।
@সাইফুল ইসলাম,মুজাহেদীন আর আল কায়েদা এক নয়। আমেরিকা মুজাহেদীনদের সার্বিক ভাবে লালন পালন করেছিলো এটা কে অস্বীকার করছে? এটা তো সর্বজনস্বীকৃত ইতিহাস। ভিডিওতে হিলারী তাই বলছে। এর বেশী কিছু তো নেই ওখানে। বার বার আমেরিকা আল কায়েদা সৃষ্টি করেছে এই কথা না বলে তার স্বপক্ষে যুক্তি দেখান।
আল কায়েদার সৃষ্টি আমেরিকা-রাশিয়া দুই পরাশক্তিই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে, বিশেষ করে গালফ ওয়ারের সময়ে সৌদী আরবে মার্কিন সেনা মোতায়েন আল কায়েদা সংগঠনে মূল প্রেরণা বলা হয়। সেই সাথে ইস্রায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা তো আছেই।
আমেরিকার কার্য কলাপের প্রতিক্রিয়ায় আল কায়েদার জন্ম হয়েছে আর আমেরিকা নিজেই আল কায়েদা সৃষ্টি করেছে এই দুই কথা এক নয়। এই সহজ পার্থক্যটা বুঝবেন আশাকরি।
@সফিক,
আপনার কি মনে হচ্ছে আমি বলতে চাচ্ছি আম্রিকা বলে কয়ে, সমস্ত পেপার ওয়ার্ক করে, আল কায়দা নামটা ঠিক করে দিয়ে লাদেনকে সেই গ্রুপের প্রধান করে দিয়ে তারপরে সমস্ত মিডিয়ায় বলেছে যে আল কায়দা নামে একটা সংগঠন আছে? পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে চুরি করতে শেখা এক চোরকে আপনি আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করবেন নিজের চুরির কাজের জন্য। তারপরে বড় হয়ে চুরি চামারি শুরু করে ধরা খাবার পরে যখন কেউ বলবে এই চোর তো সফিকই বানিয়েছে তখন আপনি বলবেন আরে আমি কি ওর জন্মদাতা পিতা নাকি? শুধু বড় করেছি। চোর জন্ম দেয়া আর চোর বড় করা কি এক নাকি? বাহ! ভালো তো। ভালো না?
এটা দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য আপনার আমার সাথে। মিলবে না। তাছাড়া আমাদের যা বলার সবই বলে ফেলেছি দুজনেই। আর তর্ক বাড়ানোর মনে হয় কোন প্রয়োজন নাই।
ধন্যবাদ।
@সফিক,
আপনার উপদেশের জন্য ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করব আপনার উপদেশানুযায়ী ইতিহাস পাঠ করতে।
আপনি শুধু আমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিন। আল-কায়দা, তালেবানরা বৈশ্বিক ফেনমেনন কবে থেকে? ওদেরকে টেররিস্ট বলে দুনিয়ার মানবতা রক্ষায় আম্রিকা উদগ্রীব হয়ে উঠেছে কবে থেকে? ইসলাম দুনিয়ার শত্রু এই চেতনা তথাকথিত যুক্তিবাদীদের মুখে খই ফোটাচ্ছে কবে থেকে? লাদেন বিশ্বের এক নাম্বার টেরোরিস্ট কবে থেকে? সার্বিকভাবে আফগানিস্তান শব্দটা রাজনীতি অসচেতন মানুষের মনেও ধাক্কা লাগায় কবে থেকে?
অনামীকে করা আপনার দুটো প্রশ্নের একটির উত্তর আমি দিতে চাচ্ছি, যদিও অনামী চেষ্টা করেছে। উত্তর অর্ধেক থেকে গেছে। আপনার মধ্যেকার “পাজল” সমাধানের জন্য কিছু তথ্য দেয়া জরুরী। মধ্যপ্রাচ্যে আম্রিকার ইন্টারেস্টের সবটুকু শুধু তেলই নয় যেটা পপুলারভাবে সমাদ্রিত। আফগানিস্তানে খনিজ সম্পদ ছাড়াও আফগানিস্তান দেশের অবস্থানই ঐ দেশের জন্য সবচাইতে বড় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তানের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের বর্ডার থাকার জন্য নিরাপত্তা বিবেচনায় এটা আম্রিকার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিল। তাছাড়া এর সাথে ইরান এবং তুর্কিমেনিস্তানের সীমান্ত আছে। এশিয়ার এই অংশে অবস্থান জোরদার করার জন্য আফগানিস্তান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জায়গা।
বর্তমানের আম্রিকান পলিসিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সম্ভবত ২০০৫ সালের দিকে ফোর্বস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যার মূল বক্তব্য ছিল ২০২৫ সালে বিশ্বের রাজনৈতিক চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এখন যেভাবে আম্রিকা একাই দাদাগিরী করে যাচ্ছে তখন অবস্থান এমন থাকবে না। বার্গেইন করার জন্য দুটো শক্তির উদ্ভব হচ্ছে। আম্রিকা পরাশক্তির হিসেবে এক নাম্বার অবস্থানেই থাকবে কিন্তু সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই বিবেচনাযোগ্য জায়গায় এসে পড়বে ঐ দুটো দেশ। আমরা সবাই জানি ঐ দুটো দেশ, ভারত এবং চায়না। সেই সময় থেকে আম্রিকার এই মধ্যপ্রাচ্য নীতির সাথে যে নীতি যুক্ত হয়েছে সেটা হল চীন ঠ্যাকাও নীতি। সাম্প্রতিক কালে এই জন্যই বাঙলাদেশ আম্রিকার কাছে এত গুরুত্বপূর্ন। বাঙলাদেশের অবস্থান চীন ঠ্যাকানো কৌশলে খুবই গুরুত্বপূর্ন। সুতরাং আম্রিকা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় কপালের ঘাম ঝড়াছে এটা ভাবলে মারাত্নক ভুল হবে। আম্রিকান দৃষ্টি কেড়েছে বর্তমানে এশিয়া। বিশেষ করে আমাদের এই অংশ। অপেক্ষা করুন। অনেক নাটক ঘটা বাকি আছে এখনও। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন তখন।
@অনামী,
এখানেই বলতে হচ্ছে প্রতিমন্তব্যের অপশন না থাকার কারনে।
আপনার প্রথম প্রশ্নের খাতিরে দুইভাবে বলতে চাচ্ছি।
ডমিনেটিং তো ধরেন সহজভাবে দুই দিক থেকে হতে পারে। শারীরিকভাবে আর চেতনায়। আল কায়দা শারীরিকভাবে কখনই বিশ্বের পরাশক্তির সাথে তুলনায় ডমিনেটিং পজিশনে যেতে পারবে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আল কায়দা চেতনায় ডমিনেটিং পজিশনে ছিল এখনও আছে বলেই আমার ধারনা। এখানে এই চেতনা খারাপ নাকি ভালো সেই বিষয় বিবেচনারই সুযোগ নেই সেখানের অধিবাসীদের কাছে। জীবন, রাষ্ট্রের উপরে হামলা চালানো অপশক্তির বিরুদ্ধে পালটা একটা পক্ষের শক্তি দাঁড়া হয়ে গিয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা মানুষের সহানুভুতি আকর্ষন করতে পেরেছে। আল কায়দা বা বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোর শক্তির জায়গাটা এখানেই। এখানে আমাদের মনে রাখা দরকার মানুষের সমর্থন না পেলে একটা গেরিলা সংগঠন বেশিদিন টিকতে পারে না। আল কায়দার মতন সংগঠনগুলো মানুষের মনের ক্ষোভের ক্ষতে কিছুটা হলেও মলমের প্রলেপ দিতে পেরেছে।
আরেক দিন থেকে যদি আপনি দেখেন, আল কায়দা বা এই ধরনের সংগঠনগুলোকে সাম্রাজ্যবাদীরা সব সময়েই বড় করে দেখাবে আপনি যেভাবে WMD র কথা তুলেছেন কারন সেটা তাদের উদ্দেশ্য সার্ভ করে। খোড়া ঘোড়া সাদ্দামের আর্সেনালে বিরাট ধরনের বোমা আছে এটা যদি নেই দেখান গেলো তাহলে তেলের খনি কীভাবে পাহাড়া দেবে এরা? লাদেন বিশ্ব মানবতার শত্রু এটা যদি না দেখানো যায় তাহলে আফগানিস্তানে আপনি পাসপোর্ট ছাড়া ঢুকে একটা হামিদ কার্জাই কীভাবে বসাবেন? সমীকরন মেলাতে হবে না?
আমাদের বাঙলাদেশেই দেখুন, আম্রিকার কাছে জামায়াতে ইসলাম মডারেট ইসলামী দল। মানবতাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তিবাদীতার পতাকা যেই দেশের মুক্তি জাহাজের ছাদে পতপত করে ওড়ে সেই দেশের পররাষ্ট্রনীতি মতে জামাত মডারেট মুসলমান দল, আর বাঙালি রক্তের আম্রিকান চেতনার রক্তমাংসহাড্ডির পশ্চিমা মননের জনতা বলে জামাত নাকি জঙ্গী দল! আম্রিকান পলিসিই তো এটা। গরীব দেশগুলোর(যেগুলোর আলাদা একটা আকর্ষন আছে, খনিজ সম্পদে পরিপূর্ন যৌবনা হতে পারে আবার আমাদের বাংলাদেশের মতন ভৌগলিক অবস্থান খাসাও হতে পারে) রাষ্ট্রে সাংবিধানিকভাবে ধর্মের প্রলেপটা যাতে থাকে, তাতে করে যখন জল খোলা হবে মাছ শিকারে প্রচুর মজা পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলব, আরেকটু দেখুন, পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে। ল্যাটিন আম্রিকান দেশগুলো কিন্তু মৌলবাদের আশ্রয় নেয় নি। জনপ্রিয় নেতারাই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে।
আজকে সৌদী আরবের রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র আম্রিকার চক্ষুতে ভেরি ভেরি ওকে, কিন্তু ফিদেল কাস্ত্রোর ভোটের রাজনীতিও আম্রিকার চক্ষুশুল। শুধুমাত্র ফিদেলকে মারার জন্যই ৬০০ বারের উপরে সিআইএ চেষ্টা চালিয়েছে। প্রখর মানবতাবাদী আম্রিকান চামচাদের চোখ এই ব্যাপারে নিবিড় পরিত্যক্ত। আর আম্রিকাতো প্রকাশ্যেই ল্যাটিন আম্রিকার বিরোধিতা করে।
যৌক্তিক উপায় কী? এই উত্তরটা আমাদের রাজনীতিবীদরা এতই সস্তা করে ফেলেছে যে বলতেও লজ্জা লাগে। জনগনকে সচেতন হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। এর বাইরে কোন বিকল্প নেই। একটাও না।
@আদিল ভাই,
উপরে প্রতিমন্তব্যের অপশন আসছে না এই জন্য এখানে মন্তব্য করছি।
আপনার মন্তব্য দেয়ার টোনে মনে হচ্ছে আমরা হার জিতের জন্য তর্ক করছি। দুই জনের পুটকি উদোম করা আমাদের লক্ষ। আপনি অফেন্সিভ মুডে আছেন। আমি মিউ মিউ করছি। ব্যাপার যদি তাই হয় তাহলে বলুন, উভয় পক্ষ থেকেই উদোম করা করির মিশনে নামি। আমার সাধারন ট্রেন্ড হল আমি চিল্লাফাল্লা গালাগালি করি, কিন্তু এখানে আপনার সাথে তো তা করছি না। আপনাদের সুশীলতার দিকে প্রখর দৃষ্টি রেখে কথা বলে যাচ্ছি। তাহলে আপনি উত্তেজিত কেন? আমি তো আপনার গাঞ্জা আর বিবেচনার যোগ্য নয় টাইপ বিশেষনের পরেও অত্যন্ত ঠান্ডা মাথাতেই আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছিলাম যেটা আমার স্বভাবের সাথে যায় না। তারপরে আপনার কাছ থেকে এই জিনিস আশা করি না। যদি কার জিনিস বেশি বড় এই নিক্তিতে রিয়েলিটি শো করতে চান বলে ফেলুন, ফেয়ার ফাইট হোক। আপনি মুগুর ভেজে যাবেন ডারছে আর আমি লেবেঞ্চুস চুসব এটা ঠিক যৌক্তিক না। আপনার আম্রিকান নীতিও তো তা বলে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতেই পারে আপনি আলোচনা করতে চাচ্ছেন না। ফাইন, দেন ডন্ট। কিন্তু কীবোর্ড চেপে শব্দের ঝাড়ি দিবেন না প্লিজ। গায়ে লাগে। আমারও ভার্চুয়াল মাস্তানি করতে ইচ্ছে হয় তখন।
@সাইফুল ইসলাম,
আমার মূল আলোচনা প্রসংগে যা বলার ছিল আগেই বলেছি বা বলার চেষ্টা করেছি। নুতন কিছু বলার নেই।
আপনি আমার সাথে চিল্লাফাল্লা গালাগাল যে অনুগ্রহ করে করেননি আমি এতে অত্যন্ত বাধিত হয়েছি, ধন্যবাদ। হতে পারে আপনি ঠান্ডা মাথায় জবাব দিচ্ছিলেন, আমিই আসলে ভুল বুঝেছি।
আমার মুগুর ভাজাভাজি বা লেবেঞ্চুস চোষা কোনটারই সময় নেই।
ভাল থাকবেন।
দক্ষিণ ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম যে ক্ষতিটা করেছে তা শুধু টাকায় মাপা যাবেনা।নিম্নবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্ত,ছাত্র-ছাত্রী ক্রেতাভিত্তিক একটি বাজারব্যবস্থা গড়ে উঠেছিলো এখানে।স্বল্পমূল্যে পাওয়া যেত গৃহস্থালী পণ্য, ইলেকট্রনিক্স,পোষাক,খেলনা,পুরোনো এবং নতুন বই,ফলমূল,তরিতরকারী ইত্যাদি।বাজারব্যবস্থাটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো প্রায়।এখন তাঁরা(স্থানীয় ব্যবসায়ীরা)আবার ধীরে ধীরে ব্যবসায়টি গড়ার চেষ্টা করছেন।এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হলে ভালো হয়।
@অগ্রদূতের চরণবন্দনা,
আপনার সাথে একমত। কেবল ব্যাবসায়ী লাভের দিকে না তাকিয়েও বলা যায় একটা ধাক্কা খেয়েছে সাধারন মানুষ। আর একটা ব্যপার আছে, এই আন্দোলনের কারনে অনেক ব্লগার নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। অন্তত লেখা লেখির জন্য (হেফাজতকে খুশি করার জন্য সরকারের আচরনে) সরকারের রুশানলে পড়তে চান না। বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও একটা বড় প্রভাব পড়েছে। আবার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে।
@ডাইনোসর,
sorry 4 my roman, writing 4m mobile ph n i hv no bangla font here…
o/t: so many thx 4 point out 2 times on taslima issue; u r quite right dt its not a matter of blog topic n that quick blog post was not upto d mark.
so i hv just deleted dt post; removed all links 4m fb also.
thx again (Y)
@বিপ্লব রহমান,
অঃ টঃ- তসলিমাকে নিয়ে লেখাটি একেবারে মুছে না ফেলে আপনার ব্যক্তিগত ব্লগে রেখে দিতে পারতেন। লেখা ডিলিট করলে পাঠকের মন্তব্যগুলোও যে মুছে যায়।
ডায়নোসর সাহেবের এবারের লেখায় কিঞ্চিত হতাশ হলাম।
হেফাজতের আন্দোলনে কোন জনসমর্থন ছিল না এমন ভাবনা খুবই ভুল। অবশ্যই জন সমর্থনের প্রমান রাস্তায় বিভিন্ন মাদ্রাসা/মসজিদের তক্ত্বাবধনে লাখ খানেক লোক জড়ো করা নয়।
হেফাজতের আন্দোলনে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন কারনে সমর্থন দিয়েছে। যেমন বিএনপি দিয়েছে (তার মানে বিএনপির ভোট ব্যাংক পুরোটাই বলা যায়, আরো কারন এই ভোট ব্যাংক প্রবল ভাবে ডানপন্থী) বর্তমান সরকারকে যেভাবেই হোক ফেলে দিয়ে আবারো সরকারে বসার এক উচ্চ নম্বরের সিঁড়ির সন্ধান পেয়ে যাওয়ায়। জামাত দিয়েছে তাদের রাজাকার নেতাদের গলা বাঁচাতে, সাথে যাবতীয় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। এই দুই দলের ভোট ব্যাংক সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট কিনা বলা না গেলেও জনতার অন্তত এক উল্লেখযোগ্য অংশ শুধু এরাই প্রতিনিধিত্ব করে।
এ ছাড়াও আছে ধর্মভিরু জনতার অংশ যারা হেফাজতের অদ্ভূত দাবী দাওয়া মানার যোগ্য ণয় কিংবা হাস্যকর ধরনের মনে হলেও ঈমানী দায় হিশেবে এদের সমর্থন দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে। খোদ সরকারী দলের কিছু নেতা স্থানীয় পর্যায়ে হেফাজতিদের দানা পানি খাইয়েছে এমনি এমনিই নয়, নিজেদের ভোট ব্যাংক অক্ষুন্ন রাখতে।
তবে এই সমর্থক গোষ্ঠী হেফাজত রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাক তা সকলে চায় না বা চায়নি সেটা ঠিক। যেমন খোদ বিএনপির কূটনৈতিক ষ্ট্যান্ড হল তারা হেফাজতের সব দাবীর সাথে একমত নয়, নবী অবমাননার বিচার দাবীর সাথে একমত তাই সমর্থন দিচ্ছে। এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হেফাজতের উত্থানে খুশী হয়েছে এই ভেবে যে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিতে এক হাত দেখে নেওয়া গেছে, এভাবেই দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়ে যাবে, হেফাজত ক্ষমতায় থাকবে কিনা সেটা পরে দেখা যাবে, আগে তো ধর্মনিরপেক্ষতা দূর করি……
@আদিল মাহমুদ,
সাহেব টা যদি ছাহেব হতো, তাহলে ওয়াজ মাহফিলে ডাক পেতে পারতাম।হা হা হা……
অনেক দিন পর কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে হল লিখলাম। খুব ভাবনা চিন্তা করে লিখি নাই।
আমি এই সমর্থনের কথাই বলেছি। হেফাজতের ক্ষমতায় যাওয়ার সমর্থ নিয়েই তো লিখতে চেষ্টা করলাম।
@ডাইনোসর,
এটা আপনি কি বললেন! এরপর আপনার লেখা পড়তে গেলে এই কথাটা স্মরণ করবো?
@সুষুপ্ত পাঠক,
হা হা হা….. বিষয়টা এভাবে দেখতে পারেন। ধরুন আপনি অনেক দিন ধরে কিছু লিখেন না। হঠাৎ লিখতে বসলে দেখবেন শেষ করার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। আমার ক্ষেত্রে এমন হয়। এই অধৈর্য ভাবটাই খারাপ। আমি তাই বললাম।
প্রবীর ঘোষের “আমি কেন ঈশ্বের বিশ্বাস করি না” গ্রন্থে একটা উদাহরন দিয়ে তিনি যে কোন ঘটনার সিদ্ধান্ত টানার আগে হাইপোথিসিসের গুরুত্বটা খুব ভালোভাবে দেখিয়েছেন। শুধু সাধারন ঘটনার সিদ্ধান্ত টানার জন্য নয়, বৈজ্ঞ্যানিক গবেষনার সময়ও যে হাইপোথিসিস কতটা গুরুত্বপূর্ন সেটা পঞ্চম ষষ্ঠ শ্রেণী পার করা যে কেউই জানে। হাইপোথিসিস যদি ভুল হয় তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত ভুল আসতে বাধ্য। প্রবীর ঘোষ যে উদাহরনটা দিয়েছিল সেটা একটু বড় হলেও আমি এখানে সংক্ষেপে বলতে চাই।
চেয়ারে বসে থাকা একজন মানুষ একবার মনে করল তার পাশের খালি চেয়ারটাতে কেউ/কিছু একটা আছে। সে তার বিজ্ঞানী বন্ধুকে ব্যাপারটা জানাতে বন্ধু অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে, এক্সরে, ওজন মাপামাপি ইত্যাদি করতে বসে গেলো। ঘন্টার পর ঘন্টা গবেষনা করার পরেও সেখানে কেউ/কিছু পাওয়া গেলো না। স্বাভাবিকভাবেই সবাই হতাশ হল।
এই ঘটনা থেকে প্রবীর ঘোষের বক্তব্য, হাইপোথিসিসেই ভুল ছিল। কারন ঐ লোকটার কেন মনে হল খালি চেয়ারে কেউ থাকতে পারে?
এখন বলি ধান বানতে শীবের গীত কেন গাইতে গেলাম। হাইপোথিসিসের কথা এনেছি এই জন্যই যে প্রবীর ঘোষের উদাহরনটা আপনার এই লেখাটার সাথে একেবারে খাপে খাপে মিলে যায়। আপনি ধরেই নিয়েছেন হেফাজত, ইসলামী বিপ্লব করতে এসেছিল। আপনি গোড়াতেই মানে হাইপোথিসিসেই ভুল করছেন। এবং সেই হিসেব করে কেন তারা বিপ্লব করতে সফল হল না, সাধারন জনতা তাদের সাহায্য বা সমর্থন করছে বা করছে না এগুলো নিয়ে বিশাল চিন্তাভাবনা করে বসে আছেন। আপনার ভাবনাকে সাধুবাদ জানাই, তবে এগুলো সব ভুল পথে গ্যাছে।
আপনি লম্বা যানজটে পড়ে বিরক্ত হয়ে আপনার গাড়ির সামনের গাড়ির চালককে গালাগালি করছেন সামনে না যাওয়ার জন্য। সমস্যাটা আপনার সামনের গাড়ির চালকের না। এমন কি আপনার মতন সমস্যায় ঐ চালকও পড়েছে। সমস্যাটা রাস্তার মাথায়। সমাধানের জন্য বা সমস্যাটা বোঝার জন্য আপনাকে রাস্তার মাথায় যেতে হবে। দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে।
@সাইফুল ইসলাম,
আমি ধরেই নিয়েছি এটা সত্য। তাদের ঘোষণা ছিল ৫তারিখের পর থেকে দেশ চালাবে আহমদ শফি। আর অববোধের পর রাত্রে তাদের অবস্থান নেয়াটা আমার কাছে এমনই মনে হয়েছে। তাদের আগের প্রস্তুতি থাকুক আর নাই থাকুক তবে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারলে বিএনপি এবং জামাত শিবিরের সহযোগীতায় পরদিন একটা ভয়ানক বিশৃঙ্খলা তৈরী করে দিতে পারতো। আর বিএনপি একটা মনোভাব নিয়েই কিন্তু হেফাজতীদের সমর্থন দিয়েছে। আর বিএনপি তাদের শক্তিকে একটু বেশিই বৃহৎ করে দেখেছে। সেই বৃহৎ করে দেখার জায়গা থেকেই কিন্তু তাদের বিপ্লবের সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছি।
আর সমস্যা যে গোড়ায় এটা আমি অস্বীকার করছি না। আমি কেবল বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের বিপ্লবের সম্ভাবনা কতটুকু বাস্তব সম্মত তাই বলেছি।
@ডাইনোসর,
আর আমি বলছি আপনার এই ধরে নেয়াটাই ভুল হয়েছে। হেফাজতকি জানত না তাদের এই চিল্লাফাল্লা কতদূর পৌছাবে? জানত, ভালোভাবেই জানত। সেজন্যই তারা সন্ধ্যা পর্যন্তই নারায়ে তাকবির দিয়ে চলে যেত। তাহলে চিল্লাফাল্লা করতে গেলো কেন সারা রাত? এখানেই আসল ব্যাপার। আপনার মন্তব্যেই আপনি ভালোভাবে বলেছেন,
তাহলে উদ্যোগটা কি হেফাজতের হল? হেফাজতের ব্যানারে বিম্পি জামাতের প্রজেক্ট ছিল এটা। এইখানে এসে একটা মনে করিয়ে দেয়া জরূরী। আমি কোনভাবেই হেফাজতের কর্মকান্ড সমর্থন করছি না। আমি হেফাজতকে যা না তা বলতে রাজি না। শুধু এইটুকুই। আর মতিঝিলের হত্যাকান্ড সমর্থন করি না এই কারনেই যে সরকারের দেয়া প্রেসনোটে বিশ্বাস আনলে ঠিক একই রকম জাতীয় স্বার্থরক্ষাকারী আন্দোলনের উপরে হামলার পরেও সরকার প্রেসনোট দিয়ে বলবে কেউ মারা যায় নি। মিরপুরে গন সংহতির নেতাকর্মিদের উপরে পুলিশের হামলা দেখেছেন? একমাস কোন সভা সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। দেশটা যেন সরকারের বাপের সম্পত্তি। মতিঝিলের ঘটনা সমর্থন করলে আমরা কোন যুক্তিতে এই একমাসের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করব?
এখানেই আমি মতিঝিলের ঘটনার বিরোধিতা করি আর হেফাজতকে ঘটনার মূলহোতা বলে আপনার বিপ্লব করতে যাওয়া হেফাজতের তত্ত্ব ভুল বা অপ্রয়োজনীয় বলি। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
বিপ্লব করার কোন এলিমেন্ট তাদের ছিলনা আমি তো তাই বলতে চাইলাম। কেউ কেউ হেফাজতীদের বিপ্লবী বাহিনী হিসেবে ধরে বলেই আমাকে তা ধরে নিতে হলো। আর লক্ষ করলে দেখবেন কিছু বিদেশী মিডিয়াও কিন্তু ইসলামী শক্তির উত্থান নামে নিউজ করেছে।
মতিঝিলের যা ঘটেছে এটা এক বিবেচনায় সমর্থন করতে হয়। কারন হেফাজতীরা যে তাণ্ডব শুরু করেছিল তার শেষ কোথায় দাঁড়াত ? আমি মনে করি সেই দিনের প্রেক্ষাপটে তা যথার্থ ছিল। সহিংস আন্দোলন শক্ত হাতেই মোকাবেলা করতে হয়। যতি হেফাজতী আন্দোলন অহিংস হতো আগের সমাবেশের মতো তাহলে নিন্দা জানাতাম।
আর মতিঝিলে ঐদিন রাতে কোন লোকজন নিখুজ হয়েছে,বা মারা গেছে এখনো কিন্তু তার কোন প্রামাণ মিলে নাই। তাহলে কেন বিশ্বাস করতে যাব বা অবিশ্বাস করতে যাব? তাহলে মতিঝিলের হত্যাকাণ্ড কি ভাবে হলো?
যে কোন আন্দোলন সরকার যখন তার সশস্ত্রবাহিনী দিয়ে দমন করে তার বরাবরই বিরোধিতা করি।
সরকার একমাসের জন্য সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে এর নিন্দা জানাই।
@ডাইনোসর,
😀 😀 😀
নিউট্রন বোমা বিশ্লেষণ করে ফেললেন আর নিউট্রন কাকে বলে বুঝলেন না? হেফাজতের সাথে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন পর্যন্ত চলে গেলেন বিশ্লেষণ করতে করতে আর তাদের একটা মুখের বুলিকেই সত্য হিসেবে ধরে নিলেন? তাহলে একজন সাধারণ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র আর একজন ফরহাদ মজহার আর একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডায়নোসর সাহেবের মধ্যে পার্থক্য কী থাকলো?
পাওয়ার স্ট্রাকচারের কেরামতিকে আর রাজনৈতিক ভাং মারাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে গিয়ে ক্ষুদ্র একটা ক্ষেত্রের মধ্যে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। এজন্য আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, তাহলে একজন অ-সালাফিস্ট মতান্তরে নাস্তিক(!) ব্যক্তি, ফরহাদ সাহেব কীভাবে একটা সালাফিজম আন্দোলনের গুরু হয়, তখন আপনি উত্তর দিতে পারবেন না। আপনি নিজেই নিজের উত্তর দেয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছেন, কারণ আপনি ধরেই নিয়েছেন, তারা সত্যিকার অর্থেই, ইসলামকে হেফাজত করতে এসেছিলো। আপনার লেখাটা এখানে দুর্বল হয়ে গেছে, পুরো ব্যাপারটার গভীরে যাইতে পারে নাই।
@টেকি সাফি,
কোন পার্থক্য থাকল না।
আমি মনে করি না যে সরকার সুপরিকল্পিত ভাবে এটা ঘটতে দিয়েছে। হেফাজতকে অন্য ভাবে হেফাজত করে তাদের কাজে লাগতে সরকার চেষ্টা করেছে। এই টপিকটা এই আলোচনায় যুক্ত করতে ইচ্ছে হয়নি।
হেফাজত যে খানে যা পাইছে নিয়েছে। তাই ফরহাদ মাজহার গুরু হিসেবে হেফাজতে আসে নাই। নিচে আদিল মাহমুদের কমেন্টে এই কথা গুলো আছে বলে আর নতুন করে দিলাম না।
হেফাজতী বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে এই কথার চেয়ে হেফাজতী আন্দোলন ভবিষতে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও নাই এটাই বুঝাতে চেয়েছি। বিপ্লব করার কোন এলিমেন্টই তাদের নাই।
তবে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক বাদ গেছে,সেটা হল “বিপ্লবী তত্ত্ব”
@ডাইনোসর,
হেফাজতী বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে এই কথার চেয়ে হেফাজতী আন্দোলন ভবিষতে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও নাই এটাই বুঝাতে চেয়েছি। বিপ্লব করার কোন এলিমেন্টই তাদের নাই।
– এতটা নিশ্চিত হওয়া ঠিক নয়। ইরানে ৭০ দশকের প্রথমেও ইসলামী বিপ্লবের কথা চিন্তা করার মত মানুষ খুব বেশী ছিল না। অন্যান্য মুসলমান দেশগুলির অবস্থা দেখেন বিশেষ করে যারা বহুদিন ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় দীর্ঘদিন চলে এসেছে এবং সেক্যুলার ধারার শাসকগুলি দূর্নীতিবাজ অত্যাচারী ছিল। আমাদের দেশের সাথে খুব অমিল নেই। লোকে এক সময় না এক সময় পরিবর্তন চাইবেই, আর আজন্ম তারা যা শিখে এসেছে সেই শ্রেষ্ঠ ব্যাবস্থা তখন তারা স্বাভাবিক কারনেই বেছে নেবে।
আমাদের দেশে সেটা হেফাজতই সরাসরি করতে পারে কিনা তা বলতে পারি না, সম্ভবত না। এই আন্দোলনেই দেখা গেছে যে তাদের কথাবার্তা বেশীরভাগই ছেলেমানুষী ধরনের, চাতূরীপূর্ন বক্তব্য দেওয়ার মত এলেমও নেই, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বলতে যা বোঝায় তার কিছুই নেই। রাজনৈতিক দলের চিহ্নিত নেতারা তাদের নেতৃত্বে আছে অথচ তারা কেবল অব্যাহত গতিতে দাবী করে যাচ্ছে যে তারা অরাজনৈতিক……এ রকম বহু উদাহরন দেওয়া যায়। সরাসরি হেফাজত করতে পারে কিনা সে প্রশ্ন দিয়ে তেমন কিছু যায় আসে না। কথা হল এই ধারা কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারে কিনা? অবশ্যই পারে। দুই বড় দলের অব্যাহত ব্যার্থতা/অনাচার অবশ্যই সে পথ করে দিচ্ছে, বীজ সবসময়ই আছে, বড় দলগুলি তাতে সার পানি দিয়ে পরচর্যা করে আসছে। ফল কোনদিন ধরবে না?
@আদিল মাহমুদ,
সেই ক্ষেত্রে ইরানে বা বিশ্বের অন্যান্য যে কোন জায়গায় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উদ্ভবে আসল প্রনোদনা কে দেয়? ধর্ম নাকি বাহ্যিক কোন উপাদান? ইরানের কথাই ধরি, আপনার কথা সঠিক মেনে নিয়ে যদি একটা ভেবে নেয়া বাস্তবতা দাঁড় করাই, ইরানে কোন দূর্নীতি, কোন সমস্যা নাই, তাহলে কি মৌলবাদীরা সরকার দখল করতে পারত কী না?
@সাইফুল ইসলাম,
আসল প্রনোদনা – ‘আসল’ শব্দটা আপেক্ষিক হতে পারে। আমার কাছে কোনটা আসল মনে হলেও আপনার কাছে সেটা গৌণ মনে হতে পারে। আমি বলব যে দুটোরই ভূমিকা আছে। বাহ্যিক বলতে ঠিক কি বোঝাচ্ছেন আপাতত নিশ্চিত নই। ধরে নিচ্ছি এই বাহ্যিক বাইরের কোন দেশের ভূমিকার কথা নয়, ধর্ম বাদে অন্য কারনের কথা বোঝাচ্ছেন।
বাহ্যিক ফ্যাক্টর অজস্র হতে পারে, কোন দেশ বা সমাজই বাহ্যিক ফ্যাক্টরমুক্ত দেশ নয়। যা হয়েছে তার বিশ্লেষন করা হয়ত সম্ভব, কিন্তু যা হয়নি তার বিশ্লেষন অনেকটাই অর্থহীন। তাই ইরান বিষয়ক আপনার হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্নের জবাব আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সৌদী আরব আজ যদি রাজতন্ত্র ছেড়ে খোলা গনতন্ত্রের পথে আগায় তবে সেখানে কি সামনের ৫০০ বছরেও ধর্মনিরপেক্ষ কোন দল জনপ্রিয়তা পাবে বলে করেন? মূল্যবোধ হল বড় কথা।
বরং এভাবে ভাবা যেতে পারে যে দূর্নীতি অনাচার অন্যান্য বেশ কিছু দেশেও অব্যাহত গতিতে দেখা গেছে, কিন্তু তাই বলে সেসব দেশের লোকে কোন ধর্মগ্রন্থ খুলে দেশ সমাজ চালানোর দাবীদার দলকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এমন ঘটনা মনে হয় না বিগত শত বছরে মুসলমান প্রধান ভিন্ন অন্য কোন দেশে ঘটেছে। ঘটেছে কি? ভারতেও রাজনৈতিক দলগুলির ব্যার্থতা প্রচুর আছে, আইটি যাইই দেখাক সে দেশে এখনো কোটি কোটি লোকে চরম দারিদ্রে বসবাস করে, রাজনীতিবিদদের দূর্নীতিরও বয়ান একেবারে কম নয়। সে দেশে এমনকি ধর্মভিত্তিক দলও আছে। কিন্তু সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা কি এসব নানান সমস্যা সত্ত্বেও সেক্যুলার সংবিধান ছুড়ে ফেলে গীতা মহাভারতের আদর্শে দেশ চালানোর পক্ষে মতামত দিচ্ছে এমন বড় ধরনের আলামত আছে? খোদ বিজেপিকে দেশের প্রচলিত সংবিধান ধর্মশাস্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপনের দাবী করে?
@আদিল মাহমুদ,
তুরস্কে সেকুলার রাষ্ট্র কিন্তু এখন দেশ চালায় মুসলিম ব্রাদার হুড। আমার জানা মতে মুসলিম ব্রাদর হুড মডারের্ট মুসলামন দল। তারা রাজনৈতিক মুসলামন। সেই বিবেচনা করলে অগ্রসর দল বলতে হয় জামাতে ইসলামকে। কোন ভাবেই হেফাজত না।মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার জন্য জামাতে আর যাই হোক মানুষের আস্থার জায়গায় যেতে পারবে না।
@ডাইনোসর,
– উঁহু, লং রেঞ্জে চিন্তা করলে অবশ্যই পারবে। রাজাকার প্রজন্ম বিচার হয়ে হোক আর স্বাভাবিকভাবে হোক আয়ু খুব বেশীদিন নয়। এরপর তাদের যুদ্ধপরাধী ব্যাকগ্রাউন্ড অনেকটাই পেছনে পড়ে যাবে, যেতে বাধ্য। ইতোমধ্যেই অনেককেই বলতে শুনেছি যে জামাত থেকে যুদ্ধপরাধীরা বিদায় হয়ে গেলে তাদের জামাতে সমস্যা নেই। কিছুদিন আগে প্রথম আলোর জরিপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হল না? সেই জরিপ কি খুব অবাস্তব? আমার মনে হয় না বিরাট কোন ভুল সেই জরিপে এসেছিল বলে। জামাত থেকে যুদ্ধপরাধীরা নেই হয় গেলে ঠিক এই জরিপ আরো বড় ধরনের অপ্রত্যাশীত ফল অবশ্যই দেখাবে। যুদ্ধপরাধীমুক্ত জামাতকে তখন অনেক ধর্মপ্রান মানুষ দেখবে ইসলামী বিপ্লবের সবচেয়ে অগ্রদূত হিসেবে। এটা হয়ত সামনের ১০ বছরের মধ্যে হবে না, তবে ২০ বছরের মধ্যে অবশ্যই হতে পারে। আর এর মাঝে ৪ দলীয় জোট কোনভাবে পরপর দুই টার্ম সরকারে আসলে আর পায় কে?
হেফাজত সরাসরি না হলেও তাদের কাঁধে সওয়ার জামাতই হতে পারে এবার যেমন হয়েছিল। সামনে আবারো এমন হবে না বলা যায় না।
তুরষ্ক মুসলিম ব্রাদারহুড চালায় কি? জানি না, মনে হয় জাষটিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি চালায়। টার্কির ইসলামিষ্টরা মিশরের ইসলামিষ্টদের তূলনায় অনেকটাই আধুনিক। ‘মডারেট’ মুসলিম ব্রাদারহুডের জন্ম মিশরে। এদের নানান উতপাতে ত্যাক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট নাসের এদের ওপর খড়্গহস্ত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। এক সময় দেশ থেকেই খেদিয়ে আরব দেশে বিতাড়ন করেন। আরবের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে এরা কলেবরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। বলে রাখা ভাল যে প্রেসিডেন্ট নাসের সেক্যুলার নাস্তিক বা ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন না, তিনিও ইসলামী ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী ছিলেন, তাকে প্যান আরব জাতীয়তাবাদের জনক বলা যায়। সুয়েজ খাল নিয়ে পশ্চীমাদের সাথে ফাইট দিয়েও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।
@আদিল মাহমুদ, জামাতের বর্তমান সারির নেতৃত্ব চলে যাওয়ার পরে এবং বর্তমানের যুদ্ধাপরাধী বিতর্কের অবসান হওয়ার পরে (আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এই যুদ্ধাপরাধী বিচারের একটা এস্পার বা ওস্পার হয়ে যাবে- বিচার ও শাস্তি হয়ে যেতে পারে- না হতেও পারে, কিন্তু এই ইস্যু আবারো নির্বাচনের বড়ো ইস্যু অথবা নতুন কোন শাহবাগের জন্ম দেবে এটা চিন্তা করা কঠিন) জামাতের যে কতোটা বাড় বাড়ন্ত হবে সেটা খুব কম লোকেই ভাবছে।
এই হেফাজত ঘটনার অনেক ইন্টারপ্রটেশন হয়েছে তবে আমার কাছে সবচেয়ে সূদুরপ্রসারী মনে হয়েছে যে জামাত তার নিজের উদ্দ্যেশ্য নিজের আন্দোলনের সাথে অধিকাংশ ইসলামপন্থীদের একত্র করতে পেরেছে। এটা তো স্পষ্ট যে হেফাজত-কওমী নেতৃত্ব আবার তাদের রাজনীতি-বাস্তবতার শিক্ষাদীক্ষার অভাব স্পষ্ট করে তুলেছে। ভবিষ্যতে মাদ্রাসার সরল এতিম ছাত্র হতে শুরু করে শহরের শিক্ষিত হিজবুত তাহরীর সবাই এক ইসলামী প্ল্যাটফর্মে সামিল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। কারন সবাই জয়ী হতে চায়। এই প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্ব সম্ভবত থাকবে আগামীর জামাতের হাতেই।
সবকিছু বাইরের প্রণোদনা, বাইরের প্রণোদনা (সোজা কথায় আমেরিকা) বলে কেউ কেউ যতই মন্ত্র জপুক না কেনো, ইসলামী শক্তির উথ্থান ঘটছে দেশের মাটি থেকেই, বিপুল জনসমর্থনপুষ্ট হয়েই।
@সফিক,
এবারের অভিজ্ঞতা আবারো দেখিয়েছে যে ইসলামপন্থী সকলে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে পারে যা আগে অনেকে ভাবতে পারেনি। অনেকের ধারনা ছিল যে কওমী ধারার লোকদের তীব্র জামাত বিদ্বেষ আছে। যে কোন রকম প্রান্তিক অবস্থায় পৌছালে এইসব দেওবন্দী, কওমী, মওদুদী সবই এক, এমনকি অতি নিরীহ বলে যাদের ধরা হয় সেই তবলীগ জামাতও যোগ দিতে পারে, ‘৭১ সালে এমনই হয়েছিল। প্রান্তিক অবস্থায় পৌছাতে বেশী দূর যেতে হয় না। ইসলাম বিপন্ন এমন আবহ কোন ভাবে তৈরী করে ফেললেই হল, যা জামাত সফলভাবে এবার করতে পেরেছে। এবারের এই মেরুকরনে জামাতি/অজামাতি এমনকি কিছু পরিমানে আওয়ামী ধারার লোকেও যাদের কাছে ধর্ম অতি গুরুত্বপূর্ন এক হয়ে দেখিয়েছে, যুদ্ধপরাধীদের পক্ষ/বিপক্ষের হিসেব থেকে অন্য হিশেবে চলে গেছে।
যুদ্ধপরাধীদের বিচারে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভবান হবে জামাতই এতে কোন সন্দেহ নেই। দলের ভোট ব্যাংকের একতা আরো শক্ত হবে, দল ‘৭১ এর কালো ছায়া কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সফল হবে। স্বাধীনতার ২০ বছর পর যার জন্ম সে ‘৭১ সম্পর্কে যাইই ভাবুক তাকে রাজাকার বলে খুব বেশী সুবিধে করা যাবে না, বিশেষ করে যেই দল ইসলামী আন্দোলনের বাস্তব স্বপ্ন দেখাতে পারে। আর জামাত গত বছর দশেক ধরেই ঘটা করে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করে আসছে। ৫ বছর পরই তারা বড় গলায় বলতে পারবে যে আমাদের দলে কোন রাজাকার নাই, আমরা স্বাধীনতার ২০ বছর পর জন্ম নিয়ে রাজাকার হই কেমনে, আমরা সব জাতীয় দিবস পালন করি………
জামাত নিষিদ্ধ করতে হবে এই দাবী অনেকে করলেও জামাতের মূল সমস্যা কোথায় তা মনে হয় না তেমন কেউ ভাবে বলে। সকলে আছে ‘৭১ এর ভূমিকা নিয়ে। সেই ৭১ এর ভূমিকা তো চলে যাচ্ছে আড়ালে।
তবে জামাত শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিএনপি ভালভাবে নেবে না, ভবিষ্যতে দুই ভাই এর লেগে যাবে।
আমেরিকাই আসলে জামাত হেফাজত সবাইকে বানিয়েছে এতে তো কোন সন্দেহ নাই, সিআইএ এজেন্টরা গ্রামে গঞ্জে ফতোয়াবাজি করে, সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেবার হুমকি দেয়, আর আলেমগন এবং দেশবাসী হল সোজা সরল ভিক্টিম :)) । ভারতেও হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন হত, আমেরিকা নাক গলাচ্ছে না বলেই তেমন হচ্ছে না, থাইল্যান্ডে বৌদ্ধবাদী সরকার হত…
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয়েছে জামাত বা হেফাজতি বা ইসলামী দলগুলোরএতটা জনসমর্থন বাড়ার পিছনে আরেকটি কারন হলো কিছু লোকের আওয়ামী লীগের প্রতি চরমতম বিতৃষ্ণা। আওয়ামী লীগকে তারা এতটাই অপছন্দ করে যে জানা কিছু নাস্তিক লোকজনকেও দেখেছি জামাতি বা হেফাজতিকে সমর্থন করে কথা বলছে…এটা এক অবিশাস্য ব্যাপারই বলতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
আপেক্ষিক হোক না, সমস্যার তো কিছু নাই। আপেক্ষিক বলে কি আলোচনার বাইরে রাখব?
আর বাইরের কোন দেশের প্রভাব এই বিশ্বায়নের যুগে আপনার কাছে বাহ্যিক প্রভাব বলে গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে না কেন সেটাও জানতে চাচ্ছি।
আচ্ছা সম্ভব করে দিচ্ছি। ইরানে মৌলবাদীদের ক্ষমতায় যাওয়ার কারন হিসেবে আপনি ইরানের তৎকালীন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, অবস্থাকে(আপনি বলছেন বাহ্যিক কারনে ধর্মের জিগির তোলা হয়েছে।) দায়ী করেছেন আমি যদি ভুল না বুঝি। তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন মৌলবাদীদের ক্ষমতা বিস্তারের জন্য/রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য বাহ্যিক প্রভাব কাজ করতে পারে। আপনার কথানুযায়ী দুটোই সম্ভব। একটা দেখতে পেলাম, মানে শুধুশুধু ধর্মীয় জিগির ছাড়া(ধর্মের বাইরে বাহ্যিক প্রভাবের কারনে) যেভাবে সম্ভব সেভাবে দেখলাম। এখন, বাহ্যিক প্রভাবক ছাড়া শুধু শুধু ধর্মের জিগির উঠিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা বিস্তার করতে পেরেছে এমন কোন উদাহরন দিবেন কি?
একটু চিন্তা করে দেখুন আপনার এই দুটো লাইন কোন অর্থ বহন করে কি না। বাক্যদুটো স্ববিরোধী।
“সৌদী আরব আজ যদি রাজতন্ত্র ছেড়ে খোলা গনতন্ত্রের পথে আগায়”
কথাটার মানে কি দাঁড়ায়। যদি সৌদী জনগন গনতন্ত্র চায়। তাই নয় কি?
ওকে, যদি সৌদী চায়, মানে যদি সৌদী জনগন চায়
“তবে সেখানে কি সামনের ৫০০ বছরেও ধর্মনিরপেক্ষ কোন দল জনপ্রিয়তা পাবে বলে করেন?”
কথাটার মানে কী থাকে? যেখানে জনগন চেয়েই ফেলেছে এবং চাওয়ার ফলে গনতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আবার তাদেরই আপনি বলছেন, চাইবে না, ৫০০ বছরেরও নাকি ধর্মনিরপেক্ষ দল জনপ্রিয়তা পাবে না!
তারপরের বাক্যে আপনি বলছেন “মূল্যবোধ হল বড় কথা।”
মূল্যবোধই যদি গড়ে না উঠত(এইক্ষেত্রে গনতন্ত্রের মূল্য বোঝার বোধ) তাহলে তারা তথা সৌদী কীভাবে গনতন্ত্রের দিকে এগিয়ে গেল?
আমার কাছে অর্থপূর্ন মনে হয় নাই। আমার বোঝায় ভুল থাকলে বলবেন।
আপনার সাথে এখানে কোন দ্বিমত নেই। শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর দিন, তাহলে ইন্ডিয়ায় না হয়ে কেন আফগানিস্তান, লেবানন, ফিলিস্তিনিতেই(এগুলোই সবচাইতে আলোচিত এবং উত্থানের কেন্দ্রিয় জায়গা যা পরে অন্য জায়গাতে ছড়িয়েছে বলে উল্লেখ করলাম) মৌলবাদীদের উত্থান হচ্ছে? সমস্যাতো অন্যান্য দেশেও আছে, তাহলে কেন শুধু এই দেশগুলো ঘিরেই এবং কেন একটা বিশেষ টাইম পিড়িয়ডেই সেটা হয়েছিল যেটা এখনও চলমান।
@সাইফুল ইসলাম,
– বাহ্যিক কোন প্রনোদনা বলতে আপনি ঠিক কি বোঝাচ্ছেন সেটা পরিষ্কার হয়নি আগেই বলেছিলাম। আমি ধরে নিয়েছিলাম বাহ্যিক বলতে বোঝাচ্ছেন ধর্ম সাপেক্ষে বাহ্যিক।
আমার মত যখন জানতে চাচ্ছেন তো পরিষ্কারই বলি যে মৌলবাদী গোষ্ঠীর আসল প্রনোদনা বাইরের কোন শক্তি দেয় না। মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মের ইন্টারপ্রেটেশন থেকেই সে প্রনোদনা পায়। বাহ্যিক শক্তির ভূমিকা সাধারনত হয় সেই মৌলবাদী গোষ্ঠীর জোশকে কায়দামত নিজ স্বার্থে ব্যাবহার করা। বাইরের কোন শক্তি হস্তক্ষেপ না করলে কি মৌলবাদী গোষ্ঠি মৌলবাদে উদ্ধুদ্ধ হত না? অবশ্যই হত, বাইরের শক্তির প্রভাবে সেই শক্তির প্রকাশের ভাষা কেবল বদল হয়।
ছোট উদাহরন দেই। বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের সাথে অবশ্যই বাইরের কিছু দেশের নাম জড়িত। আমাদের দেশে মৌলবাদীদের দখলে থাকা অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত নিষিদ্ধ কারন একে সংগীত ইসলামে সিদ্ধ নয়, তার ওপর সেটা হিন্দু কবির রচিত। এই মৌলবাদ কি আমেরিকা, আরব বা পাকিস্তান রফতানী করেছে সূস্থ মাথায় ভাবা সম্ভব? আরব দেশগুলি এবং পাকিস্তান বড়জোর সেই মৌলবাদীদের একত্র করে বিপ্লব ধরনের কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। বাংলাদেশে বিভিন্ন মৌলবাদী জংগী দলগুলির এক কমন ট্রেন্ড হল এদের লিডাররা আফগান ফেরত মুজাহিদ। এসব ব্যাক্তিদের আফগানিস্তানে লড়াই করতে আফগানিস্তান থেকে লোক এসে রিক্রুট করে নিয়ে যায়নি, তারা নিজেরাই সেখানে লড়াই করতে গেছিল জেহাদ হিসেবে। বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানীরা মানুষ মারছিল তখন কোন মুসলমান দেশ থেকে কেউ জেহাদে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসেনি। এসব মৌলবাদী আচরনের জন্য বাহ্যিক কোন শক্তি লাগে এমন ধারনা অন্তত আমার কাছে শুধু হালকাই নয়, বিবেচনাযোগ্যও মনে হয় না।
হেফাজতের ১৩ দফা, আমাদের দেশে বেত মারার ফতোয়া দেওয়া বা আরব অঞ্চলে পাথর ছুড়ে মানুষ হত্যার বিধান বাহ্যিক শক্তি শিখিয়ে গেছে ভাবতে আমাকে বেস ক’ছিলিম টানতে হবে, ঐ জিনিস কখনো টানার অভ্যাস নেই।
বাইরের শক্তি যে সব সময় হস্তক্ষেপ করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। ইরানের ‘৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব বাইরের কোন শক্তির প্রনোদনা ছাড়াই হয়েছিল। সে সময় শাহ এর শাসনে লোকে এতই ত্যাক্ত বিরক্ত ছিল যে সে বিপ্লবে বামপন্থীরাও যোগ দিয়েছিল। সে বিপ্লবের জোশ ছিল তীব্রভাবে মার্কিন বিরোধী যেহেতু শাহ ছিল মার্কিন তাবেদার। তাই বলে রুশ সমর্থন নিয়েও বিপ্লব হয়নি, খোমেনি ছিলেন কম্যুনিজম বিরোধী। সেটা ছিল ক্লাসিক উদাহরন। লোকের মাঝে ইসলামী শাসন ব্যাবস্থার দর্শন সব সময়ই ছিল, শাহ এর কুশাসনের ফলে তারা অল্টারনেটিভ হিসেবে সেটাই বেছে নিয়েছে, বাইরের প্রনোদনা লাগেনি।
– আপনি মনে হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল নিয়ে একটু বেশীই অবসেসড আছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল ছাড়া কি মৌলবাদ আর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না? বাংলাদেশে মৌলবাদীরা এখনো ক্ষমতা দখল করতে পারেনি (এমনকি পাকিস্তানেও মৌলবাদী ধর্মীয় দলগুলি ক্ষমতা পায় না)। তাতে কি খুব উল্লসিত হবার মত অবস্থা আছে?
এবার সরাসরি আপনার প্রশ্নে আসি। না, নেই। তার কারনও অতি সোজা।
যে কোন দেশেই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল একটি খুব বড় ব্যাপার। তার জন্য দরকার খুব ভালভাবে সঙ্ঘটিত বিপ্লব, সেই বিপ্লব ঘটাতে আবার দরকার উপযুক্ত কারন। কারন এমন ধরনের বিপ্লব মানেই সঙ্ঘাত/রক্তপাত, প্রান হারানোর প্রশ্ন। খুব ভাল কারন না থাকলে কার সাধ পড়ে সেধে সেধে সেই ঝামেলায় যেতে? খোদ সৌদী আরবে আরব বসন্ত সহসা হবার কোন সম্ভাবনা নেই যদিও সে দেশে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে জানি। এর মূল কারন সেখানকার লোকে এখনো বেশ ভালই আছে। নিজেরা ভাল আছে বলে রাজপরিবার কি করে না করে সে নিয়ে রাস্তায় নেমে রক্ত দেবার কোন মানে তারা যৌক্তিক কারনেই দেখে না। আরব বসন্ত কিন্তু ইসলাম কায়েম করার দাবীতে শুরু হয়নি এটা মনে রাখবেন, শুরু হয়েছিল অত্যাচারী/দূর্নীতিবাজ শাসকের কবল থেকে রেহাই পেতে।
ইরানে কি শাহ র আমলেই তার কুশাসন দেখে মৌলবাদ গজিয়েছে নাকি? ইরানী কালচারেই এর অস্তিত্ব আছে বহু আগ থেকে। শাহ এর বাবা ক্ষমতা দখল করে ইসলামী শাসন তুলে সেক্যুলার শাসন কায়েম করেন, চালান অত্যাচারের ষ্টিম রোলার। পরবর্তিতে সেই পুরনো শক্তিই আবারো সঙ্ঘবদ্ধ হয়, শাহ এর কুশাসন এদের দেয় ঢালাও জন সমর্থন।
বাংলাদেশেও বর্তমানে হেফাজতের আন্দোলন কেন্দ্র করে ইসলামিষ্টদের মহামিলন ঘটেছে বলা যায়। এর কারনও বর্তমানে তারা আন্দোলনে নামার বড় কারন পেয়েছে বলে। নেহায়এত শখ হল আর আন্দোলন করে ফেললাম এতটা জোশ খুব কম লোকেরই থাকে। যদিও এদের চিন্তা চেতনায় সব সময়ই ইসলাম কায়েম করার স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবে পরিনত করতে শুধু ধর্ম বই এর লাইন ছাড়াও আরো বড় চালিকাশক্তি লাগে।
– মনে তো হচ্ছে আপনার বড় ধরনেরই বোঝার ভুল হচ্ছে।
– আপনার ধারনা গনতন্ত্র কায়েম হওয়া বা গনতন্ত্রের দিকে আগানো মানেই ধর্মনিরপেক্ষ দল জনপ্রিয় হওয়া? মানুষ ভোট দিয়ে ধর্মভিত্তিক দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারে না? ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় যায় না? সেখানে কি গনতন্ত্র নেই? মিশরে ক্ষমতায় কারা কিভাবে গেল? আরবের লোকে যেই দলের কথাবার্তায় ইসলামের তেমন পাত্তা নেই, বিশেষ করে রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখার নীতি পালন করবে সে দলকে সহজে গ্রহন করবে না। বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে তো আমরা মেলাই প্রসংশা করি, তো সেখানে আজ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা এমনকি আওয়ামী নেতারাও বলতে অস্বস্থি বোধ করে কেন বলতে পারেন?
ইন্ডিয়ায় হচ্ছে না অন্য যায়গাগুলিতে কেন হচ্ছে তার মূল কারন ইন্ডিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক (মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী) রাষ্ট্র ব্যাবস্থার সাথে ধর্ম মিশিয়ে খিচুড়ী পাকানোর বিপদজনক দর্শন থেকে বহু আগেই মুক্তি পেয়েছে তাই। মুসলমান প্রধান দেশগুলিতে অবস্থা পুরোপুরি উলটো। মুসলমান সমাজে আজন্ম শেখানো হয় ধর্ম নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের, ব্যাক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে, কাজেই স্বাভাবিক নিয়মেই মুসলমান সমাজগুলিতে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করার দর্শন সব সময়ই বিদ্যমান থাকে, সাথে থাকে মুসলিম ব্রাদারহুডের ধারনা। সেই ব্রাদারহুডের কারনে প্যালেষ্টাইনে কোন মুসলমানের বাড়িতে বোমা পড়লে বাংলাদেশের মুসলমান ভাবে সেও আক্রান্ত। এ বৈশিষ্ট্য মুসলমান সমাজের ইউনিক, এ নিয়ে বেহুদা তর্ক করার কিছু নেই। পাকিস্তানও মুসলমান জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও জিন্নাহর ভিশন ছিল আসলে সেক্যুলার ধরনের পাকিস্তান, ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান নয়। যা আবার মৌলবাদী ধারার মওদুদী মানতে পারেনি।
আফগানিস্তান, লেবানন, প্যালেষ্টাইনে অবশ্যই বিদেশী দেশগুলির ভূমিকা আছে যা অনস্বীকার্য। যদিও ইয়াসির আরাফাতের ভিশন ছিল অনেকটাই সেক্যুলার ধরনের (কিছুটা আমাদের বংগবন্ধুর মত, সেক্যুলার শাসক কিন্তু আবার মুসলমান জাতীয়তায় গর্বিত)। প্যালেষ্টাইনের সাথে আজকাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুসলমান/ইসলাম এসে গেলেও প্যালেষ্টাইন আন্দোলন শুরুর দিকে বড় ধরনের ভূমিকা ছিল কিছু খ্রীষ্টানেরও। বিশেষ টাইম পিরিয়ডে কিভাবে হয়েছে ঠিক বুঝলাম না। আফগানের টাইম পিরিয়ড কখন ধরা যায়? লেবাননের সমস্যারই বা টাইম পিরিয়ড কখন? এই দুয়ের সাথে টাইম হিসেব করে প্যালেষ্টাইন কিভাবে মেলে? বলা ভাল যে প্যালেষ্টাইন/লেবানন মৌলবাদী উত্থানের খুব উর্বর যায়গা এমন মনে হয় না।
@আদিল মাহমুদএর এক একটি কমেন্ট অনেক পোস্টের চেয়ে বেশী ইনফরমেশন ঘন, চিন্তা জাগানিয়া।
মুক্তমনা অনেক দিন ধরে খানিকটা ঝিম ধরে আছে। শাহবাগ আন্দোলনের আলোচনায় অনেক উৎসাহ-আবেগ খরচ হয়ে যাওয়ায় মনে হয় সবার মধ্যে খানিক ফুয়েল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আশাকরি সবাই আবার পূর্ণোদ্যমে তর্ক-বিতর্কে সামিল হবেন।
@সফিক,
আপনি নীচে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছেন তাতে সরাসরি জবাব দেব যাচ্ছেনা|
তাই এইখান থেকে দিলাম|
মধ্যপ্রাচ্যে অনেক দেশেই সক্রিয় কমুনিস্ট পার্টি ছিল বিংশ শতাব্দীর একটা বড় সময় জুড়ে
আফগানিস্থানে নাজিবুল্লাহর সরকার কমুনিস্ট মনোভাবাপন্ন ছিল|
এছাড়াও অনেক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ছিল যারা হয় নন-এলায়ন্দ জাতীয়তাবাদী নয়তো সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক|
বাথ পার্টির কথা আগেই বলেছি|
এদের একটা বড় অংশ ছিল আরব জাতীয়তাবাদের সাথে সাথে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ভাবধারায় |প্রভাবিত(সেই সমর্থন ভিত্তির উপরেই সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করতে সফল হয় নাসের) – এই অংশটাকে আম্রিকা নষ্ট করে|
মনে রাখবেন ইরাকে ক্ষমতায় এসে সাদ্দাম যখন বাথ পার্টি পার্জ করে, তখন সাদ্দাম কিন্তু আম্রিকার নয়নমনি ছিল |
আপনি গত কুড়ি বছরের কথা বলছেন|তার আগে চল্লিশ বছর লম্বা সময় ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল, সেইটার কি হলো? আর দক্ষিন কোরিয়া-জাপান আম্রিকার উপনিবেশ ছাড়া কিছু নয়|
উনবিংশ শতাব্দিতে উপনিবেশের জন্যে সরাসরি শাসন করা হত|ওয়াশিংটন অত্ত ঝামেলায় যেতে চায় না|
সেনা ছাউনি বানিয়ে, পোষা কুকুর বসিয়ে, গাছেরও খায়, তলারও কুড়িয়ে নেয়|
তেল বোধয়!
এছাড়া দূর প্রাচ্য নিয়ে আম্রিকার দরদের কোনো অভাব ছিল এমন কোনো নিন্দুকেও বলবেনা|
ভিয়েতনাম-কোরিয়া যুদ্ধ মাত্র কয়েক দশক আগের ঘটনা|
ইতিহাসের বিচারে তেমন কিছু পুরনো নয়!
@সফিক,অনামী মধ্যপ্রাচ্যের কমুনিস্ট পার্টিগুলিকে আর যাই বলেন গণতান্ত্রিক উদারপন্থী প্রগতিশীল বলবেন না। আপনার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ধারনা কম বলে স্বীকার করেছেন সুতরাং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে পড়াশোনা করুন। বিংশ শতাব্দীতে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক উদারপন্থী প্রগতিশীল রাজনীতির লেশমাত্র দেখা যায় নি। বাথ, কমুনিস্ট সবগুলি পার্টিই ছিলো ফ্যাসীবাদী।
কিছুই না জেনে এইসব পার্টিগুলিকে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক বলে ফেললেন। সোশাল ডেমোক্র্যাসী কথাটার অর্থ কি? মধ্যপ্রাচ্য নাসের, নজিবুল্লাহ, সাদত কেউই কি কখনো গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলো?
@আদিল মাহমুদ,
তুখোড় বিশ্লেষণের জন্যে ধন্যবাদ|
তবে ভারত সম্বন্ধে যা কিছু বলেছেন তার সাথে কিঞ্চিত সংযোজন করতে চাই|
সনাতন হিন্দু ধর্ম বলে কিছু নেই- এইটা একটা হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক মিথ|
বাঙালি হিন্দুরা, তামিল হিন্দুরা আর গুজরাটি হিন্দুদের ধর্মাচরণ কোনো ‘অলৌকিক’ গ্রন্থের থেকে অনেক বেশি লোকাচার ও দেশাচার নির্ভর|
সাধারণ মুসলমান কোরান হাফিজের পবিত্রতা, অলৌকিকতা এবং মহত্ত্ব নিয়ে যত চিন্তিত, সাধারণ হিন্দুরা বেদবেদান্ত উপনিষদ নিয়ে তার সিকিভাগও নয়|
হিন্দু ধর্ম কোনো সঙ্গবদ্ধ নবী প্রেরিত ধর্ম নয়, কাজেই ধর্মীয় বন্ধনের থেকে তার মধ্যে আচার-বিচার এবং সামাজিক বন্ধনের গুরুত্ত্ব বেশি|
এই কারণে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির থেকে অনেক বেশি হয় জাত-পাতের রাজনীতির|
বর্ণাশ্রমের মতন সামাজিক কুপ্রথা এখনো দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে|
মজার কথা হলো, ভারতে মুসলমানদের মধ্যেও জাত-পাতের ভেদ আছে|
জাতের এমন দাপট, বিহার বা উত্তরপ্রদেশের অনেক জায়গায়, দলিত মুসলমানদের মসজিদের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়না, যা কিনা ইসলামের মূলনীতির পরিপন্থী|
ভারতে হিন্দুরা ছাড়াও আছেন আর নানান ধর্মের মানুষ যাঁরা সংখ্যায় নেহাত কম নন|
সব থেকে বড় কথা, দলিত বা আদিবাসীরা, যাঁরা কিনা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয়, তাদের জীবনচর্যার সাথে মনুবাদী ব্রাহ্মণ্য হিন্দুত্ববাদের কোনো সম্পর্ক নেই|
ভারত কেন একটি হিন্দু পাকিস্তান হয়ে উঠলো না, তার কারণ বোধয় ভারত ভাগের মধ্যেই নিহিত|
ভারত ভাগ হলে, মুসলিমরা পাকিস্তান পেল, কিন্তু ‘হিন্দুরা’ ভারত পায়নি|
ভারত পেয়েছিল ধর্ম নিরপেক্ষরা|
পাকিস্তানের ভবিষ্যত দুর্দশা আমার মতে তার জন্মের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল|
ধর্ম যে কখনো জাতীয়তাবাদের নোঙ্গর হতে পারেনা, তার প্রমান হয়ে গেল ৭১ সালে|
প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে প্রগতিশীল বাংলাদেশের ধারণা জন্ম নিল |
একজন সাধারণ ভারতীয়র থেকে ভারতের সংবিধান অনেক বেশি প্রগতিশীল|
তাই ভারত কখনো হিন্দু পাকিস্তান হবেনা- দুএকটা গর্দভ লাফালাফি করবে, কিন্তু এই দাবির কোনো জনভিত্তি নেই|
এইবার, প্রখ্যাত সাংবাদিক এম যে আকবর জেনারেল জিয়া-কে ৭১ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পাকিস্তানের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেন|
জিয়ার উত্তর ছিল যে পাকিস্তান যদি ইসলামী রাষ্ট্র না হয়, তাহলে কি হবে? দ্বিতীয় শ্রেনীর ভারত?
এখন প্রশ্ন হলো প্রথম শ্রেনীর পাকিস্তান শ্রেয় নাকি দ্বিতীয় শ্রেনীর ভারত?
প্রথম শ্রেনীর বাংলাদেশ শ্রেয় নাকি দ্বিতীয় শ্রেনীর আধা আরব, আধা আফগান বাংলাস্থান?
@আদিল মাহমুদ,
আলোচনার সুবিধার জন্য আপনার মন্তব্যের শেষে থেকে শুরু করি। আপনি লিখেছেনঃ
ইসরাইলী- ফ্রেঞ্চ বাহিনীর লেবাননের মাটি থেকে উৎখাতের দাবী নিয়ে হিজবুল্লার জন্ম। আধুনিক আত্নঘাতি বোমা হামলার উৎপত্তিও ঐ লেবাননের মাটিতেই ধরে নেয়া হয়।
আফগানিস্তানে মৌলবাদের উত্থান কখন? আপনি জানেন না বলছেন। যদিও আমি মনে করি আপনি জানেন, এমন কি আধুনিক যুগে ধর্মের মৌলবাদী ব্যাবহার সম্পর্কে যার বিন্দুমাত্র ধারনা আছে তারাই জানে আফগানিস্তানে তালেবান, আল কায়দা গোষ্ঠীর উত্থান “স্নায়ু যুদ্ধ” কেউ বলে “ঠাণ্ডা যুদ্ধ” এই সময়টার পিক মোমেন্টে। সেটা আশির দশক বা একটু আগে।
এই দুটো ঘটনাই বর্তমান পৃথিবীর সমস্ত জায়গাতে ইসলামি মৌলবাদের উত্থান এবং বিস্তারের কেন্দ্রিয় অবস্থানে। বৈশ্বিক ঘটনার এই দুটো টার্নিং পয়েন্ট মনে না রাখলে(না জানলে) ইসলামি মৌলবাদ সম্পর্কে আলোচনা শুধু বৃথাই নয়, অন্যায় মনে করি। কারন সেই ক্ষেত্রে আলোচনা শুধু কতগুলো শব্দ অক্ষরের সমষ্টিতে অর্থহীন প্রলাপে পরিণত হবে। ঘটনার উৎপত্তি, ব্যাখ্যা, পরিণতি, সিদ্ধান্ত কিছুই টানা যাবে না। আপনি যদি আসলেই না জানেন আমি মনে করি এই আলোচনা এগিয়ে নেয়ার কোন পর্যাপ্ত কারন নেই। আপনি জানেন এবং কোন বিশেষ কারনে আপনি অস্বীকার করছেন ধরে নিয়ে আমি একটু আগে বাড়তে চাচ্ছি।
তাহলে লেবাননে হিজবুল্লাদের উত্থানের পেছনের কারন কী? হিজবুল্লার আজকের এই ডমিনেটিং পজিশনে আসার কারন কী? আত্নঘাতি বোমা হামলা চালানোর আধুনিক যে ইতিহাস সেটার জন্ম নেয়ার কারন কী? সর্বোপরি লেবাননের ঘটনা অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যাওয়ার কারনই বা কী?
সাথে
আফগানিস্তানে আল কায়দা বাহিনীর উত্থানের পেছনের কারন কী? আল-কায়দার আজকের এই ডমিনেটিং পজিশনে আসার কারন কী? একের পর এক আত্নঘাতি বোমা হামলা, ৯/১১, পরবর্তীতে সেটা পাকিস্তান এবং তারও পরে সেই ঢেউয়ের ধাক্কা বাঙলাদেশে লাগার(যেটা আপনি বাধ্য হয়ে স্বীকার করেছেন) কারন কী? সর্বোপরি লেবানন+আফগানিস্তানের ঘটনা একটা বৈশ্বিক ফেনমেনন হয়ে ওঠার কারনই বা কী?
ঠান্ডা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়কে শায়েস্তা করতে আম্রিকার দরকার ছিল এমন একটা টুল(সবারই জানা তারপরেও আপনি যেহেতু জানেন না বলছেন সে জন্য পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে) যেটা দিয়ে সে কাউন্টার দিতে পারে। এই সমীকরন মেলাতে অঙ্কের খাতায় আল-কায়দা চলে আসে। আল-কায়দার মূল এজেন্ডাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সহজ ভাষায় বললে আল-কায়দার উত্থানের পেছনে মূল কারন ছিল আরব-পেনিনসুলায় আম্রিকান বাহিনীর অবস্থানের বিরোধিতা, আরব রাজনীতিতে আম্রিকান হস্তক্ষেপের বিরোধীতা, আম্রিকান দাদাগিরির বিরোধিতা। এটা মাথায় নিয়েই আমাদের ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার আম্রিকান এবং আল-কায়দার মিথস্ক্রিয়া বুঝতে হবে। আল-কায়দাকে প্রত্যক্ষভাবে সিআইএ’র মাধ্যমে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে, লক্ষ কোটি ডলারের অর্থ এবং সামরিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে আল-কায়দার বাজার মূল্য আম্রিকার কাছে শুণ্যে নেমে আসে, বরঞ্চ তারা তাদের খনিজ সম্পদ এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারনে আল-কায়দাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে এবং উলটো শত্রুতে পরিণত হয়। স্ট্র্যাটেজিক কারনে তাদের পরবর্তী জায়গা হয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের সাথে(বলা ভালো পাকিস্তান আর্মির সাথে, যেহেতু পাকিস্তান চলায় এর মাথামোটা আর্মি) আম্রিকান সম্পর্ক ভারত পাকিস্তান ভাঙার সময় থেকেই লদকালদকি পর্যায়ের। কারনটা কৌশলগত।
যাই হউক, এর মধ্যে ৯/১১ ঘটে গ্যাছে। দুনিয়ার ইতিহাসে দুটো বিশ্বযুদ্ধের পরে সবচাইতে মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ঘটনার নাম ৯/১১। এই ঘটনার পরে আম্রিকান প্রেসিডেন্ট ঝোপ(বুশ) সাহেব ইসলামি টেররিজমের বিরুদ্ধে ক্রিশ্চিয়ান “ক্রুসেড” ঘোষনা করেন। এই মহান উদ্যোগের নাম দেয়া হয় “ওয়ার অন টেরর”। যেই মহাপরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে আম্রিকান প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপরে বাড়তে থাকে, সাথে সাথে বাড়তে থাকে আম্রিকান সৈন্যদের উপস্থিতি। আপাতত এখানেই আমি আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপট শেষ করতে চাই। আর সময়কালটাও মনে রাখতে চাই। আশির দশক থেকে আজকে পর্যন্ত।
ইসরাইলী এবং ফ্রেঞ্চ বাহিনীর উৎখাতের লক্ষে শিয়া অধ্যুষিত লেবাননে একটা মিলিট্যান্ট গ্রুপে জন্ম নেয় হিজবুল্লা নামে। জন্মশাল আশির দশকের প্রথম দিকে। ইসরায়ের লেবানন আক্রমন ইত্যাদি যার জানার ইচ্ছা সে নিজ দায়িত্বে জেনে নেবেন, এখানে আমি শুধু টার্নিং পয়েন্টের ঘটনাগুলো উল্লেখ করছি। তো আগে যেমন বলেছিলাম লেবাননের মাটি থেকে বিদেশী শক্তির উৎখাতে লক্ষে জন্ম নেয় গেরিয়া সংগঠন হিজবুল্লা। এবং আধুনিক যুগের আত্নঘাতি বোমা হামলা এরাই শুরু করেছে বলে ধরে নেয়া হয়।
তাহলে আফগানিস্তান আর লেবাননের দুটো ঘটনার টাইনি ইতিহাস জানার পরে আমরা কিছুটা হলেও বুঝতে পারি এই দুটো ঘটনা কেন গ্লোবাল ফেনমেনন হয়ে গেল। কৌশলগত কারনে তারা এক দেশ থেকে আরেকদেশে তাদের কর্মকান্ড বিস্তার করেছে। যত জায়গাতে আম্রিকান ইন্টারেস্ট কাজ করেছে সেখানেই প্রতিক্রিয়া হিসাবে মৌলবাদের জন্ম হয়েছে। এবং এই প্রতিক্রিয়াকে কাজেও লাগিয়েছে আম্রিকাই।
এইখানে এসে আপনার বলা একটা প্যারা কোট করতে চাইঃ
আমার আগের মন্তব্যে করা প্রশ্ন ছিলঃ
টাইম পিরিয়ডের কথা উপরে উল্লেখ করেছি যতটা সম্ভব বিস্তারিত আর কেন শুধু এই দেশগুলো ঘিরেই এর উত্তর আপনি দিয়েছেন আপনার এই প্যারায়।
আরেকটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, আপনার পড়তে ভুল হয়েছে বলব না আপনি ইচ্ছা করেই ভুল পড়েছেন,
আমি বলেছিলামঃ
রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে আমি অবসেসড না, বরঞ্চ দেখা যাচ্ছে উত্তর দিতে সুবিধার জন্য আপনি রাষ্ট্রক্ষমতা কথাটা পছন্দ করে বসে আছেন। পাশে যে বিস্তার কথাটা আছে উল্লাসে সেটা দেখতেই পান নি আমাকে কাইত করে ফেলবেন রাষ্ট্রক্ষমতার কথা বলে সেই আশায়।
যাই হউক, আশা করি এই দুটো প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার করতে পেরেছি।
আবার আমার করা প্রশ্নটায় ফেরত আসি। আমি বলেছিলাম
এবার বিস্তার কথাটা ভুলে যাবেন না 🙂 ।
আপনি বলেছেন নাই। কারনও বলেছেন, এবং আমি আপনার সাথে মোর ওর লেস একমত। এখন আপনিই আমাকে বলে আপনি যে কথা সেই প্রথম থেকে বলে আসছেনঃ
এখনও তো হয়ই নি, আপনি এই স্পেকুলেশন করছেন কীসের ভিত্তিতে? কারন আপনার এই স্পেকুলেশন আপনারই নিজস্ব থিওরিকেই কন্ট্রাডিক্ট করে, আপনি ইরান সম্পর্কে আমার করা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেনঃ
আমি আপনার এই কথার বিরুদ্ধে কিছু বলি নাই যদিও করা গেলে আমার কথাটারই স্পেকুলেশন করা সম্ভব, কারন এর উদাহরন এত বেশি পরিমানে আছে যে শুধু একজন ইচ্ছাঅন্ধই সেটা দেখবে না। কিন্তু আপনার করা স্পেকুলেশনের উদাহরন নাই এই দুনিয়াতে। একটাও না। আপনি দেখাচ্ছেন কোন মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না, কোথায় পাথর ছুড়ে মারা হয় এগুলো। আদিল ভাই, এগুলো উৎপত্তি না। এগুলো উৎপত্তির পরে ধারাবাহিকতা। আর একটা ধর্মীয় গোষ্ঠি কীভাবে চলবে সেটা ঠিক করে দেয়ার আপনি কে? আফগানিস্তানের যদি সমকামিদের মেরে ফেলা হয় আমরা অবশ্যই এই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব, বাঙলাদেশে হলে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করব। খুবই ভালো কথা। কিন্তু আপনি যেভাবে একটা রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের প্রেক্ষাপটে একটা ধর্মীয় গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি পালনের কথা বলেন তখন সেটা ঐ সংস্কৃতির সমালোচনা হয় না, সেটা আধিপত্ত বিস্তারের পক্ষে কথা বলা হয়।
সৌদী আরবের ব্যাপারে আপনি বলেছিলেনঃ
একটা দেশের জনগন যদি গনতন্ত্রের দিকে এগোতে চায় তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা তারা ৫০০ বছরেও অর্জন করতে পারবে এটা কারো মুখ বের হওয়ার দুটো কারন থাকতে পারে। যাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে তাদের প্রতি সীমাহীন বিদ্বেষ থাকলে। নয়ত মানুষের সৃষ্টিশীলতা, মানুষের মনন, মানুষের মেধা সম্পর্কে সম্পূর্ন অজ্ঞ থাকলে। আজকে যারা আম্রিকার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেল সেই আম্রিকা ৫০০ বছর তো দূরের কথা এই কয়েকদিন আগে নারীদের ভোটের অধিকার দিয়েছে, সাদা-কালোদের একত্রে বসার অধিকার(!) দিয়েছে। সেই আম্রিকা আজকে দুনিয়া শাসন করছে। আর আপনি সৌদীকে ৫০০ বছরেও সেটা করতে দিতে রাজি হচ্ছেন না! আর একটা দেশের বেশিরভাগ জনগন যদি গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে(যেটা হল কয়েক বছর পরে পরে ভোট মারা) ধর্মীয় শাসন চায় আপনার সমস্যার জায়গা কোথায়? প্রচলিত গনতন্ত্র কি এই মানে দাঁড়ায় না বেশিরভাগ জনগনযা চাইবে তাই করা হবে?
শেষে আপনার বলা কথার সাথে মিলিয়েই বলি,
কেউ বলবে ধর্মের কথা, কেউ কমিউইজমের কথা, কেউ মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা, কেউ নৈরাজ্যবাদের কথা ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা আজন্ম জানার ফলে নাও হতে পারে, জেনে বুঝেও করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে কোনটা সঠিক সেটা সময়ই বলে দেবে। প্রকৃতির সাথে মানুষের সংগ্রাম, দ্বন্দ্বের ফলেই ফলাফল বেরিয়ে আসবে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে বালখিল্যভাবে বিচার করলে কখনোই সিদ্ধান্ত টানতে পারব না আমরা।
@সাইফুল ইসলাম,
খুব ভালো বলেছেন| যদিও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আমার জ্ঞান খুবই কম, তাই কতগুলি প্রশ্ন করছি-
১> আল-কায়দা কি আর সত্যি কোনো রকম ডমিনেটিং পজিশনে আছে? বা ছিল নাকি কোনদিন? নিজেদের পিক টাইমেও তো ওদের মেরেকেটে হাজার চারেকের বেশি সদস্য ছিল না বোধয়|
এইটা সত্যি যে ৯/১১ ঘটনা এরা সংগঠিত করেছিল|
কিন্তু তারপর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নাম করে আম্রিকান সন্ত্রাসের প্রপ হিসেবেই আল-কায়দাকে বেশি করে দেখতে পেল দুনিয়া|
আল-কায়দার সাথে কাল্পনিক লিংক ব্যবহার করে আর ওয়েপনস অফ মাস ডেস্ট্রাকশন-এর জুজু দেখিয়ে ইরাক আক্রমন হলো|
মনে আছে ওসামা যখন গায়েব হলো তোরা-বোরা থেকে, তখন গল্প দেওয়া হলো যে ওসামা পাক-আফগান সীমান্তে হাজার হাজার জঙ্গি নিয়ে মারনাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুরঙ্গ-ফুরঙ্গ খুঁড়ে একাকার করেছে|
আসলে দেখা গেল আবটাবাদে লুকিয়ে আছে তিনতলা বাড়িতে|যুদ্ধ ফুদ্ধ দুরে থাক, লুকিয়ে পানু দেখছে|
কিন্তু যে ওসামাকে ধরবে বলে যুদ্ধ ছিল, সেই ওসামার পটল তোলার পরেও(সত্যি মিথ্যা জানি না!) যাকে বলে বিজনেস এজ ইউজুয়াল!
২> আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো আম্রিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী মৌলবাদ কেন একমাত্র জবাব হবে? (আমি বলছিনা যে আপনি তাই বলছেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে মধ্যপ্রাচ্য এইরকম একটা জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে) নাসের যখন পশ্চিমী শক্তিদের চ্যালেঞ্জ করে, তখনও কিন্তু আরব জাতীয়তাবাদ গোছের একটা সেক্যুলার ধারণা থেকেই করেছিল|
ইসলামী মৌলবাদ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ দুটোই তো প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এবং একে অপরের পরিপূরক|
কেউই অন্যকে খতম তো করবেইনা, বরং আরো বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে|
তাহলে এই বিষাক্ত চক্র থেকে বেরিয়ে আসার যুক্তিসম্মত উপায় কি?
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার কথার জবাবে বহু কথা বলতে হয়। বিশেষ করে প্যালেষ্টাইন, লেবানন, আফগান নিয়ে বহু কথা লিখতে হয়। আমার এখানে শুধু প্রশ্ন ছিল যে এই তিন সমস্যাকে একটা বিশেষ টাইম পিরিয়ডে আপনি কিভাবে ফেলেন সেটা নিয়ে। আমার জানামতে টাইম পিরিয়ডে বেশ ভিন্নতা আছে।
আপনি প্রথম থেকেই মৌলিক কিছু ভুল ধারনা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন এবং অব্যাহত গতিতে তা কন্টিনিউ করে আসছেন বলে মনে হচ্ছিল। আগেই লক্ষ্য করেছি যে আপনি মৌলবাদ বলতে কেবল সুইসাইড জংগীবাদ কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল (এবং বিস্তার) জাতীয় মৌলবাদ নিয়ে আলোচনাতেই অধিক আগ্রহী। যেই লেখার সূত্র ধরে এই আলোচনা সেই লেখার প্রেক্ষাপট ছিল বাংলাদেশের কনেটক্সট এ, সেখানে সুইসাইড বোম্বার ইস্যু ছিল না। আফগান, আরব এসব প্রসংগ ভাল করে বুঝতে আলোচনায় আসতে পারে, তবে মূল আলোচনা বাদ দিয়ে সুইসাইড বোম্বারের এনালাইসিস সময় নষ্ট বলেই মনে করি। হতে পারে আপনি মৌলবাদ বলতে কেবল তাইই বোঝান। আমি মৌলবাদ বলতে, বলা ভাল প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদ বলতে (কারন শুধু মৌলবাদ আপত্তিজনক কিছু নয় যতক্ষন পর্যন্ত তা ব্যাক্তি পর্যায়ে থাকে, যে কোন প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসীই মৌলবাদী) আরো অনেক বৃহত্তর চিত্র বুঝি। তেমন মৌলবাদের দুয়েকটা উদাহরন আগেই দিয়েছি। আপনি সেসবে তেমন পাত্তা না দিয়ে কেবল আফগান, প্যালেষ্টাইন এসবে মগ্ন থাকতে চান কারন সম্ভবত সেটা করা হলে সুইসাইড বোম্বার জন্মের জন্য আমেরিকাই বেশী দায়ী, ধর্ম বা কোন ধর্মগোষ্ঠীর কোন রকম দায় নেই তা প্রমান হয়ে যায়। আমেরিকার দায় আমি সুইসাইড বোম্বার, তালেবান সৃষ্টি এসবের পেছনে নেই কোনদিন বলিনি, বলার কারনও নেই। তাতেই প্রমান হয়ে যায় মৌলবাদী সমস্যা বলতে আমরা যা যা বুঝি, আলোচনা করি তার সবই আমেরিকা রাশিয়া বানাচ্ছে বা বানিয়ে দিয়েছে?
আপনি পরিষ্কার বলেন যে সমস্যা পূর্ন মৌলবাদ বলতে আপনি কেবল তালেবান, সুইসাইড বোম্বার, কিংবা বড়জোর বাংলা ভাই এসবই বোঝাচ্ছেন কিনা?
মৌলবাদের অন্য কোন সমস্যা নেই? বাংলাদেশের মৌলবাদের দুয়েকটি সমস্যা আগে বলেছি। আপনার কাছে কি সেসব তেমন কোন মৌলবাদী সমস্যা বলে মনে হয় না? কিংবা সেসবের জন্য সরাসরি আমেরিকা দায়ী, নিদেনপক্ষে আমেরিকার সৃষ্টি লাদেনচক্র বা পাকিস্তানী আইএসআই দায়ী বলে মনে করেন যাতে ধর্মের কোন ভূমিকা নেই প্রমান করা যাবে? পাকিস্তান আমলে আরবী ভাষার হরফে বাংলা লেখার আইডিয়া, রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ করার জ্ঞানগর্ভ ইন্টেলেকচুয়াল তত্ত্ব (যা এখন আবার অনেকে দিচ্ছে যারা ঘোর মার্কিন বিরোধী), ভাষ্কর্য ধ্বংসের তত্ত্ব, মোমবাত্তি নিষিদ্ধ করার সাম্প্রতিক হেফাজতি দাবী এসবই আমেরিকার মত বিদ্বেষী শক্তি করিয়েছিল? এমন উদাহরন যে কয় শো দেওয়া যায় তা আপনিও জানেন না তা আমই বিশ্বাস করি না।
এই প্রশ্ন দুটোর জবাব গুরুত্বপূর্ন।
মৌলবাদ প্রকাশের বহুরূপ হতে পারে আগেই বলেছি, অঞ্চল ভেদে হতে পারে, বহিঃশক্তির প্রভাবে হতে পারে, এমন আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে। বাইরের কোন শক্তির প্রভাব না থাকলেও হবে না এমনও কথা নেই। বাংলাদেশে বাইরের কোন শক্তির প্রভাব ছাড়াই বহু ভয়াবহ মৌলবাদী আচরন উচ্চশিক্ষিত লোকজনের ভেতরেও দেখা যায়। কার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ন তা আপেক্ষিক হতে পারে। আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন তো আমার মত আমি বলব যে আমি বাংলাদেশে বাংলা ভাইদের বোমাবাজির চেয়ে হেফাজত জাতীয় দলের উত্থান আরো অনেক বেশী উদ্বেগকর বলে মনে করি। বাংলা ভাইরা ধর্মজাত হলেও মূল কারন ছিল রাজনৈতিক, এদের নিয়ন্ত্রন অপেক্ষাকৃত সহজ, এদের কোন প্রভাব সমাজে পড়বে না। হেফাজতিরা আপাতত মিইয়ে গেলেও তাদের প্রভাব অনেক সুদূরপ্রসারী। বাংলা ভাইদের দমন করা অনেক সহজ, কিন্তু ফতোয়া দিয়ে নারী বিদ্বেষ প্রচার বা প্রকাশ্যে মানুষকে বেত মারার কালচার বন্ধ করা অনেক অনেক কঠিন।
এসব সম্পর্কে আপনার মত অবশ্য এখন কিছুটা হলেও জানা গেল। আপনি এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি কোন চোখে দেখেন তাও মনে হয় জানতে পারলাম।
উতপত্তির পরের ধারাবাহিকতা তো অবশ্যই। ধর্ম ব্যাপারটাই তো তাই। নাকি? উতপত্তির পরের ধারাবাহিকতা ছাড়া আর কি? তো এতে কি প্রমান হল? আমার জানার ইচ্ছে ছিল এসবের পেছনে ধর্মের ভূমিকা বড় নাকি বাহ্যিক কোন রাষ্ট্রের ভূমিকা বড়? উতপত্তির পরের ধারাবাহিকতা দিয়ে আমি কি বুঝতে পারি?
আপনার বোল্ড করা অংশের পরে মনে হয় আপনার সাথে আলোচনার তেমন মানে নেই। আফগানিস্তান নিয়ে আমার খুব বেশী মাথাব্যাথা নেই। আমার মাথা ব্যাথা নিজের দেশ নিয়ে। একটা ধর্মগোষ্ঠির লোকে জাতীয় সংগীত অপমান করবে কাফের কবির রচনা বলে, আমি কোথাকার কে তাদের সমালোচনা করার? তাদের মোল্লাগণ পাথর ছুড়ে মানুষ হত্যার বিধান দেবে, অপরাজেয় বাংলা ভাংগার দাবী জানাবে, আমি কোন ব্লগের কাবিল আপত্তি করার? নাকি আপত্তি করতে পারি, তবে হ্যা, অতি অবশ্যই আমাকে ধর্ম অংশটা বাদ দিয়ে করতে হবে? আপনার মত এমন হলে শ্রদ্ধা সহকারেই আপনার সাথে এখানেই খোদা হাফেজ।
বলতে বাধ্য হচ্ছি যে গত বছর খানেক ধরে আপনি “বিদ্বেষী” ধরার কাজে মন দিয়েছেন যার প্রভাব খোলা যুক্তিপূর্ন আলোচনায় পড়ে, মুক্তমনায় আমি কেন নিজেকে বিদ্বেষী মনে করি না সেসব প্রমানে সময় নষ্ট করার মানে দেখি না। মুক্তমনার নিয়মিত সদস্যদের কাছে বিদ্বেষী শব্দটার ব্যাপ্তি একটু ভিন্ন হবে এমন আশা করতেই পারি। তাও ভাল এখনো ঢাকাই ভাষায় যাননি, সেজন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন। একটা বড় আলোচনায় হাজারটা বিষয় আসে, সব বিষয় এক সাথে কিংবা পুংখানুপুংখু রূপে হুবহু শব্দ সমেত ফোকাস করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেজন্য কোন বিষয় বাদ পড়ে গেলে কিংবা বোঝার ভুল হলে সে নিয়ে বেহুদা ঘোট পাকানো জাতীয় আলোচনার ক্ল্যারিফিকেশন নিয়ে নষ্ট করার সময় তেমন নেই। দু’জন বিপরীত মেরুর মানুষও আলোচনা করতে পারে, তবে কেউ আগে থেকেই কাউকে বিদ্বেষী ঠাউড়ে নিলে আলোচনা আসলে মত বিনিময় হয় না, হয় প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে। তখন একটা শব্দ বাদ পড়লে তা নিয়ে বিশাল পয়েন্ট বানিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলা শুরু হয়।
– আপনাকে কাইত বা সোজা করার কোন বদমতলব আমার ছিল না। আপনার দাবীমতে (যা অবশ্যই ঠিক) আমি ‘বিস্তার’ শব্দটা ইচ্ছে করেই বাদ দিয়েছি। বিস্তার বাদ পড়ায় আমার বিশাল লাভ হয়েছে? তাতে আমার আর্গুমেন্টের কি সুবিধে হয়েছিল? আমার মূল কথা ছিল আপনি মৌলবাদ বলতে কেবল সুইসাইড বোম্বার, তালেবান, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল জাতীয় ব্যাপার নিয়েই পড়ে থাকতে চান। এর সাথে এখন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সাথে বিস্তারও যোগ করে দিন। তাতে কি এসে গেল? আমার কথার মূল অর্থ একই থাকল। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে মৌলবাদের আরো বহুতর প্রকাশ আছে যথেষ্ট উদ্বেগজনক, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল (সাথে বিস্তার) জাতীয় চরম প্রকাশ ঘটলেই কেবল মৌলবাদ নিয়ে চিন্তিত হতে হবে এমন ধারনা আমি ভ্রান্ত মনে করি।
– আপনার সাথে কথা বলতে গেলে ভাল হয় সাথে একজন উকিল রাখা গেলে। ভুল হলে ক্ষমা করবেন, মনে হয় এখানে “৫০০ বছরেও অর্জন করতে পারবে” এর পর ‘না’ হবে। নাকি? পরে আবার হয়ত বলবেন যে আমিই ইচ্ছে করে বাদ দিয়েছি। এ প্রসংগে আমার মূল কথা ছিলঃ
– – এ নিয়ে আপনার প্রথম কথা ছিল যে এই বক্তব্য নাকি সাঙ্ঘর্ষিক। কারন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে ধর্মনিরপক্ষতা জনপ্রিয়তা হবে না এমন নাকি সম্ভব নয়। আমি উদাহরন দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে খুবই সম্ভব। গনতন্ত্র মানেই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা তো নয়ই, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তারও নিশ্চয়তা দেয় না। সে নিয়ে কোন কথা না বলে প্রিয় প্রসংগে চলে আসলেন, এবার প্রমানে ব্রতী হলেন যে, যে এমন উক্তি যে করতে পারে সে আরবের জনসাধারনের প্রতি সীমাহীন বিদ্বেষী। কিংবা সৃষ্টিকর্তা, মেধা মনন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলে। চমতকার বিশ্লেষন।
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা সম্পর্কে আরব এবং বাংলাদেশে ভোট নিলে কেমন মতামত পাওয়া যাবে বলে মনে করেন? দুই দেশেই একই চিত্র পাওয়া যাবে, নাকি আরবের লোকে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা বর্জনের পক্ষে অনেক বেশী হারে ভোট দেবে? এটা হাইপোথিটিক্যাল হলেও সাধারন বোধবুদ্ধি সম্পন্ন যে কোন লোকেরই এমন ফলাফলে সংশয় প্রকাশ করা উচিত নয়। তো, এই রেজাল্ট প্রকাশ করার মানে ধরা যেতে পারে “আরব বিদ্বেষ”? ৫০০ বছর নিয়ে অবশ্যই ঘোট পাকাতে পারেন। সেটা নিতান্তই কথার কথা ছিল। মূল কথা ছিল আরবের লোকের কাছে যেহেতু ধর্ম অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন তাই তারা সহজে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি গ্রহন করবে না সেটাই স্বাভাবিক। ৫০০ না হয়ে ১০০ হতে পারে, ৫০ ও হতে পারে। আপনার সুবিধেমত একটা বছর বসিয়ে নিয়ে খুশী থাকুন। আমি একাডেমিক লেখা লিখছি না বলেই ধারনা করি বলে এ নিয়ে এত সতর্ক থাকিনি। এবার গনতান্ত্রিক বাংলাদেশের আলেম মোল্লাগনের কাছে তারা কত বছর পর ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহন করবেন জিজ্ঞাসা করে আসেন। অধিকাংশই সম্ভবত জবাব দেবেন যে কেয়ামত পর্যন্তও না। সেটা প্রকাশ করা বিদ্বেষের প্রকাশ হয়ে যাবে?
আচ্ছা, ইসলাম পূর্ন ভাবে মেনে চললে ধর্মনিরপক্ষ নীতি কিভাবে রক্ষা সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই আলেম মোল্লাগন ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মানতে চাইবেন না সেটাই স্বাভাবিক। এটা কি সত্য নয়? এর সাথে বিদ্বেষের সম্পর্ক কোথায়? নাকি আপনার জানামতে আলেমগন যারা ইসলাম শিক্ষার অগ্রদূত তারা ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সমর্থক?
আমি এখন পর্যন্ত এই আলোচনায় একবারও বলিনি যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মানেই খারাপ, বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমর্থন মানেই গোল্লায় যাওয়া। বলেছি কি? এতক্ষন পুরো আলোচনায় ফোকাস করেছিলাম কেন মুসলমান প্রধান দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি জনপ্রিয় হয় সেটা। আমি নিজে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমর্থন না করলেও কেউ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমর্থন করে বলেই তার সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষন করি না, ছাগু মনে করি না। এ নিয়ে তর্কাতর্কি করে এক সাইট থেকে লেখাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আরবের লোকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পছন্দ করলে আমি তাতে আপত্তি করব এমন অদ্ভুত ধারনা আপনার কেমন করে হল তা বোঝা তেমন কষ্টকর নয়। আমি এ প্রসংগে আমি কি ভাবে সেটা মূল্যায়ন করি সে নিয়ে কোন কমেন্ট করিনি, আপনি নিজে নিজে আমার মনের আসল কথা পড়ে ফেলেছেন। আচ্ছা, ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা সম্পর্কে কোনই সমস্যা না থাকলে আরবের লোকে ৫০০ বছরই সে ব্যাবস্থা ধরে রাখবে এমন কথা শুনলে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখালেন কেন? তারা ৫০০ বছর ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা চালালে তার মাঝে অপমানকর কি আছে? ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা মানেই খারাপ তার পরোক্ষ স্বীকৃতি কি আসলে আপনিইই এভাবে দিলেন না? আমি তো এমন কিছু বলিনি, প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদ না হলে ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থায় আমার কোন আপত্তি নেই। ভারতে বিজেপিতে বহু মুসলমানও ভোট দেয়। ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা নিয়ে আমার আরেকটি আপত্তির পয়েন্ট এখানেই যখন লোকে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে এর চেয়ে ভাল আর কোন বিকল্প নেই, হতে পারে না।
আমি বহু প্রসংগেই বলেছি যে কোন ব্যাবস্থাই, সে গনতন্ত্র হোক, ধর্মতন্ত্র হোক, কম্যুনিজম হোক, স্বৈরতন্ত্রই হোক সফল হবে কিনা তা নির্ভর করে শুধু ব্যাবস্থার ওপর নয়, ব্যাবহারকারীদের ওপর। কারন চুড়ান্ত বিচারে সেই মানুষেরই বিচার বিবেচনার দ্বারস্থ হতে হয়। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর মৌলবাদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, নারী স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়েছে এসব অভিযোগ থাকলেও অন্যদিকের চিত্র দেখায় যে অন্তত শাহ এর আমল থেকে আর্থ-সামাজিক ইন্ডেক্স বহু ক্ষেত্রেই উন্নত হয়েছে। আফগানিস্তানে তেমন হয়নি। এর কারন ওপরে বলেছি। ভারতেও ধর্মভিত্তিক বিজেপি দেশ শাসন করেছে, দেশ রসাতলে যায়নি। আঞ্চলিক পর্যায়ে তাদের শাসনামলে প্রভূত উন্নতি হয়েছে এমনও আছে। বর্তমানে মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডও মৌলবাদী শাসন চালাচ্ছে এমন এখনো প্রতীয়মান হয়নি। স্বৈরশাসনের অধীনে বহু দেশ গনতন্ত্রের চেয়ে ভাল চলেছে এমনও হতে পারে।
আমরিকার যে উদাহরন দিলেন সে কারনেই আমি আমরিকা পছন্দ করি। নিজেদের পশ্চাতপদতা গোয়ার্তুমী করে আঁকড়ে না ধরে খুব দ্রুত তারা সেসব থেকে বার হতে পেরেছে। সেটা কৃতিত্বের নাকি দোষের তা যার যার বিবেচনা। উদ্ভট উদ্ভট বিধি বিধান ধর্ম বা চলমান সংস্কৃতি এমন কিছুর খাতিরে মানতেই হবে এই জাতীয় অজুহাত তারা বার করেনি দেখেই দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এবার আমেরিকার বিশ্বময় মোড়লি নিয়ে আশা করি আবার বিশাল হিসেব দেবেন না, কথা হয়েছে আমেরিকার আভ্যন্তরীন নানান সামাজিক সমস্যা নিয়ে।
আরো বহু কথা বলেছেন আরো সব কন্ট্রাডিকশন ধরছেন যেগুলির জবাব দিতে হলে সপ্তাহ খানেক লাগবে। তাই আগেই পরাজয় স্বীকার করা ভাল।
@সাইফুল ইসলাম,
“আফগানিস্তানে মৌলবাদের উত্থান কখন? আপনি জানেন না বলছেন। যদিও আমি মনে করি আপনি জানেন, এমন কি আধুনিক যুগে ধর্মের মৌলবাদী ব্যাবহার সম্পর্কে যার বিন্দুমাত্র ধারনা আছে তারাই জানে আফগানিস্তানে তালেবান, আল কায়দা গোষ্ঠীর উত্থান “স্নায়ু যুদ্ধ” কেউ বলে “ঠাণ্ডা যুদ্ধ” এই সময়টার পিক মোমেন্টে। সেটা আশির দশক বা একটু আগে।”
আপনি প্রথমে একটু আফগান ইতিহাস নিয়ে একটু পড়াশোনা করেন। প্রথমে শুরু করেন সৈএদ মুজতবা আলীর আফগান ভ্রমন লেখা থেকে। তার পর আরও পড়ুন উনিশ শতকে আর বিশ শতকে একের পর এক ইং-আফগান দ্বন্দ্ব। দেখবেন যে ২০০ বছর ধরে আফগানিস্থানে ধর্মীয় রক্ষনশীল মৌলবাদীরা কি রকমে প্রভাবশালী। আফগান সমাজ গত এক হাজার বছরে বদলায়নি। এর কারন নিশ্চই বাইরের ষড়যন্ত্র নয়। ২০০ বছরের বেশী সময় ধরে বাইরের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির (ইংরেজ, রুশ, আমেরিকা) আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে আফগান ধর্মীয় মৌলবাদীরাই। আফগান জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় মৌলবাদ মোটামুটি সমার্থক। আশাকরি এটা আবার বলে বসবেন না যে নিজেরা নিজেদেরকে ল্যাং মারার জন্যেই ইংরেজরা সেই সময়কার আফগান তালেবান সৃষ্টি করেছিলো
@আদিল মাহমুদ,
পৃথিবীর সর্বত্র ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও জনপ্রিয়তার পেছনে আমার মনে হয় একটা বড় কারণ উপযুক্ত বিকল্পের অভাব|
আজকের বেশির ভাগ দেশেই প্রধান রাজনৈতিক বা সামরিক শক্তিরা হয় সেন্টার-লেফট নয় সেন্টার-রাইট|
যাকে ঐতিহাসিক তারিখ আলী বলেছেন, “দি প্রবলেম অফ দি এক্সট্রিম সেন্টার”|
গত শতাব্দীর একটা বড় সময় জুড়ে সোভিয়েত ব্লকের অস্তিত্ব সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে একটা সম্ভাব্য বামপন্থী বিকল্পকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল|
যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যেও তুলনামূলক ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো আত্মপ্রকাশ করতে থাকে, যেমন ধরুন বাথিস্টরা|
এরা অনেকেই কমুনিস্ট ছিল না, বা এদের কিছু বদগুণের অভাব ছিল না (আর সোভিয়েত রাশিয়া কমিউনিস্ট ছিল কিনা সেই আলোচনাতেও যাচ্ছিনা)|
কিন্তু একটা রাজনৈতিক বিকল্প ছিল, যেইটা পুরোপুরি অস্বীকৃত হয়নি|
তাই পাশ্চাত্য ইউরোপীয় বা আমেরিকান জোটকেও কিছুটা হলেও প্রগতিশীলতার মুখোশ পরতে হত|
‘দেখো আমরা কত উদার, আমাদের স্বাধীনতা গণতন্ত্র আছে’- ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তারা হল্লা-টল্লা করত|
যদিও সোভিয়েত প্রভাবের বলয়কে রুখতে পাশ্চাত্য শক্তির সেরা অস্ত্র ছিল প্রগতিশীল/বামপন্থীদের/গণতান্ত্রিক বাম মনোভাবাপন্নদের পতন ঘটিয়ে পেটোয়া দালাল শাসকদের গদিতে বসানো আর ধর্মীয় মৌলবাদীদের কুকুরের মতন এদিক ওদিক লেলিয়ে দেওয়া হয়|
কিন্তু সোভিয়েত পতনের পর পাশ্চাত্য ধনতান্ত্রিক দেশগুলির প্রগশিলতার মুখোশের প্রয়োজন পড়ছেনা|
এখন তারা মনে করছে যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার তাদের আছে, এবং তাই করছে|
যেহেতু মধ্য প্রাচ্যে গণতান্ত্রিক উদারপন্থী প্রগতিশীল দলগুলোকে মোটামুটি ভাবে খতম করে দেওয়া হয়েছে পেটোয়া একনায়কদের দিয়ে, হাতে রইলো পেন্সিল-এর মতন হাতে পরে থাকছে মৌলবাদী ইসলামিক দলগুলি|তারাই স্বতস্ফুর্ত আরব বসন্তের পর সঙ্গবদ্ধভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে অনেক বেশি সক্ষম হচ্ছে |
@অনামী,
আচ্ছা, ” মধ্য প্রাচ্যে গণতান্ত্রিক উদারপন্থী প্রগতিশীল দলগুলো’ র কয়েকটির নাম বলুন তো যাদেরকে আমেরিকা শেষ করে দিয়েছে?
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আমেরিকার এই বিপুল ষড়যন্ত্র নিয়ে আমার মধ্যে সবসময়েই একটা পাজল থেকে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকার একাধিপত্যে সবচেয়ে বড়ো হুমকি হয়ে এসেছে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে যথাক্রমে জাপান, কোরিয়া, চীন, ভারত। আজকে আমেরিকার নিজের দেশের ভিতরের বাজার, বাইরের বাজার সবখানেই পূর্ব-দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার আধিপত্য। আমেরিকা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ধার করে আছে এসব দেশ থেকে। আমেরিকার ভিতরে শত শত কোম্পানী, বাড়ি ঘর কিনে নিচ্ছে ঐসব দেশের লোকেরা। কিন্তু তবু আমেরিকা এইসব দেশের সাথে কি গলাগলি সখ্য। এখনো জাপানে, কোরিয়ায় লাখের কাছাকাছি আমেরিকান সৈন্য বসে আছে। অন্যদিকে চীনকে তো নিজের বাজার পুরোপুরি খুলেই দিয়েছে। সুই, সুতো হতে সোলার প্যানেল পর্যন্ত সবকিছুই আসে চীন থেকে।
কিন্তু এতসব চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ফেলে আমেরিকা কেনো মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এতো অবসেসড? কেনো মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রন করার জন্যে এতো পাগলপারা?
দেখুন ডাইনোসর সাহেব, কিছু লেখার আগে সেটিকে নিয়ে কয়েকবার ভাবাটা জরুরি। কারন আপনি যেই বিসয় নিয়ে বলছেন সেটা আসলে বাংলাদেশ এর মানুষের ভাবনাকে উপস্থাপন করেনি। আপনি আজ কাদের কে পশ্চাদপদ জাতি বলছেন? সেটা ভেবে কথাটা বলা উচিত ছিল। মানুষের পাঁচ আঙ্গুল যেমন কখন ও সমান হয়না, তেমনি একটি দেশে সব মানুষ সমান হয় না। এখন লজিক দিয়ে ভাবুন, সবাই যদি হেফাজুতি মোল্লা হয় তবে মন্ত্রীর চেয়ার বসে ঘুষ খাবে কে? আবার সবাই যদি মন্ত্রী হয় তবে মন্ত্রীর জানাজায় ইমামতি করবে কে। হয়ত আপনি যেখানে বর হয়েছেন (উত্তর বঙ্গ এবং দক্ষিন বঙ্গের মাঝামাঝি) সেখানে মোল্লা সমাজ এরকমই। কিন্তু আমি দুঃখিত যে আপনর মোল্লা সমাজ এর সাথে আমাদের মোল্লা সমাজের কোন মিল পাচ্ছিনা। যাই হোক আপনার কথাই যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এটা ভাবা নিতান্তই বোকামি হবে। এতো গেল আপনর কথার সমালোচনা, এখন আমর এখানে কিছু বিষয়ে না বল্লেই নয়। এই দেশটা আসলে জন্ম নিয়েছে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে। তানাহলে এটা এতক্ষনে ভারত এর একটি প্রদেশ এবং ভারত এর মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল এর মতই হত। ব্রিটিশ সরকার এর আমল এ যেদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইস্ট বেঙ্গল এর পাওয়া রাজধানী খেতাব ছিনিয়ে নিলো তখনই বোঝা হয়ে গিয়েছিলো তখনকার বাংলাদেশ এর আদুর ভবিষ্যৎ যেটা এখন বিহার এবং বার্মা এর মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল এর অবস্থা। একমাত্র এইসব হেফাজতি আন্দলন এর কারনে আমরা এখন মুক্ত। এখন আসি বর্তমান হেফাজতি আন্দোলন এর কথায়ে। আসলে এসব হেফাজতিরা কারা? আমরা এটা সবাই জানি যে গণজাগরণ মঞ্চর কিছু ভুলত্রুটির জন্য আজ এটার জন্ম। এখন আপনি যদি ইসলাম এর নবী বিরোধী নাস্তিকতা কে স্বাধীনতা বলেন, তবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটাও স্বাধীনতা। এর এইসব হুজুর, ছাত্ররা কারা? এরা আসলে বাংলাদেশ এর উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চল এর মানুষ। যে সংখ্যাই হক, আর যেভাবেই হোক হুজুররা মার খেয়েছে। বেপারটা হাসির (কিছু সরকারি দল এবং নাস্তিকদের জন্য)। আপনি বললেন সবাই হাসে কিংবা রাগ হয়। তবে আপনার কাছে আমার আবারও প্রশ্ন, এরা আসলেই কারা? যাদের পেছনে আমরা মসজিদ এ নামাজ পড়ি খুতবা শুনি, নিজেরা তো কুরআন পড়ি না ইয়াতিম-মিস্কিনদের সামান্য টাকা দিয়ে পরাই, এমনকি আমাদের অথবা কোন প্রিয়ও মানুষের মৃত্যুর পর যারা গোসল করিয়ে জানাজা দেবে, তারা আসলেই এরা। যদি কোন মুসলমান পাঠক আমার এই কথার বিরোধী হন তবে দয়াকরে ওইসব নির্বোধ জাতির পেছনে নামাজ পরতে যাবেননা। আর ডাইনোসর সাহেব কে বলব আপনি মাদ্রাসার অর্থ জোগান সম্পর্কে চুপ হলেন কেন। এটা তো সবাই জানে আমাদের দেশটা চলছে সৌদি আরব আর আবুধাবির অর্থায়নে। একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে এই সুবিধাটা পাচ্ছেন, সিডর ঝড় এর সময়ে তথাকথিত প্রতিবেশী দেশের সাহায্য আর সৌদির সাহায্য বিবেচনা করলেই বোঝা যায়ে। তাই এসব বড় বড় কথা না বললেই নয়। নিজের দেশকে আগে নির্ভরশীল করেন, তারপর বড় বড় কথা বলবেন। আর এই হেফাজতিরা অন্য কেউ নয়, আমাদের জাতির অন্যতম মূল শিকর। কয়জন মানুষ ইয়াতিম-মিস্কিন কে খাওয়াতে পারে বলুন? আমরা কাজের মেয়েকেই সন্মান দিতে চাইনা আর ইয়াতিম তো দুরের কথা। আর এই বাবা-মা ছাড়া হাজার-হাজার শিশু গুলোকে যখন বড় করা হচ্ছে তখন বলছেন সমাজের নিচু জাতি, জঙ্গি, অশিক্ষিত জাতি। আর আপনি যদি এই দুনিয়াতে না থাকতেন তবে আপনার সন্তানদের হেফাজতিরাই লালন-পালন করত। আপনার দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এই আন্দোলন কেউই সাপোর্ট করেনা, কিন্তু আমি বলব বাংলাদেশ এর ৮৫%/৯২% দেশি-বিদেশি মুসলিম ঘরে বসে এর সমর্থন দিয়েছে। আমি বাঙালি না হয়ে বাংলাদেশী এবং তার প্রতিনিধি হয়ে আপনর এই রচনা প্রত্যাখ্যান করলাম।
Virginia, USA
@আশিকুল হক আবির,
ঠিক বলেছেন। কিন্তু সবার তো আর ভাবনা করার ক্ষমতা সমান থাকে না। আপনার একটু বেশি আমার কিছু কম। এই..
আমাদের দেশের মোল্লারা সবাই কিন্তু কওমি মাদ্রাসার ছাত্র না। আমি বরাবরই হেফাজতী মাদ্রাসার কথা বলেছি।
মোল্লারা মূল কিংবা ডালপালা এই বিষয়ে তর্ক করার কিছু দেখছি না। আর দুই বার পড়েও আপনার কমেন্টের কোন বিতর্ক করার মতো কিছু পেলাম না, অনেকটা ধান বানতে শিবের গীতের মতো।
এই পরিসংখ্যানের ভিত্তি কি? এত বিশাল মানুষের সমর্থন থাকার পরেও কি কোন আন্দোলন এত দ্রুত হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে?
এখানে আবার বাঙ্গালী বাংলাদেশি নিয়ে আসলেন কেন? যা হোক প্রত্যাখ্যান করার স্বাধীনতা অবশ্যই আপনার আছে।
@আশিকুল হক আবির,
আপনার মন্তব্যের আমি একটু জবাব দেই , মাইন্ড কইরেন না :
কথাটা হবে অনেকটা নীচের মত :
সবাই যদি হেফাজুতি মোল্লা হয় তবে মন্ত্রীর চেয়ার বসে ঘুষ খাবে কে ? আবার সবাই যদি মন্ত্রী হয় তবে সৌদী মহাপুরুষের ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে কে ? সেই ১৩ দফা : এখানে।
আপনি কোথায়, কখন ও কিভাবে এই ৰ্দুলভ তথ্য পেলেন ??? :lotpot: :lotpot: :lotpot:
@আশিকুল হক আবির, আপনার অন্তরজালিক ঠিকানাটা বড়ই ভাল লাগলো। http://www.gscriptures.com/ । সাম্যবাদী সর্বদলীয় সর্বধর্মীও সার্বজনীন। তবে একটা প্রশ্ন মনে জাগে, সব টাতেই বিশ্বাস করাটা আসলে কোনটাতেই বিশ্বাস নেই এমন একটা বিষয়ের ইঙ্গিত বহন করেন না কি?
আপনার ধর্ম আপনি পালন করেন। আলহামদুলিল্লাহ্ ! আপনার ধর্ম পালনে যদি কেউ বাধা দেয় কথা দিচ্ছি আমিও আপনার অধিকার আদায়ে আপনার পাশে থাকব। কিন্তু দয়া করে হেফাজতে ইসলামের নামে জুলুম চালাইয়েন না ভাই। হাদিসে ত দেখি লেখা ঐ লোক প্রকৃত ইমানদার নয় যার থেকে তাঁর প্রতিবেশি নিরাপদ নয়। আল্লাহর দোহাই লাগে বাংলাদেশ রে পাকিস্থান আফগানিস্থান বানাইয়েন না।
চরম লিখেছেন ।
আপনার লেখার সাথে ১০০% একমত। (Y)
একই প্রশ্ন আমারো ।
আমি মনে করি পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠির এটা অনেকটা শেষ চিৎকারের মতো। তাদের সমাজের দ্রুত উন্নয়ন ও অভিযোজন প্রয়োজন। আমরা ভাবতে পারি যে তাদের পিছিয়ে পড়ার দায় সরকারের, কিন্তু ব্যাপারটা এতো সহজ নয়। সমাজের অনুন্নয়নশীল অংশের হেদায়েত করা কঠিন কাজ। অনেক ট্রেইনিং ফ্রেইনিং দিয়েও সেটা করা যায় নি। এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে এভাবে বিনা খরচে খাওয়ানো পড়ানোর সামর্থ্যও সরকারের নেই। বাহিরের পয়সা কাহিনী টিকিয়ে রেখেছে বহুকাল, কিন্তু সেই পয়সা বন্ধ করার জন্যে যে পরিমাণ মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রো হতে হবে সরকারকে আমাদের সরকারের (ভাগ্যিস) সেই নিয়ত নেই।
তবে আশার বিষয় হচ্ছে ব্যবসা ও বিনিময়ের স্বাভাবিক বিবর্তনে কাজ করে খাওয়ার সুযোগ আগের চেয়ে অনেক বেশিই তৈরি হচ্ছে সমাজে। এটা শীঘ্রই ইভেন বাইরের পয়সাকেও আউটবিট করতে পারবে।
ফরহাদ মজহার অবশ্য জান প্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই জনগোষ্ঠিকে আরও একশ বছর যাতে পেটের ধান্ধায় খেটে খেতে না হয়। সরকার বিষয়টা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করলে আখেরে লাভের এক অংশ এই ‘বিপ্লবীদের’ ঘরেই উঠতে পারে। অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে উস্কে না দিলে এই ‘বিপ্লব’ ইজ নট গনা হ্যাপেন।