ক.
‘নারী সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত প্রাণী’ (ভার্জিনিয়া উলফ)। ভোল্গা থেকে গঙ্গা বই থেকে জানা যায়-সভ্যতম সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে নারীর দাসত্বের মধ্য দিয়ে। রাশিয়ার ভলগা নদীর তীরে যে সভ্যতার সূচনা ঘটেছিল তখন পর্যন্ত মানব সভ্যতা ছিল নারী কেন্দ্রিক;- প্রতিটি গোত্র এক একজন গোত্রপ্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত এবং এই গোত্র প্রধান হতেন নারী। নারীরা শিকারসহ যাবতীয় সাংসারিক কাজে নেতৃত্ব দিত। তখন পর্যন্ত কোন ধর্ম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। করলে, বলাই বাহুল্য, পৃথিবীর অনেক ধর্মের ইতিহাস বদলে যেত। সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত শ্রেষ্ট মহামানবের কাতারে উচ্চারিত হত অনেক মহামানবীর নাম। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ না করলেও সেই সময়কার মানুষদের ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ছিল নারী। ভাস্কর শিল্পী মারলিন স্টোন তার বই When God was a Woman বইতে বলেছেন, খ্রীষ্টপূর্ব ২৫ হাজার বছর আগের নারী মূর্তিগুলো তারই নিদর্শন। এছাড়াও, ঐ বই থেকে যানা যায়, প্রথম পিতৃতান্ত্রিক নবী ইব্রাহিমের জন্মের বহু হাজার বছর আগে নারী ঈশ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফলত, স্পষ্টত প্রতিয়মান হয়, ঈশ্বরের লিঙ্গ পরিবর্তন হয়েছে ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে। এবং এই ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে উদ্ভব হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের, বৃহর্দাথে নতুন একটি সভ্যতার। পুরুষ কেন্দ্রিক এই সভ্যতা অনেকাংশে হয়ে উঠল যুদ্ধ ও ধর্ম কেন্দ্রিক সভ্যতা। ভোগের সভ্যতা বললেও ভুল হবে না। নারী উঠে গেল ভোগ্য পণ্যের তালিকার শীর্সস্থানে। সভ্যতার যাতে আর পালাবদল না ঘটে সে ব্যবস্থা নিশ্চিৎ করতে তৎপর হয়ে উঠল পুরুষশাসিত সমাজ। এক্ষেত্রে ধর্ম বিশ্বাসটাকে আগে নিজেদের মধ্যে ভালো করে রপ্ত করে তারপর ঘুমের ঔষধের মত করে নারীদের খাইয়ে দেয়া হল। বিষয়টিকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন শরৎচন্দ্র- ‘পুরুষেরা যাহা ইচ্ছা করে, যাহা ধর্ম বলিয়া প্রচার করে, নারী তাহাই বিশ্বাস করে এবং পুরুষের ইচ্ছাকে নিজেদের ইচ্ছা বলিয়া ভুল করে এবং ভুল করিয়া সুখী হয়।’ একে একে পৃথিবীতে মহামানব, দার্শনিক ও যুদ্ধবাজদের আগমনের ফলে সভ্যতা (পুরুষরা) এগিয়ে চলল তর তর করে। নারী পুরুষের ব্যবধান বেড়ে যেতে থাকলো ক্রমান্নয়ে। নারীরা পড়ে রইল (ফেলে রাখা হল কৌশলে) সেই আদিম জায়গায়। সক্রেটিস জ্ঞান বিস্তাতের জন্য শুধুমাত্র তরুণ যুবকদের বেছে নিয়েছিলেন। প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্টব্যবস্থায় নারীদের শুধুমাত্র সন্তান পালনের জন্য রেখে দিয়েছেন। আমি হলপ করে বলতে পারি, পুরুষের ভোগে ও বংশবিস্তারে যদি নারীদের প্রয়োজন না হত তাহলে কবেই নারীর নাম থাকত পৃথিবীর বিলুপ্তসব প্রাণীদের তালিকায়। সত্য হল, নারীদের প্রয়োজনের দিকটাই তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে; এবং যতদিন না এই প্রয়োজনের বিকল্প আবিষ্কার হচ্ছে ততদিনই বেঁচে থাকবেন নারীরা। তাদের এই প্রয়োজনের দিকটাই তাদের ভোগান্তির জন্য দায়ী, এবং, আবার ক্ষেত্রবিশেষ, এটা তাদের সুখের অন্যতম কারণও বটে।
এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতার উন্নতি বলতে আমরা যা বুঝি সেটা পুরুষের উন্নতি- বৈশ্বিক, ক্ষমতা, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবন যাত্রার মান, সম্পর্ক, ভোগ–আরো অনেক কিছূতেই। পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর মধ্যে নারী-পুরুষ এই দুইটা লিঙ্গ বিদ্যবান। মানুষ বাদে অন্যান্য প্রাণীদের মাঝে নারী পুরুষের যে ব্যবধান সেটা প্রকৃতিগত,- আদি থেকে আজ অব্দি একই সমান্তরাল রেখায় প্রবাহমান। একমাত্র মানুষের মাঝেই এই ব্যবধান (নারী-পুরুষের সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা ও ক্ষমতাগত) সভ্যতা থেকে সভ্যতা, সমাজ থেকে সমাজ, সংস্কৃতি থেকে সংস্কৃতি, পরিবার থেকে পরিবার, ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তি ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। আদিমযুগে নারী পুরুষের ব্যবধানটা ছিল অন্যান্য প্রাণীর মতই প্রকৃতিগত। ধরেই নেয়া যেতে পারে, তখনও নারীর উপর অত্যাচার শুরু হয়নি, যে দিন থেকে মানুষ তথাকথিত মানুষে (সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে নিজেদেরকে ভাবতে শুরু করলো) পরিণত হল সে দিনই প্রথম নির্যাতিত হয়েছে নারী। তারপর সভ্যতার যত প্রসার ঘটেছে নারীরা তত কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। খুব কৌশলে পৃথিবীর প্রতিটা পুরুষকে করে তোলা হয়েছে শাসক : পুরুষ (স্বামী) যত অক্ষম-অকর্মা হোক না কেন, নারী (স্ত্রী) তার অধীন হতে বাধ্য সে যতই কর্মঠ, পরিশ্রমী হোক।
খ.
সভ্যতার সূচনা হয় পরিবার প্রথার হাত ধরে, পরিবার হচ্ছে মানব সভ্যতার আদি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের বিকাশের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পুরুষতন্ত্র; আর, ‘মাতৃ-অধিকারের উচ্ছেদ হচ্ছে স্ত্রীজাতির এক বিশ্ব ঐতিহাসিক পরাজয়।’ আজ family বলতে আমরা যা বুঝি শুরুর দিকে তা ছিল না, family বলতে গোলামদের বোঝাত। famulus অর্থ হচ্ছে একজন ঘরোয়া দাস এবং familia মানে এক ব্যাক্তির অধীনে অনেকগুলো ক্রীতদাস। পরিবার প্রথার মাধ্যমে স্ত্রীদের ওপর পুরুষ বা স্বামীরা সর্বময় ক্ষমতা লাভ করে এবং তারা স্ত্রীদের সতীত্ব এবং পিতৃত্ব সম্পর্কে নিশ্চিৎ হতে পারে। আর স্ত্রীদের জন্য যে দিন থেকে এক পতী নিশ্চিৎ করা হল বা যৌন স্বাধীনতা হরণ করা হল সে দিন থেকে নারী হয়ে উঠল বেশ্যা বা বেশ্যালয় গড়ে উঠল। উদ্ভব হল পতিতাবৃত্তির। ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এর মতে, ‘একপতিপত্নী প্রথা ও পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও তারা পরস্পর অবিচ্ছেদ্যে বিপরীত।’ বহু নারী গমন যে পুরুষত্বের আরেক টি নাম! ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এটাকে পুরুষের জন্য ‘সানন্দে বহন করার মত নৈতিক কলঙ্ক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। বেশ্যার সাথে স্ত্রী এর পার্থক্য হচ্ছে : বেশ্যা শরীর বিক্রি করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, দেহের বাইরে খদ্দের পুরুষের আর কোন অধিকার থাকে না। আর বিবাহের মাধ্যমে নারী তার সর্বস্ব সমর্পণ করে আমৃত্যু দাসত্বকে বরণ করে নেই। নারীদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে, বিবাহপ্রথা সম্পূর্ণ ভাবে নৈতিবাচক ভূমিকা পালন করে। পতিতাবৃত্তির উচ্ছেদ প্রসঙ্গে বদরুদ্দীন উমর তাঁর ‘নারী প্রশ্ন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘পুরুষের বহুগামিতার জন্য বহুগামী নারীর প্রয়োজন অপরিহার্য। যেহেতু সাধারণভাবে পরিবারের অন্তর্গত নারীর সাথে পুরুষের বিবাহ বহির্ভূত অবাধ গমন ব্যাপকভাবে সম্ভব নয়, তাই পুরুষের এই বহুগামিতা সম্ভব করার জন্য উদ্ভব হয়েছিল প্রায় খোলাখুলিভাবে রক্ষিতা রাখার ব্যবস্থা (hetaerism)। কিন্তু সেটার প্রচলন তেমন ব্যাপক হওয়ার পথে বাঁধা অনেক। কাজেই একবিবাহ প্রথায় পুরুষের বহুগামিতা সম্ভব করার জন্য উদ্ভব হয়েছিল পতিতাবৃত্তির (prostitution)। ব্যাক্তিগত সম্পত্তি ও পতিতাবৃত্তির উদ্ভব এ কারণেই পরস্পরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। এ কারণে প্রথম প্রথাটির উচ্ছেদ ব্যতীত দ্বিতীয়টির উচ্ছেদ বাস্তবত সম্ভব নয়।’ মার্কস এর মতে, শ্রেণীবৈশম্যের সূচনাও হয়েছে এই পরিবার বা বিবাহ প্রথার মাধ্য দিয়ে- নারী-পুরুষ বিভাজনের মাধ্যমে।
গ.
পুরুষ সভ্যতার সবথেকে বড় আবিষ্ককার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা (concept of God)। পুরুষের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ঈশ্বরকে। (আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীক কবি জেনোফিনিস বলেছিলেন, ‘ষাঁড়ের যদি মানুষের মতো হাত ও ক্ষমতা থাকত তাহলে তারা দেব-দেবীর আকার, রূপ, চরিত্র ষাঁড়ের মতো করেই তৈরী করতো।’) পৃথিবীর প্রতিটা ধর্মে লক্ষ-কোটি নবী, রসূল এসেছেন যাঁদের মধ্যে কেউ-ই নারী নন। নারীদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নধরণের ফতোয়া দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, থামিয়ে রাখা হয়েছে তাদের মানুষিক উন্নয়নকে। পুঁজিবাদী সমাজে এসেছে নারীদের গুরুত্ব মানুষ হিসাবে আরো লোপ পেয়েছে। আমরা, বর্তমান সময়ে নারীদের যে অবস্থানগত যে উন্নতি দেখি, সেটি প্রকৃতপক্ষে পণ্য হিসাবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে পরে আরো বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
ঘ.
মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য হচ্ছে ভাষা। ভাষা হচ্ছে প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ গিফ্ট। আর মানুষের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে এই ভাষার ব্যবহার, অর্থ্যাৎ সাহিত্যের সৃষ্টি। পুরুষ সভ্যতার প্রধান হাতিয়ার হল ভাষার আত্মীকরণ। পুরুষ সমাজের ভাষা নির্ধারণ করে। এই ভাষা নির্ধারণের মাধ্যমে নির্ধারণ করে মানুষের আচরণ, ক্ষেত্র বিশেষ মানুষের জীবনচিত্র। প্রকৃতির এই শ্রেষ্ঠ গিফট এবং সভ্যতার এই শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে পুরুষ শাসিত সমাজ। আজ কেউ যদি বলে, আমি রাস্তায় একজন মানুষকে দেখলাম। আমরা বুঝি সে কোন পুরুষকে দেখেছে কেননা নারীকে দেখলে বলতো, আমি রাস্তায় একটা মহিলাকে দেখলাম- খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যপার। এক্ষেত্রে ঐ লোকটিকে অর্থাৎ ঐ ভদ্রলোককে দোষ দেওয়া যাবে না। আমরা এভাবেই ভাষাকে গড়ে তুলেছি। মানুষ পুরুষ শব্দের সমার্থক শব্দ। নারী- সে আবার মানুষ হল কবে ? ইংরেজি তে মানুষ বলতে বলা হয় human, man শব্দটি এখানে কৌশলে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ মানুষকে huwoman বলে তবে ব্যাকরণ গলা টিপে ধরবে। ‘chastity’ শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়কে নির্দেশ করলেও এটা পারিভাষিক শব্দ ‘সতীত্ব’ শুধুমাত্র নারীর ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। Newman তাঁর The Idea of a University-গ্রন্থে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে gentlemen বা ভদ্রলোক তৈরী করা তিনি gentlewomen বা ভদ্রমহিলাদের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন। এইভাবে ভাষাকে ব্যবহার করে পুরুষ শুধুমাত্র নারীর ওপর আধিপত্যই বিস্তার করে নি, তার মানুষিকতাকেও দমিয়ে দিয়েছে।
পৃথিবীর তাবৎ মহামানবেরা খুব পরিকল্পনা করে গড়ে তুলেছে এই পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা। তার ঈশ্বর পুরুষ, প্রথম প্রেরিত মানব পুরুষ, এমনকি যাদের জীবন নেই, যারা এই বিভেদ বোঝে না তারাও বাদ পড়েনি,- বলা হয়ে থাকে, সূর্য হচ্ছে পুরুষ, চাঁদ বা অন্ধকার হচ্ছে নারী, পুরুষ উত্তাপ, নারী ছায়া, পুরুষ গতি, নারী মূর্তি, সমুদ্র পুরুষ, নদী নারী। আরও বলা হয়ে থাকে, নর থেকেই নারীর আবির্ভাব, এখানে নারীর স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। মহিলা শব্দটিরও বুৎপত্তি গত অর্থ হচ্ছে মহল, অর্থ্যা নারীর মহলে থাকার জন্যই যেন জন্ম। এই সব শব্দের মারপ্যাচ, পুরুষতন্ত্রের কারসাজি।
এবার সরাসরি আসছি পুরুষতন্ত্রের সবথেকে বড় আবিষ্কার- ‘সাহিত্যে’। সাহিত্যে নারীকে ইচ্ছে মত ব্যবহার করা হয়েছে। কোন উপন্যাসের নায়িকাকে আজ অব্দি কুৎসিত, কাল দেখা যায়নি (ক্ষেত্রবিশেষ ব্যাতিক্রম ঘটতেই পারে!)। উপন্যাসের নায়ক হোক যেমন তেমন নায়িকাকে বিশ্ব সুন্দরী হতেই হবে। বাংলা সাহিত্যে আলাওলের পদ্মাবতী কিম্বা লাইলি মজনুর লাইলি থেকে শুরু করে হালনাগাদ উপন্যাস-গল্পের নায়িকাদের যে রুপের বর্ণণা দেওয়া হয়েছে তাতে তাদের মানবী ভাবতে কষ্ট হয়। আদর্শ নারী মানেই রুপবতী। রুপ না থাকলে সে আবার নারী কেন! নজরুল তাঁর কবিতায় বলেছেন, আমি হতে চাই না একা নারী কারো; এরা দেবী, এরা লোভী…(পুজারিনী)’’। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্ববলের আধিপত্য অতি ভংঙ্কর (শেষের কবিতা)।’ রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয় রানী এলিজাবেথের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। ইংরেজি সাহিত্যে, হেলেনের জন্য ধ্বংশ হয়ে যায় ত্রয় নগরী (সাধারণ পাঠকরা এমনটিই মনে করে!)। প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই ধ্বংশের পেছনে কাজ করেছে আকিউলাস ও হেক্টরের ক্ষমতার লোভ। নারী এখানে উপলক্ষ মাত্র। ইলিয়ড শুরু হয় একটি দাসিকে কেন্দ্র করে আকিলিস ও আগামেমনসের মধ্যে বিবাদের সূত্র ধরে। হোমাদের কাব্যে দেখা গেছে স্ত্রীরা তাদের বীর স্বামীদের দাসীদের সাথে ভাগাভাগি করতে বাধ্য হত। অডিসিতে দেখা যায়, টেলিমেকাশ মাকে ধমক দিয়ে চুপ করে থাকতে বলে। ইউরিপিডিস্-এর রচনায় স্ত্রীকে বলা হয় oikurema বা গৃহস্থালী চালানোর একটি জিনিস। মিডিয়াতে দেখা যায় জেসন মিডিয়াকে ব্যবহার করে গোল্ডেন ফ্লিস দখলে আনে এবং পরবর্তীতে ক্ষমতার লোভে মিডিয়াকে ফেলে রাজা ক্রিয়নের মেয়েকে বিয়ে করে। পরবর্তীকালের সাহিত্যকর্মেও একই দৃশ্য ফুটে উঠেছে। একসময় চরিত্রহীন তলস্তয় আশ্রয় নিলেন ধর্মে। তাঁর স্ত্রী সোফিয়া তেরটি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। জমিদারি দেখাশোনাসহ তলস্তয়কে পান্ডুলিপি প্রস্তুত ও প্রকাশনায় সহায়তা করেন। তবুও নারী জাতি সম্পর্কে তলস্তয়ের স্বীকারক্তি হচ্ছে, ‘মেয়েদের সান্নিধ্য সমাজ জীবনের একটি প্রয়োজনীয় অপ্রীতিকর ব্যাপার, যতটুকু সম্ভব এদেরকে এড়িয়ে চল।’ জাঁ জ্যাক রুশো (১৭১২-১৭৭৮) তাঁর এমিলি উপন্যাসের নায়িকাকে বলেছেন, ‘যখন এমিল তোমার (সোফিয়া) স্বামী হবে, তখন সে তোমার প্রভু। প্রকৃতির অভিলাষ হচ্ছে যে তুমি তার অনুগত থাকবে।’ রুশো আরও বলেছেন, ‘প্রকৃতির বিধান হচ্ছে নারী অনুগত থাকবে পুরুষের।’ রুশো ব্যাক্তি জীবনে অনেক নারীর সহচর্যে এসেছেন, জন্ম দিয়েছেন অবৈধ সন্তান আবার নিজেই বলেছেন, ‘যে স্বামীদের নিশ্চিৎ হতে হবে তাদের স্ত্রীদের সতীত্বে যাতে তাদের সন্তানেরা আসলেই হয় তাদের নিজেদের সন্তান।’
ঙ.
আধুনিক বা পুঁজিবাদী বা ভোগবাদী বা পুরুষ সভ্যতা হচ্ছে বাজার কেদ্রিক সভ্যতা। এই সভ্যতাই নারী পণ্য হিসাবে গন্য। বিজ্ঞাপনে নারীকে ব্যবহার করে সর্বচ্ছ মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করছে পুঁজিকেদ্রিক সমাজ। সাবান/শাস্পু/সুগন্ধি/পোশাক/কসমেটিকস/এমনকি গরু মার্কা ঢেউ টিন, সবখানেই বাছাই করা সুন্দরীদের স্বল্প কাপড়ে টিভি পর্দায় পরিবেশন করা হচ্ছে, যেন এসব বিজ্ঞাপনের দর্শক কেবল মাত্র পুরুষরাই। পুরুষকেদ্রিক সভ্যতা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মত নারীকে সর্বত্তম ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং সফল হচ্ছে তো বটেই। এক্ষেত্রে নারীদের অকৃত্রিম সহযোগিতার কথা স্মরণ করার মত। আগে শুধু নারীদের দেহকে ভোগ করা হত, আর কায়িক শ্রম বলতে সন্তান পালন ও রান্না-বান্নাকেই বোঝানো হত। আর পুঁজিকেন্দ্রিক বর্তমান সমাজ সবকিছু থেকে সর্বস্ব মুনাফা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ফলত, সংসার সামলানোর পাশাপাশি দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে হচ্ছে নারীদেরকে। সুন্দরী মহিলাদের দেহকে পুঁজি করে বিশ্ববাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বউ বা প্রেমিকাকে কোলের মধ্যে রেখে আমরা সেই সব সুন্দরীদের রূপ উপভোগ করছি। আধুনিক শ্রমবাজারের যে নারীরাই প্রবেশ করছে তাদেরকে একধরণের পতিতাবৃত্তির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে। ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে-যেন, তদরূপ, মহিলাদের কাজই হচ্ছে যৌনসুখ প্রদান করা।
অসমাপ্ত
বি দ্র : আমি জানি মুক্তমনায় এ বিষয়ে অনেক ভালো ভালো লেখা ছাপা হয়ে গেছে। আমার এ লেখাটির কোনো প্রয়োজনই হয়ত ছিল না। তারপরও মুক্তমনায় পোস্ট করলাম, উদ্দেশ্য, আমার শ্রদ্ধেয় পাঠকদের কাছ থেকে কিছু শেখা…
কৃতজ্ঞতায় :
নারীহুমায়ুন আজাদ
ঈশ্বর, সৃষ্টি ও ধর্মসা’দ উল্লাহ
নারীসস্পাদনায় তাহা ইয়াসিন
নারী প্রশ্ন প্রসঙ্গেসম্পাদনায় বদরুদ্দীন উমর
দ্বিতীয় লিঙ্গসিমোন দ্য বোভেরার
নারীর মূল্যশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ভোলগা থেকে গঙ্গারাহুল সাংকৃত্যায়ন
যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তিপ্রবীর ঘোষ
ধর্মের উৎস সন্ধানেভবানীপ্রসাদ সাহু
নারী ধর্ম ইত্যাদিগোলাম মুরশিদ
নারী পুরুষ ও সমাজআনু মুহাম্মদ
যে সত্য বলা হয়নিআকাশ মালিক
মুক্তমনা ও অন্যান্য ব্লগ ও
ইন্টারনেট
বি: দ্র: শাশ্বতিকীর লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংখ্যা প্রকাশের অপেক্ষায়…
@মোজাফফর হোসেন,
লিখাটি খুব ভাল লেগেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমরা চাই বা না চাই, পছন্দ হোক বা না হোক, প্রকৃতিতে যোগ্যতমেরাই বেশী সুবিধা আদায় করে।
@গোলাপ, বটেই। ভিন্নমত রাখছি না। ধন্যবাদ আপনাকে ।
জানা জিনিসগুলোই আবার পড়ে ভাল লাগল। খুব সাবলীলভাবে লিখে গেছেন। ভাল লাগল লেখা পড়ে। আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী তাড়াতাড়ি অন্য পর্বগুলোও দিয়ে ফেলুন। বেশিদিন অপেক্ষা করালে ভাল হবেনা বলছি 😉
@লীনা রহমান, লিখবো নিশ্চয় তবে মুক্তমনায় অনেকের কমেন্ট পড়ে মনে হল আমার আরো সময় নেয়া উচিত। আমি যা সত্য বলে জানি তার অনেকটা হয়ত ভুল, আরো জানতে হবে আমাকে , আর জানতে হলে পড়তে হবে, ভালো বই পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। আমার অনার্স ফাইনাল ইয়ার চলছে। একাডেমিক পড়াশুনাটা শেষ হলে উঠে পড়ে লাগবো। আপাতত আমি আমার বিশ্বাসটা ধরে এগিয়ে যেতে চাই। ধন্যবাদ আপনাকে। যানা জিনিস লিখে লাভ কি বলুন ?
অনেকদিন পর মুক্তমনায় এলাম। লেখাটার প্রশংসা না করে পারলাম না। তাই একটা :rose:
@আফরোজা আলম, ধন্যবাদ আপনাকে। শুনে ভালো লাগলো।
নিজে পুরুষবাদী বলেই হয়তো, বেশিরভাগ নারীবাদী লেখা পড়লেই কেন যেন আমি পুরুষবাদী পুরুষবাদী গন্ধ পাই। 🙂 মনে হয় যেন নারীকে নিয়ে এক ধরনের উপহাস করা হচ্ছে, করুণা করা হচ্ছে তার অসহায়ত্বকে নিয়ে।
এই পৃথিবীটা যোগ্যতমের, সময়ে যে যোগ্যতা দেখাবে তারই পদানত হবে পৃথিবী। সেটা ছেলে বা মেয়ে বলে কিছু নেই। পশ্চিমা দেশে ইতোমধ্যেই যোগ্যতার পাল্লায় নেমে পড়েছে ছেলে মেয়েরা, কেউই এখানে ভাবছে না যে আমি আমার জেন্ডারের কারণে পিছনে পড়ে আছি। অনুন্নত দেশগুলোতে এতখানি উন্নতি ঘটে নি, কিন্তু পরিবর্তনের জোয়ার ঠিকই লেগেছে সেখানেও।
আমার একটা বিষয়ে বেশ কৌতুহল। নারীবাদী লেখা পড়লেই দেখি যে, দাবী করা হয় আগে একসময় সমাজে মেয়েরা কর্তৃত্ব করতো, কিন্তু পুরুষ ছলেবলে কৌশলে সেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে মেয়েদের কাছ থেকে, তারপর থেকেই তাঁরা নাকি পুরুষের পদানত, দাসী গোত্রের। আসলে ঠিক কোন ধরনের ছলাকলা বা কৌশলের মাধ্যমে পুরুষ ক্ষমতাটা কেড়ে নিয়েছিল নারীর হাত থেকে? নারী-ই বা সেটাতে বাধা দেয় নি কেন? কেনই বা পারে নি পুরুষ আধিপত্যকে প্রতিহত করতে? ক্ষমতাতো তার হাতেই ছিল। যেহেতু পারে নি, তাহলে কি ধরে নেওয়া হবে যে যোগ্যতমের কাছে পরাস্ত হয়েছিল তারা?
@ফরিদ আহমেদ, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি যে ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তাতে দ্বিমত করার কোন কারণ দেখি না। হতে পারে আপনার কথায় ঠিক, তবুও কেনো জানি ভেবে দেখতে ইচ্ছে করছে।
@মোজাফফর হোসেন,
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বা সভ্যতার শুরুতে সমাজে মেয়েরা কর্তৃত্ব করতো, তাদের সোনালি সময় ছিল এই ধারণাটা পুরোপুরিই মিথ। সভ্যতায় নারী কখনোই পুরুষের উপরে কর্তৃত্ব করতে পারে নি। এই ভ্রান্ত ধারণার সূত্রপাত করেছিল ক্লাসিক্যাল সমাজবিজ্ঞানীরা উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে। শুরুতে ব্যাকোফেনের Mother Right এবং মর্গানের Ancient Society এবং পরে রবার্ট ম্যালিনোস্কির Argonauts Of The Western Pacific কাজের উপর ভিত্তি করে নারীবাদীরা এই রূপকথার জন্ম দেয় যে সমাজে নারীরা একসময় প্রভুত্ব করতো। মর্গানের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েও এঙ্গেলসও একই ধরনের ধারণা পোষণ করতেন। হ্যা, অনেক সমাজেই নারী প্রধান ছিল, নারী দেবী ছিল, কিন্তু সার্বিকভাবে নারী পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করতে পারে নি কখনোই। ওই সমাজগুলোকেই আগে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলে কল্পনা করে নিয়েছিল নারীবাদীরা। এখন মাতৃতান্ত্রিক এর বদলে এগুলোকে মাতৃকেন্দ্রিক (Matristic) সমাজ বলা হচ্ছে।
পঞ্চাশের দশকে মারিয়া গিম্বুটাস নিওলিথিক ইউরোপে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। ওর উপর ভিত্তি করেই সেকেণ্ড ওয়েভ ফেমিনিস্টরা বেশ কিছুদিন ধরে এই আইডিয়াকে টেনেটুনে সম্প্রসারণ করেছিলেন। বিক্রিবাটা করে বেশ খাচ্ছিলেন। কিন্তু, নিওলিথিক সময়ের মাতৃতান্ত্রিক সমাজের সোনালি যুগকে বাতিল করে দেন স্টিভেন গোল্ডবার্গ তাঁর The Inevitability of Patriarchy এবং Why Men Rule গ্রন্থে। বন্যা এ নিয়ে আলোচনা করেছে তাঁর দ্বিতীয় মন্তব্যে। কাজেই আমি আর এগুচ্ছি না এ বিষয়ে।
নারীবাদীদের অতীতের মাতৃতান্ত্রিক সমাজের গাল্গল্পকে এখন তাদের উইস্টফুল থিংকিং হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সমতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই এই সমস্ত গালগল্পগুলো ভেঙ্গে মেয়েদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন। কোনো এক সময়ে তারা ছেলেদের উপরে ছড়ি ঘোরাতো এই মিথ্যা সুখস্বপ্ন সুখের আবেশ ছড়াবে হয়তো, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না তাতে। বরং এখন সুবর্ণ সময় এসেছে, তাদের শারীরিক যে দুর্বলতার কারণে ইতিহাসে কখনোই তারা পুরুষের সমকক্ষতা পায় নি, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সেই দুর্বলতা কেটে গিয়েছে তাদের। এই সুবিধাকে পুঁজি করেই মেয়েদের বলিষ্ঠভাবে সামনে এগোতে হবে, শক্ত হাতে ভেঙ্গে ভেলতে হবে পুরুষ আধিপত্যকে।
দূর অতীতের মিথ্যা সুখস্বপ্ন নয়, বরং আসন্ন দিনের সত্যিকারের সুখস্বপ্ন দেখুক মেয়েরা, সেটাই হোক সকলের কাম্য।
@ফরিদ আহমেদ, আপনার মন্তব্য থেকে অনেক কিছু শিখলাম, এই শেখাটার জন্য অনেক শক্তি সঞ্চয় করে মুক্তমনায় লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে।
বিপ্লব ইতোমধ্যেই অনেক কিছুই বলে দিয়েছে, তারপরও দুই একটা কথা যোগ করছি। এই নারী পুরুষের সমতার, বা জেন্ডারগত সাম্যতার ব্যাপারটা কোনভাবেই প্রাকৃতিক নয়, বরং মানুষের দ্বারা আরোপিত। প্রকৃতিতে এরকম কোন ‘সমতা’ ব্যাপার বা ধারণাই নেই, এটা এক ধরণের মিথ ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতিতে যা রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস দেয়, তাইই নিয়ম। গরিলারা হেরেম করে ২০ জন নারী গরিলাকে অধীন করে রাখে, শিম্পাঞ্জিদের নারী পুরুষ সবাই কম বেশী বহুগামী আর বনোবোদের মধ্যে নারীর ডমিনেন্স দেখা যায়, এরকম আরও হাজারো রকমের পারমুটেশন কম্বিনেশন দেখা যায়। মানব সভ্যতায়ও কখনও নারী পুরুষের সমতা সেভাবে ছিল কিনা তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই প্রচলিত সাহিত্য বা লেখালেখিতে প্রকৃতিতে নারী পুরষের সমানাধিকার নিয়ে যে সব কথা বলা হয় তা একেবারেই ভুল। প্রকৃতিতে যে যার মত জৈবিক ভূমিকা রাখে এবং প্রজননের সার্থকতার উপর ভিত্তি করেই পারস্পরিক সম্পর্কগুলো করে তা গড়ে ওঠে, সেখানে ‘ঠিক’ বা ‘ভুল, বা ‘উচিত’ বলে কিছু নেই। বরং মানুষই প্রথম আরোপিতভাবে এই সাম্যের কথা বলতে শুরু করেছে এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ এর পিছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। আমাদের বুদ্ধিমত্তা এবং চেতনা বিবর্তনের পথে এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে আমরা আজকে সাংস্কৃতিকভাবে অনেক কিছুই করতে বা ভাবতে পারি যা অন্যান্য প্রাণী করতে সক্ষম নয়। কিন্তু এই সাম্যতাকে জাস্টিফাই করার জন্য ‘প্রকৃতিগতভাবে নারী পুরুষের সমতা’ বা ‘মানুষের আদিম সমাজে নারী পুরুষের সমতা’র কথা টেনে আনলে তথ্যগত ভ্রান্তি শুধু বাড়বে।
@বন্যা আহমেদ,
কেন এ হেন বাণ?
লেখক কি “সাম্য” শব্দটি ব্যবহার করেছেন? ব্যবধান আর সমতা কি এক বিষয়? তিনি মানুষ ও অন্য প্রাণীদের মধ্যে পার্থক্য রচনা করেছেন ” নির্যাতন” শব্দটি ব্যবহার করে, তারপর বলেছেন দিনে দিনে এটি বেড়েছে। কথা কথায় আমরা অন্য প্রাণীদের উদাহরণ দিয়ে হাতে একটা সিদ্ধান্ত ধরিয়ে দে’য়ার চেষ্টা করি।
“প্রকৃতিতে নারী পুরষের সমানাধিকার নিয়ে যে সব কথা বলা হয় তা একেবারেই ভুল। ”
শুধু নারী পুরুষ কেন, মানুষ ও মানুষের সমানাধিকার নিয়ে কথা বলাটাও ভুল হতে পারে। মনে হয় কেউ এ দাবী করেনি যে এটি প্রকৃতিগত। এটি মানুষের হাজার হাজার বছরের অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার ফসল।
“প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ এর পিছনে বড় ভূমিকা পালন করছে।”
অথচ বাজারি পত্রিকাগুলো পর্যন্ত যে শব্দটি ব্যবহার করছে সেটি নর অথবা নারী নয় “মানব সম্পদ “। এর মধ্যে সস্তা কোনটা ? পুরুষ না নারী? বাংলাদেশ ভারত বাদ, এই আমেরিকাতে?
“আমরা আজকে সাংস্কৃতিকভাবে অনেক কিছুই করতে বা ভাবতে পারি যা অন্যান্য প্রাণী করতে সক্ষম নয়”।
অন্যান্য প্রাণীর সাথে তুলনাটা কেন, স্পষ্ট নয়।
@স্বপন মাঝি,
তাই কি? আমার কথাগুলো ‘বাণ’সম ঠেকছে? এখানে বাণ নিক্ষেপ করার কোন উদ্দেশ্য আমার ছিল না,মোজাফরের লেখায় আমি আগেও মন্তব্য করেছি এখানে ব্যক্তিগতভাবে ‘বাণ’ নিক্ষেপ করার কোন কারণ নেই। লেখক তার লেখায় বেশ কিছু ভুল তথ্য দিয়েছেন সেগুলো ধরিয়ে দেওয়াই ছিল আমার মন্তব্যের উদ্দেশ্য। আশা করবো আপনি একে সমালোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে অবজেক্টিভ সমালোচনা হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
তাই কি, দেখুন তো লেখাটা পড়ে, লেখক বলার চেষ্টা করেছেন যে আগে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছিল এবং ধর্মের উৎপত্তির ফলে তা বদলে যায়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমে প্রতিষ্ঠা করা মাতৃতান্ত্রিক সমাজের এই মিথগুলো কয়েক দশক আগেই ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।দেখুন লেখক কি বলেছেনঃ
গল্প সাহিত্যে অনেক কিছু বানিয়ে লেখা যায়, কিন্তু সভ্যতা বা নারী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নিয়ে সিরিয়াস প্রবন্ধ লিখতে হলে তা কতগুলো রিয়েলিস্টিক ফিকশান বা ফিকশানের উপর ভিত্তি করে তা লেখা যায় না, প্রমাণিত তথ্য বা সে সময়ের সর্বাধুনিক তথ্যের ভিত্তিতে লিখতে হয়। রাহুল সংকৃত্যায়নের বই অনেক পুরোন, এবং তার চেয়ে বড় কথা হল –এটি কোন নৃতত্ত্বের ঐতিহাসিক প্রামাণ্য গ্রন্থ নয়। বাংলাদেশে এখনো মর্গান কিংবা তাদের পুরোন বইয়ের উপর ভিত্তি করেই আলোচনা চলে। লেখকও সেই তথ্য থেকেই সিদ্ধান্তে এসেছেন, এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি যে তিনি নারী অধিকার এবং সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়ে যা বলেছেন তার সবগুলোই ইতোমধ্যেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে। যেমন, স্টিফেন গোল্ডবার্গ তার ‘The Inevitability of Patriarchy’ গ্রন্থে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বহু মিথ খণ্ডন করেছেন। আমরা আজ জানি, মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কখনই সম্ভবত ছিল না, এগুলো মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়, শুধু নৃতাত্ত্বিক বা সামাজিক ইতিহাসই নয়, জৈবিক বিবর্তনের ইতিহাসও এ তথ্য সমর্থন করে না। লেখক বলেছেন নারীরা নাকি একসময় শিকার করতো কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া কোন তথ্যই সেটাও সমর্থন করে না। নারীরা শিকারী ছিলো না, তারা ছিলো সংগ্রাহক। পুরুষেরাই ছিলো শিকারী। বিবর্তনের ইতিহাসের উপর রচিত যে কোন আধুনিক প্রামান্য গ্রন্থেই ‘হান্টার-গ্যাদারার’ সোসাইটির উল্লেখ আছে। সেগুলো পড়লেই দেখবেন কারা শিকার করত, আর কারা সংগ্রহ। বিভিন্ন কারণে এই শ্রমের বিভাজন মানব সমাজে সূচিত হয়েছিল, তার মধ্যে নারীর প্রজননগত ভিত্তি পুরুষের চেয়ে আলাদা হওয়াটা ছিলো একটি বড় কারণ। আর অন্যান্য কারণও আছে। আমি এখানে সেগুলো নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না। নারীরা বরং আধুনিক সমাজেই অনেক বেশি বাইরে কাজ করে, তাদের জৈবিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে। প্রাচীনকালে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে জৈবিক সীমাবদ্ধতার কাছে হার মানতেই হত নারীকে। এটাই বাস্তবতা। কাজেই, নারী এবংপুরুষের মধ্যে বৈষম্য আমাদের প্রজাতিতে সম্ভবত প্রথম থেকেই ছিল, ধর্ম সেটাকে আরও নির্মম রূপ দিলেও তা কোনভাবেই নারী পুরুষের বৈষম্যের সূচনা ছিল না। আর লেখক তার লেখায় প্রকৃতিকে টেনে এনেছিলেন বলেই আমি প্রাণী জগতের সাথে তুলনার কথা উল্লেখ করেছিলাম।
আমি এখানে তথ্যগত ভুল দেখিয়ে আমার মন্তব্যের আকার আর বড় করবো না, শুধু এটুকুই বলবো যে , নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকৃতিতে কি আছে কি নেই সেটা টেনে আনার কোন দরকার নেই, প্রকৃতি বৈচিত্রে ভরপুর, সেখানে বিভিন প্রজাতিতে নিয়মিতভাবে নারী এবং শিশু ধর্ষন থেকে শুরু করে নারীদের আধিপত্য পর্যন্ত সবই দেখা যায়। এ ধরণের ন্যাচারিলিস্টিক ফ্যালাসির কোন প্রয়োজন নেই। আজকে প্রযুক্তির উন্নতি, উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীদের সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারার ফলেই না্রী পুরুষের সমানাধিকারের ব্যাপারটা সামনে আসতে পেরেছে এবং সেটাই এখন স্ময়ের এবং সভ্যতার দাবী। আমরা যতই আমাদের ইতিহাসকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হব ততই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে। চেকভের ভাষায় বলতে হয়, ‘Man (মানুষ) will becoame better when you show him what he is like’.
লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেদিনের প্রত্যাশা নিয়ে এমন একটি প্রবন্ধ লেখার জন্য।
@বন্যা আহমেদ, ধন্যবাদ। বলতে দ্বিধা নেই, অনেক বিষয় আমার আসলে অজানা। পরবর্তীতে এই বিষয়ে লিখতে গেলে আরো ভেবে ও জেনে লেখার চেষ্টা করবো। আপনার ব্যাখ্যা আমার ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আবারো।
আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগল। :clap2:
একবার পড়তে শুরু করে আর থামতে পারি নি। শেষ করেই তবে থামা। লেখার সাবলীলতা চোখে পড়ার মত। অথচ আপনি নিজে মনে করেন,
মনে রাখবেন, সহজ কথা যায় না বলা সহজে।
হয়তো বিষয়টি নিয়ে আগেও লেখা হয়েছে, তার মানে এই না যে, আর লেখার প্রয়োজন নেই।
কারও কারও মন্তব্য পড়ে মনে হল, নতুন প্রতিভাকে স্বাগত জানাতে যেন আপত্তি রয়ে গিয়েছে।
একটি কথা দিয়ে শেষ করি,
যে যাই বলুক তুমি নিজের পথে চল। [- দান্তে]
@তুহিন তালুকদার, দান্তের কথাটি মনে গেথে রইল। আপনাকে ধন্যবাদ।
অপ্রাসঙ্গিক একটা মন্তব্য না করলেই নয়। আপনার প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম ছবির সাইজ বিশাল আকৃতির যা সাইডবার ভেঙে বাইরে চলে গেছে। আপনি একটু কষ্ট করে ছোট সাইজের একটা ছবি আপলোড করুন। ৩৫০*৩৫০ এর কাছাকাছি হলেই চলবে।
ব্লগের সবাইকে ছবি আপলোডের সময় সাইজের ব্যাপারে সচেতন হতে অনুরোধ করছি। একটু সচেতন হলে আমাকে আবার কষ্ট করে আপলোড লিমিটার বসাতে হবেনা,আমি ইদানিং ব্যপক অলস হয়ে যাচ্ছি 🙂 🙂 ।
আর হ্যা,লেখাটা ভালো হয়েছে,আপনার লেখার ধরণ একটু অন্যরকম,পড়তে ভালোই লাগে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, ধন্যবাদ। আমি ছবি এডিট করে দিয়েছি–আশা করি এখন ঠিক আছে। আর হ্যা, আমার লেখা আপনার ভালো লাগে জেনে আনন্দিত হলাম। ভালো থাকবেন।
লেখাটা ভাল লাগল!
নারীদের প্রয়োজন তো বোধ হয় কোনদিনই থেমে যাবেনা! আমরা একেবারে শেষ পর্যন্তই তো থাকব মনে হয়!
অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি অনুন্নত দেশগুলিতে।অনেক সময় শিক্ষিত মেয়ে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সমাজে মাথা উচুঁ করে দাড়াঁতে পারে ।
অনেকেই পারেনা প্রতিকূল পরিবেশে!
@লাইজু নাহার, ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
আহা, আপনিও! আপনিও তবে বিবর্তনবাদীই :laugh:
যদিচ সমাজবিজ্ঞানীরা মোটেই বিজ্ঞানী নন, ন্যারেটর মাত্র, এবং কে না জানে মানুষের ন্যারেটিভ প্রবণতা ইদানিং কে জানে কেন প্রবল – তারপরও নিচের অংশটুকু নিতান্ত ন্যারেশন হিসেবে ধরলেও সমাজঅবিজ্ঞানীরা বলতে পারেন –
যেদিন থেকে মানুষ নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ভাবতে শুরু করলো সেদিনই নারী প্রথম নির্যাতিত হতে শুরু করলো – একথার মানে কী? “খুব কৌশলে পৃথিবীর প্রতিটা পুরুষকে” শাসক করে তুললো কে?
লেখাটা আরও গোছানো হতে পারতো। আপনার লেখার মূল বক্তব্য বোঝা গেলেও, বা সাহিত্য, ভাষা ইত্যাদি কীভাবে পুরুষতন্ত্রকে চলমান রাখতে সাহায্য করেছে সেগুলো উল্লিখিত হলেও – অনেক জায়গায় শুধুমাত্র বাক্যগঠনের দুর্বলতার কারণেই বক্তব্যও জোর হারিয়েছে।
‘অসমাপ্ত’ লেখা আছে, কিছু ব্যাপার পরে আলোচনা করবেন সেটাও লিখেছেন, কিন্তু –
এধরনের কথা বেশ ক্লিশেই শুধু নয়, আজকের পৃথিবীর জন্য অর্ধসত্য মাত্র। এখন নারী এবং পুরুষ উভয়েই পণ্য, নারী হয়তো অনেক অনেক বেশিদিন ধরে এবং বেশিমাত্রায় পণ্য, কিন্তু শ্রমবাজারে যে পতিতাবৃত্তির কথা আপনি বলছেন, সেটা অনেকাংশে পুরুষদের জন্যেও সত্যি।
আর, শ্রমবাজারের পরের লাইনটাতেই ‘মহিলাদের কাজই হচ্ছে যৌনসুখ প্রদান করা’ এটা পড়ে মনে হয় কর্মজীবি যে কোন মহিলাকেই পুরুষের যৌনসুখ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিকে থাকতে হয়!
@স্নিগ্ধা, আমি আসলে কি করে আপনার কমেন্টের জবাব দেব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার সাথে আমার কোনো দ্বিমত নেই। লেখাটি আজ দুপুরেই লিখলাম। আমাকে বিষয়টি নিয়ে আরো ভাবতে ও পড়তে হবে। আপনার মন্তব্য আমাকে নতুন করে ভাববার প্রণোদনা সৃষ্টি করেছে। আর ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করবো। আমার লেখা পড়ে এত সুন্দর একটি কমেন্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
@মোজাফফর হোসেন, :rose2: ভাইয়া ভালো লাগলো পড়তে। কিন্তু পুরুষ হিসেবে নারীদের নিয়ে মন্তব্য করা আমার সাহজ হয় না। কারণ মা’র কথা মনে পড়ে যায় -কতো যে একজন সাধাসিধে মনের নারী হতে পারেন চিন্তা করতে গিয়েই হোঁচট খেয়ে বসি। তবে একজন পুরুষ হিসেবে পুরুষতাবোধকে খুজেঁ পেয়েছি -কত শান্ত থেকে দূর্দান্ত পর্যন্ত হতে পারি, তা আমার ভালোই জানা হয়েছে। তবে আমি যা মনেকরি নারীদেরকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয়া যথাসাধ্য আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কর্তব্য ও বটে। নারীদেরকে উৎজীবিত করতে হবে যেনো এনারা নিজেদের কথা নিজেরা ব্যক্ত করেন -আর আমাদের পুরুষদের দায়িত্ব হওয়া উচিত যথাসম্ভব সাহায্য করা।
লেখাটা ভাল হয়েছে। কিন্ত মেয়েদের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট এবং কিছুটা আউটডেটেড । এঞ্জেলেসের ওই ফ্যামিলির উদ্ভব প্রবন্ধটি মর্গানের রূপকথার ওপর তৈরী যা আধুনিক নৃতত্ববিদরা মানেন না। তাছারা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কোন কালেই ছিল না। মাতৃতান্ত্রিক সমাজটাও রূপকথা। অনেকেই মনে করে অতীতের বাংলা সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক-কারন দেবীরা মাতৃ-কিন্ত সেটা কোন প্রমান না। বরং অতীতের নৃতাত্বিক প্রমান বলে, সমাজ বরাবরই পুরুষতান্ত্রিক ছিল।
অনুন্নত প্রযুক্তির যুগে পুরুষতান্ত্রিকতা সারভাইভাল স্ট্রাটেজির জন্যেই বিবর্তনের নিয়ম মেনে নির্বাচিত। সেই যুগে অধিক শিশুমৃত্যুর হারে জন্যে নারীর গর্ভে একাধিক সন্তানের দরকার হত-নইলে সেই সমাজের মৃত্যু ছিল অবিশ্যম্ভাবী। এবং নারী যাতে একাধিক সন্তানের জন্ম দিতে পারে-সব ধর্ম, সব সভ্যতা সেই ধরনের রক্ষনশীলতা নারীর ওপর আরোপ করেছে। এসব কিছুই বিবর্তনের ফলেই নির্বাচিত। উদার নারীবাদি সমাজ অনুন্নত প্রযুক্তিতে টিকতে পারত না।
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে, নারীবাদি সমাজ তৈরীর সুযোগ হয়েছে। অতীতে সেই সুযোগ ছিল না।
আর সাহিত্যের বা শিল্পের নায়িকা কেন সুন্দরী নগ্নিকা হবে?
কারন সাহিত্য বা শিল্পের টিকে থাকার একমাত্র উপায় ভাইরাল মিম। সেই ভাইরাল ব্যাপারটা আজকের বিজ্ঞাপন শিল্পেও দরকার। নগ্ন নারী ভাইরাল আকর্ষনের জন্ম দেয়, নগ্ন পুরুষ না। তাই সাহিত্য বা শিল্পে নগ্ন পুরুষ আছে-কিন্ত তা মাইক্রোস্কপিক।
@বিপ্লব পাল, ধন্যবাদ। আমি আসলে বিষয়গুলো জানতাম না, না জেনে লিখলে যা হয় আর কি ! তবে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি সাথে আপনাদের সহযোগিতা তো আছেই, দেখি ভিন্নভাবে চিন্তা করে। আমাকে আরো সময় দিতে হবে–পড়াশুনা শেষ করে বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করতে চাই। আমার প্রয়োজনে লাগতে পারে এমন কিছু বইয়ের নাম, যদি একটু কষ্ট করে, করেন আমার জন্য খুব ভালো হয়। আবারো ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
@বিপ্লব পাল,
“মাতৃতান্ত্রিক সমাজটাও রূপকথা।”
আমি মনে করি, আমার মত অনেক পাঠক আছেন যাদের ব্যাপক পড়াশুনার সুযোগ নেই। তো আমাদের মত পাঠকদেরকে কি একটু রূপকথার কাহিনী শুনাবেন। উপকৃত হবো। প্রযুক্তি কিভাবে নারীবাদী সমাজ ( মাতৃতান্ত্রিক আর নারীবাদী সমাজ কি অভিন্ন?) প্রতিষ্ঠা করবে, ব্যাখ্যা পেলে ভাল হয়।
আপনার প্রায় লেখায় প্রযুক্তির জয়জয়কার। প্রযুক্তির সংজ্ঞা ও কিভাবে এই প্রযুক্তি মানবজাতিকে রক্ষা করবে -এ নিয়ে যদি একটু আলোচনা করতেন,( ইতোমধ্যে যদি লিখে থাকেন, শুধু জানান দিলেই হবে – কোথায় গেলে পাবো তারে) খুব ভাল হতো। সেটি হয়তো এখানে সম্ভব নয়। এ নিয়ে একটি আলাদা লেখা হতে পারে। অপেক্ষায় রইলাম।
অদ্ভুত ভালো হয়েছে! অসাধারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি আপনার লেখনির সাবলিলতা মুগ্ধ করেছে আমাকে। Good job! :yes:
চলুক। এমন আরো ভালো লেখা আপনার কাছ থেকে পাবার প্রত্যাশায় রইলাম।
@নিটোল, ভালো লাগলো শুনে। অবশ্যই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ধন্যবাদ।
বেশ কিছুদিন যাবত মুক্তমনায় এসে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম, ২/১ টি লেখা ছেড়ে বাকি সবই আমার ব্রেন-রাডারের আওতার বাইরে ছিল। বহ্ভারম্ভের ক্রিয়া আমার মগজে বড়ই লঘুতে চলছিলো 😕 ।
কয়েকটি লেখা পড়ে মনে হয়েছিল মিঃ আল্লাচালাইনা’র পরিকল্পিত অনূর্ধ ১৬ ভাবসম্প্রসারণ প্রতিযোগিতা “যা বোঝ তাই লেখো” তে বসে যাই।
যা হোক, বাঁচালেন আমাকে। সরল ভাষায় কঠিন সত্যটা খুব ভাল উপলব্ধি হল। পর্ব হিসেবে লিখলে আরো খুশি হব। কথাগুলো হয়তো জানা, কিন্তু পুরোপুরি বোধগম্য হওয়ার আগ পর্যন্ত তার পৌনঃপুণিক আলোচনা জানার খুঁত দেখিয়ে দেয়।
ধন্যবাদ আপনাকে। :clap2:
@পাপিয়া চৌধুরী, দেখুন মুক্তমনার বোধহয় সবচেয়ে নবীনদের মধ্যে আমি একজন। এখানে অনেক ভালো ভালো লেখা পোস্ট করা হয়, তাই আমার লেখা ভালো লেগেছে শুনে যেমন খুব ভালো লাগে তেমনি খুব লজ্জাও লাগে। আর ভাষা সরল কারণ আমি কঠিন ভাষা জানি না, আমার ভাষাজ্ঞান ঐ পর্যন্তই–হা হা । তবে লেখাটি চলবে, এটা just ভূমিকা বলতে পারেন। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ধন্য হলাম। ধন্যবাদ।
অসাধারণ বিশ্লেষণ। :rose2:
( আবার পড়তে হবে।)
@সৈকত চৌধুরী, ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
মোজাফফর হোসেন,
লেখাখানী মনোযোগ সহকারে পড়লাম। আপনার লেখাখানী যথেষ্ঠ তথ্যবহুল।
নারী প্রাচীনকালে ছিল মুদ্রা, বর্তমান বিশ্বে পণ্য আর তৃতীয় বিশ্বে কাঁচামাল।
শুধু পুরুষদের দোষে লাভ নেই। পরিস্থিতির সমাধানের জন্য নারীদেরও অগ্রনী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। :rose:
@সুমিত দেবনাথ, অবশ্যই, নারীদের বড় শত্রু নারীরাই। তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে–ব্যাক্তি চিন্তার অবসান ঘটিয়ে সামগ্রিক চিন্তায় নিমগ্ন হতে হবে। ধন্যবাদ দাদা।
@মোজাফফর হোসেন,
দ্বিমত পোষণ করছি এবং আপনার মূল লেখার সাথে মন্তব্যটি খাপ খাচ্ছে না। নারীর শত্রু নারী পুরুষ নির্বিশেষে পুরুষতান্ত্রিক চেতনায় আচ্ছন্নরা।
বিঃদ্রঃতে নিজেকে শিক্ষানবিশ বলে দাবি করছেন , তবে আপনার শিক্ষার ( পড়ার) পরিসর যে বিস্তৃত তার ছাপ রয়েছে এ লেখায়। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
আপনার শিক্ষানবিশি অব্যাহত থাকুক।
@গীতা দাস, এত স্বল্প পরিসরে সব কিছু তুলে আনা সম্ভব নয়, আমি যে কাজটি শুরু করেছি এর তার ভূমিকা মাত্র। নারীদের শত্রু যে নারীরাও তা নিয়ে একটি বিস্তার আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মূলত আমি লেখাটিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে কাজ করছি :
ক. সভ্যতা ও নারী
খ. মহাপুরুষ ও নারী
গ. পুরুষতন্ত্র, ধর্ম, পুঁজিবাদ ও নারী
ঘ. সাহিত্য ও নারী
ঘ. ধর্ম ও নারী
ঙ. নারীর জন্য নারী
চ. ইসলাম ও নারী (ইসলামে নারীর সৃষ্টি, ইসলামে নারী অধিকার, বহু বিবাহ, পরকালের ব্যাখ্যা, পর্দা ও মুসলিম সমাজে নারী)
ছ. হিন্দু ধর্ম (হিন্দু ধর্মে নারীর ব্যাখ্যা, মনুর নারী বিধান, হিন্দু সমাজে নারী)
ধন্যবাদ আবারো।
@মোজাফফর হোসেন,
লেখাগুলোর জন্য অপেক্ষায় রইলাম।