পুরনো দিনের কাহিনি
আকাশ মালিক
আজ ০৪-১২-২০১০ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকার একটি সংবাদ ছিল ‘পীরের উদ্ভট চিকিৎসা কেড়ে নিল ছাত্রীর প্রাণ’। সদ্য এইচ এস সি পাশ, পীরের হাতের ঔষধ খেয়ে, জিনে ধরা সিলেটের এক কিশোর তরুণীর মৃত্যুর খবর পড়ে, বহু দিনের পুরনো একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। তখন ছোট ছিলাম, মাদ্রাসায় পড়তাম। টুকটাক যাদু-টোনা, মন্ত্র-তন্ত্র শিখেছি, দু-এক যায়গায় সাক্সেসফুল তায়-তদবিরও করেছি। ইংল্যান্ড থেকে আমার এক চাচাতো ভাই হারুন রশিদ পাঁচ বৎসর পর আজ বাড়ি এসেছেন। তার চোখে ঘরের ভিতরে দিনের বেলাও ঝাপসা অন্ধকার লাগে, মানুষগুলো দেখতে ছোটছোট লাগে, খানা-পিনায় সব বালিবালি লাগে, গ্লাস-বাটি ময়লা ময়লা লাগে, রাস্তাঘাট ভুলে গেছেন, বিশেষ করে নৌকায় উঠলে মাথা ঘুরায়, সুতরাং আমি তার সার্বক্ষণিক বডিগার্ড। গায়ে শ্যামবর্ণের কোন লক্ষণই নেই, একেবারে ছায়ায় ঢাকা ঘাসের মত সাদা দবদবে চেহারা। কাপড়ে চোপড়ে স্বর্গীয় সুবাস, স্পেশিয়েলি তার আফটারশেইভ আর সিগারেটে। বাপরে বাপ, এমন বড় সোনালী আর লাল রঙে মিশেল করা সিগারেটের প্যাকেট আমি জীবনেও দেখি নাই। এমনিতেই লম্বা সিগারেট, এর মাঝে তার পাছায় তুলা লাগানো। রশিদ ভাই লম্বা সিগারেটের অর্ধেকটা খেয়ে বাকিটুকু ফেলে দিতেন। এই ফেলে দেয়ারও আলাদা একটা স্টাইল ছিল। ক্যারম খেলার স্ট্রাইক মারার মত বুড়ি আঙ্গুল আর শাহাদত আঙ্গুলের মাঝখানে সিগারেট রেখে এমন ভাবে ছোঁড়ে মারতেন যে, সিগারেট বিশ হাত দূরে গিয়ে পড়তো। মনে মনে ভাবতাম, বিলেত বোধ হয় বেহেস্তের কাছাকাছি কোথাও অবস্থিত। রশিদ ভাই আই এ পাশ, উচ্চতায় সাত ফুট না হলেও সাড়ে ছয় ফুট অবশ্যই হবেন। সদাহাস্য, বলিষ্ট দেহের আর সুন্দর চেহারার মানুষ। দু একটা সিগারেট যে তার চুরি করি নাই, এ কথা বললে বড় সাইজের গোনাহ হবে।
একমাস পরে আজ রশিদ ভাইয়ের বিবাহের দিন। ভাবী হাজেরা খাতুন আমার এক সময়ের পুতুল খেলা, এক্কা-দুক্কা খেলা, চীনা বরতনের ভাঙ্গা টুকরা দিয়ে খেলা, ছনের খড়ে, বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে লুকোচুরি খেলার সাথী। আমাদের বাড়ি থেকে তিন বাড়ি উত্তরে তাদের বাড়ি। বিয়ের সময় হাজেরার বয়স ছিল নয় বৎসর আর ভাইয়ের বয়স ২৫। ভাবী, ভাইয়ের আপন মামাতো বোন। গত একমাস যাবত হাজেরা কেন তার ফুফুর বাড়ি আসলোনা, তা বুঝতে পারলাম তার বিয়ের পরে। আকদের আসরে আমি মৌলভী সাহেবের পাশেই ছিলাম। একসময় তিনি যখন প্রশ্ন করলেন, ‘মোছাম্মাত হাজেরা খাতুন সা’বালেগা না লা’বালেগা’? একজন উত্তর দিলেন, ‘কন্যা লা-বালেগা’। আমার কাছে ব্যাপারটা খুব একটা স্পষ্ট ছিলনা। মাদ্রাসায়ও এই বালেগ-না’বালেগ, হায়েজ-নেফাস, বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাঝেমাঝে আমাকে নিয়ে হুজুর বড় বিপদে পড়ে যেতেন। একদিন তো হুজুর মধ্যপথে জামাত (ক্লাশ) বাদ দিতেই বাধ্য হয়েছিলেন। ফার্সী ভাষায় লেখা কিতাব, সঙ্গমের মাসায়েল পড়ানো হবে। বিষয়- ‘সঙ্গম উপুড় হয়ে, না চিৎ হয়ে, সম্মুখ থেকে, না পেছন থেকে হবে’ এ নিয়ে শরিয়তের বিধান কী, তা শেখানো হচ্ছে। সঙ্গে আছে নারী পুরুষের বীর্যের স্পিড, ঘনত্ব, আয়তন, দৈর্ঘ, প্রস্থ, আরো আছে লুঙ্গি, বিছানা-চাদর ভেজা-ভেজির ব্যাপার স্যাপার। ফার্সীতে ( مقاربت از جلو یا پشت ) আমি از جلو এর অর্থ ‘সম্মুখ থেকে’ یا پشت এর অর্থ ‘অথবা পেছন থেকে’ বুঝি কিন্তু مقاربت এর অর্থ কিছুতেই বুঝিনা। এ নিয়ে জামাতের ভেতরে তুমুল অট্টহাসি শুরু হয়ে যায়। হুজুর নিজেও আর হাসি বন্ধ করতে পারছেন না। এক পর্যাযে ক্লাশ কেনসেল। এর পরে বেশ কিছুদিন আমি জামাতে ঢুকলেই বয়স্ক ছাত্ররা ঐ শব্দ দুটি নিয়ে পুশতু-পুশতু (পেছন-পেছন) বলে হাসাহাসি করতো, এমনকি হুজুরও ক্লাশে ঢুকেই প্রথমে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকাতেন, আমি বড়ই লজ্জা পেতাম।
বিয়ের আসরে মৌলভি সাহেব রশিদ ভাইকে লক্ষ্য করে দুইবার বললেন, জোরে কবুল বলুন, আমরা শুনছিনা। তৃতীয়বারে বরের সমবয়সী তার এক বন্ধু বললেন ‘দামান্দ কবুল বলেছেন, আপনারা সবাই বলুন আলহামদুলিল্লাহ’। কেউ শুনেছিল কি না জানিনা, অন্তত আমি কিছু শুনি নাই। সবাই হাত উঠালেন, মৌলভি সাহেব লম্বা একটা দোয়া করলেন। আল্লাহ যেন এই স্বামী-স্ত্রীকে আদম-হাওয়া, ইউসুফ-জুলেখা, আইয়ুব-রহিমা, ইব্রাহিম-হাজেরার জুড়ি বানায়। হাজেরা খাতুনের ঘরে যেন ইসমাইলের মত ঈমানদার সন্তান হয় ইত্যাদি। সবাই আমিন বললেন, বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল।
বাসর ঘরে ঘোমটা পরা, পালংকের উপর চোখ বুঁজে বসা হাজেরাকে দেখলাম। বড় অপরিচিত মনে হল। রশিদ ভাই ঘরে ঢুকলেন, ভাবীকে নিচে নামানো হল, স্বামীর সামনে মাথা নত করে পা ছুঁয়ে সালাম করতে হবে। দাঁড়ানো অবস্থায় হাজেরাকে দেখে মনে হল, নয় বৎসরে হাজেরা যত লম্বা হয়নি, একমাসে তার চেয়ে বেশী হয়েছে।
রশিদ ভাই এই বিয়েতে মোটেই রাজী ছিলেন না। প্রথম থেকেই তার আপত্তি ছিল কন্যার বয়সের উপর। তারপর তিনি বলতেন, আপন মামাতো, খালাতো, চাচাতো ভাই-বোন, নিজের সহোদর ভাই বোনের মত, এবং নিকটতম সম্পর্কের সাথে বিয়ে, সাস্থ্য ও আগন্তক শিশুর জন্যে ক্ষতিকর। কে শুনে, কে বিশ্বাস করে তার কথা? বড় চাচা, মেজো চাচা, চাচী, মামী বাড়িশুদ্ধ মানুষ জড়ো হলেন, লম্বা লম্বা ওয়াজ নসিহত করা হল। মা-বাবার পছন্দের উলটা গেলে, অবাধ্য হয়ে মরলে বেহেস্ত নসিব হয়না, সংসারে বরকত আসেনা, আরো কত কী বলা হল, ছোটরা তার অনেক কিছুই বুঝলোনা। রশিদ ভাই নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে বাধ্য হলেন। বাড়িতে পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে। সাধারণত নামাজের জামাত শুরু হওয়ার আগে রশিদ ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করা হয়, তিনি নামাজী মানুষ। বিয়ের পরের দিন আজ ফজরের জামাতে কেউ তার জন্যে অপেক্ষা করলোনা। আমি বিষয়টা তুলায় মুরুব্বি একজন বললেন, তার নাকি শরীর ভাল নয়। নামাজ শেষে আমি রশিদ ভাইয়ের উঠোনে পায়চারি করছি। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, ভোর বেলা নাইটগাউন পরা অবস্থায় রশিদ ভাই ঘর থেকে বেরিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে একা বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন। আমাকে দেখেই হঠাৎ হু-হু করে কান্না শুরু করে দেন। আমি ভয়ে ভয়ে পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করি- ‘কী হয়েছে, আপনি কাঁদছেন কেন’? আমার হাতে ধরে অবুঝ অসহায় বালকের মত হাউমাউ করে বলতে থাকেন, ‘ আমি কেন দেশে আসলাম, আমি কেন দেশে আসলাম, হায় আল্লাহ, এ আমার কোন পাপের শাস্তিগো’। আওয়াজ শুনে চাচী বেরিয়ে আসলেন। ধীরেধীরে বাড়ির নারী-পুরুষ প্রায় সবাই উঠোনে এসে জড়ো হলেন। রশিদ ভাই বলতে থাকেন- ‘আমার মেয়ের বয়সি একটা বাচ্ছাকে আমার কাছে বিয়ে দিয়ে তোমাদের স্বার্থটা কী হলো? কী অপরাধ করেছে এই বাচ্ছা মেয়েটা, কী ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের’? সবাই অবাক বাকরুদ্ধ, কারো মুখে কোন কথা নেই। বড়দের মুখ থেকে হুশ-হুশ, ফিশ-ফিশ শব্দ শুনা গেল, উপস্থিত ছোটদেরকে সরিয়ে দেয়া হল। অল্পক্ষণ পরে পাশের গ্রামের মহিলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শুক্লা রাণীকে ডেকে আনা হলো। কার কী রোগ হল, কার জন্যে ডাক্তার ডাকা হল বুঝা গেলনা।
পরের দিন বড়িতে একটা থমথমে ভাব দেখা গেল। হঠাৎ করেই যেন অসময়ে বিয়ে বাড়ির সকল কোলাহল স্তব্ধ হয়ে গেল। হাজেরা ভাবীর ঘরে ছোটদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হল। এখন পর্যন্ত ভাবীর সাথে আমার কোন কথা হয়নি, চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি তাকে দেখার সুযোগও হয়নি। তৃতীয় দিনে ভাবী প্রথম নাইওর গেলেন তার বাপের বাড়ী। রশিদ ভাই আগের মত আমাকে ডেকে নেন না, আসলে কারো সাথে কোন কথাই বলেন না। প্রায়ই পুকুর পাড়ে পাকা ঘাটের সিড়িতে উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন। মাঝে মাঝে তার সাথে বাড়ির বড়দের জরুরী মিটিং হয়। কিছুদিন পরে এক সন্ধ্যায় হাজেরা ভাবীকে তার স্বামীর বাড়ি নিয়ে আসা হল, কিছুদিন আগেও যে বাড়িটি ছিল তার ফুফুর বাড়ি। ভাবীর আসার সংবাদ শুনে আমি মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ জীবনে তো আমার দোয়া কোনদিন কবুল করোনি, আমার নয়, বিয়ের আসরে তোমার ঐ নেককার বান্দাদের দোয়া তুমি ফেলে দিতে পারোনা, তাদের খাতিরে এই নবদম্পতি এই দুটো মানুষকে তুমি চির সূখী করে দাও। ভাবী বাড়ি আসলেন, সব কিছু যেন স্বাভাবিক, কারো চেহারায় কোন উৎকন্ঠার আলামত নেই।
এই বাড়ির সবকিছু, এই গাছ-বিছালি, পুকুর, এই রান্নাঘর, এই বারান্দা হাজেরার খুবই পরিচিত। হাজেরার স্বামীর ঘরের পেছনে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছোট্ট এক টুকরো উঠোন। উঠোনের প্রান্থে কয়েকটা সুপারি গাছ, বড় বড় দুটো নারিকেল গাছ। বাড়ির প্রবীণ মহিলারা প্রায় সন্ধ্যায়ই এখানে জড়ো হয়ে, পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যা, বিষয়াদী নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। ঠিক মাঝখানে আছে এঁটেল মাটির তৈরী বড় একটি উনুন। নিপুণ কারিগরি দক্ষতায় তৈরী উনুনে একসাথে দুটো হাঁড়ি বসে। তিনটা সুপারি গাছে ঝুলে আছে আরেক সুনিপুণ কারিগর বাবুই পাখিদের কমপক্ষে পনরোটা বাসা। নারিকেল গাছে কয়েকটা সাড়স পাখির ঘন ঘন আনাগোনায় অনুমান করা যায়, তাদের মাথায় বাসা বুনার পরিকল্পনা আছে।
চাচী ভাবীর আপন ফুফু হলেও এখন তিনি শাশুড়ী। একমাস আগের বালিকা হাজেরা আর বালিকা নয়, রিতিমত এক গৃহবধু। আজ মাদ্রাসা থেকে এসেই আমি মনে মনে প্লান করে রেখেছি, আছরের নামাজের পরে হাজেরাকে দেখতে যাবো। চিন্তা করছি ভাবী ডাকবো, না হাজেরাই ডাকবো। যা’ই ডাকিনা কেন, কানে কানে বলে আসব যে, আমি রশিদ ভাইয়ের কিছু সিগারেট চুরি করেছি। সেখানে গিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই। রশিদ ভাই বাজারে গেছেন এখনও ফিরেন নি। পেছনে গিয়ে দেখি চাচী সেই ছোট্ট উঠোনে রোমেনা আপা আর হাজেরাকে নিয়ে বসেছেন, রান্না বান্নার সকল সরঞ্জাম সামনে নিয়ে। চাচী আজ সন্ধ্যায় নতুন বৌমাকে রান্না শেখাবেন। রোমেনা আপা রশিদ ভাইয়ের ছোট বোন হলেও বয়সে আমার কিছুটা বড়। আমাকে দেখেই বললেন-
– মোল্লা মানুষ, এখানে কী?
– হাজেরাকে তো ভালভাবে দেখা হয়নি আপা।
– হাজেরা কী, ভাবী বলো, ভাবী। আর এমনিতে দেখা যাবেনা, পয়সা লাগবে, সালামি।
– আচ্ছা, ঠিক আছে ভাবীই ডাকবো। কিন্তু মোল্লা মানুষ পয়সা পাবো কই, সালামি তো আনি নাই।
– আচ্ছা ঠিক আছে, এক কাজ করো। খুব তো পিরাকি শিখেছ, এখানে দাঁড়িয়ে এবার তুমি জোরে-জোরে সুরে-সুরে একটা কেরাত শুনাও। তোমার কেরাত শুনে এই গ্রামে কোন জিন-ভুত থাকলে তারা যেন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর আমার ভাবীকে দেখে তুমি নজর দিতে পারবেনা।
– আমি নজর দেবো কি আপা? হাজেরা ভাবীর উপর যদি কারো নজর পড়ে তো পড়বে আল্লাহর। আল্লাহ এমন সুন্দর করে আরো একটা মানুষ সৃষ্টি হয়তো করেতেই পারবেনা।
আশ্চর্য আমরা এতক্ষণ কথা বলছি হাজেরা ভাবী কোন কথা বলেন না। কোন সাড়াশব্দ, নড়াচড়া নেই। লক্ষ্য করলাম, সেই নারিকেল গাছের উপরে তার চক্ষু নিষ্পলক স্থির আটকে আছে। চাচী বললেন- বৌমা, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো, মাগরিবের সময় হয়ে গেছে মাথায় কাপড় তোল। হাজেরা আপন মনে হাসছে, বড়বড় চক্ষুদ্বয় ঠিক আগেরই মত নারিকেল গাছের উপরে। রোমেনা আপা বললেন- ‘ও ভাবী তুমি শুনছো, মা কী বললেন’? হাজেরা বিকট এক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, হাসি আর বন্ধ করেনা। নারিকেল গাছের আগা থেকে চক্ষুও ফেরায়না। চাচী মারাত্বক একটা কিছু টের পেলেন। তিনি যেইমাত্র হাজেরার মাথায় ঘোমটা টানতে উদ্যত হলেন, অমনি সে দুই হাতে ঝাপ্টা মেরে নিজের বুকের কাপড় ছিড়ে ফেলতে চাইলো। চাচী বললেন- তোমরা ধরাধরি করে তাড়াতাড়ি বৌমাকে ঘরে নিয়ে এসো, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। কোরবানির গরু যেমন গলায় ছুরি লাগানোর মুহুর্তে শরীরের সকল শক্তি দিয়ে পালাবার চেষ্টা করে, হাজেরা ঠিক সে ভাবেই হাত-পা ছুঁড়তে থাকলো। অনেক ধস্তাধস্তি করে আমরা তাকে বিছানায় নিয়ে আসতে সক্ষম হলাম। হাজেরা তখনো হাসছে আর হাত পা শক্ত করে লাথি ঘুসি মারছে। চাচী বারবার আমাকে বলছেন- ‘ও বাবা কিছু একটা করো, তোমার কিছু জানা থাকলে পড়ো’। ভয়ে আমার সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে। রোমেনা আপা বিরক্তির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘কোন ঘোড়ার ডিম এতদিন মাদ্রাসায় পড়লে, কিছুই করতে পারছোনা’? সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে আর কোনদিন পিরাকির নামে ভন্ডামী করবো না। কিছুক্ষণ পর হাজেরা শান্ত হয়ে গেল। এবার তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে। চাচী ভেজা তোয়াল দিয়ে তার মুখ, মাথা মুছে দিচ্ছেন। ধীরেধীরে হাজেরার হাত-পা নরম হয়ে আসলো, আস্তে আস্তে সে ঘুমিয়ে পড়লো। অল্পক্ষণ পরেই চোখ মেলে তাকিয়ে আমাদেরকে দেখে মাথায় ঘোমটা টানার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলোনা। রোমেনা আপাকে লক্ষ্য করে বললো-‘ আপা আমার হাত-পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে, আমার শরীরে এত ব্যথা হচ্ছে কেন’? আমার বুক ফেটে কান্না আসার উপক্রম। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। এশার নামাজের সময় রশিদ ভাই বাড়ি এসে সব শুনলেন। তার সামনেই মধ্যরাতে আবার হুলুস্তুল শুরু হলো। সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলেন হাজেরা আর স্বাভাবিক নয়, সে জিনের কন্ট্রোলে চলে গেছে। পুরো তিন সপ্তাহ ধরে দেশের নামীদামী বড়বড় পীর-ফকির আসলেন। কেউ বললেন বাটিচালান, কেউ বলেলেন যাদু কেউ বললেন বাণ। আলেম-ওলামা আসলেন, হিসার করলেন, ইস্তেখারা করলেন, সপ্নযোগে জিনের সন্ধান নিলেন, বিচিত্র ধরণের হাজার প্রকার তথ্য-তত্ত্ব, তাবিজ-কবচ, ঔষধ-পথ্য দিলেন, হাজেরার কোন পরিবর্তন নেই। দিনদিন হাজেরার অবস্থার অবনতি হতে থাকলো। একদিন তার বাবা এসে হাজেরাকে তাদের বাড়ি নিয়ে গেলেন। এর পর হাজেরা আমাদের বাড়িতে আর কোনদিন ফিরে আসেনি।
হাজেরা চলে যাওয়ার পরের দিন রশিদ ভাই তার আত্মীয়দের ডেকে জড় করলেন, হাতে একটুকরো কাগজ। বললেন-‘ এভাবে একটা কচি মেয়েকে শাস্তি দেয়ার কোন মা’নে হয়না, আমি হাজেরাকে মুক্তি দিতে চাই। যেহেতু এখানে হাজেরার কোন দোষ নেই, আমি তার কাবিনের ৬ কেদার জমি (বর্তমান মূল্য ৬ কোটি টাকা) ১০ বরি সোনা, সকল প্রকার অলংকার ও বস্ত্রাদি এবং ডাক্তারি ঔষধ-পথ্য করানোর জন্যে ৫০হাজার টাকা দিয়ে এই তালাক নামায় দস্তখত করলাম’। বাড়ি ভরা মানুষ কেউ একটু টু শব্দও করলেন না। মসজিদের ইমাম সাহেব বিড়বিড় করে বলেছিলেন- ‘পাগল অবস্তায় বিবি তালাক হয়না’। কেউ তার কথায় কর্ণপাত করলোনা, মাথা নীচু করে, মলিন চেহারায়, সবাই ধীরেধীরে স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন।
এক সপ্তাহ পরে হাজেরার বাবা আমাদের বাড়ি আসলেন, বোনকে দেখার জন্যে নয়, ভাগিনাকে দু কথা শুনানোর জন্যে। বললেন-‘ আমি তো বাবা তোমার ধনের কাঙ্গাল ছিলাম না, আমার নিরপরাধ মেয়েটাকে তুমি ছেড়ে দিলে। তালাকের সংবাদ শুনে মেয়েটি প্রচুর কেঁদেছে। একসপ্তাহ হলো তার মধ্যে তো কোন অস্বাভাবিক আচরণ দেখলাম না। কোন প্রকার ডাক্তার কবিরাজও দেখালাম না। একটা সুস্থ সবল মেয়েকে তুমি এভাবে ছেড়ে দিলে’? রশিদ ভাইকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি তরতর করে বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলেন।
যেহেতু এটা কোন গপ্ল নয়, সত্য কাহিনি তাই পাঠকের জন্যে ঘটনার শেষ পরিণতি গলায় আটকিয়ে রেখে লাভ নেই। এর ৭ বৎসর পরে ঠিক রশিদ ভাইয়ের মতই শিক্ষিত প্রবাসী এক হৃদয়বান ব্যক্তির সাথে হাজেরার বিয়ে হয়, এবং ৫ সন্তানের জননী হাজেরা সুখেই বিলেতের কোন একটি অঞ্চলে বসবাস করছেন।
এখানে আছে সিলেটের অভাগিনী রিফাতের কাহিনি। আমার বড় জানতে ইচ্ছে করে রিফাত, হাজেরাদের এই দুর্গতি কি কোনদিনই শেষ হবার নয়? জিন-ভুতেরা কেন বারেবারে শুধু মেয়েদেরকেই আক্রমণ করে? সমাজ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানে কি এর কোন ব্যাখ্যা নেই? কামনা করি এমন কাহিনি যেন আর কাউকে কোনদিন নতুন করে লিখতে না হয়।
আমার মতে জীনে ধরা একটা মানসিক রোগ যা ৯০ ভাগ সৃষ্টি হয় যৌন অসমতা অথবা অবদমিত যৌন বাসনা থেকে।
আর জীন সম্পর্কে আমার ধারনা হল প্রাচীন কালে আরবের বাহিরে কোন জাতিকে বিশেষ ভাবে ইয়েমেন এর অধিবাসিদের কে জীন বলা হত। এই জীন সম্পর্কে অনেক ঘটনা ইয়েমেন এর প্রাচীন লোককাহিনীতে উল্লেখ আছে। যার মধ্যে বিল কিস এবং দাউদ (সঃ) এর ঘটনা উল্লেখ্যযোগ্য । আমার মনে হয় অন্য অনেক ঘটনার মতই এগুলি কুরানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সাড়ে ছয়ফুট! হুম। তালগাছ। আচ্ছা ঐ যে তালগাছের দিকে থুক্কু নারিকেল গাছের দিকে তাকিয়ে ছিল, কাপড় ধরতেই নিজে থেকেই খুলে ফেলার চেষ্টা- এর পিছনে অন্য কোনো কারণ নেই তো? যেমন ধরুন- বাসর ঘর। নারিকেল গাছটি খাটের পাশে এসে দাঁড়াল। বালিকাটি চোখ তুলে তাকাল- আরে এ তো তালগাছ!
এবার তালগাছ তার জামাকাপড় খুলতে চেষ্টা করল আর সে বাঁধা দিতে লাগল। এক পর্যায়ে তার গায়ে হাত তোলা হলো…এভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি…
আর এসব মাথাতে গেঁথে যাওয়াতেই ওই গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা, কেউ কাপড়ে হাত দিতেই সেই মাইরের ভয় নিজে থেকেই কাপড় খুলে ফেলার চেষ্টা- এমন কি হতে পারে না?
লেখাটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর আপনি দারুণভাবে লিখেছেনও। যতই দন্দ্ব থাক আর যাই থাক। মানুষ যাতে এই সব কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসতে পারে তাই কামনা।
কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে হাজেরাকে যেতে হয়েছিল। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন কেউ বুঝতে চাইছিলনা তার অসহায় অবস্থাটা। ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে, কি আর করতে পারে। সবার কাছ থেকেই আদর পেয়ে আসছিলো, বুঝতে পারছিলোনা হঠাৎ কি এমন ঘটলো যে সবাই তার প্রতি বৈরী হয়ে তাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছিল, এমনকি সবচাইতে আপন মা-বাবা পর্য্যন্ত। আসলে এই অসহায় পরিস্থিতি আর বৈরী পরিবেশই তার স্নায়বিক বৈকল্যের অন্যতম কারন বলে মনে হয়। আরও হয়ত অন্য কারন ছিল যেমন অজানা অনাকাংখিত একটি সর্ম্পকের মধ্য দিয়ে দিন যাপন।
তাও ভাল যে হাজেরার বিয়ে হয়েছে, সন্তানের জননী হয়ে সুখে আছে। এই ধরনের ঘটনা এখন হয়তো আস্তে আস্তে কমে আসছে কিন্তু একবারেই শেষ হয়েছে বলেতো মনে হয়না।
হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মূল একটা কারণ হচ্ছে নিঃসঙ্গতা । এটা পরিপূর্ণ একটা মানসিক ব্যাধি। সমাজের মধ্যে বসবাস করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই সময় অন্যর উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। যখন হঠাৎ করে যেকোন কাজে ব্যর্থ হই, মনের ভিতর ভয় তীব্রভাবে কাজ করতে থাকে। মন ধীরে ধীরে জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। এই তীব্র ভয় মানুষের মনকে একবার আঘাত করতে পারলে, শারিরীক যে ক্রিয়াগুলো বিদ্যমান সেগুলো আস্তে ধীরে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে। আপনি যখন হঠাৎ ভীতগ্রস্থ হয়ে যান, দেখবেন হার্টের ক্রিয়া কেমন বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, আর শরীরের লোমগুলোর দিকে নজর দিলে দেখবেন খাড়া-খাড়া হয়ে ভীতরের ক্রিয়াকে ঠান্ডা করতে চলেছে। মানুষ একাকীত্বতাকে বন্ধু বানাতে পারে না, অর্থাৎ এক কথায় আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। ডারউইন একাকীত্বে এক দ্বীপে এতো বছর থাকার পার ও কোন জ্বীন -ভূতের কবলে পরেননি, কিন্তু এক ভীতগ্রস্থ লোককে শুধু একদিনের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে দেখেন ।
আপনার এই রশিদ ভাইকে ধরে আচ্ছা করে চাবুক পেটা করা দরকার। শুধুমাত্র বাচ্চা মেয়েটাকে রেপ করার জন্যে নয়, সেই সাথে তুমুল ভণ্ডামি করার জন্যেও। একদিকে বলছে মেয়েটা আমার মেয়ের বয়েসী, আবার রাতের বেলা সেই মেয়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। যার পরিণতিতে মেয়েটা হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর থেকে ইতর লোক পৃথিবীতে আর আছে নাকি? মেনে নিলাম যে বিয়েটা না হয় আত্মীয় স্বজনের চাপে করেছে (যদিও এই যুক্তির দুর্বলতাও ভবঘুরে ইতোমধ্যেই তুলে ধরেছেন), কিন্তু তারাতো আর মেয়েটার সাথে উপগত হওয়া জন্যে তাকে চাপ দেয় নি। নাকি দিয়েছিল?
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ ফরিদ ভাই। আপনাদের আলোচনা থেকে এখন আমার সত্যিই ধারণা হচ্ছে ঘটনাটা এখানেই। এর আগে কোনদিন এই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবিনি। শুধু আমি না, আমাদের বাড়ির, হাজেরাদের বাড়ির, এই ঘটনার সাক্ষী কেউই বোধ হয় ঐ দিকটা কোনদিনই চিন্তা করেন নি, আজও হয়তো তারা জানেন না। ঘটনার সাথে সাথে আরো অন্যান্য বিষয়াদি রটনা করা হয়েছিল। বিশেষ করে ঐ পীর মোল্লাদের ভাষ্যে সম্পূর্ণ ঘটনা ভিন্নদিকে ডাইভার্ট করা হয়ে গিয়েছিল। শুক্লা রাণী হয়তো জানতেন, কিন্তু তারই বা কতটুকু করার শক্তি ছিল, যেখানে আইনি কোন সাহায্যের আশা নেই।
@আকাশ মালিক,
পত্রিকায় প্রকাশিত একটা খবরের মত আরও শত শত বাস্তব কাহিনী রয়েছে যার মাত্র একটি আপনি বলেছেন। চারদিকে একটু তাকালেই এসব দেখা যায়। আর —-
অভিজিৎ রায়ের সাথে যোগ করছি — হিন্দু নারীরা কালী পায়। নরসিংদী মহিলা কলেজের যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক রত্না সাহা বেশ বয়স হয়ে বিয়ে করেছিলেন। আর বিয়ের পরপরই উনি কালী পেলেন। শুরু হল তার এক ধোঁয়াশে জীবন যাপন। সময় সুযোগ পেলে এ নিয়ে আরও জেনে লেখা যাবে। রত্নাদির পরিচিত কেউ এ লেখাটি পরে কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন।
@ফরিদ আহমেদ,
একমত। আজ থেকে অনেক দিন আগে ঘটেছিল বা তখন এর প্রচলন ছিল এই অজুহাতে কাউকে ক্ষমা করা যায় না। ৯-১০ বছরের একটি মেয়েকে দেখলে আমার ২০-২২ বছর বয়সেই নিজের মেয়ের মত মনে হত, পিতৃত্ব বোধ জেগে উঠত সেখানে এরা কিভাবে এই বয়সের একটি মেয়েকে বিয়ের নামে রেপ করতে পারতেন? আমাদের পূর্ব-পুরুষ যারা এমনটি করতেন তারা কি অসুর ছিলেন?
কাছের আত্মীয় স্বজনের চাপ বিশেষ করে মা-বাবার সরাসরি চাপ এড়িয়ে যাওয়া যদিও কঠিন তবে এই অজুহাতে রশিদ ভাইদের অপরাধ একটুও কমে না বরং তার সাথে ঐ আত্মীয় স্বজনদেরও অপরাধী করে তোলে।
@ফরিদ আহমেদ,
হাজেরার জন্য যেমন কাঁদছিলাম তেমন রশিদ ভাইএর জন্য কাঁদছিলাম। 😥 আপনি এসে রশিদ ভাইকে ভন্ডচন্ড বলে দিলেন তো সব মাটি করে। :-Y এইবার তো আমারও রশিদ ভাইএর উপর রাগ উঠছে। এইসব চাবুক পেঠা করে কিছু হবে না। লাঠি লন আর চলেন আমি আছি আপনার সঙ্গে। রশিদভাইকে খোঁজতে হবে। :-X
সরি লিংকটা
http://gypsyscarlett.wordpress.com/2009/12/02/victorian-women-and-their-toys/
যেই মাত্র অভিজিৎ দা নানান উদাহরণ উপমা দিয়ে সুন্দর বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়টাকে খোলাসা করে নিয়ে এলেন, তখনই সংশপ্তক নিয়ে এলেন আরেকটা ভাবনার বিষয়। সত্যিই এটা মানসিক রোগ কি না?
জীববিজ্ঞান আর সাইকিয়াট্রির বিজ্ঞান নিয়ে তারা তর্ক করুন যারা বিজ্ঞান বুঝেন। আচ্ছা এই নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর মূলধারার জীববিজ্ঞানীদের বক্তব্যটা কী আর তাদের দেয়া সমাধানটাই বা কী। মনোবিদ্যা বা মানসিক চিকিৎসাবিদ্যার বাহিরে ট্রিটমেন্ট হিসেবে তাদের বিকল্প পন্থাটা কী?
মানুষকে পীর ফকিরের হাত থেকে বাঁচাতে হলে, সঠিক কারণ ও বাঁচার পন্থা বা উপায় জানাতে হবে, সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আশা করি কুসংস্কার দূরীকরণের লক্ষ্যে, হাজেরা, রিফাতদের বাঁচাতে সচেতন মহল এ নিয়ে আরো লিখবেন, প্রচার করবেন। আমাদের হাতেই আমরা গড়ে দিতে পারি, আমাদের আগামী দিনের শিশুর সুন্দর ভবিষ্যত।
@আকাশ মালিক,
ইয়ে, হাজেরার ব্যাপারটাতে যৌনতার একটা ভূমিকা থাকতে পারে তো? আমি সব মন্তব্য খুঁটিয়ে পড়িনি, কিন্তু যতটুকু পড়লাম এ প্রসঙ্গটার উল্লেখ দেখলাম না। হিস্টিরিয়ার সাথে যৌন অবদমনের সম্পর্ক আছে, কোথায় যেন দেখেছিলাম।
@রৌরব, হিস্টিরিয়ার সাথে যৌন অবদমনের সম্পর্ক নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত সাইকোলজিতে। ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়ান যুগ (১৮৫০-১৯১০) প্রবাদপ্রতিম বিখ্যাত ভদ্রঘরের মেয়েদের সেক্সুয়ালিটি অবদমনের জন্য। বছরখানেক আগে একটা বুক-রিভিউ আর্টিকেল পড়েছিলাম সেই সময়ে মানীগনি ডাক্তারদের কাজের বড় অংশই ছিল মহিলাদের হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা। বাসায় হাউসকলে যেয়ে ‘পেলভিক ম্যাসাজ’ এবং আরো অন্যান্য ট্রিটমেন্ট। প্রথম বাস্পচালিত ‘ডিলডো’ বানানো হয় ১৮৬৯ এবং প্রথম বিদুৎচালিত ১৮৮৩ সালে প্রধানত হিস্টিরিয়ার চিকিৎসার জন্যেই। আমি আর্টিকেলটা খুজে পেলাম না তবে নীচে দেয়া লিংকটিতে সেসম্পর্কিত কিছু তথ্য আছে। (সতর্কিকরন- হিস্টিরিয়ার চিকিৎসার প্রাপ্তবয়স্ক ছবি আছে)।
বর্তমানের আরবে-ইরানে হিস্টিরিয়া তথা জ্বীনভুতের অনেক কেস দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে। এগুলোর মূলে যে রয়েছে অবদমন, সেসম্পর্কে অনেক গবেষনাই দেখিয়েছে।
হিস্টিরিয়ার পিছনে মেয়েদের সেক্সুয়াল ডিসফাংশনের এই ভিক্টোরিয়ান ধারণা বহু আগেই বাতিল হয়ে গিয়েছে।
@ফরিদ আহমেদ, ইন্টারনেটে কয়মিনিটের সার্চেই দেখা গেলো হিস্টিরিয়ার সাথে যৌন অবদমনের সম্পর্ক পুরনো এবং মোটামুটি বাতিলকৃত তত্ব। আমি পারলে আমার মন্তব্যটি প্রত্যাহার করে নিতাম। সেই সাথে পুরুষ এবং নারী কেউ যদি কমেন্টে বিব্রত হন সেজন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।
@ফরিদ আহমেদ,
:-/ হুঁ ঠিক, ১৮৭৩ সালেই দেখেছিলাম নিউজটা, সংবাদ প্রভাকরে। গত শ-খানেক বছরে আর আপডেটেড হতে পারিনি, চোখে ছানি পড়ে যাওয়ায় 😛
@রৌরব,
সঠিক করে বলতে পারবোনা কারণ এ নিয়ে হাজেরার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি, হয়তো কেউ কারণ সন্ধানের চেষ্টাও করেনি। অন্য একটি ঘটনায় একজন ডাক্তার বলেছেন, অনিয়মিত লাগাতার ঋতুস্রাবের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ ও সন্তান না হওয়ার সম্পর্ক আছে। তবে এর সাথে হিস্টিরিয়ার মত মারাত্বক কিছুর সম্পর্ক আছে কি না নিশ্চিত নই।
@আকাশ মালিক,
যেই মাত্র অভিজিৎ দা নানান উদাহরণ উপমা দিয়ে সুন্দর বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়টাকে খোলাসা করে নিয়ে এলেন, তখনই সংশপ্তক নিয়ে এলেন আরেকটা ভাবনার বিষয়। সত্যিই এটা মানসিক রোগ কি না?
যখন কোন মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরী হয় তাকে তো রোগই বলতে হবে।
আর মস্তিষ্ক নামক হার্ডওয়্যার থেকেই তো মন নামক সফটওয়্যারের উৎপত্তি।
তাই জীববিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন থেকে যেমন অস্বাভাবিকত্ব দেখা দিতে পারে। তেমনি মানসিক আঘাত বা সমস্যা থেকে মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন হতে পারে।
আর সাইকিয়াট্রি বিজ্ঞানে বানিজ্য হতেই পারে। পুজিঁবাদী ব্যবস্থায় কি দিয়ে না বানিজ্য হচ্ছে না?
বিশেষ সময়ে জিন-ভুতেরা বারেবারে শুধু মেয়েদেরকেই আক্রমণ করে , এবং পুরুষেরা আক্রান্ত হয় শয়তান এবং অশুভ আত্মার দ্বারা। অনেক পুরুষের আবার তথাকথিত ‘স্লিপ ওয়াকিং’ সমস্যা রয়েছে বলে দাবী করা হয়। এখন দেখা যাক বিশেষ কোন সময়ে এসকল সমস্যার প্রাদুর্ভাব সাধারনত দেখা দেয় । কিছু সত্য ঘটানা নির্ভর উদাহরণ নীচে দিলাম।
দৃশ্য ১ : ধর্ষক পুরুষ দাবী করছে যে সে শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজটা করেছে।
দৃশ্য ২ : এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে খুন করে আদালতে দাবী করলো যে সে ‘স্লিপ ওয়াকিং’ সমস্যায় ভুগছে এবং যখন সে ‘স্লিপ ওয়াকিং’ এ ছিলো সে সময় সে সময় সে তার স্ত্রীকে খুন করে।
দৃশ্য ৩: একজন নারী ব্যভিচার করার সময় ধরা পড়ার পর দাবী করলো যে সে আসলে একটা জ্বীন বা মামদো ভূতের সাথে কাজটা করেছে।
স্নায়ুবিক রোগের যেমন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে , এর বিপরীতে ‘মানসিক রোগ’ বলে যে রোগগুলোকে চিহ্নিত করা হয় সেগুলো আসলেই কোন রোগ কি না এবং ‘মানসিক চিকিৎসাবিদ্যা’ আসলেই কোন বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানের শাখা কি না তা নিয়ে ‘চিকিৎসা বনিকের’ সাথে মূলধারার জীববিজ্ঞানীদের অনেক দিনের পুরোনো লড়াই এখনও বহাল আছে। সনাতন মনোবিদ্যা(চিকিৎসা) কিংবা সাইকিয়াট্রির বিজ্ঞান হিসেবে সর্বসম্মত স্বীকৃতি কোন কালেই মেলেনি। বরং এই ‘মনোচিকিৎসা বাণিজ্যের’ অনেক কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
আমিও ছোটবেলায় লুকিয়ে লুকিয়ে জাদু-টোনা-মন্ত্র- তাবিজ ইত্যাদি শিখার চেষ্টা করতাম। আমি ভাবতাম যেহেতু কোরানে জ্বীন ও জাদুর কথা আছে তাহলে জ্বীনের সাথে দেখা করার ও জাদু করার একটা উপায় নিশ্চয় আছে। এসব শিখতে গিয়ে অনেক বই যেগুলো পেলে জাদু ও জ্বীন সাধকরা নিজেকে ধন্য মনে করে ওগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। বেশ কিছু ধাঁধাতে পড়ে গিয়েছিলাম এগুলো প্র্যাকটিস করতে গিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাদু-টোনা এগুলোর কিছু আলামত দেখতে পাই। অবশ্য একটু বড় হয়েই এগুলোর ব্যাখ্যা ও অসারতা বুঝতে পারি। ছোটবেলায় সংগ্রহ করা মারাত্মক তাবিজ-তদবিরের কিছু বই সম্ভবত আমার পুরোনো বইয়ের ভান্ডারে এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে।
যদি সময় মত প্রবীরদার “অলৌকিক নয় লৌকিক” বইটি পেয়ে যেতাম তবে অনেক কষ্ট আর সম্ভাব্য বিপদ থেকে বেচে যেতাম। তবে কষ্ট করে নিজে নিজে শেখার মধ্যে একটা কৃতিত্ব আছে।
রিফাত মেয়েটার জন্য বড় কষ্ট হয়। মা ও মামার মত নিজের স্বজনেরা স্বেচ্ছায় মেরে ফেলল এই মেয়েটিকে উদ্ভট বিশ্বাসের কারণে। বিশ্বাস মানুষকে মৃত্যু দেয় মুক্তি দেয় না- এটা এর একটা উদাহরণ।
মালিক ভাই, আপনার লেখার হাত দারুন। একদম তন্ময় হয়ে পড়লাম, মনে হল ঘটনাটি নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছি। এরকম আরো লেখা পাবার প্রত্যাশায় রইলাম।
দু দিন পরে ব্লগে কোন নতুন লেখা পড়লাম। তাও মন খারাপ করা।
আর কত দিন অন্ধকারে থাকব? :-Y :-Y :-Y
আমার বিশ্বাস জ্বীনে ধরার ব্যাপারটা মানসিক অসুখ।নয় বছর বয়সে সাড়ে ৬ ফুট উচু রফিক ভাই এর সাথে বিয়ে হওয়া একটি মেয়ে প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক অনিরাপদ বোধের চাপ সহ্য করতে পারেনি এবং সাথে সাথে তার জানাশোনা জ্বীন-ভুতের প্রচলিত কাহিনী কল্পনায় যোগ হয়েছিল।সন্ধ্যাবেলা নারকেল গাছের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের জামা-কাপড় ছেড়া এসবই মনে হয় তার বাসর পরবর্তি অসুস্থতার লক্ষন।অপরিনত বয়সে বিয়েটাই তার এই সমস্যার মুলে ছিল কারন যখন সে বাবার বাড়ী গেল সেখানে তার নিরাপত্তাবোধ ফিরে এল এবং ভাল হয়ে এখন ৫ সন্তানের জননী হল।আমার দেখা সকম জ্বীন ভিক্টিমের কমন গ্রাউন্ড দেখেছি যে,তাদের নিজস্ব বা আশেপাশের মানুষের জ্বীনের দ্বারা মানুষ আক্রমনে বিশ্বাস।শারীরিক দুর্বলতা থেকে জন্ম নেয়া মানসিক চাপ ও তার সাথে আশেপাশের মানুষের জ্বীন-ভূতের আসরে বিশ্বাস এই সমস্যার মুলে।
আমার মায়ের মাঝে কিছুদিন এরকম সমস্যা হয়েছিল।প্রচলিত সবার মতই শুরু হয়েছিল ঘটনা কিন্তু আমার বাবার প্রচন্ড ধমকে কেউ হুজুর ডাকার সাহস পায়নি বাবা ধর্মে বর্নিত জ্বীনে বিশ্বাস করলেও নিজের পরিবারে জ্বীন আক্রমনের কনসেপ্টটাই সহ্য করে নাই আমরা ভাই-বোনরাও একমুহুর্তের জন্য ভাবতে পারি নাই আমাদের মাকে জ্বীন ধরেছে ফলে কেউ এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে পারেনি এবং ডাক্তার দেখিয়েই সেই সমস্যার সমাধান হয়েছিল।
তুর্কির মানুষদের একটি কনসেপ্ট ভাল লেগেছে এ নিয়ে,যে, জ্বীনকে নিয়ে ভাবলেই জ্বীন আসে সুতরাং জ্বীন থেকে বাচার উপায় হল এটা নিয়ে না ভাবা।
@অসামাজিক,
ইংল্যান্ড আসার পর মানসিক রোগী যুবক যুবতীদের নিয়ে কাজ করে আমারও মনে হয়েছে, আপনার বিশ্লেষণটাই সঠিক। তবে আমি আরেকটু গভীরে যেতে চেয়েছিলাম। নেশাজাতীয় কিছু যেমন এলক্যাহল বা ককেইন হিরুইন জাতীয় কিছুর প্রভাব তো বুঝাই যায় যে ব্যবহারকারীর মস্তিস্কে এর একটা রিএকশ্যান সৃষ্টি হবে। জিনে ভুতে ধরা মানু্ষদের দেহের রক্তে তো কোন প্রকার দ্রব্য সঞ্চারিত হচ্ছেনা। এর জৈবীক ব্যাখ্যা কী হতে পারে?
@আকাশ মালিক,
মানব মস্তিস্ক খুব কম্পলেক্স। এর ম্যাল-ফাংশনিং হতে পারে, বিভিন্ন কারণে, এমনকি অনেক সময় কারণ ছাড়াই। নেশা জাতীয় দ্রব্যের কারণে হয়, সেটা আমি আপনি জানি। বিশ্বাসের ভাইরাসের কারণে হতে পারে, তা আমি একটা লেখায় দেখিয়েছিলাম। খুব দৃঢ ভাবে কিছু বিশ্বাস করলে অনেক সময় মস্তিস্ক সেটাকেই সত্যি বলে মনে করে। ইল্যুশন, হ্যালুসিনেশনের অনেক উদাহরণ আছে মেডিকেলে। আবার সম্মোহনের সাহায্যেও অনেক সময় মস্তিস্ককে প্রতারিত করা যায়, ভুল কোন কিছুতে বিশ্বাসী কিংবা অস্বাভাবিক কাজে উদ্বুদ্ধ করা যায়। প্রবীর ঘোষের একটা বইয়ে পশ্চিম বঙ্গের এক গ্রামের কেস স্টাডির কথা পড়েছিলাম – গাছের নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় এক গ্রামের মহিলার মনে হয়েছিলো মামদো ভুত তার উপর ভর করেছে। বাসায় এসে অস্বাভাবিক কাজ কর্ম শুরু করেছিলো। এমনকি এমন কিছু কাজও করেছিলো, যেটা স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় মহিলার পক্ষে করা একেবারেই অসম্ভব। এমনি একটা কাজ ছিলো পানির কলসি মুখে নিয়ে উঠানে এক জায়গা থেকে আরেক জয়াগায় নিয়ে যাওয়া। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মস্তিস্ককে উদ্দিপ্ত করে অস্বাভাবিক কাজ করিয়ে নেয়া সম্ভব। এগুলো সবই মানসিক রোগ। খুব স্পস্ট করে বলি ‘বিশ্বাসের রোগ’।
বিশ্বাসের রোগ বলছি কারণ, ছোটবেলা থেকেই বিশ্বাসের নানা পদের ভাইরাসের স্বীকার হই আমরা। শিক্ষিত পরিবারে হয়তো আরো বেশি থাকে এগুলো। অনেকেই এগুলো থেকে বেরুতে পারেন, কিন্তু আবার অনেকেই তার মধ্যে ডুবে গিয়ে বিভ্রান্ত হন। তাদের মস্তিস্ক হয়ে পড়ে অরক্ষিত। আপনি চিন্তা করে দেখুন – মুসলিম নারীরাই জ্বিনের কবলে পড়েন, হিন্দু নারী রা নয়। তারা কবলে পড়েন ভুতের। প্রবীর ঘোষের বইয়ের মহিলা যেমন পড়েছিলেন। আবার পশ্চিমে বিশ্বাসীরা যীশুকে দেখতে পান, বাংলাদেশের কেউ নন। আবার ভারতের হিন্দু ছেলেদের মধ্যে ‘জাতিস্মর’ পাওয়ার হদিস মেলে। মুসলমানদের মধ্যে নয়। কারণ তারা ‘জ্বিন ভাইরাস’ দিয়ে সংক্রমিত হলেও, ‘জন্মান্তর ভাইরাস’ দিয়ে নয়। তাই মুসলিম পরিবারে জ্বিনের আসর পড়লেও এমন ছেলে পাওয়া যায়না যে পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করতে পারে। হিন্দুদের মধ্যে আবার উলটো। পশ্চিমে খ্রীস্টানরা আবার যীশুকে দেখে। এগুলো সবই সংক্রমিত মননের প্রতিরূপ, সহজ কথায় মানসিক রোগ।
সাধে কি আমি বিশ্বাসের ভাইরাস নিয়ে লিখি! আমার মনে আছে, আদিল মাহমুদ আমার ঐ লেখার মন্তব্যে বলেছিলেন, ঘাস ফড়িং এর আত্মহত্যার যে উদাহরন দিলেন তাদের ক্ষেত্রে তো মনে হয় যে এই ভাইরাস আক্ষরিক অর্থেই ভাইরাস। মানুষের ক্ষেত্রে তো তা না, বলা যায় মানসিক ভাইরাস। হ্যা ঠিক তাই। মানসিক ভাইরাসও মস্তিস্কের ক্ষতি করতে পারে, আর তা করে খুব ভাল ভাবেই।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভজিৎ দা,
দারুণ বিশ্লেষণ।
ও মা, এটা তো কোনদিন জানতাম না।
আরেকটু ব্যাখ্যা করা যায়?
@অভিজিৎ,
ঘাস ফড়িং এর ক্ষেত্রে তো আসলেই সেটা একটি ভাইরাস, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে তো এটা একটি তুলনা মাত্র। সত্যিকার সে রকম কোন ভাইরাস বা বস্তু তো আর ট্রান্সফার হয় না যেটা এই মানসিক বিকৃতি ঘটাচ্ছে। একই প্রশ্ন মিম নিয়ে লেখাটিতেও এসেছিল। এই ধাঁধাটির একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। মস্তিষ্কে বা কিংবা দেহের মাঝে ঠিক কি রাসায়নিক, কিংবা হরমোনাল ক্রিয়ার কারণে এই সংক্রমন ঘটে সেটা জানা দরকার। কোন গবেষণা কি আছে?
@স্বাধীন,
মস্তিস্ক আসলে মোটা দাগে একটি ইনফরমেশন প্রসেসিং ডিভাইস বা তথ্য প্রক্রিয়াকরন যন্ত্র। এটাকে সঠিক তথ্য দিয়ে স্বাভাবিক কাজ যেমন করানো যায়, তেমনি করানো যায় অস্বাভাবিক কাজও। কম্পিউটারে আপনি ইনফরমেশন দিয়ে আপনার একাডেমিক রিসার্চের সিমুলেশন যেমন করতে পারেন, তেমনি আবার ভাইরাস দিয়ে সিস্টেমের বারোটাও বাজাতে পারেন। ভাইরাসগুলো কিন্তু এক ধরনের ইনফমেশনই। কম্পিউটার যেমন অনেক সময় ইনফরমেশনের মধ্যে পার্থক্য করতে না পেরে প্রতারিত হয়, মানব মস্তিস্কও তেমনি। সঠিক অথ্য যে পথে মস্তিস্কে পৌছায়, ক্ষতিকর তথ্যও সে পথেই। এর জন্য আলাদা কোন ‘ট্রান্সফার মেকানিজমের’ দরকারে নেই।
তিব্বতের মেডিশন করা বৌদ্ধভিক্ষুদের মস্তিস্কের এফএমআরআই স্ক্যান করে দেখা গেছে তাদের মস্তিস্কের কোন কোন অংশের কাজের ধরণ একটু আলাদা হয়। তার মানে আপনি ক্রমাগাত ইনফরমেশন পাঠিয়ে মস্তিস্কের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বদলে দিতে পারি। সবাই পারেন না, কেউ কেউ পারেন অনেক সাবলীল ভাবে। অনেক ক্ষেত্রে সাধু সন্ন্যাসীরা মস্তিস্কে তথ্য সঞ্চালনকে ব্যাহত করে এমন করে ফেলেন ব্যাথা বেদনার ব্যাপারটি মস্তিস্কে পৌঁছয় অনেক ধীরে। জ্বলন্ত আগুনে হেটে যাওয়া, কিংবা পেরেক ঠুকে শরীরকে ক্ষত বিক্ষত করা – এগুলো তারা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করেন (যদিও কোন কোনটির পেছনে লৌকিক কৌশলও আছে), অলৌকিকতার নিদর্শন হিসেবে। ক্যানাডার লরেন্টিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল পারসিঙ্গার টেম্পোরাল লোবকে উদ্দীপ্ত করে কৃত্রিমভাবে ধর্মীয় প্রনোদনার আবেশ আস্বাদন করা সম্ভব বলে দেখিয়েছেন। এনিয়ে আমি আত্মা নিয়ে ইতং বিতং নামের একটি লেখায় লিখেছিলাম।
@অভিজিৎ,ভারতের হিন্দু ছেলেদের মধ্যে ‘জাতিস্মর’ পাওয়ার হদিস মেলে। মুসলমানদের মধ্যে নয়।
যারা হিন্দু এবং ইসলাম নয়, কিন্তু “জাতিস্মর” নিয়ে জন্মায় তাদের ব্যাপারে কি ব্যাখ্যা মিলে?
১. http://www.youtube.com/watch?v=Q6p7miETMuc&feature=related
২. http://www.youtube.com/watch?v=E_T5vNgusEw
৩. http://www.youtube.com/watch?v=cdmMEKPFDTY&feature=related
৪. http://www.youtube.com/watch?v=uuQ8m2O3OcI
৫.খাবার ছাড়া মাসকে মাস কিভাবে এক মানুষ বাঁচতে পারে (?) এক অবিশ্বাস্য কাহিনীঃ http://www.youtube.com/watch?v=v29clGMWU84
এগুলোর উত্তর বৈজ্ঞানিকভাবে দেয়া কি সম্ভব? অস্বীকার ও তো করা যায় না।
@শুভাচার,
৬. http://www.youtube.com/watch?v=_EWwzFwUOxA
৭. http://www.amazon.com/exec/obidos/ASIN/0786409134/reluctantmess-20
৮. [বিজ্ঞান ও কিন্তু পূণঃজন্ম সম্পর্কে অনেক এগিয়েছে] http://www.near-death.com/evidence.html
@শুভাচার,
ইউটিউবের ভিডিওর উপর ভিত্তি করে আমি সিদ্ধান্তে আসতে অপারগ। অধিকাংশ জাতিস্মরের ঘটনাই জালিয়াতি এবং প্রতারণা – এ ধরণের বহু ডকুমেন্টেড কেস আছে। প্রবীর ঘোষ, জেমস র্যান্ডি, মাইকেল শারমার সহ বহু বিশেষজ্ঞ এ নিয়ে বই লিখেছেন আপনি পড়ে দেখতে পারেন। প্রবীর ঘোষের অলৌকিক নয় লৈকিক গ্রন্থে ভারতের বহু জাতিস্মর কেসের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ইন্টারনেটেও এ নিয়ে অনেক লেখা আছে, দেখুন এখানে, এখানে ইত্যাদি।
আর এই জাতিস্মরের ধারণা দাঁড়িয়ে আছে সেই আত্মার পূর্নজন্ম- এবং কর্মফলের এর মিথের উপর ভিত্তি করে। আর বিজ্ঞানের বিবর্তনতত্ত্ব মানতে গেলে তো আত্মার অস্তিত্ব এবং পুনর্জন্মকে ভালমতই প্রশ্নবিদ্ধ করতে হয়। বিজ্ঞান আজ প্রমাণ করেছে জড় থেকেই জীবের উদ্ভব ঘটেছিল পৃথিবীর বিশেষ ভৌত অবস্থায় নানারকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার জটিল সংশ্লেষের মধ্য দিয়ে আর তারপর বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে জৈববিবর্তনের বন্ধুর পথে। এই প্রাণের উদ্ভব এবং পরে প্রজাতির উদ্ভবের পেছনে কোন মন বা আত্মার অস্তিত্ব ছিল না। প্রাণের উদ্ভবের পর কোটি কোটি বছর কেটে গেছে, আর আধুনিক মানুষ তো এল –এই সেদিন – মাত্র ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। তাহলে এখন প্রশ্ন হতে পারে পঞ্চাশ বছর আগে মানুষের আত্মারা কোথায় ছিল? জীবজন্তু কিংবা কীটপতঙ্গ হয়ে? কোন পাপে তাহলে আত্মারা কীটপতঙ্গ হল? পূর্বজন্মের কোন কর্মফলে এমনটি হল? পূর্বজন্ম পূর্বজন্ম করে পেছাতে থাকলে যে প্রাণীতে আত্মার প্রথম জন্মটি হয়েছিল সেটি কবে হয়েছিল? হলে নিশ্চয়ই এককোষী সরল প্রাণ হিসেবেই জন্ম নিয়েছিল। এককোষী প্রাণের জন্ম হয়েছিল কোন জন্মের কর্মফলে? এগুলোর কোন উত্তর নেই।
নিয়ার ডেথ এভিডেন্সের ব্যাপারগুলোও বিজ্ঞানের সাহায্যে খুব ভালমতোই ব্যাখ্যা করা গেছে, কোন আত্মা বা অলৌকিক কিছুর আমদানী ছাড়াই। আমার নিজের স্ত্রীরই একবার ‘আউট অফ বডি’ এক্সপেরিয়েন্স হয়েছিলো। কিন্তু এই আউট অফ এক্সপেরিয়েন্স গুলো কোন অলৌকিক বা আধিভৌতিক কিছু নয়, বরং মস্তিস্কেরই একধরণের ইলুশন। ব্রুস গ্রেসন নামের এক গবেষক খুব সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে সেটা দেখিয়েছিলেন তার ল্যাপ্টপের সাহায্যে। তিনি তাঁর ল্যাপটপটি সাথে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন আর তাতে প্রোগ্রাম করে বিভিন্ন রঙ্গীন ছবি (যেমন, উড়োজাহাজ, নৌকা, প্রজাপতি, ফুল ইত্যাদি) বিক্ষিপ্তভাবে (রেন্ডমলি) ফুটিয়ে তুললেন। তারপর তিনি ল্যাপটপটিকে স্থাপন করলেন হাসপাতালের হার্টের অস্ত্রপ্রচার কক্ষের ছাদের কাছাকাছি কোথাও – এমন একটা জায়গায় যেখানে অস্ত্রপ্রচারের সময় রোগির দৃষ্টি পৌঁছয় না, কিন্তু দেহবিযুক্ত আত্মা হয়ে সারা কক্ষ জুরে ভেসে ভেসে বেড়ালে তা রোগির দেখতে পাওয়ার কথা। গ্রেসন এনডিই এবং ওডিই’র দাবীদার পঞ্চাশ জন রোগির ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি চালনা করলেন, কিন্তু একজন রোগিও সঠিকভাবে ল্যাপটপের ছবিগুলোকে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারেননি। ঠিক একই ধরণের পরীক্ষা স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করেছিলেন ডঃ জ্যান হোল্ডেন। তিনিও গ্রেসনের মতই নেগেটিভ ফলাফল পেয়ছিলেন। আমি এ নিয়ে লিখেছিলেম আত্মা নিয়ে ইতং বিতং -এর তৃতীয় পর্বে।
য়াপনি জানেন কিনা জানিনা মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতা না নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্সের বহু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিংবা কিছু ড্রাগ সেবনের ফলে কিংবা কখনো অত্যদিক টেনশনে কিংবা অন্য কোন কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে ভিজুয়াল কর্টেক্সের গতিপ্রকৃতি সততঃ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে এ সময় ব্যক্তিরা নিজেদের অজান্তেই টানেল-সদৃশ প্যাটার্ণের দর্শন পেয়ে থাকেন। এটাকেই অলৌকিক একটা কাঠামো দিতে চান বিশ্বাসীরা (ভাবেন স্বর্গেরর পথ বা সেরকম কিছু ), মস্তিস্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো না বুঝে।
আর আপনার আরেকটি লিঙ্কে খাবার না খেয়ে বেঁচে থাকার ব্যাপারটা আমার মতে একটা বড় সড় বুজরুকি। এটা থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্রের ভায়োলেশন। যে কারণে পার্পেচুয়াল মোশন মেশিন বা অবিরামগতি যন্ত্র আমরা বানাতে পারি না, ঠিক সে কারণেই না খেয়ে কারো পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। দেহ একটি জৈবযন্ত্র। আপনি চান বা না চান, এটা চালাতে শক্তির যোগান লাগবে। নিঃশাস না নিয়ে বেঁচে থাকা, খাবার না খেয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সহ বহু খব্র আজকের নিউ এজের জামানায় প্রচারিত হয়, ইউটিউবে ভিডিও দেখিয়ে দেখিয়ে দেয়া যায়, আর বিশ্বাসীরা তা গিলেও ফেলে, কিন্তু বহু কন্ট্রোল্ড স্টাডিতে সেগুলো ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। ম্যাজিশিয়ানরাও এ ধরণের বহু ম্যাজিক দেখান, কিন্তু তারা অলৌকিকতার দাবী করেন না, কারণ এর পেছনে থাকে লৌকিক কিছু কৌশল। প্রবীর ঘোষের ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ (পাঁচ খন্ডের) বইয়ে এই ধরণের বহু বুজরুকি ফাঁস করা হয়েছে। একটু কষ্ট করে যোগাড় করে পড়ে নিলে বুঝতে পারবেন কী করে এই বুজরুকি গুলো সাধারণত করা হয়, আর সাধারণ পাবলিকের সামনে সেগুলোকে নিয়ে আসা হয় ‘অলৌকিকতার নিদর্শন’ হিসেবে।
@অভিজিৎ,
এই প্রমানের বিবরন কোথায় পাওয়া যাবে জানালে খুশি হব।
@আকাশ মালিক,ভাই এই ব্যাপারটির জৈবিক ব্যাখ্যা আমার জানা নেই আমি শুধু আমার নিজের ধারনা ব্যাক্ত করেছিলাম তবে অভিজিৎদা এর সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং এই বিষয়ে আমার নিজের অজ্ঞতাও কিছুটা ঘুচে গেল আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে তাই আপনাকে ধন্যবাদ।
@অসামাজিক,
আমার এক আত্মীয় ইচ্ছে করলেই জ্বীন আবিষ্ট হতে পারেন। তখন তিনি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন এবং একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায় তা ভণ্ডামি নয়। আমি বহু কষ্টে তাকে বুঝাতে পেরেছি যে ওটা জ্বীনে ধরা না।
স্বয়ং কোরান শরীফে যখন জ্বীনভুত হালাল করা হয়েছে তখন গ্রামের লোকদের দোষ দিয়ে আর লাভ কি। আমার একজন শিক্ষিত আধুনিক মুসলিম এর কাছে জানতে ইচ্ছা করে জ্বীনভুত আর কাজিন বিয়ে করা কেমন করে জাস্টিফাই করা যায়। শুধু এই দুটি জিনিষই তো পরিপূর্ন জীবন বিধানের অসাড়তা তুলে ধরে।
আপনার রশিদ ভাই চরম নিন্দনীয় কাজ করেছিলেন। অনুমান করি শুধু বাবার সম্পত্তি বন্চিত আর সমাজচ্যুত হওয়ার ভয়েই একটি ৯ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।
@shafiq,
আমি জানিনা, রশিদ ভাইয়ের কতটুকু অপরাধ বলা যায়। তার উপর চরম মানসিক চাপ দেয়া হয়েছিল। তবে আমি দেখেছি, তিনি অনেক কাঁদাকাটি করেছিলেন, কয়েকবার মা-বাবার হাতে ধরে, পায়ে পড়ে মিনতি করেছিলেন, তিনি এ বিয়ে করবেন না।
@আকাশ মালিক,
আমার খটকা লাগছে যে একজন ইংল্যান্ড প্রবাসী শিক্ষিত যুবক কিভাবে একজন ৯ বছরের নাবালিকাকে বিয়ে করতে পারল। তার আত্মীয় স্বজনরা জোরাজুরি করলেই কি এহেন অমানবিক কাজ করতে হবে ? তাহলে সে কিসের শিক্ষা লাভ করল , ইংল্যন্ডে থেকেই বা তার কি মানসিক উন্নতি ঘটল? তার চেয়ে আশ্চর্যকর ব্যপার হলো সেই লোক সেই নাবালিকার সাথে জোর পূর্বক সেক্স করে তাকে ক্ষত বিক্ষত আহত করেছে যা তাকে একটা অসভ্য মানুষের পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। তার পর তার কান্নাকাটি বা তার কাকুতি মিনতি কেমন যেন কৃত্রিম মনে হয়েছে। তার মতো ইংল্যান্ড প্রবাসী শিক্ষিত লোকের পক্ষে কিভাবে এহেন কাজ করা সম্ভব হলো আত্মীয় স্বজনের অনুরোধে তা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
@ভবঘুরে,
২৫ আর ৯, ষোল বছরের ব্যবধান। ১৬ আর ৭৬ এর বিয়েও দেখেছি ভাই। আজ থেকে সেই ঘটনার সময়ের ব্যবধান যদিও মাত্র প্রায় ৪০ বৎসর, তবুও পৃথিবী অনেক বদলেছে এবং খুব দ্রুতই। রশিদ ভাইকেই একা দোষ দেবো কেন, এর শরিক তো আরো অনেকই, যারা তাকে চাপে রেখেছিলেন।
একার পক্ষে এতলোকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অবশ্যই সাহসের ব্যাপার। তাকে ইহকাল পরকালের নানা প্রকার ভয় ভীতি দেখানো হয়েছিল। আমি তার কাজটাকে মোটেই সমর্থন দিচ্ছিনা তবে তার অসহায়ত্বের সাক্ষী হয়ে আছি।
@আকাশ মালিক,
মানসিক চাপ বস্তুটা ভয়ংকর, বিশেষত আপনজনদের কাছ থেকে। আপনার বিবরণ থেকে মনে হয় রশিদ ভাইয়ের উপায় ছিল না।
অসাধারণ :rose: :rose2:
শাহাদত আঙ্গুল কি?
@রৌরব, তর্জনী বা বুড়ো আঙ্গুলের পরের আঙ্গুল।
@রৌরব,
যে আঙ্গুল সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। এবার বলেন কোন আঙ্গুল সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় 🙂 । তর্জনী।
@সৈকত চৌধুরী,
রৌরব তো সাহাদত আঙ্গুল চেনেন না, উত্তর দেবেন কী? প্রশ্নটা লীনা রহমানকে করুন। সঠিক উত্তর পাওয়ার পরে আমার একটা কথা আছে। এই আঙ্গুলকে সাক্ষী বানানোর পেছনে একটি ঘটনা ছিল, সেই ঘটনাটা কী?
@আকাশ মালিক,
মনে পড়ছে না :-/ ।
আচ্ছা, লীনা, একটু দেখ তো মালিক ভাই কি বলেন।
@সৈকত চৌধুরী,
লীনা রহমান চম্পট দিয়েছেন, এপ্রশ্নের উত্তরের জন্য এখন প্রার্থনা করা ছাড়া গতি নাই: হে (আকাশ) মালিক, তুমি আমাদের আলো দাও, তর্জনী নেড়ে আমাদের বলে দাও, শাহাদাত আঙুলের কাহিনীটি।
@আকাশ মালিক
কাহিনি কি?আমি না বুঝলামনা এখানে আমাকে জিজ্ঞেস করা করির অর্থ কি? আর শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে শুধু এক জায়গায়ই সাক্ষ্য দেয়, নামাজে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার এক পর্যায়ে… :-/ একটু বুঝায়া বলেন 🙁 ।
@রৌরব, আমি চম্পট মারিনাই… 🙁 আইজ সারাদিন আমি কত কাম করছি জানেন?টিউশনি করছি, ফেসবুকে বইছি, “কবি” পড়ছি,বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র গিয়া আড্ডা মারছি, শপিং করছি, মুক্তমনায় বইছি ((রাজুর মত) লীনার সঅব কাম করছি। শুধু পরশু ফাইনাল পরীক্ষার পড়াটাই খালি পড়িনাই 😀 )
@রৌরব,
তাশাহহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু মনে আছে তো? নাকি নামাজ বন্দেগী একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন? পড়ুন-
اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ
أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا
وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَن لَّاإِلَهَ إِلَّا اللَّه
ُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
অর্থ হল-
যাবতীয় ইবাদত, মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য।
হে নবী, আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া (সত্য) কোন মা’বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।
এখানে তিন জনের মুখের কথা একত্রে বলা হয়েছে।
কিছু বুঝলেন? এটা মে’রাজের ঘটনা।
নামাজে তাশাহ্হুদে বসে আল্লাহর সামনে রাসূলের (দঃ) দুই হাঁটু গেড়ে কালেমায়ে শাহাদত পড়াটা আল্লাহর একত্ববাদের মৌখিক স্বীকৃতি ছিল এবং মৌখিক স্বীকৃতির সাথে সাথে শাহাদাত আঙ্গুল তোলাটা আল্লাহর একত্ববাদের বাস্তব কাজেরই স্বীকৃতি। তাই এই আঙ্গুল তোলার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনায় রাসুল বলছেন- শাহাদাত আঙ্গুলটি শয়তানের ওপর লোহার (বল্লমের) চেয়েও বেশী কষ্টদায়ক (মোসনাদে আহমাদ, মেশকাত, ৮৫ পৃঃ)। নামাযে প্রত্যেক ইশারার বদলে দশটি অর্থাৎ প্রত্যেক আঙ্গুলের বদলে একটি করে নেকী লেখা হয় (তারীখে হাকেম, কান্যুল ওমমাল, ৭ম খন্ড, ৩৪০ পৃ।)
ইবনুল মালেক বলেন, বর্ণিত আছে যে, নবী (দঃ) যখন মেরাজে যান তখন তিনি আত্তাহিয়্যাতুর শব্দগুলো দ্বারা আল্লাহর গুণকীর্তন করেন। অতঃপর আল্লাহ বলেন, “আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিইয়ু্ ওয়ারাহমাতুল্লাহি অবারাকা-তুহু”। এরপর রাসূলুল্লাহ বলেন, ‘আসসালা-মু আলাইনা অআলা-ইবা-দিল্লা-হিস্ সা-লিহীন। তারপর জিব্রাইল (রা.) বলেন, আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু অআশহাদু আন্না মুহাম্মদান আবদুহু অরাসূলুহু।
নামায যেহেতু মোমেনদের মেরাজ সেজন্য নামাযের শেষে ‘মেরাজের’ তোহফা আত্তাহিয়্যাতুর দ্বারা সেই কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয় [মেশকাত, ১ম খন্ড, ৫৫৬ পৃঃ]।
এই পবিত্র আঙ্গুল দিয়ে নাফরমানি কাজ কোনদিন করবেন না
@আকাশ মালিক,
কি যে বলেন না? নিয়মিত সিজদা করে চলেছি আমি। এই দেখুন :guru:
:laugh: :laugh:
তাহলে মাঝে মাঝে আঙুল তুলে শয়তানকে খোঁচা দিতে হয়? 😕
@রৌরব,
:hahahee:
কাতুকুতু দিতে হয়। হিহিহি…
@লীনা রহমান,
আরো একটি ঘটনা হল- নবীজি নামাযে আত্যাহিয়্যাতু পড়া অবস্থায় এক পৌ্ত্তলিক অমুসলিম পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। নবীজিকে দেখে সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তোমার আল্লাহ কয়জন’। নামাজ অবস্থায় কথা বলা নিষেধ তাই নবী ইশারায় শাহাদাত আঙ্গুল উঁচু করে দেখিয়ে দিলেন তার আল্লাহ একজন।
রিফাতের পরিণতি পড়ে যেমন মেজাজ গরম হয়েছিল তার আত্মীয়দের উপর তেমনি অনেক কষ্টও লেগেছিল। আজকের সময়েও যদি এসব ঘটনা দেখতে হয়! এখনো যদি এসব ভন্ড পীরদের এভাবে সুযোগ দেয়া হয়! আর হাজেরার কথা শুনেও খারাপ লাগল। আসলে আমি এত বেশি ভন্ড পীর বা কবিরাজ দেখেছি আমার বাসায় যে ছোটবেলা থেকেই এদের প্রতি বিতৃষ্ণ।
আমার আপন সেজ ফুফুকে জিনে ধরে শুনেছি।যখন জিনে ধরে তখন সে সবাইকে তুই করে বলে, আর তখন কেউ তাকে ধরলেই নাকি তাকে প্রচন্ডভাবে থাপড়াতে থাকে। আমার দেখার সুযোগ হয়নি কখনো তবে আমার বড় বোন দেখেছে।আরো শুনেছি সে তখন যা বলে তাই নাকি সত্যি হয়। তবে তার একটা ভবিষ্যতবাণীই আমি শুনেছি আর তা মিথ্যে হয়েছে। আমার বাবা পাঁচ বছর অসুস্থ থেকে মারা যান।ডাক্তার রোগ ধরতে না পারায় অনেক কবিরাজি চিকিৎসাও চলেছিল। আমার ফুফু জিনে ধরা অবস্থায় বলেছিল “ছালা পরা বুড়ি” নাকি আব্বুকে সুস্থ করে দেবে।তার কথা মত ধূমপায়ী পুরুষসদৃশ বুড়ি আমার বাবার ঘর দখল করে থেকেছিল কয়েকদিন, আর তার চেলারা আমাদের সব ঘর দখল করেছিল বলে আমাদেরকে বাড়ির বাইরে শুতে হয়েছিল। যাহোক বুড়ি যা করেছিল তা হল আমাদের অনেক টাকা খরচ করিয়ে অনেক ভাল-মন্দ খেয়েছিল, আমাদের সারা বাড়ি সিগারেটের গন্ধ দিয়ে ভরে দিয়েছিল, একগাদি টাকা নিয়েছিল, আর চিকিৎসা স্বরূপ আমার অসুস্থ বাবাকে অনেকগুলো লাথি দিয়েছিল আর সবার গায়ে তার থু থু মেখে দিয়েছিল। আমি তার সামনেই আসিনি ঘেন্নায়।অবশেষে সে কয়েকদিন পর আমার বাবাকে রোগমুক্তি দিতে না পারলেও আমাদেরকে তার ও তার চেলাদের অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিয়ে চলে গিয়েছিল।
আমিও অনেক ভেবেছি ফুফুকে জিনে ধরার কারণ কি। কোন কূল করতে পারিনি।
হিস্টিরিয়ার দুইটা প্রকার আছে । সোমাটোফরম ডিসঅর্ডার আর ডিসোসিয়েটিভ ডিসঅর্ডার। মূলত ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার এর কারনেই জীনে ধরা টাইপ সমস্যা দেখা যায়। যেটা আপনার ফুফুর মাঝে দেখা গিয়েছিল। নানা কারনে মানসিক দন্ধ ও চাপ সহ্য না করতে পারার কারনে সাধারণত এই ধরনের আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার দেখা যায় এবং রোগি একটা ভিন্ন অস্তিত্বএ প্রকাশ পাবার চেষ্টা করে বাস্তবতাকে ভুলে থাকবার জন্য।
🙁