আমার ফেসবুকে পদার্পণ বেশিদিনের নয়। ২০১০ সালের জুলাই মাসের ২৬ তারিখে। এক ধরণের অনীহা ছিলো এই ফেসবুকের যাবতীয় কাজকারবার ঘিরে। ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করা, ‘আজকে দুধের সাথে কলা মিশিয়ে খেয়েছি বলে স্ট্যাটাস দেয়া’, আর বিনা কারণে আরো চোদ্দ-জনের সেই কলা খাওয়া স্ট্যাটাসে লাইক দেয়া – এসবের কোনই অর্থ খুঁজে পাইনি আমি। তারপরেও একসময় ফেসবুকে এলাম। বন্ধুদের পীড়াপীড়িতেই কিছুটা। কিছুটা আবার আগ্রহে। ফেসবুকে নাকি মুক্তমনাদের অনেক পেজ, ফোরাম, গ্রুপ – এগুলো আছে। তা আমিও ঢুকে পড়লাম চুপি চুপি একদিন।

প্রথম কিছুদিন ভাব বুঝতেই সময় লেগেছে। পরে একটা সময় ধাতস্থ হয়ে উঠলাম। দেখলাম, ফেসবুক একটি আজীব জায়গা। ভাল লেখালিখি, খবর এগুলোর হদিস তো পাওয়া যায়ই, এবং সেই সাথে কার ভেতরে যে কী আছে তা ফেসবুকে না থাকলে ঠিকমতো বোঝাই যায় না। কেউ হয়তো নিজের গুঁফো মুখ আড়াল করেছে কোন উদগ্র কামনাময়ী নারীর প্রোফাইল পিকচার দিয়ে, আর সেই ছবি একে ওকে পাঠিয়ে মধুমক্ষিকাদের সুমধুর আমন্ত্রণের হাতছানি। কেউ কেউ আবার ট্র্যাপে পড়ে সেটা গ্রহণ করছে, সেটা আবার জানতে পারছে তার কমন ফেসবুক বন্ধুরা। আবার আরেকদল অনাবৃতবক্ষা কোন নারীর নিউজক্লিপ পড়বে বলে কোন লিঙ্কে যেই ক্লিক করেছে, ওমনি সেই সব ছবি সম্বলিত নিউজ পোস্ট হয়ে যাচ্ছে তার বন্ধুদের ওয়ালে। রাম ধরা খেয়ে তারা তখন চ্যাঁচাচ্ছে – ‘ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেলেছে হ্যাকারেরা, আর আমার বন্ধুদের ওয়ালে আজে বাজে ছবি পোস্ট করছে। আপনি এই নিউজটি সবাইকে ছড়িয়ে দিন’। তামসার কোন শেষ নেই।

তা ফেসবুকের তামসা বাড়াতেই আমি একসময় স্ট্যাটাসে কিছু নির্দোষ জোক পোস্ট করতে শুরু করি। প্রথম দিকে ফেসবুকের স্ট্যাটাসের লিমিটেশন ছিলো অনেকটা টুইটারের মতোই। মাত্র ৪২০ অক্ষর। তাই খুব কায়দা করে জোক পোস্ট করতে হত, তা যেন শব্দ-সীমাকে ছাড়িয়ে না যায়। কিন্তু ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে সে সমস্যা আর রইলো না। ফেবুকের স্ট্যাটাসে অক্ষরের সেই ফোর টুয়েন্টি মার্কা লিমিট তুলে দিয়ে ষাট হাজারেরও বেশি অক্ষর সমৃদ্ধ স্ট্যাটাস পোস্ট করার সুযোগ দিয়ে দিল। ষাট হাজার অক্ষর তো অনেক। ছোট খাট জোক তো বটেই পুরো গল্প উপন্যাসই মনে হয় লিখে ফেলা সম্ভব। তাই প্রথম দিকে কিছু জোকের আকার ক্ষুদ্র হলেও, পরের দিকেরগুলো বড়সড়।

জোকের সূচনা হয়েছিলো আমাদের শাফায়েতের একটি নির্দোষ টেকনিক্যাল আপডেটের লেখাকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে তার আপডেট ‘বিটা ভার্শনে রয়েছে’ এই অমিয়-বানী শ্রবণ করার পরে। সেটি ছিলো অগাস্টের ৩১ তারিখ। এরপর পরবর্তী চার মাসে আরো কিছু জোক এসেছে স্ট্যাটাসে। অনেককে নিয়েই নানা পদের রসিকতা হাজির করা হয়েছে। এ-জোকগুলোর কোনটিরই মৌলিকত্ব দাবী আমি করছি না। বিভিন্ন সময় শোনা কিংবা জানা জোকগুলোকেই নানাভাবে মোল্ড করা হয়েছে। কোন কোনটি অবশ্য তাৎক্ষণিক-ভাবেই মাথায় খেলে গেছে, কিন্তু সেগুলো মৌলিক কিনা সে ব্যাপারেও আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই, হতেই পারে পুরনো কোন শোনা কাহিনীই আমার মাথায় জুড়ে বসেছিল। কিন্তু মৌলিক হোক আর না হোক, জোকগুলো যে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ভাল লেগেছিল তা স্ট্যাটাসের মিথস্ক্রিয়ায় নানাভাবে বোঝা গেছে।

নববর্ষের দিনে সেই জোকগুলোই তুলে দেয়া হল মুক্তমনার পাঠকদের জন্য।

শুভ নববর্ষ।

ডিসক্লেমার – নীচের এ জোকগুলোতে বর্ণিত সকল চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তির নামের সাথে মিল নেহাতই কাকতালীয় কিংবা ঘটনাচক্রের সমপাতন। 😉

:line:

বিশ্বের খ্যাতিমান প্রোগ্রামার শাফায়েত আশরাফ তাহার ১০০ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করিবার পর পরলোকে সহসা এক ছায়া-সুশীতল বৃক্ষের তলায় নিজেকে আবিষ্কার করিলেন। সারা জীবন নাস্তিকতাবাদ চর্চা এবং পাশাপাশি নাস্তিক মুরতাদ মুক্তমনাদের ওয়েব সাইট ডেভেলপ করিয়া তাহার প্রতীতি হইয়াছিলো যে, পরকাল পরলোক বলিয়া কিছু নাই, ওই সকলই কেবল ছেলে ভুলানো রূপ কথা। তাই হঠাৎ করিয়া এক্ষণে নিজেকে পরকালে বৃক্ষের নীচে আবিষ্কার করিয়া কিঞ্চিত ভ্রু-কুঞ্চিত শাফায়েত।

পরলোক না হয় বুঝা গেল, কিন্তু এই জায়গাটা বেহেস্ত নাকি দোজখ?

তাহার সারা জীবনের শিখা if-else ক্লজের এলগোরিদম প্রয়োগ করিয়া আর নেস্টেড লুপের ভিতর প্রশ্নটিকে অনুপ্রবেশ করাইয়া শাফায়েত নিমেষেই বুঝিয়া লইলো ইহা আর যাহাই হোক দোজখ নহে। কারণ দোজখ হইলে এতক্ষণে তাহার ফুটন্ত কড়াইয়ে উত্তপ্ত হইয়া জীবন এতক্ষণে ঝামা ঝামা হইয়া যাইতো, ছায়া সুশীতল বৃক্ষের নীচে বসিয়া সমীরণ উপভোগ করিবার ফুরসৎটুকু হইতো না। ইহা তাহা হইলে বেহেস্তই হইবে।

পরলোকে নিজেকে দেখিয়া শাফায়েতের ভুরু যতটা কুঞ্চিত হইয়াছিলো প্রথমে, নিজেকে বেহেস্তে আবিষ্কার করিয়া চাহার বদন ততোধিক প্রসন্ন হইয়া উঠিল, হাসি হইলো আকর্ণবিস্তৃত ( )। ইহা মন্দের ভাল হইয়াছে বলিতে হইবে।

কিন্তু হাসি সাময়িক। বেহেস্তে হুর পরী কই? খালি ছায়া সুশীতল বৃক্ষরাজি দেখিয়া কি তাহার মন ভরিবে? ইতি উতি খুঁজিয়া কোথাও কিছু না পাইয়া উঠিবার উপক্রম করিতেই শাফায়েত দেখিলো অনতিদূরে টিলার উপরে স্বয়ং ঈশ্বর বসিয়া আছেন। পদদ্বয় সন্নিবদ্ধ অবস্থায় ঈশ্বর তাহারই দিকে তাকাইয়া রহিয়াছেন।

অবশেষে তাহা হইলে সমাধান পাওয়া গিয়াছে। হুরীর খোঁজ ঈশ্বরই দিতে পারিবেন। আল্লাহ মালিক। গ্রীবা উন্নত করিয়া তাহার নিকটে গিয়া শাফায়েত শুধাইলো –

– এই যে মশাই, শুধু পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে চলবে – এত যে পৃথিবীতে ওহি পয়গম্বর কিতাব সিতাব পাঠায় আর কোরান হাদিসে সত্তুরটা উদ্ভিন্নযৌবনা হুর পরীর কথা একশ জায়গায় ফেনায় ফেনায় বললেন, আমি তো হুরী, মুড়ি, ঘুড়ি কিছুই দেখি না এখানে। হুরীরা সব গেল কই?

ঈশ্বর নিরাসক্ত স্বরে উত্তর দিলেন –
– সিস্টেমটি “beta” পর্যায়ে আছে …
অগাস্ট ৩১, ২০১১

********************************************

ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স সুদূর আফ্রিকান এক আদিম ট্রাইবে প্রকৃতি বিবর্তন এবং সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েছেন, সেখানে তিনি একবছর থাকবেন আর তার নতুন বই লিখবেন ‘আউট অফ আফ্রিকা’ নিয়ে। তিনি আফ্রিকান ট্রাইবের মধ্যে বাস করে তাঁদের সংস্কৃতির অনেক কিছু শিখছেন, আবার তাঁদেরও শেখাচ্ছেন অনেক কিছু – বিশেষত: পশ্চিমা জগতের বিজ্ঞান, কারিগরি, প্রযুক্তির কিছু দিক। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন খবর পাওয়া গেল ট্রাইবের নেতার স্ত্রীর এক সন্তান হয়েছে, কিন্তু গায়ের রঙ ধবধবে সাদা!

ট্রাইবের সবাই হতবাক। প্রফেসরকে আলাদা কয়রে ডেকে নিয়ে ট্রাইবের সর্দার বললেন – ‘হুনেন প্রফেসর সাব, এইখানে আপ্নেই আছেন একমাত্র এইরকম সাদা । আমরা এর আগে কোন সাদা চেহারার মানুষই দেখি নাই। কোইত্থিকা কী হইছে, এইডা বুঝতে জিনিয়াস হওন লাগে না’।

প্রফেসর একটু ভেবে বললেন, ‘না, না চিফ। আপনি ভুল বুঝছেন। প্রকৃতিতে এরকম ঘটনা মাঝে মধ্যেই দেখা যায়। বিজ্ঞানে আমরা এটাকে বলি Albinism। এই যে আপনার উঠানে দেখেন সবগুলা ভেড়া সাদা, খালি একটা ভেড়া কালো রঙের। প্রকৃতিতে এরকম হয় মাঝে সাঝে, আপনি শান্ত হন।

ট্রাইবের সর্দার বেশ কিছুক্ষণ ধরে চুপ থেকে ডকিন্সকে বললেন, ‘শোনেন, আপ্নের লগে একটা ডিলে আসি। আপনে ভেড়া নিয়ে আর কাউরে কিছু কইয়েন না, আমিও সাদা শিশু লইয়া আপনেরে কিছু কমু না!’

********************************************

লাল মিয়ার বড় দুঃখ। তিনি পাসপোর্ট হাতে পাহিয়াছেন। কিন্তু পাসপোর্টে তাহার নাম ভুলক্রমে সোনা মিয়া লেখা হইয়াছে। লাল মিয়া পাসপোর্টের অফিসে সরাসরি হাজির হইলেন। কর্মকর্তা কহিলেন, লাল সাহেব, মৌখিকভাবে তো কিছু হইবে না, আপনি আমাদের বরং একটি চিঠি দিন। লাল মিয়া পরদিন পাসপোর্ট অফিসে চিঠি পাঠাইলেন-

আমি লাল মিয়া, পিতা মৃত কালা মিয়া, … এই মর্মে অভিযোগ জানাইতেছি যে, পাসপোর্টে আমার নাম ভুলভাবে লিখিত হইয়াছে। অধমের নিবেদন এই যে,

আমার নামের স্থলে মিয়ার জায়গায় মিয়া রাখিয়া সোনা কাটিয়া লাল করিয়া দেওয়া হৌক!

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১১
********************************************
এটা অবশ্য কোন জোক নয়। তবে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা এমনই যে মন্ত্রি-মিনিস্টারদের অনেক উক্তিই ‘জোক’ বলে ভ্রম হতে পারে, যেমনটি হয়েছিলো ১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি খবরে।
আজকের বাণী চিরন্তনী!

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির বলেছেন, ‘ধর্মমতে মুসলমানদের কোনো অকালমৃত্যু নেই। তারেক মাসুদ ও মিশুক তাদের জন্য নির্ধারিত সময়েই মারা গেছে। তাদের জন্য দুঃখ লাগতে পারে। তবে এটাই বাস্তব।’
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-09-16/news/186097
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১১

********************************************
এদন উদ্যানে বিবি হাওয়া একাকী ঘুরিতেছিলেন। ঈশ্বরকে বলিলেন,
– ‘প্রভু আমার এক সমস্যা…’
– কি সমস্যা?
– আপনি এই কানন বানাইয়াছেন, সাপ না শয়তান কি বানাইয়াছেন, তথাপি এখানে আমি একা, নিঃসঙ্গ।
প্রভু হাওয়ার দুঃখে ব্যথিত,বললেন,
-ঠিক হায়, তোমার জন্য আমি পুরুষ তৈরি করিব।
– সেটা কি জিনিস?
-সেএক আজব চীজ।তোমার মধুর হাসিতে গলে যাবে, তোমাকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করবে,তোমার জন্য হাসবে, কাঁদবে, তোমাকে মাথায় করে রাখবে …
-বুঝলাম, কিন্তু ভিত্‌রে নিশ্চয় কুনো ঝামেলা আচে।
– ‘একটাই কণ্ডিশন’, ঈশ্বর বললেন।
-কী?
– তোমার হের মাথায় ঢুকায় দেওন লাগবো যে, হেই বলদডারে আমি তোমার আগে বানাইছি।

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১

********************************************
ভেবে দেখলাম, আমাদের মহান ঈশ্বর হচ্ছেন নাস্তিকূলশিরোমনি, মানে সবচেয়ে বড় নাস্তিক (উনি বিশ্বাস করেন না যে কোন সৃষ্টিকর্তা তারে বানাইছে), তাই তার দর্শন হওয়া উচিৎ অবিশ্বাসের দর্শন! 🙂

জুলাই ১৫, ২০১১
********************************************

জুকার্নায়েকের বড় আশা ছিল তিনি মৃত্যুর পর বেহেস্ত-বাসী হইবেন। তা আশা করবেনই বা না কেন? এতদিন ধরে আল্লাহর পথে জিহাদ কর্ছিলেন, নানা ভাবে বিবর্তনের বিরুদ্ধে গীবত গাইছেন, বিভিন্ন লেকচারে আল্লা আল্লা আর ইসলাম ইসলাম কইরা ফ্যানা তুইলা ফেলাইলেন, কোরানের মইধ্যে বিজ্ঞান পাইলেন, পৃথিবীর আকার পাইলেন উটের ডিমের লাহান, উনি বেহেস্তবাসী না হইলে হইবো কে?

কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর ঈশ্বর আরেক। কোন এক অজ্ঞাত কারণে ঈশ্বরের শেষ বিচারে জুকার্নায়েকের বেহেস্তে স্থান হইলো না। স্থান হইলো দোজখে। তবে হাজার হলেও তিনি স্বনামখ্যাত জুকার্নায়েক। ঈশ্বর তাকে ডেকে নিয়ে দয়াপরাবশতঃ বললেন, তোমাকে দোজখের বিভিন্ন প্রকৃতি ঘুরাইয়া দেখানো হবে। তোমার যেটা পছন্দ বেছে নেওয়ার তৌফিক দেয়া হইল, জুকার্নায়েকজী!

মন্দের ভাল, কি আর করা। জুকার্নায়েককে প্রথম একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হইল। সেখানে এক পাপিষ্ঠকে উলঙ্গ করে চাবুক কষা হচ্ছে। আর চাবুকের বাড়ি খেয়ে পাপিষ্ঠ ব্যাটা তারস্বরে চ্যাঁচাচ্ছে। জুকার্নায়েক দেখে বললেন, কতক্ষণ এ ব্যাটাকে চাবুক মারা হবে? উত্তর আসলো এক হাজার বছর। এর পর এক ঘণ্টা বিরতি। তারপর আবার … জুকার্নায়েক শুনে বললেন, নাহ এটা আমার জন্য নয়, চলুন অন্য ঘরে যাই।

দ্বিতীয় ঘরে গিয়ে জুকার্নায়েক দেখলেন, সেখানেও এক ব্যক্তিকে ধরে গরম কড়াইয়ে বসিয়ে পোড়ানো হচ্ছে, আর ব্যথার চোটে উহ আহ করছে। জুকার্নায়েক সে ঘর থেকেও বিদায় নিয়ে বললেন, আরো অপশন কী আছে দেখা যাক।

তৃতীয় ঘরে গিয়ে দেখেন এক লোককে উলঙ্গ করে চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, আর এক সুন্দরী তন্বী হাঁটু গেড়ে বসে ভদ্রলোকের ‘উহা’ মুখে নিয়ে মনিকা লিউনস্কির মতন মুখমেহন করে চলেছেন। কিছুক্ষণ টেরা চোখে অবলোকন করে জুকার্নায়েক ভাবলেন, এটা তো মন্দ নয়। নিজেকে চেনবাধা ভদ্রলোকের জায়গায় কল্পনা করে আমোদিত ভাব নিয়ে ঈশ্বরকে বললেন, এই দোজখই আমার পছন্দের।

ঈশ্বর ঘুরে সুন্দরী তন্বীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার কাজ শেষ। এখন থেকে জুকার্নায়েক পরবর্তী এক হাজার বছর ধরে এই সার্ভিস দেবেন।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১১

:line:

আরেকটি বছর চলে গেল। ঘটনাবহুল ২০১১। এ বছরটি আমাদের জন্য যেমন ছিলো আনন্দের, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে বিষাদেরও। অনেক নতুন নতুন ব্লগার এবং লেখকদের পদচারণয় ধন্য হয়েছে মুক্তমনা এ বছর। ব্লগারদের লেখা অবিশ্বাসের দর্শন, পার্থিব, ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, আস্তিকতা-নাস্তিকতার দ্বন্দ্ব এবং অবমুক্ত গদ্যরেখা –এর মতো দুঃসাহসিক বই বেরিয়েছে, পাশাপাশি দ্বিধা, রোদের অসুখ, তখন ও এখন, ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন সহ ব্লগারদের নানা অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ নানা গল্প এবং কবিতার বই। নিউজ-মিডিয়ায় মুক্তমনাদের কথা এসেছে, বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন এ বছর অধ্যাপক অজয় রায়; মুক্তমনায় লেখকদের লেখাকে ভিত্তি করে রিপোর্ট লেখা হয়েছে, কিছু কিছু প্রবন্ধ হাজারের উপরে ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে। এগুলো সবই আমাদের জন্য গর্বের। মুক্তমনা আজ কেবল একটি সাইট নয়, সম্মিলিত আন্দোলনের নাম, যে আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে প্রথাবিরোধী স্পর্ধিত তরুণ তরুণেরা। এই অভিযাত্রা টিকে থাকুক।

পাশাপাশি বছরটিকে ঘিরে কিছু বিষাদের ছোঁয়াও আছে। গতবছর আমরা হারিয়েছিলাম বাংলাদেশের কৃতি শিক্ষাবিদ, বিবর্তন শিক্ষার পথিকৃত ড. ম আখতারুজ্জামানকে। ২০১১ এর শেষ দিকে এসে আমরা হারিয়েছি তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরকে, বছর শেষ হবার কিছুদিন আগে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে, আন্তর্জাতিকভাবে স্টিভ জবস, ডেনিস রিচি এবং  শেষমেষ ক্রিস্টোফার হিচেন্সকে। তাঁদের স্মৃতি থাকুক জাগরুক, তাঁদের লেখনী এবং চিন্তাভাবনা হোক আমাদের জন্য অনাবিল প্রেরণার উৎস।

মুক্তমনার সকল লেখক, পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা।