এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের শ্রীমঙ্গল শাখার সদস্য সমীক সেন আমাকে ফোনে জানালো ঢাকাস্থ ইসকনের কিছু সদস্যের সাথে বির্তকের এক পর্যায়ে তারা একটি বই রেফার করেছে পড়ে দেখার জন্য। বলেছে ‘এত্ত যে বিজ্ঞান নিয়ে পণ্ডিতি দেখাও তোমরা, তবে এই বইটির বক্তব্য খণ্ডন করে দেখাও তো?’ পরপর কয়েকদিন তারা এই বই নিয়ে নাকি বেশ চেঁপে ধরছে। আমি ইসকনের এই বইটি দেখিনি, তাই সমীক বললো সে আমাকে বইটি দেখাতে চায়। আর সম্ভব হলে একটি জবাব তৈরি করে দিতে। কিছুদিন পর সমীকের কাছ থেকে বইটি পেলাম। বইয়ের নাম ‘বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্ব সভ্যতা’, লেখক গোবর্দ্ধনগোপাল দাস, ভক্তিবেদান্ত গীতা একাডেমি, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ। বইটি হাতে আসার পর এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম। প্রচণ্ড এক উত্তেজনা তৈরি হলো নিজের মধ্যে। জবাব তৈরি করতে গিয়ে দেখি মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে পারছি না। বারে বারেই উত্তেজিত ধ্বনি বের হয়ে আসছে। আমি জানি না এখানকার কোন পাঠক এই বইটি পাঠ করেছেন কিনা? একজন বিজ্ঞানমনস্ক পাঠকের কাছে এই ধরনের বই পাঠের পর নিজেকে সংযত রাখা যথেষ্ট কঠিন। নিমকহারামির সীমা থাকা উচিৎ । বিজ্ঞান ছাড়া যাদের একদিনও চলে না, ওরা ভালো করেই জানে চব্বিশ ঘণ্টা হরি নাম জপ করলেও এক মুঠো চাল সিদ্ধ হয়ে মুখে জুটবে না। তিন লক্ষ বার, দশ লক্ষ বার হরি নাম জপ করলেও কলেরা, টাইফয়েড, যা, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ভালো হবে না। কারো বাপেরও সাধ্য নেই মন্ত্র পড়ে এদের সুস্থ করে তোলতে পারে। ধর্মীয়নেতারা নিজেদের অসুখের সময় ঠিকই মন্দিরে না গিয়ে হাসপাতালে দৌড় দেয়। ডাক্তার-ডায়গনিস্টিক সেন্টার আর ফার্মেসিতে আঠার মতো লেগে থাকে। এসব তো আমাদের চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত দেখছি। দিনরাত নিরামিষ, নিরামিষ করে, ঠেলায় পড়লে মুরগির ঘুঘুলি খেতেও তখন চক্ষুলজ্জা হয় না। সেই বিজ্ঞানের বিরোধিতা করে যারা, বিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক বিতর্ক নিয়ে যারা মজা লুটার আনন্দ পায় তাদেরকে নিমকহারামের দল বলা হবে না তো কি বলা যায়, আমি জানি না। এর থেকে অনেক খারাপ উপাধি দেয়া যায়, কিন্তু আমার মতে এর থেকে ভালো উপাধি দেবার সুযোগ নেই।
সমীকের কাছে আমার ছোট একটি প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে দিয়েছিলাম বইটি পাবার সপ্তাহ দুয়েক পর। সমীক ইসকনের সদস্যদেরকে প্রতিক্রিয়াটি পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু সেই থেকে এরা সবাই চুপ। কয়েকবার তাগাদা দিয়ে এ বিষয়ে ওদের মুখ থেকে কোনো শব্দ বের করতে পারেনি। বিযুকা’র আরেক সদস্য বর্তমানে ইংল্যান্ড নিবাসী অসীম দাসকে ইমেইলে লেখাটি পাঠালে সেও এটিকে ফেসবুকে ইসকনের গ্র“পে পোস্ট দেয়। এখানে বলা অপ্রাঙ্গিক হবে না, বেশকিছু দিন আগে অসীম এবং আমার সাথে ইসকনের কিছু সদস্যের দীর্ঘ বির্তক হয়েছিল। সেখানে কয়েকবার ওদের মিথ্যাচার আর ভণ্ডামো হাতেনাতে ধরিয়ে দেয়ার পরও হুঁশ হয়নি। একটার পর একটা ইস্যু নিয়ে আসার পর শেষমেশ প্রাণের উৎপত্তি এবং জৈববিবর্তন নিয়ে বির্তকের এক পর্যায়ে ওদের কেউ কেউ আমাদের নসিহত করেছিল হারুন ইয়াহিয়ার ডারউইনিজম রিফুটেড এবং গোবর্দ্ধনগোপালের এই বইটি পড়তে। ওখানে নাকি সব আছে। আমি হাসবো না কি কাঁদবো বুঝতে পারলাম না। চোরে চোরে যে মাসতুতো ভাই তা আবারও প্রমাণিত হল! যাহোক, অনেক চেষ্টা করেও দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ওদের কাছ থেকে কোনো জবাব না আসায় আমার এই পাঠ-প্রতিক্রিয়াটি ব্লগে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। ফেসবুকে আমিও এই লেখাটি প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন, কেউ কেউ কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করেছিলেন লেখাটি ব্লগে প্রকাশ করার জন্য। সকলকেই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। জাকির নায়েক, হারুন ইয়াহিয়া প্রমুখের প্রচারিত তথাকথিত ইসলামি-বিজ্ঞানের মতো হিন্দু ভণ্ডের দল কি করে খ্রিস্টান আইডিওয়ালাদের তথ্য ধার করে হিন্দুত্ববাদী মোড়কে নতুন কিসিমের বৈদিক-বিজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চায় তা বোঝার পাশাপাশি, এদেরকে চিনে রাখার দরকার আছে। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে যেখানে বিজ্ঞানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিকায়ন ঘটেনি এখনও, বিজ্ঞানের প্রতি পেশাদারিত্বমূলক মনোভাব গড়ে ওঠেনি, তাই বিজ্ঞান আর ধর্মের মিশেলে উদ্ভট জগাখিচুড়ি তৈরির প্রচেষ্টা ধর্মবাদীরা করেই যাবে-এ তেমন আশ্চর্যজনক নয়। তাই আমার মতে একজন বিজ্ঞান-আন্দোলন কর্মীকে বিজ্ঞানের তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্ত জানার পাশাপাশি অবশ্যই ধর্মবাদীদের এই ধরনের ভণ্ডামির মনস্তত্ব এবং কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। পপুলার লেভেলে শুধু ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলেই চলবে না জানার পরিমাণ ক্ষেত্রবিশেষে আরো গভীরে নিয়ে যেতে হবে। আমি বলছি না যে, একজন বিজ্ঞান-আন্দোলন কর্মীকে বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই টেক্স্টবুকের সমস্যা সমাধান পর্যন্ত জ্ঞান আহরণ করতে হবে। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে ধর্মবাদী বিজ্ঞান-ভণ্ডরা তাদের সকল আলোচনাতেই বিজ্ঞানের পরিচিত-অর্ধপরিচিত টার্মগুলো ব্যবহার করে, যাতে বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সামঞ্জস্য রয়েছে এমন একটি ধারণা গণচেতনার মধ্যে স্থান করে নিতে পারে। তাদের এ অপচেষ্টা অবশ্যই রুখতে হবে। তা সে যে ধর্মের তরফ থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আঘাত আসুক। এ দায়িত্ব প্রতিটি বিজ্ঞান-আন্দোলন কর্মীর, প্রতিটি বিজ্ঞান-চেতনাসম্পন্ন মানুষের।
ভূমিকা শেষে এবার মূল লেখাটিতে যাই। আগেই বলে রাখি গোটা লেখাটিতে তাড়াহুড়ার ছাপ স্পষ্ট। এখানে ছোট ছোট ১০টি পয়েন্টে ‘বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্ব সভ্যতা’ বইটির চতুর্থ অধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। ব্লগে এ লেখাটি প্রকাশ করার ইচ্ছে হওয়ার পর ভাবলাম কয়েকটি পয়েন্ট বড় করে নিই। যাতে সাধারণ পাঠক, যারা গোবর্দ্ধনগোপালের বইটি পাঠ করেননি, তাদের কাছে আমার বক্তব্য বুঝতে সহজ হবে। তাই অল্প কয়েকটি জায়গায় ঈষৎ পরিবর্তন করেছি।
‘বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্ব সভ্যতা’ শিরোনামের বইয়ের গায়ে দাম যদিও লেখা নেই, তবে শক্ত কাভার, রঙিন ছবি আর কাগজের কোয়ালিটি দেখে বোঝা যাচ্ছে, বইটির মূল্য একেবারে যেনতেন নয়। সমীক এতো দামি বই কিনে আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে আমাকে আসলে চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এটার কি সদ্বগতি করা যায় তাই ভাবছি! প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার ঢাউস সাইজের বইটি সম্পূর্ণরূপে পড়া এখনো শেষ হয়নি তবে বেশকটি অধ্যায় আমার ইতিমধ্যে পড়া হয়েছে। অধ্যায়গুলি পড়ে আমার মনে হয়েছে, এই বইয়ের প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যেই রয়েছে সদ্বগতির শ্রেষ্ঠ পথ। সেজন্য এ পথই বেছে নিলাম। সমীক আপনাকে আর একটু কষ্ট করতে হবে। নীচে এই বইয়ের একটি অধ্যায়ের উপর ছোট পরিসরে আমার বক্তব্য তুলে ধরছি। আপনি সম্ভব হলে এই চিঠির ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে ইসকনের সাথে যোগাযোগ করে নীচের পয়েন্টগুলোর ব্যাখ্যা দাবি করবেন। যদি ইসকনের সদস্যরা ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করেন অর্থাৎ আমার জবাবের প্রেক্ষিতে তারা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করতে ইচ্ছুক থাকেন তবে পরবর্তীতে আরো বিস্তারিতভাবে প্রত্যেকটি পয়েন্টে আলোচনা করতে বা লিখে দিতে রাজি আছি।
নেহাত বিজ্ঞান-বিরোধী বই কিংবা ধর্মীয় বই হলে আমার কোনো আপত্তি থাকতো না। কোনো ধরনের জবাব দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করতাম না। বাজারে রসময় দাসগুপ্তের মত লেখকদের বইয়ের তো অভাব নেই। তাই বলে কী সব বিজ্ঞান-বিরোধী বইয়ের জবাব দিতে হবে নাকি? কিন্তু কথা হচ্ছে, এ বইয়ে বিজ্ঞানের বিরোধিতা করতে গিয়ে এত্তো বেশি বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যা, ভুল ব্যাখ্যা আর ম্যানুপুলেশন করা হয়েছে, তার কোনো সীমা নেই। বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীরা যা বলেনি, তাই বিজ্ঞানের নাম করে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা এই বইটি পাঠ করেননি, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, এই বইয়ের মুখবন্ধ লিখে দিয়েছেন প্রফেসর ডঃ সুদীপ্ত ঘোষ, ডিপার্টমেন্ট অব্ মেটালার্জিক্যাল এন্ড মেটেরিয়ালস্ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আই.আই.টি), খড়গপুর। মুখবন্ধের এক জায়গায় প্রফেসর সুদীপ্ত বলেছেন “
শ্রীল প্রভুপাদ বিজ্ঞানসম্মতভাবে আধ্যাত্মিক জ্ঞান-এ প্রবেশের উপযোগী প্যারাডাইমের খোঁজ বিশ্বের বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে জানাতে ভক্তিবেদান্ত ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। বৈদান্তিক ধারায় যে কোন আচার্যের মতো শ্রীল প্রভুপাদ অনুভব করেছিলেন যে কেউ যদি বিজ্ঞানসম্মতভাবে ও যুক্তিশীলতার সাথে প্রকৃত বাস্তব সত্যকে স্বরূপত জানতে চান, তাহলে তিনি সুনিশ্চিতভাবে ভগবদ্গীতা, বেদান্ত ও শ্রীমদ্ভাগবতের শিক্ষা-উপদেশে আস্থাবান হবেন। …প্রথিতযশা চিন্তাবিদ্, বিজ্ঞানী ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের রচনাকর্ম গভীরভাবে অধ্যয়ন-পর্যালোচনা করে গােবর্দ্ধনগোপাল দাস এই বইটিতে একজন যুক্তিশীল মানুষের অকৃত্রিম জিজ্ঞাসাকে উপস্থাপন করেচেন, যা ভগবদ্গীতার ও ভাগবতের সুমহান শিার অভিমুখে পাঠককে পরিচালিত করবে।
” প্রফেসর সুদীপ্ত ছাড়াও আরো যারা এই বইয়ের রচনায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, ডঃ পুরুষোত্তম চক্রবর্তী, সিনিয়র প্রফেসর অব ফিজিক্স, সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউকিয়ার ফিজিক্স, কলকাতা। ডঃ পুরুষোত্তম বলেছেন : “
সনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন সংঘাত নেই। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো ধর্মমতের সঙ্গে বিজ্ঞানের যে বিরোধ দেখা দিয়েছিল, তার জন্য প্রকৃত ধর্মকে দায়ী করা যায় না। প্রকৃত ধর্ম কখনো বিরোধ, সংঘাত, শোষণ সৃষ্টি করে না, বরং এইগুলোকে দূর করে মানব সমাজকে কলুষমুক্ত করে। প্রকৃত ধর্ম মতবাদ নয়, এটি আদি, অকৃত্রিম সনাতন সত্য।… বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্বসভ্যতা বইটি এই প্রয়োজনীয় দার্শনিক তত্ত্বকে গভীরতা দিতে সম হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ডঃ তাপস বন্দোপাধ্যায় (সায়েন্টিফিক অফিসার, ভাবা অ্যটমিক রিসার্চ সেন্টার, কলকাতা) বলেছেন :
“বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্বসভ্যতা বইটি বহু নির্ভরযোগ্য তথ্যে সমৃদ্ধ; এটি প্রামাণিক তথ্যের সংকলন।”
এর বাইরে আরো আছেন বিশ্বভারতীর রসায়নবিজ্ঞানী শ্রীবাসুদেবপ্রসাদ দাস, ক্যালফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডঃ পার্থ বিশ্বাস, ডঃ শেখ মকবুল ইসলাম (বিভাগীয় প্রধান, বাংলা সাহিত্য বিভাগ, সেন্ট পলস্ কলেজ, কলকাতা) প্রমুখের নামে এই বইয়ে বাণী ছাপানো হয়েছে। এঁদের নাম তুলে ধরে আমি শুধু এতটুকুই বোঝাতে চাচ্ছি যেনতেন চুনোপুটির হাতে রচিত নয় এ বইটি। এর সঙ্গে রাঘববোয়ালেরা জড়িত। কিন্তু আমার মতে এ বই পাঠ করে একজন সাধারণ পাঠকের জ্ঞান কতটুকু বাড়বে জানি না তবে চকচকে প্রচ্ছদ, রঙিন ছবি, আর দামি কাগজের মধ্যে দিয়ে মুরগীর বিষ্ঠা ‘অমৃত’ বলে পরিবেশন করার কৌশল যে ভালো রপ্ত হয়েছে ইসকনের, তা সহজেই বোঝা যায়। উপরোক্ত বইয়ের প্রত্যেকটি বাক্যে, প্রত্যেকটি অধ্যায়েই গণ্ডগোল রয়েছে। অসততার ছাপ রয়েছে। বিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের জ্ঞান ‘ক অর গোমাংস’ তারা লিখেছেন বিজ্ঞানের বিরোধিতা করে বই! ‘সাবাস ইন্ডিয়া সাবাস!’ এ বইয়ে এতো ভুলের সমাহার যে প্রত্যেকটি লাইনের জবাব দিয়ে সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে গেলে আমাকে কয়েকটি মহাভারত লিখে ফেলতে হবে! বুঝতে পারি না, একজন লেখক কি করে এতো কাণ্ডজ্ঞানহীন বর্জ্যপদার্থ রচনা করতে পারলেন? ন্যূনতম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান না রেখে এত্তো উল্টাপাল্টা বক্তব্য সাধারণ জনগণকে গিলানো হচ্ছে, ভাবাই যায় না। ধর্মের পে সাফাই গেয়ে, বিজ্ঞান-বিরোধী বই তো বাজারে প্রচুর আছে। কিন্তু এই বইয়ের মতো ‘শতাব্দীর সর্বোচ্চ কলঙ্কিত আবর্জনা’ সত্যি বলছি, এর আগে আমার নজরে আসে নি। সমীক এ জন্য আপনাকে পুনরায় ধন্যবাদ। আমি কৃতজ্ঞ।
চতুর্থ অধ্যায়ের মধ্যেই আজকে আমার বক্তব্য সীমাবদ্ধ থাকবে। পরবর্তীতে বাকি অধ্যায় নিয়ে আরো জবাব পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, আমার সম্পাদনায় চার্লস ডারউইনের ২০০তম জন্মবাষির্কী উপলে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের কাজ চলছে আর জৈববিবর্তন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা আর ভুল ব্যাখ্যার জবাব দিয়ে ‘জৈববিবর্তন তত্ত্ব : নানা জিজ্ঞাসা’ শিরোনামের আরেকটি গ্রন্থ লেখা চালিয়ে যাচ্ছি। ডারউইনের স্মারকগ্রন্থ আশা করি আগামী বইমেলাতে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় বইটিতে ইসকনের বইয়ে জৈববিবর্তন নিয়ে উল্লেখিত প্রশ্নাবলী এবং ভুল ব্যাখ্যাসহ আরো প্রচুর প্রশ্নের জবাব লেখা চলছে এখনো। বিধায় এই চিঠিতে জীবের বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্ব সভ্যতা বইয়ের ভুল ব্যাখ্যার জবাব ইচ্ছে করে কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে দিচ্ছি।
১. চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বিবর্তনবাদ : কল্পবিজ্ঞান যখন বিজ্ঞান’। শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই অধ্যায়ে কি কি আলোচনা হয়েছে এবং লেখক কি বলতে চাচ্ছেন। এই অধ্যায়ের ভূমিকা একেবারে ফালতু কথায় ভরপুর। যত্তসব বকওয়াস। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি কার্ল স্যাগান, ফ্রান্সিস ক্রিক মোটেই বিবর্তন-বিরোধী ছিলেন না। ১৫৪ পৃষ্ঠায় যেমন দাবি করা হয়েছে। কার্ল স্যাগানের ‘কসমস’ ডকুমেন্টারিটি সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। বিশেষ করে বিজ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কাছে। জনপ্রিয় এ বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যচিত্রটি বাংলাদেশের বিটিভিতে একসময় প্রচারিত হয়েছিল। এখনও বাজারে এই ডকুমেন্টারি সিডি-ডিভিডি আকারে পাওয়া যায়। ৭টি পর্বে তৈরি কসমস ডকুমেন্টারিতে লেখক মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছিলেন, তেমনি বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব, পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব, জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়া, মানব সভ্যতার বিকাশ ইত্যাদি ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কার্ল স্যাগান সারা বিশ্বের অত্যন্ত পরিচিত বিজ্ঞানমনস্ক গবেষক ছিলেন। তাকে জৈববিবর্তন তত্ত্বের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর উদ্দেশ্য কি? বইটিতে বলা হয়েছে ফ্রান্সিস ক্রিক ডিএনএ বা জিন আবিষ্কারক। ভুল বক্তব্য। ফ্রান্সিস ক্রিক-জেমস ওয়াটসন যৌথভাবে একটি ‘যুগ্ম সর্পিলাকার’ মডেলের মাধ্যমে ডিএনএন’র গঠনের ব্যাখ্যা দিয়ে ছিলেন। ওয়াটসন-ক্রিকের মডেল তৈরির বছর খানেক আগে থেকেই জীবকোষে ডিএনএ’র অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিৎ ছিলেন। এমন কি ডিএনএ’র উপাদান (চারটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈবক্ষার অ্যাডেনিন (A), থায়ামিন (T), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C)) সম্পর্কেও জানতেন। জানতেন না শুধু, এসকল উপাদান দিয়ে ডিএনএ’র অভ্যন্তরীণ গঠন কেমন। যা ওয়াটসন-ক্রিক যৌথভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রান্সিস ক্রিক জৈববিবর্তনের বিরোধী ছিলেন এমন তথ্যের উৎস কি? সম্পূর্ণ মিথ্যে বক্তব্য। আর ডিএনএ এবং জিন এক কথা নয়। সহজ কথায় হচ্ছে, জীবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিনের সাংকেতিক লিপি হল ‘জিন’ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিন ডিএনএ’তে অবস্থিত, কিছু ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরএনএ’তে)। যা জীবের বংশগতির একক। একেকটি ‘জিন’ একেকটি প্রোটিনের সাংকেতিক লিপি। কয়েকটি ‘কোডন’ মিলে জিন গঠিত। কোডন হচ্ছে তিনটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈবক্ষারের মিলিত রূপ; যেমন ACT কিংবা GCA।
২. ১৫৪-১৫৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “গ্যালাপেগাস দ্বীপে জাহাজ পৌঁছালে ডারউইন সেখানে পাঁচ সপ্তাহ কাটান, লক্ষ্য করেন জীববৈচিত্র্য। সেখানে তিনি কিছু ফিঞ্চ প্রজাতির পাখি দেখা পায়। প্রায় ১৪টি প্রজাতির ফিঞ্চ রয়েছে এই দ্বীপে। ডারউইন কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন, ডায়েরীতে লেখেন। কিন্তু তখন তাঁর বিবর্তনবাদের কথা মনে হয়নি আদৌ! …কোষের ডিএনএ-এ কোডিং মেকানিজম সম্বন্ধে তাদের (ডারউইন এবং পক্ষীবিশারদ জন গোল্ড-অনন্ত) কোনো ধারণাই ছিল না সেই সময়। কেবল বাহ্য আকৃতি বিচার করে এই ঘটনার প্রায় সাতাশ বছর পর ডারউইন বই লিখে উপস্থাপন করেন তার ন্যাচারাল সিলেকশান তত্ত্ব।” ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা আর ভুল ব্যাখ্যা প্রচার পেয়েছে এ বাক্যগুলিতে। জৈববিবর্তন তত্ত্বের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত থাকলে এতো চটজলদি মিথ্যে কথা বলা যেত না। বোঝা যাচ্ছে লেখক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইতিহাসের ম্যানুপুলেশন ঘটিয়েছেন। বলা হচ্ছে, ‘ডারউইন কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন’। শুধুমাত্র গ্যালাপোগাস থেকে সংগৃহীত নমুনার তালিকা আমি তুলে দিচ্ছি : তিন প্রজাতির কচ্ছপের বাচ্চা, ১৬ প্রজাতির শামুক, সম্পূর্ণ নতুন ১৫ প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক সরীসৃপ ইগুয়ানা, ধেড়ে ইঁদুর, নেংটি ইঁদুড়, সীল, পেঙ্গুইন, মোট ২৬ প্রজাতির পাখি যথা পেঁচা, কবুতর, রেন, ফাইচোর, থ্রাশ ফিঞ্চ প্রজাতির পাখি। ডারউইন ১৩ প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেন। পাঁচ বছরের বিগল জাহাজের ভ্রমণ শেষে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ডারউইন তার প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব দাঁড় করানো জন্য শুধুমাত্র ফিঞ্চ পাখির বাহ্যিক গঠনের উপর নির্ভর করেননি, টানা বিশটি বছর সংগৃহীত বিভিন্ন পশু-পাখি নিয়ে গবেষণা করেছেন, বিভিন্ন জীববিজ্ঞানীর সঙ্গে তার বক্তব্য শেয়ার করেছেন। ডারউইনের জীবনী নিয়ে বাজারে প্রচুর বই আছে। বাংলা ভাষায় আমি রেফার করবো ড. ম. আখতারুজ্জামানের বিবর্তনবিদ্যা (বাংলা একাডেমী থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত, নতুন সংস্করণ হাসান বুক হাউজ, ঢাকা), নারায়ণ সেনের ডারউইন থেকে ডিএনএ এবং চারশো কোটি বছর (আনন্দ প্রকাশনী, কলকাতা) কিংবা বন্যা আহমেদের বিবর্তনের পথ ধরে (অবসর প্রকাশনী, ঢাকা) বই থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে।
৩. একই পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘১৮৫৯ সালে তার (ডারউইন) ‘দি ডিসেন্ট অব ম্যান …দি অরিজিন অব স্পিসিস বইয়ে প্রথম ইভলুশন শব্দটি ব্যবহার করেন।’ ডিসেন্ট অব ম্যান বইটি ১৮৫৯ প্রকাশিত হয়নি। এটি প্রকাশিত হয়েছে ১৮৭১ সালে। অরিজিন অব স্পিসিজ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৮৫৯ সালে। বইটির পুরো নাম : The Origin of Species by Means of Natural Selection, Or the Preservation of Favored Races in the Struggle for Life। তাছাড়া ‘ইভলুশন’ (Evolution) শব্দটি ডারউইন নিজে আবিষ্কার করেননি এবং প্রথম ব্যবহারও করেননি। এমন কী ডারউইনের পূর্বসূরি ল্যামার্ক বা হেকেল পর্যন্ত না। ডারউইন জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়া বোঝাতে ব্যবহার করেছিলেন ‘পরিবর্তনসহ উত্তরাধিকার’ (Descent with modification)। অরিজিন অব স্পিসিজ বইয়ের একদম শেষ প্যারায় একবার মাত্র ডারউইন ইভলুশন শব্দটি উল্লেখ করেছেন তাও ভিন্ন অর্থে। জার্মান জীববিজ্ঞানী আল ব্রেখট ফন হেলার (Albrecht Von Haller) ১৭৪৪ সালে ইভলুশন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
৪. ১৫৭ পৃষ্ঠায় ‘কিভাবে ভালুক হয়ে উঠল মস্ত তিমি’ অংশে আবারো ম্যানুপুলেশন করা হয়েছে। জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিজেদের অজ্ঞানতার ভাণ্ডার নিয়ে অনবরত ডারউইন এবং জৈববিবর্তনকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। যার ফলে গোটা লেখাই খেলো হয়ে গেছে। আজকের জৈববিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে ‘ভালুক থেকে তিমির বিবর্তনে’র কথা মোটেও বলা হয়নি। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী তিমির বিবর্তন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য কেবল ফসিল রেকর্ড থেকে জানা যায়নি, একই সাথে আণবিক জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তিমির বিবর্তন নিয়ে ১৮৫৯ সালের জ্ঞান দিয়ে ২০১০ সালে এসে সমালোচনা করা হচ্ছে। জীববিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কি ১৮৫৯ সালেই আটকে আছে? মনে হচ্ছে আপডেটেড ইনফরমেশন লেখকের জানা নেই। একটি প্রশ্ন, আজকের পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা-জ্ঞান কি নিউটনের যুগে আটকে আছে? নিউটনীয় যুগ পেরিয়ে পদার্থবিজ্ঞান আইনস্টাইনের যুগও পার হয়ে গেছে। এখন কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের যুগ চলতেছে। তেমনি জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান-তথ্য-উপাত্ত ডারউইনের যুগে আটকে নেই। এ বিষয়টি স্পষ্টই মাথায় রাখতে হবে। ডারউইনের অনেক বক্তব্যই যে সংশোধিত হয়েছে এ বিষয়টি জীববিজ্ঞানীরা হরহামেশাই স্বীকার করেন। কিন্তু ক্রিয়েশনিস্টরা বারে বারেই দেখা যায়, পুরানো কাসুন্দি ঘেটে ডারউইনের ভুল বের করে চলেন। অসুবিধা নেই। ডারউইন যুগের বংশগতি বা জীববিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় যে তথ্যের দুর্বলতা ছিল তা বিজ্ঞানীরা কখনোই অস্বীকার করেন না। বরং জোর গলায় প্রচার করেন। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, জানতে পারে, শিখতে পারে উনবিংশ শতকের জীববিজ্ঞান আজকের একবিংশ শতকে এসে এসে কী কী আপডেটেড হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমি এখানে বলতে পারি বিখ্যাত ইভো-ডেভো সায়েন্টস্টি সন বি. ক্যারলের উপস্থাপনায় What Darwin never Knew ডকুমেন্টারি ফিল্মটির কথা। আগ্রহীরা দেড় ঘণ্টার এ ডকুমেন্টারিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন, (কষ্ট করে গাদা গাদা বই পড়ে সময় নষ্ট করতে হবে না!!) ডারউইনের যুগ থেকে জীববিজ্ঞান আজকের একবিংশ শতাব্দীতে কতটুকু এগিয়েছে। কোনো জীববিজ্ঞানীই লুকোচুরি করে দাবি করেন না ‘ডারউইন জীবের বিবর্তন নিয়ে সব জানতেন এবং তার অরিজিন অব স্পিসিজ বইয়ের সকল বক্তব্য একদম সম্পূর্ণরূপে বৈজ্ঞানিক মহলে গৃহীত হয়েছে।’ মোটেও না। ভুল স্বীকার করতে বিজ্ঞানের জগতে কোনো কার্পণ্য নেই। জীববিজ্ঞান কোনো স্থবির কোনো জ্ঞানের শাখা নয়। বিবর্তনীয় বিকাশমূলক জীববিজ্ঞান আর আণবিক জীববিজ্ঞানের কল্যাণে জৈববিবর্তনকে এখন গবেষণাগারে চাক্ষুস প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছে। আরেকটি কথা। এই পৃষ্ঠায় ‘ডারউইনের বক্তব্য’ বলে ফুট নোটে কয়েক লাইন ইংরেজি বক্তব্য রয়েছে। যার অনুবাদও দেয়া হয়েছে এই পৃষ্ঠায়। গোবর্দ্ধনগোপালের বই থেকে ইংরেজি অংশটুকু তুলে দিচ্ছি : In North America the black bear was seen by Heame swimming for hours with widely open mouth, thus catching, like a whale, insects in the water. Even in so exteme a case as this, if the supply of insects were constant, and if better adapted competitors did not already exist in the country, I can see no difficulty in a race of bears being rendered by natural selection, more and more acquatic in their structure and habits, with larger and larger mouths, till a creature was produced as monstrous as whale. ডারউইন তার অরিজিন অব স্পিসিজ বইয়ের প্রথম সংস্করণে (২৪ নভেম্বর, ১৮৫৯) এরকম বলেছিলেন, হিয়ামের ভ্রমণকাহিনী থেকে জেনেছেন, ঐ অভিযাত্রী উত্তর আমেরিকায় ভালুককে পানিতে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মুখ হাঁ করে শিকার ধরতে দেখেছেন ডারউইন তিমিরও একই ধরনের শিকার ধরার পদ্ধতি লক্ষ্য করেছেন। তিনি এও বললেন, ভালুক জাতীয় কোনো প্রাণী থেকে তিমির বিবর্তন হয়ে থাকে তবে তিনি খুব একটা বিস্মিত হবেন না। অরিজিন অব স্পিসিজ-এ ডারউইনের এ মন্তব্যের কারণে তার বন্ধুমহলে এবং বৈজ্ঞানিকমহলে তীব্র হাস্যরস এবং তীর্যক মন্তব্য করা হয়। ফলে ডারউইনকে অরিজিন অব স্পিসিজ-এর পরবর্তী সংস্করণগুলোতে এ মন্তব্যটি বাদ দিয়ে দিতে হয়। আণবিক জীবিজ্ঞানের বদৌলতে তিমি-ডলফিনের গ্রোথ হরমোনের জিন সিকুয়েন্স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী তিমি-ডলফিনের ডিএনএ সিকুয়েন্সে শতকরা ৯৯ ভাগ সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এদের একটা আরেকটার সরাসরি পূর্বপুরুষ নয়। বরং এরা একই পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভূত। প্রাণীজগতে তিমি-ডলফিনের নিকট আত্মীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী হচ্ছে জলহস্তী, যার সাথে তিমি-ডনফিনের ডিএনএ সিকুয়েন্সের মিল শতকরা ৯৭ ভাগ। জলহস্তীর সাথে তিমির যেমন আণবিক পার্থক্য অত্যন্ত কম তেমনি বাহ্যিক শরীরের আকৃতিতে পার্থক্যের পরিমাণ কম। পূর্বে প্রত্ন-জীববিজ্ঞানী এবং আণবিক জীববিজ্ঞানীদের বক্তব্য ছিল মাংসাশী খুরযুক্ত এক সময়কার স্থলচর স্তন্যপায়ী থেকে তিমির বিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ক্রিয়েশনিস্টরা সবসময়ই জৈববিবর্তন-বিজ্ঞানীদের বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপনে পারঙ্গম। তিল বললেই তালের কথা বুঝে যায়! খুরযুক্ত প্রাণীর কথা বলতেই ক্রিয়েশনিস্টরা প্রচার করা শুরু করলো, ডারউইন একসময় বলেছেন ভালুক থেকে তিমির বিবর্তন ঘটেছে আর এখন বিজ্ঞানীরা আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বলছেন গরু থেকে তিমির উদ্ভব হয়েছে!! গোবর্দ্ধনগোপাল বাবুও তার গুরু আইডিওয়ালা ক্রিয়েশনিস্টদের কাছ থেকে ‘গরু থেকে তিমি উদ্ভব’ তথ্যটি ধার করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বগল বাজিয়েছেন একচোট। তিনি বোধহয় জানেন না বা জানার সুযোগ হয়নি গরু যে মাংসাশী প্রাণী নয় এ বিষয়টি তার নিজের গুরু ক্রিয়েশনিস্টরা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন এবং জীববিজ্ঞানীরা কখনোই বলেননি তৃণভোজী গরু থেকে তিমির উদ্ভবের কথা। আর গরু ছাড়া কি কোনো প্রাণীর পায়ে খুর নেই!! শুকর, জলহস্তি, ঘোড়া, উট ইত্যাদি প্রচুর প্রাণীর পায়েই আঙুলের বদলে খুর রয়েছে। যাইহোক, বর্তমানকালের বেশিরভাগ জীববিজ্ঞানীই মনে করেন প্রাণীজগতে তিমির গ্রুপটি বিবর্তিত হয়েছে জলহস্তী-শুকরের বংশপুরুষ artiodactyls থেকে। (আগ্রহীরা পাঠ করুন ব্রিটিশ বংশগতিবিদ স্টিভ জোন্সের লেখা Almost Like a Whale: The ‘Origin of Species’ Updated এবং Darwin’s Ghost: The Origin of Species Updated বই)। এছাড়া গরুর সাথে তুলনা করে তিমির বিশাল আকৃতি নিয়ে গোবর্দ্ধনগোপাল যা যা বলেছেন, তার ব্যাখ্যা বতর্মানকালে বিবর্তনীয় বিকাশমূলক জীববিজ্ঞান (Evolutionary Developmental Biology) খুব পরিস্কার করে দিয়েছে। এ বিষয়েও জানার জন্য বাজারে পর্যাপ্ত বই রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা মানুষেরা প্রায়শ আমাদের সাপেক্ষে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা বিবেচনা করি। এটা আমাদের সাধারণ অভ্যাস। পৃথিবীতে তিমি একমাত্র বিশাল আকৃতির প্রাণী নয়। বিশাল দেহের অনেক প্রাণী যেমন ডায়নোসর, ম্যামথ ইত্যাদি অতীতে ছিল, বর্তমানেও যেমন বিশাল আকৃতির হাতি, জিরাফ আছে আবার অতিক্ষুদ্র অণুজীব ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া জীব রয়েছে যাদের খালি চোখেও দেখা যায় না। উদ্ভিদের মধ্যে বট গাছের মতো বিশাল দেহের অধিকারী বৃক্ষ যেমন আছে, তাল গাছের মত লম্বা এবং তেমনি আম-জাম-কাঠাল গাছের মতো মাঝারি সাইজের উদ্ভিদও আছে, অতিক্ষুদ্র জলজ শৈবাল রয়েছে যাদের আবার খালি চোখে দেখা যায় না। অর্থাৎ আমি এটাই বলতে চাচ্ছি জীবের বিশালকার, মাঝারি আকার কিংবা অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকার এসবই জীবজগতের বৈশ্বিক বাস্তবতা। ভ্যারিয়েশন। অপ্রাকৃত বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জীববিজ্ঞানীদের মতে কোনো জীব শুধুমাত্র আকৃতির পরিবর্তনের ফলেই বিশাল আকার বা ক্ষুদ্রাকার দেহ লাভ করেনি। প্রাণী বা উদ্ভিদের দৈহিক আকার ব্যাখ্যায় ঐ প্রাণীর জীবনকাল, বিপাকক্রিয়া, খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যের পর্যাপ্ততা, ইকোলজি, চলাচলের সমতা ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে আগ্রহীরা পাঠ করুন : John Tyler Bonner এর লেখা Why Size matters: From Bacteria to Blue Whales বইটি।
৫. ১৬১ পৃষ্ঠায় ‘কিভাবে জিরাফ পেল তার ল…….ম্বা…. গলা’ অংশে জৈববিবর্তনের নাম করে ভ্রান্ত বক্তব্য পরিবেশন করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। ডারউইনের নামে এখানে যা বলা হয়েছে, তা ল্যামার্কের বক্তব্য। জীবের বিবর্তন সম্পর্কে ডারউইনের সঙ্গে ল্যামার্কের বক্তব্যের প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যের বিষয়টি সম্মানিত লেখক গোবর্দ্ধনগোপাল কি অবগত ছিলেন না? না-কি ইচ্ছেকৃতভাবেই ম্যানুপুলেশন করা হয়েছে। জিরাফের লম্বা গলা সম্পর্কে ল্যামার্ক-ডারউইনের আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা রয়েছে যুক্তি’র তৃতীয় সংখ্যার (জানুয়ারি, ২০১০) ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠায়। তাই এখানে আর পুনরুল্লেখ করলাম না।
৬. ১৬৫ পৃষ্ঠায় ‘কিভাবে মাছ হাঁটতে শুরু করেছিল ডাঙায়’ অংশে আবারো জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতাই পেয়েছে। জীববিজ্ঞানীরা কখনোই দাবি করেন না, এক বা একাধিক মাছ একদিন বা দুইদিনেই কোনো জলে উঠে উভচর বা সরীসৃপে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। সিলাকান্থ, লাঙফিস, মাডস্কিপার মাছের নাম জানা থাকলে এদের বৈশিষ্ট্য জানার চেষ্টা করুন। মাছ থেকে উভচর জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পারবেন।
৭. ১৬৫ পৃষ্ঠায় ‘কিভাবে উদ্ভব হল পাখির : পেঙ্গুইন পাখা মেলেছিল আকাশে’ অংশে আবারো পূর্বের কথা বলতে হচ্ছে। জৈববিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী থেকে পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে। আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে কোন জাতীয় সরীসৃপ থেকে পাখির উদ্ভব তা অনেকাংশেই নিশ্চিত করা বলা সম্ভব হচ্ছে। ছোট আকারের থেরাপড ডায়ানোসর থেকে পাখির উদ্ভব ঘটেছে। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জীবাশ্ম প্রমাণ জীববিজ্ঞানীদের কাছে রয়েছে। জীবাশ্ম-প্রমাণ একটি-দুটি নয়। শুধুমাত্র আর্কিওপটেরিক্স প্রজাতির পাখির পূর্বপুরুষের ফসিল ১৮৬০ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে নয়বারে প্রচুর পরিমাণে ফসিল পাওয়া গেছে। এছাড়া চীনের লায়নিং প্রদেশে ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বহুবার পাখির পূর্বপুরুষের ফসিল পাওয়া গেছে। এসব ফসিলের অভ্যন্তরীণ গঠন, ডিএনএ টেস্ট, এনাটোমিক্যাল টেস্ট থেকে খুব স্পষ্টভাবে থেরাপড ডায়নোসর থেকে পাখির বিবর্তনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কেউ যদি বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা সম্পর্কে ইচ্ছেকৃতভাবে জানতে না চায়, উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুজে বসে থাকতে চায় সে স্বাধীনতা অবশ্যই তার আছে। কিন্তু বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ের বিরোধিতা করতে হলে অবশ্যই যাচাই করে নেয়া ভাল, সর্বশেষ গবেষণা থেকে কি জানা গেছে। কারণ বিজ্ঞান স্থির কিছু নয়। বিজ্ঞান কখনো নিজেকে অপৌরষেয় দাবি করে না। এটি পরিবর্তনশীল। নিত্যনতুন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞান নিজেকে ঋদ্ধ করছে।
৮. ১৬৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ‘এক প্রজাতি রূপান্তরিত হয়ে অন্য প্রজাতি : সত্যি না গল্প’ অংশ পাঠ করে মনে হয়েছে লেখক প্রজাতির সংজ্ঞা সম্পর্কেই অবগত নন। প্রজাতির সংজ্ঞা হচ্ছে, এটি এমন একটি প্রাকৃতিক জীবগোষ্ঠী, যার সদস্যরা নিজেদের মধ্যে প্রজনন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, যাদের সকলের আছে সাধারণ জিন ভাণ্ডার এবং অনুরূপ অন্য আরেকটি প্রাকৃতিক জীবগোষ্ঠী থেকে প্রজননের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন। এ সংজ্ঞাটি যৌনজননশীল উদ্ভিদ-প্রাণী উভয়েরই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বর্তমানে মানুষের যেহেতু অন্য প্রজাতি টিকে নেই, তাই মানুষের উদাহরণ টানলে অনেকেই এ বিষয়টি বুঝতে উঠতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ ফিঞ্চ পাখির প্রসঙ্গ এখানে নিয়ে আসি। আমরা জানি বর্তমানে ফিঞ্চ পাখির ১৪টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে যে কোনো দুটি প্রজাতির কথা ধরা যাক। Geospiza fortis এবং Geospiza magnirostris । ফিঞ্চ পাখির ১৪টি প্রজাতির সকলের নাম ফিঞ্চ। কিন্তু এরা প্রজাতিতে ভিন্ন। ভিন্নতা কিসে? ভিন্নতা হচ্ছে Geospiza fortis প্রজাতির ফিঞ্চ পাখিরা নিজেদের মধ্যে প্রজনন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এর ফলে এদের প্রজননে সম বংশধর জন্ম নেয়। এরা আবার একই প্রজাতির অন্য সদস্যদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এভাবে Geospiza fortis প্রজাতির জিনের আদান-প্রদান চলতে থাকে। কিন্তু Geospiza fortis প্রজাতির ফিঞ্চ পাখিরা Geospiza magnirostris প্রজাতির ফিঞ্চদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। জিনের বিনিময় হয় না। তাই উভয়েই স্বতন্ত্র প্রজাতি। বর্তমানে পৃথিবীতে বাঘের ৬টি প্রজাতি টিকে আছে। গত শতাব্দী পর্যন্ত নয়টি প্রজাতি ছিল। যাহোক, বাঘের যে কোন একটি প্রজাতির সাথে অনেক সময় সিংহের কোনো এক প্রজাতির প্রজননের মাধ্যমে লাইগার নামক বাচ্চা জন্ম নেয়। আবার গাধা এবং ঘোড়া থেকে খচ্চর। লাইগার বা খচ্চর কেউই প্রজননে সম নয়। এরা সংকর জাত। অর্থাৎ তারা যদিও ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি থেকে যৌন মিলনের ফলে জন্ম নিয়েছে ঠিকই তবে এরা নিজেরা প্রজননে অম থাকে। তারা কোনো বংশধর রেখে যেতে পারে না। অর্থাৎ এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে প্রজননে বিচ্ছিন্নতাই প্রজাতির সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য। এখন প্রশ্ন দেখা দেয়, প্রজনন-বিচ্ছিন্নতা যদি প্রজাতি থেকে প্রজাতি থাকে তবে তবে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির উদ্ভব হয় কিভাবে? এটাই জৈববিবর্তনের সেন্ট্রাল অংশ। জীববিজ্ঞানীরা প্রকৃতিতে প্রজাতির উদ্ভবের চারটি পদ্ধতির কথা আমাদের জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে : Allopatric, Peripatric, Parapatric, Sympatric । জানার আগ্রহ থাকলে জীববিজ্ঞানের বই থেকে এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, প্রজনন বিচ্ছিন্নতা জীবজগতে পার্মানেন্টলি কনস্ট্যান্ট নয়। ধ্রব হলে তো নতুন প্রজাতির উদ্ভব হতো না। প্রায়ই বিভিন্ন দেশের জীববিজ্ঞানীরা কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির উদ্ভব ঘটাচ্ছেন। যেমন বাংলাদেশে কৃষিবিজ্ঞানীরা বিরি নামে নতুন প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করেছেন, এ খবর সবাই জানেন। বিরি নতুন প্রজাতির ধান মানে কি? মানে হচ্ছে, কৃষিবিজ্ঞানীরা বিরি নামক প্রজাতির ধান ক্রসব্রিডিং করে অন্য প্রজাতির ধান থেকে উদ্ভাবন করেছেন। ধরে নিচ্ছি এর নাম ইরি-৪৭। এখন ইরি-৪৭ এবং বিরি-৪৬ প্রজাতির ধান গাছের ক্রসব্রিডিং বা সহজ বাংলায় বলা যায় যৌনসম্পর্ক স্থাপন করালে কোনো ফলন হবে না। শুধু নতুন প্রজাতির ধান গাছ নয়, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশষ্য, রবিশষ্য, ফলের নিত্যনতুন প্রজাতি তৈরি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। এছাড়া মানুষ নিজে কুকুর, বিড়াল, ছাগল, গরু, কবুতর, ফলের মাছি প্রভৃতি জীবের নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে। তাই এক প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব একদম অবাস্তব বা অতিকল্পনা নয়।
৯. ভিতরে প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রচুর ভুল তথ্যে ঠাসা। আমি এতো আলোচনায় আপাতত যাচ্ছি না। এখন দেখা যাক ১৮৫ পৃষ্ঠা। শিরোনাম ‘চান্স ভ্যারিয়েশন ফ্যাক্টরের অদ্ভুত কারসাজি’। লেখা রয়েছে ‘ডারউইনের মতে প্রজাতির উদ্ভবে ‘চান্স ভ্যারিয়েশন ফ্যাক্টর বা দৈবক্রমে সংঘটিত প্রকরণ তত্ত্ব এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।’ ভুল বক্তব্য। ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা নাকি ইচ্ছেকৃত চালাকি? ডারউইন কখনোই এমনটা দাবি করেননি। ভ্যারিয়েশনের উদ্ভবের প্রক্রিয়া ‘মিউটেশন’ সম্পর্কে ডারউইন মোটেই জানতেন না। সেখানে দৈবক্রমে বা অদৈবক্রমে আবার কি? ডারউইন সম্পর্কে এমন দাবির পর যা বলা হয়েছে তা প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা আর অজ্ঞতার মিশেল। জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এমন ভ্রান্ত ধারণা (চান্স ভ্যারিয়েশন ফ্যাক্টর) দাঁড়িয়ে আছে মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্যেকার পার্থক্য সম্পর্কে অজ্ঞতার উপর। জৈববিবর্তনের ‘কাঁচামাল’ বিপ্তি-আকস্মিকভাবে সংঘটিত মিউটেশন থেকে একক জীবে ভ্যারিয়েশনের উদ্ভব হয় কিন্তু জীবের গোটা বিবর্তন প্রক্রিয়াটি মোটেও চান্স আর র্যান্ডমের কারসাজি নয়। পরিবেশের সাথে অভিযোজনম ভ্যারিয়েশন বা প্রকরণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বংশধরের মাধ্যমে প্রজাতি বা জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ার এ বিষয়টি মোটেও র্যান্ডম বা আকস্মিক, বিপ্তি কিংবা দৈবক্রমে ঘটা কোনো ঘটনা নয়। এটি চূড়ান্ত (deterministic) একটি প্রক্রিয়া। পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ভ্যারিয়শনসম্পন্ন জীব অধিক হারে বংশধর রেখে যেতে পারে, আর অনুপযুক্ত ভ্যারিয়েশনসম্পন্ন জীবের পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকা দায় হয়ে যায়, বিলুপ্তি ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে। প্রকৃতিতে জীবজগতে ‘নির্বাচন’ ক্রিয়াশীল থাকে নন-র্যান্ডম, দৃঢ় ক্রমবর্ধমান (cumulatively) পদ্ধতিতে। রোমান সভ্যতা যেমন একদিনে তৈরি হয় নি, উত্তর- দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের বরফ যেমন তাৎণিকভাবে উদ্ভূত হয় নি, তেমনি প্রাকৃতিক নির্বাচন-ও তাৎণিক কোনো ঘটনার ফল নয়, নয় ইতঃস্তত, বিক্ষিপ্ত চান্সের কোনো খেলা। জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়াটি রূপ পায় হাজার থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজন্মের মাধ্যমে।
১০. এরপরও মিথ্যার মিশেল চলমান। আমাদের এখানের কাস থ্রি-ফোরের বাচ্চারা জানবে রক্তের রঙ লাল কেন? অথচ গোবর্দ্ধনগোপাল ২০৩ পৃষ্ঠায় বলতেছেন ‘হিমোগ্লোবিন বাতাস থেকে প্রাণদায়ী অক্সিজেন ধারণ করে কোষ কলায় পৌঁছে দেয় এর জন্য রক্তের রঙ লাল।’ লোহিত কোষের মধ্যে রয়েছে হিমোগ্লোবিন, যার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে যায়। হিমোগ্লোবিন (haemoglobin) শব্দের হিম লোহার একটি যৌগের নাম আর গ্লোবিন হল এক ধরনের প্রোটিন। লোহার এই যৌগের বিরাট সংখ্যায় উপস্থিতির জন্য রক্তের রঙ লাল দেখায়। আরেকটু বলা যায় রক্তের সাথে লৌহিতকোষের অভিযোজনের বাই-প্রোডাক্ট বা উপজাত হিসেবে রক্তের রঙ লাল। অর্থাৎ জীবদেহে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন পৌঁছে যায়, সেটা অন্য ফাংশন।
চলবে…
আমি মনে করি আজকের হিন্দু ধর্মের অধঃপতনের পিছনে বৈষ্ণবরাই বেশি দায়ী্্্্
আমি অনেক ছোট কিন্তু,আমার মনে হয় কারো সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করাটা…………
বিজয় ভাইয়া,
আমার ধারণা,আপনি এভাবে নেগেটেভ কথা বকা বকি না করে তাদের সাথে সরাসরি আলোচনা করুন ।এটা সুন্দর হবে। :guru:
ওদের সম্পর্কে ভাসা ভাসা জানতাম।
লেখাটা আবার পড়তে হবে।
এতো ভারী ঝামেলায় পড়া গেলো। একদিকে ইসলামিষ্টরা কোরানের বানীকে বিজ্ঞানের সুত্রের সাথে মিলাচ্ছে, কথা বাস্তবের সাথে না মিললে রুপকের আশ্রয় নিচ্ছে, আবার ইস্কনরা গীতায় বিজ্ঞান খুঁজে বেড়াচ্ছে, যুক্তিতে না কুলালে রুপক দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করছে। আমি নিশ্চিত খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা একই কান্ড করে বেড়াচ্ছে। গোটা পৃথিবীকেতো ধর্মবাদীরা বড়ই মুস্কিলে ফেলে দিচ্ছে। এদের যন্ত্রনায় সমগ্র দুনিয়া অস্থির আছে দেখছি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ইসকনের একাধিক বিজ্ঞান-বিরোধী বই, ওদের সংগঠনের বিভিন্ন পত্রিকার (হরে কৃষ্ণ সমাচার, চৈতন্যচরিতামৃত, ইত্যাদি) কলাম পাঠে দেখেছি, অরিজন অব লাইফ কিংবা জৈববিবর্তনের বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্যগুলো খ্রিস্টান ক্রিয়েশনিস্ট/আইডিওয়ালাদের কাছ থেকে ধার করা। বলতে পারেন হুবহু কপি করে দিয়েছে। শুধু একটা কাজই ইসকন করেছে। খ্রিস্টান ক্রিয়েশনিস্টরা যেখানে যেখানে ‘গড’ শব্দ ব্যবহার করেছে ইসকনওয়ালারা সেখানে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ’ শব্দ ব্যবহার করেছে আর মাঝে মাঝে গীতার শ্লোক উদ্ধৃতি দিয়েছে!!
এদের নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই এটা ঠিক না আসলে, গীতা সংঘ আর ইস্কন এক নয়, এরা হলো আন্তর্জাতিক সংগঠন,এদের শেকড় যত হালকা মনে হচ্ছে আসলে তা নয়, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই এদের মন্দির আছে, ইংল্যান্ডেও আছে, একটা না কয়েকটা, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই সংঠনের জন্মও আমেরিকায়, আর বিগত পাঁচ বছরে সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই সংঠনের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন অবান্তর,সিলেটে লোকাল একটি পত্রিকায় শ্রীকৃষ্ণ কে নিয়ে কি জানি লেখার প্রতিবাদে বছর দুয়েক আগে তিন চারশ ইস্কন কর্মী মিছিল নিয়ে পত্রিকা অফিস ঘেরাও করে। এটা হচ্ছে একটা নমুনা মাত্র, আর এখানে আমরা সকলেই জানি যে যেকোন মিশনারিরাই মিশন শুরুর প্রথম দিকে নরম কোমল এবং উদার হয় এবং এদের স্বরুপ সময়েই প্রকাশিত হয়।
@সখা,
এটা তো বড় অশণি সংকেত সখা। একদিন এরাও তো দা-চাপাতি বোমা হাতে বেরিয়ে পড়তে পারে। ইসলামিষ্টদের সামাল দিতে দুনিয়া যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন হিন্দু মৌলবাদীদের এভাবে গজিয়ে উঠা বড়ই বিপদজনক। তোমরা সঙ্ঘবদ্ধ ও সাবধানে থেকো এই অনুরোধটা করবো।
অনন্তের সাথে তোমার পরিচয় আছে তা আগে জানতাম না তো। বহুদিন আগে বলেছিলাম ৭১ এ তোমার অভিজ্ঞতার উপর মুক্তমনায় লেখা দেয়ার জন্যে, কই এখনো দিলে না যে।
তোমরা ভাল থেকো।
@আকাশ মালিক,
ওরাতো আর চাপাতি ব্যবহার করবেনা ওরা অস্ত্র হিসেবে গদা অথবা চক্র জাতীয় কোন অস্ত্র (যেটা কৃষ্ণের সাথে সম্পর্কিত) ব্যবহার করতে পারে তবে মনে হয়না আগামী দশ বছরে ওরা অস্ত্র হাতে নেবে এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। :lotpot:
আর ৭১ নিয়ে আপনার পোষ্টে আমি যে মন্তব্যগুলো করেছিলাম সেগুলো আসলে আমার অভিজ্ঞতা না আমার বাবা এবং পিসিদের কাছ থেকে জানা, আর আমার পিসিদের বাড়ি জালানো নিয়ে একটা লেখা লিখা যায় যেহেতু উনি এখনো জীবিত আছেন, কিন্তু ঘটনা হচ্ছে কেন জানি আমি কোন আর্টিক্যাল গুছিয়ে আনতে পারিনা, হাবড়া জাবড়া লিখে ব্লগ ভরিয়ে লাভ নেই তাই লিখিনা, পড়তে ভালো লাগে অবাক হয়ে পড়ি আর ভাবি এক একটা লেখার পেছনে কত শ্রম,সময়,ধৈর্য দিয়ে এক এক জন লেখেন সে সময় শ্রম আর ধৈর্য এই মুহূর্তে আমার নেই আসলে। যোগ্যতাও নেই বলা যায়।
আপনিও ভালো থাকবেন।
@সখা,
ভাই, গাইতে গাইতে সবাই গায়েন হয়। আপনি গান শুরু করতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের মত বিষয়ে সবার অভিজ্ঞতা জানানো উচিত।
@সখা,
সখা এখানে সত্য বলেনি! 😉 😉
ওর অনেক গুণাবলীর সাথে আমার পরিচয় আছে। আমরা অনেকেই ওর গুণগ্রাহী, মুগ্ধ। ভালো স্কেচ আঁকতে পারে। খুব ভালো গান গায়, গিটারও ভালো বাজায়। দেশে থাকতে চমৎকার সব পথনাটক, মঞ্চনাটক করে বেড়িয়েছে। সিলেটের থিয়েটার জগতে পরিচিত মুখ সে। দেশের বাহিরে চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের বি.যু.কা.’র সবাই তাঁকে মিস করি। 😥 😥 :guru: :guru:
একজন দ্ক্ষ মানুষ একটি সংগঠনের জন্য কী পরিমাণ যে গুরুত্বপূর্ণ তা প্রতি মুহূর্তেই উপলব্ধি করি। :-Y
@অনন্ত বিজয় দাশ,
দাদা আমারে এভাবে লজ্জাটা না দিলেও পারতেন, আমার যে কি যোগ্যতা আছে সে আমি ভালই জানি। :no: :-Y
@সখা,
কি ভুল বললাম আমি! যা সত্যি জানি, তাইতো বললাম! 🙂
@আকাশ মালিক,
আপনার আশংকা অমূলক। আমার মনে হয় না এরা যুবকদের মগজ ধোলাই ছাড়া আর কিছু ক্ষতি করতে পারবে। আর সেই মগজ ধোলাইয়েরই একটা হল জীবে প্রেম নীতি শেখানো। যেখানে ইসলামে বিধর্মীদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়া আছে সেখানে ইস্কনের মূলনীতি কিন্তু চৈতন্যদেবের এই বানীটি
‘জীবে প্রেম নামে রুচি বৈষ্ণব সেবন।
ইহা হতে ধর্ম আর নাহি সনাতন।।’
এমনকি এই জীবে প্রেম নীতির জন্য ইস্কনের অনুসারীদের মধ্যে নিরামিষ খাওয়া বাধ্যতামূলক।
কাজেই ইস্কন থেকে নাশকতামূলক কিছু আশা করার কোন সম্ভাবনা নেই।
ইস্কন যদি বিজ্ঞানের ক না জেনে বিজ্ঞানের সমালোচনা না করত, আমার মনে হয় না ইস্কন বিষয়ে কোন চিন্তা করার কারন ছিল। কিন্তু ইস্কনের মূল সমস্যা তিনটা। প্রথমত তারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন টার্মের সাথে ধর্মগ্রন্থগুলোর টার্ম মিলিয় উদ্ভট অর্থ তৈরী করে আর দ্বিতীয়ত ধর্মগ্রন্থগুলোর রুপককে বিজ্ঞানের সাথে না মেলাতে পারলে তাকে অস্বীকার করে
তৃতীয়ত তাদের এই উদ্ভট আবিষ্কারগুলো যুবসমাজকে গেলাবার চেষ্টা করে।
একবার এক ইস্কনের প্রভুকে দেখালাম স্ট্রিং থিওরীর সাথে গীতার একটা শ্লোক মেলাচ্ছেন। 🙂
@অনন্ত দা
বিগত ছয় মাস যাবত এতই ব্যস্ত হয়ে গেছি যে ঘুম থেকে উঠে কাজ/কলেজ আর কাজ থেকে এসে ঘুমের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। কাজ থেকে ফিরে ল্যাপটপের দিকে পাঁচ মিনিট তাকানোর মত শারীরিক অবস্থা থাকে না, আমার হলিডে চলছে তাই একটু সুযোগ পেলাম, এদিকে দেখি অনেক কিছুই করে ফেলেছেন আপনি? দেবাশীষ ওরফে দেবর্ষী শ্রীবাস কে আমি আপনার লেখাটার বিষয়ে একটা টেক্সট দিয়েছি গতকাল যে ইস্কনের হয়ে সে কি লেখাটা গ্রহন করতে চায়? এখন পর্যন্ত কোন জবাব আসেনি, আমি অবশ্য মুক্তমনার এই লেখাটার লিঙ্ক ওর ফেইসবুক ওয়াল এ পোষ্ট করেছি, কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া যাওয়ার কথা ও না, আপনার এই লেখার কোন নুন্যতম জবাব দেয়ার যোগ্যতাও তাদের নেই, তারা নিশ্চুপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক, আপনিতো জানেন আমি লেখালেখিটা গুছিয়ে আনতে পারিনা, ঈস্কনের সাংগঠনিক নীতি মালা এবং তাদের যুবফোরামের নীতিমালা গুলো সংগ্রহ করে পড়ে ওটার উপর একটা লেখা চাই। ইস্কনের সাড়াশব্দ না পেলেও কোন সমস্যা নাই দাদা মুক্তমনার এই লেখা পড়ে মানুষ তো এদের সম্পর্কে জানতে পারবে।
মুক্তমনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটি প্রস্তাব রাখতে চাই – এই ধরনের সংগঠন (শিবির জাতীয়- যেহেতু তারা স্কুল কলেজে যুবফোরাম গঠন করছে)শহর ভিত্তিক,আধুনিক সাজে সজ্জিত,এরা কলেজ গুলোতে মফস্বল থেকে আসা ছাত্রদের টার্গেট করে মগজ ধোলাই করে ইস্কনের বেড়াজালে নিয়ে আসে, দেবাশীষ এর মত ছাত্র তাদের মধ্যে একজন, ভালো ভালো ছাত্রদের মেধা এরা নষ্ট করে দিচ্ছে, এমন কি এরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখে ওখানকার ছাত্রদের নিয়ে মিছিল বের করে, আমার অনেক সহপাঠী যারা ওখানে পড়ে তাদেরকেও দেখেছি ওদের সাথে নাচতে, এদের বিরুদ্ধে অচিরেই আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জনসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার, কিভাবে সেটা করা যায়?
@সখা,
সব-ই আপনাদের দোয়া!! :guru: :guru: :guru:
আমিও অপেক্ষা করবো। দেখা যাক।
দেবাশীষ!! বেচারার জন্য খারাপ লাগে। কি ভুলটাই না করেছিল হাতির ইল্যুউশন ছবিতে আমাদের এ্যাড করে!
@অনন্ত বিজয় দাশ,
দাদা একটা উত্তর পাওয়া গেছে সেটা নীচে পেস্ট করলাম-
Hare Krishna,
Please accept my greetings ..
I read actually
everything now i am thinking that its also our preaching going on .You can say to your Shaka or dada to post so many thing about ISKCON we have no objection .Because two kind of people in the world some one is problem maker/another is problem solver so .What you thought its in your veiw do not try to tauch moon baba. Then do accident
…….
So be thinkfull……
You can do everything we are doing the service of Sriman Mahaprabhu you and your Youthibadi Sangatan have no capacity to understand his capacity.How much fool u and ur group i astonised,
How it speared all over the world all are you thinking ,all are foolish okay you be intelligent.We have no problem but all of you are behaving like enemy why?Is that ur idle?
Dont want to tell more
take care ,,,,,
ur wel-wisher
এবং আমি যে লেখাটার লিঙ্ক ওর ওয়াল এ পোষ্ট করেছিলাম সেটা সে রিমোভ করে এই লিঙ্কটা পোষ্ট করেছে, এবং ব্র্যাকেটে লিখেছে মুক্তমনাদের জন্যে। চিন্তা করেন পোষ্টটা ওয়ালে রাখার মত সৎ সাহসটাও নেই।
http://scienceandscientist.org/Darwin/
আগেরটায় লিঙ্কটা দিয়েছিলাম কিন্তু কেন জানি লিঙ্ক হিসেবে পোষ্টে আসেনি।
@সখা,
ওদের কমেন্ট পড়লাম। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। হেভি পিছ্লা ওদের শরীর! খালি পিছ্লাইয়া যাইতে চায়। কী আর করা?
@অনন্ত বিজয় দাশ,
সিলেট ইসকন বা ঢাকা ইসকন মনে হয়না কোন সাড়াশব্দ দিতে পারবে, ভালো হয় লেখাটা মায়াপুরে পাঠিয়ে দেয়া।ওদের বাদর মার্কা বুদ্ধিজীবি গুলা সব আমেরিকার মন্দিরে বসে গাজা খায় ওখানে নাড়া দিতে পারলে ভালো হত। নেশাটা একটু নাড়া খেত। :hahahee: 😀
@সখা,
দারুন তো! 😕 :rotfl: :rotfl:
ইসকনের বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে আমার এক বড় ভাইও ঠিক এই পরামর্শই দিলেন আজ সকালে। সঙ্গে বললেন, সম্ভব হলে যাদের নামে এই বইয়ে বাণী আছে (পুরুষোত্তম চক্রবর্তী, তাপস ববন্দোপাধ্যায়, ত্রিদিবেশ দাস প্রমুখ) তাদের কয়েক জনের কাছেও পাঠাতে! :guli: :guli:
দেখি! :-/ তবে আমি আরো কিছুদিন অপেক্ষা করবো। এর মধ্যে বইটির আরো কয়েকটি চ্যাপ্টারের রিভিউ করার ইচ্ছে আছে। 🙁 🙁
ইসকন ওয়ালারাও যে এতটা বাড়াবাড়ি শুরু করেছে ধারনা ছিল না।
দেশে থাকতে এদের নাম জীবনে শুনিনি। আসলে উত্তর আমেরিকাতেও শুনিনি, শুনেছি মাত্র কিছুদিন আগে এখানেই বিপ্লব পালের কাছে। যতদুরর মনে পড়ে উনি নিজেও কিছুদিন মনে হয় মানসিক শান্তি বা ভাল জীবন দর্শনের সন্ধানে তাদের গ্রুপের কিছু সেশনে গেছিলেন।
সব প্রফেশনালদের কিছু কোড অফ এথিক্স থাকা উচিত। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান তিনি জ্বীন পরী বা হনুমান দেবতায় ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করতে পারেন, তবে প্রকাশ্যে যদি দাবী করেন যে বিজ্ঞান এসব সমর্থন করে তবে তাদের চাকরিচ্যূত করা উচিত।
এ ধরনের লোকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অপব্যাবহার ভালই করছে, ঠকাচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে।
@আদিল মাহমুদ,
কি মারাত্মক খবর দিলেন। ইস্কনের হেডকোয়াটার আমাদের বাড়ির খুব কাছে নদীয়াতে। তবুও একদিন ও যায় নি ওখানে-সারা পৃথিবী থেকে ওখানে লোক আসে।
জীবনে একবার রামকৃষ্ণ মিশনে ছাত্র থাকার সময় দোল পূর্ণিমাতে হরে কৃষ্ণ কীর্তনে নেমেছিলাম। সেটা একটা এক্সপেরিয়েন্স। কীর্তন আসলে একটা গণ হিস্টিরিয়ার জন্ম দেয়-অনেকটা রক সঙ্গীতের মতন যার জন্যে ওরা আমেরিকাতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মদ খেয়ে মাত্লামোর বদলে কৃষ্ণ নামে মাতলামো-আসল উদ্দেশ্য সেই একটা-যেটা মদ বা গাঁজা খেলেও হয়। ক্ষণ কালের জন্যে বাস্তবতাকে ভুলিয়ে মনে একটা আনন্দ ভাব আসে। মনে স্ফূর্তি আনার জন্যে এগুলি নানা ধরনের হেডোনিক দর্শন। এরা এই টুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ক্ষতি নেই। কিন্ত ব্যাবসায় নেমে বাড়াবারি করছে। লোক ঠকাচ্ছে।
@বিপ্লব পাল,
আমার মনে পড়ে কোন এক প্রসংগে (মুসলমানদের ইসলাম গ্রহনের দাবী প্রসংগে) বলেছিলেন যে মেরিল্যান্ড থাকতে মনে হয় দুয়েকবার গেছিলেন। দুয়েকবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
এও বলেছিলেন যে ইসকন গ্রুপে তূলনামূলকভাবে আমেরিকান এলিটেরা বেশী যোগ দেয়।
ইসকন ওয়ালারাও কি গাঁজার আসর বসায় নাকি?
@আদিল মাহমুদ,
১.ইসকনের বিস্ফোরণ খুব দ্রুত ঘটেছে এদেশে। :guli: আমার জানা মতে ২০০৩ সালের পর থেকে এদের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২.দেশে থাকতে হয়তো হিন্দু কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ কম ছিল। :-/
(দুই নম্বর পয়েন্টটি ভুলও হতে পারে। 😉 )
@অনন্ত বিজয় দাশ,
আমি দেশ ছাড়ি ৯৯ সালে।
হিন্দু কম্যুনিটির সাথে আসলেই তেমন যোগাযোগ ছিল না।
আমার ধারনা ছিল ইসকন ওয়ালারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের।
@আদিল মাহমুদ,
:-/ :-/ :-/ :-/ :-/
অনন্ত,
তোমাকে নিয়মিত এখানে আরো বেশী করে দেখতে চাই। :rose:
এরা শুরু নিমকহারামী নয় , এরাই হচ্ছে আমাদের মানব জীবনের সকল অগ্রগতি ও দুঃখ, কষ্টের কারন। :-X
ভালো থেকো।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
দারুণ বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
আমি এই প্রথম ইসকনের নাম শুনালাম। লেখককে ধন্যবাদ
অনেকেই পি.এইচডি ডিগ্রিধারী ও শিক্ষকদের জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি তাদের সাথে একমত। আমাদের দেশের শিক্ষকরা যারা রাজনৈতিক দলের চামচাগিরি করেন , তাদের নিকট থেকে ভবিষৎ-এও এর চাইতে বেশি কিছু আশা করা যাইনা।
ইস্কন এর কাজকর্ম আর আল-কায়েদা, তালিবান বা জে এম বি এর কাজকর্ম ও দর্শনের মধ্যে কোনই তফাত নেই। একটা মাত্র তফাত তা হলো – ইস্কন যা করছে তা শান্তিপূর্নভাবে আর অন্যরা সেটা করছে সংগঠিত ক্রাইমের মাধ্যমে। দুদলেরই প্রধান টার্গেট ব্রেইন ওয়াশ করা। আর সেটা করতে যেয়ে এরা প্রধানত সমাজে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানী, গুনী, বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনীয়ার, ডাক্তার এদেরকে টার্গেট করে । যদি এদেরকে দলে টেলে জন সমক্ষে এদের দিয়ে বিবৃতি দেয়া যায় তাহলে সাধারন মানুষও প্রভাবিত হয়ে দলে ভিড়বে। নিবন্ধের আলোচ্য বইটি অনেক আগেই পড়েছিলাম, কিছু দুর পড়ার পর এত পরিমান ধৈর্যচ্যুতি ঘটে যে সেটা আর পড়া সম্ভব হয়নি। এদের দাবী অনুযায়ী- বর্তমানে পূর্ব ইউরোপের দেশ সমূহে নাকি সবচাইতে বেশী মানুষ তাদের অনুসারী হচ্ছে। রাশিয়ার মস্কোতে প্রথমে একটা মন্দির করতে যেয়ে এরা ভালই প্যাদানী খায় কিন্তু পরে মস্কোর উপকন্ঠে বিরাট জায়গা জুড়ে এক মন্দির করেছে সম্প্রতি। আমেরিকা এদের সবচাইতে বড় ঘাটি। আমেরিকার প্রতিটি বড় শহরে এদের মন্দির আছে। উল্লেখযোগ্য অনুসারীদের মধ্যে হলেন- মরহুম জর্জ হ্যারিসন(বিটলসের সদস্য), আলবার্ট ফোর্ড( হেনরি ফোর্ডের নাতি)। এদের সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করতে পারেন: http://www.iskcon.org
একবার দুই ভদ্রলোকের কথোপকথনের সময় ঘটনাচক্রে আমি পাশে ছিলাম। হিন্দু ধর্মের জাতিস্মরের ধারণা নিয়ে তাঁরা কথা বলছিলেন। হিন্দুধর্মের ধারণা অনুযায়ী, পাপপূণ্যের হিসাব বরাবর করার জন্য জীবকে বারবার জন্মাতে হয় যাকে জন্মান্তর বলে। আর যারা (মূলত মহা বুজরুক) পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করতে পারে তারা জাতিস্মর।
প্রথম ব্যাক্তির বক্তব্য, ‘মানুষ মরে গেলেও কারও কারও মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। আর তারা পরবর্তী জন্মের পর সেই তথ্য যখন পুনরুদ্ধার করে তখনই তারা জাতিস্মর নামে পরিচিতি পায়।’ দ্বিতীয় ব্যাক্তি মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন। দূর্ভাগ্যক্রমে প্রথম ব্যাক্তি আই.আই.টি’র টীচার, আর দ্বিতীয় ব্যাক্তি একজন বড় সাংবাদিক এবং মিউজিকোলজিস্ট।
ভারতে সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক ও আই.টি. ইঞ্জিনিয়ারিংসহ যেসব পেশায় পরিশ্রম বেশি এবং monotonous brain work করতে হয় সেসব পেশাজীবীদের ইসকন ওয়ালারা যোগব্যায়াম ও কিছু ধর্মীয় মাদকতামূলক পদ্ধতি অনুসরণ করিয়ে তাদের monotony দূর করে এবং তাদের অপবিজ্ঞানের এজেন্ট বানিয়ে দেয়। তারা ইসকনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে বলে, ‘আগে আমি বিরাট ব্যর্থ ছিলাম, এখন আমি বিরাট সফল! All credit for Hare Krishna Hare Rama Party’. তখন অনেকেই বিভ্রান্ত হয়, বিশেষত frustrated student ও পেশাজীবী। এদের মূল টার্গেট ফার্স্ট ইয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, নতুন কর্মজীবনে প্রবেশ করা তরুণ তরুণী।
প্রথমে তারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে শুরু করে। গভীরে যেতে যেতে বিজ্ঞানের ব্যার্থতা প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে এবং লোকজনকে Krishna Conscious করে তোলে। আর কথায় কথায় এরা উদারহণ দেয় আমেরিকান গর্দভ শাবকদের, যারা তাদের বুজরুকিতে convinced হয়ে হরে রামা গান শুরু করেছে। আর ভারতের বেকুবেরা ভাবে, আমেরিকানরা যখন ‘হরে রামা’ গাইছে, চল আমরাও শুরু করি। এভাবেই তারা তাদের কার্যক্রম চালায়। বাংলাদেশেও তারা ‘সংখ্যালঘু ঐক্য’ টাইপের কথাবার্তা বলে লোকজনকে দলে টানে। তবে কেউ তাদের দলে না এলে বা কখনো দল ছেড়ে দিলে, তারা তাদের সাথে কোন সহিংসতা করেছে বলে শুনি নি।
আপনার লেখার জন্য অভিনন্দন। :clap2: :rose2:
বাকি লেখাগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
@তুহিন তালুকদার,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন। সহমত। দারুন কৌশলী ইসকন।
খুবই দরকারী একটি লেখা। যার বইএর ভিত্তিতে এই লেখা সেই ভদ্রলোক বিজ্ঞান কতটুকু বোঝেন তা বুঝলামনা কিন্তু উনি যে মার্কেটিং খুব ভাল বোঝেন তার বর্ণনা পেলাম বইএর বাহ্যিক গড়ন ও বর্ণনা পড়ে। আর বইএর ভূমিকা পড়েই তো মেজাজ গরম হয়ে গেছিল। অপবিজ্ঞানের শাক দিয়ে বিজ্ঞানের মাছ ঢাকার চেষ্টা কবে বন্ধ হবে??
সহমত :yes: :yes: :yes:
খুবই ভাল লাগল এই পোষ্টিংটা পড়ে।
গতবার দেশে যেয়ে আমার নিজের ভাতিজার কান্ড দেখে আমি অজ্ঞান। ইস্কনের মালার থলে আমাকে গিপ্ট করতে এসেছে!!!
ইস্কন প্রথমে উঠতি বয়সের ছেলেদের মগজ ধোলাই করে। তারপর নিজ গ্রামের লোকদেরকে ইস্কনে ঢুকানোর দায়িত্ব দেয়। এরা তবলীগদের মত কাজ করে। তবে এদের কোন রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না।
এদের নিয়ে দুঃশ্চিতার তেমন কারণ নেই বলেই মনে হয়। যেমন Austin শহরে এক ইস্কন নেতার (American White) সাথে আমার পরিচয় হয় প্রায় বছর দশেক আগে। প্রশ্ন করি – সারা Austin এ আপনাদের সংখ্যা কত। উত্তর – আমি, আমার স্ত্রী (Indian Fijian) আর এই ছেলেটি (বয়স উনিশ)। বছর খানেক আগে শুনেছি ছেলেটি ভেগেছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনার সাথে ভিন্নমত। দুঃখিত। আমেরিকার Austin শহরের জন্য ইসকন কোনো দুশ্চিন্তার কারণ না হলেও বিজ্ঞান শিক্ষায় উন্নত বিশ্বের তুলনায় শতগুণ পিছিয়ে থাকা আমাদের হতদরিদ্র মানুষগুলোর জন্য অবশ্যই ইসকনের বিজ্ঞান-বিরোধিতা আর ভণ্ডামো শুধু দুশ্চিন্তার ব্যাপার নয়। মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা কেমনে ইসকনের মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য আতঙ্কজনকও বটে।
@অনন্ত বিজয় দাশ,
এর পরেও বলব দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ইস্কনের আছেটা কী? শুধু চ্যান্টিং – হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ রাম রাম হরে…
আজ না হোক কাল ছেলেগুলো বুঝবে এর মধ্যে কিছুই নেই। অন্তঃসার শুন্য। Austinএর ছেলেটির মত ছেড়ে ছুড়ে মানুষ হবে।
তবে হ্যা। ধর্মের নতুন জোয়াড় বইছে দেশে। মুসলমানেরা এটা করছে, ওটা করছে। আমরাই বা করব না কেন? মসজিদে মাইক বাজিয়ে আযান হয়, তাই কীর্তনে মাইক ঢুকে গেছে। ঢাকা মিরপুরে মন্দির হচ্ছে শুনলাম। মন্দিরে বছরে যখন একবার পূজো হয় তখন লোক আসবে। ধূয়ে মূছে পরিষ্কার করবে। সারা বছর গরুর গোয়ালের মত পড়ে থাকবে। দুই তিন বছর চলবে। তারপর বন্ধ হয়ে যাবে।
ঢাকাতে গীতা সঙ্ঘ হয়েছিল। বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে গীতা পাঠ হত। যারা অতি উতসাহে গল্প করত – মনে পড়ে না গত দশ বছরে একবারও গীতা সঙ্ঘের কথা বলেছে। গীতা সঙ্ঘের ইদানীং কালের কোন সংবাদ কি গীতা দাস বলতে পারবেন?
@নৃপেন্দ্র সরকার, আমিও মনে করি ইস্কনকে নিয়ে চিন্তার কারণ আছে। আপনি বলেছেন
সবাই মানুষ নাও হতে পারে।আমরা যে দেখি বিজ্ঞানের সাথে ধর্মগ্রন্থকে মিলাচ্ছে তাদের অনেকেই কিন্তু শিক্ষিত, অনেকের পি।এইচ।ডি ও আছে। কিন্তু তাদের তো চোখ খুলছেনা। অনেকেই যেমন একটা সময়ে ইস্কনের জাল থেকে বেরিয়ে আসবে তেমনি একটা বড় অংশেরই ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে। চিন্তার বিষয় বৈকি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কী থাকলে আপনি গণনায় ধরবেন, ইসকনের আছে কিছু!
ইসকন ধর্ম নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে পুরাতন মন্দির তারা কিনে নিচ্ছে। সংস্কার করাচ্ছে। তাদের এই টাকার উৎস কোথায়? জানি না। কিন্তু বুঝি তাদের টাকার জোর আছে। পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক পাঁচ-ছয়টা পত্রিকা কয়েক বছর ধরে তারা নিয়মিত বের করছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রসাদ বিক্রি করছে। মন্দিরের পাশে ফাস্টফুডের দোকান খুলেছে। এর দ্বারা আমি শুধু এইটুকুই বলছি, ইসকনের আর্থিক সামর্থ্যরে বিষয়টি লক্ষণীয়। রথের মেলায় বিশাল বিশাল সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে এসে ট্রাকে করে ধুরুমধারাক্কা গানের তালে হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কীর্তন করাচ্ছে। ছাত্র সংগঠন, যুবসংগঠন গঠন করেছে। বাংলাদেশের আর কোন ধর্মীয় সংগঠন এগুলো করেছিল? প্রতি শুক্রবারে ওদের মন্দিরে যে মহাধুমধামের সাথে কীর্তন হয়,সেখানে কারা যায়? শুধু বুড়োবুড়ি বা হিন্দু বিধবা মহিলারা ওখানে যান না, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রীরা সেখানে যাচ্ছে। এই ইয়ং জেনারেশন সেখানে কেন যায়? ইসকনের আছেটা কি? আমিও মানি, ইসকন অন্তঃসারশূন্য। কিন্তু এটা বুঝি বাজার অর্থনীতির যুগে তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে হলে চটকদার, রকমারী উপস্থাপনা কৌশল দরকার সেটা ইসকন ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছে।
লীনা রহমান ঠিকই বলেছেন :
একটা প্রজন্মকেও যদি ধর্মের মোহে আবিষ্ট করে ফেলে, আসক্ত করে তোলে গীতার মাদকতায়, সেটা কি কম ক্ষতিকর আমাদের জন্য!! দশ-পনের বছর পরে ইসকনের মন্দির লোকশূন্য হয়ে যাবে এমন আত্মতৃপ্তিতে ভোগে হাত পা গুটিয়ে খেলার মাঠটি এই মূঢ়দের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাই না! আমি এত কল্পনাবিলাসী নই!
@অনন্ত বিজয় দাশ,
শংকিত হওয়ার লক্ষণ আছে বৈকি। তবে এই জোয়ারের জল একদিন এমনি নেমে যাবে। এরা কি পরলোকের ভয় এবং লোভ দেখায়? প্রভূপাদের ভগবানের সাথে দোস্তী ছিল এমন কি বলে চটকদারীরা?
একমত।
তবে এই চ্যান্টিংয়ে বিনোদন ছাড়া কিছু নেই। আমার কল্পনায় দেখতে পাই এরা একদিন এমনি হারিয়ে যাবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এরা আসলে কি বলে এরা নিজেরাই সেটা ভাল মতো জানে না। তবে এদের মধ্যে কোন রকম হিংস্র ভাব বা দর্শন নেই এটা ঠিক।
@ভবঘুরে,
সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষতির কারণ না থাকলে তেমন উদ্বেগের হেতু দেখিনা। মগ্ন আছে চ্যাংটিং বিনোদন নিয়ে। যুব সমাজকে ফিরিয়ে আনার জন্য সবার সাধ্যমত কাজ করা উচিত। আমি তো পাঁচ-সাত জনকে বিরত করেছি এর মধ্যে।
@ভবঘুরে,
আমারও অনুরূপ ধারণা ছিল – এদের মধ্যে হিংস্রভাব বা দর্শন নেই।
কিন্তু দেখুন সখা কী বলেন –>
হিংস্রতায় এরাও খুব একটা পিছিয়ে নেই তা হলে। ভাববার বিষয় বটে।
আমি ছবি যোগ করতে পারিনা। একটু চেষ্টা করছি। যাবে কিনা জানিনা। প্রিভিউতে দেখতে পারছি না।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-admin/media.php?action=edit&attachment_id=11672[/img]
কৃষ্ণপ্রেমে গদ্গদ এক হুজুর কে দেখুন কী রকম কান্নাকাটি করছেন।
ফ্র্যান্সিস ক্রিকের তথাকথিত বিবর্তন বিরোধিতার কথা জোকার টাও বলেছিলো। বাহ! উপযুক্ত প্রবাদটি কি হতে পারে ভাবছি -‘ সব শেয়ালের এক রা’ নাকি ‘একই গোয়ালের গরু।’
এই বৌদ্ধিক বেশ্যাদের কারণেই আজ ‘শাইনিং ইন্ডিয়ার’ হিন্দি চ্যানেল খুলে ‘হনুমান কবচের’ নোংরা বিজ্ঞাপন দেখতে হয়।
ওমা এদের নামও তো আমি জীবনে শুনিনি, এরাতো দেখা যাচ্ছে তবে হিন্দু ছাগু। ভালো সমস্যায় পড়া গেলো তো! খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে যে এদের বিরিঞ্চিবাবামির বিরুদ্ধে লিখেছেন।
আপনার এই কথাগুলোর সাথে সম্পুর্ণই ঐক্যমত প্রকাশ করছি, এন্টিসায়েন্সদের জন্য কোন শিষ্টাচার নাই।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার সাথে সহমত। হারুন, জাকির কিংবা ইসকন এই ধরনের বিজ্ঞানবিরোধিতাকারীদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র দরদ বা করুণা নেই। এরা যদি বিজ্ঞান সম্পর্কে একদমই না-জানতো, কিংবা জানার সুযোগ না পেত (যেমনটা এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের), তাহলে অবশ্যই আমার তরফ থেকে এক ধরনের দরদ কাজ করতো শিষ্টাচার মাথায় রেখে বাতচিত করা। কিন্তু এরা যে কিসিমের ভণ্ড! তাদেরকে আমাদের দরদ-ভদ্রতা-করুণা-শিষ্টাচার দেখানো আমাদের ‘দুর্বলতা’ বলেই মনে করবে লোকে।
আসলে সাধারন মানুষের দোষ হচ্ছে, মানুষ কঠিন কঠিন কথা বার্তা গুলো দূরে ফেলে সহজ ব্যখ্যা গুলো গ্রহন করে নিয়ে বসে থাকে। বিজ্ঞানের ব্যখ্যাগুলো যখনই কিছু জটিল পর্যায়ে চলে যেতে থাকে তখনই মানুষ পারতপক্ষে এড়িয়ে যায়! (আমিও যেতাম! এখনো মাঝে মধ্যে বিরক্ত লাগলে, “ধুর কি হবে এত পড়ে!” বলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। কিন্তু অন্যদের সাথে ঝগড়া লাগলে আটকে যাবার ভয়ে এখন অন্তত কিছু পড়াশোনার চেষ্টা করি!)
এই সুবিধাটাই এই ভন্ডরা নেয়। সাধারন মানুষ এসব হজম করে খুব সহজেই।
সবচেয়ে মজার উদাহরন হচ্ছে ল্যমার্কীয় ব্যখ্যাকে কাজে লাগানো। যারা বিবর্তনবাদ মানে, তাদের মধ্যেও প্রায় বেশিরভাগ মানুষই ল্যমার্কীয় ব্যখ্যাকেই বিবর্তন বলে মানে, কারন এটা বুঝতে অনেক সহজ! মুক্তমনায় আসার আগ পর্যন্ত আমিও তা-ই জানতাম!
@তানভী,
সবাইকি তোর মত আতেল যে কঠিনগুলো পড়ে হজম করে ফেলবে? কঠিন ব্যাপারগুলোও যতটা সম্ভব সহজবোধ্য করে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপনা করা দরকার যেমনটা জাফর ইকবাল স্যার, অভিজিতদা,বন্যা আপু তাদের লেখায় করেন।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
জাফর স্যার অনেক পদার্থবিজ্ঞান ছাড়া আর কিছু নিয়েই গভীরে যান না। আর আমি বন্যাপু আর অভিদার বাইরে এখনো আর কিছুই খুব একটা পড়ি নাই! উনাদেরগুলাও এত বেশি সহজ না !(কিন্তু গভীরে গিয়ে এর থেকে সহজ করার আর কোন উপায়ও নেই।)
যা হোক, আমাকে বাম্বুটা না দিলেও চলত! এমনিতেই দুঃখে আছি, তার উপর বাম্বু দিলে মুখ দেখানোও বন্ধ করতে হবে! :-Y
@তানভী,
যে যেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ সেতো সেই ব্যাপারেই গভীরে যাবে,জাফর ইকবাল স্যারতো বিবর্তনবিদ না।
যাইহোক আমার পোস্টটার মূল উদ্দেশ্যই ছিল তোকে বাম্বু দেয়া 😀 😀 । তোর পোস্ট দেখলেই মাথায় ঘুরে অসহায় এক তরুণ কার্ডবোর্ডে ড্রিল মেশিন দিয়ে ১২০০ ফুটা করেও পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি :hahahee: । আমার অবস্থাও ভালোনা 😥 ,প্রোগ্রামিং ছাড়া কিছুই পারিনা।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
১২০০ না!! এত কম বললে আমারে মারা যাইতে হবে!! ৩৬০০ ফুটা করেও ফেল করসি!! তাও কার্ডবোর্ড না! হাফ ইঞ্চি মোটা গর্জন প্লাই উড!! :-Y
আরেক গাধা ১৪৪০০ ফুটা করেও শেষ পর্যন্ত কমপ্লিট প্রজেক্ট জমা না দিতে পাইরা ফেল করসিল! আমি তো অনেক কমের উপর দিয়া গেসি! 😀
@তানভী, মিস্ত্রীগিরি কেমন চলতাছে বড় ভাই?
@তানভী,
ঠিকই বলেছেন।
অনন্ত বিজয় দাশ,
অনেকদিন পরে আপনার লেখাটা সত্যি সময়োপযোগী সন্দেহ নেই। আসলে আমার মনে হয় একেবারেই পারিবারিক পর্যায় থেকেই উদ্যোগ দরকার এসব অনভিপ্রেত প্রচার ঠেকানো। আমিও আমার বন্ধুমহলে বিশাল ডিগ্রীধারীদেরও এসব ব্যপারে একেবারেই ছাগলের মতো কথা বলতে শুনেছি। এদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! আমি ভেবে পাইনে, যে ওদের কাছ থেকে আমাদের ছেলেরা শিখবেটা কি? আরও একটা ব্যাপার, অনেকেই হয়তো তার নিজের বিষয়টা কিছুটা বুঝে, কিন্তু বিজ্ঞানের অপরাপর শাখা গুলোতে ন্যূনতম ধারনা রাখেনা, সবক্ষেত্রেই শ্রুতির উপর নির্ভর করে। আর এভুল ধারনা গুলোই ভুল সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে বই লেখার মত বিপজ্জ্বনক পথে পা বাড়ায় ঐসব ভাসা ভাসা আবর্জনা সমেত। সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ২য় শ্রেণীটি। এরা পেশায় পদে আপাতঃ প্রতিষ্ঠিত, এবং সুযোগ পেলেই একে ওকে সার্টিফাই করা একটা নেশা যেনো! এতে যে আমাদের মতো অপরিনত শিক্ষাবিমূখ জাতি কতোটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ধারনা করা মুশকিল। অথবা হয়তো জেনেশুনেই নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্যে জাতিকে আফিমে নেশাসক্ত করে রাখতে চায়। এদের প্রতিহত করা জরুরী। লেখাটির জন্যে আবারো ধন্যবাদ এবং নিঃসন্দেহে আমাদের সচেতনতা বাড়াবে।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা। ভন্ড, মিথ্যাচারী ধর্মবাদীদের মুখোশ এভাবেই উন্মোচন করা দরকার। অনেক ধন্যবাদ, অনন্ত।
@ইরতিশাদভাই,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
অনন্ত, বহুদিন পর দেখা মিললো তোমার। এই ইসকনটা কি কোন রাজনৈতিক অর্গানাইজেশন?
এদের মিথ্যাগুলোও এত সস্তা পদের, ফ্রান্সিস ক্রিক বিবর্তনবিরোধী ছিলেন বলে লিখেছে ওই বইতে :-Y । বেশী দূর যেতে হবে না, উইকিতে ফ্রান্সিস ক্রিক সম্পর্কে কি বলছে দেখোঃ
Crick once joked, “Christianity may be OK between consenting adults in private but should not be taught to young children.”[47]
In his book Of Molecules and Men, Crick expressed his views on the relationship between science and religion.[48] After suggesting that it would become possible for people to wonder if a computer might be programmed so as to have a soul, he wondered: at what point during biological evolution did the first organism have a soul? At what moment does a baby get a soul? Crick stated his view that the idea of a non-material soul that could enter a body and then persist after death is just that, an imagined idea. For Crick, the mind is a product of physical brain activity and the brain had evolved by natural means over millions of years. Crick felt that it was important that evolution by natural selection be taught in schools and that it was regrettable that English schools had compulsory religious instruction. Crick felt that a new scientific world view was rapidly being established, and predicted that once the detailed workings of the brain were eventually revealed, erroneous Christian concepts about the nature of humans and the world would no longer be tenable; traditional conceptions of the “soul” would be replaced by a new understanding of the physical basis of mind. He was sceptical of organized religion, referring to himself as a sceptic and an agnostic with “a strong inclination towards atheism”.
আর কার্ল স্যাগানের মত বিজ্ঞানীকে নিয়ে কিছু বলারই তো দরকার নেই, তার নামের সাথে এভোলিউশান লিখে সার্চ দিলে ৩৫৯,০০০ টা সার্চ রেসাল্ট আসে। এরা কি গুগলে সার্চটাও দিতে শেখেনি?
@বন্যা আহমেদ,
?
ISKON==International Society for Krishna Consciousness
এটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা-আন্তর্জাতিক ধর্ম আন্দোলন। প্রায় ১১২ টি দেশে ৪০০ বেশী সেন্টার আছে-ওরা দাবী করে মোট ভক্তর সংখ্যা তিন কোটি-শুধু আমেরিকাতেই নাকি ১ কোটি! আমেরিকাতে কত ভক্ত আছে জানি না-তবে আমেরিকাতে হিন্দু ধর্মকে এরাই কীর্তনের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে। প্রায় প্রতিটা বড় আমেরিকান শহরেই এদের বড় সর উপস্থিতি আছে। এদের হেডকোয়ার্টার মায়াপুর-নদীয়ার মায়াপুরের কাছে যেখানে চৈতন্যের জন্ম হয়।
এরা কেন এই অপবিজ্ঞানের চর্চা করছে, সেটার একটাই কারন। ইস্কনের কোটি কোটি টাকা। স্বয়ং ফোর্ড ফামিলি থেকে শুরু করে অনেক ধনী আমেরিকান ফামিলি এদের প্যাট্রন। কিন্ত স্বয়ং হেডকোয়ার্টারেই এদের প্রভাব আস্তে আস্তে কমছে! গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম বাঙালী হিন্দুদের প্রধান ধর্ম-এটি মাটি থেকে উঠে আসা বর্নবাদ বিরোধি প্রতিবাদি আন্দোলন ছিল এক সময়-তারপর এখন স্বয়ং আমাদের ওখানে বৈষ্ণবদের প্রভাব কমছে-তার বদলে রকমারী মন্দির হচ্ছে। আমার ধারনা, শিক্ষিত বাঙালীদের মধ্যে নিজেদের প্রভাব টেকাতেই এই ধরনের বই লেখা তাদের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি। ধর্মটাত ব্যাবসার বাইরে না। রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামীজিরা অপবিজ্ঞানের চর্চা করে উচ্চশিক্ষিত বাঙালীদের মার্কেটটা ধরে নিয়েছে-এটা ওদের পালটা প্রচেষ্টা।
অপবিজ্ঞানের চর্চা করাটা ধর্ম টিকিয়ে রাখার মূল উপাদানে পরিণত এখন। নইলে শ্রী চৈতন্য যা প্রচার করেছিলেন- যা মানবধর্ম এবং মানবিকতা-তার জন্যে এই ধরনের অপবিজ্ঞান লেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্ত এখন সবটাইত ব্যাবসা-তাই একবার ধর্ম ব্যাবসায় নামলে অপবিজ্ঞান অপরিহার্য্য হয়ে যাচ্ছে।
@বিপ্লব পাল, আহ্হ, বুঝলাম, এরাই সেই হরে কৃষ্ণ পাট্টি :-Y :-Y । ইসকন শুনে তো ভেবছিলাম না জানি কি!!!! এখন বুঝলাম। এদের বিরুদ্ধে তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলাও হয়েছে…
@বন্যা আহমেদ,
জানা মতে ইসকন এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সংঘটন নয়। ধর্মীয় সংগঠন হিসেবেই এর পরিচিতি। ওদের কাজকর্ম দেখে যতটুকু বুঝতে পারছি, এদেশের মাইনোরিটি সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একক প্রাতিষ্ঠানিক মুখপত্র হওয়ার চেষ্টা করছে। রামকৃষ্ণ মিশন, অনুকূল ঠাকুর, কিংবা লোকনাথ বাবাজির বিশাল প্রভাব রয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কিন্তু ইসকন খুব দ্রুতই এদেরকে টেক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে। রথের মেলা, কীর্তন, কিংবা হিন্দুদের যে কোনো পূজা অনুষ্ঠানে এদের বাড়ন্ত উপস্থিতি তাই প্রমাণ করে। ইসকন-ই এদেশে প্রথম বিভিন্ন কলেজ, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠন গঠন করেছে। ‘উদ্ধিষ্ট ছাত্র সংঘ’ নাম। আমাদের শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, ওসমানী মেডিকেল কলেজে এদের শাখা রয়েছে। তাই এদের পরিকল্পনা যে সুদূরপ্রসারী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমি ইসকনের কথা আগে শুনিনি। সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে এদের দৌড় ব্যাপক।
মারাত্বক একটা লেখা। অনেক দিন পর অনন্তদার লেখা পেলাম। অনেক ধন্যবাদ অনন্তদাকে লেখাটার জন্য।
ভন্ডদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া এমন লেখা আরো লিখুন। প্রবন্ধে পাঁচ তারা। :yes:
এই বইটি দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে এই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে। গ্রামের বাড়িতে ব্রেকফাস্ট খেয়ে সকালে পেপার পড়ছি আমার এক বাল্যবন্ধু যে গ্রামের স্কুলে অঙ্কের মাস্টার মশাই , সাত সকালে বইটা নিয়ে হাজির। ভারতে ক্লাস ১০ য়ে বিবর্তন ভালো মতই পড়ানো হয়। এত “বড়” সায়েন্টিস্টরা এর বিরুদ্ধে মত দিয়েছে বলে, সে আসলে একটু ধন্ধে পড়ে গেছে-কারন তাহলে বিবর্তন ক্লাসে এত গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো কেন হয়? সে ব্যাচার শুধু বি এস সি পাশ-তাই আমার কাছে এসেছে কেন এরা বলছে বিবর্তন ঠিক না।
বইটা পড়ে ততটাই হাঁসলাম, যতটা হাঁসি সদালাপী পি এইচ ডি ধারীদের বিবর্তন বিরোধিতা দেখে। বহুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, আমাদের দেশের বিজ্ঞান শিক্ষা হাতে কলমে হয় না- তা হয় পুঁথি চেবানো। ফলে এই উপমহাদেশ থেকে যেসব বিজ্ঞান পি এইচ ডি বেড়য়-তা হিন্দুই হো্ক বা মুসললানই হোক- অধিকাংশই সদালাপী পি এই চ ডি। বহুদিন আগে এদের বিজ্ঞানে জ্ঞানের বহর দেখে ৯ টা খন্ডে একটা উত্তর দিয়েছিলাম।
এটা এখানে আছে (ডাউনলোড করে পড়ুন এবং আনন্দ পান। ওটা পড়লেই দেখতে পাবেন, এদের বিজ্ঞানে জ্ঞান ভাসা ভাসা-কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এই সিস্টেমে আমাদের জ্ঞানটা হচ্ছে কাজ চালানোর জন্যে-গভীরতার কোন মূল্য নেই-তাই বিজ্ঞানে এই ভুল ভাল জ্ঞান নিয়েও ( আমার ৯ টা খন্ডের উত্তরে ছত্রে ছত্রে তার প্রমান পাবেন) তারা ডিগ্রি পায়। আজকাল ও সবই গাসওয়া।
@বিপ্লব পাল,
বইটা কি নেটেই পড়তে হবে? ডাউনলোড করার তো কোন অপশন দেখছি না।
@বিপ্লব পাল, ‘সদালাপী পি এইচ ডি’ খুব ভাল একটা টার্ম। শুধু পি এইচ ডি না আমাদের বি এ , এম এ সবই সদালাপী বি এ, এম এ। :-Y
@বিপ্লব পাল,
আমার পড়া মুক্তমনার অন্যতম আকর্ষণীয় সিরিজ ছিলো ওটা। সদালাপীর সেই ভদ্রলোকের একের পর এক উদ্ভট চ্যালেঞ্চ আর শেষে কপি পেষ্ট করে করা বিখ্যাত সেই গবেষণা প্রবন্ধ :hahahee:
আরেকজনের কথা মনে পড়ছে, তার নাম খুব সম্ভবত জামিলুল বাশার :laugh:
স্তব্ধ হয়ে গেলাম লেখাটা পড়ে। ধারণা ছিলনা মৌলবাদীদের ভন্ডামির সীমা। ভারতে এই ইস্কনওয়ালাদের প্রকোপ ভীষণ। সমস্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজগুলোতে এরা ব্যাঙের ছাতার মত ছড়িয়ে থাকে। উপরন্তু কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ যোগ ও সাধনা বিষয়ক লেকচার দেওয়ার জন্য অতিথি করে আনা হয় এইরকম কিছু ভন্ড গ্রুপকে। ভারতের কিছু অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা শিশুকাল থেকে এমনভাবে ছেলে-মেয়েদের তৈরী করে যে এদের মনে কখনো প্রশ্ন জাগেনা- কেন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ধর্মসাধনা ভিত্তিক লেকচার হবে? এই ছেলে-মেয়েরাই কয়েকবছর পর আই.আই.টিগুলোর টীচার হবে।সারা ভারতের ভবিষ্যত প্রকৌশল এরাই হবে। নিজেদের একাডেমিক সিলেবাস ছাড়া বাকি বিষয়ে বিলকুল না-ওয়াকিফ থাকায় এরা খবরই রাখেনা বিজ্ঞান অন্যান্য ক্ষেত্রেও কতটা এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মেটালার্জি বা সায়েন্টিফিক রিসার্চ এর প্রফেসরেরা গোবর্ধনদের লেখাতে মুখবন্ধ দেয়, যাচাই করে দেখেনা ডারউইন আদৌ এরকম কিছু বলেছিলেন কিনা।
ধন্যবাদ অনন্ত বিজয় দাশ আপনার লেখাটার জন্য। এই ইসকনের ইতরগুলিকে আমি কাছে থেকে দেখছি। এদের ডানা এত বেড়েছে যে মুখ খোলারও জো নেই। কোথাও মুখ খুললে এদের লোকরা রীতি মতো চিৎকার চেচামেচি জোড়ে দেয়। সবচেয়ে খারাপ ছোট ছোট বাচ্চাদের মাথা এরা খেয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। আমার অনেক ছাত্রও এদের ভক্ত। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে বোঝলাম এদের এই রাস্তা থেকে আনা অনেক কষ্টকর ব্যাপার। কারণ এরা এদের মস্তিষ্ক একদম সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধোয়ে দিয়েছে।
@সুমিত দেবনাথ,
আপনাকে ধন্যবাদ। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে কীর্তন নিয়ে ইসকন আমাদের পাড়ায় প্রায়ই আসে। দুমূর্ল্যরে এ বাজারে ধর্মকে কিভাবে পণ্য বানাতে হয়, কিভাবে মার্কের্টিং করতে হয়, তা যদি কেউ সত্যিই জানতে চায়, তাহলে ওদের মন্দিরে প্রতি শুক্রবার গেলে হাতে-কলমে শিখে আসতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
ইসকন যে কিরকম বাড়াবাড়ি শুরু করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।পিচ্চি পিচ্চি ছেলেদের লেলিয়ে দিয়েছে ধর্ম প্রচারে।জিজ্ঞাসা করলে তারা ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। এরা পড়াশুনা করতে আসে না ধর্ম প্রচার করতে আসে,মাথায় ঢোকে না। শিবির এবং এদের মধ্যে পার্থক্য শুধু এইটুকু যে শিবির রগ কাটে,এরা সেটা করে না। আর অন্য সবদিকে সমান। ঠিকএমনি সময়ে এধরনের একটি লেখার যে কত প্রয়োজন ছিল তা কল্পনাতীত। এরকম আরও লেখা লেখকের নিকট থেকে আশাকরি।অনেক ধন্যবাদ লেখককে।
সব জায়গাতেই ইদানিং ইসকনের বাড়াবাড়ি।নরসিংদি শহরে তো রীতিমত নদীয়ার আমেজ। ইসকনের মন্দির। ইসকনের হোটেল। কৃষ্ণ নামে মাতোয়ারা। আমার ঢাকা মণিপুরি পাড়াতেও আছে তাদের আস্তানা। জন্মাষ্টমী প্রাক্কালে চাঁদা তুলতে বের হয়। তাদেরকে ঠেকানোর মত শক্তি আশেপাশে চোখে পড়ে না। সমীক অনন্তরা তো চারদিকে ছড়াচ্ছে না। তোমাদের আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে — সবখানে গো ——– এ প্রত্যাশা করছি।
লাইন তিনেকের মধ্যে কনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সংঘাতটি কোথায়, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য পুরুষোত্তম চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ।
যত্তসব। :-Y :guli:
দারুণ কাজ।।
তবে আপনি যে ধৈর্য নিয়ে বইটি পড়েছেন এটা আপনার কৃতিত্বই বলবো আমি। বছর দুয়েক আগে এদের কয়েকটা বই পড়ে আমার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার জোগার হয়েছিলো। এত নির্জলা মিথ্যাচার করতে পারে এরা- সত্যকে স্রেফ অস্বীকার করে ফেলে।
মিথ্যাচার, বিজ্ঞানের ভুলব্যাখ্যা, অপব্যাখ্যায় ভরপুর এইসব বইগুলো পুড়িয়ে ফেলা জরুরী।
খুব বড় একটা কাজ করেছ অনন্ত। এটার দরকার ছিলো খুবই। বিপ্লবের কাছ থেকে অনেক আগেই শুনেছিলাম কীভাবে ইসকন অপবিজ্ঞান ছড়িয়ে চলেছে সমাজে। তোমার লেখা থেকে বুঝলাম এদের শিকড় বাকড় কতদূর বিস্তৃত হয়েছে ইদানিং। পয়সা কড়ির অভাব নেই এদের। ফলে রঘব বোয়াল বিজ্ঞানীদের নাম কিনে বইয়ে জুড়ে দিতেও সমস্যা নেই কোন। রঙ চঙে প্রচ্ছদ, দামী কাগজে মুড়ে সত্যই গোবরকে অমৃত বানিয়ে প্রকাশ করে চলেছে তারা। এদের কাজ, মন্তব্য এমনকি সন্নিবেশিত ভুল তথ্যেও মিল পাওয়া যায় হারুন ইয়াহিয়া গং দের সাথে। আসলেই চোরে চোরে মাসতুত ভাই ।
মাঝে মধ্যেই এই চোরদের চোরামি উন্মোচন করা দরকার। আবারো ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
@অভিজিৎ,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
লেখাটার অপেক্ষায় ছিলাম। বেশ গুরুত্ব-পূর্ণ লেখা।
ইদানিং ইসকনের বাড়াবাড়ি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, এরাও গণ্ডায় গণ্ডায় জোকার তৈরী করছে।
সময় মত জুতসই জবাব দেয়ায় :rose2:
এই সংগঠনগুলো চূড়ান্ত মাত্রায় ভন্ডামো করে জনগনকে ধোঁকা দিচ্ছে আর নিজেদের আখের গুছাচ্ছে।কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র কখনো এদেরকে কিছু বলে না।কিন্তু আপনি একটা লেখা লিখুন,দেখবেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে একদম নিচের স্তর পর্যন্ত মূর্খ মোল্লারা কেমন ফালাফালি শুরু করে।আমি আমার কিছু মোল্লা সহপাঠীর সায়ে এগুলো নিয়ে কথা বলেছিলাম,প্রচন্ড তর্ক হয়েছিল।শেষে ক্যাম্পাসের মোল্লা-শিবির পর্যন্ত থ্রেট দিতে আসছিল।এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম, যে দেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে বিবর্তন উঠিয়ে দেওয়া হয় সে দেশে এর চেয়ে বেশী আর কি আশা করেন? অন্যরা যখন সামনে আগায় আমরা তখন উটের পিঠে চড়ে পিছন দিকে যাই…
@ফাহিম রেজা,
কোথায়? কবে? :-X
@ফাহিম রেজা,
আসলেই বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তন একসময় ছিল??????
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
এরকম (সুখকর!) অভিজ্ঞতা যুক্তি বের করার পর বার কয়েক হয়েছিল আমারও।
ভাল লাগল বেশ সাবলীল!
@লাইজু নাহার,
আপনাকেও ধন্যবাদ।