বছর ছয়েক আগে পড়েছিলাম, বাণী বসুর লেখা “মৈত্রেয় জাতক”। একবার নয়, একাধিক বার, বারবার পড়েছি। কেন? সেখানে এক ঐতিহাসিক সময়ের উন্মেষ, একটি ধর্মের উন্মেষ, একটি দর্শনের উন্মেষ, কয়েকটি ব্যক্তিত্বের উন্মেষ… শিল্পের উন্মেষ, স্থাপত্যের উন্মেষ আর সবশেষে একটি মানবিক বিপ্লবের উন্মেষ। আর এই সবকিছুর সাথেই সমান্তরালে চলেছে নারীর জীবনের স্বরূপ। আড়াই হাজার বছর আগে, যীশুর জন্মের আগে, মুহাম্মদের জন্মের আগে, বুদ্ধকালীন সময়ের চলচিত্র। নাগরিক জীবনের বাইরের চিত্র… গভীর জঙ্গলে বাস করে একদল মানুষ, কৃষ্ণবর্ণের শরীর, নগ্ন নরনারী। নাগরিকেরা তাদের মানুষ ভাবে না, তারা নিষাদ! বন্য ফল-মূল আর পশুর মাংশ তাদের আহার… রাতের বেলায় দ্রিম দ্রিম বাদ্যের শব্দ, রগগা নামের নিষাদ রমনীর বন্য হরিণীর মত প্রণয়ীর কাছে ছুটে চলা… এইসব মিলে যেন অদ্ভুত এক জগত! পোষাক নামের আচ্ছাদন যেমন তাদের স্পর্শ করেনি, তেমনি তাদের মনও সরল, অনাচ্ছাদিত। বনফুলের সাজের মতই তারা প্রকৃতির বুকের অলংকার!
জঙ্গলের বাইরে আছে নগর, সেখানে আছে যুদ্ধ, চক্রবর্তী রাজা হবার বাসনা, ক্ষত্রিয়ের অস্ত্রের ঝংকার, ব্রাহ্মণের মন্ত্র, শূদ্রের জীবন, শ্রেষ্ঠীর জয়জয়াকার! আর তারই মাঝে বুদ্ধের উদ্ভব… নব ধর্মের দীক্ষা নিয়ে। বৌদ্ধ ধর্ম গৃহীরও, বৌদ্ধ ধর্ম সন্যাসীরও। বুদ্ধ সবার… তিনি দার্শনিক, বোধিপ্রাপ্ত। তাকে দেখলেই ভাবের সৃষ্টি হয়। ঈশ্বর নেই তবে অষ্টমার্গ, পঞ্চমার্গ… এইসব আছে তার অনুসারীদের জন্য। আছে বিহার, আছে ভিক্ষান্নজীবি ভিক্ষুর দল। সাধে কি বলে, উপমহাদেশের মাটিতে আধ্যত্মিকতার বীজ পোতা। এইখানে শিক্ষা নেই, তবে আধ্যাত্মিকতা ঠিকই আছে। আধ্যাত্মিক হবার জন্য এইখানে অক্ষর জ্ঞানেরও প্রয়োজন হয়না।
এইসবের মাঝে কোথায় নারী? অন্তঃপুরে, অন্দর মহলে। বাইরে বেরুতে তাদের অবগুন্ঠন লাগে না হয়তো, তবে বাঁচার অধিকার নেই কোনভাবেই। জন্ম, রূপ, যৌবন, জীবন… সবই পুরুষের জন্য। খাও, ঘুমাও, সন্তানের জন্ম দাও, গৃহপতির সেবা কর … এইটুকুই অস্তিত্ব তার। এর বাইরে যাবার দুটমাত্র পথ খোলা, অতিসুন্দরী, গুনবতী নারী হবে গণভোগ্যা গণিকা আর সংসার ত্যাগী নারী হবে ভিক্ষুনী! যে পিতা পুরুষের লালসার থাবা থেকে কন্যাকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে পান না, তিনি কন্যাকে পাঠান বাধ্য সন্যাসব্রতে… সে হয় মহান ভিক্ষুনী। ভিক্ষুনীর জীবন বেঁছে না নিলে হয়ত তার ঠাঁই মিলত গণিকালয়ে। সেখানে রাজ্য তার কোষাগারের অর্থব্যয় করে তাকে গড়ে তুলত গণসেবায়, তাতে রাজ্যের বানিজ্য শক্তিশালী হয় বটে। সে হয়ে উঠত রূপে মোহময়ী, শিল্পে শিল্পিত। সে গানের পাখি, নাচের ছন্দ, আঁকিয়ের রংতুলি, কবির কাব্য সবকিছু। সে স্বাধীন, সে স্বতন্ত্র, রাজপ্রাসাদের অন্তঃপুরের নারীদের চেয়ে তার জীবন অনন্য। সে হাসে গোলাপের মত, সে চৌষট্টি কলায় সুশিক্ষিতা! শিল্প সাধারনের জন্য নয়, শিল্পে অধিকার কেবল তাদের। সাথে আছে কিছু ব্যক্তিত্ব্যহীন রাজগুনগ্রাহী কবির দল। শিল্প সত্যিই এখানে রমনীয়!
আর নয় “মৈত্রেয় জাতক” এর কথা, বইটা থেকে নিলাম কেবল সেইসমাজের ছবিটা। “মৈত্রেয় জাতক” এর কথা আরো লিখতে হলে লিখতাম রাজা বিম্বিসারের কথা, গূঢ় পুরুষ অথবা তক্ষশিলার স্নাতক কূটনীতিবিদ চণকের কথা, বিদুষী নটী জিতসোমার কথা কিংবা বৌদ্ধ ইতিহাসের সুপরিচিত নাম বিশাখার কথা। আমি লিখছি নারীর কথা, শিল্পের কথা, অতীত বাস্তবতার কথা আর শুধাবো বর্তমানের কথা।
কোথায় সভ্যতা? অসভ্য নিষাদদের মাঝেও তো নারীর স্বাধীনতা ছিল, ছিল বনময় চপলা হরিণীর মত ঘুরে বেড়াবার স্বাধীনতা, শিকার করা পশুর মাংস ভক্ষনের উৎসবে নেচে গেয়ে আনন্দে মেতে ওঠার স্বাধীনতা। সেটুকুই কি দিয়েছে আমাদের সভ্যতা? রাজপথে নির্ভয়ে চলার স্বাধীনতা কি আমরা দিয়েছি তাকে? স্বাধীনতা হরণেই কি সভ্যতার মাহাত্ম্য? বুদ্ধ নারীকে সন্যাসব্রতে গ্রহন করে দিয়েছিলেন পালিয়ে বাঁচার অধিকারটুকু। জীবনের অধিকারই যেখানে নেই, অ্যাধাত্মিক মুক্তি সেখানে পালিয়ে বাঁচার পথ ছাড়া আর কিইবা দিতে পারে? নারীর নিজের ঘর নেই, তার হাতে পায়ে সংসারের শিকল বাঁধতে না পারলে একালেও বাবা-মায়ের সম্মানটুকুও তো থাকে না। আজো নারী শ্বাস নেয় অন্তঃপুরে, তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন ভালবাসাও নয়, কেবল সন্তান জন্মদানে। আবেগ বা ভালবাসার মত মানবিক ব্যাপারগুলোকে সমাজ শেখেনি আজও মূল্য দিতে। বহুগামিতার মত ব্যাপারগুলো সামাজিক নৈতিকতার চোখ এড়িয়ে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, কিন্তু অবগুন্ঠিত স্ত্রীর বাধ্যসেবার দাবীতে ছাড় দিতে কেউই রাজি না। শিশুকাল থেকেই কন্যাকেও গড়ে তোলা হয়, নারী মানেই পতিভক্ত, সুকন্যা, সুগৃহিণী, সুমাতা। কিন্তু যে পাত্রে কন্যাদান করে নিশ্চিন্ত হতে চান বাবা-মা, তাকে জীবনসংগী হিসেবে গ্রহণ করতে সে চায় কিনা, সে প্রশ্ন করতে ভুলে যেতেও আপত্তি নেই আমাদের সভ্যসমাজের। ব্যাপারটা শুধু একতরফাভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রেই সত্যি না, সত্যি অনেক ছেলের ক্ষেত্রেও… বিয়ের মত ব্যাপারটা গুরুজনের পছন্দে করলেই হবে, জীবন যাদের তাদের কিসের এতো মাথা ব্যথা? গুরুজনেরা যা করেন তা তো ভালোর জন্যই করেন, তাই না? বিয়ে তো বিয়েই, পাত্র-পাত্রী তপেশ-মিলি না মহেশ-মিলি, ব্যাপার না সেটা। সন্তানের জন্য সংগী বাছাই করে দেবার গুরু দ্বায়িত্ব গুরুজনেরা নিয়েই খুশি, এর সাথে জড়িত অজস্র পারিবারিক-সামাজিক অস্থিরতার খবর রাখার দ্বায়িত্ব তাদের না। বিয়েটা ইচ্ছাই হচ্ছে না অনিচ্ছাই, কন্যা কিশোরী না বালিকা এইসব কোন ব্যাপারই না। প্রশ্ন শেষপর্যন্ত একটাই, এইভাবে বেধে দেয়া যুগলেরা কজন হয়ে ওঠে সুখ-দুঃখ-আনন্দ-ভালোবাসার সংগী নাকি কেবলই যৌনসংগী? যে কিশোরী বুঝতেই পারেনি, তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে, ১২ হাত লম্বা লাল টুকটুকে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে স্কুলের বই ছেড়ে, কানামাছি ছেড়ে এখন তাকে সংসারে পা রাখতে হবে, তাকে হতে হবে আরেকটা জীবনের সংগী, এই অবিশ্বাস্য বাস্তবতায় মানবতা কতখানি? মানুষ কি এইভাবে হাজার হাজার বছর ধরে ভালবাসা-মায়া মমতার বদলে করে যাবে কেবল সামাজিক প্রথা আর যৌনতার পূজা?
আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যকলা শিখি, নাট্যতত্ত্ব পড়ি, কিন্তু নারীকে আজো নাচানো হয়। গণিকালয়ের বন্দীশালা থেকে শিল্প মুক্তি পেলেও নারী মুক্তি পায়নি পুরুষের লালসার বৃত্ত থেকে। রাস্তার পাশের বিলবোর্ড থেকে ঘর পর্যন্ত, নারী সর্বত্রই রমনীয়। নাচের মঞ্চে নারীকেই চাই, নারী তো অপ্সরী! নৃত্য শিল্প কিনা এ বিচার পরে, নারী যে রূপসী, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বিজ্ঞাপনে নারীকেই চাই, নারী যে পণ্যের উপমা। অবগুন্ঠনের আড়ালেও নারীর রূপ যৌবনেরই খেলা। যে নারী আজ পিতৃগৃহে, পতিগৃহে বা ঘরের বাইরে নাচতে রাজি না হবে, তার জন্য আজ ভিক্ষুণীর জীবনের পথটুকুও খোলা নেই। যে খাদ্যে স্বাদ আছে, তা না চেখে নষ্ট করা যায়? তাই কি হয় নাকি? মেয়েমানুষ বলে কথা! এই মেয়েমানুষেরাই বা কতটুকু চায় মানুষ হতে? জীবন যে আরো অনেক অনেক সম্ভাবনার পথ, সে কি কোনদিন তাকে জানতে দেয়া হয়? আমাদের ইতিহাসে বেগম রোকেয়া আছে, তিনি কি এখন নারী সংগ্রামের অর্জন নাকি পুরুষ শাষিত সমাজের অমানবিকতার অভিযোগ-মুক্তিতে ব্যবহৃত যুক্তির হাতিয়ার?
আড়াই হাজার বছর কেন, তারও আগেও পুরুষমানুষ পুরুষমানুষই ছিল, মেয়েমানুষ মেয়েমানুষই ছিল, মানব সমাজ আসলে এমনই শ্বাপদের জঙ্গল। মেয়েমানুষ বলে যারা আজ তাচ্ছিল্যের পাত্র, বৈষম্যের শিকার, তারা কতটা ঘৃণাভরে পুরুষের দিকে আঙ্গুল তুলছে, সে পুরুষেরা বুঝলে এটাও বুঝতো, “নারী” ও “পুরুষ”, মানব প্রজাতির দুইটি ভিন্ন লিংগ নির্দেশক শব্দ নয়, মানব মর্যাদাচ্যুত দুইটি তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত শব্দ! এইসব তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত লিঙ্গবাচক শব্দের অবমাননা থেকে মানবতা মুক্তি পাবে কবে?
আমার তো মনে হয় মানুষ মাত্রই সুবিধাভোগী… এই সুবিধাভোগীদের দুনিয়াতে “নারী”-কে অধীনতার শৃঙ্খল পরিয়ে রাখতে পারলেই বেশীর ভাগ মানুষের লাভ (অর্থাৎ পুরুষ আর কিছু নারী যারা পুরুষ শাসিত সমাজে সুবিধাভোগী)। এই যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রথা ভাংগা কি সম্বব হবে বলে মনে হয়…
@অনুপম,
হবে, অসম্ভব বলে কোন কিছু নেই। সময় লাগবে, কিন্তু একসময় বদলাবেই। বদলে দিতে চাইতে হবে।
কত কথা বলে রে!
@তানভীরুল ইসলাম, শুধু কথা! মানুষজনের ফ্রন্টাল কর্টেক্স গরম হয়ে যাচ্ছে যে। 😉
অসাধারণ লিখেছেন । অনেক ভাল লাগল কিন্তু বর্তমান সমাজের সাথে কতটুকু মানানসই তা দেখার বিষয়।
আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট-পরাষ্ট-কৃষি মন্ত্রী উনারা সকলেই নারী। বর্তমানে এমন কোন স্হান নেই যেখানে নারীর পদচারনা নেই।
@রিমন, প্রধানমন্ত্রী নারী হলেই কি বাকিরা নারী মন্ত্রী হয়ে যায়? চাঁদেও মানুষের পা পড়েছে অনেক আগেই, আমরা কিন্তু চন্দ্রবাসী না। পুর্ণিমার চাঁদ এখনো ফ্যান্টাসীই।
নারীর পদচারণা যতটা দরকার… তারচেয়ে অনেক অনেক বেশী কিন্তু মানুষের পদচারণা দরকার। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
প্রথমেই আপনার এ লেখাটি ও ফরিদ আহমেদের ‘শৈশবে আর ফেরা যায় না ‘ পড়ে ফেলেছিলাম। ফরিদ আহমেদের লেখায় মন্তব্য করে আর আপনার লেখায় মন্তব্য করতে পারিনি সময়াভাবে। পরে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। কাজেই মন্তব্য করতে খুব দেরী হল, এখন মন্তব্যগুলো পড়ে দেখি আমার কথা বলা হয়ে গেছে এবং অনেক মন্তব্যই উপভোগ্য, আবার কোনটা যৌক্তিক হলেও কোন কোনটা বিতর্কিতও বটে। যাহোক। খুব ভাল লিখেছেন ।
এমন লিখতে লিখতেই বিরূদ্ধ গোষ্ঠীর বোধোদয় করতে হবে।
নারী মানুষ ই আছে। যারা নারীকে মানুষ ভাবে না তা তাদের সমস্যা। তারা মানুষ চিনে না। কাজেই তাদেরকে মানুষ চিনাতে হবে।
আপনার লেখা অব্যাহত থাকুক।
@গীতা দাস, আপনার চেয়ে আমি ব্যসে অনেক ছোট হলেও আপনাকে দিদি বলেই ডাকলাম (ডিপার্টমেন্টে আপনার মেয়ের সাথে দেখা হলে সেও আমাকে আপু বলেই ডাকবে মনে হয়, ডেকে ফেলেছে কিনা বলতে পারিনা কিন্ত 🙂 )
একটা সিস্টেমের বিবুদ্ধে লড়তে গেলে অনেক ধাক্কা খেতে হয়। লড়াইটা যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে না, সিস্টেমের বিরুদ্ধে, এটাই বোঝাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। নিজে তো খাচ্ছিই, সাথে মনে হয় ভালবাসার মানুষগুলোকে নিয়েও খেতে হবে। :-Y
তবে থেমে যাবো না, হোঁচট খাওয়া মানেই থেমে যাওয়া নয়। বোধসম্পন্ন প্রানীদের বোধদয় ঘটানো কঠিন ব্যাপার। ভুল পদক্ষেপগুলো দেখিয়ে দিয়েন, আপনার অনুপ্রেরণার জন্য ধন্যবাদ দিদি। 🙂
@রিমন,
@গোল্লা আবুল বাশার,
ওলো সই, তোদের এত কী যে বলার আছে ভেবে অবাক হই।
কী বুঝালেন আর কী বুঝিলাম, তাহাই বুঝিলাম না।
সময়ের অভাবে মন্তব্যগুলো পড়তে পারলামনা, তবে মনে হচ্ছে জমেছে ভালই। 😉
“মৈত্রেয় জাতক” পড়া দরকার মনে হচ্ছে।
আমার কিছু মত বলি। আমারো মনে হয় আমাদেরকে আগে খোলস ছেড়ে বেরোতে হবে, নিজেদেরকে আমরা মানুষ না ভাবলে কার ঠ্যাকা আমাদেরকে সম্মান দেবার? আর ‘নারীবাদী’ কথাটি কেমন যেন ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয় যা দেখে দুঃখ পাই, নারী মুক্তি(প্রথমত মানসিক দাসত্ব থেকে এবং সমাজ ও প্রথার অমানবিকতার যূপকাষ্ঠ থেকে ) আন্দোলনের প্রতি, নারী যে মানুষ জাতিরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ সে সম্পর্কে নারী ও পুরুষ উভয়কে সচেতন করতেই নারীবাদের সূচনা, তাই বস্তুত এটাকে বলা যায় “মানুষবাদী” আন্দোলন। তবে অনেকে এই ধারণাটাকেও লিঙ্গবাদের মাঝে এনে ফেলেছে (অনেকেই দেখেছি নারীবাদের নামে একথাই বলে যায় পুরুষেরা কিভাবে তাদেরকে বন্দি করে রেখেছে, পথকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু এরা আসলে অনেকেই হাত-পা নয় মুখ চালানো পর্যন্তই নিজেদের দৌড় প্রমান করেন! অনেক পুরুষ নারীবাদকে মেয়েদের বাতুল তর্ক করার একটি নতুন উপায় বলে মনে করেন। এভাবেই চলতে থাকে রম্য বিতর্ক। কারণ নারীবাদকে উভয় পক্ষই মনে করেন আক্ষরিকভাবে নারীর বাতুল বাৎ!) কিন্তু তারা বোঝেননা যে আমি যদি আমার পরিবারের একজনকে কারণ ছাড়া ছোট করে দেখি তা যেমন আমার মানসিক অসুস্থতার লক্ষন তেমনি আমি যদি নিজেকে কারণ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে নিচু মনে করি তা আমার হীনমন্যতা প্রকাশ করে, যা এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা!
এখন এটা আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা সবাই নিজেদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমাণ করব নাকি নিজেকে এবং নিজেদেরকে চিনব?
আমি নিজে খোলস ভাঙ্গার চেষ্টা করে দেখেছি, আমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে বোরকা পরা ছেড়েছি, দুর্বল হয়ে চাচাদের কথায় আরো ৪ বছর আগে বিয়ের পিড়িতে না বসে মাত্র ১৬ বছর বয়সে এই মত দিয়েছি যে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত একান্তই আমার হওয়া উচিত, পরিবারে অসম্ভব ঝড় সয়েছি, শুধু চাচা, দাদা নয়, ক্ষেত্রবিশেষে নিজের মার সাথেও যুদ্ধ করে যাচ্ছি একথার জবাবে আমার ভাই ছেলেমানুষ বলে সে যেকোন অন্যায় করতে পারবে, কিন্তু আআর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময়েও বোরকা পরে যেতে হবে যাতে বংশের মান রক্ষা হয়, প্রতিবাদ করেছি এ ঘৃণ্য কথার “মর্দের রাগে বাদশাহ, মাগীর রাগে বেশ্যা!”, বুঝিয়েছি আমার রাগ, দুঃখ, হাসি, অনুভূতিও স্বাধীন,আমার ফ্রেন্ড সার্কেলে একমাত্র মেয়ে হয়েছি যাকে ওরা মেয়ে বন্ধু নয়, বন্ধু মনে করে, আমাকে যখন কেউ ব্যাঙ্গার্থে নারীবাদী বলার চেষ্টা করে আমার কথা না শুনেই (কারণ একটি মেয়ে কিছু বলছে যার বিষয়বস্তু “নারী-পুরুষ” এর মানেই তার কথা না শুনে তাকে পচাও) তখন আমি তাদের কাছে নিজেকে “মানুষবাদী” বলি। বন্ধুরা গ্রহন করেছে আমাকে, বাসায় সহ্য করছে আমাকে, সমাজ এখনো আমাকে অনেক সাধারণ কিছুও করতে দেয়না কিন্তু একদিন আশেপাশের সবাই মেনে নেবে আমাকে, কারণ আমাদেরকে মানুষ বলে ভাবা আমারদের ও আমাদের তথাকথিত প্রতিপক্ষের উভয়েরই মানসিক সুস্থতার লক্ষণ।
অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে, আমি কষ্ট করছি কারণ আমার চলার পথে অনেকদিন বেশি মানুষের পা পড়েনি, তাই ঘন জঙ্গল কাটতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ধীরে হলেও আমি আগাচ্ছি এটাই বড় কথা।
@লীনা রহমান,
চলতে থাক আপু… থেমো না। মানুষ যদি বন্যপ্রানীর জঙ্গল কেটে সভ্যতা গড়তে পারে, আমরাও একদিন শ্বাপদের জঙ্গল কেটে মানুষের পৃথিবী করব… কষ্ট হবে অনেক, আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ো, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ভুলোনা। (F)
@লীনা রহমান, আপনার এটুকু জীবনটাই অনেক ঘটনাবহুল। তবে অবাক হচ্ছি না, আমাদের সমাজের আরো কম বয়সী মেয়েদের জীবনবৃত্তান্ত যদি জানা যেত- দেখে যেত কত ঘটনার ছড়াছড়ি! এমন কোনো মেয়েই যখন অকপটে সব খুলে বলে তখন বুঝি- চোখ বুজে ভাবনার সুন্দর জগতে শুধু কালির আঁচড়ই পড়ে।
দেশের বাইরে এসে মায়ের সাথে হসপিতালে যাওয়া লাগত মায়ের চেকআপের জন্য। কিছুদিন সাথে যাওয়ার পর বিরক্ত হতে শুরু করলাম। মাকে বললাম- কেন তুমি একা একা যেতে পারবে না! মা বলত- কোনোদিন একা একা বাড়ির বাইরেই তো যাইনি, যেতে পারিনি, যেতে দেয়নি।
পরের দিকে মা একা একাই আসা-যাওয়া শুরু করল। এমনকি দেশ থেকেও একা একাই প্লেনে করে, ট্যাক্সি করে একেবারে বাসায়ও চলে আসছে। বাইরে প্রতিকূলতা থাকবেই। কিন্তু এসব কাটিয়ে পার হয়ে না যেতে পারলে তো তাকে মানুষ বলেই মনে হয় না।
ভালো লাগল আপনার শিকল ভাঙার কথা। :clap
নীল রোদ্দুর, লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে আপনার নিকটা এক্কেবারেই ঠিক হয়নি, ‘ছারখেরে রোদ্দুর’, ‘আয় ব্যাটা তোর নাকটা ফাটাই’ বা ‘তোরা সবাই রোদ্দুরে পুড়ে মরে যা’ টাইপের কিছু একটা রাখা উচিত ছিল :guli: ।
@ফাহিম রেজা,
ভাইয়া, একটা ডিনামাইট পাইলে সব বদলায়ে দিতাম। 😛
@ফাহিম রেজা,
হা হা প গে কে ধ…
:lotpot: :lotpot: :lotpot:
@বিপ্লব রহমান, ভাইয়া, কমেন্ট বক্সে এই কথাটাই একমাত্র নির্মন বিনোদন। আমার আর হাতের কাছে ফলকাটার ছুরিটা রাখার কোনও দরকার হবে না। :lotpot:
হাতের কাছে বইটি ছিল। মামাকে পড়তে দেখতাম। পড়া শেষে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল- পড়ে দেখিছ। কিন্তু পড়া হয়নি।
তখন ছিল রোমান্টিকতার যুগ (বয়স)! 🙂 মেয়েদের লেখা পড়লেই কেমন যেন নারীবাদী নারীবাদী গন্ধ পেতাম। পড়ুয়া মামাকে জিজ্ঞেস করতাম- মেয়েরা কি কোনোদিন একটা প্রেমের কবিতা লিখতে পেরেছে? মামা হাসত। হাতে “সাত কাহন” তুলে দিয়ে বলেছিল, সমরেশের বই পড়তে তো কোন সমস্যা নেই? নাহ নেই। সেই শুরু। তবে এটা ততদিনে চোখের আড়ালে বুকসেলফে জায়গা নিয়ে ফেলেছে।
কিছুটা বুঝতে শেখার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে “মেয়েদের অবস্থা” চোখে পড়তে শুরু করেছে আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে। মাকে বলি- মা, তোমার পায়ের নিচে যদি একটু মাটি থাকত তাহলে এত অন্যায় অবিচার তোমাকে সইতে হত না।
যাহোক, এবার এটা শুরু করতে হবে। ধন্যবাদ আলো জ্বালিয়ে দেবার জন্য।
@শ্রাবণ আকাশ, মৈত্রেয় জাতক নারীবাদী বই না। সমরেশও কম নারীবাদী লেখা লিখতে জানেনা। পড়ে ফেলেন। 🙂
পূনঃ শেষ লাইনে ‘সংগ্রাম শুরু করবে’ বাদ পড়ায় দূঃখিত।
আমার মনে হয় নারীরা ইদানিং পূরুষদের দু’চোখে দেখতে পারছেনা।ফরিদ ভাই যথার্থই বলেছেন,
বেশী অতীতে যেতে হবে না,আজ থেকে ৩০-৫০ বৎসর পূর্বে নারীদের অবস্থা আজকের চেয়ে অনেক অনেক খারাপ ছিল।এখন তারা অনেকেই স্বাবলম্বি। এখন অনেক বাবা-মা, এমনকি স্বামীরাও তাদের মেয়েদের/স্ত্রীদের মতামতের দাম দেন। ভবিষ্যতে আরও হবে।কিন্তু তারা একবারও কি ভেবে দেখেছে, নারীদের আজকের এই অবস্থানে আসার পিছনে মেয়েদের চেয়ে পুরুষরাই বেশি অবদান রেখেছে।শরৎ চন্দ্র,নজরুল তো মেয়েদের মাথার উপরে রেখেছিল। আগেও মেয়েরা লিখেছে, এখনও লিখছে।কিন্তু তারা কি লিখছে? তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠার জন্য পূরুষদের সামনে চাবুক ঘোরাতে শুরু করেছে। কোন লেখিকা দেখতে পাইনে যারা পুরুষদের এ্ই অবদানকে মুল্যায়ন করছে। তাদের কোন লেখায় পূরুষকে ভাল মানুষ হিসেবে দেখানো হয়নি/হচ্ছেনা। এটা কি স্বার্থপরতা নয়।সূখী সংসারে স্বামীরা কিভাবে থাকে,তা বোধহয় সেই স্বামী ছাড়া অন্য ব্যক্তি জানে না।অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও স্ত্রীর কাছে ভেজা বিড়াল।এভাবে চলতে থাকলে তো একদিন পুরুষরা তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবার জন্য।
@বোকা বলাকা, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে মন্তব্য করব না, ভালো লাগে আমার। কিন্তু শরৎচন্দ্র? সবকটা পড়ার দরকার নেই, এক গৃহদাহই মেজাজ খারাপ করার জন্য যথেষ্ট!
দেখছি… এইটুকু নিরপরাধ লেখাতেই কিভাবে আপনাদের পুরুষদের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। :guru:
অর্ধেক মানবী, অর্ধেক কল্পনা হয়ে থাকার ইচ্ছেটা আমাদের নেই, আপনাদের থাকলে ভালো, অর্ধেক মানব, অর্ধেক কল্পনা বানিয়ে মাথায় করে রাখব। সে পথ খোলা আছে ভালোই। পা বাড়িয়ে ফেলেন। :))
@নীল রোদ্দুর,
শরৎচন্দ্র বাস্তববাদী লেখক ছিলেন।তিনি কল্পনায় খুব কম লেখেছেন বলেই জানি,এটা আমার জানার সীমাবদ্ধতাও হতে পারে।Please শরৎচন্দ্রের “নারীর মূল্য” প্রবন্ধটা সংগ্রহ করে একটু পড়ে নেবেন।পড়ে ঠিক এরকম একজন নারী লেখকের(লেখিকা বললাম না)একটা লেখা আমাকে উপহার দিয়ে বাধিত করলে বড়ই উপকৃত হতাম।শ্রীকান্ত অনেক বড়।অত পড়ার ধৈর্য আপনার নাও থাকতে পারে।তবে ছোট ছোট আরো অনেক বই তাঁর আছে।
@বোকা বলাকা,
দুঃখিত, আমি আর কারোর মত করে লেখিনা। আপনি যদি আমাকে রবীন্দ্রনাথের মত করেও লিখতে বলেন, তাও আমি আপনাকে নিরাশ করব। নিজের কন্ঠ ছেড়ে অন্যকারোর কন্ঠে কথা বলার মত মেধাবী আমি নই। 🙂
@বোকা বলাকা,
ভালো একটা পয়েন্ট নোট করেছেন, আমার লেখার শেষ প্যারাটা পড়ে দেখেন, ভেতরের সুপ্ত ঘৃনা গুলো ফেনিয়ে উঠেছে… সহস্যবছর মুখ গুজে থাকতে থাকতে, আর কত!
আপনি সেভাবে মূল্যায়ন চাইলেন, সেইমাত্রায় মূল্যায়ন করার সময় কি এসেছে?
যে আমার আত্মার সাথী, তাকে কখনই এইভাবে মূল্যায়ন চাইতে হয় না। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা দুটোই সে অর্জন করে নিয়েছে।:-)
@নীল রোদ্দুর,
ঘৃনা গুলো ফেনিয়ে উঠেছে কার বিরুদ্ধে? আপনার মায়ের,নাকি শাশুড়ির (সম্ভবতঃ হবু)?এ বিষয়ে উপরে অনেক লেখা দেখলাম,তাই আর লিখছিনা।তবে মনে রাখবেন,রামমোহন,বিদ্যাসাগর,শরৎচন্দ্র প্রভৃতি লেখকরা না এগুলে সেই তিমিরেই পড়ে থাকতেন।তসলীমা নাসরীনকে মুরতাদ ফতোয়া দেওয়া ও দেশ ত্যাগে বাধ্য হওয়ার বিরুদ্ধে আপনাদের তেমন জোরালো ভূমিকা কিন্তু আমরা দেখি নাই,আজও না।বরং পূরুষরাই একটু এগিয়ে এসেছে।
@বোকা বলাকা,
আমার ব্যক্তিগত জীবন না টানলেই খুশি হতাম। ব্যক্তিজীবনের লেখা আমি লিখলে সেটা পরিষ্কার করেই বলি, ছদ্মগল্পের আবরণে ব্যক্তিজীবনের অনুভূতি প্রকাশ করার দরকার আমার নেই… আর একটা কথা, আমি এমন একজন মানুষ, যে নিজের জীবন নিজে গড়ে নিতে পারে, আমার জীবন আমার বাবা, মা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কিংবা অন্যকারোর উপর নির্ভরশীল না। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ফেনিয়ে উঠলে সেটা আমি ব্লগে লিখতাম না, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতাম।
ব্যক্তিজীবনের বাইরে বেরিয়ে বিশ্বকে দেখার সাধ্য কতটা আছে, সে আমি বলব না, তবে চেষ্টা যে আছে, সে আমি জোর গলাতেই বলতে পারি।
ভালো থাকবেন।
@বোকা বলাকা, কারোর ব্যক্তিগত জীবনের দিকে আগ বাড়িয়ে আঙ্গুল তোলার আগে এইটুকু মনে রাখা দরকার, যাদের দিকে আঙ্গুল তুলছেন, তারা ঐ মানুষটার কাছে অনেক সেন্সিটিভ ইস্যু হতে পারে। অনেক ভালবাসা আর শ্রদ্ধার জন হতে পারে। মুক্তমনার একজন ব্লগারের কাছ থেকে আমি এইটুকু সেনসিটিভনেস আশা করি আসলে।
@নীল রোদ্দুর,
আপনার দূঃখিত হওয়ার কোন কারণ নেই।অন্য কারও মত আপনাকে বলতেও হবে না,লিখার জন্যও অনুরোধ করিনি। আমি শুধু বলতে চেয়েছি,শরৎচন্দ্র,যিনি আপনার দৃষ্টিতে নারীদের নিচে নামিয়েছেন,সেই শরৎচন্দ্রই নারীর মূল্য নামক প্রবন্ধে নারীকে কত উপরে উঠিয়েছে(অবশ্যই আমার দৃষ্টিতে) তা একটু দেখবেন।আর তিনি যদি সত্যি নারীদের উপরে উঠিয়ে থাকেন,তাহলে কোন মহিলার লেখা কোন গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস যেখানে পূরুষদের এভাবে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকলে সেই গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস এর শুধু খোজ চাইছি আপনার কাছে।
ভুল বুঝেছেন।আমি আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে জানিনা,চিনিনা।যেটুকু পরিচয় তা শুধু মুক্তমনার মাধ্যমেই।কাজেই আপনার ব্যক্তিগত জীবন টানার অভিযোগ টা মোটেই সঠিক নয়।আর টেনে আমার লাভ বা লোকসান কোনটাই নেই। আপনার মা-শাশুড়ী বলতে আমি সকল নারীর মা-শাশুড়ীর কথা বলেছি।বিয়ের পূর্বে মায়েরাই তার মেয়েকে নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। আর বিয়ের পরে সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ হয় সাধারনতঃ শাশুড়ীর সাথে। এই দু’জনই নারী বা মেয়ে।এ বিষয় টা নিয়ে উপরে সুমিত,শ্রাবন আকাশ এরা আগেই লিখেছে।তাই আমি বিস্তারিত ভাবে লিখতে যাইনি।আমার বিশ্বাষ, কিছুটা বোধ হয় বুঝাতে পেরেছি। আর যদি নাই পারি তাহলে দয়া করে মাফ করে দেবেন। ভাল থাকুন।
নারী আর পুরুষ আদিকাল থেকেই পৃথিবীতে বর্তমান, থাকবে অনাদিকাল পর্যন্ত। সভ্যতার নামে নারীকে ঘরের বাইরে এনে বিলবোর্ডে তুলে দেওয়া হয়েছে সত্যি কথা কিন্তু তাতে কি মানুষ সভ্য হয়ে গেছে? এখনো গণিকালয় আছে, নর্তকী আছে আরো আছে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত কিছু পাথুরে নারী। এরা প্রত্যেকেই জীবন আর জীবিকার তাগিদে নারী হয়েছে, সভ্যতাকে বাঁধা দিতে নয়। নারী নারীই থাকবে, পুরুষ পুরুষই থাকবে- বদলাতে হবে চরিত্র। চরিত্র বদলালে লিঙ্গভেদ হ্রাস পেয়ে সভ্যতার মই বেয়ে এক ধাপ হয়তো এগুনো যাবে। তবে মানুষের চরিত্র কি হবে সেটা নির্ধারণ করবে কে? লিঙ্গবাচক শব্দ যদি তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হয় তাহলে পৃথিবীর সব বস্তুই তুচ্ছ হয়ে যায় না তো?
@গোল্লা আবুল বাশার,
জীবন ও জীবিকার তাগিদে যতখানি তারচেয়ে অনেক বেশী কি বাধ্য হয়ে নয়?
একবার ভুলে যান আপনি পুরুষ (অথবা নারী)। ভাবুন, আপনি কেবলি মানুষ, মানুষের চরিত্র নির্ধারণ মানুষই করতে পারবে তাহলে। নারীর XX ক্রোমজম আর পুরুষের XY ক্রোমোজম যেমন আছে, তেমনই ছিল আগেও, থাকবে, নারী তার সন্তানকে স্তন্য দিয়ে বড় করবে, পুরুষ পিতৃত্বের অহংকারে সন্তানকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে… নরনারী আবেগে, ভালোবাসায় কাছে আসবে, এই থাকুক। কিন্তু বদলে যাক, কন্যা সন্তানের জন্য পুতুল আর পুত্র সন্তানের জন্য খেলনা বন্দুক, গাড়ি কিনে দেয়ার প্রবণতা, গার্লস স্কুলে গার্হস্থ্যবিজ্ঞান আর বয়েজ স্কুলের কৃষিবিজ্ঞান পড়ানোর প্রবণতা, বরের পেশা চাকুরী/ব্যবসা আর বউ হবে গৃহিণী এইসব চিন্তাধারা… আরো অনেক বলতে পারি… এক সামগ্রিক পরিবর্তনের অপেক্ষা…
@নীল রোদ্দুর, ধন্যবাদ।
মানুষ ছাড়াও পৃথিবীতে অল্পকিছু প্রাণী বাদে সব প্রাণীরই লিঙ্গভেদ আছে। এসব প্রাণীদের ভিতর কি মানবিকতা (বা এর মতো কোন গুণ) আছে? আবার মানুষের ভিতর নারী-পুরুষ ছাড়াও রয়েছে বৃহন্নলা প্রজাতি। যেহেতু এদের ভিতর কোন লিঙ্গভেদ নেই, তাহলে এরাই কি সবচেয়ে বড় মানবতাবাদী?
প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। এ নিয়মের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে ডাইনোসর, ম্যামথদের মতো বহু বিশালাকায় প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রকৃতির নিয়মেই নারীর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সীমাবদ্ধতাগুলো ইচ্ছে করলেই কেউ দূর করতে পারবে না। টিকে থাকতে হবে নিজের শক্তি আর কৌশলে, সাহায্য দূরের কথা- এ ধরাধামে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো খোঁজ পর্যন্ত নেয় না।
আদিম সমাজ আমার দেখা হয়নি তবে অনুভবে আসে সেখানে নারীরা এখনকার চেয়ে ভাল ছিল। ধীরে ধীরে সভ্যতা যখন বিকশিত হওয়া শুরু করলো, নারীর মর্যাদা ততোই কমতে লাগল। এমন এক সময় আসলো যখন নারীকে জন্মের পরপর হত্যা করা হতো। তারপর মানুষ বুঝে ফেললো এই বস্তুটার চাহিদা আছে, যোগানও খারাপ না। নারীকে ঘর ছেড়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে রাস্তায় নামানো হলো, ব্যবসায়ীরা তুলে দিল বিলবোর্ডে, পণ্যের মোড়কে অথবা যে যেখানে নারীকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে পারলো সেখানেই ব্যবহৃত হলো নারী। বর্তমানে গণিকালয়ের বাণিজ্য তাই লাভের পরিমাণে দ্বিতীয় অবস্থানে। স্বয়ং বুদ্ধ বা অন্য কোন মহামানব আসলেও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারবে না, ব্যাঘ্র শাবক নরমাংসের স্বাদ পেয়েছে যে!
জানালা খোলা আছে, প্রচুর পরিমানে আলো-বাতাস ঢুকছে ঘরে, তারপরও আমাদের দেশে পুরুষের শিক্ষা শুধুই চাকরি কেন্দ্রিক, চাকরি না পেলে আমাদের জীবিকা হবে না, জীবন যাপন করার কোন ব্যবস্থা হবে না। এ জানালা খোলা রেখে কী লাভ! :))
@গোল্লা আবুল বাশার,
আমি এখন বোঝাতে পারিনি, আজকে ল্যাবে আসার পথে একটা সাত বছরের বাচ্চা ছেলে আর তার মায়ের সাথে কথা বলছিলাম। সবচেয়ে অবাক হওয়ার মত স্মরণীয় ব্যাপার ছিল, ঐটুকু বাচ্চা ছেলে যখন বলল,
আর কি চাই বলেন… 🙁
লিঙ্গভেদ দৈহিক অবশ্যই তবে আমাদের সমাজে মানসিক তার চেয়েও অনেক বেশী। মনোজগতে লিঙ্গপ্রধান না হয়ে মানবতাকে উপরে স্থান দিতে বলেছি।
@গোল্লা আবুল বাশার,
আপনার মানসিকতা, চিন্তা আমার ভালো লেগেছে… শিক্ষার পথ খোলা রেখে কতটা লাভ হবে বা হচ্ছে, এই নিয়ে আমারো প্রশ্ন আছে। আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুযোগ পেয়ে বড় হওয়া মানুষদের একজন। আমার সহপাঠিনীরা কজন পেরেছে এতো সুযোগ পাবার পরও বৃত্ত ভেঙ্গে বের হয়ে আসতে! তবে তার চেয়ে বেশী খারাপ লাগে যখন দেখি, সহপাঠিনীরা যতটা পারেনি, তারচেয়েও অনেক বেশী সুযোগ পেয়েও ৯৯% সহপাঠী একদমই পারেনি। বৃত্ত ভাঙ্গার তো তাদের দরকার নেই।
আমার পরিবেশ ছেড়ে বাইরে যাই এবার, আমি বাংলাদেশের ১% মানুষদের একজন। কিন্তু বাকি ৯৯% মানুষের অবস্থা কেমন? তাদের জন্য শিক্ষার পথ খুলে দিলে যেটুকু লাভ হবে , বন্ধ করে দিলে তাও হবে না। খুলে দেয়াই কি তাহলে ভালো না?
শিক্ষা প্রথমত আত্মিক উন্নয়নের জন্য। সেই শিক্ষানীতি তো আমাদের নেই। দারিদ্রপীড়িত দেশের মানুষ আমরা, তাই সার্টিফিকেট বেচে জীবিকা অর্জনের লক্ষ্যেই শিখি আমরা। যে বিজ্ঞান মনষ্ক প্রজন্মের স্বপ্ন দেখি আমি, বিজ্ঞান কতটা সুফল তাদের এনে দেবে, যদি আত্মা বিকশিত না হয়! আত্মা বিকশিত হলে কি আর এই ব্লগ লেখা লাগে! চিৎকার করে মানবতা দাবী করতে হয়? সবকিছুই বদলে দিতে ইচ্ছা করে, যোগ্যতা আর অক্ষমতার দেয়ালে বারবার ঠোকর খেয়ে ফিরে ফিরে আসতে হয়। 🙁
কথাটা অস্বীকার করা যায় না। এখন আমার মাথা ব্যাথা। অন্য কেউ তো ঔষধ খেলে চলবে না। কেউ আমাকে ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে। বড় জোর ঔষধ এনে দিতে পারে। এখন ঔষধ খাওয়ার দায়বদ্ধতা আমার থাকতে হবে। তেমনি আপনার লেখার উদ্ধৃতিটিও নারীর অধিকারের ব্যাপারে প্রযোজ্য।
দ্বিতীয়ত নারী-পুরুষ আলাদা করে চিন্তা করে সমস্যার সমাধান কতটুকু সম্ভব? তা যাচাই করার অপেক্ষা রাখে। আজ নারী অধিকার, নারী মুক্তি, নারী নির্যাতন করে চিৎকার দেওয়া হচ্ছে। কাল পুরুষ অধিকার, পুরুষ মুক্তি, পুরুষ নির্যাতন করে চিৎকার দেওয়া হবে। বরং তা না করে আমরা যদি মানুষ পরিচয় দিয়ে নারী-পুরুষ আলাদা সমস্যা না ধরে মানব সমাজেরই একটা সমস্যা হিসাবে নিয়ে। সমাধানের চিন্তা করি তো সমাধান সঠিক রাস্তায় যাওয়ার সম্ভাবনা। যদিও এটা আমার সাম্যবাদী চিন্তা ধারা সমাজ বা মানুষের মনস্তত্ব সেই রাস্তায় চলে না।
আর প্রাচীনকালে নারীর অবস্থা খুব ভাল ছিল বলে আমারও মনে হয় না। যেমন অনেকেই বৈদিক যুগের দিকে আঙ্গুল তুলে কয়েকজন বিদুষী নারীকে দেখিয়ে বলেন বৈদিক যুগে নারীরা খুব ভাল অবস্থানে ছিল। আমি মানতে নারাজ, হয়ত কয়েকজন নারীর অবস্থা ভাল ছিল তার বেশী কিছু নয়। যেমন আরও কয়েক প্রজন্ম পরে যদি ইন্দিরা গান্ধী, শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া, রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল ইনাদের দেখিয়ে যদি বলা হয় ভারতীয় উপমহাদেশে নারীর অবস্থান ভাল ছিল । আর সব নারীরা ছিলেন স্বাধীন এবং ক্ষমতার আধিকারী তা কি ঠিক হবে?
আর আরও গভীরে যদি যাই। নারী-পুরুষ বৈষম্যের জন্য প্রকৃতিও কম দায়ী নয়।
আদিম যুগে মানুষ যখন শিকারী স হিসাবে ছিল। তখন নারীরা সন্তানের জন্মদান এবং লালন পালন, ফলমুল সংগ্রহ করা ছিল প্রধান কাজ আর পুরুষরা কাজ ছিল শিকার করা, অন্যান্য গোষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করা।
সেই কর্মের এবং দায়িত্বের ভিন্নতার থেকে তৈরী হয়েছে। নারী-পুরুষের মানসিক বৈষম্য।
ধীরে ধীরে সভ্যতার আগমনে সেই ধরাই পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে।
অবস্থার অমূল পরিবর্তন করতে হলে। আমাদের আদিম অবস্থার ও সঠিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
আপনার লেখাখানি ভাল লাগল ধন্যবাদ।
@সুমিত দেবনাথ,
ঘরে আলোবাতাস ঢোকার ব্যবস্থাটা করে না দেন, জানালাটা নিজে খুলে নেবার জন্য হাতের শিকল তো খুলে দেন… তারপর খুলে না নিলে বলতেন পারবেন, ওদের হাত মুক্ত ছিল, ওরা ব্যবহার করেনি।
এই কথাটাই বলতে চেয়েছি… নারী মুক্তি, নারী অধিকার বা পুরুষ মুক্তি, পুরুষ-অধিকার নয়, হোক মানব মুক্তি, মানবাধিকার।
প্রশ্ন হল, আমরা কি আদি সমাজে ফিরে যেতে চাই? তাতো নয়। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই… আর তা পাওয়া সম্ভব একমাত্র মানবিক নৈতিকতা বোধের উন্নয়ন দিয়েই… আর কোন পথ নেই। বিশ্লেষন প্রয়োজন উন্নয়নের জন্য, পিছনে ফিরে যাবার জন্য নয়। বর্তমান অবস্থার অচলায়তন থেকে মানবতা আর ভালোবাসা কে মুক্তি দেয়ায় এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য।
আপনার মন্তব্যের জন্য (C)
@নীল রোদ্দুর,
নিজের হাতের শিকল খোলার জন্য সাহায্য চাইলে, আমার মনে হয় পৃথিবীতে মানুষের অভাব হবে না। তবে তার আগে কাঁকড়া চরিত্র বদলাতে হবে। (একটা পাত্রে যদি কিছু কাঁকড়া রাখেন তাহলে কোন কাঁকড়া, কোন কাঁকড়াকে মুক্তি দিতে চায় না। কেউ যদি বা পালাতে চায়। অন্য কাঁকড়া তার পায়ে কামড় দিয়ে নামিয়ে ফেলে।)
তা কখনও কাম্য নয়। বরং কত তাড়াতাড়ি একটা সুস্থ মানব সমাজ গড়া যায় সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
তবে আমাদের আদি সমাজকে জানা প্রয়োজন। না হলে বর্তমানকে বিশ্লেষণ করতে পারব না। আর মানবিক সমাজ গঠনও অসম্ভব হয়ে পড়বে। সমাজ চলবে তার চিরাচরিত নিয়মে।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।
@সুমিত দেবনাথ,
এখনও হচ্ছে কিন্তু, চোখ মেলে রাখেন, দেখতে পাবেন।
এটা কি শর্ত? তাহলে না শুনলেও চলবে আশা করি। জামিন চাইছে কে? চাইছে তো মুক্তি! 🙂
@সুমিত দেবনাথ,
কথাটা হাড়ে হাড়ে সত্য :clap
@শ্রাবণ আকাশ, আপনারা দেখি, এইবার বসে বসে নারীর ছিদ্রান্বেষনে মন দিলেন। আপত্তি নেই আমার, কিন্তু তার আগে আপনার সমপর্যায়ে আসার পথের বাধা সরান। তারপর যতত ইচ্ছা, ভুলের দিকে আঙ্গুল তুলেন।
স্রেফ একটা কথায় বলব, বর্তমান সমাজে নারী এখনো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আপনারা যেসব ভুলের দিকে আঙ্গুল তুলছেন, তা আসলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের ভুলের দিকেই তুলছেন। যার আত্মিক বিকাশই হয়নি, তার আবার আত্মসম্মান।
@নীল রোদ্দুর, সেকি! আমি তো কাঁকড়াদের ব্যাপারটায় লক্ষ্য করছিলাম। ছোটোবেলা পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ধরতে যেতাম। কিন্তু জাল বেশীদূর যেত না। কিনারেই ছড়িয়ে পড়ত। দু-চারটে মলা মাছের সাথে কাঁকড়া উঠত অনেক। একজায়গায় রেখে দিলে একটাও এদিক-ওদিক যেত না। ঐ কথাটায় এবার বুঝতে পারলাম। এমনও তো হতে পারে যে তাদের মধ্যে মিল-মহব্বত বেশী বলে একজন আরেকজনকে ছেড়ে দূরে যেতে চায় বা না অন্যেরা যেতে দিতে চায় না।
@শ্রাবণ আকাশ, নিজের কথা বলি একটু, আমি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জেদ ধরি, তখন আমার আমার বাবার বাড়ি, মায়ের বাড়ির সব্বাই আমাকে আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরানোর জন্য কাকড়া গিরি করেছে। সেই দলে আমার মা-ও ছিলেন সত্যি, কিন্তু তিনি ছিলেন বাকি সবার মধ্যে একজন মাত্র! এবং একমাত্র নারী!
কেউ যদি বোঝাতে চাই, কাকড়া স্বভাব নারীদের … তাহলে সে একতরফাই হয়ে যায়। আপনি সহজভাবেই বলেছেন, মানলাম, কিন্তু যে কমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর দিয়েছেন, সেখানে কিন্তু কাকড়া প্রসঙ্গ এমনিতে আসেনি।
আপনার মন্তব্য বুঝিনি বলে দুঃখিত । 🙂
@নীল রোদ্দুর, দুঃখিত হবার মত কিছু হয়নি 🙂
ব্যতিক্রম থাকবে না কেন? আছে তো। আর কাঁকড়া নিয়ে যখন কথা উঠতে তখন তাদের দিকে তাকালেও ব্যতিক্রম আছে। আমি হয়তো বলিনি যে দু-চারটে রাম-কাঁকড়া ঠিকই বের হয়ে যায় মুক্তির স্বাদ নিতে।
আমি একটা অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছি। তবে ব্যাপারটাকে আমি দেখছি একটা সিনেমা বা নাটক মনে করে। আমার নিজেরও ভূমিকা আছে তাতে। তবে আমি নিজে অবস্থান নিয়েছি দর্শকদের গ্যালারিতে। দেখতে পাই সবচেয়ে দুর্বল আর অসহায় চরিত্র আমার মা। নিজের পায়ের তলায় মাটি নেই বলে তার নিজস্ব কোনো মতামত নেই। থাকলেই তার কোনো দাম নেই।
আর হ্যাঁ, নিজের কথা বলতে গিয়ে আপনার “বাবার বাড়ি”, আপনার “মায়ের বাড়ির” কথা বললেন। দুদিন পরে বলবেন “শ্বশুর বাড়ির” কথা। খেয়াল করে দেখেন- আপনার “নিজের বাড়ি” বলে কিছু নেই 🙂
জানি এই ভুলটা অবচেতন ভাবেই হয়ে থাকে। তাই জাস্ট মনে করিয়ে দিলাম 🙂
@নীল রোদ্দুর,
ছিদ্রান্বেষন যদি করে থাকি অতি দু:খের সাথে করতে বাধ্য হচ্ছি। এবার বলি আমি ছোটবেলা মাকে সংসারের কাজে সাহায্য করতাম। এই নিয়ে বন্ধুর মাদের কানাকানি। আমি নাকি মেয়েলী স্বভাবের আমার পুরুষালী স্বভাব নেই। আর বন্ধুদের মায়ের কাছে থেকে ভাইরাস ছড়ালো বন্ধুদের মধ্যে। একদিকে আমার বন্ধুদের খোঁটা শুনতে হত। অন্য দিকে বন্ধুদের মায়েদের থেকে আমার মার। একদিন মা বললেন আমি যাতে মায়ের কাজে হাত না দেই। কারণ বুঝতে আমার বাকী ছিল না।
শুধু মাকে বলেছিলাম আমি আমার কাজ করবো। তাতে কে কি কথা বলল তা শুনে লাভ নেই। কিন্তু কোন বন্ধুর বাবা আমাকে সেই খোঁটা কোনদিন দেন নি।
আরও ঘটনাবলি একটাই বলছি এই রকম অসংখ্য ঘটনা আছে-
এক বন্ধুর বাড়ী বসে আছি। হঠাৎ অমুক বাড়ীর মেয়ে মেয়ে হয়ে ভাল রেজাল্ট করে আর তুমি ছেলে হয়ে কি করো? ছেলে হিসাবে তোমার লজ্জা থাকা উচিৎ।
এখন এই ছেলের মেয়েদের প্রতি হীনমন্যতা জন্মাতে বাধ্য। যেখানে শিক্ষাটা আসছে মায়ের কাছ থেকে। এরকম ঘটনাও কোন বাবার কাছ থেকে শুনি নি।
যে মায়ের কাছ থেকে এইরকম শিক্ষা পায়। সে রাস্তায়ও ইভটিজিং করবে। আর সেখানে যদি আমি প্রতিবাদ করি সেখানে আমার হাসির পাত্র আর পরিহাসের পাত্র হতে হবে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ৮০% মানুষ চিরাচরিত নিয়মে চলতে চায়। পরিবর্তন চায় মাত্র ২০% মানুষ।
ভারতে যখন ইলেকট্রনিক্স আসলো ৮০% মানুষ বিপক্ষ্যে গেল এই বলে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ভারতে যখন কম্পিউটার/সফটওয়্যার আসল ৮০% মানুষ বিরুদ্ধে গেল তা নাকি বেকার বাড়বে।
তেমনি আপনার ঘটনাও তাই হয়েছে। যেহেতু এই লাইনে মেয়েরা কম যায়। তাই আপনার পরিবার মেনে নিতে পরে নি।
যেমন আমার এক ভাইয়ের নাচ শিখার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয় নি, তার পরিবারের বাঁধায়। নাচ নাকি শুধু নারীদের জন্য।:-Y
@সুমিত দেবনাথ,
ভাইয়া, এরপর সুন্দর করে বোঝানোর চেষ্টা করবেন… কিছু ব্যাপারে সব মানুষ বদলায় না হয়ত, কিছু মানুষ কিন্তু সময়ে বদলায়। 🙂
ঐ ভরসাতেই শুরু করিনা কেন আমরা। শুভকামনা… 🙂
@নীল রোদ্দুর,
তাড়াতাড়ি লিখতে গিয়ে বিশৃঙ্খল করে ফেলেছি।
উপরের উদ্ধৃতিটি এইরকম হবে।
এক বন্ধুর বাড়ী বসে আছি। এর মধ্যে হঠাৎ শুনলাম বন্ধুর মা বন্ধুর উপর রেগে পাশের বাড়ীর এক মেয়ের নাম করে বলছেন। ও মেয়ে হয়ে ভাল রেজাল্ড করে আর তুমি ছেলে হয়ে কি করো? ছেলে হিসাবে তোমার লজ্জা থাকা উচিৎ।
এটা একটা উদাহরণ মাত্র এইরকম অহরহ নানা পরিবারে মার কাছ থেকে ছেলে জানছে মেয়েরা অধম। সেখান থেকে মেয়েদের প্রতি তৈরী হচ্ছে হীনমন্যতা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি ইভটিজিং জন্য এই মেয়েদের প্রতি হীনমন্যতাও অন্যতম কারণ।
নারী-পুরুষ বলে কথা নয়। সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সংগ্রামী অভিনন্দন রইল। ভাল থাকবেন।
একমত নই ।
তাহলে বুদ্ধ কি পুরুষকেও পালিয়ে বাঁচার জন্য সন্যাসব্রত গ্রহন করতে বলে ছিলেন ?
বস্তুতঃপক্ষে উভয়ের দ্বারা দুঃখমুক্তি সম্ভব, সে কারণেই বুদ্ধ উভয়কেই সন্যাসব্রত গ্রহন করতে বলে ছিলেন ।
আর সমাজ হলো ঐ এলাকার মানুষের মনঃস্তাত্তিক অবস্থার দর্পন । কাজেই সমাজ পরিবর্তন করতে হলে তা ধীরে ধীরে করতে হবে ।
ধন্যবাদ ।
@রুপম,
বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে আমার নিজের বেশ খানিকটা ভালোলাগা কাজ করে, ঐ সন্যাসব্রতের ব্যাপারটুকু বাদ দিয়ে। দুঃখ মুক্ত, মোহমুক্তি, নির্বাণ লাভ, যাই হোক না কেন, তারজন্য সংসার ত্যাগী হতে হবে কেন? সংসারত্যাগী তখন হবে, যখন সমগ্র সংসারই তার দুঃখের কারণ। দিনের পর দিন সামান্য খাদ্য গ্রহন করে ধ্যান ধরে থেকে কি নির্বান লাভ হয় তা ঐ সন্যাসীরাই জানেন। নির্বান লাভের ফর্মূলা নাকি সন্যাসব্রত? মুক্তি যদি আধ্যাত্মিক হয় তবে নির্বাণ লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ চর্চা হতে পারে সংসারে থেকে দুঃখ, মোহকে পাশে রেখেই এর উর্ধে ওঠা। যে সেটা পারেনা, তার সবকিছু ছেড়ে যাবার প্রয়োজন হয়। সন্যাস তাহলে ড্রাগের মত!
চণক বুদ্ধকে বলেছিল, আপনি ভিক্ষান্নজীবি ভিক্ষুর দল তৈরী করে সমাজ কতগুলো নপুংসকের জন্ম দিচ্ছেন। কথাটার হুবহু ভাষাটা মনে নেই, তবে এই সারমর্ম। সন্যাসব্রত পালিয়ে বাঁচা ছাড়া আর কি! বুদ্ধি নারীকেও পুরুষের মতই পালিয়ে বাঁচার অধিকার দিয়েছিলেন।
ধন্যবাদ 🙂
@নীল রোদ্দুর, ভালো বলেছেন।
রবীন্দ্রনাথ আর স্বামী বিবেকানন্দ সমসাময়িক হয়েও শুনতে পাই রবীন্দ্রনাথই নাকি স্বামী বিবেকানন্দকে এড়িয়ে চলতেন। রবীন্দ্রনাথের যুক্তি হলো-
@নীল রোদ্দুর,
প্রথমেই ধন্যবাদ দিচ্ছি উত্তর প্রদানের জন্য ।
আসলে কোন কিছুকে পরিপুর্ন এবং নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে (observe) হলে সেটা থেকে বের হতে হয় । এতে ঐ সব বিষয় দ্বারা নিজের মন প্রভাবিত হয় না এবং সামাজিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে যেতে হয় না । তাই সমাজ- সংসার থেকে বের হয়ে গেলে, সমাজ- সংসার এবং নিজের conditioned mind থেকে উদ্ভুত দুঃখগুলো সহজে দেখা (observe) সম্ভব ।
আর দুঃখ এবং তাদের উৎপত্তির কারণগুলো যথাযোগ্য ভাবে দর্শন করতে পারলে, সং- সারের দুঃখসমুহ উৎপত্তির কারণগুলো রোধ করার মাধ্যমে দুঃখ মুক্তি সম্ভব ।
বৌদ্ধ ধর্মের মূল থিম এর মধ্যে (The Four noble truths, The Eightfold path) কোথাও সন্যাসব্রত গ্রহণের কথা বলা হয়নি । বুদ্ধ সন্যাসব্রত গ্রহণকে কেবল মাত্র দুঃখ মুক্তির সরল পথ হিসেবে বর্নণা করেছেন । সন্যাসব্রতকে Mandatory হিসেবে নেওয়ার কোন কারণ নেই । অর্থাৎ সমাজে বসবাস করেও দুঃখ মুক্তি সম্ভব তবে কঠিন । খুব কম লোকই তা পারে ।
আর সন্যাসব্রতকে কেউ জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে নিজের জীবন ব্যর্থ করলে তার দায় সন্যাসব্রতের নয়, সে দায় তার নিজের । সন্যাসব্রত কেবল একটি হাতিয়ার মাত্র ।
আবারো ধন্যবাদ ।
@রুপম,
আপনার প্রিয় বিষয় নিয়ে সামনেই লিখব ঠিক করেছি… আলাপ জমবে তখন। কঠিন বিষয়ে শান্ত কন্ঠে বিতর্ক করে মজা পাই আমি। ভালো থাকবেন। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
আপনিও ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ ।
@নীল রোদ্দুর,
‘মৈত্রেয় জাতক’ একটি অসামান্য গ্রন্থ; আমার খুব প্রিয়। আপনার লেখাটিও ভালো লাগলো। তবে–
উঁহু…এটি খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গীর কথা।
আসলে তথাগত সন্নাস ধর্মটিকে নির্লোভ জীবন হিসেবেই দেখছেন, যেখানে দুঃখের নাশ সম্ভব। আর সংসার ধর্মকেও তিনি মর্যাদা দিয়েছেন পঞ্চ শিলা নীতিতে।
আপনাকে ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
জানি ভাইয়া, নাহয় তো কোন বৌদ্ধকে আর জগত সংসারে পাওয়া যেত না। প্রজন্মান্তরে তথাগত দর্শন জানান দেবার মানুষও খুঁজে পাওয়া যেতো না। সন্যাস একটা অপশন বাধ্যতামূলক নয়।
বৌদ্ধধর্মের আরো গভীরে যাবার ইচ্ছা আছে আমার। কত কিছুই তো ইচ্ছা করে, সময় সুযোগের ব্যালান্স করে উঠতে হিমসিম খাচ্ছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যাবাদ। 🙂
@রুপম,
দুঃখিত, বুদ্ধ হবে।
আপনার চিন্তা-ভাবনার গভীরতা দেখে মুগ্ধ হচ্ছি দিন দিন।
এটাই সত্যি কথা। শ্বাপদসংকুল এই জঙ্গলকে নিরাপদ আবাসস্থল করাটা মেয়েদেরই দায়িত্ব। এই কাজ অন্য কেউ করে দেবে না। মর্যাদা এমনই এক জিনিস, এ্কে মুফতে পাওয়া যায় না। কঠিন সংগ্রামে আদায় করে নিতে হয়।
@ফরিদ আহমেদ,
শুধু মেয়েদের দ্বায়িত্ব হতে পারেনা। মানবতার দায় নারীর একার না, পুরুষেরও।
নারীর কোনদিনও মানব মর্যাদা ছিল কিনা, এটা গবেষনার ব্যাপার, তবে, তা নারীকে অর্জন করতে হবে, তেমনি পুরুষকেও পুরুষ থেকে মানুষ হয়ে ঊঠতে হবে। সমাজটা মানবের। 🙂
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
হুম, এটা হচ্ছে খাঁটি মেয়েলি আবেগীয় কথা। আমার মত একজন পুরুষবাদী তাই এর সাথে একমত হতে পারলাম না। 🙂 পুরুষের আবাস্থলতো আল্লাহর অসীম রহমতে শুরু থেকেই নিরাপদ। খামোখা সে এই দায়িত্ব নিতে যাবে কেন? মাথা যার মাথা ব্যথা যেমন তার, তেমনি দায় যার দায়িত্বও তারই। 😛
এইবার চিন্তা-ভাবনাটা মোটামুটি আমার মতই হয়েছে। 🙂 নাহ, নারীর মর্যাদা কোনোকালেই ছিল না। এ নিয়ে অনেক গবেষণাই হয়েছে। যেটুকু মর্যাদা পেয়েছে তা এই আধুনিককালে এসেই পেয়েছে। কাজেই, মর্যাদাটা নারীদেরকেই অর্জন করে নিতে হবে। সমাজটা মানবের জানা কথা। কিন্তু দেখতে হবে যে, পুরুষবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষ থেকে মানুষ হয়ে উঠাটা আসলে উঠা না নামা। যেহেতু তাদের দৃষ্টিতে এটি অবনমন, কাজেই স্বেচ্ছায় তাদের রাজসিংহাসন ছেড়ে ঘুঁটেকুড়ানির পর্ণকুটিরে নেমে আসাটা, আশা করা একটু দূরাশাই বটে। 😛
@ফরিদ আহমেদ, এইবার আমিও একটু তীব্রভাবে নারীবাদী ঝাল ঝাড়ি। 😛
পুরুষের গায়ে জোর আছে আর হাতের মুঠোয় ধর্ম আছে। এই দিয়েই নারীর ভালবাসা অর্জনে মন না দিয়ে তাকে যেমন ইচ্ছে তেমনি করে চাবি দেয়া পুতুল বানানোতে মন দিল। সেইসাথে আমরা এইটাও বুঝে গেলাম, দৈহিক শক্তির আর মানবতা পরষ্পরের ব্যস্তানুপাতিক। 😛
ঘুষি মেরে ঘায়েল করে না পারলে হাতের কাছে ফল কাটা ছুরিটা রাখা উচিত, নাকি বলেন। 😀
শ্বাপদের জঙ্গলে নারীরাও তীব্র শ্বাপদ হয়ে উঠুক, এই কি চায় পুরুষবাদীরা?
[মানুষ হয়ে উঠুক, শ্বাপদ নয়।]
@নীল রোদ্দুর,
ঝাল ঝাড়ুন। অসুবিধাটা কী? প্রকৃতির বদান্যতায় পুরুষ হবার বিনা অপরাধে নারীবাদীদের ঝাল এবং গালতো আর কম খাই নি এই জীবনে। 🙁
এইবার একটু তিক্ত কথা শোনেন। ধর্মের দাস নারীরাই হতে চেয়েছে। পুরুষের তেমন কোনো জবরদস্তি লাগে নি এতে। এখনো যদি বলেন যে, ধর্ম তুলে দেওয়া হোক, সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ আসবে নারীদের কাছ থেকেই। নারী যদি নিজেই সাজুগুজু করা সুদর্শনা পুতুল হতে চায়, তবে তাকে পুরুষ কেন পুতুল বানাবে না? পুরুষজাতির পিঠের চামড়া তোলার আগে নিজেদেরও একটু আত্ম-সমালোচনার প্রয়োজন আছে বৈকি। 🙂
বুঝতে একটু দেরি হয়ে গেল এই যা। আমরা পুরুষজাতিরা এটা বুঝেছি সেই সৃষ্টির ঊষালগ্নেই। :)) ব্যাঘ্র কখনো মানবতার কথা বলে না, এই আহাজারি শোনা যায় শুধু সন্ত্রস্ত্র, বিপন্ন হরিণীর কাছ থেকেই। 😛
সেই সাহস যেদিন হবে নারীদের, সেদিন এই ব্লগ লেখার প্রয়োজনীয়তা ফুরোবে। 😀
পুরুষবাদীদের চাওয়া নয়। এটাই হওয়া উচিত নারীবাদীদের চাওয়া। শাণিত দাঁতের শ্বাপদ হওয়াটা মানুষ হবারই পূর্ববর্তী বিবর্তনীয় ধাপ। একে এড়িয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। কোনো বিধাতাপুরুষ স্বর্গ থেকে নারীদের মানব করে সরাসরি মর্তধামে ছুড়ে দেবে না আদমের মত। 😉
@ফরিদ আহমেদ,
আহারে! :lotpot:
বুঝছি, এইবার আমারেই নবী হইতে হবে। এযাবত পর্যন্ত পুরুষেরাই ধর্ম বানাইলো, কয়েকটা গডের নাম মেয়েদের নামে রেখে গডেস বানায়ে মেয়েদের স্বান্তনা দিল, তাও স্বল্পবুদ্ধির মেয়েরা বুঝলো না, ধর্মের প্রয়োজন যখন মেয়েদের, নবী হওয়া উচিত ছিল তাদেরই।
আর বিপন্ন হরিণী যে মরার আগে কাউকে না পেয়ে যে গড গড করে পাশে কাউরে খুঁজে এইটা বাঘেরা জানেনা? :clap
ইয়ে মানে, পুরুষেরা যে রূপ দেখলে টপ টপ করে গলে গলে পড়ে, বুদ্ধি কম হলেও মেয়েরা এটা জানে। আগে তো দর্শনধারী, তারপর গুনবিচারী। 😀
মাকাল ফল পুরুষের প্রিয় ফল। 😛
তাই ভিতরের মেধা মাকাল ফলের মেকাপ নেয়ার জন্য বাইরে এনে ঘষামাজা করে। জৈবিক কারণেই। মেট হবার জন্য পুরুষের চেয়ে বেটার কিছু থাকলে করত না। 😉
এইব্লগ যে লিখেছে, সে যে ভালোই হাত পা চালায়, সে তার কাছের জনেরা জানে। ঘুষি মেরে নাক ফাটায়ে দিব, এইকথা নীল রোদ্দুরের সবচেয়ে হিট সাইন। 😛
বুদ্ধির নখে শান দেব, আমার হাতের কাছ থেকে পাথরটা সরিয়ে নিলেন কেন? লাভ নেই, একদিন ঠিকই কেড়ে নেব আমার বুদ্ধির নখে শান দেবার পাথরটা। :-[
@নীল রোদ্দুর,
আহারে রমণীকুল!!! মেট হবার জন্য নারীর চেয়ে বেটার কিছু না থাকার পরেও, আমরা পুরুষেরা কোনো সাজুগুজুই করি না। দিব্যি কলার ময়লাওয়ালা শার্ট আর দুর্গন্ধময় মোজা পরে চলাফেরা করি। শুধু তাইই নয়, চকচকে টাক-মাথা কিংবা নাদুসনুদুস স্ফীত ভূড়ি, এর কোনোটাই সুন্দরী এবং ছুড়ি সঙ্গিনী জোটাতে বাধাতো নয় মোটেই, বরং বেশ কার্যকরও বটে। 🙂
বার্কিং ডগ সেলডম বাইটস!!! 😀
হাহ! বুদ্ধিতে শান দেবার পাথরটা নিজ দখলে রাখারই যার বুদ্ধি নেই সে কি না পাথর কেড়ে নেবে একদিন বুদ্ধির গোড়ায় শান দেবার জন্য। কুঁজোর আবার চিৎ হয়ে শোবার স্বপ্ন। 😛
@ফরিদ আহমেদ,
ভাইয়া, একজীবনে তো অনেকগুলো জীবন যাপন করা যায় না, আমি আমার জীবনটা যাপন করছি কেবল। আপনি যদি দাবী করেন, অপরিচ্ছন্নতা পুরুষের সাজ, তাহলে আমি ছে ছে ছে ছাড়া কিছুই বলব না। দরকার নাই এমন পুরুষের। কাপড়টাই পরিষ্কার রাখতে জানে না। :guru:
@ফরিদ আহমেদ, ভাইয়া, আপনার সাথে এই কথোপকথনের অনেক গুলো জায়গাই বেশ খানিকটা দুষ্টুমি করেই বলেছি… আশা করছি, অন্য কেউ সেটা ভুল ব্যাখ্যা করবে না।
আপনি দুষ্টুমি গুলো বুঝেছেন বলেই আমার ধারণা। :-[
@নীল রোদ্দুর,
মুক্তমনার সদস্য এবং পাঠকেরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এই দুষ্টুমিগুলো দুষ্টুমি হিসাবে না বোঝার কিছু নেই। কেউ ভুল ব্যাখ্যা করবে বলে মনে হয় না আমার। এ ধরনের বুদ্ধির ঝিলিক লাগানো দুষ্টুমিগুলো আমি নিজেও খুবই উপভোগ করি। সে কারণে আমিও এগিয়েছি।
যেভাবে কালো ভুতের ভয় দেখাচ্ছেন, তাতে কি আর না বুঝে উপায় আছে? 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
বোরখাওয়ালীদের কর্তাদের জিজ্ঞেস করলে ভালোমানুষটির মত হেসে হেসে জবাব দেয়- আরে নাহ, বোরখাটা সে নিজের ইচ্ছাতেই পড়ে। আবার বোরখাওয়ালীরাও আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলে- বোরখা পড়ার জন্য একটুও জোরাজুরি করে না। প্রিয় নবীজীর আদেশ মেনেই পড়ি। আর সেজন্য ও যে কত্ত ভালোবাসে…
প্রতিবাদটা আসার কারণ- এরা আরো বেশী মূর্খ।
সাজুগুজু গয়নাগাটির কথা আর বলতে… 🙂
বইটার প্ররিপ্রেক্ষিতে আপনার লেখা অসাধারণ!
@
শ্রাবণ আকাশ
বোরখাওয়ালীদের কর্তাদের জিজ্ঞেস করলে ভালোমানুষটির মত হেসে হেসে জবাব দেয়- আরে নাহ, বোরখাটা সে নিজের ইচ্ছাতেই পড়ে। আবার বোরখাওয়ালীরাও আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলে- বোরখা পড়ার জন্য একটুও জোরাজুরি করে না। প্রিয় নবীজীর আদেশ মেনেই পড়ি। আর সেজন্য ও যে কত্ত ভালোবাসে…
প্রতিবাদটা আসার কারণ- এরা আরো বেশী মূর্খ।
যা বলেছেন, :lotpot:
@আফরোজা আলম,
আপু, ধন্যবাদ আপনাকে। একটা বিষয়ে একটু অবাক লাগছে, এই লেখায় বন্যা আপু আর আপনি ছাড়া আর কোন নারীকন্ঠ শুনতে পেলাম না। পুরুষের উপর যে অভিযোগ আমি তুলেছি, সেই একই অভিযোগ তো আমি নারীর উপরও তুলেছি। নারীরা চুপচাপ শুনে গেল কেন? একটু কাশি দিয়ে ঝাড়ি দিয়ে গেলেও তো বুঝতাম, অভিযোগটা গায়ে লেগেছে… 😉
@নীল রোদ্দুর,
আপনি একদম ঠিক বলেছেন।যারা দেখবেন নারী বাদীর কথা বলে তাদের সাথে মুখ লুকিয়ে পাশ কেটে যাওয়া নারীদের পার্থক্য পাইনা।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীরাই নারীদের ক্ষতি সাধন করে। এমন আমারও নিজের এমন ধরনের রচনায় নারীদের কাছ থেকে বিন্দু মাত্র সাড়া পাইনি ভাবলে অবাক লাগে।
তবে, এখন লাগে না। আমার ব্যক্তিগত জীবনেও দেখেছি এমন এক একজন কথা বলে সুস্থ শিক্ষিত নারীরা, তখন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি এই সব মানুষের জাগরণ কোনদিন আসবে না।
তারা স্বেচ্ছায় এই অবস্থান কে বেছে নিয়েছে।তারা নিজেরাই দাসীবৃত্তিকে মনে করে, পতি সেবা।
আর পতিসেবা সুচারুভাবে সম্পন্ন না করলে কী কী শাস্তি হবে তা তারা আমাদের মতন মূর্খ 😕 মানুষদের জানিয়ে দিতে দ্বিধা করেনা।
আমারই এক অধ্যাপিকা বান্ধবী বলেছিল, পুরুষের যদি দোষ থাকে তার চাইতে মেয়েদের দোষ বেশী,
আমার লেখায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিল,
আমি যদি পুরুষের বিরুদ্ধে কিছু লিখি ধর্মের দোহায় দিয়ে সেই নাকি সবার আগে আমার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এবং আমাকে অনেক হাদিস কোরানের বানী শুনিয়ে গেল।
আমিও অ-শিক্ষিত বোকার মত তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম।
এই হচ্ছে নারী। একতরফা পুরুষের আসলেই দোষ দেয়া যায়না। নারীরাই স্বেচ্ছায় বন্দী জীবন পছন্দ করে নিয়েছে। অবশ্য এর ব্যাতিক্রমও আছে।
আলোচনাটা দীর্ঘ হয়ে গেল। নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। 🙂
@আফরোজা আলম,
আপু, অসূর্য্যস্পর্শা বেশী আলোর কথা ভাবতে পারেনা। কিছুদিন রোদের মধ্যে হেটে বেড়াক, সয়ে যাবে। তারপর ভাবতে পারবে। 🙂
@আফরোজা আলম, এ প্রসঙ্গে একটা ভিডিওর লিঙ্ক শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না। টোটাল ৫ পর্বের প্রথম পর্বটার লিঙ্ক দিলাম। বাকী ৪টা ওখানেই পেয়ে যাবেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=3_3X-RLvM6A
@শ্রাবণ আকাশ,
ধন্যবাদ লিঙ্কটা দেয়ার জন্য। কি করে এই লিঙ্কটি আমি সরাসরি ইউটিউব থেকে দেখতে পারি? জানাবেন।বাকি পর্বগুলো দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
@আফরোজা আলম, ইউটিউবে “Burqa Ban Debate” দিয়ে সার্চ দিলে প্রথমেই এসে যাওয়ার কথা। তবে এবার যেটা পেলাম সেটা ১৫ মিনিট করে ৪ পর্বে বিভক্ত।
এই যে বাবা-মা রা আমারদের মেট সিলেক্ট করে দেন। এ নিয়ে আমার একটা অবজার্ভেশন আছে-
অন্যপ্রাণীতে যখন নেচে গেয়ে- পেখম মেলে বা কখনো যুদ্ধ করে মেটকে ইম্প্রেস করতে হয়। তখন এসব কাজে সবচেয়ে পারঙ্গম প্রাণীটাই সিলেক্ট হয়। ‘আরেজন্ড ম্যারেজ’ ওয়ালা প্রাণী সম্প্রদায়ে এই ‘ফিটনেস ফাংশন’ টা হলো ‘পাত্র/পাত্রীর বাবা-মাকে’ ইম্প্রেস করতে পারা। এবং মানুষকে স্রেফ একটা প্রাণী হিসাবে দেখলে। এই ফিটনেস ফাংশনের ‘পার্ফরমেন্স’ কিন্তু খারাপ না!! :-s
আর তথ্যপ্রযুক্তি এবং ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এর যুগ শুরু হওয়ার আগের সময় যদি কল্পনা করেন। তাহলে একদম বেসিক প্রিন্সিপাল থেকেই অনুমান (খানিকটা ডিডিউস অর্থে) করা সম্ভব তখন ‘আমাদের সমাজে’ কীভাবে এই আচরণটা ইভল্ভ করলো। (এ নিয়ে পরে লেখার আগ্রহ আছে)
আর নারী বা পুরুষ উভয়েই আসলে রমণীয়। তাদের উভয়েরই নৃত্যকলা থেকে শুরু করে, ফ্যাশন শো… সবই দৃষ্টিনন্দন। এসব আর্টফর্মকে তাই আসলে দুষে লাভ নেই। মূল ব্যাপারটা ‘মাসলপাওয়ার’-এর অপব্যবহারে। শুধু ব্যক্তিগত নীতিবোধ নয়, সামগ্রিক সামাজিক নীতিবোধ পালটানো না গেলে এ থেকে মুক্তি মিলবে না। তার মানে নতুন ‘জেনারেশনকে’ সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। বর্তমানদের দুয়ারে মাথা ঠুকে বা পিঠে লাঠি ঠুকে লাভ নেই।
আর একদম শেষ প্যারাটাতে কী বলা হলো বুঝিনি। নারী ও পুরষ লৈঙ্গিক ভাবে আলাদা। এবং একটা ভাষায় অবশ্যই সেই পার্থক্য নির্দেশকারী শব্দ থাকবে। এটাকে ‘তুচ্ছার্থে’ ভাবার কিছু নেই।
আর পঞ্চম প্যারাটা বেশি বড় হয়ে গেছে। ভেঙ্গে ফেললে ভালো হতো। কিন্তু পুরো প্যারাটাই যদি অভাঙ্গনযোগ্য একটা আইডিয়া প্রকাশ করে থাকে, সেক্ষেত্রে ভিন্নভাবে লিখে সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করা উচিত। মোট কথা, বেশি বড় প্যারা মানেই, হয় বাহুল্য এসে যাচ্ছে। অথবা আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা ঠিক ভাবে বলতে পারছি না, অথবা সেটা ভাঙ্গনযোগ্য।
@তানভীরুল ইসলাম,
প্রানীর চেয়ে উপরে ভাবার সুযোগ তেমন একটা পাচ্ছি না।
আর্টফর্মকে একবারও দুষিনি কিন্তু। পুরুষের বা নারীর নৃত্যে তো সমস্যা না… ঐটা একটা শিল্প। সমস্যাটা অন্য জায়গায়, হালের গায়িকা মিলা প্রথম আলোকে দেয়া একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন… লোকে পছন্দ করে বলেই তাকে “রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া” এর মত গান গাইতে হয়। আমি এই লোকের পছন্দ-এর কথা বলেছি… একটা সমাজের চলমান শিল্প সংস্কৃতির দিকে তাকালে বোঝা যায়, তাদের সামাজিক চিত্রটা। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
আমি মনে হয় বোঝাতে পারিনি, কি বোঝাতে চেয়েছি। ধরুন, আমি মানুষ নই, ভিন্ন প্রজাতির কোন বুদ্ধিমান প্রানী। আমি যদি মানুষকে দেখি। বাইরে থেকে আমি কেবল মানুষ হিসেবেই দেখব, সাধারণ বৈশিষ্ট্য সমেত। লিঙ্গ পার্থক্য খুব বেশি মুখ্য হবে না। নারীও মানুষ, পুরুষও মানুষ। এইখানে নারী বা পুরুষ বৈষম্যও নয়, তুচ্ছার্থেও নয়।
কিন্তু আমি যখন নিজেই তাদের একজন… আমি আমার মর্যাদাগত অবস্থানটা খুঁজব স্বপ্রজাতির মধ্যে। আমার প্রজাতির সব সদ্যসের মাঝে মানবতা খুঁজবো। আমি যখন দেখবো, আমার মানব পরিচয়ের চেয়েও লিঙ্গ পরিচয়টা মুখ্য হয়ে যাচ্ছে, এবং সেই অনুসারে প্রজাতির ভিতরে আমার মর্যাদাগত অবস্থানটা ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, তখন সেটা মানব মর্যাদাচ্যূত লিঙ্গপ্রধান মর্যাদাই বটে। এই মানব মর্যাদাচ্যূতিটাই আমার দৃষ্টিতে তুচ্ছ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
বুঝতে পেরেছি। 🙂
কিছু ব্যাপারে আমি স্বতঃস্ফুর্ততাকেই প্রধান্য দেই। এই প্যারাটাকে ভেঙ্গে সংক্ষিপ্ত করে অনেকগুলো প্যারাতে রূপ দেয়া সম্ভব, চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবকয়টা বাস্তবতা দেখিয়ে দেয়া সম্ভব। সেটা করতে ইচ্ছা হয়নি। সেগুলো আমরা সবাই জানি। তবে এতোটা লেখারই বা কি দরকার ছিল? এটা একটা এক্সপ্রেশন। যা বলতে চেয়েছি, তাই বলেছি। ভাঙ্গন যোগ্য, তবে ভাঙ্গতে চাইনি। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
লেখাটার অপেক্ষায় রইলাম। 🙂
@নীল রোদ্দুর, বৈজ্ঞানিক (বিবর্তনীয়ভাবে) এবং সামাজিকভাবে এর ঐতিহাসিক কারণটা বোঝা খুব কঠিন না। তবে বর্তমান আর ভবিষ্যতে কীভাবে একে বদলানো যায় সেটাই বোধ হয় এখনকার বিবেচ্য বিষয়।
আমি মনে করি, নারী অধিকার কোন বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এর পিছনে সামাজিক (মূল্যবোধ, ধর্ম ইত্যাদি) কারণগুলোর সাথে সাথে অর্থনৈতিক কারণগুলোও দেখা প্রয়োজন। আমরা সাধারণত শুধু সামাজিক পরিধির মধ্যেই একে সীমাবদ্ধ করে ফেলি। উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কটা এখানে খুবই একটা জরুরী বিষয়। আর একারণেই পুঁজিবাদের উত্থানের সাথে সাথে বিংশ শতাব্দীতে এসে নারী অধিকারের মত দাবীগুলোও সামনে চলে এসেছে। উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজে নারী পুরুষের সম্পর্ক, ব্যক্তি অধিকারের ব্যাপারগুলো বদলাতে থাকে। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেও সেটা বোঝা দরকার।
@বন্যা আহমেদ, হ্যা আপু, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আজ আমরা যে অধিকারের দাবীতে কথা বলছি, সেই অধিকারের দাবীতে এইভাবে কথা বলতে হবে না, যদি হঠাৎ করে অর্থনৈতিক ব্য্যবস্থায় নারীর গুরুত্ব বেড়ে যায়।
পুঁজিবাদ হল সিন্দাবাদের ভূতের মত, যতই একে হঠানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, সে সহজে হঠবে না। যেকোন ক্ষেত্রে আপনি পরিবর্তন আনতে যান, তার সাথে আরো দশটা ক্ষেত্র জড়িত। দশ ক্ষেত্রের ঠেলাঠেলিতে শেষপর্যন্ত কিছুই বদলায় না অথবা বদলালেও খুব ধীরে। আমাদের মাঝে অফুরন্ত প্রাণশক্তির স্বপ্ন দেখা মন কমই আছে। তাই একসময় আমরা স্বপ্ন আর দেখিনা, ক্লান্তিতে। সব পরিবর্তন তাই একটা মন দিয়ে সম্ভব নয়। অনেকগুলো প্রগতিশীল মনের একই সাথে অনেকগুলো দিকে আনতে হবে এই পরিবর্তন। আমি বিজ্ঞান নিয়ে ভাবি, মানবতা নিয়ে ভাবি। এইখানে আমি কাজ করে বদলানোর চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমার পক্ষে গার্মেন্টস শিল্পের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলা সম্ভব না। সে চেষ্টা আমাদের মত অন্য কাউকেই করতে হবে। এভাবেই সম্ভব সামগ্রিক পরিবর্তন। পৃথিবীর কোন কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। 🙂
@নীল রোদ্দুর, আমি কিন্তু বলতে চেয়েছিলাম যে, আমাদের মত দেশগুলোতে পুঁজিবাদের বিকাশ ঠিকমত ঘটেইনি। এক ধরণের বিকৃত এবং দূর্বল পুঁজিবাদ, পুরোনো সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সাম্রাজ্যবাদ, দুর্নীতি ( যেটা আমার মতে সাম্রাজ্যবাদের ফসল) সবকিছু মিলিয়ে একটা হযবড়ল অবস্থা। পুঁজিবাদের অগ্রগতির সাথে সাথে ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারী অধিকারসহ অন্যান্য মানবিক অধিকারের যতটুকু উন্নতি (কতটুকু হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে, তবে সামন্ততান্ত্রিক অবস্থার চেয়ে যে অনেকখানি উন্নতি হয়েছে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই) ঘটেছে তাও হয়নি আমাদের দেশে।
@বন্যা আহমেদ,
আপু, আপনি একটা লেখা দেবেন এই ব্যাপারে? অর্থনোইতিক ব্যবস্থাগুলো আমার মধ্যে ঠিকঠাক মত ক্লিক করেনা। ইনফ্যাক্ট, কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই আমার কাছে শেষপর্যন্তসটঠিক মনে হয় না। অর্থ এমন একটা ব্যাপার, শেষপর্যন্ত এটা প্রফিটে কনভার্জ করবেই, অন্য সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও। এইকারণেই আমি অর্থনৈতিক অমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা অংশগ্রহন বরাবর এড়িয়ে যাই, ঐখানে আমার যুক্তির ভিত শক্ত নয় বলেই।
আপনি এইব্যাপারে একটা লেখা দিলে ভালো হত। বিশেষভাবে আপনাকে বলছি… কারণটা বুঝতে পারছেন আশা করি।
@বন্যা আহমেদ, ইসস, কত্তগুলো বানান বেখেয়ালে ভুল করে দিয়েছি।
>অর্থনৈতিক
> শেষ পর্যন্ত সঠিক
>সমাজ
@ নীল রোদ্দুর,
মৈত্রেয় জাতক আমার খুব প্রিয় একটা বই। তোমার লেখা পড়ে অনেকদিন পরে বইটার কথা আবার মনে পড়ে গেল। উপন্যাস আমার খুব কম পড়া হয়, আর সচরাচর এক বই দুবার পড়াতো হয়েই ওঠেনা, মনে আছে এই বইটা দুবার পড়েছিলাম। বিশাখার চরিত্রটা যে কী অদ্ভুত একটা সৃষ্টি!
@বন্যা আহমেদ, আপু, আমারো। এই বইটা আমার অদ্ভুত একটা মনোজগত সৃষ্টি করে দিয়েছে। আর সাথে রাহুল সাংকৃত্যায়ন!
সভ্যতা সভ্যতা সভ্যতা বলে আমরা অনেকেই চিল্লাই। কিন্তু যারা চিল্লায় তারা নিজেরাই জানেনা সভ্যতা কাকে বলে। খুব ভাল লেগেছে।
@রাফি,
সভ্যতার একাডেমিক সংজ্ঞা দেবার ইচ্ছা নেই। আমার কাছে, সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে অসভ্যতার উপর। যে সভ্যতার সাফল্য, অর্জন যত বেশি, সেই সভ্যতার ভিত ‘অসভ্যতা’ ততবেশি প্রকাশ্য, ততবেশি মজবুত।
@রাফি, সভ্যতা হল ইট-পাথরের দালান। দেখতে দারুন! মানবতা আর সভ্যতা হল মুখ আর মুখোশের মত।
মুখোশ যত নিপুণ হবে, ততই বেশী সভ্য হব আমরা! :-X
🙂
@নীল রোদ্দুর, :):)
কিন্তু আগের ইমুটার মানে বুঝলাম না। এটা কি চিন্তা করতে করতে চুল পড়ে যাওয়ার ঘটনা!
@রাফি,
মনের মধ্যে সভ্যতার যন্ত্রনা নিয়ে মুখোশে গুনগান গেয়েছি তো, তাই নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছা হয়। 🙁
“শিশুকাল থেকেই কন্যাকেও গড়ে তোলা হয়, নারী মানেই পতিভক্ত, সুকন্যা, সুগৃহিণী, সুমাতা। কিন্তু যে পাত্রে কন্যাদান করে নিশ্চিন্ত হতে চান বাবা-মা, তাকে জীবনসংগী হিসেবে গ্রহণ করতে সে চায় কিনা, সে প্রশ্ন করতে ভুলে যেতেও আপত্তি নেই আমাদের সভ্যসমাজের”
যে সমাজ কন্যাকে দান করে তাকে সভ্যসমাজ বলা যায় কি? আমার কি বুঝতে ভুল হোল?
নীল রোদ্দুরের লেখাটা যথারীতি আবার দারুণ। ধন্যবাদ।
@কাজী রহমান,
কন্যা তো বস্তু, যা বোঝার মত। রাখা কষ্টকর, তাই দান করাই ভালো। দান করলেই তো দায় মুক্তি হয়ে যায়। 😀
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
মৈত্রেয় জাতক কিম্বা রাহুল সাংকৃত্যায়নের ভোলগা থেকে গঙ্গায় নারীদের যে চিত্র পাই তাতে তারা মানুষই ছিল। লিঙ্গবৈষ্যমের সৃষ্টি হয়েছে পুরুষকর্তৃক সৃষ্ট ধর্ম দ্বারা। প্রথাগত ধর্ম বার বার নারীকে বন্দী করেছে। এই সব বন্ধীত্ব থেকে মুক্তি পেতে জন্ম নিয়েছে মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট, সিমোন দ্য বোভোয়ার, বেগম রোকেয়া, তসলিমা নাসরিন। তারপরও লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয় না। সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “এইসব তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত লিঙ্গবাচক শব্দের অবমাননা থেকে মানবতা মুক্তি পাবে কবে?”
@মাহফুজ,
পুরুষের মাসলধর্ম কিন্তু সাধারনধর্ম সৃষ্টির চেয়ে পুরনো। লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টিতে ধর্মকে একক ভাবে কৃতিত্ব দেয়াটা কি ঠিক হোল?
@কাজী রহমান,
আসলে এটা বোধ হয় খুব প্রচলিত একটা ভুল ধারণা। এই ধর্মগুলোর সৃষ্টি হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে। আমাদের প্রজাতির ইতিহাস যদি দুই লাখ বছরের হয় তাহলে এই কয়েক হাজার বছর কিন্তু খুব বেশী নয়। এই ধর্মগুলো সৃষ্টি হওয়ার আগে নারীদের সমানাধিকার ছিল এটা যে কিসের ভিত্তিতে ভাবা হয় সেটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। এ নিয়ে নৃতাত্ত্বিক কোন গবেষণা আছে বলেও তো মনে হয় না। অনেক পুরনো প্যাগান সমাজগুলোতেও ( যার ইতিহাসও খুব বেশীদিনের নয়) নারীদের তেমন কোন অধিকার ছিল না। এগুলোতেও নারীর অবস্থান অনেকটা হিন্দু ধর্মের মতই ছিল, একদিকে দেবী বানিয়ে মাথায় উঠিয়ে রাখবে, আবার আরেকদিকে নারীকে গরুর সাথে তুলনা করবে।
@বন্যা আহমেদ,
সম্মানিত বোধ করছি। ভাল থাকুন।
@কাজী রহমান,
প্রভুত্ব/নেতৃত্ব এবং গায়ের জোর একসাথে হয়েই মাসলধর্মকে মাথায় তুলে দিয়েছে। ধর্ম ষোলআনা পূর্ণ করেছে, এই আরকি!
@মাহফুজ,
কয়েকদিন আগে মুক্তমনার স্বাক্ষর শতাব্দ- কে বলেছিলাম, সিমন দ্য বভেয়ার তার জন্য না, যে বৈষ্যমের শিকার। তার জন্য, যে নারী মুক্তির বা মানব মুক্তির আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করবে। লড়াইটা ব্যবহারিক। লড়াইটা ব্যবহারিক বলেই আইন দরকার,আইনের প্রয়োগ দরকার, মর্যাদাবোধ সমুন্নত করার শিক্ষা দরকার, নৈতিক উন্নয়ন দরকার। এগুলো না শিখিয়ে যতদিন শেখানো হবে, স্বামীর পায়ের তলায় স্ত্রীর বেহেস্ত, ততদিন সমাজ যেই অন্ধকারে, সেইখানেই রয়ে যাবে। :-Y