” একজন রাজাকার সবসময়ই রাজাকার, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা সবসময়ই মুক্তিযোদ্ধা না”
এই উক্তিটা বহুল প্রচারিত এবং যথেষ্ট জনপ্রিয় উক্তি। যদিও এ উক্তিটুকু আসলে কার সে সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনা নেই। পোস্টের শুরুতেই এমন একটা উক্তি দিয়ে পোস্টকে তিক্ত করে ফেলার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু আসল ফ্যাকড়া তো বাধালই ঐ এক উক্তি। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা কত দিক থেকে বিচার করব? মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়+মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়, এই দুটো আলাদা সময়কালকে যদি আমরা মান বিচারের জন্য আলাদা করে নেই, তাহলে কোন অংশ প্রাধান্য পাবে? ইতিহাস কোন সময়ের পক্ষ নেবে?
আমাদের বেশিরভাগ মানুষই হয়তো এক বাক্যে বলে দেবে যে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই আগে। মানুষ ভূল করতেই পারে, পরবর্তী সময়ের ভূলের জন্য পূর্ববর্তী সময়ের গৌরব প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটাতো আশা করা যায় না। আমিও সেটাই ভাবার চেষ্টা করি, কিন্তু বাস্তব তো সেটা ভাবতে দেয় না। বাস্তব বিজয়ী বীর কেও এক ধাক্কায় মাটিতে নামিয়ে আনে। শেষ সময়ের একটি মাত্র পরাজয় শুরুর দিকের সব বিজয়কে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়। আর যদি মুছেও না দেয়, তাহলেও ইতিহাস তিক্ত হয়ে যায়।
কিভাবে? এ নিয়ে বেশি কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাজাকারদের ক্ষমা এবং বর্তমানে তাদের দম্ভ আর ইতিহাস বিকৃতির অক্লান্ত চেষ্টা দেখলেই বোঝা যায় যে আমাদের ভূলটা কি ছিল।
যা হোক, রাজাকারদের সাথে নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনা করার কোন সুযোগ নেই। তাই এই উদাহরন শুধু উদাহরন হিসাবেই থাক।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী সময়ের ভূলভ্রান্তি বা অপরাধমূলক কাজ কে আমরা কোন দৃষ্টিতে দেখব? ইতিহাস কি বলবে? আগামী প্রজন্মের কাছে কি পৌছাবে? আগামী প্রজন্ম অথবা আমাদের প্রজন্মই বা কি সিদ্ধান্ত নেবে তাদের ব্যপারে?
সূচনায় এত সব ঘোলাটে কথাবার্তা লেখার একটাই কারন, এই ব্যপারটা নিয়ে সোজাসুজি আমি কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। গত দুই দিন ধরে মাথায় যন্ত্রণা দিচ্ছে। কোন ফলাফল নেই।
যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময় নিয়ে মোটামুটি ভাল জ্ঞান রাখেন তারা এতক্ষণে নিশ্চই বুঝে গেছেন যে কথাগুলো এখন এই সময়ে লিখে দেবার কারন কি। হ্যাঁ, সেক্টর কমান্ডার লেঃ জেনারেল (মুক্তিযুদ্ধকালীন মেজর) মীর শওকত আলীর মৃত্যু।
তার মৃত্যুর সংবাদ পাবার পর ফেসবুকে একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার বিতর্কগুলোকে উর্ধ্বে রেখে তাকে স্যলুট জানিয়ে একটা স্ট্যটাস দিয়েছিলাম। কিন্তু ঐ স্ট্যটাস দেয়ার পর থেকেই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকল যে, তার বিতর্কগুলোকে কি উর্ধ্বে রাখা যায়? তার বিতর্কগুলোকে সরিয়ে রেখে তাকে কি মহামানব হিসাবেই মৃত্যুর পরে গণ্য করা হবে?
টিভি নিউজ, সংবাদপত্রেও দেখা যাচ্ছে যে তার বিতর্কগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। আজকে প্রথম আলোতে আমার খুবই প্রিয় একজন লেখক, মুক্তিযোদ্ধা মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া শওকত আলীকে স্মরণ করে কিছু কথা লিখেছেন। তিনিও বিতর্কগুলোকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টাই করেছেন। এখন প্রশ্ন হল, এরকম করলে তো যারা তার সম্পর্কে বা তার বিতর্কগুলো সম্পর্কে জানেন না তাদের কাছে তিনি মহামানব টাইপ কিছু একটা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবেন।
(যেমন সাঈদীর কুকীর্তি সম্পর্কে যারা জানে না, তারা অনেকেই তাকে মহাবুজুর্গ আল্লার ওলী টাইপ কিছু একটা মনে করে!! কেন যেন এই বাজে উদাহরণটাই মাথায় আসল। এই উদাহরন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যায় না বলে আমি আবারো এটাকে শুধুই উদাহরণ হিসাবেই দেখতে বলব।)
যারা তার সম্পর্কে বিতর্কগুলো কী তা জানেন না, তাদের জন্য বলছি, উনার শুধু বিতর্কগুলো নিয়ে লিখতে গেলেও আরো একটা কি দুটো পোস্ট হয়ে যাবে। যেগুলো আমি নতুন করে এখানে টেনে আনতে চাচ্ছি না।
এখন আমার প্রশ্ন হল যে, তার সমাধিতে আমরা কি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ফুল দেব, নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যায় সহযোগিতাকারী হিসাবে এড়িয়ে যাব? ইতিহাসের একজন নির্মাতা হিসাবে শ্রদ্ধা করব, নাকি ইতিহাসের বিকৃতিকারী হিসাবে ঘৃণা করব (ঘৃণা শব্দটা আমার ব্যবহারের কোনই ইচ্ছা ছিল না)? রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এজন্য স্যলুট দেব, নাকি রাজাকারদের সাথে আপোসকারী হিসাবে স্যলুট থেকে বঞ্ছিত করব? নতুন প্রজন্মই বা তার সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেবে?
প্রাসংগিক কিছু পোস্টের লিংকঃ
১- একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রস্থানঃ আপনাকে লাল সালাম জেনারেল এ পোস্টে নজরুল ভাই এবং রিটন ভাইয়ের মন্তব্য।
২-তাহেরের স্বপ্ন (পঞ্চম ও শেষ পর্ব) এ পোস্টের সব মন্তব্য।
আমি ভার্সিটিতে চলে আসায় আর সবার জবাব এত দিন দিতে পারি নি।
যা হোক এই একটাতেই আমি সবার কথার সাথে কথা বলতে চাই।
স্বাধীন ভাইয়ের সাথে আমি একমত না বলেই আসলে আমার এ পোস্ট টা দেয়া। ব্যক্তিপুজোকে যদি দূরেই রাখতাম তবে এই পোস্টের দরকার হত না। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও তার কৃতকর্মের উপরই তার সম্মানপ্রাপ্তি নির্ভর করে। কারো কারো সামনে ব্যক্তিত্বের কারনে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়, কারো কাজের গুণে তার ব্যক্তিত্ব হীনতা থাকা সত্ত্বেও হয়তো মাথা নত হতে বাধ্য হয়। তাই একে ব্যক্তিপুজো না বলে সম্মানের জায়গাতেই রাখি! সম্মান করা আর পুজো করা তো এক কথা নয় নিশ্চয়ই!
তাই আসলে ঘুরে ফিরে আদিল মামার কথাই আসছে, যেটা আমি মানতে চাইছিলাম কিন্তু মানার পিছনে যথাযথ কারন খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
এ কথার পর আসলে আমার কিছু বলার মুখ থাকেনা। তাই আপাতত সকল দ্বিধা ছেড়ে দিয়ে আদিল মামার সাথেই এক মত হতে চাই।
আদিল ভাইয়ের সাথে আমি একমত। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই- এই দু’টো ভিন্ন বিষয়। দু’টোর মাঝে কিছু যোগসূত্র থাকলেও, এই দুই সময়ে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ও বিকাশ ভিন্ন হতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সামগ্রিকভাবে যে জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে সর্বস্তরে, এর পরবর্তী সময়কালে নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা/ব্যর্থতা /বা যাই বলি না কেনো, তার ফলস্বরূপ জাতীয় চেতনার বিকাশ অনেকটাই সীমিত ও সংকুচিত হয়ে ব্যক্তিস্বার্থের প্রবণতা বাড়ে ও তা ভয়াবহ মহামারী আকারে রূপ নেয়। অনেকেই হয়তো কষ্ট পাবেন/ স্বীকার নাও করতে চাইতে পারেন/ আমাকে সন্দেহ করতে পারেন, কিন্তু এটা তো সত্য যে যেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধে এত বিশাল অবদান রাখলেন, মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর তিনি কি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ স্পৃহায় মিরপুরে শয়ে শয়ে বিহারীকে হত্যা করেননি নির্বিচারে, সেখানে তার লোক বিহারীদের সবকিছু লুটপাট করেনি, সেখানকার নারীদের অসম্মান করেনি? এই দু’টো ঘটনা কী একটা আরেকটার বিচার ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিপূরক হতে পারে? দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ আর এর পরে ক্ষমতা দখলের লড়াই- এই দু’টো ভিন্ন বিষয়কে এক মাপকাঠিতে বিচার করা অনুচিত।
পৃথিবীর বহু দেশের ইতিহাসেই দেখতে পাওয়া যায় যে স্বাধীনতার সংগ্রামে যে দু’পক্ষ একসাথে লড়াই করলো শ্ত্রুপক্ষের বিপক্ষে, স্বাধীনতার পরবর্তীতে ক্ষমতা দখলের লড়াইতে তাদের যে কোনো একপক্ষ অপরপক্ষকে পরাস্ত করতে সেই শত্রুপক্ষের সাথেই সখ্যতা করলো। এই জন্য বিষয় দু’টিকে আমি ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে বস্তুনিষ্ঠতার আলোকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করাকেই আমার কাছে অধিক যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়।
১। আমরা সবসময় অস্তিবাচক চিন্তা করব। কেউই খারাপ নয়, সবাই ভাল, কেউ কম, কেউ বেশি – এইভাবে চিন্তা করব।
২। তারপরও যদি কাউকে খারাপ বলতে হয় এবং সে ভাল না খারাপ তা বিচার করতে না পারি, তাহলে একটা কাগজে তার ভালোগুণ আর মন্দগুণ পাশাপাশি লিখে শতকরা হিসেবের দ্বারা বিচার করতে পারি। সেক্ষেত্রে যুক্তিবোধ আর নইতিকতাবোধ অত্যন্ত সূক্ষ্ম হওয়া চাই।
প্রথমতঃ কোন মানুষই ১০০% খাঁটি নয়। কোন না কোন দোষ, পদস্খলন সবার মাঝেই পাওয়া যাবে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নানান কারনে এই কাজটা আরো সোজা। পুরোপুরি ফেরেশতা বা পুরোপুরি শয়তান চরিত্রের মানুষ কেবল গল্প উপন্যাস বা সিনেমাতেই পাওয়া যায়।
মুক্তিযোদ্ধা মানেই আসমান থেকে নাজিল হওয়া দোষত্রুটি মুক্ত সর্বত্যাগী ফেরেশতা এমন ধারনা অত্যন্ত শিশুসূলভ। বহু হেভিওয়েট থেকে শুরু করে সাধারন বহু মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রেই কথাটি খাটে। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান এতে করে খাট হয়ে যায় না।
মীর শওকতকে সম্মান জানানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অবদানের জন্য, সামগ্রিকভাবে আদর্শ কোন চরিত্র হিসেবে নয়। আর আপেক্ষিকতার একটা ব্যাপার আছে। যেখানে জামাতি সেকটর কমান্ডার আছে, বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা কন্ট্রাক্টারির নামে পয়সা লুট করে সেখানে উনি ঘাতক দালাল নির্মুলের আন্দোদনে ভূমিকা রেখেছিলেন সেটা মনে রাখতে হবে। দলীয় নির্দেশ ও আদর্শের বাইরে গিয়েও স্বাধীনতা ঘোষনায় বংগবন্ধু ও জিয়ার ভূমিকা পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেন যা এই নিয়ে কুতর্ক সৃষ্টিকারীদের মুখে আজীবন জুতোর বাড়ি হিসেবে থাকবে। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে খুব সমস্যা কোথায়?
এই ঘোষনার ব্যাপারে যদিও তিনি একসময় মন্ত্রীত্বের মায়ায় ড্রাম তত্ব চালু করতে চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেই ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। প্রতিবাদের পর নিজেই আর সে নিয়ে কথা বাড়াননি, যা সত্য তাই বলে এসেছেন।
তাহের হত্যার সময় বাস্তবতা হল সেনাবাহিনীর সব সিনিয়র অফিসারই ছিল তাহের বিরোধী। জিয়ার একক সিদ্ধান্ত ছিল না আসলে ফাঁসী। এ সম্পর্কে মওদুদ তার বইতে লিখেছে। জিয়ার আমলের নানান গোপন হত্যায় মীর শওকত দায়ী হলে তো সে হিসেবে সে আমলের সব সিনিয়র সেনা অফিসারকেই দায়ী করতে হয়। বাকিরা আর কেন বাদ যাবেন?
স্বাধীন বাংলাদেশে কি বংগবন্ধুর কোন ভুল চুক দোষ ত্রুটি ছিল না? তার সম্পর্কে আমরা তাহলে কি মূল্যায়ন করতে পারি? স্বাধীন বাংলাদেশে তার ব্যার্থতার কারনে কি স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান অস্বীকার করা যাবে? এ জাতীয় আরো অপ্রীতিকর কিছু উদাহরন টানতে পারি, ইচ্ছা করেই টানছি না কারন তাতে ছাগুদের যুক্তিই শক্তিশালী করা হবে।
য়ামার চোখে মীর শওকতের কিছু ভুল ত্রুটি দোষ থেকে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা প্রশ্নাতীত। স্বাধীনতার ঘোষনা কুতর্ক প্রশমনে তার ভুমিকা খুবই প্রশংসনীয়। তাই আমি সম্মান জানাতেই পারি। তবে সম্মান জানাবার খাতিরে তার অন্ধকার কোন দিক চাপা দেবার প্রচেষ্টাও কোনভাবে সমর্থন করা যায় না।
@আদিল মাহমুদ,
একমত। এটা সবার ক্ষেত্রেই সত্যি। জাতির পিতা থেকে শুরু করে রহিমুদ্দিন, কলিমুদ্দিন সবাই। চেপে গেলেই বরং নিজের কাছে নিজের অসৎ হওয়া হবে। নিজেকে অসৎ করে অন্যকে মহামানব বানাবার মধ্যে কোন গৌরব নাই।
@হোরাস,
আমাদের দেশের কালচারে একটা ব্যাপার আছে যে কেউ মারা গেলে তার নামে মন্দ কিছু বলতে নেই। খুবই প্রশ্নবোধক তত্ত্ব। এটা আত্মীয় স্বজনের ক্ষেত্রে চলতে পারে, তবে জাতীয় ব্যাক্তিত্ব বা সেলিব্রেটিদের ক্ষেত্রে চলে না।
তবে আমি কিছু ব্লগে এই মীর শওকত বিষয়ক বদনামে লক্ষ্য করেছি যে এখানে আসলে দলবাজি প্রচ্ছন্ন প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। এটাই বেশ আপত্তিকর লেগেছে।
আমি একটু ভিন্ন ভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি, তাহলে কনিফিউশান কিছুটা কমতে পারে। যদি আমার বক্তব্যে কোথাও দ্বিমত থাকে, নিঃসঙ্কোচে জানাবেন।
বিষয়টিকে আমি দেখি ব্যক্তিপূঁজো বনাম আদর্শের পূঁজো। যদি আপনি ব্যক্তিটিকে ছেড়ে আদর্শটি নিয়ে চিন্তা করেন তাহলেই যে কোন কনফিউশান দূরে রাখতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধের কথাই যদি বলি, মুক্তিযুদ্ধ কারোর একক কোন যুদ্ধ নয়। সময়ের প্রয়োজনে দেশের বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধ করেছে। কেউ সরাসরি কেউ সরাসরি নয়। কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধকেও একটি আদর্শ হিসেবে দেখতে পারেন। এখানে কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে সম্মান করার প্রয়োজন পরে না। এখন আপনি যদি সম্মান করতে চান তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শটিকে সম্মান করবেন সব সময়। দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা এগুলোই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। সেগুলো করার জন্য কোন ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে হয় না। এখন কেউ যদি সেই আদর্শ হতে বিচ্যুত হয় তবে তিনি আরা মুক্তিযোদ্ধা থাকেন না। তিনি এক সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু এখন আর নেই, কারণ তিনি আদর্শ হতে সরে গিয়েছেন। একই কথা অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একবার মুক্তিযোদ্ধা মানেই তাই সারাজীবনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা নয়। যতক্ষন উনি আদর্শকে ধারণ করে রাখছেন ততক্ষনই তিনি মুক্তিযোদ্ধা।
একই কথা প্রযোজ্য ধর্মের বেলায়। সেখানেও মানুষ যেটা করে তা হলো ব্যক্তিপূঁজো। ধর্মগুলো স্ববিরোধী এ কারণেই। আল্লাহর/ভগবানের/আদর্শের পূঁজো যেখানে করার কথা বেশি বেশি সেখানে তারা বেশি করে নবী/দেব-দেবীর পূঁজো। :-Y । একই কথা প্রযোজ্য বিজ্ঞান অথবা দর্শনের ক্ষেত্রে। আমরা আদর্শের জন্য সংগ্রাম করি, কোন ব্যক্তির জন্য নয়। তাই আইন্সটাইন, হকিং, কিংবা সক্রেটিস কোন ভুল বললে বা ভুল কিছু করলে তাঁরাও সমালোচনার উর্ধ্বে থাকবে না। আশা করি আমার বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছি।
@স্বাধীন,
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
মানে হচ্ছে ধর্মে যেখানে ঈশ্বরের পূঁজোর কথাই বলে সেখানে মানুষ বাস্তবে করে ব্যক্তি পূঁজো। ঈশ্বরের কে চোঁখে দেখা যায় না, কিন্তু নবীকে দেখা যায়। নামাজ কেন পড়বো, কারণ নবী বলেছেন আল্লাহ আমাদের বলেছেন করতে। ঈশ্বর কখনো সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলেন না। সব সময় একজন মেসেঞ্জার লাগে। এখন তাই সেই মেসেঞ্জারকে বিশ্বাসের মাঝেই আছে ধর্মের বিশ্বাস। তাহলে আমরা আসলে বিশ্বাসটা কার উপর বেশি করছি, ঈশ্বরের উপর নাকি মেসেঞ্জারের উপর 😛 । যদি মেসেঞ্জারের কথার উপর বিশ্বাস না করেন তাহলে কিন্তু ধর্মগ্রন্থ, ঈশ্বর সবই বাতিল হয়ে যায়। মানুষও তাই দেখবেন মেসেঞ্জারের উপর আঘাত আসলেই তাই ক্ষেপে যায়। এখন ঈশ্বর আছেন কি নেই, সেটা অন্য প্রসঙ্গ। সেটাকে এখানে না আনাটাই ভালো।
@স্বাধীন/
আপনার চন্দ্রবিন্দুর সাথে কি এমন প্রেম? 🙂
গীতা দাস এর উদৃতিটাকেই সঠিক মনে করছি। এই জন্যই সম্ভবত কমিউনিস্টরা বলেন, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। মানুষকে অবিরত ভালো হয়ে ওঠার সংগ্রাম করে যেতে হয়।
মৃত্যুর পরে কারো সম্বন্ধে খারাপ কিছু না বলা একটা সামাজিক রীতি। এক্ষেত্রে সে ব্যাপারটাও হয়ত ভূমিকা রেখেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে রীতিটা খুব মন্দ না হলেও পাবলিক ফিগারের ক্ষেত্রে এই সংস্কার ত্যাগ করাই অবশ্য ভাল। আলোচ্য ব্যক্তির ভাল মন্দ সব দিকই যতটা সম্ভব সততার সাথে উপস্থাপন করাটাই উচিত।
সেলুট দেয়া না দেয়ার ব্যাপারটা ভিন্ন, কারণ সেলুট একটি সার্বিক gesture, আধা সেলুট বা ডান হাতে সেলুট বাঁ হাতে চড় জাতীয় মিশ্র প্রকাশভঙ্গির সুযোগ না থাকায় এক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দের অবকাশ রয়েছে। আমি বলব মুক্তিযুদ্ধকেই সেলুট দিতে, মুক্তিযোদ্ধাদের নয়।
@রৌরব,
ঠিক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এতেই খুশি হবে, ভন্ডদের অবশ্য গায়ে লাগবে।
@রৌরব,
তারপর ও তার প্রাপ্য সম্মানটুকু কি হবে? “মুক্তিযুদ্ধ” কে তো চাইলেও আমরা সম্মান দেখাতে পারবোনা, বেশি থেকে বেশি হলে সত্য ইতিহাসটুকু ধরে রাখতে পারব। সম্মানের জায়গাতো শুধুমাত্র সেইসব বীরদের জন্য। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রেই যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সমাধান কোথায়?
আমি এখনো তাদের যথাযোগ্য সম্মান দেখানোরই পক্ষপাতি। তবুও মনে প্রশ্ন থেকে যায়………
@তানভী, :laugh: :rotfl: :rotfl: 😥 😉 :-X :-Y :hahahee: :hahahee: :hahahee: 🙁 🙁
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
ভাই, আপনের এই অবস্থা আমার মাথার ভিতরেও চলতেসে! তাই টিকতে না পাইরা পোস্টটা ঝাইড়া দিসি! আর এখনো চুল ছিড়তাসি!
উনারা তো মরার আগে বহুত সম্মান,অর্থ,ইত্যাদি ইত্যাদি পাইছেন নিজের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কইরা।এখন ওগো দোষটা সকলেরই জানা উচিত।ইতিহাস আবেগকে দুই দিন পাত্তা দেয়,তিন দিনের দিন দেয় না।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
ভাইয়া, কথাটা আমার মনে হয় না খুব বেশি বাস্তব। ইতিহাসে আবেগের অনেক বড় একটা জায়গা আছে, যেটার ঠ্যালায় অনেক সত্য ঢাকা পড়ে যায়। গণমাধ্যম যে ভাবে তার ত্রুটিগুলো আড়াল করছে, তার উপর সে সাধারন মানুষের মনে একটা আবেগের জায়গায় আছে, তাতে তার ত্রুটিগুলো হয়তো অনেকের কাছেই আড়াল হয়ে যাবে। ইতিহাস থেকেও মুছে যেতে পারে।
@তানভী, আপাত দৃষ্টিতে আমার কথাটা ভুল মনে হতে পারে।কিন্তু এটাও সত্য যে,মিথ্যাটা একদিন ভেঙ্গে পড়েই।আমরা যেহেতু জানি,ইতিহাসের ধারাটা এই রকম,তাই,আমাদের উচিত এখনই উহাদেরকে বর্জন করা
@তানভী,
আমার এক প্রবীণ পরিচিত বলেন, জলে ডুবে যাওয়ার সময় তুমি একটা শিশুকে উদ্ধার করেছ। এর জন্য তুমি অন্য সময় ঐ শিশুটিকে আবার জলে নিক্ষেপ করার অধিকার রাখ না।
আমার মনে হয় আমি প্রসঙ্গটি বুঝাতে পেরেছি।
@গীতা দাস,
:yes:
@গীতা দাস,
:yes: এই হল সত্য ও শেষ কথা।
অন্যভাবে আরো একটা সাধারণ উদাহরণ হতে পারে- এক মণ ঘি এর মধ্যে এক সের কেরোসিন, এবার ঘি এর কোন মূল্য নেই।
অপ্রাসঙ্গিক আরেকটি উদাহরণ- মুহাম্মদকে মানুষ আল-আমিন (বিশ্বাসী) বলেছিল বলে তিনি মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দিয়ে নতুন ধর্ম তৈরী করে মানুষ খুন করার অধিকার রখেন না।
দেশদ্রোহী মুক্তিযোদ্ধা অনেক দেখেছি, দেশপ্রেমিক রাজাকার একটিও পাইনি।
@গীতা দাস,
মীর শওকত আলী বা অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রেও কি এত বড় কথাটা যায় কিনা জানি না। তবে কাছাকাছি তো অবশ্যই। কিন্তু কথা হল তাদেরকে আমরা কি হিসাবে জানব?
আমি মনে করি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তাঁর অতীত ও বর্তমান দু’টো দিয়েই বিচার করা উচিত। যে লোক কোন গোপন অভিসন্ধি নিয়ে যুদ্ধ করেছে, তার অবদানের সাথে একজন আবেগী যোদ্ধার অবদানকে কোনভাবেই এক কাতারে ফেলা যায় না। কে কি উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছে তা যেহেতু আমাদের পক্ষে জানতে পারা প্রায় অসম্ভব, তাই কোন মুক্তিযোদ্ধাকেই আমি দেবতার আসনে বসাতে রাজি না। মীর শওকত আলীকে আমি চিনি না, কিন্তু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে দিগন্ত টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কেক কাটতে দেখে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার অবস্থানটা অনেকটা এভাবে প্রকাশ করা যায়- হোপ ফর দ্যা বেস্ট এন্ড প্রিপেয়ার ফর দ্যা উয়োর্স্ট।
@পৃথিবী,
তোমার কথাগুলো নিয়ে সোজা আরেকটা পোস্ট দিয়ে দেয়া যায়। আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক স্যারের সাথে এই ব্যপার নিয়ে ছোটখাট বাতচিত হয়েছিল।
আমিও এখন কনফিউজড। তাহলে করবটা কি? শত হলেও উনাদের কারনেই আমরা দেশ পেয়েছি।
@পৃথিবী,
দিগন্ত টিভির ব্যাপারটা কি?
@রৌরব, দিগন্ত মিডিয়া মীর কাসেম আলীর সম্পত্তি এবং জামায়াতের মুখপাত্র। নয়া দিগন্তও দিগন্ত মিডিয়ার অন্তর্ভুক্ত(তবে সংগ্রাম, কিশোরকন্ঠের মত পত্রিকা জামায়াতের মুখপাত্র হলেও এগুলো মীর কাসেম আলীর মালিকানাধীন কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত না)।
উক্তিটি হুমায়ুন আজাদের।