জীবজগতে মানুষেরা যে প্রাইমেট বর্গের অন্তর্ভুক্ত সেটা আমরা সবাই জানি। মানুষ ছাড়াও আরো বেশ কিছু প্রাণী রয়েছে প্রাইমেট বর্গের মধ্যে। যেমন বানর ও এপ। গরিলা, ওরাংওটাং শিম্পাঞ্জিদের এপ বলা হয়। মানুষ ও বানর যেহেতু প্রাইমেট বর্গের মধ্যে আছে তাহলে এটা কি বলা যায় মানুষ আর বানর অভিন্ন? কিংবা মানুষ হচ্ছে বানর অথবা বানরই হচ্ছে মানুষ? মোটেও তা নয়। কেন নয়? উদাহরণ দেয়া যাক। ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশে বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। ভারতে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, তামিল, গুজরাটি, খাসি, মালয়ালাম প্রভৃতি ভাষার লোক বাস করে। এই লোকেরা যেমন সবাই ভারতের নাগরিক কিন্তু ভাষাগত দিক দিয়ে তারা আলাদা। বাংলাদেশেও বাংলা ভাষীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থান থাকলেও বিভিন্ন আদিবাসী যেমন মণিপুরী, চাকমা, গারো, মারমা প্রভৃতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। আমরা প্রত্যেকে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও ভাষাগত, নৃগোষ্ঠীগত দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তেমনি মানুষ, বানর, এপ প্রত্যেকে প্রাইমেট বর্গের হলেও তাদের প্রত্যেকেরও কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Subphylum: Vertebrata
Class: Mammalia
Subclass: Theria
Infraclass: Eutheria
Order: Primates
Suborder: Anthropoidea
Superfamily: Hominoidea
Family: Hominidae
Genus: Homo
Species: sapiens
জীবজগতে মানুষের শ্রেণীবিন্যাস
শ্রেণীবিন্যাসবিদরা প্রাইমেট বর্গের কিছু চরিত্র নির্ধারণ করেছেন। যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে প্রাইমেট হচ্ছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব যাদের হাত-পা গাছে গাছে চলে ফিরে বেড়াবার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আঙুলগুলো কমবেশি নাড়াতে পারে। বুড়ো আঙুলকে অন্যান্য আঙুলের বিপরীতে নিতে পারে। নখরের পরিবর্তে বিকাশ ঘটেছে নখের এবং এই জীবদের সংবেদনশীল হাতের তালু রয়েছে। প্রাইমেট বর্গের জীবরা হাত-পা ও আঙুল দিয়ে যেমন গাছের ডাল আঁকড়ে ধরতে পারে, তেমনি আবার হাত দিয়ে কোনো জিনিস বা খাদ্য মুখে তুলতে পারে। দেহের বাহু ঘোরাতে পারে। চলাফেরার সময় দুটি পা (পশ্চাদপদ) প্রধান ভূমিকা পালন করে। যার ফলে এই জীবদের অনেকে অর্ধ-খাড়া বা প্রায় খাড়া হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা অর্জন করেছে। মানুষই প্রাইমেটদের মধ্যে একমাত্র জীব যারা পুরোপুরি দ্বিপদী। সম্পূর্ণ সোজা হয়ে চলাফেরা করে থাকে। প্রাইমেটদের চোখ দুটো অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি। ফলে দেখার সময় তাদের দর্শন ক্ষেত্রের অধিক্রমণ করতে পারে বলে তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্রিমাত্রিক। তারা খাদ্য, গাছের ডালপালা ও অন্যান্য বস্তুর ব্যবধান খুব ভালোভাবে নির্ণয় করতে পারে। প্রাইমেটদের মধ্যে সব ধরনের খাবারের উপযোগী দাঁত এবং পরিপাকযন্ত্র বিকাশ লাভ করেছে। তাদের দেহের আকারের তুলনায় মস্তিষ্কের আকার বড়। এবং প্রাইমেট বর্গের জীবেরা জটিল সামাজিক জীবন যাপন করতে সক্ষম। (দ্রষ্টব্য : বিবর্তনের পথ ধরে, পৃ ১৪৩)।
জীববিবর্তনের দৃষ্টিতে মানুষ বানর থেকে এপদের সাথে অনেক ঘনিষ্ট আত্মীয়। বলা যায় জীবজগতে আত্মীয়তার দিক থেকে এপরা হচ্ছে মানুষের প্রথম-তুতোভাই, এবং বানর হচ্ছে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তুতোভাই। আবার এপদের মধ্যে শিম্পাঞ্জির সাথে মানুষের আত্মীয়তার সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ট, তারপর গরিলা এবং শেষে ওরাংওটাং। মানুষের বংশধারা এবং শিম্পাঞ্জির বংশধারা আজ থেকে প্রায় ষাট থেকে সত্তর লক্ষ বছর আগে সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টি এ বিষয়টি খুব ভালোভাবে নিশ্চিত হয়েছেন বর্তমানকালের জীবিত প্রাইমেটদের সাথে মানুষের অঙ্গসংস্থানের তুলনামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। সাথে অতীতকালের প্রাইমেটদের ফসিল পরীক্ষার মাধ্যমে এবং মানুষের সাথে প্রাইমেটদের ডিএনএ, প্রোটিন ও অন্যান্য জৈবঅণু তুলনামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। আধুনিককালে ডিএনএ ও প্রোটিন গবেষণার মাধ্যমে প্রাইমেটের বিবর্তন ধারা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি এবং সঠিক তথ্য-উপাত্ত জানা সম্ভব হচ্ছে।
চার্লস ডারউইন তাঁর ‘অরিজিন অব স্পিসিজ’ (১৮৫৯) গ্রন্থে মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে কিছু বলেননি। শুধু এক জায়গায় লিখলেন ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। পরবর্তীতে তিনি কোনো হোমিনিড ফসিল না দেখলেও ‘ডিসেন্ট অব ম্যান’ বইয়ে (১৮৭১) ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের আলোকে মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে ঘোষণা করেছিলেন। ডারউইন এই বইয়ে বললেন মানুষ ও এপরা সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং ঐ সাধারণ পূর্বপুরুষরা ‘মানুষ’ ছিল না। খুব সম্ভবত আফ্রিকা হবে সেই সাধারণ পূর্বপুরুষদের বাসস্থান। ডারউইনের এই ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। অনেক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ধর্মবাদী থেকে শুরু করে সংশয়বাদী বিজ্ঞানীরা। মানুষ ও এপের ‘মিসিং লিংক’ কোথায়? কোথায় সেই মধ্যবর্তী জীবের ফসিল যাদের মধ্যে এপ এবং মানুষের বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
ডারউইনের পূর্বে তাঁর সুহৃদ টমাস হাক্সলি মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তের কথা প্রচার করেছিলেন তাঁর “Man’s Place in Nature” বইয়ে। ডারউইন ও হাক্সলি মূলত জীবিত আফ্রিকান এপ ও আধুনিক মানুষের অ্যানাটমির তুলনামূলক পরীক্ষা থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছে ছিলেন। ডারউইনের ধারণা ছিল আফ্রিকা হবে হোমিনিডদের জন্মভূমি। অবশ্য ডারউইনের পর্যবেক্ষণে সাদৃশ্যের পাশাপাশি আধুনিক মানুষের সাথে এপদের কিছু বৈসাদৃশ্যও ধরা পড়েছি। তিনি এগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন। যেমন : (১) মানুষ দ্বিপদী, আর এপরা চতুষ্পদী (quadrupedal) (২) মানুষের রয়েছে ক্ষুদ্র ছেদক দন্ত আর এপের রয়েছে বড় ছেদক দন্ত (৩) মানুষ হাতিয়ার তৈরি এবং ব্যবহার করতে পারে, যেখানে এপরা এ বিষয়ে অক্ষম (৪) মানুষের মস্তিষ্ক অনেক বড়, আর এপদের মস্তিষ্ক অনেক ছোট।
ডারউইনের মনে প্রশ্ন দেখা দিল জীবিত আফ্রিকান এপ ও আধুনিক মানুষ যদি একই উৎস থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে তাহলে মানুষের এই স্বতন্ত্র দ্বিপদী বৈশিষ্ট্য কি এমন উপকারী হয়ে দেখা দিয়েছিল যা টিকে গেছে শেষমেশ? ডারউইন নিজে আবার উপসংহারে পৌঁছালেন পূর্বের মানুষেরা বেশিরভাগই মাংস ভক্ষণ করতো, পাথর বা শক্ত গাছের টুকরো দিয়ে জীবজন্তু হত্যা করতো। ফলে দ্বিপদী বৈশিষ্ট্য মানুষের হাতকে (অগ্রপদ) মুক্তি দিয়েছিল। পাথরের তৈরি অস্ত্র বা শক্ত গাছের গুড়ি বহন করতে, ব্যবহারে সহায়তা করেছিল। হাত দিয়ে হাতিয়ার নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছিল। আর হাতিয়ার দিয়ে যখন প্রাণী হত্যা করতে লাগলো ও মাংস কাটতে সহায়তা পেল তখন ক্রমে শিকারের জন্য বড় ছেদক দন্তও প্রয়োজনীয়তা হারালো। ডারউইন এও ভাবলেন মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশে হাতিয়ার উৎপাদন এবং এগুলির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর বড় মস্তিষ্ক মানুষের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষার ব্যবহারের ফল।
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে আজ থেকে প্রায় ছয় বা সাত মিলিয়ন আগে প্রাইমেটের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে মানুষের বংশানুক্রম (লিনিজ) এবং শিম্পাঞ্জির বংশানুক্রম আলাদা হয়ে গিয়েছিল। মানুষের লিনিজের সেই পূর্বপুরুষদের জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘হোমিনিড’ অথবা ‘হোমিনিন’। ডারউইন মারা যান ১৮৮২ সালে। তাঁর মৃত্যুর সময়কালেও কোনো হোমিনিড ফসিল সম্পর্কে প্রত্নজীবিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট তথ্য ছিল না। যদিও ডারউইন ডিসেন্ট অব ম্যান বইয়ে অনুমান করেছিলেন এ ধরনের হোমিনিড ফসিল ভবিষ্যতে পাওয়া যেতে পারে।
চিত্র : আর্নেস্ট হেকেল (১৮৩৪-১৯১৯)
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ডারউইনই শুধু একমাত্র নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী ছিলেন না যে মানুষের উদ্ভব ও বিবর্তন কোথায় হয়েছে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করছিলেন। জার্মানির প্রসিদ্ধ শারীরবিজ্ঞানী আর্নেস্ট হেকেল (১৮৩৪-১৯১৯) ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মানুষের উদ্ভব ও বিবর্তন কোথায় হয়েছে সে সম্পর্কে পৃথক ভাবনা নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির হন। হেকেল ছিলেন ডারউইনের ভাবশিষ্য। হেকেল মন্তব্য করেন আফ্রিকার গ্রেট এপদের তুলনায় এশিয়ার গ্রেট এপের (ওরাংওটাং) সাথে আধুনিক মানুষের অ্যানাটমির অভূতপূর্ব মিল রয়েছে। তাই হয়তো আফ্রিকা নয় বরং এশিয়া হবে হোমিনিড পূর্বপুরুষের জন্মভূমি। এমন কী আর্নেস্ট হেকেল প্রথম হোমিনিড পূর্বপুরুষ দেখতে কেমন হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন এবং এদের জন্য আলাদা জিনাসের নামও প্রস্তাব করেন। ‘Pithecanthropus’ (পিথেকানথ্রোপাস) মানে ‘এপ-মানব’।
চিত্র : ইয়োজিন ডিবোয়া
আর্নেস্ট হেকেলের আদি মানুষের বিবর্তন ওপর রচিত “The History of creation; or The development of the earth and its inhabitants by the action of natural causes” বইটি (১৮৭৩) পাঠ করে ডাচ (নেদারল্যান্ড) নাগরিক ইয়োজিন ডিবোয়া (২৮ জানুয়ারি ১৮৫৮ – ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪০) প্রত্নজীববিদ্যায় যারপরনাই উৎসাহী হয়ে উঠেন। তখন তিনি সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ। ডিবোয়া ডারউইনের অরিজিন অব স্পিসিজ বইটি গোগ্রাসে গিলে খেয়েছেন ছাত্রজীবনে। বয়স তখন তার সবে উনিশ। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিকেল স্কুলে মাত্র ভর্তি হয়েছেন। ২৬ বছর বয়সে মেডিকেল স্কুল থেকে ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিলেও ইউজিনের মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লালিত-পালিত হচ্ছে ফসিল সংগ্রহের তীব্র ইচ্ছা। লেখাপড়ার পাট চুকে যাওয়ার পর এই দুর্দান্ত ইচ্ছা যেন উপছে আসতে লাগলো। শেষমেশ ধৈর্য্য ধরতে না পেরে কিছুদিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি ছেড়ে দিলেন ইয়োজিন। বউ-বাচ্চা নিয়ে পাড়ি দেয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন ইন্দোনেশিয়াতে। ইন্দোনেশিয়াতে পাড়ি দেবার কারণ হচ্ছে হেকেলের মতো তিনিও বিশ্বাস করেছিলেন এশিয়াতেই হয়তো পাওয়া যাবে মানুষের আদি পূর্বপুরুষের নমুনা। ওই সময় ইন্দোনেশিয়া ছিল নেদারল্যান্ডের উপনিবেশ। নাম ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিস। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরির মতো এই নিরাপদ আর সম্মানজনক জীবন ছেড়ে দিয়ে কোথাকার কোন অদৃশ্য ভাঙা হাড়গোড়ের পিছনে ছুটার ‘পাগলামি’ দেখে স্বাভাবিকভাবেই ডিবোয়ার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশিরা ভড়কে গেলেন। তারা নানাভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করতে চাইলেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হল না।
অবশেষে ১৮৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিবোয়া স্বপরিবারে চলে আসেন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। স্থানীয় সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসকের চাকুরি জুটে গিয়েছিল তাঁর। হাসপাতালের চাকুরির ফাঁকে ফাঁকে ফসিলের সন্ধানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন ডিবোয়া। কিন্তু এতেও তার মন ভরলো না। ফসিলের সন্ধানে তিনি পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছিলেন না। রোগী দেখবেন না কি ফসিল খুঁজবেন? কোনো কাজই মন দিয়ে করতে পারছিলেন না। তাই ডিবোয়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালেন তাঁকে এই দিবাকালীন চাকুরি থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য আর ডাচ সরকারের পূর্ণকালীন প্রত্নজীববিজ্ঞানী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য। কর্তৃপক্ষ আগে থেকে জানতো ডিবোয়ার কথা। কিছুটা সদয়ও ছিল তাঁরা। ফলে অনুমতি মিলে গেল ঝটপট। ডিবোয়া তখন দুজন পুরকৌশলী ও পঞ্চাশ জনের কর্মীবাহিনী নিয়ে পুরো সুমাত্রা দ্বীপে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে দিলেন ফসিলের সন্ধানে।
কিন্তু হাড়ভাঙা এতো পরিশ্রমের ফলাফল শূন্য। কোনো ফসিলের সন্ধানই তার ভাগ্যে জুটল না। হতাশ ডিবোয়া একসময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অনেকে পরামর্শ দিলেন এই অনিশ্চিত-অর্থহীন এবং প্রায় ব্যর্থ জীবন ছেড়ে পুনরায় নেদারল্যান্ডে ফিরে যাবার জন্য। ভালোভাবে খেয়ে পড়ে নিরাপদ জীবন যাপন করা যাবে। কিন্তু ডিবোয়ার একরোখা মনোভাব হলো ফসিল আবিষ্কার না করে তিনি কখনো দেশে ফিরবেন না। হঠাৎ একদিন ডিবোয়ার কাছে খবর আসলো সুমাত্রার পাশের দ্বীপ জাভায় নদীর তীর ঘেষে একটা এলাকায় নাকি কিছু পুরানো হাড়গোড় পাওয়া যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ চাঙা হয়ে উঠলেন ডিবোয়া। আবার সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেন সুমাত্রা ছেড়ে তাকে যেন জাভা দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। এবারো অনুমতি মিলে গেল। আর ডিবোয়া সময় নষ্ট না করে দ্রুত কর্মীবাহিনী নিয়ে জাভার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন।
জাভায় পৌঁছে খবর পেলেন ত্রিনিল নামের একটি গ্রামের পাশ দিয়ে সলো নদীর তীরে নাকি কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। নদীটি প্রায় মৃতপ্রায়। ডিবোয়ার আর অপেক্ষার তর সইছিল না। তখন সময়টা ১৮৯১ সালের গ্রীষ্মের শেষের দিক। ফসিলের সন্ধানে সবাই হইহই করে নেমে পড়ল। এবারো অনেক খোঁড়াখুড়ি করে মানুষের একটি পেষক দাঁত (molar) ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। তবে এত সহজে হতদ্যোম হলেন না। তার মন বলছিল এবার কিছু একটা পাওয়া যাবেই। তাই ডিবোয়া কার্যক্রম গুটিয়ে নিলেন না। টানা প্রায় দুই মাস ধরে বিরামহীন পরিশ্রমের পর ডিবোয়ার দল একটি ছোট্ট ‘ক্রেনিয়াম’ পেল। সাথে পেল একটি ঊরুর হাড় আর শরীরের কিছু হাড়ের খণ্ডাংশ। নিচের চোয়াল ছাড়া উপরের করোটি বা খুলিকে ক্রেনিয়াম বলে। ইয়োজিন ডিবোয়া ওই সময় মানব অ্যানাটমির একজন পুরোদস্তুর বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাই ক্রেনিয়ামটি দেখে বোঝতে পারলেন এতদিন ধরে তিনি যা খুঁজে চলছেন এবার সেটা তার হাতের মুঠে।
ডিবোয়ার উদ্ধার করা ক্রেনিয়ামটি আধুনিক মানুষের (Homo sapiens) কোনো করোটি নয়। করোটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি দেখতে লম্বা তবে এর নিম্নমুখী ব্রেনকেস। এপদের মত ভ্রূচুড়া বড় ও উঁচু তবে উল্লেখ করার মত এর কোনো কপাল ছিল না। ক্রেনিয়ামটির আয়তন প্রায় ৮৫০ সিসি (কিউবিক সেন্টিমিটার)। সে হিসেবে এর মধ্যে মগজ বা ঘিলুর পরিমাণ হবে কমবেশি দুই পাউন্ড এবং আয়তন প্রায় ১০০০ সিসি। এক পাউন্ডে ৪৫৪ গ্রাম। তাই এটি আধুনিক মানুষের কোনো করোটি নয়। আধুনিক মানুষের ক্রেনিয়ামের আয়তন ১৩০০ সিসি। ব্রেনের ওজন তিন পাউন্ড ও আয়তন ১,৪৫০ সি.সি। শিম্পাঞ্জির ব্রেনের আয়তন প্রায় ৪০০ সিসি। অর্থাৎ উদ্ধারকৃত ক্রেনিয়ামটি কোনো শিম্পাঞ্জিরও (এপ) নয়।
আবার ডিবোয়া দেখলেন আধুনিক মানুষের ঊরুর হাড়ের সাথে ফসিলটির ঊরুর হাড়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিল রয়েছে। অর্থাৎ হাঁটতে পারে এমন দ্বিপদী ব্যক্তির হাড় এটি। এখন প্রশ্ন দেখা দিল, ফসিলটি কিসের? কোনো এপেরও না, আধুনিক মানুষেরও না। তাহলে এপ ও মানুষের মধ্যের কোনো জীবের? এটা কি সেই বহুল আলোচিত “মিসিং লিংকে”র ফসিল? এমন অজস্র প্রশ্ন ঘোরপাক খেতে লাগলো ইয়োজিন ডিবোয়ার মনের মধ্যে। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন আর্নেস্ট হেকেলের ভবিষ্যদ্বাণী যেন সফল হতে চলছে তাঁর এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ডিবোয়া তাই হেকেলের ঘোষিত নামের সাথে মিল রেখে ফসিলটির নাম দিলেন ‘Pithecanthropus erectus’। অর্থাৎ ‘সোজা হয়ে হাঁটতে পারে এপ-মানব’।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে ফসিলটি পাওয়া গিয়েছে বলে একে ‘জাভা-মানব’ বলেও ডাকা হতে লাগলো। পরবর্তীতে ফসিলটির বয়স ডেটিং করে জানা গেল এটি প্রায় ১.৮ মিলিয়ন বছরের পুরানো। মানে ঐ ফসিলের ব্যক্তিটি আজ থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে এ পৃথিবীতে বসবাস করতো।
ডিবোয়ার আবিষ্কার সারা বিশ্বের প্রত্নজীববিজ্ঞানীদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নেতিবাচক আর সংশয়ী বক্তব্য।
যাহোক বছর খানেক বাদে আরো কিছু হোমিনিড ফসিল পাওয়া গেল জাভা দ্বীপসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। বর্তমানে বেশিরভাগ নৃবিজ্ঞানী এবং প্রত্নজীববিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন ডিবোয়া’র আবিষ্কৃত ফসিলটি স্বতন্ত্র কোনো জিনাসের (গণ) অন্তর্ভুক্ত নয় এটি আমাদের জিনাসেরই (Homo) অন্তর্ভুক্ত। তবে আলাদা প্রজাতি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Homo erectus। ডিবোয়ার আবিষ্কৃত ফসিলটি সবচেয়ে প্রাচীন হোমিনিড ফসিল নয়। এর থেকেও অনেক প্রাচীন হোমিনিড ফসিল বিভিন্ন সময় আবিষ্কৃত হয়েছে। এমন কী Homo জিনাসের অন্তর্ভুক্ত প্রথম প্রজাতিও নয় এই ফসিলটি। তবে মূল কথা হচ্ছে আফ্রিকা ও ইউরোপের বাইরে থেকে আবিষ্কৃত প্রথম হোমিনিড ফসিল হচ্ছে ইয়োজিন ডিবোয়ার ফসিল।
ডিবোয়া ভুলভাবে ভেবেছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে হয়তো সবচেয়ে প্রাচীন হোমিনিড ফসিল পাওয়া যাবে। ডিবোয়ার ভুল কিভাবে সংশোধিত হলো সে আলোচনাতে আমরা পরবর্তীতে যাবো। সে যাহোক ডিবোয়ার ভাবনায় ভুল থাকলেও তার এই আবিষ্কার মোটেও অগুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের হোমো জিনাসের বিবর্তনে এই ফসিলের প্রমাণ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ডিবোয়ার সময়ে তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি মানুষের বিবর্তন ও পূর্বপুরুষের উদ্ভব সংক্রান্ত অনুকল্পগুলো সরাসরি পরীক্ষার জন্য একটি গবেষণা পরিকল্পনা তৈরি করেন। ডিবোয়ার দৃষ্টিতে মানুষের বিবর্তনীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ফসিল-ই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তিনিই একমাত্র বিবর্তনীয় বিজ্ঞানী ডারউইন, হেকেল, হাক্সলি ও অন্যান্যদের মতো শুধু জীবিত প্রাইমেটদের তুলনামূলক অ্যানাটমি পরীক্ষা করেন নি। মানব-বিবর্তনের অনুকল্প পরীক্ষার জন্য ফসিল সংগ্রহ থেকে এগুলোকে ব্যবহার করেছেন। এর ফলে নৃবিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের পূর্বপুরুষের বিবর্তন নিয়ে নৃবিজ্ঞানে ‘Paleoanthropology’ নামে নতুন শাখার জন্ম হয়।
ইয়োজিন ডিবোয়া আর জাভা মানব সম্পর্কে জানতে হলে দেখুন :
Pat Shipman, 2002, The Man who Found the Missing Link: Eugène Dubois and His Lifelong Quest to Prove Darwin Right, Harvard University Press.
ক্রসচেক করতে গিয়ে এই লেখায় একটা ভুল ধরা পড়েছে। সংশোধন করে দিলাম তা।
ইয়োজিন ডিবোয়া আর্নেস্ট হেকেলের “The Evolution of Man” (১৮৭৯) বইটা পড়ে প্রত্নজীববিদ্যায় উৎসাহী হয়ে উঠেন বলে লিখেছিলাম, মূলত বইটির নাম হবে ”The History of creation; or The development of the earth and its inhabitants by the action of natural causes” (১৮৭৩)।
যাক ভালই হল একটা উপলক্ষে অনেকের সাথে ভাব বিনিময় হয়ে গেল । এই জন্য Lincoln কে ধন্যবাদ ।
@আস্তরিন,
(Y)
@ আকাশ মালিক,
কপি পেষ্ট কে করলেন, আপনি না উনি? না কি উনিই আপনি? প্রোফাইল পিকচার সহ একটা অক্ষর, আকার-ইকারও তো বদলায় নি।
মানব বিবর্তণের পোষ্টে আপনি ক্লোণের ব্যাপারটা বুঝলেন না? শোকরিয়া করেন তাদের ক্লোণ যে ডজন খানেক হয় নাই। হি হি হি………..
@হেলাল,
এরা যে আসে শুধু মশকরা, উপহাস Mickey out করার জন্যে তা বুঝি। এখানে তো তবুও তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারছেনা, অন্যান্য ব্লগে যদি দেখতেন তাদের কী অবস্তা? তবে এরা যে বোঝেনা তার জন্যে কিন্তু পশ্চিমা খৃষ্টান পাদরী স্কলাররাও দায়ী। বাঙ্গালীরা মুহাম্মদ ও তার রচিত কোরানকে বাঁচাতে, অপবিজ্ঞান সংগ্রহ করে বিজ্ঞানের দেশ থেকেই। আমেরিকার ক্যালফর্ণিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ স্থানীয় এক প্রফেসরের Evolution নিয়ে এখানে দেখুন এক কান্ড-
@আকাশ মালিক,
সত্যিই আমি আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ , মুক্তমনা আমার জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ পাওয়া ।অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
@আস্তরিন, মুক্তমনা আমার জীবনেরও একটা শ্রেষ্ঠ পাওয়া ।ধন্যবাদ সবাইকে।
@হেলাল,
না ভাই আমি ক্লোন টোন কিছুই করিনি ,আমি একজন অতি সাধারণ সত্যসন্ধানি মানুষ, নিজের লেখার কোন ক্ষমতা নেই তাই অনেকদিন থেকেই মুক্তমনায় আপনাদের মত গুনিদের লেখায় টুকটাক মন্তব্য করে একটু শান্তনা পাওয়ার চেষ্টা করছি ।তাছারা আমার তো মনে হয় না কাউকে বিব্রত বা ঠেস দেয়ার মত কোন মন্তব্য আমি করেছি ,যেহেতু আমি জানি না তাই আমার জানার আগ্রহ ।আশা করি আমাকে কেউ ভূল বুঝবেন না ধন্যবাদ ।
@আস্তরিন, sorry brother আমার জন্নন আপ্নাকে অনেক ভূল বুঝল্।
@হেলাল, কপি পেষ্ট আমি করেসি আস্তরিন ভাই না।
প্রায় বছর চারেক আগে বিবর্তন নিয়ে প্রচুর হৈ চৈ শুনে ডারউনের ‘দ্য অরিজিন অব স্পেসিস’ বইটা কিনলাম।
আজ পর্যন্ত ঐ বই-এর বিশ পাতা পড়া হয়েছে। এই বই-এর খটমট ইংরাজি এবং জটিল তত্ব বুঝা আমার পক্ষে সম্ভব হ’ল না। হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম।
অনন্ত বিজয়ের লেখা থেকে পনেরো মিনিটে আমি যা বুঝছি–ডারউনের বই এক বৎসর পড়লেও হয়তো বুঝব না।
তাই অনন্ত বিজয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিবর্তনের মত জটিল বিষয়কে এত সহজ ভাষায় বর্ণনার জন্য।
@আবুল কাশেম,
কাশেম ভাই
আপনার অভূতপূর্ব উৎসাহে আমি আনন্দিত হলেও খানিকটা লজ্জা নির্ঘাৎ পাচ্ছি! বন্ধুবান্ধবরা প্রায়ই বলে আমার লেখনী সহজবোধ্য নয়। এমন কী আমি নিজেও সবসময় চিন্তিত থাকি যা বলতে চাচ্ছি সেটা কী আদৌ বোঝাতে পারছি লেখার মাধ্যমে? না-কী অযথাই শব্দের পর শব্দ বিন্যাস করে যাচ্ছি?
আপনার লেখার গুণমুগ্ধ পাঠক আমি। আপনার লেখনীশৈলী যতবারই পাঠ করি ততবারই আমাকে মুগ্ধ করে।
অনেকদিন ধরে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটি হলো বিবরতনের ধারা অনুযায়ী মিউটেশনের ফলে যে নতুন প্রানীটির উদ্ভব হয় তা নিশ্চয় একটি হয় পুরুষ অথবা নারী সে ক্ষেত্রে প্রজনন কি করে হয় ?
@Lincoln,
মজার প্রশ্নতো… অন্যদের জবাবের দিকে চোখ রাখলাম!
@Lincoln,
আচ্ছা, হুট করে কি নতুন প্রজাতি হয়? প্রজাতি তো ধীরে ধীরে হয়। সেক্ষেত্রে নতুন জন্ম নেয়া একটুখানি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রাণীর সাথে তার কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের প্রাণীর প্রজনন সম্ভব হলেও, তার থেকে অনেক পার্থক্যসহ প্রাণীর সাথে প্রজনন অসম্ভব হয়ে পড়ার কথা। আমার ধারণা – এমনটাই হবে এর উত্তর। দেখি, অন্যরা কী বলে…
@প্রতিফলন,
দুটোই হতে পারে। প্রজাতি গঠনের হার কখনো হাই আবার কখনো স্লো হতে পারে। ইকোলজিক্যাল কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে থাকে। আবার প্রজাতির প্রজন্মকাল ও সন্তান সংখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ।
গুগলে সার্চ দিলে উচ্চ গতির এবং শ্লথ গতির প্রজাতি গঠনের প্রচুর উদাহরণ পাবেন। এছাড়া বন্যাদির বিবর্তনের পথ ধরে বইয়ে কিংবা আমার “বিবর্তন কি শুধুই একটি তত্ত্ব” প্রবন্ধে উচ্চগতির প্রজতি-গঠনের একাধিক উদাহরণ দেয়া হয়েছে।
যেমন একটা উদাহরণের কথা এখানে উল্লেখ করছি। নিউজিল্যান্ডের Massey বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল রেনি “Pseudomonas fluorescens” প্রজাতির গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। মাত্র দশদিনের মাথায় ফ্লাস্কের কৃত্রিম পরিবেশে ওই ব্যাকটেরিয়ার সম্পূর্ণ নতুন দুটি প্রজাতি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন।
তবে মাইক্রো অর্গানিজমের (ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি অণূজীব) ক্ষেত্রে এটা হয়তো (খুব দ্রুত গতি) হতে পারে। কিন্তু ম্যাক্রো অর্গানিজমের ক্ষেত্রে “দ্রুত গতি” বলতে কিন্তু হুট করে বোঝানো হচ্ছে না। মানে এক ঘণ্টা/এক দিন/এক মাস-বছরের কথা বলা হচ্ছে না।
@Lincoln,
ধন্যবাদ আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্য। এই বিষয়টি প্রজাতি-গঠন বা স্পেসিয়েশনের সাথে জড়িত। জীববিজ্ঞানীরা সাধারণত ৪ ধরনের স্পেসিয়েশনের কথা জানিয়েছেন আমাদের। যেমন ১. Allopatric speciation ২. Parapatric speciation ৩. Peripatric speciation ৪.sympatric speciation
জীবের বিবর্তন আসলে ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তির উপর ক্রিয়াশীল নয়। একটা গোটা প্রজাতি বা পপুলেশনের জিনপুলের উপর ক্রিয়াশীল।
জীববিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিকভাবে স্পেসিয়েশনের জন্য কোনো একটা মূল প্রজাতি থেকে এক বা একাধিক পপুলেশনের ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতাকে (geographical isolation) গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে দেখেন। যাতে মূল প্রজাতির সাথে ওই বিচ্ছিন্ন পপুলেশনের যেন জনন বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়।
[কারণ প্রজাতির যে বায়োলজিক্যাল ডেফিনেশন রয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জীব যারা শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে আন্তঃ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম ও সফলভাবে প্রজন্ম সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু তারা অন্য আরেকটি এরকম গোষ্ঠীবদ্ধ জীব থেকে যৌনপ্রজননে অক্ষম।] এখন মূল প্রজাতি থেকে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতার ফলে যদি এক বা একাধিক পপুলেশনের জনন বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয় এবং এটা হয়তো স্থায়ী রূপ নিতে পারে ওই পপুলেশনের জীবের জননকোষে সংঘটিত মিউটেশনের মাধ্যমে। এই মিউটেন্ট ট্রেইট বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রজাতি গঠন এগিয়ে যায়।
কিন্তু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির জনন কোষে মিউটেশন হলেও সেটা যদি বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে তবে এই নতুন মিউটেন্ট ট্রেইট (বৈশিষ্ট্য) প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারবে না। বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
@অনন্ত বিজয় দাশ,
প্রশ্নটি যদিও আ মারই ছিল Lincolnএর কাছেও একই প্রশ্নের গুরুত্ত দেখে ভালো লাগল, যাইহোক উত্তরটা ঠিক- বুঝতে পারলাম না আরেকটু বিস্তারিত কি লেখা যায় ?
অনেক ধন্যবাদ ।
@আস্তরিন,
Lincoln
এপ্রিল ১৫, ২০১২ সময়: ১০:৫২ অপরাহ্ণ | লিঙ্ক
অনেকদিন ধরে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটি হলো বিবরতনের ধারা অনুযায়ী মিউটেশনের ফলে যে নতুন প্রানীটির উদ্ভব হয় তা নিশ্চয় একটি হয় পুরুষ অথবা নারী সে ক্ষেত্রে প্রজনন কি করে হয় ?
আস্তরিন
এপ্রিল ১৫, ২০১২ সময়: ৭:১১ অপরাহ্ণ | লিঙ্ক
অনেকদিন ধরে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটি হলো বিবরতনের ধারা অনুযায়ী মিউটেশনের ফলে যে নতুন প্রানীটির উদ্ভব হয় তা নিশ্চয় একটি হয় পুরুষ অথবা নারী সে ক্ষেত্রে প্রজনন কি করে হয় ?
কপি পেষ্ট কে করলেন, আপনি না উনি? না কি উনিই আপনি? প্রোফাইল পিকচার সহ একটা অক্ষর, আকার-ইকারও তো বদলায় নি।
@আকাশ মালিক,
কপি পেষ্ট কে করলেন, আপনি না উনি? না কি উনিই আপনি? প্রোফাইল পিকচার সহ একটা অক্ষর, আকার-ইকারও তো বদলায় নি।
সময়ের হিসাবে দেখা যাচ্ছে আমিই প্রশ্নটি আগে করেছি , এখানে একই মন্তব্য আমি দুই নামে দিয়ে আমার লাভ কি ? এক্ষেত্রে Lincolnই সঠিক জবাব দিতে পার ।
যাইহোক আপনার পরামর্শ অনুযায়ি মুক্তমনার ।বিবর্তন আর্কাইভে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি এখনও উত্তর পাব ।অনেক ধন্যবাদ ।
@আকাশ মালিক, Sorry কপি পেষ্ট আমি করেছি ।আসলে আমি বাংলা ভাল লিখতে পারি না্ । একই প্রস্ন আমার মনে অনেক দিন থেকে ছিল কিন্ত বাংলা লিখার ভয়ে করতে পারসিলাম না । @আস্তরিন sorry bhai আপনার comment দেখে নিজেখে আর control করতে পারি নি । গুরুত বাড়ানুর জন্ন কপি করে পেস্ট করে দিয়েছিলাম । @অনন্ত বিজয় দাশ,@প্রতিফলন,@আকাশ মালিক ,@প্রতিফলন আপনাদের সবাইকে আনেক ধন্যবাদ আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ and kindly answer এর জন্য। And I hope I have got my answer from the comment of @অনন্ত বিজয় দাশ .
“জীবের বিবর্তন আসলে ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তির উপর ক্রিয়াশীল নয়। একটা গোটা প্রজাতি বা পপুলেশনের জিনপুলের উপর ক্রিয়াশীল।
জীববিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিকভাবে স্পেসিয়েশনের জন্য কোনো একটা মূল প্রজাতি থেকে এক বা একাধিক পপুলেশনের ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতাকে (geographical isolation) গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে দেখেন। যাতে মূল প্রজাতির সাথে ওই বিচ্ছিন্ন পপুলেশনের যেন জনন বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়।
[কারণ প্রজাতির যে বায়োলজিক্যাল ডেফিনেশন রয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জীব যারা শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে আন্তঃ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম ও সফলভাবে প্রজন্ম সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু তারা অন্য আরেকটি এরকম গোষ্ঠীবদ্ধ জীব থেকে যৌনপ্রজননে অক্ষম।] এখন মূল প্রজাতি থেকে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতার ফলে যদি এক বা একাধিক পপুলেশনের জনন বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয় এবং এটা হয়তো স্থায়ী রূপ নিতে পারে ওই পপুলেশনের জীবের জননকোষে সংঘটিত মিউটেশনের মাধ্যমে। এই মিউটেন্ট ট্রেইট বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রজাতি গঠন এগিয়ে যায়।
কিন্তু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির জনন কোষে মিউটেশন হলেও সেটা যদি বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে তবে এই নতুন মিউটেন্ট ট্রেইট (বৈশিষ্ট্য) প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারবে না। বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
“
উনার ধারণা যে কতটা ভুল সেটা নিয়ালদারথালদের জিনোম সিকোয়েন্স করে বোঝা যায়। যে নিয়ালদাথালদের এক সময় জীবাশ্মবিদেরা মানুষ বলে মানতেই চান নি , সে নিয়ালদাথালদের মানুষ বলে ঘোষণা দেয়া এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
বিবর্তনীয় ইতিহাস প্রতিষ্টায় ফসিল গুরত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই , তবে বিবর্তনীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে শুধুমাত্র জিনোম সিকোয়েন্স পর্যালোচনা করার পর। জীবের জিনোম নিজেই একটা ইতিহাসের মহাফেজখানা- যেখানে বিবর্তনীয় ইতিহাসের আদ্যোপান্ত সব কিছুই লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ আপনাকে।
ডিবোয়ার ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি ভুল সেটা সত্যি। কিন্তু ডিবোয়ার সময় তো কেউ জিনোম সিকুয়েন্সের নামগন্ধ শুনে নাই।
নিঃসন্দেহে জিনোম সিকুয়েন্সের বিশ্লেষণ ছাড়া বিবর্তনীয় ইতিহাস চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা দুঃসাধ্য।
তবে এটা তো আপনি নিশ্চিৎভাবে জানেন লক্ষ লক্ষ বছর পুরাতন ফসিলের গায়ে ডিএনএ’র অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া কতটুকু দুর্লভ বা দুঃসাধ্য!
জেরি কোয়েনের একটা বইয়ে (হোয়াই ইভোলুশন ইজ ট্রু) বোধহয় পড়েছি এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার জীবাশ্ম-প্রজাতি উদ্ধার হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে। আর কয়েক শতাধিক হোমিনিড ফসিল স্পেসিমেন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়টি হোমিনিড ফসিলের ডিএনএ পাওয়া গেছে? খুব নগন্য সংখ্যক। যাহোক নগন্য না বেশি বিষয়টি সেটি না। ফসিল থেকে ডিএনএ না পাওয়া গেলে কি করা হয়ে থাকে।
মরফোলজিক্যাল এভিডেন্স, বায়োক্যামিকেল এভিডেন্স, বায়োজিওগ্রাফিক্যাল এভিডেন্সসহ আরো বেশ কিছু এভিডেন্সের উপরই বিজ্ঞানীদের নির্ভর করতে হয় তখন। এবং এগুলোর প্রত্যেকটিই ফসিলের বিবর্তনীয় সাক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকদিন ধরে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটি হলো বিবরতনের ধারা অনুযায়ী মিউটেশনের ফলে যে নতুন প্রানীটির উদ্ভব হয় তা নিশ্চয় একটি হয় পুরুষ অথবা নারী সে ক্ষেত্রে প্রজনন কি করে হয় ?
শরীরের রং সাদা কালো আবহাওয়া থেকে নির্ধারিত হয় কিন্তু শারীরিক ঘটন চাইনিজ বা আফ্রিকান এটা তো আবহাওয়া থেকে হতে পারে না না-কি ?
প্রশ্ন দুটির উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম , অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
@আস্তরিন,
বুঝলাম না, আপনার একই মন্তব্য দুই নামে আসলো কী ভাবে? যাক এ রকম প্রশ্ন মনে উদ্রেক হওয়া ভাল।
আরো কিছু প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই ভাবাতো-
এক মানব বা মানবী থেকে আসা মানুষের হাজার প্রকার ভাষা এলো কোত্থেকে?
গায়ের লোম কবে উধাও হলো? কেন হলো?
পুরাতন অবস্থায় কোনদিন ফিরে যাওয়া কি সম্ভব?
যে বিবর্তন প্রক্রীয়ায় আমরা এসেছি, আবার কি একই প্রক্রীয়ায় একই পরিবেশে কোনদিন নতুন মানব সদৃশ প্রাণীর উৎপত্তি সম্ভব?
চলুন, মুক্তমনার বিবর্তন আর্কাইভে আমরা আমাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজে বের করি।
@আকাশ মালিক,
মালিক ভাই, খুব সংক্ষেপে কয়েকটি মন্তব্য করলাম আপনার প্রশ্নগুলি নিয়ে।
ভাষা মানুষের তৈরি। অঞ্চলভেদে ভাষার পরিবর্তন ঘটিয়েছে মানুষ বিভিন্ন সময়।
তবে একদম আদি ভাষা এক না একাধিক সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিৎ নই। তবে আমার মতে একাধিক হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
সম্ভবত মানুষের গায়ের লোম বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়েছে মানুষের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে। উইকিপিডিয়াতে বোধহয় দেখেছিলাম প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার বছর আগে এই পরিবর্তন শুরু হয়। এর পিছনে মানব দেহের HR জিনের মিউটেশনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মানুষ ছাড়াও আরো কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরের লোম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন শূকর, ইঁদুর, হাতি, তিমি, জলহস্তী ইত্যাদি।
বিশিষ্ট বিবর্তন-বিজ্ঞানী স্টিফেন জে. গোল্ড তাঁর “Wonderful Life: The Burgess Shale and the Nature of History” বইয়ে বলেছিলেন , আমরা যদি কোনোভাবে পৃথিবীতে জীবনের টেপটি নতুন করে শুরু করি তবে আজকে যে বিষয়গুলি দেখছি তা হয়তো আর দেখতে পাবো না। (if we were somehow able to “replay the tape” of life on Earth since its beginning, we could not expect anything like what we see today to result.)। কেননা, বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল “রেন্ডম” মিউটেশন অসংখ্যবার ঘটে এসেছে, তা যে পুনর্বার একই ফল দিবে তা তো কোনোভাবে বলা যায় না। এছাড়া হাজার হাজার শর্ত ক্রিয়াশীল ছিল জীবের বিবর্তন মুহুর্তে। এগুলিও যে একই রকম পুনরায় ক্রিয়াশীল থাকবে সেটাও বলা যায় না।
উপরের বক্তব্যখানি এখানে প্রযোজ্য হতে পারে।
অসাধারণ লাগলো, অনেক সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখেছেন। এ ব্যাপারে একটা জিনিশ জানার ছিলো,
আচ্ছা, আগের দিনের মানুষেরা বা সমগোত্রীয় প্রাণীরা নাকি অনেক লম্বা ছিলো? এটা অনেকে বলে যে ধীরে ধীরে আমরা খাটো হচ্ছি। আগে শত শত হাত উচু মানুষ ছিলো। এটা কি সত্যি নাকি? এ ব্যাপারে আরো কিছু লিখতে পারেন, এসবে আগ্রহ অনেক
@ছেঁড়াপাতা,
আগের দিনে মানুষ শত হাত লম্বা ছিল শত শত বছর নবীরা বাঁচত (অবশ্য সেরা নবীটি বিষের কবলে পড়ে সত্তুরের দুয়ারেও পৌঁছতে পারেন নি) এই কথা শুধু ধর্মীয় বই গুলুতেই খুজে পাবেন। বৈজ্ঞানিক ভাবে এর বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। বরঞ্চ এখন মানুষ আরো লম্বা হচ্ছে, অন্ধ ধার্মিক অধার্মিক সবাই মিলে কাপড়ে গিট দিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়াচ্ছে, ঔষধ খাচ্ছে, রোগ নির্ণিত হচ্ছে, প্রয়োজনে জায়গা জমি বন্ধক রেখে বা বিক্রি করে অপারেশনের টেবিলে নেংটো হয়ে শুয়ে পড়ছে ফলে মানুষের গড় আয়ু হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাই এখন প্রমাণিত সত্য।
অনন্তকে অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপক লেখার জন্য অভিনন্দন অনেক কিছুই জানতে পারলাম। (F)
@ছেঁড়াপাতা, আপনার প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমার এই লেখাটা পরতে পারেন।
মানুষের উচ্চতা কতটুকু হওয়া সম্ভব? ৯০ ফুট আদম কিম্বা ৬০ ফুট কিংকং সম্ভব নয়; কেন?
@হোরাস,
আপনাকে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটি এখানে শেয়ার করার জন্য। অসাধারণ একটি লেখা। সামুতে এই লেখাটি আমি পড়েছিলাম আগে।
@হোরাস, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা লেখা লিখার জন্য আবার এখানে শেয়ার করার জন্য। বিবর্তনবাদ ও তদ্সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আগ্রহ থাকা সত্বেও তেমন পড়া হয়না কারন এর খট্টরমার্কা শব্দ ও বাক্যগুলোর জন্য। কিন্তু আপনি এত সহজভাবে লিখেছেন যে এক নিমিষেই পুরোটা লেখা পড়ে ফেলেছি। এমনিতেই আপনি আমার প্রিয় ব্লগ লেখকদের মধ্যে একজন। ঐ লেখাটা পড়ে আরো ভক্ত হয়ে গেলাম। পাশাপাশি অনন্ত বিজয় দাশ ভাইকেও অসাধারন একটা লেখা শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@ছেঁড়াপাতা,
ধন্যবাদ।
ওসব পুরোটাই বকওয়াস!
আমরা হোমো সেপিয়েন্সের কয়েকটি পূর্বপুরুষের হিসেব যদি দেখি যেমন আর্ডিপিথেকাস রেমিডাস এর যেসব ফসিল উদ্ধার হয়েছে সেখান থেকে দেখা যায় এদের উচ্চতা সম্ভবত ৩ ফুট ১১ ইঞ্চি এবং ওজন প্রায় ৫০ কেজির মধ্যে ছিল। আর্ডিরা প্রায় ৫২ থেকে ৫৮ লক্ষ বছর পুরাতন।
অস্ট্রেলোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস ৩০ লক্ষ বছর পুরাতন। তাদের উচ্চতা প্রায় ৩.৬ ফুট থেকে ৫ ফুটের মধ্যে ছিল।
হোমো হেবিলিসরা প্রায় ২৪ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ বছর পুরাতন। ওদের উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুটের মতো। ওজন ৪৫ কেজি।
হোমো নিয়ান্ডার্থালরা দুই লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার পুরাতন হোমিনিড। ওদের পুরুষদের গড় উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির মতো। আর আমরা মানুষদের (হোমো সেপিয়েন্স) গড় উচ্চতা এবং ওজন সম্পর্কে তো জানেনই আপনি।
পাশের লিংক থেকে আপনি হোমিনিড ফসিল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানতে পারবেন : http://www.talkorigins.org/faqs/homs/species.html
অর্থাৎ শতশত ফুট উঁচু মানুষের কাহিনি পুরোটাই আজগুবি।
@অনন্ত বিজয় দাশ, ধন্যবাদ মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য। আজকেই অফিসে এক কলিগকে কিছু পুরানো দিনের কঙ্কালের ছবি দেখাচ্ছিলাম , তখনি এই পূর্বের দিনের মানুষের কথা উঠে, সে জোড়ের সাথেই বলে আগের মানুষ অনেক লম্বা ছিলো, আমি সাথে সাথে আপনার পোষ্টের ও হোরাস ভাই এর পোষ্টের রেফারেন্স দেই, তিনি ও সাথে সাথে মোবাইল থেকে একটা ভিডিও দেখায় , সেখানে কুরআনের আয়াতের সাথে সাথে একটা ফারাউন এর মমি দেখায়, যার কোমড় পর্যন্ত আকৃতি সাধারণ লম্বা মানুষের মত , কিন্তু কোমড়ের নিচের অংশটা বেখাপ্পা লম্বা। আমি তাকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বুঝাতে চাইলেও সে বলে না এটা তো চাক্ষুষ প্রমান আছে ভিডিও তে। এখানে কোন দুই নাম্বারি তো হতে পারেনা। এ ব্যাপারে গুগলিং করলাম তাও তেমন উত্তর পেলামনা। একটু কী খোলসা করবেন। ব্যাপারটা আমার কাছে দুই নাম্বারি লাগছে কিন্তু ধরতে পারছিনা।
@ছেঁড়াপাতা,
আপনি যদি ওই ভিডিওটি শেয়ার করতে পারতেন তাহলে দেখে মন্তব্য করা যেত। তবে আপনি ইন্টারনেটে একটু ঘাটলে এ ধরনের প্রচুর জোচ্চুরিমার্কা ভিডিও, স্থিরচিত্র পাবেন যা দিয়ে অলৌকিকত্ব প্রচার করা হচ্ছে দেদারসে। যেমন দেখুন ওই চিত্রটি। বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিক (নিউ ন্যাশন)-এ প্রকাশিত খবরকে ভিত্তি করে কেমন করে গুজবের ঢালপালা ছড়িয়েছে। আপনি হয়তো এরকম কোনো একটি কঙ্কালের ভিডিওই দেখেছেন! কিন্তু এগুলা যে জোচ্চুরি তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। হাতে নাতে ধরা খেলেও এই সব অতিলৌকিকতার জোচ্চুরদের কোনো হায়া হয় না! শেষমেশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজ পর্যন্ত এইসব জোচ্চুরিপনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া উইকিইসলামে ও র্যাশনালিস্ট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত জবাব দেখুন।
আবার আপনি হয়তো জানেন স্থিরচিত্র ম্যানুপুলেট করার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এসব ম্যানুপুলেট করা ছবি এমন দুর্দান্তভাবে তৈরি করা হয় যা দেখে থমকে যাবেন। আপনি পাশের লিংকে ক্লিক করে দেখুন। ২০০২ পুরস্কারপ্রাপ্ত একটা ছবিকে ঘিরেই মূলত “সৌদি আরবে উদ্ধারকৃত” দৈত্যাকৃতি কঙ্কালের গুজব ছড়িয়েছে!
@অনন্ত বিজয় দাশ,
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, এমন একটি সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
আমি একটা বিষয় আপনাদের কাছ থেকে জানতে চাই- কারণ বিষয়টা সম্পর্কে আমি খুব একটা জানি না। বর্তমানে মিসরে ফেরাউনদের/নাকি ফেরাউনের লাশগুলো মমি বানিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের উচ্চতা সর্বচ্চ কত ফুট একটু যদি বলতেন (যদি ভালভাবে জেনে থাকেন)। কারণ এ ব্যাপারে অনেকেই খুব জোরগলায় বলে যে, ফেরাউন নাকি ৭০ ফুট লম্বা ছিল। যদিও জানি এগুলো পুরা ভুয়া, আবার আমার কাছে একটা ভিডিও ক্লিপও আছে ফেরাউনের। তার পরও আপনাদের কাছ থেকে জেনে একটু বারতি নিশ্চিত হই আর কি…….
@ডিজিটাল আসলাম,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে মিশরের মমি নিয়ে আমার মধ্যে একসময় কৌতূহল কাজ করলেও কোরানের ফেরাউনের কাহিনি নিয়ে আমার মধ্যে তেমন আগ্রহ কখনো কাজ করে নি।
কোরানে ফেরাউনের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা খুবই সংক্ষিপ্ত। মোটামুটি বর্ণনা আছে ইহুদিদের তৌরাত গ্রন্থে। তবে ইতিহাস গবেষকরা এই উভয় ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা নিয়েই সন্দিহান। এসবের কোনো সত্যতা আছে বলে নিশ্চিত নন। কোরানে ফেরাউনকে ঢুবিয়ে মারার কথা বলা হয়েছে ১০:৯০ আয়াতে। কিন্তু ফেরাউনটা কে? ফেরাউন তো কোনো ব্যক্তির নাম নয়। মিশরে রাজা বাদশার সমার্থক হিসেবে ফেরাউন ডাকা হয়। আলেকজান্ডারের মিশর দখলের আগে বহু ফেরাউনের (রাজা-বাদশাহ) শাসনকাল চলেছে, তাহলে কোরানে বা ইহুদি গ্রন্থের বর্ণিত কাহিনিতে কোন ফেরাউনের কথা বলা হচ্ছে? আমি নিশ্চিত নই। আমার পরিচিত কাউকে কাউকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি এখানে নাকি রামেসিস-২ এর কথা বলা হচ্ছে! রামেসিস-২ (১৩০৩- ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব) এর শাসনকাল ছিল ১২৭৯-১২১২ মানে প্রায় ৬৭ বছর পর্যন্ত। মমির উচ্চতা মেপে দেখা গেছে রামেসিস-২ উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির মতো ছিল। মোটেও ৭০ ফুট লম্বা ছিলেন না। গুগলে সার্চ দিলে পরিষ্কার তথ্য পাবেন এ ব্যাপারে।
যদি রামেসিস-২ সত্যি কোরান বা তৌরাতে বর্ণিত ফেরাউন হয়ে থাকেন তবে এই কাহিনির বর্ণনায়ও প্রচুর ভুল আছে। কোরান বা তৌরাতে ফেরাউনকে খুব নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী, অত্যাচারী শাসক হিসেবে দেখানো হয়েছে কিন্তু ঐতিহাসিক রেকর্ড বলে রামেসিস-২ ছিলেন বুদ্ধিমান, ইহজাগতিক এবং শিল্পশৈলীর প্রতি আগ্রহশীল বাদশাহ। ৯০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁর ছিল গেটেবাত। তিনি পানিতে ঢুবে মারা গেছেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি কখনো। পানিতে ঢুবে মরার কোরানের কাহিনি মিথ্যে বলেই মনে হয়।
মিশরের আরো দুটি বিখ্যাত মমি হচ্ছে তুতেনখামেন (১৩৪১-১৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব) এবং সেতি-১ (সম্ভাব্য ১২৯৪-১২৭৯ খ্রিস্টপূর্ব) ফারাও। তুতেনখামেন ছিলেন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি লম্বা এবং সেতি-১ ছিলেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা। অর্থাৎ আজকের যুগের গড়পরতা মানুষের উচ্চতার মতোই এই ফারাওদের উচ্চতা ছিল।