চিত্র: ভারতের Ladakh-এ ম্যাগনেটিক হিলের কাছে একটি সাইনবোর্ড

কিছুদিন আগে কোন একটা বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলে দেখছিলাম সৌদীআরব এর বিভিন্ন স্থান দেখানো হচ্ছে। সেখানে মদীনার এক আজব জায়গা দেখানো হল, যেখানে ইঞ্জিন বন্ধ রেখে গাড়ি চালিয়ে নেওয়া যায়। উপস্থাপক মূল রহস্যের কথা না বলে বিষয়টাকে শুধু “আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শন” বলে বকবক করে গেলেন। গতকাল ব্লগার “বোকা মানুষ” তার “ফুয়েল ছাড়া চলছে গাড়ি !! কিভাবে সম্ভব ??” লেখায় একই কথা জানতে চেয়ে পোস্ট দিলেন। তিনি নাকি এটা “আর টিভির” খবরে দেখেছেন। সেখানে বিষয়টা আলোচনা করে কমেন্ট দিয়েছিলাম। এখানেও কিছুটা সম্পাদনা করে কমেন্টটি পোস্ট আকারে দিলাম।

এইটা হল “ম্যাগনেটিক হিল” বা “গ্রাভিটি হিল” এর কারবার। এটা এক ধরনের দৃষ্টি ভ্রান্তি (optical illusion)। চোখে দেখার ভুলের কারনে এমন হয়। আসলে গাড়ি ঢালু রাস্তা বরাবর নেমে যায়। কিন্তু চোখে দেখার ভুলের কারনে মনে হয় গাড়ি সোজা রাস্তা দিয়ে একা একাই চলছে (ইঞ্জিন বন্ধ থাকা অবস্থায়)। অথবা মনে হয় উঁচু থেকে নিচুতে গাড়ি নামানোর সময় ইঞ্জিন চালাতে হচ্ছে (অথচ এক্ষেত্রে কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ রাখালেও গাড়ি চলার কথা ছিল) তানা হলে গাড়ি গড়িয়ে উঁচুদিকে চলে যাচ্ছে। এসব দেখে মনে হয় অভিকর্ষজ বল উল্টা দিকে কাজ করছে।
“ম্যাগনেটিক হিল” বা “গ্রাভিটি হিল” মূলত তৈরি হয় কোন জায়গার দৃশ্য যদি এমন হয় যে সেখানে দিগন্ত (Horizon) সরাসরি সরাসরি দেখা না গেলে। সেক্ষেত্রে উঁচু নিচু নির্ধারনের জন্য কোন রেফারেন্স থাকে না। ফলে উঁচু দিক কে নিচু আর নিচু দিক কে উঁচু বলে মনে হয়।
নিচের ছবিটা দেখুন–

এখানে মনে হচ্ছে একটা রাস্তা ক্যামেরাম্যানের কাছে থেকে নিচের দিকে নেমে গিয়েছে।

এবার এই ছবিটা দেখুন–

এটা তোলা হয়েছে ক্যামেরাম্যান আগে যে দিকে মুখ করে ছিলেন, তার ঠিক উল্টা দিক হয়। কি দেখা যাচ্ছে? গাড়ির পেছনে নিচু মনে হচ্ছে, তাই না? গাড়ির ড্রাইভারের কাছে কিন্তু মনে হচ্ছে সে উঁচু থেকে নিচু দিকে যাচ্ছে, কিন্তু আসলে সেটা তার চোখের ভুল, সে প্রকৃতপক্ষে নিচু থেকে উপরের দিকে যাচ্ছে। সুতরাং তাকে ইঞ্জিন চালাতে হবে। আর উল্টা দিকে গেলে তার ইঞ্জিন চালানোর দরকার নেই।

এখানে অলৌকিক বা রহস্যের কিছু নেই। এটা শুধু আরবের মদিনাতে(Wadi al Jinn (Valley of Jinns) in Madinah) নয়, বিশ্বের আরও অনেক জায়গাতেই আছে।

দুনিয়ার কোথায় কোথায় এমন “ম্যাগনেটিক হিল” বা “গ্রাভিটি হিল” আছে, তার তালিকা পাবেন এখানে

আরও জানতে দেখুন —
“ম্যাগনেটিক হিল”
“গ্রাভিটি হিল”

আমরা আর মান্ধাত্তা আমলের মানুষ নই। তথ্য প্রযুক্তির অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ইন্টারনেট আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। কোন কিছু বুঝতে না পারলেই তা অলৌকিক বলে ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক? বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টা একদমই ঠিক নয়। তাদের উচিৎ রহস্যের পাশাপাশি বিষয়টি প্রকৃত বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা দর্শকদের জানানো। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
ধন্যবাদ।

ছবিগুলো উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।

লেখাটা সামহোয়ার ইন ব্লগে ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ তারিখে প্রকাশ করেছিলাম। লিংক হল- http://www.somewhereinblog.net/blog/sadachokhblog/29239687 । এজন্য প্রথম পাতায় প্রকাশ করলাম না।