বেশ কিছু দিন ধরে পার্বত্য অঞ্চলের রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যের আওয়াজ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। এই জাতীয় ঐক্য মানে পাহাড়ের দুই বৈরী রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি ও ইউনাইনেটড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর মধ্যে একটি ঐক্যের মেলবন্ধন তৈরী করা। আপাতদৃষ্টিতে এবং সাদা চোখে বিষয়টি খুবই ভাল উদ্যোগ । তা নিয়ে দ্বিমত বা ভিন্নমত পোষণ করাটা বরং প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। কারণ দুই বৈরী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে যদি ঐক্যের মেলবন্ধন তৈরী হয়, তাহলে জুম্ম জনগণের পারস্পরিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটবে। এই বাস্তবতা থেকে অনেকেই ঐক্যের হাঁক-ডাক দিচ্ছেন। তবে এই ঐক্যের শোরগোলটা বেশী বেশী করে শোনা যাচ্ছে সম্প্রতি ইউপিডিএফ-এর অন্যতম সংগঠক ও কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমা রাঙ্গামাটি জেলার সুবলং এলাকায় একটি অতর্কিত আক্রমণে নিহত হওয়ার পর থেকে। অনিমেষ চাকমার সাথে দলটির আরও ৪ জন নেতা কর্মী প্রাণ হারান। তারপর থেকে এই জাতীয় ঐক্যের পালে হাওয়া বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। হাল নাগাদ ফেইস বুক খুললে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে নানান সব গ্র“প চোখে পড়ে। পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে এই গ্র“পগুলোতে নামে-বেনামে-ভূয়া নামে অনেকেই লিখছেন, পাণ্ডিত্য জাহির করে চলেছেন। তবে কোনো না কোনো ভাবে এই সব ফেইসবুক গ্র“পগুলোতে ইউপিডিএফ-এর বেনামী সমর্থকদের সংখ্যাধিক্য পরিলক্ষিত হয়। এই গ্র“পগুলিতে অনেক সময় যৌক্তিক বিতর্কের চেয়ে ব্যক্তিগত কুৎসা ও কাঁদা ছোঁড়া-ছুঁড়ি’টাই বেশী হয়। অবশ্য সেই দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করাটা চলতি রচনার লক্ষ্য নয়। এই সব গ্র“পগুলোতে জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর দ্বন্দ্ব সংঘাত অবসান নিয়েও নানান কিসিমের মতামত দেয়া হয়। ফেইস বুকের ইউপিডিএফ সমর্থকরা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে তারা ঐক্যের দরজা খুলে বসে আসে, কিন্তু জেএসএস ঐক্য করতে আগ্রহী নয়। কাজেই পাহাড়ের যে দ্বন্দ্ব সংঘাত জিইয়ে আছে তার জন্য জনসংহতি সমিতিই দায়ী। তাদের প্রচারণার ধরন দেখে মনে হয় দলটি একদম ধোয়া-তুলসী পাতা। গান্ধী কিংবা গৌতম বুদ্ধের মত তারা অহিংসার নতুন অবতার হিসেবে পার্বত্য রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়েছেন। তাদের এই স্ব-ঘোষিত অহিংস পন্থার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে পাহাড়ে হালানাগাদ কিছু শান্তিবাদীর পয়দা হয়েছে। এই নব্য শান্তিবাদীরা নিজেদেরকে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবি পবিচয় দিতে অনেক ভালবাসেন। তাদের সবার মুখে একটাই রব, সেটা হচ্ছে পহাড়ের রাজনীতিতে সংঘাত বন্ধ করে সহ-অবস্থানের পরিবেশ তৈরী করা। তারা আবার এই দাবিটি উত্থাপন করেন জনসংহতি সমিতির নিকট। তারা এটাও বলে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা উদ্যোগ নিলেই পাহাড়ের রাজনৈতিক সংঘর্ষের অবসান ঘটবে। অর্থাৎ প্রকারান্তরে এই ঐক্যের প্রবক্তারা এবং ইউপিডিএফ দলটির মধ্যে একটি মিল রয়েছে। সেটি হচ্ছে দুই মহলই বিশ্বাস করে জনসংহতি সমিতি এবং দলটির নেতা সন্তু লারমার উদ্যোগহীনতার কারণে পাহাড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এই ঐক্যের ধ্বজাধারীদের কাছে কিছু বিষয় অবতারণা এবং তাদের দৃষ্টিগোচরের জন্য এই রচনা।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি সম্প্রতি ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমা সহ ৪জন নেতা কর্মী নিহত হওয়ার পর দলটি জনসংহতি সমিতির সাথে ঐক্যের বিষয়ে নানা প্রচারণা শুরু করেছে। কিন্তু যাদের সাথে তারা ঐক্য চায় তাদের কাছে অর্থাৎ জনসংহতি সমিতির কাছে তারা কোনরূপ আনুষ্ঠানিক ঐক্যের প্রস্তাব দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। যতদূর জানি ইউপিডিএফ-এর কাছ থেকে জনসংহতি সমিতি এই রকম কোনো প্রস্তাব পায়নি। তারপরও ইউপিডিএফ প্রচারণা চালাচ্ছে জনসংহতি সমিতি এবং দলটির নেতা সন্তু লারমার কারণে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেনা। আর অনিমেষ চাকমা নিহত হওয়ার পর কথিত শান্তিবাদীরা বলতে শুরু করেছে এইভাবে সংঘাত-সংঘর্ষ চলতে থাকলে, রক্তক্ষয় হতে থাকলে জুম্ম জনগণের জন্য সমূহ বিপদ। এই রক্তক্ষয় থামাতে হবে—-ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যখন ভোর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বাসা ঘেরাও করে ২-৩ বছরের শিশু সন্তান ও স্ত্রীর সামনে নিরস্ত্র অভিলাষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন এই শান্তিবাদীরা নিশ্চুপ থাকেন। যখন রাজস্থলী বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে একের পর এক পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নিরস্ত্র কর্মীদেরকে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন এই শান্তিবাদীরা আরও বেশী শান্তিতে দিনাতিপাত করছিলেন। তখন এই অহিংসবাদীদেরকে ইউপিডিএফ কিংবা দলটির প্রধান প্রসীত বিকাশ খীসার কাছে সংঘর্ষ এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য কোনরূপ আবেদন নিবেদন করতে শোনা যায়নি। ধারনা করা যায় সেই সময়ে জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়না বরং সুদৃঢ় হয়। কাজেই যারা অনিমেষ চাকমা মারা যাওয়ার পর গেল গেল বলে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করছে, তাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন থাকে অভিলাষ চাকমার মৃত্যুর পর আপনাদের জাতীয় চেতনা কেন কুম্ভকর্ণের মত অচেতন থাকে ?? আবার যখন ইউপিডিএফ আক্রান্ত হয় তখন মাঝে মাঝে আপনাদের ঘুম ভাঙতে দেখা যায়।
আসলে যখন ইউপিডিএফ আক্রান্ত হয়, তখন তাদেরকে বাঁচানোর জন্য একশ্রেণীর অহিংসবাদী কথিত বুদ্বিজীবীরা জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তারা জনসংহতি সংহতি সমিতিকে এই ফ্রন্ট্রে ব্যতিব্যস্ত রেখে ইউপিডিএফকে পুনরায় সংগঠিত হতে সাহায্য করেন। লক্ষ্যণীয় যদি জাতীয় ঐক্যই এই অহিংসবাদীদের কাংখিত হয় তাহলে তারা কেন ইউপিডিএফ এবং দলটির প্রধান প্রসিত খীসার কাছে সংঘাত-সংঘর্ষ অবসানের দাবী করেনা। তারা আবার নিজেদেরকে নিরপেক্ষ বলেও জাহির করে থাকেন। এই কথিত অহিংসবাদীরা নিজেরাই স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রচার চালায় ইউপিডিএফ-তো ঐক্য চায়, দলটি এখন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে সুতরাং ঐক্যের বাঁধা অপসারিত হয়েছে। কথিত অহিংসবাদীরা এই রকম নানান সব গল্প বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। এরা জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করছে প্রসিত খীসা আর ইউপিডিএফ কত সাধু, যত দোষ হচ্ছে জনসংহতি সমিতি আর সন্তু লারমার। আমরা একই রকম প্রচারণা সরকারের কাছ থেকেও পরিলক্ষিত করি। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীবর্গও প্রায় বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে তারা খুবই আন্তরিক, কিন্তু সন্তু লারমা আর জনসংহতি সমিতি সহযোগিতা করছেনা সেই কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগুনো যাচ্ছেনা। যেন মনে হবে সরকার নয় চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতিই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে রেখেছে।
‘হিপোক্রেসি’-বলে একটা কথা বাজারে প্রচলিত আছে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই ‘হিপোক্রেট‘ হতে পারেন। ব্যক্তিগত ‘হিপোক্রেসি’ও ক্ষতিকর। তবে তা সমাজ জীবনে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পেলেনা। কিন্তু রাজনৈতিক হিপোক্রেসি খুবই বিপদজনক। তা সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলে, জন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলে। ইউপিডিএফ দলটি রাজনৈতিক হিপোক্রেসির এক অনন্য নিদর্শন। দলটি চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্বাস করেনা, কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানায়। সন্তু লারমাকে জাতীয় বেঈমান মনে করে, তাঁকে হত্যা করতে গাড়ি বহরে গুলি চালায়। আবার অন্যদিকে বলে, তারা সন্তু লারমার সাথে আলোচনায় বসতে চায়। জনসংহতি সমিতিকে ধ্বংস বা নির্মূল করতে না পারলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে ইউপিডিএফ বিশ্বাস করে। আবার তারাই প্রচার করে পাহাড়ের সংঘাত সংঘর্ষ অবসানে ইউপিডিএফ খুবই আন্তরিক। তাদের তাত্ত্বিক গুরু বদরউদ্দিন উমরের সাথে সুর মিলিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য ইউপিডিএফ দলটি দেশের বামপন্থীদের প্রায়ই গালমন্দ করে থাকে। কিন্তু জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন এলেই দলটি নির্বচানে অংশগ্রহণ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। শুধু তা নয় দলটি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহে ইউপিডিএফ ছাড়া অন্যদের অংশ নেয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারা নিজেদেরকে মার্কসবাদী হিসেবে পরিচয় দেয়, আবার ধর্মীয়গুরুর চরণে সমর্পণ করার প্রতিযোগিতায়ও তারাই এগিয়ে থাকে। দলীয় বুলেটিনে তারা এমনভাবে সেনা সদস্যদের বকাবকি করে যেন মনে হবে দলটি পাহাড়ের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। অথচ দলটির প্রধান প্রসিত খীসার সাথে সেনাকর্তাদের বৈঠকের অন্তরঙ্গ ছবির বিষয়টিও মানুষের কাছে গোপন থাকেনা। এই রকম এক হিপোক্রেট দলের সাথে সুর মিলিয়ে যারা অহিংসবাদ প্রচার করেন, নিরপেক্ষতার ভাব ধরেন তারাও হিপোক্রেট হবেন তাতে সন্দেহ থাকতে পারেনা। এই অহিংসবাদীদের প্রচারণা প্রোপাগাণ্ডার জবাবে বলতে হয় যদি সত্যিই পার্বত্য অঞ্চলের রাজনীতিতে ঐক্য চান তা হলে হিপোক্রেসী পরিত্যাগ করুন। জনসংহতি সমিতি দীর্ঘ ২যুগের অধিক সময় ধরে পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। অভিশপ্ত কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করেছে, জুম্ম জনগণের মধ্যে স্বাধীকারের চেতনা ও জাতীয়তার উন্মেষ ঘটিয়েছে। ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে জুম্ম জনগণের সংগ্রামকে একটি উচ্চতায় আসীন করেছে। চুক্তি পরবর্তী সময়ে চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনসহ জুম্ম জনগণের সকল প্রকার প্রতিরোধ সংগ্রামে জনসংহতি সমিতি নিষ্ঠার সাথে লড়াই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। কাজেই জনসংহতি সমিতি পাহাড়ের রাজনীতিতে অভিভাবকের মতই দায়িত্বশীল থাকবে তাতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারেনা।
অনৈক্যের বীজ জনসংহতি সমিতি রোপণ করেনি। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রাক্কালে খাগড়াছড়ির দুদকছড়াতে জুম্ম জনগণের বিভিন্ন পেশাজীবি, ভিন্ন ভিন্ন জাতিসমূহের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, পার্বত্য অঞ্চলের স্থায়ী ও আদিবাসী বাঙালিসহ সর্বস্তরের জনগণের সাথে জেএসএস শীর্ষ নেতৃত্ব দফায় দফায় মতবিনিময় করেন। জনগণকে সাথে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রেখে চুক্তি স্বাক্ষরের পথে জেএসএস অগ্রসর হয়। যে সামন্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জেএসএস প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিল, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তির প্রাক্কালে সেই সামন্তীয় সামাজিক নেতৃত্বকেও দলটি আস্থায় নিতে সক্ষম হয়। জেএসএস যখন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিচ্ছিল, সেই সময় প্রসিত খীসা চুক্তি স্বাক্ষরকে সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ ও জুম্ম জনগণের সাথে বেঈমানি আখ্যা দিয়ে অনৈক্যের বীজ রোপণ করে। শুধু তাই নয় তখন প্রসিত খীসারা জনসমাগমের স্থান সমূহে প্রতীকি শ্মশান ও চিতা তৈরী করে সন্তু লারমা এবং জেএসএসকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করে। জনসংহতি সমিতির সদস্যদেরকে আনুষ্ঠানিক অস্ত্র সমর্পণের সময় কালো পতাকা প্রদর্শন এবং ট্রানজিস্ট ক্যাম্পে আসার সময় ঢিল ছোঁড়া, পিনন প্রদর্শন ইত্যাদি বৈরী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। চাকমাদের প্রচলিত সামাজিক নিয়মে ছেলেদেরকে মেয়েদের পরিধেয় পোশাক পিনন প্রদর্শন করা হলে সর্বোচ্চ অবমাননা হিসেবে দেখা হয়। এইভাবে প্রসিত খীসা জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাহড়ের রাজনীতিতে সহ-অবস্থানের সকল পরিবেশ নিজেই ধবংস করে সম্পূর্ণ বৈরী ও শত্র“ভাবাপন্ন পরিবেশ তৈরী করার ভিত রচনা করে। অবশ্য তারা এইগুলোকে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ হিসেবে প্রচার করে থাকে। প্রতিবাদ করা, ভিন্নমত প্রকাশ করা আর আক্রোশ নিয়ে ঘৃণার উদ্রেক করা এই পার্থক্যটুকু যারা অনুধাবন করতে পারেননা তাদের দ্বারা আর যাই হোক জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ডাক শোভা পায়না। অনবরত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ চলতে থাকবে, আর প্রচার করা হবে ‘না না আমরাতো বন্ধুই হতে চায়—-’ এটাও এক ধরনের ছেলে খেলা। যারা এখনও সাবালক হয়ে উঠেনি, তাদের মুখে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টাও আসলে শিশু বয়সের আবদার ছাড়া অন্য কিছু নয়।
ইউপিডিএফ-এই শিশুতোষ আবদারে অনেকের মন ভিজেও যায়। তাদের মনে উদয় হয়, এখনি জাতীয় ঐক্য তৈরী হবে। সন্তু লারমাকে ঐক্যের বিষয়ে রাজী করাতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আসলে বিষয়টি সন্তু লারমার রাজী হওয়ার বা না হওয়ার বিষয় নয়। বিষয়টি হচ্ছে দায়িত্বশীলতা এবং সাবালক হয়ে পরিপূর্ণ মানুষের মত আচরণ করা। অনেকেই বলেন ইউপিডিএফ চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। অবশ্য দলটি এরও আগে অনেকবার এই ধরণের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো সময় কোনো কালে দলটি চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে শরীক ছিলনা। মহাজোট নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের প্রারম্ভে ইউপিডিএফ কর্তৃক চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার ঘোষণা দেয়াটা একটা বড় রকমের রাজনৈতিক শঠতা বা কূটচাল ছাড়া কিছু নয়। তার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ৪দলীয় জোট সরকারের সময় ওযাদুদ ভুইঞা আর সম-অধিকারের সাথে ইউপিডিএফ-এর যে মাখামাখি ছিল, সেটা থেকে সরকারের দৃষ্টি অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া। ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে জুম্ম জনগণ যে অধিকার অর্জন করেছিল, সে অর্জনকে প্রত্যখান এবং বাতিলের দাবী জানিয়ে ইউপিডিএফ পাহাড়ের জনজীবনে যে বিভেদ ও হিংসার পরিবেশ তৈরী করেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে অবশ্যই দলটিকে আনুষ্ঠানিক ভুল স্বীকার করতে হবে। চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জুম্ম জনগণের জাতীয় ঐক্যর মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টি করে শাসকগোষ্ঠীকে চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কাজে দলটি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। তাই ষড়যন্ত্র পরিহার করে ঐক্যের পথে আসতে চাইলে জুম্ম জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে ইউপিডিএফ’কেই। যদি দলটি তা করে তাহলে তাদেরকে কিছু রাজনৈতিক পরিভাষাও আয়ত্ব করতে হবে। শুধু শিশুদের মত আধাবোলে জাতীয় বেঈমান, খুনী, সরকারের দালাল, চুক্তি বাতিল ইত্যাদি শব্দগুলো আওড়িয়ে গেলেই দলটি চিরকাল নাবালকই থেকে যাবে। কে আগে কাকে মেরেছে এটা নিয়ে আলোচনা করা বা বায়না ধরা শিশুতোষ মনেরই পরিচয়। কারণ মারামারি, হানাহানি এইগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। যেমন জেএসএস নিশ্চিহ্ন করতে না পারলে পূর্ণস্বায়ত্বশাসন অর্জিত হবেনা এই ভ্রান্ত ও বিনাশী কর্মসূচী দিয়ে কি আর সংঘাত সংঘর্ষ বন্ধ করা যায়?? অহিংসপন্থী কথিত নিরপেক্ষবাদীরা বিষয়টি ভাববেন কি??
আমরা চূড়ান্তভাবে বলতে পারি চুক্তিকে সূচক ধরে জুম্ম জনগণ অনেক আগে থেকেই ঐক্যবদ্ধ। চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এগিয়ে নিতে জুম্ম জনগণের মধ্যে ভিন্নমত থাকার কথা নয়। ইউপিডিএফ যদি অতীতের ভুল স্বীকার করে এই আন্দোলনে শরীক হতে চায় তা হলে তাদেরকে আন্দোলন থেকে বাদ দেয়া হবে এমনটা নিশ্চয় কেউ করবেনা।। তাই নতুন শান্তিবাদীরা যারা অনিমেষ চাকমার মৃত্যুর পর থেকে জাতীয় ঐক্য – জাতীয় ঐক্য বলে বাজারে হাঁক-ডাক ছাড়ছেন, তাদেরকে বলছি আপনাদেয় প্রিয় ভাইদের যেন আর রক্ত না ঝরে, যেন আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন তার জন্য ইউপিডিএফ-কে বালখিল্যতা পরিহার করে সঠিক কক্ষপথে নিয়ে আসুন। জনসংহতি সমিতি বহু আগে থেকেই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরী করে রেখেছে। কাজেই আপনাদের কথিত যে প্রচারণা তার সম্পূর্ণ অসার এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত। জনসংহতি সমিতি এবং দলটির নেতা সন্তু লারমা দায়িত্বশীলতার সাথে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এখন আপনাদেরই দায়িত্ব হিপোক্রেট থাকবেন, নাকি চিরকাল নাবালক থাকবেন. নাকি জুম্ম জনগণের মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ তৈরী করে, নিজেরাই আবার ঐক্য ঐক্য বলে গলা ফাটাবেন, সে সিদ্ধান্ত আপনারাই দিবেন। বল আপনাদের কোর্টেই দিয়ে দিলাম।
হ্যাঁ, নেতৃত্বের মধ্যে যদি সেতু বন্ধন হয় তাহলে অবশ্যই দলের বাকিরা তা অনুসরণ করবে বলেই মনে হয়। কিন্তু দুই তিন জন ব্যক্তিই যেখানে এক মতে আসছে পারছেনা সেখানে গোটা দুই দল কি করে আসবে! যে যেই দল করে বা যার সাপোর্টার তার সর্বোচ্চ প্রশংসা করে আর অন্য দলকে করে সর্বোচ্চ নিন্দা। এই ফাঁকে আমাদের আমপাহাড়ির ভবিষ্যৎ কি! সত্যি বলতে কি এক জন সাধারণ পাহাড়ি নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে এই দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল আর সেনাবাহিনী যেভাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে ব্যর্থ তেমনি এই দুই-দলীয় কোন্দল, কাদা ছোড়াছুড়ি একইভাবে এবং সমানভাবে আমাদের সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ। ঐক্য তো দূর, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মত মৌলিক বিষয়টিইতো নেই। কখনো কখনো মনে হয় জুম্ম জাতির অস্তিত্বের লড়াইয়ের চেয়ে দলের আমিত্ব-লড়াইটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আশা করি আমার লেখাটি কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবন না। এক জন সাধারণ পাহাড়ি হিসেবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলাম, কারণ আমার মত অনেককেই একই কথা বলতে শুনি।
ইউডিএফ এর পক্ষ থেকে কেউ কি তাদের পার্টির আদর্শ কি, কি তাদের লক্ষ্য এইগুলোকে সল্প পরিসরে মুক্তমনার পাঠকদের জন্যে তুলে ধরতে পারবেন? একই কথা প্রযোজ্য জনসংহতি সমিতি এর জন্যেও। দীপায়ন বাবু যেহেতু এখানে আছেন তিনি জনসংহতি সমিতি এর লক্ষ্যগুলো তুলে ধরতে পারেন। আমার উদ্দেশ্য আসলে এই দু’দলের মাঝে আদর্শের পার্থক্যটুকু কতটুকু সেটা জানার। লেখার মাঝে অন্য দলের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য না থাকলেই ভালো হয়। অগ্রীম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখলাম।
মুক্তমনা ব্লগারদের প্রতি:
ধন্যবাদ এ আয়োজনের জন্য, ধন্যবাদ এই অভিনবতম প্রচেষ্টার জন্য।
আন্তর্জাল শব্দটিতে আপত্তি নেই, খুঁতখুতিঁ আছে। ইন্টার-আন্তঃ, নেট-জাল বললে নেটওয়ার্ক জাল বুঝতে কষ্ট হবে অনেকের, যারা শব্দের উৎস খুজেঁ বেড়ান…
সব শব্দের অনুবাদ দরকার কি? আমাদের বাঙলা ভাষা এতো সংকীর্ণমনা নয় যে সে নতুন বিদেশী শব্দ বুকে তুলে নিতে কৃপনতা করবে!
রাজনৈতিক ব্লগ স্পর্শকাতর। এখানে ব্যক্তিগত আক্রমন নিষিদ্ধ না করলে এটি আরেক ফেসবুক/টুইটার হতে বাধ্য। অবশ্যই রেফারেন্স ধরে কথা বলা উচিত। ব্যক্তিকেন্দ্রিক মতামত বেশি প্রাধান্য পেলে সেখানে ‘কাইজা’ হতে পারে। ব্লগে নতুন এসেও যে কেউ যেন বুঝতে পারে এটিতে ব্যবহৃত শব্দ বা টার্মগুলি কি বলতে চায়। যেমন এই ব্লগে ইউপিডিএফ/ সন্তু লারমা/ জেএসএস (জনসংহতি সমিতি শব্দটির পাশে যার প্রয়োজন ছিলো) এইগুলি হাইপারলিঙক করা দরকার ছিলো। প্রয়োজনে লেখক ফুটনোট লেখতে পারেন যা একই পেজে লিঙক্ড থাকলো।
ধর্মীয় কোন লেখা সুনির্দিষ্ট রেফারেনস ছাড়া প্রকাশের অনুমতি এই ব্লগচর্চার জন্য স্ববিরোধিতার সামিল। এজেন্ডা, প্রোপাগান্ডা, কনসপিরেসি এবং পলিটিকাল লেখার ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র লিখতে লেখককে বাধ্য করা উচিত।
এ ধরনের চর্চা আমাদের নতুন তথ্যসংস্কৃতির পাইওনিয়ারদের হাতেই প্রথম শুরু হওয়া উচিত।
মুক্তমনারা তাদের ভাবনা রেখে যান ব্লগে, এ ব্লগ স্থায়ী হোউক সময়ের রুপান্তরে রূপান্তরিত হতে হতে….
ফেসবুক গ্রুপ ‘পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’ [লিংক] এ ইউপিডিএফ-এর দলছুট নেতা (এখন প্রবাসী) সঞ্চয় চাকমার একটি প্রাসঙ্গিক পোস্ট এখানে সংযুক্ত করা হচ্ছে:
সবাইকে ধন্যবাদ। (Y)
প্রিয়
বিপ্লব ভাই
সঞ্চয় চাকমা ইউপিডিএফ দলটির প্রতিষ্ঠাদের একজন । বলা যায় অন্যতম। আমরা বন্ধু ছিলাম। সুইজারল্যান্ডে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। ৯০-এর দশকে পাহাড়ে ছাত্র সমাজের প্রতিরোধ সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক।তিনি কেন ইউপিডিএফ ছাড়লেন। সে বিষয়টা যদি অন্যদের জানাতেন ভাল হত। কারণ এমনতো কথা ছিল না। অবশ্য কথাটি আমাকে বলেছিলেন প্রসিত খীসা। আমি যখন দলটির কেন্দ্রীয় ফোরামে পদত্যাগ পত্র জমা দিই, তখন প্রসিত এইটুকু কথাই বলেছিলেন । জবাবে আমি বলেছিলাম,”এরকম আরও অনেক কথাও তো আমাদের ছিল না’। সেই না থাকা কথাগুলো নিয়ে আমি লিখে যাচ্ছি। বন্ধুবর সঞ্চয়ও যদি লিখতেন——
Sanchay Chakma
এ তো দেখছি আরেক হাসিনা আর খালেদার মতোই ইগো সমস্যা :-Y । আমার কাছে সমস্যার মূলে হচ্ছে দলগুলোর মাঝে গণতন্ত্রের চর্চার অভাব। আজীবন যদি কেউ দলের নেতৃত্বে থাকে বা থাকতে চায় সে ক্ষেত্রে স্বৈরাশাসকই তৈরী হয়, নেতা তৈরী হয় না। কেউ এক/দুই মেয়াদের চেয়ে বেশি দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবে না, এরকম একটি নীতি সকল সংগঠনে বাধ্যতামূলক করা উচিত নির্বাচন কমিশনের।
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই সঞ্চয় চাকমার লেখাটা মুক্তমনায় নিয়ে আসার জন্যে। ‘পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’-এ নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানে যাওয়া আমার সুযোগ নেই। তাই এতদিন সঞ্চয় চাকমার লেখা হতে বঞ্চিত ছিলাম।
সঞ্চয় চাকমা যা লিখেছেন তার সাথে দ্বিমত নেই। আমার লেখাতেও অনেক বিষয় তুলে এনেছিলাম। রাজনৈতিক তত্ত দিয়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেওয়া যায়। অর্থাৎ বহু কারণবাদ অনুসারে অনেক সমস্যার কথা বলা যায়। সেখানে সহজ সরল সমাধান পাওয়া কঠিন। সঞ্চয় চাকমা তার নাতিদীর্ঘ লেখাতে সেই বহুকারণবাদ থেকে সরে এসে আসল একটি কারণের কথাই বলে ফেলেছেন। সেই কারণটা হলো দুই নেতার Ego বা অহংবোধ। তিনি আরো স্পষ্ট করে বললেন, নিরনবাবুর বস মনে করেন, “the only superior of all others! ( তিনি সবার সেরা)। আর দীপায়ন বাবুর বসের ব্যাপারে তো কোন কথাই নেই। তার বস অনেক আগেই “এক বনে এক বাঘের তত্ত” (‘Theory of one tiger in a jungle’!) ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনাটা অনেক কম, যদি না দুই নেতা তাদের অহং ত্যাগ না করেন । সে কারণে সঞ্চয় চাকমা অকপটে বলে ফেললেন,
সহজ অনুবাদঃ “সাধারণ জুম্মজনগণ জাতীয় ঐক্যের পক্ষে। এমনকি দু’দলের অধিকাংশ কর্মীও ঐক্যের পক্ষে। একমাত্র বাধা হলো দু’দলের দুই শীর্ষ নেতা”। একদম খাঁটি কথা। দু’নেতা চাইলে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করার সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কাজেই পাহাড়ে জাতীয় ঐক্য পুনরুদ্ধার করতে চাইলে দু’ই নেতাকে লক্ষ্য করে কর্মসূচী ও কর্ম কৌশল ঠিক করতে হবে।
অডংবাবু
আপনি তথ্য ব্যবহারের সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কারণ তথ্যগুলোও যদি আপনার মতো নাম পরিচয়হীন হয়ে যায় তাহলে সমূহ বিপদ। আপনি ভালো থাকুন।
@dipayon,
দীপায়নবাবু, আমার কোন তথ্য ব্যবহার নিয়ে আপনার আপত্তি আছে? অযথা অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (…“আপনার মতো নাম পরিচয়হীন হয়ে যায়…) ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে ভালো হয়। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমার লেখাতে যেসব তথ্য ব্যবহার করি সেসব তথ্যের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি সচেতন। উপরে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম সেটা ছিলো সঞ্চয় চাকমার মন্তব্যের উপর বিশ্লেষণ। এখানে কোন তথ্যের ব্যপারে আপনার আপত্তি থাকলে আলোচনা করতে পারেন।
@অডঙ চাকমা,
প্রিয়
অডংবাবু
আপনি যেই হোন না কেন, আপনার সততার ঘাটতি আছে। আপনি যে নাম পরিচয়হীন তা স্বীকার করতে আপনি নারাজ। আপনি দায়িত্ব নিতে ভয় পান বা নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার মানসিক সাহস আপনার নেই। অথবা আপনার এমন কিছু বিষয় আছে যা আপনি লুকিয়ে রাখতে চান। হতে পারে ধরা পড়ার ভয়, চেহারা উন্মোচিত হওয়ার আতংক। তাই নয় কি?
@দীপায়ন খীসা,
দীপায়নবাবু, আপনি একজন রাজনৈতিক কর্মী । আপনার শিশুসুলভ আচরণ দেখে একটু মায়া লাগছে। আর যাই বলেন, আমার নাম নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। আমি নাম পরিচয়হীন নই; কারোর জারজ সন্তানও নই। আমি কারোর নাম চুরি করে এখানে লিখতে আসিনি, আমার নামেই লিখছি। দু’একদিন ধরে অডঙের নাম ব্লগে দেখছেন বলে মনে করবেন না অডঙ আপনার বিরুদ্ধে মুক্তমনায় ছ্যাবলামি করতে এসেছে। অডঙ অনেকদিন ধরে ব্লগের জগতে আছে।
আমি তো আগেই বলেছিলাম, দীপায়নবাবু সন্দেহরোগে আক্রান্ত। আর যাই হোক, সন্দেহ রোগাক্রান্ত দীপায়ন বাবুর কাছ থেকে অডঙের সততার Lesson নিতে হবে না।
দীপায়নবাবু, বুদ্ধের সর্বশেষ বাণী শুনিয়ে কথাটা শেষ করবো। “আত্মদীপ ভব” (নিজেই আলো হয়ে জ্বলো)। অন্যকে আলোকিত করতে না পারলেও অন্তত নিজে নিজে আলোকিত হওয়ার চেষ্টা করুন।
অডঙ চাকমা,
প্রিয় অডংবাবু
আমি আপনাকে জারজ বলিনি। বলেছি নাম পরিচয় গোপন রেখেছেন। একবার আপনার একটা লেখা অশোক চাকমা নামে প্রকাশ করা হয়। অশোক প্রতিবাদ করেছিলেন। জানিয়েছেন তিনি অডং নন। এভাবে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে কার লাভ অডংবাবু। পরিচয় জানতে চাইলে কেন রেগে যান। আপনি জারজ হলেও আমার ক্ষতি নেয়। আমি জম্ম দিয়ে মানুষ বিচার করি না। তবে আপনি যতই বড়াই করেন না কেন সবাই আপনাকে অডং নামে চিনে, সে টা সত্য নয়। এটা ছদ্ম নাম। আপনি নিজেকে যত বিখ্যাত ভাবছেন, সে টা এত সহজ নয়। অবশ্য খালি কলস বাজে বেশী। ভালো থাকুন, মান্যবর অডংবাবু।
@দীপায়ন খীসা,
দীপায়নবাবু, আপনার সাথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্ত একটার পর একটা অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে এসে মূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন তাতে বিরক্তিবোধ হচ্ছে, তবে রাগ হচ্ছে না। জারজ শব্দটা উচ্চারণ করেননি। তবে আপনার জানা আছে, আমাদের সমাজে নামপরিচয়বিহীন সন্তানকে জারজ বলা হয়। আমাকে যখন নামপরিচয়বিহীন বলেন তখন তাতে একটু বিরক্ত হতে হয় বৈকি। এটা আমার ডাকনাম। ডাকনাম ব্যবহার করবো নাকি একাডেমিক নাম ব্যবহার করবো এটা আমার স্বাধীনতা। আমার নামটা এখন আসল মনে করেন কিংবা ভুয়া মনে করেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আমার নামের স্বাধীনতায় আপনার হস্তক্ষেপ মানবো না।
হ্যাঁ, যার কথা বললেন তাকে ভালো করে চিনি। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাতে চাকরী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। রূপায়ন দেওয়ানের CHT Voice- এ ঐ লেখাটা দেখেছিলাম। পরে দেখতে পাইনি। সরানো হয়েছে মনে হয়। আমার মনে হয়, রূপায়ন দেওয়ান অপ্রয়োজনীয়ভাবে অশোক চাকমাকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছিলেন। উধোরপিন্ডি বুদোর ঘাড়ে। কার লেখা কার নামে চালিয়ে দিতে চান! সেটা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে চরম অনৈতিকতা। আমার মনে হচ্ছে, শুধু দীপায়ন খীসা নন, যারা পাহাড়ের স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত আছেন তাদের অধিকাংশই এখন সন্দেহরোগে আক্রান্ত। এই রোগ থেকে কীভাবে মুক্তি ঘটবে সেটাও বোধয় এখন বিশেষভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
ধন্যবাদ দীপায়ন বাবু আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্যে। আপনিও ভালো থাকুন।
প্রিয়
অডংবাবু
ব্যক্তি হিসাবে স্বাধীন।
তবে দায়বদ্ধতা বলে একটা কথা আছে।
@ দীপায়ন বাবু,
কিছু কথা ! আপনার ভাষনের শব্দগুলো আদৌ কানে শুনি । টতলা- টতলাভাবে আর্মি এবং সন্তু লারমা বিরুদ্ধে শ্লোগান ধরতেন আর পিছনে থাকতো বিপ্লবী ছাত্রজনতাসহ গ্রাম্য জনসাধারণ । আপনার ভাষনে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে ইউপিডিএফে সম্পৃক্ত হয়ে জীবন উৎসর্গ করছেন । আজ বরই দূঃখের বিষয় আপনি তাদেরকে মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিয়ে নিজের জন্য ভাবতে লাগলেন । একটা উদাহরণ টানি, মুক্তমনার উদ্যোক্তা দাদা অভিজিৎ রায়, সহযোগিতা করেছেন ফরিদ ভাইসহ আরো অনেকেই । ধরেন ফরিদ ভাই মুক্তমনাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন । ধর্মের মতো অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান । দেখা গেলো একসময় অভিজিৎ দাদার সাথে ফরিদ ভাইয়ের ব্যক্তিগত সমস্যা হলো, আর প্রতিশোধের নেশায় ফরিদ ভাই অবস্থান নিলেন পুরা মুক্তমনাদের বিরুদ্ধে । ইসলামিস্ট জঙ্গিদের সাথে তিনি মিশে গিয়ে মুক্তমনাদের সবতথ্য ফাঁস করে দিলেন । ইসলামিস্ট জঙ্গিরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক মুক্তমনাদের উপর অত্যাচার করতে শুরু করলেন । এই অবস্থানটা একজন মুক্তমনা কিভাবে নিবেন ? আপনার কথামতো ঝগড়া হয়েছে প্রসিত খীসার সাথে আপনি বেঈমান করলেন পুরা ইউপিডিএফের নেতাসহ সাধারণ কর্মীদের সাথে ! আপনি যখন ইউপিডিএফ গঠন করেন তখন কি আপনি নাবালক ছিলেন ? ২৬-২৭ বছরের পর ও যে মানুষ নাবালক থাকে সেতো চিরজীবন নাবালক হয়ে থাকবেই, নই কি ? ।
(কাল্পনিক কিন্তু যৌক্তিক উদাহরণটার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী । বুঝার সুবিধার্থে এখানকার উদাহরণ টানলাম ।)
@সমরেশ চাকমা,
কস্কী মমিন? :hahahee: :hahahee: :hahahee:
@বিপ্লব রহমান, আরো একটা কথা ছিল, বলে ফেলি (অভিজিৎ দা এবং ফরিদ ভাই উদাহরণের জন্য অধমকে ক্ষমা করবেন নিশ্চয় ),
এখন ফরিদ ভাই যদি এমনটা করেন তাকে অনৈতিকভাবে বিভিন্ন কৌশলে অবতীর্ণ হতে হবে কেননা, নিজেকে ভালো সাজাতে হবে । মুক্তমনাদেরকে যেকোনভাবে দেশদ্রোহী-ধর্মদ্রোহী-স্বার্থপর বানাতে ফরিদ ভাইকে মরিয়া হতে হবে না হয়, জঙ্গীরা তাকে অবিশ্বাস করবে । ফরিদ ভাই এমনটা করলে বুঝতে হবে কে কোন আদর্শ থেকে ছিটঁকে গিয়েছে । অভিজিৎ দা নিশ্চয় ফরিদ ভাইকে মুক্তমনা হতে বাধ্য করাননি । ফরিদ ভাই নিজের বোধশক্তি থেকে জানতে পেরেছেন সেখানে গড বলতে কেউ নেই । মুক্তমনা থেকে ছিটঁকে পড়ার জন্য সকল মুক্তমনারা কি দায়ী হবেন ?
এখন দীপায়ন বাবুর সমস্যা ও ঠিক একইরকম । নিজে ইউপিডিএফ বানাতে সাহায্য করার পর এখন বলছে ইউপিডিএফ খারাপ …. ইত্যাদি । কারণটা হচ্ছে, এমনটা না করলে জেএসএস (সন্তু লারমা) তাকে বিশ্বাস করবে না । প্রসিত খীসা কি দীপায়ন বাবুকে ইউপিডিএফে যোগ দিতে বাধ্য করিয়েছিল ?
সমরেশ বাবু
ইঊপিডিএফ-এর প্রতি আপনার ভালবাসা থাকতে পারে। বলা যায় গভীর প্রেম। আপনার প্রেম ভালবাসা নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নেই। আমরা ধরে নিতে পারি এটা নিখাদ। আপনার এই প্রেম গভীর থেকে আরও গভীরতম হোক আমাদের আপত্তি নেই। আপনি তাদের সাথে ঘর-সংসার করতে থাকূন। তাই বলে সবাইকে কি আর ঘর বাঁধতে বলবেন। পোকামাকড়ের সাথে ঘর-সংসার সবাই করতে পারেনা। আপনার সে যোগ্যতা আছে, তাই ধন্য আপনি ধন্য—-
Thanks Dipayon Da. Pls go ahead and open there mask. (Y)
@Jummobi Chakma,
সাথে থাকুন।
আরো নতুন কিছু পাবেন।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
আপনাদের মত পাহাড়ের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অনেক কিছু জানার আছে মুক্তমনার সদস্যদের। আশা করছি যে নিয়মিত লেখালেখি এবং মন্তব্যের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার সঠিক চেহারা এবং এর সমাধানের রূপরেখা তুলে ধরবেন আপনি।
[প্রিয় দীপায়ন বাবু, অডঙ চাকমার নাম নিয়ে আপনার সন্দেহ ছিলো। কিন্তু নিরন চাকমার নাম নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়। একসময় তার সহকর্মী ছিলেন। আপনার “ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের কাছে কিছু বিনীত নিবেদন” লেখা পড়ে নিরন চাকমা ফেসবুক গ্রুপে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটা লেখা দিয়েছিলেন গত ২১ জুন ২০১১। নিচে হুবহু তার লেখাটা ফেসবুক নোট থেকে কপি করে তুলে ধরা হলো। নিরনবাবুর লেখার জবাবে আপনার কাছ থেকেও জবাব পাবো এই আশা করছি।]
ঐক্যের বিরোধীদের প্রতি
by Niron Chakma on Tuesday, 21 June 2011 at 19:15
———————————————-
ইউপিডিএফ থেকে বহিষ্কৃত ও বর্তমানে সন্তু লারমার মুরীদ দীপায়ন খীসার “ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের কাছে কিছু বিনীত নিবেদন” শিরোনামের লেখাটি পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত “দুই বিঘা জমি” কবিতাটি মনে পড়লো৷ এই কবিতার বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ হলো এই — হতদরিদ্র উপেনের শেষ সম্বল ছিল দুই বিঘা জমি৷ তাও জমিদার ষড়যন্ত্র করে কেড়ে নেয়৷ ভিটেমাটি-হারা ছন্নছাড়া হয়ে উপেন নানা জনপদ ভ্রমণ করেন কিন্তু তার জমি হারানোর শোক ভুলতে পারেন না৷ বহু বছর পর ভূমির মায়ায় তিনি একদিন নিজ গ্রামে ফিরে আসেন৷ ইত্যবসরে তার সেই দুই বিঘা জমির আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে৷ তবে প্রাচীরের কাছে একটি আমগাছই কেবল অক্ষত আছে৷ সেটা দেখে তার বাল্যকালের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়৷ এমন সময় বাতাসে দু’টি আম তার সামনে পড়লে তিনি সেগুলো কুড়িয়ে নেন৷ আর তখনই যমদূতের মতো হাজির হয়ে মালী তাকে বন্দী করে জমিদারের কাছে নিয়ে যায়৷ জমিদার ক্রোধে ফেটে পড়েন:
সত্যি আজ কবিতার জমিদার বাবুর মতো যারা জনগণের সুখ শান্তি কেড়ে নিয়েছে তারাই সাধু, নীতিভ্রষ্ট আদর্শচু্যত দীপায়নরাই আজ ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক’, আর আমরা যারা উপেনের মতো কেবল ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের “ভিখ মাগছি” তারাই হয়ে গেলাম ‘হিপোক্র্যাট’৷ ভূমিদস্যু জমিদার ক্রোধে ফেটে পড়েছেন কেবল দুটি আমের জন্য৷ আর দীপায়ন বাবু “শান্তিবাদী”দের ওপর ক্রোধে ফেটে পড়ছেন সংঘাত বন্ধের দাবি করায়৷ জমিদার নিজে ভুমি দস্যু হয়েও উপেনকে চোর বলে গালি দেয়, আর হিপোক্রেসির পরাকাষ্ঠা দীপায়ন বাবু অডং, অমিত হিল ও ইউপিডিএফসহ যারা শান্তির পক্ষে তাদের বলেন হিপোক্র্যাট৷ কবি শামসুর রাহমানের কবিতার প্যারোডি করে বলতে ইচ্ছে করে, এক অদ্ভুত গাধার পিঠে চলছে জেএসএস!
দীপায়ন বাবুর লেখায় স্পষ্ট হয়েছে, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ না হওয়ার জন্য কেবল সন্তু লারমা নয়, তার আশেপাশে যে সব চামচা চাটুকার রয়েছেন, তারাও কম দায়ী নন৷ ‘বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ৷’ দেখা যাচ্ছে সন্তু লারমা একবার ইউপিডিএফ নির্মূলের কথা বললে তার “পরিষদ-দল” অর্থাত্ দীপায়ন বাবুর মতো চাটুকার-চামচারা তার শতগুণ বলছেন৷ তাই পাহাড়ে রক্ত ঝরছে অবিরাম, মায়ের কোল খালি হচ্ছে একের পর এক আর বিধবা হচ্ছেন অসংখ্য জুম্ম নারী৷ ইতিহাস কি এই চাটুকারদের ক্ষমা করবে?
আমি বলবো যারা ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছেন, যারা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন, তাদের কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করে দীপায়ন বাবু যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন, তা যেমন ক্ষমার অযোগ্য, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য এক অশনি শঙ্কেত৷ সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয়, নিজে আদর্শচ্যুত হয়ে, রাজনৈতিক দিগবাজী খেয়ে তিনি অন্যকে হিপোক্র্যাট না হওয়ার উপদেশ বর্ষণ করছেন৷ এর থেকে চরম ভণ্ডামী আর কী হতে পারে! নিজে চোর হয়ে সাধুদের চুরি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ সবার মনে রাখা উচিত দীপায়ন বাবুর মতো রাজনৈতিক ভণ্ড ও দিগবাজী বিশারদরা আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ এদের ব্যাপারে সচেতন থাকাই জাতি ও জনগণের জন্য মঙ্গল৷ এদেরকে ইউপিডিএফ থেকে বিতাড়িত করা গেছে বলেই ইউপিডিএফ এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে৷ এরা যতদিন পার্টিতে ছিল, ততদিন পার্টিকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে৷ পার্টি একই জায়গায় ঘুরপাক খেয়েছে৷
মাছিরা যেমন মরা প্রাণীর দেহে গিয়ে ভিড় করে, দলচ্ছুট সুবিদাবাদী দীপায়ন বাবুরাও নীতি আদর্শহীন মরা পার্টিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়৷ যেখানে মাছি ভন্ ভন্ করে, মনে করতে হবে সেখানে কোন মরা প্রাণী আছে৷ ঠিক তেমনি দীপায়নরা যে পার্টিতে ভিড় করে, মনে করতে হবে সে পার্টি রাজনৈতিকভাবে মরে গেছে বা দেউলিয়া হয়ে পড়েছে৷ মাছিরা যেমন জীবন্ত মানুষের গায়ে পড়া মাত্র তাড়া খেয়ে অন্যত্র উড়ে যেতে বাধ্য হয়, দীপায়নরাও ইউপিডিএফ-এর মতো একটি আদর্শবাদী পার্টি থেকে বহিস্কৃত হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়৷
দীপায়ন বাবুর লেখার জবাব ইতিমধ্যে অডং চাকমা ও অমিত হিল চমত্কারভাবে দিয়েছেন৷ তার এই লেখার জবাব নতুন করে আর দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না৷ তবুও যেহেতু অডং চাকমা ইউপিডিএফ-এর দিক থেকে মন্তব্য আশা করছেন, সেজন্য দু’ একটা কথা না বলে পারছি না৷
প্রথমত, দীপায়ন বাবুর লেখা পড়ে মনে হয়েছে ঐক্যের পক্ষে কথা বলা, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবি করা তার কাছে যেন অপরাধ৷ অডং চাকমা ও অন্যান্যরা যেন সেই অপরাধ করেছেন৷ আমি বলবো, ঐক্যের পক্ষে কথা বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে সেই অপরাধ বার বার করা উচিত৷
দ্বিতীয়ত, ফেইসবুক ও ইন্টারনেটের অন্যান্য সোসাল মিডিয়ায় ঐক্য সম্পর্কে যে আলোচনা হচ্ছে, তা বৃথা যাচ্ছে না৷ দীপায়ন যে জেএসএস (সন্তু গ্রুপ) এর পক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হয়েছেন, এটা তারই প্রমাণ৷ সেজন্য আমাদের সবার উচিত হবে এই আলোচনাকে গভীরতর এবং আরো প্রসারিত করা৷ একে একটি আন্দোলনের রূপ দেয়া৷ এটা আজ প্রমাণিত সত্য যে, চরম গণবিরোধী ফ্যাসিস্টরা প্রথম দিকে গণদাবি উপেক্ষা করার ধৃষ্টতা দেখালেও শেষ পর্যন্ত ব্যাপক আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়৷
তৃতীয়ত, দীপায়নের মতে, ইউপিডিএফ ঐক্যের প্রস্তাব দিয়ে, চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সাবালকত্ব নয়, নাবালকত্বেরই প্রমাণ দিয়েছে৷ মেনে নেয়া গেল, ইউপিডিএফ নাবালক, কিন্তু আমাদের সন্তু গ্রুপ তার সাবালকত্ব কীভাবে প্রদর্শন করেছে? সন্তু গ্রুপ ঐক্যের প্রস্তাব ও চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাসের জবাব দিয়েছে ইউপিডিএফ নেতা কর্মীদের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে; ইউপিডিএফ-এর বাড়িয়ে দেয়া বন্ধুত্বের হাতে হাত মিলিয়ে নয়৷
আসলে ইউপিডিএফ তো সেই সত্যবাদী সরল শিশুটির মতো, যে ন্যাংটো রাজাকে ন্যাংটো বলেছিল৷ যেখানে সকল চাটুকার রাজার রোষের ভয়ে সত্য কথাটা বলার সাহস করেনি, সেখানে একটি ছোট্ট বালকই সত্য উচ্চারণ করেছে এবং রাজার রোষানলে পড়েছে৷ ইউপিডিএফ নেতা প্রসিত খীসারা সাহসের সাথে জেএসএস ও সন্তু লারমার ভুল ও ভয়ঙ্কর রাজনীতির স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছেন বলেই আজ সন্তু লারমা ও তার ভক্ত মুরীদদের উগ্র রোষের শিকার হয়েছেন৷ গৌতম, উষাতন ও দীপায়ন বাবুদের মতো চাটুকার হলে তাদের পুরস্কারই জুটতো৷ তবে তখন সত্যের বিনাশ ঘটতো৷
চতুর্থত, মহা হিপোক্র্যাট দীপায়ন বাবু “বৈরী ও শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ” এর কথা বলেছেন৷ চুক্তি স্বাক্ষরের বহু আগেই সন্তু লারমা এই বৈরী ও শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন৷ কেবল মাত্র (১৯৯৬ সালের) জাতীয় নির্বাচনের কৌশল নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করায় ও জেএসএস-এ ভর্তির আগে গঠনতন্ত্র পড়তে চাওয়ায় সন্তু লারমা জেএসএস-এর সকল ইউনিটে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন প্রসিত খীসাসহ ৫ জনকে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে “গ্রেফতার” করার জন্য৷ তিনি শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রসিত খীসাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন৷ অপরদিকে প্রসিত খীসারা সে সময় কী করেছিলেন তার বিবরণ দীপায়ন বাবুর মুখ থেকেই শোনা যাক৷ সৌম্য চাকমা নামে “লারমার কলমবাজ-সন্ত্রাসীরা যে কথা বলেননি” শিরোনামে স্বাধিকারের ১৭ নং বুলেটিনে (১ জানুয়ারী ২০০১) তিনি লেখেন:
দীপায়ন বাবুটির পুঁজি এখন মিথ্যাচার ও রাজনৈতিক ভণ্ডামী৷ তার লেখায় একটা যুক্তি নেই, নেই সত্য কথন৷ কেবল “শান্তিবাদীদের” বিরুদ্ধে বিষোদগার৷ তিনি আসলে রাজনৈতিক “কেরেঙা চলছেন”৷ এখন কে তার সুমতি উদয় হওয়ার কামনা করবেন?
পঞ্চমত, দীপায়ন বাবু তার ওস্তাদ সন্তু লারমার প্রতি স্তুতিবাক্য বর্ষণ করে বলেন,”জনসংহতি সমিতি এবং দলটির নেতা সন্তু লারমা দায়িত্বশীলতার সাথে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে৷” আসলে নীতিহীন মানুষ পারে না এমন কাজ নেই৷ দীপায়ন মাটিতে থু থু ফেলে সেটাই আবার তুলে চাটছেন৷ সন্তু গ্রুপে ভিড়ার আগে এক সময় তিনি সন্তু লারমা ও জনসংহতি সমিতির চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছেড়েছিলেন৷ উপরোক্ত “লারমার কলমবাজ-সন্ত্রাসীরা যে কথা বলেননি” শীর্ষক লেখা থেকে আরো কিছু উদ্বৃতি:
.. . … … …
.. . … … …
যিনি সন্তু লারমার কলমবাজ সন্ত্রাসীদের সমালোচনার পর নিজেই তাদের দলে ভিড়ে যান, তার সম্পর্কে বেশী কিছু কি বলার থাকে? তারপরও প্রশ্ন করতে চাই, দয়া করে সন্তু গ্রুপের কেউ বলবেন কি সন্তু লারমা কী রকম “দায়িত্বশীলতার সাথে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে” যাচ্ছেন? জনগণের ঐক্যের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করা ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবি উপক্ষা করা কি দায়িত্বশীলতা? ভাইয়ের বুকে গুলি চালানো কি আন্দোলন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন বা না দিন, মনে রাখবেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও দাবিকে উপক্ষা করে কোন পার্টি ও নেতা কোন দেশে কোন কালে টিকতে পারেনি৷ সন্তু লারমা এবং জেএসএস-ও পারবে না৷ এটাই চরম সত্য৷
রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শুরু করেছি, রবীন্দ্রনাথ দিয়েই শেষ করতে চাই৷ দুই বিঘা জমির উপেনরা কি চিরকাল বঞ্চিত শোষিত হয়ে থাকবে? জমিদার বাবুরা কি চিরদিন জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে? উপেনদের মুক্তির পথও রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন৷ “এবার ফিরাও মোরে” কবিতায় তিনি লেখেন:
ফ্যাসিস্টদের নিজেদের শক্তি নেই, আমরা জনগণ অসংগঠিত বলেই তারা আমাদের ওপর ছরি ঘোরায়৷ কিন্তু এক হয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালেই তারা পথকুক্কুরের মতো পালিয়ে যায়৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এক হয়ে দাঁড়ালে ফ্যাসিস্ট সন্তু লারমাকেও সেভাবে পালাতে হবেই৷ এর কোন বিকল্প হতে পারে না৷ কারণ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত দীর্ঘ দিন চলতে পারে না৷ এর বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ দ্রুত পুঞ্জিভূত হয়ে চলেছে৷ যে কোন মুহূর্তে তারা ফুঁসে উঠতে পারে৷ এক নেতার কাছে পুরো জনগণ ও আন্দোলনের ভবিষ্যত জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না৷
নিরন
২১.৬.২০১১
বি: দ্র: সুমন চাকমা লেভা নামে এক ব্যক্তি মুরুব্বীয়ানা দেখিয়ে বলছেন, “যদি সত্যি জাতিকে ভালবাসেন যদি সত্যি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেন তাহলে কেন নিজেকে আড়াল রাখেন? যারা আদর্শ রাজনীতি করেন তারা কখনো নিজেকে আড়াল রাখেন না৷ নিজেকে আড়াল রাখার অভ্যাস থাকে অপরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদদের৷” সুমন চাকমা লেভা নামে আমিও তো কাউকে চিনি না৷ তো এত বুঝেন, আপনি আপনার পরিচয় দেননি কেন? নিজের নাম গোপন করে ছদ্মনামে লেখা কোন অপরাধ নয়৷ এখানে রাজনৈতিক ভন্ডামিও নেই৷ বহু বিখ্যাত লেখক, পণ্ডিত, সাহিত্যিক, বিপ্লবী নেতা ছদ্মনামে লিখেছেন এবং দেখা গেছে পরে তাদের সেই ছদ্মনামের আড়ালে আসল নাম চাপা পড়ে গেছে৷
সুমন চাকমা লেভা লোকটির আসল মতলব যাই হোক, আমি বুঝি আসল নামে লেখার বিপদ আছে৷ যেখানে প্রদীপ লাল, কুসুম প্রিয়রা প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির বলি হতে পারে সেখানে ছদ্মনামে জেএসএস বা অন্য কোন পার্টিকে সমালোচনা যুক্তিসঙ্গত৷ আমার পরামর্শ যারা আসল নামে লেখা নিরাপদ বোধ করেন না, তারা ছদ্মনামেই লিখতে থাকুন৷
@অডঙ চাকমা,
ব্যক্তিগত আক্রমণসহ নিরন চাকমার মন্তব্য এখানে পোস্ট করায় এই লেখাটি একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 🙂
দীপায়ন খীসার ‘ঐক্যের ফেরিওয়ালাদের কাছে কিছু বিনীত নিবেদন’ নামের এই লেখাটির একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখেছিলেন রাঙামাটির সাংবাদিক হরি কিশোর চাকমা। পাঠ প্রতিক্রিয়াটির নাম — রাজনৈতিক হিপোক্রেসি, ঐক্য ও আমার কিছু কথা [লিংক]।
সেখানে শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট — ইউপিডিএফ’র শীর্ষ নেতা নিরন চাকমার আরেকটি ব্যক্তি আক্রমনাত্নক মন্তব্য লক্ষ্যনীয়:
[লিংক]
এবং ইউপিডিএফ-এর দলীয় ঘোষণা:
[লিংক]
মন্তব্য নিস্প্রয়োজন। 😛
প্রিয়
অডং বাবু
আমার লেখাটা ছিল নিরনবাবুদের জন্য। আপনি অযথা পিছন থেকে ল্যাং মারার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিরনবাবুদের জন্য আামি আবশ্যই লিখব। আপনি হতাশ হবেন না। আর ল্যাং মারা বিদ্যাটা তখন আরো কাজে লাগাতে পারবেন।
@দীপায়ন খীসা, শুধু নিরনবাবুরাই এটি পড়বেন এমন চাইলে ফেসবুকে লিখলেই পারতেন? ‘অবাবু’দের জন্য লেখাটি তাহলে বিরক্তি উদ্রেক করতে পারে–নিজেই বলে ফেললেন। আপনাকে ল্যাঙ মারতে হয় নি, আপনি হোচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। সামলান!
(F)
দুইটা লেখাই পড়লাম।
অনেক কিছু জানা হলো।
পাহাড়িদের রাজনীতি ব্যপারে আমার অনেক কৌতুহল।
শন্তুলারমার একটা সাক্ষাতকার প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল।
চাকমা রাজা নিয়েও একটা ফিচার পড়েছি।
এত অল্প জেনে পাহাড়ি রাজনীতি নিয়ে কোন কমেন্ট করতে চাইনা।
@দীপায়ন খীসা,
প্রথমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার লেখার জন্যে। আপনার লেখার জবাবে আমার লেখাটাও পড়ে নিবেন .
আশা করবো গঠনমূলকভাবে বিতর্কে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রিয় অডংবাবু
আপনাকে শুভেচ্ছা। আপনি গঠনমূলক সমালোচনা চান তা ঠিক আছে। তবে নাম চোরা লোকজনের সাথে আলোচনা ঠিক শোভনীয় নয়। আপনি স্বনামে আগে আসেন। আগে আপনি গঠনমূলক হন। তারপর দেখা যাবে। লুকিয়ে ঢিল ছোঁড়া হয়ত যায় যা আপনি করে যাচ্ছেন। তবে সেটা আপনার কথিত শিষ্ঠাচারের সাথে মিলেনা। মানে হিপোক্রেট হয়ে যান।
@দীপায়ন খীসা,
ধন্যবাদ দীপায়নবাবু আপনার জবাবের জন্যে। আমার নাম নিয়েও আপনার সন্দেহ হচ্ছে! বেনামে আসিনি, স্বনামেই এসেছি। কিন্তু আপনি সন্দেহ রোগে আক্রান্ত হলে আমার করার কী আছে! সন্দেহরোগ বড় রোগ। সে যাক গে। একটা বাংলা গান ছিলো, “নাম দিয়ে কী হয়? নামের মাঝে পাবে নাকো আসল পরিচয়” [দুঃখিত, গানের কলিগুলো সঠিকভাবে মনে আসছে না]। নাম নিয়ে কাম কি? আমার পরিচয় নামের মধ্যে নয়, আমার লেখার বিষয়বস্তুর মধ্যে খুঁজে পাবেন। কাজেই গঠনমূলক ও মুক্তবিতর্ক করতে চাইলে বিষয়বস্তুর উপর জোর দেন।
@দীপায়ন খীসা,
দীপায়ন খীসাকে মুক্তমনায় স্বাগতম। (F) (Y)
এক যুগেরও বেশী সময় ধরে পাহাড়ে চলে আসা ভাতৃঘাতি সংঘাতের ওপর খুব সাবলীল একটি লেখা।
তবে লেখকের সঙ্গে খানিকটা দ্বিমত পোষণ করে বলতে চাই:
এক পক্ষ চায় শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন; চুক্তি বিরোধী অন্য পক্ষটি চায় পূর্ণসায়ত্বশাসন। অর্থাৎ পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে উভয়ের আদর্শ এক হলেও রণনীতিগত দিক থেকে দুপক্ষের অবস্থান বিপরীতমুখি।
এদিক থেকে বিচার করলে, উভয়ের ঐক্য বেশ খানিকটা অসম্ভব ব্যাপার। একারণে একে অপরকে অস্বীকার করেই পক্ষ দুটি পাহাড়ে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চায়। তবে উভয়েরই লক্ষ্য যেহেতু জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির মুক্তি, অর্থাৎ আদর্শিক প্রশ্নে উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। একে অপরকে আঘাত না করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হতে পারে। বরং এটিই এখন সময়ের দাবি এবং কাম্য। কোনো যুক্তিতেই ভাতৃঘাতি সংঘাত মেনে নেওয়া যায় না। …
অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (F) (Y)
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ আমাদের মত “ঐক্যের ফেরিওয়ালা” বা “অহিংসবাদী”দের সাথে সহমত পোষণ করার জন্যে। অবশ্যই “কোনো যুক্তিতেই ভাতৃঘাতি সংঘাত মেনে নেওয়া যায় না”। প্রার্থনা করি, দু’দলের নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
@অডঙ চাকমা, (Y)
@দীপায়ন খীসা, কে কোন নামে মন্তব্য করলো সেটা ব্লগে বিবেচ্য নয়। মন্তব্যটাই বিবেচ্য।
@মোহোলি.জোলা,
প্রচণ্ড দ্বিমত। (W)
ওই মন্তব্যটি দীপায়ন খীসার উদ্দেশ্যে বলা হলেও আমার মনে হয়, কে মন্তব্য করছেন এবং কি মন্তব্য করছেন দুই-ই সমান গুরুত্ব বহন করে।
ধন্যবাদ।
@সমরেশ চাকমা,
সমাজ চলে সমাজের বিধি-বিধান মোতাবেক, বুদ্ধের বানী দিয়ে নয়, তাই বুদ্ধ বৌদ্ধ ছিলেন কিনা বলতে পারব না । তবে মার্কস যে কমিউনিষ্ট ছিলেন যেটা বলতে পারি । ইউপিডিএফ যে বদরউদ্দীন ওমরের তত্ত্ব অনুসারী তা স্বীকার করে আপনি দীপায়ন খীসার অভিযোগ সত্য বলে প্রমান করলেন ।
দীপায়ন খীসার মন্তব্যের প্রতি উত্তরে সদপ্রকাশিত অডঙ চাকমার লেখার উপর আমার মন্তব্য দিয়েছি ।
দীপায়ন খীসার লেখা থেকে জানলাম ইউপিডিএফ কমিউনিষ্ট বিপ্লব তাত্ত্বিক বদরউদ্দীন ওমরের তত্ত্ব অনুসারি । বদরউদ্দীন ওমরের তত্ত্ব আছে, কিন্তু বাস্তবায়নের কোন দল নাই । বিদ্যমান বাম দলগুলি তাকে সম্মান করে, কিন্তু তার তত্ত্ব বাস্তব ভিত্তিক নয় বিধায় গ্রহন করে না । ফলে তার তত্ত্ব পত্রিকা প্রচার নির্ভরশীল ।
দীপায়ন খীসার অভিযোগ সত্য হলে, ইউপিডিএফ এর সাথে ঐক্য সম্ভব হবে না । কারণ ইউপিডিএফ এর চিন্তা-চেতনাও বাস্তব ভিত্তিক হবে না । এমতাবস্তায় তাদের ভুল কার্য্যক্রম ইউপিডিএফকে জনগণ থেকে বিছিন্ন করবে । যেমনটি করেছিল নক্সালপন্থীদেরকে ।
@আ হা মহিউদ্দীন, কার্ল মাক্স কি কমিউনিস্ট ছিলেন ? বুদ্ধ কি নিজেই বৌদ্ধ ছিলেন ? স্যার বদরউদ্দীন ওমর তত্ত্বের উপর নির্ভর করা ইউপিডিএফের কাজ নয় বলে জানি । সম্মতি আছে তা বলতে পারি । দীপায়ন খিসা সম্পর্কে জানতে হলে উপরে অডঙ চাকমার লেখাটি একটু পড়ুন । আপনি তারপর হয়ত কিছু একটা যুক্তিকতা খুঁজে পাবেন ।
এক ফেরিওয়ালা থেকে মুক্তমনায় লাল গোলাপের (F) শুভেচ্ছা গ্রহণ করুণ । স্বাগতম ।