আজ ১2 ই মে। ২০১১।

গত দুমাস ধরে পশ্চিম বঙ্গ বাসী সহ সব ভারতীয় বাঙালীরা তীর্থের কাকের মতন চেয়ে আছে এই দিনটির জন্যে। ৩৪ বছর ধরে যে কমিনিউস্ট রাহু পশ্চিম বঙ্গকে গ্রাস করেছিল-অদ্য তা মুক্ত। দুঃখ একটাই রুমানিয়াতে ১৭ ই ডিসেম্বর বা বার্লিন প্রাচীর ভাঙার উৎসবে আমি ত ছিলাম না সেখানে-আজ ১৩ ই মেতেও আমি পশ্চিম বঙ্গে নেই। কিন্ত স্যোশাল মিডিয়ার দৌলতে এখন অনুভব করতে পারছি কমিনিউস্টদের হাত থেকে মুক্তির স্পন্দন। মমতার বাড়ির চারপাশে সবুজ আবীর উড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব হারছেন। অর্থমন্ত্রী হারছেন। রাস্তায় সবুজের ঢল নেমেছে-শুধু টিভি ফিডের মাধ্যমেই দেখতে হচ্ছে। মমতা কি করবেন-কেও জানে না। শুধু কমিনিউজমের নাগপাশ থেকে একটা রাজ্য মুক্ত হচ্ছে-তাতেই সবাই খুশী।

কেও যদি ভেবে থাকে কমিনিউস্ট শাসন বিজেপি বা জামাতের শাসনের থেকে ভাল-খুব ভুল ভাববে। বুদ্ধদেব দেশের সবথেকে সৎ এবং গরীব মুখ্যমন্ত্রী সন্দেহ নেই। কিন্ত তাতে কি? যদি লোকে খেতে না পায়, দৈনন্দিল লেবাররা বছরে চল্লিশ দিন কাজ পায় না-সেখানে লোকজন কি মুখ্যমন্ত্রীর সততা ধুয়ে জল খাবে? তারপর যদি মানুষের স্বাধীনতাকে হরন করা হয়, খুন করে শ্রেনী তত্ত্ব দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা হয়-এবং দলবাজি করতে লোককে বাধ্য করা হয়-লোকজন কোথায় যাবে?

লেনিনবাদি কমিনিউজম একটা জনবিরোধি ফ্যাসিজম ছারা কিছুই না। পৃথিবীর ইতিহাস তারই সাক্ষ্য বহন করে-পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের ৩৪ বছরের ইতিহাসও কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট ইতিহাস হিসাবেই গণ্য হবে। প্রশ্ন হচ্ছে এবার তাহলে দান উলটালো কি করে? কারন এবার ছ দফাতে সেনা লাগিয়ে ভোট হয়েছে এবং সিপিএম বিরোধিরা এই
প্রথমবারের মতন ছিল সম্পূর্ন সঙ্ঘবদ্ধ। সাথে সাথে মধ্যবিত্ত এবং বুদ্ধিজীবিরাও সিপিএম বিমুখ। মমতাকে ভাল লাগুক বা না লাগুক সিপিএমের
ঔদ্ধত্ব এবং স্বৈরাচারে মানুষ এতই বিরক্ত ছিল-সিপিএমের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া জন্যে শুধু তারা সংকল্পবদ্ধই হয় নি-অন্যদেরও কাছে টেনেছে। আমি অনেকেই জিজ্ঞেস করেছি -মমতার মতন একজন ১০০% অভিনেত্রীর পার্টি কি সিপিএমের থেকে ভাল হতে পারে? অধিকাংশেরই প্রশ্ন সিপিএমের থেকে খারাপ কি হতে পারে?

১৯৭৭ সালে সিপিএম মোটেও কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতাতে আসে নি। এসে গণতান্ত্রিক উপায়ে কিছু সমাজতান্ত্রিক পরীক্ষাও শুরু করেছিল। কিন্ত বিধি বাম। ১৯৮৯ সালে ডঃ অশোক মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়ানের পতন নিয়ে যে কথাটি লিখেছিলেন-আজ সিপিএমের পতনেও সেই কথাই লিখতে হচ্ছে। উনি লিখেছিলেন সমাজতান্ত্রিক চেতনা মানুষের মধ্যে তৈরী না হলে কোন সমাজতন্ত্রই টেকে না। সমাজতান্ত্রিক চেতনা বলতে উনি যেটা লিখেছিলেন- সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন কাঠামোতে মানুষ সমাজের জন্যে আরো বেশী উৎপাদন দেবে। বাস্তবে হয় উলটো। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের চালিত স্কুল, হাঁসপাতাল থেকে টুরিজম সব ব্যাবসাতেই পার্টির লোকেরা এমন বাস্তঘুঘুর বাসা করে রেখেছে-এগুলোর থাকা না থাকা সমান। এমনকি রাজনীতির ধাক্কায় পশ্চিম বঙ্গে পুলিশের হাল এমন-সিপিএমের নেতারারা মার খেলে-তাকে বাঁচানোর ক্ষমতাও এদের আর নেই। এ এমন রাজ্য যেখানে পুলিশ প্রশাসন সরকার বলতে বহুদিন থেকেই কিছু নেই। পার্টি অফিস থেকেই রাজ্য চালিয়েছেন সিপিএম নেতারা।

এমন অপদার্থ এক সরকারের পতন না হলে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠত। আমি খুশী যে গনতন্ত্রে লোকজনের আস্থা ফিরেছে যা সিপিএমের বদৌলতে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। আমি আরো খুশী এই জন্যে যে এই যুদ্ধ হয়েছে মূলত দলবদ্ধ বাম বা লেনিনবাদি বামেদের বিরুদ্ধে বাস্তববাদি এবং বাম এনার্কিস্ট এর জোটের। এই যুদ্ধের ফল এই যে বাম আন্দোলন এনার্কিস্টদের হাতেই যাবে-লেনিনবাদিদের মতন খুনী এবং ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে বাম আন্দোলনের কোন ভবিষ্যত নেই।

যখন এই লেখা লিখছি-তৃনমূল জোট ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। সিপিএম তাড়ানোর জন্যে মমতা ব্যানার্জিকে ১০০/১০০ দিতে হচ্ছে যদিও উনি
প্রশাসক হিসাবে কি করবেন-আমার সন্দেহ আছে। আরো সবারই আছে। কিন্ত কিছুই যায় আসে না। সিপিএমের থেকে খারাপ প্রশাসন কিছু হতে পারে না।