ঈশ্বর আসমানে আছে, ঈশ্বর জমিনেও আছে। ঈশ্বর স্বর্গে আছে, ঈশ্বর মর্ত্যেও আছে। যদিও ঈশ্বর নেই, তারপরেও তার রাজত্বের অবসান ঘটে নি। কারণ অস্তিত্বহীন এই ঈশ্বরকে এখনো যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
মানুষের চিন্তায় ঈশ্বর বাসা বেঁধেছিলো সুখ বা অসুখের মতো। কারণ নাকি মানুষ ছিলো অসহায়। তার প্রয়োজন ছিলো একজন সর্বশক্তিমানের সহায়তা।
আমাদের অনেকে ধীরে ধীরে বুঝে উঠত শুরু করে, ঈশ্বর নেই। কোনো কেন্দ্রীয় শক্তি নেই যে সবকিছুর দেখভাল করবে। আমাদের মধ্যে তারা ভাগ্যবান, যারা বুঝে গিয়েছে যে, নিজের দেখভাল নিজেকেই করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিচার বিবেচনা করে। যাদুর মতো আপনাআপনি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে না।
আমাদের মধ্যে তারা অভাগা, যারা তা বুঝতে পারে নি, এখনো নির্ভর করে কল্পিত, আস্থাপোষিত উচ্চশক্তির উপর, যে তার দেখভাল করবে। অদৃষ্টের উপর নির্ভর করে তারা অলস বসে থাকার বদ-অভ্যাস করে ফেলেছে।
আর আমাদের মধ্যে তারা সবচেয়ে দুষ্ট-ক্ষতিকর, যারা দুর্ভাগাদের এই সরল-বিশ্বাসকে ব্যবহার করে, ঈশ্বরের প্রতিনিধি সাজে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়, ঈশ্বরের নামে নিজস্ব খেয়ালখুশির তাণ্ডব চালায়।
আমরা বিশ্ব-ঈশ্বরের থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছি। অনেকে আমরা ভাবছি এটাই শেষ যুদ্ধ। বিশ্ব-ঈশ্বরের দুষ্টদের প্রতিহত করলে, তাকে বিশ্বাসী দুর্ভাগাদের চোখ খুলে দিলে মুক্তির উদার দরজা পৃথিবীর সবপ্রান্তে উন্মুক্ত হবে।
কিন্তু যুদ্ধটা একটা মাত্র “বিশ্ব”-ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নয়। মানুষের মনে যে উচ্চতর শক্তির প্রতি অ-যাচিত আস্থাপোষণের অভ্যাস, সেটা কেবল বিশ্ব-ঈশ্বরে গিয়েই শেষ হয়ে যায় নি।
আমাদের মধ্যে গুরু অংশ এখনো অন্যান্য নানা আকারের উচ্চতর শক্তির উপর অ-যাচিতভাবে আস্থাবান। তাদের মধ্যে বিশ্ব-ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা আছে, তাদের মধ্যে বিশ্ব-ঈশ্বরে অবিশ্বাসীরাও আছে।
বিশ্ব-ঈশ্বরে অবিশ্বাসীরা বুঝে গিয়েছিলো যে বিশ্ব-ঈশ্বর আসলে শক্তিহীন। কিন্তু তাদের অনেকে তারপরেও অন্যান্য শক্তিমানের উপর তাদের আস্থাকে প্রশ্ন করে উঠতে শিখেনি। মর্ত্যের শক্তিমানদের উপর তাদের আস্থাকে তারা যাচাই করে নিচ্ছে না। তারা তাদের রাষ্ট্রের উপর আস্থাশীল। তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রজোটের উপর আস্থাশীল। রাষ্ট্রের শক্তিকে অস্তিত্বহীন ভাবার জো নেই। এই যুগে, এবং আগামী যুগে এই রাষ্ট্ররাই ঈশ্বর।
বিশ্ব-ঈশ্বরের ব্যাপারে মহত্ব, কল্যাণকামিতা কল্পনা করা হতো। কিন্তু বিশ্ব-ঈশ্বরের নিজেরই অস্তিত্ব নেই। রাষ্ট্র-ঈশ্বরেরও মহত্ব ও কল্যাণকামিতা কল্পনা করা হয়, দাবি করা হয়। কিন্তু সমস্যা হলো – সে অস্তিত্ববানও। তাই এক অর্থে রাষ্ট্র-ঈশ্বর বিশ্ব-ঈশ্বরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব-ঈশ্বরের নাম ভাঙিয়ে যারা খাচ্ছে, সেই দুষ্টদের প্রতিহত করা আগামিতে আরও আরও সহজ হয়ে উঠবে, কারণ তাদের বিশ্ব-ঈশ্বরের কোনো শক্তি নেই, তার কোনো অস্তিত্ব নেই। সবচেয়ে কঠিন হলো রাষ্ট্র-ঈশ্বরের নাম ভাঙিয়ে খাওয়া দুষ্টদের দমন, কারণ রাষ্ট্র-ঈশ্বর বিরাজ করে, এই পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি মাটিতে, সর্বত্র। সবখানে তার অবাধ নিয়ন্ত্রণ কায়েম আছে। সে-ই হচ্ছে এই যুগের সর্ববিরাজমান ঈশ্বর।
সবাই যখন এক কল্পিত বিশ্ব-ঈশ্বরের বিশ্বাসে বুঁদ ছিলো, অল্প কয়জন বুঝেছিলো, এটা অ-যাচিত, অলীক, অনর্থক। তারা যখন সেটা বলতে শুরু করে, তখন অধিকাংশ অন্যরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলো। কারণ তখন বিশ্ব-ঈশ্বরের বিশ্বাস সর্বত্র প্রচলিত। মানুষের মনে তার বাস। সেই বিশ্ব-ঈশ্বরের সমাজকাঠামোগত প্রতিনিধি পুরোহিতরা বহাল তবিয়তে মানুষের মনে ছড়ি ঘুরাচ্ছিলো গঞ্জে গঞ্জে। এমন কি রাষ্ট্রনায়ক রাজা কিংবা সম্রাটকেও ভাবা হতো সেই বিশ্ব-ঈশ্বরেরই রাজনৈতিক প্রতিনিধি।
ফলে বিশ্ব-ঈশ্বরবিরোধিতা ছিলো প্রচলিত কাঠামোর বিরুদ্ধাচরণ, ধর্মদ্রোহিতা, সর্বোচ্চ অপরাধ। তাদের মধ্যে যারা এই যুক্তিগুলোর ক্ষুরধার একটু আধটুও অনুভব করতো, তারা দোহাই দিতো প্রচলিত কাঠামোতে বিশৃঙ্খলা না আনার। বিশ্ব-ঈশ্বরের পক্ষের যুক্তিবাদিরা যুক্তি দিতো, যদি বিশ্ব-ঈশ্বর না থাকে, কে বানিয়েছে এই সুষমা, কীভাবে গ্রহ নক্ষত্র নির্দিষ্ট সূত্রে প্রতিনিয়ত প্রদক্ষিণরত? কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিশ্বের সুশৃঙ্খলা টিকে থাকতে পারে সেটা তাদের চিন্তার বাইরে ছিলো। কিন্তু সত্যি কথা, এই সুবিশাল জগতের কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক নেই। কোনো দেখভালকারী নেই। প্রয়োজনও নেই।
আজকের যুগে রাষ্ট্র-ঈশ্বরের প্রতি আস্থা পূর্বের যুগের বিশ্ব-ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যবস্থার মতোই অগাধ। আমরা নির্বিচারে বিশ্বাস করি যে রাষ্ট্রের প্রয়োজন আছে। একটা সীমানার মধ্যে একটা কেন্দ্রীয় শাসক ও সিদ্ধান্তকারীর প্রয়োজন আছে। একে অস্বীকার তো পরের কথা, এর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও যদি প্রশ্ন তোলা হয়, যদি ভাবতে বলা হয়, তখন প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার অল্পই চিন্তাপ্রসূত। এবং সেই প্রতিক্রিয়া আগের দিনের বিশ্ব-ঈশ্বরের ঝাণ্ডাবাহীদের মতোই তীব্র।
রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা বিপজ্জনক, রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা প্রচলিত কাঠামোর বিরুদ্ধাচরণ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সর্বোচ্চ অপরাধ। যারা রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার বৈধতা একটু আধটু অনুভব করেন, তারা দোহাই দেন প্রচলিত কাঠামোতে বিশৃঙ্খলা না আনার। আর রাষ্ট্র-ঈশ্বরের পক্ষের যুক্তিবাদিরা যুক্তি দেন, যদি রাষ্ট্র-ঈশ্বর না থাকে, কীভাবে টিকে থাকবে মানুষের সুশৃঙ্খলা, ন্যায়-বিচার? কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিশ্বের সুশৃঙ্খলা যেমন অবিশ্বাস্য ও প্রশ্নাতীত ছিলো, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মানুষের সুশৃঙ্খলা টিকে থাকার কথা ভাবাও এই যুগের মানুষের কাছে তেমনি এখনো অবিশ্বাস্য, চিন্তার অতীত।
আমাদের রাষ্ট্র-ঈশ্বরে বিশ্বাসের পেছনে অল্পই যুক্তি কাজ করে। এটা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে গৃহীত হয়ে যায় ছোটবেলায়, স্কুলে, পি.টি.তে, সামাজিক বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে। রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে শিশুকালেই বিচার-বিবেচনার বাইরে আমাদের যেভাবে গ্রহণ করানো হয়, বড় হয়ে তাতে আমরা ভাণ করতে থাকি যে আমরা জানিই কেনো আমরা রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে মানি। কিন্তু একটু ভাবতে গেলে দেখা যায়, আমরা মানি কারণ ছোটবেলা থেকেই আমাদের মানতে শেখানো হয়েছে।
বড় হয়ে রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে বটে। কিন্তু সেটা বিপজ্জনক। বিশ্ব-ঈশ্বরকে প্রশ্ন করার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক।
বিশ্ব-ঈশ্বরের প্রভাব এ যুগে ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে। বিশ্ব-ঈশ্বরের শাসন এখন আর কায়েম নেই। ফলে এর সাথে কেবল মানসিক ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামাজিক লড়াই করতে হয়। সমাজ একটু ভ্রু কঁুচকে বিষয়টা এড়িয়ে যায়। হুমায়ুন আজাদের মতো পরিণতি ঘটাতে তারা অল্পই আসে।
অন্যদিকে রাষ্ট্র-ঈশ্বরের বিপরীতে চিন্তা করাটা তার চেয়ে অনেক বেশি দুরূহ। কারণ রাষ্ট্র-ঈশ্বরের শাসন প্রতিনিয়ত কায়েম আছে। প্রতি মুহূর্তে, রাস্তাঘাটে, জীবনযাত্রায় তার শাসনের ভেতরে আমাদের থাকতে হচ্ছে। ফলে এর বিরুদ্ধে মানসিক লড়াই করাটাও বিপজ্জনক। রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে মুখে অস্বীকার করাও মহাপাপ, তার শাসনের বিরুদ্ধাচরণ করতে যাওয়া তো পরের কথা।
ফলে আমাদের মধ্যে চিন্তাশীল যারা, তাদের অধিকাংশই রাষ্ট্র-ঈশ্বরের অস্তিত্বের পেছনে যুক্তি খোঁজাটাই সহজসাধ্য বলে উপলব্ধি করে। তারা নানান উপায়ে নিজেকে ও অন্যকে বোঝায়, কেনো রাষ্ট্র-ঈশ্বর দরকার। কেনো সে মহৎ ও কল্যাণকামী।
বিশ্ব-ঈশ্বর আছে ভাবলেই যেমন সে অস্তিত্বশীল হয়ে ওঠে না, রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে কল্যাণকামী ভাবলেও সে কল্যাণময় হয়ে ওঠে না। সেটা আমাদের অনেকে উপলব্ধিও করি। ফলে আমরা বলি যে অমুক উপায়ে রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে কল্যাণকামী করে তুলতে হবে, তমুক উপায়ে সে সত্যি সত্যি মহৎ মহানুভব হয়ে উঠবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র-ঈশ্বর এই মুহূর্তে যে খুব সুবিধার অবস্থায় নেই, সেটা আমরাও উপলব্ধি করি, কিন্তু সেটার সমাধানে আমরা কেবল ভাবি তার গায়ে নানা জোড়াতালি লাগানোর কথা। কিন্তু এই কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতিষ্ঠানটি যে কিছু দুষ্টলোক বিভিন্ন ঈশ্বরের নামে কায়েম করেছিলো তাদের নিজের লাভ ও লোভের জন্যে, আমরা সেই প্রাচীন কাঠামোটাকেই যে এখন নতুনরূপে কল্যাণময় হিসেবে ভেবে নিয়ে গ্রহণ করার চেষ্টা করছি, সেটা আমাদের অগোচরে থেকে যাচ্ছে। এটা কেবলই একটা বয়ে আসা প্রথা, একটা মাজার, একটা বিধ্বস্ত প্রাচীন অকেজো কারখানা। সেটাকে সাজিয়ে, সারিয়ে আমরা চলার চেষ্টা করছি। তাকে ছাড়া চিন্তা করা আমাদের জন্যে রীতিমত নিষিদ্ধ।
কিন্তু রাষ্ট্র-ঈশ্বরটা বিশ্ব-ঈশ্বরের চেয়ে কোনো অংশে একটু কম বায়বীয় কি? কে এই রাষ্ট্র-ঈশ্বর? কোথায় তাকে দেখতে পাওয়া যাবে? সেও বিশ্ব-ঈশ্বরের মতোই বাস করে মানুষের মনে। দুর্ভাগারা নিজের বিচার বিবেচনাকে ত্যাগ করে অলস হয়ে এই রাষ্ট্র-ঈশ্বরের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করে। আর দুষ্টরা মানুষের বিশ্বাসের সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করে নিজেদের খেয়ালখুশির রাজত্ব কায়েম করে। কোথাও ভয় দেখিয়ে। কোথাও মন ভুলিয়ে। কোথাও তাদেরই “ন্যায্য” গণ-প্রতিনিধি হবার নাম করে। কিন্তু একবার যদি মানুষের ভেতর থেকে রাষ্ট্র-ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস উঠে যায়, তাহলে তাদের এই রাজত্বের বিনাশ ঘটবে। তাই তারা “জনকল্যাণ” করে, সাহায্য অনুগ্রহ করে দুর্ভাগাদের চিন্তার আলস্যকে টিকিয়ে রাখে। রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে খুঁজতে গেলে পাবেন কেবল কিছু আমলা, কিছু সৈন্য, কিছু পুলিশ, কিছু নেতা। পাবেন কেবল মানুষ। আর আমরা কিনা ভাবছি, এই কিছু মানুষদের সার্বিক শাসনে না থাকলে সুশৃঙ্খলা বজায় থাকবে না? এই দোহাই দিয়ে আমরা একটা প্রাচীন মাজারকে নানা রঙে সাজিয়ে, একটা বিধ্বস্ত অকেজো কারখানাকে নানা জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখছি।
রাষ্ট্র-ঈশ্বরের নামে যারা রাজত্ব কায়েম করেছে, সেই দুষ্টরা এখন রাষ্ট্র-ঈশ্বরের কল্যাণত্ব প্রমাণ করার জন্যে তাকে কল্যাণকামী করে তুলতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু তার বিনিময়ে তারা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে চাচ্ছে, সফলভাবে কল্যাণ যাতে করতে পারে এই দোহাইতে। ফলে রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে মেনে নিয়ে তার সাথে দরকষাকষি করার মুনাফা আমাদের জন্যে সীমিত। সেই দরকষাকষিতে একটা ন্যায্যতা আদায় করতে হচ্ছে আরেকটা ন্যায্যতাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার বিনিময়ে। রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে যখন আমরা কল্যাণকামী হতে বলছি, তখন দুষ্টেরা বলছে – তাহলে রাষ্ট্র-ঈশ্বরের ক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করতে দাও, ক্ষমতা ছাড়া কল্যাণ কীভাবে করবো? বেশি ক্ষমতা পেলে রাষ্ট্র-ঈশ্বর বেশি কল্যাণকামী হবে কিনা, তার প্রমাণ তো আমাদের হাতে নেই, তবে সেই ক্ষমতা যে বাস্তবে কিছু আমলা, সৈন্য, পুলিশ আর নেতার মাঝে বণ্টিত হয়, আমাদের স্বাধীনতা খর্বিত হয়, তা নিয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে?
রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে স্বতঃসিদ্ধ হিসবে মেনে নিয়ে তার সাথে দরকষাকষি অনেক হয়েছে। সময় এসেছে এর অস্তিত্ব, এর প্রয়োজনীয়তাকে প্রশ্ন করার। কেনো বয়ে আসা এই কাঠামোকে বহন করা প্রয়োজন?
যারা বর্তমানের দোহাই দিয়ে, শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে এই প্রশ্ন করাকেই সমালোচনা করবেন, তারা হাজার বছর আগের বিরল-অবিশ্বাস ও নাস্তিকতার সমালোচকদের সাথে গলা জড়াজড়ি করে আরামেই নিশ্চয়ই থাকতে পারবেন।
আমি নাস্তিক। আমি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করি। আমার কোন প্রভু নেই। কোনো বিশ্ব প্রভুও নেই। কোনো রাষ্ট্র প্রভুও নেই। আমি কারো-ই বান্দা নই। এদের কারও মহত্বেই আমি অ-যাচিত আস্থা পোষণ করি না। বরং এদেরকে আমি প্রশ্ন করি।
বিশ্ব-ঈশ্বরকে প্রশ্ন করাটা প্রচলিত হয়ে উঠলেও রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে প্রশ্ন করাটা খুব বিরল থাকবে আরো কিছুকাল। রাষ্ট্রের অস্ত্রধারী শক্তিমানেরা বিরুদ্ধাচরণকারীদের বন্দী করবে, প্রশ্নকারীদের নাজেহাল করবে। আর অন্যেরা দেবে বর্তমান কালের দোহাই।
বর্তমান কালের দোহাই তো আমরা না চাইলেও মেনে নিচ্ছি। রাষ্ট্র সর্ববিরাজমান। ছোটবেলা থেকে কিশোরবেলা, বড়বেলা, সমস্ত জীবন জুড়ে, বুঝে ওঠার আগে থেকে সে ছিলো। বুঝে ওঠার পরেও সে আছে। তার কাঠামোর বিরুদ্ধাচরণ করা প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু নাস্তিক হিসেবে তাকে প্রশ্ন করারও কি প্রয়োজন নেই? গ্যালিলিও নিশ্চয়ই ধর্ম ও পুরোহিত বেষ্টিত কাঠামোর সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেই তার জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন। শক্তি প্রয়োগের মুখে মান্য করতেও বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু প্রচলিতের বিপক্ষে যে প্রশ্ন তিনি তুলেছিলেন, সেটার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অনস্বীকার্য।
আমরা রাষ্ট্র-ঈশ্বর বেষ্টিত। তার বিরুদ্ধাচরণ আমাদের জন্যে প্রায় অলীক কল্পনা। কিন্তু রাষ্ট্র-ঈশ্বরের দখলদারিত্ব আমাদের চিন্তার জগতে তো নিশ্চয়ই নেই। কোনো কালেই ছিলো না। চিন্তাই একমাত্র রাজ্য, যা মুক্ত, স্বাধীন সার্বভৌম। চাইলে সেখানে আমরা স্বেচ্ছায় পরাধীন হতে পারি, কিন্তু চাইলে সেখানে আমরা প্রশ্নও করতে পারি। চিন্তার জগতে বিরুদ্ধাচরণ করলে কোন ঈশ্বর কীভাবে হানা দেবে? এটা কি তাহলে দুর্ভাগ্য নয়, যে মাত্র গুটিকয়েক নাস্তিকই কেবল রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে প্রশ্ন করে চিন্তা করার সাহস দেখাবে? আর আবার তার চেয়েও অল্প কিছু মানুষ ভাবার সাহস পাবে, যে একদিন আরও বহু বহু মানুষ তাকে প্রশ্ন করতে পারবে? এই অকেজো কারখানা তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হবে? দুষ্ট-ক্ষতিকরেরা চিন্তায়-অলস দুর্ভাগাদের আর খুঁজে পাবে না, যাদের বিশ্বাসকে ভাঙিয়ে তারা রাজত্ব করবে?
যদি চিন্তার জয়যুক্ত হবার কথা থাকে, তাহলে শক্তিপ্রয়োগ নিশ্চয়ই ধীরে ধীরে পরাস্ত হবে। সকল ঈশ্বর ও প্রভুর হাত থেকে, আর তাদেরকে ব্যবহার করে ছড়ি ঘোরানো দুষ্টদের হাত থেকে মানুষ একদিন মুক্ত হয়ে উঠবে। সচেতন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। তারা কোনো উচ্চতর শক্তির আশায় অলস বসে থাকার কথা ভাবতেও চাইবে না। নিজেদের কল্যাণের দায়িত্ব নিজেরাই নেবে। মানুষের মুক্তি, সমাজের কল্যাণ ও ন্যায়পরায়ণতা উঠে আসবে প্রতি দুইটি মানুষের মধ্যকার বিবেচনাপ্রসূত, স্বেচ্ছামূলক ও ন্যায্য আদান প্রদানের ভেতর থেকে। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনো কেন্দ্রীয় “কল্যাণকামী”, “ন্যায়পরায়ণ” প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নয়।
চিন্তার উপর আরোপিত বিধিনিষেধ মুক্তচিন্তাকে ব্যহত করে।ধর্ম এই কাজটাই করতে চায়!!
এনিওয়ে,ভাল লাগল পড়ে।ধন্যবাদ
ঈশ্বর আছে কি নেই তা বড় কথা নয়। তবে মানুষের জ্ঞান ভান্ডার ১০০% পূরন না হওয়া পর্যন্ত, মানে কিছু না কিছু অজানা থেকে গেলে ঈশ্বর বিশ্বাসও থেকে যাবে। কাজেই ঈশ্বর বিশ্বাস বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথেও থেকেই যাচ্ছে এবং যাবে কারন বিজ্ঞানের কোন শেষ বলে কিছু নেই।
রাষ্ট্রের সাথে এর সম্পর্ক অনেক জটিল।
কেউ যখনই দাবী করবেন যে মানুষের বর্তমান বিবর্তনীয় বাস্তবতায় ঈশ্বরগুলোর প্রভাবশূন্য কোন বিশ্ববীক্ষার অস্তিত্ব সম্ভব, তখনই প্রশ্ন আমি তুলবো, সেই বিশ্ববীক্ষার সামগ্রিক রূপরেখাটা কি? সেই ঈশ্বরসমূহবিহীন কোন বিশ্ববীক্ষা গনমানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারবে কি না? গনমানুষের কথা যারা ভাবেন না, তারা এই প্রশ্ন না ই তুলতে পারেন । তবুই এই প্রশ্ন থেকেই যায় । আপাতত তাদেরকে উপেক্ষা করেই এই প্রশ্ন তুললাম ।
রাষ্ট্র-ঈশ্বর ধনীর প্রতিরক্ষায় সর্বদাই নিয়োজিত, রাষ্ট্র -ঈশ্বর মানেই কর্পোরেশনের দাসানুদাস । তৃতীয় বিশ্বে, গরীব যখন রাষ্ট্র- ঈশ্বরের কাছে ঠ্যাঙ্গানি খেয়ে নিরুপায় হয়, তখন তার শেষ ঠাঁই হলো বিশ্ব-ঈশ্বর । অসহায় গরীব তখন বধির বিশ্ব-ঈশ্বরের কাছে জালিমের বিরূদ্ধে ফরিয়াদ করে একটা মানসিক শান্তি লাভ করে । রাষ্ট্র-ঈশ্বর গরীবের কাছে শয়তানতূল্য । শ্রেণীবিভাজনের প্রেক্ষিতে এই ঈশ্বরদের এই পার্থক্যটুকু আলোচনা না করটা এই লেখার আরেকটি অসম্পূর্ণতা । এই আলোচনাটুকুর গুরুত্ব স্বীকার করে নিলে রাষ্ট্র-ঈশ্বর ও বিশ্ব-ঈশ্বর উভয়ের batবাতিলতা নিয়ে aআলাপ বাড়ানো যায় ।
@সলিমুল সিহাব,
তোমার তো উচিত বর্তমান ঈশ্বরবহুল ব্যবস্থাটা নিয়েই প্রশ্নটা করা যে –
” ঈশ্বরবহুল বর্তমান ব্যবস্থা গনমানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারবে কি না?”
“রূপরেখা” মানেই সেই আবার কেন্দ্রীয় চিন্তক, টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ, উচ্চতর শক্তির অস্তিত্ব। রূপরেখা মানেই তো নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু ঈশ্বরবিহীন মানেই কিন্তু বটম-আপ অ্যাপ্রোচ। কোনো একজন বা একটা গোষ্ঠির নির্ধারিত “রূপরেখায়” কিছু ঘটতে যাচ্ছে না, যেহেতু তার ঐশী শক্তিটা নেই সেটা বাস্তবায়নের। অনেকটা বিবর্তনের মতো। আমি আজকে ঠাশ করে সেই পথে চলে যেতে বলছি না। সেটা অনর্থক কথা হবে। কারণ সেটাকে তখন “বাস্তবায়ন” করতে হবে, যেটাও কিনা আবার কেন্দ্রীয় চিন্তক তথা ঐশী intervention. আমি মানুষকে তাদের অন্যান্য অস্তিত্বশীল ঈশ্বরগুলো সম্পর্কে সচেতন করছি বা চিন্তাটা বলা যায় ভাগ করে নিচ্ছি। গণমানুষ তো বিভিন্ন ঈশ্বরের আফিমে বুঁদ। ঈশ্বরহীন ব্যবস্থার সম্ভাবনা তাদের হাতে। ফলে যেহেতু আমি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি না, বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তিত না, তাই ওটার রূপরেখার চিন্তা এমনিতেই অর্থোগনাল। আমরা বরং বর্তমান ব্যবস্থাটার ঈশ্বরত্বগুলো বোঝার চেষ্টা করি। না বুঝে কী কী সুরা পড়ছি, সেটা জানার চেষ্টা করি।
আমার মূল আগ্রহ সম্ভাব্যতা নিয়ে নয়। কিন্তু এখানে প্রুফ অফ বার্ডেনের একটা ঠেলাঠেলি কিন্তু ঘটবে। 🙂 যেমন, অন্যপক্ষ বলবে যে, তুমি আগে দেখাও যে বর্তমান বাস্তবতায় ঈশ্বরবহুল ব্যবস্থা “আবশ্যক”।
@রূপম (ধ্রুব),
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি মস্তিষ্ক উল্টা ট্রান্সলেট করছে 😛
burden of proof বলতে চাইছি।
চিন্তা জাগানিয়া লেখা ।
ঈশ্বরদের রাজনৈতিক মূল্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ । আপনি দুই ধরনের ঈশ্বরের কথা বলেছেন । লেখায় আরেক ধরনের ঈশ্বরের কথা তোলেন নি । ফ্রয়েড পাঠে দেখতে পাই, মানুষের ভেতরে যে পশু প্রবৃত্তি, সেটা বিগত প্রাইমেট জন্মের অবশিষ্ট, এখনো যায় নি পুরোপুরি । এই যে অহিংসার বিশ্ববীক্ষা সারা পৃথিবীতে প্রবলভাবে অস্ত্বিত্বশীল, তবুও কি কারণে হিটলার জাগাতে পারেন কোটি কোটি হায়ানা? তার পরেও হানাহানি, রক্তপাত কম কেন নয়? এগুলো দমন করে রাখতে হলে দরকার মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে হবে । কিসে ভোলাবেন? ফ্রয়েডের ভাগনে এডোয়ার্ড বেনেট এ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন । আমেরিকান সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে কর্পোরেট কালচার যখন তুংগে, তিনি তখন একটা সমাধান দিলেন । এদেরকে ভোগের মধ্যে ভোলানো যেতে পারে । শুরু হলো কনজ্যুমারিজম । এক ব্র্যান্ড গেলো তো, আরেক ব্র্যান্ড এলো । একই ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ভার্সন কাপড় পালটে গেলাও । লাইন লাগাও নারী পন্যের । কেজি দরে বেচো নারী মাংস । ভোগবাদ একটা সমাধান । এভাবে পশ্চিমা বিশ্বে অপেক্ষাকৃত দুর্বল সরকার মানুষকে ব্যস্ত রাখে । এই ভোগবাদও একটা ঈশ্বর । এই ঈশ্বরের নাম দিলাম ভোগবাদ-ঈশ্বর । এই ভোগবাদ ঈশ্বরের অপর নাম শয়তান, যা নবী এন্তন ল্যাভে তার চিন্তা ও এক্টিভিজমে ম্যাটারিয়ালাইজড করেছেন । অপরদিকে, কলোনিয়াল পিরিয়ডে সম্পদের লুটের প্রতিযোগীতায় যারা হেরে গেল, তারা কি করে ভোলাবে? ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্টের পরে প্রাচ্যে চিন্তাশীলতার তেমন বিকাশ ঘটে নি, তাই রাষ্ট্র-ঈশ্বর নিজের অবচেতনে দাঁড়িয়ে গেলেন প্রবল শক্তিশালী হয়ে, কারন ভোলাতে হবে এইসব মানুষ রূপী পশুদের- ভোগে নয়, ভয়ে । যে ঈশ্বর ক্রমেই হয়ে উঠলো দুর্নীতিগ্রস্থ ।
ঈশ্বরদের রাজনৈতিক গুরুত্ব আমার জিনে লেখা আছে ।
@সলিমুল সিহাব,
অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের প্রথম “আলাদা” হয়ে ওঠার একটা ইঙ্গিত ছিলো সম্পূর্ণ অচেনা ব্যক্তির সাথে নিজের মূল্যবান বস্তুটির বিনিময়। সেটা ছিলো অনেকটাই স্বেচ্ছামূলক। এটা মানুষের সময় বাঁচায়, ফলে মানুষ নিজের উৎপাদনের ব্যাপারে আরো দক্ষ হয়। বিনিময়ে লিপ্ত হওয়া সকলেই এতে লাভবান হয়। এটা মানুষকে তার জিনগত হিংস্রতাকে আচরণগতভাবে হ্রাস করতে বাধ্য করে। বিনিময়কারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল হতে শেখায়। ভাষার প্রয়োজন বাড়ে। হিসেবে নিকেশের গণিত প্রকৌশলের প্রয়োজন বাড়ে। ১ লক্ষ বছর আগের কথা। Rational Optimist বইটিতে পড়ছি। এটাকে কি ভোগবাদ বলবে? ভোগবাদে খালি ভোগের কথা আছে। আছে ঋণ জর্জরিত উৎপাদনহীন লোভী মানুষের কথা।
এরকম অচেনা সত্তার সাথে আদানপ্রদান অন্যান্য প্রাণীতে বিরল ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে হানাহানিপূর্ণ। ফলে মানুষের মাঝে হানাহানির জিন যেমন আছে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অহিংসা ধারণের জন্যে যথেষ্ট বড় মগজও আছে। কারণ সেই সময়ের তুলনায় আমাদের মগজের গঠন বদলেছে সামান্যই।
হ্যাঁ, বইটিতে তারপর আবার মানুষের লোভ ও হিংসার মহাসমারোহে ফেরত আসার কথাও বলছে। এই পারস্পরিক বিনিময়ের উপর ছড়ি ঘোরানোর কথা বলছে। মানুষের পারস্পরিক বিনিময় ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে উৎপাদনের দক্ষতা যখন সমাজের সম্পদ বৃদ্ধি করছে, তখন সেটার উপর পরগাছার মতো প্রায় সব যুগে জন্মেছে চোর, নেতা ও পুরোহিত। তারা নিজেরা কোনো ভৌত বস্তু উৎপাদন করে না। ফলে বিনিময়ও করে না। সমাজের বর্ধিত সম্পদ তাদের সুযোগ দেয় অস্তিত্বশীল হবার। এবং তারা গোষ্ঠিগতভাবে নিজেদের প্রভাবকে প্রথা, রীতি নীতি, আইন হিসাবে কায়েম করার চেষ্টা করেছে। তারপর মানুষের লোকাল হানাহানির চরিত্র বড় গোষ্ঠির সাথে গোষ্ঠির যুদ্ধ আকারে দেখা দিয়েছে। উৎপাদন ধ্বংস হয়েছে বিনা কারণে। রীতি নীতি দ্বারা উৎপাদন রুদ্ধ হয়েছে বিনা কারণে।
এই পরগাছারা এখন বলছে তাদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মানুষ উৎপাদন করতে পারতো না। কিন্তু সত্যি কথা এই যে মানুষ বিনিময় না করলে, উৎপাদন না করলে এই পরগাছারা টিকতে পারতো না। আমি ভাবি যে এই পরগাছা বা মিডলম্যানগুলো ছাড়া মানুষের উৎপাদন ও প্রাচুর্য্য টিকে থাকা সম্ভব। এটা বটম আপ, নট টপ ডাউন।
এর বিপরীতে তোমার ভোগবাদের ভাষ্যটা এরকম যে “এদেরকে ভোগের মধ্যে ভোলানো যেতে পারে ” অর্থাৎ সেখানেও একটা কেন্দ্রীয় চিন্তক, একজন মিডলম্যান পরগাছা মানুষের হেদায়েতের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সেটা কার্যকরও করার সুযোগ পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় ক্ষমতার অস্তিত্বকে ব্যবহার করে।
@রূপম (ধ্রুব),
চোর, নেতা, পুরোহিত সবাই এক কাতারে? সবাই পরগাছা? বেশ sসরল বক্তব্য ।
নেতার বেশ ধরে কিছু মতলববাজ ক্যারিশমেটিক দুর্মুখ একদল নির্যাতিত মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে কাজে লাগায় নিজের মতলব চরিতার্থ করার জন্য । এই ধরনের দুর্মুখদের জন্যই প্রধানত মানুষ নির্যাতনের স্বীকার হয় ।
অন্যদিকে, pধ্রুপদী অর্থে, এক দল নির্যাতিত মানুষকে যখন kOকোন বিশেষ কেউ একজন, সমকালীন সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতির বুদ্ধিবৃত্তিক উপলব্ধিkকে জনমানসের ভেতর দিয়ে তাদের মত করে জারিত করে মুক্তির উদ্দেশ্যে সংঘটিত করেন, তখন তিনি চোরের কাজটি করেন না, করেন নেতার কাজ ।
উপরোক্ত দুধরনের নেতার উদ্ভব সমাজ বিকাশের স্বাভাবিক ধারাতেই হয়, এবং এদের মধ্যে একটা সুস্পষ্ট দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক থাকে । এই দুয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট চারিত্রিক পার্থক্য বিদ্যমান ।
নেতা ও চোরের মধ্যে যে অভেদটা আপনি টেনেছেন, তা প্রকৃতপক্ষে সেই দুর্মুখ ধরনের নেতা আর চোরের মধ্যেই টেনেছেন সম্ভবত ।
পুরোহিততন্ত্র হল পুঁজিতন্ত্রের একটা প্রিমিটিভ রূপ । আধুনিক বিশ্বে পুঁজিতন্ত্র এখন রূপ পাল্টাচ্ছে, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পালটে ফেলেছে, পুঁজিতন্ত্র এখন দেহ ধারন করে কর্পোরেটতন্ত্রের শরীরে ( মজার ব্যপার হলো, এই যে পুরোহিততন্ত্র নিপাত করার এই যে হাঁকাডাক, তাতে মোটাদাগে কর্পোরেট তন্ত্রেরই বাতলানো পথ । দুই রাক্ষস একই পুরীতে থাকবার নয় ।) । পুরোহিততন্ত্র স্বাধীনতা হরনের মাধ্যমে করতো স্বাধীনতা হরনের ব্যাবসা, কর্পোরেটতন্ত্র করছে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতা হরনের ব্যাবসা । ppপুঁজি তার স্বভাব পালটায় না । পুঁজি বিশ্ব-ঐতিহাসিক ।
চোর ও পুরোহিতের মধ্যে অভেদটা বরং মানানসই ।
@সলিমুল সিহাব,
নেতার এই ভালো মানুষটিস্বরূপ essence টির প্রতি তোমার মুগ্ধতা লক্ষণীয়। :))
“বিশেষ কেউ একজন” জনমানসের মুক্তি ঘটান, এটা আমার কাছে একটা মিথ। অনেক মানুষের মনে চির লালিত ব্যক্তি-ঈশ্বর। মানুষের চিন্তা এভাবে বীর নায়ক নেতা মহাজনদের জন্যে অপেক্ষায় বসে থাকে . . .
@রূপম (ধ্রুব),
তার মানে কি, বিদ্যমান সমাজ কাঠামো ভেংগে গুড়িয়ে আবার শূন্য থেকে শুরু করা? শূন্য থেকে শুরু করার কথা কিন্তু ঈশ্বরদের খায়েসের অনেক জাঁহাবাজ ফেরিওয়ালা বহুবার বহুকাল ধরেই বলে আসছেন, এটা স্বীকার করে নিয়ে যে পরস্পর দ্বান্দ্বিক অবস্থানে থাকা দুই ধরনের (লুটেরাদের মুখপাত্র ও লুন্ঠিতদের মুখপাত্র) মুখপাত্রের উত্থান সমাজ বিকাশের স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে, এবং বিপ্লবের মাধ্যমে বিদ্যমান সমাজ কাঠামো ভেংগে দেবার মাধ্যমে রিস্টার্ট নেয়া সম্ভব । সে ক্ষেত্রে আপনার যে প্রকারের এনার্কিষ্ট অবস্থান, তাতে এই মতবাদের (!) সাথে বিরোধ নেই ।
বিপ্লবউত্তর পরিস্থিতিতে করণীয় কি হবে?
সমাজবাদী চিন্তকের সাথে এই এনার্কিষ্ট চিন্তকের অবস্থানের মৌলিক পার্থক্যটা তৈরী হবে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে । সমাজবাদী চিন্তকের মতো করে সমাজ হেন ভাবে গড়তে হবে, সমাজ তেন ভাবে গড়তে হবে ইত্যাদি ফতোয়া না দিয়ে, এনার্কিষ্ট চিন্তক স্টেডিয়ামে বসার ফতোয়া দেবেন ।
এই বসে থাকার অক্রিয়ার একটা প্রভাব অবশ্যই আছে । চিন্তকের এই স্টেডিয়ামে বসে থাকার বাসনা একটা রাজনীতি জাগিয়ে রাখে । সেই রাজনীতি আনফিট ইন্ডিভিজুয়াল (ফিটনেসকে কোন ভৌগলিক এলাকার সীমিত সম্পদ থেকে সম্পদ অর্জন বা ভোগ করে নেবার ক্ষমতা ধরে নিয়ে) ইলিমিনেশনের রাজনীতি। আনফিট ইন্ডিভিজুয়ালদের একাট্টা না করতে দেয়ার রাজনীতি হলো এনার্কিজম । এই রাজনীতির সমালোচনা আমি করি ।
সমাজবাদী চিন্তকের ক্রিয়ামূলক যে চিন্তা, সেটাও রাজনীতি জাগিয়ে রাখে । সেই রাজনীতি দ্বিবিভক্ত রাজনীতি । এক প্রকারে আনফিটদের ইলিমিনিশনের রাজনীতি যেমন থাকে, তেমনি আনফিটদেরকে টিকিয়ে রাখারও প্রচেষ্টা থাকে আরেক প্রকারে । আপনি এই প্রকারের রাজনীতির সাধারন সমালোচনা করেন ।
@সলিমুল সিহাব,
এটা কোনো কর্ম পন্থা নয়, কোনো কর্ম পন্থা বাতলাচ্ছেও না। এটা বলছে যে সমাজ উন্নয়ন মূলত বটম আপ। Even now. কিন্তু আমাদের খায়েশ টপ ডাউন উন্নয়নের। যেমন বিশ্ব সৃষ্টি মানুষ ভেবেছিলো টপ ডাউন। সাতদিনে এক এক করে গ্রহ নক্ষত্র দিয়ে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এই wishful thinking গুলোর ব্যাপারে এটা স্কেপটিক হতে শেখাচ্ছে। চোখ খুলে যাচাই করে নিতে বলছে, এই টপ ডাউন অ্যাপ্রোচের কার্যকারিতাকে।
কোন বিপ্লব? আমি কোনো বিপ্লবের কথা বলছি না, unless চিন্তার বিপ্লবের কথা মিন করো। সেক্ষেত্রে করণীয় হলো আরো চিন্তা করা, টপ ডাউন মিথগুলোর বাইরে এসে।
এই সমালোচনার মূল সুর হলো, কয়েকজন দরদী নেতা বা সমাজবাদী চিন্তক ছাড়া unfitদের গতি নাই। তারাই মূলত unfitদের রক্ষক। আর বট আপ সমাজ উন্নয়ন unfit দের eliminate করে। এই প্রিমাইসের উপর ভিত্তি করেই তো সমালোচনা করছো তাই না? এটার খুব ভিত্তি আছে কি? মুখে “আমি unfitদের জন্যে চিন্তা করি” বললেই তাদের দেখভাল কিন্তু হয় না। বরং সমাজের বটম আপ পারস্পরিক বিনিময় মানবকুলে unfitদের অভূতপূর্ব সাহায্য করেছে, প্রতি নিয়ত করছে, সেটাকে discount করা হচ্ছে। অন্যদিকে সমাজবাদীদের unfit রক্ষার মুখের তুড়ি আর বোল কতটুকু কী উদ্ধার করেছে সেটা যাচাই করার চেয়ে তাদের গোল গোল কথায় চোখ আরামে বন্ধ হয়ে আসাটাই বেশি ঘটে। যেই উৎপাদন বিনিময় আর বর্ধন মানব সমাজে unfit দেরও একটা গতি করছে, সমাজবাদীরা সেটাকে যেভাবে রুদ্ধ করছে, তাতে যে অনুন্নয়নাবস্থা সৃষ্টি হয়, সেটার প্রথম বলি কিন্তু সেই unfitরাই। মুখের বুলি দিয়ে সেটাকে কোনো জনদরদী নেতা ঠেকাতে পারে নি। ফলে ব্যাপারটা even এমনও না যে সমাজবাদীরাই কেবল unfitদের কথা ভাবে আর অন্যরা ignore করে, বরং সমাজবাদীরা যে unfitদের জন্যে ক্ষতিকরও সেটা দেখা প্রয়োজন। টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ যদি সমাধানের চেয়ে সমস্যা বেশি তৈরি করে, অন্যদিকে পারস্পরিক বিনিময়ের বটম আপ অ্যাপ্রোচ যদি এর চেয়ে বেশি অনুকুল হয়, সমাজ, উন্নয়ন ও unfit দের জন্যে, তাহলে আর কোন বাড়তি জিনিসটার আশায় টপ ডাউনের পক্ষে ওকালতি করা?
Unfit দের ব্যাপারে আলোচনায় এভাবে যেভাবে দুই পক্ষকে মুখোমুখি খাঁড়া করে সমাজবাদীদের পাশ মার্ক দিয়ে দেওয়া হয়, সেটার পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। তবে এটা ঠিক যে টপ ডাউন জনদরদীরা বীরগাঁথা ফিকশন তৈরির জন্যে better suited.
@রূপম (ধ্রুব),
বিষয়টা পরিস্কার করার জন্য ধন্যবাদ ।
একটা চিন্তা এড়ানো গেল না । সমাজ উন্নয়ন মূলত বটম আপ – ধরে নিলাম, এটা একটা যুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত । এখন, এটা ইম্পেরিক্যালি যাচাইযোগ্য কি না? বিজ্ঞানের সংস্কৃতির বর্তমান যে দশা, তাতে ইম্পেরিক্যালি যাচাইযোগ্য না হলে সিদ্ধান্তটি ঠিক বিজ্ঞান সম্মত হচ্ছে না ।
আবার ধরে নিলাম যে, এটা ইম্পেরিক্যালি যাচাইযোগ্য । যাচাইয়ের প্রশ্ন কিন্তু পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রন্থণাকে বাস্তবায়ন করবেই, কারন সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান ভিত্তিক রাখতে হলে, সিদ্ধান্ত ও যাচাইয়ের পদ্ধতি যুগপৎ অস্তিত্বশীল হয় । বিপ্লবের মাধ্যমে সব ভেংগে গুড়িয়ে দিয়ে, আবার নতুন করে শুরু করার একটি পদ্ধতি হতে পারে । বিপ্লবের নাম নেয়া কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রাসংগিক ।
এ ব্যাপারে একমত যে, সিদ্ধান্তটি যদি অবৈজ্ঞানিক হয়, তবে বিপ্লব বা যেকোন ধরনের কর্মপন্থার নাম নেয়া অর্থহীন ।
@সলিমুল সিহাব,
তোমার এই বক্তব্যে স্বীকার করা হচ্ছে যে অন্য পদ্ধতিও থাকতে পারে। সত্যিকার অর্থে ইনটার্ভেনশনহীন অবজার্ভেশনমূলক পদ্ধতি থাকলে বিপ্লবের প্রসঙ্গ এখানে অল্পই প্রাসঙ্গিক থাকে।
এবং ইনটার্ভেনশনহীন অবজার্ভেশনমূলক পদ্ধতি আছে। বিজ্ঞানের বহু শাখাতেই এই ধরনের পদ্ধতি আছে। এমন কি হেল্থ সায়েন্সে, যেখানে ইন্টার্ভেনশন করলে বেস্ট, কিন্তু সম্ভব না, সেখানে অবজার্ভেশনাল ডেটা নিয়ে ঘটনা সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করা হয়। অবশ্যই নট অ্যাজ গুড অ্যাজ ইন্টার্ভেনশন, কিন্তু এটা বলার সুযোগ নেই যে – “ইন্টার্ভেনশন করা না গেলে এ নিয়ে কিছু করার নেই।”
আমাদেরকে অবজার্ভেশনাল ডেটার দিকে দৃষ্টি নিপাত করতে হবে। কীভাবে করা যায় এটা? এটা নানাভাবে সম্ভব। বেশি রাষ্ট্রশৃঙ্খলিত সমাজ বনাম অধিক মুক্ত সমাজের তুলনা করে। আবার একই রাষ্ট্রে, যেখানে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শৃঙ্খলা বিদ্যমান, সেখানেও রাষ্ট্র তার উপকরণের অভাবে সবকিছু টপ ডাউনের তলে ফেলতে পারে না। ফলে এমন কি একই সমাজে এই অবজার্ভেশন করা সম্ভব। সেখানে যে উন্নয়নগুলো হচ্ছে, তাতে টপ ডাউনের কন্ট্রিবিউশন কতোটুকু, বটম আপের কনট্রিবিউশন কতোটুুকু। কোনটা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ইকোনোমিক্সে এটা খুব নতুন ধরনের গবেষণাও না। একটা ভালো স্টার্ট হতে পারে rational optimist বইটা। এখানে এক লক্ষ বছর আগে থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এই দুই উপায়ের কন্ট্রিবিউশনকে বর্ণনা করা হয়েছে। টপ ডাউনের কন্ট্রিবিউশন কিন্তু শূন্য না। 🙂 তবে বটম আপের কন্ট্রিবিউশন surprisingly আমরা সনাতনভাবে যা ভাবি, তার উল্টো। ইঙ্গিত করছে যে সমাজ উন্নয়নের একধরনের প্রায় নেসেসারি কন্ডিশন বলা যায় বটম আপ interaction. এমন কি টপ ডাউন যতোবার মুখ থুবড়ে পড়তে নেয়, সেটার একটা sustainable রক্ষা হয়েছে মানুষের বটম আপ অংশগ্রহণে। মানুষের সভ্যতার উন্নয়নও মূলত টিকে আছে বটম আপ কর্মকাণ্ডের কারণে। সেটা reasonable. উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে করে সভ্যতার sustainable প্রগতির তৈরি হয়েছে, সেটা believable না। ইতিহাস পড়লে তেমনটা পাওয়া যায় না। বহু দরদী নেতা টপ ডাউন অ্যাপ্রোচে জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা যে করেছেন, তাতে সন্দেহ করছি না।
তো দিনশেষে এটা অন্তত একটা reasonable ডিবেট। আমরা যেভাবে হরে দরে যেকোনো সমস্যার সমাধানে বেস্ট টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ বের করার জন্যে উঠে পড়ে লাগি, সেটা ফেইল করলে নির্বিবাদে আরেকটা টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ খোঁজার পেছনে লাগি – সরকারি অনুসন্ধান, বিশেষজ্ঞ, পলিসি, ইত্যাদি ইত্যাদি, সেখানে এই অনুমান থাকে যে এ যাবৎ ট্রাই করা সব টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ শোচনীয়ভাবে ফেইল করলেও টপ ডাউন অ্যাপ্রোচই একমাত্র গতি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টপ ডাউন অ্যাপ্রোচের বাইরে চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না। এই ডিবেটটা একজন যুক্তির প্রতি নিষ্ঠ মানুষকে ভাবার সুযোগ দিবে যে টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ ছাড়াও অ্যাপ্রোচ আছে। টপ ডাউন অ্যাপ্রোচ বিনাপ্রশ্নে গ্রহণীয় নয়, এবং অন্য অ্যাপ্রোচটির সাথে তুলনা করাটা যুক্তিসঙ্গত।
যদি টপ ডাউন অ্যাপ্রোচাররা অন্তত এটা মানে যে এই তুলনাটা মনোযোগ পাবার দাবি রাখে, টপ ডাউন অ্যাপ্রোচই একমাত্র কার্যকর অ্যাপ্রোচ এমন দাবি থেকে সরে আসে, এই মুহূর্তে সেটাই হবে বড় প্রাপ্তি। কিন্তু ঘটনা এর চেয়ে বড় শোচনীয়। সব বিশেষজ্ঞ ঈশ্বরেরা সাত দিনে মহাবিশ্ব তৈরি করার টপ ডাউন স্বপ্নকল্পনায় ব্যস্ত।
@রূপম (ধ্রুব),
একই আদি অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করলে মানব সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন কি আসবে? মতবাদবিহীন বা তাদের দ্বারা শাষিত হচ্ছে না, এমন কোন পৃথবী ঠিক এক লাখ বছর পরে কি আমরা পাব? যেহেতু এটা প্রেডিকশনের কোন বৈজ্ঞানিক উপায় নেই, তাই ইন্টুইটিভ স্পেকুলেশনই ভরসা । গিভেন দ্যাট, মানুষের বিবর্তন, মানুষ “মানুষ” হয়ে উঠার পর থেকে তেমন একটা হয়নি, এই অবস্থা থেকে স্বভাবিক ধারায় মানুষকে বেড়ে উঠতে দিলে কি আমূল কোন পরিবর্তন আসবে ? আমার স্পেকুলেশন তা বলে না ।
“Negating the negator” – এই করেই ইতিহাস গড়ে উঠেcheছে । ৩০,০০০ জিনের আইডেন্টিকাল জিনপুল নিয়ে যাত্রা শুরু করলে তারই পুনরাবৃত্তি হবার সমূহ সম্ভাবনা ।
@সলিমুল সিহাব,
আমার লেখাটাও তো তাই করছে :))
জোক্স অ্যাপার্ট, আমি এই চিন্তাটাকে নাস্তিক্যবাদী চিন্তার মতো করেই দেখি। মানুষের ঈশ্বর বা প্রথাধর্মমুক্তির ভবিষ্যতও যেমন নিরাশাজনক, কিন্তু তাতে যে কথাটা ঠিক লাগে সেটা বলতে থেমে থাকা যায় না, মাঝে সাঝে হলেও, নিচু স্বরে হলেও।
@রূপম (ধ্রুব),
(Y)
আপনার রাষ্ট্র-ঈশ্বর, বিশ্ব-ঈশ্বরের কনসেপ্টগুলো বেশ ভাবনা-উদ্রেককারী। তবে এখানে মন্তব্যকারীদের অনেকের মতো আমারও মনে হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তায় পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্র-ঈশ্বরের ধারণায়ও পরিবর্তন আসতে বাধ্য। যেমন এখন বিশ্বায়নের যুগে অলিম্পিক ছাড়া আর কোথায়ও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আর আগের মতো দৃশ্যমান নয়। বিশ্ব-ঈশ্বর তো গেছেই, রাষ্ট্র-ঈশ্বরও যাওয়ার পথে। তবে তার জায়গায় আসছে আরেক ঈশ্বর – বিশ্বায়িত বিশ্বের ঈশ্বর, ‘দুনিয়ার পুঁজিপতিরা এক হও’ এই শ্লোগান নিয়ে। তাই জি-এইটের পরে পরেই বসে জি-টুয়েন্টির বৈঠক।
স্বপন মাঝির মন্তব্যের জবাবে বলপ্রয়োগের ওপরে আপনার আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছেন। ওই বলপ্রয়োগ বা সশস্ত্র বিদ্রোহ কিন্তু অপশন নয়, প্রতিক্রিয়া। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন প্রতিনিয়তই বলপ্রয়োগ করে চলে ‘আইনের’ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তখন ‘বেআইনী’ বলপ্রয়োগ নিতান্তই আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা।
@ইরতিশাদ,
এটা কি নতুন ভূত, নাকি আসলে একই আত্মারই পুরান ভূত? জি-৮, জি-২০ ইত্যাদিগুলো কোন প্রতিষ্ঠানটির জোট বলুন তো? বড় বড় কর্পোরেটগুলো জগত জোড়া কোন যন্ত্রের সুযোগ সুবিধা নিয়ে টিকে আছে?
অনেক রাষ্ট্র অন্তত মুখে মুখে কর্পোরেট বিরোধিতার কথা বলে, কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রই কিন্তু তাদের সবচেয়ে পরীক্ষিত বন্ধু। কর্পোরেটদের অন্যায্য মুনাফার সবচেয়ে বড় অংশ আসে রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুতার কারণে। এই যন্ত্রের অনুপস্থিতিতে তাদের জগত জোড়া টিকে থাকা এমন একটা চ্যালেঞ্জ হবে, যেটার মুখোমুখি তারা আজ পর্যন্ত হয় নি।
@রূপম (ধ্রুব),
একই ভূত, ঠিকই বলেছেন, সাতচক্রে ভগবান বা ঈশ্বরইতো ভূত হয়।
আমি পুরোপুরি একমত। রাষ্ট্রযন্ত্র কর্পোরেটদের পকেটেই থাকে।
এখানে আমি এখনো অতটা আশাবাদী নই। রাষ্ট্রযন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়লে কর্পোরেটরা তাদেরকে পকেট থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। আরেক শক্তিশালী ঈশ্বরের (হ’তে পারে আগের ঈশ্বরের ভূত) জন্ম দেবে এবং তাকেও পকেটেই রাখবে।
ভূতগুলো চিরতরে ভূতপূর্ব হয়ে গেলেই ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু কবে?
আমি ব্যক্তিগতভাবে এনার্কিজমের বিরুদ্ধাচার করি দুটি কারণে- প্রথমত, শোচণীয় শোচণীয় ট্রাকরেকর্ড বিপ্লবের নামে অহরহই যেটা কিনা মিলিটারিজমের দিকে ধাবিত হয়েছে। যেমন- টেড ক্যাকযিনস্কি এর বোমা ফুটিয়ে মানুষ হত্যা, বনো গ্যাং এর পুলিশ ও সরকারী কর্মচারী হত্যা এবন লুঠতরাজ। আর দ্বিতীয়ত এন্টিসায়েন্স মতাদর্শ সমুন্নত করা। যেমন- অল্প কিছুদিন এগেই ইটালীতে এক নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারকে গুলিবিদ্ধ করে এনার্কিস্টরা।এছাড়াও এনার্কিজমের ধারিপান্ডা মিখাইল বাকুনিনের মুখ থেকে বের হয়েছে নিন্মোক্ত মহান উক্তিটি-
এইটা কি জলের মতো পরিষ্কার না যে- দার্শনিকটি তার শুণ্যগর্ভ দর্শনগিরির নামে সায়েন্সকে এটাক করার মতো বিলাসীতার সুযোগ পাচ্ছে কেননা আধুনিক বিজ্ঞানের বরে তাকে দিনে বারো ঘন্টা ফসল ফলানোর জন্য মাঠে কৃষিকাজ করতে হয়না? যাই হোক, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিপ্লব কিংবা দর্শন ইত্যাদি গালভরা নামের ছদ্মবেশে এন্টিসোশ্যাল মতাদর্শ প্রচারকারী কোন গ্যাঙ্গকে গৌরবান্বিত করার বিপক্ষপাতী এবং এদের সাথে স্বর মেলানোর ব্যাপারেও বিপক্ষপাতী।
স্টালিন হিটলার যেমন এনার্কিস্টদের পেদিয়েছিলো এই প্রকারের প্যাদানীর বিরোধীতা আমিও করি, তবে হত্যা এবং লুঠতরাজ করলে তো এনার্কিস্টদের প্যাদানো খেতে হবেই, এইটাকে কি অপ্রেশন বলা যায়? আমি জানি, আমি যদি এখন ডাউনিং স্ট্রীটের মোড়ে একটি ইউনিয়ন জ্যাক আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেই আমাকে আটক করবে না এমআই৬, আমাকে বরং উলটো নিরাপত্তা প্রদান করবে পুলিশ।
@আল্লাচালাইনা,
আমি অ্যানার্কিজমের এক পাতা লিটারেচারও পড়ি নি। আমার চিন্তা একেবারে এলিমেন্টারি। আমার প্রশ্ন তাত্বিক। দিন শেষে রাষ্ট্রের অস্ত্রের মুখে আপনি আমি সবাই civil, obedient. এই লেখায় আলোচনা আসলে বিফলে ও বিপথে যাবে যদি অ্যানার্কিস্ট অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে কথা বলতে যাই আমরা।
আমার অবিশ্বাসকে অনেকটা ধর্মীয় অবিশ্বাসের মতো দেখতে পারেন। আমার ধর্মীয় অবিশ্বাসে পৃথিবী থেকে ধর্ম দূর হয়ে যাচ্ছে না, আশেপাশে তার অস্তিত্বকে পরম সহিষ্ণুতার সাথেও মেনে নিচ্ছি। কিন্তু একবার যখন ধর্মের বিপরীতে বৈধ প্রশ্নগুলো চিন্তায় ঠাঁই পেয়েছে, সেগুলোর সাথে অন্তত চিন্তার রাজ্যে নিশ্চয়ই আমি আর সমঝোতা করে চলবো না।
চিন্তা তো follow করতে necessarily শেখায় না। ফলে রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করাকে আমরা বিদ্যমান “নৈরাজ্যবাদীদের” follower হিসেবে দেখবো কেনো? ধর্মের ব্যাপারে যেমন বহু রাত নিজে নিজেই আমরা চিন্তা করেছি, আমার প্রস্তাব হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল প্রিমাইসগুলো নিয়েও আমরা নিজে নিজেই চিন্তা করতে পারি। নিশ্চিন্ত থাকুন, এখানে এতোটা ডিটার্মিনিজম নেই যে এই লাইনে চিন্তা করতে থাকলে আপনিও বাকুনিনের উক্তিটাই দিয়ে বসবেন। 🙂
(উক্তিটার রেফারেন্স দিলে ভালে হতো)
@রূপম (ধ্রুব), ইটালিয়ান এনার্কিস্ট যারা নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারকে গুলি, তারা তাদের এক কপি ম্যানিফেস্টো সংবাদপত্রে পাঠিয়েছিলো প্রচার করার জন্য। সেই ম্যানিফেস্টো শুরু হয়েছিলো বাকুনিনের এই উদ্ধৃতি দিয়ে।
লেখাটা ভালো লেগেছে। মতাদর্শ হিসেবে “কতৃত্ব বাদ” কে সামনে আনা খুবই জরুরী।
বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে জাতিরাস্ট্র গুলোর দন্ধ রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটির চরিত্র কি তা ভালোরকম জানান দিচ্ছে।
ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় মৌলবাদ উৎপাদন ও পুনরুতপাদনে রাষ্ট্রের একটি বড় ও প্রত্যক্ষ ভুমিকা রয়েছে। রাষ্ট্র-ঈশ্বর ও বিশ্ব-ঈশ্বর এর সম্পর্কের আলোচনা হওয়াটাও মনে হয় দরকার।
এই বিষয়ে আরো লেখা আশা করছি।
বেশ আগ্রহোদ্দীপক একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। এই বিষয়টা নিয়ে নিরপেক্ষ আলোচনা আদৌ সম্ভব কি না সন্দেহ !
রাষ্ট্র কি আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ? – এ প্রশ্নের উত্তর যিনি দেবেন , তিনি তার অবস্থান থেকে দেবেন। তিনি এবং তার পরিবার ও নিকটজন যদি রাষ্ট্র থেকে এমন সব বিবিধ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন যা রাষ্ট্র না থাকলে অসম্ভব না হলেও কঠিন হয়ে দাঁড়াতো , তাহলে তিনি রাষ্ট্টের পক্ষেই সাফাই গাইবেন।
দৃশ্য এক
ইউরোপের কয়েক কোটি বেকার পরিবার , যাদের রান্নার তেল থকে শুরু করে কেবল্ টিভি, ইন্টারনেট এবং রবিবারের কয়েক পাইন্ট বিয়ারের পয়সা সরকারী সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে আসছে , তাদের জন্য রাষ্ট্র শুধু ঈশ্বর নয় , অপরিহার্য বাস্তবতা।
দরিদ্র দেশের কলম পেষা কেরানীপূত্র ভাগ্যন্বেষী ছাত্র উন্নত দেশে স্কলারশিপ নিয়ে এসে এখন ছয় ডিজিটের বেতন কামাচ্ছে। তার জন্য রাষ্ট্র খুবই দরকারী একটা ঈশ্বর।
লবী গ্রুপ , এনজিও যারা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ট্রিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে এবং যারা ঐসব সংস্থায় জড়িত – যে পয়সায় এয়ার কন গাড়ী আর আয়া-খানসামা নিয়ে সুখের সংসার চালাচ্ছে, তাদের জন্য রাষ্ট্র ঈশ্বর।
সরকারী সামরিক-বেসামরিক আমলা , চাপরাসী এবং তাদের পরিবারবর্গ স্বাভাবিকভাবেই ‘ঈশ্বরের’ আপন ঘরানা।
বিশ্ব-বাজারের চাইতেও অনেক কম মূল্যে ( রাষ্ট্রীয় ভর্তুকী দেয়া) তেল বিদ্যুৎ বাংলাদেশের মত দেশে অন্ধকার এবং ঠেলাগাড়ী প্রস্তরয়ুগ ঠেকিয়ে রাখছে। এখানে তেল বিদ্যুৎ মুদি বাজারে চলে গেলে নরক ভেঙ্গে পড়বে ৯৯% শতাংশ মানুষের জীবনে। তাই এখানে শুধু রাষ্ট্র নয় সব রকম ইশ্বরের জয় জয়কার।
দৃশ্য দুই
রাষ্ট্রহীন , কেন্দ্রীয় সরকারহীন কিংবা ব্যর্থ রাষ্টের অধিবাসী ফিলিস্তিনী উদ্বাস্ত , সোমালিয়ার কৃষক, নিউ ইয়র্ক কিংবা লন্ডনের বেকার গৃহহীন, হাইতির দোকানদার কিংবা আফগানিস্তানের একজন মুজরা নর্তকীর জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্হা অর্থহীন অথবা শয়তানতুল্য। রাষ্ট্রের মধ্যে তারা শয়তান ছাড়া কিছুই দেখবে না। শুধু রাষ্ট্র কেন সমাজ শয়তান, পরিবার শয়তান।
মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ সমাজ এবং রাষ্ট্র গড়েছে। মানুষের প্রয়োজনেই হয়তো একদিন সমাজ এবং রাষ্ট্র কিছুই থাকবেনা, থাকবে ব্যক্তি অথবা রাষ্ট্র আরও বৃহৎ হয়ে মহারাষ্ট্র হবে। একই কথা সব রকম ঈশ্বরের ক্ষেত্রেই প্রজোজ্য। ঠেলার নাম বাবাজী , কি বলেন ? :))
ফুকোর মতে মানুষকে শৃঙ্খলিত করা বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, কারাগার, পাগলা গারদ। তারকথা একেবারে ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। পিটনা দিয়ে বেশিদিন বা সূচারুভাবে নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয় দেখে ক্ষমতা এখন প্রয়োগের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং স্থায়ী মাধ্যম হচ্ছে মনের নিয়ন্ত্রন তথা সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রন। গ্রামশির মতে সাংস্কৃতিক বিপ্লবটাই বেশি প্রয়োজনীয়। যেমন ধরা যাক, পুঁজিবাদ। এর মতন একটা অমানবিক, অযৌক্তিক প্রথা আপনি যখন শ্রেনিকক্ষে ঢুকিয়ে দিতে পারছেন ঠিক তখনই আপনি পুঁজিবাদকে একটা যৌক্তিক এবং বাস্তব একটা ব্যাবস্থায় রূপান্তর ঘটাতে পারছেন। তখন ঈশ্বরকে বলতে হবে না পুঁজিবাদ ভালো, তখন নিয়ন্ত্রিত মুরিদরাই আওয়াজ দিবে আমরা স্বাধীন, পুঁজিবাদই সবচেয়ে বাস্তব এবং যৌক্তিক অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা।
রাষ্ট্র নামক জিনিসটা সম্পর্কে হামবুল্ট বলেন,
পৃথিবীর গতি প্রকৃতি একটা রাষ্ট্রহীন ব্যাবস্থার দিকে যাচ্ছে বলেই মনে হয়।
লেখা ভালো লাগল, কিন্তু আরো নিয়মিত চাই।
রূপম (ধ্রুব):
আপনার লেখা আমি সাধারনত পছন্দ করি কারন আপনার লেখাতে বেশ কিছুটা মৌলিকত্ব এবং নূতন চিন্তার মাল মশলা থাকে। এই ফোরামের অনেক আলোচনাতে যে গতানুগতিকতা থাকে, আপনার (এবং আরও দুএকজনের) লেখাকে সেটা থেকে মুক্ত বলেই আমার মনে হয়েছে। কিন্তু আপনার এই লেখাটার নৈরাজ্যবাদী যুক্তিগুলো বেশ গতানুগতিক বলেই আমার মনে হচ্ছে। বেশী আলোচনায় যাওয়ার আগে দুটো প্রশ্ন করি।
১। আপনার কি মনে হয় মানুষের সংঘবদ্ধ কিংবা সংগঠিত হয়ে কাজ করার আদৌ কোন দরকার আছে?
২। উপরের প্রশ্নটার উত্তর যদি না হয়, তাহলে কেন না? যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সেই সংগঠনের ( কিংবা সংগঠনগুলোর) প্রকৃতি, কাঠামো এবং ব্যাপ্তি কিরকম হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
@হারুন উজ জামান,
এই সুযোগে আপনার পছন্দটা তো জানলাম। 🙂
দরকার থাকতেই পারে।
সেটার ধরনকে সীমিত করতে না যাই, সেটার বরং বৈচিত্র্য থাকাই কাম্য। বরং অকাম্যগুলো বাছাই করতে পারি। যেমন, সেটায় যোগ দিতে স্বেচ্ছায় অনাকাঙ্ক্ষী কোনো নিরপরাধের উপর সেই সংগঠন বল প্রয়োগ করতে পারে না। যে সংগঠন তা করে, সেখানে বিবেচনাবোধের উপর বল প্রয়োগের প্রাধান্যই প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। মুক্তবোধ বঞ্চিত হয়। ওই সংগঠনের যেকোনো প্রকার যৌক্তিক বৈধতা তাতে সীমিত হয়।
@রূপম (ধ্রুব),
আর বল প্রয়োগ করে করেই একটা প্রতিষ্ঠান উচ্চতর শক্তি তথা ঈশ্বর হয়ে ওঠে। বল প্রয়োগ করা বৈধ করার জন্যেও তার বায়বীয় সব ঐশ্বরিক চরিত্র ধারণ করা লাগে: মহৎ, মহানুভব, অত্যবশ্যক, সর্ববিরাজমান, কল্যাণকামী . . .
@হারুন উজ জামান,
ধর্মের ঈশ্বরের বিপক্ষের যুক্তিগুলোও দিন দিন গতানুগতিকতার জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। তারা কম বৈধ যুক্তি নয়, কিন্তু কোটি মানুষ এখনো সেগুলো শুনছে না, বার বার উচ্চারণে তাই অসাড় হয়ে উঠছে। তার বিপরীতে মানুষ সেন্সিবল ও ক্রিয়েটিভ উপায়ও খুঁজে বের করছে। ছোট ছোট ক্ষেত্রে ধর্মের দ্বন্দ্ব ও অসাড়তাকে তুলে ধরছে, প্রশ্নের সম্মুখীন করছে। আমি heresy করার পক্ষে বলছি (আরো বলবো), যাতে ধর্ম ব্যবস্থার ডাইনোসরটা আরাম না পায়।
রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও সরাসরি এর বৈধতাকেই প্রশ্ন করাটা গতানুগতিক মনে হলে অন্যান্য সেন্সিবল ও ক্রিয়েটিভ উপায়গুলো ভাবতে পারেন। যেমন, রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েই (কার মানার উপায় নেই?) তার বিভিন্ন ক্ষমতা বর্ধনকে প্রশ্ন করা। বিভিন্ন প্রচলিত বলপ্রয়োগকারী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাগুলোকে ফর গ্র্যান্টের মেনে না নিয়ে প্রশ্ন করা।
আপ্নের সব কতার লগেই একমত।তয় আমার দু’একটা কতা আছিলো।ভুল ভাল হইলে ধরাইয়া দিবেনঃ
এইটা যদি ফ্যালাসি হইয়া থাকে তাইলে আমি এই ফ্যালাসিরই লোক।আপনে আমারে একটু দেখান তো প্রস্তর সামন্ত যুগে কিংবা দাস যুগে যুদ্ধ ছাড়া ওগুলো আর কোন পদ্ধতিতে ভাইংগা পড়তো?একটা মডেল দেন।আর পুঁজির বিরূদ্ধে লড়াইয়ে যুদ্ধ ছাড়া কেমনে আমি আগামু?আনু মোহাম্মদকে যখন রাস্তায় ফালাইয়া পিটানো হয় তহন রাষ্ট্র কী নিজেই যুদ্ধ ঘোষণা করছে না?এখন আমি যদি লাঠি বা অস্ত্র লইয়া এইটার বিরূদ্ধে নামি তাইলেই তো যুদ্ধ বাঁইধা যাইবো।রাষ্ট্রীয় শোষণের বিরূদ্ধে যদি এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়ই তয় এইটা কী প্রগতির দিকে যাওয়ার লক্ষণ না?
@মাহমুদ ইমরান,
চমৎকার প্রশ্ন।
যুদ্ধ তো একটা ঘটনা। সেটাকে কি উদ্দিষ্ট অর্জনের জন্যে আবশ্যক হিসেবে ভাবছেন। আমি বরং যুদ্ধ যে উৎসটার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে, সেটার দিকে মনোযোগ দিবো। যার প্রতিক্রিয়া বিভিন্নরূপে দেখা দিয়েছে। কোথাও যুদ্ধ, কোথাও শান্তিপূর্ণ সমঝোতা।
দাসপ্রথার ক্ষেত্রেই ধরুন। শিল্প বিপ্লবের আগে কোথায় ছিলো দাসপ্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ? শিল্প বিপ্লব সম্ভব করেছে মানুষকে দাসপ্রথার বিরুদ্ধ ভাবতে। তার জন্যে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ হয়েছে, তেমনি যুদ্ধ ছাড়াও ধীরে ধীরে দাসপ্রথার অবলোপ হয়েছে পৃথিবীর নানা অংশে। তাহলে যুদ্ধকে আবশ্যক হিসেবে কীভাবে দাঁড় করাবেন?
তবে তার চেয়ে বড় কথা, যুদ্ধকে আবশ্যক হিসেবে দাঁড়া তো আমরা করাই না, যাদের উপর যুদ্ধটা চাপিয়ে দেওয়া হয় বা অন্তত আমরা যারা যুদ্ধটা initiate করি না (যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ)। যুদ্ধের আবশ্যকতার এই তত্ত্বটা মূলত খাঁড়া করে যুদ্ধ যারা চাপায় তারা। যেকোনো সামরিকতাবাদী, হিটলারের জার্মানি বা অধুনা পাশ্চাত্যে যেভাবে তাদের অনৈতিক যুদ্ধকে হজম করার জন্যে war is good for economy বলে একটা পপুলার ধারণা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ শক্তির ধারক বাহকের তরফ থেকে সাধারণত শক্তির উপকরণগুলোর পক্ষে আবশ্যকতার প্রপঞ্চ প্রস্তাবিত হয়। আমি সেটার বিপক্ষে বলছি। আমাদের উপর যদি যুদ্ধ বা বলপ্রয়োগ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তার বিপরীতে আমাদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধের যেই প্রতিক্রিয়া, সেটাকে কি তখন after the fact এভাবে বর্ণনা করবেন যে – হুমম, যুদ্ধটার খুব দরকারটা ছিলো। তাহলে সেটা একটা বিভ্রান্তিমূলক ভাবনা হবে। কারণ, এমন তো না যে সেখানে আপনার কয়েকটা অপশন ছিলো, তার মধ্যে থেকে আপনি সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন আমার উদ্দিষ্ট প্রগতি অর্জনে।
নানাভাবে প্রগতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে, কিন্তু তাতে তারা প্রগতিরে জন্যে আবশ্যক প্রমাণ হয় না।
মানুষের ইতিহাসে রাষ্ট্র তো খুব নতুন একটা সংযোজন। এটা আরও বহুকাল থাকবে এমনটা ভাবছেন কেন?পুঁজিবাদ রাষ্ট্রকে খুব শক্ত ভীতের উপর দাঁড় করিয়েছে, এর পরের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা এতটা নাই তো থাকতে পারে। আমার কাছে তো মনে হয় সেটা না থাকার সম্ভাবনাটাই বরং বেশী।
@বন্যা আহমেদ,
বহুকাল না হলেও, কিছুকাল তো বটেই। আধুনিক রাষ্ট্র নতুন সংযোজন হলেও, ঈশ্বর ছাড়াও অন্যান্য উচ্চতর শক্তিধারীর গোলামি মানুষের পুরাতন সংযোজন। তার থেকে বের হয়ে নিজের দেখভাল নেওয়ার চিন্তা কি মানুষ করে উঠবে?
আর আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণাও কিন্তু আপনাআপনি আসে নি, এসেছে রাজতন্ত্রের বৈধতাকে প্রশ্ন করে। ফলে আগামীতে যেটা আসবে বলে আশা করছেন, সেটা মাগনা নয়। প্রচলিত তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগে প্রস্তুত। প্রশ্ন ও চিন্তার শুরু ছাড়া সেটা আসবে না।
অ্যানার্কিস্ট চিন্তা করার জন্যে কাকে কাকে রাষ্ট্রের নিপীড়নে পড়তে হয়েছে বলবেন কি? গনতান্ত্রিক দেশে অ্যানার্কিস্টদের নির্বাচনে দাড়াতেই বা বাধা কোথায়? মানুষের সমর্থন ছাড়া কেবল শহরের ব্যস্ততম কেন্দ্রে তাবু গেড়ে বসেই রাষ্ট্রইশ্বরের বিলোপ করা হবে?
“আমাদের রাষ্ট্র-ঈশ্বরে বিশ্বাসের পেছনে অল্পই যুক্তি কাজ করে।” এটা তো চরম মৌলবাদী একটা কথা হলো। আপনিই বলুন না রাষ্ট্র-ঈশ্বর ছাড়া মানুষের গড় আয়ু ৮০ বছর কেমন করে আনা সম্ভব, ৭০০ কোটি লোককে খাওয়ানো সম্ভব? একটু বিকল্প বিশ্বসমাজের খুটিনাটির ব্যখা করুন তো।
রাষ্ট্র একটা চুক্তি, কোটি মানুষের চুক্তি। আপনি যদি কোটি মানুষকে কনভিন্স করতে পারেন তবে চুক্তি বাতিল করা কোনো ব্যাপারই না। আপনি কিভাবে কোটি মানুষকে কনভিন্স করবেন?
@সফিক,
অ্যানার্কিস্ট পর্যন্ত তো যাওয়া লাগে না, প্রশ্নটা এভাবে করতে পারেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার নাম দিয়ে রাষ্ট্র কাউকে কখনো নিপীড়ন করেছিলো কিনা? Repression on anarchists নাম দিয়ে একটু সার্চ দিয়ে দেখতে পারতেন।
কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, রাষ্ট্র-ব্যবস্থার বিপক্ষতাই তো একটা বিরল ঘটনা। মানুষ সাধারণ রাষ্ট্র-ব্যবস্থার ধরন ভাঙতে চেয়েছে, আরেকটা রাষ্ট্র-ব্যবস্থার পক্ষ নিয়ে। কিন্তু আপনার ইঙ্গিত মতে তো রাষ্ট্র-ঈশ্বর এই সেচ্ছায় চুক্তি ভাঙা মানুষগুলোকে আদর করে ছেড়ে দিয়েছে।
কাকে জিজ্ঞেস করছেন সেটা? আমি তো তা বলছি না।
মানুষের প্রগতি একটা বহু সহস্রাব্দের চলমান ঘটনা। এখানে যুদ্ধ এসেছে, ধর্ম এসেছে, দাসপ্রথা এসেছে, তেমনি রাষ্ট্রও এসেছে। অনেকে এমনটাও ভেবেছে যে যুদ্ধ ছাড়া প্রগতি সম্ভব ছিলো না, ধর্ম ছাড়া প্রগতি সম্ভব ছিলো না, এমন কি দাসপ্রথা ছাড়া প্রগতি সম্ভব ছিলো না। এগুলোকে বলে naturalistic fallacy.
মানুষের প্রগতির জন্যে রাষ্ট্র আবশ্যক, এটাও তেমনি একটা মস্ত বড় প্রস্তাব।
মানুষ বুঝে শুনে ভেবে রাষ্ট্রকে গ্রহণ করছে, তেমনটা মনে হয় না আমার। এটা বরং একটা লেগাসিই বেশি।
এর বিপরীতে আমার
কথাটা মনে করতে পারেন। 🙂
রাষ্ট্র যতোটা না স্বেচ্ছা চুক্তির মতন, তার চেয়ে বেশি অস্ত্রের মুখে করা চুক্তির মতন। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আপনি মানতে বাধ্য। না মানলে মানানোর জন্যে রাষ্ট্রের কাছে অস্ত্রধারী আছে। সেটাকে আপনি যেভাবে চুক্তি হিসাবে দেখাচ্ছেন, সেটা অনেক বেশি স্বপ্ন কল্পনা লাগছে।
ফলে –
ব্যাপারটা এতো সহজ লাগার কারণ দেখছি না।
আর
তার জন্যে প্রথমে এটা ধরিয়ে দেয়া জরুরি যে রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে আমরা যেমন বিবেচনার আগেই মেনে নিচ্ছে, তেমনটা হতে বাধ্য নয়। অন্তত চিন্তায়। চিন্তায় তাকে প্রশ্ন করা দিয়ে হয়তো সেটার শুরু হবে। এবং সেটা “খুব বিরল থাকবে আরো কিছুকাল”। কোটি মানুষকে কনভিন্স তো দূরের কথা।
@রূপম (ধ্রুব),আমি তর্কের খাতিরে তর্ক করতে চাচ্ছি না, কিন্তু আপনি আমাকে একটু উদাহরন দেখান না যে আধুনিক গনতান্ত্রিক দেশে অ্যানার্কিস্ট চিন্তা করা বা প্রচারের জন্যে কাকে নিপীড়নে পড়তে হয়েছে? অ্যানার্কিজম বাস্তবায়নের জন্যে বোমাবাজি শুরু করলে অবশ্য অন্য কথা। রাষ্ট্র ব্যবস্থা মানতে বাধ্য কে করছে? আমেরিকায় কতো কমিউন, মিলিশিয়া কমিউনিটি, ধর্মীয় কাল্ট কমিউনিটি আছে যারা ট্যাক্স দিতে অস্বইকার করে নিজস্ব সমাজ বানিয়ে থাকছে। অ্যানার্কিস্টদের গনতন্ত্রের পথে রাষ্ট্র বিলুপ্তি ঘটাতে বাধা কোথায়? অ্যানার্কিস্টদের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস, সেনেট নির্বাচনে দাড়াতে বাধা আছে কি? জার্মানীতে ইদানীং পাইরেট পার্টি খুব নাম ডাক করেছে।
আধুনিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি গনতন্ত্র। যে কোনো স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক কোনো বিকল্প ছাড়া রাষ্ট্রের বিলুপ্তিকে পাগল-ছাগলের কথা বার্তা বলবে। রাষ্ট্র নিখুত, অপরিবর্তনীয় এসব তো কেউ বলে না। বিবর্তনের মাধ্যমেই আধুনিক লিবারেল ডেমোক্র্যাসী আপাত শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা হিসেবে এসেছে। এরচেয়ে ভালো কিছু একটা প্রস্তাব করুন না? বেটার ফিট করলে নিশ্চই টিকে যাবে।
@সফিক,
তবে আপনি নিশ্চয়ই ঠাট্টাও করছেন না। 🙂 কতো সোশ্যালিস্ট রিজাইম হাড়গোড় এক করে ফেলেছে তাদের যারা মানে না, তাদের, অ্যানার্কিস্টদের নিশ্চয়ই আলাদা করে ছেড়ে দেয় নি। হ্যাঁ উল্টো উদাহরণও নিশ্চয়ই আছে, যেমন বললেন যুক্তরাষ্ট্র। তেমন রাষ্ট্র যদি সত্যিই থাকে যেখানে রাষ্ট্রকে মান্য করা কেবলই চুক্তি, তাহলে তো ভালোই। মানুষকে ভাবার সুযোগ দেওয়া হোক, জানানো হোক যে সে এই চুক্তি অমান্য করতে পারে। অধিকাংশে তো তা জানেই না। না জানানো তো চুক্তির বরখেলাপ হয়ে যায়। কিন্তু আমার মনে হয় না যুক্তরাষ্ট্র এতো উদার। মান্য করে না এমন নাগরিকের উপর বলপ্রয়োগের বহু উদাহরণই যুক্তরাষ্ট্রে আছে।
মনে হয় না। প্রশ্ন করা চিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিকল্প আগে রেডি করে না রাখলে চিন্তা শুরু করা যাবে না, এটাই বরং একটু পাগল-ছাগলের কথা বার্তার মতো শোনাতে পারে।
তবে আপনি যেমনটা বলছেন, নাস্তিকরা যখন বিরল ছিলো, তখন ধার্মিকরাও অনেকটা তেমনটা বলতো। নাস্তিকতার বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ ছিলো, এতে ধর্ম থাকে না, তাহলে সমাজে নৈতিকতা বোধ কীভাবে থাকবে। কিন্তু কোনো স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন নাস্তিক নৈতিকতা বোধ ধ্বংস হবার ভয়ে ঈশ্বর কিংবা ধর্মকে প্রশ্ন করতে পিছপা হয় নি। রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাকে প্রশ্ন করা বৈধ কিনা সেটা ভাবুন। অবশ্য প্রচলিতকে শ্রেষ্ঠ ধরে নিলে আলাদা কথা।
বিকল্পের সন্ধানের জন্যেই চিন্তার শুরু জরুরি। আপনি আশা করছেন বিকল্পটা আপনাআপনি বের হয়ে আসবে। চিন্তা করা লাগবে না। কিন্তু রাজতন্ত্রকে ধ্বসিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রও কিন্তু এসেছে রাজতন্ত্রের বৈধতাকে প্রশ্ন করে করে।
ধর্ম, দাসত্ব, যুদ্ধের ক্ষেত্রেও অনেকে এইসব কথা বলে। তাতে কি আর ওইসবের ফুটোগুলো বন্ধ থাকে?
@সফিক,
তবে আপনার এই কথাটা বেশ ভালো লেগেছে –
ফলে আমার মনে হচ্ছে আমাদের ভাবনা হয়তো কাছাকাছি আছে।
যদিও অধিকাংশ রাষ্ট্রেই এটা সত্য নয়, তবে ব্যাপারটা এমন হলে মোটেও খারাপ হয় না যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা হবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের করা সজ্ঞান চুক্তি ও তা না মানলে জোর করা যাবে না। আপনি হয়তো ভাবছেন আমি একেবারেই আউটঅফ লাইন চিন্তা করছি, বিশাল পরিবর্তন করে ফেলার কথা বলছি, তা কিন্তু ঠিক নয়। আমি সাস্টেইনেবল নন-ভায়োলেন্ট রিফর্মের পক্ষে। আর আমি সবচেয়ে মিনিমাম পদক্ষেপ প্রস্তাব করেছি, আর সেটা হলো অন্তত চিন্তা শুরু করা, অনেকের জন্যেই যেখানে রাষ্ট্র প্রায় taken for granted.
আপনার “রাষ্ট্র একটা চুক্তি”কে যদি একটা প্রস্তাব ধরে নেই, সেটা বরং কেবল চিন্তা শুরু করার চেয়ে অনেক বেশি র্যাডিকাল প্রস্তাব। তবে তেমন একটা রাষ্ট্র বর্তমান অধিকাংশ ব্যবস্থার তুলনায়ই অধিক কাম্য হবে। রাষ্ট্র যদি একটি সজ্ঞান চুক্তি হয়ে ওঠে, রাষ্ট্রের মিথ নির্ভরশীলতা, রিপ্রেশ করার বিভিন্ন যন্ত্র, দুষ্টদের ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ আরও কমবে।
বলতে পারেন রাষ্ট্রকে যারা চুক্তি মনে করে না, বরং রাষ্ট্রকে অবশ্যম্ভাবী মান্য হিসেবে মনে করে, অমান্য করলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যায় বলে মনে করে, রাষ্ট্র দেশের সমস্ত সম্পদ, উৎপাদনের, গণমাধ্যমের, মানুষের মতের মালিক বলে মনে করে, সেইসব নাস্তিকদের জন্যে লিখেছি। লিবারেল ডেমোক্র্যাসি কিন্তু এসেছিলো রাষ্ট্রকে দুষ্ট ও ক্ষতিকর আখ্যান দিয়েই। রাষ্ট্রের সেই প্রকৃত রূপটাকে মনে রাখতে হবে। আজকাল ডেমোক্র্যাসিতে রাষ্ট্র কল্যাণ রাষ্ট্র হবার নামে তার দুষ্ট ও ক্ষতিকর উপাধিটা লুকানোর চেষ্টা করছে। অনেক নাস্তিক যেকোনো কিছুর সমাধানের রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগ করার সুবিধাটির দ্বারস্থ হচ্ছে। এর জন্যে রাষ্ট্র সংক্রান্ত মিথগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরি।
@সফিক,
আর
এই কথাগুলো ধর্মের ক্ষেত্রেও চিন্তা করতে পারেন। সেই অঞ্চলে দেখবেন মানুষ এর চেয়ে অনেক বেশি আশাবাদী।
@সফিক,
প্রচলিতকে প্রশ্ন করার চিন্তা মাত্রেই তো বিকল্প প্রদানে সে দায়বদ্ধ তা নয়। বরং বিকল্পের সন্ধানের জন্যেই চিন্তার শুরুটা আবশ্যক। ফলে আপনি যে এই প্রশ্নটা করেছেন, সেটাই আশাব্যঞ্জক। অনেকেই রাষ্ট্রের বাইরের কল্পনাকে নিষিদ্ধ অঞ্চল কল্পনা করবে, কিংবা বড়জোর একটা বিশৃঙ্খল অরাজকতা কল্পনা করে দ্রুত ফিরে আসবে, রাষ্ট্রকে মান্য করার বাধ্যবাধকতার তাগিদে। এর বিপরীতে আমি বলছি, আসুন রাষ্ট্রকে মহান, আবশ্যক ও কল্যাণকামী হিসেবে বিনাপ্রশ্নে মেনে না নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করি, চিন্তা করতে শুরু করি। Let us not take it for granted.
[img]C:\Users\Owner\Desktop\kalim khan.jpg[/img]
[img]C:\Users\Owner\Desktop\Kalim khan 2.jpg[/img]
@স্বপন মাঝি,
ছবি দুইটা কোথাও আগে আপলোড করতে হবে।
@রূপম (ধ্রুব),
ব্যর্থ।
খুব ইচ্ছে ছিল, গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে। আমার নিজের ইচ্ছে মরে যায়, আমার রুটি-রুজির কাছে।
খুব সংক্ষেপে – জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখায় অনায়সে প্রশ্ন করা যায়। সে প্রশ্ন প্রশংসিত হয়, অগ্রসর চিন্তক সমাজে।
কিন্তু আমরা সে-সব কাঠামোর অধীনে, সে-সব নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলেই নানা রকম ফতোয়া জারি করা হয়। চারপাশ যেভাবে সন্দেহের চোখে বেঁধে ফেলে, তাতে রাষ্ট্রের ঈশ্বরগুলো বত্রিশ দন্ত প্রদর্শন করে হাসতে থাকে। আর আমরা আলোচনার নিরাপদ গুহায় গিয়ে ঠাঁই নেই।
যে বইয়ের দু’টো পাতা স্ক্যান করে এখানে দিতে চেয়েছিলাম, তার সার কথা হলোঃ সনাতন যুগে ঈশ্বর বলতে জগতের মালিককে বুঝানো হতো না। খুব সাদামাটা-মান-সম্মানহীন অর্থ। দেখুন বঙ্গীয় শব্দকোষ/ হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়।
কলিম খান তাঁর ‘দিশা থেকে বিদিশায়’ দেখিয়েছেন সেই মান-মর্যাদাহীন ঈশ্বর কিভাবে জগতের মালিক হয়ে গেলো। খুব সংক্ষেপে – পণ্য-বাহী সমাজের সাথে এর সম্পর্ক খুব নিবিড়।
সেই পণ্য-বাহী সমাজ যদি চায় রাষ্ট্র রুদ্র-মূর্তিমান হয়ে থাকবে, তো তাই হবে। আর যদি মনে করে রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই, তো তাই হবে।
বন্যা আহমেদ খুব অল্প কথায়, মূল কথাটা বলে কেটে পড়েছেন।
আমার মনে হয়, এধরণের লেখায় রয়ে-শয়ে-ধীরে-সুস্থে টানা আলোচনা হতে পারে। হওয়া দরকার। আমরা যে যা কিছু করি না কেন, রাষ্ট্র তো জগতের মালিক ঈশ্বরের চেয়েও অনেক অনেক শক্তিশালী, সে কথা আমাদের খুব করে খেয়াল রাখতে হয়। তা না হলে গুম-খুন হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়, থেকে যায় ড বিনায়ক সেনের মত জেলে যাবার সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে নামটা স্বপন মাঝি হলে জগতের কাক-পক্ষি টের পেত না।
@স্বপন মাঝি,
সশস্ত্র বিদ্রোহের ব্যাপারটা আমি ঠাহর করতে পারি না। এর সবচেয়ে বড় সমস্যা, এটা সেই বলপ্রয়োগকেই অবলম্বন করে যেটার বিপক্ষে বলছি। মারামারি কাটাকাটিতে রাষ্ট্রই শেষে জয়লাভ করে, ক্ষতি যেটা হয় যে রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের জাস্টিফিকেশনটা আরো বাড়ে।
@রূপম (ধ্রুব),
মন্তব্যের সাড়া দিতে গিয়ে যা বললেন, তা পাঠ করে আমার চোখ আকাশে। আপনার লেখার শিরোনাম ‘আমাদের ঈশ্বরগুলো’, অল্প কথায় এর আদি যাত্রাটা ধরে, বর্তমানকে অল্প একটু ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা অর্থাৎ নানারূপে ঈশ্বরের যে অবস্থান, তাকে সনাক্ত করার ইঙ্গিত।
আর একটু খোলামেলা বললে, ছোট-বড় সব রাষ্ট্রই তার জনগণের ওপর ঈশ্বরের মত, আবার ছোট ছোট ( আর্থিক বিবেচনায়) রাষ্ট্রগুলো বড় বড় রাষ্ট্র নামক ঈশ্বরদের কাছে অসহায়।
আমার মূল কথা হলো, লেখাটার ওপর আলোচনা করতে গেলে অনেক অনেক বিষয় চলে আসতে পারতো, সে আলোচনার সুযোগ এ লেখায় ছিল। আমরা প্রতিনিয়ত পুড়ছি, অথচ ‘কত রবি জ্বলেরে/কে’বা আখিঁ মেলে রে, বলে চলে যাই অন্য প্রসঙ্গে।
আর হ্যাঁ, সশস্ত্র বিদ্রোহ নিয়ে আলাদা একটা লেখা হ’তে পারে। আপনি সূচনা করুণ। আলোচকরা মূল সুর হারিয়ে ফেললেও অনেক অনেক পাঠক আছেন, আলোকিত হবেন।
আবারো ধন্যবাদ, গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুল তোলার জন্য।
‘আত্মানং বিদ্ধি’
২টা পাতা স্ক্যান করে দিয়ে দিলাম, হয়তো আলোচনায় সহায়ক হ’তে পারে। না হলে দুঃখিত।
C:\Users\Owner\Desktop\kalim khan.jpg
C:\Users\Owner\Desktop\Kalim khan 2.jpg
anarchist লাইনে যাইতেছেন নাকি?
@রৌরব,
সেটা তো মনে হয় অ্যাকটিভিজম। আমি চিন্তার জগতে বাস করি।
ভাবতে পারেন, এটা ধর্মমোল্লা, রাষ্ট্রমোল্লা নির্বিশেষে সকল মোল্লা-বিরোধী চিন্তার লাইন। মূল প্রশ্নগুলো না এড়ানোর লাইন।
@রূপম (ধ্রুব),
না অ্যানার্কিজম একটা তত্বও বটে। নিচে লিখেছেন খুব কিছু পড়েননি, পড়লে হয়ত আগ্রহ পাবেন। for the record, আমি অ্যানার্কিস্ট নই। বস্তুত, কমিউনিস্টদের তুলনায় তাদের খুব একটা পছন্দ করিনা। একপ্রকারের টোটালিটারিয়ানই মনে করি।
রাষ্ট, বা যেকোন ব্যাপারে “মোল্লা”-ত্ব আর “আপাতত এর চেয়ে ভাল কোন সমাধান দেখছিনা”-র মধ্যে পার্থক্য করছেন কিভাবে?
@রৌরব,
হুমম পড়ি নি। আমার লেখার টোনটা কি টোটালিটারিয়ান ছিলো? যদি না থাকে, তাহলে ব্যাপারটা খুব গোলমেলে হয়ে গেলো। কারণ আমার লেখা পড়ে ভাবছিলেন যে অ্যানার্কিস্ট লাইনে যাচ্ছি, অ্যানার্কিস্ট লাইন টোটালিটারিয়ান, আবার আমার টোন টোটালিটারিয়ান না … 😕
আমি একটা চলমান চিন্তার মধ্য আছি। একটা ইজমের সাথে কোলাকুলি করলে আমার চিন্তা আত্মহননের পথ বেছে নিবে।
রাষ্ট্রকে যেভাবে taken for granted হিসাবে বিবেচনা করা হয়, সেটা থেকে মুক্ত হয়ে চিন্তা শুরু করার জন্যেই লেখাটা। আমি আমার লেখাটাকে নৈরাজ্যবাদী ভাবছি না। অনেক কমেন্ট যদিও এর পেছনে ব্যয় হয়েছে।
বলতে পারেন যে আমাদের অনেকের এই ভাবনাটা কাজ করছে যে রাষ্ট্র তো থাকবেই, আর সে বেটে বেটে আমাদেরকে একটা দুটো অধিকার প্রদান করবে। এর বিপরীতে আমি প্রস্তাব করছি যে রাষ্ট্র তো না থাকারই কথা, এবং আমরা ন্যাচারালি সম্পূর্ণ মুক্ত হবার কথা – এটা আগে আমরা বুঝে উঠতে শুরু করি। (চিন্তায়) সেই phase এ চলে গিয়ে, তারপর সেখান থেকে রিজনিং করে করে আমরা যৌথ চুক্তির ভিত্তিতে একটা একটা দায়িত্ব একটা প্রতিষ্ঠানকে সমর্পণ করতে পারি (তাত্বিকভাবে)। অনেক ক্ষেত্রেই তখন আমরা অনুভব করতে পারবো যে সেটা একটা কেন্দ্রীয়, এককক্ষমতার অধিকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়াটা অযাচিত। প্রথম ধরনের ভাবনার জন্যে মোল্লাত্ব জরুরি, কারণ সেটা বিনা বিবেচনায় একটা বিষয়ে বিশ্বাস আশা করছে (যে রাষ্ট্র তো থাকারই কথা ছিলো)।
আর “আপাতত এর চেয়ে ভাল কোন সমাধান দেখছিনা” হচ্ছে আমার কাছে যুক্তিবাদী আলস্যমূলক অজুহাত। সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি ব্যবস্থায় যখন ধর্ম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়াজড়ি করে ছিলো, তখনও কিন্তু ভাবা সম্ভব ছিলো যে “আপাতত এর চেয়ে ভাল কোন সমাধান দেখছিনা”। ফলে পার্থক্যটা হবে অন্ধ আর অলসের পার্থক্য।
@রূপম (ধ্রুব),
যুক্তিবাদীর *
@রূপম (ধ্রুব),
নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা স্বীকার করা হচ্ছিল কি? ধর্ম যদি স্পষ্টতই একটি সীমিত-কালীন, মানব-নির্মিত, বিকল্প-সম্ভাবনার in principle স্বীকার-কারী একটি সিস্টেম হিসেবে নিজেকে প্রচার করত, তাহলে যার ত্রুটি গুলি মেনে নেয়া অনেকটাই সহজ হত।
চার্চিলের এই মন্তব্যের মধ্যে যে humility আছে, যেকোন totalitarian ব্যবস্থার মধ্যে সেটা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
@রৌরব,
রাষ্ট্রে ও তার মোল্লাদের মধ্যেও মূলত এই ধর্মীয় কালচারই বিদ্যমান। এখানে চার্চিলের humility আমি বলবো একটা অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী ঘটনা।
আমার ধারণা, না-ত্ব-কে totalitarianism-এর বিপরীতে থাকাটাই বেশি মানায়।
আর চার্চিলের বক্তব্যটার সুরে সরকারের খারাপত্বটা “আপাতত এর চেয়ে ভাল কোন সমাধান দেখছিনা” এর তুলনায় উঠে এসেছে ঢের বেশি।
@রৌরব,
anarchism নিয়ে যেহেতু জানা নেই, তার সাথে totalitarianism এর মিলও অজানা। তবে ভীষণ contradictory শোনাচ্ছে কিন্তু। দুই এক লাইনে বললে ভালো হতো। Totalitarianism তো বলপ্রয়োগমূলক। Anarchism কি তাত্বিকভাবে necessarily বলপ্রয়োগমূলক?
@রূপম (ধ্রুব),
anarchism এর কথাটা কতকটা রগড়ানোর জন্য তুলেছিলাম, কতকটা আলোচনার seed হিসেবে। আপনাকে অ্যানার্কিস্ট বা টোটালিটারিয়ান ভাববার কোন কারণই পাইনি 🙂
অ্যানার্কিস্টদের সবচেয়ে বড় আপত্তি ক্ষমতার যেকোন abstraction বা coagulation এর ব্যাপারে। অর্থাৎ রাষ্ট্র, সংসদ, সম্রাট যেকোন ধরণের কৃত্রিম ফর্মেশন, যা কিনা ক্ষমতার মূল উৎস (জনতা)-র মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে (বা দাবী করছে), তার বিরূদ্ধে এদের অবস্থান। কিন্তু এর বিকল্প জিজ্ঞেস করলে তার জবাবটা সাধারণত একধরণের টোটালিটারিয়ান ডাইরেক্ট ডেমোক্রসীর রূপ নেয়।
এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে লিবারটারিয়ানদের, যাদের সন্দেহের মূল তীর ক্ষমতার দিকে ধাবিত (সে যার ক্ষমতাই হোক, জনগণের হলেও)।
সীমিত রাজতন্ত্র আর স্বৈরতান্ত্রিক গণতনত্রের মধ্যে লিবার্টারিয়ান প্রথমটি বাছাই করবে, অ্যানার্কিস্ট দ্বিতীয়টি।
@রৌরব,
এটা কঠিন ডিলেমা তো দেখি। :-s
আমার লেখায় আপত্তিটা কি ক্ষমতা নিয়ে নাকি ক্ষমতার abstraction নিয়ে? 😕
আমি মনে করি ক্ষমতাকে নিয়েই –
কিন্তু সেই চিন্তাটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে সম্ভবত abstraction গুলোকে নিয়ে প্রশ্ন করাকে পন্থা হিসেবে অবলম্বন করা হয়েছে।
@রৌরব,
বহু পদের অ্যানার্কিজম পাওয়া যাচ্ছে –
Individualist anarchism
Anarcho-capitalism
Collectivist anarchism
Anarcho-communism
এর মধ্যে কয়েকটা আবার libertarianism এর বেশ কাছ দিয়ে যায়। ফলে লিবার্টারিয়ানিজমের সাথে অ্যানার্কিজমের আপনার দেয়া শার্প কন্ট্রাস্টটা আর টিকছে না।
অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্ট থেকে বিষয়টা তুললাম, বলছি না যে আমি এদের মধ্যে কোনো বিশেষ পদের পক্ষে বলছি। উপরের সব কয়টা অ্যানার্কিজম রাষ্ট্রকে abolish করার পক্ষে। আমার লেখার প্রস্তাবনাটা সে তুলনায় অতি সামান্য, যে – রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের নির্বিচার আস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করা।
@রৌরব,
(নাস্তিক কি প্রভু বরদাস্ত করবে?)
(কিংবা, প্রভু বরদাস্ত করারা কি প্রকৃতই নাস্তিক হয়ে উঠতে পারে?)
@রূপম (ধ্রুব),
httpv://www.youtube.com/watch?v=WUQBgbkWx2g
২৫.৫০ এর দিকে এর একটা জবাব পেতে পারেন। রাষ্ট্রের ব্যাপারে আমার মতামতটা কাছাকাছি।
@রৌরব,
টমাস পেইনের সাধারণ জ্ঞান অনুবাদের আপনি লিখছেন –
প্রায় হক কথা। তবে এটাও এখানে স্বীকার করা হচ্ছে যে এটা সীমাবদ্ধতা-“জাত” একটা সংগঠন। মানুষের নৈতিকতা ও বিবেকের সীমাবদ্ধতার একমাত্র ফলাফল, তা কিন্তু দাবি করা হচ্ছে না। অর্থাৎ সরকারের justification এখানে খুবই সীমিত ও দুর্বল। টমাস পেইন যে প্রায় মুক্ত মন নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, সেটার ঘাটতি থাকলে ওনার লেখা অনেকেরই কিন্তু মাথার উপর দিয়ে যাবে। নাস্তিকদের অনেক যুক্তি যেভাবে ধার্মিকদের মাথায় ঢোকেই না। অর্থাৎ ধার্মিকদের মনে যেমন অনড়ভাবে ঈশ্বর বাস করে, সেটাকে স্থির রেখে যেমন তাদের চিন্তা শুরু হয় বলে ধর্ম বিষয়ে স্কেপটিক চিন্তা তাদের কাছে দুরূহ কিংবা প্রায় অসম্ভব। তেমনি, রাষ্ট্রকে অনড় রেখে চিন্তা করলে এর সীমাবদ্ধতা কিংবা বৈধতা নিয়ে মুক্ত চিন্তা কিংবা আলাপ বড়ই দুরূহ। ফলে শুরুটার জন্যে তার যে প্রতিমাটা মনে মানুষ ধারণ করে আছে, তার অপসারণ জরুরি। লেখায় রাষ্ট্র-ঈশ্বরকে প্রশ্ন করে চিন্তার শুরু বলতে আমি সেটাই বুঝিয়েছি। বলতে পারেন, টমাস পেইন আমার আহ্বানে নিষ্ঠার সাথে সাড়া দিয়েছিলেন।