একাত্তর। মজবুত হাড় মাংসের বুনিয়াদ, মাটি-প্রানের চর্বি, আঠালো রক্তের জমাট দলা, আর এক গর্তে সহস্র আত্মার গলিত আকুতি আর একটা স্বপ্নের নাম একাত্তর। একটা বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের সমাপ্তির নাম একাত্তর। মুক্তিযুদ্ধ। প্রাপ্তি আর ত্যাগের রক্তাক্ত সমীকরণ।
অতঃপর সবুজ ঘাসের চাদরে লাল সূর্যের দীপাবলি। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। । বড় শক্ত এ জাতির ভিত্তি। বড় মজবুত এ বেড়ে ওঠা মানব শেকল। শেকলে শেকলে মুক্তির টান। মানুষে মানুষে প্রানের টান। তবু মুক্তি আসেনি। জীবিত আত্মার মুক্তি বিলম্বিত মৃত আত্মার ফুঁপিয়ে ওঠা কান্নার অসহ্য নীরব আর্তনাদে। কেঁদে ওঠে বুক, আর্তনাদ করে ওঠে ভেতরটা। এ জাতির বেড়ে ওঠার সুতায় রক্তের দাগ। কষ্ট-কান্না-রক্ত-অভিশাপের দাগ। কোটি মানবের কানে বাজে মৃত প্রানের ছায়ার নিনাদ।
পাপ মুক্তি চাই। স্বীকার করে নিতে চাই তোমরা ছিলে। মনে আছে তোমরা আছ। বিশ্বাসে নিলাম তোমরা থাকবে । তোমরা আছ আমাদের মাঝে। তোমরা থাকবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণের লুকানো দীর্ঘশ্বাসে। তোমরা ৭১। তোমরা বিজয়। তোমরা প্রভাতফেরী। তোমরা স্বাধীনতার ঘোষণার প্রতি শব্দের স্পন্দন। তোমরা বিজয় মিছিলে আমাদের স্লোগানের সুর। তোমরা এই রাজপথ-সমাজ-মুক্তির নির্মাণ-কাব্যের প্রতি স্তবকে মিশে থাকা রক্তের ফোঁটা।
তোমরা মা। তোমরা জন্ম দাও নি। তবু বেয়নটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত তোমাদের জরায়ুতে এ জাতির প্রথম প্রাণস্পন্দন। তোমরা লালন করনি। তবু তোমাদের কেটে নেয়া স্তন থেকে চুইয়ে পড়া রক্ত এ মাটিকে প্রথম মাতৃ দুগ্ধ পানের অনুভূতি দিয়েছে। তোমরা আঁচল দিয়ে আগলে রাখনি। তবু বদ্ধ ঘরের সিলিঙে ঝুলানো আঁচলে তোমাদের নিষ্প্রাণ দেহ এ জাতির বুকে জেগে-ওঠা রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছে। তোমরা বীরাঙ্গনা। তোমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তোমাদের ইজ্জত-সম্ভ্রম আর আত্মত্যাগ এ জাতিকে বিজয় এনে দিয়েছে, মুক্তি এনে দিয়েছে। কথা দিচ্ছি ভুলবো না। কথা দিচ্ছি বাংলাদেশের বেড়ে ওঠা, বেঁচে থাকার ইতিহাসে তোমাদের নাম রক্ত-কালিতে লেখা থাকবে চিরকাল।
বলছি একাত্তরের কথা। বলছি বীরাঙ্গনাদের কথা। বলছি সেই মা-বোনদের কথা যাদের আত্মার কান্না আজও আমাদের মৃত প্রায় বিবেক বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে কিংবা নীরব গভীর রাতে শুনতে পায়। যাদের ছায়া আজো কোন বধ্যভূমির বদ্ধ আধার কুঠুরিতে মুক্তির প্রত্যাশায় আহাজারি করে যায়। যাদের লুণ্ঠিত সতীত্ব, যাদের রক্ত আমাদের স্বাধীনতার দলিলকে সতীত্ব দিয়েছে। যাদের নগ্ন-নিষ্প্রাণ-ধর্ষিত দেহ আজো আমাদের বুকে দায় মুক্তির নির্মম চাপের মতো অনুভূতি দেয়। অন্ধকার কুঠুরিতে তারা ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। প্রান ভিক্ষা চেয়েছে। সম্ভ্রম ভিক্ষা চেয়েছে। ভুল করেছে। তারা ওদের মানুষ ভেবেছিল। হায়নার হাসিকে আমাদের মায়েরা মানুষের হাসি ভেবে ভুল করেছিল।
Gen. A. A. Khan Niazi did not deny rapes were being carried out and opined, in a Freudian tone, “You cannot expect a man to live, fight, and die in East Pakistan and go to Jhelum for sex, would you?”
তারা হয়তো কোনদিনও জানতে পারেনি পাঠান পশুটা আর তার বাংলাদেশি আত্মগামী কুকুরগুলো তাদের গনিমতের মাল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর লক্ষ লক্ষ পাকি পশুরা দীর্ঘ নয় মাস ধরে, এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গমাইল জুড়ে পাশবিক কামনায় রক্তাক্ত করেছে আমাদের চার লক্ষ মা বোনকে। আমাদের মায়েরা আমাদের বোনেরা প্রতিনিয়ত বাধ্য হয়েছে ইজ্জত বিলিয়ে দিতে। হায়নারা কামড়ে কামড়ে ছিলে নিয়েছে আমাদের মা বোনদের শরীরের রক্ত মাংস। লাঠি-বন্দুকের নল-বেয়নট দিয়ে খুছিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে তাদের বুক,উরু,যোনি। অসহ্য দমবন্ধ এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া বীরাঙ্গনারা হটাৎ জেগে উঠে আবারো আৎকে উঠেছে। তার চোখের সামনে, মুখের উপর বারেবার গলে পড়ছে পাকি মুখনিঃসৃত কামনার লালা। আবারো ধর্ষণ। গনধর্ষণ। বাঁচার আকুলতা নিয়ে বীরাঙ্গনাদের নির্লিপ্ত আর্তনাদ। দরজার ওপাশে বসে থাকা কিছু মাওদুদী বাদী জারজদের খিলখিল হাসি। পাশবিক কামনার কানাকানি। এ যে গনিমতের ফজিলত। এ যে যুদ্ধদিনের উপহার।
পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের সেনাবাহিনী এবং পা চাটা এ দেশীয় কুকুর গুলো ধর্মের দোহাই দিয়ে, পাকিস্তান রক্ষার(?) তাগিদে এ দেশে গণহত্যা আর গণধর্ষণ শুরু করেছিল। নিরীহ নিরস্র বাঙালি ললনারা ধর্মের দেয়ালের আড়ালে লুকিয়েও বাঁচতে পারে নি। বাঁচাতে পারে নি সম্ভ্রম। গণহত্যা-গণধর্ষণ-পাশবিকতার আবার ধর্ম কি? বাংলার হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কেউ বাঁচতে পারে নি নয় মাসের মধ্যযুগীয় বর্বরতার কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনের জিয়ান জু প্রদেশের নানজিং শহরে জাপানীদের এবং রাশিয়ায় জার্মান নাযি বাহিনীর ধর্ষণলীলার সাথে একাত্তরের ধর্ষণকে তুলনা করে সুসান মিলার তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন-
In her ground-breaking book, Against Our Will: Men, Women and Rape, Susan Brownmiller likened the 1971 events in Bangladesh to the Japanese rapes in Nanjing and German rapes in Russia during World War II. “… 200,000, 300,000 or possibly 400,000 women (three sets of statistics have been variously quoted) were raped. Eighty percent of the raped women were Moslems, reflecting the population of Bangladesh, but Hindu and Christian women were not exempt. … Hit-and-run rape of large numbers of Bengali women was brutally simple in terms of logistics as the Pakistani regulars swept through and occupied the tiny, populous land …” (p. 81).
রক্ষা পায়নি ১৩ বছরের শিশুও। কি নির্মম কতো নিষ্ঠুর ছিল এই জাতির প্রতি পাকি ট্রূপ। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কিংবা বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে বহু মেয়ে শিশু-কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে করা হয়েছে পৌনঃপুনিক ধর্ষণ। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে এইসব বন্দী শিশুরা।
Khadiga, thirteen years old, was . . . walking to school with four other girls when they were kidnapped by a gang of Pakistani soldiers. All five were put in a military brothel in Mohammedpur and held captive for six months until the end of the war. Khadiga was regularly abused by two men a day; others she said, had to service seven to ten men daily. . . . At first, Khadiga said, the soldiers tied a gag around her mouth to keep her from screaming. As the months wore on and the captives’ spirit was broken, the soldiers devised a simple quid pro quo. They withheld the daily ration of food until the girls had submitted to the full quota.
যুদ্ধ দিনের বিয়ে। একটা প্রহসনের মতো ছিল। মেয়ের ইজ্জত-সম্ভ্রম রক্ষার তাগিদে মেয়েকে কোন এক পুরুষের হাতে তুলে দিতে চাইত মা-বাবারা। এটাও কি কম ত্যাগ? কোন উৎসব থাকতো না সেই সব বিবাহে। থাকতো না নাচ-গান কিংবা ভগ্নিপতি-শ্যালিকার খুনসুটি। শুধুই মলিন নিরবতা। বাতাসের শব্দও তখন সেনা-বুটের গমগম আওয়াজের মতো মনে হতো। তবু কি শেষ রক্ষা হতো? তবু থেমে থাকেনি মৃত্যুর মিছিল। তবু থেমে থাকেনি বৈধব্যের গান। তবু থেমে থাকেনি ইজ্জত হারানোর নীরব আর্তনাদ। অভিশাপ দেই। বারংবার অভিশাপ দেই-
Two [Pakistani soldiers] went into the room that had been built for the bridal couple. The others stayed behind with the family, one of them covering them with his gun. They heard a barked order, and the bridegroom’s voice protesting. Then there was silence until the bride screamed. Then there was silence again, except for some muffled cries that soon subsided. In a few minutes one of the soldiers came out, his uniform in disarray. He grinned to his companions. Another soldier took his place in the extra room. And so on, until all the six had raped the belle of the village. Then all six left, hurriedly. The father found his daughter lying on the string cot unconscious and bleeding. Her husband was crouched on the floor, kneeling over his vomit.
বীরাঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী। একজন ভাস্কর। একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। একজন বীরঙ্গনা একাত্তরে ২৩ বছরের তরুণী। কোমলমতি স্ত্রী। তিন সন্তানের মমতাময়ী মা। তার স্বামী-সন্তানের সামনে দিয়েই তাকে সেনা-ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যায় পাক আর্মি। দীর্ঘ সাত মাস ঢাকার একটি সেনা ক্যাম্পে তার উপর চালানো পাশবিক অত্যাচার। তার ভাষায়-
“I was subjected to extreme physical and mental torture. They had no mercy. Many of my friends and relatives were killed in front of me,”
পশুরা ছাড়েনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরও। পাক অফিসারদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী হল গুলো ছিল শিক্ষিতা, রূপবতী, নাচ-গান জানা মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত মেয়ে পাওয়ার সবচেয়ে সুবিদা জনক স্থান। পাকি মেজর আসলাম ৩ অক্টোবর ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে গিয়ে দায়িত্বরত মহিলা সুপারেন্ডেণ্টকে জানান তেজগাঁও ক্যান্টনমেন্ট এ অনুষ্ঠেয় সেনাবাহিনীর একটা প্রোগ্রামে কিছু নাচ গান জানা মেয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু মহিলা সুপারেন্ডেণ্ট জানান যুদ্ধের কারনে বেশিরভাগ মেয়েই হল ত্যাগ করেছে, মাত্র ৪০ জন আবাসিক ছাত্রী আছে হলে। নিজ দায়িত্বের অংশ হিসাবে তিনি তাদের তেজগাঁ পাঠাতে অস্বীকার করেন। মেজর আসলাম চলে যান এবং চারদিন পর ৭ অক্টোবর ১৯৭১ ফিরে আসেন আরও কিছু সেনা অফিসার নিয়ে। অসহায় মহিলা তত্ত্বাবধায়কের সামনে দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান মেয়েদের। খোলামেলা ভাবেই চলতে থাকে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার। ১৬ ডিসেম্বরের পরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার বিভিন্ন সেনা ক্যাম্প থেকে রেডক্রস আর মুক্তিবাহিনী উদ্ধার করে শতশত মৃত-অর্ধমৃত, ধর্ষিতা লাঞ্ছিত আর অত্যাচারে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলা ছাত্রীদের –
“ …..Some army officer raided the Rokeya Hall, the girls’ hostel of Dacca University, on October 7, 1971. Accompanied by five soldiers, Major Aslam had first visited the hostel on October 3, and asked the lady superintendent to supply some girls who could sing and dance at a function to be held in Tejgaon Cantonment. The superintendent told him that most of the girls had left the hostel after the disturbances and only 40 students were residing but as a superintendent of a girls’ hostel she should not allow them to go to the cantonment for this purpose. Dissatisfied, Major Aslam went away. Soon after the superintendent informed a higher army officer in the cantonment, over the telephone, of the Major’ s mission.
However, on October 7, at about 8 p.m. Major Aslam and his men raided the hostel. The soldiers broke open the doors, dragged the girls out and stripped them before raping and torturing them in front of the helpless superintendent. The entire thing was done so, openly, without any provocation, that even the Karachi-based newspaper, Dawn, had to publish the story, violating censorship by the military authorities. In seven days after liberation about 300 girls were recovered from different places around Dacca where they had been taken away and kept confined by the Pakistani army men. On December 26, altogether 55 emaciated and half-dead girls on the verge of mental derangement were recovered by the Red Cross with the help of the Mukti Bahini and the allied forces from various hideouts of the Pakistani army in Narayanganj, Dacca Cantonment and other small towns on the periphery of Dacca city.
পাকি সেনাবাহিনী এ দেশের নারীদের শরীরে স্থায়ী করে দিয়ে যায় অসহ্য যন্ত্রণার নির্মম বিষ। নির্লিপ্ত ধর্ষণে হাজার হাজার নারী হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা। পেটে সন্তান। বুকে পাকি নির্যাতনের চাক চাক কস্টের দাগ। সাথে অনিচ্ছা মাতৃত্বের দায়। সন্তান জন্মদান আর বেঁচে থাকার মাঝের যে ভয়ংকর দোটানা। এ শুধু একজন বীরাঙ্গনাই জানেন। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করেন। পাকি বীর্য কেড়ে নেয় দুটি নিষ্পাপ প্রান। রেডক্রস আর অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় অনেকে বেছে নেয় এবরশন এর পথ। সেটাও মোট ধর্ষিতার ১০ ভাগেরও কম।
That rape was endemic in 1971 contrary to some contentions that it was isolated. According to him, the numbers were high and many were forced to get abortions. “It is difficult to put a figure in it. About 100 a day in Dhaka and in variable numbers in lot of other towns. And some would go to Calcutta…(for abortions)
এতো গেল যারা প্রতিনিয়ত এবরশন করেছেন তাদের কথা। আর যারা তা করতে পারেন নি তাদের কি হল? তাদেরও সন্তান সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। না কোন ডাক্তার কিংবা নার্স না বরং পাকি কুকুর গুলো ধারালো অস্র দিয়ে কেটে নিয়েছে তাদের পেট। টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছে পেটের সন্তান। মৃত মা। মৃত সন্তান। সেনা ক্যাম্পের অন্ধকার ঘর গুলো হয়ে উঠলো রক্তাক্ত আঁতুড় ঘর। কাঁচা মাংসের কসাই খানা।
We have collected numerous evidences on the rape, molestation and torture of Bangalee women by the Pakistani army. Rauful Hossain Suja, the son of martyr Akbar Hossain of Pahartali, Chittagong, went to the FOY’S LAKE KILLING ZONE to look for his father’s dead body. They found dead bodies of approximately 10,000 Bangalees, most of them were brutally slaughtered. In their desperate search for their father’s dead boy, they found dead bodies of 84 pregnant women whose abdomens were slashed open. This type of brutality took place almost every where in Bangladesh. Raped women were also locked up naked in various military camps so as to deny them termination of their anguish through suicide.
আর যারা বেঁচে ছিলেন তাদের জীবন ছিল অভিশপ্তের চেয়েও বেশী কিছু। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দীর্ঘ বন্দী জীবনের নোংরা কামনার কাঁচা দাগ। বুক জুড়ে যুদ্ধশিশু। পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান নিয়ে সমাজে আশ্রয় নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-সমাজ এ সন্তান গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায়। নিরুপায় তাদের অনেকে আত্মহত্যা করেন। কেউ কেউ স্বামীর হাতে নিহত হন। কেউ নিজ হাতে হত্যা করেন নিজের পাকি-শঙ্কর সন্তানকে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে তাও সামগ্রিক ভাবে সফল হয় নি। কারন ৭১ এর নয় মাস কেড়ে নিয়েছে তাদের আবেগ, বেঁচে থাকার আকাঙ্খা। যারা পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প গুলোতে রক্ষিতার মতো জীবন পার করেছেন তাদের অনেকেই পাকিস্তানি অফিসারদের পায়ে পড়ে ভিক্ষা চেয়েছেন যেন তাদের সঙ্গে করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্ত পাকিরা ভোগের বস্তুকে সঙ্গিনী করতে রাজি ছিল না।
Dr. Davis talks about how Sheikh Mujibur Rahman labeled the rape survivors as “war heroines” to help them reintegrate into their communities, but the gesture largely did not work. After being assaulted and impregnated by Pakistani soldiers, the Bangladeshi women were completely ostracized by society. Many were killed by their husbands, committed suicide, or murdered their half-Pakistani babies themselves. Some women were so scared to go back home after being held captive in Pakistani rape camps, they begged their Pakistani captors to take them back to Pakistan with them.
সবচেয়ে বড় সমস্যার জন্ম হয় যুদ্ধ শিশুদের লালন নিয়ে। সমাজ-পরিবার তাদের স্বীকৃতি দিতে বরাবরই অস্বীকার করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মা তার সন্তান রাখতে অস্বীকার করেন। এই সব যুদ্ধ শিশুদের লালনের জন্য এগিয়ে আসে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো এবং মাদার তেরেসার মতো মানুষেরা। তারা শিশুগুলোকে বিভিন্ন হোমে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, এবং কানাডার বিভিন্ন পরিবারে দত্তক হিসেবে পাঠানোর ব্যবস্থা নেন। যেখানে নিষ্পাপ এই শিশুরা, জন্মই যাদের পাপ ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন সংস্কৃতিতে, ভিন্ন পরিচয়ে, ভিন্ন ধর্ম পরিচয়ে বেড়ে ওঠার বাধ্য জীবনে পাচার হয়।
Rape was not the only issue but war babies were also a major problem that needed addressing. There were several agencies that became involved in organising these war children’s transfer to Europe where babies in new homes were very welcome. It had coincided with restrictions on availability of babies for adoption there.
কোলকাতায় মাদার তেরেসার হোমে সন্তানকে রেখে আসার আগে যুদ্ধ শিশু কোলে এক কিশোরী মা-
Bangladesh government, at instigation of US social workers, is setting up a legal machinery for international adoption of child victims of occupation and war, including unwanted offspring of women raped by Pakistani soldiers; This step is considered a significant precedent in Bangladesh, where adoption of children by strangers is an unknown concept; International Social Service American Branch General Director W C Klein says the service has suggested adoption as an alternative to prevailing practice of abortion, infanticide and selling of unwanted children to beggars, who use them to elicit sympathy. The New York Times, May 29, 1972 .
Dead Reckoning: Memories of the 1971 Bangladesh War বইয়ে শর্মিলা বোসের পাকি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ আর নারকীয় নির্যাতনকে হালকা করে দেখার নোংরা প্রয়াসকে ধিক্কার জানাই। অধ্যাপক বোস বারবার বুঝাতে চেয়েছেন এ দেশে পাকিরা কোন যুদ্ধাপরাধ করেনি। গণহারে ধর্ষণ নির্যাতন করেনি বরং এটা ছিল একটা গৃহযুদ্ধ। তিনি এটাও বলেছেন একাত্তরের ধর্ষণ গণহত্যা সম্পর্কে তথ্য বাংলাদেশী এবং ভারতীয় ইতিহাসবিদের বাড়িয়ে বলা। তার মতে এটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার প্রচেষ্টা। তিনি এও বলেছেন একাত্তরের ধর্ষণের বিবরণ লিখতে যেখানে ১০০ সব্দ প্রয়োজন সেখানে ৬৫০০ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি একাত্তরের নির্মম ধর্ষণের ইতিহাস ১০০ শব্দে লেখার পক্ষপাতি! তিনি আমাদের মুক্তিবাহিনীকে বিদ্রোহী বাহিনী (!) বলে আখ্যা দিয়েছেন।
“The issue of rape amounted to about 100 words out of a nearly 6,500 word paper on the subject of patterns of violence in 1971।
“As I pointed out in the discussion that followed, there is evidence elsewhere that rape certainly occurred in 1971. But it seems — from this study and other works — that it may not have occurred in all the instances it is alleged to have occurred.”
শর্মিলা বোসের উদ্দেশে বলতে চাই ওটা কোন গৃহযুদ্ধ ছিল না। ওটা ছিল আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রাম। ওরা কোন বিদ্রোহী বাহিনী ছিলনা, ওরা ছিল মহান মুক্তিযোদ্ধা। ওরা ছিল আমাদের বিজয় রথের সারথি। একাত্তরের ধর্ষণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ওটা ছিল পাকি পাপে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমাদের মহান বীরাঙ্গনাদের অভিশপ্ত দিনযাপন। এ ইতিহাস ১০০ শব্দে নয় ১০০ কোটি শব্দে লিখেও শেষ করা যাবে না। একাত্তরে ধর্ষণ হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের মা বোনেরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ইতিহাস মিথ্যা বলে না।
ছবি এবং তথ্যঃ ইন্টারনেট।
*** লেখাটি অন্য একটি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।
ভাই, অসাধারণ একটা লেখা। এ লেখাটার খুব জরুরি ছিল। আমরা কত নির্লজ্জ জাতি, সমাজ ও ধর্মের দোহাই দিয়ে জাতির এই ত্যাগকে লুকিয়ে রেখেছি।
লেখাটির বেশি বেশি প্রচার হওয়া দরকার। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটা মাসিক ম্যাগাজিনে লেখাটি প্রকাশ করতে চাই। লেখক কি রাজি হবেন ?
অনুমতি দিলে [email protected] এ জানান।
ধন্নবাদ।
লেখাটিতে আগেই মন্তব্য করা উচিৎ ছিল। প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই চমৎকার লেখাটির জন্য। বীরাঙ্গনা এবং যুদ্ধশিশুদের নিয়ে ফরিদ আহমেদের এই লেখাটিও দেখতে পারেন –
আমাদের বীরাঙ্গনা নারী এবং যুদ্ধ শিশুরাঃ পাপমোচনের সময় এখনই
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ স্যার। লেখাটি পড়ছি।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিত নারীদের “বীরাঙ্গনা” তকমা এঁটে দেওয়াটি ছিল মুজিব সরকারের অংসখ্য রাজনৈতিক ভুলগুলোর মধ্যে একটি চরমতম। আসলে দরকার ছিল– আত্নত্যাগী এইসব নারীদের “মুক্তিযুদ্ধা” হিসেবেই সন্মান দেওয়া, পুনর্বাসন করা। কিন্তু তা না হওয়ায় দেশ, জাতি ও ইতিহাস– শেষ পযর্ন্ত বোধহয় কেউই তাদের মনে রাখেনি। …
সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্রের বদলে শুধুমাত্র “ছবি এবং তথ্যঃ ইন্টারনেট” বলে চালিয়ে দেওয়াটা আপত্তিকর। মুক্তমনার মতো সাইটে এমনটি না হওয়াই ভাল।
ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। চলুক।
@বিপ্লব রহমান, ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই সাথে থাকার জন্য। তথ্যের লিঙ্ক পোস্টের ভেতরে দেয়াতে নীচে আর দেই নি।
@মুনসুর সজীব,
আপডেট:
এই লেখাটি অনলাইনপত্র গুরুচন্ডালি ডটকম-এ “১৯৭১ :: মুক্তিযুদ্ধের কথা ” শীর্ষক সংকলনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান, ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই। দেখছি। উৎসাহ দেয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
(Y) (Y) (Y)
@তামান্না ঝুমু,
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। 🙂
মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনী ও তাদের দেশীয় দালালদের গণধর্ষন নিয়ে বলার কিছু নেই।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এই বিশেষ বেদনাময় দিকটি আবারো চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সভ্যতার দাবীদার আমরা বাংগালীরা সভ্যতার কিছু দিকে কতটা নগ্নভাবে পিছিয়ে আছি।
– যুদ্ধের পর বাবা ভাই স্বামী মেয়ে বোন স্ত্রীকে গ্রহন করেনি এমন ভয়াবহ অত্যাচারের স্বীকার হবার পরেও। কুসংস্কার আর কাকে বলে। কি পরিমান মানসিক চাপে পড়লে ধর্ষনকারী পাক সেনাদের সাথে বিয়ে কবুল করে পাকিস্তানে সতীনের ঘরে বাংগালী মেয়েকে যেতে হয়েছিল চিন্তা করা যায়? বংগবন্ধুর মত ব্যাক্তিত্ব পর্যন্ত সাফ বলে দিয়েছিলেন যে বাংগলার মাটিতে তিনি সেসব অপবিত্র সন্তানরা জন্ম নিক তা চান না।
@আদিল মাহমুদ,
শর্মিলা বসুর
‘Dead Reckoning: Memories of the 1971 Bangladesh War’,
‘Losing the Victims’ (Economic and Political Weekly September 22, 2007)
তাহমিনা আনামের
‘এ গোল্ডেন এজ’ ( A Golden Age)
ইয়াসমিন সাকিয়ার
‘Women, War, and the making of Bangladesh: Remembering 1971’
এ গুলো ছাড়া আর কোন রেফারেন্স আছে?
@আকাশ মালিক,
আমাকে তো কিছুটা চেনেন। আমি মোটামুটি রিলায়েবল সূত্র ছাড়া এত বড় কথা বলি না।
কথাটা নীলিমা ইব্রাহিমের এক স্মৃতিকথায় ছিল, সূত্র বার করে দিতে পারি, একটু সময় লাগবে।
@আদিল মাহমুদ, যুদ্ধ-শিশুদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভুমিকা পালন করেছে বিদেশী এনজিও গুলো। অনেক দেশেই তাঁরা এখন ভিন্ন পরিচয়ে বড় হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি আজকের আধুনিক সমাজও তাদের স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারতো না। এটা আমাদের চেতনার দেউলিয়াত্ব আর সামাজিক চাপের ফল। সমাজ কখনই আধুনিক ছিল না সামগ্রিক অর্থে।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
@মুনসুর সজীব,
আসলেই তাই, ৪০ বছরেও সামাজিক দৃষ্টিভংগীর তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।
মালিক ভাই,
Nilima Ibrahim’s account of her conversation with Mujib over the future of the ‘war babies’ is telling: ‘No apa. Please send away the children who do not have their father’s identity. They should be raised as human beings with honour. Besides, I do not want to keep that polluted blood in this country.’
@আদিল মাহমুদ,
কথাটা বড় বলেই রেফারেন্সও তো শক্ত রিলায়েবল হওয়া চাই, তাই না? আমি উপরে তিনটি লেখার কথা উল্লেখ করে বলেছিলাম- ওগুলো ছাড়া আর কোন রেফারেন্স আছে কি না। আপনি যে লিংক দিয়েছেন একই কথা একই সুরে শর্মিলা বসু, তাহমিনা আনাম আর ইয়াসমিন সাকিয়ার তিনটি লেখায়ও আছে। অথচ তারা কেউ বঙ্গবন্ধুর এ কথা সরাসরি নিজে শুনেন নি। আমি সেগুলো আগে পড়েছি বলেই অন্য সুত্র চেয়েছিলাম। নিলীমা ইব্রাহিমের স্মৃতিকথার কথা বলা হয়েছে, নিলীমার ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইয়ে কি সেই স্মৃতিকথার উল্লেখ আছে নাকি অন্য কোথাও?
আচ্ছা খুঁজে দেখা যাক অন্য কোথাও এর উল্লেখ পাওয়া যায় কিনা, ইত্যবসরে শর্মিলা বসুর এই লেখাটি যদি না পড়ে থাকেন, অনুরোধ করবো একবার পড়ুন।
আর এখানে আছে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেয়া তরুণী ইয়াসমিন সাকিয়ার লেখার সুত্রে বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তির কথা।
@আকাশ মালিক,
আপনার সাথেও যদি ধর্মওয়ালাদের মত যুক্তিবিদ্যা, রেফারেন্স এসবের মৌলিক রিলায়েবিলিটি নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করতে হয় তবে কই যাই। অবশ্য আগেই আঁচ করা উচিত ছিল, কারন আলোচিত ব্যাক্তিত্বটি বংগবন্ধু।
কেউ বংগবন্ধু বা ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব কারো কথা নিজ কানে না শুনে থাকলে সেটা সত্য হতে পারে না কিংবা হবার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না?
“মানি ইজ নো প্রবলেম” “আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট” এই জাতীয় উক্তিগুলি উদার চেতনার ব্যাক্তিরা যখন কোট করে জিয়াকে আড়ং ধোলাই দেন তখন কি আপনার যুক্তিবাদী মন জানতে চায় এসব উক্তি জিয়ার মুখ থেকে কারা কবে সরাসরি শুনেছিলেন? তাদের রিলায়েবেলিটি কতটা?
শর্মিকা বসূ না কে কথাটা কোট করলেই সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিথ্যা প্রমান হয়ে যাবে? গোলাম আজম আজকে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস লিখলে বিজয় দিবস হবে না?
সরাসরি শোনা বাদেও মোটামুটি গ্রহনযোগ্য বক্তব্য হয় যদি সে বক্তব্য আলোচিত ব্যাক্তির সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল এমন কেঊ শুনেছেন বলে স্বাক্ষ্য দেন। শফিক রেমানের কিংবা বদরুদ্দিন ওমরের স্বাক্ষ্যের কথা এখানে হচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই সংশয় টানা যেত। এখানে হচ্ছে নীলিমা ইব্রাহিমের বরাতে কোট করা কথা।
নীলিমা ইব্রাহিমের সেই ভাষ্য ইন্টারভিউ করে রেকর্ড করেছিলেন বিনা ডি কষ্টা, যিনি এ বিষয়ে মানবতার চোখে প্রচুর গবেষনা করেছেন। এনারা দুজনে কোন কারনে মোটিভেটেড এমন মনে করার যুক্তিসংগত কোন কারন এখনো পাইনি। নীলিমা ইব্রাহিম ঘোর আওয়ামী ঘেষা বুদ্ধিজীবি হিশেবে মেলা গাল খেয়েছেন। বিনা ডি কষ্টার পরিচয় একটু জেনে নেন। দরকার হলে পিয়াল ভাইকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন।
আর বিনা ডি কষ্টার সূত্রে নীলিমা ইব্রাহিমের ভাষ্য শুনেনঃ (৫ নং পৃষ্ঠায়)
http://drishtipat.org/1971/docs/warbabies_bina.pdf
আপনি মনে হয় নবী রসূলদের যে কোন ত্রুটি সহজেই মেনে নিতে পারেন, কিন্তু বংগবন্ধুর কোন রকম সমালোচনা কোনমতেই মানতে চান না? বংগবন্ধু দোষে গুনে আমাদেরই মত মানুষ ছিলেন। কাল, সংস্কৃতি অনেক কিছুর কাছেই আর দশজনের মতই তারও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এমন উক্তি তার হতেই পারে না এমন ধারনা মনে গাঁড়ার তেমন যুক্তি নেই। বংগবন্ধুর এক সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও পক্ষে কথা বলেছেন, আরো বেশ কিছু কথা বলা যায় এখানে বলার দরকার দেখি না।
@আদিল মাহমুদ,
এই কথা শুনানোর কোন প্রয়োজন ছিলনা। আমি ভাবছিলাম আপনাকে বলে দিতে হবেনা যে, আমি বঙ্গবন্ধুকে নবী পয়গাম্বর বা ফেরেস্তা জাতীয় কিছু মনে করিনা। অন্য ধরণের বা বিশ্বস্ত কারো রেফারেন্স দেখাটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
আরে জিয়া সাহেবকে তো সিলেট দেখলাম। শেখ মুজিবকে সরাসরি কোনদিন দেখিনি।
শর্মিলা বসুর লেখাটা পড়েছেন?
কী ব্যাপার মন টন খারাপ না কি? সুরটা একেবারে সপ্তম রাগে চড়ে আছে মনে হয়।
@আকাশ মালিক,
মন ভালই আছে, ৭ বছর পর দেশে যাচ্ছি বেড়াতে।
তবে যুক্তিবাদী বলে পরিচিত পরিমন্ডলে অন্ধবিশ্বাসীর মত কথাবার্তা দেখলে মন খারাপ হয় না, কিন্তু হতাশা লাগে। বংগবন্ধুর ব্যাপারে আপনার মনোভাব অনেকটাই নবী রসূলের ব্যাপারে ধার্মিকদের অনুভূতির মতই, তফাত আপনি কেবল মাথা নামাবার ফতোয়া এখনো দেননি, কেবল ভদ্র ভাষায় লেখনীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
কথাগুলি তাই ইচ্ছে করেই শুনিয়েছি, ঠান্ডা মাথাতেই।
আপনি রেফারেন্সের কথা শর্মিলা বসূ ফসূ না টেনে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলে কোনই কথা শুনাতাম না, শুধু বিনা ডি কষ্টার রেফারেন্স দিতাম। আপনার যুক্তির লাইন হল যেহেতু শর্মিলা বসূর রেফারেন্সে এই কথা এসেছে তাই এটা সত্য হবার সম্ভাবনা অতি ক্ষীন; অত্যন্ত দূর্বল বিশ্লেষন। জগতে বড় বড় প্রতিষ্ঠিত কোন মিথ্যুকই নিরেট মিথ্যা ভর করে অপপ্রচার চালাতে পারে না। সত্যের মিশেন দেওয়া ছাড়া বিশ্বাস্য মিথ্যার বিভ্রান্তি ছড়ানো যায় না।
সজীব@ বারবার পড়ার মতো একটি লেখা মুক্তমনায় দেখায় আপনাকে অভিনন্দন। ধর্ষিতা বোনের রক্তাক্ত ইতিহাস সেটাইতো আমাদের পবিত্র স্মৃতি, সেটাইতো আমাদের পরম গৌরবের মুকুটে সবচেয়ে উজ্জ্বল পালক।
শুভ কামনা।
——-
@জটিল বাক্য, ধন্যবাদ ভাই সাথে থাকার জন্য। একটাই চাওয়া এখন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। কেউ যেন ছাড় না পায়।
“পাপ মুক্তি চাই। স্বীকার করে নিতে চাই তোমরা ছিলে। মনে আছে তোমরা আছ। বিশ্বাসে নিলাম তোমরা থাকবে । তোমরা আছ আমাদের মাঝে। তোমরা থাকবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণের লুকানো দীর্ঘশ্বাসে। তোমরা ৭১। তোমরা বিজয়। তোমরা প্রভাতফেরী। তোমরা স্বাধীনতার ঘোষণার প্রতি শব্দের স্পন্দন। তোমরা বিজয় মিছিলে আমাদের স্লোগানের সুর। তোমরা এই রাজপথ-সমাজ-মুক্তির নির্মাণ-কাব্যের প্রতি স্তবকে মিশে থাকা রক্তের ফোঁটা।”\
মানবিক অভিব্যাক্তির অসাধারণ প্রকাশ। :guru: :guru:
@দেবজিত, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা পাপমুক্ত হব। কারন এরাই পাকি কুকুর গুলোকে দেখিয়ে দিয়েছে বারেবার নিরীহ বাঙালীর ঘর।
এভাবে আবল তাবল লিখলে তো হয় না। আপনার এই ব্যপারে কোন রিসার্চ তো দেখলাম না। তারপর নিজেকে তুলনা করতছেন শারমিলার সাথে জিনি বাংলাদেশর গ্রামে গ্রামে গিয়ে রিসার্চ করার পর বইটা লিখেছিলেন;
@স্বপন, আমি কোথাও নিজেকে শর্মিলা বোসের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করি নাই। এটা নিতান্তই আপনার বুঝার ভুল। শর্মিলা বোস একজন গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
এখানে আবল তাবল কোন বিষয়টা দয়া করে বলেন। আর আমার পোস্ট কোন গবেষণা পত্র না বরং একটা অভিব্যক্তি। এখানে আমি আমার বলা প্রত্যেকটা কথার রেফেরেন্স দিয়েছি। তাহলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন একাত্তরে ধর্ষণের ব্যপারে কোন মিথ্যা তথ্য আছে এখানে?
দয়া করে উত্তর দিবেন? আবোল তাবল বলার কারন ব্যাখ্যা করেন।
@মুনসুর সজীব, well said. আবোল তাবোল বরং স্বপন সাহেব বলছেন। আপনি শর্মিলার সমালোচনা করেছেন। শর্মিলার মত পাকিস্থানের দালালের সাথে তুলনা করার প্রশ্নই আসে না। শর্মিলার পক্ষ নিয়ে স্বপন সাহেব বলছেন। উনার উদ্দেশ্য নিয়ে আমি সন্দিহান। মুক্তমনাতে এরকম গুমনা থাকবে তা বুঝি নাই।
শক্তিশালী লেখা বিভিন্ন আঙ্গিকে। আপনার শব্দ চয়ন বোধের ভেতরে প্রবেশ করে। প্রদত্ত তথ্য আজকের ইতিহাস বিকৃতকারীদেরকে মোকাবেলা করতে সহযোগী, ছবিগুলো আবেগকে তাড়িত করার জন্য যথেষ্ট। আজকে যুদ্ধপরাদীদের পক্ষের অপশক্তিকে ঠেকাতে এমন লেখার বড্ড প্রয়োজন।
সবিনয়ে শুধু একটা দ্বিমত করতে চাই যা আমি মুক্ত-মনায় আগেও বলেছি তা হল, ৭১ এর স্বাধীনতার সংগ্রামে মা বোনেরা ইজ্জত-সম্ভ্রম দেয়নি বা যায়নি। এটা নারীদের আত্মত্যাগ, অবদান এবং যুদ্ধেরই অংশ ছিল।ইজ্জত গেছে যুদ্ধাপরাধীদের যারা এদেশের নারীদের উপর অত্যাচার করেছে। নারী আন্দোলন মা বোনদের ইজ্জত গেছে এ শব্দ চয়্ন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে তুলে দিতে চায়।
@গীতা দাস, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। ৭১’ এ মা বোনদের যে ভয়াবহ আত্মত্যাগ তাকে ভাষায় প্রকাশ করার জন্য অন্যকোন শব্দ আমার জানা নেই। তারপরেও পরবর্তী সময় থেকে সচেতন থাকতে চেষ্টা করবো।
খুবই চমৎকার লেখা। তবে আমার মনে হয়না কোথাকার কোন “শর্মিলা বোসে” এর সাথে আর্গুমেন্ট এর জন্য এত কষ্ট করে এত সুন্দর আর্টিকেল / ব্লগ লেখার প্রয়োজন আছে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে; এবং এটা কেন হয়েছিল পৃথিবীর সবাই জানে। কে কি বলেছে এটা নিয়ে ভাবা আমাদের প্রয়োজন নেই।
একাডেমিক ভাবে কোন একটি যুদ্ধকে বিভিন্ন স্কলার বিভিন্ন নামে বলতে পচ্ছন্দ করেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধ অনেকে শুধু তার মাদার কান্ট্রি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া হিসেবে দেখে তাই এটাকে বিপ্লবী যুদ্ধ বলতে চায়। আবার ভারত-পাকিস্তান, বৃটেন হতে স্বাধীনতা পাবার সময় কোন যুদ্ধ না হলেও তারা তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মীদের “আন্দোলনকারী” থেকে “যোদ্ধা” ডাকতে পছন্দ করে। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে যেমন ভিয়েতনাম যুদ্ধ এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কোন কোন স্কলার স্পষ্টত নিজ যুক্তির জন্য এমন করেন, কেউবা রাজনৈতিক কারণে করেন আবার কেউ করেন নিজেকে ম্যাভেরিক হিসেবে জ্ঞানী মহলে প্রতিষ্ঠা দেবার ব্যার্থ চেস্টায় এসবের প্রয়াস নেন।
We dont give a damn for the Sarmila Bose’s books or her thoughts….
@সংবাদিকা, আপনার সাথে একমত। শর্মিলা বোসের মতো মানুষেরা পুস্তক ব্যবসায় প্রসার লাভ করার জন্য অনেক কিছুই করেন। ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা তার মতো জ্ঞানপাপীর কাছে খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।
রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার কথা বিবেচনা করতে গেলে অন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ গুলার তুলনায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটু বেশীই বেতিক্রম। তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অন্যকোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ নেই।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। 🙂
সজীব দা, লেখাটা সকল ফোরামে ছড়িয়ে দিন। অসাধারণ এই লেখাটার গুরুত্ব বিবেচনা করে আশা করি কোন ফোরামের মডারেটর নিয়মের প্যাচে আটকায়ে রাখবেন না।
চমৎকার লিখেছেন, আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@আকাশ দা, চেষ্টা করবো দাদা। দায় মুক্ত হতে হলে তাদের চূড়ান্ত স্বীকৃতি এনে দিতেই হবে। তাঁরা আমাদের ইতিহাসের সম্পদ যাদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারি নি। যদিও নিরাপত্তা দেয়াটা খুব একটা সহজ সাধ্য ছিল না।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
অসাধারণ একটি লেখা। এ লেখার ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে আছে মমতা, অখণ্ড আকাশের মতো এখানে ছড়িয়ে আছে নীল- বেদনার নীল। লেখাটি বিবর্ণতায় ঠাসা এবঙ এক সীমানা পেরোনো বেদনাদগ্ধতায় আচ্ছন্ন। তথ্য আর উপাত্ত এখানে এসেছে, যা এসেছে- তাতে আরও ভারি হয়ে ওঠে মন। লেখককে কেবল ধন্যবাদ পাবারই যোগ্য নন, তাঁকে সশ্রদ্ধ শুভকামনা।
মুক্তমনায় আপনাকে অভিনন্দন।
@শনিবারের চিঠি, ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের মুক্তির অখণ্ড আকাশে নীল মেঘ বেদনার মতো ছড়িয়ে আছে বীরাঙ্গনাদের স্মৃতি। ওদের বাদ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস অনেক ম্লান। বেঁচে থাকুক তাঁরা আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে।
ছড়িয়ে দিন সজীব এই লেখাটা।
চমতকার লিখেছেন।
@অনিমেষ ভাই। ধন্যবাদ ভাই। বিজয় আমাদের চেতনার হবেই। আমরা জিতবই।
আবারো ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।