মীজান রহমান পেশায় গণিতবিদ। শুধু গণিতবিদ বললে ভুল হবে, বাংলাদেশের যে কয়জন একাডেমিয়ার সাথে যুক্ত শিক্ষাবিদ আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন, বাংলাদেশকে পরিচিত করতে পেরেছেন দর্পভরে বিশ্বের অঙ্গনে, তার মধ্যে মীজান রহমান অন্যতম। সেই ১৯৬৫ সালে কানাডার অটোয়াস্থ কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দিয়েছিলেন, সেখানে একটানা তেত্রিশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গণিতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা শিক্ষকের সম্মান সহ বহু সম্মানেই তিনি ভূষিত হয়েছেন। শুধু শিক্ষক হিসেবে তিনি খ্যাতিমান তা নন, শিক্ষায়তনে সাফল্য পেতে হলে যা যা দরকার, সবই তাঁর ঝুলিতে আছে। গণিতের বিখ্যাত জার্নালগুলোতে খুঁজলেই যে কেউ পাবেন তাঁর অসংখ্য গবেষণাপত্রের হদিস, পাশাপাশি কিছুদিন আগে গণিত শাস্ত্রের পণ্ডিত জর্জ গ্যাসপারের সাথে লিখেছেন মহামূল্যবান একটি পাঠ্যপুস্তক ‘বেসিক হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ’ (১৯৯০) শিরোনামে, যেটা প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই গণিতের ছাত্রদের জন্য অবশ্যপঠিত পুস্তক হিসেবে বিবেচিত। তিনি বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক প্রফেসর আলবার্তো গ্রুনবাম এবং নেদারল্যাণ্ডের গণিতবিদ এরিখ কোয়েলিংক প্রমুখের সাথেও গণিত বিষয়ক বহু গবেষণা করেছেন। গণিতে তার অবদান এতটাই বিস্তৃত যে ১৯৯৮ সালে কানাডার ওই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তাঁকে ‘এমিরিটাস অধ্যাপক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যারা ‘এমিরিটাস’ শব্দার্থটির সাথে পরিচিত নন, তাদের কানে কানে জানাই – এমিরিটাস অধ্যাপক হবার ব্যাপারটি খুব বিরল সম্মানের, যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যই। এঁরা অবসর নেবার পরেও যে কোন জায়গায় নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে পরিচিত করতে পারেন, আজীবন ধরেই। গণিত বিষয়ে বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তির তালিকা কেউ কোনদিন বানাতে বসলে মীজান রহমানকে বাদ দিয়ে সেটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
কিন্তু গণিতের কাঠখোট্টা জগতের বাইরেও তার আরেকটা পরিচিতি আছে। তিনি সুসাহিত্যিক। তার প্রথমদিককার উপন্যাস ‘লাল নদী’ (২০০১) পড়ে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম, আলোড়িত হয়েছিলাম, সহসা আবিষ্কার করেছিলাম এক সমাজ সচেতন প্রগতিশীল সুলেখকের প্রতিচ্ছবিকে। পরে জেনেছি এই নিভৃতচারী লেখকের এই একটি নয়, একগাদা ভাল ভাল বই আছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘তীর্থ আমার গ্রাম, ‘প্রসঙ্গ নারী’, ‘অ্যালবাম’, ‘অনন্যা আমার দেশ’, ‘আনন্দ নিকেতন’, ‘দুর্যোগের পূর্বাভাষ’, ভাবনার আত্মকথন’, ‘শুধু মাটি নয়’ প্রভৃতি। সে সময় লজ্জিতই হয়েছিলাম তার বইয়ের সাথে আগে পরিচিত না হওয়ায়। এর পরে যখনই সুযোগ পেয়েছি মীজান রহমানকে পড়বার চেষ্টা করেছি, নিজ উদ্যোগেই। এক ধরণের দায়িত্ববোধ থেকেই। বলা বাহুল্য, তাঁর লেখা পড়ে কখনোই হতাশ হইনি, বরং আলোকিত হয়েছি নানাভাবে। ভাল লাগা আরো বেড়েছে পরবর্তীতে যখন জানলাম তিনি একজন ধর্মমোহমুক্ত সত্যিকার মুক্তমনা মানুষ, একজন মানবতাবাদী। শুধু তাই নয়, দর্শনের জগতে আমরা যাদের ‘স্কেপ্টিক’ বলি, মীজান রহমান সেই গোত্রভুক্ত। সে অনুভূতি আমার আরো দৃঢ় হয়েছে পরবর্তীতে তার মুক্তমনা ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো পড়ে। তিনি ধর্মগ্রন্থের বানীগুলোকে কেবল নিনির্মেষ স্তব করেন না, বরং সময় সময় প্রকৃত অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানীদের মতো ক্রিটিকালি দেখতে চান। তাই তিনি শমশের আলী আর জাকির নায়েকদের মত কোরানের আয়াতে বিগ ব্যাং খুঁজে পাননা, বরং ঈশ্বর নির্দেশিত ধর্মগ্রন্থগুলোতে আবিষ্কার করেন অপবিজ্ঞান, কুসংস্কার, অসাম্য আর নিপীড়নের দীর্ঘদেহী করাল ছায়া। মুক্তমনা সাইটে রাখা তাঁর ব্লগের ‘ইনশাল্লাহ’, ‘কোথায় স্বাধীনতা’, ‘হতবুদ্ধি, হতবাক’ কিংবা ‘আউট অব্ কন্টেক্সট’ শিরোনামের প্রবন্ধগুলো পড়লেই মীজান রহমানের প্রগতিশীল দার্শনিক অভিজ্ঞার সন্ধান পাবেন পাঠকেরা[1]।
মীজান রহমান এ বছর (২০১২) একটি বই লিখেছেন, ‘শূন্য’ নামে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে শুদ্ধস্বর থেকে। বইটাকে ঘিরে প্রথম থেকেই আমার একটা বাড়তি আকর্ষণ ছিল। বহুদিন পর দেশে বইমেলায় গিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে প্রথম যে বইটি কিনেছিলাম সেটি হল মীজান রহমানের শূন্য। এর কারণ ছিল। প্রধানত: তিনি গণিতবিদ হবার পরেও এর আগে গণিতের কোন বিষয় নিয়ে বাংলায় লেখেননি। আমার জানামতে এই বইটিই প্রথম। আর তিনি লিখলেন তো লিখলেন এমন এক বিষয় নিয়ে যেটি গণিতের সবচাইতে বড় গোলক ধাঁধার একটি – ‘শূন্য’। এই সেই শূন্য – যার অভিব্যক্তিতে শুধু গণিতবিদেরা নন, যুগে যুগে আপ্লুত হয়েছেন, আচ্ছন্ন হয়েছেন, কখনোবা উন্মাদ হয়ে গেছেন ধার্মিকেরা, দার্শনিকেরা, এবং বিজ্ঞানীরাও। শুধু পুরাতন গবেষকদের ক্ষেত্রে নয়, কোয়ান্টাম জগতের শূন্যতা এখনো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের জন্য এক মূর্তিমান রহস্যের আঁধার, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি রহস্য উদঘাটনের স্বপ্নের জীয়নকাঠি। তাই শূন্য ব্যাপারটা যেন চির-পুরাতন হয়েও যেন চিরনবীন।
দ্বিতীয় কারণটি ব্যক্তিগত। বলতে দ্বিধা নেই অন্য সবার মত শূন্যতার ব্যাপারটি আমাকেও আচ্ছন্ন করে পুরোদমে। তার বহিঃপ্রকাশ হয়তো পাঠকেরা লক্ষ্য করেছেন আমার বেশকিছু লেখালেখিতে। তবে সেই শূন্যতা ঠিক গণিতবিদের শূন্যতা নয়, আমার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল মূলতঃ পদার্থবিজ্ঞানের শূন্যতা। এই ব্যাপারটি আধুনিক জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার সজীব একটি ক্ষেত্র। স্টিফেন হকিং, স্টিফেন ওয়েনবার্গ, অ্যালেন গুথ, আঁদ্রে লিণ্ডে, আলেকজাণ্ডার ভিলেঙ্কিন এবং লরেন্স ক্রাউস সহ মূলধারার প্রায় সকল পদার্থবিজ্ঞানীরা আজ মনে করেন, আধুনিক স্ফীতিতত্ত্ব অনুযায়ী কোয়ান্টাম স্তরে শূন্যতার মধ্য দিয়ে এক সময় মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল, কিংবা নিদেন পক্ষে ব্যাপারটা অসম্ভব কিছু নয়। এ নিয়ে আমি বেশ কিছু লেখা লিখেছি বাংলায়। আমার প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫) বইটিতে শূন্য থেকে কিভাবে জড় কণিকার উৎপত্তি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছিলাম। এ সংক্রান্ত আলোচনা আছে রায়হান আবীরের সাথে লেখা অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১) এবং সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’ (২০১২) বইটিতেও। এর বাইরে ব্লগে তো বেশ কিছু লেখা আছেই। বিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউসের ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ (Universe from Nothing) বইটির[2] রিভিউ করতে গিয়ে ব্লগে এ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম সম্প্রতি[3]। শূন্যতার ব্যাপারটি উঠে এসেছিল সেখানেও, বিদগ্ধ পাঠক এবং লেখকদের পক্ষে বিপক্ষে প্রাণবন্ত আলোচনা লেখাটিকে দিয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। তবে সে সব আলোচনার বেশিরভাগই ছিল আধুনিক পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোন থেকে উঠে আসা আলোচনা। একজন গণিতবিদ শূন্য ব্যাপারটাকে ঠিক কিভাবে দেখেন তা নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল সব সময়ই। বলতে দ্বিধা নেই, মীজান রহমানের এই বইটি আমার কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করেছে খুব ভাল ভাবেই।
শূন্য সংখ্যাটা আমাদের কাছে এখন এতোই স্বাভাবিক যে এখন প্রাইমারি স্কুলের ছেলেপিলেদের শূন্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে হেসে গড়িয়ে পড়বে। একদিন কিন্তু তা এরকম ‘জলবৎ তরলং’ ছিল না। আসলে শূন্য বলে কোন কিছু আমাদের সংখ্যার সাম্রাজ্যে ছিলই না। ব্যাপারটা যে অস্বাভাবিক তাও নয় কিন্তু। এমন তো নয় যে প্রাত্যহিক জীবনে এর বিশাল কোন ব্যবহার আছে। জমি জমা কিংবা সন্তান সন্ততির হিসেব রাখতেই হোক, কিংবা হোক না বিয়ারের ক্যান খালি করতে, কিংবা বাজার থেকে কলা কিনতে – কেউ শূন্যের ঝামেলায় যায় না; যেতে হয় না। মীজান রহমান ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করছেন তার বইয়ে এভাবে (পৃষ্ঠা ৭) –
প্রাত্যহিক জীবনের ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে-সংখ্যাটির কখনো প্রয়োজন বোধ করেনি কেউ (এবং সাধারণভাবে, এখনও করেনা), সেটা হল ‘শূন্য’। ক্ষেতের চাষীকে কখনো ‘শূন্য’ সংখ্যক বীজ বপন করতে হয়না, ‘শূন্য’ গরুর দুধ দোয়াতে হয়না, ‘শূন্য’ সন্তানের মৃত্যুতে কাতর হতে হয়না। এমনকি ১ এর ডানপাশে একটা শূন্য বসালে যে দস্তুরমত একটা পূর্ণসংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় সে বোধটুকু উদয় হতে অনেক, অনেক যুগ অপেক্ষা করতে হয়েছিল মানুষকে।
তাহলে শূন্য সংখ্যাটির প্রয়োজনীয়তা বুঝল কখন মানুষ? এর কিন্তু খুব সুন্দর একটা নান্দনিক ইতিহাস আছে। আমার বুক শেলফে চার্লস সেইফির একটা চমৎকার ইংরেজিতে লেখা বই আছে নাম ‘Zero: The Biography of a Dangerous Idea’[4]। আমি মাঝে মধ্যেই বইটা উল্টে পাল্টে দেখি। সেইফির বইটিতে শূন্যের একটা ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যায়। কেন শূন্য ব্যাপারটা খুব রহস্যময়, কিভাবে শূন্যের ধারনা নিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতি রীতিমত ভীত থাকত, কিংবা করতো প্রাণপণ বিরোধিতা, এবং শেষ পর্যন্ত কিভাবে শূন্যের ধারণাকে মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হল, তার একটা পর্যায়ক্রমিক এবং আকর্ষণীয় বর্ণনা পাওয়া যায় বইটিতে। শুধু তাই নয় শূন্য এবং অসীম যে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত পরস্পরের সাথে, তাও জানা যায় সেইফির বইটি থেকে। সেইফি লেখেন –
Zero is powerful because it is infinity’s twin. They are equal and opposite, yin and yang. They are equally paradoxical and troubling.
শূন্য এবং অসীমত্ব নিয়ে মীজান রহমানের উপলব্ধিও প্রায় একই রকমের। তাই তিনি বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন –
‘শূন্য ও অসীম – একই সাথে পরস্পরের প্রতিচ্ছবি এবং প্রতিপক্ষ। দুয়েতে মিলে রচনা করেছে সংসারের গূঢ়তম রহস্য’।
শূন্য বইটির ভিতরে ঢুকলেও বিভিন্ন অংশে আমরা একই ধরণের অভিব্যক্তির সন্ধান পাই। যেমন প্রথম পরিচ্ছদের শেষে (পৃষ্ঠা ৬) –
‘শূন্য আর অসীম, এরা একে অন্যের যমজ। যেখানে শূন্য সেখানেই সীমাহীনতা। দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবলে যেখানে কিছু নেই সেখানেই সবকিছু। শূন্য দ্বারা বৃহত্কে পূরণ করুন, বৃহত্ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই একই শূন্য দ্বারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রকে ভাগ করুন, ক্ষুদ্র অসীমের অঙ্গধারণ করবে। শূন্য সবকিছু শুষে নিয়ে অসীমের দরবারে পাঠিয়ে দেয়’।
ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। শূন্য সংখ্যাটি অন্য সব সংখ্যার মত নয় আমরা জানি। যে কোন সংখ্যাকে নিজের সাথে যোগ করলে সংখ্যার মান বাড়ে। যেমন ১ কে ১ এর সাথে যোগ দিলে আমরা পাই ২। ২ এর সাথে ২ যোগ করলে আমরা পাই ৪ । কিন্তু শূন্যকে শূন্যের সাথে যোগ দিলে কেবল শূন্যই পাওয়া যায়। ব্যাপারটা সংখ্যার সার্বজনীন ধর্মের বিরোধী যেন। সে নিজে বাড়তে চায়না, এমনকি অন্য সংখ্যাকেও বাড়তে দেয় না। ২ এর সাথে ০ যোগ করুন। আপনি পাবেন ২। ফলাফল দেখে মনে হবে, কেউ কখনো কোন কিছু যোগ করার চেষ্টাই করেনি যেন। আর পূরণ ভাগের ক্ষেত্রে এই রহস্য যেন আরো ব্যাপক। শূন্য আমাদের তাড়া করে ফেরে অশরীরী সত্ত্বার মতোই। যে কোন সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুন করলে কেবল শূন্যই পাওয়া যায়, সেটা যত বড় কিংবা ছোট সংখ্যা যাই হোক না কেন। আর শূন্য দিয়ে ভাগ করতে গেলে যেন অঙ্কের জানা সব কাঠামোই ভেঙ্গে পড়তে চায়।
শূন্যের এই রহস্যময় ব্যাপার স্যাপারগুলো প্রাচীন কালের দার্শনিকদের ভীত বিহ্বল করে তুলেছিল। তাই আমরা ইতিহাসের একটা বড় সময় জুড়ে শূন্যকে ঠেকানোর প্রচেষ্টা লক্ষ্য করি, অন্তত: পশ্চিমে তো বটেই। গণিতবিদ পিথাগোরাস (মীজান রহমান অবশ্য লিখেছেন ‘পাইথাগরাস’ বানানে) আর তার অনুরক্ত বাহিনী মিলে এক ধরণের ‘কাল্ট’ই গড়ে তুলেছিলেন তথাকথিত শূন্য আর অমূলদ সংখ্যা (irrational numbers) ঠেকাতে। তাদের ধারণা ছিল প্রকৃতির পবিত্র সুসামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে হলে এইটাই করণীয়। কিন্তু প্রকৃতি তো এত সুসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার বহু বৈশিষ্ট্যেই, বহু কাঠামোতেই খুঁজলে অমূলদ সংখ্যা বেরিয়ে আসে। বেচারা হিপসাসকে প্রাণ দিতে হয়েছিল এই গুমোড় ফাঁস করে দেয়ার জন্য। তাই খ্রিষ্টের জন্মেরও বহু আগে ব্যাবিলনে শূন্যের ধারণার উদ্ভব ঘটলেও কিংবা মায়া সভ্যতায় এবং তাদের বিখ্যাত ক্যালেন্ডারে এর নিদর্শন থাকলেও পশ্চিম শূন্যকে গ্রহণ করেনি। পিথাগোরাসের কাল্ট-ধাঁচীয় চিন্তা-ভাবনা আর তারপরে প্লেটো এরিস্টটলদের শূন্য-বিরোধী দর্শনের উপর ভিত্তি করে পাশ্চাত্য দর্শন গড়ে উঠায় শূন্য থেকে দীর্ঘদিন দূরে ছিল পশ্চিম। এখানে বলে রাখি, পিথাগোরাস যেমন শূন্য সংখ্যাটিকে পছন্দ করতেন না, তেমনি আবার এরিস্টটল মনে করতেন, প্রকৃতিতে শূন্যতা থাকতে পারে না (“Nature abhors a vacuum”)। এমনকি শূন্যতাকে দেখা হত ‘ব্লাসফেমি’ হিসেবে। কিন্তু পরে বিজ্ঞানী টরিসেল্লি তার পারদ নিয়ে ঐতিহাসিক পরীক্ষার সাহায্যে দেখিয়ে দেন যে, শূন্যতা ইচ্ছে করলেই তৈরি করা যায়, এতে ব্লাসফেমিও হয় না, কারো মাথায় আকাশও ভেঙ্গে পরে না। আমার স্কুল কলেজের বিজ্ঞানের বইয়েও সেই টরিসেল্লির ভ্যাকুয়ামের ছবি দেখি হরহামেশাই। বিজ্ঞানী প্যাস্কালও পানি আর পারদ নিয়ে টরিসেল্লির মত পরীক্ষা করেছিলেন। গ্যালিলিও সাকশন পাম্প নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেছিলেন, পাম্প দিয়ে ১০ মিটারের বেশি উচ্চতায় পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর বেশি উচ্চতায় পানি তুলতে গেলে সাকশন টিউবে তৈরি হবে ভ্যাকুয়াম। এগুলো আমরা স্কুলেই পড়েছি। কিন্তু এগুলো অনেক পরের কথা। এরিস্টটলের সময় এগুলো কোনটিই জানা না থাকায়, এবং তার গুণগ্রাহী এবং শিষ্যরা সচেতন ভাবে শূন্যতার ধারনা পরিহার করতে সচেষ্ট হওয়ায় ‘শূন্য-বিহীন পশ্চিম’ যেন স্থবির হয়ে পড়েছিল, গণিত আর বিজ্ঞানে অনেকদিন ধরে এগুতে পারেনি তারা।
তাহলে কথা হচ্ছে শূন্যের উপলব্ধিটা আসলো কোথায়, কখন আর কীভাবে? মীজান রহমানের মতে শূন্যের উপলব্ধিটা ‘পশ্চিমে জন্মায়নি, মধ্যপ্রাচ্যেও নয়, জন্মেছিল দক্ষিণ-প্রাচ্যে – ভারতবর্ষে’। ভারতদের থেকে শেখে আরবেরা। সেই আরবদের কাছ থেকেই পশ্চিমা জগত প্রথমবারের মতো শূন্যের ব্যবহার শেখে, এবং সেই নতুন সংখ্যাপদ্ধতিকে নামাঙ্কিত করে ‘আরবি নিউমারেল’ হিসেবে। কিন্তু এই নামকরণের মাঝে ভারতীয়দের কৃতিত্বটুকু হারিয়ে গেছে বলে মনে হয়। এ প্রসঙ্গে মীজান রহমানের অভিমত (পৃষ্ঠা ১৯),
‘…আধুনিক সংখ্যার লিখনপদ্ধতি প্রবর্তনের কৃতিত্বটা আরবদের না দিয়ে বরং ভারতীয়দের দেওয়াই বোধ হয় উচিত ছিল, কারণ ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে আরবরা শেখে ভারতের কাছ থেকে, রাজ্য জয় করার পর। তারপর পশ্চিম শেখে আরবদের কাছে, ইসলামের যখন স্বর্ণযুগ। পরে পশ্চিমই এর নামকরণ করে আরবি সংখ্যা’।
এখন কথা হচ্ছে, ভারতের লোকেরা কিভাবে শূন্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিল, যেখানে পশ্চিমা জগৎ সহ বহু সংস্কৃতি ছিল শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ? মীজান রহমানের মতে, ভারতীয়দের বিদ্যমান তদানীন্তন সংস্কৃতিই ছিল এর ভিত্তি। পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে শূন্য আর অসীমকে ভয়ের চোখে দেখত, সেখানে ভারতীয় সংস্কৃতিতে শূন্য এবং অসীমত্ব সবসময়ই ছিল যেন উপাসনার আধার। স্বয়ম্ভূ ব্রহ্মার স্বরূপ কিংবা শিবের প্রলয় নৃত্য সবকিছুর মধ্যেই যেন শূন্য আর অসীমমের মিলনক্ষেত্র। মীজান রহমান হিন্দুদের উপাস্য দেবতা শিবের উদাহরণ হাজির করেছেন – শিবের একহাতে সৃষ্টির দণ্ড, আর আরেক হাতে ধ্বংসের অগ্নিমশাল। মীজান রহমানের মতে “হিন্দুধর্মের মৌলিক বিশ্বাসের মধ্যেই নিহিত রয়েছে শূন্য আর অসীমের দ্বৈত অস্তিত্ব। এ-বিশ্বাস একান্তই ভারতীয় বিশ্বাস। এখানে শূন্য আর অসীম একে অন্যের স্বভাব দোসর, একে অন্যের পরিপূরক। ভারতীয় দর্শনে ‘শূন্য’ হল স্বাগত অতিথি-আত্মার পবিত্র মন্দির”। কাজেই ভারতের মতো জায়গায় শূন্যের ধারণার জন্ম হবে না তো কোথায় হবে? শূন্যের জন্ম হবার আদর্শ জায়গা হিসবে প্রস্তুত হয়েই ছিল যেন প্রাচীন ভারত।
তবে আমার মনে হয় সংস্কৃতির ব্যাপারটা আসলে মুখ্য নয়। ভারতীয়দের আগে ব্যাবিলনে যে শূন্যের ব্যবহার চালু ছিল সেটা আগেই বলেছি। সংখ্যা হিসেবে না হলেও প্রতীক হিসেবে হলেও। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে আলেকজান্ডার তার পারস্য-বাহিনী নিয়ে ব্যাবিলন থেকে ভারতবর্ষ আক্রমণ করার পর সেই জ্ঞান সম্ভবত: ভারতে চলে আসে। ইতিহাসের এ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটির উল্লেখ চার্লস সেফির বইয়ে আছে, রবার্ট কাপলানের ‘The Nothing that Is: A Natural History of Zero’ বইয়েও এর উল্লেখ পাওয়া যায়[5]। মীজান রহমানও তাঁর বইয়ে ব্যাপারটার উল্লেখ করেছেন এর গুরুত্ব বোঝাতে। মনোযোগী পাঠক না হলে হয়তো এড়িয়ে যাবে ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু।
শূন্যের গণিত আবিষ্কারের কৃতিত্ব মীজান রহমান দিয়েছেন সপ্তম শতাব্দীর বিখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ ব্রহ্মগুপ্তকে। তাঁর মতে, ব্রহ্মগুপ্তই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বুঝেছিলেন কিভাবে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক সংখ্যা দিয়ে যোগ বিয়োগ পূরণ ভাগ করতে হয়। এখানে এসে একটু হোঁচট খাবেন আমার মতো অল্পবিদ্যার পাঠকেরা। আমরা ছোটবেলা থেকে শূন্যের মূল আবিষ্কারক হিসেবে চিনে এসেছি আর্যভট্টকে। অথচ মীজান রহমানের মূল বইয়ে আর্যভট্টের কোন উল্লেখ নেই। মীজান রহমান তার সারা বই জুড়ে পাইথাগোরাস, জ্জেনো, এরিস্টটল, ব্রহ্মগুপ্ত, আল-খোয়ারিজমি, ওমর খৈয়াম, ফিবোনাচি, ব্রুনেলিসি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, রেনে ডেকার্ট, প্যাস্কেল, লিবনিজ, আইনস্টাইন, লোপিতাল, ইউহান বার্নলি, ড্যানিয়েল বার্নলি, কেলভিন, চন্দ্রশেখর, ফাইনম্যান, হাবল, হকিং সহ এমন কোন গণিতজ্ঞ কিংবা বিজ্ঞানী নেই যার কথা মীজান রহমান বলতে বাকি রেখেছেন; অথচ শূন্যের সূচনা যার হাত দিয়ে হয়েছিল বলে মনে করা হয়, তার কোন উল্লেখ বইটিতে নেই! আর্যভট্টের নামের উল্লেখ না থাকার ব্যাপারটি বিস্ময়কর; তবে এটির একটি কারণ হয়তো এই যে, আর্যভট্টের কাজে পৃথিবীর বার্ষিক গতি, জ্যামিতি শাস্ত্র, ত্রিকোনমিতি, দ্বিঘাত সমীকরণের কিছু সমাধান আছে, এমনকি পাই এর মান নির্ণয় প্রভৃতির উপর আর্যভট্টের অবদানসূচক প্রামাণ্য গ্রন্থের উদাহরণ তার বিখ্যাত ‘আর্যভাটিয়া’ গ্রন্থ থেকে দেয়া যায়, কিন্তু তিনি সত্যই ‘শূন্য’ ব্যাপারটিকে গাণিতিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন কিনা এর কোন প্রমাণ নেই। আর্যভট্টের বইয়ের কিছু বর্ণনামূলক বাক্য থেকে পরবর্তী বিশ্লেষকেরা ভেবে নিয়েছেন যে তিনি শূন্য সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। যেমন, প্রাচ্যের ইতিহাসবিদেরা তো বটেই এমনকি গণিতের ইতিহাসবিদ ফ্রান্সের জর্জস ইফ্রাহ সহ অনেকেই মনে করেন যে আর্যভট্টের কাজের মধ্যেই প্রচ্ছন্নভাবে ‘শূন্য’ উপস্থিত ছিল। কিন্তু প্রচ্ছন্নভাবে থাকলে কী হবে সেটা যে প্রকাশ্যে এসেছিল, তার কোন প্রমাণ কিন্তু নেই। আর কোন কিছুর বর্ণনা কিন্তু গণিত নয়। লর্ড কেলভিন একটা কথা বলতেন, তা আমি খুবই মানি – ‘যদি আপনি আপনার বর্ণনাকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে আপনার জ্ঞান অপর্যাপ্ত এবং অসন্তোষজনক বলে বিবেচিত হবে’। এখানেই আর্যভট্টের চেয়ে ব্রহ্মগুপ্ত অধিকতর সফল। তিনিই বলতে পেরেছিলেন – “ধনাত্মক সংখ্যাকে ঋণাত্মক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ফলাফল দাঁড়াবে ঋণাত্মক, এবং ঋণাত্মক সংখ্যাকে আরেকটি ঋণাত্মক সংখ্যা দিয়ে ভাগ বা পূরণ করলে দাঁড়াবে ধনাত্মক”। শুধু তাই নয়, ব্রহ্মগুপ্ত এও বলতে পেরেছিলেন যে, শূন্য দিয়ে যে-কোন সংখ্যাকে পূরণ করলে সেটা শূন্য হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যা পারেননি তা হল কোন কিছুকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে কি হবে তা বলতে। তিনি ভেবেছিলেন শূন্যের ধর্ম যেহেতু সবকিছু ‘শুষে নেয়া’ তাই কোন সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলেও সেটা শূন্য হবে। সেটা যে সঠিক নয় তা বুঝতে আরো কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই ভুলটি সংশোধন করেছেন দ্বাদশ শতাব্দীর গণিতজ্ঞ ভাস্কর। তিনিই অবশেষে বুঝতে পেরেছিলেন যে কোন সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে তা শূন্য হয় না, হয় অসীম। কিন্তু তখনো জানা ছিল না শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে কি হবে। ০/০ এর মানে কি? আমরা আজ জানি এরও একটা অর্থ আছে, মীজান রহমান যেটাকে বলেছেন ‘ইডিটারমিনেট নাম্বার’ বা অনির্দিষ্ট সংখ্যা। কিন্তু এ ব্যাপারটার গাণিতিক ব্যাখ্যা জানার জন্য সপ্তদশ শতকের ফরাসী গণিতজ্ঞ লোপিতালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
লোপিতালের কথা বললাম বটে, কিন্তু কিন্তু লোপিতালকে নিয়ে আসল গুমোর ফাঁস করে দিয়েছেন মীজান রহমান তার বইয়ে। আমরা যেটাকে ‘লোপিতালের সূত্র’ বলে জানি, সেটা আসলে লোপিতালের আবিষ্কার ছিল না, কাজটা ছিল তার ‘গৃহশিক্ষক’ ইউহান বার্নুলির আবিষ্কার। অর্থের বিনিময়ে বার্নুলির কাজ কিনে নিয়ে আরে সেই সাথে নিজের আরো কিছু কাজ যোগ টোগ করে একটা বই লিখেছিলেন লোপিতাল – Analyse des infiniment petits নাম দিয়ে। ক্যালকুলাসের উপর সেসময় (১৬৯৬) প্রথম পাঠ্যপুস্তক ছিল সেটি। এই বইয়ের মারফতে দুনিয়াশুদ্ধ ছাত্র ছাত্রী আর অধ্যাপকদের কাছে লোপিতাল পরিচিত হয়ে উঠেন, এবং তার বিখ্যাত সূত্রটিকে লোপিতালের সূত্র হিসেবেই জেনে যান। ১৭০৪ সালে লোপিতাল মারা যাওয়ার পর বার্নুলি আসল ঘটনা ফাঁস করে দিলেও কেউ বিশ্বাস করেনি। এখনো অন্তরকলনের বইপত্রে এটাকে ‘লোপিতালের সূত্র’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। ইতিহাস থেকে এ ধরণের অনেক আকর্ষণীয় কাহিনী তুলে নিয়ে মীজান রহমান সাজিয়েছেন তার ‘শূন্য’ নামের বইটি।
লোপিতাল নামটি নিয়েও আছে বিস্তর মজা । লোপিতালের পুরো নাম ছিল ফ্রাঁসোয়া-আঁতোয়া দ্য লোপিতাল। ইংরেজিতে লেখা হয় এভাবে – L’Hospital। ফরাসী উচ্চারণ না বুঝে আমাদের উপমহাদেশের বইপত্রে লেখা হয় ‘ল’হস্পিটাল’ হিসেবে। আমার মনে আছে যে, নব্বইয়ের দশকে আমি বুয়েটে পড়া শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লায়েড ফিজিক্স বিভাগে কয়েকদিন ক্লাস করেছিলাম। সাবসিডিয়ারি ক্লাসে গণিত নেওয়ায় কয়েকদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিন স্যারের ক্লাস করতে হয়েছিল। মতিন স্যার দুর্দান্ত পড়াতেন। তার ক্যালকুলাসের উপর বইও ছিল বাংলায় – অন্তরকলনবিদ্যা এবং সমাকলনবিদ্যা। কিন্তু আমার মনে পড়ছে যে, সেই অন্তরকলনবিদ্যা বইয়েও লোপিতালের সূত্রকে লেখা হয়েছিল ‘ল’হস্পিটালের সূত্র’ হিসেবে। সম্ভবতঃ বাংলাদেশের গণিতের সব বইয়েই তাই লেখা। মীজান রহমানের বই থেকেই আমি প্রথমবারের মতো জানলাম যে, ভদ্রলোকের নামের প্রকৃত উচ্চারণটি হবে লোপিতাল।
শুধু লোপিতাল কেন, মীজান রহমানের পুরো বইটিতেই গণিতবিদদের নামের সঠিক উচ্চারণ নিয়ে বিস্তর ধাক্কা খেয়েছি। আমরা ছোটবেলাকার বাংলা বইপুস্তকে চেনা পরিচিত গণিতবিদদের নামের বানান যেভাবে দেখে এসেছি তার চেয়ে মীজান রহমানের বইয়ে সেগুলো একেবারেই ভিন্ন। পিথাগোরাসের কথা আগেই বলেছি, যার নামের উচ্চারণ মীজান রহমান লিখেছেন ‘পাইথাগরাস’ হিসেবে। বাংলা বইগুলোতে ইতালীয় গণিতবিদ – যার হাত দিয়ে আরবি ‘শূন্য’ সংখ্যাটি সদর্পে পদার্পণ করেছিল ইউরোপের মাটিতে, তার নাম এখনো লেখা হয় ‘ফিবোনাক্কি’ হিসেবে। এটি সঠিক উচ্চারণ নয়। মীজান রহমান সঠিকভাবেই লিখেছেন ‘ফিবুনাচি’। একইভাবে দেকার্ত কে ‘ডেকার্ট’, কোপার্নিকাসকে ‘কপার্নিকাস’, ব্লেইজ প্যাস্কেলকে ‘ব্লেই পাস্কেল’, লিবনিজকে ‘লাইবনিজ’, বার্নলিকে ‘বার্নুলি’ ইত্যাদি। খুব বড় সম্ভাবনা আছে যে, লোপিতালকে আমরা আমাদের বইপত্রগুলো পড়ে যেভাবে ভুলভাবে জেনেছি ‘ল’হস্পিটাল’ হিসেবে, কিংবা ফিবোনাচিকে ফিবোনাক্কি হিসেবে জেনে এসেছি, হয়তো আমাদের চেনা-জানা সবগুলো নামের উচ্চারণই ভুল। গণিতবিদের নামের শুদ্ধ উচ্চারণগুলো হয়তো মীজান রহমানের প্রদর্শিত পথেই, তারপরেও আমি শতভাগ সংশয়মুক্ত নই। সংশয়ের কারণ অবশ্য কিছুক্ষেত্রে মীজান রহমান নিজেই। তিনি তার বইয়ে গ্রীক গণিতবিদ এবং দার্শনিক Zeno কে দুই দুইটি বানানে লিখেছেন। এক জায়গায় ‘জ্জেনো’ (পৃষ্ঠা ১১) অন্য সব জায়গায় ‘যেনো’ (যেমন, পৃষ্ঠা ১৬, ১৭ ইত্যাদি)।
কেবল নাম নয়, কিছু জায়গায় আমার সংশয় আছে ব্যাখ্যা নিয়েও। যেমন ফিবোনাচির যে বিখ্যাত খরগোশের ধাঁধাটার উল্লেখ করেছেন তিনি বইয়ে (পৃঃ ২৬) , যেখান থেকে ফিবোনাচির বিখ্যাত সিরিজটি বেরিয়ে আসে, সেটিতে একটি ছোট ভুল আছে। তিনি ধাঁধাটি শুরু করেছিলেন এই বলে – ‘ধরুন এক কৃষক একজোড়া বাচ্চা খরগোশ কিনে এনেছে বাজার থেকে’। কিন্তু সমস্যাটি বলার পর শেষ লাইনে বলেছেন ‘একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মাস, ধরুন, n অতিক্রম করবার পর, (n+ 1)তম মাসের প্রথমে তাহলে সর্বমোট কতগুলো খরগোশের মালিক হলেন সেই কৃষক?’। যদি ‘কতগুলো’ খরগোশ ধরে হিসেব করা হয়, তবে ফিবোনাচি সিরিজ শুরু হবে ২ দিয়ে। বলা বাহুল্য ফিবোনাচির সিরিজটি সেটা দিয়ে শুরু নয়। ১,১,২,৩,৫,৮,১৩ … এই সিরিজটি পেতে হলে কতগুলো নয়, কৃষকটি শেষ পর্যন্ত কত জোড়া খরগোশের মালিক হলেন সেটা বের করাটাই মুখ্য।
আমার অন্য সংশয়গুলোর কয়েকটি আপেক্ষিকতা নিয়ে; মানে মীজান রহমান আপেক্ষিকতার কিছু বিষয় যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নিয়ে। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে আইনস্টাইনের অসাধারণ কিছু মানস পরীক্ষা (Thought Experiment) সেটা হয়তো অনেকেই জানেন । সেই সতের বছর বয়সে হঠাৎ করেই একদিন আইনস্টাইনের মাথায় এসেছিলো একটি অদ্ভুতুড়ে প্রশ্ন : ‘আচ্ছা, আমি যদি একটা আয়না নিয়ে আলোর গতিতে সা সা করে ছুটতে থাকি, তবে কি আয়নায় আমার কোন ছায়া পড়বে?’ প্রশ্নটা শুনতে সাধারণ মনে হলেও এর আবেদন কিন্তু সুদূরপ্রসারী। এই প্রশ্নটি সমাধানের মধ্যেই আসলে লুকিয়ে ছিল আপেক্ষিকতার বিশেষতত্ত্ব (Special Theory of Relativity) সমাধানের বীজ। আলোর গতিতে চললে আয়নায় কি ছায়া পড়ার কথা? মীজান রহমান লিখেছেন, ‘আচ্ছা, আমি যদি একটা আয়না হাতে করে আকাশপথে উড়ে যেতে পারতাম আলোর বেগে তাহলে আমি কি দেখতাম আয়নাতে? আমার চোখ থেকে আলোকরশ্মি যাবে আয়নার দিকে, এবং সেটা আবার ফিরে আসবে আমার কাছে-তাহলেই তো আমার ছবি দেখতে পাব আয়নাতে, তাই না?’ প্রশ্নটা ঠিকই আছে, কারণ, গ্যালিলিও-নিউটনেরা বস্তুর মধ্যকার আপেক্ষিক গতির যে নিয়মকানুন শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তা থেকে বুঝতে পারি আলোর সমান সমান বেগে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকলে আইনস্টাইনের সাপেক্ষে আলোকে তো এক্কেবারে গতিহীন মনে হবার কথা। ফলে আলোর তো আইনস্টাইনকে ডিঙ্গিয়ে আয়নায় ঠিকরে পড়ে আবার আইনস্টাইনের চোখে পড়বার কথা নয়। তাহলে ওই পরিস্থিতিতে আইনস্টাইন কিন্তু নিজের ছায়া আয়নায় দেখতে পাবেন না। আরো সোজাসুজি বললে বলা যায়, আয়না মুখের সামনে ধরে যদি আলোর বেগের সমান বেগে দৌড়ুতে থাকেন, তবে আইনস্টাইন দেখবেন যে আয়না থেকে আইনস্টাইনের প্রতিবিম্ব রীতিমত ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গেছে। কিন্তু তাই যদি হয় এই ব্যাপারটা জন্ম দিবে আরেক সমস্যার। এতদিন ধরে গ্যালিলিও যে ‘প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি’ নামের সার্বজনীন এক নিয়ম আমাদের শিখিয়েছিলেন, সেটা তো আর কাজ করবে না। আসলে আমরা এখন জানি, আলোর গতিবেগ যে অন্য দশটা বস্তুর গতিবেগের মতোন নয়। ‘আলোর বেগ তার উৎস বা পর্যবেক্ষকের গতির উপর কখনই নির্ভর করে না; এটি সব সময়ই ধ্রুবক।’ – আইনস্টাইনের এই যুগান্তকারী অনুকল্পই ছিল সমাধানের চাবিকাঠি। মীজান রহমান ব্যাপারটি সঠিকভাবেই বর্ণনা করেছেন, তবে, ‘চোখ থেকে আলোকরশ্মি যাবে আয়নার দিকে’ বলে যেভাবে বাক্যটি লিখেছেন (পৃঃ ৯২) তাতে মনে হতে পারে যেন আমাদের চোখ হচ্ছে আলোর উৎস। না, বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে দেখলে – আলোকরশ্মি চোখ থেকে কোথাও যায় না, কারণ চোখ কোন আলোর উৎস নয়। বরং যে কোন আলোর উৎস থেকে আলোর আমাদের ডিঙ্গিয়ে আয়নায় ঠিকরে পড়ে তা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়লেই আমরা কেবল আয়নায় আমাদের প্রতিবিম্ব দেখি, চোখ থেকে আলোকরশ্মি যাওয়ার কারণে নয়। আমাদের চোখ আলোর উৎস হলে আমরা অন্ধকারেও ঘরেও দিনের আলোর মতো দেখতে পেতাম।
আপেক্ষিকতার ব্যাখ্যা হিসেবে মীজান রহমান আরেকটি জায়গায় বলেছেন – ‘গতির সাথে শুধু যে ঘড়ির কাঁটা ঢিলে হয়ে যায় তাই নয়, দৈর্ঘ্য, ভর, এগুলোও আমূল বদলে যায়’ (পৃঃ ৯৪)। তারপর বইয়ের একই পৃষ্ঠায় তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘১ পাউন্ড একটা চিনির ঠোঙ্গা আলোর বেগের চার-পঞ্চমাংশ বেগে গতিশীল কোন স্পেসশীপে মাপলে কিভাবে ৫/৩ পাউন্ডে পরিণত হয়। … তারপর যদি সত্যি সত্যি আপনি আলোর গতির সমান মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারেন কোনক্রমে, তাহলে দূরত্ব হবে শূন্য, এদিকে আপনার ওজনও হবে অসীম’ (পৃঃ ৯৪)। মীজান রহমান যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন অনেকেই জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞানের বইগুলোতে এভাবে ব্যাখ্যা করেন। আমিও স্বীকার করব যে, আমার আগেকার কিছু বইয়ে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছি। আমি তো কোন ছাড়, জগদ্বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এবং ফাইনমেনের বইয়েও এরকমের ইণ্টারপ্রিটেশন রয়ে গেছে[6]। কিন্তু এ ধরনের ব্যাখ্যায় যে ভুলের অবকাশ রয়ে যায়, তা আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ড. তানভীর হানিফের সাথে ব্লগে কথোপকথনে[7]। তাই আমার মনে হয় মীজান রহমানের ব্যাখ্যাটি একটু পরিবর্তনের দরকার আছে। যদিও বেইজার সহ আগেকার কিছু বইপত্রে আলোর গতির সাথে সাথে বস্তুর ভর বেড়ে যাওয়ার কথা বলা থাকে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীরা ব্যাপারটিকে আর সেরকমভাবে ব্যাখ্যা করেন না। আসলে ‘রিলেটিভিস্টিক ম্যাস’ বা আপেক্ষিক ভর একটি পুরনো ধারণা। ১৯৩০ সালের আগে পদার্থবিজ্ঞানীরা এটা ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন অধিকাংশ পদার্থবিদেরাই যেটা ব্যবহার করেন তা হল ‘ইনভ্যারিয়েন্ট ম্যাস’ বা অপরিবর্ত ভর। অপরিবর্ত ভর আলোর বেগের উপর নির্ভর করেনা, এটি মূলতঃ একটি অপরিবর্ত স্কেলার রাশি। কেন আলোর গতিবেগের সাথে সাথে বস্তুর দৈর্ঘ্য কমলেও (length contraction) কিংবা সময় শ্লথ হয়ে গেলেও (time dilation) বস্তুর ভর অপরিবর্তিত থাকে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে এখানে, কিংবা এখানে। কেন কোন বস্তুকণা আলোর সমান গতিতে ধাবমান হতে পারবে না, সেটাকে ব্যাখ্যা করা উচিৎ আসলে ভরের মাধ্যমে নয়,বরং শক্তির মাধ্যমে। যত বস্তুর বেগ বাড়তে থাকে তার জড়তা বা ইনারশিয়া বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে বস্তুকণা আলোর বেগের সমান হতে পারবে না, কারণ এর জন্য অসীম শক্তির দরকার হবে।
বইটির আরেকটি সমস্যা আমার কাছে মনে হয়েছে পরিভাষাগত। লেখক দীর্ঘদিন বাইরে থাকার কারণেই বোধ হয় বৈজ্ঞানিক শব্দগুলোর যে বাংলা প্রতিশব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন তা একটু অপরিচিতই শোনায়। বাংলাদেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক গণিত এবং বিজ্ঞান বইয়ের সিলেবাসে যে শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে আমি বড় হয়েছি তার অনেকগুলোই এই বইয়ে অনুপস্থিত, তার বদলে যেন ‘মগজে কারফিউ’ ঘোষণা করেছে অপরিচিত এবং স্বল্প পরিচিত কিছু শব্দ। যেমন, ‘ফর্মুলা’র বাংলা করেছেন আর্যা। উচ্চমাধ্যমিক রসায়ন বইয়ে Pauli’s exclusion principle এর বাংলা পেয়েছিলাম ‘পলির বর্জন নীতি’। মীজান রহমান বাংলা করেছেন – ‘পাওলির বহির্ভূতি সূত্র’। বিখ্যাত Chandrasekhar’s limit কে ‘চন্দ্রশেখরের সীমা’ হিসেবেই এতদিন জেনে এসেছিলাম, কিন্তু মীজান রহমান একে লিখেছেন ‘চন্দ্রশেখর মাত্রা’। এগুলো তাও না হয় গ্রহণীয়, কিন্তু সেই প্রাইমারী স্কুলের দিনগুলো থেকে আমরা areaকে ‘ক্ষেত্রফল’ এবং volume কে ‘আয়তন’ হিসেবে জেনে এসেছি, অথচ মীজান রহমান তার শূন্য বইয়ে areaকে ‘আয়তন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, আর volume কে ‘ঘনতা’। আমার মনে হয়েছে এগুলো অযথা সাধারণ পাঠকদের মনে অযাচিত সংশয় তৈরি করবে। এমনকি, তার প্রযুক্ত পরিভাষাগুলোও সর্বত্র সুষমভাবে ব্যবহার করা হয়ে উঠেনি এমনকি তার নিজের পক্ষেও। যেমন area বোঝাতে ‘ক্ষেত্রফল’ বাদ দিয়ে ‘আয়তন’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেও বর্গক্ষেত্রকে কিন্তু বর্গক্ষেত্রই রেখেছেন (পৃঃ ৫২), ‘বর্গায়তন’ নয়। অথচ বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের বেলায় লিখেছেন ‘বৃত্তের আয়তন’।
গণিতের শূন্যতার পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞানের শূন্যতাও মীজান রহমানের বইটির শেষ দিকে উঠে এসেছে, যদিও এ অংশগুলো আরেকটু বিস্তৃত হতে পারত। গণিতের ক্ষেত্রে শূন্যতার ধারণা নির্মাণের পথ-পরিক্রমায় তিনি পিথাগোরাসের জ্যামিতি থেকে শুরু করে, ভারতীয়-আরবিয় সংখ্যা পদ্ধতি, যেনোর ধাঁধা, সুবর্ণ অনুপাত, ফিবোনাচির রাশিমালা, লিমিট, অন্তর্কলন সমাকলনের ব্যবহারিক উদাহরণ সহ অনেক কিছুই বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেছেন, কিন্তু যে ‘কোয়ান্টাম শূন্যতা’ এখন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার সবচেয়ে সজীব অংশ, সেটি নিয়ে খুব বেশি গভীর আলোচনায় যাননি। এ ব্যাপারটি আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, কারণ, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীদের দেয়া সর্বাধুনিক তত্ত্ব থেকে আমরা এখন জানতে পারছি যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব একটি ‘কোয়ান্টাম ইভেন্ট’ হিসেবেই একসময় আত্মপ্রকাশ করেছিল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে একেবারে ‘শূন্য’ থেকে। বিগত কয়েক বছরে এই ধারণার উপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় ধারার বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো লিখেছেন এ বিষয়টি নিয়ে হাতে কলমে কাজ করা প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীরাই। এর মধ্যে এম আইটির অধ্যাপক অ্যালেন গুথের ‘The Inflationary Universe’, রুশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ভিলেঙ্কিনের ‘Many Worlds in One’, হকিং –ম্লোডিনোর ‘The Grand Design’ রয়েছে। বিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউসের ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ (Universe from Nothing) বইটি এ বিষয়ে সর্বশেষ সংযোজন, যেটির কথা এ প্রবন্ধের প্রথমেই বলেছি। কিন্তু মীজান রহমানের বইটিতে হকিং এবং ম্লোডিনোর ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ হাল্কাভাবে উল্লেখ করা ছাড়া তেমন কিছু উঠে আসেনি। এ জায়গাটিতে অতৃপ্তির একটা খেদ রয়েই গেল। চার্লস সেইফির ‘জিরো’ বইটি যেমন গণিতের শূন্যতাকে জানার জন্য অপরিহার্য (যেটির প্রভাব মীজান রহমানের শূন্যতে বিদ্যমান), ঠিক তেমনি পদার্থবিজ্ঞানের শূন্যতাকে জানার জন্য কণা পদার্থবিদ ফ্রাঙ্ক ক্লোসের ‘ভয়েড’[8] কিংবা ‘নাথিং – এ ভেরি শর্ট ইন্ট্রোডাকশন’[9] বইদুটো আকর্ষণীয় সংযোজন হতে পারে।
পাশাপাশি কিছু মুদ্রণ-প্রমাদ আছে বইয়ে। যেমন, পুরো বই জুড়ে ‘বেগুনি’ রঙকে ‘বেগনি’ লেখা হয়েছে একাধিকবার, যা অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগবে। কিছু জায়গায় আছে খানিকটা অসতর্কতার ছোঁয়া। যেমন, লেখক এক জায়গায় গোল্ডেন রেশিও বা ফাই নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘এই অনুপাতটিকে তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘গোল্ডেন রেশিও’-একটু আগে যাকে বললাম সুবর্ণ অনুপাত।’ (পৃষ্ঠা ১৩)। একটু আগে উল্লেখের কথা বললেও আদপে তিনি ঐ লাইনের আগে ‘সুবর্ণ অনুপাত’ শব্দ-যুগল কখনই ব্যবহার করেননি। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার লাইনের মধ্যে শব্দ বাদ পড়ে যাওয়ায় অর্থ বের করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, একটি বাক্য এরকমের – ‘দেখা যাবে যে দুটি সংখ্যা মজার ব্যাপার যে এই একই অনুপাত নিসর্গের আরো অনেক কিছুতে দেখা যায়’ (পৃষ্ঠা ১৩)। এ ধরণের দু’একটি বাক্য বইয়ে রয়ে গেছে যা সংশোধন করা জরুরী। তবে এসমস্ত ক্ষেত্রে লেখকের চেয়েও বেশি দায়বদ্ধতা প্রকাশকের। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এটা একটা সমস্যাই। দক্ষ প্রুফ-রিডারের অভাবে অনেক সময় ভাল পাণ্ডুলিপির পর গুরুত্ব হ্রাস পেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই। লেখক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি যে, এই বইয়ের প্রকাশক শুদ্ধস্বরের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি একটু বেশিই। একটি কারণ হয়তো, প্রকাশনার জগতে শুদ্ধস্বর অপেক্ষাকৃত নবীন কাণ্ডারি, সময়ের সাথে সাথে এর অনেক সমস্যাই মিটে যাবে আশা করা যায়। বই নির্বাচন এবং প্রকাশে স্বকীয়তার কারণে প্রকাশনাটি যে ইতোমধ্যেই একটি আলাদা স্থান অধিকার করে এটা অনস্বীকার্য।
আর এটা উল্লেখ করতেই হবে, এই সব ছোট খাট মুদ্রণ-প্রমাদ কিংবা প্রায়-উপেক্ষণীয় ছোট খাট ভাষিক ত্রুটি বইটির আবেদন মোটেও ক্ষুণ্ণ করে না। এই বইটি পাঠ করলে কেবল শূন্যের ধারনা নয়, গণিত এবং বিজ্ঞানের পর্যায়ক্রমিক উন্নয়নের ইতিহাসের সাথে নিবিড় পরিচয় ঘটবে পাঠকদের। বিশেষ করে স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রী যারা গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন, কিংবা এধরণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এই বইটি চিন্তার খোরাক যোগাবে। তাদের কথা যে মীজান রহমানের মাথায় প্রথম থেকেই ছিলো তার প্রকাশ ঘটেছে বইয়ের ভূমিকায় তার উপলব্ধিতেই –
‘এ বইটি লিখবার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য আমার – বাংলাভাষাভাষী জগতের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকেও আমার নিজের কৌতূহল এবং আগ্রহকে সংক্রমিত করে তোলা। আশা করি শূন্য এবং গণিতকে একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করবে ওরা বইটা পড়ার পর। ‘গণিত’ কোন ভীতিকর জন্তুর নাম নয় – গণিত জীবনের প্রতি আনাচে কানাচে বন্ধুর মতো, প্রিয়জনের মতো, প্রতিক্ষণে উপস্থিত’।
এ ধরণের বইয়ের পূর্বশর্ত হল ভাষার প্রাঞ্জলতা। মীজান রহমানের বই পড়ে আমার মনে হয়েছে তার ভাষা তার চিন্তার মতোই যেন সাবলীল। তিনি ভাষার অনাবশ্যক বাগাড়ম্বর এড়িয়ে চলেন। অধ্যাপকীয় কায়দায় ভাবগম্ভীর এবং নিরর্থক শব্দরাজির কথামালা সাজিয়ে জ্ঞান জাহির করতে থাকেন না, বরং থাকেন যতদূর সম্ভব সাধারণ পাঠকের চিন্তার কাছাকাছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন’ পদার্থবিজ্ঞানীরা যখন পাঠকদের জন্য সাধারণ একটা বিজ্ঞানের লেখা লিখতে গিয়ে অহেতুক ‘অবিমৃশ্যকারী’ কিংবা ‘কুজ্ঝটিকা’র মতো ‘জাড্য বল’, ‘জাড্য কাঠামো’, ‘বিচ্ছুরণ-প্রস্থচ্ছেদ’, ‘পর্যায়ী বস্তুনিচয়’ জাতীয় শব্দরাজির ব্যাপক সমাহার ঘটান, গঠন করেন ‘প্লাংকের কোয়ান্টাম তত্ত্বে বলা হয় যে, মানুষের পক্ষে কোনো বিকিরণ কম্পকের শক্তির পরিমাণ সীমিত নির্ভুলতা ছাড়া চিহ্নিত করা যায় না’ টাইপের বিরক্তিকর ধরণের একঘেয়ে জটিল বাক্যরাজির, সেখানে মীজান রহমান কোয়ান্টাম জগতের নিয়ম কানুন ব্যাখ্যা করেন অনুপম ছন্দে –
‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এক দুঃসাহসী চিন্তা নিয়ে খেলা করতে লাগলেন মনে মনে – ছোট কণারা বড়দের মত একটানা রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে চলে না, তারা চলে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে, অনেকটা ব্যাঙ যেমন করে চলে’ (পৃষ্ঠা ৮৩)
২০১২ সালে বই মেলায় প্রকাশিত বিজ্ঞান এবং গণিতের বইগুলোর মধ্যে ‘শূন্য’ বইটিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে আমি বিবেচনায় রাখব। ব্যাপারটি আমাদের মুক্তমনার জন্যও অতীব আনন্দের, কারণ বইটির বড় একটা অংশ মুক্তমনাতেই প্রথমে সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর সিরিজটি মুক্তমনা ব্লগে রাখা আছে এখানে। ধারণা করি, মুক্তমনায় প্রকাশিত এই সিরিজিটিই পরিবর্ধিত এবং পরিবর্তিত করে বই আকারে রূপ দিয়েছেন তিনি। মুক্তমনার অবদানের কথা তিনি বইটির ভূমিকায় উল্লেখও করেছেন অকৃপণভাবে।
বইটির নাম শূন্য হলেও বইটির পড়ার পর অনুসন্ধিৎসু পাঠকের ঝাঁপি যে শূন্য থাকবে না, বরং শিক্ষা, জ্ঞান এবং আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আশি বছরের দীর্ঘ মাইলফলক অতিক্রম করা এই চিরনবীন এ লেখক আমাদের জীবনকে দীপান্বিত করে তুলুন নতুন নতুন জ্ঞানের আলোয় এমনিভাবে আরো অনেক দিন ধরে, এই কামনা করি।
:line:
লেখাটি শেষ করছি একটা ধাঁধা দিয়ে। আমি এই ধাঁধায় প্রমাণ করব ১ = ০। এবং সর্বোপরি দেখাতে চেষ্টা করব, আমাদের ব্লগার সংশপ্তক আসলে একটি লাউ। সন্দেহবাতিকেরা অবশ্য সন্দেহ করবেন, প্রমাণের কোন এক জায়গায় ফাঁকিবাজি আছে নির্ঘাত। সেই ফাঁকিবাজিটাই ধরতে হবে। ধাঁধাটা একারণেই দিলাম যে শূন্যের সাথে এর একটা গভীর সম্পর্ক আছে।
ধরা যাক, $latex a$ এবং $latex b$ দুটো রাশি যাদের মান 1 ।
যেহেতু দুটো রাশির মানই সমান (অর্থাৎ ১), সুতরাং আমরা লিখতে পারি,
$latex b^2 = ab$ …………………. ( সমীকরণ ১)
আবার যেহেতু, আমরা সবাই জানি, $latex a = a$ ,
উভয় পক্ষকে বর্গ করে –
তাই, $latex a^2 = a^2$ …………………. ( সমীকরণ ২)
সমীকরণ ২ থেকে সমীকরণ ১ বিয়োগ করে পাই,
$latex a^2 – b^2 = a^2 – ab$ …………………. ( সমীকরণ ৩)
যাদের বীজগনিতের বেসিক জ্ঞান আছে, তার জানেন যে, সমীকরণ ৩ কে উৎপাদকে ভেঙে লেখা যায় –
$latex (a+b)(a-b) = a(a-b)$ …………………. ( সমীকরণ ৪)
সো ফার সো গুড। এবার উপরের সমীকরণের উভয় পক্ষ কে $latex (a-b)$ দিয়ে ভাগ করে পাই,
$latex a+b = a$ …………………. ( সমীকরণ ৫)
উভয় পক্ষ থেকে $latex a$ কেটে দিলে বা বিয়োগ করলে আমরা পাব,
$latex b = 0$ …………………. ( সমীকরণ ৬)
কিন্তু উপরে তাকিয়ে দেখুন, ধাঁধা শুরু করার সময় প্রথম লাইনটিতেই আমরা ধরে নিয়েছি $latex a$ এবং $latex b$ দুটো রাশির মান ১ ।
তার মানে কি দাঁড়ালো? দাঁড়ালো যে,
$latex 1 = 0$ …………………. ( সমীকরণ ৭)
অর্থাৎ, ১ = ০
যাহা শূন্য, তাহাই এক।
এখন দেখুন এই সমীকরণ ৭ এর মজা। যে কোন অসম্ভব জিনিস এই সমীকরণে ফেলে সম্ভব করে দেয়া যাবে। ধরুন কেউ বলল, আমাদের ব্লগের দুঁদে গোয়েন্দা সংশপ্তকের ১ টি মাথা। কিন্তু সমীকরণ ৭ অনুযায়ী ১ = ০। মানে সংশপ্তকের কোন মাথা নেই।
তারপর ধরুন আমরা জানি, সংশপ্তকের পা আছে দুইটি।
সমীকরণ ৭ এর উভয়পক্ষকে কে ২ দিয়ে গুণ করুন। পাবেন,
২ =০
অর্থাৎ তার দুইটি পা থাকা মানে আসলে তার কোনই পা নেই।
এভাবে আমি একে একে প্রমাণ করতে পারব যে, সংশপ্তকের কোন মাথা নেই, পা নেই, হাত নেই, তার মাথায় চুলের বদলে আছে সবুজ ডালপালা, আর তার রং হালকা সবুজ। অর্থাৎ সংসপ্তক মানে হচ্ছে আপনার গ্রামের বাড়িতে বাড়ির টিনের চালে ঝুলে থাকা লাউ।
সংশপ্তক = লাউ।
সন্দেহ হচ্ছে? উনাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। গোয়েন্দা মানুষ, হয়তো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে পাশ কাটাতে চাইবেন। কিন্তু আপনারা ছাড়বেন না। সংশপ্তক যে লাউ, তাতে আমার কোনই সন্দেহ নেই।
কিন্তু সবাই তো আর আমার মতো ‘লাউ’ বিশ্বাসী নন, তারা হয়তো সন্দেহ করবেন, এই হতচ্ছাড়া ‘প্রমাণের’ কোথাও একটু ভুল আছে। সেটাই খুঁজে দেখুন। অনেকে হয়তো এর মধ্যে ধরেও ফেলেছেন।
যারা এখনো পারেননি, তাদের জন্য একটা হিন্ট দেই। শূন্য বইয়ে মীজান রহমানের এই বিখ্যাত উদ্ধৃতিতেই আপনারা পাবেন সমাধানের সূত্র –
‘শূন্য আর অসীম, এরা একে অন্যের যমজ। যেখানে শূন্য সেখানেই সীমাহীনতা। দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবলে যেখানে কিছু নেই সেখানেই সবকিছু। শূন্য দ্বারা বৃহৎকে পূরণ করুন, বৃহৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই একই শূন্য দ্বারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রকে ভাগ করুন, ক্ষুদ্র অসীমের অঙ্গধারণ করবে। শূন্য সবকিছু শুষে নিয়ে অসীমের দরবারে পাঠিয়ে দেয়’।
উদ্ধৃতিটি আবার পড়ুন, এবং চিন্তা করুন – কোন্ ভুলটি সংশোধন করেছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীর গণিতজ্ঞ ভাস্কর? এ থেকেই আমার গাঁজাখুড়ি প্রমাণের ভিতর শুভঙ্করের ফাঁকির হদিস পেয়ে যাবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র:
[1] ড. মীজান রহমানের ব্লগ, https://blog.mukto-mona.com/?author=28
[2] Lawrence M. Krauss, A Universe from Nothing: Why There Is Something Rather than Nothing, Free Press, 2012
[3] অভিজিৎ রায়, অস্তিত্বের অন্তিম প্রশ্নের মুখোমুখি: কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?, মুক্তমনা।
[4] Charles Seife, Zero: The Biography of a Dangerous Idea, Penguin Books; Penguin Books, 2000
[5] Robert Kaplan, The Nothing that Is: A Natural History of Zero, Oxford University Press, USA, 2000
[6] এক্ষেত্রে উৎসাহী পাঠকেরা স্টিফেন হকিং-এর A Brief History of Time কিংবা রিচার্ড ফাইনম্যানের ‘The Character of Physical Law’ দেখে নিতে পারেন।
[7] মুক্তমনায় প্রকাশিত আমার ‘আলোর চেয়ে বেশি বেগে ভ্রমণরত নিউট্রিনো- আইনস্টাইন কি তবে ভুল ছিলেন?’লেখাটির মন্তব্যে তানভীর হানিফ এবং আমার আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[8] Frank Close, The Void, Oxford University Press, USA, 2008
[9] Frank Close, Nothing: A Very Short Introduction, Oxford University Press, 2009
আমি যে কত বড়ো কুমড়ো তা এই ব্লগ এ আসলে বেশ টের পাই। অনবদ্য লেখা। অভিজিৎ দা আপনি লিখবেন তাই ১৫০০ কোটি বৎসর আগে বিগ ব্যাং হয়েছিল। দাদা আপনার মেল ঠিকানা টা কি পেতে পারি?
মীজান রহমানকে নিয়ে প্রথম আলোর ফীচার আজ –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2013/01/mizan_prothom_alo.jpg[/img]
বিস্তারিত এখানে।
অভিনন্দন মীজান ভাই।
বিশ্বজগৎ শুরু হওয়ার আগে তিনটে শূন্য ছিল। দুই শূন্যর সংর্ঘষে অজানা বিশ্ব তৈরী হল।
শূণ্য/শূণ্য=অজানা।
এই জন্য বিশ্বজগতের অনেক রহস্য অজানায় থেকে যাবে।
এখন তৃতীয় শূণ্যর সাথে এই অজানা বিশ্বের মিলনে সব আবার শূন্য হয়ে যাবে।
অজানা X শূণ্য = শূন্য।
আমাদের উচিত তৃতীয় শূণ্যটাকে অবিলম্বে খোজঁ করা। :))
বইয়ের রিভিউ অসাধারণ লাগলো। আসলেই রিভিউ কিভাবে লিখতে হয় তা বোধ হয় কিছুটা হলেও শিখতে পারলাম আপনার লেখাটি পড়ে। 🙂
(Y) (F) (F) (F)
প্রিয় অভিজিৎ,
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্রথমতঃ তোমার কাছে, তারপর ‘মুক্তমনা’র পাঠকদের কাছে, বিশেষ করে যারা তোমার রিভিউ পড়ে আমারই মত মুগ্ধ, কিন্তু আমার মত চুপ করে থাকেনি। তোমার রিভিউ নিয়ে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি রীতিমত একটা আসর জমে উঠেছে ব্লগের পাতায়, অথচ যাকে নিয়ে এত কলরব তারই কোন সাড়াশব্দ নেই। আসলে এটা ইচ্ছাকৃত নয়। একেতো ভয়ঙ্কর ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটে আমার, তার ওপর রিভিউটা আমার চোখে পড়ল গতকাল সকালবেলা। প্রথমে তুমি পাঠালে এর লিঙ্ক, পরে পাঠালো মনিকা রশীদ।
রিভিউ পড়ে আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দু’টি। এক, এত সময় নষ্ট করে এতটা পরিশ্রম করবে তুমি একটা সাধারণ বইএর রিভিউ লিখতে, সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। দুই, তোমার রিভিউ গুণগতভাবে আমার বইকে ছাড়িয়ে গেছে নিঃসন্দেহে, অন্তত আমার বিচারে। এধরণের বিস্তারিত, তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থালোচনা সাধারণত গণিত বা বিজ্ঞানবিষয়ক প্রফেশনাল জর্নালে দেখা যায়, যাতে আলোচক কেবল গ্রন্থটিকেই তুলে ধরেন না পাঠকের কাছে, গ্রন্থভুক্ত বিষয়টিরও ঐতিহাসিক ভূমিকাসহ একটা মোটামুটি ধারণা দাঁড় করাবার চেষ্টা করেন। এতে পাঠক এবং লেখক উভয়েরই সমূহ উপকার হয়। যেমন হয়েছে তোমার রিভিউ পড়ে। রিভিউ কিভাবে লিখতে হয়, তোমার বর্তমান কাজটি, আমার মতে, একটা মডেল হয়ে থাকল।
বইটির বেশ কিছু ত্রুটি তোমার চোখে পড়েছে, যা হয়ত আমারই পড়া উচিত ছিল প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠাবার আগেই। এগুলোর একটি-একটি করে জবাব দেবার চেষ্টা না করে আমি বরং অপেক্ষা করব যদি সুযোগ হয় দ্বিতীয় সংস্করণ লেখার। আশা করি এতে তোমার বা তোমার পাঠকদের বড়রকমের আপত্তি থাকবে না।
তবে তোমার লেখার প্রথম দিককার দুচারটে তাথ্যিক বিষয় নিয়ে আমার মন্তব্য করার নৈতিক দায়িত্ব একটা আছে আমার, প্রধানত যাতে আমার পরিচিতি নিয়ে পাঠকদের মনে বিরাটরকমের একটা চিত্র গেঁথে না বসে। না, আমি সত্যিকার বড়মাপের কোনও গাণিতিক নই। একটা বই লিখেছি, এই যা। বইটা যেসময় বের হয়েছিল সেসময় এ-বিষয়ের সত্যিকার অর্থে কোনও নির্ভরযোগ্য পাঠ্যপুস্তক ছিল না। আমার বইটি সে অভাবটি সাময়িকভাবে মোচন করেছে, এই যৎসামান্য কৃতিত্বটুকু যদি কেউ দিতে চায় আমাকে, আমি নতমস্তকে তা গ্রহণ করে নেব। তুমি লিখেছ বইটির প্রথম প্রকাশের ব্যাপারে—-১৯৯০ সালে। সেটা ঠিক। সৌভাগ্যবশত এর দ্বিতীয় সংস্করণ, পরিবর্ধিত আকারে, প্রকাশ হয়েছিল ২০০৪ সালে। এটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়।
আর একটি ব্যাপারে পাঠকদের ভ্রান্ত ধারণা সংশোধন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। উত্তর আমেরিকার উচ্চ শিক্ষায়তনগুলোতে ‘এমেরিটাস প্রফেসার ‘ বিষয়টি এমন কোনও বিরাট কিছু নয়। যে কোন প্রফেসার কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পরই এই খেতাবটি লাভ করেন, তিনি কীর্তিমান হোন বা না হোন। নেহাৎ সৌজন্যমূলক উপাধি মাত্র। তবে যারা গবেষণা ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন নিজ নিজ বিষয়ে তারা অনেকসময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘Distinguished Research Professor’ জাতীয় একটা গালভরা পদবী লাভ করেন। সৌভাগ্যবশত আমার ভাগ্যেও কেমন করে এসে গেছে সেই খেতাব। তবে মনে রাখতে হবে, আমি একা নই। আমার মত আরো অনেক প্রফেসারই এই সম্মান অর্জন করেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
অবশেষে আমাকে আবারও বলতে হচ্ছে, দুঃখিত, এত দেরি হল বলে লিখতে। তোমার কাছে, পাঠকদের কাছে, আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা।
@মীজান রহমান,
ধন্যবাদ, মীজান ভাই। আপনার মন্তব্য বরাবরই প্রেরণার উৎস। লেখাটা ফেসবুকে শেয়ার দেয়ার পরে বেশ কিছু চমৎকার মন্তব্য এসেছিল। আপনার যেহেতু ফেসবুক একাউন্ট নেই, তাই আপনার জন্য এখানে দিয়ে দিলাম –
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/12/facebook_comment_shunno1.jpg[/img]
ধন্যবাদ।
অফটপিক – অনেক দিন ধরে কিন্তু মুক্তমনায় লিখছেন না। এবার থেকে নিশ্চয় নিয়মিতভাবে পাব আপনাকে এখানে।
@অভিজিৎ,
জানি, এবং সেজন্যে ক্রমেই একটা অপরাধবোধ জেগে উঠছে মনে। অতএব নিজের স্বার্থেই লিখতে শুরু করতে হবে আবার। লেখার খোরাক যে নেই তা তো নয়, অভাব হল সময়ের। এটা তোমাদের পক্ষে পরম ধাঁধার বিষয় মনে হতে পারে—–এই লোকটার অবসর নেওয়ার সংবাদটি উনি নিজেই ঘটা করে প্রচার করলেন, এদিকে নিজেই বলছেন সময়ের অভাব! রহস্যটা কোথায়। রহস্য যে নেই কিছু তা বলছিনা—-একটুখানি রহস্যই তো মানুষের শেষ সম্পদ। সুতরাং ‘রহস্যের’ প্রসঙ্গটা বোধ হয় এখানেই চেপে যাওয়া ভাল। কেবল কথা দিচ্ছি অচিরেই ‘মুক্তমনা’র পাঠকদের জন্যে লিখতে শুরু করব। আর কোথায় যাব বলত মন খুলে কখা বলতে। সব দরজাই তো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেখানে যাই সেখানেই শুনিঃ নামাজের সময় হয়ে গেছে। আর শুনি ‘হালাকা’র হালচালের খবর।
ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে। মীজান ভাই।
স্যার আপনি লগ ইন করে মন্তব্য করলে মডারেশনের জন্য আটকে থাকবে না।
-মুক্তমনা মডারেটর।
@মীজান ভাই,
আমি সবসময় আপনার লেখার অপেক্ষাই থাকি। বিজ্ঞান ফিজ্ঞান ভাল লাগে না, তবে আপনার সব লেখাই ভাল লাগে, শূন্য সিরিজ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম, অন্যদেরও পড়িয়েছিলাম।
টরন্টো আসলে অনুগ্রহ করে একটু সংবাদ দিলে খুব খুশী হব, আপনার সাথে হালাকায় বসার খুব ইচ্ছে আছে:-) ।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যাঁ। মন্দ হয়না সেরকম একটা আসর জমাতে পারলে। টরন্টো আমি তিনবার গিয়েছি এই গ্রীষ্মে, দুবার নিজে গাড়ি চালিয়ে, একা। সেখানে আমার আপনজন অনেকই আছে—–ফেরদৌস নাহার, সেরীন ফেরদৌস, কনক, আক্তার হুসেন, আকবর হুসেন, আরো অনেকে। এদের যে-কোন একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমার ভৌগোলিকি অবস্থানের একটা হদিস পাওয়া যাবে। তুমি টরন্টো থাকো সেটা আমি কি করে জানব? ভালোই হল, আড্ডার একটা নতুন সদস্য পাওয়া গেল। আশা করি সামনের গ্রীষ্মেই কোন একসময় দেখা হয়ে যাবে। ভালো থেকো।
@মীজান রহমান,
আবারো ধন্যবাদ মীজান ভাই। এখন দেখলাম, ফেসবুকে মন্তব্যের যে ছবিটা উপরে দিয়েছিলাম সেটাতে মণিকা রশীদ এবং ম্যাক্স ইথারের মন্তব্যটা পুরোপুরি আসেনি। তাই আবার লোড করে দিলাম।
বইটার দ্বিতীয় সংস্করণ যখন করবেন, তখন আপনার সাথে আলোচনাকরব ভাবছি। আপনি আইনস্টাইনের টুইন প্যারাডক্স এর সমাধান হিসেবে প্রকৃতির সীমাবদ্ধতার কথা লিখেছেন সেটা ঠিক সেভাবে হয় কিনা আমি নিশ্চিত নই। আমার মতে আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্য হলে টুইন প্যারাডক্স সত্যই ঘটবে। মানে আলোর কাছাকাছি বেগে পরিভ্রমণ করে আসলে যমজ ভাইয়ের বয়স কমই দেখানোর কথা। টাইম ডায়ালেশনের কিন্তু অনেক পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেখুন এখানে, কিংবা এখানে (Hafele–Keating experiment)। তবে স্পেসশিপে যমজ ভাইকে পাঠানোর সময় সমবেগ বনাম সত্বরণের একটা হাল্কা ঝামেলা আছে, সেগুলোতে এখানে নাই বা গেলাম।
আপনার বইটা বিজ্ঞান এবং গণিতের জগতকে বোঝার জন্য সত্যই অমূল্য সম্পদ।
লেখাটা আবার পড়লাম এবং আবিষ্কার করলাম, সম্ভবত আমার পড়া সেরা রিভিউ। এত চমৎকার করে বইটির চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং পাশাপাশি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সংশয়জনিত ঝুঁকিগুলোর দিকেও যেভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তার তুলনা মেলা ভার। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের আলোচনা অভিজিৎদার হাতে এমনিতেই ঝরঝরে কাব্য হয়ে উঠে, এরপর যদি আবার একখানা মজাদার ধাঁধাও জুড়ে দেয়া হয়, তাহলে পাঠকের আনন্দে আত্মহারা হবার ঘটনা ঘটতে বাধ্য। সত্যি অভিজিৎদা, আমি অভিভূত!
আরবদের কিছু কৃতিত্ব কি দেয়া যেতে পারে না? হয়ত তারা প্রবর্তন করেনি, কিন্তু রপ্ত করেছে, শুধু তাই নয় এর উন্নয়ন ঘটিয়ে পৌঁছে দিয়েছে পাশ্চাত্যের পন্ডিতবর্গের হাতে, সেদিক থেকে আরবরা শূন্যের জনক না হলেও লালন-পালন করে বড় করে তোলায় তাদের অন্তত পালক পিতার স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে না?
আপনার লেখা থেকে জানলাম, চতুর্থ শতাব্দীতে আলেকজান্ডারের মাধ্যমেই শূন্য প্রবেশ করে ভারতে, সেদিক থেকে ব্যাবিলনই হয়ত এর আদিপিতার স্বীকৃতির দাবীদার। কিন্তু আপনি এও লিখেছেন, মায়া সভ্যতাতেও পাওয়া যায় শূন্যের ধারণা, সেক্ষেত্রে তারা আদি আদি পিতার স্বীকৃতির দাবীদার নয়?
এই লাইনটুকু বুঝিনি, অভিজিৎদা।
খুব সাধারণ একটি উদাহরন এটি। আমরা নিজেরা যখন কথা বলি, তখন a কেটে দেয়ার কথাই বলি। আর আপনি এমন ভাষাতেই ব্যাখ্যা করেন আপনার বিজ্ঞানের নিবন্ধগুলি, বিজ্ঞান না জানা পাঠকের জন্য যেগুলো হয়ে উঠে এক একটি মাস্টারপিস্।
শূন্যের রহস্যময়তা থেকে কিন্তু গবেষণা ছাড়াই খুব সহজে গানিতিক ভাবে প্রমান করা যায় যে শূন্য থেকেই মহাবিশ্বের সৃাষ্টি। যেমন উপরের সমীকরণ গুলো থেকে দেখা যাচ্ছে যে শূন্যকে যে কোন রাশিতে পরিনত করা যায়। গানিতিকভাবে,
০= ১,২,৩,৪,…………………..অসীম পর্যন্ত।
অতএব শূন্য বিন্দু থেকে যে কোন সংখ্যক কনিকা তৈরী হওয়া সম্ভব । পদার্থ বিজ্ঞানীরা বলছেন শূন্য বিন্দুতে কোয়ান্টাম ফ্লাক্সুয়েশনের মাধ্যমে সৃষ্ট কনিকাসমূহ যে স্থান কাল সমৃদ্ধ মহাবিশ্ব তৈরী করেছিল, তাতে আদিতে অসীম সংখ্যক কনিকাই ছিল আর তাতে ছিল পরা ও অপরা কনিকা।তবে অনিশ্চয়তা তত্ত্ব মোতাবেক পরা কনিকার ও অপরা কনিকার সংখ্যার মধ্যে কিছু পার্থক্য ছিল। ফলে সম সংখ্যক পরা ও অপরা কনিকা পরস্পরকে ধ্বংস করে ফেললে কিছু উদ্বৃত্ত কনিকা থেকে যায় যা থেকে পরে বর্তমান মহাবিশ্বের যাবতীয় বস্তু সমূহ তৈরী হয়। প্রশ্ন হলো কোন ধরনের কনিকা উদ্বৃত্ত ছিল- পরা নাকি অপরা কনিকা? বিষয় হলো যে কনিকাই উদ্বৃত্ত থাকুক না কেন , বর্তমানকার উদ্বৃত্ত সেই কনিকাগুলোকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন পরা কনিকা। ফলে এর বিপরীত কনিকাসমূহকে অপরা কনিকা ধরা হয়। আর এর ফলেই সসীম সংখ্যক কনিকার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের মহাবিশ্ব। সুতরাং শূন্য বিন্দু থেকে অসীম সংখ্যক কনিকা সৃষ্টি হয়ে কিভাবে পরে সসীম সংখ্যক কনিকার এক সসীম মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে – শূন্য নিয়ে দার্শনিক চিন্তা ভাবনা সে ব্যপারে একটা ভাল ব্যখ্যা দিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। একই সাথে এটাও ব্যখ্যা করে যে কিভাবে তথাকথিত কোন সৃষ্টি কর্তা ছাড়াই আমাদের বা আমাদের মত আরও অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।
রিভিউটা খুব ভালো লাগলো। মুক্তমনায় ড: মিজানের লেখাগুলো যত দ্রুতসম্ভব পড়ে ফেলবো। একাডেমিয়া এবং রিসার্চে তার অবদান গুলো দেখে সত্যিই খুব গর্ববোধ করছি।
@সফিক,
ধন্যবাদ আপনাকে।
অভিজিৎ,
“শূন্য আর অসীম, এরা একে অন্যের যমজ। যেখানে শূন্য সেখানেই সীমাহীনতা। ”
যদি তাই-ই হয় তবে কি আমি আজ মারা গেলে শূন্যে থেমে যাচ্ছি নাকি অসীমে মিলিয়ে যাচ্ছি?
@কেয়া রোজারিও,
“শূন্য আর অসীম, এরা একে অন্যের যমজ। যেখানে শূন্য সেখানেই সীমাহীনতা। ” – ওটা তো মীজান ভাইয়ের বই থেকে তুলে আনা কাব্যিক একটা লাইন , আমি কি জানি? 🙂
তবে আপনি কবি মানুষ, আপনি হয়তো ভাল বুঝবেন। আমি কাঠখোট্টা মানুষ জীবন, মৃত্যু এগুলোকে হয়তো এন্ট্রপি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চাইব, এভাবে। কাব্যিক মনের মানুষদের পছন্দ নাও হতে পারে। 🙂
@অভিজিৎ,
আহ হারে মুই কই কি আর মোর সারিন্দায় কয় কি? ( সাইফুলিইয়ো ভাষার প্রভাবে প্রভাবিত আমি!! )
দিলেন তো মজা টা নষ্ট করে, আমি যে বিতর্কে যেতে চাইছিলাম তা হোল নম্বর বিজ্ঞানী রা যতই সমাজ বিজ্ঞান কে হেয় চোখে দেখুক আর নম্বর নিয়ে খেলা করুক এর বাস্তবতা অসাড় ই থেকে যায় বাস্তবে তাই মীজান রহমান এর হিসেবে আমি মরলে অসীম হবো না ।
আপনার কাঠখোট্টা হিসেবে ( ভাগ্যিস কাঠমোল্লা নয়) “শুন্য যখন এক’ তখন আমি মরলে পুনরজন্ম নিয়ে আর একটা কেয়া হবো না, আর তাই কেশব দা র মাথায়ও কোনদিন চুল গজাবে না কারন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই ওই অঞ্চল “ মহা খালি”!! ( got it? নিঃসীম শূন্যতা) ও তার মানে এটাও একটা ভুল বাংলা প্রয়োগ! উপমার দ্বিত্য ব্যাবহার! কারণ যাহাই শূন্য তাহাই সীমাহীন ।
Jokes apart, লেখা বরাবরের মতই সুখপাঠ্য হয়েছে।
@কেয়া রোজারিও,
হের লাইগগাই তো কই আফা এণ্ট্রপির খেল্ বুঝন লাগব। বয়সের সাথে সাথে চুল কেন কইমা চাঁদি দেখন যায়, কিন্তুক টাক মাথা ঘন কালো চুলে ভইরা উঠে না, কিংবা ভাঙা কাঁচের গ্লাস জোড়া লাইগা আস্ত গ্লাস হইয়া উঠে না, কিংবা মুরগীর ডিম একবার ফাটায়া ফেললে সেই ফাটা ডিম আবার জোড়া লাইগা আস্ত ডিম হইয়া উঠে না – এর হিসাব পাওন যাইব মহাবিশ্বে এন্ট্রপি বৃদ্ধির খেলাতেই।
কইলাম সারিন্দার দিকে ইট্টু খেয়াল রাইখা গান বাজনা করেন, তা তো হুনবেন না।
@অভিজিৎ,
আমার মনে হয় কেয়া জানতে চাচ্ছেন , যদি কাগজে কলমে ΔS = 0 হয়, তাহলে কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে ΔS = 0 ,
সে ধরণের ভৌত অবস্হার ভিত্তি কি এবং এ রকম অবস্হা পর্যবেক্ষণযোগ্য কি না ।
@সংশপ্তক,
খাইসে, আফায় সত্যই এমন জটিল বিষয় জানবার চাইছে নাকি? উনার প্রশ্ন শুইনা তো মনে হয় উনি বলতে চাইছে, নম্বর ওয়ালা বিজ্ঞানীরা মানে গণিত জানা বিজ্ঞানীরা যতই তাফালিং করুক না কেন, সমাজ বিজ্ঞানের গুরুত্ব থাকবোই, এই ধরণের কিছু। উনি যত গণিত থেকে দূরে সরাইতে চান, আপনে তত গণিতে নিয়া যান, এখন এক্কেরে ΔS = 0 নিয়া আসছেন। আপনে মানুষ ভালা না।
বুয়েটে পড়ার সময় থার্মোডাইনামিক্স ক্লাসে কিভাবে নেট এন্ট্রপি বৃদ্ধি পাওয়া যায় তা তো বের করার উপায় শিখসিলাম মনে হয়। ছোট খাট রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে তো করাই যায়।
স্বতস্ফুর্ত বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এন্ট্রপির সাধারণতঃ নীট বৃদ্ধি ঘটে।
ΔSuniv = ΔSsys + ΔSsurr > 0
কিন্তু আপনে যেহেতু ΔS = 0 চাইতাছেন, তাই সেটা সাম্যাবস্থা (ইকুইলিব্রিয়াম)। এই অবস্থায় –
$latex \Delta{S}_{univ} = \Delta{S}_{sys} + \Delta{S}_{surr}$
আলাদা আলাদা ভাবে $latex \Delta{S}_{sys}$ আর $latex \Delta{S}_{surr}$ বের করে ক্যালকুলেট করলেই নীট এন্ট্রপি বৃদ্ধি ঘটসে নাকি সাম্যাবস্থায় আছে তা বের করা যাবে মনে হয়।
সিস্টেমের ক্ষেত্রে –
$latex \Delta{S}_{sys} = \sum n S^0_{(products)} – \sum m S^0_{(reactants)}$
আর পরিবেশের (সারাউন্ডিংস) ক্ষেত্রে –
$latex \Delta{S}_{surr} = \frac{\Delta{H}_{sys}}{T} $
তারপর সিস্টেমের $latex \Delta{S} $ আর সারাউণ্ডিং এর $latex \Delta{S} $ যোগ করে যদি মান পজিটিভ আসে তাহলে এন্ট্রপির নীট বৃদ্ধি ঘটেছে। যদি শূন্য আসলে তাহলে ইকুইলিব্রিয়াম।
তবে পুরা মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে এগুলা ক্যামনে ক্যালকুলেট করে কে জানে। এইগুলা আমার ডোমেইন না। ব্লগের পদার্থবিদগো ডাকন লাগব। 🙂
@অভিজিৎ,
:)) আরে না ! আপনাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য প্রশ্নটা আমি করিনি এবং কখনই করবো না। ওই স্ট্রাটেজীটা বিশেষ প্রজাতির স্ট্রেইনগুলোর জন্য হয়তোবা প্রযোজ্য।
আসলে যেটা অনেক পাঠকই তাৎক্ষনিক মুগ্ধতার খাতিরে খেয়াল করেন না , সেটা হচ্ছে যে , বিজ্ঞানে গনিতের অবস্হান একটা সাহায্যকারী টুল বৈ কিছু নয় এবং গনিত = বিজ্ঞান নয়। ব্যাংকে যেমন শুন্য টাকা থাকা মানে এক টাকা থাকা নয় তেমনি
ΔS = 0 [ΔS = Q/T] লেখাটা যত সহজ একজন গনিতবিদের ( গনিত জানা বিজ্ঞানী নয় !) পক্ষে , তেমনিই কঠিন একজন বিজ্ঞানীর জন্য কারণ পর্যবেক্ষনগত বাস্তবতার যে দায় বিজ্ঞানীদের বহন করতে হয় , গনিতবিদদের সে দায় নেই। একজন গনিতবিদ চাইলেই যেখানে সেখানে শুন্য আবিস্কার করতে পারেন , বিজ্ঞানে সেটা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানে শুন্যের যে তাৎপর্য রয়েছে তা গনিতশাস্ত্রের শুন্য থেকে ভিন্ন।
@সংশপ্তক,
চমৎকার!
@সংশপ্তক,
অবশ্যই। সেজন্যই তো আমার প্রবন্ধে পদার্থবিজ্ঞানের শূন্যতাকে গনিতের শূন্যতাকে আলাদা করেছি। আর আমি শূন্যতা নিয়ে যা লিখেছি তা পদার্থবিজ্ঞানের শুন্যতাই। কিন্তু মীজান রহমানের বইয়ের মাধ্যমে পাশাপাশি গণিতের শুন্যতাটাও জানা হল, উপরিপাওনা হিসেবে, ক্ষতি কি!
আরেকটা মুশকিল কি জানেন আধুনিক পদার্থবিদ্যা যে জায়গায় পৌঁছিয়ে গেছে সেখানে গাণিতিক বিমূর্ততাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এমন জায়গায় গণিতকে বিজ্ঞান থেকে পৃথক করাটা দূরূহই হয়ে দাঁড়ায়। স্ট্রিং তত্ত্বের কথাই ধরেন, ওটা গাণিতিক বিমূর্ততা ছাড়া আর কি!
@অভিজিৎ,
পুরোদস্তর তত্ত্ব বলতে যা বোঝায় স্ট্রিং এখনও তা নয় , গাণিতিক বিমূর্ততার দাপট বেশী যা ইপপিরিক্যাল এ্যাসপেক্ট সবসময় সমর্থন করে না । সময় বলে দেবে এটা থেকে কি বের হয় । এটাও সত্যি যে , আধুনিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় বর্তমানে একটা স্থবিরতা চলছে যদি ফলিত পদার্থবিদ্যার সাথে তুলনা চলে। ইম্পিরিক্যাল রিসার্চে সার্নের সাম্প্রতিক সাফল্যের পর মনে হয় সব রকম গাণিতিক বিমূর্ততাকে এক সময় ইম্পিরিক্যাল রিসার্চের ছাকনী দিয়েই বেরুতে হবে এবং এতে করে অনেকের পেটে লাথি পড়বে সন্দেহ নেই।
@সংশপ্তক,
যতটুকু জানি, প্রায় সকল ভৌত বিজ্ঞানী বিশেষত পদার্থ বিজ্ঞানী প্রথমসারীর গণিতবিদ। শ্রডিঞ্জার নিজে দাবী করতেন তিনি ভাল গণিত পারেননা; তবুও তাঁর দ্বারা উন্নয়নকৃত শাখাটি তথা তরঙ্গধর্মী বলবিজ্ঞান পদার্থ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত গণিতের সবচাইতে কঠিনতম গুলোর একটি। গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞান একে আপরের পরিপূরক। গণিত বিহীন পদার্থ বিজ্ঞান আর ফিজিক্স থাকেনা, পপুলার সায়েন্স হয়ে যায়।
@সংবাদিকা,
আপনি যেহেতু গনিত এবং বিজ্ঞান দুটোই ভাল বোঝেন , আমার একটা সমস্যার সমাধান করে দিন। আমার সমস্যাটা একটা অনু নিয়ে – ‘এস্ট্রোজেন’ C18H24O2 যা আপনার শরীরে আমার চাইতে নিশ্চিতভাবে অনেক বেশী পরিমানে আছে। 🙂 এখন এই এস্ট্রোজেন অনুটাকে শুন্য দিয়ে গুন করে শুন্য বানিয়ে দিতে হবে। আগেই বলে রাখি যে , এস্ট্টোজেন শুন্যতা শুধু সমীকরণে দেখালে চলবে না ! এই এস্ট্রোজেনের ১৮টি কার্বন , ২৪টি হাইড্রোজেন ও ২টি অক্সিজেন অনু কোথায় গেল সেটার ব্যখ্যাও চাই !
এখনেই শেষ নয় , পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার পর পরীক্ষার ফলের সাথে সেই সমীকরণ হুবুহু মিলতে হবে !
ধরে নিচ্ছি যে ল্যাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আপনার আছে। (@)
@সংশপ্তক, আপনি সম্ভবত [latex]\Delta S=0[/latex] এর ব্যাপারটা সামান্য একটু ভুল বুঝেছেন। ইউ সী [latex]\Delta S=0[/latex] হচ্ছে কেবলমাত্র রিভার্সিবল প্রসেসের জন্য। রিভার্সিবল প্রসেস হচ্ছে এমন একটা জিনিষ যেটা কিনা সকলেই জানে পৃথিবীর কোথাও নেই, কিন্তু যেটার অস্তিত্ব কল্পনা করে নিলে গাণিতিক মডেল দার করানো যায়। আইডিয়ালাইজেশনের আরও অসংখ্য উদাহারণ রয়েছে, যেমন- পার্ফেক্ট গ্যাস, পার্টিকল ইন এ বক্স, নিউটনের প্রথম আইন, হার্ডি-ভেইনবার্গ ইকুইলিব্রিয়াম এরা সকলেই আইডিয়ালাইজেশনের উদাহারণ। সকলেই এইটা জানে যে p+q কখনই সমান সমান 1 হবে না কেননা প্রজন্মান্তরে মিউটেশন, মাইগ্রেশন,সিলেক্সন,ড্রিফট কখনই শুণ্য নয়। ইয়েট p+q=1 এই আইডিয়ালাইজেশন আপনাকে সমর্থ করে গননা করতে একটি জনপুঞ্জে হেটেরোযাইগোসিটির লস বা গেইন, মাইগ্রেশন ও ড্রিফট কি করে জনপুঞ্জকে প্রভাবিত করছে, জনপুঞ্জটির আগামী একটি সুনির্দিষ্ট প্রজন্মের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা করতো ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য প্যারামিটার। থার্মোডায়নামিক্সেও একইভাবে জিনিষটা কাজ করে। রিভার্সিবল প্রসেস মানে হচ্ছে এমন একটা প্রসেস বা সময়ের বিপরীতে স্টেইট ভ্যারিয়েবলগুলোর (প্রেসার, ভলিউম, টেম্পারেচার) পরিবর্তন যা কিনা প্রতিটি ইনফিনিটিসিমাল টাইমস্টেপ dt তে বোথ থার্মাল এবং মেকানিকাল ইকুইলিব্রিয়াম বজায় রাখে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইটা কি কখনও সম্ভব, টেম্পারেচার না বাড়িয়ে/কমিয়ে দুটি বডির মধ্যে হিট ট্রান্সফার কি সম্ভব বা সিস্টেমের ইন্টার্নাল/এক্সতার্নাল প্রেসারকে প্রভাবিত না করে কি এক্সপানশান ওয়ার্ক করা সম্ভব? উত্রত হচ্ছে না, কিন্তু সম্ভব এইটা যদি আমরা কল্পনা করি তাহলে সম্পুর্ণ ব্যাপারটার গাণিতিক মডেল দাড় করানো যায়। এইখানে উল্লেখ্য একটি ইররিভার্সিবল প্রসেসকে পিভি ডায়াগ্রামেই আঁকা যায়না কেননা ইনফিনিটিসিমাল টাইমস্টেপে এইখানে ইকুইলিব্রিয়াম বজায় নেই, ফলশ্রুতিতে স্টেইট ভ্যারিয়েবলগুলোকে একে অপরের কন্টিনিউয়াস ফাঙ্কশন হিসেবে লেখা যায় না এবং কষা যায় না এর উপর গণিত।
একটি স্টেইটফাঙ্কশন হিসেবে ক্লাসিকাল এন্ট্রোপির জন্ম হয়েছিলো রুডলফ ক্লশিয়াসের হাতে যখন কিনা তিনি অধ্যয়ন করছিলেন কার্নো এঞ্জিন যেটি কিনা একটি রিভার্সিবল ইঞ্জিন। কার্নোর বক্তব্য ছিলো একটি কাল্পনিক রিভার্সিবল এঞ্জিনের এফিশিয়েন্সি হবে নিছকই তার হট সোর্স এবং কোল্ড সিঙ্কের টেম্পারেচারের ফাঙ্কশন, আর অন্য কোন কিছুর নয়। ক্লশিয়াস দেখলেন যে কার্নো এঞ্জিনের ক্ষেত্রে [latex]\oint \frac{dq}{T}=\frac{q_{hot}}{T_{hot}}+\frac{q_{cold}}{T_{cold}}=0[/latex] এখন, মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি এক্সপ্রেশনের লাইন ইন্টিগ্রাল শুন্য মানে হচ্ছে এটি কোন না কোন একটি স্টেইট ফাঙ্কশনের এক্সাক্ট ডিফ্রেন্সিয়াল, যেই স্টেইট ফাঙ্কশনটির একটি নাম দেওয়া যেতে পারে, ক্লশিয়াস নাম দিলেন এর প্রথমে ‘ফারভানলুঙ্গশিনহাল্ট’ (Verwandlungsinhalt), এবং পরবর্তীতে আরেকটু ফ্রেন্ডলি সাউন্ডিং ‘এন্ট্রোপি’। এএকএএকটি রিভার্সিবল প্রসেসের ক্ষেত্রে [latex]\Delta S=0[/latex] এইটা কিন্তু কোন ড্রব্যাক নয় এইটাই হচ্ছে ব্রেইকথ্রু! কেনো?
একটি ইররিভার্সিবল প্রসেসকে আপনি পিভি ডায়াগ্রামেই আঁকতে পারবেন না, তাহলে একটি ইররিভার্সিবল পাথ সম্পন্নকরণে এন্ট্রোপি বা যে কোন স্টেইটফাঙ্কশনের পরিবর্তন আপনি কিভাবে পরিমাপ করতে যাচ্ছেন? ওয়েল, একটি স্টেইট ফাঙ্কশন হচ্ছে পাথ ইন্ডিপ্যান্ডেন্ট, পিভি ডায়াগ্রামে যদি সম্পন্ন করা হয় একটি সাইক্লিক পাথ তাহলে সেই পাথকে ঘিরে একটি স্টেইট ফাঙ্কশনের লাইন ইন্টিগ্রাল হয় শুণ্য কেননা স্টেইট ফাঙ্কশন সংজ্ঞাগতভাবেই একটি এক্সাক্ট ডিফ্রেন্সিয়াল। এই অনুধাবনটি আপনাকে সমর্থ করে পিভি ডায়াগ্রামে দুটি ইররিভার্সিবল স্টেইটের মধ্যে একটি কাল্পনিক সাইক্লিক রিভার্সিবল পাথ আঁকতে, এই পাথ যেমনই হোক কিনা একে ঘিরে স্টেইটফাঙ্কশনের লাইন ইন্টিগ্রাল হবে শুণ্য। অর্থাৎ একটি রিভার্সিবল প্রসেসে এন্ট্রোপির পরিবর্তন শুণ্য এই অনুধাবন আপনাকে সমর্থ করছে ক্যালোরিমেট্রির সহায়তায় গননা করতে দুটি ইররিভার্সিবল স্টেইটের মধ্যকার এন্ট্রোপির পরিবর্তন পরিমাপ করতে! আমি একটা উদাহারণ দিতে চাই, যেমন ভাবুন- সমান চাপে -১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার পানিকে -১০ ডিগ্রী তাপমাত্রার বরফে পরিবর্তন করা হলে সিস্টেমের এন্ট্রোপি কতোটুকু পরিবর্তিত হয়? কিভাবে গননা করবেন এইটা আপনি, প্রশ্নাধীন পরিবর্তনটিতো বলাই বাহুল্য একশো একশো পার্সেন্ট ইররিভার্সিবল। স্টিল, আপনি যদি -১০ ডিগ্রী পানিকে আইসোথার্মিকভাবে ০ ডিগ্রী পানিতে উত্তপ্ত করেন, অতপর রিভার্সিব্লি ০ ডিগ্রী পানিকে ০ ডিগ্রী বরফে পরিনত করেন এবং সেই বরফকে আইসোথার্মিকভাবে শীতল করেন -১০ ডিগ্রী পানিতে, তাহলে আপনি সম্পন্ন করছেন মোটামুটি একটি রিভার্সিবল পাথ, এই তিনটি স্টেপে এন্ট্রোপির পরিবর্তন আপনি ক্যালকুলেট করতে পারেন [latex]\Delta S=\int_{t_i}^{t_f} \frac{dq_{rev}}{T}[/latex] এই সুত্র দিয়ে এবং এদের সমষ্টি হতে যাচ্ছে ০, অতপর সামান্য বীজগণিতিক কাটাকাটি করেই আপনি বার করতে পারেন আপনার প্রশ্নের উত্তর! একটি রিভার্সিবল প্রসেসের ক্ষেত্রে এন্ট্রোপির পরিবর্তন যে শুণ্য এটা অনুধাবন না করলে কখনই আপনি সক্ষম হতেনা না এটা করতে, বস্তুত এন্ট্রোপি নামক একটি স্টেইট ফাঙ্কশন যে অস্তিত্বশীল সেটাই হতো না কোনভাবে অনুধাবনযোগ্য! বস্তুত ক্লাসিকাল থার্মোডায়নামিক্সকে আপনি যদি এক কথায় প্রকাশ করতে চান, তাহলে সবচেয়ে সুযোগ্য স্টেইটমেন্টটি আমার মতে হওয়া উচিত যে একটি কাল্পনিক রিভার্সিবল প্সেরসের ক্ষেত্রে এন্ট্রোপির পরিবর্তন শুণ্য। এইটা আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী করতে সহায়তা করে। এবং পৃথিবীতে রিভার্সিবল প্রসেস বলে কোন কিছু নেই বিধায়ই পৃথিবীর এন্ট্রোপি সর্বদাই বাড়ছে। পুরনো হয়ে পোস্টটা বোধহয় মরে গিয়েছে, আপনাদের আলোচনা উপভোগ করলাম, আগে পড়লে অংশগ্রহন করতাম এই অতীব ইন্টারেস্টিং বিষয়ক আলোচনায়।।
পুনশ্চ- এন্ট্রোপি সহ সকল থার্মোডায়নামিক প্যারামিটার নির্ধারণ ক্রয়া হয় ক্যালোরিমেট্রি করে। চাপ দ্বারা অপ্রভাবিত প্রসেসগুলোর ক্ষেত্রে (যেমন প্রোটিনের লিগান্ড বাইন্ডিং ফ্রি এনার্জি, ডিএনএ এর স্ট্রান্ডদ্বয় বিচ্ছিন্নকরণ এন্থাল্পি ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয় ডিফ্রেন্সিয়াল স্ক্যানিং ক্যালোরিমেট্রি, আর চাপ দ্বারা প্রভাবিত প্রসেসগুলোর ক্ষেত্রে এডায়াবেটিক বম্ব ক্যালোরিমেট্রি।
@আল্লাচালাইনা,
ক্লদ শ্যানন যখন তার বিখ্যাত যোগাযোগের গানিতিক তত্ত্ব প্রকাশ করেন এবং; সংকেত প্রসেসিং এর সীমাবদ্ধতা এবং তথ্য সঙ্কোচন কিংবা সোর্স কোডিং এ এর বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে তাঁর ধারণা দেন; তখন তিনি বোধয় ধারনাও করতে পারেননি এসবের গাণিতিক প্রকাশ প্রায় হুবুহু তাপগতিবিদ্যার এই ক্ল্যাসিকাল এন্ট্রপির সাথে মিলে যাবে। যাইহোক সবকিছুই ঘুরে ফিরে সব পরমাণু এবং চার্জে এবং সবশেষে তরঙ্গে ফিরে আসে 😕
মনে হয় রিলেটিভিটির মতই এন্ট্রপিও সার্বজনিন শব্দ… সরাসরি এনালজি ছাড়া জ্ঞানের জগতের আরও অনেক জায়গাতেই এই কনসেপ্ট ব্যবহার করা যায় 😕
@আল্লাচালাইনা,
বানিয়ে বানিয়ে কথার কথা এন্ট্রোপীর মান শূন্য এমনিতেই লিখলাম আপনিও তাত্ত্বিক ব্যাখ্য চমৎকারভাবে দিয়ে দিলেন ! BVR – Beyond Visual range মহাবিশ্বের ক্যালোরিমেট্রি নির্নয় করা কিন্তু একটা বিরাট চ্যালেন্জ ! যহোক , আপনার চমৎকার বিশ্লেষন ইদানিং তেমন একটা দেখিনা মুক্তমনায় । আজকাল Googlophile আরা Wikipedophile – দের কপি পেস্ট Banglography পড়েই সন্তোষ্ট থাকতে হয়। :))
@সংশপ্তক,
হা হা 😀 নিকের শেষে ” া” দেখে সবাই মনে করে এটা একটা মেয়ের নিক। “সংবাদিকা” একটি ক্লিব বিশেষ্য। আর নিশ্চিত ভাবে আমার শরীরে এস্ট্রোজেন থেকে টেস্টোস্টোরনের মাত্রা অনেক বেশি।
আমি ততটা ভালো বুঝিনা। বুঝলে মৌলিক বিজ্ঞানের কোন ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করার চেস্টা করতাম। ল্যাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা, নবম শ্রেণীতে উঠলে সবারই কম বেশি হয়ে যায়।
আমার মনে হয় গণিতে “০” ইচ্ছামত ব্যবহার করা যায়না কিংবা নিয়ম নেই, যেমন ভাগ করার ক্ষেত্রে নিয়ম নেই তেমনি গুন করার ক্ষেত্রেও নেই; যোগ-বিয়োগেও এটা বাহুল্য 😕 । যদিও উচ্চতর রসায়নের ছাত্র নই, তবে আমার মনে হয় এর বিভিন্ন সমীকরণের হিসেবের সময়ও (যেহেতু প্রসঙ্গ এস্ট্রোজেন) অবস্থার তাপমাত্রা ০K ধরা হয়না।
তবে ভবিষ্যতে কি হয় কে জানে – সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন, পরিবর্তন কিংবা বাতিল 😕 এজন্যই সবসময়ই বিশ্বাস করি প্রতি কালের সমসাময়িক বিজ্ঞানকে মহাকালের সাপক্ষে পূর্ন স্ট্যান্ডার্ড মনে করা উচিৎ নয়।
@সংবাদিকা,
কৌতুহল হচ্ছে । “সংবাদিকা” শব্দটা তৎসম , অর্ধ তৎসম না তদ্ভব ? তৎসম হলে দেবনগরী বানানটা দেয়া যাবে ?
আমি অবশ্য প্রথমে “সংবাদিকা” বানানটায় সিংহলী ধারায় যেভাবে তৎসম শব্দ লেখা হয় সেটা বুঝেছিলাম । পরে লক্ষ্য করলাম যে তাহলে ‘সং’ না হয়ে ‘সাং’ হত। এটা কি সংগীতের সংবাদী – বিবাদী জাতীয় কিছু ?
@সংশপ্তক,
দুঃখিত, এই শব্দের উৎপত্তিগত ব্যাপারটা আমার জানা নেই।
@অভিজিৎ,
“সমাজ বিজ্ঞান” কি আদৌ বিজ্ঞান ? নাকি সমাজ নিয়ে চর্চাকারীরা নিজেদের ‘বিজ্ঞানী’দের দলভুক্ত হওয়ার বাসনায় এই নামকরণ ? তাহলে ধর্মচর্চাকারীরা নিজেদের “ধর্মবিজ্ঞানী” বলে অভিহিত করলে আপত্তি থাকার কথা নয়। আপনার মতামত জানতে উৎসুক রইলাম।
@মিয়া সাহেব,
এই প্রশ্নের জবাব জানতে হলে আগে আসলে বিজ্ঞান কি তা পরিস্কার ভাবে জানা দরকার।
যেকোন বিষয় সম্পর্কে নির্ভুল(যতটুকু সম্ভব) ধারনা লাভের ক্ষেত্রে বিষয়টিকে সংগায়িত করার জন্য যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তথ্য সংগ্রহ, তার পর্যালোচনা এবং উপসংহার টানার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরন করা হয় তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আর প্রাপ্ত জ্ঞানই হচ্ছে উক্ত বিষয়ের উপর প্রাপ্ত বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞান যাকিনা যুক্তির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
এই পদ্ধতি যেমন বিজ্ঞানের রানী গনিতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি সত্য “সামাজিক বিজ্ঞান” এর ক্ষেত্রেও।
তবে পার্থক্যটা গোড়াতে, ২+২=৪, এটা সর্বজনীন সত্য যদিনা এর মাঝে অন্য কোনো শর্ত যুক্ত থাকে। কিন্তু আপনি কলা খেতে খুব ভালোবাসেন বলে যে এক বৈঠকে দুই হালি কলা সাবাড় করার পরে আরো একটা খেতে চাইবেন তা কিন্তু না। আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে মন চাইল আরো এক ঘন্টা ঘুমাই, প্রতিদিনই কি তা হবে?
কলা বলে আমরা যে ফিল্ডকে জানি তার মূল আসপেক্ট হচ্ছে আপনি কখনোই পুর্নাংগ নিখুত তথাদি সংগ্রহ করতে পারবোনা আর পারলেও তা ব্যবহার করে ২+২=৪ এইরকম নিখুত প্রেডিকশন/ফোরকাস্ট সম্ভব নয়। কিন্তু এই ফিল্ডের যত প্রতিষ্ঠিত থিওরি আছে তা কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন করেই প্রাপ্ত।
যেকোন বিষয়ে সম্পর্কে একটা/কিছু কথা যদি যুক্তির কাঠগড়া টিকে তবেই তা বিজ্ঞান।বিজ্ঞান নাকি কলা(arts) এই তর্ক খোদ গনিতকে নিয়েও আছে। বর্তমানে কলা/ সামাজিক বিজ্ঞানের কিছু কিছু ফিল্ডে ওতপ্রোতভাবে গনিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যার তত্ত্ব ব্যবহার করা হচ্ছে যাকিনা “কলা” নামক ফিল্ডকে প্রতিনিয়ত আরো শুদ্ধতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এইটাই মূল জ্ঞান অন্বেষার মূল উদ্দেশ্য।
বিজ্ঞানী বলতে আপনি ঠিক কি বুঝাচ্ছেন আমি জানিনা তবে sociology, anthropology, psychology, economics, law এইসব ক্ষেত্রের মানুষগুলোর নিজস্ব পরিচয় আছে। গনিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যার এবং প্রকৌশলবিদ্যার মানুষ না হলে যে কেউ বিজ্ঞানী(আপনার মতে অবশ্যই এমন কেউ যে এমনই বিশেষ যে তার আসে পাশের সব শেষ) না এই কথাটা ভূল, মাত্রাটা জ্ঞানীরা ঠিক করবেন।
ভুল। ধর্ম, যা যুক্তিতর্কতো অনেক দুরের কথা, পাঁচ বছরের বাচ্চার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনা, এইটা তো বিশেষ জ্ঞান ইতিহাসের পাতায় যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে স্থান লাভ করে নিয়েছে। বিশেষ জ্ঞান তা কখনো ছিলনা এবং হবে কিনা তা নির্ভর করবে যেসকল ডিগ্রীধারী ****(গালি দিলাম) শুধুমাত্র সমাজে নিজেদেরকে একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে যা ছাড়া তাদের কোন মূল্যই নাই দুই একটা সনদ ছাড়া, তাদেরকে সমাজের প্রগতিশীলেরা নাস্তানাবুদ করে তার উপর। এই শ্রেনী সমাজে ধর্মের ব্যাপক প্রসারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী প্যারামিটার হিসেবে কাজ করে। ৭১ এর জামায়াত আর বর্তমানে এদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
অধ্যাপক মীজান রহমানের সাথে একই ব্লগে ব্লগিং করি জেনে গর্বিত বোধ করছি। রিভিউ পোস্ট যে এত বড় হতে পারে আপনার লেখা না দেখলে বুঝতাম না। 🙂
কথাটা খুবই সত্যি। এইযে দেখেন প্রমান। আপনার সমীকরণে আপনি প্রমান করেছেন যে
a = b = 0.
সমীকরণ ৪ কে যদি আমরা আবার সলভ করি তাহলে আমরা পাই,
∴ (a+b)(a-b) = a(a-b) …………………. ( সমীকরণ ৪)
=> (a+b)(a-b) / (a-b) = a
=> (a+b)(a-b) / 0 = a
=> ∞ = 0
:))
@হোরাস,
হাঃ হাঃ … দেখেন আপনের আদরের ছাগালাপী বন্ধুরা এই প্রমাণ ঈশ্বরের অস্তিত্বের ক্ষেত্রেও দেয়া শুরু করবে।
বড়ই মজা পাইলাম লেখাটা পইড়া ।
(Y) (F)
আমার চিন্তায় আসীমের সাথে শূন্য থেকে এক এর সম্পর্ক বেশি। 🙂
ধাঁধাটি বেশ কমন…… হাইস্কুলের প্রায়ই এমন ধাঁধা নিয়ে মজা করা হত। তাছাড়া এত দূরে গিয়ে শূন্য দিয়ে ভাগ করার আগেই; বর্গ এর কারণে প্রথমেই + এবং – নিয়ে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি করা যায়।
আমি স্কুলে area কে ক্ষেত্রফল / আয়তন পড়লেও volume কে ঘনত্ব হিসেবেই পেয়েছি।
এই বঙ্গানুবাদ এবং উচ্চারণ ব্যাপারটি পড়ে, আমার মনে পরে গেল বাংলাদেশের কিছু সার্বজনিন ভুল বঙ্গানুবাদ এবং উচ্চারণ। ৭১ এর পর পর কে বা কারা “তলাবিহীন ঝুড়ি” শব্দগুচ্ছটির বহুল প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন; যেই ঘটাক তার/তাদের বোধয় ইংরেজী bottomless basket অথবা basket case বাগধারাটির সাথে পরিচয় ছিলনা। ঙ,ঞ,ণ এসবের সঠিক উচ্চারণ হয়ত অনেকরই জানা থাকেনা। সবচাইতে মজার ব্যাপার engineer কেউ যদি এঞ্জিনিয়ার উচ্চারণ করেন সবাই মনে করবেন তার উচ্চারনে সমস্যা; abbreviation যথেচ্ছ উল্টো ব্যবহার সম্পর্কে না বলাই ভালো। সবচাইতে মারাত্মক ব্যাপার হল natural logarithm (ln) এর ln কে গণিতের অনেক রথী মহারথী “লন” বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
রাস্ট্রীয়ভাবেই এর জন্য একবার বিব্রত হতে হয়েছিল। পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্তাব্যাক্তিরা বুঝতেই পারেননি “সুকর্নপুত্রী” তাঁর নাম নয়, বাহাসা ইন্দোনেশিয়াতে তাকে এভাবে পরিচয় দেওয়া হয় সুকর্নের কন্যা হিসেবে। বাংলাদেশে তাঁর সরকারী সফরের সময় সব জায়গায় প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্নপুত্রী লেখা হয়/উল্লেখ করা হয়; পরে মেঘবতীর আপত্তিতে “সুকর্নপুত্রী” বাদ দেওয়া হয়।
তবে এটাকে খুব বেশি দোষের বলাটাও অন্যায় হবে। বিদেশী উচ্চারণ কঠিন হলে সব ভাষাতেই কম বেশি তা সুবিধাজনক ভাবে নিজ মত করে নেওয়া হয়। rendezvous এর মূল ফরাসি উচ্চারণ কয়জন ইংরেজ সঠিকভাবে করতে পারবে। 😉
জ্ঞান আসলেই চির বহমান। প্রতিটি নতুন আবিষ্কার কিংবা উদ্ভাবনের পেছনে পূর্ববর্তী অনেক আবিষ্কার কিংবা উদ্ভাবনের অবদান অনস্বীকার্য এমনকি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত না হলেও।
সর্বশেষে, স্টিফেন হকিং এর বইয়ের একটি বাক্য মনে পড়ে গেল। প্রসঙ্গ কথা অথবা প্রথম অনুচ্ছেদে মনে হয় ছিল। এটকে law of popular science book বলতেই এখন আমার ইচ্ছে করছে ।
বিজ্ঞানের যেসব বই সর্বসাধারনের জন্য লিখিত, সেসব বইয়ের ক্ষেত্রে-
“for every equation in the book the readership would be halved……” 🙂
“শূন্য” বইয়ে কয়টি সূত্র ব্যবহার হয়েছে :-s
@সংবাদিকা,
আপনার মন্তব্যে চিন্তার অনেক খোরাক পাওয়া গেল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
তবে একটি ক্ষেত্রে দ্বিমত করছি –
উহু… + এবং – এর ঝামেলা লাগে বর্গমূল বের করার সময় । যেমন 4 এর বর্গমূল +2 কিংবা -2। অনেক সময় অসচেতন হয়ে -2 গোনায় না ধরলে বিপদ হবে নিশ্চিত। তবে বর্গের ক্ষেত্রে এ ধরণের ঝামেলা নেই। আপনি -2 এর বর্গই করুন, আর +2 এর বর্গই করুন, এর উত্তর 4 ই হবে। কারণ, কোন কিছুর বর্গ করলে ধণাত্মক সংখ্যাই পাওয়া যায়। তাই + – এর ক্যাচাল বাদ দেয়া যায় অবলীলায়।
তাই কি? ক্ষেত্রফল আর আয়তন এক নয়। আমরা ত্রিভূজের ক্ষেত্রফল বের করেছি, আর পিরামিডের আয়তন। হ্যা, ঘনত্ব ব্যাপারটাও ছিল। তবে সেটা density বোঝাতে। যেমন, পারদের ঘনত্ব, পানির ঘনত্ব ইত্যাদি।
আপনার পড়াশোনা কি বাংলাদেশে নাকি পশ্চিমবঙ্গে, জানতে পারি কি?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আবারো।
@অভিজিৎ,
আমি কিন্তু ঝামেলা করার কথা বলেছি- সপ্তম শ্রেণীতে এর সঙ্গে প্রথম পরিচয়…… এটা জুনিয়র স্কুলে আসলেই খুব মজার!!!!
a=b=1, let c=(b)^2=(1)^2=1 or -1
=> (b)^2=1×1=1 or -1
=>1=-1 or 1
অথবা
a^2-b^2=a^2-ab
=>1^2 -1^2 = 1^2-(1×1)
=>-(1^2)=-(1)
=>-(-1)=-1 or –(1)=-1
=>1= -1
এভাবে আরও করা যায়
(9+4)^2 = (5 +4)^2
=>3=5
কিংবা আর একটু চিন্তার খোরাক সৃষ্টি করে
if P=-20
p=p
=>-20 = -20
=>16 – 36 = 25 – 45
=>4^2 – 9×4 = 5^2 – 9×5
=>4^2 – 9×4 + 81/4 = 5^2 – 9×5 + 81/4
=>2^2 – 2x2x9/2+ (9/2)2 = 5^2 – 2x5x9/2+ (9/2)^2
=> (4 – 9/2)^2 = (5 – 9/2)^2
=>4 – 9/2 = 5 – 9/2
=>4 = 5
গণিতে 0 দিয়ে ভাগ করার নিয়ম থাকলে দুই পাশে “কাটাকাটি” করার নিয়মও থাকা উচিৎ। এখানে সবগুলোতেই গণিতের কিছু মৌলিক রুলস পাশ কাটানো হয়েছে। এসবের মাধ্যমে আসলে গণিত সম্পর্কে আরও বেশি শেখা যায় এবং আগ্রহ সৃষ্টি হয় যেমন, সামান্য নিয়মের এদিক ওদিক হলেই গণিতে সবকিছুই বৃথা। গণিতে সবকিছুরই লজিক আছে।
“বর্গক্ষেত্রের আয়তন” এর কথা বোধয় অনেক জায়গায় লেখা পেয়েছিলাম আবার “বক্সের আয়তনও” পেয়েছি এজন্য “/” দিয়েছি। আবার “পানির আয়তন” ও পেয়েছি আবার “পানির ঘনত্ব” পেয়েছি।
তবে ঘনবস্তুর ঘনফলের সাথে ঘনত্বের ব্যাপারটা বোধয় গুলিয়ে ফেলেছি। বক্স, কোন কিংবা সিলিন্ডার এর আয়তন কিংবা ঘনফল। তরলের ক্ষেত্রে এটা ঘনত্ব পড়েছিলাম।
আমার স্কুলজীবন বাংলাদেশে কেটেছে।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
@সংবাদিকা,
হ্যা, স্কুলে আমরাও এ ধরণের অনেক ধাঁধা নিয়ে খেলেছি। আসলেই খুব মজার ছিল সেসব দিন।ঙ্কিন্তু যেটা আমি বলছিলাম, খেয়াল করে দেখুন আপনার উদাহরণের অধিকাংশ ফাঁকিগুলোই আসলে বর্গমূল কেন্দ্রিক। যেমন তৃতীয় উদাহরণটায় দেখুন,
=> (4 – 9/2)^2 = (5 – 9/2)^2
এই লাইন পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু এর পরের লাইনেই বর্গমূল করতে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণাত্মক মানটা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। সেজন্যই বলেছি এগুলো গোনায় না ধরলে গোনায় না ধরলে বিপদ হবে নিশ্চিত।
একদম ঠিক!
ও হ্যা, ঘনফল বললে মনে হয় ঠিকাছে।
ধন্যবাদ, আর এখন থেকে লগইন করে মন্তব্য করতে পারেন কিন্তু।
@অভিজিৎ,
হ্যা, স্কুলে আমরাও এ ধরণের অনেক ধাঁধা নিয়ে খেলেছি। আসলেই খুব মজার ছিল সেসব দিন।
স্কুল জীবন… ছোটকাল… 😕 এটাই জীবন 🙂
ধন্যবাদ, আর এখন থেকে লগইন করে মন্তব্য করতে পারেন কিন্তু।
অসংখ্য ধন্যবাদ, মুক্তমনা পরিবারের সকল ব্লগার এবং মডারেটরদের 🙂
@অভিজিৎ,
চমৎকার রিভিউ এমন কি লাউ সমেত 😛 । এক সময় গণিতের মাস্টার ছিলাম আর আমাদের দেশে মাস্টারি পাউয়ার পর অধিকাংশ মাস্টাররা পরাশুনার প্রয়োজন বোধ করে না কারন তাঁরা বিদ্যাদেবীর তিন নম্ব র বাচ্চা হয়ে যায় ফলে তারা যা কয় তাই বিজ্ঞান ।আপনার রিভিউ পইড়া আমার অব্বস্থা অই নাপিতের মতো হইছে যারে শল্যচিকিৎসায় দক্ষতা অর্জনের জন্য ডাক্তারি শিখানো হয়ছিল / :-Y /ভাবতাছি পুরা বইটা পড়লে কি হইব ? :-s
@রতন কুমার সাহা রায়,
বাহ, আপনি এক সময় গণিতের মাষ্টার ছিলেন? তাহলে তো আপনার কাছ থেকে গণিতের উপর লেখা প্রত্যাশা করতেই পারি।
আপনি তো এখন ইউনিকোডে লেখা খুব ভাল মতো রপ্ত করে ফেলেছেন মনে হচ্ছে। লেখা দিয়ে দিন।
@অভিজিৎ,
আপনি আর লোক পাইলেন না দাদা / আমার মতো মাস্টার রা দু চারটা অংক করতে পারে গণিত নিয়ে লিখতে পারেনা / আর তাছাড়া আমি এখন এসব থেকে অনেক দূরে ।অন্য কন সময় সবকিছু জানিয়ে আপনাকে মেইল করব। যাক দাদা সিরিয়াস একটা কথা বলি আমি বিবর্তন এর মতো গণিতেরও একটি আরকাইভ দেখতে চাই মুক্তমনায় । যদিও এখন বাংলাদেশে গণিতের বেশকিছু জনপ্রিয় বই বেরিয়েছে কিন্তু সেগুল যথেষ্ট নয় আমাদের দরকার একদম বেসিক লেভেল থেকে শুরু করে একেবারে বরতমান পর্যন্ত যার ভাষা হবে সাবলীল, বলা হবে গল্পের ঢং এ /
@রতন কুমার সাহা রায়,
আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলাম। আমাদের গণিতের পাঠ্যপুস্তকগুলো (হ্যাঁ, স্কুল পর্যায়ের বইগুলোই) যথেষ্ট ভালো, ইংরেজিতে যাকে বলে rigorous, এবং বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে যে আলোচনা থাকে, তা পড়লেই ০ দিয়ে ভাগ দেয়া সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়তে হয় না। সমস্যাটা আমাদের স্কুলশিক্ষকদের, তারা এইগুলোতে না গিয়ে প্রথমেই ঝাঁপ দিয়ে পড়তেন অনুশীলনীতে।
বোধ করি, গল্পের ঢংএ গণিত শেখা সম্ভব না। গল্পের ঢং এ ধর্মগ্রন্থ লেখা যায় (আসলে ওগুলো গল্পই কী না!), প্রকৃত অর্থে গণিতের বই (যেমন মিজান স্যারের হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ) লিখতে গেলে সমীকরণই লাগবে।
@আকাশ চৌধুরী,
@আকাশ চৌধুরী, বোধ করি, গল্পের ঢংএ গণিত শেখা সম্ভব না। গল্পের ঢং এ ধর্মগ্রন্থ লেখা যায় (আসলে ওগুলো গল্পই কী না!), প্রকৃত অর্থে গণিতের বই (যেমন মিজান স্যারের হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ) লিখতে গেলে সমীকরণই লাগবে।
বধকরি ধর্মগ্রন্থ ছাড়াও অনেক কিছু গল্পের ঢঙ্গে লিখা যায় কারন সব গল্পই ধর্মসংক্রান্ত নয় / আর উপরিউক্ত প্রবন্ধটি যথেষ্ট সাবলীল আমার বিশ্বাস যে কোন পঞ্চম শ্রেণীর বাচ্চাও এটি মজা করে পড়বে । জাফর ইকবাল স্যারের বইসহ আরও কিছু বই আছে জা বাংলাদেশের গনিতভিতি অনেকটা দূর করেছে / কারণ এ বইগুলর উপস্থাপন ভঙ্গি প্রথাগত নয়/ বরং সাবলিল গল্পের ঢঙ্গে বলা / ভাল থাকুন ।
@রতন কুমার সাহা রায়,
মজা করে বলেছি।
উপরোক্ত প্রবন্ধটি একটি গণিতের বইয়ের উপরে করা আলোচনা বলা যায়, গণিত শেখানো এর উদ্দেশ্য নয়।
জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলোকে আমি গণিত বিষয়ক না বলে, গণিতের appetizer বলতে পারি। এবং এ ধরণের বইয়েরও প্রয়োজন আছে নি:সন্দেহে। আমি কিন্তু গণিতের বই বলতে “গণিতের বই”ই বোঝাচ্ছি, যেমন মিজান স্যারের হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ।
সত্যিকার অর্থে গণিত শিখতে গেলে খাতা কলম নিয়েই বসতে হবে। আর উচ্চতর গণিতে abstraction এত বেশি যে আপনি গল্প নিয়ে আসতে চাইলে প্রথমত ধান ভানতে শীবের গীত হয়ে যাবে, দ্বিতীয়ত ভুল বোঝার সম্ভাবনা ব্যাপক।
যেমন জেনেরালাইজড হাইপারজিওমেট্রিক ফাংশনের একদম প্রথম সমীকরণ (জেনেরালাইজড হাইপারজিওমেট্রিক ফাংশনের সংজ্ঞা):
[latex] _pF_q(a;b;z)=\sum _{k=0}^{\infty } \left(a_1\right)_k\ldots \left(a_p\right)_k/\left(b_1\right)_k\ldots \left(b_q\right)_k \left.z^k\right/k! [/latex]
একে আপনি গল্পের ঢং এ বোঝাবেন কেমন করে?
একটানে পড়ে ফেললাম। শুন্যের কারসাজি বেশ ভালই লাগল।
ধন্যবাদ
@অভিজিৎ ,
আপনাকে আসছে টেকনো-সামরিক সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বানানোর প্রস্তাব যথাস্হানে পাঠিয়ে দিয়েছি। আদিল মাহমুদকে ধর্ম বিষয়ক এবং স্বপন মাঝিকে পরিবেশ বিষয়ক উপাদেষ্টা বানানো এক রকম নিশ্চিত। :))
আসলে যাহা শূন্য, তাহাই অসীম। অসীমতা স্হান-কালের এক চরম রহস্যময় অবস্হা। আমি যে ‘অসীম’ সেটা আমি সবসময়ই জানতাম , বিশেষ করে মাউন্ট অলিম্পাসে দেবী এথিনার সান্নিধ্যে থাকার সময় এটা আমার কাছে পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে যায়। আমার সাথে অসীমতার একক দাবীদার মহা-ঈর্ষাকাতর ঈশ্বরের বিরোধের কারণটা এটাই। 🙂
বিদ্যমান মহবিশ্বের অভ্যন্তরে বসে শুন্যের (অথবা অসীমতার) সমীকরণ কাগজে কলমে সম্ভব হলেও পর্যবেক্ষনগতভাবে বাস্তবিক কি সেটা সম্ভব ? এখানে গনিত এবং বিজ্ঞানের মধ্যে কি বিরোধ এক পর্যায়ে দেখা দেবে না ? জীব বিজ্ঞানে জীবের কোষ পর্যায়ের কার্যক্রম শূন্য গ্রাভিটিতে পৌছানোর আগেই বন্ধ হয় যায়। :-s
@সংশপ্তক,
হুমম… কিন্তু লাউ না চাল কুমড়া কোনটা আপনের পছন্দ, এটা তো বললেন না। 🙂
@অভিজিৎ,
জেনারেল এরশাদের যেন কোনটা পছন্দ ? ওনাকে জিজ্ঞেস করি আগে। :-s
@সংশপ্তক,
হাঃ হাঃ …এরশাদ সাহেবের কি লাউ কুমড়ার মত মাচায় ঝুলে যাওয়া জিনিস পছন্দ হবে? উনার তো পছন্দ বরাবরই শুনেছি ডাসা টসটসে ডালিমের মতো ফল। 🙂
(Y)
মিজান রহমানের ‘শূন্য’ নিয়ে লেখাগুলো বেশ উপভোগ্য ছিল। বইটি সংগ্রহ করতে হবে।
সাধারণতঃ জীবদ্দশায় কারো কীর্তি-কর্ম নিয়ে তেমন উচ্চ-বাচ্চ হয় না। মীজান রহমানের কর্ম ও সৃষ্টি- আমাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য অভিজিৎ রায়কে ধন্যবাদ।
লাউ,কদু, চাল কুমড়া বা কুমড়া সংক্রান্ত আলোচনায় দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, সংশপ্তকের বিরুদ্ধে এ এক গভীর ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের দাঁত-ভাঙ্গা জবাব দে’য়া হবে। আমরা অচিরেই দাঁত-ভাঙ্গার কলা( গাছের ফল নয়)-কৌশল জানিয়ে দেব। আপনারা প্রস্তুত হয়ে থাকুন।
আমি আর একটি কথা বলেই বিদায় নেব, আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবো না। বাংলার মানুষ জানে, কেমন করে, ষড়যন্ত্রের নীল-নকশাকারীদের রুখতে হয়। জনগণ রুখে দাঁড়ালে আপনারা পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান।
সংশপ্তক তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে।
সংশপ্তকের চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র।
লাউ বানানোর ষড়যন্ত্র, ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও।
@স্বপন মাঝি,
ঠিক। ষড়যন্ত্রকারীর কালো হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও।
লাউ-সাম্রাজ্যবাদী নিপাত যাক
চাল কুমড়া মুক্তি পাক।
(Y) বই লেখক ও রিভিউ লেখক দুজনকেই!
@রৌরব,
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
বইটি পড়িনি! এখন দুঃখে চুলও ছিঁড়তে পারছিনা অভিজিৎদা! কারণ মাথায় নেই! এই মাত্র বাংলাদেশে খবর পাঠালাম বইটা সংগ্রহ করে পাঠাতে। অধ্যাপক মিজান রহমানকে আপনার মাধ্যমে আগাম ধন্যবাদ। আর আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা মূল্যবান বইটার ইতিবৃত্ত জানাবার জন্যে।
@কেশব অধিকারী,
চেষ্টা করেও অধ্যাপক মীজান রহমানের নামের বানানটা ঠিক করতে পারলামনা, তাই পাল্টা এইটুকু লিখে দুঃখ প্রকাশের বিকল্প রইলো না। বরাবরের মতো সুন্দর উপস্থাপনায় বইটির পরিচয়ের জন্যে অভিজিৎ রায়কে অভিনন্দন। ভালো থাকুন।
@কেশব অধিকারী,
বইটা অতি সত্ত্বর সংগ্রহ করে ফেলুন। পস্তাবেন না নিঃসন্দেহে। চাইকি চুলও গজিয়ে যেতে পারে।
যাহা শূন্য তাহাই যদি এক হয়, যাহা টাক, তাহাই চুল 🙂
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
হ্যাঁ অভিজিৎদা, বইটা সংগ্রহ হয়ে গেছে! এখন আমার হাতে আসার পালা! আর সাথে গানিতিক ভাবে হলেও মাথায় চুল গজিয়ে দেবার জন্যে আপনার মুখে ফুল-চন্দন পরুক!
বিজ্ঞান বা গনিত বিষয়ক বইয়ের এমন ভাল এবং সার্থক রিভিউ পড়তে হলে অবশ্যই মুক্তমনায় আসতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটা পুস্তক সমালোচনা উপহার দেবার জন্যে। মিজান রহমানের ধারাবাহিক লেখা ‘শূন্য’ মুক্তমনায় পড়েছি, তবে পুরা বইটা এখনো সংগ্রহ করতে পারিনি। এই রিভিউয়ের মাধ্যমে তার আরো অনেক লেখা বই সম্পর্কে জানতে পারলাম, অন্যথায় তা জানা হতোনা। লাউয়ের জোকটা ভাল লেগেছে। চাল কুমড়া যে চালে ছাড়াও মাঁচায় হয়, সেটাও জানা গেল ছবি দেখে।
@শাখা নির্ভানা,
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার রিভিউ নয়, আপনারাই মুক্তমনার প্রাণ।
বরাবরের মতই অসাধারণ। আর এই বইটিও আমার হাতে আছে। গত বইমেলাতে কিনেছিলাম। অভিজিৎদার এই নিবন্ধ বইটিকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে নিঃসন্দেহে।
অভিজিৎদা এবং মীজান স্যারের কাছে কৃতজ্ঞতা…….
@কাজি মামুন,
ধন্যবাদ মামুন!
শূন্য সিরিজটি অসাধারন একটি সিরিজ ছিল (৪ পর্বে মনে পড়ে)। পূর্নাংগ বই এ বোধকরি আরো বেশী অংশ যুক্ত হয়েছে।
আর্যভট্ট শূন্যের আবিষ্কারক এমন ধারনা আমারো ছিল। তবে যা মনে হচ্ছে আরবদের কৃতিত্ব ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা করা হচ্ছে, কারন বলাই বাহুল্য। এমনিভাবে……
সংশপ্তকের সমীকরন আমিই অনেক আগে আবিষ্কার করেছিলাম, এভাবে প্রমান হয়ে গেছিলঃ
রিচার্ড ডকিন্স = ব্লগার হোরাস
@আদিল মাহমুদ,
তারো আগে কিন্তু আমি প্রমাণ করেছি:
আলু=আদিল
@রামগড়ুড়ের ছানা,
হে বালক, আজ পৃথিবী থেকে লাউ কদু হোরাস ডকিন্স সব গায়েব হয়ে গেলে কিস্যু হবে না, কিন্তু আলু উধাও হয়ে গেলে পৃথিবীর কি দশা হবে চিন্তা করতে পারো??
@আদিল মাহমুদ,
কার কি হবে বলতে পারি না, তবে আপনার আর রামগড়ুড়ের ছানাের যে আলু পুরি থেকে ডালপুরিতে উত্তোরণ অনিবার্য, তা বলে দেয়া যায়।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার সাধের আলুর দিন শেষ, পড়ুন আলুর বদলে কলা। :))
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কাফের নাছারা ইয়াহুদীদের চিহ্নিত চক্র যে আলুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে সেটা আমি আগে থেকেই জানি, অপব্যাবহার করা হচ্ছে বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানের। আর এর সাথে যোগ দিয়েছে বাংলা ব্লগের চিহ্নিত কিছু পেইড এজেন্ট।
এসব বিদ্বেষ মূলক প্রচারনায় কিছুই হবে না। অ এ অজগর যেমন সত্য তেমনি আ তে আলু এটাও সত্য চির সত্য হয়েই থাকবে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আলুর বদলে কলা
পড়তে গিয়ে দেখলাম এ তো ঠাট্টা নয়, ভয় জাগানিয়া সংবাদ। কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো বেড়ে গেলো। অবশ্য যাদের কপাল নেই, তাদের জন্য এ কোন দুঃসংবাদ নয়, ভাঁজ পড়ার সমস্যাও নেই।
কি করে হয়? বুঝলামনা।
b2 = bb হওয়ার কথা।
তাই নয় কি?
প্রবন্ধটি পড়ে বেশ মজা পেলাম।
আপনার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ গুলী আমার খুব ভাল লাগে।
আপনি কি বলতে পারেন. -*- = + কি করে হয়?
যেমন. -৫*-৫ = +২৫ আবার
৫*৫ = ও +২৫ হয়?
তাহলে তো – ও + একই হয়ে গেল।
তায় নয় কি?
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
ওটা ঠিকি আছে।
হ্যা,
$latex b^2 = b.b$
কিন্তু প্রথমেই বলে দেয়া আছে, $latex b = a = 1$
তাই $latex b$ এর জায়গায় ইচ্ছে করলেই $latex a$ বসানো যায় কিন্তু! তাই,
$latex b^2 = b.b$ কিংবা $latex b^2 = b.a$ কিংবা $latex b^2 = a.a$ সবই লেখা জায়েজ।
সমস্যাটা ওখানে নয়, সমস্যা সমীকরণ ৪ থেকে সমীকরণ ৫ পাওয়ার সময় শূন্য দিয়ে ভাগ করতে হয়েছে। সমস্যাটা আকাশ চৌধুরী, বেঙ্গলেনসিস সহ অনেকেই ধরে ফেলেছেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। (আপনার মন্তব্যগুলো এখন কেন যেন স্প্যামে চলে যাচ্ছে)।
(Y) (F)
লেখাটা অফিসের কাজের ফাঁকে পড়ে ফেললাম। দারুন লাগলো। কিন্তু লাউয়ের চেহারা তো এমন না। এই ছবি হচ্ছে চাল-কুমড়া’র।
@রঞ্জন বর্মন,
আমি তো ভেবেছিলাম লাউ। আপনার কথা শুনে আমারো তো চাল কুমড়া বলেই সন্দেহ হচ্ছে। 🙂
তারপরেও থাক ছবিটা, দিয়া যখন দিছিই …।
@অভিজিৎ,
ছবিটা থাক। তবে লাউয়ের জায়গায় চাল কুমড়া লিখে দেয়া যায়।
শুন্য… করিয়াছ মোরে নগণ্য। এই লেখাটি না পড়লে হয়তো ‘শুন্য’ বইটি কখনো পড়া হত না। কারণ ভার্সিটির বইমেলায় বইটি হাতে নিয়েও রেখে এসেছিলাম। :-Y ধন্যবাদ অভিজিৎদাকে। বইটি পড়া শুরু করলাম।
(a-b) দিয়ে ভাগ দিতে পারবেন না। কারন, a = b অথএব, a – b = 0.
শুন্য দিয়ে কোনো কিছু ভাগ দেয়া যায় না, তাহলে সেটা অসংঙ্গায়িত হয়ে যায়।
সংশপ্তকেরও একই কারনে লাউ হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। 🙂
@বেঙ্গলেনসিস, (Y)
@বেঙ্গলেনসিস,
(Y) (Y) :clap
@বেঙ্গলেনসিস,
হাঃ হাঃ আগেই বোঝা উচিৎ ছিল, এ ধরণের ধাঁধা মুক্তমনায় দিয়ে সুবিধা করা যাবে না।
একেবারে বুলস আই!
a-b = 0, ভাগ করাটাই কি ধাঁধার উত্তর ??
@অগ্নি,
হ্যাঁ!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হেহে লিমিটের অংক করার সময় আমাদের শিখানো হয়েছিল L’Hospital রুল প্রয়োগ করে “অসুস্থ” ফাংশনকে লিমিট বের করার জন্য “সুস্থ” করতে হয় 😛
@পৃথ্বী,
😀
অনবদ্য লেখা। একটানে পড়ে ফেললাম। মননশীল বইয়ের এমন চমৎকার সব রিভিউ শুধু মুক্তমনাতেই পাই।
ভরের আপেক্ষিকতা নিয়ে দারুণ সব রিডিং ম্যাটেরিয়ালের সন্ধান দেওয়ায় ধন্যবাদ। অধ্যাপক মীজান রহমান সম্পর্কেও জানা হলো অনেক কিছু।
আমার দেখি রিলেটিভিটি নিয়ে পড়তে হবে নতুন করে। বেইসার, ফাইনম্যানের লেকচারস এসব পড়েই যা শিখেছিলাম। রেস্ট ম্যাসতো শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গনে যেটা হয়। এসব নিয়ে কিছু প্রশ্ন আসছে মাথায়। দেখি ‘ইনভ্যারিয়েন্ট ম্যাস’ নিয়ে একটু পড়াশুনা করে নিই আগে।
@তানভীরুল ইসলাম,
হ্যা, রিলেটিভিটির ব্যাপারে আমারো নতুন করে চোখ বলাতে হয়েছে আবারো। সেই ইউভার্সিটি লেভেলে কোর্স করার পর ফর্মুলাগুলোতে চোখ বোলানো হয়নি। আবার বোলাতে হল। ম্যাসের ব্যাপারটা সত্যই ইণ্টারেস্টিং। এখনো যে সব পরিষ্কার হয়েছে তা নয়। আপনি যেহেতু পদার্থবিজ্ঞানের লোক, আপনি আর কিছু ক্লু দিতে পারবেন। ভাল কিছু পেলে জানাইয়েন।
a-b=0; কোন কিছুকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে এরকম হতবুদ্ধিকর অবস্থা হতে পারে!
যেমনঃ ০=০
বা, ০*১০০০০০০০=০*১
সুতরাং, ১০০০০০০০=১ :-s
@ব্রুনো,
ঠিক! শূন্যের লীলা বোঝা বড় ভার ! 🙂
আগেই একটা ডিসক্লেইমার দিয়ে দেই। লেখার শেষে ধাঁধায় সংশপ্তককে লাউ প্রমাণ করার ব্যাপারটা কিন্তু স্রেফ তামাসা। উনি আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন ব্লগার, এবং উনার লেখা আমি সবসময়ই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। উনি ব্যাপারটা ফাজলামো হিসেবে নিবেন আশা করছি। (এবং চাইলে আমাকে কুমড়া প্রমাণ করে দিতে পারেন :)) )
@অভিজিৎ,
হা হা হা এক ধাক্কায় সংশপ্তক গায়েবে :))
মজাদার সব মন্তব্যগুলোর বন্যা শুরু হোল বলে।
@কাজী রহমান,
কিন্তু সংশপ্তকের তো দেখা পাচ্ছি না। গেলেন কই? মাইণ্ড খাইলেন নাকি?
আসলে উনারে না বানায় আদিল মাহমুদরে বরং লাউ বানানো উচিৎ ছিল।
@অভিজিৎ,
দুঁদে গোয়েন্দা হয়ত বা লেখনি ব্যবচ্ছেদে ব্যস্ত। শেষ হলেই গায়েব থেকে দৃশ্যমান হবে :))
@কাজী রহমান,
হাঃ হাঃ, না দেখসে। ভয়ে ভয়ে আছিলাম – মাইণ্ড খাইসিলেন কিনা। খায় নাই দেইখা আশ্বস্ত হইয়া একটা প্রশ্ন করছি। মনে আছে না ছোট বেলায় ঈদের সময় প্রশ্ন করা হইতো – ‘ভাইজান এইবার গরু না খাসি?’ এই টাইপের প্রশ্ন করছি – লাউ না চাল কুমড়া।
দেখি গোয়েন্দা কোনটাতে কোপ দেয়! :))
@অভিজিৎ,
হা হা হা এখন দেখছি সাদা মার্টিনিতে বুধের বরফ মিশিয়ে লম্বা টান মেরে দুঁদে গোয়েন্দা ইশ্বর বনে গেছেন :))
ভাই, আপনি প্রথমে বললেন a=b, এরপর এক জায়গায় a-b=0 দিয়ে ভাগ দিলেন সমীকরণ ৪ কে, এইটা কি করা যায়? সেই কতকাল আগেই তো পড়েছি আমরা, কোন সমীকরণের দুইপক্ষকে ০ দ্বারা ভাগ করা allowed mathematical operation না।
এক বন্ধুকে থিসিসের কাজে সাহায্য করতে গিয়ে মিজান রহমানের হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ বইখানি ঘাঁটতে হয়েছিল। বইটি একটি সোনার খনি, হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজের উপর এর চাইতে ভালো বই হয় না। গর্ববোধ করছি এমন একটি বইয়ের রচয়িতা একজন বাংলাদেশি জেনে।
@আকাশ চৌধুরী,
ঠিক ধরেছেন।
(Y)