:line:
‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে’
স্টিফেন হকিং এর ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ বইটি পড়তে গিয়ে বার বারই রবিঠাকুরের উপরের চরণগুলোর কথা মনে হচ্ছিলো। হকিং তার এই নতুন বইটি লিখেছেন ক্যালটেকের পদার্থবিজ্ঞানী লিওনার্ড ম্লোডিনোর সাথে মিলে, এবং এটি বেরিয়েছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। যে দিন বইটি বাজারে আসে (সেপ্টেম্বর ৭, ২০১০), সে দিনই বইটি আমি হাতে পাই; এবং এটির একটি পর্যালোচনা করবো বলে মনস্থ করে ফেলি।
হকিং এর নতুন বইটি খুব বেশি বড় নয়। ২০০ পৃষ্ঠারও কম। নিবিষ্ট মনে পড়লে দু দিনের মধ্যেই শেষ করে ফেলা যায়। ঢিলেমি করে পড়লেও এক সপ্তাহের বেশি লাগার কথা নয়। আমার আগ্রহের কারণেই হোক, আর বইয়ের ভাষার গতিশীলতার জন্যই হোক আমি প্রথম দিনেই বইটি মোটামুটি শেষ করে ফেলি। তারপরে আবারো পড়ি। অন্ততঃ বার চারেক পড়া হয়েছে এম্নিতেই, উলটে পালটে দেখেছি অসংখ্যবার। কিন্তু বইটির নতুনত্ব কখনোই কমেনি। বইয়ের আকার দিয়ে আসলে বইটির মূল্যায়ন করা যাবে না। শুধু আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রেই নয়, দর্শনের ক্ষেত্রেও আছে রীতিমত চমক। এই বইয়ের প্রতিটি লাইনই পাঠকে চিন্তাশীল করবে,লুব্ধ করবে,পরিশিলীত করবে নতুন জ্ঞানের সমীরণে। মোট আটটি অধ্যায়ে সাজানো এই ছোট্ট বইটি। বইয়ের অধ্যায়গুলোর বাংলা করলে অনেকটা শোনাবে এ রকমের – ‘অস্তিত্বের রহস্য’, ‘নিয়মের নীতি’, ‘বাস্তবতা কী?’, ‘বিকল্প ইতিহাস’, ‘সার্বিক তত্ত্ব’, ‘আমাদের মহাবিশ্ব নির্বাচন’, ‘আপাতঃ অলৌকিকতা’ এবং সবশেষ অধ্যায়টি – ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’।
এই শেষ অধ্যায়টির নামেই পুরো বইটির নামকরণ করেছেন হকিং এবং ম্লোডিনো। বইয়ের নাম শুনে প্রথম ধাক্কায় কারো কারো মনে হতে পারে বুদ্ধিদীপ্ত অনুকল্প বা ইন্টেলিজন্ট ডিজাইনকে প্রমোট করা কোন বই বোধ হয়। বলতে দ্বিধা নেই, আমারও এক ধরণের খুঁতখুঁতানি ছিলো বইটিকে ঘিরে – যখন মাস খানেক আগে বইটির নাম প্রকাশিতব্য বই হিসেবে ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ নামটা বিভিন্ন সাইটে আর পত্র-পত্রিকায় দেখেছিলাম। আর সেই সাথে উপরি হিসেবে হকিং-এর পূর্ববর্তী বইয়ের প্রবাদপ্রতিম ‘মাইণ্ড অফ গড’-এর ধোঁয়াশার ব্যাপারটা তো মাথায় ছিলোই। তাই ‘ঘর পোড়া গরু যেমন সিঁদূরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’ ঠিক তেমনি একধরনের ভয়ার্ত অনুভূতি ছিলো প্রাথমিকভাবে বইটিকে ঘিরে। কিন্তু বইটি হাতে পাবার পর এই অনুভূতি কাটতে সময় লাগে নি। না, বইটি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের কোন বই নয়, নয় কোন ছদ্মবেশী পরিকল্পনাকারী অস্তিত্বের বিজ্ঞানময় প্রচার; বরং বইটি নিখাঁদ বিজ্ঞানের বইই, আর বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ যেন ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের এক ‘গ্রাণ্ড সমাধি’ রচনা করতে এসেছে! সে অর্থে বইয়ের শিরোনামটা আমার কাছে মজার এক কৌতুক বলেই শেষ পর্যন্ত ধরা দিয়েছে । অবশ্য গূঢ় বিষয় নিয়ে হকিং এর ‘অনর্থক’ কৌতুক করার ব্যাপারটি নতুন নয়। ব্যাপারটি যে কেবল আমারই চোখে পড়েছে তা নয়। বিষয়টি নজরে পড়েছে ক্যালিফোর্ণিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির স্বনামখ্যাত পদার্থবিদ এবং সুলেখক শন ক্যারলেরও। হকিং এর বইয়ের রিভিউ করতে গিয়ে সেজন্য ড.ক্যারল প্রথমেই লিখেছেন[1] –
‘[হকিং এর] বইয়ের শিরোনামে ‘ডিজাইন’ শব্দটির ব্যবহার লেখকের সেই চতুর কৌতুকপ্রিয় মননকে তুলে ধরেছে, যার সাথে আমরা ইতোমধ্যেই সম্যকভাবে অবহিত হয়ে গেছি। না, মহাবিশ্বের বিবিধ ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে লেখকের উত্তরের সাথে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন কিংবা ধর্মীয় মতবাদের কোনই সম্পর্ক নেই’।
হকিং -ম্লোডিনো তাদের বইটির প্রথম অধ্যায়ের নাম রেখেছেন ‘অস্তিত্বের রহস্য’। আমাদের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত অন্তিম সমস্ত প্রশ্নের পসরা সাজিয়ে অধ্যায়টি শুরু করেছেন তারা। অধ্যায়টি শুরু করেছেন এভাবে[2] (গ্রান্ড ডিজাইন,পৃষ্ঠা ৫) –
‘আমাদের প্রত্যেকের অস্তিত্বই খুবই কম সময়ের জন্য। আর এই ক্ষণিকের অস্তিত্বে এই মহাবিশ্বের খুব কম অংশই আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব। কিন্তু মানুষ স্বভাবে খুবই কৌতুহলী। সে জানতে চায়, সিমাবদ্ধ জীবনেও উত্তর খোঁজে। এই কোমল-কঠোর পৃথিবীর বুকে ক্ষণিকের জন্য জন্ম নিয়ে উপরের সুবিশাল মহাকাশ আর নক্ষত্রপুঞ্জ দেখে যুগে যুগে আমাদের মত মানুষ হাজারো প্রশ্ন করে গেছে – এই যে মহাবিশ্বে আমরা আছি একে বোঝার উপায় কী? এই মহাবিশ্বের আচরণ কেমন? বাস্তবতার প্রকৃতিই বা কেমন? সবকিছু কোথা থেকে এলো? মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে কি কোনো সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন আছে? আমাদের বেশির ভাগই এসব প্রশ্ন নিয়ে সারাক্ষণ মাথা ঘামায় না, কিন্তু প্রায় প্রত্যেকেই কখনো না কখনো এসব প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে’।
প্রথম অধ্যায় থেকে শুরু করে পুরো বইটি জুড়েই হকিং সেই সমস্ত কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেগেছেন যেগুলো আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত শুধু নয়, সাপ্রতিক সময়ে আধুনিক বিজ্ঞান এবং দর্শনের প্রান্তিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। যেমন,
– কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?
– কেনই বা আমাদের অস্তিত্ব আছে?
– কেন ভৌত সূত্রগুলো ঠিক এই সেটটাই আমরা দেখছি, অন্যরকম নয় কেন?
হকিং (এবং ম্লোডিনো) সার্থক পদার্থবিজ্ঞানীর চোখ দিয়ে সমস্যাগুলোকে দেখেছেন, এবং দাবী করেছেন এই প্রশ্নগুলো অতীতে দর্শনের কিংবা ধর্মশাস্ত্রের এখতিয়ারে বিবেচিত হলেও আজ সেটা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানেরই অণুসন্ধিৎসার অংশ। তারা দাবী করেছেন, আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যখ্যার মাধ্যমেই উপরের অন্তিম প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা পাওয়া যয় – কোন ধরণের ঐশ্বরিক কিংবা অপার্থিব প্রকল্পের আমদানী ছাড়াই।
হকিং তার বইটির নিয়মের নীতি (The rule of Law) শিরোনামের ২য় অধ্যায়টিতে পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র বলতে কি বোঝায়, কিভাবে সেগুলো উদ্ভুত হতে পারে তা নিয়ে বেশ কিছু অংশ জুড়ে প্রাঞ্জল আলোচনা করেছেন। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম বা সূত্রগুলো নিয়ে স্টিফেন হকিং এবং ম্লোডিনো যে সমস্ত প্রান্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন সেগুলো হল –
– নিয়মগুলো কিভাবে উদ্ভুত হল?
– নিয়মগুলোর কি কোন ব্যতিক্রম আছে?
– নিয়মগুলোর কি একটিই সম্ভাব্য সেট আছে?
নিঃসন্দেহে প্রতিটি প্রশ্নই পদার্থবিজ্ঞানের প্রান্তিক সমস্যাগুলোর অন্যতম। প্রাকৃতিক নিয়ম জিনিসটি কি তা বোঝাতে অধ্যায়টি শুরু করেছেন সূর্যগ্রহণ দিয়ে। প্রাচীন কালের মানুষেরা বহুদিন ধরেই সূর্যগ্রহণ ব্যাপারটার সাথে পরিচিত ছিলো। বছরের পর বছর দেখতে দেখতে তারা একসময় উপলব্ধি করেছিল যে, এই সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ এগুলো ইতস্ততভাবে ঘটে না, বরং ঘটে কিছু নিয়মে চলা ছক অনুসরণ করে। এভাবেই শুরু হয়েছিল মানুষের প্রাকৃতিক নিয়মকে বোঝার নিরন্তর প্রক্রিয়া। তারপর এসেছে থেলসের কথা – যিনি ২৬০০ বছর আগে ভাবতে পেরেছিলেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চলছে কিছু নিয়মের উপর ভর করে। থেলস ছাড়াও অধ্যায়টিতে ক্রমান্বয়ে এসেছে পিথাগোরাস, অ্যানাক্সিমেণ্ডার, এম্পিডিওক্লিস, হিপোক্রেটিস, অ্যানাক্সোগোরাস, ডিমোক্রিটাস, অ্যারিস্টাকাস সহ অন্যান্য অয়োনীয়দের ইতিহাসকথন। বিজ্ঞানী হকিং ইতিহাসের বিভিন্ন কালীক ঘটনাপ্রবাহকে সুসাহিত্যিকের মত বর্ণনা করে গেছেন, নিজেকে শুধু বিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তুলে এনেছেন অয়োনীয় সভ্যতার আলোকিত ইতিহাস, কখনো চলে গেছেন কেপলার, দেকার্তে, নিউটন, গ্যালিওর সময়ে, কখনোবা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অতি সাম্প্রতিককালের লব্ধ জ্ঞান থেকে বিজ্ঞানের ইতিহাসকে তুলে এনেছেন অনাবিল স্বাচ্ছন্দ্যে। আর এই অধ্যায়টি হয়ে উঠেছে বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অধ্যায়গুলোর একটি। অধ্যায়টি পড়তে পড়তে আমার কেন যেন জীবনান্দ দাসের সুচেতনা কবিতাটির দু’চরণ মাথায় প্রতিধ্বনি তুলছিলো অবিরাম –
‘আমাদের পিতা বুদ্ধ কনফুশিয়াসের মতো আমাদেরও প্রাণ
মূক করে রাখে; তবু চারিদকে রক্তক্লান্ত কাজের আহ্বান।
সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে — এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে;
সে অনেক শতাব্দীর মানষীর কাজ…’
আমার মতে, হকিং-ম্লোডিনোর এই বইয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং বিস্তৃত প্রেক্ষাপট হল আধুনিক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গভীর এবং সাবলীল ব্যাখ্যা। আর, এই ব্যাখ্যাগুলোকে সাধারণ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে কোন ধরণের গাণিতিক সমীকরণের ব্যবহার ছাড়াই। রিচার্ড ফেইনমেনের কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রচলিত নিয়ম (যেটিকে ফেইনমেন অভিহিত করতেন ইতিহাসের যোগ বা ‘sum over histories’ নামে) কে ব্যাখ্যা করেছেন বিস্তৃত পরিসরে। একটা মজার বিষয় এখানে না বললেই নয়। হকিং-ম্লোডিনোর এই বইয়ে ফেইনমেনকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে ক্যালটেকের একটি স্ট্রিপ ক্লাবের বঙ্গোবাদক হিসেবে, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী হিসেবে নয়। এটা অবশ্য ফেইনমেনকে খাটো করার জন্য নয়, বরং ফেইনমেনের ব্যতিক্রমী চরিত্র পাঠকদের সামনে তুলে ধরতেই এই কাজটি করেছেন কৌতুকপ্রিয় হকিং। সে যাই হোক, ফেইনমেন তার কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে গবেষণায় দেখিয়েছেন, একটি কণার কেবল একটি ইতিহাস থাকে না, থাকে বিভিন্ন সম্ভাব্য হিস্ট্রির সমাহার, অর্থাৎ গাণিতিকভাবে – অসংখ্য সম্ভাবণার অপেক্ষক। আমরা কণার দ্বিচিড় বা ডবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট থেকে ব্যাপারটার সত্যতা জেনেছি। ঠিক একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে হকিং দেখিয়েছেন যে, এই অদ্ভুতুরে ব্যাপারটা আমাদের মহাবিশ্বের জন্যও একইভাবে সত্য। মহাবিশ্বেরও কেবল একক ইতিহাস আছে মনে করলে ভুল হবে- কারণ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বও কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে কোয়ান্টাম স্তর থেকেই যাত্রা শুরু করেছে আর আমাদের মহাবিশ্বের নিয়মগুলো উদ্ভুত হয়েছে মহাবিস্ফোরণের ফলশ্রুতিতেই। আমি একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি তার বই থেকে (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ৮৩)–
‘আমরা দ্বিচিড় পরীক্ষার সাহায্যে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের একটা চিত্র তুলে ধরেছি। আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই ফাইনম্যানীয় সূত্রায়ণই পুরো মহাবিশ্বের উপর প্রয়োগ করে আমরা দেখবো যে, একটা কণিকার মতো, এই মহাবিশ্বেরও কোনো একক ইতিহাস নেই, বরং রয়েছে সম্ভাব্য সকল ইতিহাস। ইতিহাসগুলোর প্রতিটির নির্দিষ্ট সম্ভাব্যতা আছে। এবং মহাবিশ্বের বর্তমান অবস্থার উপর আমাদের করা পর্যবেক্ষণ, তার অতীতকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে, এই ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাসকে নির্ধারণ করে। ঠিক যেমনটা ঘটে দ্বিচিড় পরীক্ষাতে যেখানে বর্তমানের পর্যবেক্ষণ কণিকাটির অতীকেও প্রভাবিত করে। আর এসব বিশ্লেষণের মাধ্যমেই আমরা দেখতে পাবো বিগব্যাং-এর মাধ্যমে কীভাবে মহাবিশ্বের প্রকৃতির সূত্রগুলোর উদ্ভব হয়েছে…’
শূণ্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভবের ধারণাটি অবশ্য নতুন কিছু ছিলো না। বেশ কিছুদিন ধরেই এটি পদার্থবিজ্ঞানের মূলধারার গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিজ্ঞানীরা একে বিবেচনা করছেন। আমি আমার প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫) বইটিতে তথাকথিত শূন্য থেকে কিভাবে জড় কণিকা সৃষ্টি হয় তা নিয়ে বিশদভাবে বাঙ্গালী পাঠকদের জন্য আলোচনা করেছিলাম[3]। আসলে খুব কম কথায় বললে, কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী শূন্যতাকে আনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। শূন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শূন্য নয়- পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে যে শূন্যদেশকে আপাতঃ দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থকণা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তৈরী হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে। যেমন, শূন্যাবস্থা থেকে সামান্য সময়ের ঝলকানির মধ্যে ইলেকটন এবং পজিটন (পদার্থ-প্রতি পদার্থ যুগল) থেকে পদার্থ তৈরী হয়েই আবার তা শূন্যতায় মিলিয়ে যেতে পারে। এই ইলেকট্রন এবং পজিট্রনের মধ্যকার ব্যবধান থাকে ১০-১০ সেন্টিমিটারেরও কম, এবং পুরো ব্যাপারটার স্থায়িত্বকাল মাত্র ১০-২১ সেকেণ্ড[4]। ব্যাপারটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’। ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন কোন রূপকথা নয়, নয় কেবল গানিতিক বিমূর্ত মতবাদ; বিজ্ঞানীরা কিন্তু ব্যবহারিকভাবেই এর প্রমাণ পেয়েছেন। একটি প্রমাণ হচ্ছে ‘ল্যাম্ব শিফট’, যা আহিত পরমাণুর মধ্যস্থিত দুটো স্তরে শক্তির তারতম্য প্রকাশ করে। তবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের সবচেয়ে জোরদার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিখ্যাত ‘কাসিমিরের প্রভাব’ থেকে । ১৯৪৮ সালে ডাচ পদার্থবিদ হেনরিখ কাসিমির বলেছিলেন, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সত্যি হয়ে থাকলে দুটো ধাতব পাত খুব কাছাকাছি আনা হলে দেখা যাবে তারা একে অন্যকে ধীরে ধীরে আকর্ষণ করেছে। এর কারণ হচ্ছে, ধাতব পাত গুলোর মধ্যকার সঙ্কীর্ণ স্থানটিতে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের তড়িচ্চুম্বকীয় ‘মোড’-এর উদ্ভব ঘটে যা ধাতব পাতগুলোকে একে অপরের দিকে আকর্ষণে বাধ্য করে। এ ব্যাপারটিই পরবর্তীতে মার্কস স্প্যার্ণে, স্টিভ লেমোরাক্স প্রমুখ বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়।
চিত্রঃ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যে শূন্যদেশকে আপাতঃ দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থকণা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তৈরী হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়াটির মূলে রয়েছে ‘রহস্যময়’ কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা তথাকথিত ‘জিরো পয়েন্ট এনার্জি’। এ প্রক্রিয়ায় পদার্থ ও প্রতিপদার্থ যুগলের আকারে যে অসদ কণিকা (virtual particle) প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে তা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব অনুযায়ী প্লাঙ্ক ধ্রুবকের পরিসীমার মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা আজ মনে করেন, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ‘রহস্যময়’ ব্যপারগুলো কণার ক্ষেত্রে যেমনিভাবে সত্য, ঠিক তেমনি ভাবে মহাবিশ্বের জন্যও একইরকমভাবে সত্য হতে পারে। তারা মনে করেন এক সুদূর অতীতে কারণবিহীন কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের (Quantum Flactuation) মধ্য দিয়ে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিলো, যা পরবর্তীতে সৃষ্ট মহাবিশ্বকে স্ফীতির (Inflation) দিকে ঠেলে দিয়েছে, এবং আরো পরে পদার্থ আর কাঠামো তৈরির পথ সুগম করেছে। এগুলো কোন বানানো গল্প নয়। মহাবিশ্ব যে শূন্য থেকে উৎপন্ন হতে পারে প্রথম এ ধারণাটি ব্যক্ত করেছিলেন এডওয়ার্ড ট্রিয়ন ১৯৭৩ সালে ‘নেচার’ নামক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জার্নালে[5]। এর পর আশির দশকে স্ফীতি তত্ত্বের আবির্ভাবের পর থেকেই বহু বিজ্ঞানী প্রাথমিক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশরে ধারণাকে স্ফীতি তত্ত্বের সাথে জুড়ে দিয়ে মডেল বা প্রতিরূপ নির্মাণ করেছেন[6]। শূন্য থেকে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির ধারণা যদি অবৈজ্ঞানিক এবং ভ্রান্তই হত, তবে সেগুলো প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাময়িকী (Scientific Journal) গুলোতে কখনই প্রকাশিত হত না। মূলতঃ স্ফীতি-তত্ত্বকে সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে, এবং প্রায় সবগুলোতেই এই তত্ত্ব অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছে[7]। স্ফীতি তত্ত্ব গ্যালাক্সির ক্লাস্টারিং, এক্স রশ্মি এবং অবলোহিত তেজস্ক্রিয়তার বিন্যাস, মহাবিশ্বের প্রসারণের হার এবং এর বয়স, মহাবিশ্ব গঠনে এর উপাদান গুলোর প্রাচুর্য – সব কিছুই ব্যাখ্যা করতে পেরেছে নিখুঁত সৌন্দর্যে। আমি এর কারিগরী দিকগুলো নিয়ে বিস্তৃতভাবে মুক্তমনায় একটা লেখা লিখেছিলাম বাংলায় -‘স্ফীতি তত্ত্ব এবং মহাবিশ্বের উদ্ভব’ শিরোনামে[8]। সম্প্রতি রায়হান আবীরও মুক্তমনায় প্রাকৃতিক উপায়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে ততোধিক সুন্দর একটা প্রবন্ধ লিখেছেন – ‘নির্ধর্মকথাঃ ইন দ্য বিগিনিং …‘ শিরোনামে[9]। প্রবন্ধগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে কীভাবে মহাবিশ্বের সূচনা হতে পারে তার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা ছাড়াও এর অস্তিত্বের পেছনে একটি আদি ঐশ্বরিক কারণের খণ্ডন, স্বতস্ফুর্তভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে কোন মিরাকলের খণ্ডন ছাড়াও পদার্থের উৎপত্তি এবং শৃঙ্খলার সূচনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। হকিং অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি, আরো বহুদূর এগিয়ে গিয়ে স্ট্রিংতাত্ত্বিকদের দেয়া ‘এম থিওরী’র সাথে ফ্লাকচুয়েশনের একটি যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। এই সেই ‘এম তত্ত্ব’- যে তত্ত্ব থেকে আমরা জেনেছি যে, আমাদের এই চিরপরিচিত বিশাল মহাবিশ্বের বাইরেও এমনি ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এবং বলাবাহুল্য এগুলোর সবগুলোই উদ্ভুত হয়েছে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে স্বতস্ফুর্তভাবে। এটিই হচ্ছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মালটিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা।
চিত্রঃ হকিং এর মতে, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমেই অসংখ্য মহাবিশ্ব স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়েছে, এদের মধ্যে কোন কোনটি হয়তো ক্রান্তীয় আকারে পৌঁছুতে পেরেছে, এবং তারপর অতিস্ফীতিয় প্রসারণে ক্রমান্বয়ে ছায়াপথ, তারকামণ্ডলী – এবং নিদেন পক্ষে অন্ততঃ একটি ক্ষেত্রে আমাদের গ্রহের মতো পরিবেশে জীবনের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
অনন্ত মহাবিশ্ব সম্বন্ধে হকিং এর নিজের বক্তব্যই উদ্ধৃত করা যাক বই থেকে (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ৮)-
‘এম তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের মহাবিশ্বই কেবল একটি মাত্র মহাবিশ্ব নয়। বরং এম তত্ত্ব ভবিষ্যদ্বানী করছে যে, অগণিত মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছে স্রেফ শূন্য থেকে। আর এর পেছনে ঈশ্বর কিংবা এ ধরণের কোন অপ্রাকৃত সত্ত্বার হস্তক্ষেপের দরকার নেই।’
শুধু অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা পাঠকদের সামনে হাজির করেই ক্ষান্ত হননি হকিং, পাশাপাশি গণনা করে দেখিয়েছেন ‘অসংখ্য মহাবিশ্বের’ সম্ভাব্য সংখ্যাও। সে সমস্ত ভিন্ন মহাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের ধরণও ভিন্ন হতে পারে বলে হকিং মনে করেন। তার মতে (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ১১৮),
‘এম তত্ত্বের নিয়মগুলো তাই ভিন্ন ভিন্ন মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ধারণাকে সম্ভাব্য করে তুলে। মহাবিশ্বগুলোর প্রকৃতি কীরকম হবে তা নির্ভর করবে অন্তঃস্থানের (internal space) বক্রতার প্রকৃতির উপর। কাজেই, এম তত্ত্ব থেকে পাওয়া সমাধান অসংখ্য মহাবিশ্ব থাকার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তার সংখ্যা হতে পারে এমনকি ১০৫০০ টিও। এর মানে হল, আমাদের চারপাশে ১০৫০০ টির মতো মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, এবং প্রতিটির উপর কাজ করতে পারে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সূত্র।’
ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও বিজ্ঞানীরা আজ মনে করছেন, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান যখন একেবারে শূন্য থেকে কেবল একটি নয়, অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টির একটি প্রাকৃতিক এবং যৌক্তিক সমাধান দিতে পারছে, তখন ঈশ্বর সম্ভবত একটি ‘বাড়তি হাইপোথিসিস’ ছাড়া আর কিছু নয়। বিজ্ঞানী ভিক্টর স্টেঙ্গর, লরেন্স ক্রাউস, এলেন গুথ, আদ্রে লিন্ডেরা সেটা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন[10] । হকিংও শেষপর্যন্ত সেই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন – ‘গড হাইপোথিসিস’ বা ‘ঈশ্বর অনুকল্প’ মোটা দাগে অক্কামের ক্ষুরের পরিস্কার লংঘন। তিনি নিজেই সেটা বলেছেন বইয়ের সবচেয়ে আলোচিত উদ্ধৃতিটির মাধ্যমে –
‘It is not necessary to invoke God to light the blue touch paper and set the universe going’
স্টিফেন হকিং এর বক্তব্য মিডিয়ায় তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে বলাই বাহুল্য । এই লাগাতার বিতর্কের সূচনা হয়েছিলো তার বই বেরুবার দিন এক সপ্তাহ আগে থেকেই। লণ্ডনের টাইমস পত্রিকা তার প্রকাশিতব্য নতুন বইটি ফিচার করতে গিয়ে বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশ করে সেপ্টেম্বর মাসের দুই তারিখে। হ্যানা ডেভলিনের রিপোর্টে প্রকাশিত টাইমসের সেই নিবন্ধের শিরোনাম ছিলো – ‘God did not create the universe, says hawking’[11]। সেখান থেকেই নতুন বইয়ে বিধৃত ঈশ্বর সম্বন্ধে হকিং এর পরিবর্তিত ধারণা পাঠকদের সামনে উঠে আসে। টাইমসে প্রকাশিত সেই অংশবিশেষে হকিংকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছিলো -বিগ ব্যাং কোন স্বর্গীয় হাতের ফসল কিংবা ফ্লুক ছিলো না। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই প্রাকৃতিকভাবে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে অনিবার্যভাবেই শূন্য থেকে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হয়েছে; আর সেই সাথে ফুঁরিয়েছে মহাবিশ্ব তৈরির পেছনে ঈশ্বরের ভুমিকাও।
চিত্র: ‘ঈশ্বর মহাবিশ্ব তৈরি করেনি’ –২রা সেপ্টেম্বর লণ্ডন টাইমসে প্রকাশিত কলামের শিরোনাম।
ধার্মিকরা স্বভাবতই আশাহত হয়ে গালির তুবড়ি ছুটিয়ে চলেছেন খবরটি প্রকাশের পর থেকেই। পাদ্রী সন্ন্যাসী ঠাকুর পুরুতেরা একজোট হয়ে স্টেটমেন্ট দিতে শুরু করেছিলেন তাদের মহাপতন ঠেকাতে। তারা বলছেন, মহাবিশ্ব কিভাবে শূন্য থেকে তৈরি হতে পারে বিজ্ঞান না হয় এখন তা ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু কেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি – তা নাকি বিজ্ঞান বলতে পারে না। আর অবধারিতভাবেই তাদের কাছে একটাই উত্তর – ‘ঈশ্বর’! কিন্তু কোন্ ঈশ্বর? যথারীতি মুসলিমরা দাবী করছে ইসলামিক ঈশ্বর আল্লহার, খ্রীস্টানেরা দাবী করছে বাইবেলীয় ঈশ্বর যীশুর, আর ইহুদীরা দাবী করছে জেহোভার। এই হচ্ছে তাদের হকিং এর বিরুদ্ধে ‘একজোট’ হবার নমুনা। নীচের কার্টুনটি থেকে ব্যাপারটি আরো পরিস্কার হবে-
চিত্র: কার্টুন – ‘মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই’ – হকিং এর এই উক্তির বিরুদ্ধে ধর্মবাদীরা একজোট!
হকিং এর বইটি নিয়ে লণ্ডন টাইমসের নিবন্ধটির পর আমি মুক্তমনায় কৌতুক করে লিখেছিলাম যে, এপলোজিস্টদের জন্য খারাপ খবরের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। প্রতিদিনই একটা করে নতুন বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ঘটে, আর ধার্মিকদের ‘গড’ এর আকার আরো সংকুচিত হয়ে পড়ে। উইলিয়াম প্যালে ১৮০২ সালে প্রকাশিত বই ‘Natural Theology, or Evidence of Existence and Attributes of the Deity, collected from the Appearences of Nature’ এর মাধ্যমে যে ‘ডিজাইন আর্গুমেন্ট’ বা সৃষ্টির পরিকল্পিত যুক্তির অবতারণা করেছিলেন ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব এসে সেই ডিজাইন আর্গুমেন্টকে বাতিল করে দিয়েছিলো সত্তুর বছরের মধ্যেই। তারপর যত দিন গেছে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ইতিহাস মানে জ্ঞানের ফাঁক-ফোঁকর থেকে ঈশ্বরকে হটানোরই ইতিহাস – ‘গড ইন গ্যাপ্স’ এবং ‘আর্গুমেণ্ট ফ্রম ইগনোরেন্স’ থেকে মুক্তির প্রচেষ্টাই বলা যায়। এ বছর (২০১০) ক্রেগ ভেন্টর তার গবেষণায় দেখিয়েছেন কৃত্রিমভাবে প্রাণের সৃষ্টি করাও আজ আর বিজ্ঞানীদের আয়ত্বের বাইরে নয়। ভেন্টর প্রাথমিকভাবে ইস্ট থেকে ক্রোমোজমের বিভিন্ন মাল মশলা সংগ্রহ করেছিলেন, আর ক্রোমজমের পূর্ণাঙ্গ রূপটি কম্পিউটারে সিমুলেশন করে বানিয়েছিলেন Mycoplasma mycoides নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার জিনোমের অনুকরণে[12]। ক্রেগ ভেন্টরের এই ঐতিহাসিক আবিস্কারের পর পরই আমি মুক্তমনায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম ‘অবশেষে মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠা : তৈরি হল প্রথম কৃত্রিম প্রাণ’ শিরোনামে[13]। ডারউইন থেকে শুরু করে আজকের ডকিন্সের ক্রমিক প্রচেষ্টায় জীববিজ্ঞানের কাঠামো থেকে ঈশ্বর হটে গেলেও ঈশ্বর সাহেব একটা অন্ধকার গুহা খুঁজে পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের তথাকথিত ফাইনটিউনিং, এন্থ্রোপিক আর্গুমেন্ট এবং সর্বোপরি হকিং এর ‘মাইণ্ড অব গড’ -এর মধ্যে। বড়ই দুর্ভাগ্য, সেখান থেকেও ঈশ্বরকে ক্রমশঃ হটে যেতে হচ্ছে। সেজন্যই লণ্ডন টাইমসে লেখা হয়েছে[14] –
‘আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ঈশ্বরের জন্য কোন জায়গা আর খালি রাখেনি, স্টিফেন হকিং এর উপসংহার এটাই। যে ভাবে ডারউইনবাদ জীববিজ্ঞানের চৌহদ্দি থেকে ঈশ্বরকে সরিয়ে দিয়েছে, ব্রিটেনের সবচেয়ে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ঠিক সেরকমভাবেই মনে করেন, পদার্থবিজ্ঞানের নতুন তত্ত্বগুলো ঈশ্বরের ভূমিকাকে অপাংক্তেয় করে তুলেছে।’
‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ বইটি প্রকাশের কিছুদিন আগে এবিসি নিউজের একটি সাক্ষাৎকারে স্টিফেন হকিংকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো ধর্মান্ধতা আর বিজ্ঞানের এই লাগাতার সংঘাতে কে জয়ী হবে? হকিং এর দ্বিধাহীন উত্তর ছিল – ‘সায়েন্স উইল উইন’! হকিং সেই সাক্ষাৎকারে পরিস্কার করেই বলেছেন,
‘ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে একটি পরিস্কার জায়গায় পার্থক্য আছে। ধর্ম মূলতঃ ঐশী -বানী আর রিলিজিয়াস অথরিটির উপরই নির্ভরশীল , সেখানে বিজ্ঞান নির্ভর করে যুক্তি আর প্রমাণে। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানই জয়ী হবে, কারণ বিজ্ঞানের এই পদ্ধটিটাই উৎকৃষ্ট বলে প্রমাণিত হয়েছে’।
বইটি প্রকাশের পর পর ল্যারি কিং লাইভেও সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হকিং। সেখানে তাকে ধর্ম ও বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা করা হলে একই ধরণের উত্তর দেন হকিং[15]-
‘বিজ্ঞান ক্রমশঃ সেই সকল প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে শুরু করেছে, যা এতোদিন কেবল ধর্মের এখতিয়ারে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। বিজ্ঞান নিজেই আজ সয়ংসম্পূর্ণ।ধর্মতত্ত্বের প্রয়োজন তাই ফুঁরিয়েছে’।
হকিং-এর এ উত্তর পেয়ে ল্যারি পুনরায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন –
– ‘তাহলে কি ঈশ্বর নেই?’
– ‘হয়তো থাকতে পারেন, কিন্তু মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে তার কোন ভুমিকা নেই।’ – এই ছিলো স্টিফেন হকিং এর উত্তর!
নিঃসন্দেহে স্টিফেন হকিং এর এ এক সাহসী পদযাত্রা। আর সে হিসেবে ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ আবির্ভূত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম উচ্চাভিলাসী একটি গ্রন্থ হিসেবে।
স্টিফেন হকিং শুধু প্রথাগত ধর্মতত্ত্বেরই নয়, মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথাগত দর্শনেরও। তিনি বইয়ের শুরুতেই তার পাঠকদের ধাক্কা দিয়েছেন এই বলে (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ৫) –
‘ফিলোসফি ইজ ডেড’ ।
এটি হকিং-ম্লোডিনোর বইয়ের আরেকটি স্মরণীয় এবং আলোচিত উদ্ধৃতি। লেখকদের মতে, দার্শিনিকেরা নন, বরং বিজ্ঞানীরাই আজ গহীন আঁধারে উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। আজকের দিনে কয়েকজন বিখ্যাত বিজ্ঞানের দার্শনিকের নাম বলতে বললে হকিং, ওয়াইনবার্গ, ভিক্টর স্টেঙ্গর, ডকিন্স -এদের কথা সবার আগেই চলে আসে। এরা কেউ কিন্তু প্রথাগত দার্শনিক নন, তবুও দর্শনগত বিষয়ে তাদের অভিমত ইদানিং যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠেছে। একটা সময় দর্শন ছিল জ্ঞান চর্চার মধ্যমনি। প্রাকৃতবিজ্ঞান ছিল তার সহচরী। এখন দিন বদলেছে – বিশ্বতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব এমনকি অধিবিদ্যার জগতেও প্রাকৃতবিজ্ঞান বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা শুধু প্রবেশ করেনি, দর্শনকে প্রায় স্থানচ্যুত করে দিয়েছে। অধিবিদ্যা জানতে হলে তো এখন আর ‘স্পেশাল’ কোন জ্ঞান লাগে না। কেবল ধর্মের ইতিহাস, নন্দনতত্ত্ব আর ভাষার মধ্যে আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোন পথ পায়নি আধুনিক অধিবিদ্যা। অন্যদিকে, আধুনিক পদার্থবিদ্যা আজকে যে জায়গায় পৌছেছে – সেটি অধিবিদ্যার অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে। মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর পরিণতি নিয়ে একজন দার্শনিকের চেয়ে অনেক শুদ্ধভাবে বক্তব্য রাখতে সক্ষম হবেন একজন হকিং কিংবা ওয়াইনবার্গ। ডিজাইন আর্গুমেন্ট নিয়ে অধিবিদ্যা জানা পন্ডিতের চেয়ে বিজ্ঞান থেকেই অনেক ভাল দৃষ্টান্ত দিতে পারবেন ডকিন্স বা শন ক্যারল। আজকে সেজন্য মহাবিশ্ব এবং এর দর্শন নিয়ে যে কোন আলোচনাতেই পদার্থবিজ্ঞানীদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়, এরিস্টটলের ইতিহাস কপচানো কোন দার্শনিককে কিংবা সনাতন ধর্ম জানা কোন হেড পন্ডিতকে নয়। মানুষও বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে নানা রকমের দর্শনের কথা শুনতে চায়, তাদের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। গ্রান্ড ডিজাইন বইয়েও ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে – সনাতন দর্শনের প্রয়োজন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, আর তার স্থান নিতে চলেছে আধুনিক বিজ্ঞান! হকিং তার বইয়ে সরাসরি অভিমত ব্যক্ত করেন দর্শন এবং আধুনিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে এভাবে (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ৫) –
‘আগে আমাদের এবং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সাথে জড়িত প্রশ্নগুলো কেবল দর্শনশাস্ত্রের সমস্যা হিসেবে গন্য হত। কিন্তু দর্শনের মৃত্যু হয়েছে।দর্শনশাস্ত্র বিজ্ঞানের বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সমানে পাল্লা দিয়ে চলতে পারেনি। আজকে বিজ্ঞানীরাই বরং নতুন জ্ঞানের অন্বেষণে সফল পথপ্রদর্শক’।
হকিং-এর উক্তির বাস্তব প্রতিফলন আমরা পাই জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখকদের পরিসংখ্যানেই। আজকে বিজ্ঞানের দর্শনের উপর লেখা সাম্প্রতিক বই গুলো, যেমন – ‘গড – দ্য ফেইল্ড হাইপোথিসিস’, ‘গড ডিলুশন’, ‘নিউ এথিজম’, ‘মাইণ্ড অব গড’ থেকে শুরু করে ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন’ -এর মত বইগুলো লিখছেন ভিক্টর স্টেঙ্গর, রিচার্ড ডকিন্স, পল ডেভিস কিংবা স্টিফেন হকিং-এর মতো বিজ্ঞানীরাই। এ থেকেই সাম্প্রতিক ধারাটি উপলব্ধি করা যায় কিন্তু। এরিস্টটল, সক্রেটিস, স্পিনোজা কান্ট, রাসেলের ঐতিহ্যের কি দুঃখজনক পরিনাম, ভাবা যায়? [16]
সম্পূর্ণ বইটি পড়লে পাঠকেরা আরো দেখবেন, ‘দর্শনের মৃত্যু ঘটেছে’ বলে বইটি শুরু করলেও, দর্শন নিয়েই লেখকেরা কথা বলেছেন বইটির অধিকাংশ জায়গায়। সাদা চোখে ব্যাপারটা স্ববিরোধী মনে হতে পারে। আসলে তা নয়। স্টিফেন হকিং দর্শনের সমস্যাগুলোকে দেখতে চেয়েছেন একজন পদার্থবিজ্ঞানীর চোখ দিয়ে। আগেই বলেছি, তার মতো পদার্থবিজ্ঞানীরাই আজকের দিনের বিজ্ঞানের দর্শনিক। স্টিফেন হকিং চিন্তার ঝাঁকুনি দিয়েছেন দর্শনের অনেক বিষয়েই, পদার্থবিজ্ঞান থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক জ্ঞানের নিরিখে। তার মধ্যে একটি প্রচণ্ড আলোচিত বিষয় হলো – বাস্তবতা বা রিয়ালিটির ধারণা। হকিং-এর মতে আলাদা ভাবে বাস্তবতা কী, সেটা বলার কোন অর্থ হয় না; আমরা যেটা বলতে পারি সেটা হল প্রতিরূপ-কেন্দ্রিক বাস্তবতা (Model dependent realism)। হকিং তার বইয়ে গোল্ডফিশ মাছের একটি মজার উদাহরণ দিয়েছেন। ধরুণ, আপনার বাড়ীর কাঁচের জারে একটি গোল্ডফিশ আছে। গোল্ডফিশ জারের পানির মধ্যে আজীবন থেকে তার চোখ দিয়ে পৃথিবীর বা চারপাশের যে বাস্তবতা দেখছে, আপনার বাস্তবতা তা থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু আপনি কি হলফ করে বলতে পারবেন যে আপনার দেখা বাস্তবতাই ‘প্রকৃত বাস্তবতা’? আমরাও যে গ্লাসের জারে রাখা গোল্ডফিশের মতো করেই এক-একটি গোল্ডফিশ নই, সে সম্বন্ধে কি আমরা নিশ্চিত?
চিত্রঃ কাঁচের জারে রাখা একটি গোল্ডফিশ আজীবন থেকে তার চোখ দিয়ে পৃথিবীর বা চারপাশের যে বাস্তবতা দেখছে, আমাদের বাস্তবতা তা থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু আমরাও শেষ বিচারে যে গ্লাসের জারে রাখা গোল্ডফিশের মতো এক-একটি গোল্ডফিশ নই, সে সম্বন্ধে কি আমরা নিশ্চিত?
একটি ব্যাপার এখানে বুঝতে হবে। যে বাস্তবতাই হোক, আমরা কিন্তু শেষপর্যন্ত তা অনুধাবন করি আমাদের মস্তিস্ক কোষের সাহায্যে। আর মানব মস্তিস্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায়। মস্তিস্ককে যদি বিবর্তনীয় পথে সৃষ্ট একটি তথ্য-প্রক্রিয়াজাত যন্ত্র হয়ে থাকে, স্বাভাবিক নিয়মেই সেই যন্ত্রের কিছু ত্রুটি থাকে যাবে (যেরকম ত্রুটি অন্য সব যন্ত্রেরই থাকে)। এই ত্রুটিযুক্ত জৈবিক যন্ত্রের সাহায্যে পরিপূর্ণ বাস্তবতার আস্বাদন কি সম্ভব? হয়তো নয়। কাজেই প্রকৃত বাস্তবতার সন্ধান আমরা হয়তো কখনোই পাব না। আসলে প্রকৃত বাস্তবতাটা কী – সেটা বলারই কোন অর্থ হয় না। যেটা আমরা বলতে পারি – মডেল বা প্রতিরূপ নির্ভরশীল বাস্তবতা। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে – এম থিওরী যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে বাস্তবতা আসলে একটি নয়, অনেকগুলো – এবং অনেক সময়ই তা পরিস্থিতি নির্ভর হতে পারে। তিনি তার বইয়ে বাস্তবতা প্রসঙ্গে বলেন (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ৪২),
‘কোনো চিত্র- বা তত্ত্ব-অনির্ভর বাস্তবতার অস্তিত্ব নেই। আমরা বাস্তবতার যে ধারণাটা গ্রহণ করব সেটাকে বলব প্রতিরূপনির্ভর বাস্তবতা: এ ধারণা অনুযায়ী ভৌত তত্ত্ব এবং বিশ্বচিত্র হচ্ছে একধরনের প্রতিরূপ (সাধারণতঃ গাণিতিক) যেখানে একগুচ্ছ নিয়ম এ কাঠামোর বিভিন্ন অংশের সাথে পর্যবেক্ষণের একটি যোগসূত্র তৈরি করে। এই প্রতিরূপকেন্দ্রিক বাস্তবতাই হচ্ছে সেই কাঠামো যার সাহায্যে আধুনিক বিজ্ঞানকে বোঝা যায়।’
স্টিফেন হকিং আমাদের জোরালো একটি ধাক্কা দিয়েছেন ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ নিয়েও। হকিং তার বইয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের উদ্ভব নিয়ে ভেবেছেন আমরা আগেই বলেছি, কিন্তু তার ভাবনাকে তিনি সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি বলেছেন, এমনকি আমাদের চিন্তাচেতানাও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের বাইরে নয়। তাই তিনি ‘স্বাধীন ইচ্ছে’ নিয়ে প্রশ্ন করেন অত্যন্ত যৌক্তিক ভাবেই [17]-
‘মানুষ কি স্বাধীন ইচ্ছা করতে সক্ষম? আমাদের যদি মুক্তইচ্ছা থেকেই থাকে তাহলে বিবর্তনের ঠিক কোন ধাপে সেটার উদ্ভব হয়েছে? নীল-সবুজ শৈবাল বা ব্যাক্টেরিয়াদের কি মুক্তইচ্ছা আছে, নাকি তাদের আচরণ সয়ংক্রিয়, বৈজ্ঞানিক ভাবে সূত্রবদ্ধ? শুধু বহুকোষী জীবেরই কি মুক্তইচ্ছা আছে, নাকি শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের? আমরা ভাবতে পারি যে একটা শিম্পাঞ্জি হয়তো নিজের স্বাধীন ইচ্ছাতেই কলাটা চিবাচ্ছে, বা বিড়ালটা সোফা ছিড়ে কুটিকুটি করছে, কিন্তু তাহলে Caenorhabidis elegans নামক গোলকৃমির কথা কী বলব,যেটা শুধু মাত্র ৯৫৯টা কোষ দিয়ে গঠিত? সে নিশ্চই কখনো ভাবে না, “ওই যে, ওই মজার ব্যাকটেরিয়াটা আমি এখন মচমচিয়ে খাবো”, কিন্তু দেখা যায় এমনকি তারও নির্দিষ্ট পছন্দ-অপছন্দ আছে এবং নিকটবর্তী অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে সে হয় কোনো অনাকর্ষণীয় খাবারেই সন্তুষ্ট হয়, অথবা ছুটে যায় আরো ভালো কিছুর দিকে। এটা কি মুক্তইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ?’
মানব মস্তিস্ক তৈরি হয়েছে বিবর্তনের এবং সর্বোপরি পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকে মেনেই। কাজেই আমরা চাই বা না চাই, আমাদের চিন্তাও সেই পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের মাঝেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে,আমরা তা চেষ্টা করলেও অতিক্রম করতে পারব না। সে হিসেবে ‘মুক্তচিন্তা’ বা ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ ব্যাপারটা এক ধরণের বিভ্রম বা ইল্যুশন- অন্ততঃ হকিং এর তাই অভিমত। তাই তিনি বলেন –
‘যদিও আমরা ভাবি যে আমাদের মুক্ত ইচ্ছার ক্ষমতা আছে তারপরও আনবিক জীববিদ্যার জ্ঞান থেকে জানা যায় সকল জৈব প্রক্রিয়াই পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়ণের সূত্রাবলি মেনে চলে, তাই তারা ঠিক ততটাই সুনির্ধারিত যতটা সুনির্ধারিত গ্রহসমূহের কক্ষপথ। স্নায়ুবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণাসমূহ এই ধারণাকেই সমর্থন করে যে আমাদের মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের পরিচিত সূত্রগুলো মেনেই কাজ করে, এবং আমাদের সব ধরণের কর্মকান্ড নির্ধারণ করে, প্রকৃতির নিয়মের বাইরের কোনো অপ্রাকৃত কোন কিছুর হাতে এই নিয়ন্ত্রণ নেই। জাগ্রত অবস্থায় রোগীর মস্তিষ্কে অপারেশন করার সময় এটা দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বৈদ্যুতিক ভাবে উদ্দীপ্ত করে রোগীর মধ্যে হাত-পা নাড়ানোর, ঠোট নাড়ানোর, এমনকি কথা বলার আকাংক্ষা সৃষ্টি করা সম্ভব। আমাদের সকল আচরণ যদি ভৌত বিধিগুলো দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে তাহলে এখানে স্বাধীন ইচ্ছার অবস্থান কোথায় সে চিন্তা করা দুষ্কর। তাই দেখা যাচ্ছে আমরা কিছু জৈব যন্ত্র ছাড়া কিছুই নই, এবং ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ শুধুই একটা বিভ্রম’।
‘স্বাধীন ইচ্ছা’ শুধুই একটা বিভ্রম – তার এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে অনেক বিতর্কের জন্ম দেবে, শুধু ধার্মিকদের মধ্যেই নয়, পাশাপাশি অনেক মুক্তচিন্তকদের মাঝেও; কিন্তু আমার মতে, এই শক্তিশালী অভিব্যক্তিটি বইটিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। দার্শনিক অভিব্যক্তিটি হল, আমাদের মস্তিস্ক যদি পদার্থবিজ্ঞানের এবং বিবর্তনের নিয়মকে মেনেই তৈরি হয় তবে, আমরা দূর্ভাগ্যবশতঃ সেই নিয়মের ‘কারাগারেই’ বন্দি থাকব, যদিও আমরা সব সময়েই মনে করে যাব আমাদের ‘ফ্রি-উইল’ বা ‘স্বাধীন ইচ্ছে’ জাতীয় কিছু আছে। চিড়িয়াখানায় বা গাছের ডালে যে বানরকে কলা খেতে দেখা যায় – সেটা আমরা ভাবতে পারি এই বলে যে, স্বাধীন ইচ্ছার জন্যই বানরটি কলা খাচ্ছে – কিন্তু একটু গভীর ভাবে ভাবলেই বোঝা যাবে যে বানরটি কলা খাচ্ছে আসলে প্রবৃত্তির বশে – যে প্রবৃত্তি জৈব বিবর্তনীয় পথেই উদ্ভুত হয়েছে – পদার্থবিজ্ঞানের প্রান্তিক নিয়মগুলো মেনেই। মানুষও সেই ধারার ব্যতিক্রম নয়। মানুষের বিভিন্ন কাজও কিন্তু জৈব বিবর্তনিয় নিয়ম বা শেষ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই হচ্ছে। স্বাধীন ইচ্ছা বলতে যদি দেহ বহির্ভূত কার্যকারণহীন কোন ক্ষমতাকে বোঝানো হয় – অর্থাৎ, একজন মানুষ কোন কিছুর দ্বারা একেবারেই প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে ‘স্বাধীন ভাবে’ কোন কাজ করতে সক্ষম বলে ভাবা হয় – সেটা আসলে ধার্মিকদের আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসকেই ঘুরিয়ে বলা হবে[18]। বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন লিবেট আশির দশকে একটি কৌতুহলোদ্দীপক পরীক্ষার মাধ্যমে[19] দেখিয়েছিলেন যে ফ্রি উইল আসলে একটি বিভ্রান্তি বই কিছু নয়[20]। স্নায়ুবিজ্ঞানের অতি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকেও কিন্তু এই ধারণার স্বপক্ষে নানা সত্যতা পাওয়া গেছে। যেমন, ২০০৮ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, কোন ব্যক্তি সচেতন হবার বা এ সম্বন্ধে কিছু বুঝে উঠার অন্ততঃ ১০ সেকেণ্ড আগে থেকেই তার মস্তিস্ক কোন কাজ করে ফেলতে পারে[21]। ব্যাপারটা সত্য হয়ে থাকলে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা ব্যাপারটি সত্যই এক ধরণের বিভ্রম, কিন্তু নিঃসন্দেহে খুব শক্তিশালী বিভ্রম! বস্তুতঃ ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ নিয়ে গ্র্যাণ্ড ডিজাইন বইয়ে হকিং-এর গোছানো চিন্তাভাবনাগুলো মানব মস্তিস্ক নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণারই প্রতিধ্বনি যেন।
গ্র্যাণ্ড ডিজাইন বইটির প্রশংসা শুধু নয়, সমালোচনাও হতে পারে বেশ কিছু দিক থেকেই। একটি বড় সর সমালোচনার কথা তো বইটি পড়তে পড়তেই মনে আসছিল। হকিং যে সমস্ত তত্ত্বের উপর ভর করে তার ভারী ভারী উপসংহারগুলো টেনেছেন, সেগুলো বড় বেশি প্রান্তিক, অনেক বেশি দুর্গম। বিশেষ করে ‘এম তত্ত্ব’ কিংবা ‘মাল্টিভার্সের’ যে সমস্ত ধারণাগুলোর উপর ভিত্তি করে হকিং তার ‘বাজি’গুলো ধরছেন, সেগুলো এখনো প্রমাণিত কোন বিষয় নয়। এমনকি এ তত্ত্বগুলো কখনো পর্যবেক্ষণ করে যাচাইযোগ্য কিনা, তা নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তারপরেও, আমি বলবো প্রান্তিক এই জ্ঞানগুলো আমাদের জন্য জরুরী। আর নিঃসন্দেহে আজকে যে তত্ত্বগুলো ‘বিপ্লবী’, ‘অবাস্তব’ কিংবা ‘অপ্রমাণিত’ বলে ভাবা হচ্ছে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আর তেমনটি মনে নাও হতে পারে। তত্ত্ব দেবার বহু বছর পরে সেই তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রমাণ পাওয়া গেছে – এমন দৃষ্টান্ত বিজ্ঞানে বিরল নয়। এমন অনেক সময়ই হয়েছে – বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো যে সময়ে প্রস্তাব করা হয়েছিলো, সে সময় সে তত্ত্বগুলোকে প্রমাণ করার মতো যথার্থ প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের হাতে ছিলো না। কিন্তু তা বলে সেই তত্ত্বগুলো অবৈজ্ঞানিক কিছু ছিলো না। যেমন, বিখ্যাত ‘হকিং রেডিয়েশনের’ কথা বলা যেতে পারে। কৃষ্ণগহবর থেকে তেজস্ত্রিয়তার বিচ্ছুরণের যে প্রস্তাব হকিং বিগত সত্তুরের দশকে করেছিলেন (যাকে সাধারণভাবে এখন ‘ব্ল্যাকহোল ইভাপোরেশন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়), তা প্রমাণ করার মতো প্রযুক্তি তখন আমাদের হাতে ছিলো না। সম্প্রতি প্রযুক্তির উন্নয়েন সাথে সাথে বেশ কিছু প্রমাণ আমরা পেতে শুরু করেছি[22]। প্রমাণ প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে এম তত্ত্ব কিংবা অনন্ত মহাবিশ্বের প্রত্যক্ষ প্রমাণ এখন পর্যন্ত না পাওয়া গেলেও এগুলো গাণিতিকভাবে সুসংহত। কাজেই ভবিষ্যতে পাওয়া যেতেই পারে এই তত্ত্বগুলোর প্রত্যক্ষ কিংবা হয়তো পরোক্ষ কোন আনুষঙ্গিক প্রমাণ[23]। হকিং সেটা খুব ভালভাবেই জানেন। তাই তিনি প্রযুক্তির কালীক সীমাবদ্ধতার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি নন, তিনি বাজি ধরেন ‘সীমার মাঝে অসীম’ সব সমস্যার সমাধানে। তার শেষ দানের বাজি শুধু বিজ্ঞানীদেরই নয়, আন্দোলিত করে ছাপোষা এই আমাদেরও, দলছুটের গানের মতো অনুরণন তোলে তা আমাদের মনে –
‘তুমি আমার বাহান্ন তাস
শেষ দানেও আছি
তোমার নামে ধরেছি আমার
সর্বস্ব বাজি…’
এ ধরনের বাজি ধরা হকিং এর জন্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। তিনি জীবনে বহু কিছু নিয়েই বাজি ধরেছেন, এমনকি নিজের জীবন নিয়েও। ১৯৬৩ সালে ২১ বছর বয়সে যখন তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলেন, তখনই আর দূরারোগ্য স্নায়বিক রোগ -‘মোটর নিউরণ ডিজিজ’ ধরা পড়ে। তাকে বলা হয়েছিলো তিনি বড়জোড় মাত্র বছর দু’এক বেঁচে থাকতে পারবেন। হকিং হতাশ না হয়ে জীবন নিয়ে বাজি ধরেছেন। আরো বেশি করে পদার্থবিজ্ঞানের প্রান্তিক জ্ঞানের সাহায্যে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। ১৯৬৩ সালের পর থেকে আরো ৪৭ বছর কেটে গেছে। হকিং থেমে থাকেননি, মারাও যাননি। নিজের মননকে আরো দৃঢ় করেছেন, আর আমাদেরও সেই সাথে আলোকিত করেছেন ‘আলোকেরই ঝর্ণাধারায়’। তার বেঁচে থাকাটাই তো এক অলৌকিক ব্যাপার বলে মনে হয় সাধারণ মানুষের কাছে। কিন্তু হকিং এর কাছে তার ব্যাখ্যা সম্ভবতঃ ভিন্ন, কারণ তিনি আস্থা রাখেন অলৌকিকতায় নয়, বরং বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং সেই সাথে তার প্রবল ইচ্ছাশক্তির উপর। মোটর নিউরণ ডিজিজ তার দেহকাঠামোকে হুইল চেয়ারের চৌহদ্দিতে বন্দি করলেও বন্দি করতে পারেনি তার পরিশিলীত মননকে, পারেনি বন্দি করতে তার প্রসারিত চিন্তাচেতনাকে। এ ধরণের রোগে বেঁচে থাকা রোগীদের আমরা যেখানে প্রায়শঃই দেখি রাম নাম জপে কিংবা ‘আল্লা -বিল্লা’ করেই সময় পার করে দিতে, কিংবা নিয়োজিত থাকে মহান স্রষ্টার গুণকীর্তনে, সেখানে হকিং এর ব্যতিক্রমী মনন নিয়ত নিয়োজিত মহাবিশ্বের অন্তিম রহস্যগুলোর যৌক্তিক সমাধানে, আর মহাবিশ্বের রহস্যের হকিং-সমাধানে স্রষ্টার আদপে কোন ভুমিকাই নেই!
চিত্রঃ স্টিফেন হকিং – দূরারোগ্য মোটর নিউরণ ডিজিজ তার দেহকাঠামোকে হুইল চেয়ারের চৌহদ্দিতে বন্দি করলেও বাক্সবন্দি করতে পারেনি তার চিন্তাশীল মননকে।
স্টিফেন হকিং তার বইয়ে বিজ্ঞানের এবং দর্শনের প্রান্তিক সমস্যাগুলো নিয়ে সাধারণ জনগনের জন্য আলোচনা করেছেন কোন ধরণের গানিতিক সমীকরণ কিংবা ভাবগম্ভীর জটিলতায় না ঢুকেই। ফলে বইটি হয়েছে গতিশীল কিন্তু থেকেছে ভারমুক্ত। আইনস্টাইন বিজ্ঞানের দূরূহ তত্ত্ব মানুষকে শেখানো নিয়ে বলতেন, ‘তুমি যা শিখেছ তা যদি তোমার দাদীকে বোঝাতে না পার, তাহলে তুমি আসলে কিছুই শেখোনি’[24]। আমার ধারণা, স্টিফেন হকিং – লিওনার্ড ম্লোডিনোর গ্র্যাণ্ড ডিজাইন পড়লে আইনস্টাইনের এই উক্তির তাৎপর্য খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন পাঠকেরা।
তথ্যসূত্র
[1] Sean Carroll, The ‘Why?’ Questions, Chapter and Multiverse, The Wall Streat Journal, Online: http://online.wsj.com/article/SB10001424052748704358904575477583868227458.html
[2] অস্তিত্বের রহস্য, ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ – স্টিফেন হকিং [অধ্যায় ১], অনুবাদ – তানভীরুল ইসলাম, মুক্তমনা, ১৪ আশ্বিন ১৪১৭ (সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১০)।
[3] অভিজিৎ রায়, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০০৫) ; মূল বইয়ের সপ্তম অধ্যায় দ্রষ্টব্য।
[4] আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, পূর্বোক্ত।
[5] E.P. Tryon, “Is the Universe a Vacuum Fluctuation?”, Nature 246 (1973): 396-97.
[6] উদাহরণ হিসেবে এখানে কিছু সাম্প্রতিক পেপারের উল্লেখ করা যেতে পারে :
* David Atkatz and Heinz Pagels, “Origin Of The Universe as a Quantum Tunneling Event” Physical review D25 (1982): 2065-73;
* S.W. Hawking and I.G.Moss “Supercooled Phase Transitions in the Very Early Universe “, Physics letters B110 (1982):35-38;
* Alexander Vilenkin, “Creation of Universe from Nothing” Physics letters 117B (1982) 25-28,
* Alexander Vilenkin, “Quantum Origin of the Universe” Nuclear Physics B252 (1985) 141-152,
* Andre Linde, “Quantum creation of the inflationary Universe,” Letter Al Nuovo Cimento 39(1984): 401-405
* Victor Stenger, The Universe: The Ultimate Free Lunch,” European Journal of Physics 11 (1990) 236-243. ইত্যাদি।
[7] বিস্তারিত তথ্যের জন্য The Inflationary Universe: The Quest for a New Theory of Cosmic Origins, Alan H. Guth, Perseus Books Group (March 1, 1998) দেখুন।
[8] একই লেখা একটু পরিবর্তিত আকারে মাসিক সায়েন্স ওয়ার্ল্ডের ২০০৬ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় (বর্ষ ৫, সংখ্যা ৬০, ডিসেম্বর ২০০৬) ‘ইনফেশন থিওরি : স্ট্যান্ডার্ড বিগ ব্যাং মডেলের বিদায় কি তবে আসন্ন?’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।
[9] রায়হান আবীর, নির্ধর্মকথাঃ ইন দ্য বিগিনিং …, মুক্তমনা, https://blog.mukto-mona.com/?p=9693
[10] এ প্রসঙ্গে পড়া যেতে পারে অ্যালেন গুথের ‘The Inflationary Universe’ (Basic Books, 1998 ) কিংবা ভিক্টর স্টেঙ্গরের ‘God: The Failed Hypothesis (Prometheus Books, 2008)’, কিংবা ইউটিউব থেকে দেখা যেতে পারে লরেন্স ক্রাউসের বিখ্যাত ‘A Universe From Nothing’ভিডিওটি (Lawrence Krauss, AAI 2009) ইত্যাদি।
[11] The Times on 2 September, 2010;
[12] Creation of a Bacterial Cell Controlled by a Chemically Synthesized Genome”. science magazine., Published Online May 20, 2010, Science DOI: 10.1126/science.1190719;
[13] অভিজিৎ, অবশেষে মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠা : তৈরি হল প্রথম কৃত্রিম প্রাণ, মুক্তমনা, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭ (২১ শে মে, ২০১০)
[14] ” Modern physics leaves no place for God in the creation of the Universe, Stephen Hawking has concluded. Just as Darwinism removed the need for a creator in the sphere of biology, Britain’s most eminent scientist argues that a new series of theories have rendered redundant the role of a creator for the Universe”; The Times newspaper on 2 September, 2010;
[15] “Science is increasingly answering questions that used to be the province of religion. The scientific account is complete. Theology is unnecessary.”, said Stephen hawking in Larry King Live, Theology unnecessary, Stephen Hawking tells CNN,
[16] অজয় রায়, বিজ্ঞান ও দর্শন : জড়ের সন্ধানে (সাইদুর রহমান ফাউণ্ডেশন বক্তৃতা), ১৯৯৩-৯৪
[17] বিধিসূত্র, ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ – স্টিফেন হকিং [অধ্যায় ২], অনুবাদ – তানভীরুল ইসলাম, মুক্তমনা, ১৭ আশ্বিন ১৪১৭ (অক্টোবর ২, ২০১০)।
[18] এ প্রসঙ্গে মুক্তমনা থেকে পড়ুন, অপার্থিব, বিবর্তনের শিক্ষা, ৩০ মাঘ ১৪১৫ (ফেব্রুয়ারি ১২, ২০০৯)
[19] Libet, B., Gleason, C.A., Wright, E.W., Pearl, D.K. (1983). Time of conscious intention to act in relation to onset of cerebral activity (readiness-potential). The unconscious initiation of a freely voluntary act. Brain. 106 (3):623–642.
[20] সুসান ব্ল্যাকমোরের Consciousness: A Very Short Introduction নামের বইটিতে ‘ডু উই হ্যাভ ফ্রি উইল’ নামের অধ্যায়টিতে লিবার্টের পরীক্ষার বিস্তৃত বর্ণনা আছে। সুসান ব্ল্যাকমোর তার বইয়ে এ প্রসঙ্গে উপসংহার টেনেছেন এই বলে –
Even if, free will is, technically a illusion, it is very powerful illusion and so the feeling of being free carries on, even for the people who no longer believe is true!
[21] Soon, C.; Brass, M.; Heinze, H.; Haynes, J. (2008). “Unconscious determinants of free decisions in the human brain.”. Nature neuroscience 11 (5): 543–545.
[22] এ প্রসঙ্গে পড়ুন, First Observation of Hawking Radiation, Technology Review, kfc 09/27/2010 ইত্যাদি।
[23] প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়াও শুধু পরোক্ষ পরীক্ষণের ভিত্তিতে বহু তত্ত্বকে বিজ্ঞান গ্রহন করে নিয়েছে; বিজ্ঞানের ইতিহাস অন্ততঃ তাই বলে। আসলে পরমানুর অস্তিত্বও প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞান গ্রহণ করেছিল পরোক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতেই (কিছু রাসায়িনিক পদার্থের সংমিশ্রনের অনুপাত থেকে, আর পরবর্তীতে ব্রাউনীয় সঞ্চরণ থেকে); আবার প্রাথমিকভাবে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বও বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছিল পরোক্ষ পর্যবেক্ষণে, ‘চোখে দেখে’ নয়। এরকম উদাহরণ আছে বহু।বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে বিবর্তন তত্ত্ব পর্যন্ত অনেক কিছুর প্রমাণের জন্য আমরা আজও পরোক্ষ প্রমাণেরই আশ্রয় নেই।
[24] You do not really understand something unless you can explain it to your grandmother. — Albert Einstein
বেশী জানলেই আমার যন্ত্রনা বাড়ে। নতুন পোকা বাঁসা বাঁধে। আচ্ছা মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে আর্কষণ করে। তাহলে মাল্টিভার্সের তারা আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করবে না কেন? বরং ভেকোয়াম ইনফ্লেশনের মাধ্যমে তারা সৃষ্টি হলেতো কোন কোনটি একে অপরকে প্রবল ভাবে আকর্ষণ করতে পারে ,কেউ কেউ বিকর্ষণ করবে।
অবশ্য আমাদের প্রচলিত সূত্রগুলি সেক্ষেত্রে ভিন্ন হলে ভিন্ন কথা।
আমি আমার লেখার একটা জায়গায় বলেছিলাম, হকিং যে সমস্ত তত্ত্বের উপর ভর করে তার ভারী ভারী উপসংহারগুলো টেনেছেন, সেগুলো বড় বেশি প্রান্তিক, অনেক বেশি দুর্গম। বিশেষ করে ‘এম তত্ত্ব’ কিংবা ‘মাল্টিভার্সের’ যে সমস্ত ধারণাগুলোর উপর ভিত্তি করে হকিং তার ‘বাজি’গুলো ধরছেন, সেগুলো এখনো প্রমাণিত কোন বিষয় নয়। … তারপরেও, আমি বলবো প্রান্তিক এই জ্ঞানগুলো আমাদের জন্য জরুরী। আর নিঃসন্দেহে আজকে যে তত্ত্বগুলো ‘বিপ্লবী’, ‘অবাস্তব’ কিংবা ‘অপ্রমাণিত’ বলে ভাবা হচ্ছে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আর তেমনটি মনে নাও হতে পারে। তত্ত্ব দেবার বহু বছর পরে সেই তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রমাণ পাওয়া গেছে – এমন দৃষ্টান্ত বিজ্ঞানে বিরল নয়।
আমার সেই বক্তব্যের প্রথম অংশকে পুঁজি করে ফারুক সাহেব হকিং এর মাল্টিভার্স হাইপোথিসিকে ‘হিরোইন সেবনের’ সাথে তুলনা করে লিখলেন, –
ফারুক সাহেবের জন্য সামনে বড়ই দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছে মনে হয়। কারণ, বিজ্ঞানীরা মাল্টিভার্সের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পেতে শুরু করেছেন (খুব বেশিদিন কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো না)। দেখুন এখানে –
Scientists find first evidence that many universes exist
Astronomers Find First Evidence Of Other Universes
আমি ড. ফিনের পেপারটি এখনো হাতে পাইনি (কেবল এবস্ট্রাক্ট পড়েছি), কারো হাতে থাকলে এখানে দিতে পারেন। তবে, এতোদিন যে মাল্টিভার্স তত্ত্বকে ‘অযাচাইযোগ্য’ বলে ভাবা হত, সম্ভবতঃ সেটি থেকে বেরুতে শুরু করেছে বিজ্ঞান। মাল্টিভার্স ইজ ডিটেক্টেবল। ফারুক সাহেব উৎফুল্ল হোন বা না হোন, ‘হিরোইনখোর’ হকিং এর প্রেডিকশনই সঠিক হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে।
@অভিজিৎ,
ইউসিএল-এর ড: স্টিফেন ফিনীর পেপারটা এখানে আপলোড করো দিলাম। উনার গবেষনা আমাদের যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে , তাতে মনে হচ্ছে দুটো জিনিষ হয়তো সত্যি :
১) মহাবিশ্বের অসীম স্ফীতি।
২) আমাদের মহাবিশ্বটা আসলে একটা ‘উপমহাবিশ্ব’ মাত্র।
@সংশপ্তক,
অনেক ধন্যবাদ! ফাইলের এক্সটেনশন দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, পরে বুঝলাম পিডিএফ করে দিলেই পড়া যাবে। 🙂
@অভিজিৎদা,
ধন্যবাদ চমৎকার একটা তথ্য শেয়ার করার জন্য।
আচ্ছা মাল্টিভার্সের ধারণা সত্যি হলে কি অসংখ্য parent universe ও থাকতে পারে? মানে আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের ইউনিভার্স এবং তা যে ইউনিভার্স থেকে সৃষ্টি হয়েছে বা সেই ইউনিভার্সটা যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা তো একটা প্যারেন্ট ইউনিভার্সের ই ছেলে,নাতি-নাতনী ইত্যাদি। তাহলে ওই প্যারেন্ট ইউনিভার্সের মতো তো আরও প্যারেন্ট ইউনিভার্স থাকতে পারে যারা স্বাধীনভাবে সৃষ্টি হয়েছিল।
আর CMB তে যে সার্কুলার প্যাটার্ন পাওয়া গেছে তা কি সমানভাবে প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণাও প্রমাণ করে না যেখানে চারটি সার্কুলার প্যাটার্ন নির্দেশ করে যে প্যারালাল ইউনিভার্স দুইটি কমপক্ষে চারবার নিকটবর্তী হয়েছিল?
@রনবীর সরকার,
মাল্টিভার্সের অনেক মডেল আছে। একটি মডেল হল, অমনিভার্সের ধারণা। এই ধারণা অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্ব যাকে এতদিন প্রকৃতির পুরো অংশ বলে ভেবে নেওয়া হত, আসলে হয়ত এটি এক বিশাল কোন মহাজাগতিক দানবের খুব ক্ষুদ্র অংশবিশেষ ছাড়া আর কিছু নয়। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল হল, প্রচলিত মাল্টিভার্সের ধারণা – যেটা মনে করে, আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি একাধিকবার ঘটেছে (ব্যাপারটিকে বলে এটারনাল ইনফ্লেশন), এবং এক একটি বিগ ব্যাং তৈরি করেছে একেকটি মহাবিশ্ব। এক্ষেত্রে উদ্ভুত মহাবিশ্বের মধ্যে কোন সংযোগ থাকে না। তাত্ত্বিকভাবে সে কোন পূর্ব মহাবিশ্ব (যেটাকে আপনি প্যারেন্ট ইউনিভার্স বলছেন) থেকে উদ্ভুত হতে পারে, কিন্তু বিচ্ছিন্ন হবার পর কোন সম্পর্কই থাকে না। এক্ষেত্রে বায়োলজিকাল সন্তানের সাথে বেবি ইউনিভার্সের পার্থক্য রয়েছে। আমি শন ক্যারলের ‘ফ্রম এটারনিটি টু হেয়ার’ থেকে উদ্ধৃত করি (পৃঃ ৩৫৯)-
Like some other children, there is absolutely no connection between baby universe and its parent – once they split, they remain seperate for ever.
মাল্টিভার্সের সাথে প্যারালাল ইউনিভার্সের পার্থক্য আছে। প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারনা হল, অগনিত মাল্টিভার্সের মধ্যে কোন একটিতে হয়তো আমাদের মহাবিশ্বের মতই সূত্র এবং চলক কাজ করছে, এমনকি সেই মহাবিশ্বে থাকতে পারে আপনার মতোই একজন রনবীর সরকার যিনি এখন বসে বসে অভিজিৎ রায়ের এই উদ্ভট লেখা পড়ছেন। হাসবেন না। 🙂 বিজ্ঞানী ম্যাক্স টেগমার্ক সায়েন্টিফিক আমেরিকানের একটা প্রবন্ধে আমাদের জানা গনিতের সম্ভাবনার নিরিখেই হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, এই মহাবিশ্ব থেকে পায় ১০১০ ২৮ মিটার দূরে আপনার এক ‘আইডেন্টিকাল টুইন’ হয়ত আছেন, যার সম্পর্কে আপনি কোনদিনই জানতে পারবেন না। কিন্তু এই প্যারালাল ইউনিভার্স কেবল সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব, এবং এখনো সায়েন্সফিকশনের অংশ, কিন্তু মাল্টিভার্স এর চেয়ে অনেক বেশি ‘সায়েন্স’।
এখন (আমার মতে), প্যারালাল ইউনিভার্সের মধ্যে ঠোক্কর খাবার সম্ভাবনা খুবই কম, হয়তো সম্ভবই না। কিন্তু আমাদের চারপাশে যদি অগনিত বিভিন্ন চেহারার বিভিন্ন আকারের মাল্টিভার্স ছড়িয়ে থাকে, তবে তাদের মধ্যে কখনো সখনো ঠোক্কর লাগতেই পারে ( মহাবিশ্বগুলোকে বাতাসে ভেসে বেরানো অসংখ্য সাবানের বুদবুদের মতো কল্পনা করুন, কখনো সখনো দুই বুদবুদে ধাক্কা লাগতেই পারে তাই না? আবার নাও লাগতে পারে) । ঠোক্কর লাগলে একটা প্রতিক্রিয়া মহাবিশ্বের উপরে পড়া উচিৎ। সেটাই এলগরিদম দিয়ে বের করেছেন ফিনের দলবল। তারা দেখিয়েছেন যে, অন্ততঃ চার বার অতীতে ঠোকাঠুকি লেগেছে – তার আলামত তারা পাচ্ছেন কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের ডেটা এনালাইসিস করে।
আজ এটুকুই। পরে সময় পেলে আবার বলা যাবে।
@অভিজিৎ & সংশপ্তক,
অসংখ্য ধন্যবাদ আমার প্রশ্নের উত্তরটি তথ্যপূর্ণ ভাবে দেয়ার জন্য। অনেক দিন পর সম্ভাব্য উত্তরটি পেলাম।
@অভিজিৎ,
আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে একটু দেরী হয়ে গেলো।
দেরি করাতে ভালই হল-একটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়াতে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর বোনাশ পেয়ে গেলাম।আপনার তথ্যপূর্ণ উত্তর গুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ভয়ে ভয়ে আরেকটা প্রশ্ন করি(যেহেতু প্রশ্ন করতে পরিশ্রম কম।), সময় না হলে পরের কোন লেখায় উত্তর দিলেও চলবে।
এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থকণা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তৈরী হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে।
আমার প্রশ্ন-সেই নিহিত শক্তি কি কোন দৃশ্য বা অদৃশ্য আলো রূপে বা আমাদের জানা কোন শক্তির বিশেষ রূপে বা সদা পরিবর্তনশীল শক্তি অর্থ্যাৎ সর্বধাই শক্তির এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হচ্ছে?
আর আমাদের জানা কোন শক্তি রূপে থাকলে সেই স্থানকে কি শূণ্য স্থান বলা যায়? সেটাকেতো শক্তিপূর্ণ স্থান বলাই শ্রেয়। আরেকটু বললে তো বলা যায় শক্তি আর বস্তু একই জিনিসের ভিন্নরূপ(E=mc^2)
@হেলাল,
আপনার প্রশ্ন যুক্তিসঙ্গত। ঠিকই বলেছেন, আমাদের জানা কোন শক্তি রূপে থাকলে সেই স্থানকে কি শূণ্য স্থান বলা যায়?
এর উত্তর হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেছেন যে, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরমাণ শূন্য। মহাবিশ্বের দৃশ্যমান জড়পদার্থগুলো তৈরি হয়েছে ধনাত্মক শক্তি থেকে, আর অন্যদিকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এই দুটো পরষ্পরকে নিষ্কৃয় করে দেয়। মহাবিশ্বের শক্তির এলজেব্রিক যোগফল হিসেব করলে সবসময় শুন্যই পাওয়া যায়। স্টিফেন হকিং তার ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম গ্রন্থে ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে (A Brief History of Time, Bantam, paper back ed., পৃঃ ১৩৬) –
‘মহাবিশ্বে এই পরিমাণ জড়পদার্থ কেন রয়েছে তা মহাস্ফীতির ধারণা দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। মহাবিশ্বের যে সব অঞ্চল আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি সেখানে রয়েছে দশ মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন (অর্থাৎ ১ এর পিঠে আশিটি শূন্য = ১.০ x ১০^৮০) সংখ্যক জড়-কণিকা। কোত্থেকে এগুলো সব এলো? এর উত্তর হল কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী শক্তি থেকে কণিকা ও তার প্রতি-কণিকা এই যুগ্ম আকারে কণিকা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই শক্তি এল কোত্থেকে? এরও উত্তর হল মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ হল শূন্য। মহাবিশ্বে জড় সৃষ্টি হয়েছে ধনাত্মক শক্তি থেকে। অবশ্য জড়পদার্থ মহাকর্ষণের দ্বারা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে আকর্ষণ করছে। দুটি বস্তুখণ্ড যখন কাছাকাছি থাকে তখন তাদের শক্তির পরিমাণ যখন তারা অনেক দূরে থাকে তা থেকে কম। এর কারণ হল এদেরকে পৃথক করতে হলে যে মহাকর্ষীয় বল দ্বারা তারা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে সেই বলের বিরুদ্ধে আপনাকে শক্তি ব্যয় করতে হবে। তাই এক অর্থে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এমন একটি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে, যা মোটামুটি স্থানিক সুষম (approximately uniform in space), দেখান যেতে পারে যে এই ঋণাত্মক মহাকর্ষীয় শক্তি জড়ের প্রতিনিধিত্বকারী ধনাত্মক শক্তিকে নিখুঁতভাবে বিলুপ্ত করে দেয়। কাজেই মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ সব সময়ই শূন্য।’
এর মানে হচ্ছে, মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’র জন্য বাইরে থেকে আলাদা কোন শক্তি আমদানী করার প্রয়োজন হয় নি। সহজ কথায়, ইনফ্লেশন ঘটাতে যদি শক্তির নীট ব্যয় যদি শূন্য হয়, তবে বাইরে থেকে কোন শক্তি আমদানী করার প্রয়োজন পড়ে না। অ্যালান গুথ এবং স্টেইনহার্ট নিউ ফিজিক্স জার্নালে (১৯৮৯) দেখিয়েছেন, ইনফ্লেশনের জন্য কোন তাপগতীয় কাজের (thermodynamic work) দরকার পড়েনি।
আমার সীমিত জ্ঞান থেকেই এটাই শুন্যতার মানে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টি থেকে।
@হেলাল,
‘চরম শূন্যতা’ বলতে বোঝায় এমন একটা অবস্থা যেখানে স্হান,কাল এবং বস্তু (space,time and matter) অনুপস্থিত। এখন স্হান এবং কালকে বস্তুর প্রপার্টি হিসেবে নিলে স্হান এবং কালের অনুপস্থিতিতে বস্তু বলে কিছুই থাকেনা এবং সেই সাথে থাকেনা শক্তি(E) । আবার বস্তু এবং স্হান না থাকলে কালও থাকেনা।
তাই ‘চরম শূন্যতা’ বলতে বেশীরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী বিগ ব্যাং -এর পূর্বের অবস্থাই বোঝেন যেখানে স্হান,কাল এবং বস্তু অনুপস্থিত। বিগ ব্যাঙ -এর পরে ‘চরম শূন্যতা’ বলে কোথাও কিছু নেই।
@আল্লাচালাইনা,
ধর্মের বাদরামীর সাথে এর কি পার্থক্য আছে?
:lotpot:
চমৎকার। এরকম একটা লেখার প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। :yes:
স্বপন মাঝি,
মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ও সমষ্টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? শুধু বস্তুগত দিক থেকে? এটি কি যান্ত্রিক কোন বিষয়? বা শুধুই জৈবিক?
আমিও একমত যে ,আমাদের এই সীমাহীন ভালবাসা কি শুধুই কতগুলো জড় পদার্থ হরমোনের(যেমন Oxytocin,Monoamines, ovarian হরমোন ইত্যাদি :http://www.oxytocin.org/oxytoc/index.html,http://www.springerlink.com/content/m415h16x735140m7/fulltext.pdf) খেলা? কিন্ত বিজ্ঞান যখন পদার্থগুলো কমিয়ে বাড়িয়ে আমাদের সাধের পিড়িতি নিয়ে খেলতে পারে, তখন অস্বীকার করি কি করে যে আমরা একটা যন্ত্র ছাড়া আর কিছুনা। দর্শন এক্ষেত্রে বিভ্রান্ত ছাড়া আর কি করতে পারে?
@হেলাল,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ঠিক বুঝলাম না, সীমাহীন বাসা বলতে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন?
আমার আর একটি প্রশ্ন, আশা করি কিছু মনে করবেন না। প্রশ্নটি হলোঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-র মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্কটা কি?
@হেলাল,
আপনার এই কথাগুলোর সাথে সম্পুর্ণই ঐক্যমত পোষণ করছি। অথচ, কতোটা আবেগশূণ্য ও স্বার্থপর মানুষ হতে পারে, বিজ্ঞান এখনও কি পারেনি, এবং কোনকালেও কি পারবে না কল্পনা করে তারা নিজেদের মগজশূণ্য ফ্যান্টাসির ঘাগড়া ফুলায়, আর গাল মুখ ফুলিয়ে এই বাদরামীর নাম দেয় দর্শন। ধর্মের বাদরামীর সাথে এর কি পার্থক্য আছে? আমার এই প্রশ্নটির উত্তর কেউ জানলে দয়া করে আমাকেজানিয়ে বাধিত করবেন।
লেখাটা পড়েছি। মন্তব্য করিনি। বিষয়বস্তু বুঝবার চেষ্টা চলছিল। যেহেতু এ জগৎটা আমার কাছে অপরিচিত। বিজ্ঞানের এসব জটিল বিষয় ( এ আমার বাস্তবতা) নিয়ে কথা বলবার বিদ্যা-বুদ্ধি আমার নেই। তারপর আবার কৌতূহল বশতঃ পড়া, আর পড়তে পড়তে আলোচকদের মন্তব্যগুলোও পড়লাম। আলোচনায় বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও লেখকদের নাম দেখে ভয় ( আবারো বলছি এটা আমার বিণয় নয়, বাস্তবতা) পেয়ে গেলাম।
ধারাপাতের জ্ঞান-গম্যি থেকে যতটুকু জেনেছি, বিজ্ঞানের কাজটা হলো প্রকৃতি ও মহাজাগতিক নিয়মগুলো খুঁজে খুঁজে বের করা বা আবিষ্কার। যা প্রচলিত ধারণাগুলোর ( বিশেষ করে ধর্মীয় ধারণাগুলো) সাথে সংঘাত তৈরী করছে। তা’হলে বিজ্ঞান কি ধর্মের ভূমি দখল করবে? এখানে হয়তো দর্শন বিজ্ঞানের মাথায় ছাতা ধরতে পারে।
আপনারা হয়তো এবার হাসি চেপে রাখতে পারবেন না। বলবেন, এ কোন শাখা-মৃগ?
দর্শন শাস্ত্র নিয়ে আলোচকরা যে-সব জটিল কথা-বার্তা বলছেন, যে-সব নাম এখানে উচ্চারিত হয়েছে , পড়তে পড়তে মনে হলো, এ জগতেও তো আমার প্রবেশ হয়ে ওঠেনি। তা’হলে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। সমস্যাটা এখানেই। চিন্তকগণ যে এত কথা বলছেন, এর উৎস-বিন্দুতে কি?
মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ও সমষ্টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? শুধু বস্তুগত দিক থেকে? এটি কি যান্ত্রিক কোন বিষয়? বা শুধুই জৈবিক? নানান ধরণের প্রশ্নের পোকারা এখন মাথার মগজ দখল ক’রে আছে।
প্রশ্ন জাগানিয়া যে কোন লেখাকে স্বাগত।
@স্বপন মাঝি,
মানুষকে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মেনে নিলে এসব প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করা সহজ হয়ে যায়। প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে , জীবজগৎ প্রকৃতি প্রদত্ত জৈবিক নিয়মে কাজ করে যাচ্ছে এবং বিজ্ঞানের কাজ সেসব নিয়ম আবিস্কার করা এবং ব্যাখ্যা করা। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় যখন কোন অপ্রাকৃতিক এবং সার্বভৌম শক্তি দ্বারা মানুষ পরিচালিত হয় বলে দাবী করা হয় , যখন মানুষকে প্রকৃতির অংশ হিসেবে না দেখে মানুষকে প্রকৃতির মালিকানা প্রদান করা হয়। কারা এই সমস্যা সৃষ্টি করছেন ? অবশ্যই বিজ্ঞানীরা নন। ধর্মের সৃষ্টির কৃতিত্ব কবি , সাহিত্যিক এবং দার্শনিকদের , বিজ্ঞানীদের নয়। বেশীর ভাগ ধর্মগ্রন্থ প্রনীত হয়েছে লোক গাঁথা আর কাব্যের আকারে। ধর্ম থেকে বের হওয়ার চেয়ে ধর্মের দর্শন থেকে বের হওয়া আরও কঠিন কাজ। মানুষকে একটা মামুলী স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে দেখা সেখানে সুদূর পরাহত।
প্রশ্ন করতে পারেন যে , অনেক বিজ্ঞান শিক্ষিত ব্যক্তি কেন এসব অবৈজ্ঞানিক দর্শনে বিশ্বাস করেন। এর উত্তর পাবেন এর উল্টোদিকে । ব্যক্তিজীবনে মদ্যপায়ী ব্যক্তি যেমন ইমামতি করতে পারেন , অবৈজ্ঞানিক ধারনার একজন ব্যক্তি তেমনি বিজ্ঞান দিয়ে রুজি রোজগার করেন।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
মা্নুষ যে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটা মনে হয় জানি।
কিন্তু সমস্যাটা হয় এখানেইঃ
জীবজগতের মধ্যে নিশ্চয়ই মানুষ অন্তর্ভুক্ত? কিন্তু মানুষ কি প্রকৃতি প্রদত্ত নিয়মে চলছে? প্রকৃতির নিয়মটা কি? এটা কি এমন এক নিয়ম যা তার অস্তিত্বকেই বিপন্ন ক’রে তুলবে?
এ কথাটা আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে এই মালিক কারা?
কেমন জানি একটু একটু ধর্মের ছোঁয়া পাচ্ছি। ধর্মীয় ভাবনাগুলো দুই দিক থেকেই চূড়ান্ত, যা মন্দ তা মন্দ-ই আর যা ভাল তা ভাল-ই। ভালো-মন্দের মিশেল এবং প্রবণতার স্থান ধর্মে নেই।
আর এ কাজটা করার জন্য আমাকে বিজ্ঞানী হ’তে হবে? বিনয় করে বলছি না, বিজ্ঞান তো দূরের কথা, দর্শন নিয়েও পড়াশুনার সুযোগ হয়নি। তবুও ধর্মটাকে বাতিল ক’রে দিয়েছি, সেই কলেজ-জীবনে। আর এটা করেছি ধর্ম সম্পর্কে অল্প-বিস্তর জানতে গিয়ে। এখানেও ব্যাপক পড়াশুনা হয়ে ওঠেনি।
এ উত্তরটা পেয়েছিলাম অন্যভাবে, প্রায় দুই যুগ আগে। অধ্যাপক আহমদ শরীফের আড্ডায়, একজন এই প্রশ্নটাই করেছিলেন, সাথে যুক্ত করেছিলেন চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের।
আমার মত ই্ন্টারমিডিয়েট পাসদের দেখে, মুচকি হেসে ধর্ম-ব্যবসায়ীরা বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের কথা স্মরণ করিয়ে দিত।
আর আমিও মুচকি হেসে বলতাম, কোন কিছু উত্তর দিতে না পারলেই, এতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ হয় না।
হ্যাঁ, ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতাম, না বিজ্ঞান, না দর্শন। রুচি-বোধের অবস্থান থেকে। আমার এই বোধটুকু তৈরী করতে সাহায্য করেছে মানুষ ও মানষের মধ্যকার আচরণ।
আমিও কিন্তু মদ পান করি, কিন্তু ইমামতি করি না। মদের নিন্দা করবেন না।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
@স্বপন মাঝি,
প্রকৃতি মোটা দাগে আমাদের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিস্পৃহ, নিরাসক্ত। প্রকৃতির কোন দায় নেই আমরা বাঁচব কি মরব তা নিয়ে চিন্তা করার। ডায়নোসারের মত প্রানী বিলুপ্ত হয়ে গেছে, প্রকৃতির কোন কিছু যায় আসে নি (ইন ফ্যাক্ট বিবর্তন তত্ত্ব থেকে আমরা জেনেছি প্রকৃতির ৯৯ ভাগ প্রজাতিই কোন না কোন সময় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বেঁচে আছে খুব ছোট অংশ)। সেজন্যই রিচার্ড ডকিন্স প্রায়ই বলেন, “প্রকৃতিতে অন্ধ করুনাহীন উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না”। সেজন্য প্রকৃতির দোহাই না পেড়ে আমাদের অস্তিত্বের ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরকেই যত্নবান হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে প্রজাতিকে রক্ষা করার। অন্ততঃ আমি সেভাবেই দেখি।
😀 । আমার এক বন্ধু বলতো – নামাজ অপেক্ষা ঘুম উত্তম, আর ইমামতি অপেক্ষা মদ্যপান! :laugh:
@স্বপন মাঝি,
😀 মদের নিন্দা করার দুঃসাহস আমার নেই। বলতে বাঁধা নেই, এক সময় আমি স্কটিশ উচ্চভূমিতে তৈরী পরিপক্ক সিঙ্গল মল্ট হুইস্কির ভীষন ভক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে আমার সার্বিক টেস্টোসটেরন(Testosterone) ফাংশন তথা আমার ‘বিবর্তনীয় দায়িত্ব’ পালনে অ্যালকোহল বড় রকমের বাগড়া দেয়ায় অনেকটা অভিমান করেই প্রায় দশ বছর আগে অ্যালকোহলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। বর্তমানে অ্যালকোহল বিহীন জীবনে আমার টেস্টোসটেরন ফিরে গেছে দুরন্ত ফর্মে আর তাই সঙ্গত কারনেই আমি দৈনন্দিন জীবন পুরোপুরি উপভোগ করছি। সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেম এবং উদ্দাম এই চল্লিশোর্ধ বয়সেও পুরোপুরি সজাগ যা এখন সাপ্তাহিক ফুটবল খেলার সময় অনুভব করি। অ্যালকোহলের প্রতি বিরহ আর অনুভব করিনা।
@সংশপ্তক,
ধর্ম থেকে ধর্মের দর্শনের শেকল ভাঙ্গা যে কঠিনতর, আপনার এই কথাটির সাথে এরচেয়ে বেশী একমত আমি হতে পারি না। আমার দর্শনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগটিই হলো- এটা বিরিঞ্চিবাবাদের একটি প্রতিবাসন কেন্দ্র হিসেবে, অভয়ারণ্য হিসেবে কয়াজ করে। যা মুখে আসে তাই বলে যাও, সমাজবিজ্ঞানগিরি করে যাও যত্রতত্র, আর তার নাম দেও দর্শন, কি মজা!
ইয়ে মানে, ভূমিকার প্রথম অংশটুকু কি ম্যাডামের সমীপেষু? 😉
@রায়হান আবীর,
ম্যডাম? উনি ফিজিক্স দেখলেই দশ হাত দূরে …। 😀
দর্শন কি সত্যই মৃত?
পৃথিবীর অধিকাংশ দার্শনিকই হকিংসের দর্শন জ্ঞানকে অপেশাদার বালখিল্যতার বেশী কিছু ভাবছে না [ আমি তাদের সাথে সহমত]
নিচে সেই নিয়ে বিশিষ্ট দার্শনিকদের ব্লগ
http://www.partiallyexaminedlife.com/2010/09/07/hawking-keeps-hacking-philosophy-is-dead/
Hawking Keeps Hacking: “Philosophy is Dead”
Posted by Wes Alwan in Web Detritus on September 7th, 2010
Apparently Stephen Hawking not only thinks that spontaneous creation from nothingness is somehow a scientific concept: he also claims that “philosophy is dead” (and as I point out, this is hardly surprising given the core anti-intellectualism lurking behind his amateur philosophizing).
Here’s a reaction from Burke’s Corner:
In his failure to exercise modesty in his pursuit of scientific knowledge, Hawking makes a particularly startling claim – that “philosophy is dead“. From Plato and Aristotle to Maimonides and Aquinas to Kant and Hegel, Hawking dismisses how the human mind across cultures and millenia has reflected on transcendence and humanity’s place in a vast universe. Hawking’s lack of humility before this endeavour is staggering. In her Absence of Mind, Marilynne Robinson rightly states that this approach to science excludes “the whole enterprise of metaphysical thought,” despite metaphysical reflection being a defining characteristic of the human experience.
Mathematician Eric Priest also responds, in The Guardian:
As a scientist, you are continually questioning, rarely coming up with a definitive answer. The limitations of your own knowledge and expertise together with the beauty and mystery of life and the universe often fill you with a sense of profound humility. Thus, unequivocal assertions are not part of a genuine scientific quest.
…
Furthermore, many of the questions that are most crucial to us as human beings are not addressed adequately at all by science, such as the nature of beauty and love and how to live one’s life – often philosophy or history or theology are better suited to help answer them.
And here’s his pragmatic conclusion:
You cannot prove whether God exists or not. But you can ask whether the existence or nonexistence of God is more consistent with your experience.
And we should really ask people what Hawking and his ilk think of literature and the humanities in general. “I am only interested in the hard sciences and everything else is squishy and impractical and insufficiently number-ish” is not an argument. It simply reflects an orientation toward activities that are as far away from social concerns as possible. It’s what we associate with being a nerd, and in a sense these sorts of pseudo-philosophical Papal Bulls by the popularizers of science are simply the ultimate revenge of the nerds.
Worse, they are a rejection of interiority, a rejection of the idea that reflection is a worthwhile endeavor. Our own thoughts and feelings cannot be “data”; me must concentrate only on empirical objects. It’s an attempt to kill off large areas of inquiry, because those areas of inquiry defy easy answers and point to the limits of scientific inquiry. They curb its domain. And it’s important to some that a) empirical science be capable of being extended to all worthwhile domains of inquiry and b) that there be a promise of complete answers to all questions at some point in the future of scientific inquiry. These instincts — to the absoluteness of certain standpoints and the promise of an end to questioning and, by fiat, a complete picture of the world — are in fact the instincts of fundamentalist religion. That’s why I see this as just another battle between fundamentalists demanding certainty — whose obsession with their counterpart Christian and Islamic fundamentalists is telling — and people (religious or not) who want to suspend judgment for the sake of thinking about things. Abandoning the need for the promise of completeness, to an end to inquiry, would be just as much a truer form of atheism as it is a truer form of faith.
*********
একজন দর্শনের ছাত্র এই ব্যাপারে কি লিখেছেন দেখুন
Another case of someone who’s gained such widespread notoriety in his/her academic field that it is irresistible to presume that their special expertise naturally translates universally to all domains of understanding. For some reason, given all the possibilities, I always think of Noam Chomsky.
Alfred North Whitehead would no doubt have a description for this that goes like ‘Fallacy of Misplaced Expertise’: Ah, but even Alfred was given to grand philosophizing, having made a bigger splash in mathematics first.
@বিপ্লব পাল,
বিশিষ্ট দার্শনিকেরা বিশাল দাগা খেয়েছেন এটুকু বুঝতে পারলাম। 🙂 কে আর নিজেদের আরাধ্য বিষয়কে ‘মৃত’ দেখতে চায়!
না আমি সব দর্শনকে মৃত বলব না, তবে সত্যি কথা হল, আধুনিক বিজ্ঞানের চাপে যে প্রথাগত দর্শনের যে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে সেটা অস্বীকার করার চেষ্টা বোকামি। স্টিফেন হকিং, স্টিফেন ওয়েইনবার্গ, ডকিন্স, ভিক্টর স্টেংগরেরাই ক্রমশঃ সার্থক বিজ্ঞানের দার্শনিক হয়ে ঊঠছেন প্রথাগত দার্শনিকদের হটিয়ে, অনেকটা এজন্যই। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
হ্যা সমস্যা হল- এই ‘ডোমেইন নলেজের’ বব্যাপারটা এখন সবাই দাবী করেন, একজন কোরানে বিশ্বাসী গবেষকও। একজন জ্যোতিষীও ‘domains of understanding’ এর দোহাই পেড়ে জ্যোতিষশাস্ত্রকে বৈধতা দিতে পারে, যেমনি পারেন, একজন ‘সান্টাক্লস’ বিশেষজ্ঞ ‘domains of understanding’ এর দোহাই তুলে সাণ্টায় অবিশ্বাসকে বাতিল করতে! আসলে সান্টাকে রিফিউট করতে কোন ‘ডোমেইন নলেজ’ লাগে না, সেটাই সত্যি।
@অভিজিৎ,
বোকামিটা হকিংসের ই বেশী। ১৯৪০ সাল থেকেই দর্শনে বিজ্ঞান গভীর ভাবে ঢুকেছে এবং দর্শনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদার্থ বিদ্যা ও বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হয়। রে ভাস্করের ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজম সম্পূর্ন কোয়ান্টাম রিয়ালিটির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এবং রে দার্শনিক হওয়াতে সেই অনুসন্ধান আরো বেশী গভীর।
তবে আমি একটা ইন্টারভিউ পড়ে যা বুঝলাম, তাতে এটাই বলব, হ কিং স দর্শন মৃত এমন কিছু বলতে চান নি-উনার বক্তব্য হল দর্শনে বিজ্ঞানের প্রয়োগ আরো গভীর হোক-যা এমনিতেই হচ্ছে গত ৬ দশক ধরে। এটা দর্শন শাস্ত্রের আধুনিক ইতিহাস নিয়ে হকিংসের অজ্ঞতা ছারা কিছু না। সেই জন্যেই প্রতিষ্ঠিত দার্শনিকরা অবুঝকে ক্ষমা করতে বলেছেন আর কি।
@বিপ্লব পাল,
হকিং ‘এত বোকা’ বলে আমি ভাবছি না। আসলে দর্শন যে প্রাকৃত বিজ্ঞানের কাছে অনেকটাই মার খেয়েছে সেটা কিন্তু মিথ্যে নয়। এখন ‘মৃত’ না ‘অর্ধমৃত’ সেটা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু আগের মত সজীব যে নেই, সেটা ঠিক। আজকে মহাবিশ্ব এবং এর দার্শনিক অভিব্যক্তি নিয়ে যে কোন আলোচনাতেই পদার্থবিজ্ঞানীদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়, এরিস্টটলের বা প্লেটোর ইতিহাস কপচানো কোন দার্শনিককে নয়, সেটা বাস্তবতা। আরও একটা ব্যাপার – হকিং কিন্তু নতুন কিছু বলেননি। ১৯৮৬ সালে লেখা Harry Redner এর “The Ends Of Philosophy” নামে একটি বই লিখেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন দর্শনের যে দুরাবস্থা চলছে বেশিদিন ‘একাডেমিক ডিসিপ্লিন’ হিসেবে এটি টিকে থাকবে না। দর্শন জানতে আজ কোন স্পেশাল জ্ঞান লাগে না, কিন্তু বিজ্ঞানের কোন স্পেসিফিক বিষয় জানতে লাগে। সেজন্যই দর্শনকে কেউ আর আগের মত পাত্তা দেয় না তিনি তার বইয়ে বলেছেন –
“However, there is this difference between the philosopher as specialized expert and every other expert: the philosopher has no specific object or field that is peculiarly his own. He is the expert on nothing — and everything. Every specialty that philosophy has sought to preserve for itself has been taken over by the sciences and expropriated from philosophy. Over the last two centuries philosophy has been gradually displaced from one field to another as it has tried to escape the relentless pursuit of the sciences. …”
আরেকটা উদ্ধৃতি এরকম –
“But who is the philosopher now? It is anybody, no matter from what profession, who carries out knowingly or unknowingly the functions of philosophy; often it is a scientist or scholar totally divorced from official philosophy.”
কথাগুলোতে যে কিছুটা সত্যতা নেই তা নয়। আসলে মোটা দাগে দর্শনের জায়গা সেখানেই যেখানে বিজ্ঞান এখনো পথ দেখাতে অক্ষম। ধর্মতত্ত্বের অবস্থানও অনেকটা তাই। বিজ্ঞানের ধূসর এলাকাগুলোতেই তাই দার্শনিকেরা (এবং অবশ্যই ধর্মতাত্ত্বিকেরা) নানা ধরনের ব্যাখ্যা- প্রতিব্যাখ্যা করে কোন রকমে টিম টিম করে বাতি জ্বালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে রেখেছে। 🙂 ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান আরো অগ্রসর হলে তার অবস্থান কোথায় যাবে, কে জানে? এখনই দর্শনের যে স্ট্যাটাস, সেটাকে কী সত্যই জীবিত বলা যায়? অনেকেই ক্ষয়িষ্ণু পক্ষাঘাতে প্রায় মৃত হিসেবেই দেখছেন, কী আর করা!
@বিপ্লব পাল,
ল্যাংড়া হকিঙ্গের ইজিচেয়ারটা ঠেলে আপনার বাড়ির বারান্দায় দিয়ে আসি আমরা নাকি? আর আপনি তাকে একটু চালাকি শিখিয়ে দেন। আসবার বেলায় আপনাকে তার পাওয়া নোবেলটা গুরুদক্ষিণা হিসেবে দিয়ে আসবে ক্ষণ?
@আল্লাচালাইনা,
আপনি মশাই পারেনও :lotpot:
@অভিজিৎ,
এইসব অনুতপাদনশীল বিরিঞ্চিবাবাগিরি বাদ দিয়ে বিশিষ্ট দার্শনিকেরা যদি ‘দুইয়ে দুইয়ে চার কেনো হয়, কিংবা কেনো প্রোটিন ভাঁজ হয় ঠিক সেইভাবেই যেইভাবে কিনা এটা ভাঁজ হয়’ এইরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আরাধনায় বসেন বলাই বাহুল্য তাদের নিজেদের এবং মানব সভ্যতার সামান্য খানিকটা বেশী উপকার বোধহয় নিহিত থাকবে এর মধ্যে।
এ পর্যন্ত কয়েক বার পড়েছি। বেশ ভাল ও সাবলীল ভঙ্গিতে রিভিউটা লিখেছেন।
বইটি নিয়ে আরো কিছু লেখা চাই। তানভীরুল ইসলামকে বাকী অনুবাদ কাজের জন্য একটা অনুরোধ করা যায়।
@সৈকত চৌধুরী,
ভাল বলেছ সৈকত।
আমি উনার করা অনুবাদের বইটা সত্যি এবার বাজারে দেখতে চেয়েছিলাম। এখনো চাইছি। উনার উচিৎ খুব তাড়াতাড়ি বাকি অধ্যায়গুলোর অনুবাদ করে ফেলা।
@অভিজিৎ রায়,
যারা রিভিউ লেখেন বা লিখতে আগ্রহী তাঁরা আপনার এই রিভিউটা থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারেন বলে আমি মনে করি। গ্রান্ড ডিজাইন বইটা আমি এ পর্যন্ত চারবার পড়েছি এবং আরো বহুবার পড়তে হবে বলেই মনে হয় । তবে, আপনি বইটা যে পড়েছেন এবং বইটার মূল সুরটা যে ধরতে পেরেছেন তা আপনার রিভিউটা পড়লেই বোঝা যায়। সত্যিকারের নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানপ্রেমী যে কজন হাতে গোনা বাঙালী আমি চিনি , আপনি নিঃসন্দেহে তাঁদের অন্যতম।
@সংশপ্তক,
সহৃদয় মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, যদিও মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসায় বিব্রতবোধ করছি।
@অভিজিৎ,
[প্রশংসায় বিব্রত হওয়ার কিছু নেই কারন সমালোচনার জায়গায় সমালোচনা ঠিকই করা হবে।]
এখন দেখা যাচ্ছে যে , বিজ্ঞানকে শুধু ধর্মের ধ্বজাধারীদের নয়, কোয়্যাকারী দর্শনকেও মোকাবেলা করতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা , দার্শনিকদের সহযোগীতা না পেলে ধর্মগুলো এতদিন দিকে থাকতে পারতো না। যখন ঈশ্বরের বাজারদর নিম্নমুখী হয় তখন তারা ঈশ্বরধীন ধর্ম উদ্ভাবন করেন অর্থ্যাৎ ডিক্যাফিনেইটেড কফি। একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
পরিসংখ্যান এবং গনিত ব্যবহার করলেই একজন রাশিচক্রের জ্যোতিষী বিজ্ঞানী হবেন না কারন যে মৌলিক তত্ত্বের উপর জ্যোতিষশাস্ত্র দাড়িয়ে , সেটাই অপরিহার্য বৈজ্ঞানিক শর্তসমূহ পূরণ করে না। এখন অশ্বডিম্বকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা না করা গেলে কি আমরা কোয়্যাকারী দর্শনের আশ্রয় নেব ? না এটা ধরে নেব যে অশ্বডিম্ব বলে আসলেই কিছু নেই ?
মুক্তমনাকে ধর্মের পাশাপাশি এইসব ক্ষতিকর বিজ্ঞানবিরোধী মতবাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে।
@সংশপ্তক,
ঠিক কথা একেবারে, ডায়রিতে নোট করে রাখার মতো কথা বলেছেন। শুধু বিগব্যাং এবং ইভোলিউশন নয়, সম্পুর্ণ বিজ্ঞানকেই ডিফেন্ড করতে হবে। শুধুমাত্র অলস কল্পনাবিলাসের অন্তর্বাস ফুলিয়ে একটু বাতাস খেওয়ার লক্ষ্যে, একটু ভেন্টিলেশন প্রাপ্তির লক্ষ্যে কেউ যদি এভিডেন্স টেভিডেন্সের কোন ধার না ধেরে বিজ্ঞানের উতপাদনশীল ও জীবনরক্ষাকারী কোন ক্ষেত্রের অবদানকে অস্বিকার করে, তবে এইটা তাকে তার মুখের উপরই বলে দেওয়ার শক্তি আমাদের থাকা চাই যে- তুমি হচ্ছো নিছকই আরেকটা বিরিঞ্চিবাবা। এইসব সমাজবিজ্ঞানগিরি কোন নাস্তিকেরই মেনে নেওয়া উচিত না।
সুন্দর এই রিভিউর জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
আমার স্বল্পজ্ঞানে যা মনে হয়েছে , তাতে আমি নিশ্চিত , আমরা গ্লাসের জারে রাখা গোল্ডফিশের মতো এক-একটি গোল্ডফিশ।
এতদিন শুনতাম ধর্ম মানুষকে আফিমের মতো বুদ করে রাখে। এই যে অকল্পনীয় মহাবিশ্বের সংখ্যা আমাদের হকিং সাহেব শোনালেন ও স্রষ্টাকে বেকার বানিয়ে দিলেন , সেটা নিয়ে উৎফুল্ল হওয়া কেবল হেরোইন সেবন করেই সম্ভব।
লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী –
এরপরেও মুক্তমনা পাঠকদের উৎফুল্লতা দেখে আমার তো মনে হয় , হকিংয়ের বিজ্ঞান তাদেরকে হেরোইনসেবী বানিয়ে তুলছে।
বাজিকরের বাজির উপরে ভিত্তি করে টানা বৈজ্ঞানিক(?) স্বীদ্ধান্তকে নিয়ে উৎফুল্ল হতে পারলাম না। দুঃখিত।
@ফারুক,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
আমি নিশ্চিত আপনি উৎফুল্ল না হওয়ায় হকিং সাহেব নিদারুণ মনোকষ্টে আছেন। 🙂
ও আরেকটি ব্যাপার ফারুক, বিজ্ঞানের প্রবন্ধে অযথা হিরোইনসেবী সেবী না আনাই উত্তম। নাইলে এ ধরণের বিশেষণ কেউ আপনার সম্বন্ধেও ব্যবহার করতে পারে। কী দরকার এগুলো করার, তাই না?
@ফারুক,
নিশ্চিত যখন হয়ে গেছেন তাহলে দা গ্রান্ড ডিজাইন এর ইসলামী ভার্সন লিখে ফেলেন।
কেন, কী হয়েছে? আল্যা যে এত্ত ছোট্ট মহাবিশ্ব তৈরী না করে অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী করেছেন, তাই তিনি আরো অনেক বড় তাই না? কেউ যদি বলে একেকটা মহাবিশ্ব একেকজন আল্যা বানাইছে তখন যাবেন কই? শিরকের গুনার তো মাফ নেই। আয়াতটা বলব?
বিজ্ঞান আর ধর্ম-অপবিশ্বাসের পার্থক্য বুঝেন? যত্তসব।
বেশ বলেছেন। আমি কল্পনা করতে চাই- হকিং ভুল করে একদিন বলে ফেললেন- ঈশ্বর নামক কেউ মহাবিশ্বের পেছনে আছে। তাহলে যে বাদর নাচটা আমরা দেখতে পেতাম তার কি কোনো তুলনা সম্ভব হত? স্বয়ং হকিং যে শতবার মাফ চেয়েও তা থামাতে পারতেন না তা হলফ করেই বলা যায়। বইটি প্রকাশের পর একজন গো-মূর্খকে বিভিন্ন ব্লগে লেখতে দেখলাম- হকিং নাকি নিদেন পক্ষে দুই জন ঈশ্বরের কথা বলেছেন!! 🙂
হকিং কোথাও বলেন নাই তিনি নাস্তিক। নাস্তিকতা প্রচার তার কাজও না। তিনি আগা গোড়া একজন বিজ্ঞানী। এখন হকিং এর মত একজন বিজ্ঞানী যদি অন্তত এটা দেখাতে পারেন যে ঈশ্বর নামক উদ্ভট বিষয়টিকে না এনেও মহাবিশ্বের উৎপত্তির বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হচ্ছে তবে সেটাই তো অনেক, অন্তত আবাল জন সাধারণের জন্য। একজন বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে না জানলেও এমনকি প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কেও না জানলেও তিনি এখানে ঈশ্বরকে নিয়ে আসবেন না। আমি জানি না- এর মানে এই নয় যে ঈশ্বর তা করেছেন বা এর ব্যাখ্যা ঈশ্বর।
ঈশ্বর স্রেফ একটা কুসংস্কার। মানুষের অজানাকে জানার বাসনাকে অংকুরে বিনষ্ট করতে ঈশ্বর-ব্যাখ্যার কোনো তুলনা নেই। অজানাকে জানার যে বাসনা মানুষের মধ্যে রয়েছে তাকে ঈশ্বর নামক একটা গর্দভীয় ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে অন্ধ করে রাখা হয়। ঈশ্বর নামক ভাইরাস যদিবা মাথায় ঢুকে যায় তবে বিরাট সমস্যা। কোথাও কোনো অজানা কিছু বা রহস্যময় কিছু পেলেই বিশ্বাসীরা ধরে নেবেন তা ঈশ্বরের কারসাজি। তারা বুঝেন না যে- ঈশ্বর দিয়ে কোনো কিছুই ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় নি, শুধু একটি রহস্যের সমাধানের জন্য আরেকটি রহস্যের অমদানি ঘটানো হয়েছে মাত্র।
@ফারুক,
অ.ট: আপনি কি সচলের ফারুক ওয়াসিফ????
🙁
@আসরাফ, না।
নিরাভরণ সুন্দর। এতো উন্মুক্ত, অথচ কি গভীরতা। গোটা বইটাই বাংলা করে দিন প্লীজ, পাদটীকা সমেত। অ-বিজ্ঞানীরা বাংলা করলে সুখপাঠ্য হলেও সময়, সময় বস্তুনিষ্ঠ থাকে না। আপনি লিখলে সে ভয়, থাকে না।
একটা প্রশ্ন, কোন একটি মৌল কণা-ই মাঝে মাঝে , পরিস্থিতি সাপেক্ষে, নিজেকেই বিভিন্ন রূপে উপস্থিত করে নাতো? একটাই কণা কখনও নিজেকে পজিটিভ, কখনও নেগেটিভ বা চার্জবিহীন হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করতে পারে কি?
বিবর্তনের কোনও ধাপে আমরা মাধ্যম ছাড়াই পরস্পরের সঙ্গে চিন্তার বিনিময় করতে পারব কি, যেহেতু একটি নির্দিষ্ট ব্রম্ভাণ্ডে নির্দিষ্ট শুন্য থেকে সমস্ত জীব ( নাকি একটাই জীবনের ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ) সৃষ্ট হয়ে কালক্রমে ক্রমবির্বতিত হতে হতে আমাদের বেঁচে থাকা।
@ভাস্কর,
মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরী হল বলে দুঃখিত। ধন্যবাদ আপনার সহৃদয় মন্তব্যের জন্য। আমি মঊলকনা শুধু নয় মহাবিশ্বের উদ্ভবের কিছু ব্যাখ্যা হেলালকে উত্তর দিতে গিয়ে দিয়েছি। আপনি দেখে নিতে পারেন। চার্জ পার্টিকেল গুলোকে বলা হয় ইলেকট্রিক মনোপল, এর বাইরে ম্যাগনেটিক মনোপল এর প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশন এবং সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব এর প্রেডিকশন করলেও ম্যাগনেটিক মনোপল এর খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনো (কিছু ক্ষেত্রে দাবী করা হলেও এখনো ইনকঙ্কলুসিভ)। চার্জ নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন কনার অভ্যুদয় ঘটেছিল অনেক পরে – বিগ ব্যাং এর ৩৯০ ০০০ বছর পরে যখন তাপমাত্রা কমে মোটামুটি প্রায় ৩০০০ ডিগ্রি কেলভিনে পৌঁছেছিল। আর জানতে চাইলে পার্টিকেল ফিজিক্সের উপর বই যোগাড় করে পড়ে ফেলতে পারেন।
ভাল থাকুন, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ, আমি পদার্থ বিজ্ঞান পড়তে পারিনি মেধার ঘাটতির জন্য। কিন্তু অনেক প্রশ্ন আমাকে তাড়িত করে। কিছুটা বুঝতে পারি এমন লেখা, গোগ্রাসে গিলি। জানতে ইচ্ছে হয়, কেবলি। কিন্তু নিজে বুঝলেও বোঝাতে পারেন, এমন লোক থাকলেও আমার সঙ্গে দেখা মেলে না। আপনি একটা ই মেল দিলে, মত বিনিময় করার সুযোগ পেতাম। আমার টা তো জানেন – [email protected]
উত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
চমৎকার কাজ হয়েছে, তবে আপনার কাছে থেক রিভিউটা আরো আগেই আশা করেছিলাম 🙁 ।
দর্শনের মৃত্যু ঘন্টা শুনে আমিও বেশ আশান্বিত হয়েছিলাম, কিন্তু আমার মনে হয় দর্শনের মৃত্যু এতো সহসাই ঘটবে না। দর্শনের মৃত্যু সেদিনই ঘটবে যেদিন বিজ্ঞান মানুষের/বিশ্বের প্রতিটি ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারবে, প্রেডিক্ট করতে পারবে। বিজ্ঞান কি সেই পর্যায়ে গিয়েছে? না, যায় নি। বিজ্ঞানকে এখনো আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে, সেদিনই হয়তো বা দর্শনের মৃত্যু হবে। তবে এটা মনে রাখতে হবে দর্শন এবং বিজ্ঞান সমার্থক। বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু দর্শনে সম্ভব নয়। তাহলে দর্শনের স্থান কোথায়। বিজ্ঞান এখনো যে বিষয়গুলোকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি সেখানেই দর্শনের স্থান। যেমন ব্যক্তি মানুষের চরিত্র কিংবা গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের চরিত্র। আমরা এখনো পুরোপুরি জানি না কিভাবে ব্যক্তি মানুষ বা গোষ্ঠিবদ্ধ মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়। মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে। এগুলোকে জানার প্রক্রিয়ার মাঝে আছে। কিন্তু মানুষ কি বসে থাকবে সে পর্যন্ত? না। মানুষ তার সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়েই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মানুষের জন্য কোন আদর্শ/ কোন মতবাদ মঙ্গলজনক হবে দর্শন সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। এগুলো বিজ্ঞান করবে না। এখানেই দর্শন চলে আসে। এটা ঠিক বিজ্ঞান যখন আজকের মত অগ্রসর ছিল না তখনকার দর্শন অনেক প্রিমিটিভ ছিল। সেই দর্শনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত দর্শনের মৃত্যু হয়নি। তবে এখনকার মানুষ আগেরকার একজন মানুষের তুলনায় অনেক বেশি জানে। উই আর স্ট্যান্ডিং অন দ্যা শোল্ডার অফ এ জায়ান্ট। তাই আজকের যে কেউ হতে পারে একজন দার্শনিক। কাজ করতে পারে মানুষের মঙ্গলের জন্য। এ কারণে যে কোন কবি, গল্পকার, গবেষক, বিজ্ঞানী সবার মাঝেই আমি একজন দার্শনিক মনের দেখা পাই। গত কয়েকদিন ডঃ ইউনূসের লেখা তিনটি বই পড়লাম। সেই উনার লেখার প্রতিটি কথাতে একজন দার্শনিকের দেখা পাই।
@স্বাধীন,
তারপরেও দর্শনের মৃত্যু নেই। কারন বিন্দু হতে আমাদের উৎপত্তি, বিন্দুতেই শেষ। তাই জীবনের উদ্দেশ্যকি-এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দেবে না, দিতে সাহায্য করবে শুধু।
বরং এখানে ভুল করলে। এগুলো পুরোপুরি সমাজ বিজ্ঞানের অংশ।
@বিপ্লব পাল,
কথা সত্য। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞান, কিংবা অর্থনৈতিক মডেল গুলোকে কতটুকু বিজ্ঞান বলবো, এটা আমার নিজের কাছে একটি প্রশ্ন। পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের মত সেগুলোকে কি পুরোপুরি বিজ্ঞান বলবো? এ কারণেই আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, কিংবা সামাজিক বিজ্ঞান বা অর্থনীতি বিদ্যাকে বিজ্ঞান এবং দর্শনের মিডলেই রাখছি। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
@স্বাধীন,
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে স্যার কার্ল পপারের দর্শন বা পপারিয়ান জানতে হবে। এটিকে বিজ্ঞানের দর্শনের ডিমার্কেশন সমস্যা বলে, যার সমাধান স্যার পপার দিয়েছিলেন
http://www.xenodochy.org/article/popper.html
সংক্ষেপে সব বিজ্ঞানের পদ্ধতি ইনডাকশনিজম নির্ভর। কেন? কারন অভিজ্ঞতাবাদ একটা ছোট স্যাম্পল স্পেসের পর্যবেক্ষন থেকে, ইনডাকশন পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের সূত্রে পরিণত হয়।
সুতরাং এই পদ্ধতির মধ্যে অনেক ত্রুটি থাকে। আর বিজ্ঞানের দর্শন সেই ইনডাকশনই হয়ে ওঠে যাতে ত্রুটির ওপর কন্ট্রোল থাকে।
সমাজ বিজ্ঞান অবশ্যই বিজ্ঞান।
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ।
নেক্সট পড়ার বিষয় ঠিক করলাম – কার্ল পপার। কার্ল পপারের কোন বইটা দিয়ে যাত্রা শুরু করা যায়?
গত সপ্তাহে ডঃ ইউনূস দর্শন পড়লাম। মাইক্রোক্রেডিট কিংবা সামাজিক ব্যবসার উপর আপনার কি কোন লেখা আছে?
@স্বাধীন,
আমি ইউনুস এবং সামাজিক ব্যাবসার ওপর তিনটে লেখা লিখেছি। কিন্ত আগে পপার পড়। পপার আগে বেশ কিছু দিন ঘাঁট। পপার না পড়লে রাজনীতি বা সমাজ বিজ্ঞান খুব বেশী গভীরে গিয়ে বুঝতে পারবে না। পপারের ওপর বই না পড়ে, আগে ওয়াকিতে যা রেফারেন্স আছে-উনার অনেক প্রবন্ধ নেটে ফ্রিতেই পাবে। সেগুলো আগে পড়।
@বিপ্লব পাল,
কাইন্ডলি লিঙ্ক দিন। পপার পড়বো। তার আগে ইউনূসের উপর লেখাগুলো পড়তে চাই।
@স্বাধীন,
লজিক অব সায়েন্টিফিক ডিসকভারীটা পড়তে পারেন, ওই বইটিতেই তিনি প্রথম মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্যতাবাদ বা ফলসিফিকেশনিজম প্রস্তাব করেছিলেন। ইবুক চাইলে মেইল করে দিতে পারি।
গণিতের ব্যবহারের কারণে বইটা অর্ধেক পড়ে আর অগ্রসর হতে পারিনি 🙁
@স্বাধীন,
এরা বিজ্ঞানের বেসিক নিয়ম বা বাউন্ডারিগুলো মেনে গবেষণা চালালে তাকে বিজ্ঞান বলা হবে না কেন?
@বন্যা আহমেদ,
“দর্শন”-এর কাজ হচ্ছে একটি continuum কে ইচ্ছেমত catergorize করে সেটাকে নিয়ে ঘোঁট পাকানো। সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস এরা সবাই “বিজ্ঞান”, শুধু তাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের পরিমাণ রসায়ণের চেয়ে পরিমাণে ন্যূন।
@রৌরব,
এদের প্রতি আপনার নিখাদ ভালোবাসা দেখে আমি বাকরুদ্ধ (‘যদি’ শব্দটাকে আমার লেখা বাক্যটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে ধরে নিলে কিন্তু আমার আর আপনার বক্তব্যের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না :-/ )
হা হা হা, এবার একটা ভালো কথা বলেছেন। আমি বিপ্লব এবং স্বাধীনকে এখনি বলতে চাচ্ছিলাম যে আমার তো মনে হয় জীবনের উদ্দেশ্য আর আলাদা করে খোঁজার কোন প্রয়োজন পড়বে না একদিন। ‘বিন্দুতে বিন্দুতেই’ কাটাকাটি হয়ে যাবে । এখনি বিজ্ঞানমনষ্ক বহু মানুষের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য বোঝার জন্য আলাদা কোন দর্শনের দরকার পড়ে না।
আহারে, মাঝে মাঝে দুঃখই হয়, দর্শন বেচারা চিপা খেতে খেতে ৮ লেনের হাইওয়ে ছেড়ে পুরান ঢাকার আন্ধা গলিতে এসে পৌঁছেছে! আগে হাত বাড়ানো তো দূরের কথা আঙ্গুলের ডগা ছোয়ালেই ‘দর্শন দর্শন’ বলে সবাই চিক্কুর পারতে শুরু করতো :laugh: । তারপর বিজ্ঞান কিছুটা আগানোর পর বলা হল, বাপু, যত লাফালাফি কর না কেন, ধর্ম, নৈতিকতা, সৃষ্টি বা সৃষ্টিকর্তার মত বিষয়গুলোর জন্য কিন্তু দর্শন ছাড়া গতি নেই। এখন তো সেগুলোরও প্রায় যায় যায় অবস্থা। বিজ্ঞান তো আজকাল নৈতিকতা থেকে শুরু করে মানুষের চরিত্র, সামাজিক আচার আচরনের মত বিষয়গুলোও কেড়ে নিতে শুরু করেছে।
আসুন আমরা এহেন ‘বৈজ্ঞানিক সাম্রাজ্যবাদের’ বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই!
@বন্যা আহমেদ,
একেতে হাতে সময় নেই। তারপর তোমরা এত উত্তক্ত করছ, হকিংস এর দর্শন নিয়ে উক্তিটির বিরুদ্ধে কলম ধরতেই হবে উইকেন্ডে।
@বিপ্লব পাল,
কলম ধরবেন বলছেন কেনো, সাম্প্রতিক সময়ে আপনার কলমটিকেতো ছাড়তেই দেখেনি কেউ। উত্তক্ত বোধ করে কলমটি এইবার আরও শক্ত করে চেপে, ঠেঁসে ধরবেন বলছেন বুঝি? আপনার মোলায়েম কলম থেকেই যখন কিনা বের হয় মার্ক্স, লেনিন, স্ট্যালিনের গৌরবগাঁথা, চর্বাক, ভৃগুমুনির নাস্তিক্যবাদী দর্শন- শক্ত করে ঠেসে ধরা কলমটি থেকে কি জিনিষ বের হবে এটা কল্পনা করে আমি নিশ্চিত বন্যা আহমেদ আপনাকে উত্তক্ত করার জন্য অনুতপ্ত :laugh: । আমতাবস্থায় আপনার কলমটিকে আপনি যদি একটু নিস্তার দেন এই ইন্সট্যান্সে, বলাই বাহুল্য সেটা শুধু আপনার কলম এবং বন্যা আহমেদের জন্যই শান্তিদায়ক হবে না, শান্তিদায়ক হবে বরং আমার মতো আরও অনেক ইনোসেন্ট মুক্তমনা সদস্যদের জন্যও :lotpot: !
@বন্যা আহমেদ,
বলতে চাচ্ছিলেন তো বললেন না কেনো, বলে ফেলুন, আর পারলে আমার পক্ষ থেকে একটা প্রশ্নও জিজ্ঞেস করে নিয়েন- আগামীকালকে যদি দর্শন উদঘাটন করেও এমনকি ফেলে যে জীবনের উদ্দেশ্য কি, কতোগুলো মানুষের জীবন বাঁচাবে সেটা, জীবনকে এখনের চেয়ে কতোটুকু বেশী সুখকর করে তুলবে কিংবা মানবসভ্যতার কতো ম্যানয়াওয়ার পরিশ্রম কাটতি করবে?
@বিপ্লব পাল,
সহমত এই কথাতে।
হুম এটা মনে হয় ঈশ্বরীয় ব্যাখ্যা হিসেব চালানে যাবে!!!!
হায়! এটা কেমন কথা? এ ব্যপারটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে।
বুঝেছি এটা কবি আইনস্টাইনের কবিতার লাইন।
@আসরাফ,
আইনস্টাইন বোধ হয় ফারুক ভাইয়ের নাম শুনেন নি। আমি বলি, ফারুক ভাইকে যে বুঝাতে পারলোনা সে তো কিছুই শিখলোনা। ফারুক ভাই বলেন-
হাহ! হকিং সাহেব ফেই—–ল্ড।
লেখাটা মনে হয় আরো আগে এলে আরো ভালো লাগত। বইটা বের হবার পরে বা কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন ফোরামে ছাগুধর্মীদের ছাগলামীতে কিছুটা মলম দিতে পারা যেত।
@শ্রাবণ আকাশ,
আর মলম! দেখবেন, ওরা হকিং-এরও দোষ খুঁজে বের করবে। বলবে জাকির নায়েক কিংবা হারুন ইয়াহিয়া হকিং এর চেয়ে বেশি ফিজিক্স জানে।
সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। মুক্তমনার জন্য লিখলে খুশি হব।
Avijit da
I was expecting for a review over this excellent book. You have done a very difficult job. This book is yet to get in my hand. Thank you very much.
SIDDHARTHA SHANKAR
@siddhatrhaদা,
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। এবারের মুক্তান্বেষায় আপনার ‘বিশ্বাসের কতকথা’ লেখাটা পড়লাম। বেশ ভাল লাগলো। মুক্তমনাতেও পোস্ট করতে পারেন কিন্তু।
আরেকটা ব্যাপার, আপনি কিন্তু ইচ্ছে করলেই বাংলায় লিখতে পারেন। অভ্র ডাউনলোড করে নিন। একদমই সোজা ইউনিকোডে বাংলায় লেখা। মন্তব্যের টেক্সটবক্সের নীচে ‘অভ্র’ বোতাম টিপেও প্র্যাক্টিস করতে পারেন, আর যদি আপনি বিজয়ে অভ্যস্ত হন, তাহলে বিজয় বোতাম চেপে টাইপ করে দেখুন। তবে অভ্র ডাউনলোড করে নিলেই সবচেয়ে ভাল।
রিভিউ লেখাটা দারুণ একটা কাজ হয়েছে।”গ্রান্ড ডিজাইন” বইটা পড়ার ইচ্ছে আছে। আগে পড়ে নিই। আপাতত কোন মন্তব্য করছিনা তাই।
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ লীনা!
দারুণ সাবলীল লেখা, তরতর করে পড়া গেল বিষয়বস্তু কঠিন হওয়া সত্বেও।
“ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়” কথাটা কেমন যেন। ক্যালটেকই তো যথেষ্ট।
যদিও পুরো বই পড়িনি, তানভীরুল ইসলামের আংশিক অনুবাদ ও এই প্রবন্ধের আলোকে বিপ্লব পালের মন্তব্যের সাথে আমি একমত। দার্শনিক ভাবে হকিং-র বক্তব্য বেশ একটু frustrating। কিন্তু বিজ্ঞানটাই যেহেতু মূল, অতএব এ নিয়ে হয়ত কথা না তুললেও চলে।
@রৌরব,
আপনি যখন বলছেন, তখন ‘যথেষ্ট’ না হয়ে উপায় কি! যথা বাবাজীকে রেখে ইষ্ট বাবাজিকে বিদায় করে দিলাম। শুধুই ক্যালটেক থাকলো!
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
জিসাস এন্ড মোর কার্টুনটা বরাবরের মতই জায়গামত আঘাত হেনেছে। এরকম বুদ্ধিদীপ্ত কার্টুন সিরিজ খুব কমই দেখেছি।
@পৃথিবী,
আমিও! :yes:
এ ধরণের রোগে বেঁচে থাকা রোগীদের আমরা যেখানে প্রায়শঃই দেখি রাম নাম জপে কিংবা ‘আল্লা -বিল্লা’ করেই সময় পাড় করে দিতে, কিংবা নিয়োজিত থাকে মহান স্রষ্টার গুণকীর্তনে
হক মওলা না ডেকে উপায় আছে? অন্যের করুণা পাওয়ার একটাই উপায় মরা খোদাকে জীবিত করা।
আচ্ছা আপনার এই লেখা সহ বেশ কয়েকটা লেখায় পড়েছি,
কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী শূন্যতাকে আনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। শূন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শূন্য নয়- পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে যে শূন্যদেশকে আপাতঃ দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে।
এই ব্যপারটা কি একটু সহজ করে বলবেন? কঠিন কথা সহজ করে বলার ক্ষেত্রে হকিঙ এর মতো আপনারও জুড়ি মেলা ভার।
@হেলাল,
সহৃদয় মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এটি বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। ভার্চুয়াল পার্টিকেল কি, ভ্যাকুয়াম ইনার্জি কি, ডিসিটার স্পেস কি, মিনকাওস্কি স্পেস কি, ফলস ভ্যাকুয়াম কি … নানা কিসিমের ব্যাপার স্যাপার এসে পড়বে। দেখি আগামীকাল ধীরে সুস্থে সহজ ভাষায় আপনার অণুসন্ধিৎসা মেটানোর চেষ্টা করব।
@হেলাল,
আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে একটু দেরী হয়ে গেলো। আপনি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলেন। এর বেসিক ধারণাটি আমার এই প্রবন্ধেই আছে। কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী শূন্যতাকে আনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। শূন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শূন্য নয়- পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে যে শূন্যদেশকে আপাতঃ দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থকণা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তৈরী হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে। যেমন, শূন্যাবস্থা থেকে সামান্য সময়ের ঝলকানির মধ্যে ইলেকটন এবং পজিটন (পদার্থ-প্রতি পদার্থ যুগল) থেকে পদার্থ তৈরী হয়েই আবার তা শূন্যতায় মিলিয়ে যেতে পারে। ব্যাপারটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’।কাসিমির এফেক্ট সহ বহু পরীক্ষায় এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
এখন কথা হচ্ছে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কেন হয়, আর কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যেম কীভাবে একটি সম্পুর্ণ মহাবিশ্ব শুণ্য থেকে উদ্ভুত হতে পারে? ব্যাপারটা বলা জটিল। খুব সহজে বললে এটুকু বলা যায়- এই শূন্য শক্তি কিংবা ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের ভিত্তিটি গড়ে উঠেছে হাইজেনবার্গের বিখ্যাত অনিশ্চয়তা তত্ত্বের জন্য। ১৯২৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ গানিতিকভাবে প্রমাণ করে দেখান যে, কোন বস্তুর অবস্থান এবং ভরবেগ যুগপৎ একসাথে নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বস্তুর অবস্থান ঠিক ঠাক মত মাপতে গেলে দেখা যাবে, ভরবেগের তথ্য যাচ্ছে হারিয়ে, আবার ভরবেগ চুলচেরা ভাবে পরিমাপ করতে গেলে বস্তুর অবস্থান অজানাই থেকে যাবে। কাজেই হাইজেনবার্গের এই সূত্র সত্যি হয়ে থাকলে, এমনকি পরম শূন্যেও একটি কণার ফ্লাকচুয়েশন’ বজায় থাকার কথা, কারণ কণাটি নিশ্চল হয়ে যাওয়ার অর্থই হবে এর অবস্থান এবং ভরবেগ সম্বন্ধে আমাদেরকে নিশ্চিত তথ্য জানিয়ে দেওয়া, যা প্রকারন্তরে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বের লংঘন।সেজন্যই কোয়ান্টাম স্তরে এমনকি পার্ফেক্ট ভ্যাকুয়ামের মধ্যেও ফ্লাকচুয়েশন ঘটতে দেখা যায়।
এখন কথা হচ্ছে কীভাবে কোয়াণ্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের মত একটা বড় সড় জিনিস তৈরি হতে পারে, যা অন্ততঃ ১৪০০ কোটি বছর ধরে টিকে আছে? এই ব্যাপারটাই সমাধান করেছেন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীরা। প্রথমে এডওয়ার্ড ট্রিয়ন ১৯৭৩ সালে একটি পেপার লিখেন – Is the Universe a Vacuum Fluctuation?,শিরোনামে বিখ্যাত সায়েন্তিফিক জার্নাল নেচারে ( Nature, vol. 246, pp. 396-397(1973))। তবে ট্রিয়নের প্রস্তাবিত মডেলে ছোটখাট কিছু সমস্যা ছিলো, সেগুলো আবার পরবর্তীতে আলেকজান্ডার ভিলেঙ্কিন, হকিং-হার্টলি এবং পরিশেষে আশির দশকে অ্যালেন গুথ এবং আদ্রে লিন্ডে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ যদি খুব কম হয় তাহলে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে যে মহাবিশ্ব তৈরি হবে তা বহুদিন টিকে থাকবে, কারণ ব্যালেন্স শিটের ডান পাশ আর বাম পাশ সমান করার জন্য দেকে আনতে তাকে বহুদিন সময় দেয়া হবে। বিজ্ঞানীরা সত্যিই গণনা করে দেখেছেন যে, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি (মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ শূন্য; মহাবিশ্বের মোট গতিশক্তি এবং মাধ্যাকর্ষণের ঋণাত্মক শক্তি পরষ্পরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়)। তাত্ত্বিকভাবে দেখান হিয়েছে, এ ধরণের অবস্থা থেকে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হলে তা প্রায় অসীমকাল ঠিকে থাকবে। সেজন্যই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আছে।
ইনফ্লেশন বা স্ফীতিতত্ত্ব-এর গবেষনা থেকে আরো জানা গেছে যে মহাবিশ্বের উষালগ্নে কিছু ফেস ট্রাঞ্জিশনের মত ব্যাপার ঘটেছিলো। এই ব্যাপারটাও সাধারণ ভাষায় ব্যাখ্যা করা জটিল। ব্যাখ্যা করতে গেলে ডিসিটার স্পেস সম্বন্ধে জানতে হবে – যেখানে খুব কম ভ্যাকুয়াম এনার্জি লুকিয়ে থাকে। তবে এ সমস্ত জটিলতায় না ঢুকে একটা সাধারন উদাহরনের সাথে তুলনা করব আমি। আমরা ওনেক সময় দেখি দেখি যে, পানি খুব দ্রুত শীতল হয়ে গেলে ফ্রিজিং পয়েন্টের নীচেও (বরফ না হয়ে) তরল অবস্থায় থাকে। পানির এই ‘ভুল’ অবস্থাকে বলে ‘সুপারকুল্ড স্টেট’। মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও এরকম কিছু ব্যাপার ঘটেছিলো। মহাবিশ্ব প্রথমে ফলস ভ্যাকুয়ামে ছিল, তারপর খুব তারাতাড়ি ফেস ট্রাঞ্জিশনের মাধ্যমে ‘ট্রু ভ্যাকুয়ামে’ চলে আসে। এ সময়েই হিগস ফিল্ড শীতল হয় আর কণাগুলোর ভর তৈরি হয়।
স্ফীতিতত্ত্বের এই পর্যন্ত দেয়া ধারণাগুলোর অনেকগুলোই পরোক্ষ পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যায়। যেমন মহাবিশ্ব কেন এত ফ্ল্যাট, তারপর হরিজন মনোপল সমস্যা যেগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং তত্ত্বের পর হিমসিম খাচ্ছিলেন – সেগুলোর যৌক্তিক সমাধান দিয়েছে ইনফ্লেশন। তাই বিগ ব্যাং-এর পরে গুথ-লিন্ডের ইনফ্লেশন তত্ত্ব এক বড় ধরনের অগ্রসরতা হিসেবেই বিজ্ঞানীরা এখন চিহ্নিত করেন।
তবে ইনফ্লেশনের কিছু বাড়তি কিছু করোলারি আছে, যা পরবর্তী গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে, এবং হয়ত বাস্তবে ঘটেছেও। এই একাধিক মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ব্যাপারটি মূলতঃ আদ্রে লিন্ডের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বলা হয়ে থাকে সৃষ্টির উষালগ্নে ইনফেçশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত বুদ্বুদ (Expanding Bubbles) থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে, যেগুলো একটা অপরটা থেকে সংস্পর্শবিহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা অবস্থান করছি অন্য গুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে একেবারেই জ্ঞাত না হয়ে। ব্যাপারটিকে বলা হয় এটার্নাল ইনফ্লেশন। মাল্টিভার্স হাইপোথিসিস মুলতঃ এটারনাল ইনফ্লেশনেরই অনুসিদ্ধান্ত।
এম তত্ত্ব থেকেও আমরা একই ধরণের সিদ্ধান্ত পেয়েছি, যেটা হকিং তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন এই সংখ্যা $latex 10^{500}$ টির মত হতে পারে। এর ফিজিকাল ইন্টারপ্রিটেশন হচ্ছে – আসলে একগুলো এককেটি ‘ভ্যাকুয়াম স্টেট’ যেখান থেকে একেকটি ‘বেবি ইউনিভার্স’ তৈরি হতে পারে, এবং প্রতিটির উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সূত্র কাজ করতে পারে।
এর বেশি আমার পক্ষে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হল না। আমি আমার ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটাতে এবং আন্তর্জালের কিছু লেখায় হাল্কাভাবে আলোকপাত করেছিলাম, সেগুলো আছে এখানে, এখানে এবং এখানে। বিষয়গুলো আরো ভাল ভাবে জানার জন্য আমি এলেন গুথের ‘ইনফ্লেশনারী ইউনিভার্স’টি রেকমেন্ড করব। সম্প্রতি শন ক্যারলের ‘ফ্রম এটারনিটি টু হেয়ার’ বইটা পড়লাম। ওটাতেও বিষয়গুলো খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারেন।
আপনার অনুসন্ধিৎসার জন্য ধন্যবাদ।
এই বইয়ের রিভিউ আমি সবার আগে মুক্তমনায় আশা করেছিলাম। এতদেরিতে এল এই রিভিউ। তবে রিভিউ ভালো হয়েছে। কবিতা, গান, বিজ্ঞান – কঠিন সমাহার।
@Atiqur Rahman Sumon,
হ্যা, বাংলা/হিন্দি সিনেমার মত হইসে আর কী- নাচে গানে টইটুম্বুর! 😀
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
বাংলা ভাষায় এধরনের রিভিউ খুবই জরুরী। অসম্ভব ভালো লাগলো অল্প লেখায়, অল্প সময়ে এরকম একটা বইয়ের কিছুটা গভীরের বিষয় জানতে পেরে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@Nagorik,
আপনাকেও ধন্যবাদ আপনার পঠন এবং মন্তব্যের জন্য!
দুর্দান্ত। এই না হলে কী আর আমাদের অভি। অভির অন্যতম সেরা একটি লেখার তালিকায় থাকবে এটি।
হকিংসের এই বইটা আসলেই সুখপাঠ্য। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে এই বই।
@ফরিদ আহমেদ,
আপ্নেরেও দুর্দান্ত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
আপ্নের নেক্সট গল্প কই?
বই টা বিজ্ঞানের বই হিসাবে অসাধারন। প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তথ্য জনপ্রিয় সহজ অথচ নিঁখুত।
কিন্ত হকিংস এর দর্শনের জ্ঞান অতটা গভীর না। দর্শন সংক্রান্ত বক্তব্যে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ করা যায়। যেধরনের সমস্যা গুলি দর্শন শাস্ত্রে জ্ঞাত, উনি তার অনেক কিছুই জানেন না। সুতরাং এটিকে অসাধারন দার্শনিক গ্রন্থ বললে ভুল হবে। আমার এই নিয়ে একটা লেখার ইচ্ছা ছিল-সময় নেই। অনেক সময় লাগবে হকিংসে দর্শন সংক্রান্ত বক্তব্যে কোথায় কোথায় ভুল আছে ধরে লিখতে।
@বিপ্লব পাল,
এটি যদি এই পোস্ট এর লেখকের কাছে অসাধারন দার্শনিক গ্রন্থ মনে হয় তাহলে আপনার তাতে সমস্যা আছে ? আমার কাছে যদি এইটা অসাধারন মনে হয় সেটার ভুল ধরবেন আপনি কারন আপনার কাছে মনে হয় হকিং অনেক কিছু জানে না ? কিভাবে বুঝলেন হকিং জানে না ? এমনকি হতে পারে না যে আপনি নিজেই হকিং এর ধারনাটা বুঝেন না… ??
আপনি ভুল ধরতে পারেন , এইটা আপনার স্বাধীনতা কিন্তু এই দর্শন যেহেতু একটা সাবজেক্টিভ জিনিস তাই এর ভুল ধরা কতটা যৌক্তিক ? আর আপনি যেই ভুল ধরবেন সেটাও তো ভুল প্রমান করার রাস্তার অভাব নাই… দর্শন আরেকটা ধর্ম… এইটাকেও একদিন বিদায় নিতে হবে… সাহিত্য চর্চার বাইরে এর কোণ জায়গা থাকবে না! তাই অনুরোধ করবো হকিং এর দর্শন নিয়া কথা না বলে , উনি বিজ্ঞানের কি কি বিষয়ে কি কি জানেন না এই নিয়া একটু কথা বলেন… দেখবেন সবাই হাসবে…
কারন সবাই সবকিছু জানতে পারে না… তেমনি দর্শন একটা বিশাল জিনিস, বলতে গেলে প্রত্যেক্টা জন্ম নেওয়া মানুষের ধারনার সমষ্টী, তাই উনি দর্শনের অনেক কিছু জানে না এইটা সাধারন জ্ঞান… নতুন করে বলার কি আছে ? হকিং এর ভুল ধরতে পারার আত্মপ্রসাদ ?
আপনিও অনেক কিছু জানেন না, তাই বলে আপনি যা জানেন সেইটা ভুল ? আরো অনেক কিছু জানেন না বলে আপনার একটা রিসার্চ অসাধারন হতে পারবে না ? আমরা সবাই কি এতই নির্বোধ যে হকিং কে এমন একজন দার্শনিক মনে করি, যে ব্লাকহোল থেকে দর্শন সব মাথায় নিয়ে জন্মেছে ?
@অনন্ত নির্বাণ,
আরে বিপ্লব পাল জানে না এমন কিছু ধরাধামে নেই 🙂
অন সিরিয়াস নোট, কারো কাছে দার্শনিক প্রেক্ষাপট থেকে হকিং এর বইটা উঁচুমানের মনে নাই হতে পারে। আমি সম্ভবতঃ বুঝতে পারছি বিপ্লব ঠিক কোন জায়গাটা থেকে মন্তব্যটি করেছে। হকিং এর বইটি পশ্চিমা দর্শনের উপর ভিত্তি করে রচিত, প্রতীচ্যের অনেক অভিজ্ঞান অনুক্ত থেকে গেছে। ভৃগু, চার্বাক, বৃহস্পতি, বুদ্ধ প্রমুখদের দর্শনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এরা বহু আগেই ভারত বর্ষে বস্তুবাদী দর্শনের সূচনা ঘটিয়েছিলেন। প্রতীচ্যের অনেক গভীর দর্শনের সাথে পশ্চিমারা পরিচিত নন, সেটা ঠিক। তবে আধুনিক বিজ্ঞান যে জায়গায় পৌঁছেছে সেখানে সেই প্রাচীন আর্য মরমীবাদ আর সে যুগের ঋষিদের আধ্যত্মবাদী দর্শন না জানলেও খুব একটা সমস্যা আছে বলে মনে করি না। হকিং দর্শনের প্রান্তিক সমস্যাগুলোকে একজন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীর চোখ দিয়ে দেখতে চেয়েছেন। সেটাই বইয়ের মূল উপজীব্য!
@অভিজিৎ,
না প্রাচ্য না-পাশ্চাত্য দর্শনের কিছু বেসিক ভুল আছে। বাস্তবতার সংজ্ঞা এবং টার্মিনোলজী নিয়ে। এগুলো সিরিয়াস নয়। তবে এগুলোর বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ আছে।
@অভিজিৎ,
:lotpot: :lotpot: :lotpot: ফোকা একখান পাইলেই ভইরা দাও একটা কনস্পিরেসি থিওরি। বিপ্লব পাল সমাজবিজ্ঞানের গর্ব!
@অনন্ত নির্বাণ,
হকিংসের ভুল গুলো খুব বেসিক। আমি কিন্ত এখনো সেটা নিয়ে লিখি নি। লেখকের পছন্দ হয়েছে এবং তার পছন্দ হওয়া উচিত না ,সেটা নিয়েও কিছু বলি নি। আলোচনা, অবজেক্টিভ হওয়া শ্রেয়-গায়ে পড়ে ঝগড়া কেন?
বিজ্ঞান ও দর্শন বা দর্শনের শাখা। বিজ্ঞান কবে থেকে সাবজেক্টিভ ভাই?
বিজ্ঞান ও দর্শনের শাখা, তাহলে তোমার কথা অনুযায়ী বিজ্ঞানকেও বিদায় নিতে হবে!
…
আমি পরিস্কার ভাবে লিখেছি বইটির বিজ্ঞান সাহিত্য অসাধারন। আমার হাঁসি পাচ্ছে তোমার গায়ে পড়ে ঝগড়া করার স্বভাবে। এটা স্বভাব হলে কাটাও। নৈর্বাত্বিক আলোচনাতে আবেগের স্থান নেই-প্রমানের ভাষায় কথা বলতে শিখতে হয়। খুব পরিস্কার ভাবে আমি লিখেছি, বইটির বিজ্ঞান সাহিত্য অত্যন্ত উচ্চমানের। হকিংস একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী- সেটাই উনার কাছে আশা করা যায়।
না। উনি বাস্তবতা নিয়ে কিছু লাইন লিখেছেন যেগুলিতে প্রাথমিক কিছু ভুল আছে। পড়ে লিখব তা নিয়ে।
@বিপ্লব পাল,
আমি বলি নি আপনি পছন্দ না পছন্দের বিষয়ে বলেছেন, লাইনগুলো খেয়াল করেন, সবগুলার পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন , সুতারং আমি এখানে গায়ে পড়ে ঝগড়া করছি না ততক্ষন যতক্ষন না আপনি সেটা মনে করছেন, অবজেক্টিভ হওয়ার জন্যেই এতগুলো প্রশ্ন করলাম। দুঃখিত! যদি আপনার গায়ে ধাক্কা লেগে থাকে যদিও আমার সেইরকম উদ্দশ্য ছিল না।
ডিম আগে না মুরগী আগে ?
বিজ্ঞানকে সাবজেক্টিভ বলি নি একবারো , আপনি আপানার নিজের ‘স্বতঃসিদ্ধ’ আমার কথার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন, বুঝতে পারছেন কি ? E=mc^2 অথবা F=ma এই জিনিসগুলার প্রতিক বদলে দিলেও ফ্রেমটা একই থাকে, কিন্তু দর্শনের এমন কিছু কি দেখাতে পারবেন যা সব দার্শনিক একই মনে করে ? দর্শনের সবকিছুই কি হাওয়ার ওপর অট্টালিকা না ? অনেকটা বিশ্বাসের মতো… এরকম দুইটা জিনিসকে গুলিয়ে কি লাভ ? আর এই গোলানোর একটা নমুনা স্ট্রিং থীয়োরীর দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন।যেইটা এখন বিদায় নেওয়ার পথে… যদিও পুরো থিয়োরীটাই প্রায় আনফলসিফায়েবেল, তাই এটা বিজ্ঞানের অংশ কিনা এইটা নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে।
আপনাকে হাসাতে পেরে একটু আনন্দ লাগছে। হি হি… যাই হোক ঝগড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে কেন জানি, আসাফা পাওলের জিবিত আত্মা এসে আমাকে বলে, “ব্যাটা দৌড়া… ” চিন্তা কইরেন না, ঝগড়া শুরুর আগেই দেখবেন আমি নাই।আর আমি এখানে আবেগ দিয়ে কিছুই বলি নাই, তবে একটা প্রেডিকশান ছিল। আর আমার যেই লাইনটা এখানে কোট করেছেন, সেটার অর্থটা আসলে এরকম না, আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হলো –
আর আপনার বাস্তবতা নিয়ে লেখার অপেক্ষায় থাকবো, তবে কখনো বলবো না আপনার ধারনায় ভুল আছে… হয়তো আপনার ধারনার সাথে আমার দ্বিমত থাকতে পারে… কিন্তু সেটা কখনোই ভুল না।দর্শনে ভুল ঠিক হয় না… হলেও কিভাবে হয় আমি বুঝি না । :-X
@অনন্ত নির্বাণ,
সর্বনাশ। এবার যারা পি এই চ ডি করেছে মানে ডক্টর অব ফিলসফি-তাদের কে ডক্টর অব সায়েন্স নিতে হবে। কারন অনন্ত সাহেব মনে করেন বিজ্ঞান দর্শনের শাখা না। ভাই এমন দুড়ন্ত পান্ডিত্যের বিরুদ্ধে তর্ক করার মতন বিদ্যা আমার নাই।
@বিপ্লব পাল,
PhD এর ফিলসফি শব্দটার সাথে, আমরা যেটা নিয়া কথা বলছি এর শব্দগত মিল ছাড়া আর কোন সম্পর্কাছে বলে আমি জানি না। পি এইচ ডি একটা কমন একাডেমীক টার্ম, এটা কেউ ফিলসফির ওপর ও করতে পারে আবার ফিজিক্স এর ওপরও করতে পারে – আমার ধারনা ছিল আমরা সেই ফিলসফির কথা বলছি যেটা প্লেটো, এরিস্টটল , স্পিনোজা , অথবা পপার এইসব লোকেদের এর সাথে সম্পর্কযুক্ত, হাজার হাজার পি এইচ ডি হোল্ডারের সাথে নয়।ডক্টর অব সায়েন্স কেন নিতে হবে তাই বুঝলাম না।
আপনি যেভাবে বিজ্ঞানকে দর্শনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, একই ভাবে ধার্মিকেরা বিজ্ঞানকে ধর্মের ভেতর ঢুকায়… খুব একটা পার্থক্য দেখছি না।সবকিছুই পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত, কোন একটা জিনিসকে যদি আপনি ডিস্ক্রিট ভাবে ফোকাস না করে এই আবছা সম্পর্ক আর গ্রুপিং এর মধ্যে ফেলে দেন তাহলে অনেক কিছু বাদ পড়ে যায়। আমার খুব উপকার হয় যদি আপনি এই ব্যপারটা নিয়ে একটু লিখেন, “বিজ্ঞান কেন দর্শনের শাখা”
@অনন্ত নির্বাণ,
ভাই তুমি নমস্য ব্যক্তি। আরো লেখ। মজা পাচ্ছি। শুধু একটু সাবধান করে দিই। এই ধরনের কথা আর খুব বেশী লিখলে, তোমার ক্রেডিবিলিটি যেকোন সার্কেলেই শুন্যের দিকে যাবে।
দর্শন বিজ্ঞানের সুপারসেট না আইডেন্টিক্যাল সেট, সেটা নিয়ে বললেও -একটা তর্ক হয়। যেটি হকিংস দাবী করেছেন। যদিও টিকবে না। সে প্রসঙ্গ পরে।
সব সাবজেক্টের লোকদের ডঃ অব ফিলসফি এই জন্যেই দেয়-যে মানব জ্ঞানকে দর্শনের নানান শাখা বলে মানা হয়-এবং বিজ্ঞান, সাহিত্য থেকে শুরু করে যাবতীয় মানব অর্জন দর্শনের নানান শাখা হিসাবেই ইতিহাসে বিবর্তিত হয়েছে।
@বিপ্লব পাল,
আমার সাবধাণ হওয়ার বদলে SIEMENS এর পুরনো একটা স্লোগানটা মনে পড়ে গেলো, ‘ be inspired ‘- দুই দিক থেকে Credibility শুন্যের দিকে গেলে তো দারুন ব্যপার হবে… আফসোস এইটার কোন মিনিং নাই, দুনিয়াটা এট লিস্ট থ্রী ডাইমেনশানাল… দু;খজনকভাবে দুই দিকের বাইরেও কোন না কোণ দিকে Credibility থাকবে।
:lotpot: দারুন বলেছেন, আমি অনেক কিছু জানতাম না…
@বিপ্লব পাল,
অনন্তনির্বানের অভিযোগের জবাবে আপনার এই চুলপাকনা কথাটায় বেশ চুলকানী অনুভব করছি। একটা ব্যাপার প্রথমে পরিষ্কার হয়ে নেই- মূল্যহীন, অন্তসংঘাতপূর্ণ হোকাস-পোকাস কথাবার্তায় আপনার সাথে পেরে উঠা কারও সম্ভব নয়। আপনার সাথে আলোচনায় বসাটাও ততোটাই বড় নির্বুদ্ধিতা, কেননা আপনি কখনও ভুল করেন না বা ভুল কিছু বলেন না। আপনার একটা কথার জবাবে যে আরও তিন-চারটা প্রতিমন্তব্য করেছে অনন্তনির্বান, একজন সেইন মানুষের কাছে নিজের মূ্ল্যহ্রাস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে, এটার বিপরীতে কি সুন্দর একটা রিটার্ন আপনি দিলেন তাকে! তার কথায় আপনি মজা পেয়েছেন, আপনি কি অনুভব করেন আপনার কথায় অন্যান্য মানুষ কতটা মজা পায়, এবং যারা মজা পায় তারা যে আপনার চেয়ে খানিকটা বেশী সেইন এই ব্যাপারেও কি আপনার কোন সন্দেহ আছে?
আপনার নিজের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে আপনার কি মতামত জানার বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে! আপনার গত একমাসের কথাবার্তার পেছনে মারা অন্যের মন্তব্য কপি পেস্ট করেই একটি সমাগমে আপনার ক্রেডিবিলিটির কিন্তু একটা সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করা যায়।
সেই তর্ক কয়টা জীবন বাঁচায়, কি উতপাদন করে, বাস্তবতায় কি পজিটিভ পরিবর্তন আনে?
এবং আপনি কে এই ঘোষণা দেওয়ার? কিংবা এত্তোবড় একটা ঘোষণা দেওয়ার আগে যে অনেকগুলো কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, অনেক বিশ্লেষণ-আলোচনা প্রয়োজন, আপনি কি মনে করেন আপনি এর কোনটাই করেছেন? ফাঁকা ঘোষণা দিয়ে হকিং কে বাতিল করে দেওয়াটা একটু বেশী সমাজবিজ্ঞানগিরি হয়ে যায়না?
অবান্তর, হোকাস-পোকাস কথাবার্তা আপনি মাঝে মাঝে এতো বেশী বলেন যে শুনে অনুভুতি হয়- ‘ইশশ…বিপ্লব পালের মুখ থেকে নির্গত না হয়ে এই কথাগুলা অন্য কারো মুখ থেকে নির্গত যদি হইতো খালি……’!
@অনন্ত নির্বাণ,
ইন্টারেস্টিং। তাহলে এম-থিয়োরি সম্বন্ধে আপনার মতামত কি? যতদূর জানি, এটা স্ট্রিং থিয়োরির-ই একটি প্রকারভেদ।
@রৌরব,
এম থীয়োরী নিয়ে কথা বলার একাডেমিক যোগ্যতা আমার এখনো নাই, তাই সেইরকম রিজিড কোন মাতামত নাই… কিন্তু স্ট্রীং থীয়োরীর গুরু, উইটেন অথবা সাসকিন্ড এর কথা শুনলে এটাকে বিজ্ঞান মনে হয় না, তার বদলে বিশ্বাস মনে হয় , যার পেছনে কিছু সুন্দর ম্যাথমেটিকাল ফ্রেমওয়ার্ক আছে, কিন্তু আফসোস , এই থীয়োরী যদি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, তো সাথে হাজারটা প্রশ্ন বোনাস হিসেবে তৈরি করেছে, যেগুলোর কোন উত্তর নাই ।
এখন এই এম থিয়োরী যেহেতু স্ট্রিং থিয়োরীর ডেরাইভড তাই আমার মনে হয় না এমন স্পেশাল কিছু আছে এতে, কিছু ডাইমেনশনাল এডজাস্টমেন্ট ছাড়া। যেই থিয়োরির কারনে পার্টীকেল ফিজিক্স একটা ডেড এন্ড এ চলে এসেছে প্রায় বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি নেই, যার কারনে ফিজিক্স এর নোবেল প্রাইজ গুলো থীয়োরেটীকাল দের থেকে প্রাক্টীকাল দের কাছে চলে গেছে।
এম থীয়োরির অথবা স্ট্রিং থীয়োরির যেকন আলোচনায় দেখবেন… It is Believed, …. When It’ll be Formulated…. সব কিছুই yet to come. তাহলে এই বিশ বছরেরো বেশি সময় ধরে এই সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা প্রফেসর, স্কলার রা মিলে করেছে টা কি ? উইটেন তার অসাধারন গনিত এর জন্যে ফিল্ডস মেডেল পেয়েছেন, অথচ – পদার্থবিজ্ঞানে সেই গনিতের প্রয়োগ এখনো সম্ভব হয় নি… তাছাড়া আপনি স্ট্রিং থিয়োরিস্ট্ররা আমেরিকার সব ছোট বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দখল করে রেখেছে, যার কারনে নতুন কোণ থীয়োরী চর্চা হয় নি।
এম থীয়োরির ব্যাপারে বলা হয়, যখন পুর্নাঙ্গ থীয়োরীটা ফর্মুলেট করা যাবে তখন সব anomalyদূর হয়ে যাবে, কিন্তু সেই পুর্নাঙ্গ থিয়োরীটা যে কিরকম এই ব্যপারে কারো ধারনাই নেই, সবাই আশা করে আছে… একদিন এইটা বের হবে, আর সব উনিফাইড হয়ে যাবে, যেহেতু বিকল্প থীয়োরীকে সুজোগ দেওয়া হয়নি এই বিশ বছরেরও বেশি সময়ে তাই , এটাই only game in town . এই এম থিয়োরির এম কে কেউ বলে mother , উইটেন বলেন MAGIC , আর এর ক্রিটিক রা বলেন Masturbation !
Peter Woit এর Not Even Wrong অথবা
Lee Smolin এর The Trouble With Physics বই দুইটা পড়ে দেখতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ এদেরকে পাত্তা দেয় না , কারন পুরো ফিজিক্স কমুনিটীতে এখনো মেজরিটী স্ট্রিং গ্রুপ এর, যেটার ভিত্তি একটা বিলিফ… ‘আমরা করবো জয়… আমরা করবো জয় , একদিন’ 🙂
মুক্তমনায় যদি কোন স্ট্রিং থীয়োরিস্ট থেকে থাকেন তাহলে এই নিয়ে লেখার অনুরোধ করছি…
@অনন্ত নির্বাণ,
হকিং সাহেব যদি এই কথাটা বলতেন তাহলে হাততালি দিতাম আমি। সবচেয়ে ভাল হত যদি দর্শনকে পুরো উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভঙ্গিতে কথা বলতেন। কিন্তু ধর্মবাদীদের উত্তর দেয়ার জন্যই হোক বা যে জন্যেই হোক, উনি নিজেই দর্শনকে টেনে এনেছেন। দেখুন অভিজিৎও কিন্তু সেটা উল্লেখ করেছেন
কাজেই দার্শনিক সমালোচনা উনি পুরো এড়াতে পারেন কি?
@রৌরব,
আপনার সাথে একমত পোষন করছি… তবে আমার কথায় হাততালি না দেওয়ার জন্য :guli: :laugh:
তবে কার্ল সাগান এর বইতে কিন্তু দার্শনিকদের সম্পর্কে ঠিক এরকম কিছু কথাই বলা আছে, সম্ভবতো ‘কসমস’ এ।
আমি বইটা একবার পড়েছি, মনে হয়নি বেশিরভাগ জায়গায় দর্শন নিয়ে আলোচনা এসেছে, অধিকাংশ জায়গা জুড়ে ছিল কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ধারনাগুলো। দর্শন এর প্রধান যে জায়গাটায় হকিং এর আগ্রহ সেটা হলো এন্থ্রোপিক প্রিন্সিপাল, এই প্রেক্ষিতে সমালোচিত হতেই পারেন । তবে আমি সমালোচনা এড়ানোর কথা বলি নি, বলেছি দর্শনের মধ্যে কারো জ্ঞানের পরিধির কথা টেনে ঠিক ভুল বিচার করাটা আমার বোধগম্য নয়।