তুমি আর আমি
রাতের নিবিড়তায় ব’সে
যখন দেখতাম দূরের আকাশে
জ্বলছে গননাহীন নক্ষত্র;
তখন মনে হতো
আকাশে সোনার ফুল ফুটে আছে।

আজ তুমি চ’লে গেছ দূরে
আমায় ছেড়ে।
আজ স্তব্ধ-রজনীতে যখন তাকাই আকাশের পানে,
ভয় হয় মনে।
মনে হয় নক্ষত্রের আগুনে
জ্বলে যাবে সমস্ত আকাশ।

তুমি আর আমি
যখন বসতাম একান্তে
কোন নদীর ধারে,
মনে হতো;
আমাদের দু’জনার মনে আছে
নদীর জলের মতো অঢেল ভালোবাসা,
মনে হতো, নদী কলকল স্বরে
কইছে আমাদের মনের ভাষা।
মন চাইতো, নদীর স্রোতে যাই ভেসে
কোন রূপকথার দেশে।

আজ তুমি চ’লে গেছ দূরে
আমায় ছেড়ে।
আজ এই সঙ্গীহীন-আমি
যখন তাকাই নদীর পানে
ভয় হয় মনে।
মনে হয় নদীর স্রোতে
তামাম পৃথিবী যাবে ভেসে।

তুমি আর আমি
যখন বসতাম শিশিরভেজা ঘাসে
মনে হতো শিশিরকণাগুলো
আমাদের পানে চেয়ে হাসে।

আজ তুমি চ’লে গেছ দূরে
আমায় ছেড়ে।
আজ এই সাথীহীন আমি
যখন তাকাই শিশিরের পানে
কষ্ট হয় মনে।
মনে হয় শিশিরবিন্দুগুলো;
আমারই বেদনার অশ্রুবিন্দু।

তুমি আর আমি
বসতাম যখন বনবীথিকার তলে
যখন মৃদু-সমীরণের ছোঁয়া লাগতো
আমাদের কপোলে,
মনে হতো সমীরণ মাঝে
আমাদের হৃদয়ের সুর বাজে।

আজ তুমি চ’লে গেছ দূরে
আমায় ছেড়ে।
আজ এই একাকিনী আমি
দাঁড়াই যখন বনবীথিকার তলে
আমার কপোল যায় ভিজে
নয়নের জলে।
মনের ভেতর হুহু ঝড় উঠে
নির্দোষ বাতাসের চোটে।
বাতাসের ছোঁয়ায় মনে লাগে ভয়
মনে হয় প্রচণ্ড সমীরে
সমস্ত পৃথিবী যাবে ওড়ে।

যখন তুমি ছিলে আমার সাথে
মনে হতো সুর বাজে
সবার সকল কাজে, সকল কথাতে।
আজ তুমি বিহীন
আমি সঙ্গীহীন।
তাই জগতের সকল মধুর সুরের মাঝে
আমার মনে বাজে
ব্যথার করুণবীণ।