Mamata
মমতা ব্যানার্জি এই মুহুর্তে ভারতের সব থেকে বড় জনপ্রিয় নেত্রী-আর কোন রাজনৈতিক নেতার পেছনে এত জনসমর্থন নেই। কিন্ত এই জনসমর্থনের ভিত্তি কি-এর জন্যে পশ্চিম বঙ্গ কি খেসারত দিয়েছে এবং ভারত বর্ষ কি কি দিতে চলেছে সেইসব অপ্রিয় প্রশ্ন প্রবল মিডিয়া জোয়ারে ভেসে গেছে।

সেই ফর্দ বাদ দিয়ে বর্তমানে আসা যাক। মঙ্গলবার মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফর শুরু হচ্ছে। বহুদিন থেকে ফেলে রাখা দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি নিয়ে সেখানে চুক্তি সাক্ষর করার কথা। এর মধ্যে তিস্তা এবং ফেনীর জল বন্টন চুক্তিও আছে। চুক্তির খসরা দীপুমনির কালকের বক্তব্য অনুযায়ী শেষ। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের তিক্ততার আঁধার শেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন সূর্যের উদয় হতে পারত মঙ্গলবার।

আপাতত সেসব আশা সেগুড়ে বালি। কয়েক ঘন্টা আগে মমতা ঘোষনা করেছেন তিনি মনমোহনের সফর সঙ্গী হচ্ছেন না। মনমোহনের সাথে ভারতের আরো ৫ মুখ্যমন্ত্রী আসার কথা-কারন এই সব চুক্তির সাথে পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, মিজোরম ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্যও জড়িত। তারা একমত না হলে মনমোহন চুক্তির বয়ান ঠিক করতে পারেন না-সেক্ষেত্রে পরবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস এই সব রাজ্যে বাজে ফল করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মতি ছারা জলবন্টন চুক্তি সম্ভব না। উচিত ও না।

এর মধ্যে আসাম নিয়ে চিন্তা নেই-ওটা কংগ্রেস শাসিত রাজ্য-তরুন গগৈ দিল্লীর ইয়েস ম্যান-সুতরাং সেখান থেকে বিরোধিতা আসার প্রশ্ন নেই। ত্রিপুরাতে বাম সরকার নীতিগত ভাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর পক্ষে। বিরোধিতা সেখান থেকেও প্রত্যাশিত না। মমতাও যাবেন বলে ঠিক ছিল-প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারী, তিস্তার জলবন্টন চুক্তিটির বয়ানের জন্যে বেশ কিছু দিন কোলকাতায় ছিলেন। তাতে মমতার সায় ছিল। মমতা মঙ্গলবার যাচ্ছেন-এমনটা ঠিকই ছিল।

কয়েক ঘন্টার আগের খবর, মমতা চুক্তির বয়ানে অসম্মতি প্রকাশ করেছেন। তাকে যা বলা হয়েছিল, চুক্তি নাকি সেই মত হয় নি। স্টার আনন্দ খবর দিচ্ছে মমতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে সর্বাধিক ২৫,০০০ কিউসেক জল দেওয়ার কথা। সেখানে নাকি চুক্তি অনুযায়ী ৩০,০০-৪০,০০০ কিউসেক জল দিতে হতে পারে। আমার পাটিগণিত মিলিল না-তিস্তাতে যতদূর জানি ২৫,০০০ কিউসেক জলই থাকে না-গড় প্রবাহ ১২,০০০ কিউসেকের। সেখানে এই নাম্বারগুলো কে পেল, কোথা হইতে পেল জানি না। বাংলাদেশ বা ভারতের কোন মিডিয়ার কাছে চুক্তির কোন খসরা নেই! এ চুক্তি নিয়ে কোন দেশেই কোন পাবলিক ডিবেট হল না। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর দুই সচিব আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ঠিক হয়েছে এই চুক্তির বয়ান। দুই দেশের জনগণই অন্ধকারে।

এবার মমতা বেঁকে বসায়-মনে হচ্ছে গোটা সফর আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দস্তানা এখন বিশ বাঁও জলে। মমতা জানিয়েছেন এই চুক্তি পশ্চিম বঙ্গের স্বার্থ বিরোধি। তাই তিনি যাবেন না। কেন স্বার্থ বিরোধি তার কোন ব্যখ্যা নেই। না গিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন! কি অদ্ভুত! যদি ব্যপারটার বিরোধিই তিনি হোন-মনমোহনকে জানালেই হল-তিনি মানছেন না। আবার খসড়া হোক। এই ধরনের নাটক কেন? আমি অবাক নই-আসলে এই ধরনের নাটক না করলে-মিডিয়াতে প্রমান হবে না তিনি দেশপ্রেমী রাজনীতিবিদ। মিডিয়া ম্যানুপুলেশনে মমতা ১০০ তে ১০০ পাবেন-এই ভাবেই তিনি আজ জননেত্রী।

এই ভদ্রমহিলা অবশ্য এমনই নাটক করেন। যেহেতু বাংলার মিডিয়া সম্পূর্ন মমতাময়ী-তার দেশপ্রেমের জন্যে সবাই দুহাত তুলে নাচবে। চারিদিকে মমত বন্দনায় ভরে উঠবে। এই লেখার জন্যে তৃণমূলি এবং দিদি বন্দনায় নিবেদিত প্রাণ ভাইদের গালি খেতে হবে আমাকে।

কিন্ত ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। এই জল বন্টন চুক্তিগুলি বাংলাদেশের ভীষন ভাবে দরকার। দীপুমনি সহ হাসিনা সরকার দীর্ঘদিন চেষ্টা করছেন, ভারতের সাথে এই বিবাদ্গুলি মিটিয়ে নিতে। সব কিছু যখন হয়ে গেছে, তখনই ইন্দ্রপতন ঘটালেন মমতা।

মমতা পশ্চিম বঙ্গের স্বার্থ অবশ্যই দেখবেন-কিন্ত বাংলাদেশের মতন প্রতিবেশীরা জলের অভাবে কিভাবে ভুগছেন, সেটা যদি না দেখেন-তাহলে বিশাল ভুল করছেন। প্রতিবেশীর বাড়িতে আগাছা জন্মালে, সেটা নিজের বাগানেও আসে। উনি নিশ্চয় জানেন ভারত বিরোধিতা হচ্ছে বাংলাদেশের মৌলবাদি শক্তি মূল বারুদ। আর সেই বারুদের মসলা আসে এই জল বন্টন চুক্তিগুলো অমীমাংসীত থাকায়।

ভারত বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। জল বন্টন চুক্তি সহ বাকী যা কিছু বাংলাদেশীরা ভারতের কাছ থেকে সুবিচার আশা করে-সেটা হাসিনা সরকারের দীর্ঘ চেষ্টাতে প্রায় মিটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্যে মনমোহনের সফর এবং সেই সফরে এই জলচুক্তিগুলি সার্থক হওয়া জরুরী।
এটা কি মমতা বোঝেন?

মনে হয় না বোঝেন। তার কাছে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তাই শেষ এবং আসল কথা। এতদিন আমরা ভুগেছি। এবার মনে হচ্ছে বাংলাদেশীদের পালা।

এর মধ্যে তিনি যদি বোঝেন এই চুক্তির গুরুত্ব ত ভাল-নইলে এমন নাটক করে, বাংলাদেশের কাছে নিজেদের লজ্জা বাড়িয়ে লাভ নেই।