একটা মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশে প্রতিবার প্রফেশনাল জরীপকারী সংস্থাদের করা রাজনৈতিক অপিনিয়ন পোল প্রকাশ করার পরে চারিদিকে রব ওঠে এগুলো ভুয়া, মাত্র ৩০০০ লোক দিয়ে কেমন করে সঠিক মতামত আসে। এগুলো যে একপক্ষই করে এমন নয়, জরীপের ফল যার বিরুদ্ধেই যায়, যার অন্ধ বিশ্বাসে জরীপগুলি আঘাত হানে, সেই এই হুক্কা হুয়া রব তোলে। এই রব তোলায় কেবল রাজনৈতিক নেতারাই উচ্চকিত নয় (তারা অবশ্যই জনগনের সামনে মুখ রাখার জন্যে এরকম কথা বলবে স্বাভাবিকভাবেই) এমনকি উচ্চশিক্ষিত লোকজনও এই কথা তোলায় কম যায় না।
এট স্পষ্ট যে বাংলাদেশের শিক্ষায় স্ট্যাটিসটিকস এর উপরে অনেক কম গুরুত্ব দেয়া হয়। আমাদের সময়ে এইচ এস সি তে স্ট্যাটিসটিকস ঐচ্ছিক বিষয় ছিলো। ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে কোনরকমে স্ট্যাটিসটিকস পড়ানো হলেও অন্যান্য বিষয়গুলোতে পড়ানো হয় কিনা ঠিক জানি না। ইউরোপ, আমেরিকায় কিন্তু বেসিক স্ট্যাটিসটিকস সকল বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশনের জন্যে একটা আবশ্যক প্রিরিকুইজিট। ইতিহাস পড়ুন, সাহিত্য পড়ুন আর চিকিৎসাবিদ্যা পড়ুন, বেসিক স্ট্যাটিসটিকসে কোর্স নিতে হবেই।
বিশেয করে একজন আধুনিক মানুষ র্যান্ডম স্যাম্পলিং আর প্রবাবিলিটির উপরে ধারনা ছাড়া আধুনিক প্রফেশনাল জগতে চলাফেরা করতে পারে এই চিন্তাটাও করা মহাপাপ। বেসিক স্ট্যাটিসটিকস এর জ্ঞান এখনকার দিনে ইন্টারেস্ট আর পার্সেন্টেজ এর অংক জানার মতই অতি আবশ্যিক। আমাদের শিক্ষিতদের এই ধারনার অভাবের অন্যতম ফলাফল হলো যে রিস্ক সম্পর্কে অজ্ঞতা। বারবার শেয়ার মার্কেটে ধরা খাওয়া, বিভিন্ন রকম পিরামিড স্কীমের বাকপটু সেলসম্যানদের কথায় ভিজে যাওয়া, এসবই জীবনমুখী গনিত আর স্ট্যাটিসটিকস এর জ্ঞানের ফলাফল।
আমেরিকায় জনসংখ্যা ৩৩ কোটি আর সেখানে বিভিন্ন রকম জনমত জরীপ নিত্যদিনের ঘটনা। ২০১২ এর নির্বাচনকে বলা হয় যে এই নির্বাচনের প্রকৃত জয়ী হলো বৈজ্ঞানিক জরীপ আর গানিতিক পদ্ধতি। কারন সকল রকম আলাপ আলোচনা, বিশেষজ্ঞ মতামত, কমন সেন্স এসবকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়ে শেষ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক জরীপ আর গানিতিক পদ্ধতিই ইলেকশনকে একবারে প্রায় নিখুতভাবে প্রেডিক্ট করতে পেরেছে।
নীচের লিংকটিতে ২০১২ এর নির্বাচনে বিভিন্ন রকমের জরীপ ও তার ফলাফল দেয়া আছে। সেই সাথে দেয়া আছে তাদের স্যাম্পল সাইজ। একটু চোখ বুলালেই দেখা যায় যে প্রায় ৯০% জরীপের স্যাম্পল সাইজ ৮০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে (৩৩ কোটি মানুষের দেশে)।
সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইজ হলো ১০০০-১২০০।
http://en.wikipedia.org/wiki/Nationwide_opinion_polling_for_the_United_States_presidential_election,_2012
দিনে দিনে বিভিন্ন রকম জরীপের ব্যবহার আরো বারবে, আমেরিকায় তো বটেই এমনকি বাংলাদেশেও। এটা স্বাভাবিক, কারন খামোকা লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে অপদার্থ বিশেষজ্ঞ পোষার চাইতে জরীপ এর স্ন্যাপশট ব্যবসায়ী, রাজনীতি, সামাজিক প্রতিষ্ঠান সবাইকে এনে দিচ্ছে অনেক এক্যুরেট এবং প্রয়োজনীয় তথ্য। সুতরাং সবাইকে বলবো, সময় থাকতেই র্যান্ডম স্যাম্পলিং আর অপিনিয়ন পোলিং এর Robustness এবং Validity’র খুটিনাটি জেনে নিয়ে সামনের দিনে নিজেকে বারবার লজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষিত হোন।
লেখাটি অনেক ভাল লাগল, কারণ আমার মনের কথা বলেছেন।
যদিও লাইনটিতে ‘অভাবের’ শব্দটি বাদ পড়ে গেছে, তথাপি ‘জীবনমুখী গণিত আর স্ট্যাটিসটিকস্’ – খুবই মনে ধরেছে। সেই ছোট থেকে শুনে আসছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বদলানোর কথা, কিন্তু বদলেছে কি খুব একটা? জাফর ইকবাল স্যার অবশ্য কিছু চেষ্টা করছেন।
আসলে গণিত আর পরিসংখ্যান ছড়িয়ে আছে জীবনের পরতে পরতে, অথচ আমরা একে পরীক্ষার খাতার ‘সরল সমীকরণের’ মধ্যেই রেখে দিয়েছি মনে হয়!
আমাদের দেশে স্যামপ্লিংটাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না, রাজনীতিবিদরা তো নয়ই! অথচ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতিটি কাজের রেজাল্ট জানতে পারেন স্যামপ্লিং ভিত্তিক জরিপের মাধ্যমে আর নিজেদেরকে শুধরেও নিতে পারেন চটজলদি!
আজ যখন প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, দুর্নীতিবাজদের দলে প্রশ্রয় দিয়েই তিনি দলের জন্য উত্তম কাজ করছেন, তখন জরিপ কিন্তু তার ভুল ভেঙ্গে দিতে পারে নিমিষেই! আবার বিরোধী নেত্রী যখন দাবী আদায়ের জন্য নজিরবিহীন হরতাল ও সহিংসতা উস্কে দিচ্ছেন, তখন হয়ত একটা জরিপ তাকে বলে দিতে পারে, কিভাবে তার দলের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষগুলোর আস্থাও তিনি হারাচ্ছেন এসব করে!
জরিপ খুব দরকারি। পেশাদার জরিপকারি ফার্ম গড়ে তোলা দরকার। সরকারের প্রাথমিক সাহায্য দরকার এই ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে। কেউ হয়ত স্বচ্ছতার ধুয়া তুলতে চাইবেন। কিন্তু দিন শেষে স্বচ্ছ জরিপ ফার্মগুলোরই জয় হবে, তারা হয়ত হয়ে উঠতে পারবে এক নতুন বাংলাদেশের রূপকার, সবার ভুল শুধরে দিয়ে।
@কাজি মামুন,ধন্যবাদ কাজী মামুন। আসলেই আমাদের মধ্যে গনিতকে জীবন থেকে বিযুক্ত একটা বিষয় হিসেবে ভাবার প্রবণতা রয়েছে। ব্লগে -মিডিয়ায় সাধারনত উচ্চশিক্ষিত-দেশসমাজ সচেতন লোকেরাই লেখা লেখি করে। এরাও এমনভাবে স্যাম্পলিং নিয়ে খেলো প্রশ্ন করে যে তাদের কোয়ান্টিটিভ আইকিউ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। জরীপের মেথড কিংবা উদ্দ্যেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কিন্তু ৩০০০ লোকের র্যান্ডম স্যাম্পল নিয়ে ১৫ কোটি পপুলেশন সম্পর্কে ইনফারেন্স নেয়া যাবে না, এই কথা বলা কোন ইউনিভার্সিটির গন্ডী পার হওয়া লোকের বলা সাজে না।
আর শেয়ার মার্কেট, ডেস্টিনী এসব নিয়ে কি বলবো আর? এত উচ্চশিক্ষিত লোকেরা লাখ লাখ টাকা ঢালার আগে যখন রিস্ক নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা পড়াশোনা করে না তখন বুঝতেই হয় আমাদের ভালো সমস্যা রয়েছে। বাইরের দেশেও লাখ লাখ মানুষ শেয়ার মার্কেটে টাকা ঢেলে বিপুল লস করে। কিন্তু এটা জেনেই মার্কেটে আসে যে লস খাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যে খুব রিস্ক সচেতন এটা বলবো না। তবে রিস্ককে নিজেদের সিদ্ধান্তে মধ্যে গ্রহন করার অভ্যাস তাদের আছে।
মিথ্যা তিন প্রকার- সাধারণ মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা আর জরিপ
@রিগ্যান,
হ্যা, জরিপ নিয়ে অনেক ধাপ্পাবাজি হয়, চালিয়াতি হয়, কিন্তু এরকম একপেশে আর এক লাইনের মতামতটির পাশাপাশি কিছু যুক্তিও তুলে ধরা উচিত ছিল মনে হয়।
সায়েন্টিফিক জরিপকে যদি এভাবেই ফেলে দিতে চান, তাহলে আপনাকে মহাবিশ্বের ধারণাকেও ফেলে দিতে হবে। এমনকি আপনার প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের যে অবদানগুলো উপভোগ করেন, সেগুলোও!
এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের স্টাডিটা কি আমরা পড়তে পারি? আমি তাদের মেথডলজি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। যেমন কি এরর মার্জিন তারা গননা করেছে, তাদের স্টাডি কন্ট্রোলড কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণভাবে স্টাডিটা র্যান্ডমাইজড কিনা। দেখুন আপনি একটা জরীপ ওয়েবসাইটের কোনায় টাঙ্গিয়ে যার খুশী এসে ভোট দিয়ে যাও এইরকম মেথডলজির সাহায্যে মোটেও কোন আস্থাস্থাপনযোগ্য ফলাফল লাভ করতে যাচ্ছেন না। এইটা করলে স্যাম্পলিং হবে বায়াসড কেননা এই ক্ষেত্রে নেশীরভাগ জামাত সমব্যথীরাই লাফিয়ে লাফিয়ে তাদের মতের পক্ষে ভোট দিইয়ে দিবে এবং অপরপক্ষের অনেকেই হয়তোবা ভোট দিতেই কেয়ার করবে না। মোটামুটি র্যান্ডমাইজড স্যাম্পল পেতে হলে আপনাকে হাজার দুয়েক মানুষের কাছে গিয়ে তাদের মত নিতে হবে। যেমন- এই ব্যাঙ্ক হতে বেরিয়ে আসা দশ হাজার কাস্টমারদের প্রতি পঞ্চম জনকে আমরা আটকাবো এইরকম একোটা কিছু হওয়া উচিত, স্যাম্পলিঙ্গে র্যান্ডমনেস যতোটা পারা যায় নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইন পোল যদি হয়ে থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত এইটার কোনটিই হয়নি।
যাই হোক, তবে দেশের সিংহভাগ মানুশ জামাত নিষিদ্ধ হোক চায় না বাস্তবতা এইরকম হলেও আমি অবাক হবোনা মোটেও। ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই আমি প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছি, রেসপন্স বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নেগেটিভ। আর ঢাকা শহরে যদি নেগেটিভ হয়, সারা দেশে পজিটিভ হবে না কোনভাবেই, খুব সম্ভবত। আরও তিন চারটা অথেন্টিক স্টাডির আগে বোধহয় আত্নবিশ্বাসের সাথে বলা যায় না যে জামাত নিষিদ্ধের দাবী একটি গনবিচ্ছিন্ন দাবী।।
@আল্লাচালাইনা,সার্ভে মেথডলজী সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত আর্টিকেলে বিস্তারিত লেখা নেই। যেটুকু আছে তাতে তারা র্যান্ডমাইজড স্যাম্পলিং ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে বলেই মনে হয়,
“জরিপটি পরিচালিত হয় দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগের ৩০টি জেলা শহর ও গ্রামের তিন হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর। বাংলাদেশের জনবিন্যাস অনুযায়ী উত্তরদাতাদের অনুপাত প্রতিনিধিত্বশীল রাখা হয়।
বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম ও জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতিতে জনমত যাচাই করে থাকে। ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর অপিনিয়ন অ্যান্ড মার্কেট রিসার্চের (ইসোমার) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নৈতিক মানদণ্ড অক্ষুণ্ন রেখে জরিপটি করা হয়েছে।”
বাংলাদেশের শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়, এমনকি সাধারন লোকজনও কথাবার্তায় খুব কনফিডেন্টলি বলে ফেলে জনগন এটা চায় জনগন ওটা চায়। এদেশের প্রতিটি মানুষই বলতে গেলে সমগ্র জনগন।
আমি প্রকৃত তথ্য জানি না। এমনকি সবচেয়ে প্রফেশনাল জরীপও কখনো ১০০% নিশ্চয়তায় পপুলেশন সম্পর্কিত তথ্য দিতে পারে না। আমার ব্যাক্তিগত মত হলো যে “জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত পাওয়া গেছে”, এটা মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য। জামাতকে পছন্দ করার জন্যে জামাতের লোকজন ছাড়া আর কেউ আছে বলে মনে হয় না। কেবল ইসলামী কিছু দল হয়তো জামাতের উপড়ে খাড়া পড়লে তাদের উপরেও আসতে পারে এই আশংকায় এর বিরোধীতা করে।
প্রথম আলোর জরীপটা চালিয়েছে এআরজি কোয়েস্ট নামের একটি প্রফেশনাল সার্ভে রিসার্চ কোম্পানী। এটার সাথে সেরা বাংগালী, সেরা প্রাকৃতিক আশ্চর্য এসব অনলাইন পোলিং এর কোনো তুলনাই হতে পারে না। এ আরজি কোয়েস্ট বিদেশী এফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠান বলে একথা বলছি না। প্রাইভেট যেসব কোম্পানী সার্ভে রিসার্চ করে, তাদের মূল পন্যই হলো তাদের প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে কেউ বানানো তথ্য কিনবে না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা এসব কোম্পানীর মূল ক্লায়েন্ট খবরের কাগজ নয়। তাদের মূল ক্লায়েন্ট বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যারা দিনে দিনে বিভিন্ন রকম মার্কেট সার্ভের উপরে আরো বেশী নির্ভরশীল হচ্ছে। মেথডোলজী নিয়ে প্রশ্ন থাকলে যেকোন সার্ভে-রিসার্চ কোম্পানী দ্রুত বাজার হারাবে।
@সফিক,
সেটা মানা যায়, প্রফেশনাল সার্ভে কোম্পানীর সার্ভে আর পত্রিকার ডান কোনার সার্ভের মান নিশ্চয়ই এক নয়। তবে আমি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে সার্ভে এবং এর ফলাফল কতটা রিলায়েবল সেটা নিয়ে খুব কনফিডেন্ট নই।
আমি নিজেই সব সময় বলি যে জামাতের সমর্থন মোটে তাদের ৫% ভোট ব্যাংক এটা ভাবা বিরাট ভুল, তাদের এক নীরব সাপোর্ট বেজ আছে যারা মোটেই নগন্য নয়। তারপরেও আমার মনে হয় এখনো দেশে জামাত নিষিদ্ধ হোক এই ধারার মতামতই বেশী হবার কথা, যদিও অনেকের প্রত্যাশা মত ম্যাসিভ ফল দেখা যাবে না।
@আদিল মাহমুদ, ভাই আপনার মত আমিও মনে করি এখনো দেশে জামাত নিষিদ্ধ হোক এই ধারার মতামত ম্যাসিভ না হলেও দুই-তৃতীয়াংশ হবে। বাংলাদেশের অন্ততঃ জামায়ত নিষিদ্ধে এআরজি কোয়েস্ট নামক সার্ভে রিসার্চ কোম্পানীর করা জরীপ কতটা বিশ্বাসযোগ্য সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।
@সফিক,
ভাই এখানে পরিসংখ্যান মেথড নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নাই। প্রশ্ন হচ্ছে যারা কোটি কোটি ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে তারা এআরজি কোয়েস্ট নামের একটি সার্ভে রিসার্চ কোম্পানী কে কিনতে পারবে না সেটা কিভাবে বিশ্বাস করি। কিছু দিন পর পর এ ধরনের জরিপ চালানোর অন্য কোন উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছি না। জামাত নিশিদ্ধ হবে কি হবে না এটা নিয়ে তাদের এত মাথা ব্যাথা কেন?
@মামুনুর রশিদ, জরীপ করার সিদ্ধান্ত নেয়া প্রতিষ্ঠান হলো প্রথম আলো। এ আর জি কোয়েস্ট কেবল তাদের ভাড়া করা প্রতিষ্ঠান। এ আর জি কোয়েস্ট ছাড়াও অন্য জরীপকরা প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন ডেইলী স্টার আরেকটি কোম্পানীকে ব্যবহার করেছিলো। সুতরাং এই জরীপ প্রকাশের দায় দায়িত্ব প্রথম আলোর। মেথডলজিক্যাল প্রশ্ন থাকলে সেটার দায়িত্ব এ আরজি কোয়েস্টের।
আপনি মনে করতে পারেন জামাত কোটি কোটি খরচ করে প্রথম আলোকে কিনে নিয়েছে আর সেজন্যেই প্রথম আলো এই রকম জরীপ করছে।
@সফিক,
পরিবর্তন.কম এ প্রভাষ আমিনের একটা লেখা পড়লাম। ওখান থেকে কিছু অংশ কোট করলাম লিঙ্ক সহ।
…………”সাধারনত সরকারের বর্ষপূর্তি বা বছরের শুরুতে বা কোনো নির্বাচনের আগে জরিপ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ ৯-২০ এপ্রিল জরিপ করে তা ১১ মে ছাপতে হবে কেন?
প্রিয় পাঠক, একটু খেয়াল করে দেখেন প্রথম আলোর এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে ৯-২০ এপ্রিল আর হাসনাত আবদুল হাই ও অদিতি ফাল্গুনীর গল্প ছাপা হয়েছে ১৪ এপ্রিল। তারমানে জরিপ আর নববর্ষ সংখ্যা- দুটির পরিকল্পনা হয়েছে একই সময়ে। হয়তো এক টেবিল থেকে, হয়তো এক মাথা থেকে।”……………
http://www.poriborton.com/article_details.php?article_id=19801
@মামুনুর রশিদ, ধন্যবাদ । প্রভাষ আমিন তার আৰ্টিকেলটিতে যুক্তিৰ্পূনভাবে প্রথম আলো’র সাম্প্রতিক ৰ্কাযকালাপ বিশ্লেষন করেছেন। আমি পড়েছিলাম চরম একটি বিশ্লেষন । (Y)
বিশেষ করে জামাত নিষিদ্ধে প্রথম আলোর উদ্যোগে এআরজি কোয়েস্ট নামক সার্ভে রিসার্চ কোম্পানীর জরীপটি নিয়ে আসলেই আমাদের চিন্তা করতে হবে । যেই সময় গনজাগরন মন্চ থেকে বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম একাত্তোরের যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামাত নিষিদ্ধের দাবী তুলছে (গনজাগরন মন্চের একটি অংশ জামাত নিষিদ্ধের দাবীতে আমরন অনশনেও চলে গিয়েছিল), ঠিক সেই সময় এই রকমের একটি জরীপের মানে কি ??? :-X
কাকে কি বুঝানোর জন্য এই জরীপ ??? 😕
এআরজি কোয়েস্টের মেথডলজি নিয়ে কোন প্রশ্ন করছি না , কিন্তু ঐ জরীপের পিছনে অতিউৎসাহী দৈনিক প্রথম আলোর আসল উদ্দেশ্যটা কি ? সেটা আমাদের বুঝতে হবে ।
@তারিক, কোন সময়ে এই জরীপ হলে ভালো হতো? ওআরজি কোয়েস্ট এর আগেও শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে একটি জরীপ করেছিলো। সে সময়টা ছিলো ফেব্রুয়ারী মার্চ। সে জরীপে এর চেয়ে ভালো ফল এসেছিলো কিন্তু খুব বেশী নয়। তখনও শাহবাগের প্রতি সমর্থন ৫০% এর নীচে ছিলো।
আমাদের দেশে দরকার নিয়মিত মানসম্মত জরীপ। দেশের লোকেরা কথায় কথায় বলে জনগন এই চায় ঐ চায়। আমরা সবাই জনমত বিশেষজ্ঞ। সবাই মোটামুটি জানি আগামী নির্বাচনে কে কত শতাংশ ভোট পেতে যাচ্ছে। আমাদের এই বিশেষজ্ঞ মতামতগুলো কতটা বাস্তবসম্মত আর কতটা আমাদের ব্যাক্তিগত ফ্যান্টাসী এটা যাচাই এর জন্যে নিয়মিত জরীপ হওয়া দরকার। উন্নত গনতন্ত্রগুলোতে তো বটেই, এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেও এখন মোটা মুটি প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন রকম জরীপ প্রকাশ করা হয়।
@সফিক,
এটাইতো আসবে কারন বাংলাদেশের ৰ্ধমান্ধ মানুষ এবং মডারেট মুসলিমের দল তাদের জামাত ও পাকিস্থান প্রেম এখনো ছাড়তে পারেনি ।
আমিও এই ব্যাপারে আপনার সাথে একমত । (Y)
সফিক ভাই, নির্বাচনকালীন সরকার, দেশের চলমান পরিস্থিতি ও এই প্রেক্ষাপটে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের শঙ্কা এবং বিতর্কিত বিভিন্ন দলের সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জোটবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা যত খুশি জরীপ চালাক কেউ এই ব্যাপারে দ্বিমত করবে না ।
কিন্তু ভাই, যখন জামাতের উচ্চপদস্থ বেশীরভাগ নেতার ১৯৭১এ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের কাজ চলছে আর জামাতকে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন(এবং অবশ্যই ৰ্ধমান্ধ জঙ্গীগোষ্ঠী) হিসেবে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে ঠিক তখন জামাত নিষিদ্ধের ব্যাপারে জরীপ চালানো যুক্তিযুক্ত হয়েছে ???
অবশ্যই এই জরীপের ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে বাঙ্গালীদের জামাত নিষিদ্ধের দাবীকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে । (N)
জে.এম.বি কিংবা হরকাতুল জিহাদ নিষিদ্ধ করার আগে কেউ যদি ঐ রকমের জরীপ চালাতো তাহলেও হয়ত বাংলাদেশের ৰ্ধমান্ধ মানুষ(এবং মডারেট মুসলিমের দল) ঐ দলগুলো নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মতামত দিত !!! :-Y
ষ্ট্যাট যে কি রকম শক্তিশালী এবং এপ্লাইড বিদ্যা সেটা বিদেশে কোর্স নেবার আগে টের পাইনি। যদিও দেশে আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের কোর্স করে এসেছিলাম। বিদেশ এসে টের পেয়েছিলাম যে আমার বিদ্যা মিন মিডিয়ান মোড বার করার চেয়ে তেমন বেশী কিছু নয় যা এখানকার প্রবলেমে কোশ্চেনেই দেওয়া থাকে। শিক্ষা জীবনে সবচেয়ে বেশী নাকানি চোবানি খেয়েছিলাম এই বিষয় নিয়ে।
আমাদের দেশেও যতদুর জানি সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ষ্ট্যাট এর কোর্স করতে হয় (আবশ্যিক কিনা জানি না)।
কোন শক্তিশালী ষ্ট্যাট রেজাল্টের জন্য স্যাম্পল সাইজের ব্যাপার কিন্তু আছে, পপুলেশন সাইজ/স্যাম্পল সাইজের ওপর কনফিডেন্স লিমিটের সূত্র আছে বলে মনে পড়ে।
তবে আরো গুরুত্বপূর্ন মনে হয় স্যাম্পলিং মেথড। আপনি এখন গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় এক লাখ লোকের জনমত নিয়ে দেশে সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় নেতা কে এই ফল ষ্ট্যাট দিয়ে প্রকাশ করলে সেটা মিনিংফুল কিছু হবে না।
‘০৪ সালে বিবিসির জরীপে বংগবন্ধুকে সেরা বাংগালী প্রকাশ করা হয়। একই জরীপে মনে পড়ে গোলাম আজম ৭ম স্থান লাভ করে। এই জরীপের মানে কি? মানে অতি সোজা, এই স্যাম্পলিং হল ম্যানিপুলেটেড।
প্রথম আলোর যে জরীপ নিয়ে কথা হচ্ছে আমার মনে হয় না সেটা অবশ্যই পত্রিকা ওয়ালারা নিজেরা বানিয়েছে অনেকে যেভাবে চিন্তা করছেন। হতে পারে সেটাও গোলাম আজম ৭ম স্থান অধিকার করার মত ঘটনা। কমন সেন্স বলে যে দেশে জামাত নিষিদ্ধ করা হোক এই মতামতই দেশে এখনো বেশী।
@আদিল ভাই,
কিন্তু এটাকে জরীপ বলল কে? এখানে সায়েন্টিফিক জরিপের জ’ও তো নেই। এটাকে বড়জোর বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের মধ্য থেকে যারা চিঠি লিখতে এবং পাঠাতে ইচ্ছুক, তাদের মতামত বলা যায়।
যখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় সায়েন্টিফিক জরিপের মেথডগুলো, তখন ‘কমন সেন্সের’ উপর নির্ভর করতে গেলে বিপদ আছে; যেমন, ধরুন, দেশের ৫১% মানুষ সত্যি সত্যি জামাতের নিষিদ্ধ চায় না (হাইপোথ্যাটিকালি ধরা যাক), এখানে আপনার পক্ষপাত-দুষ্ট ‘কমন সেন্স’ (আবারও হাইপোথ্যাটিকালি ধরা যাক)-এর উপর নির্ভর না করে আপনি যদি সায়েন্টিফিক জরিপের মাধ্যমে আপনার ‘কমন সেন্স’টিকে যাচাই করে নেন, তাহলে বুঝতে পারবেন, আরও পথ পাড়ি দেয়া বাকি, দেশের মানুষকে মুক্ত আলোয় নিয়ে আসতে আরো করতে হবে সংগ্রাম। হয়ত এই সংগ্রামের ফলাফলও একদিন চলে আসবে সায়েন্টিফিক জরিপের মাধ্যমে, যখন দেখতে পাবেন, জামাত নিষিদ্ধের দাবি ৯৯ ভাগের!
@কাজি মামুন,
আমাদের দেশে জরিপ, বিশেষ করে যেসব জরিপে ধর্ম বিষয়ক কোন ব্যাপার স্যাপার আছে সেসবের রিলায়াবল ডাটা পাওয়া বিভ্রান্তিকর হতে পারে। অনেক মানুষ জেনে শুনেও বা নিজে যা বিশ্বাস করে না তাও বলে দিতে পারে। ষ্ট্যান্ডার্ড ভাল জরিপের সব শর্ত মানার পরেও এই সমস্যা কাটানো খুব সহজ হবে না। এভাবে সঠিক পদ্ধুতিতে জরিপ হলেও ফল দেখাতে পারে মিস লিডিং।
জামাত শিবির নিষিদ্ধ না করার পক্ষে বেশ ভোট পড়েছে শুধু এই তথ্যের ভিত্তিতে যারা প্রথম আলোর গুষ্ঠি উদ্ধার করছেন তারা মনে হয় এখনো সেসব ফ্যান্টাসির জগতে থাকেন যেখানে দেশের ৯০% লোকে রাজাকার বদরদের বিচারের জন্য জীবন পন করে আছে বলে বিশ্বাস করেন। আসলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকের মধ্যেই ফ্যান্টাসির জগতে বিচরনের প্রবনতা বেশী, এ কারনেই অফগার্ড অবস্থায় পড়তে হয় বেশী। এই জরিপের পদ্ধুতিগত ব্যাপার স্যাপার জানি না, তবে ফলাফল এমন কিছু অবাস্তব মনে হয় না যে শুধু সেটার ওপর ভর করে নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ফাঁদতে হবে।
দেশ এখন দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গেছে, এন্টি-আওয়ামী শিবিরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন থাকলেও তাদের মানসিকতায় যুদ্ধপরাধীদের বিচার কোনদিনই প্রায়োরিটিতে ছিল না। বরং উলটা তারা ধর্মীয় জোশে ও আওয়ামী ঠেকাও এই মনোভাব থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে মিত্রতা পাতাতে বেশী আগ্রহী। সাম্প্রতিক মেরুকরনে এই শিবির আরো শক্তিশালী হয়েছে। মোটাদাগে এন্টি আওয়ামী শিবিরের বেশীরভাগ লোকই এই মেরুকরনে ইচ্ছেয় হোক বা অনিচ্ছেয় হোক প্রো-জামাতি হয়ে গেছে। কাজেই বিপুল সংখ্যক লোক জামাত নিষিদ্দ হোক চাইবে না সেটাই যে কোন জরিপ ঠিক ভাবে চালালে আসার কথা। এতে এত অবাক হবার কি আছে ঠিক বুঝি না।
বাংলাদেশের ৰ্শীষস্থানীয় একটি দৈনিকের উদ্যোগে পেশাদার জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপের মত অনুযায়ী নিচে উল্লেক্ষিত ফলাফল পাওয়া গেছে :
লেখকের কাছে জিঙ্গাসা : এই স্যাম্পল সাইজ জনমত কি বাংলাদেশের নাগরিকের প্রকৃত মতামত তুলে ধরেছে ???
লিংক :
http://www.1newsbd.com/index.php/national/12067-2013-05-11-05-33-05