ফফ
.
.
রাজীবকে হত্যা করা হলো অত্যন্ত নৃশংসভাবে, কাপুরুষোচিতভাবে, রাতের আঁধারে পেছন থেকে হামলা করে। একদল বর্বর এই হত্যাকান্ডকে জায়েজ করার জন্য নেমেছে অপপ্রচারে, কোথায় রাজীব ইসলামকে নিয়ে কী কটূক্তি করল তার খোঁজে তাদের ঘুম-নিদ্রা নেই। তাদের এ অবস্থা দেখে মানুষ হিসেবে আমি লজ্জিত এবং কারো মধ্যে মানবতা নামক বস্তুটি থাকলে সেও লজ্জিত হতে বাধ্য। রাজীবকে হত্যা করেই তারা ক্লান্ত হয় নি, গুটিকয়েক জনের উদ্দেশ্যে লেখা তার ব্লগ যার সন্ধান কেউ তেমন একটা করে নি সেগুলো তারা তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করছে। ধর্মের বিরুদ্ধে লেখেন এমন ব্লগারদের হুমকি দিচ্ছে অনবরত। শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেয়া ফুলগুলো এখনো পুরো শুকিয়ে যায় নি, সেগুলোতে তারা আগুন লাগাচ্ছে, ভাঙচুর করছে। তাদের ধর্মব্যবসা ও ধর্মকে পূজি করে রাজনীতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য, দেশময় তান্ডব চালাচ্ছে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ নাস্তিকই ধর্মবিশ্বাসী পরিবারের সন্তান। নাস্তিকদের অনেকক্ষেত্রেই যেমন রয়েছে ধর্মবিশ্বাসী পরিবার, তেমনি ধার্মিক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। আমার নিজেরও রয়েছে ধার্মিক পরিবার, অনেক ধর্মপ্রাণ বন্ধুবান্ধব। যতই ধর্মবিরোধি লেখা লেখি না কেন কখনও কোনো ধর্মবিশ্বাসীর প্রতি বিন্দুমাত্র ঘৃণা বোধ করিনি বরং বহুবার নিজের রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছি ধর্মবিশ্বাসীদের, বহুবার নিজ হাতে জায়নামাজ পেতে দিয়েছি নামাজের জন্য। আমি জানি ধর্মবিরোধিতা আর ধর্মবিশ্বাসীদের প্রতি বিদ্বেষ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। একজন মানুষের পরিচয় শুধুমাত্র ’নাস্তিক’ হতে পারে না। রাজিবকে আমরা দেখেছি স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দিতে যা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তার অপরিসীম মেধার স্বাক্ষর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধের নকশা যা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু রাজীবকে নিয়ে যেসব প্রচারণা হচ্ছে তাতে মনে হয় তার যৎসামান্য বিদ্রুপাত্মক লেখা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না, পরিচিতি ছিল না, দেশের জন্য সে কোনো কাজ করে নি বা তা চায় নি, কোনোভাবেও কোনো ধর্মবিশ্বাসী তার দ্বারা বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় নি। আমি একজন নাস্তিক, আমি মনে করি ধর্মগুলো একেবারেই ফেলনা, মারাত্মক ক্ষতিকর, বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ, মানুষের একতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক, কুসংস্কারস্বর্বস্ব এবং মানুষের সাথে যুগ যুগ ধরে চলে আসা অত্যন্ত জঘন্য প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়, যা সাধারণ মানুষ তার বিশেষ কিছু দূর্বলতা এবং childhood indoctrination এর ফলে উপলব্ধিতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং তা বুঝতে চায় না। তবে কি এখন আমার উপর নির্ভরশীল যেসব মুমিন-মুসলমান আছেন তাদেরকে কি ধর্ম ছেড়ে দিতে বাধ্য করব অথবা সুযোগ বুঝে আঘাত করব? একদম অসম্ভব, কারণ আমি মানুষ, আমার মানবতা আছে, আমি যেকোনো কিছু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করি যেখানে উগ্র ধর্মবাদিরা সবকিছুই দেখে ধর্মের চোখ দিয়ে ফলে মানবতা বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে কিছুই আর তাদের অবশিষ্ট থাকে না।

ধর্ম একটি মতবাদ, একটি বিশ্বাস। সত্য অন্বেষণের স্বার্থেই এর বাধাহীন সমালোচনার, নিন্দার, স্যাটায়ারের পথ খোলা রাখতে হবে। মানুষের মত প্রকাশের পথে যেকোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদেরকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিবে – এ হচ্ছে সভ্যতার শিক্ষা। আজ পশ্চিমা বিশ্বে যিশুকে, পোপকে বা যেকোনো ধর্মপুরুষকে উলঙ্গ করেন, যেকোনো কটূক্তি করেন, কার্টুন আঁকুন, সিনেমা বানান তেমন কোনো প্রতিবাদই হবে না, এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমেও এগুলো আসে না গুরুত্বহীন মনে করায়। কোনো মতবাদের সমালোচনার পথ খোলা না থাকলে তা রূপ নেয় ফ্যাসিবাদে। আবার ধরুন পারিবারিক-সামাজিক বা অন্য কোনো কারণে আপনি কোনো একটি মিথ্যা মতবাদে বিশ্বাসী কিন্তু আপনার সমাজে এর সমালোচনা বা নিন্দা করা নিষিদ্ধ। তাহলে আপনি তো আপনার জীবনে কভুও টের পাবেন না যে একটা মিথ্যা মতবাদ নিজের মধ্যে লালন করছেন। ধর্মান্ধ মুমিনরা এমন কোন মতবাদে বিশ্বাস করেন যা তাদের মানুষ হতে দিচ্ছে না, খুনি বানাচ্ছে বিশ্বময়? আমরা মুমিনদের যখন দেখি স্লোগান দিতে ‘Behead those, who insult Islam’ তখন ভাবি ধরণী কেন এখনো দ্বি-ধা হয় নি।

ff

মুমিনদের কে বুঝাবে এভাবে ধর্মরক্ষা হয় না। তরবারি দিয়ে ধর্মরক্ষার যুগ এখন নয়, অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে যে কেউ ইচ্ছে করলে জানতে পারবে ধর্মের মধ্যে সমস্যা কোথায়। নাস্তিকরা প্রায় সবাই আসছে ধর্মবিশ্বাসী পরিবার থেকে। আমি ছোটবেলায় খুব ধর্মপ্রাণ হয়ে গড়ে উঠেছি এবং ধর্মগ্রন্থ পড়েই ধর্মবিশ্বাস ছেড়েছি। রাজীবের বাবাও ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়েছেন। অর্থাৎ নাস্তিকদের হত্যা করে তাদের আগমন ঠেকানো সম্পূর্ণ অসম্ভব। হুমায়ূন আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে কি থামানো গিয়েছে নাস্তিকদের উত্থান? বরং মানুষ নাস্তিকতা সম্পর্কে অধিক আগ্রহী হয়েছে এবং জেনেশোনে ঐদিকেই পা বাড়িয়েছে। রাজীবকে হত্যার পর নাস্তিকদের বিভিন্ন লেখা তাদের অনুমতির তোয়াক্কা না করে দাড়ি-ক্ষমা সহ বিভিন্ন জামাতি পত্রিকায় যেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে করে সাময়িক হুজুগ তৈরী করা গেলেও শেষ পর্যন্ত মানুষ কিন্তু নাস্তিকদের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে, তাদের লেখা অধিক হারে পড়ছে, তাদের মূল্যায়ন করছে। নাস্তিকদের অনেকেই ধর্ম নিয়ে খুব একটা লেখে না বা তা পছন্দ করে না কারণ গোবর্জনা নিয়ে লেখা প্রায়ই আবর্জনায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ধর্মান্ধদের অব্যাহত উস্কানি তাদের বাধ্য করবে লেখতে।

ধর্ম ও ধর্মপ্রচারকদের নিয়ে যুক্তি-প্রমাণবিহীন বিদ্রুপাত্মক লেখাগুলো নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়; ধর্মান্ধদের ঘিলুহীনতার জন্য তারা উপলব্ধিতে অক্ষম যে এগলো মোটেও ধর্মের জন্য ক্ষতিকর নয়। মানুষ ঠিক কি কারণে এসব পড়ে বিশ্বাস হারাবে আর এমনকি কিছু মানুষ যদি ধর্মবিশ্বাস হারায় তাতেই বা সমস্যা কোথায়? রাজীবের বিদ্রুপাত্মক লেখাগুলোর দায় সকল নাস্তিকদের উপর কোন বিচারে চাপানো হচ্ছে? আমাদের কি কারো ক্ষমতা ছিল তার লেখায় বাধা দেয়ার? কোনো এক ধর্মবিশ্বাসীর কর্মকান্ডের দায় কি তাহলে আমরা চাপিয়ে দেবো পুরো ধর্মবিশ্বাসীদের উপর? ধর্ম থেকে উৎসাহ পেয়ে ধর্মবিশ্বাসীগণ নিত্য যেসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন সেগুলোরও দায় তারা নিতে যেখানে রাজি হোন না সেখানে এই দায় আমাদের উপর চাপানো হচ্ছে কেন? কোন যুক্তিতে?

আপনি ধর্মবিশ্বাসী, অপনি মনে করেন সবকিছুই এমনকি অমুসলিম ও নাস্তিকরাও পরলোকে অনন্তকাল শাস্তি পাবার জন্য আপনার এক পরম করুণাময়, অশেষ দয়ালু, সর্বশক্তিমান, সবজান্তা, সর্বজ্ঞানী আল্লাপাকের মহান পরিকল্পনা থেকে এসেছে। আপনার ধর্মই পরম সত্য। আপনি যদি ঠিকই বিশ্বাস করেন আপনার ধর্ম পরম সত্য তবে এটা নিয়ে এত দুশ্চিন্তা কেন? কেন সত্যকে এত পাহারা দিতে হয়? কেন ধর্মগ্রন্থের, ধর্মের সমালোচনা করলেই এত ক্ষেপে উঠেন? কই, কেউতো কখনো বলেনা আপনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই সূত্র অস্বীকার করলে আপনাকে কতল করা হবে, পৃথিবী গোল না মানলে আপনি মুরতাদ। কারণ এগুলো প্রমাণ-নির্ভর। হাজারো মিথ্যা কোনো সত্যকে টলাতে পারবে না। আপনার ধর্ম যদি সত্য হয় তবে আসেননা তার প্রমাণ নিয়ে, লেখার জবাব লেখা দিয়ে দেন, প্রবন্ধের জবাব দেন প্রবন্ধ দিয়ে, কবিতার জবাব কবিতা দিয়ে, স্যাটায়ারের জবাব স্যাটায়ার দিয়ে, কার্টুনের জবাব কার্টুন দিয়ে। আপনার মহাসত্য ধর্ম এত দূর্বল কিভাবে হলো যে একজন সাধারণ নাস্তিকের কথায়, কটুক্তিতেই তা ধ্বসে পড়ল? আর আপনার মহান ধর্ম আপনাকে কিভাবে এত অমানুষে পরিণত করল, এতটাই জঘন্য পিশাচে পরিণত করল যে তাকে রাতের আঁধারে নৃশংসভাবে হত্যাকে সমর্থন করছেন; যে ধর্ম পালন না করলে নাকি মানুষ ‘নৈতিক’ থাকতে পারে না বলে আবার দাবি করেন। আর আপনার ইমানে যদি গন্ডগোল থাকে, সেটা যদি দূর্বল হয়, নাস্তিকের মন্তব্যে বা লেখায় তা বাতাস-লাগা কুঁড়েঘরের মত কেঁপে উঠে তবে সেটা তো আপনার সমস্যা যার সমাধান কিভাবে করবেন তা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে আপনি উপাসনালয়ে পড়ে থাকেন, বড়পীরের মুরিদ হোন, চিল্লায় যান তবলিগে অথবা তপস্যা করেন, তীর্থে যান অথবা অসময়ে ইমান খাড়া হওয়া থেকে রক্ষা পেতে সিয়াম সাধনা করেন – সেটা আপনার ব্যাপার। আপনার দূর্বল ইমান রক্ষার জন্য আরেক জনের উপর ঝাপিয়ে পড়বেন কেন অথবা একে সমর্থন করবেন কেন? আর নাস্তিকরা কাউকে তাদের লেখা পড়তে বাধ্য করছে না, আপনার যদি মনে হয় সেগুলো পড়ে ইমান ভেঙ্গে যাবে, হৃদযন্ত্র পকপক করবে তবে তা না পড়লেই তো পারেন। কিন্তু না, আপনারা এখন ফেসবুকে এগুলো প্রচার করছেন, পত্রিকায় প্রকাশ করছেন আর পড়ে পুনরায় লেখককে কতল করার সংকল্প ব্যক্ত করছেন। ধিক আপনাদের ইমান, ধিক আপনাদের মানবতা!

কথিত ইমানদাররা মিথ্যাচারেরও পাহাড় গড়ে চলছেন। সে মিথ্যাচার ব্লগের, ফেইস বুক গ্রুপের গণ্ডি পেরিয়ে বহু আগে পতিত সংবাদ মাধ্যমে পৌছেছে। এখানে উদাহরণ হিসাবে নব্য রাজাকার মাহমুদুর আর তাদের পোষা আরো কিছু বুদ্ধিজীবীর কথা বলা যায়। কিছুদিনের আমার দেশ, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব ইত্যাদি জামাতি পত্রিকা দেখা যেতে পারে। ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ১৮ ফেব্রুয়ারীর খবর দেখুন,

“রাজীবের পাশাপাশি আরও যেসব ব্লগার শাহবাগের আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখি চালিয়ে আসছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ডা. ইমরান এইচ সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, নিজেকে নাস্তিক দাবিকারী আসিফ মহিউদ্দিন, কট্টর আওয়ামীপন্থী ব্লগার ইব্রাহিম খলিল (সবাক) প্রমুখ”।

এখন বলুন, ইমরান, অমি বা আরিফ জেবতিক ভাই ইসলামবিদ্বেষী লেখা লেখল কখন? আমি জেবতিক ভাইয়ের একটি লেখা পড়েছি যেখানে তিনি বরং ইসলাম বিরোধিতার জবাব দিয়েছেন। আর রাজীব শাহবাগের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলো কখন? ইন্টারনেটের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ ব্লগ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না, ব্লগাররাও ব্লগিং এর সময় তাদের কথা মনে রেখে তা লেখেন নি। অথচ এরকম কিছু পত্রিকা ধর্মবিরোধী লেখাগুলো প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছে, দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং মিথ্যাচারের মাধ্যমে অনেকের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

একদল আছেন যারা মনে করেন নাস্তিকরা কথা না বলে বসে থাকলেই তো পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নাস্তিকরা কথা না বলে বসে থাকবে যেখানে তাদের মাথার উপর রাষ্ট্রধর্ম ঘুরবে, বিভিন্ন ধর্মীয় আচারণে তাদেরকে বাধ্য করা হবে, যেখানে সর্বদাই তারা ধর্মের নামে কদাচারের চর্চা দেখবে। ধর্মীয় নিপীড়ন বন্ধ হলে ধর্মবিরোধী লেখার আবেদন শূন্যের কোঁটায় পৌছবে সুতরাং সেগুলো তখন কমে যেতে বাধ্য। ধর্মবিরোধিতা বন্ধ করতে হলে ধর্মীয় নিপীড়ন সর্বাগ্রেই বন্ধ করতে হবে।

নাস্তিক মানেই সে অন্য ধর্মের উপর আঘাত করে এ রকম মনে করেন অনেকেই। অথচ অনেক নাস্তিক ধর্ম বিরোধী কিছুই লেখেন না, অনেকেই ধর্মবিরোধী লেখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংযমী যা ব্লগগুলোতে খুঁজলে পাবেন। আবার কেউ কেউ এ প্রশ্নও করেন, নাস্তিকরা কিছুটা দায়িত্বশীল হলে মন্দ কি? কিন্তু লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীন, তাকে বাধা দেয়া লেখক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আর সে বাধাটা দেবে কে? যেখানে দায়িত্বশীলতা সবচেয়ে বেশি জরুরী সেই সংবাদপত্রেরই কী অবস্থা তা আমরা সব সময়ই দেখতে পাই। হ্যা, যদি লেখার মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারো ক্ষতি করা হয় তবে তার জন্য আইন আছে, আদালত আছে। সুতরাং রাজীবকে পূর্বপরিকল্পিত উপায়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করাকে কিভাবে সমর্থন করা যায়, এতে উল্লাস প্রকাশ করা যায় তা বোধের অগম্য; যারা তা সমর্থন করে বেড়াচ্ছেন তাদের কেউ অশিক্ষিত নয়, অন্তত ইন্টারনেট ব্যবহারে তারা অভ্যস্থ, বিশ্বের বৃহৎ তথ্য ভাণ্ডার তাদের হাতের মুঠোয়। অন্ধত্বের চর্চা, প্রশ্নহীন আনুগত্য আর অপবিশ্বাসের চর্চাই বোধ করি মানুষকে এমন বিবেকহীন করতে পারে।

অনেকে ভাবতে পারেন ধর্মের শুধু সমালোচনা করলেই তো হয়, এর নিন্দা না করলে, ব্যঙ্গ না করলেই তো হয়। তাদের জ্ঞাতার্থে বলি। কয়েক বছর আগে একটি ব্লগে একদম সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে লেখে স্থায়ীভাবে ব্যান হয়েছি ব্লগটি মারাত্মক অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায়। অর্থাৎ ধর্মের সাধারণ সমালোচনাকেও তখন ধর্মবিদ্বেষ মনে করা হতো। ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত ধারালো সমালোচনাও স্বাভাবিক বলে গণ্য হতে লাগলো। এক সময় শুধু নাস্তিক শব্দটা শুনলেই অনেকে তেড়ে উঠতেন, এটি স্বাভাবিক হতেও সময় লেগেছে। সমালোচনা বা নিন্দার কোনো গ্রহণযোগ্য সীমারেখা নেই। ধর্মের একদম সাধারণ সমালোচনাকেই অনেকে বিশাল নিন্দা বা বিদ্বেষ মনে করতে পারেন। আর স্যাটায়ার অত্যন্ত উন্নত মানের সাহিত্যকর্ম যা অতি অল্প লেখকের দ্বারা সম্ভব হয় এবং বুঝতে হলে ঘিলু প্রয়োজন হয় এবং বিষয়বস্তু ধর্ম হতেই পারে যা সভ্য জগতে স্বীকৃত। তাই শুধু ধর্মের নয়, যতটুকু সম্ভব দায়িত্ববোধ বজায় রেখে যেকোনো মতবাদের এমনকি নাস্তিকতারও সমালোচনা হোক, প্রয়োজনে নিন্দা বা ব্যঙ্গ করা হোক ইচ্ছেমত- লেখকের মনমত। এবং আমাদের বিবেক জাগ্রত হোক, আমরা মানুষ হই।