বাংলাদেশের অমূল্য একটি দৃশ্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে ১৩ই ডিসেম্বর ২০২১।

একটি শ্বেত প্রস্তর ফলক। তার উপর দাঁড়ানো তিনটি সাদা কাগজ। কাগজ তিনটি ধরে রাখছে শ্বেত প্রস্তরের একটি চালা। চালায় লেখা – “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি-স্তম্ভ”। মাঝের কাগজে লেখা ধামরাই থানার গায়রাকুল গ্রামের নয় জন সোনার ছেলের নাম। প্রত্যেকের নামের পূর্বে লেখা – “বীর মুক্তিযোদ্ধা”। ১৯৭১ সালে এই অকুতোভয় যোদ্ধারা বর্বর পাকিস্তানী সেনা এবং রাজাকার-আলবদর-আল-শামসের সাথে সন্মুখ যুদ্ধ করেছে স্বীয় জীবনের মায়া ত্যাগ করে। তারই ফসল শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ।

তালিকাটিতে প্রথম নামঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চাঁদ দাস। আমার ছেলেবেলার বন্ধু। এখনও সপ্তাহে অন্তত দুবার কথা না বললে চলে না।

১৯৭১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর আমার গ্রাম ঘেষে পশ্চিম পাশে পাকসেনাদের সাথে সন্মুখ সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এই নয়জন জন সহ ধামরাইএর অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মইছেরের ভাই গামা হোসেন শহীদ হয়। মন্তোষ চক্রবর্তীর পায়ে গুলি লাগে। বলাই রায় এবং তার ছেলে অক্ষয় রায়, বিড়ি প্রস্তুতকারী তাজুদ্দিন সহ নয় জন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারায়। নেতৃত্ব দেন তৎকালীন সামরিক কমান্ডার বেনজীর আহমদ। এই যুদ্ধে আমার অকৃতিম বন্ধু দুলাল চন্দ্র সরকার ছিল। দুলাল বাংলাদেশ কৃষিমন্ত্রনালয়ের Auxiliary Services এর মহাপরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহন করে। ২০১৮ সালের ২রা সেপ্টেম্বর হৃদ-রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। দুলালের মত বিশাল হৃদয়ের মানুষ বিরল। দুলাল আমার হৃদয়ে স্থায়ী বাসিন্দা।

আগামী ১৩ই ডিসেম্বর স্মৃতিস্তম্ভটি উন্মোচন করবেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ। বেনজীর এবং আমি শিশু শ্রেণী থেকে এস-এস-সি পর্যন্ত একই সাথে পড়াশুনা এবং ঝগড়া-ঝাটি করে বড় হয়েছি। ঝগড়া-ঝাটি এখনও চলে এবং চলবে।

বেনজীররা চার ভাইই মুক্তিযোদ্ধা। চারজনই আমার সমান ঘনিষ্ট বন্ধু। মজার ব্যাপার হলো এদের বাবা মরহুম কাজিম উদ্দিনের সাথে আমার বন্ধুত্বের গভীরতা ছিল ভাইদের চেয়েও বেশী। আমার জন্য হাটু জলে নামার দরকার হলে তিনি গলা জলে নামতেন।

চির উদ্ভাসিত স্মৃতিস্তম্ভটি সামনে রেখে বাংলাদেশের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।