ড. ম. আখতারুজ্জামান স্যার আর নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামান স্যার দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকবার তাঁকে দেশের বাইরে যেতে হয়েছিলো। শেষবার বিদেশ যাওয়ার আগে এবং আসার পর কথা হয়েছিল। এরপর অনেক দিন যোগাযোগ হয়নি। সপ্তাহ তিনেক আগে ফোন দিলে জানতে পারলাম স্যার আইসিইউ তে ভর্তি আছেন।
আজ সকালে ঘুম ভেঙে গেল সেলফোনের শব্দে। জানতে পারলাম আখতারুজ্জামান স্যার গত রাত ৩টার দিকে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। বোঝাতে পারবো না। আমরা একজন অভিভাবক, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, শিক্ষক, লেখককে হারালাম। এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
স্যারের সাথে সময় নিয়ে কথা বলার খুব ইচ্ছে ছিল। এর আগে ঢাকায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে বার দুয়েক দেখা হলেও তেমন কথা হয়নি সামনাসামনি। ফোনেই কথা হয়েছে শুধু। আজ স্যার আমাদের মাঝে স্মৃতি হয়ে গেলেন!
আখতারুজ্জামান স্যারকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার নেই মুক্তমনার পাঠকদের কাছে। বিবর্তনবিদ্যা, বংশগতিবিদ্যা, কোষবংশগতিবিদ্যা বইয়ের লেখক তিনি। ডারউইনের অরিজিন অব স্পিসিজ বইয়ের বাংলা অনুবাদও তিনি করেছেন। এছাড়া স্টিভ জোন্সের ল্যাঙ্গুয়েজ অব জিন বইটির অনুবাদ করেছেন। বিশ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি ঢাবি’র উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে বিবর্তনবিদ্যা পড়িয়েছেন। আমার জানা মতে তার মত বিবর্তন বিষয়ক জ্ঞানে ঋদ্ধ ব্যক্তি এ বাংলাদেশে খুব কমই ছিলেন।
স্যার এক সময় বামধারার রাজনীতি’র সাথে জড়িত ছিলেন। খুব সম্ভবত সিপিবি’র পলিট ব্যুরো মেম্বার ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এখান থেকে সরে আসেন। যাহোক, রাজনীতি নিয়ে স্যারের সাথে তেমন কথা হয়নি কখনো, দু-একটি বাতচিত ছাড়া। আমি স্যারকে চিনি একজন শিক্ষক হিসেবে, এদেশের একজন উঁচুমাপের বিজ্ঞান লেখক এবং সর্বোপরি জীববিজ্ঞান বিষয়ে অভিভাবক হিসেবে। আজ স্যার নেই। স্যারের মৃত্যু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার জগতে নিঃসন্দেহে অপূরণীয়…।
আর বিশেষ কিছু লিখতে চাচ্ছি না এই মুহূর্তে। আমি শুধু আমার অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি স্যারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
আমি শোকাহত।
সবাই ভালো থাকুন।
মনে হয়। আমার তরফ থেকে যায়নি ওদিকে।
আজকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক জনকন্ঠ, প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, বিডিনিউজ২৪, ইত্তেফাকের রিপোর্টগুলো আমার চোখে পড়েছে। রাষ্ট্রপতি এবং শিক্ষামন্ত্রী শোকবার্তা দিয়েছেন।
নিউজবাংলা পত্রিকাটি দেখলাম অনন্তের এই লেখাটি হবহু ছাপিয়েছে (মুক্তমনা থেকে নিয়ে কি?)
এথিস্ট বাংলাদেশ ফেসবুকেও এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার এবং লেখাগুলো সংগ্রহ করে রেখে দেয়া দরকার। তার বেশ কিছু লেখা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ডারউইন দিবসে তার সাক্ষাৎকারের ভিডিওগুলো এই পোস্টে দিয়ে যাচ্ছি, আবারও –
httpv://www.youtube.com/watch?v=3VQE-iIbjjw
httpv://www.youtube.com/watch?v=NpJPGu_4OQ4
httpv://www.youtube.com/watch?v=fD7mfBixqVo
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবর্তন পড়ানোর অসুবিধা নিয়ে একটি প্রাণবস্ত লেখা লিখেছিলেন একসময় –
My Struggle to Teach Evolution in Bangladesh
সেটাও দিয়ে গেলাম।
He was my teacher—–only one whos lectures I attended regularly and also the only course in which i failed to receive first class marks
জামান স্যার আমার শিক্ষক।তাঁর ভালোবাসা পেয়েছি খুব কাছ থেকে।তিনি ছিলেন একজন আধুনিক মানুষ।সত্যি, দেশ একজন প্রকৃত আধুনিক শিক্ষানুরাগী হারাল।
ড. আখতারুজ্জামাকে বিনম্র শ্রদ্ধা! … :rose:
আখতারুজ্জামান স্যারকে কখনো চোখে দেখিনি। কমার্স ফেকাল্টিতে একটা প্রোগ্রামে তার আসার কথা ছিল। গিয়েছিলাম। অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি। দেখাw হয় নি।
শ্রদ্ধা জানাই এই বিরাট মাপের মানুশটির প্রতি। তিনি শারীরিকভাবে হয়ত আমাদের সাথে নেই কিন্তু wনার কাজ আমাদের সাথে সময় থাকবে। আমাদের চালিকা শক্তি হয়ে।
উনার কথার মধ্যেই যে দৃঢ়তা ছিল-তার থেকেই বো্ঝা যায় উনি বটবৃক্ষের ন্যায় এই বাঙালী ধর্মীয় জঙ্গলে মাথা উঁচু করে ছিলেন।
উনার মতন মানুষের মৃত্যু নেই।
অনন্ত, সকালে উঠে তোমার পোষ্টটা দেখে মনটা এতটাই খারাপ হয়ে গেল যে কাজে এসেও কিছু করে উঠতে পারছি না। কয়েক সপ্তাহ আগে তোমার ইমেইল পাওয়ার পর থেকেই ভয়টা মাথায় গেড়ে বসতে শুরু করেছিল, কিন্তু কোনভাবেই সেটাকে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। বাংলাদেশে যে কয়জন গুটিকয়েক মানুষ সত্যিকারভাবে বিজ্ঞানমনষ্কতা ধারণ করেন তাদের মধ্যে ডঃ আখতারুজ্জামান নিঃসন্দেহে একজন। ওনার কাছে আমাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়। উনি বিবর্তনকে শুধুমাত্র একটি বিজ্ঞানের তত্ত্ব হিসেবেই দেখেতেন না, বিজ্ঞান্মনষ্কতার পূর্বশর্ত বলেই মনে করতেন। ওনার সাথে আমার পরিচয় বিবর্তনের পথ ধরে বইটার সূত্র ধরেই, এত কম সময়ে আমাকে এমনভাবে আপন করে নিয়েছিলেন যে ওনার সাথে আমার যে মাত্র কয়েক বছরের পরিচয় সেটাই ভুলতে বসেছিলাম। শত ব্যস্ততার মাঝেও বইটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পাদনা করে দিয়েছিলেন, চমৎকার একটি মুখবন্ধও লিখে দিয়েছিলেন।
এ বছরের প্রথম দিকে দেশে গিয়ে ওনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য অনেক ভেঙ্গে গেলেও এত বয়সেও হাসিখুশী মানুষটার স্পিরিট দেখে অবাক না হয়ে পারিনি। খুব আগ্রহ ভরে এভুলেশনারি ডেভলেপমেন্টাল বায়োলজির অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলেন। ওনাকে শন ক্যারলের একটা বই উপহার দেওয়াতে দুঃখ করে বললেন যে এখন আর আগের মত দ্রুত পড়তে পারেন না, তবে এই বইটা উনি যে করেই হোক শেষ করবেন। ওনার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পর্ক দেখলেও বোঝা যায় যে উনি শুধু একাডেমিক জীবনেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও বিজ্ঞাননষ্কতা ছড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি। ওনার দুই ছেলে এবং মেয়ে সেদিন হাসাহাসি করে বলছিলেন যে, বাবা তোমার প্রথম বইটার মুখবন্ধ লিখে দিয়েছেন, শুধু ‘মুখবন্ধ’ করে কি লাভ, পরের বইটা লিখলে ‘চোখবন্ধ’টাও কিন্তু করিয়ে নিও।
ডঃ আখতারুজ্জামানকে শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই, সমবেদনা বা শোক প্রকাশ করতেও ইচ্ছে করছে না। উনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে তার কাজের মাধ্যমে, বহুদিন।
অসীম শ্রদ্ধা রইল উনার প্রতি। চিরকাল কেউ বেঁচে থাকবেন না। কিন্তু উনার কর্ম বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। সেই কর্মকে বাঁচিয়ে রাখা এবং ছড়িয়ে দেওয়াই হোক মুক্তমনা ও মুক্তমনাদের উদ্দেশ্য।
আমি বাকরুদ্ধ। জানি না তাঁর মত আরেকজন মানুষ এবং একজন বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষকের জন্য আরও কতকাল আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। :guru: :guru:
আহারে লোকটা চলে গেল। তাকে চোখের সামনে দেখার ইচ্ছা ছিলো। হলো না। উনি তাঁর কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
ডঃ আখতারুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল বিজ্ঞানীদের একজন অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চার, বিশেষ করে বিবর্তনীয় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও তাঁর সাক্ষাতকার শুনে এবং বন্যা আহমেদের বইয়ে তাঁর ভূমিকা পড়ে বুঝতে পেরেছি এক অসাধারণ মননের অধিকারী ছিলেন ডঃ আখতারুজ্জামান। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শোক প্রকাশ করছি।
আমিও এমনভাবেই চিনি তাকে। কখনো দেখিনি উনাকে। মুক্তমনায় এসে তার সম্পর্কে টুকটাক যা কিছু জেনেছি তাতেই মনে হচ্ছে এই শ্রদ্ধেয় মানুষটির চলে যাওয়া আমাদের ক্ষতির চিহ্ন হয়ে রইল।অনেক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি ব্যাক্তি স্যার, তার ভাবনা এবং তার কাজের প্রতি।
খবরটি শুনে বেশ দুঃখ পেলাম। তাঁর মত মানুষের আরো অনেক দিন বেচে থাকার প্রয়োজন ছিল।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই ভদ্রলোক মুক্তমনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। অজয় স্যার আর ইনি, এই দুজন দেশ থেকে সবসময় মুক্তমনার গার্ডিয়ান হিসাবে কাজ করেছেন।
সবাইকেই একদিন যেতে হয়। তাও খুবই দূঃখ পেলাম।
আমাদের দেশে ওনার মত লোকের আরো বড় বেশী প্রয়োযন।
এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়। অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সাথে আমার পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকে। বহু স্মৃতি ঘুরে ফিরে আসছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব। চোখ আমার অশ্রুসজল।
আমরা ড. আখতারুজ্জামানের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ২০০৯ সালের ডারউইন দিবস উপলক্ষে। তিনি তখন ব্যাঙ্ককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখনই জানতাম – হয়তো সময় বেশি নেই। কিন্তু প্রাঞ্জল সেই ইন্টারভিউতে কখনই তিনি মৃত্যু নিয়ে ভাবেননি, যতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে, অপগন্ডদের বিবর্তনবিরোধিতা নিয়ে। লিঙ্কটি দিয়ে গেলাম মুক্তমনার পাঠকদের জন্য –
ড. ম আখতারুজ্জামানের মুখোমুখি : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবর্তনবাদ
এ ছারা অসুস্থ অবস্থায় মুক্তমনার জন্য লেখাও লিখেছিলেন , তার অথর পেইজ আছে এখানে।
@অভিজিৎ,
সাক্ষাতকারটি আগেও শুনেছি। আবার শুনলাম। ডঃ আখতারুজ্জামানের বিয়োগ সারা পৃথিবীর জন্য ক্ষতি। কিন্তু তাঁর অবদান চিরন্তন।
তাঁর বাণী চিরন্তন –>
আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
তার প্রতি শ্রদ্ধা রইল।
:rose2: