বিবর্তনের বিপক্ষে সাধারনত যে যুক্তিগুলো ব্যবহৃত হয় কিংবা বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে জনপ্রিয় যে ভুল ধারণাগুলো আমাদের মাঝে প্রচলিত সেগুলোকে প্রশ্নাকারে উত্থাপন করে আলোচনা করাই বইটির লক্ষ্য। প্রশ্নগুলোর তালিকা এখানে দেওয়া হলো। মুক্তমনা পাঠকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে প্রশ্ন সম্পাদনা, সংযোজন, বিয়োজন করা হবে।
১। বিবর্তন তো শুধুই একটি তত্ত্ব।
২। বিবর্তন তো পর্যবেক্ষণ করা যায়না। ঈশ্বরের মতো অদৃশ্য বিবর্তনবাদকেও কী তবে বিশ্বাস করে নিতে হয়?
৩। বিবর্তন তো শুনেছি অনেক আগে ঘটেছে। অতীতে যেয়ে বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা তাই অসম্ভব। সেক্ষেত্রে এটিকে মিথ্যা প্রমাণের তো কোনো উপায় নেই।
৪। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব দিয়ে যেমন মুক্তিবেগ অনুমান করা সম্ভব হয়েছে বিবর্তন তত্ত্বও কি এমন কিছু অনুমান করতে পারে?
৫। বোঝা গেলো বিবর্তন একটি ধীর প্রক্রিয়া। তারপরও নিশ্চয়ই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও বিবর্তনের কারণে এক প্রজাতি থেকে ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে। এমন উদাহরণ কি আছে?
৬। বিবর্তনের মাধ্যমে এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীর উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
৭। চোখের মতো জটিল অঙ্গ কখনও বিবর্তনের ফলাফল হতে পারেনা।
৮। বিবর্তন তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে লংঘন করে।
৯। বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক থেকে বোঝা যায় যে, বিবর্তনবাদ আসলে ভুল, ডারউইনের তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই।
১০। বিবর্তনের পক্ষে কী কী প্রমান আছে, শুনি?
১১। বিবর্তন সত্যি হলে বেশিরভাগ মানুষ কেনো এটাতে বিশ্বাস করেনা?
১২। বিবর্তনের সাক্ষ্য হিসেবে যে নিষ্ক্রিয় অঙ্গগুলোর কথা বলা হয় সেগুলো নিষ্ক্রিয় নয়, অতি সূক্ষ্ম কোন জৈবনিক কর্মকান্ড তারা করে থাকে যা
এখনও বিজ্ঞানীরা বের করতে পারে নি।
১৩। বিবর্তন তত্ত্বের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই।
১৪। উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার জন্য জিরাফ যদি তার গলা লম্বা করে নিতে পারে, আমরা কেনো আমাদের ঘাঁড়ে পাখা গজিয়ে নিতে পারি না?
১৫। মানুষ বিবর্তিত হয়ে কী হবে?
১৬। সাগর বা হ্রদের পানির নীচের মাছগুলো অত অপরূপ রঙীন হতে গেল কেন?
১৭। দু’চারটি আংশিক ফসিল বা হাড়গোড় পেয়েই বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের সপক্ষে বড় বড় সিদ্ধান্ত টানেন।
১৮। কোনো ধরণের ট্রাঞ্জিশনাল প্রাণীর ফসিল পাওয়া যায়নি?
১৯। তেজস্ক্রিয় ডেটিং দিয়ে কীভাবে ফসিলের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা যায়?
২০। মানুষ কী তাহলে বানর থেকে আসছে?
২১। পৃথিবীতে তাহলে এখনও কেনো বানর দেখা যায়?
২২। নূহের মহাপ্লাবনের পর আবার কেমন করে জীব বৈচিত্রের উদ্ভব ঘটলো?
২৩। বিবর্তন লিঙ্গের উদ্ভব ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
২৪। প্রকৃতিতে তবে কেনো সমকামীতে দেখা যায়?
২৫। নৈতিকতাও কি বিবর্তনের ফলাফল?
২৬। বিবর্তন মানে তো মারামারি-কাটাকাটি।
২৭। বিবর্তনবাদ থেকে হিটলার ইহুদি নিধনের প্রেরণা নিয়েছেন।
২৮। বিবর্তন প্রাণের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে পারে না (প্রশ্নটা শুরুর দিকে থাকবে)।
২৯। জাকির নায়েক তার বক্তৃতায় প্রমাণ করেছেন যে বিবর্তন ভুল।
৩০। কিছু জৈববৈজ্ঞানিক সিস্টেম অহ্রাসযোগ্য জটিল, বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
৩১। এই মহাবিশ্ব কিংবা আমদের জীবদেহ দেখলেই বোঝা যায় এগুলোনিখুঁতভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, এরা বিবর্তিত হয়নি।
৩২। বিবর্তন তো নাস্তিকতাকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে।
৩৩। ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
৩৩। বিবর্তন ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক, কিন্তু বিজ্ঞান আর ধর্মের মাঝে কোনো সংঘাত নেই।
আমি ১৮ নাম্বার প্রশ্ন টা সম্মন্ধে জানতে চাই…ট্রান্সিশনাল যে প্রাণী গুলো থাকার কথা,তার স্বপক্ষে কি পরিমান প্রমান পাওয়া গেছে এবং প্রমান গুলো কতটা শক্তিশালী?
অনন্ত,
‘হুবহু’ কথাটা মনে হয় আমাদের আরেকটু সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। তুমি ক্রোমোজমের মিল দেখাতে গিয়ে যা বলেছো তা সার্বিকভাবে ঠিক আছে কিন্তু টেকনিকাল ব্যাপারগুলোতে আরেকটু সতর্ক হয়ে লেখা দরকার, এই আর কি। ক্রোমোজমগুলোর সবগুলোই হুবহু মিলে যায় না, কিছু পরিবর্তন আছে এখানে সেখানে। আর তাছাড়া ডিএনএ লেভেলে কত পরিবর্তন ঘটেছে সেটাও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমি এভো ডেভোর লেখাটাতে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করেছিলাম, এই এক-দেড়% পার্থক্য কিন্তু খুব কম কিছু নয়। সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই সময়টাতে আমাদের অর্থাৎ শুধুমাত্র Homo sapiens দের জিনোমে প্রায় দেড় কোটি বেস পেয়ারের পরিবর্তন ঘটেছে। শতকরা হিসেবে এর পরিমাণ এক ভাগের অনেক কম হলেও ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি বেস পেয়ার খুব কম কিছু নয়।
আমার কাছে এই মূহুর্তে ছবিগুলো নেই, তোমার কাছে তো ফেয়ারব্যংসের বইটা আছে, যতদূর মনে পড়ে, সেখানে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির ক্রোমোজমের তুলনা এবং ক্রোমোজম ২ এর ফিউশানের দুটো ছবি আছে। ওই দুটো ছবি এখানে দিতে পারো।
@বন্যা আহমেদ,
ধন্যবাদ বন্যাদি। “হুবুহু” শব্দটি অনেকসময় রিজিড বলে প্রতীয়মান হতে পারে, এরচেয়ে “উল্লেখযোগ্য মিল” (strikingly similar) শব্দদ্বয় ব্যবহার করলে টেকনিক্যাল এরর এড়ানো যেতে পারে!
ডেনিয়েল ফেয়ারব্যাংকস্ তার “রেলিকস্ অব ইডেন” বইয়ে শিম্পাঞ্জি ও মানুষের ক্রোমোসোম ও ডিএনএ অনুক্রমের মধ্যে কমপক্ষে ৯৮% আইডেন্টিক্যাল (অভিন্ন) বলে মন্তব্য করেছেন। শতকরা হিসেবে ২% পার্থক্য হয়তো কিছুই না আমাদের সামনে কিন্তু জিনোমের বেসপেয়ার ধরে হিসেব করতে গেলে বোঝা যায়, পার্থক্যের পরিসরটা কত বড়!
ছবিগুলো খুঁজে দেখি, এখানে দিতে পারি কি না।
@বন্যা আহমেদ,
গুগলে সার্চ করে ছবিগুলো পেলাম না। আমার কাছে ফেয়ারব্যাংকসের বইয়ের ইলেকট্রনিক ভার্শন নেই। হার্ডকাভারটা আছে। তবে মোটামুটি একটা ছবিতে পেলাম মানুষ-শিম্পাঞ্জির ক্রোমোসোমের মিল-অমিল তুলে ধরেছে। ক্রোমোসোম-২ এর অবস্থান এক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
[img]http://science.kqed.org/quest/files/2008/05/hum-chimpchromosomes.gif[/img]
৫। বোঝা গেলো বিবর্তন একটি ধীর প্রক্রিয়া। তারপরও নিশ্চয়ই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও বিবর্তনের কারণে এক প্রজাতি থেকে ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে। এমন উদাহরণ কি আছে?
এটা আমার প্রিয় প্রশ্ন। :))
আমার আরেকটা প্রিয় প্রশ্ন আছে,
সব গ্রেইট এপস এর ২৪ জোড়া ক্রোমোজম, কিন্তু মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজম কেন?
আরো কিছু আছে,
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ বিবর্তন থিওরী সমর্থন করে না, তাহলে আমরা কেন মেনে নিব?
অথবা
অনেক বিদেশি বিজ্ঞানীই(!!) বিবর্তনের বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।
@সুম সায়েদ,
চমৎকার প্রশ্নগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। জানিনা আপনি আমাদের বিবর্তন আর্কাইভ দেখেছেন কিনা, সেখানে এই প্রশ্নগুলোর সবগুলোই আছে, উত্তর সহ।
যেমন,
এখানে দেখুন – ভ্রান্ত ধারণা: নতুন কোন প্রজাতির উৎপত্তি পর্যবেক্ষিত হয়নি
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এপ্রশ্নটির উত্তর আর্কাইভে নেই, কিন্তু বন্যা আহমেদের ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বই সহ অনেক বইয়েই এর ব্যাখ্যা আপনি পাবেন। এক লাইনে বলতে গেলে, মানুষের ২৩ জোড়া ক্রমোজম কারণ, বিবর্তনের যাত্রাপথে একসময় ক্রোমজোমের ফিউশন ঘটেছিলো। ১৯৯১ সালে ইয়েলের বিজ্ঞানীরা মানুষের ক্রমোজোম ২ এর মাঝখানের ডিএনএর সিকোয়েন্সিং করে দেখিয়েছিলেন যে এখানে টেলোমিয়ার-টেলোমিয়ায়ের ফিউশান ঘটেছে, এবং আমাদের পূর্বপুরুষ নরবানর বা এপের দু’টো ক্রমোজোমের মধ্যে জোড়া লেগেই মানুষের ক্রমোজোম ২ এর উদ্ভব ঘটেছে। ২০০২ সালেও এর পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পাওয়া গেছে বিজ্ঞানীদের গবেষণায়। বিস্তারিত জানার জন্য বইয়ের এই অধ্যায়টা দেখতে পারেন।
এখানে দেখুন।
হ্যা এটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে শিগগীরই। তবে সম্পূরক কিছু আছে এখানে।
প্রশ্নগুলোর জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ দা,
প্রশ্ন গুলোর উত্তরগুলো একটু জানি দেখেই প্রশ্নগুলো বেশি মজার। তবে লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ। বন্যাদির লেখাগুলো পড়ছি, বাংলাতে সহজে বুঝাতে পারা, বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক টার্মস ব্যবহার করে আসলে খুব সোজা না। আমার মাস্টার্স এর সাবজেক্ট বায়োইনফোরমেটিক্স, বিবর্তন ঘুরে ফিরে উদাহরনগুলোতে হরহামেশা আসে। ক্রোমোজোমাল ট্রান্সলোকেশন আর ক্রোমোজমের ফিউশনের পার্থক্য পড়ার সময় মানুষের ক্রোমোজম ২ এর সাথে পরিচয় হয়। নরমাল ক্লাস্টারিং প্রোটিওমিক্স পড়ানোর সময় উদাহরন হিসেবে আসে মানুষ আর গ্রেইট এপ্স এর সেলুলার কম্পোনেন্ট এর তুলনামূলক বিশ্লেষন। আর এগুলো নিত্যদিনের ল্যাব আর এসাইনমেন্ট এর কাজ। বিবর্তন নিয়ে যে এত টানাপোড়া আছে জানতাম না তখন। তাই দুই বছর এগুলো পড়ার পর যখন বাস্তব জীবনে দেখি কত শিক্ষিত মানুষ বিবর্তন নিয়ে দোটানায় আছে তখন খুব অদ্ভুত লাগে। আপনাদের বিবর্তন আর্কাইভ দেখেছি। খুব খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি এমন কোন টপিক বের করতে যেটা নিয়ে আপনারা এখনো কিছু লিখেন নাই। পেলাম না এখনো। 😛 ক্যান্সার কোষ নিয়ে লিখব ভাবলাম, দেখি বন্যাদি ওটা নিয়ে আরেকটা পর্ব শুরু করেছেন। :guru:
বাংলাদেশিরা যারা বিবর্তন কে অগ্রাহ্য করেন, তারা আসলে বিবর্তন সম্পর্কে জানেন না, বা পড়েন না কিছুই। জনাব নায়েকের মত আরো কিছু স্বদেশি ক্রিয়েশনিস্ট হলে ভালো লাগতো খুব। আমরা প্রশ্ন উত্তর নিয়ে বসে আছি, কেউ জিজ্ঞেসই করে না। যেটাই হোক, আপনাদের বিবর্তন আর্কাইভ আরো সমৃদ্ধ হোক।
@সুম সায়েদ,
যাক আরেকজন লোক মুক্তমনায় পাওয়া গেল যার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রিলেটেড। এ ধরনের মানুষই তো খুঁজছি। আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন? 🙂
লেখা শুরু করে দিন তাড়াতাড়ি।
@অভিজিৎ দা,
বিবর্তন নিয়ে যে বাংলায় লেখার এত প্রয়োজনীয়তা আছে বুঝি নাই আগে। আর সোজা বাংলাতে লিখতে পারাটাই তো একটা শিল্প। তারপর যদি বিজ্ঞানভিক্তিক লেখা হয়, তাহলে বেশ কঠিন হয়ে যায়। তবে চেষ্টা নিশ্চয়ই করবো; যেহেতু আমাকেই খুঁজছে মুক্তমনা। :))
আবীর ভাইকেও ধন্যবাদ ইমেইল এড্রেসের জন্য।
@অভিজিৎ, আপনি আমার একটা বিবর্তন সম্পর্কে Misconception কে দূর করে দিয়েছেন। সনাতনী ল্যমার্কীয় মতবাদ পড়ে আমি ভাবতাম যে বিবর্তন মনে হয় সেই সিঁড়িটার মত যেখানে নিচুশ্রেণীর প্রাণী থেকে উঁচু শ্রেণীর প্রাণী উৎপন্ন হওয়া বোঝায়। একারণে বিবর্তন এর প্রয়োগের ফলে আমি ইউজেনিক্স ক্রিয়েট হবার আশংকা করতাম। তবে বিবর্তন যদি শাখা প্রশাখা এর ন্যায় হয়ে থেকে তাহলে মানতে হবে যে এই শাখা সমূহেরও বহু প্রকরণ আছে। কেননা লবস্তার আর মানুষ এর বিবর্তন একই সাথে হলেও একই মাত্রায় হয় না। এক্ষেত্রে যে প্রকরণ এবং সেপারেট ডিভিশান এর অস্তিত্ব আছে সেক্ষেত্রে ট্রি বা গাছটা ঠিক কিভাবে কাজ করে সেটা জানাবেন?
আর দ্বিতীয় কথা ট্রি এর তত্ত্ব সঠিক যদি হয় তাহলে কি আমরা এটা ধারণা করতে পারি যে প্রত্যেক প্রাণী এর উৎপত্তি আলাদা সময়ে হুলেও বিকাশ একই সাথে ঘটে?
তাহলে কি এটা প্রাকৃতিক প্রতিযোগিতা তে সুযোগ এর অভাব যে বহু প্রাণী কোটি কোটি বছর ধরেও বুদ্ধিমত্তার ধাপে উপরে উঠতে পারছে না। বা তাদের আমাদের ন্যায় বিকাশ ঘটেনি?
আর যদি আরেকটা বিষয় মেনে নিতে হয় তাহলে বলব আমাদের ইনটেলিজেন্স এর বিকাশ টা কয়েকটা অসম্ভব ঘটনা এর ফল (ঠিক কিনা? )
আচ্ছা এর দ্বারা কি রেয়ার আর্থ থিয়োরি কে সাপোর্ট করা হচ্ছে না? আর এটা যদি সত্যি হয় তবে আমরা কি আসলে মহাজাগতিক পথিক নই? 🙁 🙁
এটা হলে তারপরেও সৃষ্টির একটা অর্থ থাকে কিন্তু না হলে এটা একেবারেই অর্থহীন বলে মনে হয় ;-( ;-( এটা কেন হবে????? এর কি কোন মধ্যবর্তী তত্ত্ব নেই?
@সুম সায়েদ ভাই,
আপনি আমাদের বইয়ের প্রশ্নত্তোরগুলো রিভিউ করতে পারেন। সময় থাকলে আমাকে ইমেইল দিয়েন [email protected]
@রায়হান আবীর, এখানে Levinthal Paradox এর বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা যেত কি? কেননা এটা আরেকটা বিরাট প্রশ্ন বিবর্তন সমন্ধে সংশয়বাদীদের ? এটা একটু লক্ষ্য রাখলে ভালো হয় :))
@অভিজিৎ দা,
Ensatina salamander নিয়ে আরেকটু লেখার ইচ্ছা আছে। দয়া করে বলবেন কি, বিশ্লেষনমূলক লেখা হয়ে গিয়েছে কিনা আগেই! এখানে ছাড়া অন্য কোথাও না থাকলে, আরেকটু পড়ে লিখে ফেলতাম। ধন্যবাদ।
@সুম সায়েদ,
অবশ্যই। [email protected] – এই ঠিকানায় লেখা পাঠিয়ে দিন।
আর আগ্রহের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@সুম সায়েদ,
অভিজিৎদা এই প্রশ্নের উত্তরে ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা দিয়ে দিয়েছেন। তবে আমি সামান্য কিছু যোগ করতে চাচ্ছি এর সাথে :
মানুষ, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাং একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। মানুষের সাথে এসব প্রাণির শারীরিক গঠনের সাদৃশ্য অনেক বেশি; যেমন মানুষ, শিম্পঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাঙের লেজ নেই। এদের শরীরের কঙ্কালের গঠন মোটামুটি একই। চোখ দুটি মস্তকের সামনের দিকে অবস্থিত। দুই পাশে নয়। মানুষের মত এদের প্রত্যেকের ৩২টি করে দাঁত রয়েছে। মানুষের মত ঠিক সোজা হয়ে হাঁটতে না পারলেও একটু কুঁজো হয়ে প্রয়োজনে দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে এরা। দুই হাতে পাঁচটি করে দশটি আঙুল এবং দুই পায়ে পাঁচটি করে দশটি আঙুল রয়েছে। আঙুলে নখ রয়েছে। মানুষের সাথে এদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, রক্তপ্রবাহনালী, নার্ভ ইত্যাদির পার্থক্য খুবই কম। কিন্তু মানুষের প্রতিটি জননকোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ২৩টি, আর শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাঙের প্রতিটি জননকোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ২৪টি। (যৌনজননশীল জীবের দেহকোষে ডিপ্লয়েড (২n) সংখ্যার ক্রোমোসোম জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে আর জননকোষে (শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে) হ্যাপ্লয়েড (n) সংখ্যক ক্রোমোসোম অবস্থান করে।)। প্রশ্ন দেখা দেয় এরা যদি একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে থাকে তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে একটি ক্রোমোসোম কমে গেল কিভাবে? দীর্ঘদিন এ প্রশ্নটি জীববিজ্ঞানীদের ভুগিয়েছে। অবশেষে রহস্যটির সমাধান হয় ১৯৮২ সালে। সায়েন্স জার্নালে জর্জ ইউনিস এবং ওম প্রকাশ যৌথভাবে ‘Origin of Human Chromosome 2: A Chromosomal Pictorial Legacy’ শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। গবেষণাপত্রে বলা হয় ‘মানুষ, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাঙের ক্রোমোসোমের গঠনে-আকৃতিতে প্রচুর মিল রয়েছে এবং মিল থাকার কারণে এই ক্রোমোসোমগুলোকে একের পর এক সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে নেয়া যায়’।
পরবর্তীতে মানব জিনোম প্রকল্প থেকে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানা গেছে, শুধুমাত্র ক্রোমোসোমের গঠনে মিল নয়, শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের ক্রোমোসোমের মধ্যে অবস্থিত ডিএনএ অনুক্রমের মিল প্রায় ৯৮% এর উপরে। এদের (মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি) ক্রোমোসোমের তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, মানুষের একটি মাত্র ক্রোমোসোম (ক্রোমোসোম নম্বর ২) বাদে বাকিগুলোর গঠন হুবহু শিম্পাঞ্জির ক্রোমোসোমের গঠনের সাথে মিলে যায়। মানুষের এই ব্যতিক্রম ‘ক্রোমোসোম-২’ আবার শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাঙের পৃথক দুটি ক্রোমোসোমের (ক্রোমোসোম-২A এবং ক্রোমোসোম-২B) গঠন এবং এই ক্রোমোসোমগুলোর ভিতরের ডিএনএ’র অনুক্রম পরস্পরের সাথে হুবহু মিল খায়। বংশগতিবিজ্ঞানী এবং আণবিক জীববিজ্ঞানীরা ডিএনএ’র অনুক্রম এবং ক্রোমোসোমের গঠনের এই বিশাল সাদৃশ্য থেকে নিশ্চিৎ, যেহেতু শিম্পঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাঙের জননকোষে ২৪টি ক্রোমোসোম রয়েছে এবং বর্তমানে মানুষের জননকোষে ২৩টি ক্রোমোসোম রয়েছে, তাহলে পূর্বে একসময় মানুষের পূর্বপুরুষেরও জননকোষে ২৪টি ক্রোমোসোম ছিল। একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর বিবর্তনের কোনো এক পর্যায়ে ক্রোমোসোম মিউটেশন ‘সংমিশ্রণ’ (Fusion) ঘটার মাধ্যমে ক্রোমোসোম-২A এবং ক্রোমোসোম-২B জোড়া লেগে মানুষের ‘ক্রোমোসোম-২’ গঠিত হয়। ফলে পূর্বপুরুষের তুলনায় জননকোষের ক্রোমোসোমের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে বর্তমানে মানুষের ক্রোমোসোম সংখ্যা ২৩টি হয়েছে।
@অনন্ত বিজয় দাশ,
এই সাইন টা আসলো কোত্থেকে আবার? হ্যাপ্লয়েডের শেষে ব্রাকেটে n হবে।
রায়হান, প্রশ্নগুলোকে এক সাথে দেখলে কেমন যেন এলোপাথারি লাগে।
বইয়ের জন্য বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় নাকি? আমাদের আর্কাইভে যেমন আছে –
বিজ্ঞানের তত্ত্ব
বিবর্তনের সাক্ষ্যপ্রমাণ
প্রাকৃতিক নির্বাচন, পরিব্যক্তি, প্রকারণ ও অন্যান্য
জীবাশ্মবিদ্যা ও ভুতত্ত্ব
মানব বিবর্তন
যৌনতা, প্রবৃত্তি, নৈতিকতা ইত্যাদি …
আমার মনে হয় প্রশ্নগুলোকে বিভাগ অনুযায়ী বিন্যস্ত করে নিলে ভাল হয়।
@অভিজিৎ দা,
অবশ্যই বিভাগ হিসেবে বিন্যস্ত করে দেবো।
হ্যা. অভিজিৎদা . এ নিয়ে আপনার সাথে আগেও আলোচনা হয়েছিল। এখানে দিলাম যাতে প্রশ্নটা সংযোজিত হয়।
@রনবীর সরকার,
অনেক ধন্যবাদ । আর্কাইভে রাখা হয়েছে; এখানে।
রায়হানকে প্রশ্নটি বইয়ের জন্য রাখতে অনুরোধ করছি।
অভিজিৎদা, ঐ আর্কাইভে ফসফোরাস এর পরিবর্তে আরসেনিক বেইসইড ব্যাক্টেরিয়া এর কথা যুক্ত করতে পারেন। তথ্য এখানে।
@নির্মিতব্য,
হ্যা আর্সেনিকভিত্তিক প্রাণের খরবটি আসার পর মুক্তমনাতেও লেখা হয়েছিলো। স্বাধীনের পোস্ট এখানে।
তবে রনবীরের প্রশ্নটি যেহেতু ছিলো কেবল সিলিকন প্রাণকেন্দ্রিক তাই সে ব্যাপারটা এখককার আলোচনায় আনা হয়নি। আপনার ইনপুটের জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
অভিদা করে দিলাম।
পৃথিবীতে তো সিলিকন প্রচুর পরিমানে ছিল। তবে সিলিকনঘটিত প্রাণের সৃষ্টি কেন হল না।
@রনবীর সরকার,
কেন হল না বলা মুশকিল। এটা নিয়ে বোধ হয় আগে আপনার সাথে আলোচনা হয়েছিলো। কার্বন পরমাণুর অসংখ্য বন্ধন তৈরি করেছে দুটো কারণে – আইসোমারিজম এবং ক্যাটিনেশন। ফলে কার্বনের জটিল লম্বা ও স্থায়ী শিকল তৈরি হতে পারে। খুব কম হলেও কার্বনের মত সিলিকনেরও এই ধর্মটি আছে। সেজন্য কৃত্রিম প্রাণ তৈরির ক্ষেত্রে (যেমন রোবোটিক্স) সিলিকন খুব গুরুত্বপূর্ন উপাদান। পৃথিবীতে পরিপূর্ণ সিলিকন-ভিত্তিক প্রাণ না থাকলেও কিছু প্রটোজোয়া, রেডিওলারিয়া, ডায়াটাম এলিজি সিলিকনভিত্তিক প্রাণের ছোট দৃষ্টান্ত, মানে তাদের দৈহিক কাঠামো (skeleton) সিলিকনভিত্তিক। কিছু সামুদ্রিক জলজ প্রাণীর মধ্যে (sea urchin) সিলিকন ডাই অক্সাইড দিয়ে তৈরি মেরুদণ্ডের অস্তিত্ব আছে। আর সর্বোপরি, পৃথিবীতে না হলেও মহাবিশ্বে সিলিকন ভিত্তিক প্রাণের অস্তিত্ব একেবারে বাতিল করে দেয়া যায় না।
কিন্তু এটি সত্য যে, আমাদের পৃথিবীতে সিলিকন-ভিত্তিক প্রাণের বিকাশ দৃশ্যমান নয়। আমার মতে যে কারণ গুলো আছে তা হল – সিলিকন পরমাণুর আকার কার্বন পরমাণুর চেয়ে বড়। বৃহৎ এই আকৃতির কারণে সিলিকন কার্বনের মতো হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করতে পারে না। যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ হাইড্রোজেন বন্ধনকে ব্যবহার করে থাকে সেগুলো সাধারণত কাঠামোগত-ভাবে শক্তিশালী ও নমনীয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ সিলিকন কার্বনের মতো খুব সহজেই ডাবল বা ট্রিপল বন্ধনের দিকে চলে যেতে পারে না।
আরেকটি সমস্যা হল – সারা মহাবিশ্বেই কার্বনের তুলনায় সিলিকনের তুলনামূলক অপর্যাপ্ততা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশে, ধূমকেতুর লেজে, বড় বড় গ্রহের বায়ুমণ্ডল সহ নানা জায়গায় সিলিকন এবং সিলিকন-ভিত্তিক প্রাণের সন্ধান করছেন বটে, কিন্তু সিলিকনের অণুকে কেবল অক্সাইড রূপেই দেখতে পাওয়া যায়, সিলেইন (Silanes) বা সিলিকোন (Silicones) আকারে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়াই যায়না প্রায়।
শেষ সমস্যা আমার মতে ডানাবর্তী-বামাবর্তীর দ্বন্দ্ব। আমরা জানি, পৃথিবীতে পাওয়া অ্যামিনো এসিডের সবি বামাবর্তী (left-handed)। আমাদের দেহের প্রোটিন এবং ডিএনএ-এর অত্যাবশ্যকীয় কাঠামোগুলো এই বামাবর্তী অ্যামিনো এসিডকে ব্যবহার করেই গরে উঠেছে। কিন্তু খুব কম সিলিকনের মধ্যেই এ ধরণের আবর্তিতার (handedness) সন্ধান পাওয়া গেছে।
সমস্ত বিষয়ের বিবেচনায় অনেকের কাছেই কার্বন জীবন গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান হিসাবে বিবেচিত। এর ফলাফল হচ্ছে, আমাদের জীববিজ্ঞানীদের যাবতীয় গবেষণা অস্বস্তিকরভাবে ওই একই ধরনের ‘কার্বন ভিত্তিক’ জীববিজ্ঞানের কারাগারে বন্দি। তবে মহাবিশ্বের কোথাও সিলিকন-ভিত্তিক প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হলে এই বন্দিদশা ঘুচে যেতেও পারে, কে জানে!
বিবর্তনের ফলে ওষুধী গুণসম্পন্ন গাছের সৃষ্টি হল কেমন করে?
গাছের ওষুধি গুণের ফলে গাছ তো আর বাড়তি সুবিধা পেত না।
রায়হান,
হাহাহাহা, জাহাজে না ভেলায় না কোন চুলায় যেন জোড়ার জোড়ায় সব জীব উঠানো হয়েছিল তাদের প্রসবিত অশ্বডিম্ব থেকে …
এই প্রশ্নটা কে করে? এর শানে নযুল কী?
এই প্রশ্নটা কি খুব প্রাসঙ্গিক? এরকম তো আরও হাজারো প্রশ্ন করা যায়।
এরে এত পাত্তা দেওয়ার কী দরকার আছে? আমার মতে এই ধরণের জোকারদের নামে প্রশ্ন উৎসর্গ করে বইটার রিয়েল এস্টেট নষ্ট করলে অপচয়ের মাত্রা অযথাই বাড়বে।
হাহাহা, তা তো দিয়েছেই! তাতে অসুবিধা কী? এটাকে রিফিউট করা দরকার কী?
@বন্যা আহমেদ,
বন্যার সাথে একমত। প্রশ্নগুলো ‘একই টাইপের’ (consistent) হওয়া উচিত।
হাবাগোবাদের প্রশ্ন, যেগুলোর উত্তর জাকির নায়েক দিয়ে বিজ্ঞের মতো হাসতে থাকেন, সেই টাইপের প্রশ্নগুলো পরিহার করা উচিত। আমার মতে প্রশ্নগুলোর ধরন এমন হওয়া দরকার যাতে পাঠকদের মনে হয়, ‘আসলেই তো, এই প্রশ্নটাতো বেশ চ্যালেঞ্জিং, দেখি বিবর্তনের প্রবক্তারা কি উত্তর দেন’। এতে করে উত্তরটা পড়ার জন্য আগ্রহ তৈরি হবে পাঠকের মনে।
একটা উদাহরণ দেই। বন্যার উল্লেখিত এই প্রশ্নটা –
এভাবেও করা যায়,
প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া কি থেমে গেছে? থেমে না গেলে পৃথিবীতে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে না কেন?
স্বীকার করছি, আমার পুরোনো একটা লেখায় আমি হাবাগোবাদের মত প্রশ্নমালা সাজিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম, ‘আমরা বান্দর থাইকা আইছি’ (বন্যা, এটাই বোধহয় শানে নযুল)। তবে আমার লেখার ফরম্যাটটা এই প্রশ্নোত্তরের লেখার চাইতে ভিন্নতর ছিল।
@ইরতিশাদ ভাই,
নূহের প্রশ্নটা ঠিক করছি। তবে আপনার সাজেশন দেওয়া প্রশ্নটা অলরেডি আছে- ৫। বোঝা গেলো বিবর্তন একটি ধীর প্রক্রিয়া। তারপরও নিশ্চয়ই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও বিবর্তনের কারণে এক প্রজাতি থেকে ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে। এমন উদাহরণ কি আছে?
@বন্যা আহমেদ,
নূহ নিয়ে প্রশ্ন করে এমন যে, নূহের মহাপ্লাবন হলে বিবর্তন তত্ত্ব কিভাবে সত্য হয়। এই প্রশ্নটা অনেকেই করে এবং এক লাইনেই এই প্রশ্নের উত্তর বলা যায়- নূহের মহাপ্লাবন কখনই হয়নি। কোনো ধরণের প্রমান নেই। কিন্তু তারপরও আরেকটু বিস্তারিত আলোচনার জন্য এভাবে প্রশ্নটা লিখেছি। অন্যভাবে কিভাবে লেখা যায় তার সাজেশন দেন?
জোকাররে তো অনেকেই গুরু মানে। পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ মনে করে। এবং এখন বাংলাদেশিদের মাঝে অনেকেই জোকারের বিবর্তন সংক্রান্ত কথাবার্তাই ধুপধাপ বলে বসেন। এর নাম নেওয়ায় যদি বই থেকে গন্ধও আসে তবুও দেওয়া দরকার মনে হইছিলো। তবে এখন আরেকবার চিন্তা করতে হবে।
৩২ নাম্বার বাদ দিয়ে দিলাম।
@রায়হান আবীর,
আমার মনে হয় নূহ নবীর মহাপ্লাবণ কেন্দ্রিক প্রশ্নটা আর জাকির নায়েকরে নিয়ে প্রশ্ন দুইটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। নূহ নবীর পরে কিভাবে জীব বৈচিত্র সৃষ্টি হল সেটা যেভাবে লেখা হয়েছে এখন ঠিকাছে।
আর জাকির নায়েক কিংবা হারুন ইয়াহিহার বিবর্তনবিরোধী নানা প্রচারণা বাংলাদেশের জনমানসে খুবই প্রবল। তাই দুই একটা প্রশ্ন রাখা যেতেই পারে। বইয়ের মূল উদ্দেশ্য তো সর্বোপরি মানুষকে সচেতন করে তোলাই, তাই না?
@অভিজিৎ,
নূহের মহাপ্লাবনের প্রশ্নটা এভাবে দেওয়ার আরেকটা কারণ হলো এই আলোচনা করতে গিয়ে আদম-হাওয়ানামক দুইজন দ্বারাও যে বৈচিত্রপূর্ণ মানবজাতির উদ্ভব অসম্ভব সেটাও ঢুকিয়ে দেওয়া। আর জাকির নায়েক এই দেশে একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রশ্নটা তাই রাখা দরকার বলে আমারও মনে হয়।
সৃষ্টিবাদীদের কতগুলো হাস্যকর ‘যুক্তি’ একবার আমিও সংগ্রহ করেছিলাম। দেখতে পারেন এখানে।
সৃষ্টিবাদীদের সবচেয়ে হাস্যকর ‘যুক্তি’গুলো
@অভীক,
ব্লগটা আগেই দেখেছিলাম যখন পোস্টাইছেন। শতকোটি বছর আগে যদি পৃথিবী সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে আমরা কেবল ২০১২ সালে কেন? এই প্রশ্নটা পুরা বান্ধায় রাখার মতো।
আরেকবার আপনার করা লিস্টটা দেখলাম। এখানে বোধহয় প্রায় প্রত্যেকটাই কভার হয়ে যাবে।
অবশ্যই। ল্যাবে ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ ব্যবহার করে শষ্য , ফল ইত্যাদি উদ্ভাবন করা হচ্ছে এবং এর ডিজাইনার মানুষ।
বিবর্তন শুধু ধর্মের সাথেই সাংঘর্ষিক নয় , মামদো ভুতের সাথেও সাংঘর্ষিক। বিজ্ঞান আর ধর্মের মাঝে কোন সংঘাত নেই , যেমন মানুষ এং মামদো ভূতের মধ্যে কোন সংঘাত নেই।
@সংশপ্তক,
ভাইয়া, হাসুন আর যাই করুন পৃথিবীর অনেক অনেক মানুষই মনে করে ডাইনাসোর এবং মানুষ একই সময় প্রকৃতিতে ছিলো। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে তো এই প্রশ্নগুলো একেবারে আইন্সটাইনীয়। আপনার, আমার কাছে যতৈ হাস্যকর লাগুক না কেনো, প্রশ্নগুলো মানুষ করছেই। এখন সত্যিকার অর্থেই আপনার মতো দুই লাইনে এই প্রশ্নগুলো ছুড়ে ফেলে দেওয়া সম্ভব। বেশিরভাগ প্রশ্নই উদ্ভট এবং বিবর্তন সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা না থাকার উদাহরণ। কিন্তু কি করা যাবে।
@সংশপ্তক, ধর্ম দার্শনিক আর্গুমেন্ট বিবর্তন সায়েন্টিফিক আর্গুমেন্ট। এখন এদের মাত্রা যখন ভিন্ন তখন এদের মধ্যে সংঘর্ষ লাগার কারণটা ঠিক কোথায়(আমি এখানে স্বার্থবাদীদের কথা বলছিনা)
আর আমরা জানি যে অ্যাডাম আর ইভ এর যে অবতারণা সেটা করা হয়েছিল মানুষকে প্যাগানিজম থেকে সেমিটিজম এ উত্তীর্ণ করার জন্য করা হয়েছিল।
তো এর সাথে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমুহের সংঘর্ষ ঠিক কোথায় ছিল?
এটা (বিবর্তন) ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ উভয়কেই ভুল প্রমাণিত করে না। কেননা সৃষ্টিতত্ত একটা দার্শনিক ব্যাপার এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষিত না ।
বিবর্তন তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে লঙ্ঘন করে – এই দাবী যিনি করেছেন , তার উপরই দায়িত্ব বর্তায় সেই দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা। এমন প্রমাণ এখনও নজরে আসেনি।
@সংশপ্তক,
বার্ডেন অব প্রুফের চেয়েও চমৎকার আর্গুমেন্ট আছে এর উত্তর হিসেবেঃ
http://www.talkorigins.org/faqs/faq-misconceptions.html#thermo
@রূপম (ধ্রুব),
বিবর্তন পুরোদস্তর একটা জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া , যেমন ক্লোরিণ এবং নাটরিয়াম মিলে লবন তৈরী করে। এখানে প্রশ্নটার গোড়াতেই একটা ফ্যালাসী আছে। ডিএনএ কিংবা আরএনএ যে রাসায়িনক অণুমাত্র এটা অনেকেই বুঝতে চায় না।
@সংশপ্তক,
এখানে আসলে অধিকাংশ প্রশ্নই ফ্যালাসিপূর্ণ, স্ট্র ম্যান আর্গুমেন্ট, অনেক সময় লোডেড। ফলে এগুলোর সরল উত্তরটা নিজেও অনেক সময় ফ্যালাসীপূর্ণ হয়। ‘বিবর্তনের কোনো লক্ষ্য নেই’ এই উত্তরটা যেমন। এই উত্তরের একটি ঐতিহাসিক পটভূমি থাকলেও, উত্তরটা ঠিক নিষ্ঠাপূর্ণ হলো না। ভৌত কোনো সিস্টেমের ক্ষেত্রে আমরা আদৌ কি কখনো বলি যে অমুকটার একটা লক্ষ্য আছে? লক্ষ্যের প্রশ্নই তো আসে না অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আলোচনায়। বিবর্তনের ক্ষেত্রে আনাটা হয়েছে একটা বিবর্তনবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল প্রশ্নের উত্তর হিসেবে। এবং স্বভাবতই সেটা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক নিষ্ঠায় ঘাটতি ঘটেছে। কোনো কিছুরই কি আদৌ কোনো লক্ষ্য আছে? লক্ষ্য মূলত আরোপিত কল্পনা।
@রূপম (ধ্রুব),
সহমত। একটা ফ্যালাসীর উত্তর আারেকটা ফ্যালাসী হতে বাধ্য। এর বদলে যৌক্তিক প্রশ্ন আহব্বান করাই যুক্তিযুক্ত।
প্রাকৃতিক ভৌত প্রক্তিয়ায় লক্ষ্যের প্রশ্ন আসবে কেন ? সেখানে তো কেবল উৎস এবং পরিণতি থাকবে। আমরা কি প্রশ্ন করি লবনের লক্ষ্য কি ? বিজ্ঞানের কাজ এই উৎস এবং পরিণতির মধ্যকার সম্পর্ক প্রমাণ সহকারে ব্যাখ্যা করা ।
@সংশপ্তক,
কোনটা ফ্যালাসি আর কোনটা নয়, সেই প্রসঙ্গে না গিয়েও আমার উপলব্ধি হল – প্রশ্নগুলো সৃষ্টিবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে বিবর্তনের বিপক্ষে ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে ‘বিবর্তন প্রক্রিয়া তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র লঙ্ঘন করে’ অন্যতম। আসলে প্রশ্নটাকে যতটা খেলো মনে হয় ততটা নয় কিন্তু। একটা বদ্ধ সিস্টেমে এন্ট্রপি হয় স্থির থাকবে নয়তো বাড়বে। কখনোই কমতে পারবে না। আপনি প্রকৃতিতে কখনোই পাবেন না, যে ভাঙ্গা গ্লাস জোড়া লাগছে, কিংবা ভেঙ্গে পড়া বিল্ডিং এর টুকরো জোড়া লেগে পূর্ণাঙ্গ বিল্ডিং হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র অনুযায়ী এন্ট্রপি কমে না, বাড়ে। অথচ বিবর্তনের বেলায় রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নতুন কোষের সৃষ্টি, কিংবা সরল জীব থেকে জটিল জীবের উৎপত্তিতে এন্ট্রপির হ্রাস হয়, ফলে তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্রের লঙ্ঘণ মনে করেন সৃষ্টিবাদীরা (হেনরি মরিসের মত সৃষ্টিবাদী ‘বিজ্ঞানী’রা তাদের বইয়ে ব্যবহার করেছেন এই আর্গুমেন্ট, আনসারিং জেনেসিসের মত হাজারো সাইটে এই আর্গুমেন্ট আছে)। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিলে আমি তো কোন সমস্যা দেখি না। পিজে মায়ার্সেরর মত জীববিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন, টক অরিজনেও আছে (দেখুন এখানে, কিংবা এখানে )। গুরুত্বপূর্ণ বলেই প্রশ্নটির উত্তর দেয়া হয়েছে।
@অভিজিৎ,
বিবর্তনের ফলে নতুন কোষ সৃষ্টি হলেও ডিএনএ তো ডিএনএ -ই থাকছে , প্রোটিনও প্রোটিন থাকছে। শুধু গঠনশৈলী এবং কর্ম পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটছে। জীবের বিবর্তনে এই প্রশ্নটা সৃষ্টিবাদীরা না করে বরং তারা পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে করতে পারেন যে , কিভাবে হিলিয়াম কিংবা হাইড্রোজেন ভেঙ্গে বাকী সব মৌলিক এবং জটিল যৌগিক পদার্থের আবির্ভাব হয়েছে যা প্রথম জীবের আবির্ভাবেরও বহু আগের ঘটনা। কিন্তু তারা সেটা না করে ডিএনএ-র মত যৌগের পেছনে লেগেছেন।
এই সব সৃষ্টিবাদী ‘বিজ্ঞানীর’ বেশীরভাগই জেনেটিক্সের বেসিক সম্পর্কে অজ্ঞ এবং সেজন্যেই নদী রচনা লিখতে গিয়ে গরু রচনা লিখে দেন।
@সংশপ্তক,
তো? প্রসঙ্গটা ছিলো এন্ট্রপি বাড়া কমার। কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে গেলেও সেটা কাঁচই থাকছে। কিন্তু সেজন্য এন্ট্রপি কমছে না। সময়ের সাথে সাথে এন্ট্রপি বাড়ছে বলেই কাচের গ্লাসকে ভাঙ্গতে দেখি, ভাঙ্গা কাঁচ জোড়া লাগতে দেখি না। ডিএনএ তো ডিএনএ -ই থাকলেও , কিংবা প্রোটিনও প্রোটিন থাকলেও সৃষ্টিবাদীরা দাবী করেন যে এন্ট্রপি এখানে কমছে। ব্যাপারটা কিন্তু মিথ্যে নয়।
হ্যা, ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। এন্ট্রপি কমছে, তবে লোকালি। এখানেই সৃষ্টিবাদীরা ভুল করেন। কোষের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপাত এন্ট্রপি কমা কে নীট এন্ট্রপি কমা ভেবে ভুল করেন। আসলে পুরো ওপেন সিস্টেম গোনায় ধরলে দেখা যাবে এন্ট্রপি কমেনি, বরং এর নীট বৃদ্ধিই ঘটেছে। এ নিয়ে অনেক ক্যালকুলেশন নেটেই আছে।
@রূপম (ধ্রুব),
(Y)
@সংশপ্তক,
এই প্রশ্নকারীরা যদি তাদের দাবীর সপক্ষে প্রমান দিতো বা এমন ধরণের প্রশ্নকারীরা যদি প্রমান সহকারে কথা বলার মানে বুঝতো, লজিক্যাল ফ্যালাসি বুঝতো, তাইলে তো দুনিয়া অনেক আগেই সুখ শান্তিতে ভরে উঠতো।
এই প্রশ্নটা অন্যতম সেলিব্রেটি প্রশ্ন।
ভাল উদ্যোগ। তবে অনেক শব্দ পড়তে পারছিনা। ঠিক হলে পড়তে হবে পরে।
@অরণ্য, এখন পারবেন।
সব ফন্ট ভেঙ্গে গেছে, পড়তে পারতেছিনা। জানিনা এখানে কি প্রশ্ন আছে। তাই আমি প্রশ্ন করে যাই,
বিবর্তন ‘মাল্টিপল রেস’ কে কিভাবে ব্যাখা করে?
ধর্ষণের বিবরতনীয় ব্যাখা কি?
@রিজওয়ান,
এখানে ক্লিক করে ফাইলটা নামিয়ে নিন। তারপরে ইন্সটল করে পিসি রিস্টার্ট দিয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে। তারপরেও না হলে
এখান থেকে ফাইলটা নামান। তারপরে
এখান থেকে সোলায়মানিলিপি ফন্টটা নামিয়ে নিন। ফাইলটা ওপেন করুন। আপনাকে বাঙলা ডিফল্ট ফন্ট সিলেক্ট করতে দিবে। সোলায়মানিলিপি সিলেক্ট করুন। পিসি রিস্টার্ট দিন। কাজ হয়ে যাবে।
@সাইফুল ইসলাম, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। এখন পড়া যাচ্ছে। 🙂
বাই দ্য ওয়ে। মুক্তমনার খোমার উন্নয়ন চমৎকার লাগছে। বিজ্ঞান নিয়ে তরুণদের তোড়জোড় দেখে উৎসব উৎসব মনে হচ্ছে। চলুক।
@রূপম (ধ্রুব), খুবই সত্য কথা। খুব ভালো লাগছে মুক্তমনার এই নতুন চেহারা। 😀
ভালো উদ্যোগ।
বিবর্তনবিরোধীদের মূলত স্ট্র ম্যান আর্গুমেন্ট-টাইপ প্রশ্নের পাশাপাশি বিবর্তন জানতে ইচ্ছুকদের সম্ভাব্য প্রশ্নগুলোও সংযোগ করা যেতে পারে। আবার অনেক প্রশ্নের উত্তরই হয়তো শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে করা সম্ভব নয়। সেসবক্ষেত্রে স্টেট অব দি আর্ট উল্লেখপূর্বক বিনীত উত্তর কাম্য।
আমার নিজস্ব প্রশ্নগুলো যোগ করছিঃ
১) (ক) বিবর্তনের বলা হয় কোনো লক্ষ্য নেই। এখানে লক্ষ্য বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়? হাউ অ্যাবাউট ফিটনেস ফাংশান? লক্ষ্য বলতে এখানে যা বোঝানো হচ্ছে, সেই সংজ্ঞানুসারে ঠিক আর কোন কোন ভৌত সিস্টেমের লক্ষ্য আছে বলা চলে যেমনটা বিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলা হচ্ছে? (যেমন, লক্ষ্য বলতে এমন বোঝানো হচ্ছে কি যে মহাবিশ্বের লক্ষ্য হলো এর এনট্রপি বৃদ্ধি করা?)
(খ) বিবর্তনের যে গাণিতিক বা অ্যালগরিদমিক প্রতিরূপ, যেমন জেনেটিক অ্যালগরিদম, সেখানে কিন্তু আরোপিত লক্ষ্য থাকে। যে কারণে একে একধরনের ‘অপ্টিমাইজেশান’ বা সেরা-অনুকূলকরণ অ্যালগরিদম বলে। বিবর্তনের তেমন আরোপিত লক্ষ্য ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট অবস্থান থেকে কল্পনা সম্ভব নয়? যেমন টেকসই প্রাণী তৈরি?
@রূপম (ধ্রুব),
এখন টেকসই প্রানী বলতে কি বোঝানো হবে, সেটা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। তেলাপোকা বেশি টেকসই, নাকি ডায়নসর? ডায়নোসারের যুগে আপনি বাস করলে তারা গায়ে গতরে কিংবা আধিপত্যের (যেভাবে জুয়ারসিক যুগে পৃথিবীটা কাঁপিয়ে বেড়াতো তারা) ভিত্তিতে হয়তো ডায়নোসরকেই টেকসই বলতেন আপনি। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে টেকসই ডায়নোসররেরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, টিকে রয়েছে কদর্য তেলাপাকাই। আসলে বিবর্তন কাউকে বাঁচানোর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ শুরু করেনি। সেজন্যই বিবর্তনের যাত্রাপথে শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ প্রজাতিই কখনো না কখনো বিলুপ্ত হয়ে যায়, গেছে।
আরেকটা ব্যাপার বিবর্তনের ফলে প্রানীকূল প্রতিদিনই উন্নত হচ্ছে বলে অনেকে ভাবেন, এটা সেভাবে ঠিক নয় [ দেখুন এখানে ]। এখানে অপ্টিমাইজেশন জনিত কোন লক্ষ্য আসলে সেভাবে কাজ করে না, অন্ততঃ সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে তো নয়ই। তাই অন্য অনেক ডিজাইন জনিত অপ্টিমাইজেশনের সাথে এর পার্থক্য আছে।
@অভিজিৎ,
লক্ষ্য নিয়ে আমার ভাবনাটা নিচে সংশপ্তকের উত্তরে দিয়েছি দেখতে পারেন। কোনো ভৌত সিস্টেমের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা আসে না। লক্ষ্য আরোপিত কল্পনা। ফলে আলাদা করে বিবর্তনের লক্ষ্য নেই বলতে গেলে প্রশ্ন আসে লক্ষ্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে এবং সেই সংজ্ঞানুসারে ঠিক কোন ভৌত সিস্টেমটার লক্ষ্য আছে বলা চলে।
আপনার ডাইনোসর আর তেলাপোকার উদাহরণে একটা প্যাঁচ আছে। চাইলে এভাবে ভাবতে পারেন যে বিবর্তন নানারকম প্রাণী তৈরি করে যাচাই করছে কোনটা প্রাণীটির পরিবেশে টিকবে। যেটা টিকে যাচ্ছে, সেটা তো টেকসই বটেই! কিন্তু ওই, পরিশেষে লক্ষ্য একটা আরোপিত ভাবনা-ই। বিবর্তনের সেরকম কোনো এজেন্ডা নেই। ফলে
এই পার্থক্যটা স্পষ্ট করা দরকার। কেনো বিবর্তনকে অপ্টিমাইজেশান হিসেবে ভাবার কোনো উপায়ই নেই বুঝতে চাই। বিবর্তন প্রক্রিয়া থেকে যদি পরিপার্শ্বের সাথে অভিযোজিত প্রজাতি বের হয়ে আসে, তাহলে সেটার জন্যে বিবর্তনকে একটি লোকাল অপ্টিমাইজেশান প্রক্রিয়া হিসেবে কল্পনা করতে সমস্যা কোথায়?
অভিযোজন (adaptation) আর লক্ষ্য ফাংশান (objective function) ধারণা দুটো ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বিবর্তনে অভিযোজন শব্দটা ব্যবহার করতে আপত্তি নেই, কিন্তু লক্ষ্যের কথা বলতে উশখুশ, এটা নিষ্ঠাপূর্ণ নয়। যেখানে ব্যাপারটা যেহেতু কেবল শব্দ ব্যবহারেরই। অভিযোজনে direction-এর কল্পনা বা আরোপ স্বাভাবিক।
@রূপম (ধ্রুব),
তা বটে। সেই মুহূর্তের পরিবেশে কিংবা পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে সেটাকে টেকসই ভাবা যেতে পারে বটে, কিন্তু এটাও ঠিক এই টেকসই প্রাণীটা যে টিকবেই সেই দিব্যি দিয়ে বিবর্তন পরিচালিত হয়নি। বিবর্তনের সিমুলেশনের প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত চলক একটু হেরফের হলেই সেটার আউটকাম অন্যরকম হত।
মানুষের উৎপত্তির ব্যাপারটাই ধরা যাক। এটি সৌভাগ্যপ্রসূত হাজার খানেক ঘটনার সমন্বয় ছাড়া কখনই ঘটতে পারতো না। ঘটনাগুলো যদি অন্যরকম ভাবে ঘটতো, তাহলে হয়তো শেষ পর্যন্ত এ পৃথিবীতে কোন ‘মানবীয় সত্ত্বা’র উন্মেষ ঘটতো না। যেমন, ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় বহুকোষী জীবগুলোর তেজস্ক্রিয়তা সহ্য করার ক্ষমতা, তারো পরে লোব ফিন বিশিষ্ট মাছগুলো যারা দেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর নিজস্ব ওজনকে বহন করার ক্ষমতা তৈরি হওয়া, তাপমাত্রার ওঠানামার এবং বরফ যুগ শুরু হওয়ার কারণে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় জলজ প্রানীর ডাঙ্গায় উঠে আসা এবং ডাঙ্গার প্রাণীগুলোর বিকাশ এ- এগুলো তো আছেই, সর্বোপরি – সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে এক বিশাল উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে আছড়ে পরে বিশালাকার ডায়নোসরগুলোর অবলুপ্তির কারণ না ঘটাতো, তাহলে হয়ত সেই সময়ের ছুঁচো জাতীয় নগন্য স্তন্যপায়ী জীবগুলো আর বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেত না, বরং ডায়নোসরদের প্রবল প্রতাপের সামনে কুনো ব্যাং হয়ে রইতো।
কাজেই দেখা যাছে পুরো মানব বিবর্তনটিই দাড়িয়ে আছে অনেকগুলো আকষ্মিক ঘটনার সমন্বয়ে। বিবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটা আবার প্রথম থেকে চালানো গেলেও সে ‘দৈবাৎ ঘটে যাওয়া’ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটবেই, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনা। সব কিছুর কথা বাদ দিলেও স্রেফ উল্কাপিন্ডের আঘাতের কারনে পরিবেশের পরিবর্তনে ডায়নোসারের বিলুপ্তি আর সেই সুত্রে স্তন্যপায়ী জীবের বিকাশটাকে কি আপনি ‘টেকশই’ বলবেন, নাকি আকস্মিক সৌভাগ্যপ্রসুত ঘটনার সমন্বয় বলবেন, সেটা পনার হাতেই ছেড়ে দিলাম।
যে কোন ডিজাইনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দ্রব্য থাকে স্থির। যেমন, বোয়িং বিমান বানানোর কথা ভাবতে পারেন, এর পেছনে থাকে নকশাকারীর একটি চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। অপরদিকে বিবর্তন কিন্তু কোন ভবিষ্যতের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য মাথায় রেখে কাজ করে না, চূড়ান্ত লক্ষ্যের ব্যাপারে থাকে একেবারেই উদাসীন। লোকাল অপ্টিমাইজেশন হিসেবে হয়তো চিন্তা করা যায়, তবে পুরো প্রক্রিয়াটা অনেকটা ওপেন এন্ডেড বলেই আমার মনে হয়। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল আউটকাম কিরকম হবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কোন ধারণাই নেই। সেজন্যই ডকিন্স তার বইয়ে ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার হিসেবে তুলে ধরেছেন। উদ্ধৃত করি, তা হলে হয়তো বুঝতে সুবিধা হবে –
All appearances to the contrary, the only watchmaker in nature is the blind forces of physics, albeit deployed in a very special way. A true watchmaker has foresight: he designs his cogs and springs, and plans their interconnections, with a future purpose in his mind’s eye. Natural selection, the blind, unconscious automatic process which Darwin discovered, and which we now know is the explanation for the existence and apparently purposeful form of all life, has no purpose in mind. It has no mind and no mind’s eye. It does not plan for the future. It has no vision, no foresight, no sight at all. If it can be said to play the role of watchmaker in nature, it is the blind watchmaker. [The Blind Watchmaker (1996) p.5]
আরো কিছু বলা যেত, আপাতত সময়ের অভাবে ক্ষ্যামা দেই,
অফ টপিক – আপনাকে ফেসবুকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না ইদানিং। একাউন্ট কি অফ করে রেখেছেন?
@অভিজিৎ,
স্তন্যপায়ীর পূর্বপুরুষরা তো অন্তত উল্কাপিণ্ড টেস্টে পাশ করেছে, নাকি? 😉
লক্ষ্য আর ডিজাইন অনেক সময় একাকার হয়ে যায়। লক্ষ্য মানেই কিন্তু ডিজাইনারের উপস্থিতি নয়। এটা অবশ্য আমাদের দোষ নয়। এ প্রসঙ্গে teleology (যেটা বলে যে কোনো সিস্টেমের আপাত লক্ষ্যগামী যে আচরণ তার পেছনে একটা নক্সাকারী কর্তার নিয়ত উপস্থিত) বনাম teleonomy (যেটা বলে যে কোনো সিস্টেমের আপাত লক্ষ্যগামী যে আচরণ সেটা একটা প্রসেসের ফল, কোনো নক্সাকারী কর্তার নিয়ত নেই) এর আলোচনা দেখতে পারেন। জীববিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই ‘বর্ণনায়’ teleological ভাষা অর্থাৎ এমন ভাষা ব্যবহার করে আসছিলেন যেখান থেকে মনে হতে পারে যে সব ঘটনার একটা নিয়ন্তা বা নক্সাকারী আছে। এর বদলে যে বস্তুবাদী বর্ণনা, তার ধার খুব কম। একটা দর্শনের পেপারে এই আলোচনাটা খুব সুন্দর করে এসেছেঃ
তো সমাধান কি? Teleological বর্ণনার দায় কীভাবে এড়ানো যায়? সমাধান হলো teleonomy।
অর্থাৎ এখানে আপাত দৃশ্যমান লক্ষ্যকে স্বীকার করা হচ্ছে, সাথে এও স্বীকার করা হচ্ছে যে এটা কেবল দেখার একটা উপায়, সত্যিকারের কোনো জেহাদি লক্ষ্য নিয়ে এটা কেউ করছে না। এর কারণে জীববিজ্ঞানের বর্ণনায় teleology-এর ভাষা ব্যবহারের কালিমা এড়ানো গেছে। এ প্রসঙ্গে একটা চমৎকার উক্তি আছেঃ
তো একই ব্যাপারটা বিবর্তনের ক্ষেত্রেও আমি আনছি। ভাষায় বা বর্ণনার সুবিধায় আপনি বলতে পারেন যে বিবর্তনের মাধ্যমে একধরনের লোকাল অপ্টিমাইজেশান হচ্ছে। কিন্তু সেটা teleonomy, আপনি আসলে বিবর্তনের আপাত লক্ষ্যপূর্ণতার পেছনে কোনো নিয়ন্তা দাবী করছেন না। এই হলো লক্ষ্য আরোপের ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট অবস্থান।
অফ টপিকঃ আগেই জানানো উচিত ছিলো। হ্যাঁ, অ্যাকাউন্ট অফ করে রেখেছি!
@রূপম (ধ্রুব),
এখানে উল্কাপিন্ডের কথাটা স্রেফ পরিস্থিতি বুঝবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। হ্যা স্তন্যপায়ীর পূর্বপুরুষরা উল্কাপিণ্ড টেস্টে পাশ করেছে, কিন্তু সেই ক্যাম্ব্রিয়ান একপ্লোশন, আইসএজ সহ নানা প্রতিকূলতা তাদেরও পেরুতে হয়েছে। যে ব্যাপারটা বলার চেষ্টা করছি তা হল, বিবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটা আবার প্রথম থেকে চালানো গেলেও সে ‘দৈবাৎ ঘটে যাওয়া’ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটবেই, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনা। অর্থাৎ, একই আউটকাম পাওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। আসলে বিবর্তনের পেছনে অনেক র্যাণ্ডমনেস জড়িত, সেই কারণে আমার কাছে ব্যাপারটাকে ‘ওপেনএণ্ডেড’ মনে হয়, গাইডেড কিছু নয়। আর যে ‘ডিজাইনে’ শতকরা ৯৯ ভাগ প্রজাতিই কোন না কোনভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়, এপেণ্ডিক্স, চোখের ব্লাইন্ড স্পট, পুরুষদের স্তবৃন্ত সহ ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপস্থিতি দেখা যায়, সেটার পেছনে আসলে লক্ষ্য বা ডিজাইন কোনতাঈ আছে বলে আমি মনে করিনা, টেকসই হবার পরিকল্পণা তো নয়ই। 🙂
সেটা ঠিক, লক্ষ্য মানেই কিন্তু ডিজাইনারের উপস্থিতি নয়। কিন্তু ডিজাইন করলে একটা লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা থাকে (সেই যে ছোটবেলায় শেখা সকল ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু… টাইপের …)। কিন্তু, বিবর্তনের চালিকাশক্তির পেছনে এর কোনটাই নেই। না আছে ডিজাইন, না আছে পরিকল্পণা বা লক্ষ্য। এটা আমার কথা নয়, মূলধারারার জীববিজ্ঞানীরা তাই মনে করেন। ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার বই থেকে রিচার্ড ডকিন্সের “Natural selection, the blind, unconscious automatic process … apparently purposeful form of all life, has no purpose in mind” সংক্রান্ত উদ্ধৃতিটা তো উপরেই দিয়েছি। এর বাইরে আপনি জেরি কয়েনের ‘Why evolution is true’ বইটাও দেখতে পারেন। একই কথাই পাবেন। জীববিজ্ঞানীরা শুধু নন, পদার্থবিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতিও আমি দিতে পারি, যারা গানিতিক এলগোরিদম, সিমুলেশন নিয়ে হাতে কলমে কাজ করেন। যেমন, ভিক্টর স্টেঙ্গরের অতি সাম্প্রতিক ‘God and the Folly of Faith: The Incompatibility of Science and Religion’ থেকে উদ্ধৃত করি –
আমি ডিটেইলসে যাচ্ছি না, অধ্যাপক স্টেঙ্গর তার বইয়ে রেডিওএক্টিভ ডিকের র্যাণ্ডমনেসের সাথে মিঊটেশনের র্যান্ডমনেসের একটা তুলনামূলক আলোচনা করে দেখিয়েছেন কেন ব্যাপারটা আন-গাইডেড, কেন এর পেছনে কোন ডিজাইন জড়িত নেই।
আপনার teleology বনাম teleonomy নিয়ে আলোচনাটা বেশ আকর্ষনীয়। ধন্যবাদ ব্যাপারগুলো এখানে দেয়ার জন্য।
Another question can be added in this list: Do other branches of Biological science such as Medical Science, Pharmacology, Molecular Biology, etc. comply with or contradict the evolution?