লিখেছেন – শাহেদ ইকবাল
‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` পড়লাম। মুক্তমনা ব্লগে যে ধরনের যুক্তিপূর্ণ, প্রগতিবাদী ও বিশ্লেষণমূলক লেখা আশা করি, ভেবেছিলাম সে রকম একটা লেখা পড়ার সৌভাগ্য হবে। কিন্তু লেখাটি পড়ে ভীষণ হতাশ হয়েছি। আমরা জানি, মুক্তমনা ব্লগে লেখা প্রকাশের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। এ সকল নীতিমালা যেমন সুস্পষ্ট, তেমনি স্বব্যাখ্যাত। যাঁরা এ ব্লগের লেখা পড়েন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করেন যে সেখানে এ সকল নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। সেখানে সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন, উত্তেজক ভাষায় পরিপূর্ণ কিংবা বিদ্বেষমূলক ভঙ্গিতে কিছু লেখা হবে না। লেখায় যদি কোন যুক্তি প্রদর্শন করা হয়, সে যুক্তি হবে যতদূর সম্ভব হেত্বাভাস (Fallacy)মুক্ত। কিন্তু আলোচ্য লেখায় তার প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। লেখাটিতে যুক্তির আড়ালে প্রচুর হেত্বাভাস (Fallacy), ভুল তথ্য, বিকৃত ও খণ্ডিত উদ্ধৃতি, অনুমাননির্ভরতা, স্ববিরোধিতা, সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষার সমাবেশ ঘটেছে, যা নীতিমালার ২.৯, ২.১০ ও ২.১২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এছাড়া অতিরিক্ত বানান ভুলের কারণে লেখাটি ২.১৪ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রকাশযোগ্যতা পায় কি-না সে প্রশ্নও তোলা যায়। এ লেখায় এমন অনুচ্ছেদ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে ভুল বানান নেই। উদাহরণঃ গেছিলেন, ভ্রমন, খুজতে খুজতে, দারুন, কারন, খোজাখুজি, তাৎক্ষনিক, বর্ননা, আপ্রান, দোজক, অবতারনা, ব্যখ্যা, প্রান, টানাহেচড়া, দাড়ায়, গাজাখুরী, দুরত্ব, পৌছে, যতদুর, বন্দ, প্রানী, ধোকা, জঙ্গলাকীর্ন, দাড়িয়ে, লেগিছিল, মুহুর্ত, আপক্ষিক, উদাহরন, সাধারনত, বানী, সাব্যাস্ত ইত্যাদি। এই শব্দগুলো গোটা লেখাতেই আগাগোড়া ভুল বানানে লিখিত হয়েছে। বানান ভুলের সূচনা হয়েছে লেখার শিরোনাম দিয়েই। ‘ফুলের মত`-এর স্থলে লেখা হয়েছে ‘ফুলে মত`। আমার বর্তমান পর্যালোচনায় যেখানে যেখানে লেখককে উদ্ধৃত করেছি, সেখানে অবশ্য বানানগুলো শুদ্ধ করে নিয়েছি।
এখন আমরা দেখব এই লেখাটিতে কুটযুক্তি বা হেত্বাভাস (Fallacy), বিকৃত ও খণ্ডিত উদ্ধৃতি, ভুল তথ্য, অনুমাননির্ভরতা, স্ববিরোধিতা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা প্রয়োগের কি কি প্রমাণ রয়েছে। প্রমাণগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
লেখক বলেছেন, এক রাতে মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে কাবা শরীফে অবস্থান করছিলেন। গভীর রাতে তিনি চুপি চুপি উম্মে হানি (তার চাচাত বোন)-এর বাড়ি হাজির হন। আরও বলেছেন, সে রাতে উম্মে হানির স্বামী বাড়ি ছিল না। এই তথ্যের সমর্থনে তিনি নিচের দু’টি লিংক সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেনঃ
(1) http://ismaili.net/histoire/history03/history313.html
(2) http://www.muhammadanreality.com/ascentionmiraj.htm
যে কেউ এ দুটি লিংক Click করলেই একটা ধাক্কা খাবেন। দেখবেন, লিংকে লেখা আছে একরকম আর লেখক বলছেন আরেক রকম। যেমন, প্রথম লিংকে উম্মে হানি বলছেনঃ ‘Just before dawn, the Prophet of God awoke us and we all prayed the dawn prayer together.` তার মানে কি? মুহাম্মদ (সাঃ) উম্মে হানিকে একলা জাগালেন না, উম্মে হানিসহ আরও কয়েকজনকে জাগালেন এবং তারা সবাই একত্রে ফযরের নামায পড়লেন। কিছু কিছু ইতিহাস গ্রন্থ থেকেও জানা যাচ্ছে, উম্মে হানি বলছেন, ‘তিনি (রাসুল) রাত্রির প্রার্থনা সেরে পরে ঘুমিয়েছিলেন। এবং আমরাও ঘুমিয়েছিলাম। অতি প্রত্যুষে আল্লাহ্র নবী উঠলেন এবং আমাদের জাগালেন। তখন তিনি তাঁর প্রার্থনা সারলেন। আমরাও তাঁর সাথে প্রার্থনা সারলাম।` (সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, পৃঃ ১৭৪ এবং সাইয়েদুল মুরসালীন, আবদুল খালেক, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ২৬৬-২৬৭ )। এই ‘আমরা` কারা? এই ‘আমরা` কি উম্মে হানির পরিবার নয়? তাহলে লেখক কেন এই লিংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন যে, সে রাতে উম্মে হানির স্বামী বাড়ি ছিল না?
এছাড়া লেখক আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস বর্ণনার জন্য reference হিসেবে একটি লিংক ব্যবহার করেছেন। লিংকটা হলোঃ
http://www.questionsonislam.com/index.php?s=article&aid=10849
এই লিংক-এ Click করলেও যে কেউ দেখবেন সেখানে লেখা আছে, ‘The Prophet (s.a.w.) had prayed the evening prayers with Umm Hani and her family, then they all went to sleep. At dawn he said to them, “I prayed the evening prayers with you in this valley, then I went to Jerusalem where I prayed, and here I am praying the dawn prayers with you.” অর্থাৎ উম্মে হানি সে রাতে তার নিজ পরিবারবর্গের সাথে (অর্থাৎ স্বামীর সাথে) ছিলেন। আরও দেখা যাচ্ছে, উম্মে হানি তার স্বামীসহ মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে এশা ও ফজরের নামায পড়েছেন। ফলে উম্মে হানির স্বামী প্যাগান (অগ্নি উপাসক) ছিলেন বলে শুরুতে যে উল্লেখ করা হয়েছে, তা-ও সঠিক পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু লেখক তাঁর বর্ণিত লিংক থেকে এই অংশ বাদ দিয়ে শুধু আল-আকসা মসজিদের অংশটুকু নিয়েছেন। কিন্তু কেন? এ আচরণের রহস্য কি লেখক আমাদের জানাবেন?
উপরের বর্ণনায় আরেকটি বিষয় চেপে যাওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিব তখন সদ্য মৃত। উম্মে হানি ও হযরত আলী (রাঃ) দু’জনই তখন পিতৃহারা। দু’জনই শোকগ্রস্ত। হযরত আলী (রাঃ) তখনও অবিবাহিত। ইতিহাস অনুযায়ী মদীনায় হিযরতের দ্বিতীয় বর্ষে হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহ হয় (সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, পৃঃ ২৩৮)। এ অবস্থায় উম্মে হানির স্বামী ছাড়াও হযরত আলীরও (রাঃ) এ সময় বোনের কাছে থাকা খুবই স্বাভাবিক। আরও চেপে যাওয়া হয়েছে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর পিতার মৃত্যুর পর এই বাড়িতেই মানুষ হয়েছেন এবং উম্মে হানি ছিলেন তাঁর দুধ-বোন। (সূত্রঃ নূর নবী, হাফেজ অধ্যক্ষ এম এ জলিল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ঢাকা, পৃঃ ৬৮)। ‘বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়ী হয় তার স্বামীর বাড়ী`—লেখকের এই উক্তিও তাঁর অতি সরলীকরণের একটি নমুনা। বিয়ের পর সব স্ত্রী স্বামীর বাড়ি যায় না। গেলে ‘ঘর জামাই` শব্দটা থাকত না। আবু তালিবের মৃত্যুর পর উম্মে হানি তার পিতার বাড়িতেই থাকতেন। যারা হজ্ব কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে মক্কায় গেছেন, তারা বিষয়টি জানেন এবং বাড়িটিও দেখেছেন।
দ্বিতীয় লিংকের reference দিয়ে লেখক বলছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) প্রথমে মেরাজে গিয়েছিলেন, তারপর সে ঘটনা সবিস্তারে বলার জন্য তিনি উম্মে হানির নিকট গমন করেন। যে কেউ উক্ত লিংক (http://www.muhammadanreality.com/ascentionmiraj.htm) Click করলেই দেখবেন, এখানেও লিংকের বর্ণনার সাথে লেখকের বর্ণনা মিলছে না। মুহাম্মদ (সাঃ) মেরাজ থেকে ফেরার পর উম্মে হানির সাথে এই কথোপকথন হয়নি। বরং তিনি যখন দিনের বেলায় কাবাগৃহে প্রার্থনারত ছিলেন, তখন আবু জাহেলসহ কোরাইশদের সাতটি দল পর্যায়ক্রমে তাঁকে নানাভাবে বিদ্রুপ ও গালমন্দ করে। দিনটি ছিল ২৬ রজব। কোরাইশদের ব্যবহারে তিনি মনে খুব দুঃখ পান। এ অবস্থায় তিনি মাগরিবের পরে আবু তালিবের বাসায় গমন করেন, যেখানে তাঁর মেয়ে উম্মে হানি থাকতেন। আরবী হিসাবে রাত আগে আসে, দিন পরে আসে। সে অনুযায়ী সূর্যাস্তের পরই ২৭ রজব শুরু হয়ে গেছে। উম্মে হানি রাসুল (সাঃ)-কে এরকম বিষণ্ন ও ভারাক্রান্ত অবস্থায় দেখে তার কারণ জানতে চাইলেন। রাসুল (সাঃ) তাকে সবকিছু খুলে বললেন। উম্মে হানি তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন, “These men undoubtedly know that as a Prophet of Allah bringing the message of Truth you are not in need of servants and accomplices. But as they are a stubborn, envious and ill-tempered lot, they spoke these words with the sole purpose of insulting you and wounding your spirit.” These words served to comfort the Muhammad {s} somewhat, but he still remained distraught. It is reported that soon after praying the night prayer (Salat-al-‘Isha), he fell asleep in Umm Hani’s house in a saddened state of mind.` তারপর সেখানে লেখা আছে, মহান আল্লাহ্তায়ালা জিব্রাইল (আঃ)-কে বলছেন, ‘আমার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়তম ব্যক্তি অবিশ্বাসীদের ব্যবহারে মনে কষ্ট পেয়েছে এবং ঐ অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। তুমি তাঁকে দাওয়াত দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আস।` এরপর মেরাজের ঘটনার বর্ণনা আছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, রাসুল (সাঃ) মেরাজ থেকে ফেরার পর এ ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু লেখক আগের ও পরের ঘটনা বাদ দিয়ে ‘That night was the twenty-seventh night of the month of Rajab, a Monday night.` থেকে শুরু করে ‘Now, Umm Hani was an intelligent and resourceful woman.` পর্যন্ত এসে থেমে গেছেন। এর কারণ কি এই নয় যে, ওই লিংকে লেখা আছে মুহাম্মদ (সাঃ) এশার নামাযের পূর্বে আবু তালিবের বাড়িতে গমন করেন, যেখানে তাঁর মেয়ে উম্মে হানি থাকতেন? ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী মাগরিবের পর থেকেই এশার নামাযের সময় শুরু হয়। আর এশার নামাযের পূর্বের সময় কখনও গভীর রাত নয়। এ সকল তথ্য প্রকাশ পেলে লেখকের নিম্নলিখিত দুটি তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যায়ঃ
(১) এক রাতে মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে কাবা শরীফে অবস্থান করছিলেন। (২) সেখান থেকে গভীর রাতে তিনি গোপনে উম্মে হানি (তার চাচাত বোন)-এর বাড়ী হাজির হন।
এবার দেখা যাক, রাসুল (সাঃ)-এর মেরাজ সম্পর্কে হাদিসগ্রন্থগুলি কি বলে। মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে জানার জন্য ইতিহাসবিদ ও গবেষকগণ যে সকল হাদিসগ্রন্থকে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য বলে রায় দেন, তা হলো, সহীহ বোখারী, মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদ। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, মেরাজের রাতে মুহাম্মদ (সাঃ) খানায়ে কাবার পাশে বা হাতিমে শায়িত ছিলেন (সূত্রঃ বুখারী শরীফ, ৫ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ৩৬৭-৩৬৯ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৪০৮-৪১৪, সহীহ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩২২ ও ৩২৪, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ২৭২ ও ২৭৭)। ইতিহাসগ্রন্থেও এর সমর্থন আছে। তাতেও দেখা যায়, মেরাজের রাতে মুহাম্মদ (সাঃ) কাবাগৃহে শায়িত ছিলেন। অর্থাৎ হানির বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টি সত্য নয়। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ
1.http://en.wikipedia.org/wiki/Isra_and_Mi%27raj
2.http://download.sunnionlineclass.com/ya_nabi/files/al-isra_wal-miraaj_english.pdf
মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর চাচা আবু তালিবের মেয়ে উম্মে হানির প্রেমে পড়েছিলেন ও বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর চাচা রাজী হন নি—এই আজগুবি তথ্যের সমর্থন কোথাও পাওয়া যায় না। না হাদিস, না ইতিহাস। লেখক দুর্বোধ্য কারণে কোন Reference ছাড়া এই তথ্য সরবরাহ করেছেন। তারপর Jump করে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছেন। ইতিহাস বলছে, খাদিজা (রাঃ) মারা যাওয়ার পর মেরাজের পূর্বেই মুহাম্মদ (সাঃ) সাওদা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন (সূত্রঃ স্যার সৈয়দ আমীর আলী, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, ডঃ রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৩২৯ )। এ থেকে দেখা যাচ্ছে, মুহাম্মদ (সাঃ) সে সময় স্ত্রীবিহীন ছিলেন না। কাজেই ‘ওদিকে কিছুকাল আগেই মোহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা মারা গেছে। তাই মনের অবস্থা তার বিশেষ ভাল না`— লেখকের এই বর্ণনাটিও সত্য নয়।
গভীর রাতে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সঙ্গীগণ কর্তৃক হঠাৎ তাঁকে কাবাঘরে দেখতে না পেয়ে তাঁর তালাশে বের হওয়া এবং সারারাত ধরে তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে উম্মে হানির ঘরে গিয়ে সেখানে তাঁকে ভোরবেলা খুঁজে পাওয়ার যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তা-ও সত্য নয়। এ বর্ণনার সাথেও Reference নাই। ইতিহাস ও হাদিস তালাশ করেও এ রকম কোন ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তার বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাসুল (সাঃ) নিজেই কাবাঘরে এসে মক্কার লোকজনের কাছে মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করছেন। আরও দেখা যাচ্ছে, এ বর্ণনা শুনে আবু জাহেল নিজেই হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে খুঁজে বার করছেন এবং তাঁকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ) এরকম একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা বলছেন। তারপর হযরত আবু বকরের (রাঃ)-এর সাথে রাসুল (সাঃ)-এর প্রথম দেখা হচ্ছে এবং কথোপকথন হচ্ছে। (সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, হাদিস নম্বর ৩৩৮, পৃঃ ২৮৮, সাইয়েদুল মুরসালীন, আবদুল খালেক, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ২৬৬-২৬৭, নূর নবী, হাফেজ অধ্যক্ষ এম এ জলিল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ঢাকা, পৃঃ ৮৩-৮৪ )।
আমরা যারা ইতিহাস থেকে মেরাজের ঘটনা পড়েছি, তারা নিশ্চয়ই মেরাজের আগে সংঘটিত অন্য একটি ঘটনাও জানি। এ ঘটনা সবগুলো হাদিস ও ইতিহাস গ্রন্থ দ্বারা সমর্থিত। কি সেই ঘটনা? কোরাইশ দলপতি ওতবাসহ অন্যান্য কোরাইশ প্রধানগণ শেষ কৌশল হিসেবে দুই-দুইবার মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ইসলাম ত্যাগের বিনিময়ে আরবের যে কোন সর্বাপেক্ষা সুন্দরী রমণী, দাবীকৃত যে কোন পরিমাণ ধনসম্পদ, আরবের নেতৃত্ব ও রাজত্বের প্রলোভন দেখান। মুহাম্মদ (সাঃ) যথারীতি তা প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে, ‘আমার এক হাতে সূর্য আরেক হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমার ধর্ম থেকে আমি বিরত হব না।` (সূত্রঃ সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৪, মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, পৃঃ ১৪৯-১৫০ এবং আবদুল খালেক, সাইয়েদুল মুরসালীন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ১২৭)। লেখক এ ঘটনা চেপে গেলেন কেন? সে কি এ কারণে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) চাইলে সে সময় তাঁর পছন্দের যে কোন নারীকেই পেতে পারতেন? সে উম্মে হানি হোক আর অন্য যে-ই হোক। কাজেই, এ ঘটনা উম্মে হানি সংক্রান্ত আগের বর্ণনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।
‘উম্মে হানি তার চাচা আবু তালিবের মেয়ে যার প্রেমে পড়েছিলেন মোহাম্মদ ও বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার চাচা রাজী হয় নি।`—এ কথার সাহায্যে কি লেখক বুঝাতে চাইছেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-কে চাচা আবু তালিব বিশ্বাস করতেন না? ইতিহাস কিন্তু বলছে অন্য কথা। যখন আবু তালিব জানতে পারেন যে, তাঁর পুত্র আলী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তখন তিনি পুত্রকে বললেন, ‘বৎস, তুমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কেননা, আমার বিশ্বাস, মুহাম্মদ তোমাকে শান্তি ও মঙ্গল ছাড়া অন্যকিছুর দিকে আহ্বান জানাবে না। (সূত্রঃ ইবনে হিশাম, সিরাতুর রাসুল, পৃঃ ১৫৯-১৬০, ইবনুল আসির, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪২-৪৩, স্যার সৈয়দ আমীর আলী, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, ডঃ রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৮৬)। এছাড়া কোরাইশগণ আর একবার আবু তালিবকে মাখজুম পরিবারের ওমারা-বিন-অলীদ-বিন-মুগিরা নামক এক যুবকের বিনিময়ে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে (মুহাম্মদ) তাদের কাছে প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিল। আবু তালিব তাতে রাজি হননি। (সূত্রঃ ইবনে হিশাম, পৃঃ ১৬৯, ইবনুল আসির, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৮, স্যার সৈয়দ আমীর আলী, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, ডঃ রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১০৬)। আবু তালিব যেমন হযরতকে আপন পুত্র অপেক্ষা বেশি ভালবাসতেন, হযরতও তেমনি আবু তালিবকে আপন পিতা অপেক্ষা বেশি ভালবাসতেন। (সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, পৃঃ ১৬৭)। মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বিন্দুমাত্র খারাপ ধারণা থাকলেও আবু তালিব তাঁর নিজের পুত্রকে সম্পূর্ণ নতুন এক ধর্ম গ্রহণের জন্য নিশ্চিন্তমনে তাঁর কাছে সমর্পণ করতেন কি?
ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, মক্কার কাফের ও কোরাইশ সম্প্রদায় দীর্ঘ তের বছর (৬১০-৬২২ খ্রিঃ) ধরে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চরিত্রহননের চেষ্টা করেছে। হাতের কাছে প্রমাণ না পেয়ে কখনও পাগল, কখনও জাদুকর, কখনও কবি, কখনও মৃগীরোগী ইত্যাদি নানা কষ্ট-কল্পনায় তাঁকে সম্বোধন করেছে (সূত্রঃ Sir William Muir, Life of Mahomet, 1861)। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাঁর সমর্থক সংখ্যা আরও বেড়েছে। নির্যাতন করেও ধর্মান্তর বন্ধ করা যায়নি। উল্টো আমীর হামজা আবু জাহেলকে প্রহার করেছেন এ কারণে যে সে অযথা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নির্যাতন করেছে। আমীর হামজা তাকে পিটিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনিও ঘটনাস্থলেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এ অবস্থায় যদি মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক উম্মে হানির ঘরে (স্বামীর অনুপস্থিতিতে) রাত্রিযাপনের কোন ঘটনা আসলেই ঘটত, তাহলে অবশ্যই নিম্নলিখিত ঘটনাগুলো ঘটত—
(১) মক্কার অবিশ্বাসীরা একবাক্যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ‘চরিত্রহীন` খেতাব দিয়ে আল্লাহ্র নবী হিসাবে নাকচ করে দিত।
(২) আরবের প্রথা অনুযায়ী গোত্র প্রধানগণ সালিশ বসিয়ে তাঁর বিচার করত।
(২) চাচা আবু তালিব মারা যাওয়ায় এই বিচার অনুষ্ঠানে প্রতিপক্ষের কোন সমস্যা হত না।
(৩) মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী সাওদাও (রাঃ) স্বামীর এই কাজ সমর্থন করতেন না। ফলে তিনিও কোরাইশদের দলে যোগ দিতেন।
(৪) যে ক’জন সাহাবা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁরাও এহেন ‘চরিত্রহীন` ব্যক্তিকে আর সমর্থন করতেন না। ফলে তাঁরাও ইসলাম ত্যাগ করে পূর্বের ধর্মে ফেরত যেতেন।
কিন্তু প্রভাবশালী কোরাইশগণ সে পথে না যাওয়ায় এবং ৩-৪ ক্রমিকে বর্ণিত ঘটনাগুলি সংঘটিত না হওয়ায়, বিশেষ করে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জনসমর্থন আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় যে কোন যুক্তিবাদী পাঠকের মনেই এ প্রশ্ন জাগবে—
(১) কোরাইশগণ সে পথে না গিয়ে রাসুল (সাঃ)-এর কাছে আল-আকসা মসজিদের বিবরণ জানতে গেলেন কেন?
(২) মুহাম্মদ (সাঃ) কেন সকলকে জানালেন যে, মেরাজে দীর্ঘ সময় ব্যয় হলেও পৃথিবীতে মুহূর্তকাল মাত্র ব্যয় হয়েছে? কেন তিনি বললেন না যে, উম্মে হানির ঘরে অবস্থানের সম্পূর্ণ সময়টাই মেরাজে ব্যয় হয়েছে?
(৩) মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে গভীর রাতে গোপনে (লেখকের ভাষায়) উম্মে হানির বাড়ি গেলেন, সেভাবে ফেরত না এসে কেন ঐ বাড়িতে সকাল পর্যন্ত থাকলেন?
(৪) সেই হতভাগ্য উম্মে হানির স্বামীর কি হলো? সে নিশ্চয়ই পাগল হওয়ার কারণে এমন একজন লোককে ছেড়ে দিতে পারে না যে তার স্ত্রীর সাথে রাত্রি যাপন করেছে। অন্যরা ছেড়ে দিলেও দিতে পারে। গোটা ইতিহাস তন্ন তন্ন করেও এই লোকের আর কোন হদিস পাওয়া যায় না কেন? শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত` উপন্যাসের সেই ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার`-এর মত কেন বলতে হচ্ছে, ‘তিনি আসিলেনই বা কিরূপে, গেলেনই বা কোথায়?`
লেখক আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস বর্ণনায় যে সকল লিংকের Reference দিয়েছেন, সেগুলোতেও পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, http://www.islamic-awareness.org/Quran/Contrad/External/aqsa.html-এর এক জায়গায় বলা হচ্ছে, ‘Moreover, the Further [sic!] Mosque was not in existence at the time of Muhammad, but was built about a hundred years after his death! How could he have prayed in it, then, or described its gates and windows?` আবার একই লিংকের অন্য জায়গায় বলা হচ্ছে, ‘By the time Bishop Arculfus was in Jerusalem, some 40 years after the death of Prophet Muhammad, the al-Aqsa mosque was already being used as a place of worship by Muslims.` এই তথ্য দুটো পরস্পরবিরোধী। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর ১০০০ বছর পর আল-আকসা মসজিদ নির্মিত হলে সেই মসজিদ আবার তাঁর মৃত্যুর ৪০ বছরের মধ্যে মুসলমানদের নামাযের ঘর হিসেবে ব্যবহার হয় কি করে, যেখানে লেখক নিজেই বলছেন, রোমানরা জেরুজালেম দখল করে ৭০ খৃষ্টাব্দে টেম্পল অব সলোমন ধ্বংস করে দেয়ার পর ৬৯১ খৃষ্টাব্দে খলিফা আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান সেখানে একটা মসজিদ তৈরী করেন? তাছাড়া http://en.wikipedia.org/wiki/Al-Aqsa_Mosque-এ উল্লেখ আছে, ‘Analysis of the wooden beams and panels removed from the mosque during renovations in the 1930s shows they are made from Cedar of Lebanon and cypress. Radiocarbon dating indicates a large range of ages, some as old as 9th-century BCE, showing that some of the wood had previously been used in older buildings`। অর্থাৎ তিরিশের দশকে পুনঃনির্মিত আল-আকসা মসজিদ ভবনে খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীর কাঠের বীম (Beams) ব্যবহার করা হয়েছে। তারমানে খৃ:পূ: ৯৫০ সালের টেম্পল অব সলোমনের একটা কাঠামো কমপক্ষে ১৯৩০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বহাল ছিল যার উপর আল-আকসা মসজিদ পুনঃনির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
বুখারী শরীফ (৬ষ্ট খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩৬০৭, পৃঃ ৪০৮, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ) ও সহীহ মুসলিম (প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩৩৬, পৃঃ ২৮৭, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ) থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে উল্লিখিত আছে, ‘জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কাবা শরীফের হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহ্তাআলা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের সমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম।` এখানে বুঝা যাচ্ছে, বায়তুল মুকাদ্দাস তখন যে অবস্থায় ছিল, তিনি সে অবস্থারই বর্ণনা দিয়েছেন—কোন দরজা-জানালার বর্ণনা দেননি। কাজেই লেখকের বর্ণিত ‘কুরাইশদের নানা প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ আল-আকসা মসজিদের কয়টি দরজা, কয়টি গেট, আশে পাশে কি আছে তারও একটা বর্ণনা দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে`—এ কথার কোন সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না। ‘কথিত আছে` এমন কোন বিষয় আমরা কেন Data হিসাবে পেশ করতে যাব?
http://www.islamic-awareness.org/Quran/Contrad/External/aqsa.html-লিংকে আরও একটা মজার জিনিস আছে। আবু জর গিফারী (রাঃ)-এর (আবু ধার নয়) প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মদ (সাঃ) কেন মসজিদুল কাবা ও মসজিদুল আকসার নির্মাণকালের ব্যবধান ৪০ বছর বলেছিলেন, তার উত্তরও এখানে আছে। সেখানে বিশ্ববিখ্যাত দু’জন মুহাদ্দিস ইবনে হাজর (রঃ) এবং ইবনে আল জাওযি (রঃ)-এর বরাত দিয়ে ঐতিহাসিক সূত্র (সূত্রঃ N. Robinson, Discovering The Qur’an: A Contemporary Approach To A Veiled Text, 1996, SCM Press Ltd.: London, p. 192.) উল্লেখপূর্বক বলা হয়েছে, দুটো মসজিদই (বাইতুল কাবা ও বাইতুল আকসা) হযরত আদম (আঃ)-এর হাতে পর্যায়ক্রমে নির্মিত হয়। পরবর্তীতে বহুকাল পর যথাক্রমে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং সোলায়মান (আঃ) সেগুলো পুনঃনির্মাণ করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) যে ৪০ বছর ব্যবধানের কথা বলেছেন, তা হযরত আদম (আঃ)-এর সময়কালের কথা বলেছেন—হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কিংবা সোলায়মান (আঃ)কিংবা খলিফা আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান-এর সময়কালের কথা নয়। কিন্তু লেখক এখানেও দুর্বোধ্য কারণে তাঁর উদ্ধৃত লিংক থেকে এই অংশ বাদ দিয়ে অন্য অংশ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? সে কি এজন্য যে পাঠক মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ঐ কথার ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন?
ইতিহাস ও বিজ্ঞান উভয়েরই সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো উভয়েই Trial and Error-এর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। যখনই কোন নতুন তথ্য পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে আগের তথ্য পরিত্যক্ত হয়। যার কারণে দেখা যায়, প্রতিটি খননকার্যের পর ইতিহাস ও বিজ্ঞান নতুন করে লেখা হয়। বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ রচিত ‘ইতিহাসের খেরোখাতায়` যা ‘দৈনিক যুগান্তর`-এ ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে, পড়লেই এ কথার প্রমাণ পাওয়া যাবে। তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে খননকার্য ও প্রাচীন শিলালিপির সাহায্যে রাজধানী ঢাকার বয়স নতুন করে নির্ধারণ করতে হয়েছে। এই সেদিনও আমরা জানতাম যে, ঢাকার (প্রতিষ্ঠাকাল (১৬০৮ খ্রিঃ) বয়স হলো চারশ বছর। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি একটি হাজার বছরেরও পুরাতন নগরী। এরকম প্রেক্ষাপটে খ্রিস্টপূর্ব সময়ের (যখন ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না) পরস্পরবিরোধী Reference দিয়ে খ্রিস্টজন্মের পরের একজন ইতিহাস-স্বীকৃত ব্যক্তিকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করার চেষ্টা কি বিদ্বেষমূলক ও সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিপ্রসূত নয়?
‘কেউ যদি মসজিদ না দেখেই থাকে তাহলে ভুল ধরবে কিভাবে?`—লেখকের এই মন্তব্য তাঁর স্ববিরোধিতারই একটি প্রমাণ। তিনি নিজেই বলেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে থেকে আল-আকসা মসজিদের বর্ণনা দিতে যাননি। মক্কার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আগে সেখানে গেছেন এবং আল-আকসা মসজিদ স্বচক্ষে দেখেছেন, তারাই মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে উক্ত মসজিদের বর্ণনা শুনতে চেয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো, সেখানে যদি আদৌ কোন মসজিদ না থাকে, তাহলে তারা বর্ণনা শুনতে চাইবেন কেন? তারপর “By God, you perfectly and correctly described it.”—এ কথাই বা বলবেন কেন? ‘এমন কোন গাধা আছে যে এ ধরনের অলৌকিক ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদকে নবী মানত না?`—এটি লেখকের যুক্তিহীন হেত্বাভাসের (Fallacy) আর একটি উদাহরণ। হাদিস ও ইতিহাসগ্রন্থ থেকে জানা যাচ্ছে, এর চেয়েও বড় অলৌকিক ঘটনা দেখানো সত্ত্বেও একশ্রেণীর লোক মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নবী বলে স্বীকার করেনি। যেমন, তাঁর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা। মক্কার অবিশ্বাসীরা তাঁকে নবুয়তের প্রমাণ হিসেবে মুজিযা দেখানোর দাবী জানালে তিনি চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখান (বুখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ২৪৭, ৩৯৭ ও ৩৯৮)। কিন্তু তারা তাঁকে নবী বলে স্বীকার করেনি। আরবের ইহুদী ধর্মযাজকগণ মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট এমন তিনটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন, যার উত্তর তাঁদের কাছে ছাড়া আর কারও কাছে ছিল না। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে তাঁকে নবী বলে মেনে নেবেন। মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন। তাতে তাঁর নবুয়ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু সেই ধর্মযাজকেরা রাসুল (সাঃ)-কে নবী বলে স্বীকার করেননি (সূত্রঃ আবদুল খালেক, সাইয়েদুল মুরসালীন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ১৩৭-১৩৮)।
ইতিহাস থেকে এমন ঘটনাও জানা যায় যে, মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের অলৌকিক ক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েও তা গ্রহণ করেননি। নবম হিজরীতে তাবুক অভিযানের পর মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পুত্র ইব্রাহিম মাত্র ১৬ মাস বয়সে মারা যায়। যেদিন ইব্রাহিম মারা যায়, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়। তখন লোকজন বলতে লাগল, ইব্রাহিমের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। কাজেই মুহাম্মদ (সাঃ) একজন সত্য নবী। তখন মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, ‘নিশ্চয়ই সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারও মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দুটোর গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা এদের গ্রহণ হতে দেখবে, তখন তাদের গ্রহণমুক্ত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্র নিকট দোয়া করবে এবং নামায পড়বে।`(সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, পৃঃ ৩৪৯ এবং সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, হাদিস নম্বর ৯৮৬ ও ১০০১, পৃঃ ২৫৬ ও ২৬৭-২৬৮)। এখানেও লেখকের যুক্তি অনুসরণ করে কি বলা যায় না যে, ঐ সময় যদি মুহাম্মদ (সাঃ) শুধু নীরব থাকতেন, তাহলেও বহু অবিশ্বাসী তাঁকে নবী বলে মেনে নিত?
আসল কথা হলো, কোন অজানা জিনিস বলতে পারা কারও নবী হওয়ার প্রমাণ নয়। এ ক্ষমতা সকল যুগেই কারও না কারও মধ্যে দেখা গেছে। এখনও দেখা যায়। তাই বলে কেউ তাদের নবী বলে মানে না। মনোবিজ্ঞানে এ ক্ষমতাকে ESP (Extra Sensory Perception) বলে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটিতে এ বিষয়ে একাধিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ ক্ষমতা সুস্থ লোকের তুলনায় মানসিক-অসুস্থদের মধ্যে বেশি (সূত্রঃ The Journal of Parapsychology, Vol. III, 1973)। জনাব ভবঘুরে বলছেন, ‘এই একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষগুলোর সামনেও যদি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ করা যেত, সিংহভাগ মানুষই মোহাম্মদকে নবী মানত।` এখন কি তিনি এই পাগলদের নবী মানবেন? পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, মানুষের তুলনায় এই ক্ষমতা পশুপাখিদের মধ্যে আরও বেশি। হাতের কাছেই উদাহরণ আছে। ‘দৈনিক প্রথম আলো`র ১৬/০৭/২০১১ তারিখের সাপ্তাহিক ‘ছুটির দিনে` ম্যাগাজিনে ‘Reader’s Digest`-এর বরাত দিয়ে এরকম একটি সত্য ঘটনা ছাপা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, অস্কার নামের একটি বিড়াল মানুষের মৃত্যুর খবর আগাম জেনে যাচ্ছে। একবার নয়, দু’বার নয়, বহুবার পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে বিড়ালটির ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২৫ জুলাই ২০১১ তারিখে National Geography Channel-এ দেখানো হয়েছে Scamp নামক একটি কুকুর Pine Nurshing Home-এর ৪০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। নিউজিল্যাণ্ডে কুকুর নিয়ে গবেষণা করছেন টেড রাফম্যান। তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে জানাচ্ছেন, কিছু কিছু কুকুরের ভবিষ্যৎ বুঝতে পারার ক্ষমতা মানুষের চেয়েও বেশি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আদিম যুগের মানুষ সাপ, ইঁদুর, গাভি ইত্যাদির পূজা করত। এখনও আদিবাসী সমাজে এর প্রচলন আছে। তাহলে আমরাও কি এই বিড়াল বা কুকুরের পূজা শুরু করব? তাহলে হয়তো এই ক্ষমতা আমাদের মধ্যেও চলে আসতে পারে (!) এবং এই লেখা অনুযায়ী আমাদেরকেও নবী বলে মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না!!
একজন মানুষ নবী কি-না, তার প্রমাণ কেরামতি দিয়ে হবে না। জাদু দিয়েও হবে না। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ট জাদুশিল্পী হলেন জুয়েল আইচ। তিনি এমন জাদুও দেখান, যেখানে সম্মোহন করে কোন ব্যক্তির নাড়ির স্পন্দন একদম বন্ধ করে দেন। তারপর ঐ ব্যক্তির শরীর রক্তশূন্য করে ফেলেন। তারপর সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে তার রক্তশূন্য জিহ্বা কেটে ডাক্তারের হাতে তুলে দেন। অনেক দর্শক স্নায়ুর চাপ সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। যদিও পরে আবার ঐ জিহ্বা জোড়া লাগিয়ে সেই ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তাঁর জাদু সমাপ্ত করা হয় (সূত্রঃ জুয়েল আইচ, অন্তরালের আমি, সময় প্রকাশন, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃঃ ২১-২২)। সেই জুয়েল আইচ তাঁর স্মৃতিচারণমূলক লেখায় একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে এটিই হলো সবচেয়ে বড় জাদু। কি সেই জাদু? জীবনে প্রথম তিনি মঞ্চে জাদু দেখাচ্ছেন। হলভর্তি দর্শক। জুয়েল আইচ তাঁর শৈশবের এক বন্ধুকে সম্মোহিত করেছেন। তারপর সেই বন্ধুর জিহ্বায় একের পর এক পেরেক ঢোকাচ্ছেন। বন্ধু টের পাচ্ছেন না। জুয়েল আইচ নিজের সাফল্যে মহাখুশি। দর্শকরাও হাততালি দিচ্ছে। পরে দেখা গেল, সেই বন্ধু আসলে সম্মোহিত হননি। শতকরা পাঁচজন মানুষ কখনও সম্মোহিত হয় না। বন্ধু গোবিন্দ তাদেরই একজন। কিন্তু তিনি কাউকে কিছু বলেননি। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করেছেন। যেন বন্ধুর মর্যাদাহানি না হয়! জুয়েল আইচ জেনেছেন পরে। জেনে পাথর হয়ে গেছেন। মানুষের জন্য এই যে ভালবাসা, এর চেয়ে বড় জাদু আর কি হতে পারে?—এই প্রশ্ন করেছেন জুয়েল আইচ নিজেই। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর যদি কোন মোজেজা থাকে, তা জানতেও আমাদেরকে ওই জায়গায় যেতে হবে। তাঁর তুলনাহীন সততা, সত্যবাদিতা, মহানুভবতা, আত্মত্যাগ, সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা, মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা, সর্বোপরি একটি হাজার বছরের ঘুণে ধরা, ক্ষয়িষ্ণু, বর্বর সমাজ-কাঠামোকে শূন্য হাতে রাতারাতি বদলে ফেলার ক্ষমতা সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তা সত্য কি-না দেখতে হবে। দেখার জন্য প্রচুর গবেষণাগ্রন্থ বাজারে আছে। যেমনঃ
- M. N. Roy-এর ‘The Historical Roll of Islam, Vora & Co. Publishers Ltd., Bombay, 1938` (M. N. Roy তৎকালীন সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর একমাত্র ভারতীয় সদস্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। বইটির pdf version http://ia700500.us.archive.org/10/items/historicalroleof032545mbp/historicalroleof032545mbp.pdf ওয়েবসাইট থেকে free download করা যাবে)
- ফরাসী কবি ও রাজনীতিক Alphonse de Lamartine (1790-1869)-এর ইংরেজিতে অনূদিত ‘Histoire De La Turquie, Paris, 1854, vol. II`
- ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Edward Gibbon (1737-1794)-এর History Of The Saracen Empire, London, 1870 ও History of the Decline and Fall of the Roman Empire, London, 1838, vol.5,
- ব্রিটিশ কিংবদন্তী নাট্যকার ও সাহিত্যিক George Bernard Shaw-এর ‘The Genuine Islam`
- সাহিত্যিক-দার্শনিক Thomas Carlyle-এর ‘On Heroes and Hero Worship, 1840`
- Reverend Bosworth Smith (1794-1884)-এর ‘Mohammed and Mohammedanism`
- John William Draper-এর ‘A History of the Intellectual Development of Europe, London 1875`
- Professor K.S. Rama Krishna Rao-এর ‘Mohammad, The Prophet of Islam`
- J.H. Denison-এর ‘Emotions as the Basis of Civilization`
- Philip K. Hitti-এর ‘History of the Arabs`
- Rev E. Stephenson-এর ‘My Reflections`
- H.N. Spalding-এর ‘Civilization in East and West`
- Raymond Lerouge-এর ‘Life de Mohamet`
- Dr. Mawde Royden-এর ‘The Problem of Palestine`
- M.H. Hyndman-এর ‘The Awakening of Asia`
- Lewis Mumford-এর ‘Transformation of Man`
- Mohandas Karamchand Gandhi (1869-1948) Indian thinker statesman, and nationalist leader এর Lectures published in Young India (periodical), 1928, Volume X
- Sir Syed Ameer Ali-এর ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, ৩য় সংস্করণ, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, ১৯৯৮`
- ড. ওসমান গণী-এর ‘মহানবী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা (ড. ওসমান গণী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বইটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যসূচিভুক্ত)।
আগেই বলেছি, কোন সমাজই একটা বা দুইটা ঘটনা দেখে কাউকে নবী বলে স্বীকার করে না। সে দাবীদারের কাছে এমন কিছু দেখতে চায়, যা ঐ সমাজে আগে কখনও দেখা যায়নি (Unprecedented)। এ কারণেই মক্কার কোরাইশরা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে আল-আকসা মসজিদের বর্ণনা শুনেও ইসলাম গ্রহণ করেনি। কারণ, এটা তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না। সে সময় আরবে জ্যোতিষ ও জাদুকরের ছড়াছড়ি ছিল। জ্যোতিষদের বলা হতো ‘কাহিন`। এ সকল কাহিন ‘আজলাম` ও ‘কিদাহ্` পদ্ধতিতে মানুষের অজানা বিষয় বলে দিত (সূত্রঃ Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, ৩য় সংস্করণ, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, ১৯৯৮, পৃঃ ৫৬ ও ৬৯ এবং ড. ওসমান গণী, ‘মহানবী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৯১। তখন ‘এমন এক যুগ ছিল যখন অলৌকিক ঘটনা সাধারণ সাধু-সজ্জনদের কাছে আটপৌরে ঘটনার সামিল ছিল, যখন সমগ্র পরিবেশ অলৌকিকতার দ্বারা অধ্যুষিত ছিল, শুধু আরবে নয়, প্রতিবেশী দেশসমূহে যেখানে সভ্যতা আরও এগিয়ে গিয়েছিল।` (সূত্রঃ Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, পৃঃ ৯৯)। সে কারণেই মক্কার লোকেরা পূর্ব অভ্যাসবশত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কখনও চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার জন্য, কখনও গুপ্ত বিষয় বলার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছে। এক পর্যায়ে ইহুদী ধর্মযাজকগণও রাসুল (সাঃ)-এর নিকট এমন তিনটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন, যার উত্তর তাঁদের কাছে ছাড়া আর কারও কাছে ছিল না। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই তাঁরা তাঁকে নবী বলে মেনে নেবেন। রাসুল (সাঃ) এই তিনটি প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর জানালেন। তিনি চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেও দেখালেন। কিন্তু তারা স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে নবী বলে মানল না, যার কারণ পূর্বেই বলা হয়েছে। (সূত্রঃ ড. ওসমান গণী, ‘মহানবী`, পৃঃ ১৪১, Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, পৃঃ ৯৮-৯৯ এবং আবদুল খালেক, সাইয়েদুল মুরসালীন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ১৩৭-১৩৮)। এ প্রসঙ্গে কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে, আর চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, ‘এটা তো চিরাচরিত জাদু।`(সুরা কামার, ১-২)। আরও উল্লেখ আছে, ‘তারা কোন নিদর্শন দেখলে উপহাস করে। এবং বলে, ‘এটা তো এক সুস্পষ্ট জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।`(সুরা সাফ্ফাত, ১৪)। ‘আমি যদি তোমার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি তা হস্ত দ্বারা স্পর্শও করত তবুও কাফেররা বলত, ‘এটা স্পষ্ট জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।` (সুরা আনআম, ৭)।
কাজেই ঐতিহাসিকভাবে এটা প্রমাণিত যে, আরবের অবিশ্বাসীরা ততদিন পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নবী বলে স্বীকার করেনি, যতদিন পর্যন্ত না তারা তাঁর কাছে এমন কিছু জিনিস দেখেছে, যা ছিল তাদের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
আরবের অবিশ্বাসীরা প্রথম অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হয় যখন তারা দেখতে পায় যে, একজন ব্যক্তি তার জন্মের পর থেকে একটানা চল্লিশ বছর যাবত এমন এক পরিচয় বহন করছেন, যা ছিল আরবের আঞ্চলিক ভাষায়, ‘আস্সাদিক আল-আমীন` অর্থাৎ ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত`। ঐতিহাসিকের ভাষায়, ‘তিনি এমনি সম্মানজনকভাবে বা অধ্যাবসায়ের সঙ্গে জীবন নির্বাহ করেছেন, যার ফলে তাঁর স্বদেশবাসীর নিকট থেকে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত—এই উপাধি পেয়েছেন (সূত্রঃ Hugh’s Dictionary of Islam, পৃঃ ৩৬৮-৩৬৯, Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৬৩-৬৪)। নবুয়ত দাবীর পাঁচ বছর পূর্বেও কাবাগৃহ সংস্কারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গোত্রকলহের মীমাংসাকারী হিসেবে আরববাসীগণ তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে এই যুক্তিতে মনোনীত করে যে, ‘এই তো আমাদের বিশ্বস্ত ব্যক্তি, আমরা তার সিদ্ধান্তে একবাক্যে রাজি` (সূত্রঃ George Sale, Translation of the Koran, Preliminary Discourse, বুখারী শরীফ, হাজরে আসওয়াদের বিবরণ অধ্যায়)। নবুয়ত প্রাপ্তির পরেও যখন তিনি সাফা পাহাড়ের পাদদেশে লোকদের একত্রিত করে প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন বক্তব্য রাখার পূর্বে উপস্থিত লোকদের প্রশ্ন করেন, ‘আমার সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি?` তারা একবাক্যে জবাব দেয়, ‘তোমার মধ্যে সত্যপরায়ণতা ছাড়া আমরা আর কিছুই দেখিনি।` (সূত্রঃ বোখারী ও মুসলিম)। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর একজন ব্যক্তির কথাও জানা যায় না, যার জীবন বিতর্কিত হয়ে ওঠার পূর্বে (নবুয়ত দাবীর কারণে) দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত মানুষের সামনে ছিল এবং তাঁর পরিচিতজনেরা তাঁর চরিত্র ও কার্যাবলী সম্পর্কে এত উচ্চ ধারণা পোষণ করত। এই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা মক্কার অবিশ্বাসীদেরকে কি রকম সমস্যায় নিক্ষেপ করে, তার নমুনা পাওয়া যায় বয়োজ্যেষ্ট কোরাইশ নেতা নাজার ইবন হারিসের উক্তি থেকে। তিনি বলছেন, ‘হে কুরায়শ, মুহাম্মদের আহ্বান তোমাদেরকে এমন একটি সমস্যায় নিক্ষেপ করেছে যে, তার কোন সমাধান তোমাদের কাছে নেই; সে তোমাদের চোখের সামনেই ছোট থেকে বড় হয়েছে, তোমরা ভালভাবেই জান যে, সে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সত্যবাদী, সবচেয়ে বেশি বিশ্বস্ত এবং সর্বাধিক জনপ্রিয়। কিন্তু যখন তার চুল সাদা হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং সে ঐ মূল্যবান বাণী কোরআন পেশ করছে যা তোমরা শুনছ, তখন তোমাদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে এই যে, তোমরা বলতে শুরু করেছ ‘এই ব্যক্তি জাদুকর,` ‘এই ব্যক্তি কবি,` ‘এই ব্যক্তি পাগল`। আল্লাহ্র শপথ, আমি মুহাম্মদের মুখে নিখুঁত কোরআনের বাণীসমূহ শুনেছি—সে না জাদুকর, না কবি আর না পাগল। আমার বিশ্বাস, তাকে অস্বীকার করলে তোমাদের উপর কোন একটি বিরাট বিপদ আপতিত হবে (সূত্রঃ সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯)। যাই হোক, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এই অপ্রত্যাশিত স্বভাবের কারণেই তিনি যখন তাঁর নবুয়তের দাবী প্রকাশ করেন, তখন কোন প্রমাণ ছাড়াই আরবের বিভিন্ন শ্রেণীর চল্লিশজন ব্যক্তি বিনা দ্বিধায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন (সূত্রঃ ড. ওসমান গণী, ‘মহানবী`, পৃঃ ১৩৭)। কিন্তু অধিকাংশই আরও নিদর্শনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
আরবের অবিশ্বাসীদের জন্য দ্বিতীয় অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল তাদের বর্বরোচিত আচরণের মোকাবেলায় মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতিক্রিয়া। তখনকার আরবে যে কোন অপরাধের সামাজিক প্রতিকার ছিল চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, খুনের বদলে খুন ইত্যাদি। এ প্রথার মধ্যে তখন অন্যায়ের কিছু ছিল না। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর ক্রমাগত অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতন এবং তাঁর একাধিক অনুসারীকে হত্যা ও জখম করা সত্ত্বেও (সূত্রঃ Sir William Muir, Life of Muhammed) তিনি সে পথে গেলেন না। এমনকি গালির উত্তরে গালি, নিন্দার উত্তরে নিন্দা কিংবা অভিশাপের উত্তরে অভিশাপও তিনি দিলেন না। বরং তায়েফবাসীদের কাছে ভয়াবহ ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েও মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র কাছে এই বলে দোয়া করলেন যে, ‘আমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হয়তো আল্লাহ্তায়ালা তাদের বংশে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা আল্লাহ্র ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকেও শরীক করবে না।`(সূত্রঃ বুখারী শরীফ, ৫ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ৩৭৯-৩৮০ এবং আবদুল খালেক, সাইয়েদুল মুরসালীন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ১৯৭)। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এই অপ্রত্যাশিত আচরণ আরববাসীকে এমন হতবাক করে দেয় যে, তাদের মধ্যে ‘মহাবীর` খ্যাত হযরত আমীর হামজা (রাঃ) স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন (সূত্রঃ মহানবী, পৃঃ ১৪৮-১৪৯ এবং Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৯১)। পরে (হোদায়বিয়া সন্ধির পর) খালিদ-বিন-ওয়ালিদ এবং আমর-ইবনুল-আস ইসলাম গ্রহণ করেন।
আরবের অবিশ্বাসীদের জন্য তৃতীয় অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল পূর্বের ধর্মগ্রন্থসমূহে মুহাম্মদ (সাঃ) সংক্রান্ত নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী। সে সময়ের আরবে মূর্তিপূজক পৌত্তলিক ছাড়াও ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেক ব্যক্তি ছিলেন, যাঁদের কাছে পূর্বের ধর্মগ্রন্থ ছিল। তাঁরা যখন সবিস্ময়ে দেখলেন যে, এ সকল ধর্মগ্রন্থে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নাম-ধামসহ নবুয়তের পূর্ণ বৃত্তান্ত রয়েছে, তখন তাঁদের অনেকেই বিনা দ্বিধায় তাঁকে আল্লাহ্র নবী বলে মেনে নিলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কায় থাকাকালীন ২০ জন আরব খ্রিস্টান এবং মদীনা থেকে খাযরাজ গোত্রের দশজন ইয়াহুদী তাঁর নিকট আসেন এবং তাঁদের ধর্মগ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিল দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন (মহানবী, পৃঃ ১৫৮ ও ১৮৫)।
আরবের অবিশ্বাসীদের জন্য চতুর্থ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সমরনীতি ও যুদ্ধবন্দীদের প্রতি তাঁর আচরণ। তখনকার আরবে যুদ্ধ মানেই ছিল পররাজ্য দখল, লুন্ঠন, গণহত্যা ও পৈশাচিকতা। মুহাম্মদ (সাঃ) যখন মদীনায় হিযরত করলেন, সেখানেও তাঁর শত্রুরা দীর্ঘ দশ বছর যাবত তাঁর উপর একের পর এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এ সকল যুদ্ধ পরিচালনাকালে মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বাহিনীর অধিনায়ককে এই মর্মে নির্দেশ দেন যে, ‘কোন ক্ষেত্রেই তোমরা প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় গ্রহণ করবে না, মৃতদেহ বিকৃত করবে না এবং কোন শিশুকে হত্যা করবে না। (সূত্রঃ মুসলিম, আবু দাউদ ও তিরমিযী এবং ইবনে হিশাম, পৃঃ ৯৯২ এবং স্যার সৈয়দ আমীর আলী, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, ডঃ রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১৬৩)। বাইজানটাইনদের বিরুদ্ধে প্রেরিত সৈন্যদলকে লক্ষ্য করে মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘আমাদের ক্ষতির প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরিবারের অন্তরালস্থিত নিরীহ ব্যক্তিদের অবমাননা করবে না; নারীদের অব্যাহতি দেবে; শিশুদের কিংবা পীড়িত ব্যক্তিদের আঘাত করবে না। বাধাদান করে না এমন অধিবাসীদের গৃহ ধ্বংস করবে না; তাদের জীবিকার অবলম্বন বিনষ্ট করবে না, তাদের ফলের গাছও নষ্ট করবে না, তাদের খেজুর গাছও স্পর্শ করবে না।` (সূত্রঃ স্যার সৈয়দ আমীর আলী, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, ডঃ রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১৬৩)। তাঁর এ সকল নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালিত হয়। যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারেও তিনি কড়া নির্দেশ দিলেন যে, বন্দীদের দুর্ভাগ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং তাদের প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে। তাঁর নির্দেশানুসারে মদিনার নাগরিকগণ ও যেসব মুহাজির তাদের গৃহের অধিকারী হয়েছিলেন, তারা সকলে বন্দীদের অভ্যর্থনা করেন এবং প্রভূত গুরুত্ব সহকারে তাদের প্রতি আচরণ করেন। পরবর্তীকালে একজন বন্দী বলেছিল, ‘মদিনার লোকদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তারা আমাদের অশ্বপৃষ্ঠে যেতে দিতেন এবং নিজেরা হেঁটে যেতেন। তারা আমাদেরকে রুটি খেতে দিতেন, নিজেদের জন্য রুটি অবশিষ্ট থাকত না, তারা খেজুর ভক্ষণ করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করতেন, তাতেই তৃপ্ত থাকতেন।` (সূত্রঃ ইবনে হিশাম, পৃঃ ৪৫৯-৪৬০; কসিন দ্য পার্সিভেল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৭৯; উইলিয়াম মুর, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১২২; Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১৩৪-১৩৫)। রাসুল (সাঃ)-এর এ আচরণ ছিল তৎকালীন আরবের জন্য এমনই অকল্পনীয় ও অভূতপূর্ব যে বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দী ও তাদের পরিবারবর্গ তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে তাদের বর্ণনা শুনে আরও অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। উল্লেখ্য যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সমরনীতি, যুদ্ধকালীন বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি অনুসৃত নীতি, যুদ্ধবন্দী সংক্রান্ত নীতি এবং মৃতদেহ সংক্রান্ত নীতি পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের জেনেভা কনভেনশনে অন্তর্ভুক্ত (Incorporate) হয়েছে। তবে পার্থক্য হলো এখানেই যে, খোদ জাতিসংঘ এবং তার প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্রগুলোই তা অনুসরণ করে না। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) মুখে যা বলেছেন, কাজেও তা করে দেখিয়েছেন।
আরবের অবিশ্বাসী পৌত্তলিক শ্রেণী সবচেয়ে বড় অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হয় মক্কা বিজয়ের পর। হিযরতের ৬ষ্ট বছরে মক্কাবাসী ও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মধ্যে ‘হোদায়বিয়ার সন্ধি` নামক যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, সেই চুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার কোরাইশরা বণী খোজা গোত্রের উপর আক্রমণ চালায়। তারা এই গোত্রের বেশ কিছু লোককে হত্যা করে এবং বাকি লোকদের তাড়িয়ে দেয়। বণী খোজা গোত্র মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে এসে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে। এর ফলশ্রুতিতে মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কার কোরাইশদের কাছে ক্ষতিপূরণ চান। তারা তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি দশ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী সহযোগে মক্কা অভিযানে রওনা হন। এই অভিযানে অল্প কিছু প্রতিরোধ ছাড়া প্রায় বিনা বাধায় মক্কা বিজিত হয়। এ সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর সেনাবাহিনী পরাজিত শত্রুর সাথে অপ্রত্যাশিত আচরণ করেন (T.P. Hughes, Dictionary of Islam)। মুহাম্মদ (সাঃ) সমগ্র মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমা মঞ্জুর করেন। তাঁর একজন কন্যা—তাঁর অত্যন্ত প্রিয় সন্তান জয়নাব হোদায়বিয়ার সন্ধির পরে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মক্কা থেকে পলায়নকালে হাবরার বিন আসওয়াদ নামক একজন কোরাইশ তাঁকে বল্লমের খোঁচায় হিংস্রভাবে হত্যা করে। মক্কা বিজয়ের পর হাবরারকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সামনে হাজির করা হয়। মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা করেন। যে ইহুদী রমণী খায়বারে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিল এবং আবু জাহেলের পুত্র ইকরামা, যে তাঁর প্রতি শত্রুতায় ছিল চরম নিষ্টুর ও ভয়ংকর—উভয়কেই তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রদান করেন (সূত্রঃ Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১৬২-১৬৩ এবং ড. ওসমান গণী, ‘মহানবী`, পৃঃ ৪৬২)।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, নবুয়ত দাবী করার পর মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অমানুষিক নির্যাতন নেমে আসে। তাঁর চলার পথে কাঁটা বিছানো হয়, নামাযরত অবস্থায় গলায় চাদরের ফাঁস দিয়ে টান দেয়া হয়, দীর্ঘ তিন বছর জনমানবহীন পার্বত্য উপত্যকায় অবরোধ করে রাখা হয়, তায়েফের রাস্তায় পাথর মেরে রক্তাক্ত ও সংজ্ঞাহীন করে ফেলা হয়। অবশেষে তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি শত্রুর চোখ ফাঁকি দিয়ে মদীনায় আশ্রয় নেন। সেখানেও তাঁর শত্রুরা দীর্ঘ দশ বছর যাবত তাঁকে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত রাখে। এসকল যুদ্ধে তিনি বহুবার আহত হন, একটি দাঁত হারান এবং তাঁর অনেক অনুচর শাহাদাত বরণ করেন। এভাবে নির্যাতন ও নিগ্রহের ২০টি বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে মক্কা বিজিত হয়। তখন তাঁর শত্রুরা বন্ধুহীন, সহায়হীন অবস্থায় তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিল। এমন সময়ে বিজয়ী যা করে, তা তো সবারই জানা। কিন্তু আল্লাহ্র রাসুল তেমন কিছু করলেন না। তিনি তাদের উপর কোন প্রতিশোধ নিলেন না। শুধু জানতে চাইলেন, ‘হে কোরাইশ সম্প্র্রদায়, আমি তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করব বলে তোমরা মনে কর?` তারা উত্তর দিল, ‘হে দয়ালু ভ্রাতা ও ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা তোমার নিকট থেকে করুণা ও সহানুভূতি চাই।` ঐতিহাসিক তাবারী উল্লেখ করেছেন, এ কথা শ্রবণ করে মুহাম্মদের (সাঃ) চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল এবং তিনি বললেন, ‘ইউসুফ তাঁর ভ্রাতাদের যেরূপ বলেছিলেন, আমিও তেমনিভাবে তোমাদের বলব, ‘আমি আজ তোমাদের তিরস্কার করব না; আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ সবচেয়ে দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।` তিনি ঘোষণা করলেন, ‘যাও, আজ তোমরা সবাই মুক্ত।` এ সময়ে এমন একটি দৃশ্যের অবতারণা হলো, পৃথিবীর ইতিহাসে যার তুলনা নেই। দলে দলে সবাই মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্ম গ্রহণ করতে লাগল। সাফা পর্বতের উপর বসে তিনি সেই পুরাতন শপথনামা মদিনাবাসীদের নিকট থেকে গ্রহণ করলেনঃ ‘তারা কোন বস্তুর উপাসনা করবে না; তারা চুরি, ব্যভিচার কিংবা শিশুহত্যা করবে না; তারা মিথ্যা বলবে না কিংবা নারীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবে না।` (সূত্রঃ সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, কায়রো, চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ৩২, ইবনুল আসির, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৯২; ইবনে হিশাম, পৃঃ ৮২১; তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৩৪; Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১৭২-১৭৪)। এভাবেই জনাব ভবঘুরে’র ভাষায়, মক্কার যে অবিশ্বাসীরা ইতোপূর্বে তাঁর মেরাজের ঘটনা বিশ্বাস করেনি, বাইতুল-আকসা মসজিদের বর্ণনা শুনেও তাঁকে নবী বলে স্বীকার করেনি, তারাই তাঁকে একবাক্যে নবী বলে স্বীকার করে নেয়। শুধু তাই নয়, তারা ইসলাম ধর্মকে আরবের বাইরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়।
এগুলি হলো আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের ঘটনা। মরুচারী আরবের সেই দিনও আর নেই। এখন আমরা দাঁড়িয়ে আছি একবিংশ শতাব্দীর সিঁড়িতে। এখন আমরা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছ থেকে কোন্ মোজেজা দেখে তাঁকে আল্লাহ্র নবী বলে মানব?
আধুনিক বিজ্ঞানই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ কোরআনই হলো সেই মোজেজা। এ কালের বিজ্ঞানীরা রায় দিয়েছেন, কোরআন মানুষের লেখা গ্রন্থ হতে পারে না। কারণ, তা আধুনিক বিজ্ঞানকে দেড় হাজার বছর পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিজ্ঞানের পেছনে কোরআন নয়, কোরআনের পেছনেই দৌঁড়াচ্ছে বিজ্ঞান। কোরআনে আছে Big Bang Theory (সুরা আম্বিয়া ৩০), যা ১৯২৭ সালে বেলজিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী G. Lemaitre আবিস্কার করেন, সেখানে আছে Theory of Expanding Universe (সুরা যারিয়াত, ৪৭), যা এডুইন হাবল ১৯২৯ সালে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Law of Gravitation and Centrifugal Force (সুরা লোকমান, ১০ ও সুরা ফাতির, ৪১), যা কোরআন নাযিল হওয়ার ১২০০ বছর পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Theory of Solar Apex (সুরা ইয়াসিন ৩৮), যা জ্যোতির্বিজ্ঞানী Shapley ১৯২৭ সালে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Modern Human Embryology (সুরা হুজুরাত ১৩, সুরা নাহল ৪, সুরা মুমিনুন ১৩, সুরা দাহর ২ এবং সুরা তারিক ৫-৭), যা ইতালীয় জীববিজ্ঞানী Lazzaro Spallanzani (১৭২৯-১৭৯৯) অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Law of Gravity (সুরা মুরসালাত, ২৫-২৬), যা বিজ্ঞানী নিউটন ১৬৮৭ সালে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Water-cycle বা ‘পানিচক্র` (সুরা আরাফ ৫৭, সুরা রুম ৪৮, সুরা হিজর ২২, সুরা নূর ৪৩, সুরা নাবা ১৪-১৬ ও সুরা মুমিনুন ১৮), যা ১৫৮০ সালে বার্নার্ড প্যালিসি প্রথম আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে, সৌরজগতের মোট গ্রহের সংখ্যা এগার (সুরা ইউসুফ ৪)। সম্প্রতি আরও দুটো গ্রহ (Vulcan ও Planet-x) আবিস্কার হয়ে আমাদের সৌরজগতের মোট গ্রহের সংখ্যা হয়েছে এগার। সেখানে আছে মহাবিশ্ব ও পৃথিবী দুইটি পর্ব (Phase) ও ৪টি অধিযুগে (Era) সৃষ্টি হয়েছে (সুরা হা-মীম আস-সাজদা, ৯-১০), আধুনিক বিজ্ঞানও তাই বলছে। সেখানে আছে, নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ভুল অনুপাতে (সুরা আনআম, ৭৩), আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে, ‘বৃহৎ বিস্ফোরণের এক সেকেণ্ড পর যদি সম্প্রসারণের হার এক লক্ষ মিলিয়ন মিলিয়ন (১০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) ভাগও কম হতো, তাহলে মহাবিশ্ব বর্তমান আয়তনে পৌঁছানোর আগেই চুপসে যেত।` (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-VIII: The Origin and Fate of the Universe, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)। সেখানে আছে, প্রত্যেক বস্তুর বিপরীত বা যুগল সৃষ্টি করা হয়েছে, তা মাটি থেকে হোক, মানুষ থেকে হোক কিংবা সেইসব থেকে যা তারা অবগত নয় (সুরা ইয়াসীন, ৩৬), ১৯৩২ সালে C D Anderson কর্তৃক সর্বপ্রথম মহাবিশ্বে প্রতিবস্তুর (Antiparticles) উপস্থিতি প্রমাণিত হয় (সূত্রঃ The New Kexton Encyclopedia, Vol. 1)। এরই ধারাবাহিকতায় আবিস্কৃত হয় ইলেকট্রনের প্রতিকণা পজিট্রন। আরও আবিস্কৃত হয় নিইট্রিনো, মেসন ইত্যাদি। পরবর্তীতে আইনস্টাইনের Theory of Relativity ও অন্যান্য আবিস্কারের ফলে আধুনিক বিজ্ঞান এখন নিঃসন্দেহ যে প্রতিটি বস্তুরই প্রতিবস্তু (Anti-matter) বা জোড়া রয়েছে। এরকম আধুনিক রসায়নবিদ্যা, Agronomy, আবহাওয়াবিজ্ঞান, প্রাণীবিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক-ভূ-বিজ্ঞান সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, যাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার সমর্থন করছে। পবিত্র কোরআনে এরকম এক হাজারেরও অধিক আয়াত রয়েছে। এ সকল কারণে এ কালের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কোরআন মানুষের বাণী হতে পারে না, এটা Divine Revealation। কোন কোন বিজ্ঞানী আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে সপ্তম শতাব্দীর কোরআনের আলোকে তাঁর একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের নতুন সংস্করণ বের করেছেন!! যেমন, কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটির Human Embryology বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কিথ এল. মুর (Keith L. Moore)। তিনি যখন দেখলেন যে, মাতৃগর্ভে ভ্রুণের ক্রমবিকাশের পর্যায়গুলি আধুনিক বিজ্ঞানের তুলনায় পবিত্র কোরআনে আরও যথাযথভাবে বর্ণিত আছে এবং সেখানে আরও কিছু অতিরিক্ত তথ্য আছে, যা তিনিও আগে জানতেন না, তখন তিনি তাঁর ‘The Developing Human` গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণে কোরআনের সেই বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করে নেন (সূত্রঃ Keith L. Moore, The Developing Human, Clinically Oriented Embryology, With Islamic Additions, 3rd edition)। ড. কিথ এল. মুর (Keith L. Moore) অকপটে স্বীকার করেছেন যে, ‘ভ্রুণবিদ্যার ইতিহাস অনুযায়ী মানব ভ্রুণের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তনের স্তর সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত এত অল্প জ্ঞান ছিল যে, সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কোরআনে এ ধরনের তথ্য পেশ করা সম্ভব ছিল না। এর একমাত্র যৌক্তিক উপসংহার হতে পারেঃ এই বর্ণনা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে মুহাম্মদের উপর প্রত্যাদেশ করা হয়েছে।` তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো, ‘এতে কি বোঝা যায়, আপনি বিশ্বাস করেন যে, কুরআন আল্লাহ্র বাণী?` তিনি উত্তরে বললেন, ‘I find no difficulty in accepting this.` থাইল্যাণ্ডের চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রধান Professor Tejatat Tejasen সুরা নিসা ৫৬ নং আয়াত পড়ে প্রাণীদেহের ত্বকে (চর্ম) ব্যথা অনুভবকারী স্তর (Receptor) সম্পর্কে জানতে পারেন, যা অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তিনি নিশ্চিত হন যে, সপ্তম শতাব্দীতে এটা কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। ফলে তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ১৯৮৩ সনে অনুষ্ঠিত অষ্টম মেডিক্যাল সম্মেলনে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন। Professor দুর্গা রাও হলেন Marine Geology-এর একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি সৌদি আরবের যিদ্দায় কিং আব্দুল আযীয ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। তিনি জানতেন যে, তিনটি প্রতিবন্ধকতার কারণে সমুদ্রের গভীরে আলো পৌঁছতে পারে না। এগুলো হলোঃ মেঘমালা, সাগরের অগভীর ঢেউ (Surface wave) এবং সাগরের অন্তঃস্থ ঢেউ (Internal wave)। ডুবোজাহাজ ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে এগুলো সম্প্রতি জানা গেছে। ২০০ মিটার নিচে কোন আলো থাকে না। ১০০০ মিটার নিচে ঘোর অন্ধকার। সেখানে নিজের হাতও দেখা যায় না (সূত্রঃ Oceans, Elder and Pernetta, p. 27)। দুর্গা রাও যখন জানতে পারলেন যে, এ কথাগুলো হুবহু সুরা নূর ৪০ আয়াতে আছে, তখন তিনি বলেন যে, ‘এ আশ্চর্যজনক বিষয় সেই যুগে বর্ণনা করা কোন মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। নিশ্চয়ই কোরআন আল্লাহ্র বাণী।`
তথ্যসূত্রঃ
http://www.islamic-awareness.org/Quran/Science/scientists.html http://www.youtube.com/watch?v=FUUPYs0gElU)
মুহাম্মদ (সাঃ) যদি মিথ্যাবাদীই হতেন, তাহলে এ অভিযোগ সবার আগে উত্থাপিত হত তাঁর শত্রুদের তরফ থেকে। কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, নবুয়ত প্রাপ্তির পরেও যখন মুহাম্মদ (সাঃ) সাফা পাহাড়ের পাদদেশে লোকদের একত্রিত করে প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন বক্তব্য রাখার পূর্বে উপস্থিত লোকদের প্রশ্ন করেন, ‘আমার সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি?` তারা একবাক্যে জবাব দেয়, ‘তোমার মধ্যে সত্যপরায়ণতা ছাড়া আমরা আর কিছুই দেখিনি।` (সূত্রঃ বুখারী শরীফ ও সহীহ মুসলিম)।
আবু জেহেল—যিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পিতৃব্য ছিলেন এবং জঘন্যতম শত্রুও ছিলেন, তিনিও বলেন, ‘মুহাম্মদ, আমি এটা বলছি না যে তুমি মিথ্যাবাদী; কিন্তু তুমি যা প্রচার করছ তা যথার্থ নয়, আমি এটাকে ভ্রান্ত বলে মনে করি।` (সূত্রঃ তিরমিযী)। এছাড়া মক্কার অবিশ্বাসীরা, যারা মুহাম্মদের (সাঃ)-এর এমন শত্রু হয়ে উঠেছিল যে নিজের জন্মভূমিতেও তাঁকে বসবাস করতে দিতে নারাজ ছিল, ইতিহাসের ভাষায়, তারাই তাঁর সম্পর্কে এই মনোভাব পোষণ করত যে, ‘মক্কার কারও কাছে যদি এমন কোন বস্তু থাকত, যার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে সে আশংকিত হয়ে উঠত—তখন সে জিনিসটি তার (মুহাম্মদের) কাছেই রাখত। কেননা তার সত্যতা ও বিশ্বস্ততা ছিল সর্বজনবিদিত ও সর্বপ্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।` (সূত্রঃ সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৯৮)।
মদিনায় হিযরতের পর মুহাম্মদ (সাঃ) অন্যান্য দেশের শাসনকর্তাদের নিকট ইসলামের আমন্ত্রণবাণী নিয়ে পত্র প্রেরণ করেন। যাদের কাছে পত্র প্রেরণ করেন, তাদের মধ্যে ছিলেন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস। সে সময় আবু সুফিয়ানসহ কিছু কোরাইশ বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় অবস্থান করছিল। হিরাক্লিয়াস মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে জানার জন্য তাদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। তারপর জানতে চাইলেন, ‘তোমাদের শহরে যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহ্র রসুল বলে দাবী করছে, তোমাদের মধ্যে কেউ তার নিকটাত্মীয় আছ কি?` তখন আবু সুফিয়ান বললেন, ‘সে আমারই বংশের লোক।` অতঃপর হিরাক্লিয়াস জানতে চাইলেন, ‘এই দাবীর পূর্বে তোমরা কি কখনও তাকে মিথ্যা বলতে শুনেছ?` আবু সুফিয়ান বললেন, ‘কখনও না।` হিরাক্লিয়াস জানতে চাইলেন, ‘সে কি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে?` আবু সুফিয়ান বললেন, ‘এখনও সে কোন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেনি।` হিরাক্লিয়াস বললেন, ‘এই যখন অতীত অভিজ্ঞতা যে, সে কখনও মানুষদের ব্যাপারে মিথ্যা বলেনি, তাহলে এটা কি করে বলা যেতে পারে, সে আল্লাহ্র ব্যাপারে এতবড় একটা মিথ্যা কথা বলবে?` এটা হলো ঐ সময়কার কথা, যখন আবু সুফিয়ান ছিলেন রাসুলুল্লাহ্র ভয়ানক শত্রু এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী। পরবর্তী সময়ে আবু সুফিয়ান বলেছেন, ‘আমার যদি এই আশংকা না থাকত যে, হিরাক্লিয়াসের দরবারে অন্য যে সব কোরায়শী বসে আছে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে, তাহলে আমি ঐ সময় মিথ্যার আশ্রয় নিতাম।` (সূত্রঃ সহীহ্ বোখারী, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৬, পৃঃ ৯-১১ এবং সহীহ মুসলিম, ৬ষ্ট খণ্ড, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা, পৃঃ ২৪৬-২৫১)।
মুহাম্মদ (সাঃ) মিথ্যাবাদী কি-না, তা জানার আরেকটি নির্ভরযোগ্য উৎস হলেন তাঁর স্ত্রীগণ। মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় মোট নয় জন বিধবা স্ত্রী রেখে যান। এঁদেরকে ‘উন্মুল মোমেনীন` বা ‘বিশ্বাসীদের জননী` বলা হয়ে থাকে। তাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে পূর্বেই নিষেধাজ্ঞা ছিল যে, ‘তোমাদের আদৌ উচিৎ নয় আল্লাহ্র রাসুলকে দুঃখ দেওয়া এবং তাঁর ইন্তেকালের পর বিবিগণকে বিবাহ করা।` (সূত্রঃ সুরা আহযাব, ৫৩)। অন্যত্র বলা আছে, ‘নবীর স্ত্রীগণ মোমিনদের মাতা স্বরূপ।` ((সূত্রঃ সুরা আহযাব, ৬)। কোরআনের এ নির্দেশের কারণে সাহাবাগণ রাসুলের (সাঃ) বিধবা স্ত্রীদের আপন জননীর মত শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁদের যে কোন নির্দেশ মেনে চলতেন। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর সাহাবাগণ ইসলাম প্রচারের জন্য বিশ্বের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েন। তখন এই বিধবা স্ত্রীদেরও সুযোগ ছিল যে কোন অমুসলিম দেশে গিয়ে কোরআনের এ নির্দেশ লঙ্ঘন করার এবং যে কারও সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার। বিশেষ করে তৃতীয় স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-এর কথা বলা যায়। ইনি ছাড়া মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাকী এগার জন স্ত্রীর সবাই ছিলেন পূর্ব থেকেই বিধবা ও বয়স্কা (যাদের মধ্যে তিনজন নবীর জীবদ্দশাতেই মারা যান)। সাত বছর বয়সে আয়েশা (রাঃ)-এর বিয়ে হয়, নয় বছর বয়সে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকটে আসেন। তাঁর ১৮ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সাঃ) মারা যান। (সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, পৃঃ ৩৮৫)। পূর্ণ যৌবনবতী এ নারী অনায়াসেই দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারতেন। সর্বোপরি মুক্ত গণতন্ত্রের দেশে গিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যে কোন ‘অসদাচরণ, ভণ্ডামী কিংবা মিথ্যাচারের` অভিযোগ (যদি থাকত) তাঁর বিধবা স্ত্রীগণ করতে পারতেন। যেমন, বর্তমান বিশ্বে ভণ্ড পীরদের বেলায় করা হয়। কেননা, কারও চরিত্রের গোপন খবর তাদের স্ত্রীদের চেয়ে ভালো আর কারও জানার কথা নয়। সুতরাং এ সুযোগ নবীর স্ত্রীগণেরও ছিল। পশ্চিমা বিশ্বও এ ধরনের যে কোন অভিযোগ পরম আগ্রহের সাথে লুফে নিতো। কিন্তু ইতিহাস ও হাদিস গ্রন্থগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর আয়েশা (রাঃ) ও অন্য স্ত্রীগণ ছিলেন হাদিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ‘মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর আয়েশা (রাঃ) আরও ৪৮ বছর বেঁচেছিলেন। তিনি ৫৭ হিজরীতে ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ) এবং হযরত ওসমান (রাঃ)-এর শাসনামলে তিনি ফতোয়া দিতেন। তিনি ২৪১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ বলেন, আহকামে শরীয়তের এক-চতুর্থাংশ হাদিস আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট হতে বর্ণিত হয়েছে।` (সূত্রঃ মাওলানা আবদুল জলিল, বিশ্বনবীর (সাঃ) জীবনী, তৃপ্তি প্রকাশ কুঠি, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃঃ ১৭০-১৭১)। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) ছাড়া আর কোন পুরুষ সাহাবী আয়েশা (রাঃ)-এর চেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করতে পারেননি। তিরমিজি শরীফ থেকে জানা যায়, হযরত আবি মুসা আল-আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, ‘আমরা আছহাবে রাসুল (ছঃ)-এর কোন হাদিস সম্পর্কে অসুবিধার সম্মুখীন হলে তা সাইয়্যেদা আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করতাম এবং তাঁর নিকট থেকেই জ্ঞান লাভে সমর্থ হতাম।`
যে কোন বিষয়ে গবেষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি স্বীকৃত পদ্ধতি এই যে, উক্ত গবেষণায় যে Reference ব্যবহার করা হবে, তার কিছু অংশ স্বীকার এবং কিছু অংশ অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু জনাব ভবঘুরে তাঁর লেখায় আগাগোড়া এই কাজই করেছেন। তিনি বোরাকের বর্ণনার ক্ষেত্রে সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং অত্যন্ত জোর দিয়ে বলছেন যে, বোরাক কোন মহাকাশযান নয়; কারণ উক্ত হাদিসগ্রন্থে বোরাককে খচ্চরের চেয়ে ছোট ও গাধার চেয়ে বড় আকারের একটি সাদা জন্তু হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সহীহ বুখারী শরীফের যে হাদিসে (বুখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩৬০৮, পৃঃ ৪১১, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ) বোরাকের বর্ণনা আছে, তার আগের হাদিসেই (হাদিস নম্বর ৩৬০৭, পৃঃ ৪০৮) উল্লিখিত আছে যে, ‘ইয়াহ্ইয়া ইব্ন বুকায়ের (রা)…..জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কাবা শরীফের হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহ্তাআলা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের সমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম।` সহীহ মুসলিম, প্রথম খণ্ডের ৩৩৬ নম্বর হাদিসেও একই বর্ণনা আছে। কিন্তু জনাব ভবঘুরে এই অংশকে সত্য বলে স্বীকার করছেন না। এছাড়া উভয় হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত (সূত্রঃ বুখারী শরীফ, ৫ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ৩৬৭-৩৬৯ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৪১১-৪১৪, সহীহ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩২২ ও ৩২৪, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ২৭২ ও ২৭৭) মেরাজের সম্পূর্ণ বর্ণনা (বোরাকের বর্ণনা ছাড়া) অস্বীকার করছেন। সেখানে যে বর্ণিত আছে, মেরাজের রাত্রিতে রাসুল (সাঃ) কাবাগৃহের হাতিমে শায়িত ছিলেন—তা-ও অস্বীকার করছেন। আবার তিনি সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের Reference দিয়ে বলছেন, ‘বোরাক হলো গাধার চাইতে একটু বড় একটা জন্তু যার মূখটা ছিল মানুষের মত, আর ছিল দুইটা ডানা।` কিন্তু বোরাকের মুখ মানুষের মত ছিল, এরকম কোন তথ্য এ সকল হাদিসে নেই।
আলোচ্য লেখায় মেরাজের অসারতা প্রমাণের জন্য আপেক্ষিক তত্ত্বের (Theory of Relativity) যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তা-ও ভুল। পৃথিবীর কোন লোকের মহাশূন্যে যাওয়া-আসা করতে ২৭ বছর ব্যয় হলে পৃথিবীতেও ২৭ বছর কেটে যাবে—এটাই কি Theory of Relativity? হায় ঈশ্বর! আইনস্টাইন বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, ‘আমার মাথায় পানি ঢালো।` আসলে বিজ্ঞানের যে কোন Theory নিয়ে লিখতে হলে সেই Theory সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা আমাদের সবারই থাকা দরকার। তা নাহলে নিজেও বিভ্রান্ত হব, অন্যকেও বিভ্রান্ত করব।
আইনস্টাইন Special Theory of Relativity দেন ১৯০৫ সালে। ওই থিওরীর আলোকে ১৯১১ সালে পদার্থবিদ Paul Langevin একজোড়া যমজের উদাহরণ (Twin Paradox) হাজির করেন। Paul Langevin বলেন যে, একজোড়া যমজের মধ্যে প্রথমজন (ধরা যাক A) পৃথিবীতে থাকল, দ্বিতীয়জন (ধরা যাক B) মহাকাশযানে চেপে আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে (Theory of Relativity অনুযায়ী কোন বস্তুর গতি আলোর গতির সমান হতে পারে না) মহাশূন্যের একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে আবার একই গতিতে ফেরত এল। B যখন পৃথিবীতে ফিরে আসবে, তখন দেখা যাবে, A-এর বয়স B-এর তুলনায় বেড়ে গেছে। এটা ছিল Special Relativity তত্ত্বের আলোকে Paul Langevin-এর একটি Hypothesis। এটি কোন Scientific Theory নয়। সে বছরই (১৯১১) আইনস্টাইন Special Relativity তত্ত্বের কিছু ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে তা ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘To avoid unnecessary complications, let us for the present disregard the theory of relativity [the 1905 theory], and regard both systems from the customary point of view of kinematics, and the movements occurring in them from that of ordinary mechanics` (সূত্রঃ http://www.twinsparadox.co.uk/)। তারপর তিনি ১৯১৫ সালে General Relativity Theory প্রতিষ্ঠা করেন। এই থিওরির ভবিষ্যদ্বাণী হলো, ‘পৃথিবীর মত গুরুভার বস্তুর সন্নিকটে সময়ের গতি সবসময় শ্লথ বলে মনে হবে। পৃথিবী থেকে খুব উচ্চে অবস্থিত কোন লোকের মনে হবে নিচের সব ঘটনাই একটু দেরীতে ঘটছে। এই ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তখন একটি জলাধার স্তম্ভের উপরে এবং নিচে একজোড়া নির্ভুল ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। যে ঘড়িটা পৃথিবীর নিকটতর ছিল, দেখা গেল তার গতি ধীরতর।`
- Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-II http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।
- Feynman, Richard Phillips; Morínigo, Fernando B.; Wagner, William; Pines, David; Hatfield, Brian (2002). Feynman Lectures on Gravitation. West view Press. p. 68. ISBN 0-813-34038-1., Lecture 5)
এটা ছিল ১৯৬২ সালে পরিচালিত একটি পরীক্ষার ফলাফল, যা Paul Langevin-এর Hypothesis-এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারচেয়েও বড় কথা, প্রথমটা প্রমাণিত সত্য, দ্বিতীয়টা অনুমান। কারণ, আলোর গতির কাছাকাছি যাওয়া তো দূরের কথা, সেকেণ্ডে সাত মাইলের কিছু বেশি (রকেটের গতি) গতিই এখনও পর্যন্ত আমাদের ভরশা। আর Paul Langevin-এর Hypothesis-এর শর্তই হলো আমাকে আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করতে হবে এবং শুধু যাওয়া-আসা (acceleration) করতে হবে। কোথাও থামলে চলবে না। সেখানে আরও বলা হয়েছে, পৃথিবী থেকে দূরে যেতে যে সময় ব্যয় হবে, ফিরে আসতে Gravitational Time Dilation-এর কারণে তার চেয়েও কম সময় ব্যয় হবে। কাজেই জনাব ভবঘুরে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মেরাজে যাওয়া এবং ফেরত আসার জন্য যে সাড়ে তের বছর করে সময় বরাদ্দ করেছেন, তা-ও Paul Langevin-এর Hypothesis অনুযায়ী সঠিক নয়।
এবার দেখা যাক, সেই মহাশূন্যচারী যদি acceleration বন্ধ করে মাঝপথে যাত্রাবিরতি করেন (মেরাজের সময় যা ঘটেছে), তখন কি ঘটবে? Paul Langevin-এর Hypothesis-এ তার ব্যাখ্যা নাই। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। সুইডেনের Goteborg University-এর পদার্থবিদ Marek Abramowicz ও পোল্যাণ্ডের Nicolaus Copernicus Astronomical Center-এর জ্যেতির্বিজ্ঞানী Stanislaw Bajtlik এক গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে, সেই একজোড়া যমজের মধ্যে যিনি মহাকাশযানে চেপে আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে মহাশূন্য ভ্রমণ করবেন, তিনি যদি শুধু acceleration (ত্বরণ)-এর মধ্যে থাকেন, তাহলে তার সময় পৃথিবীর সময়ের তুলনায় Slow হতে পারে। কিন্তু তিনি যদি acceleration বন্ধ করে মাঝপথে যাত্রাবিরতি করেন, তাহলে তার সময় প্রথমজনের (যিনি পৃথিবীতে ছিলেন) তুলনায় দ্রুততর হবে। তিনি যখন পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন দেখা যাবে তাঁর বয়স প্রথমজনের তুলনায় বেড়ে গেছে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এবং University College, London-এর অধ্যাপক হার্বাট ডিঙ্গেল (Herbert Dingle) সেই ১৯৫০-এর দশকেই রায় দেন যে, Special Theory of Relativity এবং Twin Paradox—দুটোই ভুল। তাঁর এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র ‘WIRELESS WORLD` পত্রিকায় ১৯৮০ সালের অক্টোবর সংখ্যায় ছাপা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘As I have said, it throws no light at all on what would happen if the experiment were made, for it is an analysis, not of a physical process that has never occurred, but of the requirements of a theory that purports to accord with physical processes, and I think it shows beyond doubt that the special relativity theory at least must be wrong.`এদিকে নাসা-র (NASA) Radiation Studies বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী Frank Cucinotta ও আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী পৃথক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, মহাশূন্যের তেজস্ক্রিয়তা মানবদেহের ক্রোমোজম ও ডিএনএ-এর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার কারণে যিনি দীর্ঘসময় মহাশূন্যে অবস্থান করবেন, তার বয়স-নির্দেশক telomeres অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত হবে এবং তাঁর বয়স পৃথিবীর অন্যদের তুলনায় তাড়াতাড়ি বাড়বে। Apollo মহাকাশযানে চড়ে যাঁরা চাঁদে ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। তাঁদের শরীরে অন্য মহাশূন্যচারীর (যারা অল্প সময় ও কম দূরত্বে ভ্রমণ করেছেন) তুলনায় সাত বছর আগেই Cataracts (বয়স বৃদ্ধির লক্ষণ) ধরা পড়েছে। নাসা-র এই গবেষণাও Special Theory of Relativity এবং Twin Paradox-এর বিপরীত ফল প্রকাশ করছে।
তথ্যসূত্রঃ
- 1. Twin Paradox Twist, the Accelerated Twin is Older, http://www.physorg.com/news163738003.html
- The Twins Paradox of Relativity, Herbert Dingle http://www.worldnpa.org/pdf/abstracts/abstracts_215.pdfIn
- NASA Science News, http://science.nasa.gov/science-news/science-at-nasa/2006/22mar_telomeres/
- The Twin Paradox: The Experiment Which Proves Einstein Wrong (http://www.twinsparadox.co.uk/)
- The Twins Paradox of Relativity Is Certainly Absolutely Wrong! (http://mb-soft.com/public2/twinspar.html)
- Time Dilation and Twin Paradox Debunked (http://www.physicsmyths.org.uk/timedilation.htm)
- Space and TimeWarps, Stephen Hawking (http://www.hawking.org.uk/index.php/lectures/publiclectures/63)
আইনস্টাইন যখন Gereral Theory of Relativity দেন, তখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের সম্প্রসারণই আবিষ্কার হয়নি। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে এডুইন হাবল (Edwin Hubble) মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ (Expanding Universe) আবিষ্কার করেন, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে উইলসন ও পেনজিয়াস Big Bang Theory প্রতিষ্ঠা করেন। তার আলোকে Stephen Hawking এবং Penrose ১৯৭০ সালে চূড়ান্তভাবে রায় দেন যে, ‘ব্যাপক অপেক্ষবাদ (General Relativity Theory) একটি অসম্পূর্ণ তত্ত্ব। মহাবিশ্ব কি করে শুরু হল, এ তত্ত্ব তা বলতে পারে না।` (সূত্রঃ A Brief History of Time, Chapter-III, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।)। আরও বলেছেন,‘ ‘মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটছে, সেগুলি শুধু স্থান-কালকে প্রভাবিত করে তাই নয়, স্থান-কাল নিজেরাও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঠিক যেমন মহাবিশ্বে যে ঘটনাগুলি ঘটছে, স্থান-কাল সম্পর্কে ধারণা ছাড়া সেগুলি সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। ব্যাপক অপেক্ষবাদেও তেমনি মহাবিশ্বের সীমানার বাইরে স্থান-কাল সম্পর্কে বলা অর্থহীন। ` (সূত্রঃ A Brief History of Time, Chapter-II: Space and Time, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।
এ অবস্থায় আমরা যাকে বাস্তব কাল (Physical Time) বলি, তার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও Stephen Hawking বলছেন, আমাদের বাস্তব কাল দিয়ে মহাবিশ্ব ও কৃষ্ণগহ্বর ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, কিন্তু কাল্পনিক কাল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে! তাঁর নিজের ভাষায়, ‘এ থেকে মনে হতে পারে তথাকথিত কাল্পনিক কালই আসলে বাস্তব কাল আর যাকে আমরা বাস্তব কাল (Physical Time) বলি, সেটা আমাদের কল্পনার উদ্ভাবন। সেই জন্য আমরা যাকে কাল্পনিক কাল বলি হয়তো সেটাই আরও বেশি মৌলিক (More basic)। (সূত্রঃ A Brief History of Time, Chapter-VIII: The Origin and Fate of the Universe, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।
বর্তমান ধারণা থেকে এটা পরিষ্কার যে, মহাজাগতিক সকল স্থান ও কাল ভিন্ন ভিন্ন হবে। তা পৃথিবীর সময়ের তুলনায় দ্রুতও হতে পারে, আবার ধীরও হতে পারে। যেমন, বুধ গ্রহে এক বছর হয় ৮৮ দিনে আর মঙ্গল গ্রহে ৬৮৭ দিনে। সেই হিসেবে এই সৌরজগতের বুধগ্রহেই কেউ ৪০ বছর কাটিয়ে দিলে পৃথিবীর হিসেবে তা হবে মাত্র ৯.৬ বছর। মহাশূন্যের অন্য কোন স্থানে এই পার্থক্য এত ব্যাপক হতে পারে যে, পৃথিবীর হিসেবে তা হতে পারে মাত্র কয়েক সেকেণ্ড। এ অবস্থায় ‘স্থান` ও ‘কাল` সম্পর্কে Basic ধারণা আছে, এমন কাউকে যদি বলা হয় যে, মহাবিশ্বের যে কোন স্থানের সাথে পৃথিবীর সময়ের অনুপাত (Ratio) একই রকম থাকবে এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মেরাজে অতিবাহিত ২৭ বছর (যদি ধরে নিই) পৃথিবীতেও অতিবাহিত হবে—তাহলে সেই ভদ্রলোক দ্বিতীয়জনের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকাবেন, যেন মানুষ দেখছেন না—সার্কাসের জন্তু দেখছেন। অন্য কোন সন্দেহও করতে পারেন।
তাছাড়া Quantum Mechanics আবিষ্কারের পর থেকে বিজ্ঞানীরা দাবী করছেন যে, এই মহাবিশ্ব ছাড়াও আরও মহাবিশ্ব আছে। বিজ্ঞানীদের এই দাবী থেকে Parallel Universe-এর Theory এসেছে। Stephen Hawking বলছেন, ‘মহাবিশ্ব হয় স্থানিকভাবে অসীম, নয়তো অনন্তসংখ্যক মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে।` (সূত্রঃ Brief History of Time, Chapter-VIII: The Origin and Fate of the Universe, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)। যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিজ্ঞানী এবং Massachusetts Institute of Technology-এর Physics-এর অধ্যাপক এলান গুথ (Alan Guth) Parallel Universe-এর এমন এক Theory উপস্থাপন করেছেন, যেখানে একাধিক মহাবিশ্ব থাকতে পারে। সে সকল মহাবিশ্বে পৃথিবীর মত ত্রিমাত্রিক জগৎ থাকতে পারে, আবার বহুমাত্রিক জগৎও থাকতে পারে। California University-র একদল Quantum Physicist দাবী করছেন, সময়ের সুড়ঙ্গ দিয়ে অনায়াসে সে সকল Parallel Universe-এ যাতায়াত করা যাবে। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ
- Parallel Universes Theory: The Basics (http://www.quantumjumping.com/articles/parallel-universe/parallel-universes-theory/)
- Freaky Physics Proves Parallel Universes Exist (http://www.foxnews.com/scitech/2010/04/05/freaky-physics-proves-parallel-universes/
- Parallel Universes, Max Tegmark Dept. of Physics, University of Pennsylvania, Philadelphia (http://space.mit.edu/home/tegmark/multiverse.pdf)
- THE UNIVERSE AND MULTIPLE REALITY by Professor M. R.Franks (http://www.manyuniverses.com/indexH.htm)
- The Parallel Universe: Does The Multiverse Provide A Theory of Everything? (http://www.suite101.com/content/the-parallel-universe-a34657)
- The Case of Parallel Universes (http://www.scientificamerican.com/article.cfm?id=multiverse-the-case-for-parallel-universe)
পৃথিবীর প্রচলিত সময়ের ধারণাকে যাঁরা চ্যালেঞ্জ করেছেন, তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত একজন হলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে, ডব্লিউ ডান (J W Dunn)। তাঁর An Experiment With Time বইটি ক্ল্যাসিক হিসেবে পরিচিত। ডানের Theory হলো, সময় দুই রকম। প্রথমটি সামনের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে, দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সময়ের হিসাবে মানুষের অস্তিত্বও দুই রকম। প্রথমটি বর্তমান জীবনটা ভোগ করছে। এটি নশ্বর। দ্বিতীয়টি সময়ের ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে মুক্ত। সে সময়ের সম্মুখ-পশ্চাৎ দেখতে পায়। এ কারণে মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার প্রথম সত্ত্বাও ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু দ্বিতীয় সত্ত্বা ঘুমায় না। সে বেরিয়ে পড়ে। সে সময়ের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখতে পায়। এই সত্ত্বা একটি ইউনিভার্সাল মাইণ্ডের অংশবিশেষ। এই মহাবিশ্বে একটা ফোর্থ ডাইমেনশনাল সিরিয়াল ইউনিভার্স আছে, যার ভেতর মানুষের দ্বিতীয় সত্ত্বা কখনও কখনও Space-Time অবগতির একটা ভিন্ন ডাইমেনশনে ঢুকে পড়ে, যা তাকে সময়ের মধ্যে মুক্তভাবে বিচরণ করতে দেয়, সেটা সামনে কিংবা পেছনে যেদিকেই হোক (সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/John_William_Dunne)। কোরআনেও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ্ই প্রাণ হরণ করেন জীবসমূহের তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসে নাই তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর তিনি যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অপরগুলি ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য (সুরা যুমার, ৪২)।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারলাম—
এক. ব্যাপক অপেক্ষবাদ (General Relativity Theory) একটি অসম্পূর্ণ তত্ত্ব। মহাবিশ্ব কি করে শুরু হল, এ তত্ত্ব তা বলতে পারে না।
দুই. এই মহাবিশ্বের বাইরে আরও একাধিক মহাবিশ্ব থাকতে পারে।
তিন. ব্যাপক অপেক্ষবাদ (General Relativity Theory) মহাবিশ্বের সীমানার বাইরে স্থান-কাল সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না।
চার. Theory of Relativity অনুযায়ী কোন বস্তুর গতি আলোর গতির সমান কিংবা বেশি হতে পারে না।
পাঁচ. কোন ব্যক্তি যদি আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে মহাশূন্য ভ্রমণে বের হন, তাহলে ব্যাপক অপেক্ষবাদ অনুযায়ী acceleration (ত্বরণ)-এর সময় ছাড়া অন্য যে কোন অবস্থায় (যদি তিনি কোথাও যাত্রাবিরতি করেন) তাঁর সময় পৃথিবীর সময়ের তুলনায় দ্রুততর হবে এবং পৃথিবীর সময় তুলনামূলকভাবে Slow হবে।
ছয়. আমাদের বাস্তব কাল (Physical Time) দিয়ে মহাবিশ্ব ও কৃষ্ণগহ্বর ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, কিন্তু কাল্পনিক কাল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে! এ থেকে ধারণা করা হয়, তথাকথিত কাল্পনিক কালই আসলে বাস্তব কাল আর যাকে আমরা বাস্তব কাল বলি, সেটা আমাদের কল্পনার উদ্ভাবন।
সাত. মানুষের দ্বিতীয় সত্ত্বা সময়ের সামনে-পেছনে যে কোন দিকে বিচরণ করতে পারে।
এবার দেখা যাক, প্রামাণ্য দলিল (কোরআন, হাদিস ও ইতিহাস) অনুযায়ী মেরাজের রাতে কি ঘটেছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন কাবাগৃহে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন, তখন জিব্রাইল (আঃ) তাঁর নিকট আগমন করেন। তারপর তিনি বোরাক নামক একপ্রকার অত্যন্ত দ্রুতগামী বাহনে চড়ে প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাস (আল-আকসা) মসজিদে গমন করেন। তারপর সেখান থেকে একই বাহনে চড়ে সপ্ত আকাশ অতিক্রম করেন। প্রতিটি আকাশে তিনি যাত্রাবিরতি করেন এবং পূর্ববর্তী রাসুলগণের (আঃ) সাথে কুশল বিনিময় করেন। সময় নিয়ে আল্লাহ্র বিভিন্ন নিদর্শন দেখেন। তারপর একসময় সিদরাতুল মুনতাহার নামক বৃক্ষের কাছে উপস্থিত হন। জিব্রাইল (আঃ) তাঁকে জানান যে, এটা সৃষ্টির সীমানা, এর বাইরে তিনি (জিব্রাইল) আর যেতে পারবেন না। তখন বোরাক হযরত (সাঃ)-কে নিয়ে বাইতুল মামুর পর্যন্ত গিয়ে থেমে দাঁড়ায়। এ পর্যায়ে সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট ‘রফরফ` নামক একটি স্বর্গীয় যানে চড়ে রাসুল (সাঃ) আল্লাহ্র একান্ত সান্নিধ্যে আরশে আজিমে গিয়ে উপস্থিত হন। আল্লাহ্র দরবারে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও উপদেশ লাভ করেন। তারপর আবার পৃথিবী অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এ যাত্রাকালেও তিনি নানা স্থানে যাত্রা বিরতি করেন। এক পর্যায়ে ষষ্ট আসমান (যেখানে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম অবস্থান করছিলেন) থেকে আল্লাহ্র আরশ পর্যন্ত মোট দশবার আসা-যাওয়া করেন। এ আসা-যাওয়ার মাধ্যমে তিনি ফরয নামাযের পরিমাণ পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসেন। অবশেষে তিনি পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং কাবাগৃহে ফজরের নামায আদায় করেন (সূত্রঃ ইবনে হিশাম, আল-তাবারী, ইবনে আথির, বুখারী শরীফ, ৫ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ৩৬৭-৩৬৯ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৪১১-৪১৪, সহীহ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩২২, ৩২৪ ও ৩৩৮, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, পৃঃ ২৭২, ২৭৭ ও ২৮৮)।
মেরাজের এ ঘটনা থেকে পরিষ্কার যে, এটা শুধু যাওয়া-আসা ছিল না; সেখানে প্রতিটি আসমানে যাত্রাবিরতি ছিল, আল্লাহ্র সান্নিধ্যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার ব্যাপার ছিল। তারপর ছিল অবতরণের ব্যাপার। অবতরণ তিনি কিভাবে করেছিলেন, তখন তাঁর বাহন কি ছিল, আদৌ কোন বাহন ছিল কি-না, এ সম্পর্কে ইতিহাসে বা হাদিসে কিছু নেই। এমনকি তিনি যে ষষ্ট আসমান (যেখানে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম অবস্থান করছিলেন) থেকে আল্লাহ্র আরশ পর্যন্ত মোট দশবার আসা-যাওয়া করেন, এই আসা-যাওয়ার বাহন সম্পর্কেও হাদিসে কিছু উল্লেখ নেই। কিন্তু তাফসীরে রুহুল বয়ান-এ একটি ব্যাখ্যা আছে। সেখানে ‘সুরা নাজম`-এর প্রথম তিনটি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘নিম্নগামী তারকার শপথ! তোমাদের সাথী মুহাম্মদ (সাঃ) কখনও পথ ভুলেননি বা পথভ্রষ্টও হননি`। উক্ত আয়াত মেরাজের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। সাধারণ অর্থে অস্তমিত তারকা হলেও ইমাম জাফর সাদেক (রাঃ) বলেছেন, ‘নাজম দ্বারা উক্ত আয়াতে নবী করিম (সাঃ)-কেই বুঝানো হয়েছে। কেননা, রাসুল (সাঃ)-এর এক হাজার নামের মধ্যে ‘আন-নাজম` একটি নাম। আর আরবী ‘হাওয়া` শব্দের অর্থ হলো ‘নিম্নগামী`। তাহলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, ‘আল্লাহ্র দরবার থেকে নিম্নগামী তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শপথ।` এটা মেরাজ থেকে ফেরত আসার অবস্থার বর্ণনা। আর ‘পথ ভুলেননি` অর্থ ‘যে পথে তিনি এসেছেন, সে পথেই ফেরত গেছেন।` বোরাক বা রফরফের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করলে এ কথার প্রয়োজন হতো না। কেননা, তখন সেই বাহনই তাঁকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসত। কাজেই রাসুল (সাঃ) যে মেরাজ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে আল্লাহ্র কুদরতে বাহন ছাড়া যাতায়াত করেছেন, এটাই সুস্পষ্ট। কারণ, তিনি তো নূর। আর নূর ও আলো সবকিছু ভেদ করে সরল গতিতে ধাবিত হয়, এটাই বিজ্ঞানের নিয়ম।` (তাফসীরে রুহুল বয়ান, সুরা আন-নাজম)। মহানবীর জীবনীগ্রন্থেও ‘সুরা নাজম`-এর উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ‘আকাশের নক্ষত্রের` সাথে তুলনা করা হয়েছে। (সূত্রঃ ড. ওসমান গণী, ‘মহানবী`, পৃঃ ১৮২-১৮৩)। তাছাড়া আল-কোরআনের ‘আমি শপথ করি পশ্চাদপসরণকারী নক্ষত্রের, যা প্রত্যাগমন করে ও অদৃশ্য হয়।` (সুরা তাকভীর, ১৫-১৬)—এই আয়াতটিও দ্বৈত-অর্থবোধক। আধুনিক মহাকাশবিদ্যার (Modern Cosmology)আলোকে এটি যেমন প্রসারমান মহাবিশ্ব ও কৃষ্ণগহ্বর নির্দেশ করছে, তেমনি মহানবী (সাঃ)-এর ষষ্ট আসমান থেকে আল্লাহ্র আরশ পর্যন্ত আসা-যাওয়াকেও সমর্থন করছে।
‘কেউ কেউ বলে থাকে যে-আল্লাহর সকাশে যেতে মোহাম্মদের সাড়ে তের বছর সময় লেগেছিল আর ফিরে আসতেও একই সময় লেগেছিল অর্থাৎ মোট সময় লেগেছিল সাতাশ বছর`—এটি লেখকের Reference বিহীন উক্তির আরেকটি নমুনা। মেরাজে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কি পরিমাণ সময় ব্যয় হয়েছিল, তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ নাই। এটা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কোন কোন জীবনীগ্রন্থে আছে, ‘নবী করিম (সাঃ) আরশে আজিমে পৌঁছানোর পথে সত্তরটি নূরের পর্দা অতিক্রম করেন। এক একটি পর্দার ঘনত্ব ছিল পাঁচশত বৎসরের রাস্তা। এ হিসাবে (পর্দাগুলোর মাঝখানের দূরত্বসহ) ৩৬ হাজার বৎসরের রাস্তা অতিক্রম করে রাসুল (সাঃ) আরশের মাকামে পৌঁছলেন।` (সূত্রঃ নূর-নবী, অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ঢাকা, পৃঃ ৭৩)। এই পরিমাণ সময় যদি পৃথিবীতে ব্যয় হত, তাহলে তাঁর প্রত্যাবর্তনকালে তাঁর সাহাবীগণ তো দূরের কথা, আমাদেরও কোন অস্তিত্ব থাকত না। কিন্তু এ সময় পৃথিবীতে অতিক্রান্ত হয়নি, মহাবিশ্বের অন্য কোন সময়-অঞ্চলে (Time-Zone) অতিবাহিত হয়েছে। হাদিস ও ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যাচ্ছে, মেরাজের রজনীতে মুহাম্মদ (সাঃ) সৃষ্টিজগতের শেষ প্রান্ত (সিদরাতুল মুনতাহা) অতিক্রম করেন। তারমানে এটা আমাদের মহাবিশ্বের বাইরের কোন জগৎ। আমরা আগেই জেনেছি, এই মহাবিশ্বের বাইরে আরও একাধিক মহাবিশ্ব থাকতে পারে। আরও জেনেছি, মহাবিশ্বের বাইরের কোন জগতের স্থান-কাল সম্পর্কে General Relativity Theory কিছু বলতে পারে না।
আরবী গ্রামার ও ডিকশনারী অনুযায়ী আরবী ‘বারক্` শব্দের অর্থ হলো ‘বিদ্যুৎ` আর এই ‘বারক্`-এর Superlative degree হলো ‘বোরাক`। আমরা জানি, আলোর গতি সেকেণ্ডে ৩০০,০০০ কিঃমিঃ। সেই আলো-কে Superlative degree করার কারণে বোরাক হচ্ছে এমন এক প্রাণী (বা মহাকাশযান) যার গতিবেগ ছিল আলোর গতির চাইতেও বেশি। আমরা আগেই জেনেছি, আইনস্টাইনের Theory of Relativity অনুযায়ী কোন বস্তুর গতি আলোর গতির সমান কিংবা বেশি হতে পারে না। যার ফলে এটা খুবই পরিষ্কার যে, এই Theory এমন কোন বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবে না, যার গতিবেগ আলোর গতির চাইতেও দ্রুততর। উদাহরণস্বরূপ এখানে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রসঙ্গও আনা যায়। পবিত্র কোরআনে তাঁকে জ্যোতি বা আলো হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, ‘হে নবী! আমি তো তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল আলো রূপে।` (সুরা আহযাব, ৪৫-৪৬)। কিংবা ‘হে কিতাবীগণ! আমার রাসুল তোমাদের নিকট এসেছে, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে, সে তা তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক কিছু ক্ষমা করে থাকে। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছে একটি জ্যোতি এবং একটি স্পষ্ট কিতাব ।` (সুরা মায়িদা, ১৫)। এরকম ঘোষণা আরও রয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা আরাফ, ১৫৭, সুরা তাগাবুন, ৮, সুরা নিসা, ১৭৪ ও সুরা শুরা, ৫২ নম্বর আয়াতে। ইমাম গায্যালী (রহঃ)-এর দাকায়েকুল আখবার (মাওলানা আকমাল হোসেন খান অনূদিত, ব্রাদার্স পেপার এণ্ড পাবলিকেশন্স, ঢাকা), আবদুল খালেক রচিত ‘সাইয়েদুল মুরসালীন` (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা) এবং অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল রচিত ‘নূর-নবী` (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ঢাকা) গ্রন্থে মুহাম্মদ (সাঃ) যে নূরের তৈরি তা কোরআন-হাদিসের সাহায্যে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আমরা আগেই জেনেছি, নূরের তৈরি ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) মানুষের আকৃতিতে কখনও কখনও মুহাম্মদ (সাঃ) নিকট আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে, নূরের তৈরি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আল্লাহ্ মানুষের আকৃতিতে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। আইনস্টাইনের Matter Transmission Theory বলছে, ‘Matter could be converted into power and then transmitted to a long distance and then reassembled to get back the matter`। অতএব, Matter Transmission পদ্ধতি, কোরআনের আলোকতত্ত্ব এবং হাদিসের বোরাকতত্ত্বের নিরিখে মুসলিম বিজ্ঞানীরা মেরাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন এভাবে যে, সর্বময় শক্তিধর আল্লাহ্ তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শারীরিক অস্তিত্বকে প্রথমে বিদ্যুতে রূপান্তর করেন এবং পরে তা আলোতে প্রবর্তিত করেন। সাধারণ আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেণ্ডে ৩০০,০০০ কিঃমিঃ, কিন্তু এ আলো-কে ‘বোরাক` নামক Superlative degree করার কারণে এর গতিবেগ ছিল সর্বাধিক এবং চোখের পলকে তিনি অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) পুনরায় মানবরূপে তাঁর প্রভুর সামনে উপস্থিত হয়ে যান (সূত্রঃ বিজ্ঞানময় কোরআন: Al-Quran is All Science, মুহাম্মদ আবু তালেব, চতুর্থ সংস্করণ, পৃঃ ১৭৪-১৭৫)। এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা না করা যার যার নিজের ব্যাপার। কিন্তু Matter Transmission যে সম্ভব, এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। আইনস্টাইনের ভাষায়, “It followed from the special theory of relativity that mass and energy are both but different manifestations of the same thing—a somewhat unfamiliar conception for the average mind. Furthermore, the equation E = mc², in which energy is put equal to mass, multiplied by the square of the velocity of light, showed that very small amounts of mass may be converted into a very large amount of energy and vice versa. The mass and energy were in fact equivalent, according to the formula mentioned before. This was demonstrated by Cockcroft and Walton in 1932, experimentally.”
তথ্যসূত্রঃ
1.http://en.wikiquote.org/wiki/Albert_Einstein#Out_of_My_Later_Years_.281950.29
2. ‘Does the Inertia of a Body Depend Upon Its Energy-Content?` By Albert Einstein, published in the Annalen der Physik, 27 September 1905, http://www.fourmilab.ch/etexts/einstein/E_mc2/www/
3.http://www.worsleyschool.net/science/files/emc2/emc2.html
4.http://www.hyperhistory.com/online_n2/History_n2/index_n2/einstein_theory.html ।
‘মেরাজের কথা প্রচার করার পর কুরাইশরা তাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকল তার ঘটনার প্রমাণ দাখিল করার জন্য। মোহাম্মদ (সাঃ) তখন বললেন- তিনি এক মরুভুমির এক জায়গায় কিছু মানুষকে দেখলেন যাদের উট পালিয়ে গেছিল ও তারা সেগুলো খোঁজাখুঁজি করছিল। তিনি তাদের উটগুলো খুঁজে বের করে দিলেন ও দামাস্কাসের দিকে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। ফেরার পথে তিনি দেখলেন এক জায়গাতে এক দল লোক ঘুমাচ্ছিল, তিনি তাদের পাত্র থেকে পানি পান করলেন ও পাত্র যেমন ছিল তেমন রেখে দিলেন।`—এ ঘটনা উল্লেখ করে জনাব ভবঘুরে মন্তব্য করেছেন, ‘উনি চলেছিলেন বোরাকের পিঠে সওয়ার হয়ে উর্ধ্বাকাশ দিয়ে আল্লাহর সাথে দেখা করার জন্য সেই আল্লাহর আরশে। হঠাৎ আকাশপথে যাত্রা বিরতি করে মরুভূমিতে নেমে পড়েন এবং উপরোক্ত কর্মকান্ডসমূহ করেন ।এমন উদ্ভট গল্প কে কবে শুনেছে?` এ প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, এ বর্ণনাটি কোরআন, হাদিস ও ইতিহাস দ্বারা সমর্থিত নয়। এ বর্ণনার উৎস একমাত্র ‘কিতাবুস্ সিরাহ্’ (যাকে সংক্ষেপে সিরাহ্ বলা হয়) নামক একটি গ্রন্থ। যেখানেই এ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যাবে, সেখানেই ‘কিতাবুস্ সিরাহ্’-এর Reference পাওয়া যাবে। জনাব ভবঘুরেও যে লিংক থেকে (http://www.questionsonislam.com/index.php?s=article&aid=10849) ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, সে লিংকের সূত্রও ওই ‘সিরাহ্`। এই ‘সিরাহ্` বা ‘কিতাবুস্ সিরাহ্’ সম্পর্কে একটু জানা দরকার। এ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন মহম্মদ ইবনে ওমর (৭৫২-৮২৯), যিনি ওয়াকেদী নামেই বেশি পরিচিত। ইসলামের সকল ইমাম, পণ্ডিত ও মোহাদ্দেস (হাদিসবিদ) সর্বসম্মতভাবে এই জীবনীকারকে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনার জন্য অগ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন (সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৫৪) । মজার কথা হলো, পশ্চিমা লেখকদের প্রধান অবলম্বন কিন্তু এই ওয়াকেদীই। Rev. T. P. Hughes তাঁর ‘Dictionary of Islam` গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, ‘A celebrated Moslem Historian, much quoted by Muir in his “Life of Mahomet` (সূত্রঃ পূর্বোক্ত)। ধারণা করা হয় যে, বাজারে মুহ্ম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে যতগুলি আজগুবি কাহিনী চালু আছে, তার প্রায় সবগুলিরই উৎস এই ওয়াকেদী। উটের কাফেলার বর্ণনাও সে রকম একটি আজগুবি বর্ণনা, যা দুটি কারণে বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রথমতঃ, মেরাজের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) জিব্রাইলের (আঃ)-এর পরামর্শ ছাড়া কিছুই করেননি। এমনকি ডানে-বামেও তাকাননি। সেখানে তিনি আগ বাড়িয়ে আকাশ থেকে নিচে কারও সাথে কথা বলবেন, এটা বাস্তবসম্মত নয়। দ্বিতীয়তঃ, কারও জিনিস অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করা যে চুরি এবং মহাপাপ—এ কথা তিনি আগেই তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছেন। কাজেই কোন ঘুমন্ত ব্যক্তির পানি তিনি তাঁর অগোচরে পান করবেন না। তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য ছিল, অপরকে যা নির্দেশ দিতেন, নিজে তা আগে পালন করতেন। তারপরও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, এই বর্ণনা সত্য, তাহলেও দেখা যাবে, লিংকের বর্ণনার সাথে জনাব ভবঘুরে’র বর্ণনা মিলছে না। ওই লিংকে কোথাও বলা হয়নি যে, রাসুল (সাঃ) আকাশপথে যাত্রাবিরতি করে মরুভূমিতে নেমে পড়েছিলেন। বরং সেখানে বলা আছে, তিনি যাওয়ার পথে অমুকের হারিয়ে যাওয়া উটগুলোকে পথনির্দেশ করেন, যা বোরাকে সওয়ার অবস্থায়ও হতে পারে। আর ‘ফেরার পথে একদল ঘুমন্ত লোকের পাত্র থেকে পানি পান করার ঘটনা`টি বর্ণিত আছে এভাবেঃ After my return, I was in Dabhanan, I came across the caravan of so-and-so’s sons and his community was sleeping. I opened the covered water-cup belonging to them and drank from it. I covered it as it had been before. অর্থাৎ তাঁর পৃথিবীতে অবতরণের পর, তিনি যখন Dabhanan নামক স্থানে তখন এ ঘটনা ঘটে। তারমানে ‘আকাশপথে যাত্রাবিরতি`র কোন ঘটনা ওই লিংকে পাওয়া যাচ্ছে না।
আলোচ্য লেখায় কোরআনের সুরা নাজম ১-১৮ আয়াতের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘সে তাকে আরেকবার দেখেছিল- এখানে তাকে বলতে আল্লাহকেই বুঝানো হচ্ছে, কারণ জিব্রাইল মোহাম্মদের সাথে সব সময়ই ছিল সুতরাং তাকে বলতে জিব্রাইল বুঝালে বাক্যটির কোন অর্থই হয় না। এর অর্থ কোরানের আল্লাহ্ বলছেন তাঁর আকার আছে, অথচ ইসলামের মূল বক্তব্য হলো আল্লাহ্র কোন আকার নাই।`
আল্লাহ্কে দেখা গেছে, তাই আল্লাহ্র আকার আছে—এটা খুবই দুর্বল যুক্তি। যা কিছু দেখা যায়, তারই যদি আকার থাকে, তাহলে তো আগুন, পানি—এসবেরও আকার আছে। আল্লাহ্ নিরাকার বলতে সেরকমই বোঝানো হয়েছে, আগুন ও পানি বলতে আমরা যেরকম বুঝি। অর্থাৎ যার কোন নির্দিষ্ট আকার নেই। পার্থক্য হলো, আগুন ও পানি যে পাত্রে (বা চিমনিতে) রাখা হয়, সে আকার ধারণ করে, আর ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ্ যখন যে রূপ ধারণ করতে চান, তখন সে রূপ ধারণ করতে পারেন। মানুষের মত তাঁর এই সীমাবদ্ধতা নেই যে, সারাজীবন একই রকম থাকতে হবে। লেখাটির অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘এখানে দেখা যাচ্ছে খুব নিষ্কলুষ একটা বাক্য- Muhammad was staying in the house of his cousin, Hind, daughter of Abu Talib, who was also called Umm Hani- যেন এটা কোন বিষয়ই নয়।` মজার কথা হলো, লেখক নিজেও জিব্রাইল (আঃ) প্রসঙ্গে গোটা লেখায় এই কাজই করেছেন। জিব্রাইল (আঃ)-এর প্রসঙ্গ এমনভাবে বলে গেছেন, যেন এটা কোন ব্যাপারই নয়। তিনি বলছেন, ‘বোরাক নামক একটা জন্তু যার ডানা আছে সে কিভাবে বায়ুমন্ডলের বাইরে গিয়ে এক এক করে সাতটা বেহেস্ত ভ্রমণ করল? কারণ বায়ূমন্ডলের বাইরে তো ডানা দিয়ে উড়ে যাওয়া যায় না।` বোরাক বায়ূমন্ডলের বাইরে ডানা দিয়ে উড়ে যেতে পারে না, তাহলে জিব্রাইল (আঃ) যাচ্ছেন কিভাবে? জিব্রাইলেরও তো ডানা আছে। তিনি বলছেন, আল্লাহ্র আকার নেই, তাই আল্লাহ্র সাথে দেখা করা যায় না। জিব্রাইলের (আঃ) কি আকার আছে? থাকলে তাঁকে অন্যরা দেখতে পাচ্ছে না কেন? তিনি একেক সময় একেক রূপেই বা আসছেন কিভাবে? (সূত্রঃ বুখারী শরীফ, ৫ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, হাদিস নম্বর ২৯৯০, পৃঃ ৩৭৩)।
প্রকৃতপক্ষে সুরা নাজম ১-১৮ আয়াত মনোযোগ সহকারে পড়লে যে কেউ দেখবেন, এখানে ১-১০ আয়াতে জিব্রাইলের (আঃ) সাথে এবং ১১-১৭ আয়াতে আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাতের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। ৫ নম্বর আয়াতে তো শক্তিশালী ফেরেশতার কথা উল্লেখই আছে। ৬-৯ নম্বর আয়াতে আছে সেই ফেরেশতার নিকটবর্তী হওয়ার বর্ণনা। ১০ নম্বর আয়াতে আছে উক্ত ফেরেশতা কর্তৃক মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আল্লাহ্র দাওয়াত সম্পর্কে অবহিত করার বিষয়, যা লেখকের পূর্বে উদ্ধৃত একটি ওয়েবসাইটেই সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, যেখানে ’মহান আল্লাহ্ জিব্রাইল (আঃ)-কে বলছেন, ‘আমার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়তম ব্যক্তি অবিশ্বাসীদের ব্যবহারে মনে কষ্ট পেয়েছে এবং ঐ অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। তুমি তাঁকে দাওয়াত দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আস।` (http://www.muhammadanreality.com/ascentionmiraj.htm)। ১১-১৭ আয়াতে আল্লাহ্র সাথে দু’বার সাক্ষাতের বিষয় বর্ণিত আছে। ১৮ আয়াতে মেরাজে গমনের পর মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র যে নিদর্শনাবলী দেখেছেন, তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (সূত্রঃ বুখারী শরীফ, ৫ম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৩০০৫, ৩০০৬, ৩০০৭ ও ৩০০৮, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ৩৮০-৩৮১ এবং সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নম্বর ৩৪০, ৩৪১, ৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৭, ৩৫০, ৩৫২, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃঃ ২৯০-২৯১ ও ২৯৫-২৯৬)।
‘মানুষ কখন কসম কাটে? কারা কসম কাটে? সাধারনত মিথ্যাবাদী প্রকৃতির মানুষ যাদেরকে অন্যরা বিশ্বাস করে না তারাই কসম কাটে, কসম কাটে আল্লাহ্ বা খোদার নামে। যেমন বলে- খোদার কসম আমি মিথ্যা বলছি না।`—লেখকের এই কথাগুলোও অতি সরলীকরণ, স্ববিরোধিতা ও যুক্তিহীনতার নমুনা মাত্র। যারা আল্লাহ্র নামে কসম কাটে, তারা সাধারণত মিথ্যাবাদী; তাহলে যারা অন্য বস্তুর নামে কসম কাটে তারা তো সত্যবাদী! এখানে আল্লাহ্ তো অন্য বস্তুর নামেই শপথ করছেন। এখানে মিথ্যার সুযোগ কোথায়? কেউ কেউ বলতে পারেন, আল্লাহ্ তো নিজের নামে কসম করবেন না, তাই অন্য বস্তুর নামে করছেন। এটাও সত্য নয়। অনেক সুরায় (যেমন, সুরা শামস, সুরা লাইল, সুরা বুরুজ) তিনি নিজের নামেও শপথ করেছেন। এখানে ব্যাখ্যা কি দাঁড়াবে? একই সাথে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী? ১৯৭১ সালে যারা আল্লাহ্র নামে শপথ করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, যারা পতাকা ছুঁয়ে দেশকে স্বাধীন করার শপথ নিয়েছিলেন, তারাও কি মিথ্যাবাদী? জেল থেকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি পড়েছি, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ্ আছেন। সত্যের জয় হবেই।` তিনিও কি মিথ্যা কথা বলছেন?
কোরআন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আল্লাহ্ যখন মানুষকে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছেন, তখন সেই বিষয়ের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য শপথ করছেন। যেমন, তিনি যখন বলছেন, মানুষ খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন কালের শপথ করছেন (যেমন, সুরা আসর)। আবার নক্ষত্রলোকে ভ্রমণের (মেরাজ) বর্ণনায় নক্ষত্রের শপথ করছেন (যেমন, সুরা নাজম)। যখন কোরআনের গুরুত্ব বর্ণনা করছেন, তখন কোরআনের শপথ করছেন (যেমন, সুরা সাদ, সুরা ইয়াসিন, সুরা যুখরুফ, সুরা দুখান, সুরা কাফ, সুরা তূর ও সুরা কালাম)। তাফসিরকারকদের মতে, এগুলি প্রচলিত অর্থে শপথ নয়। এগুলি সাক্ষ্য। মানুষকে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মানুষেরই জন্য সৃষ্ট বস্তুর সাক্ষ্য। এটা দিয়ে তিনি তাঁর কথার গুরুত্ব বুঝাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য তাতে তো রয়েছে নিদর্শন।`(সুরা জাছিয়া, ১৩)। কোরআনে আরও উল্লেখ আছে, ‘‘পরন্তু আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তার মাধ্যমে। তিনি তা অবতীর্ণ করেছেন নিজ জ্ঞানে এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।` (সুরা নিসা, ১৬৬)।
সবচেয়ে মজার কথা হলো, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মেরাজের কথা যে শুধু কোরআনেই আছে, তা কিন্তু নয়—বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও আছে। তিনি যে আল্লাহ্র নবী বা অবতার, তাঁর নাম যে ‘মুহাম্মদ` এবং ‘আহমদ`—তা-ও উল্লেখ আছে। যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা নিচের Reference দেখতে পারেন—
(১) ভবিষ্য পুরাণ, প্রতিসর্গ পর্ব, ৩য় খণ্ড, ৩য় অধ্যায়, মন্ত্র-৫-২৮, ৪১৯ পৃঃ হিন্দী অনুবাদক পণ্ডিত শ্রীরাম শর্মা আচার্য, National Library, Calcutta
(২) শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, উপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র অনূদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলিকাতা, প্রথম স্কন্ধ, পরমেশ্বরের আকার ও অবতার কথন, পৃঃ ৭ এবং দ্বাদশ স্কন্ধ, অথ কলিধর্ম কথন, পৃঃ ৮৫৮
(৩)কল্কিপুরাণ, তৃতীয়াংশ, ২১ অধ্যায়, শ্লোক-৩৯, দ্বিতীয়াংশ, একাদশ অধ্যায়, শ্লোক-৫, প্রথমাংশ, তৃতীয় অধ্যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্লোক, দ্বিতীয়াংশ, প্রথম অধ্যায়, শ্লোক-২৩, তৃতীয় অংশ, ষোড়শ অধ্যায়, শেষ অধ্যায়, ১ম সুক্ত এবং প্রথমাংশের ৩য় অধ্যায়, ২৫ শ্লোক
(৪) সামবেদ-সংহিতা, পরিতোষ ঠাকুর অনূদিত, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, দ্বিতীয় অধ্যায়, ঐন্দ্র কাণ্ডঃইন্দ্রস্তুতি, চতুর্থ খণ্ড, মন্ত্র-১৫২ ও ১৫০০ এবং প্রথম অধ্যায়, সপ্তম খণ্ড, মন্ত্র ৬৪, পৃঃ ৬
(৫) ঋগ্বেদ-সংহিতা, রমেশচন্দ্র দত্ত অনূদিত, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, ৮ম মণ্ডল, ৬ষ্ঠ সুক্ত, মন্ত্র-১০,
(৬) অথর্ববেদ-সংহিতা, শ্রীবিজনবিহারী গোস্বামী অনূদিত, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, ২০ কাণ্ড, ঊনবিংশ সুক্ত, মন্ত্র-১ এবং ২০তম কাণ্ড, ৯ম অনুবাক, ৩১ সুক্ত, মন্ত্র-২
(৭)) যজুর্বেদ-সংহিতা, ১ম কাণ্ড ৭ম প্রপাঠক ৪ মন্ত্র, পৃঃ ৩৪১-৩৪২
(৮) Gospel of Buddha by Carus, পৃঃ ২১৭ ও ২৫৪
(৯) Muhammad in the Buddhist Scriptures, p. 15, 64 and 79
(১০) Warren, পৃঃ ৭৯
(১১) The Dhammapada, S.B.E., Vol X, p. 67 ও Vol XI, p. 64
(১২) Saddharma-Pundrika, S.B.E., Vol XXI, p. 225)।
(১৩) The Life and Teachings of Buddha, Anagarika Dhammapada, p. 84
(১৪) Romantic History of Buddha by Beal, p. 237 and 241
(১৫) Taka Kusu, p. 213
(১৬) জিন্দাবেস্তা, প্রথম পরিচ্ছেদ
(১৭) Deuteronomy, 18-18, The Books of Old and New Testament, Printed in Great Britain
(১৮) Old testament, Song of Solomon chapter 5 verse 16:, “Hikko Mamittakim we kullo Muhammadim Zehdoodeh wa Zehraee Bayna Jerusalem.” অর্থ ‘His mouth is most sweet: yea, he is Muhammad. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem.”
(১৯) St. John, 14-16
(২০) Sir William Muir, Life of Mohamedt (Abridge Edition), Page 164
(২১) বেদ ও পুরাণে আল্লাহ্ ও হযরত মোহাম্মদ, মূল রচনাঃ ধর্মাচার্য ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, রিসার্চ স্কলার, প্রয়াগ বিশ্ববিদ্যালয়, এলাহাবাদ, ভারত। অনূবাদঃ অধ্যাপক ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রাক্তন অধ্যাপক, পঞ্চানন সংস্কৃত বিদ্যামন্দির, শিবপুর, হাওড়া, ভারত) ও ডঃ গৌরী ভট্টাচার্য (অধ্যাপক, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়), কলিকাতা।
ইতিহাস ও গবেষণাসূত্রে জানা যাচ্ছে, ঋগবেদের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০-১৫০০ শতাব্দীতে (সূত্রঃ Stuart Piggot, Prehistoric India, Chapter VII এবং ঋগ্বেদ-সংহিতা, রমেশচন্দ্র দত্ত অনূদিত, ‘ঋগ্বেদ পরিচয়` অংশ, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, পৃঃ ৪৫-৪৬)। ঋকবেদের দুই থেকে তিন শতাব্দীর মধ্যে পরবর্তী তিনটি বেদ রচিত হয়। ডা. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের মতে, ‘ধর্মের মূলভিত্তি বেদ। ঋকবেদ অর্থাৎ ঋকসংহিতা জগতের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ, যা তিলকের মতে ৪৫০০ খ্রিঃপূর্বে রচিত।’ (সূত্রঃ ডা. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস, পৃ: ৪৪)। উপনিষদের রচনাকাল হলো, খ্রিস্টপূর্ব দশম শতকে (সূত্রঃ ঋগ্বেদ-সংহিতা, রমেশচন্দ্র দত্ত অনূদিত, ঋগ্বেদ পরিচয়, ড. হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, পৃঃ ৩৫)। গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন খ্রিঃপূঃ ষষ্ট শতকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্তমান নেপাল ও বিহারের সীমান্তবর্তী রাজ্যে (সূত্রঃ ঋগ্বেদ-সংহিতা, রমেশচন্দ্র দত্ত অনূদিত, ‘ঋগ্বেদ পরিচয়` অংশ, পৃঃ ৩৪)। অন্য এক স্থানে আছে, `Five hundred and sixty years before Christ a religious reformer appeared in Bengal-Buddha’।(সূত্রঃ Buddha and Early Buddhism)। বুদ্ধদেব প্রায় ৪৫ বছরকাল ধর্মপ্রচার করেন এবং খ্রিঃপূঃ ৪৮৩ অব্দে দেহত্যাগ করেন। ইহুদী ধর্মের প্রবর্তন হয় প্রাচীন মিশরে। এই ধর্মের প্রবর্তকের নাম মোজেস যিনি মুসলমানদের নিকট হযরত মুসা (আঃ) নামে পরিচিত। মিশরের রাজা ফেরাউনের রাজত্বকালে মোজেসের আবির্ভাব ঘটে। জরথুস্ত্র ধর্মের প্রবর্তক জরথুস্ত্র পারস্যের পূর্বাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রবর্তিত ধর্মমতকে সাধারণভাবে পার্সী ধর্ম বলা হয়। যিশু ইসরাইলের জুদিয়া রাজ্যের বেথেলহেম নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম জোশুয়া; জিসাস ক্রাইস্ট বিদেশী নাম। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে তাঁর সময়কালের ব্যবধান ছয়শত বৎসর (সূত্রঃ Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ২২৪)।
জনাব ভবঘুরে লিখেছেন, ‘জেরুজালেম থেকে মক্কার সোজা বিমান উড্ডয়ন দুরত্ব হলো ১,২১৫ কি. মি.।আর স্থল পথ দুরত্ব নিশ্চয়ই ১,৩০০ কি. মি. এর নীচে হবে না। সেই কালে কঠিন ও দুর্লঙ্ঘ এত বিরাট দুরত্ব অতিক্রম করে মানুষ সচরাচর জেরুজালেম থেকে মক্কা বা মক্কা থেকে জেরুজালেম যেত না। সে কারণে মক্কাতেও জেরুজালেম আগে গেছে এরকম মানুষ না থাকার সম্ভাবনাই বেশী ছিল। তার মানে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ কোথায় আছে তা দেখতে কেমন তা জানার মত লোক মক্কাতে ছিল বলে বিশ্বাস করা কঠিন। অন্য কথায়, আল-আকসা নামের মসজিদ বা মন্দির-এর বাস্তব অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না তা কেউ জানত না।` এই যদি হয় ৬২১ খ্রিস্টাব্দের মক্কা ও জেরুজালেমের অবস্থা, তাহলে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতাব্দীর ভারত ও খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ট শতাব্দীর নেপালে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মেরাজের বৃত্তান্ত গেল কিভাবে? এই দুই দেশ ছাড়াও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের ৬০০ বছর পূর্বের বেথেলহেম, হাজার বছর পূর্বের মিসর এবং পারস্যে তাঁর নাম, জীবনবৃত্তান্ত ও মেরাজের বিবরণ গেল কিভাবে? তিনি কি তাঁর জন্মের আগেই ঐ সকল কিতাবে এসব লিখে এসেছিলেন?
মেরাজ এমন একটি ঘটনা, যা বর্তমান বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। হয়তো এমন একটি দিন আসবে, যেদিন ভবিষ্যতের বিজ্ঞান এর যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে সক্ষম হবে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এরকম ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। দ্বাদশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, ‘সূর্য স্থির নক্ষত্র।` ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রমাণিত হয়েছে, সূর্য একটি গতিশীল নক্ষত্র। পূর্বে বলা হয়েছিল, সূর্যের আলো ব্যতিরেকে সালোক সংশ্লেষণ (Photosynthesis) হয় না। এখন আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, অন্ধকারেও Photosynthesis ঘটতে পারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান Closed Bing Bang Theory দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মহাকর্ষ শক্তির (Gravitational Force) প্রাবল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মহাবিশ্ব একটি বিন্দুতে এসে Closed হয়ে যাবে। বিজ্ঞান এভাবেই Trial and Error-এর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। বিজ্ঞান যখনই নতুন কোন বস্তু বা শক্তির সাথে পরিচিত হয়েছে, তখন দেখেছে, প্রচলিত পরিমাপের একক দিয়ে তাকে পরিমাপ করা যাচ্ছে না। ফলে, প্রতিবারই এমন ঘটেছে যে, বিজ্ঞান আগে কোন একটি নির্দিষ্ট শক্তি বা বস্তুর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, তারপর তার পরিমাপের একক আবিষ্কার করেছে। যেমন, আলোকের ঔজ্জ্বল্য পরিমাপের একক ক্যাণ্ডেলা, তাপমাত্রা মাপার জন্য ফারেনহাইট, বিদ্যুৎ পরিমাপের জন্য ভোল্ট এবং মহাজাগতিক দূরত্ব মাপার জন্য আলোকবর্ষ ইত্যাদি। মেরাজও সেরকম বিজ্ঞানের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। এরকম নতুন অভিজ্ঞতা বিজ্ঞানের আরও আছে, যার ব্যাখ্যা বর্তমানে দেয়া যাচ্ছে না। যেমন, Bing Bang বা বৃহৎ বিস্ফোরণ। এই বৃহৎ বিস্ফোরণের পূর্বে মহাবিশ্বের কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ, ‘বৃহৎ বিস্ফোরণে এসে সকল Scientific Theory ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতাও। আমরা যদি জানতে পারি, বৃহৎ বিস্ফোরণের পরে কি ঘটেছিল, তাহলেও আমরা তার আগে কি ঘটেছিল তা নির্ধারণ করতে পারি না। শুধু কল্পনা করতে পারি, অতীতের যে কোন কালে ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।` (সূত্রঃ পূর্বোক্ত, Chapter-I: Our Picture of the Universe and Chapter-III: The Expanding Universe http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।
গোঁড়ামী যে ধর্মের একচেটিয়া জিনিস নয়, এটি যে নাস্তিকদের মধ্যেও থাকতে পারে, এটা আমরা প্রথম জানতে পারি মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘The bigotry of the nonbeliever is for me nearly as funny as the bigotry of the believer`. অর্থাৎ ‘আস্তিক ও নাস্তিক উভয়েরই গোঁড়ামী আমার কাছে সমান হাস্যকর।` (Letter to Rabbi Solomon Goldman of Chicago’s Anshe Emet Congregation, http://en.wikiquote.org/wiki/Albert_Einstein)। আর বর্তমান সময়ের প্রগতিবাদী লেখক-বুদ্ধিজীবী যতীন সরকার তাঁর ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন` বইতে এই গোঁড়া নাস্তিকদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন, তাদের চিহ্নিত করেছেন প্রগতির শত্রু হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের আশেপাশে এ রকম দায়িত্বশীল বস্তুবাদী আস্তিকদের খুব বেশি সংখ্যায় আমরা দেখতে পাই না। বরং খুব কম সংখ্যায় হলেও দেখা পাই এমন কিছু স্বঘোষিত নাস্তিকের যাঁদের বৈদগ্ধের ও অবিশ্বাসের অহংকার আছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে বিশ্বাস ও স্থির প্রত্যয় নেই, লোকসাধারণের ভাব-ভাবনার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ নেই এবং কোনরূপ সামাজিক দায়িত্ববোধও নেই। এঁদের দেখাদেখি যাঁরা নাস্তিকতার ফ্যাশনে আক্রান্ত হন, তাঁরা তো আরও ভয়ংকর। এই ভয়ংকরেরাই দায়িত্বহীন কথাবার্তা ও আচরণ দিয়ে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদীদের পথচলাকে সুগম করে দেন। ফ্যাশনদুরস্ত নাস্তিকদের স্থুল যুক্তি ও বাহ্যিক আচরণগুলিকেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদী ও মৌলবাদীরা আরও স্থুলভাবে লোকসাধারণের কাছে উপস্থাপন করে এবং তার ফলে লোকসাধারণ ধর্মধ্বজীদের মিত্র বলে গ্রহণ করে বিজ্ঞানসম্মত ধ্যান-ধারণার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখে।` (সূত্রঃ যতীন সরকার, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, নাস্তিকতা-মুর্দাবাদ, বিজ্ঞানচেতনা-জিন্দাবাদ, শোভা প্রকাশ, ঢাকা, পৃঃ ১২৬)।
যতীন সরকারের কথাগুলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। এ কারণে যে, আমাদের সমাজে এমন একদল বর্ণচোরা নাস্তিকের আবির্ভাব ঘটেছে, যাদের সাথে ধর্মান্ধ মৌলবাদের বিস্ময়কর আঁতাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের সমাজে একদল ধার্মিক ও একদল অধার্মিক আগেও ছিলেন। যারা অধার্মিক, তাঁরা ধর্ম মানতেন না, ধর্ম-কর্মও করতেন না। তাঁরা নানা মাধ্যমে তাঁদের বিশ্বাস তুলে ধরতেন, কিন্তু অন্যের বিশ্বাসকে আক্রমণ করতেন না। কারও চরিত্রও হনন করতেন না। যা বলার তা শিল্পের ভাষায়, সাহিত্যের ভাষায় বলতেন। যাদের বুঝার তারা বুঝে নিতেন। যেমন, কাজী আবদুল ওদুদ, আরজ আলী মাতব্বর। তাঁরা মোল্লাতন্ত্রের কাছে ‘কাফের` ফতোয়া পেয়েছেন। কিন্তু জনসমর্থনও পেয়েছেন। প্রাকৃতজনের ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে গোঁড়ামী ছিল না। আবার শিক্ষিত ধার্মিক শ্রেণীর কাছে মোল্লাতন্ত্রের জায়গা ছিল না। ফলে উভয় দলের (ধার্মিক ও অধার্মিক) মধ্যে সহাবস্থান ছিল। সে সময় জঙ্গীবাদ ছিল মিশরে, মধ্যপ্রাচ্যে। মৌলবাদ ছিল ইউরোপে। সেখানে ‘ব্লাসফেমি আইন` ছিল, এখনও আছে। আরও পরে জঙ্গীবাদ এসেছে আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন জঙ্গীবাদ ছিল না। তাহলে এই জঙ্গীবাদ বাংলাদেশে কখন ঢুকল?
এটা জানতে হলে পেছনে তাকাতে হবে। দেখতে হবে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ কখন ঢুকল, কার কারণে ঢুকল। এটা জানা আমাদের জন্য জরুরী। কারণ এ ঘটনা বেশিদিন আগে হয়নি। নব্বইয়ের দশকে হয়েছে। একজন ‘নারীবাদী` লেখিকা সর্বপ্রথম ‘আল্লাহ্`, ‘রাসুল` ও ‘কোরআন` সম্পর্কে কুৎসিত ও অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ শুরু করেন। এভাবে তিনি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হাতে ইস্যু তুলে দেন। যারা নজরুল ও ইকবালকে কাফের ফতোয়া দিয়েও জনসমর্থন পায়নি, তারা জনসমর্থন পেতে শুরু করে, ‘ব্লাসফেমি আইন` তৈরীর দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে। এই লেখিকা কৌশলে এ আন্দোলনকে আরও উস্কে দেন। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু মৌলবাদী গোষ্ঠীর আক্রমণে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে। তসলিমা বাংলাদেশের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে একটি উপন্যাস লেখেন, যার নাম ‘লজ্জা`। এ উপন্যাস হিন্দু-মুসলিম উভয় মৌলবাদকেই সহায়তা যোগায়। বাংলাদেশের ধর্মান্ধশ্রেণী নতুন রাজনৈতিক ইস্যু পেয়ে যায়, আগে যেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না, সেখানেও প্রবেশাধিকার লাভ করে। ওদিকে ভারতের মৌলবাদী দল ‘বিজেপি` বইটি লুফে নেয়। তারা বইটির হাজার হাজার কপি ছাপিয়ে বিতরণ করে। বিজেপির হিন্দী ও ইংরেজী মেনিফেস্টোতে ‘লজ্জা`র অনুবাদ অন্তর্ভুক্ত হয়।` (সূত্রঃ তসলিমার ‘লজ্জা` ও বিপন্ন সময়, অশোক চট্টোপাধ্যায়, তসলিমা নাসরিনের স্বরূপ সন্ধানে, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৪২-৪৬)। যার ফল তারা হাতেনাতে পায়। ভারতের পরবর্তী নির্বাচনে তারা বিপুল ভোটে ক্ষমতাসীন হয়। বিজেপি সরকারের কর্মকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশের ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আরও নতুন নতুন ইস্যু পায়। ততদিনে তসলিমার কাতারে আরও নতুন লেখক এসে যোগ দেন। তারাও ধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসিত ও উস্কানিমূলক লেখা শুরু করেন। তাতে ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী হয়। শেষ পর্যন্ত যা কেউ কল্পনাও করেনি, তা ঘটে। রাষ্ট্রক্ষমতার এক অবিশ্বাস্য পালাবদল ঘটে। বাংলাদেশের পরজীবী ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ী শক্তি অন্যের ঘাড়ে চড়ে প্রথমবারের মত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়। তারপর যা হওয়ার, তা-ই হয়। বাংলাদেশেও জঙ্গীবাদ ঢুকে পড়ে। শায়খ, মুফতী ও বাংলা ভাইদের উত্থান ঘটে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কিছু স্বঘোষিত গোঁড়া নাস্তিক্যবাদীর হঠকারিতায় বাংলাদেশ আজ আফগানিস্তান হওয়ার স্বপ্নও দেখছে!
‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` লেখাটি পড়লে মনে হবে ‘মেরাজ` যে সত্য নয়, এটা প্রমাণ করাই এখন সময়ের দাবী। এটাই অগ্রাধিকার। ১৪০০ বছর ধরে এরকম একটি জিনিস বিশ্বাস করার কারণেই আজ পৃথিবীর এই দূরবস্থা! চারদিকে এত মৃত্যু, এত শোষণ, এত বঞ্চনা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, পররাজ্য দখল, সম্পদ লুণ্ঠন, বিশ্বায়নের নামে আন্তর্জাতিক মহাজনশ্রেণীর আধিপত্য—সবকিছুর মূলে এই মেরাজ! তাই যে করেই হোক, মিথ্যা যুক্তি দিয়ে, ভুল উদ্ধৃতি দিয়ে, অসত্য, অর্ধসত্য ও বিকৃত তথ্য দিয়ে এবং স্ববিরোধিতা দিয়ে হলেও এই ঘটনাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে হবে। তাতেই সব ঝামেলা জাদুর প্রদীপের মত উধাও হয়ে যাবে! কিন্তু অন্যের চরিত্রহনন করতে গিয়ে আমারও যে চরিত্রহনন হচ্ছে, মিসেস উইলিয়ামের মত অবস্থা হচ্ছে—সে খেয়াল কি আছে? মিসেস উইলিয়ামের একটি কৌতুক আছে, সেই কৌতুক দিয়েই লেখাটা শেষ করছি—
মিসেস উইলিয়াম আদালতে গেছেন তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে।
আদালত জানতে চাইল, ‘আপনার অভিযোগ কি?`
মিসেস উইলিয়াম বললেন, ‘আমার স্বামীর চরিত্র ভাল না।`
‘কিভাবে বুঝলেন?`
‘আমার একটা বাচ্চাও তার মত না।`
এ কারণেই আমি মনে করি ‘মুক্তমনা` ব্লগে এমন কোন লেখা প্রকাশ করা সমীচীন নয়, যা প্রকারান্তরে মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতার হাতকেই শক্তিশালী করবে। যেমন করেছে আগেও।
ব্লগের সকলের প্রতি একরাশ শুভকামনা।
লেখক পরিচিতিঃ কবি, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ১২ (বারো)।
এখানে অনেকেই (শুধু এখানে না, মুক্ত মনার অনেক প্রবন্ধে বা মন্তব্যে) যেসব reference ব্যাবহার করেন তা গ্রহণযোগ্য না। Stephen Hawking একজন মেধাবি পদার্থবিদ, কিন্তু তিনি পৃথিবী তে একাই পদার্থবিদ নন, আর অনেকেই আছেন, যারা laymen/general public এর জন্য লেখালেখি করেন না। A brief history of time কিংবা Grand design পড়ে আমরা অনেকেই মনে করি আমরা সব পদার্থবিদ্যা বুঝে গিয়েছি, এবং এইসব বই কে quote করি যখন তখন। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকলেও Hawking আর অন্য অনেক মেধাবি পদার্থবিদের মতই একজন। তিনি যা বলছেন তা সত্য, এমন কিছু নয়। তাঁর থিওরির বিরুদ্ধেও অনেক পাল্টা যুক্তি আছে যা পদার্থবিদ্যার জ্ঞান ছাড়া সাধারণত পড়ে বোঝা সম্ভব নয়। এখানে আমি engineering এর ছাত্ররা যা পদার্থবিদ্যা পড়ে তার কথাও বলছি না। আরো উচ্চতর থিওরির কথা বলছি।
Wikipedia ও গ্রহণযোগ্য reference নয়। তেমনি ভাবে random youtube video ও গ্রহণযোগ্য নয় reference হিসেবে। অনেক মানুষ কে বলতে ইচ্ছা করছে যে – মন্তব্য করার আগে পড়াশুনা করে আসুন নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে। নাহলে শুধুই তর্ক করার খাতিরে মন্তব্য না করে সময় টা কে অন্য কাজে লাগান, তাতে আমরা যারা মন্তব্য গুলো পড়ছি তাঁদের সময় বাঁচবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@ড হারুন,
ঠিক।নামের সংক্ষেপ বহুরকমের তো হতেই পারে।আগে ‘ড’ বর্ণ স্থাপন করলে অনেকেই ভেবে নিতে পারেন আপনার একটি ডক্টরেট ডিগ্রী রয়েছে।এ ‘অনুমান’ আমাদের অভিজ্ঞতালব্ধ, সেজন্যেই ভবঘুরে জানতে চেয়েছিলেন আপনার পিএইচডি কি বিষয়ে।সেটাকে আপনি তাচ্ছিল্য ভেবে নিলেন। এবং ভবঘুরেকে সরাসরি প্রতিবাদও জানালেন না এ ব্যাপারে (কনফিউশন এড়ানো যেতো তখনি জানালে), যেমনটা আমাকে জানালেন এবারে।
যদি অনুমান করে ধরেই নি’ আপনি একজন ডক্টরেট, সেক্ষেত্রে আপনার গবেষণার বিষয় কি ছিলো এটা জানতে চাইলে কি তাচ্ছিল্য করা হয়? এটাই আমার বোধগম্য হচ্ছিলোনা আর কি।
আর অনুমাননির্ভর কথা বলা তো সমস্যার কিছু নয়, যখন আমার হাতে তথ্য অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে আসার পর সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারলে/ সত্যিটাকে মেনে নিলেই তো হলো! যদি তারপরো আমি নিজ সিদ্ধান্তে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকি তবেই মুশকিল!
সে যাক।আমার কোন বক্তব্যে আপনি আহত বোধ করেছেন (যা উদ্দেশ্যমূলক ছিলোনা), এটাই মূল কথা।আমার পক্ষ হতে আন্তরিক দুঃখবোধ জানবেন।
কোরান অবশ্যই একটি বিজ্ঞানময় কিতাব। যারা বলে কোরানের সাথে বিজ্ঞানের সংঘাত আছে তারা বিজ্ঞান ও কোরানের কিছুই জানেনা। কোরানে কয়েকটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের উদাহরণ;
ক) বৌ পেটানো ৪;৩৪
বৌ পেটানো বিজ্ঞান সম্মত, কারণ মাইরের মধ্যে ভিটামিন আছে। স্বামীকে পেটানোর দরকার নেই। কারণ সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পুরুষেরা অপেক্ষাকৃত বেশী বলশালী হয়ে থাকে। তাই তাদের বাড়তি মারের ভিটামিনের দরকার নেই।
খ) ৫৯;৫
হে মুমিনগণ তোমরা কতক খেজুর গাছ কাটিয়াছ, কতক কাট নাই। এ কাজ করিয়াছ আল্লার সম্মতিতে, এ দ্বারা তিনি কাফেরগণে অপমানিত করেন।
এর মানে কারো সাথে শত্রুতা থাকলেই তাদের গাছ কেটে ফেলতে হবে। তাহলেই তারা একটি গাছের স্থলে দুটি গাছ লাগাবে।এতে করে পরিবেশ রক্ষা হবে। নিশ্চই আল্লা পরিবেশ-বিজ্ঞানীও।
গ) ৬৭;৩,৫
যিনি করিয়াছেন সাত আসমান স্তরে স্তরে বিন্যস্ত। আমি শোভিত করিয়াছি নিম্নস্তরের আকাশ প্রদীপমালা দ্বারা এবং তা শয়তান বিতাড়ক রূপে ব্যবহার করি।
এ থেকেই মানুষ শিখেছে বহুতল ভবন কীভাবে বানাতে হয় ও ক্ষেপনাস্ত্র কীভাবে বানাতে হয়।
ঘ) আদমের মূর্তি মাটি দিয়ে বানিয়ে তাতে আল্লা ফুঁ দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। এ থেকেই ত বিবর্তনবাদের আবিষ্কার।
ঙ)তিনি বিভিন্ন জিনিসের কসম খেয়েছেন। সবাই যদি তার মত করে খাবার না খেয়ে কসম খায় তাহলে খাদ্যের উপরে চাপ কমবে ও খাদ্য সংকটের নিরসন হবে ইনশাল্লাহ।
চ)৭৮;৭
আমি পাহাড়সমূহকে পেরেকরূপ করি নাই? পৃথিবীকে পাহাড় দিয়ে চাপা দেয়া হয়েছে তাই তা হেলে পড়ে না।
এ থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছে মধ্যাকর্ষণ সূত্র।
ছ) ৮;৪১
গনীমতের যাবতীয় কিছুর এক পঞ্চমাংশ আল্ললা ও রাসুলের, রাসুলের স্বজনদের,
গনীমতের মাল ভাগাভাগি করতে করতেই ত মানুষ গণিতশাস্ত্রএ দক্ষতা অর্জন করবে।
জ)৫;৩৮ চর ও চুরনীর হাত কেটে দাও।
মানুষের হাত পা কাটতে কাটতেই ত মানুষ সার্জারী করতে শিখবে। আল্লাপাকও ত একজন বিশিষ্ট সার্জন। তিনি আদমকে এনেসথেশিয়া করে তার হাড় বের করে সেই হাড় দিয়েই ত হাওয়াকে বানিয়েছেন। তাছাড়া মোহাম্মদেরও ওপেনহার্ট সার্জারী করেছিলেন সাফল্যের সাথে।
ঝ) ৭৬;১৯ সেথায় থাকিবে চির কিশোর বালকগণ, তাদিগে দেখিলে বিক্ষিপ্ত মোতি বলিয়া মনে হইবে। তিনি খুবই উদার মনের। তাই স্বর্গে গে দের জন্য সমকামীতার ব্যবস্থা রেখেছেন।
ঞ)৪৭;১৫
স্বর্গে মদের নদী ও বিভিন্ন রকমের পানীয়ের নদী রয়েছে। স্বর্গবাসীদেরকে সাঁতার শেখানো হবে যা সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি উত্তম।
@তামান্না ঝুমু, কোরআনের উপদেশমূলক আয়াতগুলোকে (আগের ও পরের আয়াত বাদ দিয়ে) বিকৃতভাবে উদ্ধৃত করে সেখানে ‘বিজ্ঞান` যখন আবিষ্কার করতে পারেন, তাহলে কোরআনের বিজ্ঞান সংক্রান্ত আয়াতগুলোও তো খুঁজে পাওয়ার কথা। আমার মূল প্রবন্ধে সেগুলোর উল্লেখও আছে। কিন্তু তা না করে কি কোরআনের নিচের কথাগুলোকে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন?
‘(তারা) বধির, বোবা ও অন্ধ, অতএব তারা ক্ষান্ত হবে না ও তারা বুঝবে না।‘ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮)।
‘তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসেছে। সুতরাং কেউ তা দেখলে তার দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ না দেখলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি তোমাদের সংরক্ষক নই।` (সুরা আনআম, আয়াত ১০৪)।
অবশ্য এই কথাগুলোই Stephen Hawking তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ ‘Grand Design`-এ বলেছেন একটু অন্যভাবে। উপরে আমার একটি মন্তব্যের সাথেই সেগুলো পাবেন। পড়ে দেখুন। ধন্যবাদ।
@শাহেদ ইকবাল,
কোরান অলরেডিই একটা বিকৃত রুচিপূর্ণ গ্রন্থ। একে বিকৃত করে এর চেয়ে আর জঘণ্য কিছুতেই বানানো যাবেনা। পুরো আয়াত না উল্লেখ না করে যদি আমি কোরান বিকৃত করে থাকি আপনি উল্লেখিত আয়াতগুলো পুরো উল্লেখ করে তাদের গুণমহিমা বর্ণনা করুন।
যারা বধির তারা যদি না শুনে এ কিতাব নাজিলের কারণ কি? আল্লাই ত বলেছেন তাদের মনে তিনি সীলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজে মানুষের হৃদয় সীল করে দিয়ে আবার তাদের বধির ব’লে গালি দিচ্ছেন কেন? মনেপ্রাণে বিশ্বসীরা কোরানের অনুবাদ পড়ে অবিশ্বাসী হয়ে যায় কীভাবে?
তারা ক্ষান্ত হবেনা জানলে এত মারামারি কাটাকাটি কীসের জন্য? তাদেরকে ক্ষান্ত করার জন্য ত তিনি আসমান থেকে ৩০০০ ফেরেস্তা পাঠিয়েছিলেন!তিনি সন্ত্রাসী নেতাদের মত অস্ত্র ও মাস্তান সাপ্লাই দিয়ে থাকেন তাহলে!
যারা লাভবান হবে তারা পরম আরামে মদের নদীতে সাঁতার কাটবে ও হুরি ধর্ষণ করবে। যেমন; মোহাম্মদ,আলী,আবু বকর,উসমান প্রমূখ।যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা গলিত পুঁজ ও গলিত সীসা খাবে। যেমন; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,মেরী কুরী,আইনস্টাইন প্রমূখ।
@তামান্না ঝুমু, Stephen Hawking-এর সর্বশেষ গ্রন্থ ‘Grand Design` পড়ুন। এরিক ফন দানিকেনের ‘আবির্ভাব` পড়ুন। সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। যে কথাগুলো কোরআনে পড়লে ভাল লাগে না, সে কথাগুলো ওখানে পড়তে কেমন লাগে দেখুন। Stephen Hawking বলেছেন, ‘মহাবিশ্বের সকল ঘটনাপ্রবাহ গণিতবিদ John Conway-এর ‘Game of Life`-এর মতই আগে থেকে configuration করা আছে। এগুলো পূর্ব নির্ধারিত। ১৯৭০ সালে ক্যাম্ব্রিজের তরুণ গণিতবিদ John Conway ‘Game of Life`নামে একটি Game তৈরি করেন। এই খেলা শুরু করলে সেই Game নিজেই বলে দেবে ভবিষ্যতে কি ঘটবে। (Grand Design, p 267-279)। আর এরিক ফন দানিকেনের ‘আবির্ভাব`-এ মানুষের বহির্জাগতিক যোগাযোগ ও দিব্যদর্শনের পক্ষে সকল প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানেও বলা হয়েছে, মহাবিশ্ব ও মানবজীবন আগে থেকে নির্ধারিত। আইনস্টাইন বলেছেন, ঈশ্বরের কাছে হাজার বছর ও হাজার ডাইমেনশন এক সমান। তাহলে তিনি সব অগ্রিম জানবেন না কেন?
আইনস্টাইন ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে কি বলেছেন, সেটা আগে দেখুনঃ
‘Try and penetrate with our limited means the secrets of nature and you will find that, behind all the discernible concatenations, there remains something subtle, intangible and inexplicable. Veneration for this force beyond anything that we can comprehend is my religion. To that extent I am, in point of fact, religious`.
(Source: Response to atheist Alfred Kerr in the winter of 1927, who after deriding ideas of God and religion at a dinner party in the home of the publisher Samuel Fischer, had queried him “I hear that you are supposed to be deeply religious” as quoted in The Diary of a Cosmopolitan (1971) by H. G. Kessler)
‘I see a clock, but I cannot envision the clockmaker. The human mind is unable to conceive of the four dimensions, so how can it conceive of a God, before whom a thousand years and a thousand dimensions are as one?`
(Source: From Cosmic religion: with other opinions and aphorisms (1931), Albert Einstein, pub. Covici-Friede. Quoted in The Expanded Quotable Einstein, Princeton University Press; 2nd edition (May 30, 2000); Page 208, ISBN 0691070210)
ঈশ্বরচন্দ্র ও মেরী কুরী সম্পর্কে আপনাদের কি ধারণা? কারও নাম আবদুল জলিল হলেই সে মুসলমান আর উইলিয়াম রোজারিও হলেই খ্রিস্টান? তাহলে বিচার করার জন্য আর আল্লাহ্র দরকার কি? আমরাই তো যথেষ্ট ছিলাম। অন্তরের বিচার করার জন্যই অন্তর্যামীর দরকার হয়। নাস্তিক ও মুশরিক ছাড়া বাকিদের কি হবে তা সুরা নিসা ৩১ আয়াতে উল্লেখ আছে। আর একটা কথা। পৃথিবীর এই স্থুল দেহ নিয়ে কেউ স্বর্গে বা নরকে যাবে না। কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘শোন হে পরিতৃপ্ত আত্মা, নিজ পালনকর্তার দিকেই চলো এবারে। তুমি তাঁর উপরে সন্তুষ্ট, আর তিনিও তোমার উপরে খুশি হয়েছেন। তাই তো তুমি এবারে আমার বান্দাদের দলে শামিল হও। আর আমার জান্নাতেই তুমি প্রবেশ কর।` (সুরা ফজর, ২৭-৩০)। আবারও অনুরোধ করছি কোরআনটা ভাল করে পড়ুন। যদি পড়তে ইচ্ছা না হয়, তাহলে অনুমাননির্ভর মন্তব্য করে নিজের ও অন্যের সময় নষ্ট করে লাভ কি?
খুব জটিল মনে হলো। আরো সহজ ভাবে আলোচনা হলে ভালো লাগতো।
@অতিথি, আপনার অসুবিধার জন্য দুঃখিত। হয়তো আরও সহজ ভাষায় লেখা যেত। তবে একবারে সম্পূর্ণটা না পড়ে কিছু কিছু করে পড়লে আমার মনে হয় আপনার সুবিধা হবে। তবে ওই মন্তব্যে আরও কিছু যোগ করার আছে। শীঘ্রই লিখব আশা করি।
মুক্তমনা তে আমি তেমন frequent না, তবে এই লেখাটির title দেখে পড়তে আগ্রহ বোধ করলাম। আমি মোটামোটি পুরাটাই পড়েছি। দীর্ঘ সময় নিয়ে comments গুলো পড়লাম। কিছু জিনিস নিয়ে মন্তব্য করতে চাই।
শাহেদ ইকবাল বেশ কষ্ট করে লিখেছেন নানা references দিয়ে, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিছু references আমার কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয়নি। পারলে আরো গবেষণা করে বিতর্কিত বিষয় গুলি নিয়ে পুনরায় লিখুন।
আমার কাছে অনেকের মন্তব্যই আক্রমণাত্মক বা তাচ্ছিল্যবহুল মনে হয়েছে। এটা মুক্তমনার spirit কে প্রতিফলন করে না। একটি যুক্তিনির্ভর আলোচনাই আমাদের কাম্য। আশা করি মুক্তমনা কোন group এর প্রতি biased নয় (নাস্তিক কিংবা আস্তিক যাই হোক না কেন), বরং যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত conclusion কে প্রাধান্য দেয়াটাই এর কর্তব্য। যদিও যুক্তি অনেক সময় subjective হয়ে যায়, তখন এক গ্রুপ আরেক গ্রুপ কে কিছু বুঝিয়ে বললেও বোঝাটা কঠিন হয়ে পরে। There are limits to quoting references as evidence, evidences in many cases are highly subjective too. এইটা আশা করি সবাই জানেন ও বুঝেন।
Theory of relativity নিয়ে বেশ কিছু কথা উঠেছে। সময় করে একদিন লিখতে চাই এই ব্যাপারে। এইটুকু শুধু বলে রাখি যে শাহেদ ভাই J W Dunn এর যেই theory উল্লেখ করেছেন এইটা physicists দের মাঝে খুব বেশী গ্রহণযোগ্য নয়, আমার জানা মতে। ভুল হলে ঠিক করে দেবেন আমাকে।
কেউ একজন মন্তব্য করেছেন আলোর গতির কাছে গেলে mass infinity approach করার কথা। শাহেদ ইকবাল আমার ধারণা অনুযায়ী তা answer করেছেন। মনে হয় আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। আমি আমার মত করে বলতে চাই যে space-time geometry তে theory of relativity এখনো একটি incomplete theory. Physics এর অনেক কিছুই আমার কাছে আগের মত fascinating মনে হয় না। Science has its limitations when it comes to matching evidence to theories. Physics সবচেয়ে বড় fundamental বিজ্ঞান, কিন্তু এটা আসলে এখন শিশু রয়ে গেছে। Kuhn এর মতবাদ অনুসারে physicists রাও মানব অনুভূতির উপরে নয়। যুক্তি অনেক সময় মানব অনুভূতি দিয়ে পরিচালিত হয়। অনেকেই হয়ত পড়েছেন, তবে না পড়ে থাকলে আমি The Structure of Scientific Revolutions বই টি পড়ার জন্য অনুরোধ করবো। বড় বড় আবিষ্কার গুলো নিয়ে মাতামাতি করার আগে আমাদের এইসব theory এর limitations গুলো জানতে হবে। এবং এইসব theory এমন করে quote করা যাবে না যা পড়লে ভুল ধারণা হতে পারে যে এই theory ই সত্য। এটা শুধুমাত্রই একটা theory. এখানে যারা physics এর ছাত্র, তাঁরা ভালো করেই জানেন ভিতরে কতো জোড়াতালি দিয়ে একটা so called যুক্তি নির্ভর theory দাড়া করান হয়। কাজেই বিজ্ঞানের প্রতি অগাধ আস্থা রাখাটাও বোকামি। Kuhn এর বইটা যারা পড়েছেন তাঁরা আশা করি জানেন কি করে Kuhn বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আমার কিছু physicists দের সাথে এইসব ব্যাপারে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। একজন এর কথা না বলে পারছিনা। তিনি নাস্তিক হয়েও এই কথা বিশ্বাস করেন যে যদি সত্যিকার অর্থেই কোন alien UFO আমাদের এখানে land করে, এবং aliens রা আমাদের সাথে তাঁদের physics এর theories exchange করে, দেখা যাবে যে তাঁদের থিওরি আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁদের perception অনুযায়ী তাঁদের থিওরি পরিচালিত হবে। তার মানে তাঁদের অনুভূতি বা বিশ্বাস থেকেই তাঁদের যুক্তির কাঠামো তৈরি হবে। নাস্তিকরাও অনুভূতির বাইরে যেতে পারবেননা। নাস্তিক হওয়া মানেও বিশ্বাস স্থাপন করা – অলৌকিক ব্যাপার গুলো কে সাধারণ মনে করার বিশ্বাস। যেই মুহূর্তে কেউ কোন থিওরি তে বিশ্বাস স্থাপন করে, সেই মুহূর্ত থেকে তাঁর যুক্তি ঘোলাটে হতে শুরু করে। এবং নিজের দলের যুক্তিকেই ভারী মনে হতে থাকে। সেই তুলনায় আমার agnostic লোকদেরকে আরো বেশী যুক্তিবাদী মনে হয়। কাউকে ছোট করতে চাই না, শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই এই ব্যাপারটা।
আশা করি একদিন সময় নিয়ে মেরাজ বিষয়ক আমার চিন্তা ভাবনা গুলো লিখতে পারবো। ধন্যবাদ।
@সাকিব,
কথাটা ঠিক বোঝা গেলোনা। অগাধ আস্থাটা তাহলে কিসে স্থাপন করতে বলছেন?
আমি পদার্থবিদ্যা পড়িনি, দু একটা জোড়াতালির উদাহরণ দেবেন? পদার্থবিদ্যায় যদি জোড়াতালি লাগিয়ে কোন তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়, তার জন্য কি আপনি পদার্থবিদ্যা নামক পুরো বিষয়টিকেই বাতিলের খাতায় ফেলে দিচ্ছেন না কি?
পদার্থবিদ্যাসহ পুরো বিজ্ঞান বা মানবজাতির অর্জিত সমস্ত জ্ঞান, যদি শিশু অবস্থায় থেকেই থাকে এখনো অব্দি তাহলে তাকে পরিণত অবস্থায় নিয়ে যাবে কোন্ এ্যাপ্রোচটুকু? জানার অপেক্ষায় রইলাম।
এ মন্তব্যের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলামনা।Kuhn না পড়েও তো বুঝতে পারছি physicist-রাও মানুষ। তা এ আর নতুন কথা কি।
এতক্ষণে আসল কথায় চলে এসেছেন। এই অনুভূতি বা বিশ্বাস থেকেই তো কেউ ঈশ্বরে পৌঁছায়, কেউ বিজ্ঞানে। ঈশ্বর যে মনুষ্যসৃষ্ট বা মনুষ্যকল্পিত এটুকু বুঝতে পদার্থবিদ্যা না জানলেও চলে।
মেরাজ আর আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে বলার জন্য সময় খুঁজে নিন।
অপেক্ষা করছি।
@নূপুরকান্তি,
ভাই, সময়ের অভাবে কথা তাড়াতাড়ি শেষ করবো। যদি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় তাহলে আগে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। Formatting কি করে করতে হয় এই website এ এটা নিয়েও ধারণা কম, তাই আপনার মন্তব্য গুলো নাম্বার করে জবাব দিচ্ছি, সংক্ষেপে। বাংলায় হালকা দুর্বলতার কারণে মাঝে মধ্যে English ব্যবহার করেছি, তার জন্য মাফ করবেন। Reference কিছু জায়গায় দেয়া উচিত ছিল, সময় পাইনি, কাজেই দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করে নিন। 🙂
১, অগাধ আস্থা কিছুতেই স্থাপন করতে বলছিনা। বিজ্ঞানীরাও প্রচলিত বিজ্ঞানে আস্থা স্থাপন করতে ভয় পান। তবে যদি আপনি publications এর পিছে ছোটেন, তাহলে অবশ্য অন্য কথা। নাহলে একজন বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ কিছুই permanently মেনে নিতে পারে না। যদি নিত, তাহলে টানা সারা জীবন research করে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার আর থাকতো না। প্রচলিত বিজ্ঞান কে সত্য হিসেবে ধরে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এটা সত্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। বিজ্ঞান মানুষের একটা রাস্তা যার দ্বারা আমরা প্রাকৃতিক ঘটনা গুলো কে যুক্তি দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করছি, আর কিছুই না। আমি প্রধানত physics এর কথা বলছি। আর ওই যে বললাম, দূর কোন গ্রহের প্রানিদের বিজ্ঞান কিন্তু অনেক different হতে পারে। তাঁরা তাঁদের perception এর লেভেলে চিন্তা করবে এবং তাঁদের যুক্তি অনুসারে mathematical model দাড়া করাবে। আপনার model কি হবে সেটা depend করবে আপনি কি data set নিয়ে কাজ করছেন। একটা flawed data set থেকে অনেক রকম থিওরি দেয়া যায়, তবে নতুন কোন data set আসলে দেখা যায় অনেক প্রচলিত থিওরিও বিদায় নেয়।
২, জোড়াতালি বলতে আমি বুঝিয়েছি অনেক assumptions। যেহেতু আমাদের কাছে প্রায় কোন significant data নাই অনেক field এ (যেমন particle physics, dark matter ইত্যাদি), মাত্র আমরা বড় বড় সব experiment করা শুরু করেছি, যা ৫০ বছর আগের physics এর অনেক থিওরিকে বিদায় দিয়েছে, সেহেতু limited data set থেকে inference তৈরি করা টা বিপদজনক। এবং এই ক্ষেত্রে আমাদের অনেক assumptions বানানো ছাড়া উপায় থাকে না। কাজেই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোন থিওরি কেই permanent মনে করি না। এটা করা আসলেই উচিত নয়।
যেইসব dataset নিয়ে আমরা কাজ করি, তার মধ্যেও অনেক সময় প্রচুর noise থাকে। Astronomer দের নিয়ে physicist দের একটা প্রচলিত কৌতুক হল যে তাঁরা ৫০% uncertainty থাকলেও অনেক খুশী থাকে, কারণ CCD astronomical image data এতই noisy যে এক pixel মধ্যেও ৫ বা ৬ টা noise পয়েন্ট থাকে, যা তাঁরা শুধু কিছু statistical formula এর মাধ্যমে দূর করেন। কাজেই আমরা যখন TV তে সুন্দর সব galaxy animation দেখি, তার অনেক region এ আসলে থাকে synthetic data.
আরেকটি কথা – physics এর অনেক ফরমুলার মূলে আছে statistical inference. 99.9999% particles একভাবে আচরণ করলো, বাকি রা করলো না, এর কারণ কি? অনেকে এটাকে noise বা uncertainty বলে চালিয়ে দেন, এবং প্রচলিত কোন mathematical model এর সাথে data fitting করে বলে দেন যে তার পরীক্ষা সার্থক। অনেকের আবার funding/grant money বজায় রাখতে হবে, এর জন্য paper publish করার তাগিদে মাঝে মধ্যে কেউ কেউ data এদিক ওদিক করেন। কিন্তু আসলেই কি এটা noise/experimental uncertainty? আমার physics এর একজন প্রফেসর এটা বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলতেন যে statistical inference এর সাহায্যে আমরা সত্য এড়িয়ে যাচ্ছি। জেমস গেটস (Uni. of Maryland এর বিখ্যাত String Theorist) এর সাথে একবার কথা হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন যে – “we have really run out of ideas, we need new kind of mathematics to look at the old datasets.” বাইরে থেকে দেখে না বোঝা গেলেও ভেতরে ভেতরে physicist রা ভালই struggle করছেন। Don’t get me wrong, I am a big fan of physics and physicists. কিন্তু ভেতরের কথা কিছু হলেও বেড়িয়ে আসতে হবে।
এখন, কোন approach আমাদের সত্যর দিকে নিয়ে যাবে এইটা জানলে আমি আপনি সবাই দুই একটা নোবেল প্রাইজ নিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম আজকে। সত্য কি এইটা বোঝার জন্যই তো শত শত approach নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে মানুষ, কতো শত বছর ধরে। কোনটা কাজে লাগবে তা তো কেউ জানে না। আদৌ আমরা ঠিক ভাবে আগাচ্ছি কিনা তাই বা কে জানে? উপরোক্ত প্রফেসর আমাকে এটাও বলতেন যে সত্য উন্মোচন করা possible হবে না। একটা এক্সপেরিমেন্ট অনেক থিওরি দিয়েই বর্ণনা করা যায়, সেই থিওরি নিয়ে অনেকদূর যাবার পর দেখা যায় আবার আমরা মুখ থুবড়ে পরি, কারণ অন্য একটা এক্সপেরিমেন্ট এসে সব এলোমেলো করে দেয়। কাজেই আপেক্ষিক সত্য বের করা যায়, কিন্তু কিছুই guarantee দিয়ে বলা যাবে না।
৩, আমি বোঝাতে চেয়েছি যে মানব অনুভূতি যুক্তির পথে একটি বড় বাঁধা। Ptolemy তাঁর data কে কিছু কিছু জায়গায় ভালই manipulate করেছিলেন, যেটা পরে বোঝা যায়। Kuhn তাঁর বই এ মন্তব্য করেছিলেন যে একজন বিজ্ঞানী যা বিশ্বাস করেন তাই দেখতে পান। তার মানে, আপনি যদি বছর এর পর বছর ধরে একটা থিওরি বের করেন, এবং আপনার সামনে relevant data set হাজির করা হয়, আপনার মন যুক্তি কম মানবে, বরং দেখবেন যে যা দেখতে চেয়েছিলেন তাই ই দেখছেন। সবার ক্ষেত্রে এইটা সত্য না, কিন্তু বেশীরভাগ সময় ই এটা সত্য।
৪, এবং হ্যাঁ, তার জন্য বলেছি যে মানব অনুভূতি যুক্তি কে ম্লান করে দেয়। সেই অনুভূতি থেকে আপনি বিজ্ঞান এ পৌঁছান কি ধর্মে পৌঁছান, কোন কিছু তে শক্ত বিশ্বাস তৈরি হলেই আপনার কাছে যেই ‘data set’ ই হাজির করা হোক, আপনার মন আপনাকে যুক্তি দেখাবে আপনার বিশ্বাস থেকে। আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতা, কোনটাতেই শক্ত বিশ্বাস রাখা উচিত কিনা আমি জানি না। যুক্তিবাদী মন হবে খোলামেলা, এবং যেকোনো hypothesis কে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে আমাদের।
ঈশ্বর মানব-সৃষ্ট নাকি এটা সব religious scriptures পড়ে একভাবে interpret করে, এবং বর্তমান সমাজ এ ধর্মের বেহাল অবস্থা দেখেই conclusion এ চলে আসা ঠিক না, আমি মনে করি। এই বিশাল universe এ একটা পয়েন্ট ও না আমরা, প্রায় কিছুই খুঁজে বের করতে পারিনি এখনো। কোন কিছু তে পাকাপোক্ত মন্তব্য করার সময় এখনো আসে নি। আরো বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে। আমি এই ধারণাই পোষণ করি। ধন্যবাদ।
@সাকিব,
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার যুক্তিপূর্ণ উত্তরের জন্য।
বিজ্ঞানের কোন একটি তত্ত্ব বা পদ্ধতি কখনো শেষকথা হতে তো পারেইনা, হলে তো সেটা স্ববিরোধিতা হবে।
কোন প্রশ্ন বা কৌতূহলের একটানা পথের শেষে যদি একটি স্থির, বিশ্বাসী মাইলফলকে আমাদের থেমে যেতে হয় তাহলে আমাদের অগ্রযাত্রাও সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে।
বিজ্ঞানের পথে বহুরকমের মানুষ ক্রিয়াশীল – সেখানে অজানাকে জানার জন্যে যেমন আপোষহীন, সন্তপ্রায় মানুষ আছেন, তেমনি শঠ চৌর্যবৃত্তিপ্রবণ মানুষেরাও আছেন- জগতের আর সব পেশা বা ক্ষেত্রের মতোই। কাজেই সেসব মানুষদের গবেষণালব্ধ ফলাফলে নিয়ত মিশে তো যাচ্ছেই (সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে অর্জিত জ্ঞানের অংশ হিসেবে) ভ্রান্তিবহুল কত তথ্য।
কিন্তু তারপরো বিজ্ঞানের পথ আমাদের জন্য পরিত্যাজ্য নয়, কারণ সে সবলে সদর্পে বলেনা এপর্যন্ত যা জানা বোঝা হলো তাকে বিনা প্রশ্নে মেনে নাও। বললে সেমুহূর্তেই তা বিজ্ঞান থাকেনা আর। তাকে প্রতিস্থাপন করবে শ্রেয়তর কোন পদ্ধতি। কাজেই, স্থান বা কালের হেরফেরে আজকের বিজ্ঞান ভেঙেচুরে
নতুন রূপে তো যেতেই পারে, আজকের সত্য কাল ভ্রান্ত বলে তো মনে হতেই পারে।
আপনার বক্তব্যের সংগে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি যে, আমাদের বহুপথ পাড়ি দিতে হবে।এবং সেজন্যেই আস্তিক্যবাদের ঈশ্বরকে খুঁজে পাবার জন্যেও নাস্তিক্যবাদের সংশয়সঙ্কুল পথে পাড়ি দেবার পথটিকে আমার শ্রেয় মনে হয়। আমার মনে হয় সত্যিকারের ঈশ্বর (বা ঈশ্বরের আইডিয়াটি) সবসময়েই চাইবেন (বা চাইতেন) মানুষ জানুক, সপ্রশ্ন হোক।দুঃখের বিষয় ধর্মের ঈশ্বরকে এতটা সাহসী মনে হয় না।
ভালো থাকুন।
@নূপুরকান্তি,
ধন্যবাদ। আপনার কথা অন্য অনেকের থেকে different মনে হয়েছে। অযথা আক্রমণ, বা আক্রমণ করার খাতিরে কথা বলেননি। এর জন্য ধন্যবাদ। এখানে কয়েকজনের লেখা পড়ে মনে হয়েছে যে স্কুল পরুয়া immature ছেলে মেয়েরা মন্তব্য করছে। তর্ক না, বরং ঝগড়া করার খাতিরে লিখে যাচ্ছে। গ্রামের মুল্লাহ মউলভিদের মত যুক্তি না মেনে অন্ধ ভাবে comment করে যাচ্ছে। নিজে যা বুঝেছে বা পড়েছে তাই ই মানবে, অন্য কথা শোনার জন্য প্রস্তুত নয়। Arrogant লোকেরা সাধারণত যুক্তি তর্কের উপরে। যাই ই বলি না কেন, তাঁরা বলবেন – “যেই লাউ সেই কদু।” এটা আস্তিক এবং নাস্তিক দুই দলের জন্যই প্রযোজ্য।
একটা মন্তব্য আছে আপনার reply নিয়ে। আস্তিক্যবাদের ঈশ্বর কে আপনি কখনোই খুঁজে পাবেন না। ঠিক যেই ভাবে বিজ্ঞান এর দ্বারা কোন final উত্তর খুঁজে পাবেন না। আপনি হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করতে পারেন, বা আপনার future generation কে অপেক্ষা করতে বলতে পারেন। কিন্তু বিজ্ঞান আপনাকে কোথাও নিয়ে যাবে না। এখনকার দিনের আধুনিক technology দেখে ভুল ধারনা হতে পারে যে আমরা বিজ্ঞান নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি। মনে করিয়ে দিতে চাই যে technology is not fundamental science. এটা সাধারণত একজন বিজ্ঞানীর একটি experiment এর replication। একটি experiment এর results কে নানাভাবে manipulate করে মানুষের জন্য কিছু কল্যাণকর জিনিস বানানোর formal নাম হচ্ছে technology/engineering। কিন্তু এক্সপেরিমেন্টের results এর explanation কোথায়? মৌলিক বিজ্ঞান তা নিয়ে কাজ করে। এবং এই কথা মনে করিয়ে দেব যে একটি stable থিওরি আপনাকে মৌলিক বিজ্ঞান কখনো দিতে পারবেনা। আপেক্ষিক সত্য উন্মোচন করা সম্ভব, কিন্তু কখনোই জানা সম্ভব নয় মূল সত্য কি। Neutrino এক্সপেরিমেন্ট এর কথা নিশ্চয় শুনেছেন recently। আমি research paper টি (http://arxiv.org/abs/1109.4897) পড়ার পর মনে হয়েছে ভেতরে বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে। কিন্তু সত্য মিথ্যা যাই ই হোক না কেন, এই কয়দিন সবাই কথা বলেছেন কি করে এই experiment আইন্সটাইন এর থিওরি ভুল প্রমাণ করতে পারে। থিওরি যে শুধু থিওরি, প্রমাণিত সত্য নয় এবং কখনো হবেও না, এটা আমাদের বোঝা উচিৎ।
মৌলিক বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস রাখা আর গ্রামের মুল্লাহ দের ফাতওয়া এর উপর অন্ধ বিশ্বাস রাখা একি ব্যাপার। এটা আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি। ধর্মে না বিশ্বাস করতে চাইলে করবেননা, কিন্তু বিজ্ঞানের উপর দয়া করে অন্ধ বিশ্বাস স্থাপন করবেন না। নাহলে আমরা যারা নিজেদের তথাকথিত মুক্ত মনা নাস্তিক এবং আধুনিক জ্ঞান এ জ্ঞানী মনে করি, তাঁরা অহংকারী এবং পথভ্রষ্ট বাদে আর কিছুই না। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ধর্মে বিশ্বাসী (যুক্তি এবং তর্কের সাহায্যেই এই উপলব্ধি তে পৌঁছেছি), তাই আমার কথা biased মনে হতে পারে। তবে আমি আশা করব আপনি ব্যাপার গুলা ভেবে দেখবেন। গোঁড়া ধার্মিক এবং নাস্তিকদের কে সাধারণত আমি একি দলে ফেলি – অহংকারী এবং most fatally – অল্প জ্ঞান সমৃদ্ধ। কথা গুলা কঠিন মনে হলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটা আমার ব্যাক্তিগত অভিমত, এবং আমি নিশ্চিত যে আপনি যথেষ্ট পরিমাণে জ্ঞানী।
আবারো বলব যে আপনাকে অন্য দের থেকে different মনে হয়েছে, তাই ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও comment করতে ফিরে এসেছি। অনেকের reply দেখে মনে হয়েছে তাঁদের reply করা মানে বেকার সময় নষ্ট, তাই অন্য কোন post এ আর কিছু লিখিনি।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
@সাকিব, আপনার লেখা আরও আগেই পড়েছি। অন্যদের লেখায় কিছু প্রশ্ন (এবং আক্রমণ) থাকায় সেগুলো আগে Answer করতে হয়েছে। তাই আপনার লেখার উপর মন্তব্য করতে একটু দেরীই হয়ে গেল। সে জন্য আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আপনি যা লিখেছেন, তা অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। এরকম একটি লেখারই প্রত্যাশায় ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, মুক্তমনা ব্লগেই আছি। ভুল জায়গায় ক্লিক করিনি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিজ্ঞানভিত্তিক মন্তব্যের জন্য।
বিজ্ঞান বিষয়ক যে তথ্যগুলো দিয়েছেন, তার সাথে আমি একশ ভাগ একমত। শুধু একটা তথ্য যোগ করতে চাই, ব্রিটেনে একহাজার লোকের উপর একটা পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সহজ-সরল পরীক্ষা। একটা ছবিকে প্রোজেক্টরের সাহায্যে ধীরে ধীরে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছিল। আর প্রতিটি পর্যায়ে দর্শকদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছিল ছবিটা কিসের। কেউ বলছিল হাতি, কেউ বালতি, কেউ শকুন, কেউ আলমারি ইত্যাদি। ছবি যতই পরিষ্কার হবে, ততই সঠিক উত্তরদাতার সংখ্যা বাড়বে—এটাই ছিল পর্যবেক্ষকদের অনুমান। কিন্তু তারা অবাক হয়ে একটা কাণ্ড দেখল, প্রথমে যারা ভুল বলেছে, তারা শেষ পর্যন্তও ভুলের মধ্যেই থেকেছে। ছবি পরিষ্কার হওয়ার পরও বুঝতে পারেনি ওটা কিসের ছবি! আমার ধারণা এভাবেই একজনের Perception অনুযায়ী মতবাদ বা থিওরি গঠিত হয়, ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিশ্বাস থেকে যুক্তির কাঠামো তৈরি হয়। যা থেকে কেউ কেউ এক জনমেও আর বেরুতে পারে না।
তবে বিজ্ঞানের উপর আমি কখনও আস্থা হারাই না। কারণ, সে Trial and Error-এর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। তাতে কিছু ভুলভ্রান্তিও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ঠিক পথেই (Right Track) থাকে। কখনও কখনও বিজ্ঞানীকে কঠিন সাধনায় নামতে হয়। যোগী বা মহাপুরুষ ছাড়া আর কারও সাথেই যার তুলনা চলে না। তখন তাকে কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। গবেষণার অর্জন পেতেও অনেক দেরি হয়। ঠিক পথে থাকার কারণেই এরকম হয়। থিওরিগুলো জোড়াতালি দিয়ে দাঁড় করানো হয়, এটা সত্য। কিন্তু সূত্রগুলো তো নির্ভুল। বিজ্ঞান না থাকলে কি আমরা এই সূত্র পেতাম? এই ফর্মুলাগুলো পেতাম? বিজ্ঞান যে জানে আর যে জানে না, কারও জীবনই কি আজ এই ফর্মুলার বাইরে? বিজ্ঞান ভালবাসি আরও একটা কারণে। তা হলো এর অকপট সততা। সে বিনা দ্বিধায় তার Limitation স্বীকার করছে। সে বলছে, ‘যে কোন physical theory সব সময়ই সাময়িক। এর অর্থ হলো, এটা একটা অনুমান (hypothesis) মাত্র। আপনি কখনই একে প্রমাণ করতে পারেন না। (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-I: ‘Our Picture of the Universe`, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)। সে আরও বলছে, ‘আমরা কখনোই নিশ্চিত হতে পারব না যে, আমরা সঠিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছি, কারণ তত্ত্ব প্রমাণ করা যায় না।` (সূত্রঃ পূর্বোক্ত, ‘The Unification of Physics`)।
J W Dunn এর Theory নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে, এটা সত্য। তবে Physics এটাকে বাতিল করে দেয়নি। আর এটাও তো সত্য যে, স্বপ্নের মধ্য দিয়ে দূরবর্তী অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়ার উদাহরণ আছে। এমনও হয়েছে, স্বপ্নে কেউ দেখেছে তার হাত পুড়ে গেছে। ঘুম ভাঙার পর দেখেছে, বাস্তবেও হাতে ফোস্কা পড়ে গেছে। বিজ্ঞান এর নাম দিয়েছে Invert Reaction। স্বপ্ন দেখার সময় মানুষের শরীরে এই Reaction হয়। এটা নরম্যাল Reaction-এর ঠিক উল্টো। নরম্যাল Reaction-এর বেলায় শরীরের কোন অংশে ব্যথা লাগলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র তা টের পায়। আর Invert Reaction-এ আগে টের পায় মস্তিষ্ক, তারপর সেখান থেকে খবর পৌঁছে যায় শরীরের নির্দিষ্ট অংশে। ফলে শরীরের ওই অংশ স্বাভাবিক জখমের মতই ব্যথা অনুভব করতে পারে, ফুলে যেতে পারে কিংবা ফোস্কা পড়ে যেতে পারে। সিগমণ্ড ফ্রয়েড দাবী করেছিলেন, তিনি স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ বের করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর লেখা ‘Interpretation of Dream` গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি এ দাবী করেছিলেন। পরবর্তী সময়ের সাইকোলজিস্টরা ফ্রয়েডের এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের ধারণা, মানুষের দেখা সবগুলো স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা আদৌ সম্ভব নয়। স্বয়ং ফ্রয়েডের ছাত্র প্রফেসর জাং তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু স্বপ্নের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, এ সকল স্বপ্নের ঘটনা পরবর্তী সময়ে বাস্তবে সংঘটিত হয়েছে। এর কোন কারণ তিনিও ব্যাখ্যা করতে পারেননি। সাইকোলজিতে এরকম স্বপ্নের নাম Precognition Dream। জুরিখের জাং ইনস্টিটিউটে এখনও এই স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা চলছে। মনোবিজ্ঞানী ডাঃ এলিস বার্কসহ কিছু খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ১৯৫৪ সালে একটি গবেষণা চালান। গবেষণার স্থান ছিল গ্রেট ব্রিটেন। ওই গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, স্বপ্ন বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগাম বলা সম্ভব। কিন্তু তাঁরাও কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। অথচ সিগমণ্ড ফ্রয়েড দাবী করেছিলেন, সব স্বপ্নেরই ব্যাখ্যা সম্ভব। ওই যে আপনি বলেছেন, ‘যদি আপনি publications এর পিছে ছোটেন, তাহলে অবশ্য অন্য কথা`—হয়তো এখানেও সেরকমই ঘটেছিল।
বিজ্ঞানের Status ও Limitation সম্পর্কে যা বলেছেন, বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বোঝার জন্য তাই-ই যথেষ্ট। আমি কেবল তিনটা মজার জিনিস শেয়ার করতে চাইঃ
১. বিজ্ঞানের যাবতীয় আবিষ্কার, পর্যবেক্ষণ ও theory চিরকালের জন্য হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তাবাদ (Uncertainty Principle)-এর শৃঙ্খলে বাঁধা। একে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আমরা যতই তথ্য কিংবা গাণিতিক সক্ষমতা অর্জন করি না কেন, গবেষণার ফল কখনও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক ঘটনাবলির ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে সবসময়ই বিরাজ করবে অনিশ্চয়তা। ((সূত্রঃ Stephen W. Hawking, Grand Design, p. 114-115 http://codestealers.blogspot.com/2011/01/stephen-hawking-grand-design-free-pdf.html)।
২. তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র (Second Law of Thermodynamics) অনুযায়ী কেউ হস্তক্ষেপ না করলে মহাবিশ্বের সবকিছুই সুশৃঙ্খল অবস্থা থেকে বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে ধাবিত হয় (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, ‘Black Holes Ain’t So Black` এবং ‘The Arrow of Time`, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)। ফলে কারও হস্তক্ষেপ ছাড়া আদি বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে মহাবিশ্বের বর্তমান সুশৃঙ্খল অবস্থায় আসা সম্ভব নয়।
৩. General Relativity Theory অসীম ঘনত্বের বিন্দু (Infinite density) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং Classiclal Mechanics পরমাণু চুপসে অসীম ঘনত্ব প্রাপ্ত হবে— এই ভবিষ্যদ্বাণী করে নিজেদের পতন সম্পর্কে নিজেরাই আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছে।
৩. বিজ্ঞানের বর্তমান ডাটা অনুযায়ী আমরা যদি আলোর গতিতেও মহাবিশ্ব ভ্রমণে বের হই, তাহলেও পরিভ্রমণ শেষ করে যেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখানে আর ফিরে আসা সম্ভব হবে না। কারণ, ভ্রমণ শেষ হওয়ার আগেই মহাবিশ্ব চুপসে যাবে এবং তার আয়তন শূন্যে পৌঁছাবে (সূত্রঃ পূর্বোক্ত, The Expanding Universe)। ফলে কারও পক্ষেই এক জীবনে নিজের চোখে গোটা মহাবিশ্ব দেখা সম্ভব হবে না।
এগুলো হলো, বিজ্ঞানের মৌলিক ডাটা। কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত ডাটাগুলো কি? আমাদের জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে আমরা কি আদৌ কিছু জানি? জন্ম সম্পর্কে যা জানি, তা হলো Human Embryology আর মৃত্যু সম্পর্কে জানি Heart Failure! এগুলো তো Biology, এখানে Psychology কই? জীবিত ও মৃত লোকের মধ্যে তো কোন ফিজিক্যাল তফাৎ নাই, তফাৎ আছে শুধু প্রাণের। সেই প্রাণ কি দেখা যায়? আমরা লাশটা কবরে রেখে আসি। কবরের মাপ সাড়ে তিন হাত। কিন্তু যে প্রাণটা চলে গেল, সেটা কয় হাত? সেটা কোত্থেকে এল, কোথায় গেল? Human Embryology বলছে, মানব ভ্রুণের বিকাশের পাঁচ মাসের মাথায় সে শ্রবণশক্তি পায়; সাত মাসের মাথায় দৃষ্টিশক্তি পায়। তাহলে স্মরণশক্তি কখন পায়? আমরা কেন জন্মের আগের স্মৃতি মনে করতে পারি না? আমরা কেন মৃত্যুর সময় কোথায় যাচ্ছি, বলতে পারি না? কে আমাদের এ রহস্য জানতে বাধা দেয়?
জন্মের সময় মানুষের এনার্জি থাকে সীমাহীন, কিন্তু কৌতুহল থাকে ‘জিরো`। তারপর কৌতুহল যত বাড়তে থাকে, এনার্জি তত কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত যখন কৌতুহল হয় সীমাহীন, তখন এনার্জি হয় ‘জিরো`। তখন মনে হয়, কিছুই তো জানা হলো না। এই সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে মানুষকে বিদায় নিতে হয়। এই নির্মম রসিকতা কে করে মানুষের সাথে? জ্ঞানের অসীম তৃষ্ণা, সীমিত Logistics আর ‘জিরো`এনার্জি—এই সমীকরণ কার? বিজ্ঞান এখানে Interesting কিছু শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করছে। যেমন, Law of Nature। ব্যাস, হয়ে গেল? নাম দিলেই কি সমাধান হয়ে গেল? এই Nature জিনিসটা কি? এটা তো জীবনানন্দ দাসের ‘রূপসী বাংলা` না। বিজ্ঞান এই Nature বলতে গাছপালা বুঝাচ্ছে না, অন্য কিছু বুঝাচ্ছে। এমন এক শক্তিকে বুঝাচ্ছে, যা মহাবিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই সে Nature-এর উপর এমন ক্ষমতা ও Quality আরোপ করছে, যা আমরা ঈশ্বরের উপর আরোপ করে থাকি। তাহলে বিজ্ঞানবিরোধী কিছু লোক ছাড়া দুনিয়ায় আর নাস্তিক কোথায়?
এই Law of Nature-এর কোন Law যখন কেউ আবিষ্কার করছেন, তখন সেই বিজ্ঞানীর নামে তার নামকরণ হচ্ছে। যেমন, Johans Kepler সৌরজগতের সূত্রগুলি আবিষ্কার করেন। তাই সেগুলোর নামকরণ হয় Kepler’s Law। কিন্তু Kepler তো এই Law চালু করেননি! নিউটন Law of Gravity আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু নিউটন তো এই Law চালু করেননি! শেরশাহের সেই কৌতুক মনে পড়ছে। ক্লাশে শিক্ষক পড়ালেন, ‘শেরশাহের আমলে ঘোড়ার ডাকের প্রচলন হয়।` এখানে ডাক মানে ডাকব্যবস্থা (Mailing)। এক ছাত্র পরীক্ষার খাতায় লিখল, ‘ইহার পূর্বে ঘোড়া ডাকিতে পারিত না।` কোন সন্দেহ নেই, যাঁরা Law of Nature-এর কিছু Law আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যুগান্তর এনেছেন। বিজ্ঞান তাঁদের কাছে ঋণী। কিন্তু তাঁরা কার কাছে ঋণী, তা কি বিজ্ঞান বের করতে পেরেছে?
এ পর্যায়ে আমরা সুইচ ওভার করে একটু ধর্মের দিকে তাকাই। ধর্মবিশ্বাসের মূলে আছে ধর্মগ্রন্থ। দাবী করা হচ্ছে এই ধর্মগ্রন্থ ঈশ্বরের বাণী। আমরা কোন্ Approach দিয়ে এই দাবী পরীক্ষা করব? বিজ্ঞান বর্তমানের কিছু Observation থেকে Hypothesis করে দূরবর্তী অতীতের ঘটনা (যেমন, Big Bang) কিংবা দূরবর্তী ভবিষ্যতের ঘটনা (যেমন, Big Crunch) সম্পর্কে ভবিষদ্বাণী করছে। এই ভবিষদ্বাণীই হলো Theory of Big Bang এবং Theory of Big Crunch। এ দুটো ঘটনার একটাও আমাদের পক্ষে Physically প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু Scientific Theory হিসাবে বিজ্ঞান সেগুলো মেনে নিয়েছে।
ধর্মগ্রন্থগুলো অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠির কাছে উন্নত জীবনাচরণ ও ধর্মীয় উপদেশ নিয়ে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সেখানে প্রাসঙ্গিকভাবে সৃষ্টিজগতের কিছু বর্ণনা আছে। কোরআনে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি, সৌর-ব্যবস্থাপনা, পৃথিবীর বিবর্তন, প্রাণের বিকাশ, মানবজন্মের পূর্বের ও পরের স্তর ইত্যাদি বিষয়ে ১২০০ আয়াত আছে, যার শতকরা ৮০ ভাগই বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অবশিষ্ট ২০% তথ্য (স্বর্গ, নরক, মেরাজ, কেয়ামত, পুলসিরাত, ফেরেশতা, জ্বিন ইত্যাদি)—যার অধিকাংশই ভবিষ্যদ্বাণী, এখনও প্রমাণিত হয়নি। বিজ্ঞান এগুলো সম্পর্কে ‘হ্যাঁ` কিংবা ‘না` কিছুই বলতে পারছে না। এখন কোরআনকে যদি Scientific Theory হিসাবেও ধরি, তাহলেও দেখা যাবে এটি হল একমাত্র Theory, যা ৮০% প্রমাণের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন একটিও Scientific Theory খুঁজে পাওয়া যাবে না, যা ৫০% প্রমাণও দেখাতে পেরেছে। কিছু কিছু Theory আছে, যার পেছনে একটি প্রমাণও নাই। যেমন, বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution)। এর স্বপক্ষে আজ পর্যন্ত একটি প্রমাণও পাওয়া যায়নি। তবুও Scientific Theory হিসাবে তাকে গ্রহণ করা হয়েছে। এটা আমার কথা নয়, এটা ডারউইনের নিজের কথা। স্বয়ং ডারউইন বলেছেন, ‘When we descend to details, we can prove that no one species has changed; nor can we prove that the supposed changes are beneficial, which is the groundwork of the theory.` (সূত্রঃ David L. Hull, Darwin & His Critics: The Reception of Darwin’s Theory of Evolution by the Scientific Community (Cambridge, MA: Harvard University Press, 1974), p. 32, citing More Letters, 1903, Vol. 1, 172 and Darwin, Life and Letters, 1887, Vol. 2, p. 210)। তিনি আরও বলছেন, ‘I am actually weary of telling people that I do not pretend to adduce direct evidence of one species changing into another.` (সূত্রঃ Ibid., p. 292, citing Autobiography, p. 265)। ‘What you hint at generally is very, very true: that my work will be grievously hypothetical, and large parts by no means worthy of being called induction, my commonest error being probably induction from too few facts.` (সূত্রঃ Ibid., p. 9, citing Letter to Asa Gray, November 29, 1859 in More Letters, 1903, Vol. 1, p. 126). অর্থাৎ ডারউইন স্বীকার করছেন যে, বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ জোগাড় করতে পারেননি।
পরবর্তী সময়ে ‘Geological Society of London` এবং ‘Palaeontological Association of England` কর্তৃক পরিচালিত এক ব্যাপক জরীপের বরাত দিয়ে জন এন মুর (John N. Moore), অধ্যাপক, Natural Science, জানাচ্ছেনঃ ‘মোট ১২০ জন বিজ্ঞানী ও সকল বিশেষজ্ঞ মিলে ৩০টি অধ্যায়ের ৮০০ পৃষ্ঠার যে রিপোর্ট তৈরি করেন, তাতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংগৃহীত ফসিল রেকর্ডগুলোকে প্রায় ২৫০০ গ্রুপে ভাগ করা হয়। তাতে দেখা যায়, প্রত্যেক প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর উৎপত্তির স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে, যা অন্যদের থেকে আলাদা! ফসিল রেকর্ড বলছে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতিটি গ্রুপই হঠাৎ করে আবির্ভুত হয়েছে। উৎপত্তির সূচনা থেকে আজ অবধি তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রজাতি। এদের কারও কোন কমন পূর্বপুরুষ বা সরীসৃপের সন্ধান মেলেনি।` (সূত্রঃ Anon, 1985. Life–How Did It Get Here? By Evolution or By Creation? Watchtower Bible and Tract Society of New York, Inc., p. 65)।
এরকম আরেকটি Theory হলো ‘মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব` (Big Bang Theory)। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে—এডউইন হাবলের এই পর্যবেক্ষণের উপরেই উইলসন ও পেনজিয়াস Big Bang Theory প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের hypothesis হলো, কোন এক সময় গোটা মহাবিশ্ব (আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল) একটি বস্তুপিণ্ডে কেন্দ্রীভূত ছিল (সূত্রঃ The Encyclopedia of Space Travel and Astronomy, Octopus Book Ltd. London, 1979)। তারপর এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তা সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে। আজ থেকে ১৩.৭ বিলিয়ন বৎসর পূর্বের এই ঘটনা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের হাতে কোন প্রমাণ নেই, আছে শুধু অনুমান। আর এটাই হলো Theory।
এই যদি হয় Theory-এর অবস্থা, তাহলে বিজ্ঞান তাকে Scientific Theory হিসাবে গ্রহণ করতে গেল কেন? এর উত্তরও বিজ্ঞানীরাই দিয়েছেন। যেমনঃ
“The more one studies palaeontology, the more certain one becomes that evolution is based on faith alone; exactly the same sort of faith which it is necessary to have when one encounters the great mysteries of religion.” অর্থাৎ বিবর্তনবাদ একটি বিশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়, যা ধর্মের বিশাল রহস্যকে মোকাবেলার জন্য দরকার হয়। (সূত্রঃ More, Louis T. [late Professor of Physics, University of Cincinnati, USA], “The Dogma of Evolution,” Princeton University Press: Princeton NJ, 1925, Second Printing, p.160).
‘Evolution is unproved and unprovable. We believe it only because the only alternative is special creation and that is unthinkable.` অর্থাৎ ‘বিবর্তনবাদ অপ্রমাণিত এবং এটাকে কখনো প্রমাণও করা যাবে না। আমরা এটাকে বিশ্বাস করি শুধু এজন্য যে, এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সৃষ্টির ধারণা, যা অচিন্ত্যনীয়।` (Source: Sir Arthur Keith, Islamic Thought, DEC, 1961).
এখন প্রশ্ন হলো, কোরআন তো বলেছেই ‘আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল পরস্পর সংযুক্ত ছিল, অতঃপর আমি তাদের ভেঙে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি?`(সুরা আম্বিয়া, ৩০)। ‘প্রবল ক্ষমতাবলে আমি মহাশূন্য সৃষ্টি করেছি এবং অবশ্যই তা সম্প্রসারণ করে চলেছি।`(সুরা যারিয়াত, ৪৭)। কোরআন মহাবিশ্বের পরিণতি সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ‘সেদিন মহাশূন্য গুটিয়ে নেব যেমন করে গুটিয়ে নেয়া হয় লিখিত কাগজপত্র।` বিজ্ঞান এটাকে বলেছে মহাবিশ্বের প্রসারণের বিপরীত ‘মহা সংকোচন`। আমেরিকান বিজ্ঞানী Freeman Dyson এটাকে বলেছেন, ‘Big Crunch`। এটাও বিজ্ঞানের hypothesis, যা প্রমাণিত নয়। কিন্তু বিজ্ঞান এটাকে বিশ্বাস করছে। প্রথমটা মহাবিশ্বের অতীত, পরেরটা ভবিষ্যৎ। কোরআন যখন বলেছে, তখন অবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করেনি প্রমাণ নাই বলে; এখনও তো প্রমাণ নাই, এখন বিশ্বাস করছে কেন?
যাঁরা ধর্ম ও ঈশ্বরে অবিশ্বাসী, তাঁদের যুক্তি হলো, তাঁরা ঈশ্বরকে দেখতে পান না। ঈশ্বরের তরফ থেকে দেবদূত বা ফেরেশতা নবীর কাছে ওহী নিয়ে আসছেন, এমন দৃশ্যও দেখতে পান না। বিশ্বাসী হওয়ার জন্য তাঁদের দরকার প্রত্যক্ষ দর্শন (Direct Observation)। Stephen Hawking তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ ‘Grand Design`-এ কয়েকটা বোমা ফাটিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, এই বোমা হজম করতে আমাদের যথেষ্ট সময় লাগবে। যেমনঃ
এক. আসল সত্য কেবল Direct Observation থেকে আসতে পারে, এটা ছিল আধুনিক পদার্থবিদ্যার আগের ধারণা। কিন্তু এটা এখন প্রমাণিত যে, আধুনিক পদার্থবিদ্যা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সাথে সাংঘর্ষিক। খালি চোখে দেখা বাস্তবতা আধুনিক পদার্থবিদ্যার সাথে compatible নয় (Grand Design, p 17)।
দুই. আমাদের free will বলে আসলে কিছু নেই। এটি একটি ভ্রান্ত কল্পনা (illusion)। আমরা biological machine ছাড়া আর কিছু না। আমাদের সকল জৈবিক ক্রিয়া law of physics, law of chemistry এবং গ্রহসমূহের কক্ষপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে (Ibid, p 55)।
তিন. মহাবিশ্বের সকল ঘটনাপ্রবাহ গণিতবিদ John Conway-এর ‘Game of Life`-এর মতই আগে থেকে configuration করা আছে। এগুলো পূর্ব নির্ধারিত। ১৯৭০ সালে ক্যাম্ব্রিজের তরুণ গণিতবিদ John Conway ‘Game of Life`নামে একটি Game তৈরি করেন। এটি দাবাবোর্ডের মত অনেকগুলো Square-এর সমষ্টি। তবে এটা যে কোনদিকে প্রসারিত করা যায়। প্রতিটি Square-এর জীবিত (সবুজ রঙে দেখানো আছে) অথবা মৃত (কালো রঙে দেখানো আছে)—যে কোন একটি অবস্থা হতে পারে। এই খেলায় এক সেট Law আছে। সেখান থেকে configuration করে খেলা শুরু করলে সেই Law নিজেই বলে দেবে ভবিষ্যতে কি ঘটবে। Conway-এর এই খেলায় আমরা হলাম creator। আমরা খেলার শুরুতে বিভিন্ন বস্তু ও তাদের অবস্থান চিহ্নিত করব। এভাবে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা নির্ধারণ করে দেব (Ibid, p 267-279)।
ধর্মের ব্যাপারে আমার hypothesis ছিল—
এক. কোরআন যদি ঈশ্বরের বাণী হয়, তাহলে বিজ্ঞান ক্রমেই কোরআনের সাথে Identical হবে। আর অতীতের বিজ্ঞান কোরআনের সাথে Contradict করবে। এই hypothesis-এর একটা বড় কারণ ছিল, কোরআন নিজেই মানুষকে বিজ্ঞান চর্চা করতে বলেছে। অর্থাৎ ঈশ্বর জানেন, বিজ্ঞানের Outcome শেষ পর্যন্ত কি হবে।
দুই. ঈশ্বর যেহেতু একজনই, কাজেই তিনি মানুষের মধ্যে হানাহানি বাঁধানোর জন্য একাধিক ধর্ম পাঠাবেন না; একটি ধর্মই পাঠাবেন। সেই ধর্মের একাধিক নবী বা অবতার থাকবেন। তারা মানুষের কাছে অভিন্ন বার্তা নিয়ে আসবেন। তাদের একজন অপরজনকে সমর্থন করবেন।
তিন. যেহেতু বাস্তবের ঈশ্বর সেক্যুলার, তিনি পৃথিবীতে মানুষের জন্য বিভিন্ন Utility (যেমন, বাতাস, পানি, ফলমূল) নিরপেক্ষভাবে Disburse করছেন। কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাত করছেন না। কাজেই কোরআনের বিধানও হবে সেক্যুলার।
চার. যেহেতু বাস্তবের ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ, কাজেই কোরআনেও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র, সাম্যবাদী অর্থনীতি ও শ্রেণীহীন সমাজের নির্দেশনা থাকবে।
পাঁচ. যদি কোরআনে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র, সাম্যবাদী অর্থনীতি ও শ্রেণীহীন সমাজের নির্দেশনা থাকে, তাহলে তা গোড়া থেকেই সমাজের অধিপতি শ্রেণীর হিংস্র প্রতিরোধের মুখে পড়বে এবং সমাজের নিচুতলার নিষ্পেষিত শ্রেণী দলে দলে এই ধর্মে দীক্ষিত হবে।
ছয়. একজন উচ্চাকাঙ্খী অসৎ চরিত্রের লোক সমাজের Establishment-এর বিরুদ্ধে কখনও একা লাগতে যাবে না। সে আগে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন দ্বারা Equiped হবে। সাধারণ মানুষ বিপক্ষে গেলেও রক্তসম্পর্কের লোকজন কখনও আত্মীয়ের বিপক্ষে যায় না। আত্মীয় যদি খুনী, ডাকাত কিংবা বিচারাধীন অপরাধীও হয়, আমরা দেখতে পাই, তার রক্তসম্পর্কের লোকজন তার পক্ষে আইনী লড়াই করে, নৈতিকভাবেও সমর্থন দেয়, প্রকাশ্যে বলে, সে নির্দোষ। পরে সে ব্যক্তি দণ্ডিত হলেও তারা তাকে পরিত্যাগ করে না। জেলখানায় গিয়ে দেখাশোনা করে, খাবার পাঠায়। এই প্রোটেকশনের জন্যই মানুষ পরিবার ও সমাজ গঠন করে। মুহাম্মদ (সাঃ) যদি আল্লাহ্র নবী না হতেন এবং কোরআন যদি আল্লাহ্র বাণী না হত, সে ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হত। তিনি যেভাবেই হোক, আগে তাঁর আত্মীয়স্বজনকে দলে টানতেন। তার জন্য প্রয়োজনে কোরআনে এমন কিছু বাক্য ঢোকাতেন, যাতে Give and Take basis-এ তাদেরকে Accommodate করা যায়। ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে, এ ধরনের Minor অদল-বদলের প্রস্তাব তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে একাধিকবার দিয়েছে। কোরআন তাঁর নিজের লেখা হলে তিনি অবশ্যই তা সেখানে Incorporate করতেন। তিনি আল্লাহ্র নবী হলে এবং কোরআন আল্লাহ্র বাণী হলেই শুধু তিনি এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
আজ এ পর্যন্তই থাক। আরেকদিন Stephen Hawking-এর ‘Grand Design` এবং আমার hypothesis নিয়ে আলোচনা করব। মেরাজ নিয়ে আমার অবস্থানও তুলে ধরব। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন। শুভকামনা।
@শাহেদ ইকবাল,
শুভকামনা রইল আপনার প্রতি।
বিশ্বাসী চোখে দেখলে এবং নিজের মতের পক্ষে গেলে জ্বলন্ত মিথ্যাকেও সত্যি মনে হয় সব সময়।
ভাই কয়েক মাস আগে যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকা গার্ডিয়ানে হকিংসের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেখানে তিনি স্পষ্ট স্বর্গ ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন বিশ্বাস কে ভিতু লোকদের “রূপকথার গল্প” হিসাবে অভিহিত করলেন ব্রিটেনের প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানী। তিনি ধর্মীয় আশ্বাসকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখান করে বলেন যে মুহুর্তে মস্তিষ্ক চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় তার পরে আর কিছুই থাকে না।
২১ বছর বয়স থেকে তিনি জটিল মোটর নিউরন রোগে ভুগছেন। গার্ডিয়ানে দেয়া এক দূর্লভ সাক্ষাৎকারে তিনি মৃত্যু, জীবনের উদ্দ্যেশ্য এবং আমাদের অস্তিত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর অভিমত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন-“মস্তিষ্ককে আমি একটা কম্পিউটার হিসাবে বিবেচনা করি যার কল কব্জা নষ্ট হয়ে গেলে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। নষ্ট কম্পিউটারের কোন স্বর্গ বা পরকাল নেই, এগুলো অন্ধকারকে ভয় পায় এমন ভীতু লোকদের জন্য তৈরী রূপকথার গল্প”
সাক্ষাৎকারটি যখন প্রকাশ হয় তখন একবার ভেবেছিলাম বাংলায় অনুবাদ করে মুক্তমনায় দিতে কিন্তু অনুবাদে আমি বিশেষ অজ্ঞ থাকায় এবং সাথে আলসেমী পূর্ণরূপে সহযোগীতা করায় আর করা হয়ে উঠেনি। সাক্ষাৎকারটির দেখুন-
@রাজেশ তালুকদার, Stephen Hawking গার্ডিয়ান পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, স্বর্গ হলো অন্ধকারের ভয়ে ভীত মানুষের কল্পনা। তাঁর এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, তিনি কিসের কথা বলছেন। তিনি এমন এক স্বর্গের কথা বলেছেন, যেখানে আগুন আছে। আমরা তো জানি আগুন থাকে নরকে। যাই হোক, পৌরাণিক যুগের অগ্নিউপাসক কোন গোষ্ঠির প্রসঙ্গে এসব কথা বলে থাকতে পারেন। মজার কথা হলো, তিনি নরক সম্পর্কে কিছু বলেননি। সে কি এই জন্য যে, মানুষ যা কল্পনা করবে, তা-ই যদি নরকে থাকে, তাহলে তো নিজের শাস্তি কেউ চাইবে না!
পত্রিকাওয়ালারা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই মানুষের বক্তব্যকে Twist করে। Stephen Hawking ফিজিক্সের প্রফেসার। মৃত্যুর পর মানুষের আর কিছুই থাকবে না, এ কথা তিনি জীবনেও বলবেন না। ফিজিক্সের গোড়ার কথাই হলো, বস্তু ও শক্তির কোন ধ্বংস নেই—শুধু রূপান্তর আছে।
যাই হোক, Stephen Hawking তাঁর উভয় গ্রন্থে (A Brief History of Time ও Grand Design) প্রাচীন কিছু ধর্ম নিয়ে আলোকপাত করেছেন, বিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে তাদের মতবাদ তুলে ধরেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইসলাম ও কোরআন সেখানে অনুপস্থিত। এমনও হতে পারে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও আধুনিক মহাকাশবিদ্যার (Modern Cosmology) ব্যাপারে এ ধর্মের অবস্থান সম্পর্কে তিনি হয়তো খোঁজখবর করার সময়ই পাননি।
Stephen Hawking-এর ঈশ্বর ও ধর্ম-ভাবনা সম্পর্কে হেলাল সাহেবের মন্তব্যের উত্তরে যা লিখেছি, তাতে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। ভাল থাকুন।
ভাই শাহেদ ইকবাল,
আপনি জাকির নায়েকের মত ভাল বক্তা কিন্তু আসলে একজন জোকার। আপনি কথায় কথায় কুরআন-হাদিস, গীতা, বাইবেল যা ইচ্ছা রেফারেন্স দেন, অন্তত আমি এর প্রতিবাদ করব না। মুক্তমনায় এসব রেফারেন্স টেফারেন্স এর মাধ্যমে যদি দীনের দাওয়াত দিতে চান চালিয়ে যান যতক্ষণ না মডারেটর আপনাকে লাল কার্ড দেখায়। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে ইচ্ছা করে ফাইজলামি করে, উল্টা-পাল্টা কথা বলে বিরক্ত করলে আমার প্রচণ্ড আপত্তি আছে। আপনার ইচ্ছাকৃত ফাইজলামিটা নিচে দেখুন-
স্বয়ং Stephen W. Hawking বলেন ‘মহাবিশ্ব কেন এভাবে শুরু হয়েছিল, এ তথ্য ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে একজন ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করার ইচ্ছায় এভাবে কাজ করেছিলেন।` (সূত্রঃ স্টিফেন ডব্লিউ. হকিং, কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ভাষান্তরঃ শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত, বাউলমন প্রকাশন, কলকাতা, পৃঃ ১৩৭)।
হকিং A Brief History of Time বই টা লিখেছিল ১৯৮৮ সালে। অথচ মাত্র সেদিন ( সেপ্টেম্বর ৭, ২০১০ )Grand design বইটা বের হল – আর সেখানে ঈশ্বর সম্বন্ধে কি বলেছে তা সারা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত মিডিয়াতে ( বাংলাদেশের কোনার মসজিদের মোল্লারাও শুনেছে) ব্যাপক ভাবেই প্রচার হয়েছে। তাই আপনার মত রেফারেন্স ওয়ালারা সে কথাটা শুনেনি, এটা কি বিশ্বাস যোগ্য?
উইকিতে হকিং এর বই এর ঐ অংশটুকুতে কি আছে দেখুন।
The Grand Design is a popular-science book written by physicists Stephen Hawking and Leonard Mlodinow and published by Bantam Books in 2010. It argues that invoking God is not necessary to explain the origins of the universe, and that the Big Bang is a consequence of the laws of physics alone.[1] In response to criticism, Hawking has said; “One can’t prove that God doesn’t exist, but science makes God unnecessary.”[2] When pressed on his own religious views by the BBC channel 4 documentary Genius of Britain, he has clarified that he does not believe in a personal God.
শুধু হকিং নয়, কোন বিজ্ঞানীই এখন দাবি করে না যে মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের হাত আছে ( তবে বিজ্ঞানী জাকির নায়েক এবং তার চেলারা বাদে) । প্রমাণ করতে না পারলেও বিগ ব্যাং সৃষ্টির যে হাইপোথিসিস গুলো আছে সে গুলো যথেষ্টই যুক্তিসঙ্গত।
বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলার আগে ভাল করে জেনে নেয়ার জন্য অনুরোধ করা গেল। আর তা না হলে অনেক নতুন পাঠক আপনার কথায় বিভ্রান্ত হতে পারে।
@হেলাল,
খুব ভাল বলেছেন। প্রফেসার ‘জিম আল-খালিলীর’ এ দুটো ভিডিও শাহেদ সাহেবের ‘চিন্তা ভাবনার’ কোন পরিবর্তন আনবে কিনা জানি না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস অনেকেরই এ দুটো ভিডিও ভাল লাগবেঃ
BBC – Everything and Nothing – Nothing (59mins)
httpv://www.youtube.com/watch?v=KQ15kFvUyJg&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=KQ15kFvUyJg&feature=related
BBC – Everything and Nothing – Everything (59 minutes -3/31/2011)
httpv://www.youtube.com/watch?v=ryUYyhpqh68&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=ryUYyhpqh68&feature=related
দুঃখিত!
ভিডিও গুলো উঠিয়ে নেয়া হয়েছে,
ভিডিও গুলো নতুন URL ঠিকানায় পোষ্ট করা হয়েছেঃ
BBC – Everything and Nothing – Nothing
httpv://www.youtube.com/watch?v=FXliM19h6YI&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=FXliM19h6YI&feature=related
BBC – Everything and Nothing – Everything
httpv://www.youtube.com/watch?v=FXliM19h6YI&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=FXliM19h6YI&feature=related
@হেলাল, ভাই যা বলার বাংলায় বলেন। দয়া করে এমন কিছু বলবেন না, যা দুর্বোধ্য শোনায়। Stephen Hawking-এর ‘A Brief History of Time`থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, এতে ফাইজলামির কি দেখলেন? আপনার কি ধারণা উদ্ধৃতিটা ভুল? বইটি চেক করলেই তো হয়। বইয়ের অষ্টম অধ্যায় ‘The Origin and Fate of the Universe`-এ গেলেই সেটা পেয়ে যাবেন। বইটি অনলাইনেও পাবেন। লিংকটা হলোঃ
http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।
Stephen Hawking তাঁর সর্বশেষ বই Grand Design-এ ঈশ্বর সম্পর্কে কি বলেছেন, তা জানার জন্য পত্রপত্রিকা-মিডিয়া দেখতে হবে কেন? কষ্ট করে বইটি পড়লেই তো হয়। এটাও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। নিচের লিংক থেকে Pdf ভার্সান ডাউনলোড করা যায়ঃ
http://codestealers.blogspot.com/2011/01/stephen-hawking-grand-design-free-pdf.html
আপনার কি ধারণা Stephen Hawking তাঁর নতুন বইতে আগের ঈশ্বর সংক্রান্ত ধারণা বাতিল করে দিয়েছেন? কেউ কেউ সম্ভবতঃ এই স্বর্গসুখেই আছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আগের ভুল স্বীকার না করে কোন বিজ্ঞানী এ কাজ করেন না। Stephen Hawking-এর পক্ষে তো আরও সম্ভব না। তিনি এর চেয়েও আরও মামুলি ব্যাপারে অতীতে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন, তারপর নতুন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি প্রথমদিকে মহাবিশ্বের আরম্ভ ও অন্তিম অবস্থাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন পৃথিবীর উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর সাথে তুলনা করে (সূত্রঃ A Brief History of Time, The Origin and Fate of the Universe), পরে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং স্বীকার করেন যে, এটা তাঁর ভুল ছিল (সূত্রঃ পূর্বোক্ত, The Arrow of Time)। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় যদি আপনি ছাপার অক্ষরে মেনে নেন যে, আপনি ভুল করেছিলেন, তাহলে ব্যাপারটা অনেক ভাল দেখায় আর বিভ্রান্তিও কমে। এর একজন ভাল উদাহরণ ছিলেন আইনস্টাইন। তিনি যখন মহাবিশ্বের একটি স্থির প্রতিরূপ গঠন করার চেষ্টা করছিলেন, তখন তিনি মহাবিশ্বতত্ত্বভিত্তিক ধ্রুবক (Cosmological Constant) উপস্থিত করেছিলেন। শেষে তিনি বলেছেন, এটা ছিল তাঁর জীবনের সব চাইতে বড় ভুল।`
এবার আসা যাক ‘Grand Design`প্রসঙ্গে। দুটো বই একসাথে পড়া থাকলে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে, Stephen Hawking তাঁর A Brief History of Time যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই ‘Grand Design`শুরু করেছেন। আগের বইয়ের ‘The Origin and Fate of the Universe` অধ্যায়ে তিনি বলেছেন, ঈশ্বর সম্ভবত এক গুচ্ছ বিধি তৈরি করেছেন। এ বিধি দ্বারা মহাবিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। ঈশ্বর এই বিধিমালা দ্বারা মহাবিশ্বকে বিবর্তিত হওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং তিনি আর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না। ‘Grand Design`এ এসেও তিনি বলছেন, ‘সময় হলো আদর্শ ট্রেনলাইনের মত। যদি তার আরম্ভ থাকে, তাহলে অবশ্যই সেখানে এমন কাউকে (যেমন, ঈশ্বর) থাকতে হবে, যিনি সেই ট্রেনটার চলা নিশ্চিত করবেন (Grand Design, p 211)। আরও বলছেন, ‘কাজেই মনোযোগের সাথে মাইক্রোওয়েভ আকাশের মানচিত্রের দিকে দেখুন। এটা হলো মহাবিশ্বের সকল কিছুর ব্লুপ্রিন্ট। আমরা হলাম সেই প্রাথমিক মহাবিশ্বের কোয়ান্টাম fluctuation-এর সৃষ্টি। সে সময় কোন ধার্মিক ব্যক্তি থাকলে তিনি বলতেন যে, ঈশ্বর অবশ্যই পাশা খেলেন (নিজের ইচ্ছামত কাজ করেন)। (Grand Design, p 218)। সবশেষে বলছেন, ‘স্বতঃস্ফুর্ত সৃষ্টি থেকে বোঝা যায় যে, মহাবিশ্ব কেন অস্তিত্বশীল, আমরা কেন অস্তিত্বশীল এর পেছনে কিছু একটা আছে। তবে মহাবিশ্বের সচল থাকার জন্য Law of Physics আছে, এর জন্য আর ঈশ্বরকে টেনে আনার দরকার নাই `(p 282).
Stephen Hawking-এর উপরের উক্তি থেকে পরিষ্কার যে, তিনি তাঁর পূর্বের ধারণা বাতিল করেননি। তিনি বলতে চাইছেন, ঈশ্বর যে বিধিমালা দিয়েছেন (Law of Physics), সেই বিধিমালা অনুযায়ী মহাবিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। নতুন করে তাঁকে আর দরকার হচ্ছে না। গার্ডিয়ান পত্রিকায় তিনি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, তিনি Personal God বিশ্বাস করেন না। তিনি এ কথা আগেও বলেছেন। তাঁর আগের বইতেও তার ইঙ্গিত আছে। Personal God হলো ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত সেই খণ্ডিত ঈশ্বর, যা একেক ধর্মে একেক রকম। কোথাও তাঁর আকৃতি আছে, আবার কোথাও তাঁর একাধিক রূপ আছে। এই সসীম ঈশ্বরকে Stephen Hawking মানেন না। তিনি মানেন প্রথাবিরোধী এক সার্বজনীন ঈশ্বরকে, যাঁকে তাঁর জ্ঞাত ধর্মগ্রন্থে তিনি পাননি।
আপনি বলেছেন, শুধু হকিং নয়, কোন বিজ্ঞানীই এখন দাবি করে না যে মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের হাত আছে। আবারও অনুরোধ করছি, অনুমান নির্ভর কথা বলার আগে ভাল করে খোঁজ নেবেন। আমি যদি এখন তালিকা দিই, এই ব্লগে আর কোন জায়গাও থাকবে না। Fred Hoyle, British astrophysicist, যার কথা Stephen Hawking তাঁর Grand Design-এ কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছেন, তাঁকে দিয়েই শুরু করছি। তিনি এবং আরও কিছু বিজ্ঞানী কি বলেন, দেখুনঃ
Fred Hoyle (British astrophysicist): “A common sense interpretation of the facts suggests that a superintellect has monkeyed with physics, as well as with chemistry and biology, and that there are no blind forces worth speaking about in nature. The numbers one calculates from the facts seem to me so overwhelming as to put this conclusion almost beyond question.” (Hoyle, F. 1982. The Universe: Past and Present Reflections. Annual Review of Astronomy and Astrophysics: 20:16.)
George Ellis (British astrophysicist): “Amazing fine tuning occurs in the laws that make this [complexity] possible. Realization of the complexity of what is accomplished makes it very difficult not to use the word ‘miraculous’ without taking a stand as to the ontological status of the word.” (Ellis, G.F.R. 1993. The Anthropic Principle: Laws and Environments. The Anthropic Principle, F. Bertola and U.Curi, ed. New York, Cambridge University Press, p. 30.)
Paul Davies (British astrophysicist): “There is for me powerful evidence that there is something going on behind it all….It seems as though somebody has fine-tuned nature’s numbers to make the Universe….The impression of design is overwhelming”. (Davies, P. 1988. The Cosmic Blueprint: New Discoveries in Nature’s Creative Ability To Order the Universe. New York: Simon and Schuster, p.203.)
Paul Davies: “The laws [of physics] … seem to be the product of exceedingly ingenious design… The universe must have a purpose”. (Davies, P. 1984. Superforce: The Search for a Grand Unified Theory of Nature. (New York: Simon & Schuster, 1984), p. 243.)
Alan Sandage (winner of the Crawford prize in astronomy): “I find it quite improbable that such order came out of chaos. There has to be some organizing principle. God to me is a mystery but is the explanation for the miracle of existence, why there is something instead of nothing.” (Willford, J.N. March 12, 1991. Sizing up the Cosmos: An Astronomers Quest. New York Times, p. B9.)
John O’Keefe (astronomer at NASA): “We are, by astronomical standards, a pampered, cosseted, cherished group of creatures.. .. If the Universe had not been made with the most exacting precision we could never have come into existence. It is my view that these circumstances indicate the universe was created for man to live in.” (Heeren, F. 1995. Show Me God. Wheeling, IL, Searchlight Publications, p. 200.)
George Greenstein (astronomer): “As we survey all the evidence, the thought insistently arises that some supernatural agency – or, rather, Agency – must be involved. Is it possible that suddenly, without intending to, we have stumbled upon scientific proof of the existence of a Supreme Being? Was it God who stepped in and so providentially crafted the cosmos for our benefit?” (Greenstein, G. 1988. The Symbiotic Universe. New York: William Morrow, p.27.)
Arthur Eddington (astrophysicist): “The idea of a universal mind or Logos would be, I think, a fairly plausible inference from the present state of scientific theory.” (Heeren, F. 1995. Show Me God. Wheeling, IL, Searchlight Publications, p. 233)
Arno Penzias (Nobel prize in physics): “Astronomy leads us to a unique event, a universe which was created out of nothing, one with the very delicate balance needed to provide exactly the conditions required to permit life, and one which has an underlying (one might say ‘supernatural’) plan.” (Margenau, H and R.A. Varghese, ed. 1992. Cosmos, Bios, and Theos. La Salle, IL, Open Court, p. 83.)
Roger Penrose (mathematician and author): “I would say the universe has a purpose. It’s not there just somehow by chance.” (Penrose, R. 1992. A Brief History of Time (movie). Burbank, CA, Paramount Pictures, Inc.)
Tony Rothman (physicist): “When confronted with the order and beauty of the universe and the strange coincidences of nature, it’s very tempting to take the leap of faith from science into religion. I am sure many physicists want to. I only wish they would admit it.” (Casti, J.L. 1989. Paradigms Lost. New York, Avon Books, p.482-483.)
Vera Kistiakowsky (MIT physicist): “The exquisite order displayed by our scientific understanding of the physical world calls for the divine.” (Margenau, H and R.A. Varghese, ed. 1992. Cosmos, Bios, and Theos. La Salle, IL, Open Court, p. 52.)
Robert Jastrow (self-proclaimed agnostic): “For the scientist who has lived by his faith in the power of reason, the story ends like a bad dream. He has scaled the mountains of ignorance; he is about to conquer the highest peak; as he pulls himself over the final rock, he is greeted by a band of theologians who have been sitting there for centuries.” (Jastrow, R. 1978. God and the Astronomers. New York, W.W. Norton, p. 116.)
Stephen Hawking (British astrophysicist): “Then we shall… be able to take part in the discussion of the question of why it is that we and the universe exist. If we find the answer to that, it would be the ultimate triumph of human reason – for then we would know the mind of God.” (Hawking, S. 1988. A Brief History of Time. p. 175.)
Frank Tipler (Professor of Mathematical Physics): “When I began my career as a cosmologist some twenty years ago, I was a convinced atheist. I never in my wildest dreams imagined that one day I would be writing a book purporting to show that the central claims of Judeo-Christian theology are in fact true, that these claims are straightforward deductions of the laws of physics as we now understand them. I have been forced into these conclusions by the inexorable logic of my own special branch of physics.” (Tipler, F.J. 1994. The Physics Of Immortality. New York, Doubleday, Preface.) Note: Tipler since has actually converted to Christianity, hence his latest book, The Physics Of Christianity.
Alexander Polyakov (Soviet mathematician): “We know that nature is described by the best of all possible mathematics because God created it.”( Gannes, S. October 13, 1986. Fortune. p. 57)
Ed Harrison (cosmologist): “Here is the cosmological proof of the existence of God – the design argument of Paley – updated and refurbished. The fine tuning of the universe provides prima facie evidence of deistic design. Take your choice: blind chance that requires multitudes of universes or design that requires only one…. Many scientists, when they admit their views, incline toward the teleological or design argument.” (Harrison, E. 1985. Masks of the Universe. New York, Collier Books, Macmillan, pp. 252, 263.)
Edward Milne (British cosmologist): “As to the cause of the Universe, in context of expansion, that is left for the reader to insert, but our picture is incomplete without Him [God].” (Heeren, F. 1995. Show Me God. Wheeling, IL, Searchlight Publications, p. 166-167.)
Barry Parker (cosmologist): “Who created these laws? There is no question but that a God will always be needed.” (Heeren, F. 1995. Show Me God. Wheeling, IL, Searchlight Publications, p. 223.)
Drs. Zehavi, and Dekel (cosmologists): “This type of universe, however, seems to require a degree of fine tuning of the initial conditions that is in apparent conflict with ‘common wisdom’.” (Zehavi, I, and A. Dekel. 1999. Evidence for a positive cosmological constant from flows of galaxies and distant supernovae Nature 401: 252-254.)
Arthur L. Schawlow (Professor of Physics at Stanford University, 1981 Nobel Prize in physics): “It seems to me that when confronted with the marvels of life and the universe, one must ask why and not just how. The only possible answers are religious. . . . I find a need for God in the universe and in my own life.” (Margenau, H. and R. A. Varghese, eds. Cosmos, Bios, Theos: Scientists Reflect on Science, God, and the Origins of the Universe, Life, and Homo Sapiens (Open Court Pub. Co., La Salle, IL, 1992).)
Henry “Fritz” Schaefer (Graham Perdue Professor of Chemistry and director of the Center for Computational Quantum Chemistry at the University of Georgia): “The significance and joy in my science comes in those occasional moments of discovering something new and saying to myself, ‘So that’s how God did it.’ My goal is to understand a little corner of God’s plan.” (Sheler, J. L. and J.M. Schrof, “The Creation”, U.S. News & World Report (December 23, 1991):56-64.)
Wernher von Braun (Pioneer rocket engineer) “I find it as difficult to understand a scientist who does not acknowledge the presence of a superior rationality behind the existence of the universe as it is to comprehend a theologian who would deny the advances of science.” (McIver, T. 1986. Ancient Tales and Space-Age Myths of Creationist Evangelism. The Skeptical Inquirer 10:258-276.)
Carl Woese (microbiologist from the University of Illinois) “Life in Universe – rare or unique? I walk both sides of that street. One day I can say that given the 100 billion stars in our galaxy and the 100 billion or more galaxies, there have to be some planets that formed and evolved in ways very, very like the Earth has, and so would contain microbial life at least. There are other days when I say that the anthropic principal, which makes this universe a special one out of an uncountably large number of universes, may not apply only to that aspect of nature we define in the realm of physics, but may extend to chemistry and biology. In that case life on Earth could be entirely unique.” (Mullen, L. 2001. The Three Domains of Life from SpaceDaily.com)
Antony Flew (Professor of Philosophy, former atheist, author, and debater) “It now seems to me that the findings of more than fifty years of DNA research have provided materials for a new and enormously powerful argument to design.” (Atheist Becomes Theist: Exclusive Interview with Former Atheist Antony Flew at Biola University (PDF version ).)
আমি, আপনি কিংবা জাকির নায়েকের কথার উপর ঈশ্বরের অস্তিত্ব নির্ভর করে না। যাঁর অস্তিত্ব আছে, তাঁর অস্তিত্ব তো আছেই। এবং থাকবেও।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
@শাহেদ ইকবাল,
প্রচুর গবেষণা করেও আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর আজও পাই নি, আপনি বোধ হয় আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। প্রশ্নগুলো হলো-
মুহাম্মদ কি চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত পৌত্তলিক ছিলেন? না থাকলে কোন্ ধর্মের অনুসারী ছিলেন আর সেই ধর্মগ্রন্থের নাম কী? কোন্ ধর্মের নিয়মানুসারে তিনি নিজে বিয়ে করেছিলেন আর তার দুই মেয়ে রোকেয়া ও কুলসুমকে আবু লাহাবের দুই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন? এই তিনটি বিয়েতে কে আকদ পড়ায়েছিলেন?
ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, ইব্রাহিমের মাতার নাম ম্যারিয়া কিবতিয়া, কথাটা সত্য। কিন্তু ইব্রাহিমের বায়োলজিকেল পিতা মুহাম্মদ ছিলেন না। ততোদিনে মুহাম্মদের ইয়ে শুকিয়ে শুকনো পাউডার হয়ে গেছে। বাচ্চাটাকে মুহাম্মদ যখন আয়েশার কাছে নিয়ে বললেন- ‘দেখো আয়েশা, বাচ্চার চেহারাটা যেন ঠিক আমারই মতো গোল-গাল’। আয়েশা চেহারার মিল অস্বীকার করে বলেছিলেন, এই বয়সে সকল বাচ্চাদের চেহারা এরকমই হয়’।
@ আকাশ মালিক ভাই ,
এবার আমার সত্যিই ধারনা হচ্ছে আপনি ‘ভুল জাইগায়’ আপনার প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।এই প্রবন্ধ এবং বিভিন্ন পাঠকদের প্রতি লেখকের মন্তব্য থেকে আমি নিশ্চিত লেখক কোন গবেষনাই করেন নাই। ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ে উনার ‘জ্ঞানের’ সবটুকুই ‘হৃদয়ের(Love)’ বেড়াজালে আবদ্ধ। মহাজ্ঞানী আল্লাহ মুহাম্মাদকে শুদ্ধ করার জন্য ফেরেস্তাদের পাঠিয়েছিলেন মুহাম্মদের “বুক/ পেট”‘ থেকে যাবতীয় ‘কু-বুদ্ধি’ বের করে তাতে ‘সৎ-বুদ্ধি’ চালান করতে। দেখুন,
কারন মহাজ্ঞানী আল্লাহ জানেন মানুষের ‘সু-বুদ্ধি ও কু-বুদ্ধির’ কেন্দ্রস্থল ব্রেন নয়। তার সঠিক স্হান হলো মানুষের “বুক ও পেট”। সে কারনে “আল্লাহ-মুহাম্মাদ (কুরান) ও মুহাম্মাদ-আল্লাহ (হাদিস) এ বিশ্বাসী বান্দারা ‘হৃদয় ও পেট (Gut feeling)’ দিয়ে চিন্তা করেন। গবেষনা করতে দরকার মগজ, আর বিশ্বাস করতে লাগে হৃদয়।
তা হলে কে ছিল ইব্রিহীমের পিতা? পাঠকদের হয়তো অনেকেই তা জানেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত
অনেকেই তা জানতে ইচ্ছুক। দেখা যাক ‘সীরাত ও সহি হাদিস” থেকে এর কোন হদিস পাওয়া যায় কিনা! সীরাত থেকে আমরা জানি,
মাবুর কি সত্যিই ‘খোজা’ ছিল? ইতিহাস সব সময় বিজিতের পক্ষে। কিভাবে তা বিকৃত হয় তার কিছু নমুনা আগের মন্তব্যে লিখাছি। আবু-জেহেলর ধর্য্যে সেদিন সমুহ রক্তাক্ত সংঘর্ষ হলো বন্ধ, কিন্তু পরবর্তীতে নির্লজ্য বিকৃতি ঘটিয়ে হামজাকে দেয়া হলো কৃতিত্ব এবং বীরত্ত্ব (?!) যাহোক মাবুর সত্যিই ‘খোজা’ ছিল কিনা তা আমরা জানিনা। কিন্তু তাকে এবং মারিয়াকে নিয়ে “রটনা ছিল”, এবং আলীকে পাঠানো হয়েছিল তাকে “খুন করতে” তা আমরা স্পষ্ঠ জানতে পারছি। আমরা আরো জানি,
মুহাম্মাদের সমস্ত ছেলে-মেয়ের জন্ম খাদিজার ঘরে। তখন তার বয়স ছিল ২৫-৩৫ বছরের মধ্যে, খাদিজার বয়েস ৪০-৫০ এর মধ্যে। খাদিজার মৃতুর পর মুহাম্মাদ বহু নারীতে আসক্তি ও বহু বিবাহ সর্বজনবিদিত। এই সুদীর্ঘ জীবনে তার কোন স্ত্রীরই কোন বাচ্চা-কাচ্চা হ্য় নাই। সুতরাং প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ‘মুহাম্মাদ ছিল “নির্বীয্ (Impotent)”। কারন বিভিন্ন বয়েসী তার দেড় ডজন স্ত্রীর সবাই বন্ধ্যা হবেন এমন চিন্তা যুক্তিসংগত বা বিজ্ঞান ভিত্তিক নয়। অর্থাৎ আপনার গবেষনার সাথে একমত হয়ে আমরা বলতে পারি, “ইব্রাহিমের বায়োলজিকেল পিতা মুহাম্মদ ছিলেন না।”।
আমরা “বুখারী” থেকে আরো জানি যে ইবারাহীম যেদিন মারা যায় সেদিন ছিল ‘সূর্য্য-গ্রহন’ – লেখক সাহেব যার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ঐদিন মুহাম্মাদ তার নামাজের পরে সম্পুর্ন অপ্রাস্নগিক ভাবে তার সাহাবীদের উদ্দেশে ” Adultery” এর উপর বক্তৃতা দিলেন,
ছেলের মৃত্যু শোকের দিন “এডাল্টারীর” উপর বক্তৃতা এবং তার উক্তি, “By Allah! If you knew that which I know you would laugh little and weep much.”
তা হলে কে ছিল ইব্রিহীমের পিতা? মুক্তমনার পাঠকরা জ্ঞানী – তারা মগজের চর্চা করেন।তারা যে যার মত করে চিন্তা করতে পারবেন।
@গোলাপ,
রেফারেন্স সহ আপনার সুদীর্ঘ মন্তব্যটি সেইভ করে রাখলাম, পরে কাজে লাগতে পারে। এই বিষয়টা আমি উল্লেখ করেছিলাম আয়েশার সাথে এক রজনী প্রবন্ধে। জিব্রাইলের কাছ থেকে ছেলের ভুয়া বার্থ-সার্টিকেট নিয়েও আসল ঘটনা লুকানো যায় নি। ম্যারিয়ার সাথে কাম বানাইয়া দাস ব্যাটা লুকাইলো খেজুর গাছের আগায়, আর ধরা খাইলো হজরত আলীর হাতে। আল্লায় তারে বাচাইছে, যদি নীচে থাকতো তা হলে আলী হয়তো দেখতে পেতেন তার ইয়ে একেবারে ছোট নয়।
@গোলাপ
He opened my heart, and took out from it the pollution of Satan and the clot of blood, and threw them away.
তা’হলে দাঁড়াচ্ছে এই, সভ্যতার প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি অপারেশনটি হয়েছিল মহানবীর ওপর, আর এ যুগান্তকারী ঘটনা থেকেই ইহুদি নাছারা চিকিতসা বিজ্ঞানীরা ওপেন হার্ট সার্জারির ধারণাটি পেয়েছেন। তা’ছাড়া মেরাজের বিস্তারিত বিবরণ দ্বারা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, ইউরি গ্যাগারিন নয়, প্রথম মহাশূণ্যচারী হচ্ছেন মহাপুরুষ মোহাম্মদ!এখানেও বলতে হয়, ইহুদি-নাছারা সহ অমুসলিম সব বিজ্ঞানী মহাশূণ্য ভ্রমণরে তাবত অনুপ্রেরণা মহানবী মোহাম্মদ থেকেই পেয়েছেন। কী বলেন, ভাই শাহেদ ইকবাল?
@আকাশ মালিক, আপনি যে কোন গবেষণা করেননি, তা আপনার মন্তব্য পড়েই বুঝা যাচ্ছে। কারণ, সকল ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থেই তা উল্লেখ আছে। মুহাম্মদ (সাঃ) পৌত্তলিক (মূর্তিপূজারী) ছিলেন না। কোরআন নাজিল হওয়ার আগে থেকেই তিনি একেশ্বরবাদী ছিলেন। তখনকার আরবে এরকম ব্যক্তি আরও কয়েকজন ছিলেন। যেমন, যায়েদ বিন আমর, ওসমান বিন হুয়াইরিস, আবদুল্লাহ্ বিন জাহাস ও ওয়ারাকা বিন নওফেল। কিন্তু কোরআনের জ্ঞান তাঁদের মধ্যে ছিল না। মুহাম্মদ (সাঃ) তৎকালীন আরবের সামাজিক রীতি অনুযায়ী খাদিজাকে বিয়ে করেন। খাদিজার পিতা আগেই প্রয়াত ছিলেন। খাদিজার চাচা ওমর বিন আসাদ নিজে উপস্থিত থেকে আবু তালিব ও অন্যান্যদের দাওয়াত দিয়ে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দুই মেয়ের সাথে আবু লাহাবের দুই ছেলের বিয়েও সেভাবেই হয়। পরে মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম প্রচার শুরু করলে আবু লাহাবের পুত্রদ্বয় তাদের সেই স্ত্রীদের তালাক দেয়। কোরআনে উল্লিখিত আছে, ‘তুমি তো জানতে না কিতাব কি এবং ঈমান কি। পক্ষান্তরে আমি তাকে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। তুমি তো প্রদর্শন কর কেবল সরল পথ।` (সুরা শুরা, ৫২)।
@শাহেদ ইকবাল,
কোরান নাজিল হওয়ার আগে যদি মোহাম্মদ একেশ্বরবাদী ছিল তাহলে তার সে ধর্মের নাম কি ছিল, সে এবাদত করত কীভাবে? তার বাবা মায়ের ধর্ম কি ছিল? সে ৪০ বছর বয়সে নবুয়তের দাবী করেছে, ৬৩ বছরে মারা গেছে। তার জীবনের প্রায় দুই তৃতিয়াংশ সময় অনৈসলামিক ভাবে অতিবাহিত হবার পর কেন তার উপর নবুয়াত নাজিল হল?
তৎকালীন আরবের সামাজিক রীতি কি ইসলামিক রীতি ছিল?
এ জন্যই কি আবু লাহাবের উপরে সাত আসমান থেকে অভিশাপ বর্ষিত হয়েছিল? আর সে অভিশাপ মোহাম্মদের অনুসারীরা ১৪০০ বছর ধরে এখনো এবাদত হিসাবে দিয়ে যাচ্ছে দুই জন মৃত ব্যক্তিকে! আবু লাহাবের হাত দুটি ধ্বংস হোক, আবু লাহাব ধ্বংস হোক। এখানে প্রতিহিংসায় পড়ে কী ভুলটাই না করেছে মোহাম্মদ! আবু লাহাব ধ্বংস হোক বললেই ত হত। আবু লাহাব ধ্বংস হলে কি তার হাত দুটি রয়ে যেত! প্রতি অঙ্গে অঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে অভিশাপ দিতে হয় নাকি? তাহলে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাদ গেল কেন? যেমন পা দুটি,নাকটি, চোখ দুটি, কান দুটি, ঠোঁট দুটি ইত্যাদি।
তার সব মেয়েকে চাচাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিল কেন? আপন চাচা, আপন বেয়াই। চাচাকে চাচা ডাকবে নাকি বায়াই ডাকবে?
ইহুদিরা বিশ্বাস করে তাদের নবি(মুসা)র পর র কোন নবী আসা সম্ভব না। একই ভাবে ক্রিস্টান রা যিশুর পর মানেন না মুহাম্মাদ কে ,মুসলমান রা মানে না কাদিয়ানীদের আর এক মুহাম্মাদ কে যিনি নাকি মেহেদি আকা ঈশা । এসব আজগুবি আলোচনা সময় এর অপচয় । আর কাদসিয়ানিরা অবশই বিশ্বাস করবে না যখন দজ্ঞাল সাহেব এর আগমন হবে। দজ্জাল সাহেব যে পদারপরন করবেন আলোচনা করুন বৈজ্ঞানিক ভাবে। মোহাম্মাদ কে নবী এবং আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ এর জন্য যুক্তি কেন ইকবাল ভাই?।ধরমের কাছে কি যুক্তি টিকে?। নিজেকে জিজ্ঞেস করেন। নিজের সম্মান বাছান। আমাদের ও বাঁচান।
@সপ্তক, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের নিয়ে কোনরকম জেনারেলাইজ করা ঠিক হবে না। তাঁদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ (যাঁদের মধ্যে বিজ্ঞানী এবং তুলনামূলক ধর্মের গবেষকও আছেন) তাঁদের মূল গ্রন্থকে বিকৃত করেননি এবং পরবর্তী নবী সম্পর্কে কোন সন্দেহও করেননি। তাঁরা কোরআন ও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর বিশ্বাস এনেছিলেন। ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের এই বইটা পড়লেই বুঝতে পারবেনঃ
(ইসলামের প্রশ্নের উত্তর- একটি মুসলিম-খৃষ্টান সংলাপ)
@সপ্তক, দুঃখিত। ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের বইটার লিংক আমার উত্তরের সাথে ঠিক মত যায়নি। লিংকটা হলোঃ
http://www.answering-islam.org/Bangla/index.html
@শাহেদ ইকবাল
এটি দেখুন –
httpv://www.youtube.com/watch?v=bxVTjq9gx_Q
কোরানের মিরাকল সম্পর্কে জানতে হলে আরো দেখুন –
httpv://www.youtube.com/watch?v=0XLg-SRGMNk
একটু সময় নিয়ে কষ্ট করে এই লিংকের ভিডুগুলো দেখে ফেলুন –
http://www.youtube.com/user/CEMBadmins
শাহেদ ইকবাল, আপনি বিজ্ঞান ও যুক্তির সাহায্যে যে পর্যালোচনা করেছেন তা অসাধারণ। ভবঘুরের লেখার অসঙ্গতিগুলোও ধরিয়ে দিয়েছেন। মুক্তমনায় যারা লিখছেন, তারা কি এরকম নিজেদের ভাষা ও যুক্তির বিষয়ে আরেকটু সচেতন হতে পারেন না?
@ড হারুন,
ভাইজান, কিছু মনে করবেন না,আপনি কোন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েছেন একটু বলা যাবে কি? শাহেদ ইকবালের নিবন্ধে আপনি যুক্তি কোথায় খুজে পেলেন, দু একটা উদাহরন তুলে ধরবেন ?
@ভবঘুরে,
একই ধরনের নাম থাকলে বিভ্রান্তি হতে পারে। তাই জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন মনে করছি ড: হারুন আর আমি একই ব্যাক্তি নই।
@ভবঘুরে, আগে আপনি শাহেদ ইকবাল-এর সবগুলো যুক্তির পাল্টা যুক্তি দেন। তারপর আমারগুলো দেব। এই ব্লগে কি মানুষের নাম নিয়ে কটুক্তি করা, তাচ্ছিল্য করা—এসব অনুমোদিত? এসবের কি কোন প্রতিকার নাই?
@ড হারুন,@ভবঘুরে,
আপনার নাম নিয়ে কটুক্তি ও তাচ্ছিল্য কীভাবে করা হলো?
ভবঘুরে আপনার কাছে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানতে চেয়েছেন, আপনি কোন বিষয়ে ডক্টরেট করেছেন। এতেই আপনি কটুক্তির আভাস পেয়ে গেলেন!
@ড হারুন,
আমি জানতামনা “ড.” নামের প্রাতিষ্ঠানিক/শিক্ষাগত উপাধিটি নামের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন মনে করছেন আপনার নামের আগে এই উপাধি কি করে যুক্ত হলো এটি জানতে চাওয়া মানে তাচ্ছিল্য করা।
বরং আপনি যদি বলতেন আপনার পিএইচডি কি বিষয়ে তাহলে আমরা একটু আলোকিত হতাম, জ্ঞানের কোন ধারায় আপনি চলাফেরা করেন তা নিয়েও জানতে পারতাম।
যদি বলেন, সেসব প্রশ্ন এখানে অবান্তর। তবে আমি বিনয়ের সাথে বলবো, এই পোস্টে মন্তব্য করতে এসে নামের আগে ‘ড’ বসানোটাও অবান্তর।
ভালো থাকুন।
@নূপুরকান্তি,
আকাশ মালিকের পর আপনিও হাসির বোমা ফাটালেনঃ
@নূপুরকান্তি, এটা আমার নামের অংশ বলেই প্রতিবাদ করেছি। ড মানেই ডক্টর এটা আপনাকে কে বলল? মানুষের নামের সংক্ষেপ তো বহু রকম হতে পারে। বাংলা নামের সাথে ইংরেজি সংক্ষেপ আর দেখেননি? এইচ টি ইমাম কি পুরোটাই ইংরেজি? এ থেকেই বুঝা যায়, কি রকম অনুমাননির্ভর চিন্তা ও ধারণা আপনারা লালন করেন।
বলছেন, “আধুনিক বিজ্ঞান এখনো মেরাজকে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ নয়”। বেশ, যখন সমর্থ হবে তখনি না হয় যুক্তি-প্রমাণসহ মেনে নেবো।তার আগে মেনে নেবার জন্য/ বা অন্ধভাবে বিশ্বাস করার জন্য চাপাচাপি কেন?
যতই অবিশ্বাসী বিজ্ঞানী আর দার্শনিকের দল একটা একটা করে সত্য আবিষ্কার করেছেন, সেসব কথা কোরানে আগেই বলা আছে বলে জিকির ওঠে। ‘কোরানের পেছনে বিজ্ঞান দৌড়াচ্ছে’ – এই টাইপের বালখিল্য কথা বলে লোক হাসাবেননা দয়া করে। বরং কোরানেরই এখন বিজ্ঞানকে প্রয়োজন তার নিজের টিকে থাকার স্বার্থে। বিজ্ঞান তার নিজের মতোই দৌড়াচ্ছে।মানুষের অনুসন্ধিৎসা তথা বিজ্ঞান শিশু অবস্থা থেকে পাড়ি দিয়ে নানান ভুল-ভ্রান্তি আর নীরিক্ষার মধ্য দিয়ে সঠিক তথ্যটি খুঁজে নেবেই। তা সেটা কষ্টের, না একটি গৎবাঁধা জীবনকে সার্বজনীন সর্বকালীন ভেবে স্বর্গের স্বপ্ন দেখা বেশী কষ্টের জানার ইচ্ছে রইলো।
একটি ধর্মগ্রন্থেই যদি ভুত-ভবিষ্যৎ লেখা আছে আর সমস্ত পথ বাতলে দেয়া থাকে তাহলে মানুষের তো প্রশ্ন করার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
এখানেই ধার্মিকতার সংগে বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত পার্থক্য। একটার শুরু বিশ্বাস থেকে, অন্যটির অবিশ্বাস থেকে। দুটোকে মেলানোর চেষ্টা করাটাই বাতুলতা।
দয়া করে লক্ষ্য করুন ধর্ম প্রশ্ন করতে মানা করছে, শুধু সৃষ্টিকর্তাকে প্রশংসা করতে বলছে (সেটাই নাকি তাঁকে জানার মোক্ষম উপায়)। কোন দর্শন এমনটা বলবে কেন? আমি মনে করি এমন চিন্তাধারা মানুষের উন্নতির পথে বাধাস্বরূপ। যা কিছু বলা হয়নি, যা কিছু অদেখা মানুষ তাকে খুঁজে বের করছে এটাই আসলে জ্ঞানে পথ : তাই নয় কি? আমিও জানতে চাই কোরানে কি বলা আছে, গীতায় কি বলা আছে? কোনটি আমার জন্য ভালো। হয়তো কোন একটিই পথ আমার জন্য ভালো নয়। আমাকে হয়তো সব বাজিয়ে দেখেশুনে নিতে হবে। ইসলাম কেন দাবী করবে সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ পথ? মানুষই বা কেন পরীক্ষা না করেই সেটিকে মেনে নেবে। একটি উৎকৃষ্টতর দর্ষহন হিসেবে কেন ইসলাম বলতে পারছেনা আমাকে পরখ করে নাও? কেন বিনাপ্রশ্নে মেনে নেবার কথা আসে? সবশেষে, ঈশ্বর বা আল্লা-র কেন মানুষের এত প্রশংসার প্রয়োজন হবে? প্রশংসা না করা কেন “পাপ” বলে গণ্য হবে?
@নূপুরকান্তি, ‘ইসলাম` শব্দটা নিয়েই আপনাদের যত বিভ্রান্তি। নিজেরা ধর্মগ্রন্থ না পড়ে কেবল শোনা কথার উপর অনেকেই ধারণা করেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দিয়েই ইসলাম ধর্মের সূচনা। আমি যেহেতু ধর্মগ্রন্থ পড়ি, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, এটা ঠিক নয়। তাই আমি তাদের সাথে নেই।
ধর্মের তুলনামূলক গবেষণা (Comperative Religion) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, পৃথিবীতে আলাদা আলাদা ধর্ম বলে কিছু নেই। সব ধর্মই একটি অভিন্ন ধর্মের নানা episode মাত্র। দেশ, কাল ও ভাষার ভিন্নতার কারণে একসময় তা (কিছু মানুষের কাছে) আলাদা আলাদা ধর্ম বলে পরিচিতি পেয়েছে। ধর্মগ্রন্থগুলোতেই এ কথার সমর্থন আছে। যেমনঃ ‘এমন কোন জাতি নেই, যাদের কাছে রসুল প্রেরণ করা হয়নি` (সুরা ইউনুস, ৪৭)। ‘তাঁরা নিজ নিজ জাতীয় ভাষায় প্রচারকার্য চালিয়ে গেছেন` (সুরা ইব্রাহীম, ৪)। ‘আমার রাসুলগণের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদের পাঠিয়েছিলাম, তাদের জন্যও ছিল একই সনাতন নিয়ম` (সুরা বনি ইসরাইল, ৭৭)। ‘এবং তোমাদের এই যে জাতি, এ তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক। অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু মানুষ নিজেদের ধর্মকে বহুধা বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট।’ (সুরা মোমেনুন, আয়াত ৫২-৫৩)। ‘যারা নিজেদের ধর্ম নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল` (সুরা রুম, ৩২)। ‘যারা ধর্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, তাদের সাথে নবীর কোন সম্পর্ক নেই` (সুরা আনআম, ১৫৯)। ‘বারবার দুষ্ট শয়তান প্রকৃতির মানুষ ধর্মকে বিকৃত করেছে, আর বারবার আল্লাহ্তা’লা তা দূর করার ব্যবস্থা করেছেন` (সুরা হজ্জ, ৫২)। ধর্ম নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মানুষ পূর্ব-সংস্কারের কারণে নতুন সত্যকে গ্রহণ করে না এই যুক্তিতে যে, ‘আমরা তো অন্য ধর্মে এরূপ কথা শুনি নাই` (সুরা সাদ, ৪-৭)। সকল নবীকে মান্য করেও মাত্র একজনকেও যদি অস্বীকার করা হয়, তাহলে তা পূর্ণ বিশ্বাস বলে গণ্য হবে না (সুরা নিসা, ১৫০)। ‘তাদের পূর্ববর্তীগণের কাছেও রাসুল আগমন করেছিল সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ (সুরা ফাতির, ২৫)। ‘আমরা তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি (সুরা নাহল, ৩৬)। ‘আমরা রাসুলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না` (সুরা বাকারা, ২৮৬)। ‘তোমার পূর্বে অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি, যাদের কারও কারও কথা তোমাকে বলা হয়েছে, কারও কারও কথা তোমাকে বলা হয়নি` (সুরা মোমিন, ৭৮)। ‘পর্বতের কোন উচ্চতম দুর্গম প্রদেশে বৃষ্টি হলে তা যেমন নানা ধারায় বিকীর্ণ হয়ে পর্বতের নিম্নপ্রদেশে ধাবিত হয়, সেইরূপ যে ব্যক্তি বিভিন্ন দেহের ধর্মানুসারে আত্মাকেও পৃথক পৃথক বলে দর্শন করে, সে ঐ সকল ধর্মের অনুসরণ করে।` (কঠ উপনিষদ, শ্লোক ৮৫, উপনিষদ, অখণ্ড সংস্করণ, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, পৃঃ ১২৭)। ‘ইনি সকলের ঈশ্বর, ইনি সর্বজ্ঞ, ইনি অন্তর্যামী, ইনি সকলের উৎপত্তিস্থল। সকল প্রাণী ইহা হইতে উৎপন্ন হইয়া ইহাতেই বিলীন হয়।` (মাণ্ডুক্য উপনিষদ, শ্লোক ৬, পূর্বোক্ত, পৃঃ ২৫৮)।
এ সকল কারণে এবং তুলনামূলক গবেষণার কারণে মানুষ যতই নিশ্চিত হচ্ছে যে, আলাদা আলাদা ধর্ম বলে কিছু নেই, ততই সে বুঝতে পারছে Universal Humanity-এর স্বার্থে সকলকে এক পতাকাতলে আসতেই হবে। এ কারণেই মানুষ ধর্মের দিকে ঝুঁকছে এবং last edition হিসেবে কোরআনের দিকে ঝুঁকছে। এটা মানুষের সহজাত প্রবণতা। যে কোন আইন, বিধিবিধান, সার্ভিস রুলস এমনকি ILTS-এর বই জোগাড় করতে গেলেও সে last editionটাই সন্ধান করে। এ কারণেই ইসলাম বর্তমান বিশ্বের Fastest growing Religion।
এবার আসি প্রশ্ন করা প্রসঙ্গে। ধর্মে প্রশ্ন করতে মানা করা হয়েছে, এটা একেবারেই একটা অনুমান। কোরআন ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পড়লেই আপনার এই অনুমান বদলে যাবে। দেখবেন, সেখানে অধিকাংশই মানুষের প্রশ্নের উত্তর। হাদিস তো এসেছেই প্রশ্নের কারণে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সহচরেরা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছেন, উত্তরে তিনি যা বলেছেন, তাই-ই হাদিস। কিছু হাদিস তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েও বলেছেন।
বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ নাই, বিরোধ আছে নাস্তিকতার। কারণ কি জানেন? একজন বিজ্ঞানী ও একজন নাস্তিকের মধ্যে বড় পার্থক্য হলো, একজন বিজ্ঞানী যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রমাণ পাচ্ছেন যে ‘নাই`, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ধরে নিচ্ছেন ‘আছে`। যেমনঃ মহাশূন্যে মানুষ ছাড়া আরও বুদ্ধিমান প্রাণী আছে, পৃথিবী ছাড়াও বাসযোগ্য গ্রহ আছে, মাটির নিচে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আছে, সমুদ্রের নিচে আরও অজানা প্রাণী আছে, এ মহাবিশ্ব সৃষ্টির কোন আদি কারণ আছে ইত্যাদি। স্বয়ং Stephen W. Hawking বলেন ‘মহাবিশ্ব কেন এভাবে শুরু হয়েছিল, এ তথ্য ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে একজন ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করার ইচ্ছায় এভাবে কাজ করেছিলেন।` (সূত্রঃ স্টিফেন ডব্লিউ. হকিং, কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ভাষান্তরঃ শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত, বাউলমন প্রকাশন, কলকাতা, পৃঃ ১৩৭)। এই অনুমানের (Hypothesis) উপর তারা মহাশূন্যে একের পর এক অভিযান চালান, সৃষ্টিকর্তার (কিংবা ‘ঈশ্বরকণা`র) অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ান, মাটির নিচে খননকার্য চালান। আর একজন নাস্তিক যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রমাণ পাচ্ছেন যে ‘আছে`, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ধরে নিচ্ছেন ‘নাই`! তাই তিনি ‘দেখা যায় না`, এমন কিছু খুঁজতে যান না। বরং নিশ্চিন্তমনে ঘরে বসে রাজা-উজির মারেন। ‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না` টাইপের চটিবই লেখেন। ফলে দু’জনের পরিণতিও হয় দু’রকম । একজন বিজ্ঞানী যখন অচেনা জায়গায় বা জঙ্গলে ঢোকেন, তিনি ধরে নেন যে, সেখানে কোনো হিংস্র জন্তু থাকতে পারে। তিনি সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যান। আর একজন নাস্তিক নিশ্চিন্ত মনে জঙ্গলে ঢোকেন। কারণ, তার কাছে কোনো ‘প্রমাণ` নেই। তারপর যা হবার, তাই হয়। গাছ থেকে কোন হিংস্র জন্তু তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘাড় মটকানোর সময় তিনি বিশ্বাস করেন যে, এখানে হিংস্র জন্তু আছে। কারণ, তিনি প্রমাণ পেয়ে গেছেন! এভাবেই একজন নাস্তিকের সাথে শেষ পর্যন্ত আজরাইলের (অন্য ধর্মে অন্য নাম আছে, ব্যক্তি একই) সাক্ষাৎ হয়! এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, দু’জনের মধ্যে কার পদ্ধতি বেশি নিরাপদ, তাহলে উত্তর কি হবে? আরও যদি প্রশ্ন করা হয়, যারা ধর্মবিশ্বাসকে ‘অন্ধবিশ্বাস` বলছেন, তারা বিজ্ঞানের যে অনুমান বা Hypothesis- তাকে কি বলবেন? অনুমান বা Hypothesis (যার পুরোটাই বিশ্বাস) ছাড়া বিজ্ঞান কি এক কদমও আগে বাড়তে পারে?
@শাহেদ ইকবাল,
আপনার প্রত্যুত্তরের জন্য ধন্যবাদ। আমার উত্তরটি শুরু করেছিলাম মেরাজ নিয়ে।সেবিষয়ে কোন স্পষ্ট জবাব পেলামনা। প্রশ্নটি আবার করছি, ব্যাখ্যাতীত কোন কিছুকে জানার জন্য আমি কি পরীক্ষা-নীরিক্ষার আশ্রয় নেবো, না কোন গ্রন্থে যেটিকে আলৌকিকভাবে বর্ণণা আছে তাকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নেবো।
আপনি যদি বিনাপ্রশ্নে মেনে নেবার দলে থাকেন এবং মনে করছেন সেটিই (সংশয়বাদী বা প্রশ্ন উত্থাপনকারী পথের তুলনায়) মানুষের জন্যে উত্তম পথ তাহলে কেন তা মনে করছেন জানাবেন।
ইসলাম নিয়ে আমার ‘বিভ্রান্তি’ আছে ‘অনুমান’ করে নিয়ে অনেককিছুই বললেন, অনেক জ্ঞানপ্রাপ্ত হলাম। আমার বক্তব্যের সংগে প্রাসংগিক না হলেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে বলেছেন, “ধর্মের তুলনামূলক গবেষণা (Comperative Religion) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, পৃথিবীতে আলাদা আলাদা ধর্ম বলে কিছু নেই। সব ধর্মই একটি অভিন্ন ধর্মের নানা episode মাত্র।” রেফারেন্স দেবেন , একটু পড়ে দেখবো।
শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি, বিজ্ঞানী, নাস্তিক আর আস্তিকের এই যে শ্রেণীবিভেদটি করলেন সেটি কিসের ভিত্তিতে করলেন একটু জানাবেন। হাইপোথিসিস যখন বলবে, ‘মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণ আছে’, তখন কি আর সেটা হাইপোথিসিস থাকে? বরং তা বলবে, থাকতে পারে নাও থাকতে পারে। থাকার সম্ভাবনা নিয়ে নানান নীরিক্ষা আলোচনা করেই সে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। আর এপ্রসংগে জংগলের যে উদাহরণ টেনে আনলেন সেটি অতিসরলীকৃত ও একেবারেই শিশুসুলভ। কোন আস্তিককেও যদি এরকম করে বলা হয় জংগলে ডাইনোসর নেমেছে তাহলে কি সে বিনাপ্রশ্নে সে মেনে নেবে? আপনিই কি নেবেন। না কি বলবেন, যখন বলা হচ্ছে তখন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও কোথাও না কোথাও আছে নিশ্চয়ই। এক্ষেত্রে দুভাবে আপনি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন : ক। ‘আছে’ ধরে নিয়ে এগুতে পারেন; খ। ‘নেই’ ধরে নিয়েও এগুতে পারেন। দুটোই স্বীকৃত এবং পন্থা ঠিক থাকলে একই ফলাফল নিয়ে আসবে। কিন্তু ফল যেটি পাবেন সেটিকে গ্রহণ করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। ‘আছেই’ ধরে নিলে আর কোন কিছু করারই দরকার পড়েনা কিন্তু।আর হাইপোথিসিস বা বিজ্ঞানের পদ্ধতির মূলে ‘কেবলি বিশ্বাস’ বলে যে দাবীটি করলেন বিনয়ের সংগে জানাই সেটি ভ্রান্ত।
বিজ্ঞানের সংগে ধর্মের ‘বিরোধ নেই’ একথা ধার্মিকরাই বলবে বিজ্ঞানমনষ্করা নয়। বিজ্ঞান একটি চলমান প্রক্রিয়া, আজ যা ঠিক, কাল তা ভুল বলে প্রমাণিত হতেই পারে। আজ বিগ ব্যাং তত্ত্ব দেখে বলা হচ্ছে, কোরানে বলা ছিলো এর কথা। কাল যদি ‘বিগ ব্যাং’ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয় তখন মেনে নেবেন কোরান ‘ভুল’ বলছিলো? না কি কোরানকেই স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিয়ে নতুন কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে তৎপর হবেন।
বলেছেন, “স্বয়ং Stephen W. Hawking বলেন ‘মহাবিশ্ব কেন এভাবে শুরু হয়েছিল, এ তথ্য ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে একজন ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করার ইচ্ছায় এভাবে কাজ করেছিলেন।`”
এসকল যুক্তি এতই অসার আর দুর্বল কি বলবো। স্টিফেন হকিংকে কেন প্রামাণ্য মানছেন? কেন ভাবছেন স্টিফেন হকিং আপনার আমার ঈশ্বরের কথাই বলছে? যা কিছু ব্যাখ্যাতীত সেখানেই ঈশ্বর থাকেন তাই না? কাল যখন অন্য কোন বিজ্ঞানী এই ‘খুবই কঠিন’ ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হবেন তখন কিন্তু স্টিফেন হকিং এই ব্যাখ্যাটিকে পর্যালোচনা করবেন, যাচাই করবেন। আপনি কি করবেন, জানাবেন?
বলছেন, ইসলাম সবচে’ আধুনিক ‘এডিশন’ ধর্মের। কি করে বুঝলেন? কারণ কোরান বলেছে। কি করে নিশ্চিত হলেন, এটির পর আরো ধর্ম বা নির্দেশনা আসবেনা? কারণ কোরানে বলা আছে। যদি মেনেও নেই, ইসলাম আজকে ‘বেশ আধুনিক’ বা ১৫০০ বছর আগে ‘অত্যাধুনিক’ ছিলো তাহলেও কি করে নিশ্চিত হলেন এটি যুগযুগ ধরে উপযোগী থাকবে সব মানুষের জন্য? কারণ কোরান তো বলেই দিয়েছে। আর প্রশ্নের কি প্রয়োজন, তাই তো? ‘প্রশ্ন’ বলতে আমি এমন প্রশ্নকেই বুঝিয়েছিলাম যেগুলো ঈশ্বর বা আল্লার অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলবে। আপনি সেটি এড়িয়ে হাদিসের প্রসংগে চলে গেলেন।তা এমন প্রশ্ন কি ইসলাম অনুমোদন করে কি না আবারো জানতে চাইছি আপনার কাছ থেকে। যদি না করে থাকে, তাহলে তার স্বপক্ষে যুক্তিগুলো দেবেন অনুগ্রহ করে।
@নূপুরকান্তি, ধর্মের তুলনামূলক গবেষণার রেফারেন্স আমার অন্য একটি মন্তব্যে আছে। খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। কোরআনে স্রষ্টা ও সৃষ্টিজগৎ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বাস করা না করা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কোন প্রশ্ন করা যাবে না, এরকম কোন কোরআনের আয়াত কিংবা হাদিস কোথাও নেই। বরং সেখানে আছে, ‘আল্লাহ্র সৃষ্টি বিষয়ে এক ঘণ্টা চিন্তা করা সত্তর বছরব্যাপী প্রার্থনা করার চেয়ে উত্তম (জামিউল আখবার)।
যেহেতু আলাদা আলাদা ধর্ম বলে কিছু নেই, তাই তিনটি শর্ত সাপেক্ষে ইসলাম যে কাউকে যে কোন ধর্ম গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। যেমন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, যারা ইহুদী এবং খ্রিস্টান হয়েছে অথবা সাবেয়ী হয়েছে (কোনো কোনো অনুবাদকের মতে ‘সাবেয়ী` অর্থ তারকাপূজারী; আল্লামা ইউসুফের মতে শিবের অনুসারী) —এদের যে কেউ আল্লাহ এবং বিচারদিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার নিকট রযেছে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত ৬২)।
একইভাবে ইসলাম যে কারও ধর্মীয় ব্যাপারে নাস্তিক হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। যেমন, ‘বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক।` (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৯)। ‘বলো, আমি আল্লাহ্রই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে তাঁরই দাসত্ব করি। অতএব তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যার ইচ্ছা, তার দাসত্ব কর।` (সুরা যুমার, ১৪-১৫) । ‘ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নাই। নিশ্চযই সুপথ প্রকাশ্যভাবেই কুপথ থেকে পৃথক।` (সুরা বাকারা, ২৫৬)। ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে, তারা সকলেই ঈমান আনতো, তবে কি তুমি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে?` (সুরা ইউনুস, ৯৯)।
উপরের reference থেকে এটা পরিষ্কার যে, ধর্মের নামে যে কোন সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ কিংবা ফতোয়াবাজি (সে যে নামেই হোক না কেন) ইসলামে অনুমোদিত নয়। আমরা ধর্ম সম্পর্কে জানব মূল গ্রন্থ পড়ে, অনুসারী দেখে নয়। তা নাহলে জেএমবি, হিজবুত তাহরীর, আল-কায়দা, তালেবান কিংবা শিবসেনাকে ধর্মের উদাহরণ বলে মনে হবে, যেমন ‘জনযুদ্ধ`, ‘সর্বহারা` কিংবা ‘পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টিকে মনে হবে কমিউনিজমের উদাহরণ।
কেবল আক্রান্ত হয়ে আত্মরক্ষা ছাড়া শুধুমাত্র নাস্তিক বা ভিন্নধর্মী হওয়ার কারণে কারও বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করার অনুমতি ইসলামে নেই। এমনকি যুদ্ধকালীন অবস্থায়ও যদি একজন মুশরিক মুসলিমের কাছে আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দিতে হবে এবং সে চলে যেতে চাইলে নিরাপদ জায়গা পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দিতে হবে (সুরা তওবা, ৬)। বর্তমান বিশ্বের কোথাও এরকম আর দ্বিতীয় কোন নজির নেই। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ইহকালে নাস্তিকের কোন শাস্তিও নেই, যা কিছু শাস্তি সবই পরকালে। আর পরকাল মানে না বলেই যেহেতু সে নাস্তিক, কাজেই পরকালের শাস্তির কথায় তার কি আসে যায়? পৃথিবীতে সে quite free.
বিধাতা এ জগতে আলো ও অন্ধকার দুটোই সৃষ্টি করেছেন। তারপর সকল প্রাণীকে পছন্দের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা তাই দেখি, একপ্রকার প্রাণী আলোর দিকে দৌঁড়ায়; একপ্রকার প্রাণী দৌঁড়ায় অন্ধকারের দিকে। মানুষের ব্যাপারটাও তাই। এ স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা। যে কোন আদর্শ গ্রহণের স্বাধীনতা। এতে কারও হস্তক্ষেপ করা উচিৎ নয়। এটা জাতিসংঘের জেনেভা কনভেনশন-এর কথা। বাংলাদেশের সংবিধানেরও কথা।
@শাহেদ ইকবাল,
কোরানে যে সব ভালো বা পজিটিভ কথা বলা আছে তা সম্পর্কে অবগত আছি। আপনি যেসব রেফারেন্স এই উত্তরে দিয়েছেন তা বহুবার শুনেছি। ছোটবেলা থেকে কোরান হাদিস শোনার সুযোগ হয়েছে নানাভাবে। নিজেও কোরান, বোখারী শরিফ পড়ার চেষ্টা করেছি, যদিও স্বীকার করছি পাঠ সম্পূর্ণ করিনি। গভীরভাবে পাঠ করাও হয়নি, তাই অনেক কিছু জানিওনা।
দেখতে পাচ্ছি, কোরানে প্রচুর নেগেটিভ কথাও আছে। বিধর্মীদের বিশ্বাসে স্বাধীনতা দেবার কথার পাশাপাশি তাদের অভিশপ্তও বলা হয়েছে। তাছাড়া নানাভাবে বিশ্বাসীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে বিধর্মীদের ‘পথে’ আনার জন্যে। এটা একটি পরিষ্কার ‘অসংগতি’। কারণ তখন বিশ্বাসটি আর ‘ব্যক্তিগত’ বা দার্শনিক’ পর্যায়ভুক্ত থাকেনা। এরকম বহু অসংগতি চোখে পড়েছে/পড়ছে। এবং এসকল অসংগতির কোন সুস্পষ্ট জবাব পাচ্ছিনা। ওগুলো “নেই” ধরে নিয়ে ভালো ভালো কথাগুলোয় আস্থা রেখেও তো শান্তি পাচ্ছিনা/নিশ্চিন্ত হতে পারছিনা।
এবং এসব অসংগতিপূর্ণ কথার পেছনের ব্যাখ্যাগুলো কি কি? যদি ভালো কথাগুলো অনুসরণ করে এবং প্ররোচণামূলক কথাগুলো না মেনে (যেমন স্ত্রীকে শাসন বা পেটানোর মতো কথাগুলো। অনেকেই এ প্র্যাকটিস করেননা জানি, তবে ধর্মে যেহেতু বলা আছে মানেন যে এ অধিকার তাঁদের আছে) ভালোভাবে চলা সম্ভব তাহলে কোরান কি সর্বাংশে গ্রহণ করা হলো? কোরানে কি একথা বলা আছে যে এটাকে খণ্ডিতভাবে গ্রহণ করা যাবে? যদি বলেন এধরণের নির্দেশ তখনকার জন্য বাস্তবসম্মত ছিলো, এখনকার জন্য নয়, তাই সেসব এসেছে, তাহলে তো কোরান আজকের প্রাসংগিকতা হারিয়েছে (বহু ক্ষেত্রেই)। একটি স্বর্গীয় পুস্তক হিসেবে কেন সেটি কিছু উপযোগী ‘সংযোজনা’ দিতে পারেনা (বা দিয়ে রাখেনি), যে, “তোমরা অমুক শতাব্দী হইতে তমুক শতাব্দী পর্যন্ত এসকল বা সেসকল নিয়ম গ্রহণ বা বর্জন করিতে পারো”?
কোরানের কথাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্র্যাকটিকাল ও স্ট্র্যাটেজিক। একটি নতুন মত বা ধর্মকে এগিয়ে যেতে হলে যে পরিমাণ রাজনীতি, কূটনীতি, সমাজনীতির শরণাপন্ন হতে হয় তার সবই সেখানে আছে। সেই সাথে আছে শাসনের, নরকের আগুনের ভয় আর নানান ব্যাখ্যাতীত ঘটনার মিশেল। সবটা মিলিয়ে উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। ইসলাম প্রচারের জন্য শুধু সন্তদের উপর নির্ভর করে থাকলে তা বহু আগেই থেমে যেতো। এর সফল অগ্রযাত্রার জন্য সামরিক অভিযানের প্ররোচনা দেয়া হয়েছে আর তার ফল পেয়েছে ইসলাম। ‘শুধু বাধ্য’ হলে আক্রমণ করতে বলা হয়েছে বলছেন। কে যে কিসে ‘বাধ্য’ বোধ করছে তা কে নির্ধারণ করবে?
আল্লাহ সম্পর্কে অধিক প্রশ্ন না করার যে ‘উপদেশ’টি রয়েছে তার রেফারেন্স এমুহূর্তে হাতের কাছে নেই। খুঁজছি। কেউ হয়তো সাহায্য করতে পারবেন।
ঠিক তাই। আরো জানার চেষ্টা করছি।
সবশেষে : কোরান বা ইসলামে যেসব পজিটভ কথা আছে সেগুলো জেনে বা পড়ে যদি ধর্মটিকে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে হয়, নেগেটিভ বা অসংগতিপূর্ণ কথাগুলো জানা/বোঝার পর কেন উল্টোটি করতে ইচ্ছে হবেনা?
একটি সামগ্রিক এবং নির্মম সমালোচনার নেবার মত পরিণত ‘মানসিকতা’ কি ইসলাম নামক “দর্শন”-এর আছে?
@নূপুরকান্তি,
মোক্ষম মন্তব্য, আমার মতে সবচেয়ে সেরা মন্তব্য। কিছু সুস্পষ্ট জবাব আপনি পাবেন এই লিঙ্কে মন্তব্য সেকশানে (গোলাপ এর জবাব: অক্টোবর ২৮th, ২০১০ at ৪:১৪ অপরাহ্ণ), আর এই ভিডিও থেকে।
3 things about Islam:
httpv://www.youtube.com/watch?v=KcQE3hvasMA&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=KcQE3hvasMA&feature=related
@নূপুরকান্তি, আমার মন্তব্যটা কষ্ট করে আরেকবার পড়ে দেখুন। ‘শুধু বাধ্য’ হলে আক্রমণ করার কোন প্রসঙ্গ সেখানে নেই। সেখানে বলেছি, ‘কেবল আক্রান্ত হয়ে আত্মরক্ষা ছাড়া শুধুমাত্র নাস্তিক বা ভিন্নধর্মী হওয়ার কারণে কারও বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করার অনুমতি ইসলামে নেই।`কোরআনের অবস্থান এখানে সুস্পষ্টঃ ‘দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করে নাই তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ্ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।`(সুরা মুমতাহিনা, ৮)। হাদিস বলছে, ‘মনে রেখো, যদি কোন মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে শেষ বিচারের দিন আমি রাসুল তার বিরুদ্ধে পক্ষ নেব।` (আবু দাউদ)। আমার মূল প্রবন্ধেই উল্লেখ করেছি, যুদ্ধ পরিচালনাকালে মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বাহিনীর অধিনায়ককে এই মর্মে নির্দেশ দেন যে, ‘আমাদের ক্ষতির প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরিবারের অন্তরালস্থিত নিরীহ ব্যক্তিদের অবমাননা করবে না; নারীদের অব্যাহতি দেবে; শিশুদের কিংবা পীড়িত ব্যক্তিদের আঘাত করবে না। বাধাদান করে না এমন অধিবাসীদের গৃহ ধ্বংস করবে না; তাদের জীবিকার অবলম্বন বিনষ্ট করবে না, তাদের ফলের গাছও নষ্ট করবে না, তাদের খেজুর গাছও স্পর্শ করবে না।` (সূত্রঃ স্যার সৈয়দ আমীর আলী, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, ডঃ রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১৬৩)।
আপনি লিখেছেন, ‘ইসলাম প্রচারের জন্য শুধু সন্তদের উপর নির্ভর করে থাকলে তা বহু আগেই থেমে যেতো। এর সফল অগ্রযাত্রার জন্য সামরিক অভিযানের প্ররোচনা দেয়া হয়েছে আর তার ফল পেয়েছে ইসলাম।` বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেও কি এ কথার অসারতা বোঝা যায় না? আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা বিশ্বের সবখানেই মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু তারপরও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার বাড়ছে। ইসলাম বর্তমানে পৃথিবীর Fastest Growing Religion। প্রাথমিক যুগেও ঠিক তাই হয়েছে। মুসলিম ও ইসলাম যত আক্রান্ত হয়েছে, ততই তা মানুষের সমর্থন ও সহানুভূতি পেয়েছে।
আপনার লেখা থেকে জানলাম, কোরআন-হাদিস সম্পূর্ণভাবে পড়েননি। আমার আন্তরিক অনুরোধ, এ দুটো জিনিস এবং প্রামাণ্য ইতিহাস গ্রন্থগুলো পড়ে দেখুন। ভারতবর্ষের ইতিহাস পড়লে নিজেই জানবেন, কিভাবে ভারতবর্ষে ইসলাম এসেছে। ইসলামকে যাঁরা সামগ্রিকভাবে জেনেছেন, তাঁদের (যেমন, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, নিজামুদ্দিন আউলিয়া, খান জাহান আলী) মৃত্যুর পরেও তাঁদের Accommodation Power কি আপনার চোখে পড়ে না? তাঁদের সমাধিতে গেলেই তো বোঝা যায়, তাঁদের কাছে ধর্মের কোন ভেদ ছিল কি-না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ কি খুলনার খান জাহান আলী (র)-এর মুরিদ ছিলেন না? তখন থেকেই ওই বংশধারার সাথে ‘পীরালি` শব্দটা জড়িয়ে গেছে। ইরানের কবি হাফিজ ও শেখ শাদীর মাজারে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ কি বলেছিলেন, তা ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলিম সমাজ` গ্রন্থে বিস্তারিত পাবেন। বইটি ২০১০ সালের বইমেলায় ‘প্রথমা প্রকাশন` বের করেছে। যা বলছিলাম, এই আউলিয়া বা সন্তুদের হাতেই ভারতবর্ষসহ সর্বত্র ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। মুসলিম শাসনকালেও যদি জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণের ঘটনা ঘটত, তাহলে সাতশ` বছর শাসন করার পরও দিল্লীতে মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যালঘু থাকে কি করে? সবচেয়ে বড় কথা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ কখনও টেকে না। ১৯৭১ সালে কি আমরা পাকসেনাদের হাতে এরকম উদাহরণ দেখিনি? স্বাধীনতার পর এর একটাও কি টিকেছে? বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ১.৪ কোটি অমুসলিম (ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু) নির্ভয়ে পুরুষানুক্রমে বসবাস করছে। তাদের একজনের কাছ থেকেও কি কখনও কোন অভিযোগ পাওয়া গেছে? আরও বিস্তারিত জানার জন্য নির্বোদের মন্তব্যের জবাবে আমার পোস্টটি দেখতে অনুরোধ করছি।
ইসলামের যা কিছু নেতিবাচক দিক বললেন, কোরআন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দূর হয়ে যাবে। হয়তো ধর্মবিরোধীদের বিভিন্ন লেখায়, বিকৃত অনুবাদে, আউট অব কনটেক্সট কিছু উদ্ধৃতি পড়েছেন, যার আগের ও পরের বাক্য সেখানে নেই। সেগুলো পড়লেই দেখবেন গোটা অর্থ বদলে যাচ্ছে। একটি অসৎ সুযোগসন্ধানী চক্র তাদের অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে বিশ্বে সাম্প্রদায়িক হানাহানি জিইয়ে রাখতে চায়। তারাই এ অপপ্রচারণার পাইওনিয়ার। তারা সুরা তওবা শুরু করে ৫ নম্বর আয়াত দিয়ে। কিন্তু ৫ নম্বর আয়াত দিয়ে কোন সুরা শুরু হয় না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগবে, আগের আয়াতগুলো কোথায়? তারপর এক লাফে তারা ৭ নম্বর আয়াতে চলে যায়। কেন জানেন? ৬ নম্বর আয়াতে আছে, যুদ্ধকালীন অবস্থায় যদি কোন শত্রু (মুশরিক) মুসলিমের কাছে আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দিতে হবে এবং সে চলে যেতে চাইলে নিরাপদ জায়গা পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দিতে হবে। যুদ্ধরত অবস্থায় এরকম আচরণের দ্বিতীয় কোন নজির আধুনিক বিশ্বের আর কোথাও আছে কি?
@শাহেদ ইকবাল,
মূল গ্রন্থের কিছু মহান বাক্যের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক।
১ চোরের হাত কেটে দাও। ৫ঃ৩৮
২ পত্নী প্রহারের মহান উপদেশ ৪ঃ৩৪
৩ দাসী ও যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে নিঃসংকোচে,অবাধে সংখ্যাতীতভাবে যৌনতার পবিত্র লাইসেন্স ৪ঃ২৪, ২৩ঃ৫ঃ৬, ৩৩ঃ৫০, ৭০ঃ২৯ঃ৩০
তালাকপ্রাপ্তা পালিতপুত্রবধুকে বিবাহের নজির বিহীন সুমহান অনুমোদন ৩৩ঃ৩৭ঃ৩৮
৪ কাফেরদের গর্দানে আঘাত কর , আঘাত কর আঙ্গুলের গাইটে গাইটে ৮;১২
৫ গনিমতের মালের ভাগাভাগী ৮;৪১;৬৯
৬ মুশরিকদিগে হত্যা করবে,বন্দী করবে,অবরোধ করবে। তাদের জন্য ওঁৎ পেতে রবে, যদি তারা তওবা করে, নামাজ পড়ে, যাকাত দেয় তবে ছেড়ে দেবে ৯;৫
৭ দোররা মার ব্যভিচারীদের, জনসমক্ষে ২৪;২
আরো অনেক অনেক আয়াত আছে এ রকম ভয়ানক।
দাসী ও যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে ব্যভিচার করলে দোররা মরতে হয়না কেন?
@শাহেদ ইকবাল,
বাঙ্গালি জাতির জন্যে বাংলাভাষী রসুলের নামটা যেন কী ছিল?
@আকাশ মালিক,
তখন ত বাংলাভাষার জন্ম হয়নি তাই সে সময়ে আল্লাহপাক বাংলাভাষী কোন রসুল পাঠাতে পারেননি। কিছু দিন হলো আমাদের কাজী রহমানের উপর বাংলা ভাষায় আসমানী কিতাব নাজিল হওয়া শুরু হয়েছে। মুরশেদও সম্প্রতি ছাগলের পিঠে চড়ে মিরাজ ভ্রমন করে এলেন তিনি নিজের হাতে বাংলায় মুক্তমনাতে লিখেছেন। বাংলায় লিখেছেন যাতে আমরা বুঝতে পারি। তারপরেও অবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করবেনা?
@তামান্না ঝুমু,
বাংলা ভাষা জন্মিবে এবং আরো ঘটনা ঘটিবে বলিয়াই তো কোরানের পাক চিপায় ঘাপলা সামলাইতে এই সকল আয়াতঃ
বাকারা 2: 106
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
আল ইমরান 3:07
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।
সূরা নাহল 16:101
এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।
দুষ্ট লোকেরা নানা যুক্তি দিতে থাকিবে, তাহাতে কি, ইহাতে কি আল্লাহের পৃথিবীর আকাশ ধসিয়া পড়িবে নাকি উহা টলিবে? খাম্বা ছাড়া পাক আকাশ কি সৌন্দর্য মণ্ডিত, আর পাক পাহাড় দিয়া এই পাক গ্রহকে অটল করা হইয়াছেঃ
সূরা লোকমান 31:10
তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে টলে না পড়ে
জ্ঞানীকে কদর করিতে হয়, উহারা সর্বদা নাস্তিকদিগকে মাইঙ্কাচিপায় ফালাইতে সচেষ্ট নানা রকম কথা কহিয়া ( দুষ্টেরা যদিও ইহাকে ফ্যালাসি কহে )
জ্ঞানী লেখককে কখনো পাল্টা চিপায় ফালাইতে হয় না, উহারা চলিবে উহাদের পথে, বাকিরা চলিবে বাকিদের পথে। উহারা চিপায় পড়িলে কখনো কহেন মহাম্যাড কহিয়াছে আবার কখনো কহেন আল্লাহ কহিয়াছেন। তাহাদের জন্য মহাম্যাডের অস্তিত্ব প্রমান করা কোন ব্যাপারই নহে, আর আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমান গায়েবে, উহাই তো ঈমানঃ
যাহাই হউক, এমুহূর্তে মৃদু ঘন্টাধ্বনি শুনিতে পাহিতেছি, কি জানি কি হয় :-s
@কাজী রহমান,
হে নবী রহমান দরুদ, আপনার উপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম কি? আপনার উপর কোন ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব পড়েছে? মিরাজে যাবার কোন সম্ভাবনা কি আছে? যদি যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তাহলে নবী মোহাম্মদের মত একা না গিয়ে আমাদের কয়েকজনকে সাথে নিয়ে গেলে ভাল হয়। অবিশ্বাসীরা যখন অবিশ্বাস করবে তখন আমরা সাক্ষী দেব। আল্লাহ পরম দয়ালু, জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, পরাক্রমশালী।
@তামান্না ঝুমু,
কিতাবের নাম ‘পাক কিতাব’, গ্যাব্রিয়েল হুজুর ধর্মের নতুন কোন নাম হইবে কি না তাহা জিজ্ঞাসা করিতে গিয়াছেন, তিনি ফিরিলেই জানা যাইবে। ইত্যবসরে মুক্তালেম পাক জনাবে আবুল কাশেম ও মুক্তালেম মহাপাক জনাবে আকাশ মালিক ভাবিতে বসিবেন। মেরাজ গমনের বিপূল সম্ভাবনা রহিয়াছে। তবেহ, তবেহ শুধুমাত্র একদা দূরদ্বীপবাসিনী নারীগনই সফরে যাইতে পারিবে; পুরুষ নহে। আল্লা হ নিশ্চয় মহা বিবেচক।
@কাজী রহমান,
পুরুষ কেন আপনার সফরসঙ্গী হইতে পারিবেনা? ইহা ত তাহাদের প্রতি সুবিবেচনা নহে। সফরে যাওয়ার কালে ক্যামেরা সঙ্গে নিতে ভুলিবেননা। আল্লাহ পাকের পাক ছবি তুলিয়া আনিবেন। অবিশ্বাসীদেরকে দেখাইয়া দিবেন যে আল্লাহ পাক সত্যিই আছেন। আপনাদের কথোপকথন ভিডিও করিয়া আনিবেন। তখন নাফরমানেরা পালাইবার পথ পাইবেনা। নিজের নামে কোন কলেমা রচনা করিয়াছেন কি, নাকি এখনো তাহা পারিয়া উঠেন নাই?
@তামান্না ঝুমু,
দেখুন তো এ কলোমাটি কেমন লাগে?
আল্লাহ খোদা ভগবান
অবশ্যই শেষ নবী কাজী রহমান
অবশেষে পোক্ত হইল আমাদের ঈমা’ন। (Y)
@সফ্টডক,
হ্যামদুলিল্লাহ, সকল প্রসংশাই তাহার।
@সফ্টডক,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রহমানুর রাসুলুল্লাহ।
@আকাশ মালিক,
মূল লেখা পড়ার পর মন্তব্যগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলাম। ধার্মিকদের একটা সমস্যা হলো তারা সাধারণ জ্ঞান-গম্যি, খুব সহজ কথা, সহজ করে বুঝতে পারে না। তাদের সাথে সৈকত বা গোলাপ বা হেলাল বা ভবঘুরের মত এত বিশাল তথ্যের ভান্ডার নিয়ে হাজির হইনি কখনো। অবশ্য এত তথ্যও আমার ছিল না। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নামার মত প্রয়োজনও অনুভব করিনি। এই বিদেশে একবার এক আড্ডায়, একজন আমেরিকান শিক্ষক আমার সাথে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেক কথা বললন। সব শুনে আমি শুধু ছোট্ট করে বলেছিলাম, তোমার প্রশ্নের কোন উত্তর আমি দিতে পারবো না। সুতরাং উত্তর দিতে না পারা বা অজ্ঞতাই কি ঈশ্বর? শিক্ষক মহাশয়ের সাধারণ জ্ঞান-গম্যির প্রশংসা করতে হয়। আমার কথা শুনে মৃদু হেসে বলেছিলেন, বেশ বললে তো!
তারপর আপনি গোপাল ভাড়কে পেছনে ফেলে হাসির বোমাটা ফাটালেনঃ
এখন ঘুমাতে গিয়ে উচ্চ হাসিতে ফেটে না পড়লেই রক্ষা।
@আকাশ মালিক,
ইউনুস আর ইব্রাহীমে আছে সন্ধান
বাঙালির নবী কবি কাজী রহমান
@ আকাশ মালিক ভাই,
হ, ঠিকইতো কইছেন। আমগো রসুল কই? মহান নবি কবি কাজী রহমান কে অনুরোধ করি এখন আপনিই একমাত্র ভরসা। যেহেতু আপ্নের কাছে অহি নাজেল হইতাছে তাই আপনি নিজেকে রসুল হিসেবে ঘোষণা করুন এবং শাহেদ ইকবাল সাহেব তথা পবিত্র কুরানের মুখ রক্ষা করুন। নিশ্চয়ই রসুলের মর্যাদা নবির উপ্রে।
@সুমন,
কবূল কবূল কবূল
@শাহেদ ইকবাল,
আপনি কেন ধরে নিলেন নাস্তিকেরা আপনারা যেভাবে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাসী হন, সেভাবে চোখ বন্ধ করে বলা শুরু করে যে আল্লাহ নেই। একজন আস্তিক হওয়া বরং সহজ কেননা ঐশী গ্রন্থ যা বলেছে যাচাই বাছাই না করে নির্বিচারে বিশ্বাস করেই আস্তিক হওয়া যায়, কিন্তু একজন নাস্তিক অনেক প্রশ্ন করে, জেনে বুঝে, নিজের সাথে, পারিপার্শ্বিকতার সাথে যুদ্ধ করে নিজের ভেতর থেকে আস্তিকতার শিকড় উপড়ে ফেলে। আমি বলি নাস্তিকতা এই ছোট্ট জীবনে অনেক বড় একটি অর্জন। আর আপনি জঙ্গলের ভেতরে ঢোকার যে উদাহরন দিয়েছেন, সেটি আমার কাছে বরং উলটো শোনাচ্ছে। কারন বিশ্বাসীদের যদি বলা হয় কুরান বলেছে এই জঙ্গলে কোনো হিংস্র জন্তু নেই, সে চোখ বন্ধ করে নবির দরুদ পড়তে পড়তে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকবে। তারপর যা হবার তাই হবে, হিংস্র জন্তু তার ঘাড় মটকে খাবে। কুরান, নবি কিম্বা আল্লাহ কিন্তু তখন বাঁচাতে আসবেনা। অপরপক্ষে একজন নাস্তিক কি করবেন? উনি আল্লা কুরানের কাছে বুদ্ধি ধার না দিয়ে বরং এলাকায় খোঁজ নেবেন আদৌ সেখানে কোনো হিংস্র জন্তু আছে কিনা? কারন নাস্তিকেরা নিজ জীবনটাকে বড় বেশী ভালবাসেন, আল্লার মাল ভাবেন না। নাস্তিকেরা ভালো করেই জানেন আল্লা ভগবান আমাদের বাঁচাতে আসবেনা, নিজের চিন্তা নিজেরই করা লাগবে। আশা করি বোঝাতে পেরেছি। আর একটা অনুরোধ করবো নাস্তিকরা বিজ্ঞান বিরোধী; নাস্তিকতা সম্বন্ধে জেনে শুনে তবেই এধরনের মন্তব্য করবেন। আফটার অল আপনাদের ধর্মানুভুতির মত আমাদেরও তো নাস্তিকানুভুতি আছে, নাকি!
শুধু আস্তিকদেরই নয়, নাস্তিকদের সম্মন্ধে সাধারন মানুষেরও কোন স্বচ্ছ ধারনা নেই। অনেকই নাস্তিকদের নিয়ে অনেক অবান্তর প্রশ্ন এবং ভুল ধারনা পোষন করেন। এ সকল ‘উৎভট’ ধারনার কারন মুলত” নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আস্তিকদের ‘মিথ্যাচার’, যা হাজারো বছর ধরে চলে আসছে। সে সবের জবাবে এই ভিডিওটা আমার দারুন লেগেছেঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=42SIMslxIvA&feature=player_embedded#!
http://www.youtube.com/watch?v=42SIMslxIvA&feature=player_embedded#!
@গোলাপ,
ধন্যবাদ, ভিডিও লিংকটার জন্য।
@শাহেদ ইকবাল,
স্টিফেন হকিং-এর অংশগ্রহণে ডিসকাভারি চ্যানেলের সাম্প্রতিকতম ডকুমেন্টারি: এ বছরে (২০১১) অগাষ্টের ৭ তারিখে দেখানো হয়েছে। দেখুন নতুন কোন তথ্য পান কিনা।
Curiosity: Did God Create the Universe?
httpv://www.youtube.com/watch?v=BuOxTiotS9Y&feature=player_embedded
http://www.youtube.com/watch?v=BuOxTiotS9Y&feature=player_embedded
httpv://www.youtube.com/watch?v=9CFKfmdUZoE&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=9CFKfmdUZoE&feature=related
httpv://www.youtube.com/watch?v=OgXJJ68-xAo&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=OgXJJ68-xAo&feature=related
দুঃখিত! মনে হচ্ছে ভিডিওটা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
এই ভিডিওটা দেখতে পারেনঃ
Stephen Hawking’s Universe – The Story of Everything (2010) -( 82 minutes)Stephen
http://vimeo.com/17777145
স্টিফেন হকিং-এর অংশগ্রহণে ডিসকাভারি চ্যানেলের সাম্প্রতিকতম ডকুমেন্টারি: এ বছরে (২০১১) অগাষ্টের ৭ তারিখে দেখানো হয়েছে।
ভিডিও গুলো নতুন URL ঠিকানায় পোষ্ট করা হয়েছেঃ
Curiosity S1E1 – With Stephen Hawking [ Did God Create the Universe ] 1080p 1/3
httpv://www.youtube.com/watch?v=GUeK7jaDyG4&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=GUeK7jaDyG4&feature=related
Curiosity S1E1 – With Stephen Hawking [ Did God Create the Universe ] 1080p 2/3
httpv://www.youtube.com/watch?v=E7Z4ZDnjHSQ&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=E7Z4ZDnjHSQ&feature=related
Curiosity S1E1 – With Stephen Hawking [ Did God Create the Universe ] 1080p 3/3
httpv://www.youtube.com/watch?v=pP41CLUh7vU&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=pP41CLUh7vU&feature=related
@গোলাপ,
ভিডু গিয়াছে তো কি হইয়াছে, কোবতে তো রহিয়াছেঃ দেখুন
@কাজী রহমান,
লিঙ্কখানি আসলে এখানে
শাহেদ ইকবাল// আপনার লেখাটা পড়ে অবাক হলাম। ‘মুক্তমনা` কিভাবে ভবঘুরের লেখাটা যাচাই না করে ছাপাল সেটাই আমার প্রশ্ন। একটা রেফারেন্সও তো ঠিক নাই। আপনি এই রকম পর্যালোচনা আরও লিখুন। তাতে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। আশা করা যায়, কিছু ভ্রান্ত লোকের বোধোদয় হবে।
আপনার বানান শুদ্ধি চমৎকার, বিশ্বাস শুদ্ধি আরো অধিক দৃঢ়, তবে যুক্তিতে আপনি খুবি অন্ধ ও অশুদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে আপনার জ্ঞান আমাকে সত্যি বিস্মিত করেছে। বুদ্ধ রাজ্যসুখ, স্ত্রী পুত্র, রাজ ভোগের মজাদার রকমারি স্বাদ ছেড়ে ছুড়ে দুঃখ মুক্তির আশায় বনে জঙ্গলে স্বল্পআহারে, স্বল্পনিদ্রায়, তপস্যা করে কাটিয়ে ছিলেন ছয় ছয়টা বছর। তপস্যা মানে শুধু চোখ বুঝে থাকা নয় এখানে তপস্যা করেছেন তিনি আপন মনের ভুবনে, চিন্তা জগতে ক্রমাগত ভেবে চলেছিলেন মুক্তির উপায়।ভাবতে ভাবতে এক সময় বৌদ্ধ ধর্মের মূল স্তম্ভ চারি আর্য সত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ, নির্বান তত্ত্বের মত জটিল তত্ব দুঃখ মুক্তির এক মাত্র উপায় বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। এই তত্ত্ব তো ভাই কোন ফেরেস্তা তাকে কানে কানে বলে যায়নি কিংবা স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত বার্তা বলেও তিনি কোথাও ঘোষনা দেন নি বরং তাঁর দর্শন প্রচারের মাধ্যমে যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন তা আগাগোড়া ঈশ্বর তত্ত্বের বিপক্ষে যায়। যেখানে তিনি স্পষ্ট করেছেন অদৃশ্য কোন শক্তির নিকট পূজা অর্চণা প্রার্থনার আদৌ কোন ফল নাই। আর সেই নাস্তিক বুদ্ধকে দিয়ে কিনা আপনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন প্রবল আস্তিক্যবাদী ভোগ প্রবন মুহম্মদ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণীর!
এতে আপনার কি দোষ দিব। আপনি এই ধরনের হীন যুক্তিতে পুরোপুরি দেওয়ানা হয়ে কপি করেছেন আপনাদের গুরু ইসলামের নব্য নবী ৫ মিনিটে ২৫টা মিথ্যা বলা জাকির নায়েক থেকে। অনেকে অবশ্য আদর করে তাঁকে এজন্য জোকার নায়ক হিসাবে ডেকে থাকেন। তাঁর এক দীর্ঘ বক্তৃতা আছে এ বিষয়ে। আগ্রহীরা চাইলে শুনতে পারেন-
httpv://www.youtube.com/watch?v=vrlE4R5Sy9U
@শাহেদ ইকবাল,
আচ্ছা ভাই বলেনতো মেরাজের সময় মহাশূণ্যে মহানবী কিভাবে অক্সিজেন পেতেন?
বিরাট এক গল্প ফেঁদে বসেছেন শাহেদ সাহেব।এটাকে নিছক একটা গল্প বলাও বোধ হয় ঠিক হল না।প্রতিবাদ আকারে মুক্তমনায় মৌলবাদীর আগ্রাসন বলা যায় বোধ হয়।লেখকের কিছু বলার থাকলে তিনি ভবঘুরের লেখাতেই কমেন্ট করতে পারতেন।এর জন্য আলাদা পোষ্টের প্রয়োজন ছিল না।মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ কিভাবে এরকম একটি মৌলবাদী সমর্থনপুষ্ট মুক্তমনা নীতিমালা বিরোধী লেখা প্রকাশ করলো ভাবতে অবাক লাগে।কাল যদি হয়রান সাহেব একই ভাবে এধরণের আরেকটি লেখা এখানে প্রকাশের অনুরোধ জানায় আর যদি তা মুক্তমনা থেকে প্রকাশ হয় তাহলে তো ‘সদালাপ’ নামের ব্লগের আর কোন প্রয়োজন থাকবে না।
@বোকা বলাকা,
গল্প পড়তে আমার খুব ভাল লাগে। আর মুক্তমনা ছাড়া অন্য ব্লগে খুব একটা যাওয়া হয়না। দু-একটা এরকম গল্প যদি মডারেটররা ছাড় না দেয় তবে যে রূপকথার গল্প পড়ার সুযোগ হতে যে বঞ্চিত হব।
হিন্দুধর্মের কাহিনীগুলোর স্বাদ থেকে এগুলো একটু অন্যরকম। কারন হিন্দুধর্মের কাহিনী পুরোটাই কাল্পনিক কিন্তু এই কাহিনীগুলো অনেকটা বাস্তব ও কল্পনার মিশ্রন।
@বোকা বলাকা,
রায়হান সাহেব এক সময় নিয়মিত মুক্তমনায় লিখতেন। সদালাপও তখন চালু ছিল।
বৈচিত্র্যকে ধারণ করার, ভিন্নমতকে সহ্য করার ক্ষমতা মুক্তমনার অনেক বেশি। তাছাড়া এই লেখাটা ভবঘুরের লেখার প্রতিক্রিয়া বা পর্যালোচনা। নীতিগতভাবে এটা প্রকাশ করতে আমরা বাধ্য। একেবারে অর্থহীন, অযৌক্তিক, প্রলাপপূর্ণ, বিদ্বেষভরাক্রান্ত বা গালিগালাজময় লেখা হলে অবশ্য ভিন্ন কথা ছিল। লেখাটায় যুক্তির অনেক দুর্বলতা আছে। সেগুলোকে যৌক্তিকভাবে খন্ডণ করার সুযোগও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। লেখাটা কেন প্রকাশ হলো সেই অভিযোগ না করে, বরং এ সুযোগটাকেই দু হাত ভরে তুলে নেওয়া উচিত মুক্তমনাদের। হেলাল, ভবঘুরে, সৈকত চৌধুরী, গোলাপসহ অনেকে সেই সুযোগটা নিয়েছেনও দেখতে পেলাম।
@ফরিদ আহমেদ,
এ প্রয়াস, অভিনন্দন যোগ্য।
@ফরিদ আহমেদ, মুক্তমনার এই লেখা ছাপানোটা খুবই এপ্রেশিয়েট করেছি। মুক্তমনা মনে হয় একমাত্র ব্লগ যেখানে ধর্ম নিয়ে সুস্থ আলোচনার স্কোপ আছে, তাই এখানে শুধু ধর্মের সমালোচনামূলক পোষ্ট ছাপিয়ে একে অপরের পিঠ না চাপড়িয়ে একই সাথে সমালোচনার সমালোচনাটাও ছাপানো উচিত।
আরেকটা উপদেশ দিব যে এরকম আলোচনায় যেসব অতিথি অশালীন ও আক্রমণাত্মক করবে, সেগুলোর স্ক্রিনশত যাতে নিয়ে রাখা হয়। বিভিন্ন ব্লগে কিছু অপপ্রচার দেখা যায় যে মুক্তমনায় ধর্মের সমালোচনার জবাব দিলে তা প্রকাশ করা হয় না।
@রনবীর সরকার, আমার মূল প্রবন্ধে আইনস্টাইনের Matter Transmission Theory দিয়ে প্রমাণ করেছি যে, এ পদ্ধতিতে মেরাজ সম্ভব। সেক্ষেত্রে বস্তুকে প্রথমে শক্তি ও পরে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করলে অক্সিজেনের প্রশ্ন আসছে না। আরবী ভাষায় বিদ্যুতের (বারক) Superlative Degree হলো বোরাক। বোরাককে সে অর্থে ধরা হলে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব। কোরআনে মেরাজ শুরু হওয়ার স্থান সম্পর্কে বর্ণনা আছে, এছাড়া আর কোন কিছুর বর্ণনা (যেমন, বোরাকের আকৃতি ইত্যাদি) নেই।
আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান সেই অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল বা আপনার থাকলে আপনারা এ ধরনের উদ্ভট কথা লিখতেন না বা বিশ্বাস করতেন না। আমার লেখা নিবন্ধে আপেক্ষিক তত্ত্বের কিছু বর্ননা উদাহরন সহকারে লেখা আছে, আগে সেটা পড়ুন ভাল মতো তার পর এটা নিয়ে কথা বললে তা যুক্তি যুক্ত হবে।
আপনার পরিচিতিতে লিখেছেন আপনি একজন লেখক , কবি ইত্যাদি। আপনাদের মত মানুষরা এসব লাইনে আছেন বলেই এখন বোঝা যাচ্ছে কেন বাংলাদেশের মানুষদের মন মানসিকতা সামনের দিকে না বেড়ে পশ্চাদ্দিকে ধাবিত হচ্ছে। আপনি চালিয়ে যান, দেখুন দেশটাকে ১৪০০ বছর পিছনে ফিরিয়ে নিতে পারেন কি না। বাস্তবে তো আপনাদেরকে এসব কথা বলতে পারি না , তাই এ অন্তর্জালই ভরসা। আমার ভাগ্য ভাল আপনাকে কথাটা বলতে পারলাম।
@ভবঘুরে, না, ভবঘুরে সাহেব, না। এভাবে হবে না। আপনার এই মন্তব্যে কাজ হবে না। যারা আপনার লেখা এবং আমার পর্যালোচনা পড়েছেন, তাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনার ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` প্রবন্ধের প্রতিটি অনুচ্ছেদের উপর আমি রিভিউ করেছি। সেই প্রবন্ধে কুটযুক্তি বা হেত্বাভাস (Fallacy), বিকৃত ও খণ্ডিত উদ্ধৃতি, ভুল তথ্য, অনুমাননির্ভরতা, স্ববিরোধিতা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা প্রয়োগের কি কি প্রমাণ আছে, তা ৫৯টি অনুচ্ছেদে উদাহরণ, যুক্তি ও তথ্য দিয়ে দেখিয়েছি। আপনাকেও সেভাবে অনুচ্ছেদওয়ারী মন্তব্য করতে হবে। তা নাহলে এটাই প্রতিষ্ঠিত হবে যে, আমি যা লিখেছি, তাই-ই সত্য আর আপনার কথাগুলো অসত্য। যেমন, আপনি যে ভুল তথ্য দিয়ে পাঠকদের বিভ্রান্ত করেছেন, আপনার উদ্ধৃত লিংকে যে আপনার কথার বিপরীত তথ্য পাওয়া গেছে (আমার লেখার তৃতীয় থেকে সপ্তম অনুচ্ছেদ), এটা আপনাকে খোলা মনে ‘মুক্তমনা`র পাঠকদের কাছে স্বীকার করতে হবে। এটা স্বাভাবিক সৌজন্যের দাবী।
যদি বলেন, অত দীর্ঘ লেখা পড়ার সময় করতে পারছেন না, তা-ও ধোপে টিকছে না। তাহলে ১-৫৬ অনুচ্ছেদ পার হয়ে ৫৭তম অনুচ্ছেদে গেলেন কিভাবে? সেই অনুচ্ছেদে অন্য ধর্মগ্রন্থে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উল্লেখ সম্পর্কে আমি যা বলেছি, তা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। আপনার এই মন্তব্যও ভুল। অন্য ধর্মগ্রন্থগুলো সম্পূর্ণ বিকৃত—এটা কোন মুসলমান বলে না। বলা হয়, সেখানে কিছু বিকৃতি (Fabricate) করা হয়েছে। এই বিকৃত গ্রন্থগুলোর মধ্যেও যদি কোন জিনিস কমন পাওয়া যায়, সে অবস্থায় সাধারণ যুক্তিবিদ্যা কি বলে? আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ দেখেছেন? দশজন সাক্ষী যদি দশ রকম সাক্ষ্যও দেয় এবং সবার সাক্ষ্যের মধ্যে একটি বর্ণনা যদি কমন পাওয়া যায়, আদালত তা গ্রহণ করে। এটা হলো আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক পদ্ধতি। আপনি বলেছেন, ‘কি কি কিতাবে মোহাম্মদের কথা লেখা আছে? হিন্দুদের অল্লোপনিষদ, ভবিষ্য পুরাণ ইত্যাদি। অথচ ঐতিহাসিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে–আদিতে এসব কোন কিতাব হিন্দুদের ছিল না। উপমহাদেশে মুসলমানদের রাজত্বকালে হিন্দুদের কথিত কিতাবসমূহে এসব সংযোজন করা হয়েছে এমনকি নতুনভাবেও অনেক কিতাব লেখা হয়েছে।` আপনার ফন্ট ভেঙে গিয়েছিল, আমি ঠিক করে নিলাম। যাই হোক, ঐতিহাসিক সেই গবেষণার একটু Reference যদি দেন, খুব উপকার হয়। আমি কি শুধু হিন্দুদের অল্লোপনিষদ, ভবিষ্য পুরাণ-এর কথা বলেছি? বেদ, উপনিষদ, ওল্ড টেস্টামেন্ট, বাইবেল—এসবের কি হবে? Old testament-এর Song of Solomon chapter 5 verse 16-অরিজিনাল হিব্রু ভার্সনে ‘Muhammad`শব্দটা এখনও রয়ে গেছে। (দেখুনঃ “Hikko Mamittakim we kullo Muhammadim Zehdoodeh wa Zehraee Bayna Jerusalem.” বাইবেলের ইংরেজী অনুবাদে এই বাক্যের অর্থ করা হয়েছে, ‘His mouth is most sweet: yea, he is he is altogether lovely. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem`)। অর্থাৎ ‘Muhammadim` শব্দের অর্থ করা হয়েছে ‘altogether lovely`। হিব্রু ভাষায় কারও নামের সাথে সম্মানসূচক অর্থে ‘im` যোগ করা হয়। তার মানে এখানে অরিজিনাল নামটা Muhammad। মুহাম্মদ আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষার শব্দ নয়। কাজেই অন্য কোন ভাষায় এ নাম দেখলেই বুঝতে হবে, এমন কোন ভিনদেশী লোকের কথা বলা হচ্ছে, যিনি জাতিগতভাবে আরব এবং তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ`। যেমন, আমরা বাংলায় লিখি আইনস্টাইন, নিউটন ইত্যাদি। ওল্ড টেস্টামেন্টের ইংরেজি অনুবাদকের আচরণেই তো প্রমাণিত যে, এখনও তাঁরা ঐ নামটা লুকাতে চাইছেন। যেমন লুকাতে চেয়েছেন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়েও। তাঁরা নিজেরাই সেটা ওখানে ঢুকালে আবার লুকাতে চাইবেন কেন?
গবেষণা থেকে জানা যায়, হিন্দুধর্ম কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের ধর্ম হওয়ায় উক্ত শ্রেণী ছাড়া পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য বেদ পাঠ, শ্রবণ ও দর্শন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এবং তার জন্য অমানুষিক শাস্তির বিধান রাখা হয়। সেই সাথে ভারতবর্ষের বাইরে ধর্মপ্রচার এমনকি ভ্রমণ করাও নিষিদ্ধ করা হয় (সূত্রঃ বেদ ও পুরাণে আল্লাহ্ ও হযরত মোহাম্মদ, মূল রচনাঃ ধর্মাচার্য ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, অনূবাদঃ অধ্যাপক ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডঃ গৌরী ভট্টাচার্য, পৃঃ ৮৫)। যীশুখ্রিস্টও নিজেকে কেবলমাত্র বনি ইসরাঈলদের নবী বলে ঘোষণা করেন এবং অন্য জাতির নিকট ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ করেন। (সূত্রঃ St. Mathew, 7:6, 15:24,26)। তদুপরি এ সকল ধর্মগ্রন্থের ভাষা হিব্রু ও সংস্কৃত হওয়ায় তা সাধারণের নিকটও অবোধগম্য ছিল। এছাড়া, ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও পার্সী (জরথুস্ত্র) ধর্মের অনুসারীগণ মুহাম্মদ (সাঃ)-কে শেষনবী বলে স্বীকার করেন না। তাঁদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন। যার কারণে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে চরম শত্রুতায় লিপ্ত হন। এমনকি প্রাণনাশেরও চেষ্টা চালান। ভারতবর্ষেও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে। কাজেই এটা হতে পারে না যে, এ সকল ধর্মের অনুসারীগণ নিজেরাই তাঁদের ধর্মগ্রন্থে এ সকল তথ্য ঢুকিয়ে নিয়েছেন। বরং ইতিহাস বলছে, ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় নানাভাবে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই তাঁদের ধর্মগ্রন্থের এ সকল অংশ গোপন করেছে। আবার একই সময় তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে গোপনে যাচাইও করেছে। যখন দেখেছে তথ্য মিলে যাচ্ছে, তখনও তাঁর নবুয়তের সত্যতা স্বীকার করেনি। বরং আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে। আরও শত্রুতা করেছে। যেমন, করছে এখনও। মদীনার সেই তিনজন ইয়াহুদী ধর্মযাজকের ঘটনা স্মর্তব্য, যা আমার পর্যালোচনায় (১৯তম অনুচ্ছেদে) Reference সহ উল্লেখ আছে। কিন্তু আল্লাহ্ স্বয়ং জানেন, তাঁর অবতীর্ণ আগের কিতাবে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কি লেখা আছে। তাই তিনি সেই সব কিতাবধারীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে (মুহাম্মদ) সেইরূপ জানে যেইরূপ তারা নিজেদের সন্তানদেরকে চিনে এবং তাদের একদল জেনেশুনে সত্য গোপন করে থাকে।`( সুরা বাকারা, ১৪৬)। ‘হে কিতাবীগণ! তোমরা কেন আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার কর, যখন তোমরাই সাক্ষ্য বহন কর? হে কিতাবীগণ! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর এবং সত্য গোপন কর, যখন তোমরা জান?`(সুরা ইমরান, ৭০-৭১)।
Aramaic Braodcasting Network এবং এরকম আরও লিংক আমি দেখেছি। সেখানে Escapist কিছু ‘পণ্ডিত`আছেন, যারা নিজেদের চ্যানেলে কোন মুসলিম পণ্ডিতকে কথা বলতে দেন না, কথার মাঝখানে Interrupt করেন, সময় কেটে দেন। আবার নিজেদের চ্যানেলের বাইরে এসে কোন মুসলিম পণ্ডিতের সাথে বিতর্কে যেতেও তাঁরা রাজি নন। একমাত্র ড, উইলিয়াম ক্যাম্পবেল ও ফাদার রুকনিদিন ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন খ্রিস্টান পণ্ডিত ড. জাকির নায়েকের সাথেও বিতর্কে যেতে রাজি হননি। এই ‘পণ্ডিত`দের কার্যকলাপের নমুনা দিচ্ছিঃ ব্রিটেনের ধর্মযাজকগণ সুরা ফাতেহার যে অনুবাদ করেন, তার বাংলা হলো এরকমঃ সকল প্রশংসা আমাদের ঈশ্বর দয়াময় মুহাম্মদের জন্য। হে লোক সকল, আনন্দধ্বনি কর এবং সেই মুহাম্মদ ভগবানের উদ্দেশ্যে বলিদান কর। তবেই আমাদের ভীষণ শত্রুরা দমিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে (সূত্রঃ Ecclasticcal History of England, Normandy, Vol-III, p. 175)। লিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেসুইট ফ্যাকাল্টির ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক ফাদার কুরিয়ার বাইবেলের যাত্রাপুস্তক অধ্যায়ের পাদটীকায় ফেরাউনের মৃত্যু সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কোরআনের (১০: ৯০-৯২) আয়াতে ফেরাউনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। এতে বহুল প্রচলিত কাহিনী এই যে, ফেরাউন তার লোক-লস্কর সহ সমুদ্রে ডুবে যায় (এই ঘটনার উল্লেখ কিন্তু পবিত্র বাইবেলে নেই) এবং সেখানে সমুদ্রের তলদেশে জীবিত থেকে সে সমুদ্রের মানুষ অর্থাৎ সীল মাছের উপর রাজত্ব করতে থাকে` (সূত্রঃ বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান, পৃঃ ৩৮০)। কোরআনের ওই সুরা দুটো পড়লেই দেখবেন, সেখানে কি লেখা আছে আর এরা কি বলছে। ড, উইলিয়াম ক্যাম্পবেল ও ফাদার রুকনুদিনের সাথে ড. জাকির নায়েকের বিতর্ক আমি দেখেছি। এরা দুজনই তুলোধূনো হয়েছেন এবং প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি। উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে বিতর্ক হয় ১৯৯৭ সালে, আমেরিকার শিকাগোতে। ফাদার রুকনুদিনের সাথে আরও কয়েক বছর পরে। তারপরই তাঁরা সতর্ক হয়ে যান। এমনকি নিজ নিজ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন জাকির নায়েকের বিদেশ ভ্রমণ Restricted করার জন্য। যার প্রেক্ষিতে ব্রিটেনে তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়। আমেরিকায়ও নানা হয়রানির শিকার হন। ড. জাকির ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হন। এসব ঘটনা নিশ্চয়ই আপনার জানা। এই তো আপনার খ্রিস্টান পণ্ডিতদের বিতর্ক করার সাহস, গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধির নমুনা?
‘মোহাম্মদ হলেন আল্লাহর নবী। প্রমাণ কোথায়? প্রমাণ হলো- কোরানে তা বলা আছে। কোরান কার কাছে অবতীর্ণ হয়েছে? মোহাম্মদের কাছে।` এ রকম কোন বাক্য আমার লেখায় নেই। এটা আপনাদের তৈরি এমন একটি হেত্বাভাস, যা কোরআন কিংবা মুহাম্মদ (সাঃ)—কারও জন্যই লাগে না। কোরআন আল্লাহ্র বাণী কি-না, এটা বোঝার জন্য কোরআনই যথেষ্ট। তার জন্য জিবরাইলকেও লাগে না। যেমন, Big Bang Theory বোঝার জন্য কাউকে ১৫ বিলিয়ন বছর অতীতে যাওয়া লাগছে না। অন্যান্য ঘটনা থেকেই বিজ্ঞান তা অনুমান (Hypothesis) করে নিয়েছে। তেমনি কোরআনেও বিভিন্ন বর্ণনা দেখে এ কালের বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটা সপ্তম শতাব্দীর কোন লোকের রচনা হতে পারে না। এটা ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ। এ বিষয়ে Referenceসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্যপ্রমাণ আমার পর্যালোচনায় দেয়া আছে। কিন্তু সে সম্পর্কে কোন পাল্টা যুক্তি না দিয়ে এই নতুন হেত্বাভাস আমদানী করছেন কেন?
‘নবী চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন’—এ বর্ণনা আমার নিজের নয়। এ বর্ণনা হাদিসের ও জীবনীগ্রন্থের। সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত আছে। আমি Reference দিয়েই তা উল্লেখ করেছি। কেন করেছি, তা-ও আপনি জানেন। তারপরও মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে খণ্ডিতভাবে এই উদাহরণ নিয়ে এসেছেন। আপনার প্রবন্ধে বলা হয়েছিল, ‘এমন কোন গাধা আছে যে এ ধরনের অলৌকিক ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদকে নবী মানত না?`আরও বলা হয়েছে, ‘এই একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষগুলোর সামনেও যদি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ করা যেত, সিংহভাগ মানুষই মোহাম্মদকে নবী মানত।` তাই আমিও চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা উল্লেখ করে জানতে চেয়েছি, আরবের লোকেরা তো এ ঘটনাও দেখেছে বলে দাবী করে। তাহলে তাঁকে নবী মানল না কেন?
ওই যে আপনি লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বলে থাকে যে-আল্লাহর সকাশে যেতে মোহাম্মদের সাড়ে তের বছর সময় লেগেছিল আর ফিরে আসতেও একই সময় লেগেছিল অর্থাৎ মোট সময় লেগেছিল সাতাশ বছর`—এই কেউ কেউদেরই একজন হলেন অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল। তিনি আমার লোক না, তিনি আপনারই লোক। এঁরাই মেরাজের পরস্পরবিরোধী বর্ণনা (স্থান, কাল, বাহন) দিয়েছেন। যার কারণে মেরাজ নিয়ে এত ভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কোরআনে মেরাজের সময় ও বোরাকের কোন বর্ণনা নেই। শুধু মেরাজ শুরুর স্থান বলা আছে মসজিদুল হারাম অর্থাৎ কাবা শরীফ, যা হাদিসেও আছে।
আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের যে ব্যাখ্যা আপনার প্রবন্ধে আছে, সেটা যে ভুল তা আমার লেখায় বৈজ্ঞানিক তথ্যসহ প্রমাণ করেছি। আপেক্ষিক তত্ত্ব আসলে কি, কোথায় আপনি ভুল করেছেন, তাও পরিষ্কার করা হয়েছে। সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পাল্টা যুক্তি ও তথ্যসহ আপনার মন্তব্য ‘মুক্তমনা`র পাঠকদের পাওনা হয়ে গেছে। তা না করে ‘আমার লেখা নিবন্ধে আপেক্ষিক তত্ত্বের কিছু বর্ননা উদাহরন সহকারে লেখা আছে`—এই কথাগুলো ভাঙা রেকর্ডের মত বলতে থাকলে হবে না। আপনি যা করছেন, তা মুক্তমনা নীতিমালার ২.১৮ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
আমার লেখায় তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র কাবাগুহ থেকেই মেরাজে গমন করেছেন এবং সেখানেই আবার প্রত্যাবর্তন করেছেন। ‘মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর চাচা আবু তালিবের মেয়ে উম্মে হানির প্রেমে পড়েছিলেন ও বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর চাচা রাজী হন নি`—আপনার এই কথাগুলোকেও চ্যালেঞ্জ করেছি। বলেছি, এই তথ্যের সমর্থন কোথাও নাই; না হাদিস, না ইতিহাস। এই পর্যায়ে আপনার করনীয় ছিল Reference দেওয়া। কিন্তু তা না করে আপনি আবারও প্রশ্ন করছেন, ‘মিরাজের মত এমন মহা অভিযাত্রা কেন তার গোপন প্রেমিকার ঘর থেকে শুরু হবে?` এ যেন সপ্তকাণ্ড রামায়ণ পড়ে জানতে চাওয়া যে, ‘সীতা কার বাপ?` এসব হাস্যকর প্রশ্ন না করে আপনাকে পাল্টা যুক্তি ও Reference দিতে হবে। দেখাতে হবে যে, আমার উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণ ভুল। তবে কোন অসমর্থিত (Un-authentic) যেনতেন লিংক দেখালে হবে না।
এই দেশটাকে কারা ১৪০০ বছর পেছনে নিয়ে যাচ্ছে, তা তো এখন পরিষ্কার। মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নবী না মানেন, তাঁর আগমনকালে আরবের সার্বিক অবস্থা কেমন ছিল, তা তো মানবেন? সবগুলো ইতিহাসগ্রন্থেই তার অভিন্ন বর্ণনা আছে। আজ এই স্যাটেলাইট যুগে এক শ্রেণীর মানুষের ভাষা, আচরণ ও জীবনযাত্রা দেখে মনে হচ্ছে সেই বর্বরতার ও জাহেলিয়াতের (অজ্ঞতার) দিনগুলো বুঝি আবার ফিরে আসছে।
আগেই লিখেছি, আপনার প্রবন্ধে কুটযুক্তি বা হেত্বাভাস (Fallacy), বিকৃত ও খণ্ডিত উদ্ধৃতি, ভুল তথ্য, অনুমাননির্ভরতা, স্ববিরোধিতা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা প্রয়োগের কি কি প্রমাণ আছে, তা ৫৯টি অনুচ্ছেদে উদাহরণ, যুক্তি ও তথ্য দিয়ে দেখিয়েছি। সেই যুক্তিগুলো খন্ডন না করে যতই নিজ প্রোপাগান্ডাকে বিনা রেফারেন্সে সত্য হিসেবে জাহির করতে থাকবেন, যতই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করবেন, যতই মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আমার কথার খণ্ডিত উদ্ধৃতি দেবেন, ততই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হবে যে, আমার প্রবন্ধের অভিযোগগুলো সত্য। বুদ্ধিমান পাঠকরাও বুঝে ফেলবেন আসল ঘটনা কি। কেউ কেউ এর মধ্যেই বুঝে ফেলেছেন যে, থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। আমার লেখার জবাব আপনার কাছে নাই। এ কারণেই আপনার কথাবার্তায়ও অসংলগ্ন ভাব চলে এসেছে। বস্তুনিষ্ট আলোচনার পথ ছেড়ে আমার লেখক-পরিচয় নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, কটাক্ষ করছেন, তাচ্ছিল্যমূলক উক্তিও করছেন। এটা যে ‘মুক্তমনা` ব্লগের নীতিমালার (অনুচ্ছেদ ২.৯ ও ২.১১) লঙ্ঘন, সেই হুঁশ-জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছেন। এটা থেকেই আপনার অবস্থা সকলের বোঝা হয়ে গেছে।
ভাল থাকুন। শুভকামনা।
@শাহেদ ইকবাল,
আরবি ভাষা হিব্রু ভাষা থেকে উদ্ভুত হয়েছে, যেমন বাংলা হয়েছে পালি থেকে। হিব্রু Mohammadin শব্
@শাহেদ ইকবাল,
ভাইজান,
আরবি ভাষা ও হিব্রু ভাষার উৎস এক। তাই হিব্রু ভাষাতে Mohammadin শব্দ যার অর্থ altogether lovely যা আবার একটা বিশেষণ তা আরবী ভাষাতে থাকাটা কি খুব অস্বাভাবিক? আর যদি তা থাকে তা দিয়ে কি মোহাম্মদকে বোঝাবে নাকি? আপনার এ ধরনের উদ্ভট তত্ত্ব গ্রহন করার অর্থ অন্য যে কোন ভাষায় রচিত অন্য যে কোন ধর্মীয় কিতাবে যেখানেই altogether lovely জাতীয় শব্দ পাওয়া যাবে তার অর্থ হবে মোহাম্মদ। তাই নয় কি ? ভাইজান, এ ধরনের উদ্ভট যুক্তি আর কথা বার্তা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মত দেশের গ্রামে গঞ্জে বসবাসরত সাধারণ মানুষের সামনে দিলে তারা বাহবা দেবে, এখানে নয়। তারপরেও আপনার বক্তব্য সত্য ধরে নিলে নীচের যে নারীটির সম্পর্কে উত্তেজনাকর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে সে নারীটির সম্পর্কে দয়া করে বলুন , নারীটি কে?
Old Testament, Chapter:04, Verse : 01-11
@ভবঘুরে,
দু:খিত উপরের Old Testament, Chapter:04, Verse : 01-11 এর স্থলে হবে Old Testament, Songs of Solomon. Chapter:04, Verse : 01-11
@শাহেদ ইকবাল,
ভাইজান, ড. উইলিয়াম ক্যম্পবেল জাকির নায়েকের মত ভাঁড় নন যে উল্টা সিধা কথা বলে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে চালাবেন। উনি উত্তর দিতে পেরেছিলেন কিনা তা জানতে নিচে ক্লিক করুন, ওখানে ওনার একটা বই বাংলাতে অনুদিত আছে-
ইসলামের প্রশ্নের উত্তর- একটি মুসলিম-খৃষ্টান সংলাপ
তাই নাকি? শোনেন ভাইজান। জাকির মিয়া অনেক আগেই ফাঁকা ময়দানে যা তর্ক বিতর্ক করেছেন। উপরে উল্লিখিত খৃষ্টান পন্ডিতদের সাথে স্বপ্নেও জাকির মিয়া তর্কে যাবেন না। কারন গেলেই ওনার গোমর ফাঁক হয়ে যাবে, আর ইসলামের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যাবে। Aramic Broadcasting Network কয়েকটি বিতর্ক একটু মনযোগ দিয়ে শোনেন আপনি নিজেও তা টের পাবেন। তবে ওনাদের সমস্যা একটা আছে তা হলো ওনারা বিতর্কের মাধ্যমে খৃষ্টান ধর্মকে সত্য প্রমান করতে চান। আসলে ইসলাম ও খৃষ্ট ধর্ম সহ সব ধর্মই অসার ও ভূয়া। ওনারা খৃষ্টীয় ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার ধান্ধায় না থেকে যদি খালি ইসলাম ধর্মের আসল রূপ তুলে ধরার প্রকল্প হাতে নিতেন তাহলে তা আরও বেশী কার্যকরী হতো। তার পরেও ওনারা ইসলামকে যেটুকু প্রকাশ করছেন সেটার ধাক্কাতেই ইসলাম কতদিন টেকসই হয় দেখার বিষয়। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করুন। সবে তো শুরু। ওরা তো এই সেদিন মাঠে নামল। আর আপনার জাকির মিয়া তো সেই অনেক আগে থেকে মাঠে ছিল একচ্ছত্র ভাবে। এবার জমবে ভাল।
@ভবঘুরে, আগেও দেখেছি, আবারও দেখলাম, আপনার সবগুলো উদ্ধৃতিই আপনার বিপক্ষে যায়। এবারও (ইসলামের প্রশ্নের উত্তর- একটি মুসলিম-খৃষ্টান সংলাপ) তাই হলো। লিংকটা আমি দেখেছি। বইটাও (‘ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে কোরআন ও কিতাবুল মোকাদ্দস`, ডঃ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল) পড়েছি। পড়ে যা পেলাম, সবই আপনার জন্য হতাশাজনক। যেমনঃ
এক. এটি ড. জাকির নায়েকের সাথে সেই বিতর্কের জবাব নয়। সেই বিতর্ক সম্পর্কে এখানে বিন্দুমাত্রও উল্লেখ নেই। এটি ড. মরিস বুকাইলির ‘বাইবেল, বিজ্ঞান ও কোরআন` সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা।
দুই. বইটির প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬ এবং দ্বিতীয় প্রকাশ ২০০২ সালে। বাংলা অনুবাদ ২০০৮ সালে। এ থেকেই অনুমান করতে পারেন, ড. জাকিরের কাছে তিনি কি পরিমাণ তুলাধূনা (১৯৯৭ সালে, শিকাগোতে) হয়েছিলেন। যার কারণে এই বইয়েও তার কোন জবাব দিতে পারেননি। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ড. জাকির ও উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের মধ্যে সেই বিতর্কের স্থান ও বিষয় দুটোই ছিল উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের নির্ধারণ করা। কাজেই তাঁর বিতর্কের সমস্ত সুবিধা সেখানে ছিল। সেই বিতর্ক অনুষ্ঠানে ড. জাকির নায়েক বাইবেল থেকে মোট ২৮টি Contradiction ও Scientific ভুল তুলে ধরেন। যেমন, সূর্য সৃষ্টি হওয়ার আগেই পৃথিবীতে গাছপালা তৈরি হওয়া, পিতার জন্মের আগেই পুত্রের জন্ম হওয়া ইত্যাদি। ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল তাঁর বক্তব্য শুরু করেন এই কথা দিয়ে যে, এসব Contradiction ও Scientific ভুলের কোন ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই। অন্ধ বিদ্বেষ দ্বারা তাড়িত না হয়ে সিডিগুলি (Quran, Bible and Science, CD 2-5) অনলাইনে গিয়ে দেখতে পারেন। লিংকটা হলোঃ
http://www.youtube.com/watch?v=6MBB8edQPZE&feature=related
এবার আসি আসল কথায়। ‘ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে কোরআন ও কিতাবুল মোকাদ্দস` গ্রন্থে ডঃ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল কোরআনের নিচের আয়াতগুলো উদ্ধৃত করে প্রমাণ করেছেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ) ও কোরআন সম্পর্কে তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জিলেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছেঃ
১. ‘যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহারা বলে, ‘তুমি (মুহাম্মদ) আল্লাহ্র প্রেরিত নহ।’ বলো, আল্লাহ্ এবং যাহাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে, তাহারা আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।’ (সূরা রা’দ, ৪৩)
২. ‘আমাদের জন্য নির্ধারিত কর দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করিয়াছি।` আল্লাহ্ বললেন, ‘আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছা দিয়া থাকি আর আমার দয়া—তাহা তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি উহা তাহাদের জন্য নির্ধারিত করিব যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে। যাহারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মী নবীর, যাহার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জিল, যাহা তাহাদের নিকট আছে তাহাতে লিপিবদ্ধ পায়।` (সুরা আ’রাফ, ১৫৬-১৫৭)
৩. ‘জিবরাইল (রুহুল আমিন) সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়, ইহা লইয়া অবতরণ করিয়াছে তোমার হৃদয়ে, যাহাতে তুমি সতর্ককারী হইতে পার। পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে (জবুর) অবশ্যই ইহার উল্লেখ আছে। বনি ইসরাইলের পণ্ডিতগণ ইহা অবগত আছে—ইহা কি তাহাদের জন্য নিদর্শন নহে?` (সুরা শু’আরা, ১৯২-১৯৭)
৪. ‘বল, ‘তোমরা কোরআনে বিশ্বাস কর বা বিশ্বাস না কর, যাহাদিগকে ইহার পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছিল, তাহাদের নিকট যখন ইহা পাঠ করা হয় তখনই তাহারা সিজদায় লুটাইয়া পড়ে এবং ইহা তাহাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।` (সুরা বনি ইসরাইল, ১০৭-১০৮
৫. সুরা আ’রাফ ৭: ১৬৮-১৭০ এই তিনটি উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি নিজের মতামত দিয়েছেন এভাবেঃ ‘এখানে বলা হয়েছে, কোরআন নাজিল সম্পর্কে ‘পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে অবশ্যই ইহার উল্লেখ আছে`। ‘বনি ইসরাইলের পণ্ডিতগণ ইহা অবগত আছে`। বিশ্বাস করার আগেই তাহাদিগকে ইহার পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছে। তাহাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং তাহাদের কাছে কিতাব আছে আর অন্যরা হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-কে বিশ্বাস না করলেও তাদের কাছে থাকা কিতাব ‘অধ্যয়ন করে`। (পৃঃ ৬০)।
৬. সুরা শূরা ১৩-১৪, সুরা বায়্যিনা ৪, সুরা বাকারা ২৫৩, সুরা ইমরান ১৯, সুরা মায়িদা ১৫-১৬ উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ‘রোমীয় ও বাইজেন্টাইন খ্রীস্টান জামাতকে ভণ্ড জামাত বলেছে। কিন্তু তাদের সকলের কাছে একই কিতাবুল মোকাদ্দস ছিল; যেভাবে শিয়া ও সুন্নী মুসলমানদের একই কোরআন থাকা সত্ত্বেও তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।` (পৃঃ ৬৫)।
৭. সুরা বাকারা ৪০-৪৪, ৮৫, ৮৯, ৯৭, ১০১, ১৪০, ১৪৬, ১৫৯, ১৭৪, সুরা ইমরান ৬৯-৭১, ৭৫, ১৯৯, সুরা হুদ ১১০, সুরা আন’আম ৮৯-৯২ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘কোরআন সাক্ষ্য দিয়েছে এবং প্রত্যয়ন করেছে যে, ইহুদীদের কাছে নির্ভুল তৌরাত কিতাব ছিল, আর তারা এই কিতাব অধ্যয়ন করত। অবিশ্বাসী ইহুদীরা অন্যদের ধার্মিক জীবনযাপনের জন্য বললেও তারা নিজেরা তা পালন করতে ভুলে যেত; কারণ, যখন তারা কোরআনকে অস্বীকার করেছে, আর তাদের কিতাবের মধ্যে থাকা সত্যকে গোপন করেছে, তখন তারা মিথ্যের মধ্যে ছিল। কোরআন এই সাক্ষ্যও দিয়েছে যে, আহলে কিতাবীদের মধ্যে এমন অনেক লোক ছিলেন, যারা সম্পূর্ণ সৎ লোক ছিলেন। আর তাঁরা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করতেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার তওরাতের পাশাপাশি কোরআনও বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এখানে এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ্র নিকট থেকে এমন কোন কথা বলা হয়নি যে, এমনকি অবিশ্বাসী ইহুদীরা তাদের তওরাতের লিখিত শব্দ পরিবর্তন করেছে। আর আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম ও মুখাইরিখের মত অনেক ইহুদী নবীর বাণী গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছিল, তাঁরা অবশ্যই কিতাব পরিবর্তন করেননি। (পৃঃ ৬৮-৬৯)।
৮. সুরা বাকারা ৭৫-৭৯, সুরা নিসা ৪৪-৪৭, সুরা মায়িদা ৪১-৫১ উদ্ধৃত করে তিনি বলছেন, ‘পরবর্তী ৩টি আয়াতে আমি বিশ্বাস করি যে, কোরআন অল্পসংখ্যক ইহুদীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তারা কেবল তাদের তাওরাতের আয়াত পরিবর্তন করেনি, এমনকি তারা হযরত মুহাম্মদ (দঃ) যখন কোরআন তেলাওয়াত করতেন বা ব্যাখ্যা করতেন তাঁর কথাকেও তারা বিকৃত করে বা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলেছে।` (পৃঃ ৭০)।
৯. তিনি বলেছেন, ‘কোরআন তার আগের কিতাবের সমর্থক, যা ‘তাদের নিকটে ছিল`, ‘তাদের সামনে ছিল`, ‘তাদের চোখের সামনে` ছিল। এই পাক কিতাবগুলো মক্কার লোকদের কাছে ছিল। কিন্তু আরবী কোরআন তাদের জন্য এই কারণে দরকার ছিল যে, মক্কাবাসীরা আগের কিতাব যা অন্যভাষায় লেখা ছিল, তা বুঝতে পারতো না।` (পৃঃ ৭৪)।
১০. মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট ৯৬ নম্বর সুরার প্রথম কয়েকটি আয়াত নাজিল হওয়ার পর তিনি বিবি খাদিজার কাছে ফিরে এলেন। বিবি খাদিজা যে তাঁকে চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন। ওয়ারাকা ছিলেন খ্রিস্টান। তিনি তাঁর কিতাবের বর্ণনার কারণে মুহাম্মদ (সাঃ) যে প্রতিশ্রুত সেই নবী, এটা বুঝতে পারেন। এ সংক্রান্ত বোখারী শরীফের হাদিসের বর্ণনা আছে বইটির ৮৯ পৃষ্ঠায়।
১১. ড. ক্যাম্পবেল এই হাদিসটি সত্য হিসেবে বর্ণনা করেছেনঃ হযরত আনাস বলেছেন, ‘একবার এক ইহুদী যুবক—যিনি নবীর চাকর ছিলেন—অসুস্থ হয়েছিলেন। নবী তাকে দেখতে গেলেন। নবী সেখানে গিয়ে দেখেন যে, রোগীর মাথার পাশে বসে তার পিতা বসে বসে তৌরাত পাঠ করছেন। রাসুলুল্লাহ্ রোগীর পিতাকে বললেন, ‘আমি আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছি, যিনি হযরত মুসার কাছে তৌরাত নাজিল করেছেন, তুমি কি তওরাতে আমার সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেখতে পাও? অথবা আমার আগমন সম্পর্কে কি কিছু বলা হয়েছে?` তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি খুঁজে পাইনি।` তখন যুবকটি বলল, ‘নিশ্চয়ই আছে, রাসুলুল্লাহ্, আমি আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, তওরাতে আপনার সম্পর্কে সেখানে বলা আছে, আপনার আগমন সম্পর্কেও বলা হয়েছে। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই আর আপনি আল্লাহ্র রাসুল।` তখন রাসুলুল্লাহ্ তাঁর সাহাবীকে বললেন, ‘তার মাথার কাছ থেকে এই লোকটিকে সরিয়ে দাও আর তোমরা এই ভাইয়ের দেখাশোনা করো।` হযরত বায়জাবী এই হাদিসটি দালাইল আল-নবুয়া কিতাবে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য হাদিসগুলোও একই ধরনের কথা বলেছে, যা মিসকাতুল মসাবি-তে (১২৩৭, ১২৪৯ পৃষ্ঠা) লেখা আছে। আবার এই সব হাদিসও ধরে নিয়েছে যে, আসল তৌরাত আছে। পিতা ও অসুস্থ যুবক পুত্র তৌরাত যা বলেছে, সে সম্পর্কে একমত হতে পারেনি, কিন্তু এই সব হাদিসের মধ্যে একটি হাদিসও দাবী করেনি যে, ইহুদীরা তাদের কিতাব তৌরাতের আয়াত বিকৃত করেছে।` (পৃঃ ৯০-৯১)।
১২. ড. ক্যাম্পবেল ধর্মের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আদিম সংস্কৃতির ওপর সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে যে, ‘ধর্মে বিবর্তনবাদ মতবাদ` একেবারেই মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডন রিচার্ডসন তাঁর লেখা ‘Eternity in Their Hearts` বইয়ে উপসংহারে দেখিয়েছেন যে, সর্বপ্রাণবাদ ও বহু ঈশ্বরবাদের পাশাপাশি, প্রায় সব আদিম গোত্রের লোকেরা বিশ্বাস করতো যে, একজন সর্বোচ্চ মহান সৃষ্টিকর্তা – আল্লাহ্ আছেন, যিনি আসমান ও দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন (Regal Books, Ventura, California, 1981)। এর সাথে আরও বলা যায়, এই গোত্রগুলোর মধ্যে প্রায় সময়ে দেখা যায় যে, একটি কাহিনী আছে, এই কাহিনীতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কেন সেই সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র সাথে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল।`(পৃঃ ১০৫)। আরও বলেছেন, ‘সুতরাং, নৃতত্ত্বের সাক্ষ্য ধর্মে বিবর্তন মতবাদের বিপক্ষে কথা বলে। এটি কিতাবুল মোকাদ্দসের শিক্ষাকে সমর্থন করে, যেখানে বলা হয়েছে, মানুষ প্রথম থেকেই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্কে জানত। তারপর পাপের কারণে তারা নিজেদেরকে পৃথক করেছিল।` (পৃঃ ১০৫)।
১৩. ড. ক্যাম্পবেল তাঁর সেই গ্রন্থে বলেছেন, ‘আমাদের সমকালীন সময়ের বিখ্যাত তিনজন পুরাতত্ত্ববিদদের অন্যতম – নেলসর গ্লইক, যিনি সিনসিনাটি রাজ্যের ওহিও শহরের ইউনিয়ন কলেজে যিয়ুইশ থিওলজিকাল সেমিনারীর ভূতপূর্ব সভাপতি ছিলেন, তিনি এই কথা বলেছেন:
‘—আমরা সমস্ত পুরাতত্ত্বীয় গবেষণায় একটিও নৃতাত্ত্বিক জিনিস যা আল্লাহ্র কালামকে মিথ্যে প্রমাণিত করে এমন কোন কিছু আজ পর্যন্ত কখনও খুঁজে পাইনি (তৌরাত, পুরাতন নিয়ম)। (সূত্রঃ Presses Bibliques Universitaires, rue de I’Ale 29, 1003 Lausanne, Switzerland, 1979, p. 234, Translated by Dr. William Campbell)।
১৪. কোরআনসহ সমস্ত কিতাব এখনও অবিকৃত আছে, এ কথার সমর্থনে তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, একইভাবে আলেক্স হ্যালির Roots উপন্যাসের সত্য ঘটনাটি ২০০ বছর ধরে আটলান্টিকের উভয় পারে শিক্ষিত গ্রিয়টদের মাধ্যমে এবং সাধারণ লোক পরম্পরায় সংরক্ষিত হয়েছে।—Haley, op. cit,. p 715 এবং ‘কিতাবুল মোকদ্দস, উইলিয়াম ক্যাম্পবেল, পৃঃ ১২৩।
১৫. তিনি বলেছেন, ‘শেষ মক্কী যুগের সুরা ইউনুসের ৬৪ আয়াত খ্রিস্টানরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন, এই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ্র বাণীর কোন পরিবর্তন নেই।`(পৃঃ ১৬৩)।
১৬. তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, বর্তমান কোরআন বা ইঞ্জিল শরীফে কোন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়নি, এগুলো সারবস্তুর দিক দিয়ে আগেও যেভাবে সংকলিত হয়েছিল, আজও ঠিক তেমনিভাবে আছে। (পৃঃ ২১১)।` আরও বলেছেন, ‘হযরত ঈশা (আঃ)-এর পরে আরও নবী আসবেন। (পৃঃ৩৩৬)।
১৭. ড. ক্যাম্পবেল L’Islam et la Science, 2nd Edition, Dr. Ahmed Arora, Entreprise nationale du Livre, Algiers, 1984, p 8.থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, বিজ্ঞান ধর্মবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। (পৃঃ ২৯৬)
আপনি বলেছেন, ড. উইলিয়াম ক্যম্পবেল জাকির নায়েকের মত ভাঁড় নন যে উল্টাসিধা কথা বলে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে চালাবেন। তাহলে তো এখন তিনি সত্যই বলছেন। এখন আপনি কি বলবেন?
@শাহেদ ইকবাল,
মনে হচ্ছে জাকিরের নায়েক কে আপনি বিরাট পন্ডিত মনে করেন। তুলাধূনা কত প্রকার ও কি কি তা দেখুন এখানেঃ The World’s Greatest Showman (download)
জাকির নায়েকেকে ‘ইসলামী পন্ডিত’ হিসাবে তারাই মানে যাদের ইসলাম /ও আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ে খুবই সীমিত জ্ঞান। আলী সিনার আমন্ত্রনে জাকির সাহেব বিতর্কে আসতেই রাজী হয় নাই।
“Qur’an and the Bible in the Light of Science” এর উপর শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিতর্কের ভিডিও লিঙ্কগুলোঃ
পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫
কয়েক দিন ধরে মুক্তমনা সাইটে আসতে পারি নি ভীষণ কর্ম ব্যস্ততায়। আজকে সাইটে ঢু মারতেই দেখি বিশাল কায় কারবার। আমার একটা নিবন্ধের মহা সমালোচনা। নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে একারনে যে, আমার মত নগন্য একজন ব্লগ লেখকের একটা নিবন্ধকে সমালোচনা করার মত মানুষও তাহলে আছে! যাহোক আসল প্রসঙ্গে আসা যাক। সম্মানিত সমালোচক বলেছেন-
এ থেকে অন্তত: এটুকু বোঝা গেল যে হেত্বাভাস বা Fallacy বিষয়টা কি তা তিনি অন্তত: জেনেছেন তবে তা আত্মস্থ করেন নি। কারন তিনি যে বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তার বিশালাকায় নিবন্ধটি ফেঁদেছেন খোদ সেটাই একটা মহা হেত্বাভাস। সেটা হলো এরকম –
তিনি বিশ্বাস করেন মোহাম্মদ হলেন আল্লাহর নবী।- প্রমান কোথায়?
প্রমান হলো- কোরানে তা বলা আছে।
কোরান কার কাছে অবতীর্ণ হয়েছে?
মোহাম্মদের কাছে।
এটা হলো এক মহা হেত্বাভাস। এখানে মোহাম্মদ নিজেই নিজেকে নবী ঘোষণাকারী আর তার নিজের রচিত কোরানে তা সমর্থন করে। তার মানে মোহাম্মদ যে নবী তার সাক্ষী দ্বিতীয় আর কেউ নেই। এখানে মোহাম্মদ নিজেই নিজের সাক্ষী। আমি ঠিক জানিনা সমালোচক সাহেব এটা বুঝতে পারলেন কি না।
বিষয়টাকে আরও একটু বিস্তার করা যাক। কোর্টের কাঠ গড়ায় দাড়িয়ে আছে চুরি কেসের এক বাদী যেখানে বিবাদী জনৈক চোর । বাদী বার বার বলছে- হুজুর , ঐ লোকটি চুরি করেছে আমি তার সাক্ষী। আর চোর বলছে- হুজুর আমি নিরাপরাধ। এখন প্রশ্ন হলো- বিচারক কি বাদীর কথা শুনে চোরকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে দন্ড দেবেন? না দেবেন না। কেন ? কারন বিচারক অন্তত: আরও একজন সাক্ষী বা অন্য কোন আলামত( সেটাও প্রকারান্তরে সাক্ষী) হাজির করতে বলবে যা দ্বারা প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমানিত হয় যে বিবাদী ব্যাক্তিটিই চুরি করেছে। অর্থাৎ শুধু বাদীর একার সাক্ষীতে বিবাদী দোষী প্রমানিত হবে না।
এখন মোহাম্মদের নবুয়ত্বের কেইসটা কি ? মোহাম্মদ দাবী করছেন তিনি নবী। প্রমান ? প্রমান হলো- কোরান।কোরান কি জিনিস? মোহাম্মদ রচিত একটা কিতাব যাকে তিনি বলছেন আল্লাহর কিতাব।অর্থাৎ মোহাম্মদের নবুয়ত্ব ও তার কথিত ঐশী কোরান দুইটারই সাক্ষী একমাত্র মোহাম্মদ। দ্বিতীয় কোন সাক্ষী নেই। অর্থাৎ আমাদের প্রচলিত কোর্টে তার কেইস টিকবে না , মোহাম্মদকে একজন ফ্রড বা ভন্ড হিসাবে ঘোষণা করা হবে।
সবচাইতে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো শুধু সমালোচক সাহেবই নন, প্রায় ৯৯.৯৯% বিশ্বাসী মুসলমানই এই হেত্বাভাসের কেইসটা ধরতে পারেন না বা ধরতে চান না। অথচ সমালোচক মহোদয় যুক্তি বিদ্যার সেই একই বিধি দ্বারা আমার বক্তব্য খন্ডন করতে মহা সমারোহে মুক্তমনা নামক রঙ্গমঞ্চে হাজির হয়েছেন, কিন্তু তিনি বুঝতে অক্ষম যে সেই বিধানই খোদ মোহাম্মদের নবুয়ত্বকে অপ্রমানিত করে মোহাম্মদকে একটা ভন্ড বা উন্মাদ হিসাবে প্রমান করে।
তার বিশ্বাসের হেত্বাভাসের আরও নজীর। তার বক্তব্য অনুযায়ী- মোহাম্মদের নাম অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবেও মোহাম্মদের জন্মেরও বহু আগে থেকে নাকি উল্লেখিত আছে। কিন্তু বিশ্বাসী মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করে যে- একমাত্র কোরান ছাড়া বাকী সব ধর্মীয় কিতাব বিকৃত , পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত। তার অর্থ উক্ত কিতাব সমূহের তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিকৃত কিতাবের উদ্ধৃতি নিশ্চয়ই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা একটা মহা হেত্বাভাস। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞ সমালোচকের মাথায় সে যুক্তি কাজ করছে না। তাই তিনি এক রোখা ষাঁড়ের মত সেই হেত্বাভাসের যুক্তি তুলে ধরে মোহাম্মদকে নবী বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। কি কি কিতাবে মোহাম্মদের কথা লেখা আছে? হিন্দুদের অল্লোপনিষদ, ভবিষ্য পুরাণ ইত্যাদি। অথচ ঐতিহাসিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে – আদিতে এসব কোন কিতাব হিন্দুদের ছিল না। উপমহাদেশে মুসলমানদের রাজত্বকালে হিন্দুদের কথিত কিতাব সমূহে এসব সংযোজন করা হয়েছে এমনকি নতুনভা্বেও অনেক কিতাব লেখা হয়েছে। মোহাম্মদের জন্মের ৮০০/৯০০ বছর পরে লিখিত কিতাবে মোহাম্মদের কথা যদি উল্লেখিত থাকে তাতে মোহাম্মদ কিভাবে মহা নবী হয়ে পড়েন তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে বুঝতে অক্ষম। আর বাইবেলে মুহাম্মদের উদ্ধৃতি ? বর্তমানে কিছু খৃষ্টান তার্কিক এমনভাবে তুলো ধুনো করছে মোহাম্মদকে তা দেখলে আমার মনে হয় সমালোচক মহোদয় হার্ট স্ট্রোক করে মারাও পড়তে পারেন। তার পরেও আমি তাদের লিংকটা দিয়ে দিলাম এখানে – Aramaic Braodcasting Network
ওখানে গিয়ে সরাসরি তাদের বিতর্ক শুনতে পাবেন আর দেখবেন, আপনাদের তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতদেরকে কিভাবে সেখানে তুলো ধুনো করা হচ্ছে। আমি অনেকগুলো বিতর্ক শুনেছি যেখানে দেখেছি, ইসলামী বিতার্কিকরা একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেন না, শুধুমাত্র চরকির মত ঘুরপাক খেতে থাকেন , একটা বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে লাফাতে থাকেন। অবশ্য সত্যিকার কোন যুক্তি না থাকলে এভাবে বানরের মত লাফালাফি করা ছাড়া কিছু করারও থাকে না।
চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছিল- এ ব্যপারে পৃথিবীর অন্য সভ্য যায়গা গুলোতে তাদের ইতিহাসে রেকর্ড থাকার কথা যদি সত্যিই তা ঘটে থাকে। কিন্তু কোথাও তা নেই। সমালোচক সাহেক সুকৌশলে তা এড়িয়ে গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রলাপের মত বকে গেছেন।
পরিশেষে, উম্মে হানি বিষয়ক আপনার উদ্বেগ সত্যিই ভাল লাগল। যদি পারেন দয়া করে বলবেন মিরাজের মত এমন মহা অভিযাত্রা কেন তার গোপন প্রেমিকার ঘর থেকে শুরু হবে?
ভাল থাকবেন।
এই ফাঁপা জায়গাটায় কি আছে সেটা সম্পর্কে কোরাণে কি আছে জানতে মন চায়।
দান্তে বিষ্ঠাকে বিয়াত্রিচে বললেও, ওটা ঠিক-ই দুর্গন্ধ ছড়াবে।
একেবারে মরে যেতে কার ইচ্ছে করে? আমারো খুব খুব ইচ্ছে করে একটা কিছু বিশ্বাস করতে। বিশ্বাসে ভয় আছে, সুখও আছে। মরে গিয়েও আবার জীবন পাবো, চাট্টিখানি কথা নয়। এমন স্বপ্ন দেখতে কার না ভাল লাগে? কিন্তু কেউ কেউ এমন রূপকথার গল্পগুলো মানছে না। তারা আমার বা আপনার মত স্বপ্নের ঘোরে নিজেদের আটকে না রেখে, ধর্মকে চিহ্নিত করেছে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হিসাবে। তাই মুক্ত চিন্তার অগ্রপথিকরা চেষ্টা করছে মানবিক বোধ-বিকাশের কাঁটাগুলো ( এর মধ্যে ধর্ম তো শুধু কাঁটা নয়, কখনো তলোয়ার, কখনো ত্রিশূল, কখনো বা বোমারু বিমান) সরিয়ে একটুখানি জায়গা, যেখানে মানুষ, শুধুই মানুষ, এই তো।
তো আমি খুব খুব করে চেষ্টা করছি ধর্মের পথে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু পারছি না। এই না পারাটা বিজ্ঞান বা ইতিহাস বা কোন ইজমের অবদান নয়, আমার অভিজ্ঞতার জ্ঞান-গম্যির বিচার-বোধ।
আপনি যে ভাবে লড়ে যাচ্ছেন, লড়ে যান। জ্ঞান-গম্যির এই লড়াইটা একদিন হয়তো আপনার স্বপ্ন ভেঙে দিলে, দিতেও পারে। তাতে আর কিছু না হোক,বিশ্বাসের সুখ না থাকলেও রক্ত-গঙ্গার স্রোত কিছুটা হলেও হারাবে। তাই বা কম কিসে?
কারো কারো অসহিষ্ণু মন্তব্যে হাল ছাড়বেন না।
@শাহেদ ইকবাল
যা বলতে যাচ্ছি সেসব যদি ভুল বুঝে বলে থাকি তো আগ হতেই লজ্জিত।
উড়ন্ত সসার। রকিব হাসান। প্রজাপতি প্রকাশন।
ইনি সেই রকিব হাসান যিনি তিন গোয়ান্দা সিরিজ লিখেন? ছোটবেলায় ইনার লিখা অনেক পড়েছি।
কিন্তু উড়ন্ত সসারের কথা রেফারেন্স হিসেবে কেন আসবে! এটা তো রকিব হাসানের লিখা একটি গল্প। মানে তার মন হতে, মানে ফিকশান, মানে কল্পনা হতে, মানে যাহা সত্য নয়, মানে এটা রেফারেন্স হিসেবে আনলে তো কিশোর, মুসা, রবিন সবাইকে কথায় কথায় টেনে আনা যায়, মানে কাল আমিও একটি গল্প লিখবো যেখানে আমি নিজে চাঁদে গিয়ে দেখেছি চাঁদ যে ফাঁফা, তাহলে আমার লিখাটাও রেফারেন্স হিসেবে আনা যাবে, মানে আমার মাথা পুরো গুলিয়ে গেছে!
উপহাসে বিশ্বাসী নই ঠিক, কিন্তু হাসিতে ভীষণ!! তাই হাসি ধরে রাখতে পারছিনা…
****চাঁদে আদৌ মানুষ অবতারণ করেছে কিনা এটা জানার জন্য মোটামুটি কিছু অনুসন্ধান করেছিলাম। কোথাও, কোথাও, কোথাও কোনপ্রকার ঘন্টাধ্বনির শব্দের বিন্দুমাত্র উল্লেখ ছিলনা। যারা চাঁদে পৌঁছেছেন বলে দাবী করেন তাদের দিক এবং যারা এ দাবী করেন যে এটা অসম্ভব তাদের দিকের দু পক্ষের আলোচনা, মন্তব্য, ভিডিও মোটামুটি সবই দেখেছি। দু পক্ষের কেউই চাঁদের দেশের মানুষদের বিয়ের ঘন্টা অথবা কোনপ্রকার ঘন্টার কিছুই উল্লেখ করেনি।****
@ছিন্ন পাতা, ‘উড়ন্ত সসার` রকিব হাসানের লেখা একটি গল্প? এরকম অনুমাননির্ভর তথ্য নিয়ে ব্লগে লেখালেখি করেন? বইটা তো সবখানেই সুলভ। লেখার আগে দেখে নিলে অসুবিধা কি?
সেবা প্রকাশনী কোন বিজ্ঞানভিত্তিক বই Authentic তথ্য ছাড়া ছাপায় না। বিশ্বাস না হলে আপনি নিজেই পাণ্ডুলিপি দিয়ে দেখতে পারেন। চাঁদের অনেক বিষয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলাদা হাইপোথিসিস আছে। সেই হাইপোথিসিসের পেছনে তথ্যও আছে। চাঁদে শব্দ হওয়ার এবং কম্পন অনুভূত হওয়ার বিষয়টি সেরকমই কিছু তথ্যের উপর বলা হয়েছে। তথ্যগুলো নিচের লিংকে পাবেনঃ
১. http://thomasmayhugh.com/
২. http://www.nytimes.com/2005/02/15/science/space/15moon.html
@শাহেদ ইকবাল,
ভাই, নিশ্চিত ছিলাম না বলেই শুরুতেই লজ্জিত হয়ে ছিলাম। অনুমাননির্ভর বলেই ওটা আমার প্রশ্ন ছিল।
তবে যেভাবে আপনার মতন লোকেরা অযৌক্তিক, ব্যাখ্যাতীত ঘটনাগুলো একান্তই আপনাদের বিশ্বাস বলেই জোর গলায় বলে যাচ্ছেন এসবই সত্য সত্য সত্য…সেভাবে আমার মতন কিছু চুনোপুটি কিছু কিছু জিনিস বিনয়ের সহিত অনুমান করার ধৃষ্টতা মাঝে মাঝে দেখিয়ে ফেলে।
@ছিন্ন পাতা, জগতে ব্যাখ্যাতীত বলে কিছু নেই। যা কিছু ব্যাখ্যাতীত মনে হয়, তা মানুষের ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা। এ কারণে বিজ্ঞানকেও মাঝে মাঝে ধৈর্য ধরতে হয়। সময়ে সবকিছুরই ব্যাখ্যা মেলে। আমার মূল প্রবন্ধে এ কথাগুলো বলেছি।
আজ থেকে একশ’ বছর আগে যদি কেউ বলত, মরা গাছের আঠা (গ্লু) মানুষের অপকর্ম ফাঁস করে দেবে, তাহলে ঠিক এভাবেই লোকে বলত, এটা গাঁজাখুরি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ‘ওয়াটার গেট` কেলেংকারী কিভাবে ফাঁস হয়েছিল? কোন সাক্ষী কিন্তু ছিল না। একটি অডিও ক্যাসেটের কারণে তিনি ধরা পড়েন। অডিও ক্যাসেটের ফিতা (টেপ) কি দিয়ে তৈরি হয় জানেন? ওক গাছের গাম দিয়ে!
@ শাহেদ ইকবাল,
সরি ভেতরে ফাঁফা চাঁদ মামার ছবিটা আসেনি।
[img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/1/14/Main_lunar_core.jpg[/img]
@ শাহেদ ইকবাল,
কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি, কারও মন্তব্যের প্রতি উত্তর দিলে টু দ্যা পয়েন্টে সুনির্দিষ্ট ভাবে দিলে ভাল হয়। তাছাড়া আপনি একটার উত্তর দিতে যেয়ে আরও দশটা ভুল যে করে বসেন তা আপনি নিজেও জানেন না।
১। এই একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষগুলোর সামনেও যদি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ করা যেত, সিংহভাগ মানুষই মোহাম্মদকে নবী মানত।` আপনি নিজে কি এই ধারণা সমর্থন করেন?
হা, সমর্থন করি, সবাই করবে। কারণ বিজ্ঞানী এবং যুক্তিবাদী লোকেরা ছাড়া বাকি লোক প্রথম দর্শনেই বিশ্বাস করবে। আর বিজ্ঞানীরা যখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ( চাঁদে এমন ঘটনা ঘটলে পরীক্ষা করা কঠিন হবে না।) বলবে এটা অলৌকিক বাদে এ ঘটনা সম্ভব না , তখন তারাও মেনে নেবে।
কিন্তু কথা হল আজ পর্যন্ত অলৌকিক কোন ঘটনা মহাবিশ্বের কোথাও ঘটছে এমন ধারনা আপনি এবং আপনার মত লোক বাদে কেউ বিশ্বাস করেনা।
২। যেহেতু মাত্র ১৪০০ বছর আগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে আবার জোড়া লেগেছে বলে হাদিসে দাবী করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে উভয় অংশ এত তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ জোড়া লাগবে না। কিছুটা ফাঁপা ভাব চাঁদের ভেতরে থাকতে পারে। মজার কথা হলো, কিছু লক্ষণ দেখে বিজ্ঞানীরাই দাবী করছেন যে, চাঁদের ভেতরটা ফাঁপা। চাঁদের উপর আছড়ে পড়েছিল এপোলো-১২। সঙ্গে সঙ্গে চাপা ঘণ্টাধ্বনির মত শব্দ উঠেছিল চাঁদের ভেতর থেকে। প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল সে আওয়াজ। এপোলো-১৩ অভিযানের সময় স্যাটার্নগামী তৃতীয় পর্যায়ের রকেটটি আছড়ে পড়েছিল চাঁদের গায়ে। তখনও ঝনঝন করে উঠেছিল চাঁদ। প্রথমবারের মত এত তাড়াতাড়ি থামেনি এ আওয়াজ, প্রায় আঠার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। (সূত্রঃ উড়ন্ত সসার, রকিব হাসান, প্রজাপতি প্রকাশন, পৃঃ ৩৭)।
আপনার এ ধরনের লেখার উত্তর দেয়ার রুচি হচ্ছেনা। তবু উইকি কি বলে দেখুন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Moon
[img]http://en.wikipedia.org/wiki/File:Main_lunar_core.jpg[/img]
Internal structure
Main article: Internal structure of the Moon
Internal structure of the moon
Chemical composition of the lunar surface regolith (derived from crustal rocks)[22] Compound Formula Composition (wt %)
Maria Highlands
silica SiO2 45.4% 45.5%
alumina Al2O3 14.9% 24.0%
lime CaO 11.8% 15.9%
iron(II) oxide FeO 14.1% 5.9%
magnesia MgO 9.2% 7.5%
titanium dioxide TiO2 3.9% 0.6%
sodium oxide Na2O 0.6% 0.6%
Total 99.9% 100.0%
The Moon is a differentiated body: it has a geochemically distinct crust, mantle, and core. The moon has a solid iron-rich inner core with a radius of 240 kilometers and a fluid outer core primarily made of liquid iron with a radius of roughly 300 kilometers. Around the core is a partially molten boundary layer with a radius of about 500 kilometers.[23] This structure is thought to have developed through the fractional crystallization of a global magma ocean shortly after the Moon’s formation 4.5 billion years ago.[24] Crystallization of this magma ocean would have created a mafic mantle from the precipitation and sinking of the minerals olivine, clinopyroxene, and orthopyroxene; after about three-quarters of the magma ocean had crystallised, lower-density plagioclase minerals could form and float into a crust on top.[25] The final liquids to crystallise would have been initially sandwiched between the crust and mantle, with a high abundance of incompatible and heat-producing elements.[1] Consistent with this, geochemical mapping from orbit shows the crust is mostly anorthosite,[5] and moon rock samples of the flood lavas erupted on the surface from partial melting in the mantle confirm the mafic mantle composition, which is more iron rich than that of Earth.[1] Geophysical techniques suggest that the crust is on average ~50 km thick.[1]
The Moon is the second densest satellite in the Solar System after Io.[26] However, the inner core of the Moon is small, with a radius of about 350 km or less;[1] this is only ~20% the size of the Moon, in contrast to the ~50% of most other terrestrial bodies. Its composition is not well constrained, but it is probably metallic iron alloyed with a small amount of sulphur and nickel; analyses of the Moon’s time-variable rotation indicate that it is at least partly molten.[27]
৩। মেরাজের সমর্থনে নতুন করে বিজ্ঞানের সূত্র লাগবে কেন? সূত্র যা আছে, তাতেই তো কাজ হচ্ছে।
মেরাজের বৈজ্ঞানিক সুত্র আছে? ও হ্যা, তাই তো তাই তো। আলবৎ আছে, কারন তা আপনি বলেছেন আছে। এতক্ষণে মনে হয় আপনি কে এবং কোথায় হতে এখানে এসেছেন তা মনে হয় বুঝতে পারছি। :lotpot:
৪। তারপরে আর সোমালিয়ার উদাহরণ লাগে কি? একটা দেশের এ অবস্থা কেন হয়? উপরে যা লিখেছি, তার কারণেই কি হয় না? এখন দেখা যাক, এ কারণ দূর করার জন্য কোরআন কি বলছে—
সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ নিয়ে আপনি এবং আপনার অ্যাল্যা প্যাক যে বয়ান দিলেন তার সার কথা হল তারা আল্লার কথা ঠিক মত অনুসরণ করলে তাদের দুর্ভিক্ষ আসত না। তাছাড়া ধন-সম্পদ দান করার কথাও বলেছেন। তা জনাব দান করার কথা তো শুধু আপনাদের, কিন্তু সোমালিয়ায় কারা বেশী দান করছে, কাফেররা নাকি আপনারা? আর দীর্ঘস্থায়ী খরা দুর করার কোন প্রতিকার না করে শুধু দান করলেই হবে?
বাহ বাহ চমৎকার। জনাব দুর্ভিক্ষ দুর করার ফর্মুলা বিনা মূল্যে আপনার কাছ থেকে পেয়ে শুকরিয়া। আর কুরআনের এত গুলো আয়াত যে অনুবাদ করলেন তা কি এটা বলার জন্য যে দেখুন কুরআনের এত বেশী জায়গায় আল্লাহ পাক সোমালিয়া সমস্যার সমাধান দিয়েছে , আর তোমরা তারপরও বিশ্বাস করবেনা? মারহাবা মারহাবা, তাইতো স্বয়ং কোরআনে লেখা কেন পাপিষ্ঠ সোমালিয়ানরা না খেয়ে মরে।
৫। আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।` (সুরা রা’দ, ১১)।
প্রকৃতপক্ষে কাজ আমার হাতে, ফলাফল আল্লাহ্র হাতে।`
আপনার আল্লাহ আমাদেরকে অলৌকিকও দেখান না, এত এত শিশু তিলে তিলে না খেয়ে , অসুখে মারা যাচ্ছে, তাদেরকেও রক্ষা করেন না, তিনি আছেন এমন কোন নজিরও দেখান না তা তিনি যে বেচে আছেন না মারা গেছেন তা জানব কি করে? সবাই তো আর গঞ্জিকা সেবন করেন না বিনা কারণে মুহাম্মদের মত একজন পাগল ছাগলের কথায় নাচানাচি করব।
কাজ করে আমার অবস্থা আমি পরিবর্তন করব, আর আপনার কাল্পনিক খোদা বলবে তা আমিই তোমার অবস্থা পরিবর্তন করেছি, তাই না? বাহ বাহ, তা জনাব আমার কাজ করে টাকা কামাই করার কৃতিত্ব আপনি নিজেও দাবি করতে পারেন , আপনার ইচ্ছাতেই আমার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে জোড় করে কখনও পাবনা পাঠাবনা।
@হেলাল,
আল্লাহ্ তুমি রহমানুর রহিম
সৌদি পেল তেলের থনি, সোমালিয়া ঘোড়ার ডিম!
@হেলাল, ‘এই একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষগুলোর সামনেও যদি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ করা যেত, সিংহভাগ মানুষই মোহাম্মদকে নবী মানত।`
ভবঘুরে সাহেব এই মন্তব্য করেছিলেন বাইতুল আকসা মসজিদের বর্ণনা প্রসঙ্গে। আমিও সেই প্রসঙ্গেই প্রশ্ন রেখেছিলাম আপনার কাছে যে, কেউ এসে কোন জায়গার বর্ণনা গড় গড় করে বলে দিলেই তাকে নবী মানবেন কি-না। কোন প্রমাণ বা পরীক্ষার কথা বলিনি। তার আগে মানুষের যে এই ক্ষমতা (ইএসপি) কারও কারও থাকে, তা-ও উল্লেখ করেছি। আর আপনি তাকে চাঁদের প্রসঙ্গে নিয়ে গেলেন। এভাবেই এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে চরকির মত ঘুরছেন। যদি বলে থাকেন, হ্যাঁ, কোন পরীক্ষা ছাড়াই বিশ্বাস করবেন, তাহলে ধর্মান্ধ মৌলবাদের সাথে আপনার পার্থক্য আর কোথায় থাকল?
শাহেদ ইকবাল এমন একটি লিখা লিখেছেন যা মুক্তমনার অনেকের কাছেই হাস্যকর। এখানে মুক্তমনার সবার সাথে তার বিশাল যে পার্থক্য তা হচ্ছে উনি একজন বিশ্বাসী আর মুক্তমনার সবাই ওয়েল…এ ক্ষেত্রে উলটে বলতেই হবে – এই ফল তুমি কোন বৃক্ষের? নামেই পরিচয়।
মুক্তমনার লিখা গুল শাহেদ ইকবালের লিখার মতন হয় না কেন?
এটা মুক্তমনা।
যার কারনে অনেকের মনের সাথে শাহেদ ইকবালের লিখা মিলছেনা। উনি কি সেটা বুঝতে পেরেছেন? আমার মনে হয়না আমাদের উচিত তাকে এভাবে উপহাস করা। তাছাড়া পুরো ব্যাপারটি একটি সনাতন বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীর মাঝেরকার তর্কের মতন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে একে অপরকে প্রশ্ন করে জব্দ করার চেস্টা আর মানহানীর চেস্টা হতেই থাকবে।
টেকি সাফি যেমনটি বলেছেন। শাহেদ ইকবাল যা বলেছেন এবং বলবেন সবই আল্লাহর বানী অথবা নবীর বানী। কারন তার দৃস্টিতে এর ব্যতিত আর কিছু হতে পারেনা।
আমাদের অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হলেও তাকে উপহাস করা কি ঠিক? আমি কোনকিছুর জবাব দিতে পারছিনা কারন ধর্ম নিয়ে আমার জ্ঞান কম। তবে মানুষ হয়ে জন্মেছি বলে চিন্তার ক্ষমতা আছে, সেই চিন্তার ক্ষমতার সুব্যবহার করতে পেরেছিলাম। দেশে এরাবিয়ান নাইটস দেখে ভাই বোন সবাই মিলে হাসাহাসি করতাম। এই মাদুরে করে উড়ে চলে গেল, এই রাজাকে সাপ বানিয়ে ফেলল। আবার টিভি বন্ধ করে সবে মেরাজ, সবে কদর, সবে বরাতের দিন নামাজ পড়তে বসতাম। কারন সবে বরাতের দিন আল্লাহ সাত আসমান হতে নিচে নেমে আসেন বরাত বন্টন করতে।
ঠিক এরাবিয়ান নাইটস এর কোন চরিত্রের মতন! চিন্তা আমায় আটকালো। মাদুর নিয়ে উড়ে যাওয়া যদি গল্প হয়, খেজুরের বিচির আঘাতে দৈত্যের বাচ্চারা মারা যাওয়া যদি গল্প হয় তবে চাঁদ দুভাগ করা, দুরের আকাশে আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাওয়া, সাগরের জল দুভাগ করে রাস্তা তৈরী করা ওই গল্প হতে কতটুকু আলাদা? তাই অত তর্ক, যুদ্ধ, যুক্তি এসবের মাঝে না গিয়ে সব ধর্ম গ্রন্থ কে ঠাকুরমার ঝুলির স্তরে রেখেছি। কেউ কেউ ঠাকুরমার ঝুলির গল্পকে ছোটবেলার স্মৃতি হিসেবে বড় হয়ে হাল্কা ভাবেই নেয়, আর কেউ প্রতিদিন কিছু বলি দেয়, মন্ত্রপাঠ করে যেন কোন ভয়ংকর দৈত্য বা পিশাচ তাকে শেষ না করে ফেলে।
মুক্তমনার প্রায় সকলেরই ধর্মজ্ঞান আমার চাইতে বেশি। তাই “আপনি ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন” বলে শাহেদ ইকবালকে দমিয়ে না দিয়ে আরেকটু ধৈর্য ধরে যদি তাকে তথ্য দেয়া যায়, বা আরেকটু সহনশীলতার পরিচয় দেয়া যায়, তবে অনেক প্রশ্নেরই জবাব তিনি পেয়ে যাবেন যা আদৌ যে প্রশ্ন হতে পারে সে ধারণাটিই হয়তো তার নেই।
ধর্মের অন্ধকার সরাতে মুক্তমনার যে লন্ঠন আছে আশা করি তা সকল ধর্মের অন্ধকার হটিয়ে দিতে সক্ষম হবে। 🙂
@ছিন্ন পাতা,
এরাবিয়ান নাইটস বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ চমৎকার লাগল।
@রৌরব, 🙂
@ছিন্ন পাতা,
(Y)
আপনার মন্তব্য ভাল লাগলো। আমারও মনে হয় মুক্তমনাদের আরেকটু সহনশীল হয়ে জবাব দেয়া উচিৎ। তাতে আলোচনাটা আরও ভাল হবে। তবে লেখক মেরাজ এর সাথে রিলেটিভিটি কে যেভাবে মেলালেন আর বাংলাদেশে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের জন্য যেভাবে নাস্তিকদের দুষলেন তা সত্যি হাস্যকর। তসলিমা নাস্রিন ধর্মের সমালোচনা করায় মৌলবাদীরা তাকে হত্যার ফতওয়া দেয়, আহমদ শরিফ কে ফাঁসি দেবার জন্য মিছিল করা হয়েছিল,তার বাসায় বোমা ফাটানো হয়েছিল ,হুমায়ুন আজাদ কে চাপাতির আঘাতে প্রান দিতে হয় কারণ তারা ধর্মীয় দর্শনের মুলে আঘাত করেছিলেন যেখান থেকে মৌলবাদের উৎপত্তি হয়। এগুলো যদি লেখকের দৃষ্টিতে নাস্তিকদের দোষ বলে মনে হয় তাহলে কিছু বলার নেই। তসলিমার একটা লেখা মনে পড়ে যাচ্ছে। তসলিমার ছোট ভাই একদিন একটা টিকটিকিকে পায়ের তলায় জীবন্ত পিষে মারছিল আর তাকে বলছিল “দেখ দেখ বুবু টিকটিকিটা কেমন বদমাশ। লেজ নাড়ছে” ।
@আলোকের অভিযাত্রী, “তসলিমার ছোট ভাই একদিন একটা টিকটিকিকে পায়ের তলায় জীবন্ত পিষে মারছিল আর তাকে বলছিল “দেখ দেখ বুবু টিকটিকিটা কেমন বদমাশ। লেজ নাড়ছে” ।”
আমার ভুল স্বীকার করছি। এখন মনে হচ্ছে আমি নিজেই সহনশীলতার পরীক্ষায় ফেলটু হব। যা বলতে চাচ্ছি তার অর্থ হচ্ছে, এখানে যারা সহনশীলতার পরিচয় দেননি তারা সবাই টিকটিকির লেজ। কতক্ষন যাবৎ একজন মানুষের একই রকম (অ)যৌক্তিক পিষানি সহ্য করা যায়। বদমাশি করে লেজ তো মানুষ নাড়বেই!
****আপনার উদাহারণ টি চমৎকার। আমি প্রায়ই ওটা ব্যবহার করব। কারন পৃথিবীতে জীবন্ত পিষে মরার সংখ্যা খুব বেড়ে যাচ্ছে। কামনা এই, সব শোষিত দের লেজ নাড়াটা যেন পিষে মরার বহু আগ হতেই শুরু হয়।****
@আলোকের অভিযাত্রী, নাস্তিকের সাথে মৌলবাদের শত্রুতা দেখেন, আঁতাতটা চোখে পড়ে না? আমার মূল প্রবন্ধে কিছু তথ্য ছিল। এখানে বিস্তারিত দেখুনঃ
১. বাংলাদেশে তখন জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি`র আন্দোলন তুঙ্গে। এ আন্দোলন ধর্মব্যবসায়ী ও মৌলবাদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তসলিমা কিভাবে এ আন্দোলনের সর্বনাশ করেন, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে সে সময়ের ঘটনাক্রম অনুসরণ করলে। ‘১৯৯২ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় গোলাম আযমের ফাঁসির দাবীতে দশ লক্ষ মানুষের জমায়েত হওয়ার প্রস্তৃতি চলছে, এর মধ্যে ৩০ অক্টোবর তারিখে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সেক্রেটারী এবং বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মধ্যে গোপন আলোচনা হয়। আর এর পরই ডিসেম্বরের ৬ তারিখে হিন্দু মৌলবাদীদের আক্রমণে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংঘটিত হয়। এ সকল ঘটনাবলী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জমিকে আলগা করে দেয়। এই দুই ঘটনার মধ্যে যে অশুভ ঐক্যের গোপন আঁতাত আছে, তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তসলিমা নাসরিন এক উস্কানীমূলক উপন্যাস লেখেন, যার নাম ‘লজ্জা`। ধর্মীয় সহিংসতার মাল-মশলা দিয়ে লেখা এ উপন্যাস এক সক্রিয় কমিউনিস্ট কর্মী সুরঞ্জনের রূপান্তরের কাহিনী। সেখানে লেখা হয়, জামাত-শিবিরের লোকেরা জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে—এ সংবাদে আজ আর সুরঞ্জনের কিছু যায় আসে না। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সারাদেশে মানববন্ধনে যোগ দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সুরঞ্জন হায়দারকে ফিরিয়ে দেয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মিছিলে ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজদের রুখবে এবার বাংলাদেশ` জাতীয় শ্লোগান উঠেছে শুনে সুরঞ্জন সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বাংলাদেশকে বিশ্রি একটা গালি দেয়। বলে, শালা শুয়োরের বাচ্চা বাংলাদেশ। গালিটি সে বারবার উচ্চারণ করে। তার বেশ আনন্দ হয়। বিজয় দিবসে সে একটি মুসলিম বারবণিতাকে বাড়ি এনে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে তৃপ্তিলাভ করে। তসলিমা এই ধর্ষণের বিবরণও দেন। এভাবে তিনি সুরঞ্জনকে উপজীব্য করে কমিউনিস্ট বিরোধী মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গীকে উৎসাহিত করেন, যা হিন্দু-মুসলিম উভয় মৌলবাদকেই সহায়তা যোগায়। বাংলাদেশের ধর্মান্ধশ্রেণী রাজনৈতিক ইস্যু পেয়ে যায়, আগে যেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না, সেখানেও জমায়েত করার সুযোগ পায়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ তারিখে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করা হয়, ‘বিজেপি ভারতীয় মুসলমানদের শত্রু নয়, বন্ধু; ভারতীয় মুসলমানদের আসল শত্রু কমিউনিস্টরাই।` অপরদিকে ভারতের মৌলবাদী দল ‘বিজেপি` বইটি লুফে নেয়। তারা বইটির হাজার হাজার কপি ছাপিয়ে বিতরণ করে। বিজেপির হিন্দী ও ইংরেজী মেনিফেস্টোতে ‘লজ্জা`র অনুবাদ অন্তর্ভুক্ত হয়।` (সূত্রঃ তসলিমার ‘লজ্জা` ও বিপন্ন সময়, অশোক চট্টোপাধ্যায়, তসলিমা নাসরিনের স্বরূপ সন্ধানে, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৪২-৪৬)। যার ফল তারা হাতেনাতে পায়। ভারতের পরবর্তী নির্বাচনে তারা বিপুল ভোটে ক্ষমতাসীন হয়। এক মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার নামে আরেক মৌলবাদের পৃষ্টপোষকতা করা কোন প্রগতিশীলতার পরিচয় বহন করে না।
২. একদিকে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠি তসলিমার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে মাঠ গরম করে, অন্যদিকে তসলিমা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় রাতের ফ্লাইটে সুইডেন রওনা হন। বাংলাদেশে তখন জামায়াত সমর্থিত সরকার ক্ষমতায়। পরেরদিন ‘দৈনিক ইনকিলাব` পত্রিকায় অলিগলির বর্ণনাসহ তসলিমা কোন্ পথ দিয়ে এয়ারপোর্টে গেলেন, তার সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত ছাপা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া এ বর্ণনা সম্ভব নয়। মারার ইচ্ছা থাকলে তখনই তাঁকে মারার সুযোগ তাদের ছিল। তসলিমা নিজেও তো পুরুষঘেঁষা নারী। ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণী (যাদের নারী প্রীতি ১৯৭১ সালে সবাই দেখেছে) তাঁকে মারতে যাবে কোন্ দুঃখে? রাজনৈতিক ইস্যুর জন্যও তাঁকে তাদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার।
৩. আহমদ শরীফ ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমী ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রোত্তর তৃতীয় প্রজন্মে রবীন্দ্র মূল্যায়ন` নামক এক বিদ্বেষপূর্ণ প্রবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কুৎসাপূর্ণ মন্তব্য করেন। ফলে একই পত্রিকার পরের সংখ্যায় হায়াৎ মামুদ তার প্রতিবাদ করেন। কিছুদিন পর ‘দৈনিক সংগ্রাম` রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে একটি সম্পাদকীয় লেখে, যেখানে আহমদ শরীফের ওই লেখা থেকে ব্যাপকভাবে উদ্ধৃতি দেয়। তারা আহমদ শরীফের প্রশংসাও করে। যে তিনটি লেখার কথা বললাম, তিনটিই আমার নিজের পড়া। আহমদ শরীফ যদি সত্যিকার অর্থে মৌলবাদ বিরোধী হতেন, তাহলে তিনি ‘দৈনিক সংগ্রাম` পত্রিকার সে লেখার প্রতিবাদ করতেন। তা তিনি করেননি।
৪. ড. হুমায়ূন আজাদের সমস্যাটা ভিন্ন। তাঁর সমস্যা হলো, তিনি সবাইকে শত্রু বানিয়ে ফেলেন। ফলে দুঃসময়ে কাউকে পান না। সামরিক শাসনামলে (১৯৮৭ সালে) জাতীয় কবিতা উৎসবে কাজী নজরুল ইসলামকে প্রতিক্রিয়াশীল বলে প্রথমবার মঞ্চেই নাজেহাল হন। পরে সকল জাতীয় নেতা, কবি ও বুদ্ধিজীবী এবং শেষে গোটা বাঙালি জাতিকে গালাগালি করে ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম বইমেলায় গণধোলাইয়ের শিকার হন। এ ঘটনাগুলোর অধিকাংশেরই আমি সাক্ষী। তাঁর দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠি লাভবান হয়েছে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে লিখতে হলে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করতে হবে এমন কোন শর্ত আছে?
৫. জগতে কোন শূন্যস্থান থাকে না। কেউ না কেউ তা দখল করে নেয়। এখানেও তাই ঘটছে। আমরা শিক্ষিতশ্রেণী যখন ধর্মীয় জ্ঞান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, তখনই তা দখল করে নিয়েছে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, ফতোয়াবাজ ও কাঠমোল্লাশ্রেণী। অথচ ইউরোপীয় ও মার্কিনীরা ধর্মকে ধর্মগ্রন্থ থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। তারপর সামাজিক কালচারের অংশ করে নিয়েছে। তাই সেখানে খ্রিস্টান জঙ্গী মৌলবাদী মাথাচাড়া দিতে পারে না। ফরহাদ মজহার বিভিন্ন লেখায় এটাকেই বলেছেন, ‘ধর্মকে ধর্মচ্যুত করা।` আমরা তা পারিনি। দুইশ’ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন আমাদের চিন্তাশক্তিকে এমন পরাধীন করে দিয়েছে যে, আমরা ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, ‘প্রাচ্যের যা কিছু আছে, তার সবই মন্দ আর পাশ্চাত্যের সবই সুন্দর!` আমরা ভুলে গেছি, ব্রিটিশ শাসনের আগে ভারতবর্ষে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাই ছিল না। আরও ভুলে গেছি, বাবরি মসজিদ ও সংকটমোচন মন্দিরের মাঝখানে ১৯৪৯ সালের আগে কোন বেড়াও ছিল না। তখন কিন্তু পাশাপাশি আজান ও শঙ্খধ্বনি হয়েছে। তাতে কারও ধর্ম যায়নি, ঈমানও যায়নি! অথচ, পশ্চিমে দেখুন, সায়েন্স মুভিতেও তারা অনায়াসে ‘মাই গড`, ‘জেসাস` বলছে। লিওনেল মেসি (আমার প্রিয় খেলোয়াড়) গোল করার পর খ্রিস্টান কায়দায় ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। কেউ আপত্তি করছে না। কারণ, তারা হলো Colonial Lord। তাদের হীনমন্যতা থাকবে কেন? আর আমাদের দেশে? ধর্মকে শিক্ষিতশ্রেণীর কাছে নিয়ে গেলে তারা নাক সিঁটকায়, আবার শিক্ষিতশ্রেণী শার্টপ্যান্ট পরে মসজিদে গেলে হুজুরেরা নাক সিঁটকায়!! এ যেন ড. অমর্ত্য সেনের ‘দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র`-এর মতই এক ‘অন্ধ চক্র`। যে ছাত্র কোথাও চান্স পায় না কিংবা বাবা-মা Control করতে পারে না, তারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। তারপর তারা যখন বের হয়ে আসছে, তাদের কাছ থেকে আমরা কোরআনের ব্যাখ্যা জানছি। ধর্মের ব্যাখ্যা জানছি। তারা যা কিছু করছে, তাকেই ধর্মের উদাহরণ মনে করছি। এরা একা নয়। এদের পেছনে আছে সারা দুনিয়ার অস্ত্রবাজ, মতলববাজ ও দখলবাজ পরাশক্তি। কখনও যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে, কখনও পররাজ্য দখল করে, আবার কখনও উপনিবেশ বানিয়ে পৃথিবীর সকল প্রাকৃতিক সম্পদ ও জমি গ্রাস করাই তাদের উদ্দেশ্য। পরজীবী উদ্ভিদ যেমন অন্যের শিকড় আশ্রয় করে বেঁচে থাকে, এরাও তেমনি অন্যের রক্ত শোষণ করে টিকে থাকে। তারা জনবিচ্ছিন্ন, সংখ্যায়ও কম। অন্যরা সংখ্যায় বেশি। সেই অন্যরা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, সে জন্য কখনও ধর্ম, কখনও বর্ণ, কখনও জাতি-উপজাতি দিয়ে তাদের ভাগ করা হয়। তারপর যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয়। যুদ্ধ না বাধালে তাদের অস্ত্র বিক্রী হয় না। ব্যবসাও হয় না। যেখানে অনেক ধর্ম, সেখানে ধর্মে ধর্মে দাঙ্গা লাগানো হয়। যেমন, পাক-ভারত উপমহাদেশে হয়েছে। যেখানে সবার একই ধর্ম, সেখানে বর্ণবাদ আমদানী করা হয়। যেমন, ইউরোপ-আমেরিকায় হয়েছে। যেখানে অনেক নৃতাত্ত্বিক ভাষাগোষ্ঠি, সেখানে গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে দাঙ্গা লাগানো হয়। যেমন, কুর্দিস্তান, পূর্ব তিমুর, পার্বত্য চট্টগ্রাম-এ হয়েছে। ধর্ম সেখানে অনেকগুলো কৌশলের মধ্যে একটি কৌশল মাত্র।
৭. কাজেই কখনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে হয়তো দেখা যাবে, একশ্রেণীর তথাকথিত ‘নাস্তিক` ও ‘জঙ্গী মৌলবাদী গোষ্ঠি` একই জায়গা থেকে মাসোহারা পায়।
@ছিন্ন পাতা,
আপনি ঠিকই বলেছেন। মুক্তমনাদের লক্ষ্য ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করা। কিন্তু এইভাবে আগ্রামী মনোভাব নিয়ে লেখলে বিশুদ্ধ যুক্তিও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে।
@রনবীর সরকার,
“মুক্তমনাদের লক্ষ্য ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করা।”
আদৌ কি দূর হচ্ছে? মনে হচ্ছে তিন পা এগুই, তো দু পা পিছাই (দীর্ঘশ্বাস)। সবচাইতে নুতন ধর্মকে নিয়ে সবে মাত্র প্রশ্ন শুরু হল, সবে মাত্র সন্দেহ, তার মাঝে আবার অন্যান্য ধর্মের জন্ম। একটা রোগী সন্তান সারাতে না সারাতেই আরেকটা রোগীর জন্ম (scientology…). অশিক্ষা আর অসুস্থ মনোভাব থাকলে যা হয়, জন্ম নিয়ন্ত্রনে অবিশ্বাস। রোগীতে রোগীতে চারদিক ছেয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের চাইতেও বেশি কষ্ট আমাদের মতন সুস্থ মস্তিষ্কের।
মুমিন-মুসলমানরা কোনো কিছু আবিষ্কার হওয়ার পরেই তা কোরানে খুঁজে পান, আগে পান না আর আগে যদি পান তাহলে এখনো অনাবিষ্কৃত ২/১ টি বিষয় কোরান থেকে বের করেন না কেন? যুগের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে কোরানের অনুবাদ, তফসির, অভিধান সবকিছুতেই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আসলে কোরানের কোন আয়াতের মানে কি তা বের করা দিন দিন মুশকিল হয়ে পড়ছে। কোরানের অনুবাদ যত আগের হবে তত তা নির্ভুল হবে। যাই হোক, কোরানিক বিজ্ঞানের স্বরুপ পাওয়ার জন্য পড়ুন-
Islam and the “Big Bang”: A Refutation
The Big Bang in the Qur’an
Does the Quran say the Universe is Expanding?
About Rain in the Quran
সর্বোপরি
Qur’an and Science
কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? – ১
কোরান কি অলৌকিক গ্রন্থ? -২
@সৈকত চৌধুরী, কোরআনের বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে যেহেতু আপনিই প্রশ্ন তুলেছেন, কাজেই আপনাকেই কষ্ট করে ফ্যাক্টস জোগাড় করতে হবে। কয়েকশ’ বছরের পুরানো অনুবাদ চেষ্টা করলেই পাওয়া যায়। লাইব্রেরীতেও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আরবী জানার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া লাগে না। Modern Language Institute থেকে একটা কোর্স করলেই হয়। নিজেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কোরআনে ভবিষ্যৎ আবিষ্কারের কথাও আছে। যেমন, মহাবিশ্বের পরিণতি বা মহা সংকোচন (Big Crunch)। বিজ্ঞানের সব থিওরি যে কোরআন সমর্থন করছে, তা-ও নয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদ কোরআন সমর্থন করে না। বিবর্তনবাদের ব্যাপারে আমার আজকের আরেকটা কমেন্ট দেখুন। বর্তমানে ইরাক, মিশর, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, জর্ডান, লেবানন প্রভৃতি দেশে ১.৪ কোটি অমুসলিম (ইহুদী, খ্রিস্টান, পার্সী) বসবাস করেন। তাঁদের মাতৃভাষা আরবী। তাঁদের অনূবাদ পড়তে হয় না। এ ব্যাপারে কেউ নিজের মত ব্যাখ্যা ঢুকালে তাঁরাই সবার আগে প্রতিবাদ করতেন। তাঁদের মধ্যে আছেন খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। সবচেয়ে বড় কথা, আমার মূল প্রবন্ধে যে ১৩ জন বিজ্ঞানীর বক্তব্য ভিডিও সহ দিয়েছি, তাঁরা কেউ লে-ম্যান টাইপের ব্যক্তি নন। তাঁরা গোটা বিশ্বে সুপরিচিত। ভাল থাকুন।
@শাহেদ ইকবাল,
আপনি তো দেখতে পাচ্ছি যুক্তির মাথা খেয়ে বসে আছেন। আপনি নিজে দাবি করবেন কোরানে এই বিজ্ঞান, সেই বিজ্ঞান আছে আর সেটা নিয়ে কষ্ট করে ফ্যাক্টস জোগাড় করবে আরেক জন?
যেহেতু আপনারা দাবি করছেন, কোরানের কিছু কিছু আয়াত বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার সম্পর্কে বলছে সুতরাং তা প্রমাণ করা আপনাদেরই দায়িত্ব। বিষয়টা নিয়ে কিছু সময় ভাবুন প্লিজ। আরেকটু বিষয় ভাবুন। আজ থেকে ১০০ বছর পর নিশ্চয় অনেক তথ্য বিজ্ঞানের জগতে যোগ হবে। কোরানে যেহেতু বিজ্ঞান উপচিয়ে পড়ছে তাই তা থেকে এগুলোর যতটা সম্ভব আগেবাগেই বের করে ফেললে বিজ্ঞানীদের আর কষ্ট করতে হত না, আর আমরা আগেই তা জেনে গিয়ে স্বার্থক হয়ে যেতাম।
এতজন অমুসলিম কোরান আরবিতে পড়েও বুঝতে পারে না এটা আল্লাহর কিতাব? এ কেমন কথা?
@সৈকত চৌধুরী, আমি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, কিভাবে যুক্তি খণ্ডন করতে না পেরে আপনি এবং আপনার মত অনেকেই এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে ত্রিপল জাম্প করছেন। যুক্তির মাথা আমি খেয়ে বসিনি, আপনিই খেয়ে বসে আছেন। উদাহরণ দিচ্ছিঃ
এক. কোরআনে কি কি বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে, তা Reference সহ আমার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ আছে। আরেকবার পড়ে দেখুন। আপনি লিখলেন, এসব বর্তমান অনুবাদকারীগণের আবিষ্কার। আরও লিখলেন, অনুবাদ যত পুরানো হবে, ততই তা নির্ভুল হবে। এই পুরানো অনুবাদ দুর্লভ নয়। আমি বলেছি, যেহেতু বর্তমান অনূবাদ বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না, কাজেই পুরানো অনূবাদের সাথে মিলিয়ে দেখুন। একই জিনিস পাবেন। আর এখন আপনি যা বলছেন, তা কি আমার কথার জবাব হলো?
দুই. আমার আগের মন্তব্যে আরও লিখেছি, কোরআনে ভবিষ্যৎ আবিষ্কারের কথাও আছে। যেমন, মহাবিশ্বের পরিণতি বা মহা সংকোচন (সুরা আম্বিয়া ১০৪), যাকে বলা হচ্ছে Big Crunch। এছাড়া প্যারালাল ইউনিভার্সসহ (সুরা তালাক, ১২) আরও অসংখ্য বিষয় আছে যা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিজ্ঞানের সব থিওরি যে কোরআন সমর্থন করছে, তা-ও নয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদ কোরআন সমর্থন করেনি।
তিন. আপনি কি করে বুঝলেন যে, এতজন অমুসলিম কোরান আরবিতে পড়েও বুঝতে পারে না এটা আল্লাহর কিতাব? ভবঘুরে সাহেবের মন্তব্যের জবাবে উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের বই থেকে যে উদ্ধৃতি দিয়েছি, তা পড়ে দেখুন। মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টান ধর্মযাজক ফাদার রুকনিদিন-এর সাথে ড. জাকির নায়েকের বিতর্কটাও দেখতে পারেন। যে সকল ইহুদী বা খ্রিস্টান একইসাথে তাদের কিতাব ও সর্বশেষ কিতাবকে (কোরআন) আল্লাহ্র বাণী বলে বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে, তাদের জন্য কোরআনে পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে (সুরা বাকারা ৬২, সুরা ইমরান ১৯৯, সুরা মায়িদা ৬৯)।
তর্কের খাতিরে তর্ক না করে কোরআনের একাধিক অনুবাদ মিলিয়ে পড়ুন। নিজেই উত্তর পেয়ে যাবেন। তারপরও যদি অভিযোগ থাকে, তা প্রমাণের দায়িত্ব অভিযোগকারীর উপর বর্তায়। এটা আমার কথা নয়, এটা আইনের কথা।
ভবঘুরের লেখাটির লিংক – মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলে মত পবিত্র, পর্ব-২
@শাহেদ ইকবাল
সারা রাত্রি একটা মহিলার ঘরে কাটিয়ে যদি চোরের মত পালিয়ে যান তবে কী আর তিনি নবি হতেন? 😀
আসলে কথাটি হল, তিনি কেন উম্মে হানির ঘরে রাত কাটিয়ে সকাল বেলা উঠে বলেন তিনি মেরাজে গেছিলেন? বিষয়টি বেশ চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। একজনের লেখায় দেখলাম উম্মে হানি নাকি মুহাম্মদের স্ত্রী ছিল। 😛 এখানে তিনি রেফারেন্স সহ মেরাজের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। উনি নিশ্চয় নাস্তিক না। দেখেন লেখাটি- ইসরা ও মিরাজ
কেন, সবাইকে নিয়ে তো শেষ রাত্রে নামাজ পড়লেন। এরপর আবার সন্দেহ কিসের? 🙂 যাই হোক এই লেখায় ইমানদার ভাই লেখেছেন,
এখন মুহাম্মদ তো মুসলমানদের নবি। তারাই তাদের ইচ্ছামত তার ইতিহাস তৈরী করছে। মুহাম্মদকে যার যেভাবে ইচ্ছা মিথ্যা কাহিনি দিয়ে মহিমান্বিত করছে কেউ তাতে আপত্তি তোলেন না, আপত্তিটা তখনই উটে যখন মুক্তচিন্তক কেউ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ প্রসঙ্গে আসিফ মহিউদ্দিনের একটা ফেইস বুক স্ট্যাটাস এখানে দিতে ইচ্ছে করল-
এখন আমার কথা হল ইমান বড়ই মারাত্মক জিনিস। নবির মহব্বতে বাস্তবতা ভুলে বালির মধ্যে যেভাবে মাথা দিয়ে ইমানদাররা বসে আছেন তা এরকম বৈ কি –
[img]http://i598.photobucket.com/albums/tt66/healyt76/mostly%20used/enviromental-head-in-the-sand.jpg[/img]
মেরাজের ঘটনাটি আসলে খুবই বিতর্কিত। ঠিক কোন সময় থেকে কিভাবে এ গুজবের উৎপত্তি তা বুঝা মুশকিল। উম্মে হানিকে নিয়ে প্রশ্নটি ইমানদার ভাইদের মেরাজ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রচারের জন্যই অনেকে উত্তাপিত করেন। মেরাজ নিয়ে কিছু লেখা পড়া যেতে পারে –
The Nature of Muhammad’s Prophetic Experience
Did Prophet Muhammad corporeally ascend to the Gardens?
এখন কথা হল, মুহাম্মদ যে নবি ছিলেন সেটা তো মুমিন-মুসলমানদেরই তো প্রমাণ করার কথা, কারণ তারাই সেটা দাবি করে। তারা কিভাবে তা প্রমাণ করবে? তারা হয়ত বলব মুহাম্মদ ঠিক মহাউন্মাদ ছিল না, সে খুবই খুবই ভালা মানুষ ছিল, সে লুন্টন করে নি, মানুষ হত্যা করে নি, এক ডজন বিয়ে করলেও তার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু এগুলোর কোনোটাই তাকে নবি বলে প্রমাণ করে না।
@সৈকত চৌধুরী,
আপনার দেয়া ছবিটি দেখে হাহাপগেকেধ 😀
@সৈকত চৌধুরী, হাসতে নাকি জানেনা কেউ কে বলেছে ভাই, এই দেখনা কত হাসির ছবি দাখা যায়। হাঁ হাঁ হাঁ
‘আমরা’ বল্লেই যে পরিবার হতে হবে বা ‘আমরা’ যে পরিবারের সমার্থক শব্দ এটা জানা ছিলোনা। আবার ‘আমরা’ পরিবার হলেও স্বামী উপস্থিত না থাকলে যে পরিবারকে ‘পরিবার’ বলা যাবেনা এটাও নুতন শোনা হলো।
যাই হউক, লেখকের লেখায়
এই বক্তব্য দেখে যথেষ্ট উৎসাহী হয় উঠলেও প্রথমেই যুক্তির নমুনা দেখে বাকিটুকু পড়া সময়ের অপচয় বলে মনে হলো। ধন্যবাদ।
@ব্রাইট স্মাইল্, কষ্ট করে আমার লেখার পরের অনুচ্ছেদটা দেখেন। সেখানে জনাব ভবঘুরে’র উদ্ধৃত লিংক থেকেই দেখিয়েছি, উম্মে হানি সে রাতে তাঁর পরিবারবর্গের সাথে ছিলেন। তাঁর পরিবার মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে এশা ও ফজরের নামাযও পড়েছে। এই লিংকে ‘আমরা` ব্যবহার না করে ‘পরিবার` (Family) শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।
@শাহেদ ইকবাল,
মোহাম্মদ হানির কাছে যাবার সময় তার সঙ্গীদের কাউকে বলে যায়নি কেন? সে হানির পরিবারের সাথে নামাজ পড়েছিল কিকরে তারা কি ইস্লাম ধর্ম গ্রহন করেছিল? সে বলেছে , সে হানির বাড়ি থেকে মিরাজে গিয়েছে এবং মিরজ থেকে সেখানেই ফিরে এসেছে। সে যাওয়ার সময় বা ফিরে আসার সময় তাকে কেউ দেখেছিল কি? এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার এমন লুকোচুরিতে, লোকচক্ষুর অন্তরালে অনুষ্ঠিত হল কেন?
@তামান্না ঝুমু, কষ্ট করে আমার লেখাটা আরেকবার মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। উম্মে হানির বাড়ি থেকে মেরাজ হয়েছে এবং আবার তিনি সেখানে ফেরত এসেছেন, এরকম একটি তথ্যও কোন হাদিস কিংবা কোরআনে নেই। উভয় স্থানে (কোরআন ও হাদিস) কাবা শরীফ থেকে গমন ও আবার সেখানে প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ আছে। কিছু Reference বিহীন ওয়েবসাইট ছাড়া আর কোথাও এ ঘটনার অস্তিত্ব নেই। ভবঘুরে সাহেব সেরকমই একটি লিংক থেকে বর্ণনা দিয়েছেন আর সেখানে উম্মে হানির সপরিবারে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে নামায পড়ার উল্লেখ আছে। গোলাপের একটি কমেন্ট দেখুন। তিনিও বলেছেন, ‘ইসলামের প্রথম Reference কোরআন, দ্বিতীয় Reference হাদিস।` কাজেই এ দুই জায়গায় যদি কোন ঘটনা না পান, ধরে নিতে হবে তা পরে বানানো হয়েছে।
বর্তমান সময়ের প্রগতিবাদী লেখক-বুদ্ধিজীবী যতীন সরকার তাঁর ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন` বইতে এই গোঁড়া নাস্তিকদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন, তাদের চিহ্নিত করেছেন প্রগতির শত্রু হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের আশেপাশে এ রকম দায়িত্বশীল বস্তুবাদী আস্তিকদের খুব বেশি সংখ্যায় আমরা দেখতে পাই না। বরং খুব কম সংখ্যায় হলেও দেখা পাই এমন কিছু স্বঘোষিত নাস্তিকের যাঁদের বৈদগ্ধের ও অবিশ্বাসের অহংকার আছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে বিশ্বাস ও স্থির প্রত্যয় নেই, লোকসাধারণের ভাব-ভাবনার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ নেই এবং কোনরূপ সামাজিক দায়িত্ববোধও নেই। এঁদের দেখাদেখি যাঁরা নাস্তিকতার ফ্যাশনে আক্রান্ত হন, তাঁরা তো আরও ভয়ংকর। এই ভয়ংকরেরাই দায়িত্বহীন কথাবার্তা ও আচরণ দিয়ে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদীদের পথচলাকে সুগম করে দেন। ফ্যাশনদুরস্ত নাস্তিকদের স্থুল যুক্তি ও বাহ্যিক আচরণগুলিকেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদী ও মৌলবাদীরা আরও স্থুলভাবে লোকসাধারণের কাছে উপস্থাপন করে এবং তার ফলে লোকসাধারণ ধর্মধ্বজীদের মিত্র বলে গ্রহণ করে বিজ্ঞানসম্মত ধ্যান-ধারণার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখে।——হাঃ হাঃ হাঃ আ্সলেই এদের সংখ্যাই মুক্তমনায় বেশি!!
@নির্বোদ,
ভাইজান, হাসি দেয়ার আগে নিজের নাম বা আইডি-র বানানটা দেখে নিলে ভালো হতো।
অথবা, এটা একটা অজানা শব্দ। মানেটা জানিয়ে ধন্য করবেন “নির্বোধ” জনগণকে।
ভালো থাকুন, বোধে থাকুন।
@নির্বোদ, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। যতীন সরকার লিখেছেন, স্বঘোষিত নাস্তিক ও ফ্যাশনবিলাসী নাস্তিকের সংখ্যা সমাজে বেশি নয়। মুক্তমনায় হয়তো কারও কারও মধ্যে Information Gap থাকতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, অধিকাংশই Orthodox নাস্তিক নন। Orthodox এমন একটা জিনিস, যা মুক্তচিন্তার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়। হয়তো ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত Information নেই, থাকলে অনেকেরই এ সমস্যা আর থাকবে না।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কিছু অজ্ঞ ও জ্ঞানপাপী ছাড়া কেউই প্রকৃত ধর্মকে মোল্লাতন্ত্র ও জঙ্গীবাদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন না। এরশাদ যখন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধান করলেন, তারপর এক জনসভায় দাবী করলেন, ‘ইসলাম শতকরা একশ’ভাগ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে`, তখন আমার অমুসলিম বন্ধুদেরকেই মুচকি মুচকি হাসতে দেখেছি। একজন তো বলেই ফেলল, ‘কোথায় ইসলামের স্পিরিট আর কোথায় তোমার স্পিরিট।` স্বদেশ রায় কিছুদিন আগেই দৈনিক পত্রিকার উপ-সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ‘ইসলাম হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত ধর্ম। কাজেই কেউ যা ইচ্ছা করে ইসলামের নামে চালিয়ে দেবে, এটা এখন আর সম্ভব নয়।` ইতিহাসবিদ গৌতম নিয়োগী তাঁর ‘ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িকতা` গ্রন্থে এবং সত্যেন সেন তাঁর ‘মহাবিদ্রোহের কাহিনী` গ্রন্থে ভারতবর্ষের মুসলিম নৃপতি ও স্থানীয় নেতাদের ব্রিটিশ বিরোধী অনমনীয় ভূমিকার পাশাপাশি তাঁদের প্রকৃত ধার্মিক চরিত্রও তুলে ধরেছেন (সূত্রঃ ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িকতা, গৌতম নিয়োগী, ‘হোসেন শাহঃ পুনর্বিচার`, ‘ভারতের ইতিহাসে টিপু সুলতান`, KwjKvZv, Ryb 1991, পৃঃ ১৩৮, ১৭৪ এবং মহাবিদ্রোহের কাহিনী, সত্যেন সেন, ‘আজিমুল্লাহ্ খাঁ`,‘বিদ্রোহী মৌলবী`, ‘অযোধ্যার বেগম`, ‘নাজিম মহম্মদ হাসান`, মুক্তধারা, ঢাকা, পৃঃ ১১, ৩৮, ১৩৭ ও ১৪০)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘ধর্ম আর ধর্মতন্ত্র এক জিনিস নয়। ধর্মতন্ত্রের কাছে ধর্ম যখন খাটো হয় তখন নদীর বালি নদীর জলের উপর মোড়লী করিতে থাকে। তখন স্রোত চলে না, মরুভূমি ধু ধু করে। তার উপরে, সেই অচলতাটাকে লইয়াই মানুষ যখন বুক ফোলায়, তখন মুক্তির মন্ত্র পড়ে ধর্ম, আর দাসত্বের মন্ত্র পড়ে ধর্মতন্ত্র।` (সূত্রঃ ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম`, কালান্তর)।
বিপ্লবের মহানায়ক চে গুয়েভারা ধর্মকে বিপ্লবের প্রতিপক্ষ ভাবতেন না। বরং তাঁর ‘লিবারেশন থিওলজি’ অনুযায়ী ধর্মযাজকদের প্রগতিশীল অংশকে তাঁর বিপ্লবের অংশীদার করে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রগতিশীল অংশের দর্শনও তাই। যে কারণে যতীন সরকার প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমিও হযরত মুহম্মদের উম্মত।` (সূত্র: আবু হাসান শাহরিয়ার, প্রাচ্য বাংলার ব্রাত্য মহীরুহ যতীন সরকার, দৈনিক যুগান্তর, ১২ মার্চ, ২০১০)।
তাহলে শেষ বিচারে কিছু ধর্মান্ধ মৌলবাদী আর কিছু নব্য নাস্তিক ছাড়া ধর্মের প্রতিপক্ষ কোথায়?
মিথ্যার বেসাতি আর কাকে বলে !! প্রথমে তো জাকির নালায়েক বেনামে লেখা ছাপছে কি না এই ভেবে ধন্ধে পইড়া গেসলাম । যাই হোক লিঙ্ক cut & paste করলেই হয় না , একবার যাচাই করে নিতে হয় । উনি–
” সবচেয়ে মজার কথা হলো, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মেরাজের কথা যে শুধু কোরআনেই আছে, তা কিন্তু নয়—বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও আছে। তিনি যে আল্লাহ্র নবী বা অবতার, তাঁর নাম যে ‘মুহাম্মদ` এবং ‘আহমদ`—তা-ও উল্লেখ আছে। যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা নিচের Reference দেখতে পারেন— ”
এই কথা বলে হয়তো তার দাবির জোরালো ভিত খুঁজতে চেয়েছেন । তার উদ্দেশে বলব ভাই আপনি নিজে কি একবার পড়ে দেখেছেন দেয়া লিঙ্ক গুলো । আপনি বেদের যে শব্দ “মহাম্মদ/আহমদ” বলে হাস্যকর দাবি করেছেন তা আদৌ তাই কি ? সূক্তটা দিলে ভালো করে উত্তর দিতাম । গীতার ক্ষেত্রেও তথৈবচ । উচ্চারণ বিকৃত করেও যদি তা ধরেও নিই তা মহাম্মদ/আহমদ তা পরের সূক্তের সাথে যায় না । অন্য একদিন সূক্ত সহ উত্তর দিব আশা করি । পরীক্ষা আছে , এখন আর ধৈর্য নাই ।
@অগ্নি, বিভিন্ন ধর্মের কি কি মূল গ্রন্থ আমি নিজে পড়েছি এবং কোন্ অধ্যায় থেকে কোন্ শ্লোক উদ্ধৃত করেছি, তা আমার ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১তারিখের অন্য একটা মন্তব্যে পেয়ে যাবেন। বইগুলো কোথায় পাওয়া যাবে, তা-ও সেখানে বলা আছে।
এত পন্ডিত লোক ধার্মীক হয় কেমনে? :-s যাই হোক মুক্তমনার মডারেটর এর মতি গতি বুঝতে পারতাছি না, রং নাম্বার থেকে ডায়াল করে তিনি না হয় ভূল করেই ফেলে ছেন, এডমিন কি কলার আইডি দেখে নাই, এডমিনের উদ্দেশ্য কি? 😕 :-Y বহু চেষ্ট করছি পুরা লেখা পড়ার :-Y । মনে পড়ল ১৩ বছর আগে বোখারি শরীফ খুলার পরে কিছু কিচ্ছা কাহীনী পরার পর পরার রুচি নষ্ট হইয়া গেছিলো আর পরতে পারি নাই,মনে হয় আমার মস্তিস্ক বুখারী শরীফের গল্প সাপোর্ট করে না :rotfl: বাইচ্চ গেছি।
@সীমান্ত ঈগল, ‘এত পন্ডিত লোক ধার্মিক হয় কেমনে?`—এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আপনার জন্য Stephen Hawking-এর সর্বশেষ বই ‘Grand Design`-ই যথেষ্ট হবে। সেখানে সেই সকল বিজ্ঞানীর নাম (পিথাগোরাস, আর্কিমিডিস, ডেমোক্রিটাস, জোহান্স কেপলার, গ্যালিলিও ,নিউটন) অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে, যাঁরা বিজ্ঞানকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। সেই সাথে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁরা সবাই ধার্মিক ছিলেন (পৃঃ ৫১)। ‘Grand Design` ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। নিচের লিংক থেকে Pdf ভার্সান ডাউনলোড করা যায়ঃ
http://codestealers.blogspot.com/2011/01/stephen-hawking-grand-design-free-pdf.html
আজ ৯/১১ পালন করলাম। একই সংগে আজ সন্ত্রাসি আক্রমনের হুমকি ও ছিল। এর জন্য যথেষ্ট ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ও দিনাতিপাত করতে হয়েছে। ১০ বৎসর পূর্বে ঠিক এই দিনে সন্ত্রাসীদের ভয়াল আক্রমনের শিকার হতে হয়েছে। বিশ্বের সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে মুহুর্তের মধ্যে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।বিশ্বকে চরম মুল্য দিতে হয়েছে।বিশ্বকে পিছনে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
কয়েক হাজার নিরপরাধ মানুষকে মুহুর্তের মধ্যে ধংস করে দেওয়া হয়েছে।
আত্মঘাতি আক্রমনকারীরা নাকি ইহুদি,নাছারা,মুসলমান ও কিছু অন্যান্য জাতিদেরকে তৎক্ষনাৎ জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে নিজেরা সাথে সাথেই বেহেশত চলে গিয়েছেন।
কারন?
তারাতো শহীদ হয়েছেন কাফেরদেরকে মেরে।
কত সস্তা বেহেশত!!!
কত লাভ জনক ব্যবসা !!!
এরকম লাভ জনক ব্যবসা তো আমরা সবাই আরম্ভ করতে পারি। আমাদের কাছে যদি তারা কাফের হয় তাহলে আমরাও তাদের হত্যা করে শহীদ হতে পারি ও বেহেশত যাইতে পারি।
তা হলেতো এখানেই একটি পরম শান্তিপুর্ন বেহেশত হয়ে গেল।
ধন্যবাদান্তে,
আঃ হাকিম চাকলাদার
নিউ ইয়র্ক
৯/১১/২০১১
রাত ১১ টা
@আঃ হাকিম চাকলাদার, নাইন-ইলেভেনের ঘটনার আন্তর্জাতিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। তা এ কারণে যে, পরবর্তী সময়ে এ ঘটনাকে মূলধন করে ইরাক ও আফগানিস্তানে ত্রিশহাজারেরও বেশি নিরপরাধ ও বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আরও একটা কারণে এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও অন্যান্য দেশের ১০০ জন স্থাপত্যবিদ্যার প্রফেসর বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, আশির দশকের পর আমেরিকায় সকল ভবন এভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, একটা ফ্লোর ড্যামেজ হয়ে গেলেও বাকি ফ্লোর অক্ষত থাকবে। যেভাবে আমরা টুইন টাওয়ার স্লো মোশন ছবির মত ধ্বসে পড়তে দেখেছি, সেভাবে ধ্বসে পড়বে না। তাঁরা আরও বলেছেন, ওই দৃশ্য থেকেই বোঝা যায় যে, ভেতরে শক্তিশালী ডিনামাইট বা এ ধরনের কিছু ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিবৃতির পর বিবৃতিদাতাদের কয়েকজনকে চাকরি থেকে Terminate করা হয়।
যুক্তির বহর দেখে হাসি থামানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাবলীগী বিজ্ঞান, ফটাশ ফটাশ দু’ চারটে ইংলিশ টার্ম, কাঠখোট্টা কিছু পার্টিকেল…সব জনগন চিনে অই একটা আইনস্টাইনের নাম নিলেই মারহাবা মারহাবা! তবে আসলেই ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন…মুক্তমনায় মনে হয়না এই লেখাটার সম্ভ্রম থাকবে :))
এত্ত বিশাল করে লিখতে পারছি না, সাধারনভাবে পয়েন্ট গুলো লিখছি,
১) বিজ্ঞান আঙ্গুল দিয়ে চাঁদ ফুটো করে দেয়া থুক্কু ফাটিয়ে দেয়াকে গাজাখুরিই বলে। এই গাজাখুরিত্বকে প্রমান করতে হ্যাড়ম্বা হ্যাড়ম্বা কথা ঝেড়ে দিলেই প্রমান হয়ে গেল? একটা বুলেটের আঘাতে একটা গ্লাস কেন ভাঙ্গে তার যুক্তি বিজ্ঞানে কীভাবে দেয় তার নমুনা দেখুন। এভাবে বর্ননা করুন, তারপর নাহয় হাসিটা থামানো যাবে :))
২) জুয়েল আইচের জাদুকে কী মনে করেন? ওগুলো সিমপ্ল ট্রিক!!! ট্রিক ছাড়া করে দেখান, প্রবীর ঘোষের ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি জিতে নিতে পারেন। আর ট্রিক ফলালে নবী হবার প্রশ্নই আসেনা তাই এখানে কার সাথে কী তুলনা করলেন আপনিই ভাল জানেন।
৩) খুব রিলাটিভিটি রিলাটিভিটি ফলালেন, যাইহোক মুহম্মদের গতি ছিলো আলোর চাইতে বেশি না? আপনি বললেই হয়ে গেল? স্পিড বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০০% আলোর গতিতেই পৌছাতে হলে বস্তুর ভর হবে ইনফিনিট এর কাছাকাছি! আর ইনফিনিট এর কাছাকাছি বাদ দেন, শুধু সূর্যের ভরের কাছাকাছি পৌছালেই অবস্থা কী ভয়াবহ হবে বলি, উনি ইন্সট্যান্টলি একটা ব্ল্যাক-হোলে পরিনত হবেন!! এবং রেডিয়েট করতে করতে নাই হয়ে বেবি ইউনিভার্সে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত নিস্তার নাই! হেঃ হেঃ হেঃ :lotpot: :lotpot: :lotpot: তাই খামাখা আলোর গতির হ্যাড়ম্বা মার্কা কথা তাবলীগে শুনাবেন খুব হাত তালি পাবেন এখানে সবাইকে ভড়কে দেয়ার প্ল্যান করলে সিমপ্লি বলি ভুল নাম্বারা ডায়াল করেছেন :-[
৪) আপনার প্রমানতো খুব শক্তিশালি! কথা বলার সুযোগটাই নাই :)) কিন্তু ঝামেলাটা কোথায় জানেন?
মিরাজ সত্য এর প্রমান কী?
কারণ নবী আর তার চ্যালারা বলেছে।
নবী আর চ্যালারা সত্য তার প্রমান কী?
কারণ কুরআনে বলা আছে।
কুরান সত্য তার প্রমান?
কার নবী আর তার চ্যালারা বলেছে 😀 😀 খুব ফ্যালাসি ফ্যালাসি করলেন তা বলি এই হলো আপনার “যুক্তি”? 😀 উইকির আর্গুমেন্টাম এড ভেরেকান্ডিয়াম পেজটা পড়ে আসুন। অন্যের ফ্যালাসি প্রমানে যে আপনিও ফ্যালাসিতে পা দিয়ে বসে আছেন মনে হয় খেয়াল করেন নি না? :))
আর লিখতে পারুম না, কালকে কলেজ আছে। এক ও তিন নম্বর পয়েন্ট দুইটার যৌক্তিক উত্তর না পেলে মাননীয় মুক্তমনা @এডমিন এর কাছে জানতে চাইবো এই লেখাটি কীভাবে “যুক্তিবাদ” ক্যাটাগরিতে ছাড় পেল?
@টেকি সাফি, দারুন (Y)
@টেকি সাফি, আমি যা লিখেছি, তথ্য ও যুক্তি দিয়েই লিখেছি। যাদের বুঝার, তারা বুঝেও গেছেন। এখন তার বিপরীত কিছু লিখতে হলে আপনাকেই তথ্য এবং যুক্তি দিতে হবে, যার কোন নমুনা দেখছি না। যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেগুলোর উত্তর মূল প্রবন্ধেই পেয়ে যাবেন। ভাল করে পড়ুন। চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বর্ণনা আমার নিজের নয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে হাদিসগ্রন্থ ও জীবনীগ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। আমিও Reference দিয়ে তা উল্লেখ করেছি। কেন করেছি, তা আমার অন্য একটি মন্তব্যে পেয়ে যাবেন।
@শাহেদ ইকবাল,
আপনি এখানেও ফ্যলাসির শিকার হিয়েছেন আপনি হয়ত বুঝতে পারেন নি। হাদীসে চাঁদ দিখন্ডিত হবার কথা থাকলেই তো তা সঠিক হয়ে যায় না । আপনি এমন কোন রেফারেন্স দেখান যেখানে চাঁদ দিখন্ডিত হবার ঘটনা বর্ননা আছে। চাঁদ ত একটাই তাহলে ত পৃথিবীর অন্য যায়গা থেকে এই ঘটনা দেখা যেত। কিন্তু আপনি আরব্য মিথলজি ছাড়া কোথাও এই ঘটনার বর্ননা পাবেন না। যদি পেতেন তবে এটাই হত ইসলামের সবচেয়ে বড় প্রমান। আর চাঁদ দিখন্ডিত হবার ঘটনা ত নবীর মিরাকেল না ঘটাতে পারার কোরানের ব্যাখ্যার বিপরীত। তাই না ??
@বিনায়ক হালদার,
সত্যিই শাহেদ সাহেব বুঝতে পারেন নি। আর ওনার মত লোকের সংখ্যাই বেশী।
@বিনায়ক হালদার, চাঁদ দিখন্ডিত হবার ঘটনা নবীর মিরাকেল না ঘটাতে পারার কোরআনের ব্যাখ্যার বিপরীত নয়। এ ব্যাপারে কোরআনের আয়াতসহ আজকেই অন্য একটা মন্তব্যে বিস্তারিত লিখেছি। খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
@শাহেদ ইকবাল,
মোহাম্মদ যদি চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে থাকে তাহলে তাকি খালি আরবদেশ থেকে দেখা গিয়েছিল নাকি সারা পৃথিবীতে দেখা গিয়েছিল? চাঁদ খন্ডিত অবস্থায় কতক্ষণ ছিল,দুটি খন্ড পরষ্পর থেকে কত দূরে অবস্থান করছিল? তাতে পৃথিবী তথা মানব সমাজের কী উপকার সাধিত হয়েছিল?
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সময় এবাদত করতে বলা হয়েছে কেন? চন্দ্র গ্রহণ হচ্ছে চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়া আর সূর্য গ্রহণ হচ্ছে সূর্যের উপর চঁদের ছায়া এতে এবাদতের কী আছে? উল্কাপাত ও বজ্রপাতকে শয়তান তাড়ানো বলা হয়েছে কেন? শয়তান শুধু অন্ধকার রাতে মেঘমুক্ত আকাশে ও বৃষ্টি পাতের সময় আকাশে উঠতে চায় নাকি?
খাদিজাকে বিয়ে করার পর মোহাম্মদের কোন জীবিকা ছিলনা। সে ছিল স্ত্রঈ পালিত স্বামী। খাদিজা মারা যাওয়ার পর সে এতগুলো বৌ ও দাসীর ভরন পোষন করেছে কীভাবে? আল্লাহ প্রদত্ত গনিমতের মাল দিয়ে তাইনা? খাদিজা মারা যাবার পর সে সওদাকে বিয়ে করল। সওদার বয়স ছিল ৫০। তারপর আয়শাকে বিয়ে করল তার বয়স ৬। চিন্তা করুন কোন ব্যক্তির দুটি বৌ আছে একটির বয়স ৫০, আরেকটির বয়স ৬! দুজনের সাথেই তার শারীরিক সম্পর্ক আছে একজন শিশু এরেকজন বৃদ্ধা! তারপরও ত বিয়ে করা, দাসীভোগ এবং গনিমতের মাল ভোগ শেষ হলোনা আমৃত্যু!৬ বছর থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের শয্যাসঙ্গিনী ছিল তার। আরো কয় বছর বেঁচে থাকলে আরো কয়েক ডজন বিয়ে সে নিশ্চই করত।
@তামান্না ঝুমু, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা না করে আমার লেখার মূল প্রসঙ্গের কোন উত্তর খুঁজে পান কি-না দেখুন। শেষ অনুচ্ছেদে যা লিখেছেন, তার প্রতিবাদ জনাব আকাশ মালিক ও গোলাপের যথাক্রমে ১৬ ও ১৭ মার্চের মন্তব্যের মধ্যে পাবেন। আগে নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করুন কার কথা ঠিক। ধন্যবাদ।
@টেকি সাফি, :guru: :guru: :guru:
@টেকি সাফি, আমার লেখায় সবগুলো তথ্যের সাথে Reference আছে। কাজেই Reference বিহীন কোন বক্তব্য দিয়ে সেগুলো খণ্ডন করা যাবে না। সম্ভব হলে প্রমাণ করুন যে, আমি যে সকল তথ্য ও Reference দিয়েছি, সেগুলো ভুল। অবশ্যই পাল্টা যুক্তি ও Reference দিয়ে। তা নাহলে শুধু নিজের ও আমার সময় নষ্ট করবেন।
@ শাহেদ ইকবাল,
সেই সনাতন চর্বিত-চর্বন অসার তত্ত্ব-তথ্য।
কোরান সত্য, কেননা আল্লাহ বলেছেন, মোহাম্মদ বলেছেন।
আল্লাহ্ সত্য, মোহাম্মদ সত্য কেননা কোরান একথা বলেছে।
দীর্ঘ লেখাটি মূলতঃ এই ‘চক্র যুক্তি’ (Circular Logic) এর ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আসলেই, আগুন্তক ঠিকই বলেছেন,
লেখক পরিচিতি বলে দেয় যে তিনি আসলে পরিচিতি সংকটে ভুগছেন, সেজন্য এ ধরণের লেখা লিখেছেন। ভাই শাহেদ আপনি আগামী শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে এই প্রবন্ধটি পাঠ করুন। আপনার কবিতার বইয়ের পাঠক ও গানের শ্রোতার সংখ্যা এক লাফে বেড়ে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি।
@শামসুল, লেখাটা আগাগোড়া পড়েছেন? জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ নিয়ে যা বলেছি, তারপর এ ধরনের পরামর্শ দেন কি করে? কিছু একটা হয়ে গেলে আপনিও তো ফাঁসবেন….
গাঁজাখুরি লেখা ছাড়া আর কিছু পেলাম না। লেখক লেখাটিতে এমন সব আজগুবি তথ্য দিয়েছেন যা পড়ার মত রুচি কোন শিক্ষিত মানুষের থাকতে পারেনা। ‘নবী চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন’, কোন প্রকার সন্দেহ এবং প্রমাণ ছাড়াই এ লেখায় কয়েক বার বলে গেছেন এই তথ্যটি। মশায় বিশ্ব-ভ্রমান্ডের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যখন বিজ্ঞানীদের জানার পথে তখন অতি কাছের চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার তথ্যটির কোন প্রমাণ কেন পাওয়া যাচ্ছে না ? তাছাড়া বিজ্ঞানের কোন সূত্র দ্বারা এটি সম্ভব?
আপনারা ( মোল্লারা ), নবীজী এবং সর্ব শক্তিমান আল্লা পাক এত চেষ্টা করতেছেন, ভয় দেখাচ্ছেন, শাস্তি দিতেছেন মানুষকে মেরাজের তথ্যটি বিশ্বাস করানোর জন্য। আপনাদের উদ্দেশ্যই যেহেতু এ ঘটনাটি মানুষকে জানানো, তাহলে আল্লা পাক একটা বিজ্ঞানের সূত্র দিলেই তো লেটা চুকে যায়। এ সহজ পথটি থাকতে এত শক্তি ক্ষয়ের কারণ কি?
ইসলামে বউ, মা এবং আপন বোন বাদে বাকি সকল মেয়েদের কাছে যাওয়া যেহেতু কঠোর ভাবে হারাম, তাহলে আপনার পেয়ারা নবী সেখানে কি করতে গিয়েছিল যুবতি চাচাতো বোনের কাছে? হানির স্বামীর কাছে যদি নবী যায়তো তাহলে তো তার স্বামীর কথাই হাদিসে বলা হতো। খাদিজা মারা যাওয়ার পর নবী সওদাকে বিয়া করেছেন, আর তার দ্বারা প্রমাণ করে ফেলেছেন মেরাজের সময় নবীর বউ ছিল সওদা। মেরাজের পর সওদাকে বিয়ে করলে কি খাদিজার মৃত্যুর পর সওদাকে বিয়া করা হবেনা? ভবঘুরের তথ্যটি ভুল প্রমাণ করতে হলে তো আপনাকে তথ্য এবং যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ করার দরকার।
সোমালিয়ার লাখ লাখ অবুঝ শিশু না খেয়ে, তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে নিষ্ঠুর ভাবে মারা পরছে, আপনি যদি বিশ্বাস করেন-
১। আল্লাহ পাক তাদের সৃষ্টি করেছেন।
২। আল্লাহ পাকের ক্ষমতা আছে তাদেরকে খাবার দিয়ে নিষ্ঠুর কষ্ট হতে রক্ষা করা।
৩। আল্লাহ পাকের ইশারা বাদে কিছু হয় না।
তাহলে এ নিষ্পাপ শিশু গুলোর ( যারা আপনাদের হাদিস কোরআন অনুসারেই কোন পাপ করেন নি এবং কোন প্রকার শাস্তি পাওনা নয়।) হত্যাকারী হিসেবে আপনার আল্লাহ পাককে এবং তার সাপোর্টার হিসেবে আপনাকে কেন অভিযুক্ত করা হবেনা , তার ব্যাখ্যাটি দিবেন কি?
@হেলাল, “গাঁজাখুরি লেখা ছাড়া আর কিছু পেলাম না। লেখক লেখাটিতে এমন সব আজগুবি তথ্য দিয়েছেন যা পড়ার মত রুচি কোন শিক্ষিত মানুষের থাকতে পারেনা। ‘নবী চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন’, কোন প্রকার সন্দেহ এবং প্রমাণ ছাড়াই এ লেখায় কয়েক বার বলে গেছেন এই তথ্যটি। মশায় বিশ্ব-ভ্রমান্ডের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যখন বিজ্ঞানীদের জানার পথে তখন অতি কাছের চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার তথ্যটির কোন প্রমাণ কেন পাওয়া যাচ্ছে না ? তাছাড়া বিজ্ঞানের কোন সূত্র দ্বারা এটি সম্ভব?`
গোটা প্রবন্ধে ‘নবী চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন’ ছাড়া আর কিছুই পেলেন না? এ বর্ণনা তো আমার নিজের নয়। আমি-আপনি বিশ্বাস করি আর না করি, প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে হাদিসগ্রন্থ ও জীবনীগ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। আমিও Reference দিয়ে তা উল্লেখ করেছি। কেন করেছি জানেন? ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘এমন কোন গাধা আছে যে এ ধরনের অলৌকিক ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণ (আগে কখনও না গিয়েও বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদের বর্ণনা দেওয়া) থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদকে নবী মানত না?`আরও বলা হয়েছে, ‘এই একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষগুলোর সামনেও যদি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ করা যেত, সিংহভাগ মানুষই মোহাম্মদকে নবী মানত।` আপনি নিজে কি এই ধারণা সমর্থন করেন? আপনি কি এরকম বর্ণনা শুনেই কোন লোককে নবী মানবেন? এটা আগে ভেবে দেখুন। আমি কিন্তু মানব না। তাই একই রকম Reference থেকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা উল্লেখ করে জানতে চেয়েছি, আরবের লোকেরা তো এ ঘটনাও দেখেছে বলে দাবী করে। তাহলে তাঁকে নবী মানল না কেন?
চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কি ধরনের প্রমাণ এখন পাওয়া যাবে বলে মনে হয়? যা ঘটার সে তো ১৪০০ বছর আগেই ঘটেছে। এখন হয়তো চাঁদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ খাদ বা ফাটল দেখা যেতে পারে। এরকম খাদ তো চাঁদে অভিযানের সময় পাওয়া গেছেই। আরেকটা নমুনা পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু মাত্র ১৪০০ বছর আগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে আবার জোড়া লেগেছে বলে হাদিসে দাবী করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে উভয় অংশ এত তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ জোড়া লাগবে না। কিছুটা ফাঁপা ভাব চাঁদের ভেতরে থাকতে পারে। মজার কথা হলো, কিছু লক্ষণ দেখে বিজ্ঞানীরাই দাবী করছেন যে, চাঁদের ভেতরটা ফাঁপা। চাঁদের উপর আছড়ে পড়েছিল এপোলো-১২। সঙ্গে সঙ্গে চাপা ঘণ্টাধ্বনির মত শব্দ উঠেছিল চাঁদের ভেতর থেকে। প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল সে আওয়াজ। এপোলো-১৩ অভিযানের সময় স্যাটার্নগামী তৃতীয় পর্যায়ের রকেটটি আছড়ে পড়েছিল চাঁদের গায়ে। তখনও ঝনঝন করে উঠেছিল চাঁদ। প্রথমবারের মত এত তাড়াতাড়ি থামেনি এ আওয়াজ, প্রায় আঠার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। (সূত্রঃ উড়ন্ত সসার, রকিব হাসান, প্রজাপতি প্রকাশন, পৃঃ ৩৭)।
“আপনারা ( মোল্লারা ), নবীজী এবং সর্ব শক্তিমান আল্লা পাক এত চেষ্টা করতেছেন, ভয় দেখাচ্ছেন, শাস্তি দিতেছেন মানুষকে মেরাজের তথ্যটি বিশ্বাস করানোর জন্য। আপনাদের উদ্দেশ্যই যেহেতু এ ঘটনাটি মানুষকে জানানো, তাহলে আল্লা পাক একটা বিজ্ঞানের সূত্র দিলেই তো লেটা চুকে যায়। এ সহজ পথটি থাকতে এত শক্তি ক্ষয়ের কারণ কি?`
আমিও মোল্লা নই, মেরাজ বিশ্বাস করার জন্য কেউ কাউকে শাস্তিও দিচ্ছে না। এটাও যথারীতি অনুমাননির্ভর অতি সরলীকৃত উক্তি। ধর্ম এমন একটি জিনিস, যেখানে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই। সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, ‘ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নাই। নিশ্চযই সুপথ প্রকাশ্যভাবেই কুপথ থেকে পৃথক।` (সুরা বাকারা, ২৫৬)। ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে, তারা সকলেই ঈমান আনতো, তবে কি তুমি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে?` (সুরা ইউনুস, ৯৯)। ‘বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক।` (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৯)। কেউ যদি এ নির্দেশের বাইরে গিয়ে কিছু করে, তার দায় ধর্ম কেন নেবে? বিজ্ঞানের ফর্মুলা নিয়ে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার হয়েছে, হিরোশিমা-নাগাসাকিতে বোমা ফেলা হয়েছে, এর জন্য কি কেউ বিজ্ঞানকে দায়ী করে? মেরাজের সমর্থনে নতুন করে বিজ্ঞানের সূত্র লাগবে কেন? সূত্র যা আছে, তাতেই তো কাজ হচ্ছে। দয়া করে লেখাটা আরেকবার ভাল করে পড়ুন। সেখানে গাঁজাখুরি কিছু নেই।
“ইসলামে বউ, মা এবং আপন বোন বাদে বাকি সকল মেয়েদের কাছে যাওয়া যেহেতু কঠোরভাবে হারাম, তাহলে আপনার পেয়ারা নবী সেখানে কি করতে গিয়েছিল যুবতি চাচাতো বোনের কাছে? হানির স্বামীর কাছে যদি নবী যায়তো তাহলে তো তার স্বামীর কথাই হাদিসে বলা হতো। খাদিজা মারা যাওয়ার পর নবী সওদাকে বিয়া করেছেন, আর তার দ্বারা প্রমাণ করে ফেলেছেন মেরাজের সময় নবীর বউ ছিল সওদা। মেরাজের পর সওদাকে বিয়ে করলে কি খাদিজার মৃত্যুর পর সওদাকে বিয়া করা হবেনা? ভবঘুরের তথ্যটি ভুল প্রমাণ করতে হলে তো আপনাকে তথ্য এবং যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ করার দরকার।`
আমি যা লিখেছি, তথ্য ও যুক্তি দিয়েই লিখেছি। যাদের বুঝার, তারা বুঝেও গেছেন। এখন তার বিপরীত কিছু লিখতে হলে আপনাকেই তথ্য এবং যুক্তি দিতে হবে, যার কোন নমুনা দেখছি না। ‘ইসলামে বউ, মা এবং আপন বোন বাদে বাকি সকল মেয়েদের কাছে যাওয়া কঠোরভাবে হারাম`—এটা সম্পূর্ণ অনুমাননির্ভর ও অজ্ঞতাপ্রসূত উক্তি। দয়া করে তালেবান ও জেএমবি-কে ইসলামের উদাহরণ না ভেবে কোরআনের বাংলা অনুবাদটা পড়ুন। কোন জিনিস নিয়ে মন্তব্য করার আগে সে জিনিস সম্পর্কে স্বচ্ছ্ ধারণা থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। ইসলামের সেই যুগে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম মেয়েরা ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধবিগ্রহ কিভাবে করল? মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের কাছ থেকে আমরা এতগুলো হাদিস পেলাম কিভাবে? কোরআনের সুরা নূর ৩১ ও সুরা আহযাব ৫৯ আয়াত দেখুন। নিজে নিজেই বুঝতে পারবেন যে ‘বোরখা` ইসলামের পোশাক নয়। উম্মে হানি সে সময় যুবতী ছিলেন না। তিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন আর ৫১ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সাঃ) মেরাজে গমন করেন। বাড়িটাও উম্মে হানির—স্বামীর নয়। তাই উম্মে হানির বাড়ি যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাওদার সাথে নবীর বিয়ের যে Reference দিয়েছি, সেখানেই উল্লেখ আছে যে এ বিয়ে মেরাজের আগেই হয়েছে। নিশ্চিত না হয়ে লিখিনি।
“সোমালিয়ার লাখ লাখ অবুঝ শিশু না খেয়ে, তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে নিষ্ঠুর ভাবে মারা পরছে, আপনি যদি বিশ্বাস করেন-
১। আল্লাহ পাক তাদের সৃষ্টি করেছেন।
২। আল্লাহ পাকের ক্ষমতা আছে তাদেরকে খাবার দিয়ে নিষ্ঠুর কষ্ট হতে রক্ষা করা।
৩। আল্লাহ পাকের ইশারা বাদে কিছু হয় না।
তাহলে এ নিষ্পাপ শিশু গুলোর ( যারা আপনাদের হাদিস কোরআন অনুসারেই কোন পাপ করেন নি এবং কোন প্রকার শাস্তি পাওনা নয়।) হত্যাকারী হিসেবে আপনার আল্লাহ পাককে এবং তার সাপোর্টার হিসেবে আপনাকে কেন অভিযুক্ত করা হবেনা , তার ব্যাখ্যাটি দিবেন কি?“
এটাও কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়া যা মনে আসে তাই-ই লেখার একটি নমুনা। আমার লেখার শেষদিকে যে বললাম, ‘চারদিকে এত মৃত্যু, এত শোষণ, এত বঞ্চনা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, পররাজ্য দখল, সম্পদ লুণ্ঠন, বিশ্বায়নের নামে আন্তর্জাতিক মহাজনশ্রেণীর আধিপত্য`—তারপরে আর সোমালিয়ার উদাহরণ লাগে কি? একটা দেশের এ অবস্থা কেন হয়? উপরে যা লিখেছি, তার কারণেই কি হয় না? এখন দেখা যাক, এ কারণ দূর করার জন্য কোরআন কি বলছে—
‘জাহান্নাম সেই ব্যক্তিকে ডাকবে, যে সত্যের প্রতি পৃষ্টপ্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং সংরক্ষিত করে রেখেছিল।`(সুরা মা’আরিজ, ১৭-১৮)। ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই যাতে ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।`(সুরা হাশর, ৭)। ‘তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।`(সুরা যারিয়াত, ১৯)। ‘কিন্তু যারা কুফরী করে তারা ভোগবিলাসে মত্ত থাকে এবং জন্তু-জানোয়ারের মত উদর পূর্তি করে; আর জাহান্নামই তাদের নিবাস।` (সুরা মুহাম্মদ, ১২)। ‘এইভাবে তোমার পূর্বে কোন কোন জনপদে যখনই আমি কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখন তার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিরা বলত ‘আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তারা বলত, ‘তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।`(সুরা যুখরুফ, ২৩-২৪)। ‘যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলেছে, ‘তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।` তারা আরও বলত, ‘আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধিশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেওয়া হবে না।` (সুরা সাবা, ৩৪-৩৫)। ‘মানুষের ধনে বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সূদের বিনিময়ে যা দিয়ে থাক, আল্লাহ্র দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তাই বৃদ্ধি পায়; তারাই সমৃদ্ধিশালী।`(সুরা রুম, ৩৯)। ‘ফিরাউন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং তথাকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; তাদের পুত্রগণকে সে হত্যা করত এবং নারীগণকে জীবিত থাকতে দিত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। আমি ইচ্ছা করলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতৃত্বদান করতে ও উত্তরাধিকারী করতে; এবং তাদেরকে দেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে, আর ফিরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তাদের নিকট তারা আশংকা করত।`(সুরা কাসাস, ৪-৬)। ‘আত্মীয়স্বজনকে দিবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না।` (সুরা বনি ইসরাইল, ২৬)। ‘ইয়াতিম বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুপায়ে ছাড়া তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না এবং প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। মেপে দেবার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট।`(সুরা বনি ইসরাইল, ৩৪-৩৫)। ‘ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না; তুমি তো কখনই পদভারে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।`(সুরা বনি ইসরাইল, ৩৭)। ‘পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোন পূণ্য নাই; কিন্তু পূণ্য আছে কেউ আল্লাহ্, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণে ঈমান আনয়ন করলে এবং আল্লাহ্ প্রেমে আত্মীয়স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থীগণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, সালাত কায়েম করলে ও যাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থসংকটে দুঃখক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকী।` (সুরা বাকারা, ১৭৭)। ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মমর্ন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।` (সুরা তাওবা, ৩৪)। ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি।`(সুরা শুরা, ৪২)। ‘আল্লাহ্ ক্রয়বিক্রয়কে হালাল ও সূদকে হারাম করেছেন।` (সুরা বাকারা, ২৭৫)। ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সূদ খেয়ো না চক্রবৃদ্ধিহারে এবং আল্লাহ্কে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।` (সুরা ইমরান, ১৩০)। ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধনসম্পত্তির কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদেরকে উৎকোচ দিয়ো না।` (সুরা বাকারা, ১৮৮)। ‘বরং তোমরা ইয়াতিমকে সম্মান কর না, এবং তোমরা অভাবগ্রস্তদেরকে খাদ্যদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না, এবং তোমরা উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করে ফেল, এবং তোমরা ধনসম্পদ অতিশয় ভালবাস। এটা সঙ্গত নয়।` (সুরা ফাজর, ১৭-২১)। ‘ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।`(সুরা হা-মীম আস-সাজদা, ৩৪)।
দেখা যাচ্ছে এটি আর্থ-সামাজিক কাঠামো নির্ধারণের একটি ম্যানুয়াল, যা অনুসরণ করলে শ্রেণীহীন, বৈষম্যহীন একটি সমাজ কাঠামো তৈরি হবে। মুক্তবাজারের নামে যে ধাপ্পাবাজি (আমার দেশে ভর্তুকি চলবে না, কিন্তু তাদের দেশে চলবে), তা থাকবে না। হাদিসে আরও বিস্তারিত আছে। সেখানে শ্রমিককে ইচ্ছা মত বেতন দিয়ে কাজ আদায় করে নেয়া যাবে না। তাকে লাভের অংশও দিতে হবে (মুসনাদে আহমদ), যার কথা মার্কসবাদেও বলা আছে। মজুরী নির্ধারণ ব্যতীত কোন শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করা যাবে না (বায়হাকী)। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই মজুরী আদায় করতে হবে (ইবনে মাজা)। শক্তি সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজ শ্রমিকের উপর চাপানো যাবে না (বুখারী ও মুসলিম)। মূল্যবৃদ্ধির আশায় জঘন্য অপরাধী ব্যতীত আর কেউ খাদ্য-শস্য মওজুদ করে না। (আবু দাউদ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩৯৪, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা।
আল্লাহ্ বলছেন, ‘আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।` (সুরা রা’দ, ১১)। হাদিসে আছে, ‘আমার উম্মতের মধ্যে দু’দলের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই। ওরা হলোঃ ‘কাদরিয়া` যারা বলে কার্যের দ্বারাই অদৃষ্ট নিয়ন্ত্রিত হয়, তকদির বলে কিছু নেই এবং ‘মরজিয়া` যারা বলে ভাগ্যে যা আছে, তাই হবে, কাজ করে কি হবে? প্রকৃতপক্ষে কাজ আমার হাতে, ফলাফল আল্লাহ্র হাতে।` (সূত্রঃ মহানবী, ড. ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৪৭২-৪৭৩)। কাজেই, আল্লাহ্পাকের ইশারা ছাড়া কিছু হয় না—এই চিন্তায় নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমানোর কোন সুযোগ নেই। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উদাহরণ অনুসরণ করতে হবে, যিনি মেষ চরানো থেকে রাজ্য শাসন পর্যন্ত সবই করেছেন।
@শাহেদ ইকবাল,
ভাই চাদে যে বায়ু নেই সেটা নিশ্চয় জানেন। আর শব্দ চলাচলের জন্য বায়ুর দরকার সেটাও নিশ্চয় জানেন কারন এই কথাগুলো একজন প্রাইমারী পড়ুয়া ছাত্রও জানে। তবে চাদের ভেতর থেকে শব্দ উঠেছিল এই কথাটা কেমন করে বলতে পারলেন?
@রনবীর সরকার, এ প্রশ্নের জবাব অন্য একটি মন্তব্যে দেয়া হয়ে গেছে। চাঁদে শব্দ বিষয়ক কথাগুলো আমার নিজের নয়। যেখান থেকে পাওয়া, রেফারেন্সসহ তা উল্লেখ করেছি। আজকের Page-এই পাবেন।
@শাহেদ ইকবাল,
একজন দক্ষ কারিগর যদি কিছু তৈরী করে তবে সে যেভাবে তার যন্ত্রটিকে বানাতে চাইবে তা সেইভাবেই তৈরী হবে।(মানুষের ক্ষেত্রে হয়ত সবসময় সেটা সম্ভব হয় না তার কারন প্রকৃতি এখনও সম্পূর্ণভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রনে নেই)
ঠিক তেমনি আল্লাপাক যদি এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড তৈরী করে থাকে তবে এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড তিনি যেভাবে চাইবেন সেইভাবেই তৈরী হবে এবং তার ইশারা ছাড়া কিছু হওয়া লজিকালি সম্ভব না ।যদি দ্বিতীয় কোন স্বাধীন স্বত্তার অস্তিত্ব থাকে তাহলে হয়ত তার ইশারা ছাড়াও কিছু হওয়া সম্ভব কিন্তু যেহেতু আল্লা এক ও অদ্বিতীয় তাই সেটা সম্ভব না।
আচ্ছা ধরে নিলাম আল্লাপাকের ইশারা ছাড়া কিছু হয় না। কিন্তু আল্লাহ্পাক যে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছু জানেন তা কি আপনি স্বীকার করেন?
@রনবীর সরকার, আপনার এ প্রশ্নের উত্তর স্টিফেন হকিং-এর A Brief History of Time গ্রন্থের The Origin and Fate of the Universe এবং The Unification of Physics অধ্যায়ে পেয়ে যাবেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ঈশ্বর এক গুচ্ছ বিধি তৈরি করেছেন। এ বিধি দ্বারা মহাবিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। ঈশ্বর এই বিধিমালা দ্বারা মহাবিশ্বকে বিবর্তিত হওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং তিনি আর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না। স্টিফেন হকিং আরও বলেছেন, ঈশ্বর কালে অবস্থান করেন না, বরং কাল তাঁর সৃষ্টি। কাজেই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তাঁর নখদর্পণে থাকাই স্বাভাবিক। কোরআনও এ কথাই বলছে। কোরআন বলছে, ‘কিন্তু তুমি আল্লাহ্র বিধানের কখনও কোন পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহ্র বিধানের কোন ব্যতিক্রমও দেখবে না।`(সুরা ফাতির, ৪৩)। আরও বলছে, ‘সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত।` (সুরা বাকারা, ২৫৫)।
এই লেখাটা থেকে আবারও প্রমাণ হল যে মুক্তমনা আসলেই মুক্ত মনের। লেখাটা ভাল হয়েছে। ভবঘুরের কিছু যুক্তিকে লেখক আসলেই খণ্ডন করেছেন। খুবই তথ্যবহুল লেখা। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। আসলে কাউকে নবি বলে প্রমাণ করা সম্ভব নয় কারণ তাহলে তার ছোটখাটো একটা ত্রুটিও তার নবুয়তকে সন্দেহজনক করে তুলবে বা ঐশী গ্রন্থের একটা ভুলও তার ধর্মকে মিথ্যা প্রমাণ করবে। মোহাম্মদ কে আমি সপ্তম শতাব্দীর একজন সাধারণ মানুষ মনে করি যিনি তার সময় ও সমাজ অনুযায়ী চলেছেন। সমস্যা বাধে তখন যখন তিনি তার সমস্ত মতবাদ, কাজকর্ম, জীবনাচরণ সকল যুগের সকল সমাজের মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চান বা দাবী করেন যে তিনি কোন ঐশ্বরিক সত্তার কাছ থেকে কোন বানী পান। তখন তার দোষত্রুটি গুলো উন্মোচন করা জরুরী হয়ে পড়ে কারণ তখন তা সমাজ প্রগতির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর তাছাড়া মেরাজের ঘটনা বাদ দিলেও কিন্তু তিনি নবি হয়ে যান না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য আরও বহু ঘটনা আছে যেগুলো মুক্তমনার লেখকেরা বহুবার প্রমাণ সহ তুলে ধরেছেন। একপাক্ষিক হবেন না দুদিকটাই দেখুন।
@আলোকের অভিযাত্রী, আপনি যে লেখাগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলো আমি পড়েছি। তাতে ভবঘুরে সাহেবের এ লেখাটির মতই কিছু দুর্বল যুক্তি আছে। এছাড়া নতুন কিছু পাইনি। বরং আমার লেখায় যে Reference ব্যবহার করেছি, তা যে অনেকেরই পড়া নেই, তা তাঁদের মন্তব্য থেকেই বুঝতে পারছি। আমার অনুরোধ, আমার পর্যালোচনাটি মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ পড়ুন। তথ্যগুলো যাচাই করুন। নিজেরাই বরং একপাক্ষিক হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন। ধন্যবাদ।
@শাহেদ ইকবাল
নিচের লিঙ্কটি ঘুরে আসুন http://en.wikipedia.org/wiki/Fakhitah_bint_Abi_Talib
@নোথেইষ্ট, লিংকটা দেখেছি। ওখানে শুধু বর্ণনা আছে, কোন Reference নাই। ওরা পাঠকদের কাছেই Reference চায়। Wikipedia-র যে কোন লিংকে গেলে দেখবেন একদম উপরে লেখা থাকে ‘Sources are not verified`।
@শাহেদ ইকবাল,
এক ডজন গ্রন্থ-প্রণেতা, বিশিষ্ট গীতিকার সাহেব, আপনার হয়তো জানা নেই, এ বাক্যটি সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য হচ্ছে বর্বরতা সর্বস্ব তথাকথিত মহাগ্রন্থ কোরানের বেলায়, কোরানের বিশ্লেষণধর্মী মুক্তমনার লেখাগুলো ভাল করে পড়ৃন। তারপর নিজেই বিচার করুন।
কত বছর আগে নির্মিত হয় ও গুলো? কোন প্রত্ন-তত্ত্ব এগুলো সমর্থন করে? বহুল প্রচলিত আদমের গল্প এখনও যিনি বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন তাঁর কাছে জ্ঞান-বিজ্ঞান-ইতিহাস শিখতে হচ্ছে এখানে এসে, সত্যি দূর্ভাগ্য আমাদের!
@সফ্টডক, এটাকেই বলে Double Standard কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি। ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` শীর্ষক প্রবন্ধে যখন কোন Reference ছাড়া লেখা হয়, ‘খৃ:পূ: প্রায় ২০০০ সালের দিকে আব্রাহাম দুনিয়াতে
@শাহেদ ইকবাল,
জ্বী, বিশিষ্ট গীতিকার সাহেব (শরীয়া অনুসারে তো গান বাজনা হারাম, বলেই জানি)।Double Standard সংক্রান্ত কী যেন বলতে চাচ্ছিলেন, বলে ফেলুন, ঝেড়ে কাশুন!
@সফ্টডক, বলছিলাম যে, ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` শীর্ষক প্রবন্ধে যখন কোন Reference ছাড়া লেখা হয়, ‘খৃ:পূ: প্রায় ২০০০ সালের দিকে আব্রাহাম দুনিয়াতে আসেন বলে ধারনা করা হয় যার কিছু কিছু ঐতিহাসিক প্রমানও আছে`—তখন কোন প্রতিবাদ করলেন না কেন? আমার লেখাটাই বরং ভাল করে পড়ুন। সেখানে ঐতিহাসিক উৎস থেকে এ বিষয়ে Reference দেয়া হয়েছে। গান-বাজনা হারাম—এ মর্মে একটি হাদিস কিংবা কোরআনের আয়াত দেখান। দয়া করে আফগানিস্তানের তালেবান মার্কা শরীয়তকে ইসলামের নামে চালাবেন না। আপনি ফেইল করলে গান-বাজনার স্বপক্ষে যা-যা হাদিস আছে সব দেখাব।
@শাহেদ ইকবাল,
গান হালাল কীভাবে? গান গাইবে কে,শুনবে কে? একদিন এক অন্ধ লোক মোহাম্মদের কাছে এল। মোহাম্মদের সাথে আয়শা ছিল। মোহাম্মদ আয়শাকে বলল তুমি ভেতরে যাও। আয়শা বলল লোকটি কি অন্ধ নয়? মোহাম্মদ বলল তুমি ত অন্ধ নও।
হাদিসটির রেফারেন্স দিতে পারছিনা। তাহলে ইসলামে গান হালাল হল কীকরে? কোন নারী শিল্পী কি দেশে বিদেশে একা একা কনসার্ট করতে যেতে পারবে, সে গান গাওয়ার সময় তাকে পরপুরুষেরা দেখে ফেলবেনা? সে কি পুরুষ অডিয়েন্সদের দিকে না তাকিয়ে গান করবে? কোন পুরুষ শিল্পীর গান নারী কিকরে শুনবে ও দেখবে?
ইসলামে নারীদের ব্যবসা বানিজ্য ও যুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু নবী পত্নীদের ত আল্লাহ গৃহকোণে থাকতে বলেছে, মোমিনপুত্রগণকে বলা হয়েছে তারা উন্মুল মোমিনিনদের কাছ থেকে কিছু চাওয়ার সময় পর্দার আড়াল থেকে চাইতে। কিন্তু কেন? তারা না মাতা-পুত্র! মাকে দেখে কুরিপু উথলে উঠবে নাকি, কেমন মা; কেমন পুত্র?? তাদের পুনর্বিবাহ হারাম, মোমিনপুত্রদের সামনে যাওয়া হারাম ! তাদের উপর এত অবিচার কেন?
কোরান যদি মোহাম্মদ আল্লাহর(প্রশংসিত আল্লাহ) বাণী হয় তো সে নিজে সবার দ্বারে দ্বারে এসে বলে যাকনা। এত লুকচুরি খেলা কেন , এত ভয় কেন? ২৩ বছর ধরে ওহী নাজিল হল। জিব্রাইল এতবার এল গেল কেউ তাকে দেখলনা কেন? মিরাজে যাওয়ার মুহূর্তে কেউ মোহাম্মদ বা বোরাককে দেখলনা কেন, ফিরে আসার সময়ও কেউ তাকে উরন্ত অবস্থায় দেখলনা কেন? কোরানে বলা হয়েছে, সবকিছু মানুষের সুবিধার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কয়েকটি বোরাক দুনিয়াতে পাঠালে ত মুমিন বান্দারা বিনা খরচে স্বল্প সময়ে হজ্জে যেতে পারত। অপচয়ও রোধ হত। অপচয়কারী ত শয়তানের ভ্রাতা! তার মানে পুরুষ অপচয় করতে পারবেনা। নারী করতে পারবে। অপচয়কারিনী শয়তানের ভগিনী ত বলা হয়নি!
@শাহেদ ইকবাল,
বিশিষ্ট গীতিকার সাহেব, কোরান-হাদিসের ব্যাখ্যা অনুসারে শরীয়ার দৃষ্টিতে গান-বাজনা হারাম, সন্দেহ থাকলে
এখানে দেখুন ।
আমার ধারণা, তালেবান মার্কা শরীয়তই প্রকৃত ইসলাম।
আমাদের ভালই জানা আছে, ইসলামে দল মত মার্কা ফেরকা – এসবের কোন শেষ নেই।
গান-বাজনার স্বপক্ষেও হাদিসের অভাব নেই। কারণ, আপনার দৃষ্টিতে যে গুলো মহাগ্রন্থ, সে গুলোতে
কুটযুক্তি বা হেত্বাভাস (Fallacy), বিকৃত ও খণ্ডিত উদ্ধৃতি, ভুল তথ্য, অনুমাননির্ভরতা, স্ববিরোধিতা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা
– এসবের অভাব নেই।
@সফ্টডক, দয়া করে কোরআনের যে কোন অনুবাদ দেখুন। সেখানে কথাটি আছে এভাবে, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহ্ প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রূপ করে। তাদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।` (সুরা লুকমান, ৬)। ‘লাহওয়াল হাদিস` শব্দের অর্থ ‘অসার বাক্য`। সুরাটি মক্কায় এমন এক সময়ে অবতীর্ণ হয়, যখন নাজার বিন হারিস প্রমুখ কোরাইশগণ অতীতের রাজা-বাদশাহ্র কাহিনী বলে বেড়াত এবং বলত যে, মুহাম্মদের (সাঃ) কোরআনও এরকম একটি কাহিনী। আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসুদের বরাত দিয়ে যে হাদিস বলা হয়েছে, তা একটি দুর্বল হাদিস। এটি একাধিক মুহাদ্দিস দ্বারা সমর্থিত হয়নি। বুখারী শরীফের পরের হাদিসে এমন এক ভবিষ্যতের কথা বলা হয়েছে, যখন মানুষ শুধু এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। এখানে গান নিষিদ্ধ বা হারাম এমন কথা কোথাও বলা হয়নি।
গান হারাম দেখানোর জন্য যখন এত কষ্ট করে হাদিস খুঁজতে হচ্ছে এবং ‘গান হারাম` এরকম কোন হাদিস বা কোরআনের আয়াত পাওয়া যাচ্ছে না, তখন গানের স্বপক্ষের জোরালো হাদিসগুলো দেখুনঃ
নবী যখন হিযরত করে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনার উপকন্ঠে পৌঁছলেন, তখন সেখানকার শিশু-কিশোর, আবালবৃদ্ধবণিতা শহর ছেড়ে বেরিয়ে এসে তাদের প্রিয় রাসুলকে সঙ্গীতের সুরে সুরে বরণ করলেন এভাবে-
‘তালায়াল বাদরু আলাইনা, মিন সানিয়াতিল ওয়াদায়ী
ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা, মাদায়া লিল্লাহি দায়ী।’ (আল বিদায়া ওয়াননিহায়া, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৫৭)।
হযরত মুয়াবিবজের মেয়ে রবিয়া যখন তার বিয়ের দিন স্বামীর ঘরে এলেন, তখন রাসুল (সাঃ) তাদের ঘরে এসে বিছানায় বসলেন। ওই ঘরের ছেলেমেয়েরা দফ বাজিয়ে তাদের বংশের যেসব পূর্বপুরুষ বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মরণে সঙ্গীত পরিবেশন করতে লাগল। এর মধ্যে একটি মেয়ে হঠাৎ গেয়ে উঠল, ‘আমাদের মাঝে এমন নবী উপস্থিত রয়েছেন, যিনি আগামীকালের খবর জানেন।’ রাসুল (সাঃ) সেই মেয়েকে ডেকে বললেন, ‘এটা বলো না, বরং আগে যে সঙ্গীত গাচ্ছিলে, তা গাও।’ (বুখারী শরীফ, পৃঃ ৫৭০, মেশকাত, পৃঃ ২৭১)।
আনসার গোত্রের জনৈকা বালিকা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতিপালনে ছিল। হযরত আয়েশা (রাঃ) তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিলে রাসুল (সাঃ) এসে বললেন, ‘আয়েশা! এ কি রকম বিয়ে? সঙ্গীতের ব্যবস্থা করোনি কেন? নববধুর সঙ্গে একজন গায়িকা তার শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দাও। আনসাররা খুবই সঙ্গীতপ্রিয়। (মেশকাত, পৃঃ ২৭২)। উল্লেখ্য যে, মেশকাত শরীফ হলো সব ক’জন হাদিস বর্ণনাকারীর (সিহাহ্ সিত্তা) কমন হাদিস সংকলন, যা সবচেয়ে প্রামাণ্য হাদিস গ্রন্থ।
@শাহেদ ইকবাল,
আমিতো বলেছি, আপনার উদ্ধৃতি সহ, খেয়াল করুনঃ
@সফ্টডক, আমিও বলেছি, ‘গান-বাজনা হারাম` এমন কোন কথা কোরআনে কিংবা হাদিসে নেই। গান ছাড়া অন্য বিষয়ে পরস্পরবিরোধী ‘হাদিস` বাজারে পাওয়া যায়। এই ‘হাদিস` আসলেই হাদিস কি-না, তা বোঝার জন্য আলেম বা মুফতি হওয়া লাগে না। কোরআন পড়া থাকলেই চলে। কারণ, এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ যে, প্রকৃত হাদিস কখনও কোরআনবিরোধী হবে না।
ই যদি হয় ৬২১ খ্রিস্টাব্দের মক্কা ও জেরুজালেমের অবস্থা, তাহলে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতাব্দীর ভারত ও খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ট শতাব্দীর নেপালে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মেরাজের বৃত্তান্ত গেল কিভাবে? এই দুই দেশ ছাড়াও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের ৬০০ বছর পূর্বের বেথেলহেম, হাজার বছর পূর্বের মিসর এবং পারস্যে তাঁর নাম, জীবনবৃত্তান্ত ও মেরাজের বিবরণ গেল কিভাবে? তিনি কি তাঁর জন্মের আগেই ঐ সকল কিতাবে এসব লিখে এসেছিলেন?
pura lakha tae porlam. oporar likhagula aktu bujhai a boilen.Mohammad ba Islam jonmo hobar agae ki oisob jagai Mohammad ba Islam ar kotha bola clo?
@shout, আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। এ বিষয়ে Reference সহ সমস্ত তথ্য আছে। প্রবন্ধের কলেবর অনেক বেড়ে যাচ্ছে দেখে ঐ লেখায় শুধু Reference দিয়েছিলাম। মুহাম্মদ (সাঃ)-কে যে শুধু ইসলাম ধর্মেই আল্লাহ্র রাসুল (দূত) বলা হয়েছে, তা কিন্তু নয়—বিশ্বের সকল ধর্মেই তাঁকে দূত বা অবতার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি যে তাঁর জীবদ্দশায় স্বর্গীয় বাহনযোগে ঊর্ধ্বলোকে ঈশ্বরের কাছে গমন করবেন, তা-ও একাধিক ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আছে। সনাতন (হিন্দু) ধর্মে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের সর্বশেষ অবতার ‘কল্কি` কলিযুগে আবির্ভূত হবেন। (সূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, উপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র অনূদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলিকাতা, প্রথম স্কন্ধ, পরমেশ্বরের আকার ও অবতার কথন, পৃঃ ৭)। তিনি ‘কলি` বা মন্দশক্তিকে দমন করে সত্যধর্ম প্রতিষ্ঠা করবেন। এই জন্য তাঁর এক নাম হবে কল্কি অবতার। (সূত্রঃ কল্কিপুরাণ, তৃতীয়াংশ, ২১ অধ্যায়, শ্লোক-৩৯)। তাঁর আরেক নাম হবে মুহাম্মদ। তিনি লিঙ্গচ্ছেদিত, টিকিবিহীন, শ্মশ্রূধারী ও উচ্চস্বরে আহ্বানকারী হবেন। তিনি বিশুদ্ধ পশু ভক্ষণকারী হবেন। তাঁর অনুসারীগণ ‘মুসলমান` নামে পরিচিত হবে। (সূত্রঃ ভবিষ্য পুরাণ, প্রতিসর্গ পর্ব, ৩য় খণ্ড, ৩য় অধ্যায়, মন্ত্র-৫-২৮, পৃঃ ৪১৯, হিন্দী অনুবাদক পণ্ডিত শ্রীরাম শর্মা আচার্য, National Library, Calcutta)। তাঁর অন্য নাম হবে ‘আহমদ` (সূত্রঃ সামবেদ-সংহিতা, পরিতোষ ঠাকুর অনূদিত, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, দ্বিতীয় অধ্যায়, ঐন্দ্র কাণ্ডঃইন্দ্রস্তুতি, চতুর্থ খণ্ড, মন্ত্র-১৫২ ও ১৫০০, ঋগ্বেদ-সংহিতা, রমেশচন্দ্র দত্ত অনূদিত, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, ৮ম মণ্ডল, ৬ষ্ঠ সুক্ত, মন্ত্র-১০, অথর্ববেদ-সংহিতা, শ্রীবিজনবিহারী গোস্বামী অনূদিত, হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা, ২০ কাণ্ড, ঊনবিংশ সুক্ত, মন্ত্র-১)। তিনি মাধব (বৈশাখ) মাসের শুক্লপক্ষের ১২ তারিখে শম্ভল (আরবী প্রতিশব্দ ‘দারুল আমান` বা ‘শান্তির ঘর` যা মক্কা শরিফকে বুঝানো হয়) নামক নগরীতে পিতা বিষ্ণুযশ (আরবীতে আল্লাহ্র দাস বা আবদুল্লাহ্) ও মা সুমতির (সুমতির আরবী প্রতিশব্দ ‘আমিনা`) সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করবেন। (সূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, উপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র অনূদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলিকাতা, প্রথম স্কন্ধ, পরমেশ্বরের আকার ও অবতার কথন, পৃঃ ৭, কল্কিপুরাণ, দ্বিতীয়াংশ, একাদশ অধ্যায়, শ্লোক-৫)। তিনি ‘মরুস্থলনিবাসী হবেন।`(সূত্রঃ ভবিষ্য পুরাণ, প্রতিসর্গ পর্ব, ৩য় খণ্ড, ৩য় অধ্যায়, মন্ত্র-৬, ৪১৯ পৃঃ হিন্দী অনুবাদক পণ্ডিত শ্রীরাম শর্মা আচার্য, National Library, Calcutta)। ‘তাঁর সময়ে উট যাতায়াতের প্রধান বাহন হবে। তাঁর দ্বাদশ স্ত্রী থাকবে এবং তিনি রথে (রথ অর্থ আকাশযান। মহানবী মেরাজের এক পর্যায়ে সবুজ রঙের আসনবিশিষ্ট একপ্রকার আকাশযানে চড়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন, যার নাম রফরফ) চড়ে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করবেন।` (অথর্ববেদ-সংহিতা, ২০তম কাণ্ড, ৯ম অনুবাক, ৩১ সুক্ত, মন্ত্র-২)। আল্লাহ্র রাসুল মুহাম্মদের তুল্য আর কেউ নাই (সূত্রঃ মনু, অল্লোপনিষদ, সপ্তম পরিচ্ছেদ)। ‘তিনি দেবদত্ত অশ্বে আরোহণ করে সকল জগৎ ভ্রমণ করবেন` (সূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, উপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র অনূদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলিকাতা, দ্বাদশ স্কন্ধ, অথ কলিধর্ম কথন, পৃঃ ৮৫৮)। ‘প্রজাপতি নরাশংস (‘নরাশংস` শব্দের আরবী প্রতিশব্দ ‘মুহাম্মদ`) ধ্যানের মাধ্যমে সিদ্ধি লাভ করবেন। দেবগণের সাহায্যে অসুর বিনাশ করবেন। দেবতাদের অশ্বগণের দ্বারা তাঁকে স্বর্গলোকে পাঠানো হবে।` (সূত্রঃ যজুর্বেদ-সংহিতা, ১ম কাণ্ড ৭ম প্রপাঠক ৪ মন্ত্র, পৃঃ ৩৪১-৩৪২)। মহেন্দ্র পর্বতে পুরুষ রাম (সংস্কৃত ‘পুরুষ` অর্থ ‘আত্মা`, ‘রাম` অর্থ জগদীশ্বর; ‘পুরুষ রাম` অর্থ ঈশ্বরের আত্মা, যার আরবী প্রতিশব্দ ‘রুহুল আমিন` অর্থাৎ জিবরাইল) কল্কিকে বললেন, ‘পড়। নিয়ম মতে তুমি আমাকে গুরু জানবে। (সূত্রঃ কল্কিপুরাণ, প্রথমাংশ, তৃতীয় অধ্যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্লোক)। ‘তাঁর চার ভাই ও গোত্রজাত জ্ঞাতিগণ তাঁর সহচর হবেন। তিনি পুরুষ রামের নিকট হতে বেদ (বেদ=ঐশীজ্ঞান) অধ্যয়ন করবেন। (সূত্রঃ কল্কিপুরাণ, দ্বিতীয়াংশ, প্রথম অধ্যায়, শ্লোক-২৩)। তিনি ষাট হাজার নব্বই জন অধ্যুষিত দেশে অবস্থান করবেন, যেখান থেকে পরে দেশান্তরী হবেন। তিনি হবেন বিশ্বজনীন মহামানব, তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে শান্তি স্থাপন করবেন (সূত্রঃ অথর্ববেদ-সংহিতা, ২০তম কাণ্ড, ৯ম অনুবাক, ৩১ সুক্ত, মন্ত্র-৭, পৃঃ ৪৭২-৪৭৩)। তিনি মূর্তিপূজা রহিত করবেন এবং সন্ন্যাসবাদ (বৈরাগ্যবাদ) নিষিদ্ধ করবেন (সূত্রঃ কল্কিপুরাণ, ৩য় অংশ, ষোড়শ অধ্যায়)। ‘কল্কি অবতারের বাহন হবে বায়ুর ন্যায় গতিশীল সাদা অশ্ব।` (কল্কিপুরাণ শেষ অধ্যায়, ১ম সুক্ত)। তিনি নিজ মায়ের দুধ পান করবেন না (সূত্রঃ সামবেদ-সংহিতা, প্রথম অধ্যায়, সপ্তম খণ্ড, মন্ত্র ৬৪, পৃঃ ৬)। ‘মহাদেব কল্কিকে একটি অত্যধিক দ্রুতগামী স্বর্গীয় ঘোড়া (গরুড়) দান করবেন।` (কল্কিপুরাণ, প্রথমাংশের ৩য় অধ্যায়, ২৫ শ্লোক)।
এবার আসা যাক বৌদ্ধ ধর্মে। গৌতম বুদ্ধ তাঁর মহাপ্রয়ানকালে প্রিয় শিষ্য নন্দাকে ‘অন্তিম বুদ্ধ` সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে যান। তিনি বলেন, ‘নন্দা, এই পৃথিবীতে আমি প্রথম বুদ্ধ নই এবং অন্তিম বুদ্ধও নই। এই পৃথিবীতে সত্য এবং পরোপকার শিক্ষা দান করার জন্য সময়মত এক বুদ্ধ আগমন করবেন। তিনি পূতঃপবিত্র অন্তঃকরণের অধিকারী হবেন। তাঁর হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে; তিনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞাবান হবেন। তিনি সকল লোকের নায়ক ও পথপ্রদর্শক হবেন। আমি যেরূপ পৃথিবীতে সত্যের শিক্ষা দিয়েছি, তিনিও সেরূপ পৃথিবীতে সত্যের শিক্ষা প্রদান করবেন। তিনি পৃথিবীতে এমন জীবন-দর্শন প্রদর্শন করবেন, যা একাধারে পবিত্র ও পূর্ণাঙ্গ হবে। নন্দ, তাঁর নাম ‘মৈত্রেয়` হবে।` (সূত্রঃ Gospel of Buddha by Carus, পৃঃ ২১৭)। ‘মৈত্রেয়` অর্থ ‘দয়াবান` (সূত্রঃ Muhammad in the Buddhist Scriptures, p. 15)। পবিত্র কোরআনে মুহাম্মদ (সাঃ)-কেও ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন` (সমগ্র বিশ্বের জন্য দয়া ও করুণা) উপাধি প্রদান করা হয়েছে (সূত্রঃ সুরা আম্বিয়া, ১০৭)। মৈত্রেয় বুদ্ধের বৈশিষ্ট হলো, ‘বুদ্ধ সন্তানাদির পিতা হন। বুদ্ধ স্ত্রী, সংসার ও শাসনকার্যযুক্ত ব্যক্তি হন। তিনি স্বীয় পূর্ণ আয়ু পর্যন্ত জীবিত থাকেন` (সূত্রঃ Warren, পৃঃ ৭৯)। ‘তিনি স্বীয় কর্মাদি স্বয়ং সম্পন্ন করেন`। তিনি একজন ধর্মপ্রচারক হন` (সূত্রঃ The Dhammapada, S.B.E., Vol X, p. 67)। ‘তিনি যখন একাকী ও নিরালায় অবস্থান করেন, তখন অনেক সময় ঈশ্বর তাঁর নিকট দেবতা ও রাক্ষস (ফেরেশতা ও জ্বিন) প্রেরণ করেন` (সূত্রঃ Saddharma-Pundrika, S.B.E., Vol XXI, p. 225)। ‘প্রত্যেক বুদ্ধ তাঁর পূর্ববর্তী বুদ্ধকে স্বরণ করিয়ে দেন এবং স্বীয় অনুগামীগণকে ‘মার` (শয়তান বা Devil) সম্পর্কে সতর্ক করে দেন।` (সূত্রঃ Gospel of Buddha by Carus, পৃঃ ২৫৪)। ‘বুদ্ধের অনুগামী পরিপক্ষ অনুগামী হন, তাঁকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না` (সূত্রঃ The Dhammapada, S.B.E., Vol X, p. 67)। ‘পৃথিবীতে এক সময় একজন মাত্র বুদ্ধ থাকেন` (সূত্রঃ The Life and Teachings of Buddha, Anagarika Dhammapada, p. 84)। ‘পৃথিবীতে তাঁর কোন গুরু থাকবে না।` (সূত্রঃ Romantic History of Buddha by Beal, p. 241)। ‘মৈত্রেয় বোধিবৃক্ষের নিচে সভার আয়োজন করবেন` (সূত্রঃ Taka Kusu, p. 213)। বোধিবৃক্ষ দুই প্রকার—পার্থিব বৃক্ষ ও স্বর্গীয় বৃক্ষ। ‘স্বর্গীয় বোধিবৃক্ষ অত্যন্ত প্রশস্ত পরিসরে বিস্তৃত হয়। জ্ঞানপ্রাপ্তির পর বুদ্ধ স্থির দৃষ্টিতে উক্ত বোধিবৃক্ষ দর্শন করেন।` (সূত্রঃ Romantic History of Buddha by Beal, p. 237)। ‘সাধারণ মানুষ অপেক্ষা বুদ্ধের ঘাড়ের হাড় অত্যধিক দৃঢ় হয়। সেইজন্য ঘাড় ঘুরানোর সময় তাঁকে সমস্ত শরীর ঘুরাতে হয়` (সূত্রঃ The Dhammapada, S.B.E., Vol XI, p. 64)। প্রত্যেক বুদ্ধের একটি বোধিবৃক্ষ বিদ্যমান আছে। কোন বুদ্ধের বোধিবৃক্ষ অশ্বত্থ বৃক্ষ, কোন বুদ্ধের বটবৃক্ষ এবং কোন বুদ্ধের উদুম্বর (গোনর) বৃক্ষ। মৈত্রেয় বুদ্ধের জন্য ‘শক্ত এবং ভারী কাষ্ঠযুক্ত বৃক্ষ` বোধিবৃক্ষ হবে বলে বর্ণিত আছে (সূত্রঃ Muhammad in the Buddhist Scriptures, p. 64)। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বোধিবৃক্ষ রূপে হোদাইবিয়া নামক স্থানে এক শক্ত ও ভারী কাষ্ঠযুক্ত বৃক্ষ ছিল। সেখানে তিনি সভাও করেন। ‘তিনি স্বর্গে এক বিশাল বৃক্ষ দেখেন, যা ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে অবস্থিত এবং এত বিস্তৃত যে, একজন অশ্বারোহী ব্যক্তি তার ছায়া একশত বর্ষেও অতিক্রম করতে পারবে না` (সূত্রঃ Muhammad in the Buddhist Scriptures, p. 79)। মুহাম্মদ (সাঃ) উক্ত স্বর্গীয় বৃক্ষকে স্থির দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করেন (সূত্রঃ সুরা নাজম, ১৬-১৭)। মৈত্রেয় বুদ্ধের এই বৈশিষ্টও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট ছিল যে, তিনি কখনও কারও দিকে আংশিক ঘাড় ঘুরাতেন না, বরং সমস্ত শরীর ঘুরিয়ে নিতেন (সূত্রঃ The Life of Mohammad, Sir William Muir, p. 511-512)।
জরথুস্ত্র ধর্মে বলা হয়েছে, ‘আমি ঘোষণা করছি, হে স্পিতাম জরথুস্ত্র। পবিত্র আহমদ নিশ্চয়ই আসবেন, যাঁর নিকট হতে তোমরা সৎ চিন্তা, সৎ বাক্য, ও বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করবে।` (জিন্দাবেস্তা, প্রথম পরিচ্ছেদ)। শিখ ধর্মে বলা হয়েছে, ‘বেদ ও পুরাণের যুগ চলে গেছে। এখন পৃথিবীকে পরিচালিত করার জন্য কোরআনই একমাত্র গ্রন্থ।` (গুরু নানক, গ্রন্থসাহেব)।
হযরত মুসা (আঃ)-এর উপর Deuteronomy নামক যে ধর্মগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়, তাতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে, ‘হযরত মুসার (আঃ) অনুরূপ তাঁর ভ্রাতৃবর্গের মধ্য থেকে একজন ঋষি নবী আবির্ভূত হবেন। তাঁর মুখে ঐশীবাণী প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং তিনি ঐশী আদেশাবলী মানবজাতির নিকট প্রকাশ করবেন।` (সূত্রঃ Deuteronomy, 18-18, The Books of Old and New Testament, Printed in Great Britain)। তাঁর নাম হবে ‘মুহাম্মদ` (সূত্রঃ Old testament, Song of Solomon chapter 5 verse 16:, “Hikko Mamittakim we kullo Muhammadim Zehdoodeh wa Zehraee Bayna Jerusalem.” অর্থ ‘His mouth is most sweet: yea, he is Muhammad. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem`)।
বাইবেলে ঈশা মসিহ বিশ্বমানবকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তারা যেন তাঁর পরে আবির্ভাবকারী প্যারাক্লীটের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর অনুসরণ করে।` (সূত্রঃ St. John, 14-16)। ‘প্যারাক্লীট` শব্দের আরবী প্রতিশব্দ ‘আহমদ`। স্যার উইলিয়াম মুর বলেছেন, ‘ঈশা মসিহ সুস্পষ্টভাবে বলে গেছেন যে, তাঁকে কেবলমাত্র পুরাতন নিয়মের সমর্থনকারীরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। তাঁর পর আরও একজন ঋষি ‘আহমদ` নামে আবির্ভূত হবেন।` (সূত্রঃ Sir William Muir, Life of Mohamedt (Abridge Edition), Page 164)।
এ সকল তথ্য দীর্ঘদিন জনসাধারণের নিকট অজানা ছিল। পরবর্তী সময়ে Humanist আন্দোলনের ধারায় বিশ্বব্যাপী তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের (Comparative Religion) গবেষণায় ব্যাপক জোয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের কাছে এ সকল আন্তঃধর্মীয় অজানা বিষয় উদ্ঘাটিত হয়। গবেষকগণ বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থের মাধ্যমে তা বিশ্ববাসীর নজরে আনেন। এই ধারারই একজন সুপরিচিত গবেষক হলেন ভারতের প্রয়াগ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়। তিনি ব্যাপক গবেষণার সাহায্যে বিশ্বের সকল ধর্মেরই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট অবতার যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), তা প্রমাণ করেছেন এবং তিনটি গবেষণাগ্রন্থের (‘কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব`, ‘নরাশংস ও অন্তিম ঋষি` এবং ‘বেদ ও পুরাণের দৃষ্টিতে ধর্মীয় একতা ও জ্যোতি`) সাহায্যে তা জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। মূলগ্রন্থগুলো হিন্দীতে লেখা যা অধ্যাপক ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রাক্তন অধ্যাপক, পঞ্চানন সংস্কৃত বিদ্যামন্দির, শিবপুর, হাওড়া, ভারত) ও ডঃ গৌরী ভট্টাচার্য (অধ্যাপক, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়) কর্তৃক সম্প্রতি বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলিসহ সনাতন ধর্মের সকল বেদ, উপনিষদ ও পুরাণ (মূল সংস্কৃত ও বাংলা অনূবাদসহ) কলকাতার হরফ প্রকাশনী ও অন্যান্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে এগুলো বাংলাদেশেও (বাংলাবাজার) পাওয়া যাচ্ছে। ফলে যে কোন অনুসন্ধিৎসু পাঠক যে কোন সময় মূল গ্রন্থের সাথে গবেষণালব্ধ তথ্য মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন।
@শাহেদ ইকবাল, “আল্লাহ্র রাসুল মুহাম্মদের তুল্য আর কেউ নাই (সূত্রঃ মনু, অল্লোপনিষদ, সপ্তম পরিচ্ছেদ)।”
মহাকবি আপনি কি জানেন “অল্লোপনিষদ ” কারে কয়?
এটি মুঘল আমলে রচিত, মুঘলের টাকায়, অতিসামান্য সংখ্যক সুক্তে ইসলামের সারকথার ভারতী-অনুবাদ। এটা ও এ-সংক্রান্ত ইসলামী-স্টুপিডদের স্টুপিডিটি একদা কতিপয় কাফের কুমারকে একবেলা হাস্যরস পরিবেশন করেছিল; আপনি তো আমায় নস্টালজিক করেদিলেন মশাই!
@শান্তনু সাহা, আপনিও দেখছি আউট অব কনটেক্সট ‘অল্লোপনিষদ` নিয়ে নেমে পড়লেন। আমি যা লিখেছি, তথ্য ও যুক্তি দিয়েই লিখেছি। এখন তার কোন অংশের সাথে দ্বিমত করতে হলে আপনাকেও তথ্য এবং যুক্তি দিতে হবে। কেবল শোনা কথার উপর লিখলে তো হবে না। ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের গবেষণা গ্রন্থের (‘কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব`, ‘নরাশংস ও অন্তিম ঋষি` এবং ‘বেদ ও পুরাণের দৃষ্টিতে ধর্মীয় একতা ও জ্যোতি`) কোন সমালোচনা বা প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। চারটি বেদ বাদ দিয়ে শুধু ‘অল্লোপনিষদ` নিয়ে কমেন্ট করছেন কেন? বেদ, উপনিষদ ও শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ আমি নিজে মিলিয়ে দেখেছি।
‘অল্লোপনিষদ’ আলোচনা প্রমাণ করে আপনার পঠনের গভীরতা; বইটি কে, কেন,কখন লিখল তা না জেনেই ব্লগের প্রবন্ধে (আপনার দাবী মতে প্রবন্ধ; যদিও এটি প্রলাপ)তারই উল্লেখ——- সাহসের প্রশংসা করতে হয়!
আমি আরো দুটি মন্তব্য করেছিলাম——— সেগুলো দেখাচ্ছে না।সে গুলোতেও কিছু কথা বলা ছিল।
@শান্তনু সাহা, ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের গ্রন্থগুলি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন। তারা সকল শীর্ষ ধর্মবিশারদের মাধ্যমে বইগুলোর দালিলীক ত্রুটি আছে কি-না তা অন্বেষণ করেন এবং শেষমেষ তার প্রামাণ্য দলিলের সত্যতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হন। বর্তমানে বইগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হচ্ছে। যদি সামান্যতম তথ্যগত ত্রুটি পাওয়া যেত, তবে এ গ্রন্থ সর্বাগ্রে ভারতে নিষিদ্ধ হত। কোন গবেষণা গ্রন্থ সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে সেই গ্রন্থ সম্পর্কে এটুকু তথ্য আগে জেনে নেয়া দরকার বলে মনে করি।
@শাহেদ ইকবাল,
মিথ্যাচার ছাড়া ধর্ম হয় না কারণ ধর্ম মানেই প্রতারণা। ইমানদাররা কোরান ছাড়া অন্য সকল ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত ও অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করার পর আবার এগুলো থেকে মুহাম্মদের নবুয়তি প্রমাণ করার যে চেষ্টা করেন তাকে অসততা ছাড়া আর কিছুই বলার নাই। সামান্য কিছু উদাহরণ দেই –
এই অল্লোপনিষদ কখন রচিত হয়েছে তা কি জানেন? ধারণা করা হয় এই বেনামি কিতাব আকবরের সময় আরবি জানা কারো (হয়ত মুসলিম) দ্বারা রচিত হয়েছে। সেটি বাদশাহ আকবরের সর্ব ধর্মের খিচুড়ি দ্বিনি ইলাহির প্রভাবে তৈরী হতে পারে। গোলাম মোস্তফা তার বিশ্বনবী বইটিতেও আল্লোপনিষদ থেকে উদ্বৃতি দিয়ে মুহাম্মদের নবুয়তি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এ অসতাতার কারণটা কি একটু বলবেন?
হায়রে কপাল 🙂 এই ভবিষ্য পুরাণ হিন্দুদের কোনো মূল ধর্মগ্রন্থ না। এটি মূলত ভবিষ্যতবাণী করতে পারা জোতিষীদের মত কিছু ধূর্ত লোকের দ্বারা দীর্ঘদিন থেকে রচিত হয়ে আসছিল। এই প্রতারকরা এমনকি ভারতে ইংরেজরা আসবে, বিভিন্ন রাজা রাণী এরো ভবিষ্যবাণী একদম নিখুতভাবে করেছিল 🙂 । এরকম আজাইরা ভবিষ্যৎ বাণী পূর্ণ কিতাব এটি। এরা কোনো ঘটনা ঘটার পরই তা এতে অন্তর্ভুক্ত করে তা আগে থেকেই এই গ্রন্থে ছিল বলে দাবি করত – বিষয়টা কি পরিষ্কার? আরেকটু বলি, হিন্দুদের গ্রন্থে একদম মুহাম্মদ আর আল্লার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে কিন্তু সেটা তারা জানেনা কিন্তু মুসলমানরা জানে এমুন বিশ্বাস ঘিলু কতটা কম হলে করা যেতে পারে?
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেশ flexible. এগুলো যুগ যুগ ধরে লেখা হয়েছে, পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয়েছে। বুদ্ধের মত ঈশ্বর সম্পর্কে উদাসীন ব্যক্তিকে বুদ্ধ অবতার বানিয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। মুহাম্মদের পর ( ভারত দীর্ঘ সময় মুসলমানদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, এর আগেও মুসলমানরা ভারতে বিভিন্ন সময় এসেছে) তাকেও যদি হিন্দুরা তাদের ধর্মগ্রন্থে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের করার চেষ্টা করে এতেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
দুনিয়ার তাবত ধর্মগ্রন্থে কোনো ব্যক্তির ভবিষ্যৎবাণী থাকলেই তাকে মুহাম্মদ মনে করার কারণটাও বড়ই অবোধগম্য। কোথাও মরুভূমির কথা বলা হলেই তা হয়ে যায় আরবভূমি। উটের পিঠে বা ঘোড়ার পিঠে চড়লে তা ঠিক কি কারণে আরবের এক মহাউন্মাদকে মিন করে সেটা ছোটবেলায়ও বুঝি নাই। কেন, আরব ছাড়া আর কোথাও কি ঘোড়া, উট, মরুভূমি এগুলো নেই। ধ্যাৎ।
@সৈকত চৌধুরী, শুধু ঘোড়া, উট, মরুভূমি—এত সরলীকরণ করলে তো হবে না। ‘ধারণা করা হয় এই বেনামি কিতাব আকবরের সময় আরবি জানা কারো (হয়ত মুসলিম) দ্বারা রচিত হয়েছে`—এই যে ‘ধারণা করা হয়`, ‘হয়ত` এই শব্দগুলোতেই আমার যত এলার্জি। মনে রাখতে হবে এটি একটি সাদা ঘোড়া, যা ভারতে পাওয়া যায় না। আরও মনে রাখতে হবে, অন্ধ প্রদেশের পাঁচ হাজার বছর পুরানো একটি মন্দিরে কল্কি অবতারের সাদা ঘোড়ায় উপবিষ্ট ছবি পাওয়া গেছে। স্থান-কাল-তারিখ-জীবনবৃত্তান্ত সব বিবেচনায় রাখতে হবে। Old testament-এর Song of Solomon chapter 5 verse 16-অরিজিনাল হিব্রু ভার্সনে ‘Muhammad`শব্দটা এখনও রয়ে গেছে। (দেখুনঃ “Hikko Mamittakim we kullo Muhammadim Zehdoodeh wa Zehraee Bayna Jerusalem.” অর্থ ‘His mouth is most sweet: yea, he is Muhammad. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem`)।
তাছাড়া এ সকল বিভিন্ন ধর্ম ও প্রবর্তকের মধ্যে সুদীর্ঘ স্থান ও কালের ব্যবধান রয়েছে। এ সকল ধর্ম যখন প্রবর্তিত হয়, তখন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ও মহাদেশ পরস্পর থেকে এত বিচ্ছিন্ন ছিল যে, তাদের একের সম্পর্কে অপরের কোন জ্ঞানই ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল আদিমতম পর্যায়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পায়ে হাঁটা ছাড়া যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম ছিল না। এই ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন পৃথক পৃথক ভাষা ও সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে যে, দূরবর্তী সমাজের ধর্ম সম্পর্কে অন্য কারও জানার কিংবা ভাব বিনিময়ের কোন রাস্তা ছিল না।
সবচেয়ে বড় কথা, এ সকল ধর্মের অনুসারীগণ মুহাম্মদ (সাঃ)-কে শেষনবী বলে স্বীকার করেন না। তাঁদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন। যার কারণে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও পার্সী (জরথুস্ত্র) সম্প্রদায় তাঁর বিরুদ্ধে চরম শত্রুতায় লিপ্ত হয়। এমনকি তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা চালায়। ভারতবর্ষেও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে। কাজেই এটা হতে পারে না যে, এ সকল ধর্মের অনুসারীগণ নিজেরাই তাঁদের ধর্মগ্রন্থে এ সকল তথ্য ঢুকিয়ে নিয়েছেন। বরং ইতিহাস বলছে, ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় নানাভাবে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই তাঁদের ধর্মগ্রন্থের এ সকল অংশ গোপন করেছে। আবার একই সময় তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে গোপনে যাচাইও করেছে। যখন দেখেছে তথ্য মিলে যাচ্ছে, তখনও তাঁর নবুয়তের সত্যতা স্বীকার করেনি। বরং আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে। আরও শত্রুতা করেছে। যেমন, করছে এখনও। কিন্তু আল্লাহ্ স্বয়ং জানেন, তাঁর অবতীর্ণ পূর্ববর্তী কিতাবে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কি লেখা আছে। তাই তিনি সেই সব কিতাবধারীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে (মুহাম্মদ) সেইরূপ জানে যেইরূপ তারা নিজেদের সন্তানদেরকে চিনে এবং তাদের একদল জেনেশুনে সত্য গোপন করে থাকে।`( সুরা বাকারা, ১৪৬)।
এছাড়া হিন্দুধর্ম কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের ধর্ম হওয়ায় উক্ত শ্রেণী ছাড়া পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য বেদ পাঠ, শ্রবণ ও দর্শন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এবং তার জন্য অমানুষিক শাস্তির বিধান রাখা হয়। সেই সাথে ভারতবর্ষের বাইরে ধর্মপ্রচার এমনকি ভ্রমণ করাও নিষিদ্ধ করা হয় (সূত্রঃ বেদ ও পুরাণে আল্লাহ্ ও হযরত মোহাম্মদ, মূল রচনাঃ ধর্মাচার্য ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, অনূবাদঃ অধ্যাপক ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডঃ গৌরী ভট্টাচার্য, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃঃ ৮৫)। যীশুখ্রিস্টও নিজেকে কেবলমাত্র বনি ইসরাঈলদের নবী বলে ঘোষণা করেন এবং অন্য জাতির নিকট ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ করেন। (সূত্রঃ St. Mathew, 7:6, 15:24,26)। তদুপরি এ সকল ধর্মগ্রন্থের ভাষা হিব্রু ও সংস্কৃত হওয়ায় তা সাধারণের নিকটও অবোধগম্য ছিল। পরবর্তী সময়ে Humanist আন্দোলনের ধারায় বিশ্বব্যাপী তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের (Comparative Religion) গবেষণায় ব্যাপক জোয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের কাছে এ সকল আন্তঃধর্মীয় অজানা বিষয় উদ্ঘাটিত হয়। গবেষকগণ বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থের মাধ্যমে তা বিশ্ববাসীর নজরে আনেন।
@শাহেদ ইকবাল,
একটু ভাবুন। আপনি যখন মুহাম্মদের নবুয়তি প্রমাণ করবেন আরেকটি গ্রন্থে তাকে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে বলে তখন সেটা আপনারই দায়িত্ব ঐ গ্রন্থকে খাটি বলে প্রমাণ করা। এ বইটি মুহাম্মদের আগে রচিত হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ নেই এবং এটি মুঘল আমলে রচিত বলে আনেকেই মত দিয়েছেন, একটু খুজে দেখেন না কেন।
সাদা ঘোড়া যদি ভারতে পাওয়া যায় না, তাতে কী হয়েছে?
আমি একটি বই লেখলে তা পরিবর্তন করা যাবে না – এটা আধুনিক সময়ের নীতি। পূর্বে লেখা শাস্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে এ নীতি প্রযোজ্য ছিল না রে ভাই। এখন মুহাম্মদ আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে মরে গেছেন। এখন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের কিতাবে যদি দেখান মুহাম্মদ আছে তবে তাতে কিভাবে প্রমাণ হয় মুহাম্মদ নবি ছিল তা বোধগম্য নয়। আপনি কিভাবে প্রমাণ করবেন এসব ধর্মগ্রন্থ পরিবর্তিত হয় নাই? হিন্দুরা বৌদ্ধকে তাদের ধর্মে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেল অবতার বানিয়ে, এরকম ভাবনা মুহাম্মদের ব্যাপারে তারা করে নাই তা বুঝলেন কিভাবে?
মুহাম্মদ একটি শব্দ। এটি কি কেউ আর কোনোভাবে ব্যবহার করবে না? কোনোও শাস্ত্রে কেউ যদি প্রশংসা প্রশংসিত এসব শব্দ ব্যবহার করে তবে মুমিন ভাইরা একে মুহাম্মদ বলে ধরে নেয় কেন? (কারণ নাকি মুহাম্মদ শব্দের অর্থ প্রশংসিত 🙂 )
এখন হিব্রু আরবির কাছাকাছি একটি ভাষা, এতে মুহাম্মদের কাছাকাছি শব্দের ব্যবহার থাকতেই পারে। কিন্তু এটা তো কারো নাম হিসেবে ওখানে ব্যবহৃত হয় নি। দেখেন-
Hebrew Transliterated
5:16 ChKV MMThQYM VKLV MChMDYM ZH DVDY VZH Ur’yY BNVTh YUrVShLM.
Latin Vulgate
5:16 guttur illius suavissimum et totus desiderabilis talis est dilectus meus et iste est amicus meus filiae Hierusalem
King James Version
5:16 His mouth is most sweet: yea, he is altogether lovely. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem.
American Standard Version
5:16 His mouth is most sweet; Yea, he is altogether lovely. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem.
Bible in Basic English
5:16 His mouth is most sweet; yes, he is all beautiful. This is my loved one, and this is my friend, O daughters of Jerusalem.
Darby’s English Translation
5:16 His mouth is most sweet: Yea, he is altogether lovely. This is my beloved, yea, this is my friend, O daughters of Jerusalem.
Douay Rheims Bible
5:16 His throat most sweet, and he is all lovely: such is my beloved, and he is my friend, O ye daughters of Jerusalem.
Noah Webster Bible
5:16 His mouth is most sweet: yes, he is altogether lovely. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem.
World English Bible
5:16 His mouth is sweetness; Yes, he is altogether lovely. This is my beloved, and this is my friend, Daughters of Jerusalem. Friends
Young’s Literal Translation
5:16 His mouth is sweetness — and all of him desirable, This is my beloved, and this my friend, O daughters of Jerusalem!
উল্লেখ্য এখানে বলা হয়েছে machmad যার অর্থ altogether lovely। ভালো করে পড়ে দেখুন এখানে মুহাম্মদের কোনো প্রসংগই আসছে না। ( ফ্রি বাইবেল নেটে পাবেন)
আপনারে কেডা কইছে? আর সাদা ঘোড়া কি শুধু চৌদি আরবে থাকে? White (horse)
এগুলো কোত্থেকে যে দেন! দেয়ার সময় এট্টু যাচাই করে নেয়া কি উচিত নয়? আপনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, মনে হয় সেগুলো নিয়ে না ভেবে, না ঘাটিয়ে কোনো এক ইছলামি কিতাব থাইক্যা কপি পেস্ট মার্তাচেন।
@সৈকত চৌধুরী,
মোহাম্মদ শব্দের অর্থ প্রশংসিত। আল্লাহ সুরা ফাতেহাতে বলেছেন সকল প্রশংসা আল্লাহর। তাহলে ত আল্লাহর নামই মোহাম্মদ আল্লাহ হওয়া উচিত ছিল, আল্লাহর কথা অনুযায়ী। নবীর নামটাই ত ইসলাম বিরোধী।
@তামান্না ঝুমু, ‘মুহাম্মদ` শব্দের অর্থ ‘বিশেষভাবে প্রশংসিত` আর ‘আলহামদুলিল্লাহ্` শব্দের অর্থ `সকল প্রশংসা আল্লাহ্র`। ‘বিশেষ (Special)` এবং ‘সকল (General)` এই দুটো শব্দের পার্থক্য যিনি বুঝতে পারেন না, তার কথার জবাব দেব কি? আইনস্টাইনের Special Theory of Relativity এবং General Theory of Relativity-এর পার্থক্য বুঝেন?
@শাহেদ ইকবাল,
@তামান্না ঝুমু,
আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সকল প্রশংসা আ্ল্লাহর। সকল মানে ত সমস্ত। সকল প্রশংসা যদি আল্লার হয় তাহলে ত আর কোন প্রশংসা অবশিষ্ট থাকেনা। কোন মানুষ ভাল কাজ করলে কি তার প্রশংসা করা যাবেনা? সকল প্রশংসা যেহেতু আল্লার তাহলেত অন্য কারো প্রশংসা করতে গেলে আল্লার প্রশংসায় টান পড়ে যাবে।
রূপকথার গল্পের খল নায়ক যে নিজের প্রশংসা নিজে করে, নিজেকে নিজে ধন্যবাদ দেয় তাকে বোঝার জন্য আইনস্টাইনের থিওরি বোঝার কী দরকার? আমার কথার জবাব আল্লাকে দিতে বলেন। এ উপলক্ষে কোন আয়াত নাজিল হয়ে গেলে মন্দ কি?
@সৈকত চৌধুরী, আপনার মন্তব্যের জবাব শান্তনু সাহা-কে যা লিখেছি (২০ সেপ্টেম্বর ২০১১), তার মধ্যে পেয়ে যাবেন। ইন্টারনেটে গিয়ে Translation পড়লে আসল জিনিস কিছুই পাবেন না। আমি সব সময়ই জানতে চাই, শিখতে চাই। ফলে আপনারা যে Reference দেন, তা পুরোটাই পড়ি। আপনাকেও কষ্ট করে ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের বইটা জোগাড় করে পড়তে হবে। অনুমাননির্ভর কথা বললে হবে না। Old testament-এর Song of Solomon chapter 5 verse 16-এর ইংরেজী Translation করা হয়েছে ‘His mouth is most sweet: yea, he is he is altogether lovely. This is my beloved, and this is my friend, O daughters of Jerusalem` অথচ অরিজিনাল হিব্রু ভার্সনে ‘Muhammad`শব্দটা এখনও রয়ে গেছে। দেখুনঃ “Hikko Mamittakim we kullo Muhammadim Zehdoodeh wa Zehraee Bayna Jerusalem.” হিব্রু ‘MMThQYM` শব্দের উচ্চারণ মোটেই ‘machmad` নয়—এটা হবে ‘Muhammadim`। হিব্রু ভাষা জানেন, এমন যে কোন ভাষাবিদের সাথে কথা বললেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন। হিব্রু ভাষায় কারও নামের সাথে সম্মানসূচক অর্থে ‘im` যোগ করা হয়। তার মানে এখানে অরিজিনাল নামটা Muhammad। মুহাম্মদ আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষার শব্দ নয়। কাজেই অন্য কোন ভাষায় এ নাম দেখলেই বুঝতে হবে, এমন কোন ভিনদেশী লোকের কথা বলা হচ্ছে, যিনি জাতিগতভাবে আরব এবং তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ`। যেমন, আমরা বাংলায় লিখি আইনস্টাইন, নিউটন ইত্যাদি। ওল্ড টেস্টামেন্টের ইংরেজি অনুবাদকের আচরণেই তো প্রমাণিত যে, এখনও তাঁরা ঐ নামটা লুকাতে চাইছেন। যেমন লুকাতে চেয়েছেন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়েও। তাঁরা নিজেরাই সেটা ওখানে ঢুকালে আবার লুকাতে চাইবেন কেন?
এক জায়গায় লিখেছেন, ‘সাদা ঘোড়া যদি ভারতে পাওয়া যায় না, তাতে কী হয়েছে? ` আবার কয়েক লাইন পর লিখেছেন, ‘মনে রাখতে হবে এটি একটি সাদা ঘোড়া, যা ভারতে পাওয়া যায় না।` আপনারে কেডা কইছে? আর সাদা ঘোড়া কি শুধু চৌদি (আসলে হবে সৌদী)আরবে থাকে? এই কথাগুলো শুধু যে পরস্পরবিরোধী, তা নয়, হঠাৎ করে ভাষা ও বাচনভঙ্গীও (আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার) পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রথম অনুচ্ছেদগুলোর সাথে সর্বশেষ অনুচ্ছেদের তফাৎ তো খুবই বিস্ময়কর। পাঠকের মনে হতে পারে, এই কমেন্ট একজনের লেখা নয়। আমার কাছেও এটা রহস্যজনক মনে হয়েছে। যাই হোক, সাদা ঘোড়া যে ভারতে পাওয়া যায় না, এটি একটি প্রমাণিত সত্য। যা নিশ্চিত না হয়ে লিখিনি। কাজেই বিতর্ক না করে যে কোন Zoologist-এর সাথে কথা বলে দেখুন।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
@শাহেদ ইকবাল,
ভাই, মুহাম্মদ, আহমদ এগুলো আরবি শব্দ। যেহেতু হিব্রু ভাষা আরবির কাছের ভাষা তাই এসব শব্দের কাছাকাছি প্রতিশব্দও আরবিতে থাকার কথা। এখন কেউ সেগুলো ব্যবহার করলেই আপনি যদি মনে করে থাকেন তা আপনার হেরা নাকি কোনো এক গুহা থেকে বের হওয়া কোনো এক নবিকে ভবিষ্যতবাণী করছে তবে মুশকিল বঠে। Old testament এর ইংরেজি অনুবাদ আপনি ইচ্ছে করলেই পেয়ে যাবেন নেটে খুঁজলেই। সেখানে কি মুহাম্মদের শেষ নবি হওয়ার কথা বলা হয়েছে? যদি বলা না হয়ে থাকে তবে আপনি কেন এরকম দাবি করবেন? আপনাদের কারণে কি ‘প্রশংসা’ জাতীয় শব্দ একদম বাদ দিয়ে দিতে হবে কারণ সেটা কিনা মুহাম্মদ শব্দের অর্থ?
Song of Solomon এর এই জায়গায় কি এমন কোনো প্রসংগ এসেছে যে সেখানে মহম্মদের আগমনের ভবিষ্যৎবাণী করতে হবে? ভাল করে পড়ুন, এখানে মুহাম্মদের নবি হওয়ার ভবিষ্যতবাণী বুঝাতে হলে কষ্টকল্পনা করেও কোনো সংগতি দেয়া যায় না।
Old testament এর এ বাক্যটির ২০ ট ইংরেজি অনুবাদ এখানে দেয়া হয়েছে-
Song of Solomon 5:16
আপনি সকল অনুবাদক থেকে বেশি বুঝেন, তাই না? যারা রাতদিন হিব্রু ভাষার চর্চা করছে তাদের থেকেও বেশি বুঝেন।
এখন সাদা ঘোড়া ১৪০০ বছর আগের আরব ছাড়া আর কোনোদিন পৃথিবীর কোনো জায়গায় কোনো অবস্থায়ই জন্মাবে না সেটা আপনিই বরং দেখান।
আর কল্কি অবতার সম্পর্কে জানুন এখান থেকে –
Is Muhammad Predicted in Hindu Scriptures?
খুব মন দিয়ে পড়বেন আশা করি। আবারো বলছি, খুব মন দিয়ে।
@সৈকত চৌধুরী, আগেই লিখেছি, ইন্টারনেটে গিয়ে ফ্রি বাইবেল নেট দেখে নিরপেক্ষ কোন অনূবাদ পাবেন না। আমি সকল অনুবাদক থেকে বেশি হিব্রু বুঝি কি-না তা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। আমি যা বুঝি, তা হলো একজন প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত গবেষক (যা আপনার বর্ণিত লিংকেও স্বীকার করা হয়েছে), যে অথরিটি নিয়ে তথ্য দেবেন, তার পাল্টা তথ্য দিতে হলে ওই লেভেলের অথরিটি আপনার-আমার থাকতে হবে। আপনার উদ্ধৃত কল্কি অবতার সংক্রান্ত লিংকটা দেখেছি। ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের গবেষণা গ্রন্থের উত্তরে যে কেউ (কোন নামও নেই) দুই-তিন লাইন কমেন্ট করে ছেড়ে দিলে তা যদি দলিল হয়, তাহলে চলুন আমরাও এ কাজে নেমে পড়ি। বড় বড় পণ্ডিতেরা তখন আমাদের কথাগুলোও দলিল হিসাবে গ্রহণ করবেন। কি বলেন?
ব্রহ্মা ও বিষ্ণু নামের বাংলা অর্থ সৃষ্টিকর্তা ও রক্ষাকর্তা, যা আরবীতে খালেক ও হাফিজ। দুটোই কোরআনে বর্ণিত আল্লাহ্র নিরানব্বইটি নামের অন্তর্ভুক্ত। আর এই লিংকে বলা হচ্ছে আল্লাহ্ ও বিষ্ণু এক জিনিস নয়। এই লিংকের সব কমেন্টই এরকম। যিনি এ সব কমেন্ট করছেন, তিনি তাঁর পরিচিতি ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ আরেকটা পাল্টা বই কেন লিখছেন না—এ প্রশ্ন করাই সঙ্গত ছিল সবার আগে।
আমি কিন্তু আপনারা যা যা Reference দিচ্ছেন, সবই মনোযোগ সহকারে পড়ছি। না পড়ে কোন লেখার উপরই কখনও মন্তব্য করি না। আপনারা কি আমার মূল প্রবন্ধের Reference গুলোর একটাও পড়েছেন? এমনকি ‘বেদ ও পুরাণে আল্লাহ্ ও হযরত মোহাম্মদ`, মূল রচনাঃ ধর্মাচার্য ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, অনূবাদঃ অধ্যাপক ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডঃ গৌরী ভট্টাচার্য—এটাও পড়েননি। বইটা বাংলাবাজারেই পাওয়া যায়। একটা বই সম্পর্কে না পড়েই মন্তব্য করা কোন যৌক্তিক আচরণ নয়। ভবিষ্যতে সাদা ঘোড়া পৃথিবীর আর কোনো জায়গায় জন্মাবে কি-না, সেটা জানতে চাওয়াটা আরও অযৌক্তিক।
এখন থেকে ভবিষ্যতে উপরের বইটা না পড়ে সে সম্পর্কে কোন কমেন্ট করবেন না আশা করি। এ ধরনের বালখিল্য লেখার পেছনে নষ্ট করার মত সময় কারও নেই।
@শাহেদ ইকবাল, আপনাকে ধন্যবাদ লেখটির জন্য যার জন্য অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম আল্লাপোনিশদ,ভবিষ্যপুরান, বাহ্ চমৎকার,ও হে হিন্দু শাস্রে আমার জানা মতে কল্কিঅবতার কলিযুগের শেষের দিকে আসবেন,আর কলিযুগের স্তায়িত্ব লাখ বছরের উপরে সঠিখ হিসাবটা আমার মনে নেই,যাইহোক কলিযুগের ব্য়স এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০০০ বছর অর্থাৎ এটা শুরুর দিক। মানুষ নিজের জিবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে ঈশ্বর বানিয়েছে তারপর ঈশ্বরে ঈশ্বরে যুদ্ধ করেছ আর এখনো করছে।
@আস্তরিন, ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ অনুসারে যুগ চার ভাগে বিভক্ত। যেমনঃ
(১) সত্য যুগঃ এর অন্য নাম কৃত যুগ। এই যুগের পরিধি সতের লক্ষ আটাইশ হাজার বৎসর।
(২) ত্রেতা যুগঃ সত্য যুগের পরে এর সূচনা। এর পরিধি বার লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার বৎসর।
(৩) দ্বাপর যুগঃ ত্রেতা যুগের পর দ্বাপর যুগ আরম্ভ হয়। এর পরিধি আট লক্ষ চৌষট্টি হাজার বৎসর।
(৪) কলি যুগঃ কলি যুগ চার লক্ষ বত্রিশ হাজার বৎসরের সমন্বয়ে গঠিত।
সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের সর্বশেষ অবতার কলিযুগে আবির্ভূত হবেন। (সূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, উপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র অনূদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলিকাতা, প্রথম স্কন্ধ, পরমেশ্বরের আকার ও অবতার কথন, পৃঃ ৭ এবং কল্কিপুরাণ, তৃতীয়াংশ, ২১ অধ্যায়, শ্লোক-৩৯)। তিনি কলিযুগের শেষের দিকে আসবেন, এমন কথা কোথাও উল্লেখ নেই। শ্রীমদ্ভাগবত গীতা অনুযায়ী, ‘যখন ধর্মের হানি ঘটে এবং অধর্মের প্রাবল্য হয়, তখনই অবতার আগমন করেন। দুষ্কৃতিকারীগণকে সংহার করে সাধুগণকে রক্ষা করতে এবং ধর্মের স্থাপনা করতে যুগে যুগে অবতার আসেন।` বর্তমানে কলিযুগের পাঁচ হাজার বিরাশি বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে, অন্তিম অবতারের সময় যুদ্ধে তলোয়ার এবং বাহন হিসাবে ঘোড়া ব্যবহৃত হবে। (সূত্রঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, উপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র অনূদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলিকাতা, দ্বাদশ স্কন্ধ, অথ কলিধর্ম কথন, পৃঃ ৮৫৮)। ‘তাঁর সময়ে উট যাতায়াতের প্রধান বাহন হবে।` (অথর্ববেদ-সংহিতা, ২০তম কাণ্ড, ৯ম অনুবাক, ৩১ সুক্ত, মন্ত্র-২)। কিন্তু বর্তমান যুগ তলোয়ার ও ঘোড়ার যুগ নয়। বরং আণবিক বোমা, ট্যাংক ও বিমানের যুগ। তলোয়ার ও ঘোড়ার যুগ গত হয়ে গেছে। আজ থেকে প্রায় এক হাজার বৎসর পূর্বে যুদ্ধে তলোয়ার ও ঘোড়া ব্যবহৃত হত। এর প্রায় এক হাজার বৎসর পর থেকে আরবেও সামরিক উদ্দেশ্যে বারুদের ব্যবহার শুরু হয়। এ থেকেই কল্কি অবতারের আগমনের প্রকৃত কাল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
আপনি ভুল নম্বরে [পড়তে পারেন জায়গায়] ডায়াল করেছেন।
@আগন্তুক, ভুল নম্বরে ডায়াল করার বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার হলো না। ‘মুক্তমনা` ব্লগের নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, এটি বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিবাদী আলোচনা এবং মতবিনিময়ের কেন্দ্র। আরও উল্লেখ আছে, মুক্তমনা মুক্তচিন্তা প্রকাশের একটি প্লাটফর্ম; নানা ধরণের বৈচিত্র্যকে ধারণ করেই মুক্তমনা বিকশিত হতে চায়। তারমানে এটা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একক প্রচারণার প্লাটফর্ম নয়। আপনার মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, আপনারাই কেউ কেউ এতদিন ভুল নম্বরে ছিলেন। এখন চাইলে রিসিভারটা নামিয়ে রাখতে পারেন।
@শাহেদ ইকবাল,
মুহাম্মাদকে গর্ধব ভাবার কোন কারন নাই। ঐ সূর্য্য-গ্রহন পৃথিবীর প্রথম ও শেষ সূর্য্য-গ্রহন নয়। সূর্য ও পৃথিবী সৃষ্টির পর লক্ষ লক্ষ বার তা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। মুহাম্মাদ সহ যে কোন জ্ঞানী লোকেরই সে সময়ে তা আজানা থাকার কথা নয়। “তার ছেলের” মৃত্যুর সাথে এটার কোন যোগ আছে জানালে ধরা খাবার সম্ভবনা। কুরান সাক্ষী , মুহাম্মদের কাছে ‘পৌরানিক নবীদের “মিরাকলের” কিসসা শুনে কুরাইশরাও ‘সে রকম কিছু মিরাকল” তার নবুয়তের প্রমান স্বরুপ দেখতে চেয়েছিল। মুহাম্মাদ কখনোই তা দেখাতে পারে নাই। “চাঁদ দ্বিখন্ডিত” তো অনেক দুরের কথা, কুরাইশরা তার চেয়ে অনেক কমই দাবী করেছিল। প্রতি-উত্তরে “আল্লাহ-মুহাম্মেদের” কি অদ্ভুত তেনা-প্যচানো জবাব ও যুক্তি এবং হুমকী। “মিরাকল” দেখানোর মুরোদ মুহাম্মাদের আদৌ ছিল কিনা সে সিদ্ধান্তটা জ্ঞানী জনগন ও পাঠক-পাঠিকার উপরই ছেড়ে দেয়া যাক। কুরান থেকে সামান্য কিছু উদাহরনঃ (Quran is “messages of Muhammad” which he claimed received from his Allah)
Quest for proof (miracle) of Muhammad’s prophecy and his reply:
Sura Al-Anam (Chapter 6) –Mecca
Surah Al-Araf (Chapter 7) – Mecca
Surah Al-Anfal (Chapter 8) – Medina
Surah Yunus (Chapter 10) – Mecca
Surah Ra’d (ch 13) – Mecca
Surah Hijr (Chapter 15)– Mecca
Surah Bani Israil (Chapter 17) – Mecca
আমিও একদিল আপনার মতই ছিলাম, কিছুই ঢুকতো না মাথায়। বিশ্বাস টাকে মগজ থেকে আলাদা যেদিন করা যায় সেদিন থেকে আসল জ্ঞান আহরন শুরু হয়। ‘পরিষ্কারভাবে দেখতে/বুঝতে ও চিন্তা করতে কোনই আসুবিধা হয় না’। বিশ্বাস সুস্থ চিন্তার অন্তরায়, তা মগজকে ভোঁতা করে দেয়।
ধন্যবাদ।
@গোলাপ, যে কোন ধরনের সরলীকরণ নিজের জন্য যেমন বিভ্রান্তিকর, পাঠকদের জন্যও তাই। সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে যা লিখেছেন, তা বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য—ঐ সময়ের আরবের জন্য নয়। ঐ সময়ের আরবের বিভিন্ন কুসংস্কার সম্পর্কে যে কোন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানতে পারবেন। তখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে মানুষের জন্ম-মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত করা হতো। মুহাম্মদ (সাঃ) এ নিয়ম রহিত করেন (সূত্রঃ মহানবী, ডক্টর ওসমান গনী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মল্লিক ব্রাদার্স, পৃঃ ৩৪৯ এবং সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, হাদিস নম্বর ৯৮৬ ও ১০০১, পৃঃ ২৫৬ ও ২৬৭-২৬৮)।
তারপর মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট প্রতিপক্ষের অলৌকিকতা দাবী সম্পর্কে কোরআনের যে সকল আয়াত Reference হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাতে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা নাই যে, অলৌকিক কিছু দেখানো যাবে না কিংবা আল্লাহ্ তাঁর রাসুলকে অলৌকিক কোন ক্ষমতা দেননি। নিচের আয়াতগুলো এড়িয়ে গেলেন কেন?
‘তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত রাসুল ব্যতীত।`(সুরা জ্বিন, ২৬-২৭)।
‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে, আর চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, ‘এটা তো চিরাচরিত জাদু।`(সুরা কামার, ১-২)।
‘বহু দলের এই বাহিনীও সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে।‘(সুরা সাদ, ১১)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী।`(সুরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘তারা কোন নিদর্শন দেখলে উপহাস করে। এবং বলে, ‘এটা তো এক সুস্পষ্ট জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।`(সুরা সাফ্ফাত, ১৪)।
‘কাফেরদের নিকট যখন সত্য আসে, তখন তারা বলে, ‘এটা তো এক সুস্পষ্ট জাদু।`(সুরা সাবা, ৪৩)।
‘স্মরণ কর, তোমরা যখন পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন যা ঘটার ছিল তা সম্পন্ন করার জন্য। সমস্ত বিষয় আল্লাহ্র দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়।` (সুরা আনফাল, ৪৪)।
‘স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত তিন সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সহায়তা করবেন?` (সুরা ইমরান, ১২৪)।
‘এরা কি বলে, ‘আমরা এক সংঘবদ্ধ অপরাজেয় দল?`এই দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্টপ্রদর্শন করবে।` (সুরা কামার, ৪৪-৪৫)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘বহু দলের এই বাহিনীও সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে।‘(সুরা সাদ, ১১)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী।`(সুরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে করেছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন জন্মভূমিতে। বল, ‘আমার প্রতিপালক ভাল জানেন কে সৎপথের নির্দেশ এনেছে এবং কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।`(সুরা কাসাস, ৮৫) । মক্কায় অবতীর্ণ।
আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন, সে অবস্থা আমি আরও আগেই পার হয়ে এসেছি। যখন দেখেছি, ধর্মান্ধতার চেয়েও বড় অন্ধতা হলো নাস্তিক্যবাদ। কম্পিউটারের System File ডিলিট হয়ে গেলে সে যেমন কিছু পড়তে পারে না, তেমনি একজন নাস্তিক্যবাদীও চারপাশে তাকান, কিন্তু কিছু দেখতে পান না। কান থাকলেও শুনতে পান না। তাঁর গোটা ব্যাপারটাই হলো যান্ত্রিক গোলযোগ।
যাঁরা অবিশ্বাসী, তাঁরা কথায় কথায় বলেন, মৃত্যুর পর তাঁদের কোনো চিহ্ন থাকবে না। তাঁরা নাই হয়ে যাবেন। পরকাল বলে কিছু নাই (দেখুনঃ আমার অবিশ্বাস, ড. হুমায়ুন আজাদ)। সায়েন্স ফ্যাকাল্টির কারও পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয়। পদার্থবিদ্যা কি বলে? পদার্থবিদ্যা বলে যে, কোনো বস্তু বা শক্তির ক্ষয় বা ধ্বংস নাই, কেবল রূপান্তর আছে। সেখানে ‘নাই` হয়ে যাওয়ার কি কোনো উপায় আছে? দেহের মধ্যে যে শক্তি (আত্মা বা প্রাণ) আমাকে এতকাল সচল রাখল, সে শক্তি মৃত্যুর পর কোথায় যাবে? যেখানেই যাক, বিজ্ঞান বলবে Other dimension, ধর্ম বলবে ‘পরকাল`। অসুবিধা কি?
একজন অবিশ্বাসীর সাথে যে কোন বিষয়ে দুই মিনিট কথা বললেই তাঁর অবস্থা বুঝা যায়। দেখা যায়, তাঁর বিশ্লেষণ ক্ষমতা খুবই Poore । তাঁর সবগুলো যুক্তিই এরকম, আফ্রিকার জঙ্গলে যদি গণ্ডার থাকে, বাংলাদেশের জঙ্গলেও গণ্ডার থাকবে। এ থেকেই বুঝা যায় তাঁর অবিশ্বাসী হওয়ার কারণ।
অবিশ্বাসীদের এই যান্ত্রিক গোলযোগের কথা কোরআনেও উল্লেখ আছে। সেখানে অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘(তারা) বধির, বোবা ও অন্ধ, অতএব তারা ক্ষান্ত হবে না ও তারা বুঝবে না।‘ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮)। আরও আছে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসেছে। সুতরাং কেউ তা দেখলে তার দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ না দেখলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি তোমাদের সংরক্ষক নই।` (সুরা আনআম, আয়াত ১০৪)।
আপনি বলেছেন, বিশ্বাস সুস্থ চিন্তার অন্তরায়, তা মগজকে ভোঁতা করে দেয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে উল্টো কথা। ফ্রয়েড আত্মার উপস্থিতি পুরোপুরি প্রত্যাখান করেছিলেন এবং মানুষের আত্মিক বিশ্বকে যৌন এবং ভোগবাদী চিন্তাধারা দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তাঁর ‘The Future of an Illusion` (১৯২৭ সালে প্রকাশিত) এ বলেছিলেন- “মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস একধরনের মানসিক অসুস্থতা, যাকে নিউরোসিস বলে। মানুষ যত উন্নত হবে এ সকল ধর্মীয় বিশ্বাস পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাবে”। আজকের বিংশ শতাব্দীর মনোবিজ্ঞান ফ্রয়েডকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। Patrick Glynn তাঁর ‘God: The Evidence, The Reconciliation of Faith and Reason in a Postsecular World`-এ বলেছেন, ‘ধর্ম সম্বন্ধে ফ্রয়েড এর মতামত ছিল পুরোপুরি ভুল ধারণার বহিঃপ্রকাশ। গত পঁচিশ বছরের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো প্রমাণ করেছে, ধর্মীয় বিশ্বাস বরং মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রশান্তির সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত। সুদীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। অপরদিকে ডিভোর্স, আত্মহত্যা, হতাশা, মাদকাসক্তি, এমন কি যৌন অসন্তুষ্টির সাথেও ধর্মীয় বিশ্বাসের বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করে”। (সূত্রঃ Patrick Glynn, God: The Evidence, The Reconciliation of Faith and Reason in a Postsecular World , Prima Publishing, California, 1997, pp.60-61)। Patrick Glynn আরও বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, এ বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে আধুনিক মনোবিজ্ঞান ধর্মের সাথে সেতুবন্ধন করতে যাচ্ছে।`(সূত্রঃ পূর্বোক্ত, p.69)। কোরআনেও বলা হয়েছে, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।` (সুরা রাদ, ২৮)।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
@শাহেদ ইকবাল,
আপনি প্রমান করতে চাচ্ছেন যে মুহাম্মাদ অনেক ‘মিরাকল’ অবিশ্বাসীদের দেখিয়েছে কিন্তু অবিশ্বাসীরা তা স্বীকার করে নাই। অর্থাৎ অবিশ্বাসীরা মিথ্যবাদী, মুহাম্মাদ নয়। কি ভাবে বুঝা গেল মুহাম্মাদ মিথ্যাবাদী নয়? কারন “আল্লাহ কুরানে” (মুহাম্মাদেরই জবানী তার আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে) তা বলেছে। কেন কুরান বিশ্বাস করবো? কারন মুহাম্মাদ বলেছে “আল্লাহ” সত্য। আপনার মন্তব্য এবং যুক্তি “circular logic” দোষে দুষ্ট।আপনি তা বুঝতে পারছেন কিনা জানি না কিন্তু মুক্তমনার পাঠকদের কাছে তা স্পষ্ঠ। “circular logic” এর উপর একটা ভিডিও দেখুনঃ
(ধরা যাক আল্লাহর নিক নাম “Hank” এবং মুহাম্মাদের নিক নাম “Karl”)
httpv://www.youtube.com/watch?v=fDp7pkEcJVQ&feature=player_embedded
http://www.youtube.com/watch?v=fDp7pkEcJVQ&feature=player_embedded
পরিশেষে মুসলীম বিশ্বাসীদের প্রতি আমার মতই আরেক জন্মসুত্রে মুসলীম কিন্তু বর্তমানে অবিশ্বাসী বান্দার কিছু প্রশ্ন (নীচের ভিডিও)ঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=ApURzv8fCFY&feature=player_embedded#!
http://www.youtube.com/watch?v=ApURzv8fCFY&feature=player_embedded#!
@গোলাপ, বিজ্ঞানের এমন অনেক Theory আছে, যার পেছনে একটি প্রমাণও নাই। যেমন, বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution)। এর স্বপক্ষে আজ পর্যন্ত একটি প্রমাণও পাওয়া যায়নি। তবুও Scientific Theory হিসাবে তাকে গ্রহণ করা হয়েছে। এটা আমার কথা নয়, এটা ডারউইনের নিজের কথা। স্বয়ং ডারউইন বলেছেন, ‘When we descend to details, we can prove that no one species has changed; nor can we prove that the supposed changes are beneficial, which is the groundwork of the theory.` (সূত্রঃ David L. Hull, Darwin & His Critics: The Reception of Darwin’s Theory of Evolution by the Scientific Community (Cambridge, MA: Harvard University Press, 1974), p. 32, citing More Letters, 1903, Vol. 1, 172 and Darwin, Life and Letters, 1887, Vol. 2, p. 210)। তিনি আরও বলছেন, ‘I am actually weary of telling people that I do not pretend to adduce direct evidence of one species changing into another.` (সূত্রঃ Ibid., p. 292, citing Autobiography, p. 265)। ‘What you hint at generally is very, very true: that my work will be grievously hypothetical, and large parts by no means worthy of being called induction, my commonest error being probably induction from too few facts.` (সূত্রঃ Ibid., p. 9, citing Letter to Asa Gray, November 29, 1859 in More Letters, 1903, Vol. 1, p. 126). অর্থাৎ ডারউইন স্বীকার করছেন যে, বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ জোগাড় করতে পারেননি।
পরবর্তী সময়ে ‘Geological Society of London` এবং ‘Palaeontological Association of England` কর্তৃক পরিচালিত এক ব্যাপক জরীপের বরাত দিয়ে জন এন মুর (John N. Moore), অধ্যাপক, Natural Science, জানাচ্ছেনঃ ‘মোট ১২০ জন বিজ্ঞানী ও সকল বিশেষজ্ঞ মিলে ৩০টি অধ্যায়ের ৮০০ পৃষ্ঠার যে রিপোর্ট তৈরি করেন, তাতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংগৃহীত ফসিল রেকর্ডগুলোকে প্রায় ২৫০০ গ্রুপে ভাগ করা হয়। তাতে দেখা যায়, প্রত্যেক প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর উৎপত্তির স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে, যা অন্যদের থেকে আলাদা! ফসিল রেকর্ড বলছে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতিটি গ্রুপই হঠাৎ করে আবির্ভুত হয়েছে। উৎপত্তির সূচনা থেকে আজ অবধি তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রজাতি। এদের কারও কোন কমন পূর্বপুরুষ বা সরীসৃপের সন্ধান মেলেনি।` (সূত্রঃ Anon, 1985. Life–How Did It Get Here? By Evolution or By Creation? Watchtower Bible and Tract Society of New York, Inc., p. 65)।
Stephen Hawking নিজেও বলেছেন, ‘যে কোন physical theory সব সময়ই সাময়িক। এর অর্থ হলো, এটা একটা অনুমান (hypothesis) মাত্র। আপনি কখনই একে প্রমাণ করতে পারেন না। (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-I: ‘Our Picture of the Universe`, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)। সে আরও বলছে, ‘আমরা কখনোই নিশ্চিত হতে পারব না যে, আমরা সঠিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছি, কারণ তত্ত্ব প্রমাণ করা যায় না।` (সূত্রঃ পূর্বোক্ত, ‘The Unification of Physics`)।
এরকম আরেকটি Theory হলো ‘মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব` (Big Bang Theory)। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে—এডউইন হাবলের এই পর্যবেক্ষণের উপরেই উইলসন ও পেনজিয়াস Big Bang Theory প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের hypothesis হলো, কোন এক সময় গোটা মহাবিশ্ব (আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল) একটি বস্তুপিণ্ডে কেন্দ্রীভূত ছিল (সূত্রঃ The Encyclopedia of Space Travel and Astronomy, Octopus Book Ltd. London, 1979)। তারপর এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তা সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে। আজ থেকে ১৩.৭ বিলিয়ন বৎসর পূর্বের এই ঘটনা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের হাতে কোন প্রমাণ নেই, আছে শুধু অনুমান। আর এটাই হলো Theory।
এই যদি হয় Theory-এর অবস্থা, তাহলে বিজ্ঞান তাকে Scientific Theory হিসাবে গ্রহণ করতে গেল কেন? এর উত্তরও বিজ্ঞানীরাই দিয়েছেন। যেমনঃ
“The more one studies palaeontology, the more certain one becomes that evolution is based on faith alone; exactly the same sort of faith which it is necessary to have when one encounters the great mysteries of religion.” অর্থাৎ বিবর্তনবাদ একটি বিশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়, যা ধর্মের বিশাল রহস্যকে মোকাবেলার জন্য দরকার হয়। (সূত্রঃ More, Louis T. [late Professor of Physics, University of Cincinnati, USA], “The Dogma of Evolution,” Princeton University Press: Princeton NJ, 1925, Second Printing, p.160).
‘Evolution is unproved and unprovable. We believe it only because the only alternative is special creation and that is unthinkable.` অর্থাৎ ‘বিবর্তনবাদ অপ্রমাণিত এবং এটাকে কখনো প্রমাণও করা যাবে না। আমরা এটাকে বিশ্বাস করি শুধু এজন্য যে, এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সৃষ্টির ধারণা, যা অচিন্ত্যনীয়।` (Source: Sir Arthur Keith, Islamic Thought, DEC, 1961).
এখন কেউ যদি হেত্বাভাস (Fallacy) দেখানোর জন্য এরকম বাক্যবিন্যাস করেনঃ
‘বিগ ব্যাং হলো মহাবিশ্বের সূচনা। প্রমাণ কোথায়?
প্রমাণ হলো, এটি উইলসন ও পেনজিয়াস বলেছেন।
উইলসন ও পেনজিয়াস বলেছেন। তাঁরা কোথায় জানলেন?
বিগ ব্যাং থেকে।`
তাহলে বিজ্ঞানের জগতের লোকদের অট্টহাসি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাঁরা নিশ্চিত হবেন যে, এই ব্যক্তির (যুক্তি প্রয়োগকারী) বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাও নেই। মানসিক বিকারগ্রস্তও হতে পারেন। কারণ, উপরের যুক্তি মানতে গেলে বলতে হবে, গোটা বিজ্ঞানই দাঁড়িয়ে আছে হেত্বাভাসের (Fallacy) উপর। বিজ্ঞানের মতবাদ বা Theory বাদ দিলে বিজ্ঞানের আর থাকে কি? শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানকে তার অনুসৃত ‘পর্যবেক্ষণ+অনুমান=তত্ত্ব (Theory)`— এই পদ্ধতি (Scienticic Method) বাদ দিতে হলে তার সামনে চলার সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়।
যে কারণে বৈজ্ঞানিক মতবাদের পেছনের প্রমাণিত অংশকে (পর্যবেক্ষণ) Skip করে শুধুমাত্র তার অনুমাননির্ভর (hypothesis) সিদ্ধান্তকে হেত্বাভাস নাম দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না, ঠিক একই কারণে কোরআনের বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্টসগুলোকে Skip করে শুধুমাত্র তার অপ্রমাণিত অংশকে হেত্বাভাস নাম দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। কিন্তু একশ্রেণীর ব্যক্তি অন্ধবিদ্বেষ বা আরোপিত ধারণা থেকে এ কাজই করছেন।
কেউ কেউ বলতে পারেন, বিজ্ঞান তো দাবী করছে না যে, তার থিওরিগুলো প্রমাণিত। এগুলো বিজ্ঞানের এমন কিছু বিশ্বাস যার মূলে আছে কিছু পর্যবেক্ষণ বা যুক্তি। তাহলে কোরআন এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে এর কি সম্পর্ক? এ প্রশ্ন যিনি করবেন, তিনিই বাস্তবতার সবচেয়ে কাছাকাছি আসবেন। তিনি নিজে নিজেই উত্তরও পেয়ে যাবেন, যদি কোরআন ও ইতিহাস পড়েন। তিনি দেখবেন, ধর্মও এমন একটি বিশ্বাস, যার মূলে আছে কিছু উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি। সেখানে অল্পকিছু জিনিস ছাড়া আর সবই চোখের সামনে প্রমাণিত। আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কোরআনও কাউকে বাধ্য করছে না যে এটা বিশ্বাস করতেই হবে। কোরআন বরং বলছে, ‘ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নাই। নিশ্চযই সুপথ প্রকাশ্যভাবেই কুপথ থেকে পৃথক।` (সুরা বাকারা, ২৫৬)। ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে, তারা সকলেই ঈমান আনতো, তবে কি তুমি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে?` (সুরা ইউনুস, ৯৯)। ‘বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক।` (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৯)।
নিচে যে ভিডিও এবং প্রশ্ন দিয়েছেন, এগুলো চর্বিত চর্বন। আগেও দেখেছি, বহু জায়গায় Answer করেছি। সাকিব সাহেবের কাছে যে মন্তব্য পোস্ট করেছি, সেটা পড়ে দেখেন। আশা করি, উত্তর পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
@শাহেদ ইকবাল,
যা খুশী তাই বলে যাচ্ছেন! আপনি দুঃশাহসী! ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ে আপনার জ্ঞানের গভীরতা যৎসামান্য। কিন্তু ‘উল্টা-পাল্টা মন্তব্য’ প্রচন্ড দৃঢতার সাথে করতে পারেন বলে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী সাধারন মানুষদেরকে অতি সহজেই প্রভাবিত করতে পারবেন। এটা সতিই দুঃখজনক! সাকীব সাহেবের কাছে লিখা আপনার মন্তব্যও দেখলাম।বিজ্ঞান নিয়ে এসব “আবোল তাবোল /বিকৃত তথ্য” পরিবেশন না করলেই কি নয়? দেখুন তো শিক্ষামূলক এসব “ডকুমেন্টারী ভিডিও” গুলো কি বলছে! দেখুন, তারপর আপনি নিজেই কল্পনা করুন মুক্তমনার বিজ্ঞান মনষ্ক পাঠকরা “বিবর্তনবাদ তত্বের সাপেক্ষে ‘একটি প্রমাণও নাই'” মন্তব্যকারীর জ্ঞানের পরিধির কিরুপ মূল্যায়ন করতে পারে!
শাহেদ সাহেব, আপনি এবং অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসীরা বিজ্ঞানকে কিভাবে মূল্যায়ন করে তাতে বিজ্ঞানের কিছছুই আসে যায় না। আজ আমরা বিজ্ঞানের অবদানের কাছে এতটাই নির্ভরশীল যে একমাত্র “মানসিক বিকার-গ্রস্থ’ ছাড়া কেহই বিজ্ঞানের বিরুপ মূল্যায়ন করে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, বিজ্ঞান কোন দিনই তার সত্যতার স্বীকৃতির (Recognition) জন্যে কোন ধর্ম-গ্রন্থের দারস্থ্য হবে না। কিন্তু ‘ধর্ম ও ধর্ম-গ্রন্থকে’ তার সত্যতার স্বীকৃতির জন্যে প্রতি-মুহুর্তে বিজ্ঞানের দারস্থ্য হতে হবেঃ যা আপনি প্রানান্তরুপে করে চলেছেন। বিজ্ঞানের কল্যানে আজ আমরা নিশ্চিত রুপে জানিঃ
প্রকিৃতের কাছে অসহায় এবং সীমাবব্ধ জ্ঞানের অধিকারী আমাদের পূর্ব-পুরুষদের তৈরী ‘কল্পনার’ ইশ্ব্রর কে নিয়ে অনেক বানিজ্য ” স্বঘোষিত প্রফেট /অবতার এবং তার চেলারা ” যুগে যুগে করেছে এবং করছে। এ ব্যবসায় কোন লোকসান নাই, শুধুই লাভ। কারন এ ব্যবসার পুঁজি হচ্ছে ‘মানুষের অসহায়ত্ব +অজ্ঞানতা’, যা চিরকাল থেকে আছে এবং থাকবে। স্বঘোষিত প্রফেট /অবতার এবং তার চেলারা সেই “কল্পিত ইশ্ব্ররকে” তাদের নিজের মনের মাধুরী মিশায়ে ‘শ্লোক রচনা করে তার নাম দিয়েছে ধর্ম-গ্রন্থ’। তাদের নিজ নিজ চিন্তা-ধারাকে “ইশ্ব্ররের বানী” বলে চালিয়েছে, বোকা পাব্লিকদের নিয়ন্ত্রনের সুবিধার্থে, শাষকদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতায়।তাই ধর্ম গ্রন্থের ইশ্বর পক্ষপাত-দুষ্ঠ সেই সব মানুষেরই প্রতিনিধিত্বকারী “মানুষ-ইশ্বর”।তাদের “ভুয়া ইশ্ব্র্রর” এতটাই হাস্যকর যে সেই ইশ্ব্র্ররকে ১৩.৫ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ‘সেই স্পেশাল অবতার/প্রফেট’ কে পৃথিবী নামক অতিশয় অতিশয় ‘ক্ষুদ্র স্থানে (a place 25000 sq miles within a place of 95 billion light year circumference) এক অতিশয় ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র মনুষ্য জাতির (Human species) মাঝে জন্মানোর শুভ ক্ষনের জন্যে (?!!)। সে রকম এক (বা একাধিক) মানুষ-ইশ্ব্ররের (মানুষেশ্ব্র্রর) রচিত কেতাব হলো মুসল্মানের কুরান, খৃষ্টানের বাইবেল, ইহুদীদের তৌরাত, ইত্যাদি ইত্যাদি।আপনি কুরানে বিজ্ঞান ইচ্ছা-মত খুঁজতে থাকুন। কিন্তু দয়া করে বিজ্ঞানের নামে ‘অপ-বিজ্ঞান /বিকৃত-তথ্য’ দিয়ে সাধারন মানুষদের বিভ্রান্ত করবেন না। সাধারন মানুষদের বিজ্ঞান-বিষয়ক জ্ঞান বড় বেশী নাই এবং ধর্ম- বিষয়ে তাদের জ্ঞান প্রায় শুন্য। তাদের সেই অজ্ঞানতার সূযোগ নিয়ে ‘জোকার নায়েক মার্ক পিছলামী বিজ্ঞান” গেলাবেন না।
বলাই বাহুল্য ধর্ম-গ্রন্থের ঐ ইশ্ব্ররের সাথে এই “ম্যাগনিফিসেন্ট বিশ্ব-স্রষ্ঠার (যদি থাকে)” কোনই সম্পর্ক নাই। প্রকিৃতের কাছে অসহায় এবং সীমাবব্ধ জ্ঞানের অধিকারী আমাদের পূর্ব-পুরুষদের তৈরী ‘কল্পনার’ ইশ্ব্রর ঃ তাদের প্রতি আমাদের সহানুভুতি এবং শ্রদ্ধা সব সময়ই থাকবে। প্রকৃতির বৈরী প্রতিকুলতাকে তারা অতিক্রম করতে পেরেছিলেন বলেই ‘আপনি-আমি (Human)’ আজ এখানে ! কিন্তু যারা একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পূর্ন সূযোগ সুবিধা ভোগ করেও বিজ্ঞানের অপব্যাখা করে ‘ধর্ম-বানিজ্য’ কে যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রাখার ব্রতে ব্রতী তাদের জন্য আমাদের দুঃখই হয়।
এখানেই আমি এই আলোচনার ইতি টানছি। মুক্তমনার পাঠকরা শিক্ষিত /মেধাবী ও জ্ঞানী।
পাঠকদের বোকা ভাবার কোন কারন নাই। তারা আপনার জ্ঞানের সঠিক মূল্যায়ন করবেন।
হতাস হওয়ার কোন কারন নাই।
ভাল থাকুন।
@গোলাপ, আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই কয়দিন খুবই ব্যস্ত ছিলাম। আপনার এ লেখাটা (লিংকসহ) একটু বড় ছিল। তাই কাজের অবসরে পড়তে এবং মন্তব্য করতে একটু দেরী হলো।
আমাকে ‘দুঃশাহসী` (আসলে ‘দুঃসাহসী`) বলার জন্য আবারও ধন্যবাদ। দুঃসাহস নয়, সত্য বলার জন্য যা দরকার, তা হলো সৎসাহস। সত্য এমন একটা জিনিস, যা প্রকৃত মুক্তমনা ছাড়া আর কাউকেই Satisfy করতে পারে না। যে কারণে কে মুক্তমনা আর কে মুক্তমনা নয় (কিন্তু মুখোশধারী)—তা যাচাইয়ের জন্যও সত্যের এই আঘাতের দরকার আছে। সাকিব সাহেবের মন্তব্যের উত্তরে যা লিখেছি, তাতে বিজ্ঞানের কিছু Reference, কিছু প্রশ্ন আর কিছু Hypothesis ছাড়া আমার নিজের কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। তাহলে ‘যা খুশী তাই বলে যাচ্ছি` কিভাবে? বিজ্ঞান নিয়ে কি যা খুশি তাই বলা যায়? যা লিখেছি, সবই তো Reference সহ লিখেছি। সেখানে কোন ভুল থাকলে তা বলা যেত। কিন্তু তাকে “আবোল তাবোল /বিকৃত তথ্য” বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কি কোন সুযোগ আছে?
আমার মন্তব্যে বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution) সম্পর্কে ডারউইনের নিজের কিছু স্বীকারোক্তি তুলে ধরেছি। তিনি স্বীকার করেছেন, বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে এই Theory পরীক্ষা করার জন্য সারাবিশ্বে আলোচিত যে জরীপ চালানো হয়েছিল, তার ফলাফল তুলে ধরেছি। সেখানেও দেখা গেছে এই মতবাদের পক্ষে কোন প্রমাণ মেলেনি। বর্তমান সময়ের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের অভিমত কিছুই উল্লেখ করিনি। আর তাতেই আপনি History Channel-এ চলে গেলেন! History Channel কি বিজ্ঞানের কোন অথেনটিক সোর্স? ওরা তো কোরআন ও ইসলামের পক্ষেও বহু ডকুমেন্টারী করেছে। আপনি কি সেগুলোও মানবেন? দেখুন তো নিচের ডকুমেন্টারীগুলো কি বলছে—
Deep Secrets of the Quran Revealed on History Channel: http://www.youtube.com/watch?v=Snn5L3NTcAA
যা বলছিলাম, কোন কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট চ্যানেলের মুভি নয়, ডারউইনের Theory of Evolution-অসারতা বুঝতে হলে আমাদেরকে বর্তমান বিশ্বের এই জীববিজ্ঞানীদের লেখা পড়তে হবে—
An Ice Age Caused By The Genesis Flood, by Michael Oard.
Creation Facts Of Life, by Dr Gary Parker.
Darwinism And The Rise Of Degenerate Science, by Dr Paul Back (Former Rhodes scholar and author)
Darwin’s Black Box, by Professor Michael Behe (Biochemist and author)
Darwin’s Enigma, by Luther Sunderland
Evolution Under the Microscope: A Scientific Critique of the Theory of Evolution by David Swift (author)
Defeating Darwinism with open minds, by Philip E. Johnson.
Dinosaurs and Creation: Questions and Answers, by Donald B. DeYoung
Evolution, A Theory In Crisis, by Dr Michael Denton (Molecular Biologist, Medical Doctor and Author).
Evolution, The Fossils Still Say No, Dr Duane Gish.
Genesis Flood, by J. C. Whitcomb and H. M. Morris.
Grand Canyon: Monument To Catastrophe, by Dr. Steven Austin.
Homology: An Unsolved Problem, by Sir Gavin De Beer.
Icons of Evolution: Science or Myth?: Why Much of What We Teach about Evolution is Wrong, by Jonathan Wells
In six days, by fifty different scientists.
Noah’s Ark: A Feasibility Study, by John Woodmorappe.
Reason in the Balance: The Case Against Naturalism, by Phillip E. Johnson
Restoring the Ethics of Creation, by Andrew M. Sibley
Sea Floor Sediments And The Age Of The Earth, by Dr. Larry Vardiman
Starlight and Time: Solving the Puzzle of Distant Starlight in a Young Universe, by D. Russell Humphreys
Studies in Flood Geology, by John Woodmorappe.
The Fossil Book (Wonders of Creation), by Gary Parker, Mary Parker (Biologist, author).
The Great Dinosaur Mystery Solved! by Ken Ham
The long war against God, by H. Morris and D. Jeremiah
The Naked Emperor: Darwinism Exposed, by Antony Latham
Thousands not millions, by Professor Donald DeYoung
সেই সাথে দেখুন একালের স্বীকৃত জীববিজ্ঞানীরা কি বলছেন—
“The pathetic thing is that we have scientists who are trying to prove evolution, which no scientist can ever prove.” Robert Andrews Millikan (Nobel prize for Physics in 1923). Nashville Banner, August 7, 1925.
“If pressed about man’s ancestry, I would have to unequivocally say that all we have is a huge question mark. To date, there has been nothing found to truthfully purport as a transitional specie to man, including Lucy, since 1470 was as old and probably older. If further pressed, I would have to state that there is more evidence to suggest an abrupt arrival of man rather than a gradual process of evolving”. Richard Leakey, world’s foremost paleo-anthropologist, in a PBS documentary, 1990.
“Darwinian evolutionary theory was my field of specialization in biology. Among other things, I wrote a textbook on the subject thirty years ago. Meanwhile, however I have become an apostate from Darwinian theory and have described it as part of modernism’s origination myth. Consequently, I certainly agree that biology students at least should have the opportunity to learn about the flaws and limits of Darwin’s theory while they are learning about the theory’s strongest claims.” Dr. Stanley Salthe, Professor Emeritus, Brooklyn College of the City University of New York.
“The theory of evolution itself is a theory universally accepted not because it can be proved by logical coherent evidence to be true but because the only alternative is special Creation, which is clearly incredible”. Watson, D.M.S. “Adaptation,” Nature, August 10, 1929, Vol.124, 3119, pages: 231 – 233.
“There is little hard experimental evidence for the evolutionary hypothesis. This is true particularity in the study of the intricate mechanisms that brilliant scientific research has revealed in nature. Professor Michael Behe of Lehigh University, Pennsylvania, who wrote Darwin’s black box, demolishes any possibility of Darwinian evolution at the biochemical level, and has masterfully shown there is irreducible complexity, down to minute details, in the workings of living organisms – details that will not go away with all the heat generated by Prof Dawkins and his evident atheism”. Letter to the Daily Telegraph Newspaper in March 2002 from A
C McIntosh, Professor of Thermodynamics and combustion theory, university of Leeds.
“Although a biologist, I must confess I do not understand how life came about… I consider that life only starts at the level of a functional cell. The most primitive cells may require at least several hundred different specific biological macro-molecules. How such already quite complex structures may have come together, remains a mystery to me. The possibility of the existence of a Creator, of God, represents to me a satisfactory solution to this problem.” Werner Arber (Nobel for Medicine in 1978) a quote from Henry Margenau & Ray Abraham Varghese, eds., “Cosmos, Bios, Theos: Scientists Reflect on Science, God and the Origin of the Universe, Life and Homo Sapiens” /LaSalle, IL, USA: Open Court, 1992, p. 142.
“The sciences dealing with the past, stand before the bar of common sense on a different footing. Therefore, a grotesque account of a period some thousands of years ago is taken seriously though it be built by piling special assumptions on special assumptions, ad hoc [invented for a purpose] hypothesis on ad hoc hypothesis, and tearing apart the fabric of science whenever it appears convenient. The result is a fantasia which is neither history nor science.” (James Conant, quoted in “Origins Research”, Vol. 5, no. 2, 1982, p. 2. [Chemist and former president, Harvard University.]
these theories are actually tautologies and, as such, cannot make empirically testable predictions. They are not scientific theories at all.” (R.H. Peters, Tautology in Evolution and Ecology”, American Naturalist, 1976, Vol. 110, No. 1, p. 1.)
সেই সাথে এই ভিডিওগুলোও দেখতে পারেনঃ
Chemical Evolution: Spontaneous generation; Stanley Miller Experiment
6:57 mins.
Evolution: Protein Molecules and “Simple” Cells
6:33 mins.
Evolution of the Bacterial Flagellum
2:40 mins.
The Fossil Record: Intermediate Links
2:54 mins.
Archaeopteryx: A Feathered Reptile?
1:06 mins.
The Ape-Man: Missing Link
2:26 mins.
আপনি যখন History Channel-এর হিস্ট্রির মধ্যে আটকে আছেন, তখন গোটা দুনিয়ায় চলছে ডারউইনবাদের অন্তিম দশা। ডারউইনের Theory of Evolution-এর জায়গা দখল করছে Intelligent Design theory। মার্কিন প্রকাশকরা তাঁদের জীববিজ্ঞানের পাঠ্যবইতে ডারউইনবাদ ছাড়া সৃষ্টিতত্ত্বের এ সকল থিওরি অন্তর্ভুক্ত করছেন। গত দু’বছরের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো, মিশিগান, পশ্চিম ভার্জিনিয়া ও জর্জিয়ার শিক্ষাবোর্ড তাদের শিক্ষার্থীদের Intelligent Design theory পড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলভিত্তিক Discovery Institute এ ব্যাপারে ব্যাপক বিতর্ক, রিসার্চ ফেলোশিপ, পুস্তক প্রকাশনা ও জনমত জরীপের আয়োজন করছে। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭১% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই মনে করছেন, ডারউইনের বিরুদ্ধে যে সকল তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তা স্কুলে পড়ানো উচিত (Source: INTRODUCTION PAGE OF WAS DARWIN RIGHT? http://www.wasdarwinright.net/home.htm#HOME%20PAGE। এদিকে ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার এক জরীপে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনের অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠি ‘বিবর্তনবাদ’ বিশ্বাস করেন না এবং তাদের ২২ শতাংশই মহাবিশ্বের উৎপত্তির ব্যাখ্যায় Intelligent Design theory পছন্দ করছেন (সূত্রঃ Guardian newspaper 1st February 2009)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের University of Wisconsin-Superior-এর জীববিজ্ঞান ও ভূতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক Dr. Ralph Seelke অতি সম্প্রতি আরও একজনের সাথে “Explore Evolution: The Case For and Against Neo-Darwinism.” শিরোনামের একটি পাঠ্যবই লিখেছেন। Dr. Ralph Seelke তাঁর বিবর্তনবাদের উপর সাম্প্রতিক গবেষণা এবং কেন তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদ বিশ্বাস করেন না, সে ব্যাপারে খোলামেলা interview দিয়েছেন। সেখানে তিনি কি বলেছেন, তা শুনতে চাইলে এখানে Click করুন।
Dr. Stanley Salthe, Professor Emeritus, বিবর্তনবাদ সম্পর্কে তাঁর মোহভঙ্গ হওয়ার কারণ জানাচ্ছেন এভাবেঃ “Darwinian evolutionary theory was my field of specialization in biology. Among other things, I wrote a textbook on the subject thirty years ago. Meanwhile, however I have become an apostate from Darwinian theory and have described it as part of modernism’s origination myth. Consequently, I certainly agree that biology students at least should have the opportunity to learn about the flaws and limits of Darwin’s theory while they are learning about the theory’s strongest claims.” Dr. Stanley Salthe, Professor Emeritus, Brooklyn College of the City University of New York.
এখানেই শেষ নয়। ডারউইন যখন Theory of Evolution দেন, তখন জীবকোষ এবং ডিএনএ-আরএনএ সম্পর্কে বিজ্ঞানের জ্ঞান ছিল যৎসামান্য। প্রাণীর স্থুল শারীরিক কাঠামোই ছিল বিবর্তনবাদের ভিত্তি। পরবর্তীতে জীববিজ্ঞানের বিকাশের ফলে এগুলোর জটিল ফাংশন সম্পর্কে মানুষ অবগত হয়। তখন থেকেই দেখা গেল, এই জটিল মেকানিজমের সাথে ডারউইনবাদকে কোনভাবেই মেলানো যাচ্ছে না। জীববিজ্ঞানীরা এমন প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন, যার জবাব ডারউইনবাদীদের হাতে নাই। যেমনঃ
“To produce this miracle of molecular construction all the cell need do is to string together the amino acids (which make up the polypeptide chain) in the correct order. This is a complicated biochemical process, a molecular assembly line, using instructions in the form of a nucleic acid tape (the so-called messenger RNA). Here we need only ask, how many possible proteins are there? If a particular amino acid sequence was selected by chance, how rare of an event would that be?
This is an easy exercise in combinatorials. Suppose the chain is about two hundred amino acids long; this is, if anything, rather less than the average length of proteins of all types. Since we have just twenty possibilities at each place, the number of possibilities is twenty multiplied by itself some two hundred times. This is conveniently written 20200, that is a one followed by 260 zeros!
This number is quite beyond our everyday comprehension. For comparison, consider the number of fundamental particles (atoms, speaking loosely) in the entire visible universe, not just in our own galaxy with its 1011 stars, but in all the billions of galaxies, out to the limits of observable space. This number, which is estimated to be 1080, is quite paltry by comparison to 10260. Moreover, we have only considered a polypeptide chain of a rather modest length. Had we considered longer ones as well, the figure would have been even more immense.” Francis Crick, [Crick received a Nobel Prize for discovering the structure of DNA.] Life Itself, Its Origin and Nature (1981), pp 51-52.
“The development of the metabolic system, which, as the primordial soup thinned, must have “learned” to mobilize chemical potential and to synthesize the cellular components, poses Herculean problems. So also does the emergence of the selectively permeable membrane without which there can be no viable cell. But the major problem is the origin of the genetic code and of its translation mechanism. Indeed, instead of a problem it ought rather to be called a riddle. The code is meaningless unless translated. The modern cell’s translating machinery consists of at least fifty macromolecular components which are themselves coded in DNA: the code cannot be translated otherwise than by products of translation. It is the modern expression of omne vivum ex ovo [everything that lives, (comes) from an egg]. When and how did this circle become closed? It is exceedingly difficult to imagine.” Jacques Monod (Nobel prize for Medicine in 1965, biochemist, Director, Pasteur Institute, France. “Chance and Necessity: An Essay on the Natural Philosophy of Modern Biology”, [1971], Transl. Wainhouse A., Penguin Books: London, 1997, reprint, pp.142-143. Emphasis in original).
“Although a biologist, I must confess I do not understand how life came about… I consider that life only starts at the level of a functional cell. The most primitive cells may require at least several hundred different specific biological macro-molecules. How such already quite complex structures may have come together, remains a mystery to me. The possibility of the existence of a Creator, of God, represents to me a satisfactory solution to this problem.” Werner Arber (Nobel for Medicine in 1978) a quote from Henry Margenau & Ray Abraham Varghese, eds., “Cosmos, Bios, Theos: Scientists Reflect on Science, God and the Origin of the Universe, Life and Homo Sapiens” /LaSalle, IL, USA: Open Court, 1992, p. 142.
“Even with DNA sequence data we have no direct access to the processes of evolution, so objective reconstruction of the vanished past can be achieved only by creative imagination.” — N. Takahata, A General Perspective on the Origin & History of Humans, Annual Reviews of Ecology & Systematics, 1995.
কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, বিবর্তনবাদ যদি কারও বিশ্বাস না হয়, না হলো, তাতে ডারউইনের মরণদশা হবে কেন? আসলে ডারউইনের মরণদশা হয়নি, ডারউইন তো আগেই মরেছেন। মরণদশা হয়েছে কিছু ডারউইনবাদীর। তাদের নাস্তিকতার বারোটা বেজে গেছে। তারা এখন টাকা দিয়ে হলেও এমন জিনিস লেখানোর চেষ্টা করছে, যাতে প্রমাণ করা যায় যে, মহাবিশ্বে প্রাণের উৎপত্তি এমনি এমনি হয়েছে। এতদিন শুনেছি, সমাজের বিত্তশালী লোকেরা ভাড়া করা হুজুর দিয়ে নিজেদের পক্ষে ফতোয়া জারী করায়। এখন দেখা যাচ্ছে, এই কাজ ডারউইনবাদীরাও করে! তাহলে আর পার্থক্য থাকল কোথায়? বিশ্বাস না হলে নিচের ওয়েবসাইট দেখুনঃ
• The Origin-of-Life Foundation, Inc.®.
• lifeorigin.info
• http://lifeorigin.org/
এগুলো কোন ইসলামী ওয়েবসাইট নয়; আমার মত ইতিহাস ও বিজ্ঞান না-জানা লোকের ওয়েবসাইটও নয়। এগুলো ডারউইনপন্থীদের নিজস্ব ওয়েবসাইট। সেখানে বলা হয়েছে, কেউ কোন প্রতিষ্ঠিত সায়েন্স জার্নালে এমন কোন রিসার্চ পেপার যদি প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে প্রমাণ করা হবে যে মহাবিশ্বে প্রাণ ও ‘জিন’ (Gene)-এর উৎপত্তি প্রাকৃতিকভাবেই ঘটেছে, তাহলে তাকে $1.35 million মার্কিন ডলার পুরষ্কার দেয়া হবে। সেখানে স্বীকার করা হয়েছে যে, তাদের life-origin research কিছু গুরুতর সমস্যায় পড়েছে। বায়োকেমিক্যাল প্রমাণের অভাবে অনেকগুলো মডেল থিওরিই অকার্যকর হয়ে গেছে, অথচ এই বায়োকেমিক্যাল প্রমাণের বিষয়টিই বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখিতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যার জন্য তাদের সমস্যা হচ্ছে। আহা বেচারী! ডারউইনের বিবর্তনবাদ যে কতবড় বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে, তা বোঝার জন্য এই ঘটনার পর আর কোন প্রমাণ কি লাগে?
আরও লিখেছেন যে, আমি সীমিত জ্ঞানের অধিকারী সাধারণ মানুষদেরকে অতি সহজেই প্রভাবিত করতে পারব। ‘সাধারন মানুষদের বিজ্ঞান-বিষয়ক জ্ঞান বড় বেশী নাই এবং ধর্ম-বিষয়ে তাদের জ্ঞান প্রায় শুন্য। তাদের সেই অজ্ঞানতার সূযোগ নিয়ে ‘জোকার নায়েক মার্কা পিছলামী বিজ্ঞান” গেলাবেন না।`তারমানে বিজ্ঞান বিষয়ে যাদের জ্ঞান আছে, তারা ধর্ম বিষয়ে প্রভাবিত হবেন না। এ কথার উত্তর আমার দেওয়া লাগবে না। ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-১`এর মন্তব্য অংশে ভবঘুরে সাহেব যা লিখেছেন, সেখানেই আপনার উত্তর আছে। ৮ মে ২০১১ তারিখে তিনি বিপ্লব পাল-কে জানাচ্ছেন, ‘আমার পরিচিত যত ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার আছে, তার সিংহভাগই তাবলিগ জামাতের সদস্য।` আরও লিখেছেন, ‘জ্ঞান-বিজ্ঞান সেই ছোট বেলা থেকে পড়েই কিন্তু অবশেষে অনেকে ফ্যানাটিক হয়ে গেছে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। বাংলাদেশে ইঞ্জিনীয়ার ও ডাক্তারদের মধ্যেই তাবলিগ জামাত বেশী।` কাজেই আপনারা নিজেরাই ঠিক করুন, কার কথা ঠিক।
অন্য এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, বিজ্ঞান কোন দিনই তার সত্যতার স্বীকৃতির (Recognition) জন্যে কোন ধর্ম-গ্রন্থের দারস্থ্য (আসলে ‘দ্বারস্থ`) হবে না।` কথাগুলো লেখার সময় হয়তো ভুলে গেছেন যে, মেডিকেল সায়েন্সও একটি সায়েন্স। এই মেডিকেল সায়েন্স তো বহু আগেই ধর্মের দ্বারস্থ হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ বা তৃতীয় বিশ্ব নয়, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও ডাক্তারদের Spiritual ও Religious Training দেয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষিত ডাক্তারগণ রোগীদেরকে উৎসাহিত করছেন প্রার্থনার জন্য। সেখানে যেমন মেডিকেল স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষাকে সিলেবাসভুক্ত করা হয়েছে, তেমনি হাসপাতালগুলোতেও রোগীদের জন্য বিভিন্ন ধর্মের আউটডোর কাউন্সেলিং-এর সুযোগ রাখা হয়েছে। অনেকগুলো জরীপের পর মেডিকেল সায়েন্স এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জরীপে দেখা গেছে, একই রকম চিকিৎসায় ধার্মিক ও অধার্মিক রোগীদের আরোগ্যের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রি ও মেডিসিন বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর এবং Center for the Study of Religion/Spirituality and Health-এর প্রতিষ্ঠাতা Dr. Harold G. Koenig, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মেডিসিন এণ্ড হেলথ কেয়ার সায়েন্সেস-এর এসোসিয়েট প্রফেসর Dr. Christina Puchalski, আমেরিকার জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির Kennedy Institute of Ethics-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো Dr. Cynthia Cohen এবং নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির College of Physicians and Surgeons-এর Behavioral Medicine বিভাগের প্রফেসর ও New York State Psychiatric Institute-এর Behavioral Medicine বিভাগের প্রধান Dr. Richard Sloan তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, ধর্ম ও প্রার্থনার সাথে শারীরিক-মানসিক রোগ আরোগ্যের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এ সকল গবেষণার কারণে শুধু আমেরিকাতেই ৬৫% মেডিকেল স্কুল ‘Spirituality and Health`-কে তাদের পাঠ্যসূচিভুক্ত করেছে। বিস্তারিত জানার জন্য ভিজিট করুনঃ
Is Prayer Good for Your Health? A Critique of the Scientific Research
http://www.heritage.org/research/lecture/is-prayer-good-for-your-health-a-critique-of-the-scientific-research
Spirituality and Religion in Health Care
http://www.bravewell.org/integrative_medicine/philosophicalfoundation/spirituality_and_healthcare/
The Role of the Pharmacist—Prayer and Spirituality in Healing
http://www.theannals.com/content/41/3/505.abstract
Scientific Studies that Show a Positive Effect of Religion on Health
http://www.godandscience.org/apologetics/religionhealth.html
যা সত্য তা সবসময়ই সত্য। তা যতবার বলা হবে, একরকমই থাকবে। কিন্তু যা অসত্য, তা একেক বর্ণনায় একেকরকম হবে। এ কারণেই দেখা যায়, উকিলের জেরার মুখে মামলার আসল সত্য বের হয়ে যায়। উকিলকে তেমন কিছু করতে হয় না। কেবল একই প্রশ্ন নানাভাবে করতে হয়। একসময় দেখা যায়, ঘটনার বর্ণনা কয়েক রকম হয়ে গেছে। অসত্য বর্ণনার ক্ষেত্রে এই Contradiction হবেই। প্রাচীন গ্রিক অপরাধ বিজ্ঞান (Criminology) থেকে শুরু করে আধুনিক অপরাধ বিজ্ঞান পর্যন্ত এই ধ্রুব সত্য মেনে নিয়েছে। এই ব্লগেও দেখা যাচ্ছে, একই বিষয়ে একেকজন একেকরকম বলছেন। কেউ বলছেনঃ ইব্রাহিম মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অবৈধ সন্তান; আবার কেউ বলছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) সে সময় পুরুষত্বহীন ছিলেন, কাজেই ইব্রাহিম জনৈক ক্রীতদাসের সন্তান।
আপনার লেখার শুরুতেই বলেছেন, সাকিব সাহেবের কাছে লেখা আমার মন্তব্য পড়েছেন। যদি পড়েই থাকেন, তাহলে ‘আজ আমরা বিজ্ঞানের অবদানের কাছে এতটাই নির্ভরশীল যে…` এ কথাগুলো আর বলার দরকার আছে কি? আমার মন্তব্যে তো এ কথাগুলোই আছে। দয়া করে মন্তব্যটা আবার পড়ুন। চতুর্থ অনুচ্ছেদটা দেখুন। তারপর নিজেই বিবেচনা করুন কার কথাগুলো ‘বিজ্ঞানের বিরূপ মূল্যায়ন`; আমার লেখায় যে সকল Scientific Information (রেফারেন্সসহ) দিয়েছি সেগুলো, নাকি তাকে যে “আবোল তাবোল /বিকৃত তথ্য” বলে মন্তব্য করেছেন, সেগুলো? মুক্তমনার বিজ্ঞ পাঠকরাও এখানে যথাযথ বিবেচনা করবেন, তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে ‘বিজ্ঞানের কল্যানে আজ আমরা নিশ্চিত রুপে জানি` উল্লেখ করে যে সকল তথ্য দিয়েছেন, সেখানেই কি লেখা আছে দেখুনঃ
• No record whatever exists for nearly the first decade.
• The planet’s middle age is largely a mystery, though we can be reasonably sure that life continued to evolve, or at least persist, and that tectonic events continued to build mountain chains and oceanic trenches.
মহাবিশ্ব সৃষ্টির গবেষণায় যে অনেক রহস্য বা গ্যাপ রয়ে গেছে, তা তো আমরা ‘নিশ্চিতরূপেই জানি`। এতে কারও মধ্যে কোন বিতর্ক নেই। বিতর্ক আছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রকৃতি নিয়ে। পরস্পরবিরোধী বহু থিওরিও আছে। যেমনঃ
• The Steady-State Theory
• The Big-Bang Theory
• Intelligent Design Theory
• inflationary-universe theory
• Intelligent Design Theory
শাসকশ্রেণীর প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ সহযোগিতায় কল্পিত ঈশ্বর নিয়ে কারা বাণিজ্য করেছে, কেন করেছে, কারা এ কাজে বাধা দিয়েছে, কাদের সাথে সমাজের এস্টাবলিশমেন্টের দ্বন্দ্ব বেধেছে, কারা অধিপতিশ্রেণীর হিংস্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে, সমাজের নিচুতলার নিষ্পেষিত মানুষ কাদের পতাকার তলে আশ্রয় নিয়েছে, তা অন্যান্য কিছু মন্তব্যে এর মধ্যেই উল্লেখ করেছি। এখানে শুধু এটুকু বলতে পারি, ইতিহাসের অনেক রকম Version হতে পারে। যেমন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ইত্যাদি। আগে শুধু রাজা-বাদশাহ্দের ইতিহাস লেখা হত; প্রজাদের কোন ইতিহাস ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্ক্সিস্ট ঐতিহাসিকদের হাতে এ ধারায় পরিবর্তন আসে। তাঁরা লিখতে শুরু করেন ‘মানুষের ইতিহাস`, ‘পৃথিবীর ইতিহাস`। সেখানে নানা যুগের, নানা সময়ের সমাজ-কাঠামো, অর্থনীতি বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। তাঁদের অন্যতম ছিলেন ফিওদর করোভকিন। ভারতের ইতিহাস রচনায়ও তাঁদের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সেখানকার মার্ক্সিস্ট ঐতিহাসিকগণ (যেমন, এম এন রায়, ইরফান হাবিব, গৌতম নিয়োগী) নতুন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ইতিহাস রচনা, ইতিহাসের ঘটনাবলি ব্যাখ্যা শুরু করেন। ইতিহাসের অনেক ঘটনা পুনর্মূল্যায়িত হতে থাকে। এভাবেই আমরা পাই ‘Historical Role of Islam`, ‘ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িকতা`, ‘মহাবিদ্রোহের কাহিনী` ইত্যাদি ইতিহাস গ্রন্থ। ‘Historical Role of Islam`-এ M N Roy তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্ম কোন প্রথাগত ধর্ম ছিল না। প্রতিপক্ষের সাথে তাঁর দ্বন্দ্বও নিছক ধর্মীয় দ্বন্দ্ব ছিল না। এটা ছিল আদর্শের লড়াই—দুই অর্থনীতি ও দুই সমাজব্যবস্থার লড়াই (সূত্রঃ M. N. Roy, ‘The Historical Roll of Islam, Vora & Co. Publishers Ltd., Bombay, 1938, http://ia700500.us.archive.org/10/items/historicalroleof032545mbp/historicalroleof032545mbp.pdf)। মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মেছিলেন অভিজাত কোরাইশ বংশে। কিন্তু তিনি শ্রেণীচ্যুত হয়ে নিচুতলার গরীব শ্রেণীর সাথে হাত মেলান। উঁচুতলার কোরাইশ শ্রেণী তা মানবে কেন? তাদের ছিল কাবাকেন্দ্রিক মূর্তিপূজার বিশাল বাণিজ্য, যার প্রধান উৎস ছিল দেশীবিদেশী পূজারীর প্রসাদ, চাঁদাবাজি ও জুয়া। মুহাম্মদ (সাঃ) এমন এক দর্শন হাজির করেন, যা মানলে এ বাণিজ্যের সমাধি হয়ে যায়। হাজার বছরের গোত্রবৈষম্য ও মহাজন প্রথাও ছাড়তে হয়। যাকাত প্রথার কারণে বিত্তশালীরা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিত্তহীনেরা লাভবান হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, কোন সুবিধাভোগী শ্রেণীই সহজে নিজেদের সুবিধা ছাড়তে রাজি হয় না। এখানেও তাই হয়েছে। তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে এমন প্রস্তাবও হাজির করেছে, যেখানে এক বছর মুহাম্মদ (সাঃ) তাদের দেবদেবীর পূজা করবেন আর এক বছর তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপাস্যের (আল্লাহ্) পূজা করবে। এ থেকেই তো পরিষ্কার হয়ে যায় যে ঐ মূর্তিপূজায় কি ‘মধু` আছে। তাঁর প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী অংশই ছিল তাঁর আত্মীয়স্বজন, যারা শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। আদর্শের লড়াই বলেই রক্তসম্পর্কের মধ্যে এই বিভাজন ঘটেছিল। আদর্শের লড়াই না হলে কোন না কোনভাবে আপোষ-মীমাংসা হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। কোরাইশদের চোখে মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন ‘শ্রেণীশত্রু`। তাঁর ‘অপরাধ` ছিল ক্ষমার অযোগ্য। তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমাজের এই অধিপতি শ্রেণীর (Establishment) হিংস্র প্রতিরোধ এবং নিচুতলার নিষ্পেষিত শ্রেণীর দলে দলে ইসলাম গ্রহণের এটাই ছিল মাজেজা। অধিপতি শ্রেণী ভালো করেই জানতো, এটা শুধু কলেমা পড়ার ব্যাপার ছিল না।
আমরা এমনকি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাতেও দেখতে পাই, যে সকল রাজনৈতিক দলে ‘পরিবারতন্ত্র` আছে, সে সকল পরিবারের সন্তানেরা কখনও দলবদল করে না। নতুন দল গঠন করতেও যায় না। কারণ, তারা জানে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের অবধারিত। তাই বিকৃতমস্তিষ্ক ছাড়া এমন বোকামী কেউ করতে যায় না। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ব্যাপারটাও ছিল তাই। তিনি ছিলেন এমন এক পরিবারের উত্তরপুরুষ, যার হাতে ছিল বংশানুক্রমিক মক্কা ও কাবার কর্তৃত্ব। ফলে ভবিষ্যৎ কর্তৃত্ব ছিল তাঁর জন্য অবধারিত। তার সাথে যোগ হয়েছিল শ্রেণীপেশা নির্বিশেষে সকলের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা। রক্তসম্পর্কের এমন কেউ ছিল না, যে তাঁকে ভালবাসত না। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মসংবাদ শুনে তাঁর বৈমাত্রেয় চাচা আবু লাহাব (যিনি পরবর্তী সময়ে প্রবল শত্রুতে পরিণত হন) এতই আনন্দিত হন যে, পুরষ্কারস্বরূপ তার ক্রীতদাসী ছাওয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দেন। এমন একজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সমাজচ্যুত ও পরিবারচ্যুত কেন হতে যাবেন? নিশ্চিত লাভ ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকেই বা কেন যাবেন, যদি এটা আদর্শের লড়াই (Ideological Conflict) না হয়? মজার কথা হলো, যাঁরা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেন, তাঁরা কখনও এ সকল প্রশ্ন Answer করেন না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, কোন ব্যক্তি যদি উচ্চাকাঙ্খী ও অসৎ চরিত্রের হয়, তাহলে সে কখনও সমাজের Establishment-এর বিরুদ্ধে একা লাগতে যাবে না। সে আগে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন দ্বারা Equipped হবে। সাধারণ মানুষ বিপক্ষে গেলেও রক্তসম্পর্কের লোকজন কখনও আত্মীয়ের বিপক্ষে যায় না। আত্মীয় যদি খুনী, ডাকাত কিংবা বিচারাধীন অপরাধীও হয়, আমরা দেখতে পাই, তার রক্তসম্পর্কের লোকজন তার পক্ষে আইনী লড়াই করে, নৈতিকভাবেও সমর্থন দেয়, প্রকাশ্যে বলে, সে নির্দোষ। পরে সে ব্যক্তি দণ্ডিত হলেও তারা তাকে পরিত্যাগ করে না। জেলখানায় গিয়ে দেখাশোনা করে, খাবার পাঠায়। এই প্রোটেকশনের জন্যই মানুষ পরিবার ও সমাজ গঠন করে। মুহাম্মদ (সাঃ) যদি আল্লাহ্র নবী না হতেন এবং কোরআন যদি আল্লাহ্র বাণী না হত, সে ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হত। তিনি যেভাবেই হোক, আগে তাঁর আত্মীয়স্বজনকে দলে টানতেন। তার জন্য প্রয়োজনে কোরআনে এমন কিছু বাক্য ঢোকাতেন, যাতে Give and Take basis-এ তাদেরকে Accommodate করা যায়। ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে, এ ধরনের Minor অদল-বদলের প্রস্তাব তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে একাধিকবার দিয়েছে। কোরআন তাঁর নিজের লেখা হলে তিনি অবশ্যই তা সেখানে Incorporate করতেন। তিনি আল্লাহ্র নবী হলে এবং কোরআন আল্লাহ্র বাণী হলেই শুধু তিনি এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। এখানেও তাই হয়েছে।
যাই হোক, একইভাবে ‘ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িকতা` গ্রন্থে গৌতম নিয়োগী প্রমাণ করেছেন, ভারতবর্ষে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় সহিংসতার উৎস কখনও ধর্ম নয়। এর মূল কারণ আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ। নিজেদের উপনিবেশ দীর্ঘস্থায়ী করতে ও অস্ত্রব্যবসা সুগম করতেই তারা এই সাম্প্রদায়িকতা আমদানী করে। বইটিতে রাম মন্দির ও বাবরী মসজিদসহ বহু বিষয়ে অনেক দুর্লভ তথ্যউপাত্ত রয়েছে (সূত্রঃ ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িকতা, গৌতম নিয়োগী, KwjKvZv, Ryb 1991)।
নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তি আবার স্মরণ করছিঃ সকল মানুষকে কিছু সময়ের জন্য আর কিছু মানুষকে সকল সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায়—কিন্তু সকল মানুষকে সকল সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায় না। আপনি যে বললেন, ‘দয়া করে বিজ্ঞানের নামে ‘অপ-বিজ্ঞান /বিকৃত-তথ্য’ দিয়ে সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করবেন না। সাধারণ মানুষদের বিজ্ঞান-বিষয়ক জ্ঞান বড় বেশী নাই এবং ধর্ম-বিষয়ে তাদের জ্ঞান প্রায় শুন্য।` আমার অনুরোধ, সাধারণ মানুষকে এত বোকা ভাববেন না। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মকে দয়া করে Underestimate করবেন না। বর্তমান প্রজন্ম আমাদের তুলনায় অনেক-অনেক বেশি প্রশ্নশীল। অন্যদের মুখ বন্ধ রাখতে পারলেও তাদের মুখ বন্ধ রাখা যাবে না। তাদের কোন পিছুটান নেই। আমাদের অনেকের মত কারও কাছে তাদের ঠেকাও নেই। কাউকে কোন ব্ল্যাংক চেকও তারা দেয়নি। তাদের দৃষ্টি অবারিত, শ্রবণ অবারিত, চিন্তা উন্মুক্ত। তারা ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীর মত কিছু নির্বাচিত প্রশ্ন (সাজেশন) নিয়ে কাজ করে না। তারা সকল প্রশ্নের উত্তর চায়। তারা জন্মের পর থেকে ইতিহাস-বিকৃতি দেখেছে; তথ্য-বিকৃতিও দেখেছে। তারা আর কোন Missing Link চায় না। তারা জানে, ইতিহাস আর সিনেমা এক জিনিস নয়। সেখানে নায়িকার গান শেষ হলে নায়ক এসে হাজির হয় না। গল্প-উপন্যাসের মত চট করে তিন-চারশ` বছর পার হয়েও যাওয়া যায় না। নাটক-থিয়েটারের মত যখন-তখন পর্দা ফেলে নতুন দৃশ্য শুরু করা যায় না। রূপকথার মত ‘তারপর তাহারা সুখে দিন কাটাইতে লাগিল` জাতীয় ডায়লগ দিয়ে গল্প শেষ করা যায় না। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থাকে। বিজ্ঞানেরও ধারাবাহিকতা থাকে। যদি কোন ফাঁক পাওয়া যায়, বুঝতে হবে কেউ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই ফাঁক তৈরি করেছে। তরুণ প্রজন্ম এই ডার্ক-জোনে (Dark-Zone) কি আছে, তা-ও জানতে চায়। এদের কাছে গোঁড়া ধার্মিক ও গোঁড়া নাস্তিক উভয় শ্রেণীই প্রতিদিন নাস্তানাবুদ হচ্ছে। এই তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার শতভাগ আস্থা আছে। আমি নিশ্চিত জানি, যুক্তি ও বিজ্ঞান হাত ধরাধরি করে যেদিকে যাবে এই তরুণ প্রজন্ম সেদিকেই যাবে। মুক্তমনাও সেদিকেই যাবে। ‘আমার পছন্দের জায়গায় কেন গেল না`—এই প্রশ্ন তারা তুলবে না। এই প্রশ্ন তুলবে গোঁড়া নাস্তিক ও গোঁড়া আস্তিক শ্রেণী। তাদের কথায় কেউ কান দেবে না। তারা পেছনে পড়ে থাকবে। তাদের জায়গা হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তারা নামে আলাদা, কিন্তু এক বৃন্তে দুটি কুসুম। যা আগেও বলেছি।
কাজেই নিশ্চিন্ত মনে অপেক্ষা করুন। হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই।
ভাল থাকুন।
@শাহেদ ইকবাল,
আপনার মন্তব্যটি আজকেই খেয়াল করলাম। দেখুন শাহেদ সাহেব, Theory of Evolution এর পক্ষে এত বেশী বৈজ্ঞানিক প্রমান আছে যে এ নিয়ে কোন অলোচনার অবকাশ নাই।একমাত্র গোঁড়া ‘ধর্মান্ধতা‘ ছাড়া একে অস্বীকার করা অসম্ভব। ‘Intelligence Design’ কোন বিজ্ঞানের বিষয় নয়, এটি ধর্মজ্ঞান। আর আমেরিকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠনেরই বিজ্ঞান ক্লাসে এটা পড়ানো হয় না। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের এক বিশেষ রায়ে বিজ্ঞান ক্লাশে এ বিষয়ে পড়ানোকে অশাসন্তান্ত্রিক (unconstitutional) রায় দেয়া হয়েছে। বিস্তারিত দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
বিজ্ঞান কখনোই ‘সবজান্তা’ দাবী করে না। যার সপক্ষে কোন প্রমান নাই তা দ্বিধাহীন ভাবে প্রকাশ করতে বিজ্ঞানের কোনই অসুবিধা নাই। তাই, “No record whatever exists for nearly the first decade. -The planet’s middle age is largely a mystery” এ বক্তব্যগুলো বিজ্ঞান অবলীলায় স্বীকার করতে পারে। আর এটাই বিজ্ঞানের বিশেষ শক্তি।”সবজান্তা” দাবী ‘ধর্ম-পুস্তক ও তার অনুসারীদের’। সু্যোগ পেলেই তারা ইশ্ব্ররকে (God of the gaps)‘ বিজ্ঞানের এই ‘অজানা’ স্বীকারুক্তিকে দূর্বল জ্ঞান করে আত্ম-তৃপ্তি লাভ করে (Argument from Ignorance).
আপনার এ দীর্ঘ মন্তব্যটি পড়ে আমার মনে হয় নাই যে আপনি ‘আধুনিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে ভাল ধারনা রাখেন। বিবর্তনের সপক্ষে ‘ধর্ম-গ্রন্থে’ আয়াত খুঁজে বের করায় সময় এটা। এ ব্যাপারে যত দেরী হবে ততই ধর্মান্ধরা ‘আধুনিক বিজ্ঞান-মনস্ক’ মানুষের কাছে নিজেকে হাস্যস্পদ বানাবে। মুহাম্মাদ এবং ইসলাম বিষয়ে যা লিখেছেন ‘তা আগের চর্বিত চর্বন’ যার জাবাব আমি আগেই দিয়েছি।
আমার মনে হয় না এ আলোচনাকে আরো দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন আছে।
ভাল থাকুন।
@শাহেদ ইকবাল,
দুখিত, অনেক চেষ্টা করেও পুরো লিখাটি পড়ে শেষ করতে পারলাম না। যতখানি পড়লাম তা থেকেই মন্তব করি। লিখেছেনঃ
সর্বমোট ক’জন হবে? তার নিজস্ব হাশেমী পরিবারের ক’জন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ তাদের মধ্যে ছিল?
অর্থাৎ উক্ত ঘটনাটা হচ্ছে মুসলমান কতৃক ‘কুরাইশ’ পেটানোর (শারিরিক আঘাত) কাহিনী। আঘাতপ্রাপ্ত আবু জেহেল কি করেছিল তার জবাবে? মুহাম্মাদের দল তখন শক্তিশালী ছিল না, আবু জেহেলের দল ছিল অনেক শক্তিশালী। আবু জেহেল কি তার দল-বল নিয়ে মুসলমানদের আক্রমন করেছিল? তা না করলে কাকে বেশি “বর্বর” বলে আপনার মনে হয়? আঘাতকারী হামজাকে, নাকি ক্ষমতা থাকা সত্বেও ধর্য্য ধারনকারী আবু-জেহেলকে?
কুরাইশরা ক’জন মুসলামান কে হত্যা করেছিল? নির্ভরযোগ্য সুত্র (তাবারী-হিশাম) থেকে জানাবেন। কুরাইশরা (তায়েফবাসী নয়) কবে এবং কোথায় মুহাম্মাদকে অমানুষিক ও বর্বর শারীরীক নির্যাতন করেছিল তা জানাবেন কি?
কেন ভাই, বিখ্যাত “সুরা লাহাব” কি ভুলে গেলেন নাকি (নিজের চাচা-চাচীকেও অভিশাপ দিতে ছাড়ে নাই)। কুরান থেকে (Quran is a Messages of Muhammad which he said, ‘Received from his Allah’) সামান্য আরো কিছু উদাহরনঃ
আরো লাগবে?
এটা কোন ধরনের যুক্তি(কুযুক্তি)?
মনের মাধুরী মিশায়ে “রচনা” লিখেছেন বলে মনে হচ্ছে।
এর আগে মুক্তমানায় এমন ‘তেনা প্যাচানো’ লিখা পড়েছি বলে মনে পড়ে না।
@গোলাপ, ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী নবুয়তের সপ্তম থেকে দশম বছর পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর পরিবার-পরিজন (বণি হাশিম গোত্র) শত্রুদের সামাজিক ও আর্থিক অবরোধের শিকার হয়ে মক্কার পূর্ব প্রান্তসীমায় অবস্থিত একটি গিরিসংকটে একটানা তিন বছর অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করে। এ সময় মুসলমানের সংখ্যা ছিল প্রায় চারশ’ (সূত্রঃ মহানবী, ড. ওসমান গনী, পৃঃ ১৬৩)। পরবর্তীতে হিযরতের সময় মক্কা থেকে মোট একশতটি পরিবার ইয়াসরিবে পাড়ি দেয় (সূত্রঃ ইবনে হিশাম, পৃঃ ৩১৬ এবং Sir Syed Ameer Ali, ‘The Spirit of Islam, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ১১৬)।
আমীর হামজা ও আবু জাহেল—উভয়েই মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা। হামজা তখনও মুসলিম হননি। একদিন মুহাম্মদ (সাঃ) রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, এ সময় আবু জাহেল তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও উৎপীড়ন করতে লাগল। মুহাম্মদ (সাঃ) কোন কথা না বলে সব সহ্য করলেন। হামজা তখন শিকার করতে গিয়েছিলেন। শিকার থেকে ফিরে তিনি ঘটনা শুনলেন এবং তৎক্ষণাৎ কাবাগৃহের দিকে রওনা হলেন। আবু জাহেল তার দলবলসহ সেখানে উপস্থিত ছিল। হামজা ধনুকের ঘায়ে আবু জাহেলের মাথা ফাটিয়ে দিলেন। চারদিকে হৈ-চৈ পড়ে গেল। মাখজুম গোত্রের লোকজন ছুটে এল হামজাকে মারতে। কিন্তু মহাবীর হামজা সকলকে প্রতিহত করলেন। তারপর আবু জাহেলের ব্যবহারের প্রতিবাদে সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। আবু জাহেল আগের মত পরবর্তী সময়েও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নামাযরত অবস্থায় উটের নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ এবং মুখে মাটি নিক্ষেপ করে। তার ও অন্যদের প্ররোচনায় আরেকবার উকবা বিন আবি মুয়িত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কাবাগৃহে প্রার্থনারত অবস্থায় গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে এত জোরে টান দেয় যে তিনি হাঁটুর উপর লুটিয়ে পড়েন (সূত্রঃ মহানবী, পৃঃ ১৬৭, আধুনিক চিন্তাধারা বনাম ধর্ম, ড. ওয়াহীদুদ্দীন খান, পৃঃ ১২৯ এবং সাইয়েদুল মুরসালিন, আবদুল খালেক, পৃঃ ১৯০)। ইতিহাসে আবু জাহেলের যে চরিত্র চিত্রায়িত হয়েছে, তা ধৈর্য্যশীল মানুষের চরিত্র নয়।
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা আগেই দেয়া হয়েছে। আবু তালিবের মৃত্যুতে কোরাইশদের সেই নির্যাতন চরম আকার ধারণ করে (সূত্রঃ ইবনুল আসির, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৯)। আবু লাহাবের পত্নী উম্মুল জামিলা তাঁর যাতায়াতের রাস্তায় কাঁটা ছড়িয়ে রাখত। এর পাশাপাশি কোরাইশগণ তাদের নিজ নিজ পরিবারের সদস্য, আশ্রিত ব্যক্তি বা দাস—যারা নতুন ধর্ম গ্রহণ করেছে, তাদেরকে নির্যাতন ও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় রামফার পাহাড় ও ‘বাসা` নামক স্থান নির্মম অত্যাচারের লীলাভূমিতে পরিণত হয় । তারা নির্মম অত্যাচার চালিয়ে ইয়াসার ও তার স্ত্রী সামিয়াকে হত্যা এবং সন্তান আম্মারকে গুরুতর জখম করে। খোবাই বিন আদিকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নভিন্ন করে ও শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাংস কেটে হত্যা করা হয় (সূত্রঃ ইবনে হিশাম, পৃঃ ২০৫-২০৯; ইবনুল আসির, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫০)।
সুরা লাহাবের উদাহরণ দিয়ে ভালোই করেছেন। কোরআন যে মানুষের রচনা নয়, তার অন্যতম প্রমাণ হলো এই সুরা। কিভাবে? সুরা ‘লাহাব` নাযিল হয় আবু লাহাব-এর মৃত্যুর দশ বছর আগে, নবুয়তের প্রথম বছরে, সাফা পাহাড়ের সেই ঘোষণার সময় (বুখারী ও মুসলিম)। ওই সুরায় বলা হয়েছে, ‘আবু লাহাব ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এবং তার পাপের জন্য নরকের আগুনে জ্বলবে।` ইসলামের বিধান অনুযায়ী যে মুহূর্তে একজন ব্যক্তি ইসলাম কবুল করবে, সে মুহূর্তেই তার অতীতের সমস্ত অপরাধ মার্জনা হয়ে যাবে। আবু লাহাবেরও সুযোগ ছিল ইসলাম গ্রহণ করে তার সম্পর্কে কোরআনের ওই ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করার। এমনকি অভিনয় করেও সে ঈমান আনতে পারত। জীবনভর মিথ্যা কথা বলার পর আর একটা মিথ্যা কথা বলতে তার অসুবিধা ছিল না। অন্তরের খবর তো আর মানুষের কাছে ছিল না। ফলে প্র্রমাণ হয়ে যেত কোরআন মিথ্যা। কিন্তু আবু লাহাব তা করতে পারেনি। বরং দশ বছর পর বদরের যুদ্ধে আবু জাহেল-এর মৃত্যুসংবাদ শুনে এমন এক ভয়ংকর রোগে পতিত হলো যে ওই রোগেই কাফের অবস্থায় তার মৃত্যু হলো (সূত্রঃ মহানবী, পৃঃ ২৩৯)। এরকম অনেক অজানা অতীত, ভবিষ্যৎ ও বৈজ্ঞানিক তথ্য কোরআনে আছে, যা বহু বছর পরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য ও গবেষণায় আমরা জেনেছি। এ বর্ণনাটি দীর্ঘ। অন্য একটি লেখায় আশা করি পেয়ে যাবেন।
সুরা লাহাবের এই অভিশাপ মুহাম্মদ (সাঃ) দেননি। আল্লাহ্ দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহ্ দিয়েছেন, কাজেই এটা অভিশাপ নয়—এটা হুকুম। অভিশাপ কারা দেয়? কখন দেয়? অভিশাপ হলো এমন এক ধরনের ‘ইচ্ছা`, যা কার্যকর করার ক্ষমতা অভিশাপকারীর নেই। সাধারণতঃ আল্লাহ্র (ক্ষেত্রবিশেষে যার যা উপাস্য) উপর ভরশা করে অক্ষম শ্রেণীর মানুষ এই কাজটা করে। আবু লাহাবের বিষয়টা আল্লাহ্র তরফ থেকে হুকুম, তাই কার্যকরী হয়ে গেছে। সুরা নিসা ৪৭ আয়াত ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এখানে লানৎ দেয়া হয়নি, বলা হয়েছে লানৎ দেওয়ার আগেই ঈমান আনতে। ভাল করে পড়ে দেখুন। ৫১ আয়াতেও এরকম কিছু নাই। সুরা আরাফ ১৪৬ আয়াতে পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তির কথা আছে। এ বিষয়ে কি কারও আপত্তি আছে? অন্যান্য সুরা থেকে যতগুলি উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, একটাও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উক্তি নয়। কষ্ট করে আমার লেখাটি আগাগোড়া পড়ুন। সেখানে ‘স্থান-কাল` (Space-Time) সম্পর্কে কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে। কালের শ্রেণীবিভাগ (বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ) যে মানুষের তৈরি করা কৃত্রিম বিভাজন এবং সপ্তম আকাশের (ঊর্ধ্বে যার দূরত্ব ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ) লক্ষ লক্ষ বৎসর পৃথিবীর জন্য Zero Time হতে পারে—তা সেখানে উল্লেখ আছে। সেখানে অতীত ও ভবিষ্যৎকালের অস্তিত্ব নাই। আদি-অন্তহীন অঞ্চল জুড়ে একটি মাত্র কাল বিদ্যমান। তা হচ্ছে বর্তমান কাল। তাই কোরআনের যে আয়াতগুলো উদ্ধৃত করেছেন, সেগুলো নিয়ে পৃথিবীর সময়-অঞ্চলে (Time-Zone) বিভ্রান্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে আল্লাহ্র সিদ্ধান্তই যদি থাকে, তাহলে আর আমার দোষ কি? এই ভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে আমাদের আলাদা ডাইমেনশনের কারণে। আমরা আছি ত্রিমাত্রিক জগতে। এখানে যা ভবিষ্যৎকাল, অন্য ডাইমেনশনে তা বর্তমান কাল। আর আল্লাহ্ হলেন সময়ের বন্ধন থেকে মুক্ত। ঘটনা এটাই।
পক্ষান্তরে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কোরআন বলছে, ‘আল্লাহ্র অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছ; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং কাজেকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।` (সুরা ইমরান, ১৫৯)। ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছে। তোমাদের দুঃখকষ্ট তার নিকট বড়ই কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি সে মমতাময় ও পরম দয়ালু।` (সুরা তাওবা, ১২৮)।
‘যেদিন ইব্রাহিম মারা যায়, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়। তখন লোকজন বলতে লাগল, ‘ইব্রাহিমের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। কাজেই মুহাম্মদ (সাঃ) একজন সত্য নবী।` আপনি জানতে চেয়েছেন, এটা কোন্ ধরনের যুক্তি(কুযুক্তি)? প্রশ্নটা তো আমারও! খেয়াল করেননি, কথাগুলো যে আমার নয়? কথাগুলো আরবের লোকজনের। আমি ইতিহাস ও হাদিস থেকে ডাইরেক্ট তুলে দিয়েছি। রেফারেন্সও আছে। তাদের কথার উত্তরে মুহাম্মদ (সাঃ) যা বলেছিলেন, তা বাদ দিলেন কেন? তারপর আমার এই বাক্যটা— ‘এখানেও লেখকের যুক্তি অনুসরণ করে কি বলা যায় না যে, ঐ সময় যদি মুহাম্মদ (সাঃ) শুধু নীরব থাকতেন, তাহলেও বহু অবিশ্বাসী তাঁকে নবী বলে মেনে নিত?` এই বাক্যটার জন্যই তো ওই অনুচ্ছেদটা লেখা। কারণ, ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` প্রবন্ধে এ ধরনের ‘যুক্তিরই(!)` (যাকে আপনি কুযুক্তি বলছেন) ছড়াছড়ি।
আপনার শেষ বাক্যটি সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে পারি, গত কয়েক মাস ধরে সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু ‘মেরাজ` নিয়ে যা হয়েছে, তাকেই বলে ‘তেনা প্যাঁচানো`। আমি সেই ‘তেনা` খোলার চেষ্টা করেছি। বেশি প্যাঁচিয়ে যাওয়ায় খুলতেও কষ্ট হয়েছে!
@শাহেদ ইকবাল,
গতকাল খুব ব্যস্ত ছিলাম, মুক্ত-মনায় বসতে পারি নাই। আপনার জবাবের জন্য ধন্যবাদ। অন্যান্য পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনার জবাব গুলো দেখলাম। আপনাকে বলেছিলাম ‘নির্ভরযোগ্য সুত্র’ থেকে জানাবেন। আপনার রেফারেন্সের অনেক ‘উৎস (source)’ অনেকের মত আমার কাছেও ‘হাস্য-স্পদ’ লেগেছে। Islamic annals এর ‘নির্ভরযোগ্য সুত্র’ গুলো হচ্ছেঃ
ঘটনার উৎস-স্থল থেকে ‘সময় এবং দুরত্ব’ যতই বৃদ্ধি পাবে- ‘ঘটানার বিকৃতি” ততই প্রকট হবে। সে হিসাবে, ইসলামিক ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য “উৎস” হলো কুরান (১৯ বছর পর সঙ্কলন), ২য় সীরাত (১২০ বছর পর) আর ৩য় হচ্ছে হাদিস ( ২০০ বছর পর সঙ্কলন)।
আপনি লিখেছেনঃ
আপনার সাথে একমত। মুহাম্মদের মক্কা-জীবনে (৬১০-৬২২) এটাই হলো কুরাইশদের নেয়া “মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের” বিরুদ্ধে কঠোরাবস্থা। খেয়াল করুন “নবুয়তের সপ্তম থেকে দশম বছর পর্যন্ত” = ‘তিন বছর অবরুদ্ধ জীবন’। তার মানে এর আগের সাত বছর কুরাইশরা মুহাম্মদের যাবাতীয় “অত্যচার”
(মুহাম্মাদ তাদের “পুজনীয় দেব-দেবীদের তাচ্ছিল্য’ এবং তাদের পূব-পুরুষদের অসন্মান করতো)। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় কুরাইশরা “তাদের ধর্ম-রক্ষার” খাতিরেই তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল যখন মুহাম্মাদ তাদের “পুজনীয় দেব-দেবীদের তাচ্ছিল্য’ এবং তাদের পূব-পুরুষদের অসন্মান করা শুরু করেছিল। দেখুনঃ
এখনকার পরিস্থিতি কি? “মুহাম্মাদের শিক্ষার ফলের’ কি অবস্থা?
প্রকাশ্যে অথবা যে কোন মুসলীম সামাজিক অনুষ্ঠানে ইস্লামের বা মুহাম্মদের বিপক্ষে কোন কথা বললে তার কি পরিনাম হয় তা আমরা সবাই জানি ( আমাদের দেশে তসলিমা, হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ শরীফ ইত্যাদি)। মক্কা শরীফ” তো অনেক দুরের কথা, মুস্লীম জাহানের যে কোন মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে তা বলার চেষ্টা কেউ করলে সে “জান” নিয়ে ফিরে আসতে পারবে না। Terry Jones কুরান পোড়ালো আমেরিকায় আর আফগানিস্থানে খুন হলো “নিরীহ ” ২০ জন মানুষ। এটা মুহাম্মদের শিক্ষা – তার জীবনী পড়লেই যে কেহ তা বুঝতে পারবে। এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন,
“কুরাইশরা বেশী সহনসীল নাকি মুহাম্মমাদ ও তার দল (মুসলমান) বেশী সহনসীল’?
এর পরেও কথা আছে। এই বয়কোট টা কিন্তু আবার কুরাইশরাই উঠিয়ে নিয়েছিল।
* Annulling the Boycott ( lasted for 2-3yrs)
“Number of Quraysh took steps to annul the boycott against them (Buni Hashim)”
Ibne Ishaq, page- 172, Leiden P -247)
না, মুহাম্মদের ১৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের অর্জন সমাজের নিম্নশ্রেনীর সর্বমোট ১৫০ জনের বেশী নয়।
ধরে নিলাম আপনার কথামত “সংখ্যা ছিল প্রায় চারশ’। আর কুরাইশদের সংখ্যা ছিল অনেক অনেক বেশী, তারা স্ংগবদ্ধ, বিত্তবান। আপনি এড়িয়ে গেছেন যে প্রশ্নটি, “তার নিজস্ব হাশেমী পরিবারের ক’জন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ তাদের মধ্যে ছিল?” উত্তরটা আমি দেয়ঃ
আপনি লিখেছেনঃ
পরবর্তীতে কিভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, তার উদাহরন আপনার মন্তব্য। দেখুন সীরাতে কি বলা আছেঃ
কার মহানুভবতা কার উপর চালানো হয়েছে। আদি-ঊৎস থেকে কি নৈপুন্যে্র সাথে বিকৃত করা হ্য়েছে।
কুরাইশদের প্রতি মুসল্মান্দের শারিরীক আক্রমন এটাই প্রথম নয়। প্রথম আঘাত-কারী ছিল সা’দ বিল আবি- ওয়াকাস (মুসলিম), ঘটনার বর্ননাঃ
লিখেছেনঃ
ঊক্ত কাজটি আবু-জেহেল করে নাই। করেছিল অন্য এক কুরাইশ। সীরাতে যা লিখা আছেঃ
লিখেছেন,
আরেকটি বিকৃতি। গলায় কাপড়ের ফাঁস নয়, “জামা-পায়জামা (Robe)’ ধরে টানা-টানি। কুরাইশরা তা করেছিল। ঘটানার আগের দিনে মুহাম্মাদের গর্জন, “Will you listen to me O Quraysh? By Him who holds my life in His hand ‘I bring you slaughter” এর জবাবে পরের দিন কিছু কুরাইশের প্রতিবাদ ছিল এ ঘটনা। বিস্তারিত ঘটনার বিবরনঃ
লিখেছেনঃ
কোথায় বর্ননা? “উটের নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ এবং মুখে মাটি নিক্ষেপ করা আর মুহাম্মদের গর্জন, ‘I bring you slaughter’ এর জবাবে তার “জামা-পায়জামা (Robe)’ ধরে টানা-টানি? এটাকে যদি আপনি “অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতন” বলেন তবে মুহাম্মদের আদেশে
ক্বাব বিন আশরাফ (বুখারী Volume 5, Book 59, Number 369),আবু রাফির (Sahi Bukhari Volume 5, Book 59, Number 371), আসমা- বিনতে মারিয়া , বানু -কুরাইজা (Sahi Bukhari Volume 4, Book 52, Number 280) সহ হাজারো মানুষের খুনকে আপনি কি বলবেন। তাদের একমাত্র অপরাধ “মুহাম্মদের নৃশ্ংস’ কাজের প্রতিবাদ।
লিখেছেন,
আপনার এ তথ্য খুবই controversial. কারন ‘ইয়াসার ও তার স্ত্রী সামিয়াকে হত্যা’র বর্ননা শুধুমাত্র ‘ইবনে সা’দ এর তাবাকাতে’ আছে। ইবনে ইশাক লিখেছেন একটি মাত্র লাইন, তাবারী এটা উল্লেখ-ই করেন নাই, কুরানেও (আমার জানা মতে) এর কোন উল্লেখ নেই। এই একটি মাত্র খুনের ঘটনা সত্য হলে প্রতিটি ইতিহাসবিদ ও কুরানে অবশ্যই এর বিষদ বিবরন থাকতো। ইবনে ইশাকের বর্ননাঃ
এটাই হলো বর্ননা। মুহাম্মদের বানীতে সাড়া দিয়ে দাসরা মালিকদের অবাধ্য হতো, যেটা ঊমাইয়া খালফ বলেছে, ‘ You are the one who corrupted him –“। এটা ছিল মালিকদের financial loss. তাই আবু-বকর যখন বেলালকে কিনতে চাইলো তখন সংগে সংগে সে তাকে বিক্রি করেছিল। জিঘাংসা বশতঃ হলে সে বিক্রি করতো না।
‘কুন ফা ইয়া কুন’ – আল্লহ বলেন হও, সংগে সংগে তা হয়ে যায় (সুরা ইয়াসীন ৩৬ঃ৮২)।
সুতরাং আপনার বক্তব্যেঃ
আল্লাহর “তৎক্ষনাৎ” =১০ বছর
অদ্ভুত যুক্তি! আপনারা কি এটা কখনোই বুঝবেন না যে “বক্তা এখানে চাক্ষুস মুহাম্মাদ”? মুহাম্মদের প্রতি অবিশ্বাসে আল্লাহর কোনই অস্তিত্ব নাই? সে ক্ষেত্রে মুহাম্মদের বক্তব্য, ১০০% মুহাম্মাদেরই বক্তব্য।
ভাইজান, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে মুহাম্মাদ বহু বহু নৃশংস ঘটনা, মালামাল লু্ন্ঠন, ভুমি-দখল, সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যার (assassination) প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অংশীদার।মদীনার ১০ বছরে (৬২২-৬৩২) ৬০টির ও বেশী যুদ্ধ ও ত্রাস (লিস্ট চাইলে দিতে পারি) সে করেছে, তার ধর্মের নামে। এর মধ্যে ওহুদ এবং খন্দক যুদ্ধ ছাড়া (সেটাও ছিল তার পূর্ববর্তী আক্রমনে অতিষ্ঠ কুরাইশদের পাল্টা আক্রমণ) সবখানে মুহাম্মাদের বাহিনীই ১ম হামলাকারী (offensive), আক্রান্ত জনগোষ্ঠি করেছে তাদের জান মাল রক্ষার চেষ্টা (defensive). ইহুদীদের জান-মালের উপর নৃশংস হামলার ঘটনা (বনি কুরাইজা, বনি নাদির, বনি কুইনাকা, বনি মুত্তালিক, খাইবার ইত্যদি) তাদের সম্পত্তি দখল, ঘর-বাড়ি মেয়ে দখল। মুহাম্মদের হিস্যা ১/৫ অংশ, সাংগোপাংগোদের ৪/৫ অংশ- তা যদি হামলার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়। বিনা হামলায় প্রাপ্ত সম্পত্তি পুরোটাই মুহাম্মাদের ( উদাহরন – ফাদাক)
এখানে কে মিথ্যুক? আল্লাহ-মুহাম্মাদ(কুরান), নাকি মুহাম্মাদ-আল্লাহ (হাদিস)?
ভাল থাকুন।
@গোলাপ, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এই মন্তব্যগুলোর অধিকাংশেরই জবাব নানা প্রসঙ্গে অন্যত্র (এই Page-এ) দেয়া হয়ে গেছে। তারপরেও খেয়াল করলাম, কিছু কিছু বিষয় রয়ে গেছে, যা আলোচনা করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু লেখার প্রয়োজন বোধ করছি।
Islamic Annals এর যে সকল সুত্র উল্লেখ করেছেন, তাতে প্রথমেই কিছু তথ্য সংযোজন করতে চাই। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (৭০৪-৭৬৮ খ্রিঃ) – মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সর্বপ্রথম জীবনীকার নন। তাঁর পূর্বে আরও কয়েকজন জীবনীকার ছিলেন। তাঁরা হলেনঃ
(১) উরওয়াহ ইবনে আল-আওয়াম (মৃত্যু ৯২ হিজরী)
(২) আবান ইবনে উসমান (মৃত্যু ১০৫ হিজরী)
(৩) ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (মৃত্যু ১১০ হিজরী)
(৪) শারহাবিল ইবনে সাদ (মৃত্যু ১২৩ হিজরী)
ইমাম ইবনে শিহাব আজ-জাহরী (৬৭২-৭৪৬ খ্রিঃ), খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজের অনুরোধে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনীগ্রন্থ ‘কিতাবুল মাগাজী` রচনা করেন। পরবর্তীকালে এই গ্রন্থের অংশবিশেষ ‘সিরাত-ই-মুস্তফা` নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যসূচীভুক্ত ছিল। এখনও তাফসিরে ইবনে কাথিরসহ বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে তাঁর Reference পাওয়া যায়।
(৫) আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু বকর ইবনে হাজম (মৃত্যু ১৩৫ হিজরী)
(৬) মুসা ইবনে ওকবা (মৃত্যু ১৪১ হিজরী)
(৭) মুয়াম্মার ইবনে রাশিদ (মৃত্যু ১৫০ হিজরী)
এছাড়া মুহাম্মদ ইবনে ওমর আল ওয়াকিদি’র পূর্বে যিয়াদ আল বুকাই (মৃত্যু ১৮৩ হিজরী) এবং আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী (উপনাম ‘আরবদের লেভি`)-এর পূর্বে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অন্যতম বিখ্যাত জীবনীকার ছিলেন বালাজুরি (মৃত্যু ২৭৯ হিজরী ৮৯২ খ্রিস্টাব্দ)। বালাজুরী বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবনীগ্রন্থের নাম ‘ফুতাহুল বুলদান’।
মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (৭৮৪-৮৪৫ খ্রিঃ)-এর পূর্বেকার জীবনীকার হলেন আবদুল মালেক ইবনে হিশাম (মৃত্যু ২১৮ হিজরী) যিনি সাধারণের কাছে ‘ইবনে হিশাম` নামে পরিচিত। বসরার অধিবাসী ও হিমায়র রাজবংশের এই পণ্ডিত ব্যক্তিই ইবনে ইসহাকের বিশাল জীবনী গ্রন্থ ‘সীরাত রাসুলাল্লাহ্`-এর সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেন, যা ‘সীরাত ইবনে হিশাম` নামে পরিচিত। বর্তমানে ইবনে ইসহাকের ‘সীরাত রাসুলাল্লাহ্` বলতে আমরা এই ‘সীরাত ইবনে হিশাম`-কেই বুঝি, যা বিভিন্ন Scholar কর্তৃক নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
মুহাম্মদ ইবনে ওমর আল ওয়াকিদি (Al-Waqidi) মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনী সংক্রান্ত দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন। একটি হলো ‘কিতাবুস্ সিরাত` এবং অন্যটি ‘কিতাবুত-তারিখ আল মাগাজী আল মাবয়াছ`।
যাই হোক, ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিরূপণের জন্য যে সূত্র ও পর্যায়ক্রম উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ ‘ঘটনার উৎস-স্থল থেকে ‘সময় এবং দুরত্ব’ যতই বৃদ্ধি পাবে- ‘ঘটনার বিকৃতি” ততই প্রকট হবে। সে হিসাবে, ইসলামিক ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য “উৎস” হলো কুরান, ২য় সীরাত আর ৩য় হচ্ছে হাদিস`—এর সাথে আমি একশ’ভাগ একমত। আমার মন্তব্য ও আলোচনা এর আলোকেই তুলে ধরব।
আপনি ইবনে ইসহাক ও তাবারীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেনঃ
‘মুহাম্মাদ তাদের “পুজনীয় দেব-দেবীদের তাচ্ছিল্য’ এবং তাদের পূর্ব-পুরুষদের অসন্মান করতো। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কুরাইশরা “তাদের ধর্ম-রক্ষার” খাতিরেই তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল যখন মুহাম্মাদ তাদের “পুজনীয় দেব-দেবীদের তাচ্ছিল্য’ এবং তাদের পূব-পুরুষদের অসন্মান করা শুরু করেছিল।`
ইবনে ইসহাকের বর্ণনাটা ভাল করে খেয়াল করুন। তিনি শুরু করেছেন এভাবে, ‘so far I have heard,..`। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) কি বলতেন তার কোন উদ্ধৃতি সেখানে নেই। কাজেই আমাদের দেখতে হবে মুহাম্মদ (সাঃ) আসলে কি বলতেন। আপনার কথা মত কোরআন হলো ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সোর্স। সেখানে না পেলে আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সোর্সে যাব। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে কি বলেছেন এবং তাঁকে কি বলতে বলা হয়েছে, তা কোরআনেই আছে। যেমনঃ
‘তারা আল্লাহ্কে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে, তাদেরকে তোমরা গালি দিয়ো না। কেননা তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহ্কেও গালি দিবে।` (সুরা আনআম, ১০৮)।
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।` (সুরা নাহল, ১২৫)।
‘গর্হিত কাজকর্ম ও কথাবার্তার জবাবে উত্তম কথাবার্তা বল।` (সুরা মুমিনুন, ৯৬)।
‘বরং তারা বলে, ‘আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।` এভাবে তোমার পূর্বে কোন কোন জনপদে যখনই আমি কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন তার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিরা বলত, ‘আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।` সেই সতর্ককারী বলত, ‘তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথনির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে?` তারা বলত, ‘তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।` (সুরা যুখরুফ, ২২-২৪)।
‘আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ নাই। আল্লাহ্ই আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।` (সুরা শুরা, ১৫)।
‘বল, ‘তোমরা যাদের শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করে ও তার পুনরাবর্তন ঘটায়?` বল, ‘আল্লাহ্ই সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন ও পরে তার পুনরাবর্তন ঘটান।` সুতরাং তোমরা কেমন করে সত্য বিচ্যুত হচ্ছ?` (সুরা ইউনুস, ৩৪)।
‘তোমার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও।`(সুরা শুআরা, ২১৪)। ‘তারা যদি তোমার অবাধ্যতা করে, তুমি বল, ‘তোমরা যা কর তা থেকে আমি দায়মুক্ত।`(সুরা শুআরা, ২১৬)।
‘তারা কি ইবাদত করবে আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের যাদের আকাশমণ্ডলী অথবা পৃথিবী থেকে কোন জীবনোপকরণ সরবরাহ করার শক্তি নাই এবং তারা কিছুই করতে সক্ষম নয়? সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র কোন সদৃশ স্থির করো না।` (সুরা নাহল, ৭৩-৭৪)।
‘তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ্।` বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে?` বল, ‘আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট।` নির্ভরকারীগণ আল্লাহ্রই উপর নির্ভর করে।`(সুরা যুমার, ৩৮)।
‘এটা তোমার প্রতিপালক থেকে আগত সত্য, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, হয়তো তারা সৎপথে চলবে।` (সুরা সাজদা, ৩)। মাক্কী সুরা।
এই হলো প্রকৃত ঘটনা। মুহাম্মদ (সাঃ) কোরাইশদের পূজনীয় দেবদেবীদের কোন তাচ্ছিল্য করেননি। পূর্বপুরুষদেরকেও অসম্মান করেননি। কোরআনে দেবদেবীদেরকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি তা অনুসরণ করতে বাধ্য। কোরাইশদের পূর্বপুরুষ তাঁরও পূর্বপুরুষ। কোরাইশদের পূর্বপুরুষ হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং হযরত ইসমাইল (আঃ) (সূত্রঃ সীরাত ইবনে হিশাম, প্রথম অধ্যায়, প্রথম অনুচ্ছেদ)। আরবের খ্রিস্টান ও ইহুদী সম্প্রদায়ও নিজেদেরকে ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-এর অনুসারী বলে বিশ্বাস করত। IBN HISHAM’S NOTES অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘All the Arabs are descended from Ismail and Qahtan. Some of the people of the Yaman claim that Qahtan was a son of Ismail and so according to them Ismail is the father of all the Arabs (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 691)। পবিত্র কোরআনে উভয়কেই সৎপথপ্রাপ্ত ও মনোনীত (নবী হিসেবে) বলে উল্লেখ করা হয়েছে (সুরা আনআম ৭৫, ৮৩-৮৪)। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে উল্লেখ করা হয়েছে কিতাবপ্রাপ্ত হিসেবে (সুরা নাযম, ৩৬-৩৭, সুরা আ’লা, ১৬-১৯)। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁদের পিতৃপুরুষ, বংশধর ও ভ্রাতৃবৃন্দের কেউ কেউ আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত ও সরলপথে পরিচালিত (সুরা আন’আম, ৮৬-৮৭)। মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বলা হয়েছে তাঁদের পথের অনুসরণ করতে (সুরা আন’আম, ৯০)। তাঁকে বলতে বলা হয়েছে, ‘আমার প্রতিপালক তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।` (সুরা আন’আম, ১৬১)। মুহাম্মদ (সাঃ) ঠিক তাই করেছেন। তিনি চাচা আবু তালিবকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছেন এভাবে, ‘O uncle, this is the religion of Allah, his angels, and His Messengers, and the religion of our father Ibrahim. Allah has sent me as a Messenger to (His) servants, and you, my uncle, most deserve that I should advise you and call you to guidance, and you are the most worthy to respond to me and help me. `(সীরাত ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ The Mission and Da’wah to Islam Until The Emigration, p. 41)। তাহলে তিনি পূর্বপুরুষদের অসম্মান করলেন কোথায়?
আরও মজার কথা হলো, ইবরাহীমের ধর্ম থেকে কারা বিচ্যুত হয়েছে, কারা নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করেছে, কারা কাবাগৃহকে কেন্দ্র করে মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, তা ইবনে ইসহাকের সীরাতেই উল্লেখ আছে। এটা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বের ঘটনা। ইয়ামেনের শাসক তুবা’ন আসা’দ (তুব্বা নামে পরিচিত)-কে দুইজন ইহুদী পণ্ডিত (রাবী) কাবাঘর সম্পর্কে বলছেন, ‘By Allah it is the House of our father Ibrahim and it is as we told you but its people interposed between us and the House by the idols they stationed around it and the blood they shed there. They are impure people associating others with Allah.`(সীরাত ইবনে হিশাম, প্রথম অধ্যায়, পৃঃ ৮)।
এ থেকেই বোঝা যায়, কোরাইশরা ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে পৌত্তলিকতায় ফিরে যায় এবং নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে সে বিরোধ আরও বৃদ্ধি পায়। কারণ, একেক গোত্র একেক দেবদেবীর পূজা করত। তুচ্ছ কারণে নিজেদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাধাত। মুহাম্মদ (সাঃ) চেয়েছিলেন কোরাইশ পৌত্তলিক, খ্রিস্টান ও ইহুদীদেরকে কমন পূর্বপুরুষ ইবরাহীমের ধর্মে ফেরত আনতে। তাতে আরববাসীর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য হত (যা পরে হয়েছে), কিন্তু কোরাইশদের কাবাকেন্দ্রিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হত। কাবার আধিপত্যের কারণে অ-কোরাইশদের উপর তাদের যে প্রভুত্ব, তা-ও ক্ষুণ্ন হত। তাই আসল কথা না বলে তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছে। মুহাম্মদ (সাঃ) আবু তালিবকে যে ভাষায় দাওয়াত দিয়েছেন, অন্য কোরাইশদেরও সে ভাষায় দাওয়াত দিয়েছেন। তাঁর দাওয়াতের মধ্যে খারাপ কিছু থাকলে কোরাইশদের একটা অংশ (আবু বকর, ওসমান, হামজা, উমর) তা গ্রহণ করত না। আবু তালিবও এটা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁর ভাতিজাকে শৈশব থেকেই চিনতেন। এ কারণেই কোরাইশগণ প্রথমবার যখন তাঁর কাছে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন তিনি মুচকি হেসে বিনীত কথায় তাদের বিদায় দেন (সীরাত ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ The Mission and Da’wah to Islam Until The Emigration, p. 43)।
এখানে আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। এই কোরাইশরা মূর্তিপূজা করত, কিন্তু পরকাল মানত না। যে ধর্মে পরকাল নাই, সে ধর্মে থাকে শুধু ইহকাল। কাজেই ‘যা পারো, ভোগ করে নাও`। জাগতিক লাভের জন্য লাত, মানাত, উজ্জার পূজা করো আর জাগতিক ক্ষতির জন্য কন্যাসন্তান জীবন্ত কবর দাও! কারণ, কন্যা সন্তানে কোন লাভ নাই। মূর্তির আল্লাহ্কে পূজা করো, নিরাকার আল্লাহ্কে জানপ্রাণ দিয়ে ঠেকাও। প্রথমটাতে লাভ, দ্বিতীয়টাতে ক্ষতি। প্রথমটাতে পূজারীর প্রসাদ-নৈবেদ্য-চাঁদা সবই পাওয়া যায়, বাণিজ্য করা যায়। দ্বিতীয়টিতে সবই হারাতে হয়। কারণ কোরআনের আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন, ‘আমি তাদের নিকট থেকে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমার আহার্য যোগাবে।। আল্লাহ্ই তো রিযিক দান করেন এবং তিনি প্রবল পরাক্রান্ত।` (সুরা যারিয়াত, ৫৭-৫৮)। আরও বলেছেন, ‘শুধু এক আল্লাহ্র কথা বলা হলে যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর বিতৃষ্ণায় সংকুচিত হয় এবং আল্লাহ্র পরিবর্তে উপাস্যগুলির উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়।` (সুরা যুমার, ৪৫)।
মক্কার পৌত্তলিকরা মূর্তিপূজার নামে কি করত, তা কোরআনের এই বর্ণনায় পরিষ্কার হয়ে যায়ঃ
‘আল্লাহ্ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্য থেকে তারা আল্লাহ্র জন্য এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘এটা আল্লাহ্র জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য`।` (সুরা আন’আম, ১৩৬)। ‘তারা যা মীমাংসা করে তা নিকৃষ্ট। এইরূপে তাদের দেবতারা বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করেছে তাদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য।` (সুরা আন’আম, ১৩৬-১৩৭)।
আজকের দিনেও আমরা দেখি যখন কোন নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হয়, তখন সে আবিষ্কারের একটা সন-তারিখ উল্লেখ থাকে। আরও উল্লেখ থাকে যে, উক্ত সময়ের পূর্বে এটা মানুষের অজানা ছিল। প্রত্নতত্ত্ব থেকে ফলিত বিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞান সবখানেই এরকম উদাহরণ পাওয়া যাবে। এখন কারও যদি সে আবিষ্কার পছন্দ না হয়, তাহলে সে অজুহাত দাঁড় করাতেই পারে যে তার পূর্বপুরুষকে অপমান করা হয়েছে। কারণ বলা হয়েছে, অমুক সময়ের পূর্বে এটা মানুষের অজানা ছিল। সেই ‘মানুষের` মধ্যে তো তার পূর্বপুরুষরাও পড়ে! আর যারা স্বার্থবুদ্ধি দ্বারা তাড়িত নয়, তারা নতুন আবিষ্কারের দিকেই মনোযোগ দেবে। বিশেষ করে এটা যদি কোন নতুন অর্থনৈতিক বা সামাজিক মতবাদ হয়, যা ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে যায়, তাহলে তাকে ক্ষতিগ্রস্তরা সমর্থন দেবে আর আগের ব্যবস্থার বেনিফিসিয়ারীরা জানপ্রাণ দিয়ে প্রতিরোধ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এ কাজে লোকজনকে দলে ভেড়ানোর জন্য নানা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করাবে, এটাও স্বাভাবিক। মুহাম্মদ (সাঃ) যদি বলেন, ‘এটা তোমার প্রতিপালক থেকে আগত সত্য`, তখন তারা বলবে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষকে অপমান করা হয়েছে। বলা হয়েছে তারা মিথ্যার উপরে ছিল।`
তাছাড়া, কারও কাছে পূর্বপুরুষের ধারণা মিথ্যা মনে হলে তিনি যদি তা প্রকাশ করেন আর তার প্রতিক্রিয়ায় কোরাইশদের এই বর্বর আচরণ ও নির্যাতনকে যদি আপনি সমর্থন করেন, তাহলে ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২`-এ ভবঘুরে সাহেবের নীচের উক্তি সম্পর্কে কি বলবেন?
‘তার মানে গভীর রাতে উম্মে হানির সাথে তার গোপন অভিসারকে চাপা দেয়ার জন্য তিনি এমন এক উদ্ভট কিচ্ছা তৈরী করেন যার জের গত ১৪০০ বছর ধরে মুসলমানরা অন্ধের মত বয়ে চলেছে প্রশ্ন ছাড়াই।`
এখানে তো পূর্বপুরুষকেও আক্রমণ করা হয়েছে। তাহলে কি ভবঘুরে সাহেবের উপরেও কোরাইশদের মত ওই রকম আচরণ সমর্থন করবেন? রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর ‘বিসর্জন` ও ‘অচলায়তন` নাটকে মূর্তিপূজাকে তীব্রভাষায় আক্রমণ করেছেন, ব্যঙ্গোক্তি করেছেন। মূর্তিপূজাকেন্দ্রিক ধর্মকে ‘অচলায়তন` বলেছেন। সেই অচলায়তন থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য একজন ত্রাণকর্তাও হাজির করেছেন। এখন রবীন্দ্রনাথ নাই। কিন্তু তাঁর এই নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে কেউ যদি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাতে আক্রান্ত হয়, তাকে কি সমর্থন করবেন? রবীন্দ্রনাথ মূর্তিপূজা সম্পর্কে আরও বলেছেন—
‘মূর্তিপূজা সেই সময়েরই—যখন পাঁচসাত ক্রোশ দূরের লোক বিদেশী, পরদেশের লোক ম্লেচ্ছ, পর-সমাজের লোক অশুচি এবং নিজের দলের লোক ছাড়া আর সকলেই অনধিকারী—এক কথায় যখন ধর্ম আপন ঈশ্বরকে সংকুচিত করিয়া সমস্ত মানুষকে সংকুচিত করিয়াছে এবং জগতে যাহা সকলের চেয়ে বিশ্বজনীন তাহাকে সকলের গ্রাম্য করিয়া ফেলিয়াছে।` (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সঞ্চয়` গ্রন্থের ‘ধর্মের নবযুগ` প্রবন্ধ)।
আপনি কোরাইশদের আরোপিত অবরোধ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মক্কা জীবনে (৬১০-৬২২) এটাই হলো কুরাইশদের নেয়া “মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারের” বিরুদ্ধে কঠোরাবস্থা। অর্থাৎ অবরোধের আগে পর্যন্ত কোরাইশরা তেমন কিছুই করেনি। ‘কি করেনি`, তার কিছু নমুনা দেখুনঃ
কোরাইশদের পক্ষ থেকে আল-মুগীরা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে কিছু প্রস্তাব নিয়ে যান এবং কিছু অলৌকিক জিনিস দাবী করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরেরদিন আবু জাহেল কোরাইশদের সম্মতিক্রমে এবং তাদের উপস্থিতিতে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কাবাগৃহে নামাযরত অবস্থায় মাথায় পাথর মেরে হত্যা করতে যায়। কিন্তু একটি ভয়ংকর দৃশ্য দেখে পিছিয়ে আসে। এ ঘটনা অবরোধের পূর্বের। (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 135)। আবু জাহেল যে ভয়ংকর দৃশ্য দেখে, তা বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে ‘অপরাধী মনের হেলুসিনেশন`বলে ধরে নিতে পারেন (মনোবিজ্ঞান তাতে সাপোর্ট দেবে)। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করার এ ঘটনা অস্বীকার করার যুক্তি কোথায়? প্রতিপক্ষ সকল কোরাইশ এ ঘটনার সাক্ষী। কোরআনেও উল্লেখ আছে, ‘স্মরণ কর, কাফেররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা করার জন্য অথবা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহ্ও কৌশল করেন; আর আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ট কৌশলী।` (সুরা আনফাল, ৩০)। ‘যে কেহ আল্লাহ্র মসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা প্রদান করে এবং তাদের বিনাশ সাধনে প্রয়াসী হয়, তার অপেক্ষা বড় জালিম কে হতে পারে? অথচ ভয়-বিহ্বল না হয়ে তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিল না।` (সুরা বাকারা, ১১৪)।
উমর বিন খাত্তাব ছিলেন ইসলামের একজন ভয়ংকর শত্রু। কেবলমাত্র ইসলাম গ্রহণের কারণে তাঁর ক্রীতদাসীকে অমানুষিক নির্যাতন করেন। মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আবিসিনিয়ায় হিযরত তাঁকে ভয়ানক ক্রুদ্ধ করে তোলে। তিনি সবকিছুর জন্য মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দায়ী করেন এবং তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে মুক্ত তরবারী হাতে বেরিয়ে পড়েন। মাঝপথে সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী তাঁর বোন ও ভগ্নীপতিকেও প্রহার করে গুরুতর জখম করেন। পরবর্তীতে বোনের হাত থেকে কোরআনের কিছু আয়াত (সুরা তা-হা) পড়ে তাঁর মধ্যে ভাবান্তর ঘটে। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 156-157)। এ ঘটনাও অবরোধের পূর্বের। ফৌজদারী আইনে হত্যা ও হত্যার চেষ্টা (Attempt to murder) সমান অপরাধ। উমর (রাঃ) মাঝপথে ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে এ ঘটনা Skip করার কোন সুযোগ নাই।
‘সুরা লাহাব` নাযিল হওয়ার পর আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলা পাথর দিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাথা ফাটিয়ে দিতে যায়। কিন্তু দৃষ্টিবিভ্রম হওয়ার কারণে তাঁকে খুঁজে না পেয়ে ফেরত আসে। এ ঘটনাও অবরোধের পূর্বের। আবু বকর (রাঃ) এ ঘটনার সাক্ষী। (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 161-162)। সুরা আনফাল, ৩০ নম্বর আয়াতে এ সকল ঘটনার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা উপরে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর একজন সাহাবা আবদুল্লাহ্ বিন মাসুদকে কাবাঘরের সামনে কোরআন পাঠ করার কারণে দৈহিক নির্যাতন করে মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করে দেয়া হয়। তিনি এ অবস্থায় যতক্ষণ সম্ভব কোরআন পাঠ করেন। তারপর মুখে জখম নিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট ফেরত আসেন (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 141-142)। এছাড়া হাবসী ক্রীতদাস বেলালসহ দরিদ্রশ্রেণীর অসংখ্য মুসলমানকে অকথ্য নির্যাতন করা হয়। যার কিছু বর্ণনা আপনার লেখাতেও আছে। কোরআন থেকে জানা যাচ্ছে, ‘তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এই কারণে যে, তারা বিশ্বাস করত পরাক্রমশালী ও প্রশংসার্হ আল্লাহ্র উপর।` (সুরা বুরুজ, ৮)। ‘যারা বিশ্বাসী নরনারীকে বিপদাপন্ন করেছে এবং পরে তাওবা করে নাই, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আছে দহন যন্ত্রণা।` (সুরা বুরুজ, ১০)।
আবু বকর (রাঃ) যখন কাবাগৃহের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন এক উচ্ছৃঙ্খল কোরাইশ যুবক তাঁর মাথায় মাটি নিক্ষেপ করে। আবু বকর (রাঃ) তিনবার এই কথা উচ্চারণ করেন, ‘হে প্রভু, আর কতদিন এই কষ্ট পেতে থাকব?` (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 171-172)।
কোরাইশরা নিজেদের জন্য হজ্জ্বের নিয়ম পরিবর্তন করে নিয়েছিল এবং বহিরাগতদে`র আনীত খাবার ও পোশাক কাবাঘরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। তাই তাদেরকে উলঙ্গ হয়ে কাবা প্রদক্ষিণ করতে হত। কোরাইশদের নিজেদের জন্য আরাফায় গমন বাতিল করা হয়। এই নিয়মকে তারা বলত ‘হাম`। এই ঘটনা ঘটে আবদুল মুত্তালিবের সময়কালে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময় পুনরায় সকলের জন্য একই নিয়ম করা হয় (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 87-88)। কোরআনেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে (সুরা আরাফ, ২৮,৩২-৩৩)। সুরা মায়িদা ১০৩ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘বাহীরা, সাইবা, ওয়াসীলা ও হাম আল্লাহ্ স্থির করেননি; কিন্তু কাফেররা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করে না।`
আপনি লিখেছেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি কি? “মুহাম্মাদের শিক্ষার ফলের’ কি অবস্থা? প্রকাশ্যে অথবা যে কোন মুসলিম সামাজিক অনুষ্ঠানে ইসলামের বা মুহাম্মদের বিপক্ষে কোন কথা বললে তার কি পরিণাম হয় তা আমরা সবাই জানি (আমাদের দেশে তসলিমা, হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ শরীফ ইত্যাদি)। মক্কা শরীফ তো অনেক দুরের কথা, মুসলিম জাহানের যে কোন মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে তা বলার চেষ্টা কেউ করলে সে “জান” নিয়ে ফিরে আসতে পারবে না। Terry Jones কুরান পোড়ালো আমেরিকায় আর আফগানিস্থানে খুন হলো “নিরীহ ” ২০ জন মানুষ। এটা মুহাম্মদের শিক্ষা – তার জীবনী পড়লেই যে কেউ তা বুঝতে পারবে। তারপর প্রশ্ন রেখেছেন, “কোরাইশরা বেশী সহনশীল নাকি মুহাম্মদ ও তার দল (মুসলমান) বেশী সহনশীল’?
গোলাপ সাহেব, আপনারা কোন্ দেশে বাস করেন, আমি জানি না। এই বাংলাদেশেই বায়তুল মোকাররম মসজিদের উল্টোদিকে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস। সেখানে অফিসের সামনে নিয়মিত জনসভা হয়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হয়। বায়তুল মোকাররমের আরও কাছে, সচিবালয় ও জিপিওর মধ্যবর্তী রাস্তায় এবং সোনালী ব্যাংকের (রমনা শাখা) উল্টোদিকের ফাঁকা জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোর যে মিটিং-মিছিল হয়, সেখানে ইসলামী সরকার ও শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে শ্লোগান দেয়া হয়। আমার শোনার সুযোগ হয়েছে, আপনার কি কখনও হয়নি? এই বাংলাদেশেই ‘লালশালু` লেখা হয়েছে, ‘হুজুর কেবলা` লেখা হয়েছে, আরজ আলী মাতব্বর তাঁর রচনাগুলি লিখেছেন। এই লেখকদের (সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ্, আবুল মনসুর আহমদ, আরজ আলী মাতব্বর) ‘জানের` কোন সমস্যা হয়নি। তসলিমা নাসরিন স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়ে ‘যায়যায়দিন` পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ইসলাম ও মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আক্রমণ করে কলাম লিখেছেন। একদিন-দুদিন নয়, মাসের পর মাস ধরে। তাঁর চাকরীও যায়নি, ‘জান`ও যায়নি। সেই কলাম গ্রন্থাকারে (নির্বাচিত কলাম) ছাপাও হয়েছে। আহমদ শরীফ ধর্মের বিরুদ্ধে বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ তাঁর ‘জান` নেয়নি। আমার অন্য একটি মন্তব্যে আহমদ শরীফ, তসলিমা নাসরিন ও হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে কিছু তথ্য আছে। আশা করি পড়েছেন। সেখানে লিখেছি, মৌলবাদীরা কখনও তসলিমাকে ‘জানে` মারবে না। কারণ, তসলিমা তাদেরই লোক। কলকাতার প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এক পুরুষ লেখক হুমায়ুন আজাদের লেখা একটি বই ‘নারী` আমি পড়েছি। সেখানেও মেয়েদের ওপর ধর্মের শোষণ এবং শাসনের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ আছে। তিনি এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সব ধর্মের কথাই বলেছেন। এই বইটির বিরুদ্ধে কিন্তু মৌলবাদীরা আদৌ সোচ্চার হননি। তাহলে কি বলতে হয় হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে মৌলবাদীদের আঁতাত আছে? তসলিমার বইকে হাতিয়ার করেছেন হিন্দু মৌলবাদীরা। আমি মনে করি, পৃথিবীর সমস্ত মৌলবাদীরাও পরস্পর পরস্পরের বন্ধু—সেখানে হিন্দু মহাসভা আর জামাত-ই-ইসলাম ভাই-ভাই। তাই শঙ্কর গুহ নিয়োগীকে খুন করা হবে চিরকালই, কিন্তু হুমকি দিলেও তসলিমাকে কেউ হত্যা করবেন না। ভয় নেই।` (সূত্রঃ ‘তসলিমার লেখালেখি নারী প্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে`, সুমন চট্টোপাধ্যায়,‘তসলিমা নাসরিনের স্বরূপ সন্ধানে`, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, পৃঃ ৩৩)।
কবি শামসুর রাহমান আজানকে ‘বেশ্যার আহ্বান` হিসাবে উল্লেখ করে নব্বইয়ের মাঝামাঝি একটি কবিতা লেখেন। কিছু নামসর্বস্ব সংগঠন তার প্রতিবাদও জানায়। কিন্তু কেউ তাঁর ‘জান` নিতে আসেনি। তিনি আরও দেড় দশক বেঁচে থেকে সাহিত্যচর্চা করেছেন। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতিত্ব করেছেন। তারপর দেশের এই প্রধান কবি চলতি বছর স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন।
বাকি থাকলেন হুমায়ুন আজাদ। তিনিও শুরুতে আহমদ শরীফ ও তসলিমা নাসরিনের জুতায় পা রেখে হেঁটেছেন। ধর্মব্যবসা ও প্রকৃত ইসলামকে এক কাতারে ফেলে আক্রমণ করেছেন। ফলে ধর্মব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে। জনসমর্থন পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তিনিও নিরাপদ থেকেছেন। তাঁর ‘জান` নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে তখনই, যখন তিনি মূল জায়গায় হাত দিয়েছেন। যখন তিনি সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মব্যবসা ও জঙ্গীবাদের শিকড় ধরে টান দিয়েছেন। যখন তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুখোশ উন্মোচন করেছেন। এ কাজ তিনি করেছেন ‘পাক সার জমিন শাদ বাদ` গ্রন্থে। গ্রন্থের শুরুতেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, ইসলাম দুই প্রকারঃ (১) প্রগতিশীল ও মানবিক এবং (২) প্রতিক্রিয়াশীল ও মানবতাবিরোধী। তারপর দ্বিতীয়টির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এটি একটি সত্য উচ্চারণ। কোথাও কোন অস্পষ্টতা নাই। বাংলাদেশের একটি বিশেষ সময়ের যে ঘটনাপ্রবাহ চিত্রায়ন করেছেন, সবই সত্য। উপন্যাসের যে নায়ক (আসলে খলনায়ক), তাকে দেখিয়েছেন দ্বিতীয়টির ধারক-বাহকরূপে। সবচেয়ে বড় কথা, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ্র পর এই প্রথম একজন কথাসাহিত্যিক তাঁর শক্ত অবস্থান থেকে কারও তোয়াক্কা না করেই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠিকে শনাক্ত করেছেন, সরলপ্রাণ ও ধর্মভীরু জনগোষ্ঠি থেকে আলাদা করে ফেলেছেন। অনুমাননির্ভর আনাড়ি কলম দিয়ে নয়, সঠিক তথ্যউপাত্ত দিয়ে।
ফল যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে লিখেছেন, তাদের হাতেই আক্রান্ত হয়েছেন। তারা চিহ্নিত। তারা ধরাও পড়েছে। ফলে বিষয়টি প্রমাণিত। তিনি প্রকৃত ইসলাম অনুসারীদের হাতে আক্রান্ত হননি। তাতে কাজের কাজ যা হয়েছে, তা হলো হুমায়ুন আজাদ জনসমর্থন পেয়েছেন। যা আগের দু’জন পাননি। হুমায়ুন আজাদও আগে পাননি। এই জনসমর্থন ছিল অনিবার্য। ১৯৭১ সালে বাঙালি যাদের হাতে নির্যাতিত ও নিহত হয়েছে, হুমায়ুন আজাদ তাদের বিরুদ্ধেই কলম ধরেছেন। বাঙালি তাঁকে সমর্থন দেবে এটাই স্বাভাবিক। একই কারণে বাঙালি ২০০৫ সালের বোমা হামলাকারী জঙ্গীদের যেখানে পেয়েছে, ধরিয়ে দিয়েছে। একই কারণে বাঙালি ধর্মব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয় না। এই বাঙালিই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় প্রার্থনায় রোজা রেখেছে, নফল নামায পড়েছে। যারা দখলদার পাকবাহিনীর সাথে কোলাবরেট করেছে, তারা ছিল সংখ্যায় নগণ্য। ১৯৭১ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের তৎকালীন খতিব জনাব আমিমুল এহসান, যাঁর তৈরি নামায-রোজার সময়সূচি ও ক্যালেণ্ডার আজও অনুসরণ করা হয়, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধামাত্রই তা জানেন।
মজার কথা হলো, স্বাধীনতাবিরোধী কোন ব্যক্তিকে যখনই প্রশ্ন করা হয় পবিত্র কোরআনের নিম্নবর্ণিত আয়াতের আলোকে ১৯৭১ সালের কোন্ কাজটা আল্লাহ্র হুকুম (আপনার ভাষায় ‘মুহাম্মদের শিক্ষা`) অনুযায়ী হয়েছে—যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তাদের কাজ নাকি যারা পাকবাহিনীর সহায়তা করেছে, তাদের কাজ, তারা কোন সদুত্তর দিতে পারে না। অধিকাংশই বিনা নোটিশে রেগে যায়, কায়দা করে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় কিংবা বলে যে, মাদ্রাসার সার্টিফিকেট ছাড়া কোরআন নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। কোরআনের আয়াতটি হলোঃ
‘তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ্র পথে সেই সকল অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করবে না, যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এই জনপদ, যার অধিবাসী জালিম, তা থেকে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট হতে কাউকেও আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট হতে কাউকেও আমাদের সহায় কর।` (সুরা নিসা, ৭৫)।
এই সব লোকদের যখন বিনয়ের সাথে জানানো হয় যে, তাদের নেতারাও তো মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেননি, তখন তাদের মুখে আর কোন জবাব থাকে না। পরে একসময় প্রশ্নকারীদেরকেই কাফের, মুশরিক কিংবা মুরতাদ বলে ফতোয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
“কোরাইশরা বেশী সহনশীল নাকি মুহাম্মদ ও তার দল (মুসলমান) বেশী সহনশীল’—এ প্রশ্নের জবাব আশা করি ইতোমধ্যেই পেয়েছেন। এখন সহনশীলতার আরও কিছু নমুনা দেখাই। আজ পর্যন্ত কোন মুসলিম বাইবেল, ত্রিপিটক, বেদ, জেন্দাবেস্তা পোড়াতে যায়নি। আজ পর্যন্ত কোন মুসলিম যিশু খ্রিস্ট, শ্রীকৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ কিংবা মুসা (আঃ)-এর কার্টুন আঁকতে যায়নি। আজ পর্যন্ত কোন মুসলিম অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বই লিখতে যায়নি। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে এগুলো সবই করা হয়েছে। কোরআন পোড়ানো হয়েছে, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কার্টুন আঁকা হয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে বই লেখা হয়েছে। ১৮০০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই ইসলামের বিরুদ্ধে ষাট হাজার বই লেখা হয়েছে। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিদিন একটির বেশি বই লেখা হয়েছে। আমেরিকায় কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে আফগানিস্তানে ২০ জন মানুষ খুন হয়েছে, আপনি লিখেছেন ‘এটা মুহাম্মদের শিক্ষা`। আপনার নিজের ‘সময়ের সূত্র ও পর্যায়ক্রম` থেকে আপনি নিজেই সরে গেছেন। ইসলাম বাংলাদেশে কখন এসেছে আর আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে কখন গেছে, তা কি জানেন? আফগান ফেরত জেএমবি’ ‘মুজাহিদ`দের বাংলাদেশের মানুষ পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় কেন, শায়খ আবদুর রহমান গংদেরকে ফাঁসি দেয় কেন, ভেবে দেখেছেন কি?এখানে দুই রকম ইসলাম পাওয়া যাচ্ছে কেন?
এই তো সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রেমণ্ড ডেভিস দু’জন পাকিস্তানীকে হত্যা করল, কিন্তু পাকিস্তান তার বিচার করতে পারল না। রুশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেল, ডেভিস আল-কায়দাকে পারমাণবিক উপাদান সরবরাহ করত (সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১১)। আফগানিস্তানের তালেবান আর বিন লাদেনের আল-কায়দা কাদের সৃষ্টি এটা কি এখন আর কারও অজানা? জ্ঞানপাপী ছাড়া কেউ এদেরকে ‘ইসলামের উদাহরণ` মনে করে না। সাম্রাজ্যবাদের একচোখা বিচারে মিয়ানমারের সামরিক শাসন ‘খারাপ` আর দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসন ‘ভাল`, লিবিয়ার একনায়কতন্ত্র ‘খারাপ` আর কুয়েতের একনায়কতন্ত্র ‘ভাল`, ইসরাইলীদের ফিলিস্তিনী হত্যা ‘ভাল` আর ফিলিস্তিনীদের আত্মরক্ষা করা ‘সন্ত্রাস`! একচোখা সাম্রাজ্যবাদ এমন বলতে পারে, তাদের স্বার্থ আছে; কিন্তু আমরা মুক্তমনারা তা বলতে যাব কেন?
সহনশীলতার আরও উদাহরণ দিচ্ছি। কোন মুসলিম দেশের গ্র্যাণ্ড মুফতি কিংবা জাতীয় মসজিদের খতিব কখনও ফতোয়া দিতে যান না যে, বিজ্ঞানের অমুক গবেষণা করা যাবে আর অমুক গবেষণা করা যাবে না। ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে`—এ কথা বলার কারণে কোন বিজ্ঞানীকে মৃত্যুদণ্ডও দিতে যান না। কিন্তু অন্য ধর্ম কি করেছে, তা বিজ্ঞানীদের লেখা থেকেই পড়ুনঃ
Stephen Hawking ১৯৮১ সালে জেসুইটদের ভ্যাটিক্যানে সৃষ্টিতত্ত্বের উপর আয়োজিত এক সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলন শেষে পোপ আলোচকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পোপ তখন বলেন, বৃহৎ বিস্ফোরণের (Big Bang) পর মহাবিশ্বের বিবর্তন নিয়ে গবেষণায় কোন দোষ নাই। কিন্তু বৃহৎ বিস্ফোরণ সম্পর্কে কোন গবেষণা করা উচিৎ হবে না। কারণ সেটা ছিল সৃষ্টির মুহূর্ত এবং সৃষ্টিটা ঈশ্বরের কর্ম! Stephen Hawking এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক বিষয়ে আইন বানাতে গিয়ে ক্যাথলিক চার্চ গ্যালিলিওর ব্যাপারে একটা বিশ্রী ভুল করেছিল। তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন, সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।` ‘গ্যালিলিওর সঙ্গে বেশ একাত্মতা বোধ করি। কিন্তু আমার পরিণতি তাঁর মত হোক এরকম কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।`(সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-8, The Origin and Fate of the Universe)।
http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।
কালের একটা আরম্ভ রয়েছে, এ ধারণা অনেকেই পছন্দ করেন না। কারণ এতে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের গন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ক্যাথলিক চার্চ এই বৃহৎ বিস্ফোরণ প্রতিরূপ গ্রহণ করে এবং ১৯৫১ সালে সরকারীভাবে ঘোষণা করে য
@গোলাপ, দুঃখিত। শেষের দিকে কিছু অংশ সম্পূর্ণ যায়নি। আবার পোস্ট করলাম।
কালের একটা আরম্ভ রয়েছে, এ ধারণা অনেকেই পছন্দ করেন না। কারণ এতে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের গন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ক্যাথলিক চার্চ এই বৃহৎ বিস্ফোরণ প্রতিরূপ গ্রহণ করে এবং ১৯৫১ সালে সরকারীভাবে ঘোষণা করে যে, এর সঙ্গে বাইবেলের সঙ্গতি রয়েছে। (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-3, The Expanding Universe)।
খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমী (Ptolemy) মহাবিশ্বের একটি প্রতিরূপ তৈরি করেন, যেখানে পৃথিবী ছিল কেন্দ্রে এবং চন্দ্র, সূর্য, তারকা ও অন্যান্য গ্রহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করত। খ্রিস্টান চার্চ এই প্রতিরূপ গ্রহণ করে এই যুক্তিতে যে তাদের ধর্মশাস্ত্রের সাথে তার মিল ছিল। (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-1, Our Picture of the Universe)।
এবার দেখুন ইতিহাস কি বলছেঃ
‘খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের জেরুজালেম অবরোধকালে ছোট ছোট শিশুদের মস্তক দেওয়ালের সাথে আঘাত করে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়; শিশুদেরকে অট্টালিকার ফোকরের উপর নিক্ষেপ করা হয়; মানুষকে আগুনে ঝলসানো হয়; কোন কোন লোকের পেট চিরে দেখা হয় তারা সোনা গিলেছে কি-না; ইহুদীদের তাদের ধর্মমন্দিরে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাদের পুড়িয়ে মারা হয়। এভাবে প্রায় ৭০,০০০ লোককে হত্যা করা হয় এবং পোপের প্রতিনিধিকে এই বিজয়োৎসবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়` (সূত্রঃ History of the Intellectual Development of Europe, ২য় খন্ড, পৃঃ ২২)। ‘কিন্তু গাজী সালাউদ্দিন যখন এ শহর পুনর্দখল করেন, তখন তিনি সকল খ্রিস্টানকে মুক্ত করেন, তাদেরকে অর্থ ও খাবার দেন এবং নিরাপদে প্রস্থান করার অনুমতি দেন।`(সূত্রঃ দি শর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসিনস, ম্যাকমিলান, পৃঃ ৩৫৬)।
ইউরোপের প্রথম মানমন্দির আরবেরা নির্মাণ করেছিলেন। জিরাণ্ডা বা সেভিলের বুরুজ বিখ্যাত গাণিতিক জাবির ইবনে আফিয়ার নির্দেশনায় ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল আকাশসমূহ পর্যবেক্ষণের জন্য। খ্রিস্টানরা স্পেন পুনর্দখলের পর একে গির্জার ঘণ্টাঘরে পরিণত করে। একে দিয়ে কি করা হয়, তা তারা জানত না। (সূত্রঃ Sir Syed Ameer Ali-এর ‘The Spirit of Islam, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, ১৯৯৮, পৃঃ ৪৯০)।
‘খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে পৃথিবীর এই বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চলে (স্পেন) বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ যে সহনশীলতা প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আধুনিক জগৎ আদৌ সেরূপ কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে না। খ্রিস্টান, ইহুদী ও মুসলমান একই ভাষায় কথা বলতেন, একই গান গাইতেন এবং একই সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। যে সব প্রতিবন্ধকতা জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার ভাব আনয়ন করত তা মুছে দেয়া হয়েছিল। সকলে এক ঐকমত্যে একটি সাধারণ সভ্যতার উজ্জীবনে কাজ করতেন। কর্ডোভার মসজিদসমূহ দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক অনুশীলনের সক্রিয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, যেখানে সমবেত ছাত্রদের সংখ্যা হাজারের মাধ্যমে গণনা করা হত। (সূত্রঃ রেনান, এভের্রোজ এট এভের্রোইজম, পৃঃ ৪)।
আপনি লিখেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর আত্মীয়বর্গের উপর আরোপিত বয়কট আবার কোরাইশরাই উঠিয়ে নিয়েছিল। আমার মনে হয় কথাটি অতিকথন হয়ে যাবে। কারণ, কোরাইশদের মধ্যে বিভক্তি ছিল। মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি ( হিশাম বিন আমর, জুহায়ের বিন আবু উমাইয়া, মু’তিম বিন আদি, আবুল বখতারী ও জামাআ বিন আল-আসওয়াদ) এই উদ্যোগ গ্রহণ করে (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 172-173)। সেখানেও ঘটনা আছে। যা নিচের একটি অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছি। এ ঘটনা না ঘটলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হত।
আপনি লিখেছেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তার পরিবারের একমাত্র চাচা হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, তার পোষ্য ৯ বছর বয়েসী আলী ইবনে আবু তালিব এবং স্ত্রী খাদিজা ছাড়া তার আর কোন পরিবার সদস্যই তার কথা বিশ্বাস তো করেনই নাই, বরং সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলেন।` একদম খাঁটি কথা। আমার আগের দুটি মন্তব্যে আমিও তা উল্লেখ করেছি। কেন তারা বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তা-ও বলেছি। পৃথিবীর যেখানেই এবং যখনই আদর্শের সংঘাত হয়েছে, সেখানেই রক্তসম্পর্কের মধ্যেও সংঘাত হয়েছে। সীরাত গ্রন্থগুলোতে কোরাইশদের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। কোরাইশরা বলেছে, মুহাম্মদ (সাঃ) রক্তসম্পর্কের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন। আর খ্রিস্টধর্মে দেখা যাচ্ছে যিশু খ্রিস্ট স্বয়ং বলছেন, ‘ভেবো না যে আমি জগতে শান্তি প্রেরণের জন্য এসেছি, আমি শান্তি প্রেরণের জন্য আসিনি, তরবারী প্রেরণের জন্য এসেছি। কেননা আমি ছেলেকে পিতার বিরুদ্ধে, কন্যাকে মায়ের বিরুদ্ধে এবং পুত্রবধুকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে নিয়েজিত করার জন্যই এসেছি (সূত্রঃ গসপেল অব ম্যাথুস, ১০, ৩৪, ৩৫)। একই কথা আছে, শ্রীমদ্ভাগবৎ গীতায়, অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উপদেশবাণীতে। একই কথা আছে মার্কস ও এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতে। পার্থক্য শুধু এই, বিরুদ্ধাচরণকারী আত্মীয়বর্গকে ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে ‘ধর্মের শত্রু`, মার্কসবাদে বলা হয়েছে ‘শ্রেণীশত্রু` আর মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতক`, ‘রাজাকার`, ‘মীর জাফর`। মীর জাফর কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের এই বিশ্বাসঘাতক কি সিরাজ-উদ-দৌলাহ্র আত্মীয় ছিলেন না? টিপু সুলতানের জীবনী পড়লে, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস পড়লে দেখবেন রক্তসম্পর্কের একদল হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা আর অন্যদল হয়েছে বিশ্বাসঘাতক। যারা বিশ্বাসঘাতক, তারা অর্থ ও ক্ষমতার মোহে অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়েছে।
আরও লিখেছেন, ‘রাতের অন্ধকারে বাণিজ্য ফেরৎ কুরাইশ কাফেলার উপর হামলা করে তাদের মালামাল লুন্ঠন, আরোহীদের খুন করা এবং ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবী (সোজা ভাষায় ডাকাতি/সন্ত্রাস) কোন সৎ লোকের কার্য্য হতে পারে না। মুহাম্মাদের এমনি অত্যচারে অতিষ্ঠ কুরাইশরা বাণিজ্য ফেরৎ আবু সুফিয়ানের মালামাল রক্ষার্থে (মুহাম্মাদ তাকে পথিমধ্যে এটাক করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল) এবৎ তার ৩ মাস আগে (ডিসেম্বর, ৬২৩) তার সাঙ্গরা “নাখালায়” অনুরুপ হামলায় এক কুরাইশকে খুন (সর্ব প্রথম খুনের দৃষ্টান্ত স্থাপন, এর আগে কুরাইশরা কোন মুসলমানকে কখনো খুন করেছে বলে কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ইতিহাসে নাই)।`
চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। সব লেখার সাথে Reference আছে, এই লেখায় নাই কেন? Reference এবং Context সহ জানালে উপকৃত হব। মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কায় থাকতেই কোরাইশরা প্রথম একাধিক মুসলমানকে হত্যা করে, যার বর্ণনা সূত্রসহ পরের একটি অনুচ্ছেদে আপনিও দিয়েছেন, আমিও দিয়েছি। কাজেই নাখলার এই ‘হত্যা` (প্রকৃত ঘটনা অন্যরকম) ‘সর্বপ্রথম খুনের দৃষ্টান্ত` হবে কেন?
আবু জাহেলের উপর হামজার আক্রমণ প্রসঙ্গে ‘কার মহানুভবতা কার উপর চালানো হয়েছে` উল্লেখপূর্বক ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা-ও পক্ষপাতদুষ্ট। আবু জাহেলই প্রথম মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আক্রমণ করেন, জখম করেন, জঘন্যভাবে অপমান করেন। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) জবাবে কিছু বলেননি। হামজা জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে ঘটনা জানতে পারেন। তারপর ক্রুদ্ধ হয়ে আবু জাহেলকে ধনুক দ্বারা আঘাত করেন। উল্লেখ্য যে, ইবনে ইসহাকের মূল গ্রন্থ আরবীতে লেখা। পরবর্তীতে নানা অনুবাদক নানান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। আপনার উদ্ধৃতিতে আছে, ‘Abu Jahl bin Hisham…….abused him`। Oxford English Dictionary-তে ‘Abuse` শব্দের একটি প্রতিশব্দ ‘Treat roughly or cruelly` যার বাংলা হলো, ‘অত্যাচার করা`। ইবনে ইসহাকের অন্য একটি অনুবাদে কি লেখা আছে দেখুনঃ
‘A man of Aslam, who had a good memory, told me that Abu Jahl passed by the Prophet (pbuh) at As-Safa, and injured him, maliciously offending his religion and trying to ridicule his cause. The Prophet (pbuh) did not speak to him. During this, a mawlah of Abdullah ibn Judan was in her house listening to what was going on. Then he left him and went to an assembly of the Quraysh at the Ka’bah and sat there. After a little while, Hamzah ibn Abdel Muttalib approached, with his bow hanging on his shoulder back from the hunt, for he was fond of hunting and used to go out shooting. Whenever he returned from a chase he used to salute every assembly of the Quraysh he met and stop to speak with them. He was the dearest and strongest man of the Quraysh. (At that time the Prophet (pbuh) had gone home). Hamzah passed by this mawlah, who asked him, ‘O Abu Imarah, have you not heard of what Abdul-Hakam ibn Hisham has just done a short while ago to your nephew, Muhammad? He had found him sitting there, so he injured and insulted him and treated him badly, whereas Muhammad did not utter a word.`Hamzah was enraged, for Allah wanted to honor him, so he went out at a run and did not stop to greet anyone, intending to quarrel with Abu Jahl when he met him. When he entered the mosque he saw him sitting among the people, and went up to him until he stood beside him, then he drew up his bow and hit him a violent blow with it, saying, ‘Do you hurt him while I follow his religion, and say what he says? Strike me back if you can!` Some of Banu Makhzum got up to help Abu Jahl, but the latter said, ‘Let Abu Imrah alone for, by Allah, I injured his nephew deeply.`
(Sirat Ibn Hisham, Cairo Edition, Chapter-II, p. 47-48) http://www.mediafire.com/?1ydxytzdzjj).
আরও লিখেছেন, ‘কুরাইশদের প্রতি মুসলমানদের শারীরিক আক্রমণ এটাই প্রথম নয়। প্রথম আঘাতকারী ছিল সা’দ বিন আবি-ওয়াক্কাস`। এখানে একটা জিনিস পরিষ্কার হওয়া দরকার। আবু জাহেল ও হামজার মধ্যে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখনও হামজা ইসলাম গ্রহণ করেননি। কাজেই এটাকে কোরাইশদের উপর মুসলমানের আক্রমণ হিসাবে দেখানোর সুযোগ নাই। আবু জাহেল ও হামজা উভয়েই ছিলেন কোরাইশ। উভয়েই একই পিতার ঔরসজাত সন্তান। আবু জাহেলের উপর আক্রমণের পর হামজা ইসলাম গ্রহণ করেন। এখানে আরও একটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। আবদুল মুত্তালিব যে বছর তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ্’র বিয়ে দেন, সে বছর নিজেও আরেকটি বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান হলেন হামজা, যিনি ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সর্বকনিষ্ট চাচা। সম্পর্কে তিনি ও হামজা চাচা-ভাতিজা হলেও তাঁরা শৈশবে কিছুদিন একই ধাত্রীমাতার দুধ পান করেছিলেন (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 756)। সেই হিসাবে তাঁরা ছিলেন ‘দুধ-ভাই` (foster-brothers)। সুতরাং আবু জাহেলের উপর হামজার ক্রুদ্ধ হওয়ার পেছনে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর তার নির্যাতন ও মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক নীরবে সহ্য করা ছাড়াও এই ফ্যাক্টরগুলোও নিশ্চয়ই কাজ করেছে।
‘কার মহানুভবতা কার উপর চালানো হয়েছে` প্রসঙ্গে ইবনে ইসহাকের সীরাতে হামজা সম্পর্কে যা লেখা আছে, তার উদ্ধৃতিই যথেষ্ট মনে করি। সেখানে লেখা আছে, ‘He was the dearest and strongest man of the Quraysh`(সূত্রঃ Sirat Ibn Hisham, Cairo Edition, Chapter-II, p. 47)। যার কারণে ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা ভেবেই আবু জাহেল আর বাড়াবাড়ি করতে চায়নি। এটা পরিষ্কার। এখানে মহানুভবতার কিছু নাই।
আর সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারেরও পূর্বের ঘটনা। লক্ষ্য করুন, ইবনে ইসহাকের লেখায় যেখানে এ ঘটনার উল্লেখ আছে, তার পরবর্তী অনুচ্ছেদগুলোতে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রকাশ্য ইসলাম প্রচার ও কোরাইশদের প্রতিক্রিয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তারমানে এটা প্রথম পর্যায়ের মুসলিমদের সাথে কোরাইশদের আচরণের নমুনা। এ সময় কোন মুসলিম যদি দূরবর্তী কোন উপত্যকায় গোপনে নামায পড়তে যেত, তখন প্রতিপক্ষ বিনা উস্কানিতে সেখানে গিয়ে তাদের প্রার্থনায় বাধা দিত। এরকম বহু ঘটনার পর নিরূপায় হয়ে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস প্রতিপক্ষের সাথে মোকাবেলা করেন। প্রতিপক্ষ ছিল সংখ্যায় অধিক। তারা এরপর কি করেছিল, তার বর্ণনা ওই অনুচ্ছেদে নেই। কিন্তু ইবনে ইসহাকের নানা জায়গায় তাদের এই বর্বরতা ও নির্যাতনের বর্ণনা আছে, যা আমার নিচের লেখায় নানা প্রসঙ্গে উদ্ধৃতি আকারে পাবেন। মক্কায় অবতীর্ণ একটি সুরায়ও এর উল্লেখ আছে, ‘তুমি কি তাকে দেখেছ, যে বাধা দেয় এক বান্দাকে—যখন সে সালাত আদায় করে?` (সুরা আলাক, ৯)।
আপনি লিখেছেন, কোরাইশরা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর গলায় কাপড়ের ফাঁস দেয়নি, “জামা-পায়জামা (Robe)’ ধরে টানাটানি করেছে। Oxford English Dictionary-তে ‘Robe` শব্দের অর্থ লেখা আছে, ‘A long, loose, flowing outer garment`। আগেই উল্লেখ করেছি, ইবনে ইসহাকের মূল গ্রন্থ লেখা হয়েছে আরবীতে, পরে নানা অনুবাদক নানা ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তারপরও ‘Robe`এর যে অর্থ দেখা যাচ্ছে, তাতেই বুঝা যাচ্ছে যে, এটা মোটেই ‘জামা-পায়জামা` নয়। সে সময়ের আরবে পায়জামা ছিল না, ছিল লুঙ্গী। আর জামা বলতে ছিল গলায় ঝুলানো চাদর। মুহাম্মদ (সাঃ) সবসময় সবুজ কিংবা লাল রঙের চাদর পরে থাকতেন (বোখারী ও তিরমিজী)। এটাই ছিল তাঁর জামা। ঘটনার দিন তাঁর গলার চাদর ধরেই টান দেয়া হয়েছিল। এটা যে হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল (সে সময়ের আরবে এর চেয়েও তুচ্ছ ঘটনায় খুনখারাবী হত), তার প্রমাণ আবু বকর (রাঃ)-এর এই সংলাপঃ Would you kill a man for saying Allah is my Lord? আবু বকর (রাঃ)-এর এই উক্তির পর তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ছেড়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রহার করে। ইবনে ইসহাকে উপরের ঘটনার পরপরই নিচের অনুচ্ছেদে আছেঃ
One of the family of Umm Kulthum, Abu Bakr’s daughter, told me that she said, ‘Abu Bakr returned that day with the hair of his head torn. He was a very hairy man and they had dragged him along by his beard.` (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 131)।
এছাড়া ঘটনার আগের দিন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি যা করা হয়েছে, তার সমালোচনা ছাড়া ‘মুহাম্মাদের গর্জন` বলে যা উল্লেখ করেছেন, তা-ও খুবই পক্ষপাতদৃষ্ট। ইতিহাসের কোথাও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ‘গর্জনের` কি কোন উল্লেখ আছে? যেখানে কোরআন বলছে, ‘তুমি পদক্ষেপ করো সংযতভাবে এবং তোমার কন্ঠস্বর নিচু করো`(সুরা লুকমান, ১৯), সেখানে তিনি তার বিপরীত করবেন কেন? আগেই বলেছি, ইবনে ইসহাকের মূল গ্রন্থটি আরবীতে লেখা। পরে নানা অনুবাদক নানা ভাষায় অনুবাদ করেছেন। আপনি যে সংস্করণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, মুহাম্মদ (সাঃ) বলছেন, ‘Will you listen to me O Quraysh? By Him who holds my life in His hand ‘I bring you slaughter`। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ্কে উদ্ধৃত করছেন। কিন্তু এ রকম কোন উক্তি (I bring you slaughter) কি কোরআনে আছে? সেখানে এরকম কোন উক্তি নাই। অবিশ্বাসীদের নিষ্ঠুর আচরণ প্রসঙ্গে কোরআনে একটি আয়াত আছে এরকমঃ
‘এবং তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হলে তুমি কাফেরদের মুখমণ্ডলে অসন্তোষ লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াত তেলাওয়াত করে তাদেরকে তারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। বল, ‘তবে কি আমি তোমাদেরকে এটা অপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দিব? এটা আগুন।` (সুরা হাজ্জ, ৭২)।
এখানে আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করুন। মুহাম্মদ (সাঃ) কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ করছেন আর কোরাইশরা তাঁকে অপমান ও গালমন্দ করছে। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, “Will you listen to me O Quraysh? By Him who holds my life in His hand ‘I bring you slaughter’। কিন্তু পরের দিন কোরাইশরা তাঁকে যা বলছে, তার সাথে আগের দিনের এই উক্তির কোন মিল নাই! কোরাইশরা বলছে, “Are you the one who said so-and so against our Gods and our religion?” মুহাম্মদ (সাঃ) বলছেন, ‘yes, I am the one who said that”। তিনি আগের দিন এরকম কথা কখন বললেন?
মজার কথা হলো, কেউ যখন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, তখন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনে। কখনও এ কথা বলে না যে, ‘তুমি কি আমার বিরুদ্ধে অমুক অমুক বলেছ?` ‘অমুক অমুক (So and so)` আবার কি? এটা দিয়ে কি অভিযোগ বোঝা সম্ভব? এই শব্দগুচ্ছ (So and so) যদি কোন সাধারণ বর্ণনায় ব্যবহৃত হত, তাহলেও কথা ছিল। তবে সেক্ষেত্রেও এর আগের কোন অনুচ্ছেদে মুহাম্মদ (সাঃ) কি বলেছেন, তার একটি হুবহু উদ্ধৃতি দরকার হত। লক্ষ্য করুন, ইবনে ইসহাক, তাবারী কিংবা ইবনে সা’দ-এর রচনায় মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এমন একটি সংলাপও নেই, যেখানে তিনি কোরাইশদের উপাস্য দেবদেবী সম্পর্কে মন্দ কিছু বলেছেন।
তবে মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের সাথে কেমন আচরণ করা হত, তা নীচের বর্ণনাগুলো থেকেই বিস্তারিত জানা যায়ঃ
‘It was the vile Abu Jahl who incited the people of Makkah against Muslims. Whenever he heard of a new convert, if he was a man of noble position having relations to defend him, he reproached him and scoffed at him saying, ‘You have abandoned the religion of your father who was better than you. We will declare you a dullard and falsify your opinion and corrupt your reputation.` If he was a merchant he would say, ‘We will recede your commerce and bankrupt you.` If he was a weak person, he would beat him and stir up people against him. Sad ibn Jubayr said, ‘I asked Abdullah ibn Abbas, ‘Were the polytheists maltreating the Prophet’s (pbuh) companions to the extent that apostasy was excusable?’ ‘Yes, by Allah, he said, They used to beat each of them, depriving him of food and drink to the extent that he could hardly sit upright because of the adversity afflicting him, so that he may say what they asked him to say. They would say to him, ‘Al-Lat and Al-Uzza your gods not Allah?’ He would say, ‘Yes.’ And a beetle might pass by them and they would say to him, ‘This beetle is your god not Allah?’ He would say, ‘Yes’, in order to get rid of the tortures being inflicted upon him.’ (Sirat Ibn Hisham, Cairo Edition, Chapter-II, p. 55-56).
When the Quraysh became disturbed by the troubles triggering enmity between them and the Prophet (pbuh) and the Muslims, they incited against him foolish men who called him a liar, hurt him, and accused him of being a poet, sorcerer, a diviner, and of being possessed. (Ibid, p. 46).
ইয়াসার ও তার স্ত্রী সামিয়াকে হত্যার বর্ণনা আছে ‘ইবনে সা’দ এর ‘Kitab Al Tabaqat Al Kabir`-এ; ইবনে ইসহাকের লেখায় নাম উল্লেখ নাই, কিন্তু হত্যার বর্ণনা আছে। তারপরও আবু জাফর আল-তাবারীর ‘Tarikh Al Rasoul Wal Muluk`-এ ঘটনার উল্লেখ না থাকায় এই তথ্যকে বলছেন খুবই controversial। আবার নিজেই সবচেয়ে দূরবর্তী উৎস (হাদীস) থেকে ‘মুহাম্মদের আদেশে` ক্কাব বিন আশরাফ, আবু রাফি, আসমা বিনতে মারিয়া, বানু কুরাইজাসহ ‘হাজারো মানুষের খুন`-এর বর্ণনা দিচ্ছেন! তা-ও কেবল বুখারী শরীফ থেকে, প্রধান গ্রন্থগুলোর ‘কমন হাদিস` (সিহাহ্ সিত্তা সমর্থিত) বা মেশকাত শরীফ থেকে নয়!
এ প্রসঙ্গে কিছু বলার আগে তাবারীর জীবনীগ্রন্থ সম্পর্কে আপনার উদ্ধৃতি স্মরণ করছি। আপনি বলেছিলেন, মুহাম্মাদের জীবনীকার হিসাবে তিনি ইবনে ইসহাক ও পূর্ববর্তী মুসলিম স্কলারদেরই উদ্ধৃতি দিয়েছেন। নতুন করে কিছু আবিষ্কার করেন নাই।` তাহলে কোনো বর্ণনা যদি ইবনে ইসহাক ও ইবনে সা’দ-এর লেখায় পাওয়া যায়, সে বর্ণনা তাবারীর লেখায় পাওয়া না গেলে অসুবিধা কি? আরও স্মরণ করছি, Islamic Annals-এর ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিরূপণের জন্য যে সূত্র ও পর্যায়ক্রম উল্লেখ করেছিলেনঃ ‘ঘটনার উৎসস্থল থেকে ‘সময় এবং দুরত্ব’ যতই বৃদ্ধি পাবে- ‘ঘটনার বিকৃতি” ততই প্রকট হবে। সেই হিসাবে, ইসলামিক ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য “উৎস” হলো কুরান, ২য় সীরাত আর ৩য় হচ্ছে হাদিস`। এখন ইয়াসার ও তার স্ত্রী সামিয়াকে হত্যার বর্ণনায় আপনি আপত্তি তুলেছেন এই যুক্তিতে যে, কোরআনেও (আপনার জানা মতে) এর কোন উল্লেখ নেই। এই একটি মাত্র খুনের ঘটনা সত্য হলে প্রতিটি ইতিহাসবিদ ও কোরআনে অবশ্যই এর বিশদ বিবরণ থাকতো। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রথম পর্যায়ের দুটি ইতিহাসগ্রন্থে এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে।
তবে কোরআন সম্পর্কে আপনার আপত্তি যথার্থ। আমরা এখন দেখব কোরআনে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে উল্লেখ আছে কি-না। তবে তার আগে যোগ করতে চাই, কেবল ইয়াসার ও তার স্ত্রী সামিয়া নয়—খোবাই বিন আদিকে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নভিন্ন করে ও শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাংস কেটে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে বিশ্বাসঘাতকতার ভেতর দিয়ে কোরাইশদের কাছে বিক্রয় করা হয়েছিল। অকথ্য নির্যাতনের মধ্যে তাকে জিজ্ঞাসা করা হত যে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অবস্থা তার মতো হোক সে তা চায় কি-না। উত্তরে তিনি বলতেন, ‘মুহাম্মদ (সাঃ)-এর গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হোক, এই শর্তে আমি আমার পরিবার, আমার ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাই না।`কাজেই হত্যাকাণ্ড একটি নয়, অনেক। সীরাত ইবনে ইসহাক (রাসুলের মৃত্যুর ১২০ বছর পর রচিত) তার সবগুলোই ধারণ করতে পেরেছে, এটা জোর দিয়ে বলা যায় না। কোরআনে (১৯ বছর পর সংকলিত) বহুবচনে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ আছে। যেমনঃ
‘মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহ্র সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে।` (সুরা আহযাব, ২৩)।
‘তোমরাই তারা যারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করছ, তোমরা নিজেরা তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করছ এবং তারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়, তখন তোমরা মুক্তিপণ দাও; অথচ তাদের বহিষ্করণই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল।` (সুরা বাকারা, ৮৫)।
‘যারা আল্লাহ্র আয়াত অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে এবং মানুষের মধ্যে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে হত্যা করে, তুমি তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।` (সুরা ইমরান, ২১)।
‘যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত।` (সুরা ইমরান, ১৬৯)।
‘এবং যারা হিযরত করেছে আল্লাহ্র পথে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে তাদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন; আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বোৎকৃষ্ট রিযকদাতা।` (সুরা হাজ্জ, ৫৮)।
‘সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজ গৃহ থেকে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি তাদের পাপকার্যগুলি অবশ্যই দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদেরকে দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।` (সুরা ইমরান, ১৯৫)।
‘তবে কি যখনই কোন রাসুল তোমাদের নিকট এমন কিছু এনেছে, যা তোমাদের মনোঃপূত নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ আর কতককে অস্বীকার করেছ এবং কতককে হত্যা করেছ?` (সুরা বাকারা, ৮৭)।
এবার আসা যাক আপনার বর্ণিত ‘মুহাম্মদের আদেশে` ক্কাব বিন আশরাফ, আবু রাফি, আসমা বিনতে মারিয়া, বানু কুরাইজাসহ ‘হাজারো মানুষের খুন` সম্পর্কে। আপনার বর্ণনার উৎস হচ্ছেঃ
Center for Muslim-Jewish Engagement: http://cmje.org/
TheReligionofPeace.com Presents: http://www.thereligionofpeace.com/Muhammad/myths-mu-qurayza.htm
এই ওয়েবসাইটগুলোর একটিও ইসলামিক Annals-এর কোন স্বীকৃত উৎস নয়। প্রথমটিতে বুখারী শরীফের Reference দিয়ে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাগুলো এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছে, যা বুখারী শরীফের সাথেও মেলে না। দ্বিতীয়টিতে Reference ছাড়াই কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে। হাদিস সম্পর্কে আগেই আমরা একমত হয়েছি যে, এটি ইসলামিক Annals-এর সবচেয়ে দূরবর্তী (রাসুলের মৃত্যুর ২০০ বছর পর সংকলিত) উৎস। কাজেই আমরা যদি শুধু এ উৎস থেকে কোন ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা দাঁড় করাতে চাই, তাহলে অবশ্যই নিচের তিনটি শর্তের যে কোন একটি পূরণ করতে হবেঃ
এক. ইতিহাস দ্বারা সমর্থিত হতে হবে;
দুই. কোরআন দ্বারা সমর্থিত হতে হবে;
তিন. প্রধান ছয়টি হাদিস সংকলন (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাআজা ও নাসায়ী) দ্বারা অভিন্নভাবে সমর্থিত হতে হবে।
কিন্তু আপনার এই বর্ণনা উপরের তিনটি শর্তের একটিও প্রতিপালন করে না। সেখানে বরং দেখা যাচ্ছে, মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা বিজয়ের সময় তাঁর সারাজীবনের শত্রু আবু সুফিয়ানকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাঁকে নির্যাতনকারী মক্কাবাসীদের সাধারণ ক্ষমা মঞ্জুর করেছেন। তাঁর একজন কন্যা জয়নাবকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বল্লমের খোঁচায় হত্যাকারী কোরাইশ হাবরার বিন আসওয়াদকে নিঃশর্ত ক্ষমা করেছেন। যে ইহুদী রমণী খায়বারে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিল এবং আবু জাহেলের পুত্র ইকরামা, যে তাঁর প্রতি শত্রুতায় ছিল চরম নিষ্টুর ও ভয়ংকর—উভয়কেই নিঃশর্ত ক্ষমা করেছেন। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে—
‘সুতরাং তারা যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব করে তবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করার পথ রাখেন না।` (সুরা নিসা, ৯০)।
‘তারা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও, সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে উপদেশ দান কর কোরআনের সাহায্যে।` (সুরা কাফ, ৪৫)।
‘তুমি সর্বদা তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন।` (সুরা মায়িদা, ১৩)।
‘ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।`(সুরা হা-মীম আস-সাজদা, ৩৪)।
‘তোমাদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেবার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনোই সীমালংঘনে প্ররোচিত না করে।` (সুরা মায়িদা, ২)।
‘আর তুমি কাফের ও মুনাফিকদের কথা শুনো না, তাদের নির্যাতন উপেক্ষা করো এবং নির্ভর করো আল্লাহ্র উপর; কর্মবিধায়করূপে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।` (সুরা আহযাব, ৪৮)।
‘যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহ্র পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।` (সুরা বাকারা, ১৯০)।
‘যদি তারা বিরত হয়, তবে জালিমদেরকে ছাড়া আর কাউকেও আক্রমণ করা চলবে না।` (সুরা বাকারা, ১৯৩)।
‘সুতরাং তারা যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব করে তবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করার পথ রাখেন না।` (সুরা নিসা, ৯০)।
‘যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো তাদেরকে যারা আক্রান্ত হয়েছে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে।` (সুরা হাজ্জ, ৩৯)। ‘তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্।` (সুরা হাজ্জ, ৪০)।
‘গর্হিত কাজকর্ম ও কথাবার্তার জবাবে উত্তম কথাবার্তা বল।` (সুরা মুমিনুন, ৯৬)।
আপনি লিখেছেন, ‘মুহাম্মদের বাণীতে সাড়া দিয়ে দাসরা মালিকদের অবাধ্য হতো, যেটা ঊমাইয়া খালফ বলেছে, ‘ You are the one who corrupted him –”। এটা ছিল মালিকদের financial loss. তাই আবু-বকর যখন বেলালকে কিনতে চাইলো তখন সংগে সংগে সে তাকে বিক্রি করেছিল। জিঘাংসা বশতঃ হলে সে বিক্রি করতো না।`
এটাও প্রকৃত ঘটনার একটি ভুল ব্যাখ্যা। কোরাইশরা তাদের ‘অবাধ্যতা ` ও ‘Corrupted` বলতে সোজা কথায় যা বোঝাতো, তা হলো, তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম বাদ দিয়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ। এখানে ‘financial loss`-এর কিছু ছিল না। সে সময়ের আরবের মুক্তিপণ ও ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে সীরাত গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। কোরাইশরা এক পয়সার ক্ষতিও কাউকে ছাড় দিত না। হাবসী ক্রীতদাস বেলালের ক্ষেত্রেও যদি উমাইয়া বিন খালাফের আদৌ কোন ‘financial loss` থাকত, তাহলে সে শুধু ‘ব্যক্তির বদল ব্যক্তি` গ্রহণ করত না, সেই সাথে ক্ষতিপূরণও চাইত। আপনার বর্ণনায় কিছু অংশ বাদ গেছে। সম্পূর্ণ বর্ণনাটা দেখুনঃ
Bilal, who was afterwards freed by Abu Bakr but at that time belonged to one of B. Jumah, being slave born, was a faithful Muslim, pure of heart. His father’s name was Rabah and his mother was Hamama. Umayya b. Khalaf b. Wahb b. Hudhafa b. Jumah used to bring him out at the hottest part of the day and throw him on his back in the open valley and have a great rock put on his chest; then he would say to him, ‘You will stay here til you die or deny Muhammad and worship Al-Lat and Al-Uzza.` He used to say while he was enduring this, ‘One, One!`
One day Abu Bakre passed by while they were thus ill-treating him, for his house was among this clan. He said to Umayya, ‘Have you no fear of God that you treat this poor fellow like this? How long is it to go on?` He replied, ‘You are the one who corrupted him, so save him from his plight that you see.` ‘I will do so,` said Abu Bakr; ‘I have got a black slave, tougher and stronger than he, who is a heathen. I will exchange him for Bilal.` The transaction was carried out and Abu Bakr took him and freed him. (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 143-144).
এই যে বেলালের উদ্দেশ্যে উমাইয়া বিন খালাফের উক্তিঃ You will stay here til you die or deny Muhammad and worship Al-Lat and Al-Uzza, এটাই হলো কোরাইশদের সহনশীলতা ও দাস-মালিক সম্পর্কের নমুনা। দাসদের ‘অপরাধ` ছিল শুধু বিশ্বাস পরিবর্তন, আর কিছু না। কারণ তখনও মেরাজ হয়নি, নামাযও বাধ্যতামূলক হয়নি। মেরাজের পরেও যারা শত্রু পরিবেশে অবরুদ্ধ, বন্দী বা ক্রীতদাস ছিল, তাদের জন্য নামায বাধ্যতামূলক ছিল না। এখনও নাই।
সুরা লাহাব-এর প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বক্তা এখানে চাক্ষুস মুহাম্মাদ”? মুহাম্মদের প্রতি অবিশ্বাসে আল্লাহর কোনই অস্তিত্ব নাই? সে ক্ষেত্রে মুহাম্মদের বক্তব্য, ১০০% মুহাম্মাদেরই বক্তব্য।`
আপনি নিজের কাছে নিজেই আগে প্রশ্ন করুন, আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর তাৎক্ষণিক কিছু হলে (শাস্তি বা মৃত্যু) আপনি কি বিশ্বাস করতেন যে, এই কোরআন আল্লাহ্র বাণী? তখন কি এটা বলা হতো না যে, ‘ঝড়ে বক মরে, বুজুর্গের কেরামতি বাড়ে`? ইতিহাসে এরকম ঘটনার উল্লেখ তো আছেই। যেমন, কোরাইশগণ মুহাম্মদ (সাঃ)-কে তাঁর পরিবার-পরিজনসহ অবরোধ করার জন্য যে চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হয়, তা পোকায় খেয়ে ফেলার ঘটনা এবং সেই চুক্তিপত্রের লেখকের (মনসুর বিন ইকরিমা) হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ইবনে ইসহাকেই বর্ণিত আছে (Ibne Ishaq, ‘Sirat Rasul Allah`A. Guillaume, Oxford University Press, 2004, p. 173)। সেখানে আরও বর্ণিত আছে যে, চুক্তিপত্র পোকায় খেয়ে ফেলার ঘটনা (‘In Thy name O Allah`এই কথাটুকু ছাড়া) মুহাম্মদই (সাঃ) প্রথম অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় তাঁর চাচা আবু তালিবকে জানান। আবু তালিব তা কোরাইশদের জানান। কোরাইশরা চুক্তিপত্র পরীক্ষা করে দেখে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কথাই ঠিক। কিন্তু তাতে তাদের শত্রুতাই কেবল বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কতিপয় কোরাইশ বয়কট তুলে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়। (Ibid, p. 723)।
বরং আবু লাহাব দশ বছর সময় পাওয়ার পরেও কোরআনের এই সুরাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে না পারাটাই সবচেয়ে জোরালো যুক্তি, যা যুক্তিবাদী মাত্রই স্বীকার করবেন। কোরআনে অবিশ্বাসী অপরাধীকে কিছুকাল অবকাশ দেয়ার বহু বর্ণনা আছে। সেখানে বলা আছে, নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে তারা তাদের শাস্তি কিছুমাত্র বিলম্বিত করতে পারবে না। যেমনঃ
‘তোমার প্রতিপালকের পূর্ব সিদ্ধান্ত ও একটা কাল নির্ধারিত না থাকলে অবশ্যম্ভাবী হত আশু শাস্তি। সুতরাং তারা যা বলে সে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ কর।` (সুরা তা-হা, ১২৯-১৩০)।
‘যে কেউ কুফরী করবে তাকেও কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিব, অতঃপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং কত নিকৃষ্ট তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল!` (সুরা বাকারা, ১২৬)।
‘যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমেক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারবে না। আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।` (সুরা আ’রাফ, ১৮২)।
‘আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিব স্বল্পকালের জন্য। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব।` (সুরা লুকমান, ২৪)।
‘এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অবকাশ সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের বিষয়ে ফায়সালা হয়ে যেত।` (সুরা শুরা, ১৪)।
“বক্তা এখানে চাক্ষুস মুহাম্মাদ”—এই মন্তব্য দিয়ে হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন যে, কোরআন যে আল্লাহ্র বাণী, এটার সাক্ষী একমাত্র মুহাম্মদ (সাঃ); এখানে আর কোন সাক্ষী নাই। এটাও একটা ভুল তথ্য। কোরআন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে নাযিল হয়েছে। তার মধ্যে হেরা গুহায় সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত ছাড়া বাকি প্রায় সবটুকুই এক বা একাধিক ব্যক্তির সাক্ষাতে নাযিল হয়েছে। কোরাইশদেরকে যখনই কোরআনের কোন আয়াত শোনানো হয়েছে, তারা সঙ্গে সঙ্গে বলেছে, ‘এটি একটি জাদু।` কারণ, তারা জানত, মুহাম্মদ (সাঃ) কিংবা অন্য কারও পক্ষে এটা লেখা সম্ভব নয়। পূর্বে যাদের কাছে কিতাব এসেছে, তারাও এর সাক্ষী। এ কথা কোরআনেও আছে। অনেক ইহুদী ও খ্রিস্টান তার সাক্ষ্যও দিয়েছেন। যেমনঃ
‘যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘তুমি আল্লাহ্ প্রেরিত নও।` বল, ‘আল্লাহ্ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে, তারা আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট।` (সুরা রা’দ, ৪৩)।
এছাড়া খ্রিস্টানগণ ও অন্য কিতাবীগণ কিভাবে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে রাসুল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন, তার বর্ণনা আছে সুরা মায়িদা, ৮৩, সুরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯, সুরা কাসাস ৫২-৫৩ এবং সুরা আনকাবুত ৪৭ আয়াতে। সাম্প্রতিক সময়েও অন্য ধর্মের এমন অনেক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁদের ধর্মগ্রন্থে মুহাম্মদ (সাঃ) ও কোরআন সম্পর্কে উল্লেখ আছে। উদাহরণস্বরূপ ব্রিটিশ রক সঙ্গীতশিল্পী ক্যাট স্টিভেন্স (বর্তমান নাম ইউসুফ ইসলাম) ও ভারতের শীর্ষ ধর্মগুরু শ্রী আনন্দ উদাসেন স্বরূপজী (পরিবর্তিত নাম ইসলাম-উল-হক)-এর কথা উল্লেখ করা যায়।
কোরআনে একজন ব্যক্তি আবু লাহাবকে নিয়ে সুরা নাযিল হয়েছে, ব্যাপারটা তা-ও নয়। এখানে শ্রেণী আবু লাহাবের কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর সকল যুগের সকল নির্যাতনকারী অপশক্তি এই শ্রেণীভুক্ত আর তাকে সহায়তাকারী (যেমন, ১৯৭১ সালের রাজাকার) আবু লাহাবের স্ত্রীর শ্রেণীভুক্ত। তাছাড়া কোরআনে শুধু আবু লাহাবই নয়, এমন আরও অনেক ভবিষ্যদ্বাণী আছে, যা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। যেমন, ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত রোম-পারস্য যুদ্ধে রোমানরা পারস্যের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যায়। ওই ঘটনার পরপরই কোরআনের সুরা রুম-এ বলা হয়, ‘রোমানরা পরাজিত হয়েছে এক নিকটবর্তী (নিম্নতর) স্থানে; কিন্তু তারা তাদের এই পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যেই। পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আল্লাহ্রই।`(সুরা রুম, ২-৪)। ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন, ‘যখন এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, তখন এর চাইতে অবিশ্বাস্য আগাম সংবাদ আর কিছুই হতে পারত না; কেননা হিরাক্লিয়াসের শাসনকালের প্রথম বার বছর অনবরত তার সাম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছিল।`(সূত্রঃ Gibbon, Vol. V, p. 75-77) কিন্তু কোরআনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়। ‘অলস, আরামপ্রিয় হিরাক্লিয়াস হঠাৎ রাজমহলের আরকেডিস থেকে যুদ্ধেক্ষেত্রের সিজারে রূপান্তরিত হলেন।` (সূত্রঃ প
@গোলাপ। দুঃখিত। শেষের দিকে কিছু অংশ আবারও বাদ গেছে। আবার পোস্ট করলাম।
কোরআনে একজন ব্যক্তি আবু লাহাবকে নিয়ে সুরা নাযিল হয়েছে, ব্যাপারটা তা-ও নয়। এখানে শ্রেণী আবু লাহাবের কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর সকল যুগের সকল নির্যাতনকারী অপশক্তি এই শ্রেণীভুক্ত আর তাকে সহায়তাকারী (যেমন, ১৯৭১ সালের রাজাকার) আবু লাহাবের স্ত্রীর শ্রেণীভুক্ত। তাছাড়া কোরআনে শুধু আবু লাহাবই নয়, এমন আরও অনেক ভবিষ্যদ্বাণী আছে, যা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। যেমন, ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত রোম-পারস্য যুদ্ধে রোমানরা পারস্যের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যায়। ওই ঘটনার পরপরই কোরআনের সুরা রুম-এ বলা হয়, ‘রোমানরা পরাজিত হয়েছে এক নিকটবর্তী (নিম্নতর) স্থানে; কিন্তু তারা তাদের এই পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যেই। পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আল্লাহ্রই।`(সুরা রুম, ২-৪)। ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন, ‘যখন এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, তখন এর চাইতে অবিশ্বাস্য আগাম সংবাদ আর কিছুই হতে পারত না; কেননা হিরাক্লিয়াসের শাসনকালের প্রথম বার বছর অনবরত তার সাম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছিল।`(সূত্রঃ Gibbon, Vol. V, p. 75-77) কিন্তু কোরআনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়। ‘অলস, আরামপ্রিয় হিরাক্লিয়াস হঠাৎ রাজমহলের আরকেডিস থেকে যুদ্ধেক্ষেত্রের সিজারে রূপান্তরিত হলেন।` (সূত্রঃ পূর্বোক্ত)। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের রোম-পারস্য যুদ্ধে রোমানদের কাছে পারসিয়ানরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং পরের বছর মার্চ মাসে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস বিজয়ীর বেশে তাঁর রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। (সূত্রঃ Encyclopedia of Religion and Ethics)। কোরআনের সিংহভাগ অনুবাদে ‘ফী আদনাল আরদি`-এর অর্থ লেখা হয়েছে ‘নিকটবর্তী স্থান`। কিন্তু আরবী অভিধানে ‘আদনা` শব্দটির আরেকটি অর্থ হলো ‘নিম্নতর স্থান` (সূত্রঃ J. Milton Cowan, Hans Wehr, Dictionary of Modern Written Arabic) । পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভৌগোলিকভাবে দুটো অর্থই সত্য। পারসিক ও রোমানদের মধ্যে যে স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল এবং রোমানরা পরাজিত হয়েছিল, সে স্থানটি ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের কাছে ও লুত সাগরের পাশে। সে হিসেবে স্থানটি ছিল আরব উপদ্বীপের নিকটবর্তী। কিন্তু অধ্যাপক বার্মার (Barmer), যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদদের অন্যতম, সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখলেন, ওই স্থানটিই ভূ-পৃষ্টের সর্বনিম্ন স্থান!
মুহাম্মদ (সাঃ) কোরআনের যে আয়াতগুলোর কারণে মক্কায় নিশ্চিন্ত মনে তাঁর প্রচারকার্য চালিয়েছিলেন এবং মদীনায় হিযরত করেছিলেন, সেই আয়াতগুলো হলোঃ
‘এরা কি বলে, ‘আমরা এক সংঘবদ্ধ অপরাজেয় দল?`এই দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্টপ্রদর্শন করবে।` (সুরা কামার, ৪৪-৪৫)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘বহু দলের এই বাহিনীও সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে।‘(সুরা সাদ, ১১)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী।`(সুরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)। মক্কায় অবতীর্ণ।
‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে করেছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন জন্মভূমিতে। বল, ‘আমার প্রতিপালক ভাল জানেন কে সৎপথের নির্দেশ এনেছে এবং কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।`(সুরা কাসাস, ৮৫) । মক্কায় অবতীর্ণ।
‘অচিরেই তোমার প্রতিপালক তোমাকে অনুগ্রহ দান করবেন আর তুমি সন্তুষ্ট হবে।` (সুরা দুহা, ৫)। মক্কায় অবতীর্ণ।
মুহাম্মদ (সাঃ) যদি নিজেই কোরআন লিখতেন, তাহলে উপরের কথাগুলো কিভাবে লিখলেন? নিরাসক্ত ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আগাগোড়া ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করুন। ভবিষ্যদ্বাণী যে কেউ করতে পারে। জ্যোতিষীরাও করে। কিছু মেলে, কিছু মেলে না। মানুষের অনুমানও সেরকম—কিছু মেলে, কিছু মেলে না। কিন্তু কোরআনের সবগুলো ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয় কেন?
ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার (William Shakespeare) তাঁর নাটকে লিখেছিলেন, পুরুষ মৌমাছিরা শ্রমিক বা সৈনিকের কাজ করে এবং রাজার কাছে রিপোর্ট করে। কিন্তু তাঁর এই ধারণা ছিল ভুল। বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা জানি, স্ত্রী-মৌমাছিরাই শ্রমিকের কাজ করে। এরা সাধারণত বন্ধ্যা হয়। এরাই রাণীর কাছে রিপোর্ট করে, রাজার কাছে নয়। শেক্সপিয়ার যা করেছিলেন, তা হলো অনুমান। অনুমান এরকমই হয়। যাই হোক, কোরআনে শ্রমিক মৌমাছির লিঙ্গ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নির্ভুল বর্ণনা আছে (সুরা নাহ্ল, ৬৮-৬৯)। আরবীতে পুরুষ মৌমাছি হলো ‘ফাসলুক` আর স্ত্রী-মৌমাছি হলো ‘ফাসলুকী`। মূল আরবী কোরআন দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আপনি লিখেছেন, ‘মুহাম্মাদ বহু বহু নৃশংস ঘটনা, মালামাল লুন্ঠন, ভুমি-দখল, সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যার (assassination) প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অংশীদার। মদীনার ১০ বছরে (৬২২-৬৩২) ৬০টির ও বেশী যুদ্ধ ও ত্রাস সে করেছে, তার ধর্মের নামে। এর মধ্যে ওহুদ এবং খন্দক যুদ্ধ ছাড়া (সেটাও ছিল তার পূর্ববর্তী আক্রমণে অতিষ্ঠ কুরাইশদের পাল্টা আক্রমণ) সবখানে মুহাম্মদের বাহিনীই ১ম হামলাকারী (offensive), আক্রান্ত জনগোষ্ঠি করেছে তাদের জানমাল রক্ষার চেষ্টা (defensive)।`
এ কথাগুলোর প্রেক্ষিতে অন্য একটি মন্তব্যে বিস্তারিত লিখেছি। যে মতবাদ আমার পছন্দ, তার জন্য যুদ্ধ করা ভাল আর যে মতবাদ আমার পছন্দ নয়, তার জন্য যুদ্ধ করা বর্বরতা—এ মানসিকতাই ডাবল স্ট্যাণ্ডার্ড, যা অন্ধ গোঁড়ামী থেকে উদ্ভূত। এ মানসিকতা মুক্তমনার সাথে যায় না। যাই হোক, আপনি ইসলামের ইতিহাস পড়েছেন। আমি সাধ্যের বাইরে কিছু চাইব না। ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিরূপণের জন্য আপনার লেখার শুরুতেই Islamic annals-এর যে সূত্র ও পর্যায়ক্রম উল্লেখ করেছেন, তার আলোকে মুহাম্মদ (সাঃ) পরিচালিত এমন একটি যুদ্ধের নামও কি বলতে পারবেন, যেখানে নিচের তিনটি ঘটনার একটিও ঘটেনি?
এক. প্রতিপক্ষ কর্তৃক আগে আক্রমণ;
দুই. প্রতিপক্ষ কর্তৃক পূর্বে সম্পাদিত চুক্তি লংঘন, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি;
তিন. প্রতিপক্ষ কর্তৃক চুক্তিভুক্ত কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা ও লুন্ঠন;
চার. মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রেরিত দূতকে হত্যা ও যুদ্ধ ঘোষণা।
‘মুহাম্মদের হিস্যা ১/৫ অংশ` এটাও আরেকটি বিকৃতি। কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছেঃ ‘যুদ্ধে যা তোমরা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্র, রাসুলের, রাসুলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং পথচারীদের যদি তোমরা ঈমান রাখ আল্লাহ্তে এবং তাতে যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম।` (সুরা আনফাল, ৪১)। কোরআনের এই আয়াত অনুযায়ী যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ সবসময়ই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হত, যা পরবর্তী খলিফারাও অনুসরণ করেছেন। এই সম্পদ গরীব ও নিঃস্বদের জন্য ব্যয় করা হত। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময় থেকেই এমন এক রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সূচিত হয়, যা ছিল সাম্যবাদী (Communistic in nature)। এর সুফল ও জনপ্রিয়তা পাশ্ববর্তী অমুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে স্পেন ও পারস্য যখন বিজিত হয়, তখন বিজেতা দেশের জনগণ (স্পেনে ইহুদী সম্প্রদায় এবং পারস্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়) মুসলিম শাসকশ্রেণীকে ওয়েলকাম জানায় (সূত্রঃ দি শর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসেন, ম্যাকমিলান)।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেদিন ইন্তেকাল করেন, সেদিন ফজরের নামাযের পরে সমবেত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘O people! The fire is blazed and fitna are coming like the waves of the dusky night! By Allah, you can lay nothing to my charge. I have surely made lawful only what the Quran has made lawful and have prohibited only what the Quran has prohibited.`(Sirat Ibn Hisham, Cairo Edition, p. 286)।
অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) মুসলমানদের জন্য এমন কিছু বৈধ করেননি, যা কোরআন নিষিদ্ধ করেছে এবং এমন কিছু অবৈধ করেননি, যা কোরআন বৈধ করেছে। এ কথা কোরআনেও আছে। সেখানে উল্লেখ আছে, মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের মনগড়া কোন কথা বলেন না (সুরা নাজম, ২-৩)। কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কথাও বলেন না (সুরা হাক্কা, ৪৪-৪৭)। কাজেই কোন্ হাদিস আসল আর কোন্ হাদিস নকল, তা যাচাইয়ের জন্য কোরআনই যথেষ্ট। এর জন্য মুফতি বা খতিবের দরকার নাই। যদি দেখা যায়, কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে তা অবশ্যই নকল। তা বোখারী-মুসলিম-আবু দাউদ-তিরমিজি যাই হোক না কেন। আপনার দূরত্বের সেই ফর্মুলা—‘ঘটনার উৎস-স্থল থেকে ‘সময় এবং দুরত্ব’ যতই বৃদ্ধি পাবে- ‘ঘটনার বিকৃতি” ততই প্রকট হবে। সে হিসাবে, ইসলামিক ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য “উৎস” হলো কুরান, ২য় সীরাত আর ৩য় হচ্ছে হাদিস`—এই বিবেচনায় এটা তো আরও পরিষ্কার।
আমার নব্বইয়ের দশকের একটি লেখায় (নারীর সেকাল ও একাল) এমন অনেক হাদিসকে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে জাল প্রমাণ করেছি, যেগুলোকে নির্ভরযোগ্য হাদিস বলে গণ্য করা হয়। লেখাটি কিছুদিন আগে দ্বিমাসিক সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা ‘ধমনি`-তে দুই কিস্তিতে (৩য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা ও ৩য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা ২০০৮) আবার ছাপা হয়েছে। স্বনামেই। আজ পর্যন্ত এ লেখার কোন প্রতিবাদ হয়নি। বরং অনেকেই ওয়েলকাম করেছেন।
ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
,
ইহুদীরা তাদের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পরেও ঈমান আনেনি, কারণ আল্লাহ পাক হৃদয়ে সীল মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন।
মোহাম্মদ তার বিধবা পত্নীদের পুনরায় নিষিদ্ধ করে গেছে কেন? তারা যদি মোমিনদের মা হয় তবে তাদের বাবা কে? নিশ্চই মোহাম্মদ নিজে। সে মোমিনদের বাবা হয়ে এতগুলো মোমিনকন্যাকে কেন বিবাহ করল? পালিতপুত্র যদি পুত্র না হয় ও তার তালাক দেয়া পত্নীকে যদি পালক শ্বশুড় বিয়ে করতে পারে মোমিনরা মোহাম্মদপত্নীদের পুত্র হল কীভাবে?
বুখারী শরীফে লেখা আছে ৬ বছর বয়সে আয়েশার বিয়ে হয়। আপনি লিখেছেন ৭ বছর। ৭ বছর ধরে নিলেও মোহাম্মদ ৭ বছরের শিশুকে কেন বিয়ে করেছিল? এটা কি তার বিকৃত যৌন রুচির পরিচয় নয়?
মোহাম্মদ-পুত্র ইব্রাহিমের মাতা কে?
@তামান্না ঝুমু,
(Y) (Y)
@তামান্না ঝুমু, মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বিধবা পত্নীদের পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ করেননি, কোরআন নিষিদ্ধ করেছে। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রীগণ কি করলেন, তাতে তো তাঁর কোন লাভ-ক্ষতি ছিল না। তাঁর বংশধরদের জন্য যাকাতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ কারণে যে, লোকেরা অতি শ্রদ্ধাবশতঃ তুলনামূলক গরীব লোকদের বঞ্চিত করে নবীর বংশধরদের যাকাত দিয়ে দেবে। হাদিস শরীফে এবং জীবনীগ্রন্থে আয়েশা (রাঃ)-এর বয়স কোথাও ছয়, কোথাও সাত লেখা আছে। মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর চার সহচরের ( আবুবকর, উমর, উসমান ও আলী) মধ্যে দু’জনকে নিজের কন্যা বিয়ে দিয়েছেন এবং দু’জনের কন্যা নিজে বিয়ে করেছেন। তাতে তাঁদের সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয়েছে। আমার সম্পূর্ণ পর্যালোচনা ভাল করে পড়ুন। অনেক প্রশ্নের জবাব পাবেন। সেখানে আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে (তথ্যপ্রমাণসহ) বিস্তারিত আছে। তাঁর ১৮ বছর বয়সে মহানবী (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর বাকী জীবনটা দেখুন। মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর কিছু থাকলে সকলকে জানানোর জন্য তিনি আরও ৪৮ বছর সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই (আয়েশা) ছিলেন হাদিসের অন্যতম প্রধান উৎস। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পুত্র ইবরাহিমের মাতা ছিলেন মরিয়ম (রাঃ)।
@শাহেদ ইকবাল,
কোরান তথা আল্লাহ কেন মোহাম্মদের বিধবা পত্নীদের বিবাহ হারম করল? এটা কি অন্যায় নয়? তারা স্বেচ্ছায় যদি বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিত সেটা ছিল অন্য ব্যাপার। কিন্তু নিষেদ্ধাজ্ঞা কেন জারি করা হল, এর যুক্তি কি?
মোওহাম্মদের পরিবারের জন্য যাকাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু গনীমতের মাল নিষিদ্ধ করা হয়েছে কি? যাকাতের তো তাদের দরকার ছিলনা। কারণ মোহাম্মদ গনীমতের মাল তো তাদের জন্য কম রেখে যায়নি!খাইবারের যুদ্ধে ইহুদীদের থেকে লুটে নেয়া বাগান রেখে গিয়েছিল বিবিদের জন্য।
বিয়ে ছাড়া কারো সাথে কি সুসম্পর্ক স্থাপিত হতে পারেনা? চার খলিফার সাথে ত তার আগে থেকেই ভাল সম্পর্ক ছিল। কারো সাথে ভাল সম্পর্কের গড়ার অজুহাতে তার শিশু কন্যাকে যে বিয়ে করতে পারে সে ত বিকৃত যৌন রুচির অধিকারী, জঘন্যতম বাজে লোক।
বর্তমানে কোন মুসলিম এ ্মহান কাজ করেনা কেন?
হাদিসের অন্যতম উৎস আয়েশা মোহামমদ সম্পর্কে য বলে গেছে তা পড়তে ত ঘেন্না লাগে। তার কয়টা বৌ ছিল, কোন রাতে কার সাথে শোত,কি কি করত ! ছি ছি ছি।
মরিয়ম(ম্যারিয়া) কে কি মোহাম্মদ বিয়ে করেছিল? করেনি সে ছিল তার যৌনদাসী। তাহলে ত ইব্রাহিম মোহাম্মদের জারজপুত্র। নবী হয়ে জারজ সন্তানের জন্ম দিল সে? ছি।
@তামান্না ঝুমু,
“কৃষ্ণ করলে লীলা” …….. এই আর কি?
বিশিষ্ট লেখক মন্তব্য করেছেন,
তাইতো স্বয়ং আয়েশাই সখেদে বলেছিলেন পবিত্র পয়গম্বরকে লক্ষ্য করে,
“আপনার প্রভুটি দেখছি আপনার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণে সতত ব্যস্ত”।
কিঞ্চিৎ সংশোধন করে বলতে হবে, কিন্তু তিনিই (আয়েশা) ছিলেন পর্ণো হাদিসের অন্যতম প্রধান উৎস।
@তামান্না ঝুমু,
অসাধারণ!!! :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru:
@তামান্না ঝুমু, আপনি বলেছেন, ‘কোরান তথা আল্লাহ কেন মোহাম্মদের বিধবা পত্নীদের বিবাহ হারম করল? এটা কি অন্যায় নয়? তারা স্বেচ্ছায় যদি বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিত সেটা ছিল অন্য ব্যাপার। কিন্তু নিষেদ্ধাজ্ঞা কেন জারি করা হল, এর যুক্তি কি?`
যাঁদের অন্যায় মনে করার কথা, তাঁরা (নবীর স্ত্রীগণ) অন্যায় মনে করেছেন কি-না, সেটাই প্রশ্ন। আপনার বর্ণনা থেকেই তো দেখা যাচ্ছে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) সংক্রান্ত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিস আপনি পড়েছেন। হাদিস গ্রন্থগুলো পড়লে অন্যান্য স্ত্রীগণের বর্ণনাও পাবেন।
পৃথিবীর একেক দেশে একেক আইন। কোথাও রাস্তার বামদিকে, কোথাও ডানদিকে গাড়ি চালাতে হয়। কেউ সরকারের কাছে জানতে যায় না, এর যুক্তি কি? সরকারের অনেক নির্দেশের পেছনে ঐ নির্দেশ ছাড়া আর কোন যুক্তি পাওয়া যায় না। তবে নবীর স্ত্রীগণের ক্ষেত্রে এটা একটা যুক্তি হতে পারে যে, তাঁরা যদি অন্য কারও সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেন, তাহলে তাঁদের প্রত্যেকের সন্তানগণ নিজেদের নবীর বংশধর বলে দাবী করতেন এবং এটা নিয়ে বড় ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হত। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশে অতীতে এবং বর্তমানেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
আপনি বলেছেন, ‘খাইবারের যুদ্ধে ইহুদীদের থেকে লুটে নেয়া বাগান রেখে গিয়েছিল বিবিদের জন্য।`
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনী, ইতিহাস কিংবা হাদিস—একটাও পড়া থাকলে এই মন্তব্য আর করতেন না। তিনি মৃত্যুর পূর্বে তাঁর সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দান করে গেছেন। উত্তরাধিকারীদের জন্য কিছু রেখে যাননি। তিনি সে সময় বলেছেন, ‘আমাদের (নবীদের) কোন উত্তরাধিকারী হয় না, যা কিছু আমরা রেখে যাব তা সদকাহ।` (সূত্রঃ বুখারী ও মুসলিম, মহানবী, ডঃ ওসমান গনী, পৃঃ ৩৭৬)।
আপনি বলেছেন, ‘বিয়ে ছাড়া কারো সাথে কি সুসম্পর্ক স্থাপিত হতে পারেনা? চার খলিফার সাথে ত তার আগে থেকেই ভাল সম্পর্ক ছিল।`
আরবের সে সময়ের ইতিহাস পড়লে এ কথার উত্তর পাবেন। তখন ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের জন্য বিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। তখন সামাজিক অবস্থা এমন ছিল যে, অতি তুচ্ছ ঘটনা থেকেই মারামারি এবং খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে যেত। ইতিহাস বলছে, হযরত উমর (রা)-এর কন্যা হাফসার ব্যাপারে যদি কোন ফায়সালা না হত, তাহলে ঘটনা যে কোন দিকে মোড় নিতে পারত (সূত্রঃ ‘The Spirit of Islam, Sir Syed Ameer Ali, ড. রশীদুল আলম অনূদিত, ৩য় সংস্করণ, পৃঃ ৩২৯-৩৩০)। আয়েশা (রা)-এর বিয়ের ব্যাপারে আবু বকর (রা) স্বয়ং নবীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন (সূত্রঃ পূর্বোক্ত, পৃঃ ৩২৯)।
হযরত মরিয়ম (রা) মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন না—এ কথার স্বপক্ষে আজ পর্যন্ত কেউ কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ বা তথ্য দিতে পারেননি, শুধু কুৎসাই রটিয়েছেন। কিন্তু তার বিপক্ষে সবগুলো জীবনী ও ইতিহাসে তথ্য পাওয়া যায় (সূত্রঃ মহানবী, ডঃ ওসমান গনী, পৃঃ ৩৮৭)।
@শাহেদ ইকবাল,
যাদের উপর অন্যায় হয় তারা যদি কখনো কারো কাছে অভিযোগ না করে তাহলে সে অন্যায় কি ন্যায় হয়ে যায়? পৃথিবীতে কত নিপীড়িত মানুষ নীরবে নিপীড়ন সহ্য করে যাচ্ছে তাই কি তা ন্যায় হয়ে গেছে? মোহাম্মদের পত্নীরা তাদের উপর মোহাম্মদের যেকোন অন্যায়কে অন্যায় মনে করবে কীকরে? তাদের মনে ত সে কোরানী সীল মোহর মেরে দিয়ে প্রকাশ্যে, নিশ্চিন্তে লাম্পট্য করেছে। সে অসংখ্য বৌয়ের মেলা বসিয়েছে আর বৌয়েরা সে মারা যাবার পরেও বিয়ে করতে পারবেনা! একেই বলে সুবিবেচনা!
পৃথিবীর একেক দেশে একেক আইন। কিন্তু সে আইন সবার জন্য। আইন প্রণেতার জন্য ভিন্ন আইন নয়। যে দেশে রাস্তার ডান দিকে গাড়ি চালাতে হয় সে দেশে সবাই ডান দিকে চালায়। কেউ বাম দিকে চালায় না। সব বিধবা নারী বিয়ে করতে পারবে কিন্তু শুধু তার বিধবা বোউয়েরা কেন পারবেনা। মানুষের কার্য কলাপে সব সময় যুক্তি নাও থাকতে পারে, কিন্তু আল্লার সব কাজে ত যুক্তি অবশ্যই থাকতে হবে।
তাদের অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে তাদের সন্তানেরা নবীর বংশধর দাবী করত। মোহাম্মদ এ ব্যাপারে আল্লার মাধ্যমে বলিয়েছে এক কথা আর আপনি বলছেন অন্য কথা! আল্লা বলেছে নবীর পত্নীরা মোমিনদের মা। তাই পুত্রেরা মাতাদেরকে বিয়ে করতে পারবেনা। আপনি মোহাম্মদের হংসা ও লাম্পট্যকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আল্লার কথার উপরে কথা বলছেন!
মোহাম্মদ যদি তার বিবিদের জন্য কিছু না রেখে যায় তার এতগুলো তার মৃত্যুর পর জীবিকা নির্বাহ করেছিল কীভাবে ? তারা কি স্বাবলম্বী ছিল, নাকি তার মৃত্যুর পর তাদেরকে কখনো স্বাবলম্বী হতে বলা হয়েছিল?
সামান্য কারণে বা অকারণে ত মোহাম্মদও অনেক মানুষ খুন করেছে। শান্তিপ্রিয় মানুষকে জিহাদে উদবুদ্ধ করেছে, গনিমত ও স্বর্গের লোভ দেখিয়ে। লুট তরাজ করেছে। তখনকার আরবের মানুষকে যতটা বর্বর বলা হয় কোরান ও মোহাম্মদ তার চেয়ে অনেক বেশী বর্বর। বিয়ে করে করে সুসম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতিটি খাদিজা মারা যাবার পরে আবিষ্কৃত হল কেন? খাদিজার জীবদ্দশায় ত সে আর কোন বিয়ে করেনি,আপনার যুক্তি অনুযায়ী তখন কি তার সাথে কারো সুসম্পর্ক ছিলনা? কোন বৃদ্ধ লোক তার বন্ধুর কন্যাদেরকে কীকরে বিয়ে করে, তারা কি তার কন্যা সমতুল্য নয়? তাদের গায়ে হাত দেয়ার আগে কি তার একটুও বিবেকে বাধেনি? আল্লা তাহলে শিশুবিবাহ, বহুবিবাহ,বহুগামিতা সমর্থন করে!মোহাম্মদ তার প্রয়োজন মত , সময়মত সবকিছু আল্লার মাধ্যমে বলিয়ে নিয়েছে। তা কেউ কেউ বিশ্বাস করেছে। যারা বিশ্বাস করেনি তাদেরকে আল্লার মাধ্যমে শুয়র, বানর বলে গালি দিইয়েছে। আল্লা গালি দেয়! গালি কী ধরনের মানুষে দেয়?আয়শাকে বিয়ে করতে মোহাম্মদ প্রস্তাব দিয়েছিল। সে নাকি স্বপ্ন দেখেছিল! আবু বক্কর প্রস্তাব দিলেও সে বিয়ে করল কেন একটা শিশুকে, প্রস্তাব পেলেই একজন বিবাহিত মানুষ খালি বিয়ে করতে থাকবে?
মোহাম্মদের জীবিকা কি ছিল? সে এতগুলো বিবি ও দাসীর ভরন পোষন করত কিভাবে?
মারিয়া বিবাহিত বিবি না হলেই অসুবিধা কোথায়? কোরান কি দাসী সম্ভোগ বৈধ করেনি? আল্লা কত মহান! না হলে এত মহান জিনিস ককরে বৈধ করেন??
খাদিজাকে বিয়ে করার পর মুহাম্মাদ তার পরিবারের ভরণ পোষনের দায়িত্বে কোন কাজে (জীবিকা) জড়িত ছিলেন বলে জানা যায় না। শুধু সেই নয়, যে সমস্ত সাহাবারা নিঃস্ব হাতে মদীনায় হিজরত করিছিল তারাও কোন দীর্ঘ মেয়াদী জীবিকা-কার্যে মদীনায় জড়িত ছিল তারও কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায় না। তা সত্বেও মদীনার মাত্র ১০ বছরে (৬২২-৬৩২) [এবং পরবর্তী মুসলীম শাসন আমলে] তার বহু বিশিষ্ট সাহাবী বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদের মালিক হন। বলাই বাহুল্য ঐ অর্থ-সম্পদের উৎস ছিল অমুসলীমদের সম্পত্তি-লুন্ঠন (‘গণিমতের মাল’)। লুন্ঠন কৃত সামগ্রীর ১/৫-অংশ মুহাম্মাদের জন্য বরাদ্দ আর ৪/৫-অংশ লুন্ঠনে অংশ-গ্রহনকারী সাহাবারা – আল্লাহ-মুহাম্মাদের বিধান অনুযায়ী (সুরা আনফাল ৮ঃ৪১)।তৎকালীন আরবে অন্যান্য গ্যাং লিডাররা তাদের লুন্ঠনের ১/৪ অংশ হিস্যা নিতো, তার অন্যান্য সাথীরা পেত ৩/৪-অংশ)। মুহাম্মাদ আল্লাহর নবী, অন্যান্য গ্যাং লিডারদের সাথে তার পার্থক্য আছে। তিনি তার সাহাবীদের জন্য ৩/৪-অংশের এর পরিবর্ত ৪/৫-অংশ করেছিলেন। তার এ মহানুভবতায় সাহাবারা কৃতজ্ঞ ছিল।
@তামান্না ঝুমু, ‘মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পত্নীদের মনে কোরআনী সীলমোহর মেরে দেয়া হয়েছে; তাই তাঁরা নবীর যে কোন অন্যায়কে অন্যায় মনে করতে পারেনি।`—আপনার এই কথা আপনার নিজের কথার সাথেই Contradict করে। খায়বরের ইহুদী রমণী নবীকে বিষ খাওয়াতে পারল কিভাবে? তাকে কোরআনী সীলমোহর মারা গেল না কেন? আব্দুল্লাহ্ বিন উবাই সারাজীবন নবীর পেছনে নামায পড়েও মুনাফিক থাকল কিভাবে? নবীর স্ত্রীদেরকেই শুধু কোরআনের সীলমোহর মারা গেছে, একজনকেও শয়তান বিগড়াতে পারে নাই—এটা কি কোন যুক্তিতে আসে? একমাত্র আল্লাহ্র হুকুম ছাড়া এর আর কোন ব্যাখ্যা কি পাওয়া যায়? আল্লাহ্ নবীর স্ত্রীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘আর তাদেরকে তুমি যা দিবে, তাতে তাদের প্রত্যেকেই প্রীত থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে, আল্লাহ্ তা জানেন।` (সুরা আহযাব, ৫১)।
আপনি লিখেছেন, ‘পৃথিবীর একেক দেশে একেক আইন। কিন্তু সে আইন সবার জন্য। আইন প্রণেতার জন্য ভিন্ন আইন নয়।` আপনার এ কথার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেই আইনপ্রণেতারা নানা সুবিধা ভোগ করেন। তারা শুল্কমুক্ত গাড়ি পান, ভিভিআইপি সুবিধা পান, যা অন্যরা পায় না। রাষ্ট্রপতির অবস্থা তো আরও আলাদা। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সকল প্রকার বিচার থেকে দায়মুক্ত (Immune) থাকেন। এ সুবিধা আর কেউ পায় না। স্বৈরশাসকদের কথা বাদই দিলাম।
একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধান ও আইনপ্রণেতাগণকে এমন কিছু আচরণবিধি মানতে হয়, যা অন্যদের মানতে হয় না। সে আচরণবিধি তাদের পরিবারকেও মানতে হয়। তারাও যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন না। যে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন না। সরকারী কর্মকর্তাদেরও (পরিবারসহ) বিশেষ আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। মুহাম্মদ (সাঃ) যখন রাষ্ট্রপ্রধান, তখন একই কারণে তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, যা অন্যদের উপর করা হয়নি।
শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশেই সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়। কিন্তু ইসলামের সে সময়ের রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে কোন নাগরিক যে কোন প্রশ্ন তুলতে পারত। কোরআন ও হাদিসের অধিকাংশ বর্ণনাই এসেছে প্রশ্নের উত্তর হিসেবে। উমর (রা) যখন রাষ্ট্রপ্রধান, তখন তাঁকে জুমআর নামাযে খুতবার মাঝখানে খুতবা থামিয়ে সাধারণ নাগরিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। উমর (রা) সন্তোষজনক উত্তর দিয়ে তারপর প্রশ্নকারীর কাছে জানতে চেয়েছেন, সন্তোষজনক উত্তর না পেলে তুমি কি করতে? সে ব্যক্তি তলোয়ার উঁচিয়ে বলেছে, এভাবে মীমাংসা করতাম।
‘তাদের অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে তাদের সন্তানেরা নবীর বংশধর দাবী করত। মোহাম্মদ এ ব্যাপারে আল্লার মাধ্যমে বলিয়েছে এক কথা আর আপনি বলছেন অন্য কথা! আল্লা বলেছে নবীর পত্নীরা মোমিনদের মা। তাই পুত্রেরা মাতাদেরকে বিয়ে করতে পারবেনা। আপনি মোহাম্মদের হংসা (শব্দটা বোধগম্য নয়, মনে হয় ‘হিংসা` হবে) ও লাম্পট্যকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আল্লার ুকথার উপরে কথা বলছেন!`—এ কথাটি হেত্বাভাসের (Fallacy) একটি চূড়ান্ত নমুনা। ‘নবীর পত্নীরা মোমিনদের মা, তাই পুত্রেরা মাতাদেরকে বিয়ে করতে পারবেনা`—এ রকম কথা কোরআনে আছে বলেই তো তাঁরা (নবীর স্ত্রীগণ) অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারেননি। কোরআনে তা না থাকলে তো তাঁরা মোমিনদের মা হচ্ছেন না! তখন অন্য কাউকে বিয়ে করতেও অসুবিধা হচ্ছে না। আর তখন তাঁদের সন্তানদের নবীর বংশধর দাবী করার যে আশংকার কথা বলেছি, সে প্রসঙ্গ আসছে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে আপনারা নিজেরাই কার্যকারণ গুলিয়ে ফেলছেন এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এখন কি ভুলটা বুঝতে পারছেন?
এখানে আরও একটা জিনিস চিন্তা করা দরকার। এই স্যাটেলাইট যুগেও কি অনেক ‘পীর` (কোন কোন দেশের রাজা-বাদশাও) নিজেদের নবীর বংশধর বলে দাবী করছেন না? কেউ কেউ কি তা বিশ্বাসও করছেন না? নবীর স্ত্রীদের বিবাহ না করেই যদি এ অবস্থা হয়, করলে কি অবস্থা হতো তা কি অনুমান করা যায়? তখন তাদের দাবী কে অগ্রাহ্য করত আর হানাহানিই বা কে থামাত?
শেষের অনুচ্ছেদে যা লিখেছেন, তা অন্ধবিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু নয়। তাছাড়া তা নির্ভরযোগ্য সকল ঐতিহাসিক দলিলের বিপরীত। যে মতবাদ আমার পছন্দ, তার জন্য যুদ্ধ করা ভাল আর যে মতবাদ আমার পছন্দ নয়, তার জন্য যুদ্ধ করা বর্বরতা—এ মানসিকতা হলো ডাবল স্ট্যাণ্ডার্ড, যা অন্ধ গোঁড়ামী থেকে উদ্ভূত। এ মানসিকতা মুক্তমনার সাথে যায় না। পৃথিবীতে এমন কোন আদর্শ নেই, যার জন্য লড়াই করতে হয়নি। সমাজতন্ত্রের জন্য জার শাসিত রাশিয়ায়, ফরাসী উপনিবেশ আলজিরিয়ায় ও ভিয়েতনামে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছে। চে গুয়েভারা নিজের দেশ ছেড়ে কিউবায় সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন। তারপর যুদ্ধ করেছেন বলিভিয়ায়। ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ ও সূর্যসেনকে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন করতে হয়েছে (সূত্রঃ ওরা আকাশে জাগাতো ঝড়, শৈলেশ দে, কলিকাতা)। ব্রিটিশশাসকগোষ্ঠি তাদের ‘সন্ত্রাসী` আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু আমরা কি তাদের ‘সন্ত্রাসী` বলি? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও সকল ক্ষেত্রে রক্ষণাত্মক ছিল না। ২৪ মার্চ চট্টগ্রামে প্রথম আক্রমণ বাঙালিরাই করে। মুক্তিবাহিনী যেখানেই সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই আগে আক্রমণ করেছে। তারপর পরাজিত প্রতিপক্ষের অস্ত্র ও রসদ তাদের হস্তগত হয়েছে। তারা প্রতিপক্ষকে ডেকে সেগুলো ফেরত দিতে যাননি (সূত্রঃ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম)। তাই বলে তারা কি বর্বর? যুদ্ধরত অবস্থায় প্রতিপক্ষের কাউকে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ নয়, বেসামরিক ব্যক্তিকে (নারী, শিশু ও যারা যুদ্ধরত নয়) হত্যা করাই যুদ্ধাপরাধ। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর যুদ্ধনীতি কেমন ছিল তা আমার মূল লেখায় Reference সহ উল্লেখ করেছি। এ যুদ্ধনীতি বর্তমানে জেনেভা কনভেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বর্তমান সময়েই এমন ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে যে, একই ব্যক্তি একই কাজের জন্য দুই শ্রেণীর কাছে দুই রকম খেতাব পেয়েছেন। যেমন, ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন ব্রিটিশ সরকারের তালিকায় এক নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। পরে সেই তিনিই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। নেলশন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের তালিকায় যে কাজের জন্য এক নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন, সে কাজের জন্যই পরে তিনিও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। এ থেকেই প্রমাণ হচ্ছে যে, একই সময়ে একটি আদর্শকে ‘ভাল` ও ‘মন্দ` দুইভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ফলে সে আদর্শের জন্য যুদ্ধ করা কারও চোখে ‘ভাল`, আবার কারও চোখে ‘মন্দ` লাগছে। এটাই Theory of Relativity! বাংলায় যে প্রবাদটি আছে, তা এমনি এমনি আসেনি—‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা।`
কোরআনে আছে, অতীতের কিছু কিছু সম্প্রদায় তাদের সীমাহীন পাপের কারণে শুকর ও বানরে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্ কাউকে শুকর ও বানর বলে গালি দিয়েছেন, এরকম একটা আয়াতও কোরআন থেকে দেখাতে পারবেন না। একইভাবে কোরআন দাসী সম্ভোগ বৈধ করেছে, এর স্বপক্ষে একটা আয়াতও দেখাতে পারবেন না। দাসদাসী সংক্রান্ত আয়াতগুলো দেখাচ্ছিঃ
‘তোমাদের মধ্যে কারও স্বাধীন বিশ্বাসী নারী বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত বিশ্বাসী দাসী বিবাহ করবে।`(সুরা নিসা, ২৫)।
‘তোমাদের মধ্যে যারা ‘আয়্যিম` (স্বামী বা স্ত্রীবিহীন), তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও।`(সুরা নূর, ৩২)।
‘এরপর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে; তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়।`(সুরা আহযাব, ৫২)।
আয়াতগুলো থেকে কি বুঝা যায়? প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, দাসীদেরকে বিয়ে করতে, দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, নিজে বিয়ে করতে না পারলে অধীনস্থ দাস-দাসীদের অন্যত্র বিয়ে দিতে এবং সর্বশেষ আয়াতে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তিনি অন্যদের মত স্বাভাবিক কোন রমণীকে আর বিয়ে করত
@শাহেদ ইকবাল,
হংসা মানে হংস মানে হাঁস। রাজহংস। মুহাম্মদ একজন রাজরজহংস।
@তামান্না ঝুমু, শেষের অনুচ্ছেদটি কোন কারণে সম্পূর্ণ যায়নি, আংশিক গেছে। অনুচ্ছেদটি আবার পোস্ট করলামঃ
আয়াতগুলো থেকে কি বুঝা যায়? প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, দাসীদেরকে বিয়ে করতে, দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, নিজে বিয়ে করতে না পারলে অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে অন্যত্র বিয়ে দিতে এবং সর্বশেষ আয়াতে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তিনি অন্যদের মত স্বাভাবিক কোন রমণীকে আর বিয়ে করতে পারবেন না। কিন্তু দাসীদেরকে বিয়ে (স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ) করতে পারবেন। আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার সময়ানুক্রম (Chronology) অনুযায়ী উদ্ধৃত করা হয়েছে। এখানে বিবাহ বহির্ভূতভাবে দাসী সম্ভোগের উল্লেখ কোথায়? মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাড়িতে সে রকম কোন দাসী থাকলে তার নাম কিংবা বর্ণনা কোন না কোন ইতিহাসগ্রন্থে অবশ্যই থাকত। হাদিসেও থাকত। নাই কেন?
@শাহেদ ইকবাল,
৪;২৪ , ২৩;৫,৬, ৩৩;৫০, ৭০;২৯,৩০
এই আয়াত গুলোতে কী বলা হয়েছে?
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান। যাকে ইচ্ছা পথ ভ্রষ্ট করেন। কফেরদের হৃদয়ে,চোখে ও কানে তিনি সীল মেরে দিয়েছেন। এই কথাগুলো অনেকবার বলা হয়েছে।
ইহুদী নারী মুহাম্মদকে বিষ খাওয়ানোর সময় আল্লাহ কোথায় ছিল? যেসব ফেরেশতাকে অদৃশ্যভাবে যুদ্ধ করতে পাঠানো হত তারা কোথায় ছিল?
তার মানে মুহাম্মদ নিজেও এর ব্যতিক্রম ছিলনা!
কোরানে কয়েকটি আয়াত আছে যেখানে মানুষকে শুকর ও বানর বলে গালি দেয়া হয়েছে। আপনি বলছেন তারা সীমাহীন পাপের ফলে শুকর ও বানরে পরিণত হয়েছিল। তার মানে মানুষ শুকর ও বানরে বিবর্তিত হয়েছিল? আর যদি বানর শুকর আল্লার কাছে নিকৃষ্টতর বা ঘৃণার প্রাণী হয়ে থাকে তাহলে তিনি ওদের সৃষ্টি করেছেন কেন?
কোরানে ত বলা হয়েছে নবীর কথার উপরে কথা নাই।
কোরান ত পৃথিবী সৃষ্টির বহু আগেই লিখে লওহে মাহফুজে রেখে দেয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উত্তর সবই ত নির্ধারিত। সূর্য সারা রাত আল্লার আরশের নীচে বসে তার এবাদত করে এটাও ত হাদিসে আছে।
জুমার নামাজে আসার সময় সবাই তলোয়ার নিয়ে আসত! প্রশ্নের উত্তর পছন্দ না হলেই তার মিমাংসা তলোয়ার দিয়ে করতে হবে? মেট্রিকে পাঠয় (য ফলা আসছেনা) ছিল মানুষ মুহাম্মদ সঃ নামে একটি প্রবন্ধ। কার লেখা মনে পড়ছেনা। সেখানে মুহাম্মদ ও সাহাবীদের গুণগান করা হয়েছে ভালভাবেই। সে প্রবন্ধেই বলা হয়েছে, মুহাম্মদের মৃত্যু সংবাদ যখন উমরের কাছে পৌঁছানো হয় তখন সে তলোয়ার উঁচিয়ে বের হয়ে বলেছিল, যে বলবে মুহাম্মদ নাই তার মাথা যাবে।
প্রিয়জনের মৃত্যুতে সবাই ব্যথিত হয়। তাই বলে তলোয়ার বের করতে হবে? তার মানে তলোয়ার তাদের নত্য সময়ের সাথি ছিল! এত অদৃশ্য ফেরেশতা থাকতে, আল্লা থাকতে হাতিয়ার দরকার কেন?
তাই নাকি? দেখুনঃ
কুরানে গালি/আভিশাপ শুরু হয়েছে প্রথম (২:৭) থেকে শেষ পর্যন্ত (১১১:১-৫)। It is a manual of hate. মুহাম্মাদকে (আল্লাহর ) ‘অস্বীকারকারীরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব”, তারা অপবিত্র (৯:২৮)।। মুহাম্মাদকে ‘স্বীকার’ করার সংগে সংগে হয়ে যাবে পবিত্র (??!!), কত সহজ তরিকা। জানি শাহেদ সাহেব হয়তো আবার তেনা প্যাচাবেন, যেমনঃ “সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব বলেছে, কুত্তা বলেছে; কিন্তু শুকুর-বানর তো আর বলে নাই।” ইত্যাদি, ইত্যাদি।
@গোলাপ, আপনার মন্তব্যের জবাব নিচেই অন্য একটি মন্তব্যে দেয়া হয়েছে। কুকুরের এই উদাহরণ আপনার কাছে গালি মনে হচ্ছে কেন? কুকুরের একটি স্বভাব বা আচরণকে এখানে উদাহরণ হিসেবে আনা হয়েছে। এখানে কি এমন কোন বর্ণনা আছে যে ঐ প্রাণীটি মন্দ কিংবা তার সেই আচরণ মন্দ? প্রকৃতপক্ষে কুকুর, বানর, শুকর—এগুলোর একটিও আল্লাহ্র কাছে নিকৃষ্টতর বা ঘৃণিত প্রাণী নয়, কিন্তু মানুষের কাছে তারা ঘৃণিত। তাই মানুষ মানুষকে এ সকল নামে গালি দেয়। আপনার কাছেও তাই গালি বলে মনে হচ্ছে। অবিশ্বাসীদের কাজকে আরও অনেক কিছুর সাথে তুলনা করা হয়েছে (যেমন, মাকড়সার জাল), যেগুলোকে আমরা গালি বলি না। এছাড়া ৯:২৮ আয়াতের Reference দিয়ে যা লিখেছেন, সে রকম কোন কথা ওই আয়াতে নাই। অন্যের উপর ভরশা না করে নিজেই কোরআনটা পড়ে দেখুন।
@তামান্না ঝুমু, ইহুদী রমণী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বিষ খাওয়ানোর সময় আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণ যেখানে থাকার সেখানেই ছিলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) সেই বিষ খেয়েছেন, কিন্তু বিষ ক্রিয়া করেনি। তিনি সেই রমণীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন সে এ কাজ করেছে? উত্তরে বলা হয়েছিল, তাঁকে হত্যা করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছিলেন, ‘এভাবে আমার মৃত্যু আল্লাহ্র অভিপ্রায় ছিল না।` কিন্তু সেই ইহুদী রমণীর জন্য আগে থেকে নির্ধারিত ছিল যে, সে এই চেষ্টা করবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের জন্য প্রণীত বিধিবিধান, যা মুসলিম ও নন-মুসলিম সকল দেশেই অনুসৃত হচ্ছে—তা ধর্মগুলো প্রবর্তনের পরের ঘটনা। আগের ঘটনা নয়। আগেই লিখেছি, যুদ্ধবন্দীদের প্রতি অনুসরণীয় নীতিমালা ও বেসামরিক নাগরিক সংক্রান্ত নীতিমালার সিংহভাগই ইসলাম থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে জেনেভা কনভেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাজেই সরকারপ্রধানদের জন্য কিছু কিছু বিধিনিষেধ ও কিছু কিছু সুবিধা, যা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও আছে, তা ইসলাম থেকে গৃহীত হতেই পারে। আসল কথা হলো, সরকার যিনি চালান, তাঁর Liability ও Authority দুটোই থাকতে হবে। যাঁর দায়িত্ব যত বেশি তাঁর Logisticsও ততবেশি থাকবে।
আগেই বলেছি, আল্লাহ্ কাউকে শুকর ও বানর বলে গালি দিয়েছেন, এরকম একটা আয়াতও কোরআনে নেই। কিন্তু একই কথা আপনি আবারও Reference ছাড়া বলছেন কেন? বানর-শুকর আল্লার কাছে নিকৃষ্টতর বা ঘৃণার প্রাণী নয়, কিন্তু মানুষের কাছে তারা ঘৃণিত। তাই মানুষ মানুষকে এ সকল নামে গালি দেয়। তারা যে সকল নামে অপরকে গালি দেয়, সে সকল প্রাণীতে পরিণত করে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়। এটা মানুষের জন্য অপমানজনক। কিন্তু আল্লাহ্র কাছে তারাও তাঁর প্রিয় সৃষ্টি। এ কারণে কোরআনে অবিশ্বাসী ও অকৃতজ্ঞ মানুষকে এ সকল পশুরও অধম বলা হয়েছে। কেননা, এ সকল পশুর বিচার হবে না।
হাদিসগুলো ভাল করে পড়লে সেখানে পাবেন সাহাবাগণ কতভাবে নবীর কথার সাথে দ্বিমত করেছেন। নবী তাঁদের সাথে পরামর্শ করেছেন। বহুবার নিজের মত পরিবর্তন করে সাহাবাগণের মত গ্রহণ করেছেন।
‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান। যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। কফেরদের হৃদয়ে, চোখে ও কানে তিনি সীল মেরে দিয়েছেন।`—এই কথাগুলোই এর আগের একটি মন্তব্যে আমি নিজে উল্লেখ করেছি। কোরাআন যে পৃথিবী সৃষ্টির বহু আগেই লিখে লওহে মাহফুজে রেখে দেয়া হয়েছিল। প্রশ্ন-উত্তর সবই যে পূর্বনির্ধারিত—এতেও কোন সন্দেহ নেই। স্টিফেন হকিং তাঁর A Brief History of Time গ্রন্থের The Unification of Physics অধ্যায়ে বলেছেন, ‘ঈশ্বর কালে অবস্থান করেন না, বরং কাল তাঁর সৃষ্টি।` কাজেই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তাঁর নখদর্পণে থাকাই স্বাভাবিক। কোরআনও এ কথাই বলছে। কোরআন বলছে, ‘কিন্তু তুমি আল্লাহ্র বিধানের কখনও কোন পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহ্র বিধানের কোন ব্যতিক্রমও দেখবে না।`(সুরা ফাতির, ৪৩)। আরও বলছে, ‘সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত।` (সুরা বাকারা, ২৫৫)।
মসজিদে তলোয়ার বের করা সম্পর্কে যা বলেছেন, সে সম্পর্কে বলছি, দুটো পৃথক পৃথক ঘটনার উদাহরণ থেকেই সবসময় সবার কাছেই তলোয়ার ছিল, এ রকম অতি সরল অনুমান করা যায় না। তবে বর্তমান সভ্য দেশগুলোতেও যে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ছাড়া চলাফেরা করা যায় না, এটা তো দেখাই যাচ্ছে। ‘এত অদৃশ্য ফেরেশতা থাকতে, আল্লাহ্ থাকতে হাতিয়ার দরকার কেন?`—এ রকম প্রশ্নের উত্তর আগেও দিয়েছি। এখন শুধু কোরআনের এ আয়াতগুলো পড়ুনঃ
‘তারা বলে, ‘তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন প্রেরিত হয় না?` (সুরা আনআম, ৮)। ‘যদি তাকে ফেরেশতা করতাম, তবে তাকে মানুষের আকৃতিতেই প্রেরণ করতাম আর তাদেরকে সেরূপ বিভ্রমে ফেলতাম যেরূপ বিভ্রমে তারা এখন রয়েছে।`(সুরা আনআম, ৯)।
‘আমি যদি তোমার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি তা হস্ত দ্বারা স্পর্শও করত তবুও কাফেররা বলত, ‘এটা স্পষ্ট জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।` (সুরা আনআম, ৭)।
‘যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার খুলে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে থাকে, তবুও তারা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।` (সুরা হিজর, ১৪-১৫)।
@শাহেদ ইকবাল,
সবই আল্লার ইচ্ছা। কী বলেন? তিনি যদি নির্ধারণ করে দেন সামান্য ইহুদী নারীর কি শক্তি আছে সে কাজ না করার? বিষ প্রয়োগে মুহাম্মদের মৃত্যু হবে কীকরে? সে নিজে ত তার চেয়ে বেশি বিষাক্ত ছিল।
আল্লার মত আমার কাছেও কোন প্রাণী ঘৃণিত নয়। আসলেই আল্লা শুকরের মত, আর রাসুল বানরের মত ভাল। গালি দিচ্ছিনা কিন্তু। আল্লাপাক আসলেই শুকরকে খুব ভালবাসেন। এজন্য তিনি শুকর হারাম করেছেন। অন্য প্রাণী হত্যা করলে তিনি খুশি হন। কিন্তু তার বন্ধু শুকর হত্যা কিছুতেই করা যাবেনা। অবিশ্বাসী হলেই অধম হতে হবে? কয়েকজন অধমের ্নাম বলছি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্টিভেন হকিং, রিচার্ড ডকিন্স প্রমূখ।
পশুদের বিচার না হলে ত অবিশ্বাসীদেরও বিচার না হওয়ার কথা। যেহেতু তারা আল্লার কাছে পশুর সমতুল্য। অবিশ্বাসীরা যে বলে পরকাল নেই, তা ত ঠিকই আছে! মানুষও ত এক প্রকারের এনিমেল।
সবকিছু যদি পূর্বনির্ধারিত হয় তাহলে ত কারো অপরাধের জন্য কেউ দায়ী নয়। কে কাফের হবে , কে মোমিন হবে সবই ত পূর্বনির্ধারিত। আবু লাহাব্র জন্মের আগেই তাকে গালি লিখে যত্ন করে রাখা হয়েছিল।
অতীত, বর্তমান, ভবিষয়ত বলতে কোন কাল নেই। মহাবিশ্ব এখনো সৃষ্টি হয়নি। আমি এখন লিখছি,কেয়ামতে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক আগেই। মুহাম্মদ উটের মুত্র পান করছে। গৌতম বুদ্ধ গলিত পুঁজ পান করছেন।
@শাহেদ ইকবাল,
অথচ জনাব ইকবাল, উইকিপিডিয়া তো বলছে ভিন্ন কথা।
মারিয়া কিবতিয়া, উইকিপিডিয়া, এখানে দেখুন।
এখন আপনিই বলুন, কার বর্ণনা আমরা গ্রহণ করবো, ডঃ ওসমান গণী নাকি ইবনে ইসহাক এর?
@সফ্টডক, সীরাত ইবনে ইসহাকের (Ibn Hisham’s notes) মধ্যে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রীর তালিকায় যেমন মারিয়ার নাম নেই, তেমনি মিশরের রাজার কাছ থেকে এই নামের কাউকে উপহার হিসেবে পাওয়ার বর্ণনাও নেই। ইবনে ইসহাকের জীবনীতে মারিয়া নামের কারও কোন অস্তিত্বই নেই। কিন্তু অন্যান্য জীবনী ও ইতিহাসগ্রন্থে তাঁকে উপহার হিসেবে পাওয়ার বর্ণনা যেমন আছে, তেমনি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার বর্ণনাও আছে, যা Wikipedia-তেও বর্ণিত হয়েছে। তবে ইবনে ইসহাকের গ্রন্থে যে মারিয়া নামের কাউকে উপহার পাওয়ার বর্ণনাও নেই, তা Wikipedia`র উচিৎ ছিল স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা।
Wikipedia এমন একটি ওয়েবসাইট, যা বিভিন্ন বিষয়ে দর্শকদের কাছ থেকে Reference চায়। সেখানে Edit অপশনে গিয়ে ইচ্ছামত Edit করা যায়। যে কারণে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করলে প্রায়ই লক্ষ্য করবেন, একদম উপরে লেখা থাকে—‘Sources are not verified`। আরও একটা জিনিস লেখা থাকে, যা আমি হুবহু কপি করে দেখাচ্ছিঃ
”This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.”
এ কারণে আমি Wikipedia-কে একশ`ভাগ নির্ভরযোগ্য সাইট বলে মনে করি না।
@শাহেদ ইকবাল,
আপনার সমস্যা তো এ জায়গায়, পছন্দের হলে সাইট শতভাগ নির্ভরযোগ্য, আর মনোমত না হলেই —।
আপনার নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলো পড়েই বলুন তো মহাপুরুষটি কতদিন মাতৃগর্ভে ছিলেন?
পিতা আব্দুল্লাহ কবে মারা যান, আর ঠিক কবে তাঁর জন্ম হয়? আন্দাজে ঢিল ছুঁড়বেন না, তথ্য ও শতভাগ নির্ভরযোগ্য সূত্রসহ উত্তর দিন।
@সফ্টডক, আমার অনুরোধ, মন্তব্য যদি করতেই হয়, বস্তুনিষ্ট মন্তব্য করুন। উইকিপিডিয়ার সীমাবদ্ধতা উদাহরণসহ দেখিয়েছি। যেখানে তারা নিজেরাই বলছে, ‘Sources are not verified`, সেখানে আমার পছন্দ-অপছন্দে কি আসে যায়? এর আগেও দেখেছি, ইন্টারনেটে নিজের পক্ষে কোন লেখা দেখলেই তাকে আপনারা ধ্রুবসত্য মনে করেন। ভবঘুরে সাহেবের দেয়া এরকম কয়েকটি লিংকের স্ববিরোধী চরিত্র আমার মূল প্রবন্ধেই উল্লেখ করেছি। ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট হলেই তা ধ্রুবসত্য হয় না। আমার মূল প্রবন্ধ দেখুন। বিভিন্ন সময়ের মন্তব্যগুলো দেখুন। যতগুলো ওয়েবসাইটের Reference আছে, সবগুলোই হয় NASA কিংবা প্রতিষ্ঠিত কোন Science Journal-এর ওয়েবসাইট, আর না হয় স্বীকৃত কোন বিজ্ঞানীর লেখা গ্রন্থ। অজ্ঞাতনামা কিংবা Referenceবিহীন ওয়েবসাইট আমি ব্যবহার করি না।
শেষে যে সব প্রশ্ন করেছেন, সে সব প্রশ্নের সাথে আমার মূল লেখার কোন সম্পর্ক নেই। আপনার আগ্রহ থাকলে Sirat Ibne Ishhaq কিংবা Sirat Ibn Hisham দেখতে পারেন। এটা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থ। মূল প্রবন্ধে কিছু বইয়ের তালিকা আছে, সেগুলোতেও পাবেন। Ibne Ishhaq কিংবা Ibn Hisham বর্তমানে অনলাইনেও পাওয়া যায়। অনলাইনের ঠিকানাঃ
Sirat Ibne Ishhaq:
http://www.archive.org/details/Sirat-lifeOfMuhammadBy-ibnIshaq
Sirat Ibn Hisham pdf:
http://www.mediafire.com/?1ydxytzdzjj
@শাহেদ ইকবাল,
ভাইজান, একটা প্রশ্ন করি। আপনার ড. ওসমান গনী কি ইবনে ইসহাক, হিসাম , তাবারী এদের চাইতে বেশী ইসলাম জানে নাকি ? ওসমান গনীর নিজের মনের মাধুরী মিশানো কথা তো কোন রেফারেন্স হতে পারে না। তেমনি পারে না গোলাম মোস্তফা বা ড. এনামুল হকের মনগড়া কথায় ভরপুর মহানবী মোহাম্মদের জীবনীর কথা। আপনার এটুকু সাধারন জ্ঞান থাকা উচিত।
@ভবঘুরে, অনুমান-নির্ভর মন্তব্য না করে দয়া করে ‘মহানবী` বইটা জোগাড় করুন। তারপর সেখানে ব্যবহৃত Referenceগুলো দেখুন। ইবনে ইসহাক, ইবনে হিশাম ও তাবারীর Reference সেখানেই পাবেন। বইটা কেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিভুক্ত তা-ও জানতে পারবেন। ইবনে ইসহাক, ইবনে হিশাম-এর প্রতি এখন যে এত অনুরাগ, সেখানে তো উল্লেখ আছে মুহাম্মদ (সাঃ) কাবাগৃহ থেকেই মেরাজে গমন করেছিলেন। আপনি মনের মাধুরী মিশানো উম্মে হানির ওই বর্ণনা কোথায় পেলেন? সেই Reference তো আজ পর্যন্ত পেলাম না।
@শাহেদ ইকবাল,
মুহাম্মদ কাবা থেকেই যদি মেরাজে গিয়ে থাকে, যাওয়া বা আসার সময় তাকে কেউ দেখেছিল কি? সে মেরাজের ঘটনা মানুষের কাছে বর্ণনা করেছে। কিন্তু কোন ভিডিও বা ছবি দেখাতে পেরেছিল কি? অহ আল্লা ত আবার ক্যামেরা বানাতে জানেনা!
@তামান্না ঝুমু, এরকম একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা আমরা যদি মানুষের কাছে বলতে যাই, তাহলে আমাদের ভিডিও বা ডকুমেন্ট লাগবে। কারণ, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মত আমাদের সেরকম কোন অতীত জীবন (নবুয়ত পূর্ববর্তী চল্লিশ বছর) নাই। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নাই। বঙ্গবন্ধু যখন ৭ই মার্চ বিপুল সংখ্যক জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখলেন, ‘আমার উপর কি তোমাদের আস্থা আছে?’ সবাই হাত তুলে বলল, ‘হ্যাঁ`। এরকম আমরা বললে হবে? এখানে জনতার সামনে ছিল তাঁর অতীত।
একটা জিনিস কখনও বুঝতে পারবেন কি-না জানি না। ‘মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র নবী, প্রমাণ কি? কোরআন বলেছে। কোরআন আল্লাহ্র বাণী, প্রমাণ কি? মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন` মানুষ কখনও এই যুক্তির উপরে কোরআন বিশ্বাস করতে যায়নি। যদি যেত, তাহলে এখনও যে কেউ একটা কিতাব বগলে করে এসে হাজির হত আর মানুষ বসে বসে বিশ্বাস করত। কিন্তু সে রকম হয় না কেন? ভণ্ড নবীর আবির্ভাব তো হচ্ছেই, লোকে বিশ্বাস করে না কেন? কারণ, লোকে ঘাস খায় না। ইন্টারনেট থেকে কাটিং পেস্টিং করে, বাংলায় অনুবাদ করে একটা লজিক ছেড়ে দিলেই সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করবে না।
কাজেই অহেতুক একটা প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে Jump না করে নিচের দুয়েকটা বই পড়ে দেখুন। এতে আপনার আমার সকলের সময় বাঁচবে। এই বইগুলো কোন Lay-man-এর রচনা নয়।
1. M. N. Roy, ‘The Historical Roll of Islam, Vora & Co. Publishers Ltd., Bombay, 1938` (বইটির pdf version http://ia700500.us.archive.org/10/items/historicalroleof032545mbp/historicalroleof032545mbp.pdf ওয়েবসাইট থেকে free download করা যাবে)
2. Edward Gibbon (1737-1794), History Of The Saracen Empire, London, 1870 ও History of the Decline and Fall of the Roman Empire, London, 1838, vol.5,
3. George Bernard Shaw, ‘The Genuine Islam`
4. John William Draper, ‘A History of the Intellectual Development of Europe, London 1875`
5. Professor K.S. Rama Krishna Rao, ‘Mohammad, The Prophet of Islam`
6. J.H. Denison, ‘Emotions as the Basis of Civilization`
7. Philip K. Hitti, ‘History of the Arabs`
8. Rev E. Stephenson, ‘My Reflections`
9. H.N. Spalding, ‘Civilization in East and West`
10. Raymond Lerouge, ‘Life de Mohamet`
11. Dr. Mawde Royden, ‘The Problem of Palestine`
12. M.H. Hyndman, ‘The Awakening of Asia`
13. Lewis Mumford, ‘Transformation of Man`
@শাহেদ ইকবাল,
@তামান্না ঝুমু,
সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ওহী নাজিল হলো। জিব্রাইল আসলো গেল অসংখ্য বার। কিন্তু আলোর তৈরি জিব্রাইলকে মুহাম্মদ ছাড়া আর কেউ দেখলোনা কেন? জিব্রাইলের মাধ্যমেইবা খবরা খবর আদান-প্রদান কেন? সর্বশক্তিমান আল্লাপাকের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তথ্য প্রযুক্তি এত অনুন্নত কেন? ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু জনগণের কাছে কোন অলৌকিক ঘটনা বা মিরাজ বা নবুয়াতের বর্ণনা করে সেসব বিশ্বাস করতে বা সমর্থন করতে বলেছিলেন কি?
হুমায়ুন আযাদ বলেছিলেন,পীর মানেই ভন্ড। নবী মানে ভন্ডের উপরে ভন্ড। ভন্ড পীরেরা ত সর্বাধিক ভন্ড নবীদেরই অনুসারী! লোকে ঘাস খায় না কে বললো? চায়না ঘাস নামে এক প্রকারের ঘাস আছে যা রান্নায় ব্যবহার করা হয়। কলমি শাক মহিষের প্রিয় খাদ্য। যা ওরা ঘাস হিসেবে খেয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকারের শাক ; এক ধরনের ঘাসও বটে। কাজী রহমান এবং আমিও নবী। আমাদের উপর ওহী নাজিল হয়। আপনি প্রমণ করুন যে, আমরা নবী নই।
কোরান হাদিস কি কোন লে-মেন এর রচনা?
@তামান্না ঝুমু, জিবরাইলকে মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া আর কেউ দেখেনি, এটা আপনাকে কে বলল? ইতিহাস ও হাদিস পড়ে দেখুন। মুক্তমনার বন্ধুদের সাথে Exchance করুন, জানতে পারবেন। জিবরাইল মানুষের রূপেও আসতেন, তখন তাঁকে অন্যরাও দেখতে পেত। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু যা বলেছেন, তা-ই পল্টনে গিয়ে বলে দেখুন না। গোটা জাতিকে ‘তুমি` বলে সম্বোধন করুন। তারপর দেখুন, জাতি কেমন ‘সাড়া` দেয়! বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ্।` জেল থেকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ‘আল্লাহ্ আছেন, সত্যের জয় হবেই।` তিনি মুসলিম। তিনি নবুয়তের দাবী করতে যাবেন কেন?
‘লোকে ঘাস খায় না`—এটা একটা বাগধারা। এটা দিয়ে ঘাস খাওয়া বুঝায় না। জাপানীরা সামুদ্রিক ঘাস (Sea Weed) দিযে একশ রকম খাবার তৈরি করে। সে খাবার আমরাও খাই।
আজ পর্যন্ত যত নবী এসেছেন, নিজেরাই তাঁদের নবুয়ত প্রমাণ করেছেন। মানুষের কাছে গেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধর্ম প্রচার করেছেন। নির্যাতন সহ্য করেছেন। ধৈর্য ধরেছেন। কেউ কেউ খুনও হয়েছেন। ওই পর্বগুলো আগে পার হয়ে আসুন। লোকজনের কাছে সশরীরে যান। বলুন যে, আপনি একজন নবী। তারপর জনগণ কিভাবে আপনাকে ‘বরণ` করে, দেখুন। এটা হলো প্রথম পরীক্ষা। তারপর অন্যান্য পরীক্ষা তো আছেই।
জানতে চেয়েছেন, ‘কোরান হাদিস কি কোন লে-মেন এর রচনা?` আপনার কি মনে হয়? আমি যে বইয়ের তালিকা দিয়েছি, বলেছি এই বইগুলো লে-ম্যানের রচনা নয়। তাতে কি মনে হয়েছে, কোরআন-হাদিস লে-ম্যানের রচনা? এটা যুক্তিবিদ্যার কোন্ যুক্তিতে পড়ে দয়া করে জানাবেন।
আপনাদের Reference আমি কষ্ট করে সময় নিয়ে হলেও পড়ি। না পড়ে মন্তব্য করি না। কাজেই আমার মূল প্রবন্ধে কিংবা অন্য কোন মন্তব্যে তথ্যগত কোন ভুল থাকলে দয়া করে সঠিক তথ্য ও Reference সহ জানান। যে বইগুলোর নাম বলেছি, সেগুলো পড়ুন। অর্থহীন মন্তব্য করে অন্যের সময় নষ্ট করবেন না। মুক্তমনার নীতিমালাটা আরেকবার দেখুন। এটা আড্ডার জায়গা নয়।
@শাহেদ ইকবাল,
অর্থহীন মন্তব্য আপনি করছেন। আমি করছিনা। আপনি একজন মরুদস্যু, খুনি,ধর্ষক,শিশুকামী, পুত্রবধুকামী,ডাকাত ও লম্পটের পক্ষপাতিত্ব করছেন। মুক্তমনার নীতিমালা সম্মন্ধে আমি ভালভাবে জানি, আমাকে আপনার কাছ থেকে শিখতে হবেনা।
সব নবীরা নবুয়াতের প্রমাণ কীভাবে করেছে? ওরা নিজেরা নিজেদেরকে নবী দাবি করেছে, এভাবে?
অন্য যেকোন বই যার লেখা হোক না কেন, কোরান মুহাম্মদের নিজের রচনা। তাও বেশির ভাগ ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্টের নকল। আর হাদিস হচ্ছে তার লাম্পট্য ও নৃশংসতার দলিল।
গত রাতে আমিও চুপিচুপি গরুর পিঠে চড়ে মিরাজে গিয়েছিলাম। আপনি এই ঘটনাকে মিথ্যা প্রমাণ করুন।
গতকাল রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ করে ঘুম আসছিলো না। ভাবলাম একবারে ফজর পড়েই ঘুমোতে যাবো। তসবিহ হাতে পায়চারী করার জন্য ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। দেখি আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ হাসছে। চাঁদের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো ধবল জোছনা কেটে ধলা রঙের একটা ধেনুর পিঠে সওয়ার হয়ে হিজাব-নিকাব পরা ডিজিটালা নবি তামান্না ঝুমু উর্ধ্ব আকাশ পানে ছুটে চলেছেন। এখন বুঝলাম এই তপস্বিনী মিরাজে গিয়েছিলেন। এই অলৌকিক ঘটনার আমি একজন চাক্ষুস স্বাক্ষী। আশা করছি, মুমিন এই বান্দার সত্যভাষণের পরে নবি তামান্না ঝুমুর মিরাজে সন্দেহ পোষণেরই লোক পাওয়া যাবে না, মিথ্যা প্রমাণতো অনেক দূরের কথা।
@শাহেদ ইকবাল,
আপনি যেসব বইয়ের তালিকা দিয়েছেন সেগুলোর কয়টি আপনি পড়েছেন বা আদৌ পড়েছেন কিনা, জানি না। আপনাকে কিছু বই পড়ার জন্য অনুরোধ করি,
১।Understanding Muhammad by Ali Sina
২।Twenty Three Years: A Study of the Prophetic Career of Muhammad BY ALI DASHTI
http://ali-dashti-23-years.tripod.com/
৩। Richard.Dawkins.-.The.God.Delusion…
৪। Why I Am Not a Muslim – Ibn Warraq
সবগুলোর ডাউনলোড লিংক পাবেন এখানে।
৭ মার্চের ভাষণ আর মুহাম্মদের নবুয়তি আর মেরাজের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন না 😀
শোনেছেন একটা কথা – extraordinary claims required extraordinary proofs. কথাটি বুঝার চেষ্টা করবেন। হেরা গুহা থেইক্যা বের হয়ে নিজেকে নবি বলে দাবি করা আর ৭ মার্চের ভাষণে পার্থক্য আছে। মুহাম্মদ মক্কায় এক যুগ থেকেও মাত্র শ’ খানেক অনুসারী সংগ্রহ করেছিলেন। অথচ মদিনায় গিয়ে একদম ধুন্দুমার কান্ড করেছিলেন, সেটা কিভাবে করেছিলেন তা একটু ভাবলেই বুঝার কথা।
মক্কার তখনকার যুগের মানুষও মুহাম্মদের ভন্ডামিকে প্রশ্ন করেছিল, অনেকেই তাকে পাগল-ছাগল, কবি, জাদুকর ইত্যাদি বলত সেটা নিশ্চয় আপনি জানেন। আর আজকের যুগেও তাকে নিয়ে মাইনষে হাসাহাসি করে, মহাউন্মাদ বলে। দেখেন
@ফরিদ আহমেদ,
আগের দিনের আল্লাপাক ও নবি রাসুলদের অলৌকিক কর্মকাণ্ডের কোন সাক্ষী প্রমাণ নেই। এখনকার দিনের কাফেরগুলোর বড়ই দুর্বুদ্ধি। সবকিছুতেই সাক্ষী প্রমাণ চায়। তাই মিরাজের চাক্ষুস সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আল্লাপাকের কুদরত আপনাকে সেই মুহূর্তে ব্যালকনিতে নিয়ে গিয়েছিল। পৃথিবী থেকে দূর মহাশূন্যে হিযাব-নেকাব পরা অবস্থায়, আমার মুখ না দেখেই আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন। এটাও কী কম কুদরতের কথা! আমাকে ধেনুয় চড়ে মিরাজে যেতে ত আপনি নিজের চোখে দেখেছেন। তারপরও কাফের মুশরিকরা অবিশ্বাস করবে?
আমি গরুতে চড়ে লক্ষ লক্ষ বছরের পথ অতিক্রম করে পৃথিবীতে ফিরে এসে দেখি সবকিছু আগের মত। লক্ষ বছরেও কেউ বুড়ো হয়নি। এমন কি আমার ওজুর পানি তখনও গড়াচ্ছিল!দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমার বাহন ধেনুটিকে আর খুঁজে পাচ্ছিনা।আমি গাফেলতি করে তাকে সাথে সাথে বেঁধে রাখিনি। পাখাবিশিষ্ট গরু যদি কোথাও দেখে থাকেন অনুগ্রহ করে আমায় জানাবেন। নাহলে অন্য কেউ আবার ওকে নিয়ে মিরাজে চলে যাবে। ও ছাড়া মিরাজের পথ আর কেউ চিনেনা। বিজ্ঞানীরাও এখনো সেই পথের সন্ধান পায়নি।
এতে অবশ্য আল্লাহপাকের কুদরত তেমন একটা নেই। আমি নিজেই মাশাল্লাহ আল্লাহপাকের আদেশে সবসময় চোখের পর্দা করে থাকি। আপনার মুখে নিকাব না থাকলেও সেদিকে আমি দৃকপাত করতাম না। নিজ পদের বুড়ো আঙুলের দিকে দৃষ্টি নিমজ্জিত করে রাখতাম। সমস্যা করেছে আপনার কারুকার্যখচিত সুদৃশ্য এবং সৌখিন হিজাবখানি। ওটিকে একশত মাইল দূর হতেও চিহ্নিত করে ফেলা যায়।
সশরীরে যেতে হবে কেনো ভাইজান? এইটা হচ্ছে হাইটেকের যুগ। ঘরে বসেই সব আলাপ সারা যায় নিমেষে। হাটে মাঠে বের হয়ে খামোখা সময় নষ্ট করবো ক্যান? এই যে আপনি সশরীরে না এসে মুক্তমনায় অশরীরে এসেছেন, এতে করে কী আপনাকে আমরা কম পাত্তা দিচ্ছি? আপনার কথা শুনছি না?
তামান্না ঝুমুকে আমরা আল্লাহপ্রেরিত নবি মানছি, বরণ করে নিছি সাদরে। আপনার তারে অবিশ্বাসের যুক্তিটা কী? এতগুলা শিক্ষিত মানুষ কি এমনি এমনিতেই বিশ্বাস আনছে তার উপর? তামান্না ঝুমুর কাছে জিবরাইল মাঝে মাঝে মানুষু রূপেও আসে। আমি নিজের চোখেই দেখছি তারে। চা-কফিও খাইছি একসাথে। গপসপও করছি। জিবরাইল মানুষ ভালা।
@শাহেদ ইকবাল,
কোরান যেহেতু মোহাম্মদ কথিত ও তার কতিপয় সাহাবী কর্তৃক লিখিত কিতাব, সেহেতু মোহাম্মদই তাঁর বিধবা পত্নীদের পূনর্বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। আর তা করেছেন ঈর্ষাবশত। যা আবার আপনা সীল মারা হৃদয় বুঝতে অক্ষম।
@ফরিদ আহমেদ,
আল্লার কুদরতের বলেই হয়ত কারুকার্যখচিত হিজাবখানি পড়েছিলাম সে রাতে। নাহলে ত আমার মিরাজ গমনের কোন সাক্ষীই থাকতোনা!সবই আল্লার রহমত।
মুক্তমনার উচ্চ শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক বড় বড় নাস্তিকেরা আমার নবুয়াতে বিশ্বাস করলেন; এমন কি কাজী রহমান নিজে একজন নবী হয়েও আমাকে ভন্ড নবী না বলে প্রকৃত নবী হিসাবে মেনে নিলেন। কিন্তু শাহেদ ভাইজান আজো আমায় বিশ্বাস করলেন না। এই মর্মবেদনা ক্যামনে সহি।
@তামান্না ঝুমু, মুক্তমনার নীতিমালা সম্মন্ধে কি জানেন তা তো আপনার বক্তব্যেই প্রমাণিত। নবীদের মানুষের কাছে যাওয়া সংক্রান্ত অনুচ্ছেদটা ভাল করে পড়ুন। কি লিখেছি, তা বুঝুন। একজন জেলা প্রশাসককেও যদি কোন জেলার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়, তাঁকে ওই জেলায় সশরীরে যেতে হবে। মানুষকে নিজের পরিচয় ও পদমর্যাদা (Designation) বলতে হবে। তারপর সেখানে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইন্টারনেটে বসে বসে ই-মেইল ছাড়লে হবে না। কারণ, তাঁর কাজ শুধু ভাব বিনিময় করা নয়।
ফরিদ আহমেদ সাহেব হয়তো মজা করার জন্যই কথাগুলো বলেছেন। আমিও এনজয় করেছি। কিন্তু তিনিও ভাল করেই জানেন, এই বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে কতজন কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তার জন্য শিক্ষিত হতে হয়। এই কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ ফেইসবুক, টুইটার, আড্ডা, চ্যাট—এসব বাদ দিয়ে গবেষণাধর্মী সিরিয়াস সাইটগুলোতে যান। পৃথিবীর বহু দেশে শিক্ষার হার নিরক্ষরতার হারের চাইতে কম। বাংলাদেশের কথাই ধরুন। সেখানে Adult literacy rate হলো 47.5%. (http://www.state.gov/r/pa/ei/bgn/3452.htm)। তাহলে শতকরা কতজন লোক এই ব্লগ ভিজিট করতে পারে? এই টার্গেট গ্রুপ নিয়ে একজন রাষ্ট্রদূতও তো কাজ করতে যাবেন না। নবী তো দূরের কথা।
তাছাড়া মানুষের কাছে সশরীরে যাওয়ার বহু অসুবিধাও আছে। সেখানে এসব নিক নেম-টেম চলবে না। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও বংশ পরিচয় নিয়ে যেতে হবে। এই অধমের মত সবাই তো আর সবখানে স্বনামে লেখেন না।
যাই হোক, নবীদের দায়িত্ব যেহেতু জেলা প্রশাসক বা রাষ্ট্রপতির চাইতেও ব্যাপক, কাজেই তাকে একশ` ভাগের মধ্যে একশ`ভাগই Transparent হতে হবে। আমাদের মত ইন্টারনেটে পোস্ট ছেড়ে দিলে আমরা ভাবব কেউ মজা করছে। যেমন, এ মুহূর্তে আপনাকে নিয়ে ভাবছি। সে কারণেই বলছি, মজা করতে চাইলে মজা করুন। কিন্তু সিরিয়াস হলে সশরীরে গোটা জাতির সামনে যেতেই হবে। এর মধ্যে ট্রেন না পেলে বাস—এ রকম কোন বিকল্প নাই।
কথা এটুকুই। আবারও বলছি। এটা আড্ডা দেয়ার জায়গা নয়। সিরিয়াস কিছু জানার বা জানানোর থাকলে তথ্যসহ (Reference) লিখবেন। নাহলে অন্যের সময় নষ্ট করে কি লাভ?
ভাল থাকুন।
@ সৈকত চৌধুরী,
আমি নিজে না পড়ে কোন বই কাউকে সাজেস্ট করি না। আপনাদের কোন রেফারেন্স থাকলে তা-ও কষ্ট করে পড়ি। আপনি যে বইগুলোর নাম দিয়েছেন, সেগুলো আমার পড়া আছে। আমার কিছু কিছু মন্তব্যে এ সম্পর্কে আলোচনাও আছে।
উদাহরণ বা তুলনা করলেই দুটো জিনিস হুবহু এক হয়ে যায় না। তাহলে বাংলায় ‘মত` শব্দটা আর থাকত না। অংকে Ratio বলে একটা কথা আছে। ক্রিকেটে একদল ৫০ ওভারে যে রান করল, অন্য দলের ২৫ ওভারের (বৃষ্টির কারণে এর বেশি খেলা হয়নি) সাথে তার তুলনা করে ফলাফল দেওয়া হয় এভাবেই। শ্রেয়তর রানরেটের ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু তাঁর পর্যায়ে যা করেছেন, তা অন্য পর্যায়ের একজন মহাপুরুষের সাথে তুলনা করাই যায়। আমরা রাজনীতিতে ‘ক্যারিশমা` বা খেলাধূলায় ‘মিরাকল` শব্দগুলি বলি কেন? এই নেতা বা খেলোয়াড় কি তাতে নবী-রাসুল হয়ে গেলেন?
কাজেই তর্কের খাতিরে তর্ক না করে আমার মূল প্রবন্ধে যে বইয়ের তালিকা আছে, সেখান থেকে কিছু বই পড়ার চেষ্টা করুন। শুধু একরকম জিনিস পড়তে বা দেখতে থাকলে একসময় রুচিও তো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। রুচি বদলানোর জন্য হলেও পড়ুন। সবচেয়ে বড় কথা, আমি যা লিখেছি, Reference সহ লিখেছি। এখন তা যদি Refute করতে চান, তাহলেও পাল্টা Reference লাগবে। এভাবে পুরানো কথা বললে হবে না।
@তামান্না ঝুমু, প্রথমেই বলে রাখি, আমার মূল প্রবন্ধেই মেরাজ নিয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। কোরআনে মেরাজ শুরু হওয়ার স্থান ছাড়া আর কিছুরই (যেমন, বোরাক, মেরাজের মোট সময় ইত্যাদি) উল্লেখ নেই। এসব উল্লেখ পাওয়া যায় হাদিসে। তা-ও বর্ণনার ভিন্নতা আছে। হাদিস হলো ইসলামিক Annuls-এর সবচেয়ে দূরবর্তী উৎস। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর বিরুদ্ধবাদীদের শাসনকালে (যারা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র ও গুপ্তহত্যার সিঁড়ি বেয়ে হযরত আলীর পরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে) হাদিস সংকলিত হয়।
আমার মূল প্রবন্ধে আইনস্টাইনের Matter Transmission Theory দিয়ে উল্লেখ করেছি যে, এ পদ্ধতিতে মেরাজ সম্ভব। সেক্ষেত্রে বস্তুকে প্রথমে শক্তি ও পরে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা যায়। আরবী ভাষায় বিদ্যুতের (বারক) Superlative Degree হলো বোরাক। অর্থাৎ আলোর চেয়েও দ্রুতগামী। বোরাককে সে অর্থে ধরলে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব। আর এ ঘটনা কারও দেখার বা না দেখার কোন সুযোগ নেই। এ কথাগুলো অনেক আগেই রণবীর সরকারের প্রশ্নের উত্তরে মন্তব্য আকারেও লিখেছি। হয়তো আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে।
যা আমার প্রবন্ধে নেই, তাকে আমার বক্তব্য ধরে নেয়া এবং তার উপর প্রশ্ন করার চেয়ে বরং যা আছে, তা নিয়েই কিছু জানার থাকলে দয়া করে লিখুন। ভাল থাকুন।
@ফরিদ আহমেদ, ‘জিবরাইল মানুষ ভালা`—আমিও তো এই কথাই কইতাছি। সেই ‘ভালা মানুষ` যাঁর কাছে তেইশ বছর ধইরা আইল-গেল, তিনি নিশ্চয়ই আরও ‘ভালা`। এইটা হাইটেকের যুগ। সেই হাইটেকের যুগেই সামান্য প্রেসিডেন্ট হইতে বারাক ওবামা-টনি ব্লেয়ারদের কতগুলা মিটিং করতে হয়। সশরীরে জনসংযোগ করতে হয়। হাইটেকের সব থাইকা উন্নত দেশেই হইল এই অবস্থা! তাহলে নবী-রসুলদের ঘরে বইসা থাকার উপায় কি? তার কাজই তো জাতির কাছে যাওয়া। জাতির কি তারে না দেইখা মন ভরে? তার উপরে হইল পৃথিবীর প্রথম ‘মহিলা নবী`! এক্কেবারে ফাটাফাটি কারবার! আমি নিশ্চিত, আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া খেলার চাইতেও টিকিটের দাম ম্যালা বেশি হইব। কালোবাজারেও টিকিট পাওয়া যাইব না। তিনি শুধু ‘স্থান` ও ‘সময়` ঘোষণা করে দেখুন! এই গরীবের কথা বাসী হইলে ফলে।
আসলে সবকিছুর বিকল্প হয় না। যেমন সফটওয়্যার দিয়ে দাড়ি কামানো যায় না—ক্ষুর বা রেজার লাগে। আমি মুক্তমনায় অশরীরে এলেও একটা শরীরী পরিচয় সঙ্গে নিয়ে এসেছি। যেন আমাকে শনাক্ত করা যায়। সে বাংলাবাজার হোক আর রেডিও-টিভিই হোক।
Ami lekhati porey obak! Vabchi mukto mona kivabe lekhati chapalo.. Jai hok! Thanks mukto mona moderetor to publish the post…. Asolei apnar mukto cintar pokkhe..
@Tamim,
এটা হয়ত মুক্তমনার ইমেজ প্রোমটের একটা স্ট্রাটেজি।
আপনার কমেন্টেও তাদের স্ট্রাটেজিকে সাপোর্ট করা মন্তব্যই এসেছে।
এবং আরো অবাক করা কথা হচ্ছে, আপনি তামিম নিকে এইটাকে সাপোর্ট করে বলেছেন।
যদিও তামীম নিক নয় [ই আর ঈ কারের পার্থক্য], তবুও অনেকে ভাবতে পারেন যে আপনি আর আমু, আলু আর সামুর তামীম একই ব্যক্তি। কিন্তু আমি জানি, আপনি সেই ব্যাক্তি নন। অনেকটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত লাগল ব্যাপারটা।
পুরোটা পড়া হয়নি। তবে প্রথমদিকে কিছু অংশ পড়েছি। আপনার ভবঘুরের লেখা খন্ডন করার প্রয়াস দেখে খুব ভাল লাগল।
আশা করি ভবঘুরের বাকি লেখাগুলো পড়ে সেগুলোও নিয়েও সমালোচনামূলক লেখা লেখবেন।
@রনবীর সরকার,
আর এত বড় লেখা একেবারে না দিয়ে পর্ব করে দিলে মনে হয়ে পাঠকরা পড়ে আরাম পেতেন আর লেখার উপর আলোচনা করাও সহজ হত।
@রনবীর সরকার, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে ‘মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২` প্রবন্ধটিই প্রথম আমার নজরে আসে। তা-ও অন্য একটি গ্রুপের সৌজন্যে। আমাদের এক বন্ধুর মাধ্যমে সেখানে এই লিংকটা পাই। তখন লক্ষ্য করলাম বিষয়-বৈচিত্র্যে এবং বিজ্ঞান ও যুক্তির প্রাধান্যে ‘মুক্তমনা` একটি অসাধারণ ব্লগ। নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণেও এটি স্বতন্ত্র। যাই হোক, তারপর পর্যালোচনাটি লিখি। এ সময় একই শিরোনামের পর্ব-১ ও পর্ব-২ পড়ার সুযোগ হয়। এ দুটো পর্বের পর্যালোচনায়ও হাত দিয়েছি। আশা করছি, যে কোন সময় শেষ করতে পারব। দোয়া করবেন।
@রনবীর সরকার, আসলে ঐ প্রবন্ধটিও একটু দীর্ঘ ছিল। তাই পর্যালোচনাও দীর্ঘ হয়ে গেল। তারপরও চেয়েছিলাম প্রবন্ধটির তুলনায় আমার লেখার কলেবর যেন বড় হয়ে না যায়। তা পারিনি, এ জন্য দুঃখিত। আশা করি পরেরগুলো আর এত বড় হবে না।