কয়েক বছর আগে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে একটা অসাধারণ ঘটনা ঘটেছে। মেয়েরা ফুটবল খেলা শুরু করেছে। এর আগে যে আমাদের মেয়েরা টুকটাক ফুটবল খেলে নি তা নয়, তবে সিরিয়াসলি খেলা শুরু মাত্র দুই তিন বছর আগে শুরু করেছে তারা। হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি বা ক্রিকেটের মত দলগত খেলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশ আগে হলেও ফুটবলের মাঠে পা রাখে নি তারা তেমন করে। আমাদের মেয়েরা যে এখন গভীর আগ্রহের সাথে ফুটবল খেলছে, শুধু তাই নয়, মানুষজনও প্রবল উৎসাহ নিয়ে তাদের খেলা দেখতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মেয়েরা যখনই অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে খেলছে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়াম। তুমুল করতালি আর গগনবিদারী চিৎকারে তারা তাদের সমর্থন জানিয়ে চলেছে প্রমীলা দলের পক্ষে ।

 

এই সমর্থনে বলিয়ান হয়েই গতকাল বাংলাদেশ দল দুই-শূন্য গোলে হারিয়ে দিয়েছেন শ্রীলংকাকে। কক্সবাজারে চলছে সাফ উইমেন ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ। গতকাল বিকেলে খেলা শুরু না হতে মাঝমাঠ থেকে বলে পেয়ে সুইনু প্রু মারমা বাঁ পায়ের দূরপাল্লার এক শটে গোল করে এগিয়ে নেয় বাংলাদেশকে। এর পরে অনেকগুলো সহজ সুযোগ সৃষ্টি করলেও আর গোল পায় নি বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয়ার্ধে কাউন্টার এটাকে নিজেদের অর্ধ থেকে সুইনু প্রুর কাছ থেকে বল পেয়ে সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় অসাধারণ এক গোল করে দলের বিজয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুন।

 

বাংলাদেশের এই প্রমীলা ফুটবল দলের প্রতি আমার আগ্রহের কারণ শুধু তারা প্রমীলা বলেই নয়। মেয়েরা জুবুথুবু হয়ে ঘরে বসে না থেকে, মাঠ কাঁপিয়ে ফুটবল খেলছে এটা অবশ্য আনন্দময় ঘটনা। কিন্তু তারচেয়ে অনেক বেশি আনন্দময় ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের এই বিশেষ দলটি। এই দলের আঠারোজন সদস্যের মধ্যে আটজনই পাহাড়ি কন্যা। এসেছে খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি জেলা থেকে। বাংলাদেশের আর কোনো দলের প্রায় অর্ধেক সদস্য পাহড়ি জনগোষ্ঠী থেকে এসেছে এমন কোনো ইতিহাস নেই। এই আটজনের মধ্যে সুইনু প্রু মারমাকে ধরা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম প্রমীলা ফুটবলার হিসাবে। ছোটখাট গড়নের এই কিশোরী মেয়েটি একাই যে কোনো মুহুর্তে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেবার সামর্থ রাখে। সুইনু প্রু মারমা, নুবাই চিং মারমা এবং সাবিনা খাতুনের উপর প্রবল ভরসা বাংলাদেশ দলের কোচের। এই তিনজন অসাধারণ মানের খেলোয়াড়ের কারণে এই টুর্নামেন্টের শেষ হাসি হাসার স্বপ্নও দেখছেন তিনি। দেখা যাক কোচের স্বপ্ন কতখানি সফল হয়।

 

ও হ্যাঁ আরেকটি কথা বলাই হয় নি। এই দলের অধিনায়কের নাম তৃষ্ণা চাকমা। গতকালের খেলার জয়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃষ্ণা বলেছে যে, বিজয়ের এই মাসে আমরা হারতে আসি নি।

 

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এই মাসে ফুটবল মাঠেও বিজয় নিশান উড়াক লালসবুজের পতাকা গায়ে দেয়া ফুটফুটে কিশোরীরা, সেই শুভকামনা রইলো।

 

বাংলাদেশ দলের প্রমীলা ফুটবলাররা