রোকেয়াঃ অন্য আলোয় দেখা
মুক্তমনায় স্বাক্ষর শতাব্দের বেগম রোকেয়াঃ পুনপাঠ আবশ্যক নামে চমৎকার একটি চিন্তা-জাগানিয়া প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রবন্ধে গত রাতে একটি মন্তব্য করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মাত্রা এবং পরিমিত জ্ঞানের অভাবে সেই মন্তব্য এমনই বিশাল আকার ধারণ করলো যে ওখানে আর দেওয়াটা সঠিক হবে কি না বুঝতে পারলাম না। প্রবন্ধের চেয়ে মন্তব্য যদি তিনগুণ বড় হয় তাইলে ক্যামনে হয়? সে কারণেই এটাকে আলাদা লেখা হিসাবে পোস্ট করলাম। রোকেয়ার সঠিক মূল্যায়ন হোক এ বিষয়ে যেহেতু স্বাক্ষর আর আমার মধ্যে কোনো মতের অমিল নেই, সেহেতু আশা করছি যে স্বাক্ষর এতে কিছু মনে করবেন না। ।
বেগম রোকেয়ার সম্পূর্ণ রচনাবলী, তাঁর ধ্যান-ধারণা ইত্যাদি সম্পর্কে না জেনেই আমরা তাঁকে অনেক বিশেষণে ভূষিত করে রেখেছি। তাঁর একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে আমাদের মনে। কিন্তু আসলে তিনি কী ছিলেন সে সম্পর্কে আমাদের আসলে যথাযথ কোনো ধারণাই নেই। তিনি কি ছিলেন নারীবাদী? নাকি পুরুষতন্ত্রের নিগড়েই বাঁধা ছিলেন? ছিলেন কি নারী শিক্ষার অগ্রদূত? নাকি পুরুষদের জন্য শিক্ষিত স্ত্রী তৈরিতে নিয়োজিত ছিলেন তিনি? ছিলেন কি ধর্মের কঠোর সমালোচক? নাকি ছিলেন ধর্মবাদী? ছিলেন কি বিপ্লবী? নাকি ছিলেন একজন আপোষকামী সমাজকর্মী? পুরুষতন্ত্রের বাঁধানো ছকের মধ্যেই ছুটোছুটি করেছেন তিনি? এর বাইরে যাবার সাহস তাঁর হয় নি?
বেগম রোকেয়ার মূল্যায়ন সবচেয়ে ভালভাবে করেছেন দুজন ব্যক্তি। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন হুমায়ুন আজাদ। তিনি তাঁর ‘নারী’ গ্রন্থের পুরুষতন্ত্র ও রোকেয়ার নারীবাদ অধ্যায়ে বেগম রোকেয়াকে নারীবাদী হিসাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছেন। প্রশংসার এমন কোনো বিশেষণ নেই যা প্রয়োগ করেন নি। পুরুষতন্ত্রের সাথে বাধ্য হয়ে সামান্য কিছু সন্ধির বিষয়কে উপেক্ষা করে তাঁর চোখে বেগম রোকেয়া ছিলেন পৃথিবীর এক শ্রেষ্ঠ নারীবাদী। পিতৃ ও পুরুষতন্ত্রকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করে রোকেয়া একে বিপর্যস্ত করে রেখে গেছেন বলেই তিনি মনে করেছেন। তিনি রোকেয়াকে মুল্যায়ন করেছেন এভাবেঃ
রোকেয়া পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে চালিয়েছিলেন সার্বিক আক্রমণ। তিনি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছেন পুরুষতন্ত্রের তৈরি নারী ও পুরুষের ভাবমূর্তি, বর্জন করেছেন নারীপুরুষের প্রথাগত ভূমিকা; তুলনাহীনভাবে আক্রমণ করেছেন পুরুষতন্ত্রের বলপ্রয়োগসংস্থা ধর্মকে। রোকেয়া পরে ধর্মের সাথে কিছুটা সন্ধি করেছেন আত্মরক্ষার জন্যে; নইলে তাঁকে ও তাঁর আদর্শকে অত্যন্ত বিপন্ন করে তুলতো মুসলমান পিতৃতন্ত্র। তিনি এমন এক পিতৃতন্ত্রের সদস্য ছিলেন, যেখানে পুত্র মাকে শেখায় সতীত্ব।
অন্যজন হচ্ছেন হুমায়ুন আজাদেরই সুযোগ্য ছাত্রী আকিমুন রহমান। তিনি তাঁর বিবি থেকে বেগম গ্রন্থের স্বামীর ছাঁচে বিকশিত প্রতিভারা অধ্যায়ে বেগম রোকেয়া, নূরন্নেছা খাতুন, সুফিয়া কামালদের মত নারীবাদীদের তুলোধুনো করে ছেড়েছেন। তাঁর কাছে রোকেয়া স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ এক নারী, পুরুষতন্ত্রের জুতোয় পা ঢোকানো নারী ছাড়া আর কিছু নয়। নিজস্ব ভাবনায় স্বাধীনভাবে রোকেয়ার চিন্তাভাবনা পাখা মেলে নি, বরং স্বামীর ছাঁচেই নিজেকে নিরন্তর গড়ে তুলেছেন তিনি। আকিমুন রহমানের ভাষ্যতেইঃ
সীমাহীন স্ববিরোধ ও পুরুষতন্ত্রের প্রথা মান্য করার অন্য নামই হচ্ছে রোকেয়া। নারীর জীবন গড়ে তোলার কাজে নিবেদিত এক ব্রতী বলে মান্য হন রোকেয়া, তবে তাঁর নিজের জীবনকে নিজের ইচ্ছেমতো কাঠামো দেবার শক্তি ও ইচ্ছেই তাঁর মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। তাঁর নিজের জীবনই তাঁর নিজের তৈরি নয়। রোকেয়া নারীপ্রতিভা হিশেবে নন্দিত; রোকেয়া প্রতিভা ঠিকই, তবে স্বামীর ছাঁচে বিকশিত প্রতিভা। তিনি অভিজাত পুরুষতন্ত্রের কুপ্রথা ও অবরোধ পীড়নের বিরুদ্ধে মুখর, আর নিজের জীবনে অতিনিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন পতিপ্রভুর পরিয়ে দেওয়া শৃঙ্খল; আমৃত্যু নিয়ন্ত্রিত হন একটি শবদেহ দ্বারা। তাঁর বিবাহিত জীবন স্বল্পকালের, বৈধব্যের কাল দীর্ঘ; স্বল্প বিবাহিত জীবন কাটে তাঁর মহাপাথরের বন্দনায় আর দীর্ঘ বৈধব্যের কাল কাটে মৃতি পতির তৈরি করে রেখে যাওয়া ছক অনুসারে। রোকেয়া বাঙালি মুসলমান নারীর জাগরণের জন্যে লিখে যান জ্বলাময়ী প্রবন্ধ আর নিজের জীবনে অনড় করে রাখেন অন্ধকার ও প্রথার মহিমা। রোকেয়া আদ্যপান্ত স্ববিরোধিতাগ্রস্ত। রচনায় তাঁর ক্ষোভ ও বক্তব্য বেজে ওঠে; ব্যক্তিজীবনে তিনি যাপন করেন প্রথাগ্রস্ত, বিনীত, মান্য করে ধন্য হয়ে যাওয়া জীবন। তাই তাঁর রচনাবলী থেকে চোখ ফিরিয়ে তাকানো দরকার তাঁর জীবনের দিকে; তবেই স্পষ্ট হয় উঠবে তাঁর সত্য পরিচয় ও ভূমিকা। রোকেয়া আমূল নারীবাদী শুধু কোনো কোনো বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশে, নতুবা জীবনাচরণে ও বিশ্বাসে রোকেয়া অতি প্রথা মান্যকারী স্ববিরোধিতাগ্রস্ত পতিপ্রভুর চিরবাধ্য ও অনুগত এক বিবি ছাড়া আর কিছু নয়।
মুক্তমনার ব্যানারে রোকেয়ার ধর্মগ্রন্থগুলো যে সব পুরুষরচিত এরকম একটি অসাধারণ উক্তি রয়েছে।
যখনই কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। আমরা প্রথমতঃ যাহা মানি নাই, তাহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগন ……ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষরচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।
এই লাইনগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে পড়লে রোকেয়াকে অগ্রসর চিন্তাভাবনার একজন যুক্তিবাদী মানুষ হিসাবে না ভাবাটাই অনুচিত। অথচ সেই একই রোকেয়া যখন বলেন যে প্রাথমিক শিক্ষা বলে যা কিছু শিক্ষা দেওয়া হয় তা কোরানেই আছে তখন বড়সড় ধাক্কাই খেতে হয়। মুসলমান বালিকাদের কোরান শিক্ষা দেওয়া সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করতেন। বঙ্গীয় নারী-শিক্ষা সমিতির অভিভাষণ এ রোকেয়া বলেনঃ
মুসলমান বালিকাদের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে কোরান শিক্ষাদান করা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজন। …. আপনারা কেহ মনে করিবেন না যে, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কোরান শিক্ষা দিতে বলিয়া আমি গোঁড়ামীর পরিচয় দিলাম। তাহা নহে, আমি গোঁড়ামী হইতে বহু দূরে। প্রকৃত কথা এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা বলিতে যাহা কিছু শিক্ষা দেওয়া হয়, সে সমস্ত ব্যবস্থাই কোরানে পাওয়া যায়।
রোকেয়া যতই বলুক না কেন যে তিনি গোঁড়ামী হইতে বহু দূরে, আমরা কিন্তু ঠিকই তাঁর মধ্যে একজন গোঁড়া মুসলমানকে দেখে ফেলি। কোরান পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, মোল্লাদের এই ধারণার সাথে রোকেয়ার অসম্ভব মিল খুঁজে পেয়েও বিস্মিত হই আমরা।
পুরুষ লোক যে আই এ, বি এ পাশ বউ চায় এ ধরনের বিকৃত রুচির পিছনেও তিনি বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষাকে দায়ী করেছেন। ধ্বংসের পথে বঙ্গীয় মুসলিম অভিভাষণে তিনি বলেনঃ
কোন ভদ্রলোক বায়না ধরেছেন যে আই এ পাশ পাত্রী চাই। কেউ চান অন্তত ম্যাট্রিক পাশ, তা না হলে তারা খ্রীস্টান বা ব্রাক্ষ্ম হয়ে যাবেন। এসব বিকৃত রুচির প্রধান কারণ বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষা।
তবে এই সব ধর্মহীন বিকৃত লোকেরা যাতে হাতছাড়া না হয়ে বিদুষী ভার্যার হাতে পড়ে পাক্কা মুসুল্লী হয়ে ওঠেন সেই ব্যবস্থা করার জন্য তিনি নারীদের উপদেশ দেন।
উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত ভদ্রলোকের ঘরে এখন “এম এ পাশ” বউ না হলে আলো হয় না। কিন্তু এজন্যে সে বেচারাদের গালাগালি না দিয়ে বরং যাতে তাঁরা আমাদের হাতছাড়া না হন, তারই ব্যবস্থা করতে হবে। আমার আরো জানা আছে যে, অনেক বিকৃত-মস্তিষ্ক ধর্মহীন লোক উপযুক্তা বিদুষী ভার্যার হাতে পড়ে শুধরে গিয়ে চমৎকার পাকা মুসুল্লী হয়েছেন।
এই রকম পশ্চাদপদ চিন্তাভাবনা মনে হয় আজকালকার অশিক্ষিত মহিলারাও করে থাকেন। এই হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর অন্যতম সেরা নারীবাদীর ভাবনা। কাজেই ‘তার উদ্দেশ্য আর যাই হোক ভারতীয় মুসলমানের জন্য “শিক্ষিতা বউ” তৈরী করা ছিল না’ স্বাক্ষরের এই কথার সাথে রোকেয়ার ভাবনার একেবারেই মিল পাওয়া যায় না।
পুরুষদের শুধু পাক্কা মুসুল্লী বানিয়েই থেমে থাকেন নি রোকেয়া। আদর্শ মুসলিম বিদ্যালয় গড়ে নারীদেরকেও আদর্শ মুসলিম নারীতে গঠন করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি। আর তাঁদের মিলনে জন্ম দিতে চেয়েছেন সেইসব সন্তান-সন্ততিদের যারা হবে হযরত ওমর ফারুক আর হযরত ফাতেমা জোহরার মতোই পুন্যবান, ধার্মিক।
ফলকথা উপরোক্ত দুরবস্থার একমাত্র ঔষধ- একটি আদর্শ মুসলিম বালিকা বিদ্যালয়….. আদর্শ মুসলিম বালিকা বিদ্যালয়ে আদর্শ মুসলিম নারী গঠিত হবে – যাদের সন্তান-সন্ততি হবে হযরত ওমর ফারুক, হযরত ফাতেমা জোহরার মতো।
এই যদি হয় সুলতানার স্বপ্ন, আর এই স্বপ্ন সত্যি হলে বঙ্গদেশ যে একটি তালেনবানি রাষ্ট্রে পরিণত হতো সে বিষয়ে নিশ্চয়ই কারো সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়।
রোকেয় শুধু নারীদেরকে শিক্ষিত পুরুষদের জন্য শিক্ষিত বউই হতে বলেন নি, তাদেরকে সুগৃহিনী হবারও উপায় বাতলে দিয়েছেন। পুরুষতন্ত্র নারীদের যে কয়েকটি ভূমিকা পালনে বাধ্য করে তার মধ্যে এটি অন্যতম। অথচ রোকেয়ার ধারণা ছিল যে নারীরা সুগৃহিনী হবার জন্য প্রবলভাবে ইচ্ছুক। কিন্তু কেউ-ই এখন পর্যন্ত সুগৃহিনী হতে পারে নি কারণ এর জন্য যে বিশেষ গুণের প্রয়োজন তা তারা অর্জন করতে পারে নি। নারীদের সুশিক্ষা অর্জন যে শুধুমাত্র সুগৃহিনী হবার নিমিত্তেই সে কথা বলতে তিনি ভোলেন নি।
বেশ কথা। আশা করি আপনারা সকলেই সুগৃহিণী হইতে ইচ্ছা করেন, এবং সুগৃহিণী হইতে হইলে যে যে গুণের আবশ্যক, তাহা শিক্ষা করিতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করিয়া থাকেন। কিন্তু আজ পর্য্যন্ত আপনাদের অনেকেই প্রকৃত সুগৃহিণী হইতে পারেন নাই। কারণ আমাদের বিশেষ জ্ঞানের আবশ্যক, তাহা আমরা লাভ করিতে পারি না। সমাজ আমাদের উচ্চশিক্ষা লাভ করা অনাবশ্যক মনে করেন। পুরুষ বিদ্যালাভ করেন অন্ন উপার্জ্জনের আশায়, আমরা বিদ্যালাভ করিব কিসের আশায়? অনেকের মত আমাদের বুদ্ধি বিবেচনার প্রয়োজন নাই। যেহেতু আমাদিগকে অন্নচিন্তা করিতে হয় না, সম্পত্তি রক্ষার্থে মোকদ্দমা করিতে হয় না, চাকরীলাভের জন্য সার্টিফিকেট ভিক্ষা করিতে হয় না, “নবাব” “রাজা” উপাধিলাভের জন্য স্বেতাঙ্গ প্রভুদের খোসামোদ করিতে হয় না, কিংবা কোন সময়ে দেশরক্ষার্থে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে হইবে না। তবে আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ (অথবা Mental culture) করিব কিসের জন্য? আমি বলি, সুগৃহিণী হওয়ার নিমিত্তই সুশিক্ষা (Mental culture) আবশ্যক।
সুগৃহিনীদের ঘরকন্নার কাজগুলোর তালিকা এবং সেই সাথে সাথে এগুলোকে সফল করার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন তিনি। আসুন দেখি রোকেয়া বর্ণিত সুগৃহিনীদের ঘরকন্নার তালিকাগুলো কী কী।
ঘরকন্নার কাজগুলি প্রধানতঃ এই-
(ক) গৃহ এবং গৃহসামগ্রী পরিস্কার ও সুন্দররূপে সাজাইয়া রাখা।
(খ) পরিমিত ব্যয়ে সুচারুরূপে গৃহস্থালী সম্পন্ন করা।
(গ) রন্ধন ও পরিবেশন।
(ঘ) সূচিকর্ম্ম।
(ঙ) পরিজনদিগকে যত্ন করা।
(চ) সন্তানপালন করা।
পুরুষবাদী পুরুষেরাও মনে হয় না এরকম নির্লজ্জভাবে মেয়েদের ঘরকন্নার তালিকা তৈরি করে হাতে ধরিয়ে দেবে। সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সুগৃহিনী হওয়ার জন্য মেয়েদের উদ্দেশ্যে সবশেষে তিনি বলেছেনঃ
যদি সুগৃহিণী হওয়া আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য হয়, তবে স্ত্রীলোকের জন্য সুশিক্ষার আয়োজন করিবেন।
রোকেয়ার মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার সবচেয়ে প্রকট রূপ দেখা যায় তাঁর ‘বোরকা’ প্রবন্ধে। হুমায়ুন আজাদ রোকেয়াকে তাঁর এই অসুস্থ চিন্তার জন্য বেশি কিছু বলেন নি। এটাকে পিতৃতন্ত্রের সাথে কিছুটা মিটমাটের উদাহরণ হিসাবে বলে চালিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আকিমুন রহমান এই মধ্যযুগীয় ভাবনাকে দেখেছেন রোকেয়ার পুরুষতন্ত্রের নানা মাপের প্রভুর ধ্যান-ধারণা বিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হিসাবে। বোরকা যে মধ্যযুগীয় পিতৃতন্ত্র নারীর উপর চাপিয়ে দিয়েছে সেটাকে রোকেয়া অস্বীকার করেছেন অথবা বুঝতে পারেন নি। যে রোকেয়া অবরোধবাসিনীদের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেছেন তিনিই পর্দার স্বপক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বোরকাকে উন্নতির পথে বাধা হিসাবে দেখেন নি। বোরকা পরা নিয়ে তাঁর সমালোচনা করায় উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেনঃ
তাঁহারা প্রায়ই আমাকে বোরকা ছাড়িতে বলেন। বলি, উন্নতি জিনিসটা কি? তাহা কি কেবল বোরকার বাহিরেই থাকে? যদি তাই হয় তবে বুঝিবে যে জেলেনী, চামারনী, কি ডুমুনী প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা আমাদের অপেক্ষা উন্নতি লাভ করিয়াছে।
রোকেয়া তাঁর মধ্যযুগীয় মানসিকতায় বুঝতে অক্ষম হয়েছে যে তাঁর মত শিক্ষিত মহিলার চেয়েও মানসিকভাবে ওই সমস্ত জেলেনী, চামারনী আর ডুমুনীরা এগিয়ে ছিলেন সমাজে। তাঁরা অন্তত বোরকার আড়ালে লুকোতে চায় নি শিক্ষিত নারীদের মত উন্নতির কথা বলে। সমমর্যাদা আদায় করে নিয়েই পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করে গিয়েছেন তাঁরা।
পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি যে মহিলাদের দায় এই পুরষবাদী মানসিকতা থেকেও উত্তরণ ঘটে নি রোকেয়ার। ফলে, বোরকার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে এর থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে এটাই ছিল তাঁর প্রস্তাবনা। এর জন্য সারা শরীর মুখ ঢাকা বোরকা পরে কুৎসিত জীব হতেও তাঁর আপত্তি ছিল না।
রেলওয়ে প্লাটফর্মে দাঁড়াইয়া কোন সম্ভ্রান্ত মহিলাই ইচ্ছা করেন না যে, তাঁহার প্রতি দর্শকবৃন্দ আকৃষ্ট হয়। সুতরাং ঐরূপ কুৎসিত জীব সাজিয়া দর্শকের ঘৃণা উদ্রেক করিলে কোন ক্ষতি নাই। … রেলওয়ে ভ্রমণকালে সাধারণের দৃষ্টি (public gaze) হইতে রক্ষা পাইবার জন্য ঘোমটা কিম্বা বোরকার দরকার হয়।
এই রকম বক্তব্য যদি কোনো মহিলা বা পুরুষ বর্তমান যুগে এসে গীতা দি বা তসলিমা নাসরীনের সামনে করতো তাহলে কি দশা হতো সেটাই ভাবছি আমি। কোনো নারীবাদী বা নারী মুক্তির অগ্রদূতের কণ্ঠ নয়, যেন শুনছি ছাত্রী শিবিরের কোনো সক্রিয় সদস্যার কথা।
পর্দা করার ক্ষেত্রে অন্যায় পর্দা আর আবশ্যকীয় পর্দার এক হাস্যকর পার্থক্যও করেছেন রোকেয়া। পুরুষের চাপানো পর্দাতে আপত্তি তাঁর, সেটা অন্যায় বলে। আবার নিজের ইচ্ছাতে তিনি পর্দা করতে চান, বোরকার আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখতে চান সেটাকে আবশ্যিক বলে। বোরকা পরে চলাফেরায় কোনো অসুবিধা হয় না বলেই তিনি মনে করেন। বোরকাকে তিনি কিছুতেই ছাড়বেন না বলে রীতিমত ঘোষণাই দিয়েছেন তিনি।
আমরা অন্যায় পর্দা ছাড়িয়া আবশ্যকীয় পর্দা রাখিব। প্রয়োজন হইলে অবগুণ্ঠন (ওরফে বোরকা) সহ মাঠে বেড়াইতে আমাদের আপত্তি নাই। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে শৈলবিহারে বাহির হইলেও বোরকা সঙ্গে থাকিতে পারে। বোরকা পরিয়া চলাফেরায় কোন অসুবিধা হয় না।
এই রকম শৃঙ্খল আকাঙ্খী পর্দানশীন নারীবাদী থাকলে পুরুষবাদীদের আর কোনো চিন্তা আছে কি?
বোরকা ছাড়াতো বহু দূরের কথা। এর প্রেমে এমনই মশগুল তিনি যে একে আরো কীভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং কারুকার্যময় করা যায় সে বিষয়েও তাঁর চিন্তার কমতি নেই।
সচরাচর বোরকার আকৃতি অত্যন্ত মোটা (Coarse) হইয়া থাকে। ইহাকে কিছু সুদর্শন (Fine) করিতে হইবে। জুতা কাপড় প্রভৃতি যেমন ক্রমশ উন্নতিপ্রাপ্ত হইয়াছে, সেইরূপ বোরকারও উন্নতি প্রার্থনীয়।
রোকেয়ার প্রার্থনা যে কাজে লেগেছে সেটা এখন ঢাকায় রঙ-বেরঙের কারুকার্যময় বোরকা পরিহিত মহিলাদেরকে দেখলেই বোঝা যায়।
পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, পুরুষতন্ত্রের শেকল ভাঙার চেয়ে এটাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পায়ে নুপুর হিসাবে পড়তে রোকেয়ার কোনো আপত্তিই ছিল না। রোকেয়ার এই শৃঙ্খল আকাঙ্খাকে তীক্ষ্ণভাবে বিদ্রুপ করেছেন আকিমুন রহমান।
রোকেয়া শৃঙ্খল মোচনের যোদ্ধা নন; নানারকম শৃঙ্খল নানাভাবে জড়িয়ে নেয়ার পরামর্শদাতা তিনি। বশীভূত আপোষকামী অ চিরমান্যকারী বলেই শেকলসহ কতো স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করা যায় তা তিনি জানান ও অন্যদের স্বচ্ছন্দে চলাফেরা শেখার জন্যে অনুশীলন করতে বলেন। শেকল নিয়ে তাঁর কোনো ক্ষোভ নেই, তবে শেকলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যে তাঁর বেশ মাথাব্যথা আছে। তিনি চান শেকল থাকুক, কিন্তু ওই শেকল হয়ে উঠুক আরো সুদর্শন।
স্বাক্ষর রোকেয়াকে বিপ্লবী বলেছেন। কিন্তু আমার কাছে রোকেয়াকে বিপ্লবীতো অনেক দূরের কথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে নিজের ভূমিকা সম্পর্কেই সচেতন ছিলেন না কি না সে বিষয়েই সন্দেহ জাগে। যে সমাজকে ভাঙতে চাচ্ছেন নারীর জন্য অশুভ সমাজ বলে, সেই সমাজেরই অশুভ নীতিমালাকে গলায় মালা করে গলাবাজি করছেন তিনি। অবরোধবাসিনীদের নিয়ে লিখেছেন, আবার নিজেই বোরকার আড়ালের অবরোধকে প্রমোট করার চেষ্টা করেছেন। এত বেশি স্ববিরোধী আচরণ করেছেন তাঁর কথা এবং কাজের যে, সত্যি সত্যি তিনি কি চেয়েছিলেন সে বিষয় নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ রয়েছে। তাঁর রচনা যে বিভ্রান্তি তৈরি করে সেই বিভ্রান্তি দূর না করেই আমরা তাঁকে নারী মুক্তির অগ্রসেনানী হিসাবে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছি। অন্য নারীদের মুক্তিতো অনেক দূরের কথা, নিজেই নিজের সঠিক মুক্তি খুঁজতে তিনি পেরেছিলেন কি না সেটা নিয়েইতো সংশয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী মুক্তিতে বরং ক্ষতিকর ভূমিকাই রেখেছেন তিনি। পুরষতন্ত্রের শেখানো বুলিকেই নারীবাদের ছদ্মমোড়কে নারীর সামনে পরিবেশন করেছেন তিনি।
স্বাক্ষরের সাথে একমত যে রোকেয়ার পুনঃপাঠ একান্ত আবশ্যক। রোকেয়া যেহেতু প্রচুর স্ববিরোধিতা করেছেন তাঁর রচনাবলীতে এবং এই স্ববিরোধিতা তাঁর জীবনাচরণেও স্পষ্ট, সে কারণে নারী মুক্তি এবং নারীবাদের ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থানকে সুস্পষ্ট করার জন্য পুনঃপাঠ ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই। পুনঃপাঠের মাধ্যমেই হয়তো পুনর্মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে রোকেয়াকে। তাঁকে ঘিরে যে সব মিথ গড়ে উঠেছে সেগুলোকে সরিয়ে দিয়েই তার আড়াল থেকে আবিষ্কার করা যাবে আসল রোকেয়াকে।
তথ্যসূত্রঃ
১। নারী – হুমায়ুন আজাদ
২। বিবি থেকে বেগম – আকিমুন রহমান
৩। রোকেয়া রচনাবলী
মুক্ত-মনা এডমিন এ লেখায় মন্তব্য অপসন এখন বন্ধ করে রাখলে আমার মতে ভাল হয়।
@ রৌরব,
(অযাচিত কিছু তথ্য দিচ্ছি)
আকিমুন রহমান-এর ‘বিবি থেকে বেগম’ ছাড়াও আরো কিছু রচনা রয়েছে।
যেমন:
পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে।
জীবনের রৌদ্রে উড়েছিল কয়েকটি ধূলিকণা।
রক্ত পুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি।
আকিমুন রহমানের ‘বিবি থেকে বেগম’ বইটি বিতর্কসৃষ্টিকারী প্রবন্ধ গ্রন্থ।
আকিমুন রহমান তসলিমা নাসরিনের চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড়।
@মাহফুজ,
সব নতুন তথ্যই যাচিত 🙂
এ মুহুর্তে এগুলো পড়া হয়ে উঠবে না, তারপরও অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখাটির আলোচনা মনে হয় ক্রমশঃ বাঁকা পথে চলে যাচ্ছে। যদিও লেখাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ( অন্ততঃ আমার কাছে শিরোনাম দেখে তাই মনে হয়েছে), ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে রোকেয়াকে পর্যালোচনা (এ ধরণের পর্যালোচনা পাশ্চাত্য বিশ্বে সবাইকে নিয়েই কম বেশি হয়), কিন্তু ঘটনা এমন হয়েছে যে রোকেয়া নারী বিদ্বেষী কিনা, প্রগতিবিরোধি কিনা – এ সমস্ত অবান্তর জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। আমি অন্ততঃ রোকেয়াকে কখনোই প্রগতিবিরোধি ভাবতে পারি না। তার সময়ের তুলনায় তিনি সত্যই অগ্রসর ছিলেন কিনা কিংবা সত্যই তিনি পুরুষতন্ত্রের সাথে আপোষ করেছিলেন কিনা এ প্রশ্ন উঠতে পারে – কিন্তু তাকে কখনোই নারীর শত্রু বলা যাবে না। তিনি নারী শিক্ষা প্রসারে যথাসাধ্য করেছিলেন (যদিও তার জীবদ্দশায় তার স্কুলের জন্য মাত্র দু’জন ছাত্রী তিনি যোগাড় করতে সমর্থ হয়েছিলেন), তারপরেও সমাজ সংস্কার আর মুসলিম নারীদের শিক্ষার প্রসারে রোকেয়াকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এছাড়াও তিনি সুলতানার স্বপ্ন, নারীস্থানের মত কালজয়ী রচনা উপহার দিয়েছিলেন, যার তুলনা সে সময়ে মেলা ভার। সব কিছু যদি বাদও দেই কেবল এই একটি উক্তির জন্যই রোকেয়াকে আজীবন মনে রাখা যায় 🙂 –
যখনই কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। আমরা প্রথমতঃ যাহা মানি নাই, তাহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগন ……ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষরচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।
কিন্তু তারপরেও রোকেয়ার কিছু স্ববিরোধিতা সত্যই ছিল। তার রচনাবলীর ছত্রে ছত্রে তার প্রমাণ আছে। সেগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে তো আলোচনা করা যেতেই পারে। সেজন্য কি হা রে রে রে করে তেড়ে আসতে হবে নাকি? 🙂 একজন তো উপরে দেখলাম উত্তাপ সামলাতে তাকে মুহম্মদের কাতারে বসিয়ে দিলেন – বাস্তবদর্শি প্রমাণ করতে (এতে রোকেয়ার সম্মান বাড়ল না কমল তা অবশ্য তিনিই ভাল জানেন)। ‘বাস্তবতা বিবর্জিত চিন্তা কখনো সফল হয় না’ বলে উপদেশও কপচানো হল এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে – সবাই কেবল ছকের মধ্যে থেকেই চিন্তা যেন করেন, ছকের বাইরে গেলে তারা ‘কখনো সফল হবেন না’। তাই? আসুন দেখি পশ্চিমে ছকে বাঁধা চিন্তা থেকে কি বেরিয়েছিল। ১৭৯১ সাধারণ এক তরুণী ওলস্টোনক্র্যাফট মাত্র ছ-সপ্তাহে লিখেছিলেন ভিন্ডিকেশন অব দি রাইটস অব ওমেন নামক এক ভয়ঙ্কর বই। সে বই ছিল সম্ভবত ফরাসী বিপ্লবের চেয়েও বেশী বিপ্লবাত্মক। এই এক বই লিখেই রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্রের কাছে হয়ে উঠেন এক ঘৃন্য নাম, যে ঘৃনার ক্রমাগত উদগীরন ঘটেছিলো বইটি বেরুবার দুশ বছর ধরে পুরুষতান্ত্রিক ‘পবিত্র’ মুখ দিয়ে। জীবদ্দশায় মেরি কোন স্বীকৃতি পাননি, পেয়েছেন কুৎসা, ঘৃণা আর পুরুষতান্ত্রিক গালিগালাজ। কারণ এই বইয়ের মাধ্যমেই প্রথমবারের মত একজন নারী পুরুষতন্ত্রের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েদিয়েছিল তাদের হিপোক্রিসিগুলো, সমাজের অসঙ্গতিগুলো। এই প্রথম একজন নারী দাবী নিয়ে এলেন যে, নারী মানুষ, নারী কোন যৌনপ্রাণী নয়, তাকে দিতে হবে স্বাধীকার। ওলস্টোনক্র্যাফট যখন বইটি লিখেছিলেন, তখন নারীদের ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিলো না, ক্রীতদাস প্রথা বলবৎ ছিল পুরোমাত্রায়। মেয়েদের দেখা হত ‘অনিচ্ছুক প্রসবযন্ত্র’ আর ‘গৃহদাসী’ হিসেবে। ছক-ওয়ালাদের কথা শুনলে ওলস্টোনক্র্যাফট ভিন্ডিকেশন অব দি রাইটস না লিখে লিখতেন – ‘সুগৃহিনী হইবার ১০১টি উপায়’। তাতে কি পশ্চিমা সমাজ এগুতো?
সমাজ আসলে বহু সময়ই ছকে বাঁধা চিন্তা থেকে এগোয়নি, বরং এগিয়েছে যারা প্রথার বাইরে চিন্তা করতে পেরেছেন। শুধু সমাজ নয়, জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। টলেমীর ‘পৃথিবী-কেন্দ্রিক’ ছকে বাধা চিন্তা কোপার্নিকাস আর গ্যালেলিওরা বাদ দিতে পেরেছেন বলেই টলেমীর মতবাদ একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। হাটন আর লায়েলরা ৬০০০ বছরের পুরনো পৃথিবীর বয়সের ছকে বাধা চিন্তা নিয়ে অহর্নিশি না পড়ে থেকে বিন্ন ভাবে চিন্তা করতে পেরেছেন বলেই মিথ্যা বিশ্বাসকে সরাতে পেরেছিলেন মানুষের মন থেকে। ছকে বাধা চিন্তায় আপ্লুত থাকলে আইন্সটাইন নিউটোনীয় বলবিদ্যার বাইরে গিয়ে আপেক্ষিক তত্ত্ব বানাতে পারতেন না, চোখ বুজে ছক নিয়ে পড়ে থাকলে পৃথিবী এখনো সমতলই থাকতো – ধর্মবাদীদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে যেমনতি লেখা আছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও সমাজের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই সেটা বুঝতে চাই না। ছকে বাধা চিন্তাকেই ‘বাস্তবদর্শি’ আখ্যায়িত করে এর সাফাই গাইতে থাকি।
আরেকজন ভদ্রলোক দেখলাম বাংলাপেডিয়া থেকে রোকেয়া অংশ এনে তুলে দিয়েছেন – রোকেয়া সম্বন্ধে কি কি ভাল কথা লেখা হয়েছে। বলা বাহুল্য বাংলাপেডিয়ার লেখাটির একটা লাইন থেকেও নতুন কিছু পাওয়া গেল না। সেই একই কথা – কত মহীয়সী, কত ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী, কত মুক্তচিন্তা করেছেন, কত বিরল ব্যক্তিত্ব। তাহলে আলোচনা সমালোচনা বাদ দিয়ে কেবল বংলাপেডিয়াই কোলে করে বসে থাকি, আর কে কত বিরল ব্যক্তিত্ব তার উপাধি গলায় ঝুলিয়ে দেই। আমি নিশ্চিত, আমাদের চেনা যে কোন ‘মহাপুরুষ’ নিয়ে প্রবন্ধ খুঁজলে সেরকম ‘ছকে বাধা’ লেখাই বাংলাপেডিয়ায় পাওয়া যাবে যা সংখ্যাগরিষ্টরা পছন্দ করেন। বঙ্গবন্ধু, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ যেই হোক না কেন। একগাদা গুনগান গেয়ে তাদের অবদান ‘চির অম্লান’ বলে শেষ করে দেয়া হবে। তাহলে ভিন্ন কথা শুনবো কি করে? 🙂
রোকেয়ার এই একটিমাত্র লেখায় এবং মন্তব্যে রোকেয়ার জীবন এবং লেখা নিয়ে যে বৈচিত্রময় দিকগুলো উদ্ভাসিত হয়েছে, আমার মনে হয় না এর আগে আর কোথাও এমনিভাবে তা উঠে এসেছে। মুক্তমনা ব্লগ বলেই এটা সম্ভব হয়। অন্যত্র সব জায়গাতেই পছন্দের মানুষটির পক্ষে লিখলে পিঠ চাপড়ানো, নয়তো ছাগু উপাধি। আমরা এ ধারার বাইরে থাকতে চাই। অনেকেই তারপরেও ব্যাজার হয়েছেন জানি। ভাবছেন বোধ হয় ঘটা করে রোকেয়াকে অপমান করা হচ্ছে। আমি আগেই এক জায়গায় বলেছিলাম – গুরুভক্তি আমার সংস্কৃতিতে এতোই প্রবল যে, ন্যুনতম সমালোচনাও আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তা সে বঙ্গবন্ধুই হোক, রবীন্দ্রনাথই হোক কিংবা হোক মুক্তিযুদ্ধ। রোকেয়াই বা বাদ যাবে কেন? আমাদের সাংস্কৃতিক দৈন্যতার কারণেই এমন চমৎকার একটি পোস্ট এবং এ সংক্রান্ত প্রথাভাঙ্গা আলোচনাগুলো আমরা হৃষ্ট চিত্তে গ্রহণ করতে অক্ষম।
ফরিদভাইকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন চমৎকার একটি বিষয় আলোচনায় তুলে আনার জন্য।
@অভিজিৎ,
যে লোক বাংলাপিডিয়ার অনুমতি ছাড়া অংশ তুলে আনে তাকে ভদ্রলোক বলা যায় না। এই লোক সম্পর্কে আরও কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশিষ্ট বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে সাধারণ ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করে অশোভন মন্তব্য করেছে। এমন কিছু প্রশ্ন করেছে যেগুলো ছিল রীতিমত কুৎসিত। অনেক সময় ব্যক্তি আক্রমণ, অযাচিত মন্তব্যসহ নানাবিধ কার্যে লিপ্ত। এক এক করে লিখলে অনেক বড় লিষ্ট হবে। আমি সেই দিকে গিয়ে মূল রচনার আলোচনা ভিন্নখাতে গড়াতে চাই না। শুধু এতটুকু বলে প্রতিবাদ জানাই- যেন তাকে ভদ্রলোক বলা না হয়। শুধু তাই-ই নয়, তার নাম মুখে আনাও পাপ।
@মাহফুজ,
:laugh: :yes:
@মাহফুজ,
আপনার প্রশ্ন নিয়ে সমস্যা ছিলো না। সমস্যা ছিলো প্রকাশভঙ্গির উপর। আর ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাইলে বার্তাবাক্স আছে। আপনি নিশ্চয় বোঝেন কোন জিনিস ব্যক্তিগত ইমেইলে জিজ্ঞেস করতে হয় আর কোনটা প্রকাশ্যে, তাই না? এর আগেও তো ব্লগে ফরিদ ভাইকে ধর্ষক লম্পট প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলেন।
সরি পুরানা কাসুন্দি আপ্নেই নিয়ে আসছেন ভদ্রলোক শব্দটা পেয়েই। আপনি এখানে সেগুলো নিয়ে আবারও মন্তব্য চালাচালি করতে শুরু করলে আসলেই বিপদ।
@অভিজিৎ,
ঠিক আছে পুরাতন কাসুন্দি আর ঘাটবো না। একদম বাদ দিলাম। নতুন করে আর কোনো বিপদ ডেকে আনতে চাই না।
থ্যাংক ইউ। (আপনার ইমেইলে কিছু পাঠাইছি)
লাইজু নাহার গোলাবারুদের অভাবে নিজে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন, তবে রণাঙ্গন ছেড়ে যান নি একেবারে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন এই আশায় যে কেউ তাঁর হয়ে যুদ্ধগুলো করে দেবেন। আর তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে হাতে তালি দিয়ে তাঁদেরকে উৎসাহ দিয়ে যাবেন। সে কারণেই এই সব অর্থহীন তর্কে তাঁর আগ্রহ এবং সময় নেই বলার পরেও একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন তিনি। অবশ্য মন্তব্য করছেন তখনই, যখন মনে হচ্ছে যে তাঁর হয়ে কেউ লড়াইটা করে দিচ্ছেন। হায়রে অসহায়া নারী! রোকেয়ার শিক্ষায় এমনই পরাশ্রয়ী নারীতে পরিণত হয়েছেন যে, তাঁর নিজের লড়াইটাও পুরুষদেরই করে দিতে হয়। আর একারণেই একবার তিনি ছুটে যাচ্ছেন ফারুকের কাছে, একবার রৌরবের কাছে, একবার মাহফুজের কাছে, একবার রঙ্গ-ব্যঙ্গ করছেন উইকিপিডিয়ার লেখা নিয়ে মুক্তমনাদের, কাউকে প্রস্ফুটিত গোলাপ উপহার দিচ্ছেনতো, আবার কাউকে বত্রিশ পাটির দন্তবিকশিত হাসি দেখাচ্ছেন খুশিতে। এঁদেরকে তোষামদ করে তুষ্ট রাখার অবিরাম চেষ্টায় নিয়োজিত তিনি। সামান্য একজন পুরুষবাদী ফরিদ আহমেদের জন্যই এতো বড় আয়োজন? বিভ্রান্ত নারী আর কাকে বলে! এই রকম চরমভাবে বিভ্রান্ত নারীদের স্রেফ করুণা করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই আমার।
রোকেয়ার প্রেমে তিনি এমনই মশগুল যে, তাঁর আরাধ্য নারীটির মতই স্ববিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছেন তিনিও। একবার নারী জাগরণের কথা বলছেনতো পরক্ষণেই আবার বলছেন যে সুগৃহিনী হওয়াটা দোষের কী? নারীদের সুগৃহিনী করাটাই যে পুরুষতন্ত্রের মূলমন্ত্র সেটাই মনে হয় তিনি জানেন না। বা জানলেও ওটাই আসলে হতে চান তিনি। কারণ, সুগৃহিনী হওয়াটা বেশ নিরাপদ কাজ। কোনো মাথা ব্যথা নেই, নেই তেমন কোনো বড় দায়দায়িত্ব। গৃহিনীর ভূমিকার বাইরে পুরুষবিহীন অনিশ্চিত জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত সাহস এবং শক্তি সব মেয়ের থাকে না। যেমনটা ছিল না রোকেয়ারও। কিন্তু ছিলো বা আছে তসলিমার।
রোকেয়া নিয়ে বিতর্কে আমি কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণের বিষয় আসুক এটা চাই নি একেবারেই। ফলে, আফরোজা আলম যখন ভুল বুঝে ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগ তুললেন আমার বিরুদ্ধে, আমি সাথে সাথেই আমার সদিচ্ছার কথাটা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। তিনিও বুদ্ধিমতীর মতই আমার সদিচ্ছা বুঝতে পেরে তাঁর অভিযোগটা প্রত্যাহার করে নেন। এর পর থেকে যতখানি বিতর্ক হয়েছে, লাইজু নাহারের প্রচুর উস্কানি সত্ত্বেও আমি সতর্ক ছিলাম ওই পথে না হাঁটার। তিনি আমাকে অতি আঁতেল, গলাবাজ, কথা দিয়ে রাজা উজির মারা লোক, আপনার মত লোক জাতীয় অবজ্ঞাসূচক কথা অনর্গল বলে গিয়েছেন। এগুলো শুনেও আমি না শোনার ভান করেছি ক্যাচালে জড়াবো না বলে। এর বিপরীতে আমিও তাঁকে পুরুষতন্ত্রের অবুঝ নারী প্রতিভূ বলতে পারতাম। বলতে পারতাম যে নারী মুক্তির কথা বলতে গিয়ে আপনি আসলে পুরুষতন্ত্রের পক্ষেই সাফাই গাইছেন এবং নারীর অবমাননা করছেন। কিন্তু সেটা আমি বলি নি।
লাইজু নাহারের এর ওর কাছে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেবার পিছনে শুধু যে তাঁর নিজেরই গোলাবারুদের ঘাটতির জন্য হয়েছে তা কিন্তু নয়। তিনি নিজে যেগুলোকে লক্ষণ শেল মনে করে আমার দিকে ছুড়ে দিয়েছিলেন আমাকে ঘায়েল করবেন বলে, তার প্রত্যেকটাই বুমেরাং হয়েছে। আমাকে বিদ্ধ না করে সেগুলো ফিরে গিয়ে তাঁকেই আঘাত করেছে জোরেশোরে। যার কারণেই এখন তাঁর এই পরাশ্রয়ী আচরণ। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়া আর ফুল বিলোনোর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তাঁর হয়ে অন্যেরা লড়বে আর তিনি সেখান থেকে মজা লুটবেন। মাঝে মাঝে তাঁর লড়াকু সেনাদের উৎসাহ দেবেন এটা সেটা বলে। তিনি যখন সাহস ধার করার জন্যে আর আশ্রয় পাবার আশায় পুরুষদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, তখন আর কি করণীয়। আমাকেও এখন এক নারীর শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। সেই নারী আর কেউ নন, আমাদেরই আকিমুন রহমান।
আমি আগেই উল্লেখ করেছিলাম যে রোকেয়ার স্বামীর জমানো সত্তর হাজার টাকার মধ্যে তিনি মাত্র দশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন রোকেয়াকে। দশ হাজার দিয়েছিলেন স্কুলের জন্য আর সিংহভাগই দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর আগের পক্ষের কন্যাকে। এত উদার স্বামীও তাঁকে ঠকিয়েই গিয়েছিলেন। এই না হলে কি আর পুরুষতন্ত্রের পুরুষ!! রোকেয়াকে এই স্বল্প টাকা দেবার বিষয়ে আকিমুন রহমান বলছেনঃ
আটাশ বছরের তরুণী স্ত্রীকে নিয়ে বুড়ো সাখাওয়াত বেশ বেকায়দাতেই ছিলেন। মারা যাবার পরে তাঁর তরুণী স্ত্রী অন্য কাউকে বিয়ে করে তাঁর শয্যাসঙ্গিনী হবে এটা মেনে নেওয়ার মতো উদার মানসিকতার তিনি ছিলেন না। সাখাওয়াতের আসলে নিজের এতে কোনো দোষ নেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কোনো পুরুষের পক্ষেই আসলে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই নারী শিক্ষার মহৎ মুলো ঝুলিয়েছিলেন তিনি রোকেয়ার সামনে। আর অনুগত দাসীর মতই স্বামীর কথা মেনে চলেছেন রোকেয়া। স্বামী যদি স্কুল খোলার বদলে পানশালা খুলতে বলতেন, অনুগত এবং বাধ্য রোকেয়া তাই-ই করতেন। লাইজু নাহার অবশ্য এক্ষেত্রে বলতে পারেন যে, মৃত স্বামীর কথা মেনে চলাটা কী খারাপ? স্বামী পানশালা খুলতে বলেছেন, তিনি পানশালা খুলেছেন। এতেতো রোকেয়ার উদারতাই প্রমাণিত হয়।
যে নারী শিক্ষা নিয়ে রোকেয়ার এত ভূয়সী প্রশংসা সেটার পিছনের কারণও যে প্রভুর যোগ্য সহধর্মিনী হয়ে উঠা সেটাও বলেছেন আকিমুন রহমান। অবশ্য এক্ষেত্রে লাইজু নাহারও স্বীকার করেছেন যে সুগৃহিনী হবার মধ্যে দোষের তো কিছু নেই। আকিমুনের ভাষ্যেঃ
নারীরা তাঁদের পতিদেবতাদের শিক্ষাদীক্ষা ক্ষমতা সম্পর্কে ঠিকমত অবগত নয় বলে রোকেয়ার আহাজারির শেষ নেই। নারীদের যে পুরুষদের ছায়াতুল্য সহচরী হতে হবে একথাও তিনি তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেন। স্মরণ করিয়ে দেন যে, পুরুষদের বিদ্যার সীমা পরিসীমা নেই, অন্যদিকে সামান্য একটু বুঝবানের বেশি হওয়ার সাধ্যি মেয়েদের নেই।
নারী জাগরণের অগ্রদূতের কী চমৎকার কথাবার্তা! স্বামীও নয়, একেবারে প্রভুই বলছেন আর দাসীদের সবক দিয়ে চলেছেন প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে। এর পরেও যদি বাংলাদেশের কোনো নারী রোকেয়ার হয়ে সাফাই গায় তবে তাঁকে পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূ বিভ্রান্ত নারী ছাড়া আর কি কিছু বলা যায়?
এ কারণেই পুরুষতন্ত্রের অত্যন্ত পছন্দের রমণী এই রোকেয়া। রোকেয়ার মাধ্যমেই নারীকে মানসিকভাবে দাসী বানিয়ে রাখা সম্ভব। সে কারণেই পুরুষতন্ত্র তাঁকে দিয়েছে মহিয়সীর আসন। বোধবুদ্ধিহীন নারীরা পুরুষদের এই রোকেয়াবন্দনাতে হয়েছে বিভ্রান্ত, বিশ্বাস করেছে যে রোকেয়ার দেখানো পথেই তাঁদের মুক্তি, আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছেন তিনি তাদেরকে আলোর পথে নিতে। আসলে যে আলোর লোভ দেখিয়ে পুরুষতন্ত্রের অন্তপুরের অন্ধকারেই রোকেয়া তাদেরকে ডেকে নিয়ে চলেছেন সেই বোধ তাদের হয় নি। এই অবস্থা দেখেই আকিমুন বলছেনঃ
ফলে লাইজু নাহার যখন তসলিমাকে গালমন্দ করেন এবং রোকেয়ার বন্দনায় মেতে উঠে সুগৃহিনী হতে চান তখন হতাশ হই ঠিকই, তবে খুব একটা বিস্মিত হই না এই ভেবে যে, এই শিক্ষা কোথা থেকে এসেছে সেতো আমরা জানিই।
নেতা দেখেই নাকি তার অনুসারীরা কেমন সেটা বলে দেয়া যায়। এর উল্টোটাও সত্যি। অনুসারী দেখেও পথপ্রদর্শকের স্বরূপ বলে দেওয়া যায়। কাজেই রোকেয়া কী ছিলেন বা কী শিক্ষা দিয়েছেন, তা তার অনুসারীরা সামান্য একটু হা করলেই আমরা বুঝে নিতে পারি।
শেষ করছি সেই আকিমুন রহমানকেই দিয়েঃ
@ফরিদ আহমেদ,
আকিমুন রহমানের বইটা পড়ার তীব্র আগ্রহ বোধ করছি। আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়েছে, তাঁর লেখার স্টাইল হুমায়ুন আজাদ প্রভাবিত? তুলে দেয়া অংশগুলি দেখে সেরকম লাগছে।
@রৌরব,
হ্যাঁ, লেখার ধরন একই রকমের। বর্শার ফলার মতন তীক্ষ্ণ। তিনি হুমায়ুন আজাদের সরাসরি ছাত্রী ছিলেন।
আসুন বেগম রোকেয়াকে আমরা এভাবে মূল্যায়নের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারি-
তিনি সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজ-সংস্কারক, নারী জাগরণ ও নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। রোকেয়া যে সামাজিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন, সেখানে মুসলমান মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল না। কলিকাতার এক মেমের কাছে কিছুদিন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের কারণে তা বন্ধ হয়। তবু রোকেয়া দমে যান নি। বড় ভাই এবং বোনদের সহায়তায় তিনি পড়াশোনা করেন এবং বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠেন।
তার স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত ছিলেন সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন। রোকেয়ার জীবনে স্বামীর প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর সাহচর্যে এসেই রোকেয়ার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। তার স্বামী ছিলেন উদার এবং মুক্তমনের অধিকারী। স্বামীর মৃত্যুর পর রোকেয়া নারীশিক্ষা প্রসার ও সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। যে যুগে ধর্মীয় গোড়ামি এবং কুসংস্কারের কারণে মুসলিম মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষেধ ছিল, সেই অন্ধকার যুগে বেগম রোকেয়া অন্তরাল থেকেই নারী শিক্ষায় এবং মুসলমান মেয়েদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ সহজ করে দেন। তার লেখার মধ্যে সমকালীন রাজনীতির কথাও বলেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী, মুক্তচিন্তা এবং লেখনীর মধ্য দিয়ে বিশ শতকের এক বিরল ব্যক্তিত্বে স্মরণীয় হন।
সাহিত্যচর্চা, সংগঠন পরিচালনা এবং শিক্ষা বিস্তার এই ত্রিমাত্রিক ভূমিকায় অবতীর্ণ সমাজ সংস্কারে এগিয়ে এসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম রোকেয়ার অবদান চির অম্লান। (বাংলা পিডিয়া অবলম্বনে)
@মাহফুজ,
ভাই আপনার এই নিরপেক্ষ কথাগুলোতো (সরিঃ বাংলা পিডিয়ার)
মুক্ত মনার মুক্ত চিন্তার কেউ কেউ কানেই তুলতে চাইছেনা!
এবার মুক্ত মনা থেকে একটা বাংলাপিডিয়া বের করা যায়কি! 😀
@লাইজু নাহার,
এই তো আপনি তুললেন। আপনিই তো মুক্তমনার মুক্তচিন্তার কেউ কেউ -এর মধ্যে একজন। আমি তো মনে করি মুক্তমনারা একপেশে হয় না। তারা পক্ষ-বিপক্ষ সব দিকেই বিশ্লেষণ করে। আলোর দিকটাও দেখে, আবার অন্ধকারের দিকটাও দেখে। অন্ধ আবেগের মোহে কাউকে দেবত্ব আসনে বসায় না।
@ফরিদ আহমেদ, সেই সময়ের বাস্তবতায় একটা দেশলাই জালানো যদি এতই সহজ হোত তাহলে , আর কেউ তার আগে জ্বালায় নি কেন? ঐ দেশলাই জ্বালানো , প্রাগৈতিহাসিক মানুষের প্রথম চকমকি পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানোর মতৈ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার লাইজু নাহারকে করা এই মন্তব্যদুটি পড়ে আমার মনে হোল আসলেই আপনাকে তর্কে পেয়েছে। লাইজু নাহার কি বলতে চাচ্ছেন সেটা মনে হয় তর্কে জেতার জন্য বুঝতে চাচ্ছেন না। সেই সময়ের সামাজিক বাস্তবতায় রোকেয়া যেটুকু করেছেন বা করতে পেরেছেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। আপনি যে শিক্ষিত মহিলাদের কথা বল্লেন , তারা সকলেই হিন্দু সমাজের। তাদের সাথে সেই সময়ের মুসলিম মেয়েদের কোন তুলনায় চলে না।
রোকেয়ার নিজের বিয়েতে তার নিজের কোন মতামতের মূল্য ছিল বলে আমার মনে হয় না । অথচ সেই বিয়ের জন্যই আপনি রোকেয়াকে দুষছেন। আজকে কোন অর্থশালী পরিবারের শিক্ষিত ভাই , তার নিজের বোনের জন্য এইরকম বয়সের বিস্তর ব্যাবধানের দোজবরের সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ আনবে বলে কি আপনি করেন? আপনি সেই সময়ের সমাজিক পরিস্থীতি না বুঝেই আবুবকরকেও টেনে আনলেন কাঠ মোল্লাদের মতো মনুষের আবেগকে পূজি করে তর্কে জেতার জন্য। আপনার কাছে আরো বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য ও বিতর্ক আশা করেছিলাম।
@ফারুক,
চারপাশের আলো ঝলমল পরিবেশকে কানার মত না দেখেই গর্তে ঢুকে আরব দেশ থেকে অন্ধকার আমদানী করে, সেই আঁধারে দেশলাই জ্বালিয়ে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের প্রথম চকমকি পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানোর মত গুরুত্বপূর্ণ ভেবে কেউ যদি সুখ পায়, তাহলে তাকে সেই সুখ থেকে বঞ্চিত করি আমি কীভাবে?
@ফরিদ আহমেদ,”তোরা যে যা বলিস ভাই , আমার সোনার হরিন চাই।”
@ফারুক,
আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও।
অরুণ-আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও।
@ফরিদ আহমেদ,
আরব দেশ থেকে অন্ধকার তো রোকেয়া আ্মদানি করেন নি। এজন্নে তাকে কি দায়ী করা যায়? তিনি বরং যথাসাধ্য অন্ধকার দুর করার চেস্টা করে গেছেন।
সে সময় মুসলমান সমাজ পাশ্চাত্ত শিখখায় হিন্দু সমাজের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। রোকেয়ার আগে কেউ মুসলিম নারী শিখখা নিয়ে এভাবে কাজ করেন নি, তাই মুসলিম নারী জাগরনে তার ভুমিকা যত ছোটই হোক তা যথেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ।
নীচে ‘ বুড়ো সাখাওয়াত’ (একটু তাছছিল্য কি প্রকাশ পেল না?) সম্পরকে লিখেছেন, ‘নারী শিক্ষার মহৎ মুলো ঝুলিয়েছিলেন তিনি রোকেয়ার সামনে’। ধরমো করমের আরও বড় মুলোও তো ঝুলাতে পারতেন! এত দিন পরে তার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি কি নিশ্চিত?
‘স্বামী যদি স্কুল খোলার বদলে পানশালা খুলতে বলতেন, অনুগত এবং বাধ্য রোকেয়া তাই-ই করতেন’—–আপনি কি সত্যই নিশ্চিত?
আপনার লেখা আগ্রহ নিয়ে পড়ি। ভাল থাকবেন।
@মনজুর মুরশেদ,
না যায় না। আরব দেশ থেকে অন্ধকার আমদানির জন্যে রোকেয়াকে দায়ী করি নি আমি, দায়ী করেছি বাঙালি মুসলমানদের।
আপনার এই মতের সাথে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
বুড়ো সাখাওয়াত সম্বোধনে একটু তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছেই বটে, তবে আমার কাছে ওটা তাঁর প্রাপ্য বলেই মনে হয়েছে। বিয়াল্লিশ বছরে যে ষোল বছরের কিশোরীকে বিয়ে করে, তা সে যে সময় বা যুগেই হোক না কেন, এইটুকু মনে হয় তাঁর জন্য প্রাপ্যই। 🙂
আসল উদ্দেশ্য নিয়ে নিশ্চিত নই, তবে তিনি মারা যাবার পরে রোকেয়া যাতে কিছু একটা নিয়ে মেতে থাকতে পারে সেটা তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। তবে, এটা ঠিক যে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ভদ্রলোকের একটা আগ্রহ ছিলো, এবং ওই আগ্রহটাই পরে সঞ্চারিত হয়েছিল রোকেয়ার ভিতরেও।
স্বামীর প্রতি রোকেয়ার বাধ্যতার নজীর থেকে এই অনুমিতিটা দাঁড় করানো হয়েছে। একটা ‘হয়তো’ শব্দ বসানো উচিত ছিল আমার। তাহলেই আর এই রকম নিশ্চিত শোনা যেতো না অনুমিতিটাকে। 🙁
চমৎকার আলোচনার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। যুক্তি দিয়ে কেউ বিরোধিতা করলে, তার উত্তর দিতেও আনন্দ লাগে।
বেগম রোকেয়াকে দেখতে হবে তার সময়ের প্রেক্ষাপটে। তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ হয়েও নিঃসন্দেহে একজন অগ্রসর মানুষ।
রোকেয়ার ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা ভালো লাগলো। লেখায় পাঁচ তাঁরা। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
ভাল লাগারটুকু জানানোর জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
শুধু তারাগুলো দিলেই চলতো, চন্দ্র(বিন্দু) সহ তাঁরা রাখার জায়গার অভাব আছে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
ঞঁ!! 😛
আমাদের দেশে একটা কথা আছে , মার থেকে মাসীর দরদ বেশি। মেয়েদের কিসে বা কিভাবে ভালো হয় , সেটা মেয়েদের থেকে এই ব্লগের ছেলেরাই মনে হয় ভাল বোঝে।
@লাইজু নাহার,
সহমত। :yes:
@ফারুক,
মাঝে মাঝে মায়ের চেয়ে মাসির বেশি দরদেই কাজ হয় বেশি।
লৈঙ্গিক রাজনীতি, নারীর অধিকার নিয়ে এই বাংলায় মেয়েদের বহু আগেই কথা বলা শুরু করেছে পুরুষেরা। নারী জাগরণেও তাঁদের ভূমিকাই মূখ্য। রোকেয়া যদি মেয়েদের বিছানো পথের কণ্টক দূর করে থাকেন, তবে সেই কণ্টক দূর করার জন্য যে মানসিকতা দরকার সেটাও কিছু পুরুষদের কষ্টকর কসরতেই সম্ভব হয়েছে।
রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্ররা রোকেয়ার জন্মেরও আগে মেয়েদের মুক্তির জন্য লড়েছেন। সহমরণ নিবারণে, বিধবাবিবাহ প্রবর্তনে, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণে তাঁরা মায়ের দরদের আসায় বসে থাকেন নি, মাসির দরদ দিয়েই সেগুলোকে সফল করেছেন। দরদি কোনো মাকে পাশে পান নি তাঁরা তখন। মায়ের দরদের আশায় বসে থাকলে কী হতো সেটা নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন।
রাজা রামমোহন রায় ১৮১৮ সালে সম্পত্তিতে মেয়েদের উত্তরাধিকার দাবি করেন। আর ঈশরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রস্তাবনা ও প্রচেষ্টাতেই উইডো রিম্যারিজ এ্যাক্ট চালু হয় ১৮৫৬ সালে।
মায়ের দরদের আশায় বসে না থেকে মাঝে মাঝে মাসিরা দরদ দেখালে যে উপকারই হয় তার একটা উদাহরণ দিচ্ছি রোকেয়া থেকেই। রোকেয়ার অবরোধবাসিনীতে এই ঘটনাটা বর্ণনা করা আছে।
আপনাদের মহান আল্লাহতালাও কিন্তু মায়ের চেয়ে মাসির দরদের উপরই বেশি আস্থা রাখতেন মনে হয়। মেয়েদের কল্যাণের জন্য শুধু পুরুষ নবীই পাঠাতেন তিনি।
আপনার যুক্তি অনুযায়ীতো আল্লাহতালার মেয়েদের জন্য আলাদা একজন মহিলা মুহাম্মদ পাঠানো উচিত ছিল। কী বলেন, তাই না?
@ফরিদ আহমেদ,
ভালৈতো মন্তব্য করছিলেন, হটাৎ মহান আল্লাহতালাকে নিয়ে টানাটানি কেন? মহান আল্লাহতালার কথাই যদি বলেন তো , যে অধিকারের জন্য রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্ররা আন্দোলন করেছিলেন , তা ১৪০০ বছর আগেই মহান আল্লাহতালা নারীদের সেই বিধবা বিবাহ , সম্পত্তির অধিকার সহ পুরুষের সমধিকার দিয়েছেন। ১৪০০ বছর ও তদ্পূর্বের নারীদের সামাজিক অবস্থা কল্পনা করুন , তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারবেন কেন পুরুষ নবী পাঠানো সময়োপযোগী ছিল। কোন নারী নবীর পক্ষেই আল্লাহর বাণী সফলভাবে প্রচার কোনকালেই সম্ভব ছিল না।
@ফারুক,
সেতো জানি-ই যে ভাল মন্তব্য করছিলাম। কিন্তু আপনার ওই মা-মাসিকে নিয়ে টানাটানি করা দেখেই না আমারও আল্লাহকে নিয়ে একটু টানাটানি করার খায়েশ জাগলো।
@ফরিদ আহমেদ,
আরো একটু যোগ করি-
তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজী শেখান।
১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনা মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরীর জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যজগতে পা রাখেন। (উৎস: স্বাক্ষর শতাব্দ-এর দেয়া লিংক থেকে)
@ফারুক,
ধন্যবাদ!
@ফারুক,
রোকেয়া বির্তকের অংশ হিসেবে নয়, আলাদাভাবে বলছি—–
মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি মানে কিন্তু নারী হলেই নারী বাদী হবে এমন কোন কথা নেই । বহু নারীবাদী পুরুষ রয়েছে যারা নারী মুক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সংগ্রামও করেছেন এবং করছেন। আবার অনেক নারী রয়েছে যারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর। কাজেই এত সরলীকরণ করা সম্ভব নয় এবং উচিতও নয়।
@গীতা দাস, একটা জিনিষ বুঝি , আমার ব্যাথা , অন্য আর কারো আমার থেকে বেশি বোঝার কথা না।
পুরুষের সহযোগিতা ছাড়া কোন নারীবাদি আন্দোলন সফল হওয়া সম্ভব না , এটাই সত্য। যে যাই বলুক , এই একবিংশ শতাব্দিতেও ক্ষমতা পুরুষের কুক্ষিগত। নিজের থেকে অন্য কাউকে বেশি ভালবাসা সম্ভব না।
@গীতা দাস,
তবে কালেভদ্রে দু একজন পুরুষবাদীরও আগমন ঘটে, এজগতে; যারা নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার। তাদের লেখনীর পেশি-শক্তি এতই প্রবল, সহজে কাবু করা যায় না। অন্যদেরকে ধরাশায়ী করতে দক্ষ, তাদের বাক্য হয় মাধুর্যমণ্ডিত কিন্তু বিলোড়িত সমুদ্র-তরঙ্গতূল্য।
@মাহফুজ,
“আনন্দধারা বহিছ ভূবনে- :rose2:
@লাইজু নাহার,
এইটা কি নতুন খেতাব? বছর তো এখনও আসে নাই।
আপনার তো বলা উচিত ছিল, ‘ভাইসাব মনে কিছু লইয়েন না।’ কিম্বা ’আমি তো প্রেমে পড়েছি।’
অথবা, “দিতে হবে ভাষা, ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা”…………ও নদী আপন বেগে পাগলপারা।………
@মাহফুজ,
ভাই ওসব ভূলে যান।
আমি কিন্তু খেতাবের সঙ্গেই লিখেছিলাম,
সিরিয়াসলি না নেওয়ার জন্য!
বারবার এককথা বলে লজ্জা দেবেনা প্লিজ!
@লাইজু নাহার,
ভুলে যেতে চাইলেও ভুলে যাওয়া যায় না। ভুলে যেতে চাইও না। ভুলে গেলে তো আপনাকেও ভুলে যাবো। আপনি কি চান আমি আপনাকে ভুলে যাই? একগুচ্ছ টিউলিপ পাবার কথা ছিল আপনার, পেয়েছেন কি?
আমিও তো খেতাবই মনে করেছি।
সিরিয়াসলি নেই নি তো! অসিরিয়াসলিভাবেই নিয়েছি।
বার বার বললাম কোথায়? এই তো প্রথমবার বললাম। আগে বলেছি নাকি? আর এতে লজ্জা পাবার তো কিছুই দেখছি না। লজ্জা পাইয়েন না। ‘তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ পড়ে ফেলুন।
আমার যতদূর মনে পড়ে, হুমায়ুন আজাদ “নারী” গ্রন্থে দেখিয়েছিলেন যে বেগম রোকেয়ার বেশিরভাগ বিপ্লবী লেখাই তরুণ বয়সে লেখা। তিরিশের কোঠায় পৌছুতে না পৌছুতেই তিনি প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট হওয়া শুরু করেন, তিনি বোরকার পক্ষে জাকির নায়েকীয় সাফাই গাওয়া শুরু করেন।
আমি মনে করি রেডিক্যাল আন্দোলন ছাড়া সমাজের আমূল সংস্কার সম্ভব না। সমকালীন জাইটগাইস্টের পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে সাফাই গাইলে খুব বেশি উন্নতি হবে না। বাংলাদেশে তো এখন মেয়েরা মাথায় পট্টি না বেধেই বাইরে কাজ করতে যায়, তাই বলে কি বাংলাদেশ নারীবাদী রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে? আমি দেখেছি মেয়ে চাকুরী করলে বিয়ের সময় বরপক্ষের সাথে এ নিয়ে দেনা-দরবার করতে হয় এবং অনেক সময় বিয়ের আগে বরপক্ষ মেয়ের চাকুরী করাকে অনুমোদন দিলেও বিয়ের পর মানসিক নির্যাতন চালায়। বাংলা কমিউনিটি ব্লগে এখন অনেক নারী ব্লগার আছেন যারা একই সাথে বিবাহিত এবং কর্মজীবি। তাদের বিভিন্ন পোষ্ট থেকে জানা যায় যে ঘরের বাইরে অনেক প্রেসটিজিয়াস চাকরী করলেও ঘরে গিয়ে তাদেরকে ঠিকই সংসারের সব কাজ করতে হয় আর স্বামী ঘরে ফিরে ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলে ঘুম যায়। বেগম রোকেয়া হয়ত আদর্শ পত্নীর এই চিত্র দেখে নিজের উপর সন্তুষ্ট হতেন, কিন্তু একে কোন ক্রমেই প্রগতি বলা যায় না। প্রগতি তখনই আসবে যখন সংসারে পুরুষ ও নারীর মধ্যকার শ্রমবন্টনটা সমানুপাতিক হবে। বেগম রোকেয়ার লেখনীতে কি এই দাবিটা উঠে এসেছে?
বেগম রোকেয়ার মত আপোষকামীকে আমি তসলিমার মত রেডিক্যালের উপরে স্থান দিতে চাই না। স্বামীর(যার অর্থ “প্রভু”) টাকায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেই সমাজ সংস্কার হয় না। আর্থিক বিনিয়োগের দাঁড়িপাল্লায় যদি সমাজ সংস্কারকে পরিমাপ করতে হয়, তাহলে তো বলতে হয় যে আধুনিক সভ্যতা ও দর্শনের পেছনে পূর্বের দার্শনিকদের কোন ভূমিকাই নেই। অতীতের চিন্তাবিদরা শুধু তসলিমার মত বই লিখে গেছেন আর সমকালীনদের গালি খেয়ে গিয়েছেন, তাঁরা তো ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে তাদের মাথা খাটাতে অনুপ্রাণিত করেননি।
@পৃথিবী,
রোকেয়ার নারী্স্থান পড়েছেন?
রোকেয়াই কিন্তু মেয়েদের বলেছেন-“অর্থনৈতিক মুক্তিই-মেয়েদের প্রকৃতমুক্তি”
এর আগে এ কথা মেয়েদের জন্য কেউ বলেনি।
সে যুগে মেয়েরা চাকরী তো দূরের কথা লেখাপড়াও করতনা!
নিজের আয় কোথা থেকে হবে?
উত্তরাধিকার সূত্রে যা পেয়েছিলন তাই দিয় মেয়েদের জন্য
কাজ করে গেছেন।
তিনি মেয়েদের গৃহিনী হতে বলেননি।
নিজের পায়ে দাড়াঁতে বলেছেন!
আসলে লেখাটায় খন্ডিত কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে!
রোকেয়ার সব রচনা পড়লে সম্ভবত আপনার মোহমুক্তি ঘটবে!
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
রোকেয়ার বিভিন্ন উক্তি কিন্তু আপনার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে যাবে। যেমন,
আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ (অথবা Mental culture) করিব কিসের জন্য? আমি বলি, সুগৃহিণী হওয়ার নিমিত্তই সুশিক্ষা আবশ্যক।
এ ধরণের অনেক উক্তি আপনি রোকেয়া রচনাবলী খুঁজলেই পাবেন।
এতদিন ধরে রোকেয়া সম্বন্ধে কেবল ভাল ভাল কথাই শোনা গিয়েছে। তিনি নারীমুক্তির অগ্রদূত, তিনি শিক্ষাব্রতী, তিনি মুসলমান নারীর জীবনের আলোর দিশারী… ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন অবশ্য ‘খন্ডিত’ মনে হয়নি। সমালোচনামূলক কিছু অন্তর্ভুক্ত করলেই তা খন্ডিত হয়ে যাবে? আমি কিন্তু তা মনে করছি না।
ঠিক! রোকেয়ার সব রচনা নির্মোহভাবে পড়লেই কেবল মোহমুক্তি ঘটা সম্ভব। 🙂
@অভিজিৎ,
এখানে আমি একটা কথা না বললেই পারছি না;
আমার কথাটাও ঠিক তাই; আমরা রোকেয়া সম্পর্কে অনেক আদর্শিক মানদন্ডে চিন্তা করতে পারি যে, তিনি কেন এই ভাবে না করে ঐ ভাবে করলেন, তিনি কেন এই পথে না যেয়ে ঐ পথে গেলেন না ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের কি কিন্তু সমসাময়িক বাস্তবতাটা মাথায় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
রোকেয়া কেন মেয়েদের সুগৃহিনী হতে জোর দিয়েছেন সেই সময়ে? আমার মনে হয়ে সেটা তিনি করেছেন কৌশলগত কারণেই। কারণ সে সময়ে বাস্তবতা হল, সমাজের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নারীরই গৃহিণী পর্যাযের অধিকার নিয়েই টানাটানি সেখানে অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে কথা বলাটা অত্যন্ত বৈপ্লবিকই মনে করি।
আমার মনে হয় মনীষী আছে দুই ধরনের। একধরনের যারা সমাজের বাস্তবতাকে ভুলে গিয়ে সবসময় ইউটোপীয় চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন কিন্তু বাস্তবতাটা আমলে নেন না, সেজন্য তারা নিজেদের জীবদ্দশায় কিছুই করে যেতে পারেন না, চিন্তা দান ব্যতিরেকে।
আমার কথা এখানেই, মনে করি, রোকেয়া তার জীবদ্দশায়ই কিছু বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। তাই মন দিয়ে চিন্তা না করে তিনি মাথা দিয়ে চিন্তা করেছেন, হয়েছেন কিছুটা আপোষকামী। কারণ তিনি জানতেন কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। তিনি সমাজের সর্বোস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেছিলেন এবং তাতে সফলও হয়েছিলেন। কারণ, সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন ব্যতিরেকে কখোনো সমাজ সংস্কার করা যায় না। আর আপনি যদি অনাহারী কৃষকের কাছে ছায়াপথ, নিহারীকা, কৃষ্ণগহবর ইত্যাদির আলোচনা করেন তাহলে সেগুলো তাদের কাছে গাজাখুরি প্রলাপ ছাড়া কিছুই মনে হবে না কারণ, যেখানে ভাতই জোটে না সেখানে ছায়াপথ কি কৃষক ধুয়ে খাবে? আর এরকম আলাপকারীর ত্রিসীমানায় তারা না যাওয়ারই চেষ্টা করবেন বলে মনে করি।
তেমনি যেখানে সে সমাজে মেয়েদের গৃহীনীর অধিকারই ঠিকমত নেই সে সমাজে সরাসরি মেয়েদেরকে মাঠে নামানোটা সম্ভবপর না, অলৌকিকই মনে করি। আপনি যদি একটা বাচ্চাকে একগামলা বিরিয়ানি দিয়ে তাকে একনিমিষে তা সাবাড় করতে বলেন তাহলে সে কি পারবে? তাকে তো তার সাধ্য অনুযায়ী দিতে হবে তাই না?
বাংলাদেশের বর্তমানের অবস্থাটা ধরূন না, আপনি যদি এই চরম কুসংস্কারচ্ছন্ন দেশে একবারেই ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে চান তাহলে কি পারবেন , নাকি আপনাকে আস্তে আস্তে এগোতে হবে? আপনাকে কি আগে সর্বস্তরের মানুষকে এই ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থাটা কি চিজ্, কেন তা প্রয়োজন এবং কিভাবে তা কল্যাণকর সেই সম্পর্কে সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে এক ব্যাপক সচেতনতা তৈরী করতে হবে না? তা না করে কি আপনি এগোতে পারবেন? তার আগেই কি শত্রুপক্ষ আপনার দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে আপনাকে ঘায়েল করে দেবে না?
আর কোন কিছু কারো উপর চাপিয়ে দিয়ে সাফল্য অর্জন করা যায় না যদি না সে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে সেটা না গ্রহণ করে।
তেমনি রোকেয়ার সময়ের মেয়েদের কথা ভাবুন, তারা তো নিজেরা কখণো অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হবে এই চিন্তা করতে পারতই না, নিজেদের পুরুষের অনুগত দাস ছাড়া মেয়েরা অন্যকিছু ভাবতে পারতোই না, সেই সমাজে যদি আপনি তাদের কাছে সম্পূর্ণ অকল্পনীয় কিছু করতে বলেন তাহলে কি তারা সায় দেবেন। রোকেয়া তো লড়ছিলেন নারীর অধিকার নিয়ে পূরূষতান্তিক সমাজপ্রভুদের বিপক্ষে, সেখানে যদি তিনি মেয়েদেরই নিজের অনুকুলে নিয়ে না আসতে পারেন তাহলে কি কোনো কচুও অর্জন করা সম্ভব হত? যেই মেয়েরা(সংখ্যাগরিষ্ট) গৃহী জীবন ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারে না তাদের কে যদি গা ছাড়া দিয়ে মাঠে নামতে বলা হয় তারা কি কখোনো নামবে? আপনি কি কখোনো তা করে দেখাতে পারবেন? তাদেরকে তাই রোকেয়া সংসার জীবনে উন্নতির পরামর্শ দিয়ে মন গলানোর চেষ্টা করেছেন,
বাঙ্গলাদেশেও তো বর্তমানে অনেক নারী নিজেদের পুরুষের অনুগত দাস ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করতে পারে না, আপনি কি তাদের উন্নতি কামনা করবেন না? না কি তাদের কে অজ্ঞের কাতারে ফেলে দিয়ে উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে চলে যাবেন? রোকেয়া মনে করি সর্বস্তরের নারীরই উন্নতি চেয়েছিলেন, তাই অবুঝদের তাদের নিজস্ব জগত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
রোকেয়া মনে করি খুবই বাস্তবদর্শী ও মানবিক ছিলেন তাই ইউটোপীয় চিন্তা ত্যাগ করে বাস্তব কৌশল্ নিয়েছিলেন। তিনি কাউকেও ফেলে দিতে চাননি। তাই যেভাবে সমাজের দরজায় কড়া নাড়া সম্ভম সেভাবে কড়া নেড়েছেন, এবং বোধকরি তাতে সফল হয়েছেনও। মোহাম্মদ, রোকেয়া এরা সফল হয়েছিলেন কারণ এরা ছিলেন চরম বাস্তব দর্শী, কেবল কল্পনার জগতে এরা বিচরণ করতেন না। আশা করে আমার মতামত উপস্থাপন করতে পেরেছি। ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন,
আপনার বক্তব্য বেশ ভালোই এগুচ্ছিলো, আমিও বেশ কনভিন্সডই হয়ে যাচ্ছিলাম, যতক্ষন না এই লাইনে এসে উপস্থিথিত হলাম –
মহম্মদ আর রোকেয়াকে এক কাতারে ফেলে ‘দুজনেই বাস্তবদর্শী’ হিসেবে প্রতিপন্ন করে দেখার চেষ্টা থেকে বোঝা যায় আসলে চিন্তাভাবনা সেই চিরন্তন ছকের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। মহম্মদ তার জীবদ্দশায় খুবই বাস্তবদর্শী ছিলেন সন্দেহ নেই, ধনবান খাদিজার মৃত্যুর পর ১৪ বছরের মধ্যে অন্ততঃ ১২ টা বিয়ে করেন; আর আয়েশা, সাফিয়া, জয়নব, জুরাইয়া, রায়হানাদের নিয়ে তার স্ক্যান্ডালগুলো তার বাস্তববাদিতার পরিচয়ই বহন করে নিঃসন্দেহে। রোকেয়া বোধ হয় অতটা বাস্তবদর্শী ছিলেন না। এটা আমাকে স্বীকার করতেই হবে। তবে আপনি যখন দুজনকেই এক কাতারে রেখেছেন – মোহম্মদকেও আমরা নারী জাগরণের অগ্রদূত খেতাব দিয়ে দেই, কি বলেন? পালকপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে সহ অনেক কিছুতেই তিনি আজ পথ প্রদর্শক। মহালম্পট কৃষ্ণই বা বাদ যাবে কেন – তার স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো ষোল হাজার একশ। নারীদের উপযুক্তি সম্মান দিয়েই হারেমে রেখেছিলেন তিনি। 🙂
রোকেয়া অবশ্য সেরকম র্যাডিকাল কিছু করতে পারেননি। এটাকে অবশ্য আমরা কালের সীমাবদ্ধতা হিসেবেই বিবেচনা করতেপারি। রোকেয়াকে দেখতে হবে তার সময়ের প্রেক্ষাপটে। 🙂
আরেকটা ব্যাপার, মূল তর্কটা সুগৃহিনী হতে বলা কতটা বাস্তবসম্মত আর কতটা অবাস্তবসম্মত সেটা নিয়ে ছিল না। লাইজু নাহার তার মন্তব্যে বলেছিলেন, রোকেয়া মেয়েদের গৃহিনী হতে বলেননি। আমি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছিলাম রোকেয়া তার রচনার অনেক জায়গাতেই কেবল সুগৃহিনী হবার দিকেই জোর দিয়েছিলেন। আপনার যদি মনে হয় সুগৃহিনী হওয়ার উপদেশ বাস্তব সম্মত ছিলো, সেজন্যই রোকেয়া তা করেছিলেন, তাহলে আপনার তাকেই উত্তর দেয়া উচিৎ ছিল যিনি দাবী করেছিলেন যে রোকেয়া মেয়েদের গৃহিনী হতে বলেননি।
ভাল থাকুন।
@অভিজিৎ,
আমি রোকেয়া আর মোহাম্মদকে এককাতারে ফেলি নাই, তারা একস্তরের মানুষ না, শুধু তাদের বাস্তর দর্শিতার মধ্যে যে সামান্য মিল খুজে পেয়েছিলাম তা বলেছি কারণ তারা দুজনেই সমাজ সংস্কারে সফল হয়েছিলেন কেউ বেশী কেউ কম।
আমি লেখাটা অত পড়ে দেখি নাই। তাই খেয়াল করে দেখি নাই কে কথাটা বলল, তাই দুঃখিত। কথাগুলো বলতে ইচ্ছা করল তাই বললাম। এখানে তর্ক করতে আসি নি, মতামত জানাতে এসেছি।
আর কারও প্রতিটা কর্মই স্থান কাল উর্ধ্বে নয়, আপনারও নয়, আমারও নয় আর স্বয়ং মুহাম্মদেরও নয়। কারণ সবাই সামাজিক জীব, স্থান কালে তাদের দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশী তাই কর্মও হতে হয় বাস্তবদর্শী, সমাজমুখী, সাধারণ জনকল্যাণমুখী। বাস্তবতা বিবর্জিত চিন্তা কখনো সফল হয় না।
@মুহাইমীন,
খুবই ভাল লাগল আপনার কথাগুলো!
ভাল থাকুন!
@পৃথিবী,
দারুণ! যে কোন বিষয়েই আপনার বিশ্লেষণ সবসময়ই মুগ্ধ করে আমাকে।
মুক্তমনার লেখকদের দৃষ্টিতে বেগম রোকেয়া।
পৃথিবীর কোন কিছুই সমালোচনার উর্ধে নয়। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তথা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই যদি সমালোচনার পাল্লায় দাড় করানো যায় তাহলে দেখা যাবে তার মধ্যে রয়েছে স্ববিরোধী মনোভাব।
ড. আহমেদ শরীফ মানুষ সম্পর্কে বলেন- “দৈশিক, কালিক, শাস্ত্রিক, বার্ণিক, আবয়বিক, আর্থিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক অবস্থানভেদ সত্ত্বেও প্রাণিজগতে প্রজাতি হিসেবে সারা দুনিয়ার মানুষেরই বৃত্তি-প্রবৃত্তি অভিন্ন। মানুষ ভালোও নয়, মন্দও নয়। মানুষ কখনো ভালো, কখনো মন্দ, কারুর প্রতি ভালো, কারুর প্রতি মন্দ, কারুর কাছে ভালো, কারুর কাছে মন্দ, কারুর জন্যে ভালো, কারুর জন্যে মন্দ।”
মুক্তমনার অনেক লেখকই মানুষকে বিচিত্র ধরনের প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। আদিল মাহমুদ এবং ড. নৃপেন্দ্র সরকার বেশ কয়েকবার তাদের মন্তব্যে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে মানুষ যেমন বিচিত্র, লেখনী হিসেবেও রয়েছে তার বিচিত্র মনোভাব। সেই বিচিত্র মনোভাবেই ফুটে উঠে স্ববিরোধী মনোভাব।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও আমরা স্ববিরোধী কবি হিসেবে দেখতে পাই তার বিভিন্ন কবিতার মধ্যে। শেখ মুজিবকে কেউ জাতির জনক হিসেবে উচ্চ আসনে বসাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার কঠোর সমালোচনাও করছেন।
ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। ড. আহমেদ শরীফ বলেন- “মানুষের ভালত্ব ও মন্দত্ব আপেক্ষিক। যে-খুনী ডাকাত নরহত্যায় অর্থ সম্পদ সংগ্রহ করে, সে-ও প্রেমময় স্বামী, স্নেহময় পিতা, পিতামাতার অনুগত সেবক। তার এ দুটো রূপই তো সত্য।”
তাই বেগম রোকেয়ার মধ্যেও আমরা ভালত্ব ও মন্দত্বের দুটো রূপই দেখতে পাই। তিনি কখনও বিপ্লবী, কখনও আপোষকামী। তার এ দুটো রূপই সত্য।
আজ বেগম রোকেয়াকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। কেউ তাকে বিপ্লবী বলে আখ্যায়িত করছেন। কেউ সেটা অস্বীকার করছেন। কারো দৃষ্টিতে তিনি নারীবাদী, কারো দৃষ্টিতে তিনি পুরুষতন্ত্রের মন্ত্রে বাধা, কারো দৃষ্টিতে তিনি নারী শিক্ষার অগ্রদূত আবার কারো দৃষ্টিতে শিক্ষিত স্ত্রী তৈরিতে নিয়োজিত ছিলেন। কখনও তিনি ধর্মের কঠিন সমালোচক আবার কখনও তিনি ধর্মবাদী। কখনও তিনি বিপ্লবী আবার কখনও তিনি আপোষকামী। কখনও তিনি কিছু কিছু ছকের মধ্যে আবদ্ধ থেকেছেন কখনও তিনি ছক থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
যারাই বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্ন, মতিচুর, অবরোধবাসীনী পড়েছেন, তারা বুঝবেন বেগম রোকেয়ার লেখার মধ্যে রয়েছে স্ববিরোধী মনোভাব।
ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্ববিরোধী উক্তি। এ ব্যাপারে প্রচুর লেখালেখিও হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে।
আজ তসলিমা নাসরিনকেও যদি তার লেখা এবং তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে মূল্যায়ন করা হয় তাহলেও সেখানে স্ববিরোধীতা পাওয়া যাবে।
স্বাক্ষর শতাব্দ বেগম রোকেয়াকে বিপ্লবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফরিদ আহমেদ বেগম রোকেয়াকে বিপ্লবী বলতে নারাজ।
মুক্তমনার লেখকরা বিভিন্ন সময়ে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে লিখেছেন। কখনও কখনও বিভিন্ন লেখায় বেগম রোকেয়ার উদারহণ টেনে এনেছেন প্রাসঙ্গিক কারণে।
আজ ফরিদ আহমেদ তার লেখায় অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে এনেছেন বেগম রোকেয়া সম্পর্কে-
“তিনি কি ছিলেন নারীবাদী? নাকি পুরুষতন্ত্রের নিগড়েই বাঁধা ছিলেন? ছিলেন কি নারী শিক্ষার অগ্রদূত? নাকি পুরুষদের জন্য শিক্ষিত স্ত্রী তৈরিতে নিয়োজিত ছিলেন তিনি? ছিলেন কি ধর্মের কঠোর সমালোচক? নাকি ছিলেন ধর্মবাদী? ছিলেন কি বিপ্লবী? নাকি ছিলেন একজন আপোষকামী সমাজকর্মী? পুরুষতন্ত্রের বাধানো ছকের মধ্যেই ছুটোছুটি করেছেন তিনি? এর বাইরে যাবার সাহস তাঁর হয় নি?”
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব কি ‘হ্যা’ হবে নাকি ‘না’ হবে? নাকি ‘হ্যা এবং না’ এর মিশেল জবাব হবে? ড. আহমেদ শরীফের মানুষ সম্পর্কে ধারণার ফর্মুলার মধ্যে রাখলে বেগম রোকেয়াকে বলা যেতে পারে- তিনি কখনও বিপ্লবী, কখনও বিপ্লবী নন। তিনি কখনও নারীবাদী, কখনও নারীবাদী নন।
বেগম রোকেয়ার রচনাবলী পাঠ করলেই তার মধ্যে এসমস্ত স্ববিরোধী কথাবার্তা পাওয়া যায়। বর্তমান যুগে বেগম রোকেয়া এবং তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে তুলনামূলক আলোচনাও করা হচ্ছে। এব্যাপারে মুক্তমনায় যারা লেখালেখি করেন এবং বিভিন্ন লেখায় মন্তব্য প্রকাশ করেন, সেগুলোর মধ্যেই বিষয়টি ফুটে উঠে।
লাইজু মান নাহার বলেন-“ বেগম রোকেয়ার পথ ধরে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে গেছে সবখানে সারা বিশ্বেও। তারপরও কথা থাকে।”
ড. নৃপেন্দ্র সরকার তার ‘বাংলাদেশে আমার অসম্পূর্ণ তীর্থ ভ্রমণ’ প্রবন্ধে বলেন- “বেগম রোকেয়াও একদিন উপেক্ষিত-অবহেলিত ছিলেন। তাঁকেও কিছুনা কিছু সামাজিক বাধাবন্ধন অতিক্রম করতে হয়েছে। আজ তাঁকে একজন মহীয়ষী মহিলা হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয়। তাঁর লেখা স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়। তাঁকে নিয়ে গবেষনা হয়। এখন তাঁর সময়ের পৃষ্ঠপোষকরা বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন – ‘বিলম্বে হলেও সুমতি হয়েছে তাহলে…।’”
ড. নৃপেন্দ্র সরকার আরো বলেন- “বাংলাদেশে বেগম রোকেয়ার পর দ্বিতীয় মহিয়সী মহিলা তসলিমা নাসরিণ। তিনি হাজত বাস করেননি। তবে মাথায় মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে অহর্নিশি দিন কাটাচ্ছেন। “নির্বাচিত কলাম” লিখে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছিলেন। মুসলিম নারীদের বৈষম্যের কারণ খুজতে গিয়ে কোরানের আয়াত টুকতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন।”
মাহবুব সাঈদ মামুনও ড. নৃপেন্দ্র সরকারের কথা সাথে সহমত পোষণ করেছেন।
কিন্তু আদিল মাহমুদ একটু ভিন্ন মত পোষণ করে বলছেন- “তবে তসলিমাকে বেগম রোকেয়ার সাথে এখনই তূলনা করে ফেলাটা কি ঠিক হচ্ছে? আপনার মতের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু আমার মতে এটা বলার সময় এখনো আসেনি। ভবিষ্যতে হয়ত কখনো হবে, তবে নিক্ট ভবিষ্যতে হবে তেমন কোন সম্ভাবনা আমি এখনো দেখি না।আমরা যতই বলি না কেন যে ব্যাক্তি জীবন ধরে টানাটানি করতে নেই, কিন্তু ব্যাক্তি জীবনের গুরুত্ত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না। খোদ পশ্চিমেই ব্যক্তিজীবন চলে আসে আর আমাদের দেশে তো কথাই নেই। তসলিমা নিজেই নিজেকে যথেষ্ট বিতর্কিত করে ফেলেছেন। বিশেষ করে তার ব্যাক্তিজীবন নিয়ে তিনি নিজেই যা যা বলেছেন সেগুলি তার মুক্তচিন্তার অবদানকে অনেক খানি খাটো করে দিয়েছে বলেই আমি মনে করি। তাই বেগম রোকেয়ার সাথে তাকে এক কাতারে বসানো মনে হয় এখনো ঠিক না। বেগম রোকেয়া কিন্তু শেষ জীবনে ধর্মকর্মের পথে ঝুকেছিলেন বলেই জানা যায়। সেটা না করলে আজ তার অবস্থান একইভাবে মূল্যায়িত হত কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে।”
ড. নৃপেন্দ্র বেগম রোকেয়া এবং তসলিমার তুলনামূলক পার্থক্য করেছেন এভাবে-
১) বেগম রোকেয়া নারীর সমান অধিকারের জন্য কাজ করেছেন সাবধানে, সাধারন মানুষের মধ্যি থেকে। মানুষের ধর্মানুভূতিতে ধাক্কা দেননি। সমাজকে নড়াচড়া দিয়েছেন কম, আদায় করেছেন বেশী।
২) তসলিমা নাসরিণ – নড়াচড়া দিয়েছেন বেশী মাত্রায় যা সমাজ হজম করতে পারছে না। নারীর অধিকার আদায়ে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। এই যুদ্ধে সহযোদ্ধা তৈরী করার জন্য অপেক্ষা করার মত ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন – সত্যকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেই সবাই তা দেখবে এবং গ্রহন করবে। কিন্তু অনেক সত্য আছে যা অপ্রিয়। তা জেনেও তিনি অপ্রিয় সত্যকে পাশ কাটিয় যান নি। ফল হয়েছে বিপরীত। তিনি যত কম সময়ে সমাজ পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলেন তা সম্ভব নয়। হবে একদিন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় নয়। ধর্মের যুপকাষ্ঠ যখন ধুলিস্মাত হবে তখন।
সাঈদ মামুন তার মতামত ব্যক্ত করেছেন এভাবে: “আমাদের দেখতে হবে বেগম রোকেয়া ও তসলিমা ২ জন দুই সময়ের ও প্রযুক্তির বাসিন্দা।বেগম রোকেয়া যেটা পারেন নি তাঁর জীবতকালের সমাজ ও সামাজিক অবস্হা-ব্যবস্হার কারনে সেটা প্রায় ১০০ বছর পর তসলিমার দ্বারা সম্ভব হয়েছে।”
ড. বিপ্লব পাল বেগম রোকেয়া সম্পর্কে বলেন- “বেগম রোকেয়ার থেকে আমি তসলিমাকে অনেক এগিয়ে রাখব। বেগম রোকেয়ার যে কাজটা করেছেন সেটা হচ্ছে পুরুষতন্ত্রে মেয়েদের গৃহপালিত গাভীর অবস্থানটি মেনে নিয়ে-সেই গাভীটি যাতে বিদ্রোহ না করে দুধ দেয়-তারজন্যে গাভীটির উন্নত পরিচর্যা। ঠিক এই কারনে উনি পুরুষতন্ত্রের উন্নত সেবাদাস হিসাব স্বীকৃত এবং পুরস্কৃত। এবং ধার্মিক নারীবাদি নামে সোনারপাথর বাটির ট্রাডিশনে অগ্রগণ্য। এতে ইসলামে, বাংলাদেশে মেয়েদের অবস্থানের কোন উন্নতি হয় নি। বরং মেয়েদের অবস্থানের আরো অবনতি হয়েছে। সুতরাং পুরুষতন্ত্রকে স্বীকার করে গ্লোরিফাই করা ছাড়া বেগম রোকেয়ার অবদানটা কি?”
ড. বিপ্লব পাল আরো বলেন- “বেগম রোকেয়ার চেয়ে তসলীমা আন্তর্জাতিক ভাবেও অনেক এগিয়ে-কারন তসলিমা একটি সত্যকে সামনে এনেছেন। আর বেগম রোকেয়া একটি মিথ্যেকে ঢাকতে চেয়েছেন। তাই তুলনা করাটা খুবই হাস্যকর-বেগম রোকেয়া যা করেছেন সেটা স্বীকার করেও বলা যায়, তার কাজটি একটি পচা মাছকে শাক দিয়ে ঢাকা ছাড়া কিছু না-এবং তাতে মাছাওয়ালা তার প্রশংসা করলেই, তিনি তসলিমার সমকক্ষ হন না। কোন যুক্তিতেই না।”
ফরিদ আহমেদ তার এই প্রবন্ধে বলছেন- “স্বাক্ষর রোকেয়াকে বিপ্লবী বলেছেন। কিন্তু আমার কাছে রোকেয়াকে বিপ্লবীতো অনেক দূরের কথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে নিজের ভূমিকা সম্পর্কেই সচেতন ছিলেন না কি না সে বিষয়েই সন্দেহ জাগে।”
আশরাফ আহমেদ তার ‘আমি কার বাবারে, আমি কার খালুরে?’ প্রবন্ধে রোকেয়া সম্পর্কে বলছেন- “বেগম রোকেয়ার ‘নারীস্থান’ এর কথা মনে আছে? এক’শ বছরেরও আগে লিখেছিলেন। এতো বছর পরে আমাদের সময়েও তাঁর লেখাগুলো নিঃসন্দেহে বিদ্রোহাত্মক ও বৈপ্লবিক। এক সময়ে সমাজে পুরুষের অন্যায় কর্তৃত্বকে তিনি এতোটাই ঘৃণা করতে শুরু করেন যে, এক কল্পিত ‘নারীস্থান’ এ পুরুষ জাতিকে বাড়ীর ভেতরে ঠেলে দিয়েছিলেন সব ঘৃহস্থালির কাজ করানোর জন্য।”
গীতা দাস চারটি পর্বে ‘বেগম রোকেয়ার রচনা: লোকজন জীবন অভিজ্ঞতা’ লিখেছেন। তিনি সেখানে রোকেয়ার পদ্মরাগ সম্পর্কে বলছেন- “বেগম রোকেয়ার লেখা একমাত্র উপন্যাস ‘পদ্মরাগ’ নারীবাদের বিভিন্ন ভাবনার প্রতিফলনের সাথে বাংলার লোক সংস্কৃতির অনেক স্বাক্ষর রয়েছে। সিদ্দিকা তথা পদ্মরাগ——— যার আসল নাম জয়নব বেগম রোকেয়ার নারীবাদী চেতনার এক বলিষ্ঠ্য প্রকাশ। এ উপন্যাসের পরিণতি পাঠককে ভাবায়, কাঁদায় ও চিন্তায় ভাসায় বৈকি? পদ্মরাগ ভাঙ্গে তবু মচকায় না। সে নিয়তিকে জয় করে রোকেয়ারই ইচ্ছা শক্তির জোরে।”
তাহলে দেখা যাচ্ছে মুক্তমনার পাঠকরাও বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ তাকে বিপ্লবী, নারীবাদী, সমাজ সংস্কারক বলে উল্লেখ করছেন আবার কেউ কেউ তাকে সেরকমভাবে ভাবতে বা মানতে রাজী হচ্ছেন না।
আমার মতে- “ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি ছিলেন বিপ্লবী। সময় এগিয়ে গেছে, সমাজ বদলেছে যান্ত্রিক সভ্যতায়। এখনকার মাপকাঠিতে বেগম রোকেয়াকে তসলিমার মত বিপ্লবী মনে হবে না।
লিভ টুগেদার বা সমকামিতাকে বর্তমানে যতই কুৎসিত মনে করা হোক না কেন, অদূর ভবিষ্যতে সেগুলোকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
বর্তমানে যেটা অন্যায় অশোভন কুৎসিত মনে করা হচ্ছে ভবিষ্যতেই সেটাকে খুবই স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা হবে।
বেগম রোকেয়া বোরকার আড়ালে থাকতে ভালোবেসেন, সেখানে থেকেই বিপ্লবী হয়েছেন। তসলিমা বোরকাকে ফেলে দিয়ে, ধর্মকে আস্তাকুড়ে ফেলে অর্ধ উলঙ্গের মত বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন কেউ আসবেন যেখানে পর্ণগ্রাফীকেও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবেন।
@মাহফুজ,
আপনি যে মুক্ত- মনার একজন একনিষ্ঠ পাঠক তা উপরের লেখায় প্রমাণ দিলেন।
ফরিদ,
আমি ইচ্ছে করেই রোকেয়া বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেইনি। স্বাক্ষর আমাকে প্রায়ই বলে রোকেয়া ভাল মত পড়। ‘বেগম রোকেয়ার রচনা: লোকজন জীবন অভিজ্ঞতা’লিখতে গিয়ে নতুন করে পড়েছি। তবু ও বলে আবারও পড়তে। কাজেই …………।
@গীতা দাস,
স্বাক্ষরের মত ছেলে পাওয়াতো ভাগ্যের ব্যাপার দিদি। নাহ! ঠিক হলো না কথাটা। মায়ের রক্ত, ঘাম, পরিশ্রম আর কঠিন সাধনায় পাওয়া। 🙂
আলোচনায় অংশ নিলেই পারতেন দিদি। তাতে করে এর বৈচিত্র্য যেমন বাড়তো, তেমনি ধার আর মানেও সেটা হতো শাণিত। রোকেয়াতো কোনো প্রেরিত নবী বা রসুল না যে তাঁকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা যাবে না।
@মাহফুজ,
ভাই আপনার নির্মোহ নিরপেক্ষ লেখার জন্য ধন্যবাদ!
আজ শত বছর পরেও বেগম রোকেয়াকে নিয়ে কেন আলোচনা করা হয়? তার কারণ উনি একজন সফল এক্টিভিস্ট ছিলেন বলে। ্নিজের ঘরে বসে কাগজ-কলমে অনেক কিছুই লেখা যায়। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই নারীর উন্নতি তথা সমাজের উন্নতি করতে হলে সেই সমাজের মানসিকতা বুঝে সমাজের মানুষগু্লোর জন্য স্কুল, কলেজ, কর্মসংস্থান তেরীর মতো কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হয়।
এটা বোঝার মতো প্রজ্ঞা যাদের আছে তারাই হয়ে উঠেন কালজয়ী। সমাজের অবস্থা বুঝে জাহানারা ঈমামের মতো মানুষও মাথায় কাপড় দেন। বাংলাদেশের সফল পুরুষ এক্টিভিস্টরাও (যেমন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ব্রয়াক, গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাগন) এর ব্যতিক্রম নন। উনাদের ধ্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেন (আমি নিজে বিশ্বাস করি জ্ঞানের মাত্রা একটা পর্যায় ছাড়ালে মানুষের মন আপনা আপনিই অনেক প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি লাভ করে), সর্বসাধারনের মাঝে বক্তৃতা করার সময় অনেক সময় ধ্ম থেকেও উদাহরন দেন। তাঁদের মধ্যে জ্ঞান এবং মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের সম্বনয় ঘটেছিল বলে বাংলাদেশের মতো অতি সমালোচনামুখর পরিবেশেও কাজ চালিয়ে যেতে পে্রেছেন।
বেগম রোকেয়া এজন্যই অনন্য কারণ উনার সময়ের পর থেকে বাংগালি মুসলিম সমাজের নারীরা লেখাপড়ায় এগিয়েছে। এটা আজ প্রমানিত।
পরবতী বিপ্লব হওয়া উচিত ছিল নারীদের অধিক উতপাদনশীলতার সাথে যুক্ত করা। তা না হয়ে এখন নারীবাদীরা যা করছে তা হলো ধর্মের সমালোচনা। এটাতে কি তেমন লাভ হয়েছে? আমি তো চারপাশে তাকিয়ে দেখি এখনকার ইয়ুথ নারীদের থেকে নব্বই দশকের আগের নারীরা অনেক বেশি সেকুলার ছিলো।
আমার প্রজন্মের বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট সর্বস্ব মেধাবী নারীদের একটা বড় অংশকে দেখে মনে হয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশের মুসলিম নারীদের প্রগতির পথে বড় অন্তরায়গুলো হলো পারিবারিক মূল্যবোধ এবং স্বপ্নবোধের অভাব, একসাথে একাধিক কাজ না করতে পারা, অতিরিক্ত অহমবোধ এবং আলস্য। খুব কম সংখ্যক নারীই কর্মজীবি। ধর্মকে ব্যবহার করে সুবিধামতো। হেজাব করবে আবার উদিকে সুদ দিয়ে বাড়ি কিনবে। মূলত জীবনের চাওয়া-পাওয়ার দূরত্বের সাথে ধ্র্রমাশ্রয়ী হওয়াটা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। নারীর সত্যিকার উন্নতি চাইলে আমাদের দরকার বেগম রোকেয়ার মতো আরো অনেক এক্টিভিস্ট। নারীবাদীরা যা করছে তা হলো একই লেখার চর্বিত চয়ন।
@ ফরিদ ভাই, এ ধরণের লেখা লিখলেই প্রথমেই কিন্তু শুনবেন আহা তাকে তার সময়ের বেষ্টনীতে ফেলে বিচার করতে হবে, না হলে অবিচার হয়ে যাবে। ও হ্যা তাই তো, ঠিকই তো বলেন তারা। যারা এ ধরণের সমালোচনার বিরোধিতা করার জন্য এ কথাগুলো বলেন তাদের সাথে আমি কিন্তু সম্পূর্ণভাবেএকমত। রবীন্দ্রনাথের নারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিপ্লবের সাথে বিতর্ক করার সময়ও একই কথা বলেছিলাম। চলুন দেখি, রোকেয়ার সময়ে পৃথিবীটা কিরকম ছিল! সারা ইউরোপ জুরে তখন মেয়েদের সমাধিকার প্রতিষ্ঠার তুমুল আন্দোলন চলছে, অনেক দেশেই মেয়েদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, আমেরিকার মত রক্ষণশীল দেশে মেয়েরা সাফ্রেজ আন্দোলন করে চলেছেন, ফরাসী বিপ্লব হয়ে গেছে, সেকুলারিজম তখন আর ভয়ঙ্কর কোন কনসেপ্ট নয়, রাশিয়ার বিপ্লবে মেয়েরা দলে দলে যোগ দিয়েছে,… আমরা যাদেরকে প্রগতিশীল কবি, সাহিত্যিক দার্শনিক বা নারী আন্দোলনের বাহক বলে স্বীকৃতি দেব তাদেরকে সে সময়ের বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ফেলে বিচার তো করতেই হবে,। আচ্ছা, চলুন না, এবার দেখি বাংলায় কি হচ্ছিল সে সময়ে, কমিউনিষ্ট আন্দোলন চলছে বেশ ভালো গতিতে, বেশ কিছু মেয়ে যোগ দিয়েছে, স্বদেশী আন্দোলনে মেয়েদের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছু নেই ( রোকেয়া কি এ প্রসঙ্গে কিছু লিখেছেন, কী জানলে দয়া করে জানাবেন)। তাহলে সে সময়ে যদি আমাদের ‘মাথায় করে রাখা’ প্রগতিশীলেরা বলেন যে, পর্দাই নারীকে রক্ষা করবে, পুরুষই নারীর আশ্রয়, ঘরেই শোভা পায় নারী, তাদেরকে তখন কিভাবে মূল্যায়ন করা উচিত? কেউ যদি তার সময়ের মানুষের চেয়েও পিছিয়ে থেকে কিছু সংস্কারের কথা বলেন তাকে তো আমার মতে প্রগতিশীল নয় বরং ‘সময়ের শৃংখলে বাঁধা পরা সংস্কারক’ হিসেবেই মূল্যায়ন করা উচিত, সেটুকুই ক্রেডিটই না হয় দেই তাদেরকে। আমরা যতই পাঠ্যপুস্তকে তাদের মহান উক্তি তুলে ধরে বাচ্চাদের মস্তিষ্ক ধোলাই করি না কেন, ইতিহাস হয়তো একদিন তাদের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে সেটা মাথায় রাখা উচিত। এ নিয়ে বিতর্ক করতে ভালো লাগে না, কেমন যেন ক্লান্ত লাগে। আমি নিজে তসলিমার ফ্যান নই, কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হয় যার যতটুকু অবদান তাকে ততটুকুই দেওয়া হোক না, অযথা মাথায় তুলে নাচানাচি করার কি দরকার! এ ধরণের টেন্ডেন্সি শুধু আমাদের জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সব দেশের ইতিহাসেই দেখবেন এ ধরণের উদবাহু (দয় বয় দিতে পারছি না) ‘নেত্ত’ করার ব্যাপার স্যাপার আছে।
@বন্যা আহমেদ,
এটা কোত্থেকে পেলে? কমিনিউস্ট দলগুলো এবং তাদের আন্দোলন ভীষন ভাবেই পুরুষ তান্ত্রিক। ১৯১২ সালের প্রথম বলশেভিক কংগ্রেসে সেন্ট্রআল কমিটিতে কজন মেয়েছিল? ১৯১৭ সালেই বলশেভিক বিপ্লবে মহিলা বিপ্লবীদের নাম মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুজতে হবে। তৎকালীন একমাত্র মহিলা বিপ্লবী জার্মানীর কমিনিউস্ট বিপ্লবী রোজা লুক্সেমবার্গকে লেনিন মহিলা বলে গালাগাল দিয়েছিলেন-কারন রোজার স্পর্ধা হয়েছিল লেনিনের গণতন্ত্র ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলার!
যাইহোক কমিনিউস্ট নেতৃত্বে মহিলারা কোথায় বলে আমার একটা লেখা আছে। এখানে কেও রাজনীতি নিয়ে উৎসাহী নয় বলে, পোস্ট করি নি।
ভারত থেকে শুরু করে সব দেশেই কমিনিউস্ট নেতৃত্বে মহিলা খুঁজতে মাইক্রোস্কোপ ভেঙে ফেলবে।
@বিপ্লব পাল, আমি কি কোথাও নেতৃত্বের কথা বলেছি? দেখো তো ভালো করে আবার। মা গল্প বা অন্য অনেক কিছুতেই মেয়েদের নাম দেখেছি, এডগার স্নোর চীনের আকাশে লাল তারা বইতে চীনের বিল্পবেও মেয়েদের অংশগ্রহনের কথা উল্লেখ আছে। এখানে বোধ হয় সেটা মূল কথা ছিল না, কয়েকজন মেয়েও যদি যোগ দিয়ে থাকে সেটাও তো অনেক বড় কথা। ‘দলে দলে’ কথাটা না হয় উঠিয়েই দিলাম, তা তেও তো ম্যাসেজ একই থাকছে। সে সময়ে বিশ্বব্যাপি মেয়েদের অবস্থা কি ছিল তা বোঝাতে এটা বলেছিলাম।
@বন্যা আহমেদ,
অক্টোবর বিপ্লবে নারীদের অবদান সম্বন্ধে তেমন জানিনা, কিন্তু এটা জানি যে ভয়ংকর পুরুষতান্ত্রিক ফরাসী বিপ্লবে মহিলারা দলে দলেই যোগদান করেছিলেন, ভার্সাই দুর্গ দখল করা শুদ্ধ। ইতিহাসের গতি বড়ই জটিল।
@লেখক,
কিছু উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে প্রসঙ্গের প্রতি যত্ন করা হয় নি, উভয়েই। হঠাৎ করে রোকেয়া নাস্তিক ঠাওরানোও কাজের কাজ না, আবার তাকে “অতি প্রথা মান্যকারী স্ববিরোধিতাগ্রস্ত পতিপ্রভুর চিরবাধ্য ও অনুগত এক বিবি” বলাও অকাজ।
পর্দা করার, কোরান পড়ার, সুগৃহিণীর গুণাগুণ ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গে রোকেয়া যা বলেছেন আর তার যে অর্থ বের করা হয়েছে তা সঠিক নয়। এই প্রচষ্টা অনেক্টা নাস্তিক যেইভাবে কোরানের লাইনে লাইনে ভুল ধরে, আর মোল্লা যেইভাবে তা রক্ষা করতে চায় সেই রকম হয়ে গেছে।
তবে ফরিদকে ধন্যবাদ, কিছু রাখঢাক করেছেন, কিন্তু আকিমুন রোকেয়াকে নারীজাতির “শত্রু” করে তুলেছেন প্রায়।
@তনুশ্রী রয়,
আমি এখানে পুরো সুগৃহিনী প্রবন্ধটা তুলে দিচ্ছি। আপনি আমাকে বলুন যে বেগম রোকেয়া কী বোঝাতে চেয়েছেন এই প্রবন্ধে। বেগম পত্রিকার কোনো প্রবন্ধ বলে ভ্রম হয় কি না একে।
সুগৃহিণী
ইতঃপূর্ব্বে আমি “স্ত্রীজাতির অবনতি” প্রবন্ধে আমাদের প্রকৃত অবস্থার চিত্র দেখাইতে প্রয়াস পাইয়াছি কিন্তু সত্য কথা সর্ব্বদাই কিঞ্চিৎ শ্রুতিকটু বলিয়া অনেকে উহা পছন্দ করেন নাই।১ অতঃপর “অদ্ধাঙ্গী” প্রবন্ধে আমি দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি যে, নারী ও নর উভয়ে একই বস্তুর অঙ্গবিশেষ। যেমন একজনের দুইটি হাত কিংবা কোন শকটের দুইটি চক্র, সুতরাং উভয়ে সমতুল্য, অথবা উভয়ে মিলিয়া একই বস্তু হয়। তাই একটিকে ছাড়িয়া অপরটি সম্পূর্ণ উন্নতিলাভ করিতে পারিবে না। একচক্ষুবিশিষ্ট ব্যাক্তিকে লোকে কাণা বলে।
যাহা হউক আধ্যাত্মিক সমকতার ভাষা যদি স্ত্রীলোকেরা না বুঝেন, তবে উচ্চ আকাঙ্খা বা উচ্চভাবের কথায় কাজ নাই। আজি আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি? বোধ হয় আপনারা সমস্বরে বলিবেনঃ
“সুগৃহিণী হওয়া”
বেশ কথা। আশা করি আপনারা সকলেই সুগৃহিণী হইতে ইচ্ছা করেন, এবং সুগৃহিণী হইতে হইলে যে যে গুণের আবশ্যক, তাহা শিক্ষা করিতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করিয়া থাকেন। কিন্তু আজ পর্য্যন্ত আপনাদের অনেকেই প্রকৃত সুগৃহিণী হইতে পারেন নাই। কারণ আমাদের বিশেষ জ্ঞানের আবশ্যক, তাহা আমরা লাভ করিতে পারি না। সমাজ আমাদের উচ্চশিক্ষা লাভ করা অনাবশ্যক মনে করেন। পুরুষ বিদ্যালাভ করেন অন্ন উপার্জ্জনের আশায়, আমরা বিদ্যালাভ করিব কিসের আশায়? অনেকের মত আমাদের বুদ্ধি বিবেচনার প্রয়োজন নাই। যেহেতু আমাদিগকে অন্নচিন্তা করিতে হয় না, সম্পত্তি রক্ষার্থে মোকদ্দমা করিতে হয় না, চাকরীলাভের জন্য সার্টিফিকেট ভিক্ষা করিতে হয় না, “নবাব” “রাজা” উপাধিলাভের জন্য স্বেতাঙ্গ প্রভুদের খোসামোদ করিতে হয় না, কিংবা কোন সময়ে দেশরক্ষার্থে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে হইবে না। তবে আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ (অথবা Mental culture) করিব কিসের জন্য? আমি বলি, সুগৃহিণী হওয়ার নিমিত্তই সুশিক্ষা (Mental culture) আবশ্যক।
এই যে গৃহিণীদের ঘরকান্নার দৈনিক কার্য্যগুলি, ইহা সুচারুরূপে সম্পাদন করিবার জন্যও ত বিশেষ জ্ঞান বুদ্ধির প্রয়োজন। চিন্তা করিলে দেখা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে তাঁহারাই সমাজের হর্ত্রী কর্ত্রী ও বিধাত্রী, তাঁহারাই সমাজের গৃহলক্ষ্মী, ভগিনী এবং জননী।
ঘরকন্নার কাজগুলি প্রধানতঃ এই-
(ক) গৃহ এবং গৃহসামগ্রী পরিস্কার ও সুন্দররূপে সাজাইয়া রাখা।
(খ) পরিমিত ব্যয়ে সুচারুরূপে গৃহস্থালী সম্পন্ন করা।
(গ) রন্ধন ও পরিবেশন।
(ঘ) সূচিকর্ম্ম।
(ঙ) পরিজনদিগকে যত্ন করা।
(চ) সন্তানপালন করা।
এখন দেখা যাউক ঐ কার্য্যগুলি এদেশে কিরূপ হইয়া থাকে এবং কিরূপ হওয়া উচিত। আমরা ধনবান এবং নিঃস্বদিগকে ছাড়িয়া মধ্যম অবস্থার লোকের কথা বলিব।
গৃহখানা পরিস্কার ও অল্পব্যয়ে সুন্দর রূপে সাজাইয়া রাখিতে হইলে বুদ্ধির দরকার। প্রথমে গৃহনির্ম্মাণের সময়ই গৃহিণীকে স্বীয় সলিকা (taste) দেখাইতে হইবে২ কোথায় একটি বাগান হইবে, কোন স্থানে রন্ধনশালা হইবে ইত্যাদি তাঁহারই পসন্দ অনুসারে কোথায় চাই। ভাড়াটে বাড়ী হইলে তাহার কোন কামনা কিরূপে ব্যবহৃত হইবে, সে বিষয়ে সলিকা চাই। যেহেতু তিনি গৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কিন্তু বলি, জয় জন গৃহিণীর এ জ্ঞান আছে? আমরা এমন গৃহিণী যে গৃহব্যাপারই বুঝি না! আমাদের বিসমেল্লায়ই গলৎ!! গৃহনির্ম্মাণের পর গৃহসামগ্রী চাই। তাহা সাজাইয়া গুছাইয়া রাখার জন্যও সলিকা চাই। কোথায় কোন জিনিসটা থাকিলে মানায় ভাল, কোথায় কি মানায় না, এ সব বুঝিবার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। একটা মেয়েলী প্রবাদ আছে, “সেই ধান সেই চাউল গিন্নী গুলে আউল ঝাউল” (এলোমেলো)। ভাঁড়ার ঘরে সচরাচর দেখা যায়, মাকড়সার জাল চাঁদোয়ারূপে শোভা পাইতেছে! তেঁতুলে তণ্ডুলে বেশ মেশামিশী হইয়া আছে, কোথাও ধ’নের সহিত মৌরি পাইতেছে। চিনি খুঁজিয়া বাহির করিতে এক ঘন্টা সময় লাগে। চারি দিক বদ্ধ থাকে বলিয়া ভাঁড়ার ঘরের দ্বার খোলা মাত্র বদ্ধ বায়ুর এক প্রকার দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। অভ্যাসের কৃপায় এ দুর্গন্ধ গিন্নিদের অপ্রিয় বোধ হয় না।
অনেক শ্রীমতী পান সাজিতে বসিয়া যাঁতির খোঁজ করেন; যাঁতি পাওয়া গেলে দেখেন পানগুলি ধোওয়া হয় নাই। পানের ডিবে কোন ছেলে কোথায় রাখে তার ঠিক নাই! কখন না খয়ের ও চূণের সংমিশ্রণে এক অদ্ভুদ পদার্থ প্রস্তুত হইয়া থাকে। পান থাকে ঘটিতে, সুপারী থাকে একটা সাজিতে, খয়ের হয়ত থাকে কাপড়ের বাক্সে! অবশ্য “সাহেবে সলিকা” গণ এরূপ করেন না। তাঁহাদের পানের সমস্ত জিনিস যথাস্থানে সুসজ্জিত থাকে।
কেহ বা চা’র পাত্র (tea-port) মৎস্যাধাররূপে ব্যবহার করেন, ময়দা চালিবার চালনীতে পটল, কুমড়া প্রভৃতি তরকারি কুটিয়া রাখা হয়! পিতলের বাটীতে তেঁতুলের আচার থাকে! পূর্ব্বে মুসলমানেরা “মোকাবা” (পাত্র বিশেষ, যাহাতে চুল বাঁধিবার সমঞ্জাম থাকে) রাখিতেন, আজিকালি অনেকে toilet table রাখেন। ইহাদের “মোকাবায়” কিংবা টেবিলের উপর চিরুণী তৈল (toilet সামগ্রী) ছাড়া আরও অনেক জিনিষ থাকে, যাহার সহিত কেশবিন্যাস সামগ্রীর (toilet এর) কোন সম্পূর্ণ নাই।
পরিমিত ব্যয় করা গৃহিণীর একটা প্রধান গুণ। হতভাগা পুরুষেরা টাকা উপার্জ্জন করিতে কিরূপ শ্রম ও যত্ন করেন, কতখানি ঘাম পায় ফেলিয়া এক একটী পয়সার মূল্য (পারিশ্রমিক) দিয়া থাকেন, অনেক গৃহিণী তাহা একটু চিন্তা করিয়াও দেখেন না। উপার্জ্জন না করিলে স্বামীর সহিত ঝগড়া করিবেন, যথাসাধ্য কটুকাটব্য বলিবেন, কিন্তু একটু সহানুভূতি করেন কই? ঐ শ্রমার্জ্জিত টাকাগুলি কন্যার বিবাহে বা পুত্রের অন্নপ্রাশনে কেবল সাধ (আমোদ) আহ্রাদে ব্যয় করিবেন, অথবা অলঙ্কার গড়াইতে ঐ টাকা দ্বারা স্বর্ণকারের উদর-পূর্ত্তি করিবেন। স্বামী বেচারা এক সময় চাকরীর আশায় সার্টিফিকেট কুড়াইবার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া, বহু আয়াসে সামান্য বেতনে চাকরী প্রাপ্ত হইয়া প্রাণপণে পরিশ্রম করিয়া যে টাকা কয়টি পত্নীর হাতে আনিয়া দেন, তাহার অধিকাংশ মল ও নুপুরের বেশে তাঁহার কন্যাদের চরণ বেড়িয়া রুণুঝুনু রবে কাঁদিতে থাকে। হায় বালিকে! তোমার চরণশোভন সেই মল গড়াইতে তোমার পিতার হৃদয়ের কতখানি রক্ত শোষিত হইয়াছে তাহা তুমি বুঝ না।
স্বামীর আয় অনুসারে ব্যয় করাই অর্থের সদ্ব্যবহার। ইউরোপীয় মহিলাদের কথার মূল্য বেশী, তাই একজন কাউনটেসের (Countess) উক্তি উদ্ধৃত করা গেলঃ
“The first point necessary to consider in the arrangemnet and ordering of a lady’s househole, is that everything should be on a scale exactly proportionate to her husband’s income.”
(ভাবার্থ-বাড়ী ঘর সাজাইবার সময় গৃহিণী সর্ব্বপ্রথমে এই বিষয়ে দৃষ্টি রাখিবেন যে তাঁহার গৃহস্থালীর যাবতীয় সামগ্রী যেন তাঁহার স্বামীর আয় অনুসারে প্রস্তুত হয়। তাঁহার গৃহসজ্জা দেখিয়া যেন তাঁহার স্বামীর আর্থিক অবস্থা ঠিক অনুমান করা যাইতে পারে)।
সুশিক্ষা প্রাপ্ত না হইলে আমরা টাকার সদ্ব্যবহার শিখিব কিরূপে? গৃহিণীরা যে স্বামীকে ভালবাসেন না, আমি ইহা বলিতেছি না। তাঁহারা স্বামীকে প্রাণের অধিক ভালবাসে, কিন্তু বুদ্ধি না থাকাবশতঃ প্রকৃত সহানুভূতি করিতে পারেন না। কবিবর সাদী বুদ্ধিহীন বন্ধু অপেক্ষা বুদ্ধিমান শক্রকে শ্রেষ্ঠ বলিয়াছেন। বাস্তবিক স্ত্রীদের অন্ধপ্রেমে অনেক সময় পুরুষদের ইষ্ট না হইয়া অনিষ্ট সাধিত হয়।
কেহ আবার পরিমিত ব্যয় করিতে যাইয়া একেবারে কৃপণ হইয়া পড়েন, ইহাও উচিত নহে।
গৃহিণীর রন্ধন শিক্ষা করা উচিত, এ কথা কে অস্বীকার করেন? একটা প্রবাদ আছে যে স্ত্রীদের রান্না তাঁহাদের স্বামীর রুচি অনুসারে হয়। গৃহিণী যে খাদ্য প্রস্তুত করেন; তাহার উপর পরিবারস্থ সকলের জীবনধারণ নির্ভর করে। মূর্খ রাঁধুনীরা প্রায়ই “কালাই”৩ রহিত তাম্রপাত্রে দধি মিশ্রিত করিয়া যে কোর্ম্মা প্রস্তুত করে, তাহ বিষ ভিন্ন আর কিছু নহে; মুসলমানেরা প্রায়ই অরুচি, ক্ষুদামান্দ্য ও অজীর্ণ রোগে ভুগিয়া থাকেন, তাহার কারণ খাদ্যের দোষ ছাড়া আর কি হইতে পারে? এ সম্বন্ধেও সেই কাউনটেসের (Chemistry) উক্তি শুনুন,-
“Bad food, ill-cooded food, monotonous food, insufficient food, injure the physique and ruin the temper. No lady should turn to the more tempting occupations of amusements of the day till she had gone into every detail of the family commissariat and assured herself that it is as good as her purse, her cook, and the season can make it.”
(ভাবার্থ-কোন মহিলাই প্রথমে স্বীয় পরিবারস্থ ব্যক্তিবর্গের আহারের সুবন্দোবস্ত এবং রন্ধনশালা পরিদর্শন না করিয়া যেন অন্য কোন বিষয়ে মনোযোগ না করেন। তাঁহার আর্থিক অবস্থানুসারে খাদ্যসামগ্রী যথাসাধ্য সুরুচিকর হইয়া থাকে কি না এ বিষয়ে তাঁহার দৃষ্টি রাখা কর্ত্তব্য। ষড় ঋতুর পরিবর্ত্তনের সহিত আহার্য্য বস্তুরও পরিবর্ত্তন করা আবশ্যক। ভোজ্য দ্রব্য যথাবিধি রন্ধন না হইলে কিম্বা সর্ব্বদা একই প্রকার খাদ্য এবং অখাদ্য ভোজন করিলে শরীর দুর্ব্বল এবং নানা রোগের আধার হইয়া পড়ে)।
সুতরাং রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে সঙ্গেই গৃহিণীর ডাক্তারী ও Chemistry) রসায়ন বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান আবশ্যক। কোন খাদ্যের কি গুণ, বস্তু কত সময়ে পরিপাক হয়, কোন ব্যক্তির নিমিত্ত কিরূপ আহার্যø প্রয়োজন, এ সব বিষয়ে গৃহিণীর জ্ঞান চাই। যদি আহারই যথাবিধি না হয়, তবে শরীরের পুষ্টি হইবে কিসের দ্বারা? অযোগ্য ধাত্রীর হস্তে কেহ সন্তান পালনের ভার দেন না, তদ্রূপ অযোগ্য রাঁধুনীর হাতে খাদ্য দ্রব্যের ভার দেওয়া কি কর্ত্তব্য? রন্ধনশালার চতুর্দ্দিকে কাদা হইলে সেই স্থান হইতে সতত দূষিত বাস্প উঠিতে থাকে; বাড়ীর লোকেরা দুগ্ধ এবং অন্যান্য খাদ্যের সহিত ঐ বাস্প আত্মসাৎ করে। কেবল আহারের স্থান পরিস্কৃত হইলেই চলিবে না; যে স্থানে আহার করা হয় সে জায়গায় বায়ু (Atmosphere) পর্যন্ত যাহাতে পরিস্কৃত থাকে, গৃহিণী সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখিবেন।
অনেকে শাকসবজী খাইতে ভালবাসেন। বাজারের তরকারী অপেক্ষা গৃহজাত তরকারী অবশ্য ভাল হয়। গৃহিণী প্রায়ই শিম, লাউ, শশা, কুম্মণ্ড স্বহস্তে বপন করিয়া থাকেন। যদি তাঁহারা উদ্যান প্রস্তুত প্রণালী (Horticulture) অবগত থাকেন, তবে ঐ লাউ কুমড়ার কি সমধিক উন্নতি হইবে, গৃহিণীর এ জ্ঞানটুকু ত থাকা চাই।
অনেকেই ছাগল, কুক্কুট, হংস, পারাবত ইত্যাদি পালন করেন, কিন্তু সেই সকল জন্তু পালন করিবার রীতি অনেকেই জানেন না। উহাদের নিমিত্ত নির্দ্দিষ্ট স্বতন্ত্র স্থান না থাকায় উহারা বাড়ীর মধ্যেই ঘুরিয়া চরিয়া বেড়ায়। কাজেই বাড়ীখানাকে পশুশালা বা পশুপীদের “ময়লার ঘর” বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। যাহাতে এই জন্তুগুলি রুগ্ন না হইয়া হৃষ্টপুষ্ট থাকে এবং গৃহ নোঙ্গরা করিতে না পারে, তৎপ্রতি গৃহিণীর দৃষ্টি থাকা আবশ্যক। উহাদের বাসস্থানও পরিস্কৃত উবং হাওয়াদার (airy) হওয়া উচিত। নচেৎ রুগ্ন পশুপীর মাংস খাওয়ায় অনিষ্ট বই উপকার নাই। তবেই দেখা যায়, এক রন্ধন শিক্ষা করিতে যাইয়া আমাদিগকে উদি্ভদবিজ্ঞান, রসায়ন ও উত্তাপ তত্ত্ব (Horticulture, Chemistry ও Theory of heat) শিখিতে হয়!!
অন্নের পরই বস্ত্র-না, মানুষ বস্ত্রকে অন্ন অপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয় মনে করে। শীত গ্রীস্মনুযায়ী বস্ত্র, প্রস্তুত কিংবা সেলাই করা গৃহিণীর কর্ত্তব্য। পূর্ব্বে তাঁহারা চরখা কাটিয়া সূতা প্রস্তুত করিতেন। এখন কল কারখানার অনুগ্রহে কাপড় সুলভ হইয়াছে বটে, কিন্তু নিজ taste (পসন্দ) অনুসারে সেলাই করিতে হয়। এ জন্যও সুশিক্ষা লাভ করা আবশ্যক। আপনারা হয়ত মনে করিবেন যে, আমার সব কথাই দৃষ্টিছাড়া। এত কাল হইতে নিরর দরজীরা ভালই সেলাই করিয়া আসিতেছে, সেলাইএর সঙ্গে সুশিক্ষার সম্বন্ধ কি? সেলাইএর সহিত পড়ার সাক্ষাৎ সম্বন্ধ নাই বটে, কিন্তু আনুষঙ্গিক (indirect) সম্বন্ধ আছে। পড়িতে (বিশেষতঃ ইংরাজী) না জানিলে সেলাইয়ের কল (sewing machine এর) ব্যবস্থাপত্র পাঠ করা যায় না। ব্যবস্থা না বুঝিলে মেশিন (machine) দ্বারা ভাল সেলাই করা যায় না। কেবল হাতে সেলাই করিলে লেখা পড়া শিখিতে হয় না, সত্য। কিন্তু হাতের সেলাইএর সহিত মেশিনএর সেলাইয়ের তুলনা করিয়া দেখিবেন ত কোনটি শ্রেষ্ঠ? তাহা ছাড়া মেশিন দ্বারা অল্প সময়ে এবং অল্প পরিশ্রমে অধিক সেলাই হয়। অতএব মেশিন চালনা শিক্ষা করাই শ্রেয়ঃ। এতদ্ব্যতীত ক্যানভাস (Canvas) এর জুতা, পশমের মোজা, শাল প্রভৃতি কে না ব্যবহার করিতে চাহেন? এই প্রকারের সূচিকার্য ইংরাজী (knitting ও Crochet সম্বন্ধীয়) ব্যবস্থাপত্রের সাহায্য ব্যতীত সুচারুরূপে হয় না। ঐ ব্যবস্থাপুস্তকপাঠে শিয়িত্রীর কাট সাহায্যে সূচিকর্ম্মে সুনিপুণা হওয়া যায়; কাপড়ের ছাঁট কাট সবই উৎকৃষ্ট হয়। কাপড়ের কাট ছাঁটের জন্যও ত বুদ্ধির দরকার। কাপড়, পশম, জুতা ইত্যাদির পরিমাণ জানা থাকিলে, একজোড়া মোজার জন্য তিন জোড়ার পশম কিনিয়া অনর্থক অপব্যয় করিতেও হয় না।
পরিবারভুক্ত লোকদের সেবা যত্ন করা গৃহিণীর অবশ্য কর্ত্তব্য। প্রত্যেকের সুখ সুবিধার নিমিত্ত নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থত্যাগ করা রমণীজীবনের ধর্ম্ম। এ কার্য্যের জন্যও সুশিক্ষা (training) চাই। সচরাচর গৃহিণীরা পরিজনকে সুখ দিবেন ত দূরের কথা, তাঁহাদের সহিত ছোট ছোট বিষয় লইয়া কোঁদল কলহে সময় কাটাইয়া থাকেন। শাশুড়ীর নিন্দা ননদিনীর নিকট, আবার ননদের কুৎসা মাতার নিকট করেন, এইভাবে দিন যায়।
কেহ পীড়িত হইলে তাহার যথোচিত সেবা করা গৃহিণীর কর্ত্তব্য, রোগীর সেবা অতি গুরুতর কার্য্য। যথারীতি শুশ্রূষা-প্রণালী (nursing) অবগত না হইলে এ বিষয়ে কৃতকার্য্য হওয়া যায় না। আমাদের দেশে অধিকাংশ রোগী ঔষধ পথ্যের অভাব না হইলেও শুশ্রূষার অভাবে মারা যায়। অনেক স্থানে নিরর সেবিকা রোগীকে মালিশের ঔষধ খাওয়াইয়া দেয়। কেহ বা অসাবধনতাবশঃ বিষাক্ত ঔষধ যেখানে সেখানে রাখে, তাহাতে অবোধ শিশুরা সেই ঔষধ খাইয়া ফেলে। এইরূপ ভ্রমের জন্য চিরজীবন অনুতাপে দগ্ধ হইতে হয়। কেহ বা রোগীর নিদ্রা ভঙ্গ করিয়া পথ্য দান করে, কেহ অধ্যধিক স্নেহবশতঃ তিন চারি বারের ঔষধ একবারে সেবন করায়। এরূপ ঘটনা এদেশে বিরল নহে। ডাক্তারী বিষয়ে সেবিকার উপযুক্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক, একথা কেহ অস্বীকার করেন কি? ডাক্তারী না জানিয়া শুশ্রূষা করিতে যাওয়া যা, আর স্বর্ণকারের কাজ শিখিয়া চর্ম্মকারের কাজ করিতে যাওয়াও তাই!
কিন্তু ডাক্তারী জান বা জান, রোগীর সেবা সকলকেই করিতে হয়। এমন দুহিতা কে আছেন, যিনি অশ্রুধারায় জননীর পদ প্রক্ষালন করিতে করিতে ভাবেন না যে “এত যত্ন পরিশ্রম সব ব্যর্থ হ’ল; আমার নিজের পরমায়ুঃ দিয়াও যদি মাকে বাঁচাইতে পারিতাম। এমন ভগিনী কে আছেন, যিনি পীড়িত ভ্রাতার পার্শ্বে বসিয়া অনাহারে দিন যাপন করেন না? এমন পত্নী কে, যিনি স্বামীর পীড়ার জন্য ভাবিয়া নিজে আধমরা হন না? এমন জননী কে আছেন, যিনি জীবনে কখনও পীড়িত শিশু কোলে লইয়া অনিদ্রায় রজনী যাপন করেন নাই? যিনি কখনও এরূপ রোগীর সেবা করেন নাই, তিনি প্রেম শিখেন নাই। না কাঁদিলে প্রেম শিক্ষা হয় না।
বিপদের সময় প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব রক্ষা করা অতি আবশ্যক। এই গুণটা আমাদের অনেকেরই নাই। আমরা কেবল হায়! হায়! করিয়া কাঁদিতে জানি! বোধ হয় আশা থাকে যে, অবলার চক্ষের জলে দেখিয়া শমনদের সদয় হইবেন! অনেক সময় দেখা যায় রোগী এ দিকে পিপাসায় ছটফট করিতেছেন, সেবিকা ওদিকে বিলাপ করিয়া (নানা ছন্দে বিনাইয়া বিনাইয়া) কাঁদিতেছেন! হায় সেবিকে, এ সময় রোগীর মুখে কি একটু দুধ দেওয়ার দরকার ছিল না? এ সময়টুকু যে দুধ না খাওয়াইয়া রোদনে অপব্যয়িত হইল, ইহার ফলে রোগীর অবস্থা বেশী মন্দ হইল।
এ স্থলে পতিপ্রাণা গৃহিণীর কথা মনে পড়িল। একদা রাত্রিতে তাঁহার স্বামীদেবের বুকে ব্যথা হইয়াছিল; সেজন্য তিনি দুর্ভাবনায় সমস্ত রাত্রি জাগিয়া ছিলেন। পরদিন প্রভাতে কবিরাজ আসিয়া বলেন, “এখন অবস্থা মন্দ, রাত্রেই বুকে একটুকু সর্ষের তৈল মালিশ করিলে এরূপ হইত না।” গৃহিণী অনিদ্রায় নিশি যাপন করিলেন, একটু তৈলমর্দ্দণ করিলেন না। কারণ এ জ্ঞানটুকু তাঁহার ছিল না। ঐ অজ্ঞানতার ফলে ত্রিবিধ অনিষ্ট সাধিত হইল, (১) স্বামীর স্বাস্থ্য বেশী খারাপ হইল; (২) নিজে অনর্থক রাত্রিজাগরণে অসুস্থ হইলেন; (৩) চিকিৎসকের জন্য টাকার অপব্যয় হইল। কারণ রাত্রে তৈল মাখিলেই ব্যথা সরিয়া যাইত, চিকিৎসক ডাকিবার প্রয়োজন হইত না।
এখন যদি আমি বলি যে, গৃহিণীদের জন্য একটা “জেনানা মেডিকেল কলেজ” চাই, তবে বোধ হয় অসঙ্গত হইবে না।
সন্তানপালন।-ইহা সর্ব্বাপেক্ষা গুরুতর ব্যাপার। সন্তানপালনের সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানের শিক্ষা হইয়া থাকে। একজন ডাক্তার বলিয়াছেন যে, “মাতা হইবার পূর্ব্বেই সন্তানপালন শিক্ষা করা উচিত। মাতৃকর্ত্তব্য অবগত না হইয়া যেন কেহ মাতা না হয়।” যে বেচারীকে ত্রয়োদশবর্ষ বয়ঃক্রমে মাতা, ছাব্বিশ বৎসর বয়সে মাতামহী এবং চল্লিশ বৎসরে প্রমাতামহী হইতে হয়, সে মাতৃজীবনের কর্ত্তব্য কখন শিখিবে?
শিশু মাতার রোগ, দোষ, গুণ, সংস্কার সকল বিষয়েরই উত্তরাধিকারী হয়। ইতিহাসে যত মহৎ লোকের নাম শুনা যায়, তাঁহারা প্রায় সকলেই সুমাতার পুত্র ছিলেন। অবশ্য অনেক স্থলে সুমাতার কুপুত্র অথবা কুমাতারও সুপুত্র হয়, বিশেষ কোন কারণে ওরূপ হয়। স্বভাবতঃ দেখা যায় আতার গাছে আতাই ফলে, জাম ফলে না। শিশু স্বভাবতঃ মাতাকে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক ভালবাসে, তাঁহার কথা সহজে বিশ্বাস করে। মাতার প্রতিকার্য্য, প্রতিকণা শিশু অনুকরণ করিয়া থাকে। প্রতি ফোঁটা দুগ্ধের সহিত মাতার মনোগত ভাব শিশুর মনে প্রবেশ করে। কবি কি চমৎকার ভাষায় বলিতেছেনঃ
“-দুগ্ধ যবে পিয়াও জননী,
শুনাও সন্তানে শুনাও তখনি,
বীরগুণগাথা বিক্রমকাহিনী,
বীরগর্ব্বে তার নাচুক ধমনী।”
তাই বটে, বীরাঙ্গনাই বীর-জননী হয়! মাতা ইচ্ছা করিলে শিশু-হৃদয়ের বৃত্তিগুলি সযত্নে রা করিয়া তাহাকে তেজস্বী, সাহসী, বীর, ধীর সবই করিতে পারে। অনেক মাতা শিশুকে মিথ্যা বলিতে ও সত্য গোপন করিতে শিক্ষা দেয়, ভবিষ্যতে সেই পুত্রগণ ঠগ, জুয়াচোর হয়। অযোগ্য মাতা কারণে প্রহার করিয়া শিশুর হৃদয় নিস্তেজ (spirit low) করে, ভবিষ্যতে তাহারা স্বেতাঙ্গের অর্দ্ধচন্দ্র ও সবুট পদাঘাতা নীরবে-অকেশে সহ্য করে। কোন মজুরের পৃষ্ঠে জনৈক গৌরাঙ্গ নূতন পাদুকা ভাঙ্গিয়া ভগ্ন জুতার মূল্য আদায় না করায় সেই কূলি, “নৌতুন জুতা মারলো-দামডী লইল না” বলিয়া সাহেবের প্রশংসা করিয়াছিল! বলা বাহুল্য যে, অনেক “ভদ্রলোকের” অবস্থাও তদ্রূপ হইয়া থাকে।
অতএব সন্তানপালনের নিমিত্ত বিদ্যা বুদ্ধি চাই, যেহেতু মাতাই আমাদের প্রথম, প্রধান ও প্রকৃত শিয়িত্রী। হৃষ্টপুষ্ট বলিষ্ঠ পুত্র লাভ করিতে হইলে প্রথমে মাতার স্বাস্থ্যের উন্নতি করিতে হইবে।
কেবল কাজ লইয়াই ১৬/১৭ ঘন্টা সময় কাটান কষ্টকর। মাঝে মাঝে বিশ্রামও চাই। সেই অবসর সময়টুকু পরনিন্দায়, বৃথা কোঁদলে কিংবা তাস খেলায় না কাটাইয়া নির্দ্দোষ আমোদে কাটাইলে ভাল হয় না কি? সে জন্য চিত্র ও সঙ্গীত শিক্ষা করা উচিত। যিনি এ বিষয়ে পারদর্শিতা হইতে চাহেন, তাঁহাকেও বর্ণমালার সহিত পরিচয় করিতে হইবে। চিত্রের বর্ণ, তুলির, বর্ণনা, সঙ্গীতের স্বরলিপি সবই পুস্তকে আবদ্ধ অথবা সুপাঠ্য পুস্তক অধ্যয়নে কিংবা কবিতা প্রভৃতি রচনায় অবসর সময় যাপন করা শ্রেয়ঃ।
প্রতিবেশীর প্রতি গৃহিণীর কর্ত্তব্য সম্বন্ধেও এক্ষেত্রে দুই চারি কথা বলা প্রয়োজন বোধ করি। অতিথি সৎকার ও প্রতিবেশীর প্রতি সদয় ব্যবহারের জন্য এক কালে আরব জাতি প্রসিদ্ধ ছিলেন। কথিত আছে আরবীয় কোন ভদ্রলোকের আবাসে ইঁদুরের বড় উৎপাত ছিল। তাঁহার জনৈক বন্ধু তাঁহাকে বিড়াল পুষিতে উপদেশ দেওয়ায় তিনি বলিলেন যে বিড়ালের ভয়ে ইঁদুরগুলি তাঁহার বাড়ী ছাড়িয়া তাঁহার প্রতিবেশীদিগকে উৎপীড়ন করিবে, এই আশঙ্কায় তিনি বিড়াল পোষেন না।
আর আমরা শুধু নিজের সুখ সুবিধার চিন্তায় ব্যস্ত থাকি, অপরের অসুবিধার বিষয় আমাদের মনে উদয়ই হয় না। বরং কাহারও বিপদের দ্বারা আমাদের কিছু লাভ হইতে পারে কি না, সেই কথাই পূর্ব্বে মনে উদয় হয়! কেহ দুঃসময়ে কোন জিনিষ বিক্রয় করিতে বাধ্য হইয়াছেন, ক্রেতা ভাব্বেন এই সুযোগে জিনিষটি বেশ সুলভ পাওয়া যাইবে! ঈদৃশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থে দৃষ্টি রাখা শিক্ষিত সমাজের শোভা পায় না। অথবা এক জনে হয়ত ক্ষণিক ক্রোধের বশবর্ত্তী হইয়া তাঁহার ভাল চাকরাণীটাকে বিদায় দিয়াছেন, তৎক্ষণাৎ অপর একজন গৃহিণী সেই বিতাড়িতা চাকরাণীকে হাত করিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আদর্শ গৃহিণী সে স্থলে সেই পরিচারিকাকে পুনরায় তাহার প্রভুর বাড়ী নিযুক্ত করিতে প্রয়াস পাইবেন। প্রতিবেশীর বিপদকে নিজের বিপদ বলিয়া মনে করা উচিত।
আর প্রতিবেশীর পরিধি বৃহৎ হওয়া চাই-অর্থাৎ প্রতিবেশী বলিলে যেন কেবল আমাদের দ্বারস্থিত গৃহস্থ না বুঝায়। বঙ্গদেশের প্রতিবেশী বলিতে পাঞ্জাব, অযোধ্যা; উড়িষ্যা-এসবই যেন বুঝায়। হইতে পারে পাঞ্জাবের একদল ভদ্রলোক কোন কারখানায় কাজ করেন; সেই কারখানার কর্ত্তৃপক্ষকে তাঁহারা বিশেষ কোন অভাবে বিষয় জানাইতে বারম্বার চেষ্টা করিয়া অকৃতকার্য্য হওয়ায় ধর্ম্মঘট করিতে বাধ্য হইলেন। ঐ ধর্ম্মঘটকে যেন উড়িষ্যা বা মাদ্রাজের লোকে নিজেদের কার্য্য প্রাপ্তির সুযোগ ভাবিয়া আহ্রাদিত না হন। সুগৃহিণী আপন পতি পুত্রকে তাদৃশ ধর্ম্মঘট স্থলে কার্য্য গ্রহণে বাধা দিলেন। আর স্মরণ রাখিতে হইবে, আমরা শুধু হিন্দু বা মুসলমান কিম্বা পারসী বা খ্রীষ্টিয়ান অথবা বাঙ্গালী, মাদ্রাজী, মাড়ওয়ারী বা পাঞ্জাবী নহি-আমরা ভারতবাসী। আমরা সর্ব্বপ্রথমে ভারতবাসী তারপর মুসলমান, শিখ বা আর কিছু। সুগৃহিণী এই সত্য আপন পরিবার মধ্যে প্রচার করিবেন। তাহার ফলে তাঁহার পরিবার হইতে ক্ষুদ্র স্বার্থ, হিংসা দ্বেষ ইত্যাদি ক্রমে তিরোহিত হইবে এবং তাঁহার গৃহ দেবভবন সদৃশ ও পরিজন দেবতুল্য হইবে। এমন ভারতমহিলা কে, যিনি আপন ভবনকে আদর্শ দেবালয় করিতে না চাহিবেন?
দরিদ্রা প্রতিবেশিনীদিগকে নানা প্রকারে সাহায্য করাও আমাদের অন্যতম কর্ত্তব্য। তাহাদের সূচিশিল্প এবং চরকায় প্রস্তুত সূত্রের বস্ত্রাদি উচিত মূল্যে ক্রয় করিতে তাহাদের পরম উপকার করা হয়। এইরূপে এবং আরও অনেক প্রকার তাহাদের সাহায্য করা যাইতে পারে; বিস্তারিত বলা বাহুল্য মাত্র।
আমি বলিতে ভুলিয়া গিয়াছিলাম, বালক বালিকাদিগকে ভৃত্যের প্রতি সদয় ব্যবহার শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। সচরাচর দেখা যায়, বড় ঘরের বালকেরা ভারী দাম্ভিক হয়, তাহারা চাকরকে নিতান্ত নগণ্য কি যেন কি মনে করে। বেতনভোগী হইলেই ভৃত্যবর্গ যে মানুষ এবং তাহাদেরও স্বীয় পদানুসারে মান অপমান জ্ঞান আছে, সুকুমারমতি শিশুদিগকে একথা বুঝাইয়া দেওয়া উচিত। অনেক গৃহিণী নিজের পুত্রকন্যার দোষ বুঝেন না, তাঁহারা চাকরকেই অযথা শাসন করেন। ওরূপে শিশুকে প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায়।
উর্দ্দু “বানাতননাশ” গ্রন্থে বর্ণিত নবাবনন্দিনী হোসনে-আরা অন্যায় আদরে এমন দুর্দ্দান্ত হইয়া উঠিয়াছিল যে তাহার দৌরাত্মে দাসী, পাচিকা প্রভৃতি সেবিকাবৃন্দ ত্রাহি ত্রহি করিত!” যাহাতে বালিকারা বিনয়ী এবং শিষ্ট শান্ত হয়, এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রাখা কর্ত্তব্য।
পরিশেষে বলি প্রেমিক হও, ধার্ম্মিক হও বা নাস্তিক হও, যাই হইতে চাও, তাহাতেই মানসিক উন্নতির (mental culture এর) প্রয়োজন। প্রেমিক হইতে গেলে নির্ভর ন্যায়পরতা, মাশুকের!৪ নিমিত্ত আত্মবিসর্জ্জন ইত্যাদি শিণীয়। নতুবা নিব্বোর্ধ বন্ধু হইলে কাহারই উপকার করিতে পারিবে না। ধর্ম্মসাধনের নিমিত্ত শিক্ষা দীক্ষার প্রয়োজন, কারণ “কে বে-ইলমে না তওযাঁ খোদারা শেনাখত”। অর্থাৎ জ্ঞান না হইলে ঈশ্বরকে চেনা যায় না! অন্যত্র প্রবাদ আছে “মূর্খের উপাসনা ও বিদ্বানের শয়নাবস্থা সমান”। অতত্রব দেখা যায় যে, রমণীর জন্য আজ পর্য্যন্ত যে সব কর্ত্তব্য নির্দ্ধারিত আছে, তাহা সাধন করিতেও বুদ্ধির প্রয়োজন। অর্থ উপার্জ্জনের নিমিত্ত পুরুষদের যেমন মানসিক শিক্ষা (mental culture) আবশ্যক, গৃহস্থালীর জন্য গৃহিণীদেরও তদ্রূপ মানসিক শিক্ষা (mental culture) প্রয়োজনীয়।
ইতর শ্রেণীর লোকদের মত যেমন-তেমন ভাবে গৃহস্থালী করিলেও সংসার চলে বটে, কিন্তু সেরূপ গৃহিণীকে সুগৃহিণী বলা যায় না; এবং ঐ সব ডোম চামারের পুত্রগণ যে কালে “বিদ্যাসাগর” “বিদ্যাভূষণ” বা “তর্কালঙ্কার” হইবে এরূপ আশাও বোধ হয় কেহ করেন না।
আমি আমার বক্তব্য শেষ করিলাম। এখন সাধনাদ্বারা সিদ্ধিলাভ করা আপনাদের কর্ত্তব্য। যদি সুগৃহিণী হওয়া আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য হয়, তবে স্ত্রীলোকের জন্য সুশিক্ষার আয়োজন করিবেন।
@ফরিদ আহমেদ,
এ সমস্তই কিন্তু পরবর্তী কালে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে স্থান পেয়েছে।
স্কুলে আমিও পড়েছি।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি নিয়ে যারা এখন পড়ছে তারা এগুলিই পড়ছে।
আমিত মনে করি রোকেয়া এসবকিছুর অগ্রদূত!
আজও মেয়েরা কিন্তু পি এইচ ডি আর ঘরসংসার একই সাথে করছে!
এগুলো প্র্যাকটিকাল!
প্রতিদিনই মেয়েদের এসবের সম্মুখিন হতে হয়।
পতিদেবতা অফিস ফিরে সোফায় পেপার নিয়ে বসেন।
স্ত্রীজাতিকে অফিস থেকে ফিরে দৌড়ে রান্নাঘরে ঢুকতে হয়!
স্বামীদেবতার সেবায়!
এটাই বাস্তবতা!
না হলে অনেক দোষের ভাগী হতে হবে যে!
কপাল পুড়লেও পুড়তে পারে!
রোকেয়ার সমাজ জ্ঞান কম ছিলনা!
মেয়েদের কিসে ভাল হবে বুঝতেন!
আর সেজন্যই বাংলাদেশের নারীনেত্রীরা তাকে অগ্রদূত ভাবে!
@লাইজু নাহার,
সেটা ঠিক। কিন্তু এটাকে আর যাই হোক ‘নারীবাদী’ আখ্যা দেয়া যায় না। মানলাম মেয়েদের সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই রোকেয়া ওগুলো বলেছেন – গৃহ এবং গৃহসামগ্রী পরিস্কার ও সুন্দররূপে সাজাইয়া রাখা, পরিমিত ব্যয়ে সুচারুরূপে গৃহস্থালী সম্পন্ন করা, রন্ধন ও পরিবেশন, সূচিকর্ম্ম। তাহলে সেটাকে সেভাবেই দেখা উচিৎ, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে ভুয়া জিগির তুলে নয়। রোকেয়া যখন সুগৃহিনী গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, সংসার যাতে পুড়ে না যায় তা নিয়ে ভাবছেন, কার পর্দা কত মোটা বা চিকন হবে তা নিয়ে পেরেশান হচ্ছেন, তখন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মত সাহসী নারীরা বন্ধুক নিয়ে মাঠে ময়দানে যুদ্ধ করছে। পাশ্চাত্য বিশ্বের অগ্রগামী নারী আন্দোলনের কথা না হয় বাদই দিলাম।
আজ এমনকি সবচেয়ে ধর্মান্ধ, পুরুষতান্ত্রিক এবং প্রথাপরায়ণ মানুষটিকেও দেখি রোকেয়া বন্দনায় বড্ড মুখর হতে (তারা বলে, ত্সলিমার মত হয়ো না, রোকেয়ার মত হও 🙂 ) । ব্যাপারটা আপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না? রোকেয়া কি সত্যই কোন ছক ভেঙ্গেছিলেন, নাকি গড়ে দিয়েছিলেন পুরুষের কাংক্ষিত নারীর ভিত্তিভুমি আর পালন করেছিলেন তাদেরই জয়ন্তী উৎসব!
@অভিজিৎ,
বাংলাদেশে কোন বাবা মাই চায়না তাদের মেয়ে
দেশহারিয়ে, স্বজনহারা হয়ে দুঃখময় ভবঘুরে জীবন পাক।
আপনিও চাইবেন না নিজের মেয়ের সেই জীবন!
যদিও তা তসলিমার ভক্তদের শুনতে অতটা ভাল না লাগতেও পারে!
কিন্তু তাতো জীবনের মতই চরম বাস্তব!
আপনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল নারীদের সাথে কথা বলুন।
বুঝতে পারবেন তাদের চলার পথে পথের বন্ধু কে সাথী কে?
আমার মত হাজার হাজার মেয়েরাই জানে স্বীকার করে-
অর্থনৈতিক মুক্তিই-মেয়েদের মুক্তি
বাংলাদেশের কোটি কোটি মেয়েদের জীবনে এটা কার অবদান!
প্রীতিলতা তার জায়গায় অনন্যা!
রোকেয়া তার নিজের জায়গায়!
মানুষের অবদানের জন্য তাদের পাওনা শ্রদ্ধাটুকু না করলে আমরা বোধ হয়
নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে যাই!
আশৌশব দেখেছি বাংলাদেশের নারীমুক্তির জন্য যারা আজীবন শ্রম দিয়ে গেছেন তারা রোকেয়াকে কতটা জাগরণের অগ্রদূত মনে করেন।
আমিও তাই-ই মনে করি।
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
রোকেয়ার অবদানের জন্য তাকে প্রাপ্য সম্মান এখানে আমরা সবাই দিচ্ছি, এমনকি ফরিদ ভাইও, যিনি এই প্রবন্ধটি রচনা করেছেন। কেবল আমরা পুরো ব্যাপারটিকে হয়তো ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখার চেষ্টা করছি। আমি জানি এইভাবে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখার ব্যাপারটার সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচিতি তেমন নেই। আমাদের সবাইকেই মাথায় তুলে রাখার একটা প্রবণতা আছে। ঘার নীচু করে নুয়ে নুয়ে চলা। পাশ্চাত্যে দেখবেন, এরিস্টটল প্লেটো, রুশো থেকে শুরু করে সবার দর্শনেরই সমালোচনা হয়। কাজের বিশ্লেষণ হয়। ব্যাপারটাগুলোকে নেগেটিভ ভাবে না দেখার অনুরোধ করি। রোকেয়া তার জায়গায়ই থাকবেন। কিন্তু আপনি যেভাবে তাকে ‘ নারী জাগরণের অগ্রদূত’ মনে করেন আমি কিংবা এ প্রবন্ধের লেখক ফরিদ ভাই হয়ত সেভাবে দেখি না। বলতে দ্বিধা নেই, আগে আমিও দেখতাম অনেকেটা সেরকমই। সুগৃহিনী প্রবন্ধটি আসলেই আমার কাছে পুরুষদের ছকে সাজানো সুবেশিত গৃহিনী হিসেবে গড়ে তুলবার বাসনাই মনে হয়েছে। আপনি যত ইচ্ছে নারীবাদী ভাবতে পারেন, আমি বিনীতভাবে দ্বিমত পোষণ করব। তবে সমাজসেবক হিসেবে রোকেয়াকে মেনে নিতে আমার আপত্তি ছিলো না কখনোই।
@লাইজু নাহার,
আরো কিছু পয়েন্ট বলি –
আপনি বোধ হয় তসলিমাকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলছেন। আমি যে খুব তসলিমার জীবন যাপন বা লেখারও খুব বড় ভক্ত তা নই। তসলিমারও প্রচুর স্ববিরোধিতা। সেগুলো কেউ বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরলে আমি শ্রাগ না করে বরং অভিন্দনই জানবো। এভাবেই তো আমরা এগুবো, তাই না?
এবার আসি আপনার উক্তিটি প্রসঙ্গে। আপনি বলেছেন- “বাংলাদেশে কোন বাবা মাই চায়না তাদের মেয়ে দেশহারিয়ে, স্বজনহারা হয়ে দুঃখময় ভবঘুরে জীবন পাক।” সেরকম তো আরো বলা যায় যে, বাংলাদেশে কোন বাবা মাই চায়না, অযথা দেশোদ্ধার করতে গিয়ে তার মেয়ে শেষ মেষ পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মারা যাক। কিন্তু প্রীতিলতা তো তা করেছেন। যখন, নারীদের ভোটাধিকার ছিল না, তখন নিশ্চয় অনেক নারী তা অর্জন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন, পুলিশের গুলিতেও মারা গেছেন। কেউই চাইবে না তার মেয়ে এভাবে মারা যাক। সব সময় বাবা মার কথা শুনে বসে থাকলে আসলেই সমাজ এগুতো না।
দেখুন এই ‘সাথী’ ব্যাপারটা চিরন্তন কিছু নয়। বাংলাদেশের প্রগতিশীল নারীরাও একটা ছকেই চলেন। রোকেয়ার ভাল ভাল কথাগুলো বলতে হবে, কিন্তু পরষ্পরবিরোধিতাগুলো চেপে যেতে হবে। বাংলাদেশের বহু প্রগতিশীল নারীকে জানি, যারা রবীন্দ্রনাথকে নারীদের “চলার পথে পথের বন্ধু” মনে করেন। রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক গান গুলো গুন গুন করে গান, পোস্টমাস্টারের মত ছোগগল্প নিয়ে মাতোয়ারা হন, কিন্তু কখনো জানেন না যে, রবীন্দ্রনাথ রমা বাঈ-এর বক্তৃতা উপলক্ষে, প্রাচ্য-প্রতীচ্য প্রভৃতি প্রবন্ধে নারীদের সম্পর্কে কি ধরণের প্রতিক্রিয়াশীল মতামত দিয়েছেন। সেই প্রবন্ধগুলোকে বাইরে রেখে রবীন্দ্রনাথকে ‘নারীদের বন্ধু’ বলে জাহির করা সহজ, কিন্তু ব্যাপারটি কি নিরপেক্ষ থাকে? রোকেয়ার ব্যাপারটিও আমি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখতে আহবান জানাই।
আশৈশব কিন্তু আমরা অনেক কিছুই দেখেছি। গুরুজনদের ধর্ম পালন করতে, নামাজ গড়ার উপদেশ দিতে, মুখ তুলে কথা না বলতে, রোজা রাখতে, পূজা করতে, মান্য করে ধন্য হয়ে যেতে … কত ধরনের দাওয়াই। মেয়েদের জন্য তো দাওয়াই আরো বেশি।
তারপরেও তো কখনো কখনো আশৌশব দেখা ছক, আশৌশব চলা ছকও ভাঙ্গে। প্রীতিলতা যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দেন, শামিম সিকদার ‘মেয়েলি পোষাক’ ত্যাগ করে হাতুরি বাটালি নিয়ে স্বোপার্জিত স্বাধীনতার আগায় চড়ে বসেন, আর কেউ লেখার মাধ্যমে খসান পান থেকে সংস্কারের চুন …।
@অভিজিৎ,
একমত!
তবে দুঃখ কি জানেন বাংলাদেশের মেয়েরা একটু প্রথাবিহীন চলতে গেলে
শুনতে হয় -দেখ আরেক তসলিমা নাসরিন!
সেদিন আমার ব্লগে কে একজন লিখেছে -তসলিমা আমাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে!
চরম সত্যি!
অথচ বাংলাদেশে প্রীতিলতা,কল্পনা এরা কিন্তু অনেক শ্রদ্ধেয়।
তারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন! এটাই কারণ।
তসলিমা নানা কারণে বিতর্কিত!
তাই বাংলাদেশে শিক্ষিতসমাজই তার কড়া সমালোচনা করে।
আমি কিন্তু মনে প্রানে চাই তার দেশে ফেরার ব্যবস্থা হোক!
সম্ভবত আপনিও তা জানেন।
“সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে”-তাই সুগৃহিনী হওয়া দোষের না,কুগৃহিনী হওয়া দোষের।আপনিও তো সংসার করছেন তাইনা 😀
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
আপনার এই মন্তব্যটা ভাল লাগল। ঠিকই বলেছেন, সুগৃহিনী হওয়া দোষের না,কুগৃহিনী হওয়া দোষের। কিন্তু আমার কপালে আর সুগৃহিনী জুটলো কই 🙂
এই বেলা পালাই, কপালে এরপর কি আছে কে জানে 😀
@অভিজিৎ,
এটার একাধিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। এমন হতে পারে যে রোকেয়ার যুদ্ধ বিজয়ী হয়েছে, তাই পুরুষতন্ত্র তার দুর্গটিকে পিছিয়ে নিয়ে এখন বাকিটুকু রক্ষায় সচেষ্ট। সেক্ষেত্রে রোকেয়া বিজয়ী, এখন প্রাসঙ্গিক যদি নাও হন।
এমন হতে পারে, যেকোন কারণেই হোক, পুরুষতন্ত্র নামের সিস্টেমটি রোকেয়াকে নিউট্রালাইজ করে ফেলেছে। হিন্দুধর্ম সিদ্ধার্থ গৌতমকে নিউট্রালাইজ করেছিল, মানে এই নয় যে গৌতম বিপ্লবী ছিলেন না।
এর কোনটি ঠিক, আমি জানিনা, শুধু ব্যাখ্যা অনেকরকম হতে পারে এটুকু বলতে চাইছি। কেউ যদি রোকেয়াকে নারীবাদের ত্রুটিহীন পয়গম্বর মনে করেন, সেটা আলাদা কথা, কিন্তু অসংখ্য ত্রুটি সত্বেও তিনি “অগ্রদূত” হতেই পারেন। “অগ্রদূত” মানে শব্দটির মানে যা তাই, সর্বকালীন আদর্শ নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
লেখার সুর ভীষণই ভিক্টোরিয়ান। তবে
লাইনটা খুব ভালমত লক্ষ্য কর উচিত। Pragmatism, বাস্তবতা সচেতন রাজনীতি। সেটা আমাদের পছন্দ নাই হতে পারে, কিন্তু রোকেয়া কি করছেন, সে ব্যাপারে তিনি আত্মসচেতন, এই ইঙ্গিত আছে।
কিল খেয়ে কিল চুরি করছেন রোকেয়া এখানে, এ তর্ক করা চলে।
বিপ্লবী নয়? প্রশ্নটা Rhetorically করছি না, আসলেই জিজ্ঞেস করছি। এটা কি ও সময়ের বেগমে পাওয়া যেত?
@ফরিদ আহমেদ,
জুলিয়া রবার্টস প্রসঙ্গে নৃপেন্দ্র সরকারের মন্তব্য মনে পড়ে গেল 😀
ইহা পড়ার আগে রোকেয়াকে আমি অতি বস মনে করতাম। এখন দেখা যাচ্ছে পুনরায় ভাবতে হবে, গভীরভাবে।
হুমায়ুন আজাদ এইভাবে বিভ্রান্ত করল আমারে?
@শিক্ষানবিস,
হ। সেই জন্যই তো বলি সংশয়বাদ, যুক্তিবাদ এগুলা সমগ্রিক দর্শন, ব্যক্তি নির্ভর নয়। যুক্তিবাদের প্রয়োগ ঘটিয়ে বিশ্লেষণ করা যাবে যুক্তিবাদীদের লেখাও – তা সে হুমায়ুন আজাদই হোক, কিংবা বার্ট্রাণ্ড রাসেল।
অন সিরিয়াস সাইড, আকিমুন রহমানের বইটা (বিবি থেকে বেগম) কিনে ফেলতে পার। অনেক নতুন কথা জানতে পারবা। ভদ্রমহিলা দেখাইসে যে, বাংলাদেশের নারিবাদীরা পুরুষতন্ত্রের সাজানো পথেই আবর্তিত আর বিবর্তিত হয়েছে, তা তিনি বেগম রোকেয়াই হোন, নূরন্নেছা খাতুনই হোন, কিংবা সুফিয়া কামাল। পড়ার মতো বই। তবে আকিমুনেরও দুর্বলতা আছে। কিছু ব্যাপার রৌরব দেখিয়েছেন তার মন্তব্যে। সেগুলো গোনায় ধরলেও আকিমুন রহমানের বিশ্লেষণের নতুনত্ব আর মৌলিকত্ব অস্বীকার করা যায় না। আর রোকেয়ার উৎকট কিছু পরষ্পরবিরোধিতা তার রচনাবলী পাঠ করলে এমনিতে সাদা চোখেই ধরা পড়বে।
@শিক্ষানবিস,
কাউকে তোয়াক্কা না করে যে কোন ধরনের ভণ্ডামি বা কুপমুণ্ডকতার সমালোচনা করার ক্ষেত্রে হুমায়ুন আজাদ অতুলনীয়। অনেক বরেণ্য ব্যক্তিদের স্ববিরোধিতাকে অত্যন্ত চাঁছাছোলাভাবে তুলে ধরেছেন তিনি কাউকে পরোয়া না করেই। কিন্তু, বিস্ময়কর হচ্ছে রোকেয়ার বিষয়ে তিনি ছিলেন অনেক বেশি কোমল, অনেক বেশি একপেশে মনোভাবের। রোকেয়ার ব্যাপারে এরকম পক্ষপাত কেন দেখিয়েছিলেন সেটা তিনিই একমাত্র ভাল বলতে পারবেন।
যদিও বোরকা প্রবন্ধে রোকেয়ার বোরকা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির তুমুল সমালোচনা করেছেন তিনি। রোকেয়ার সুগৃহিনী হবার পুরুষতান্ত্রিক বিধানটিকে মেনে নেওয়াকেও শিক্ষার অপচয় বলে সমালোচনা করেছেন তিনি। রোকেয়া ঘরকন্নারর ক্লান্তিকর কাজের যে দীর্ঘ-তালিকা দিয়েছেন এবং সেগুলো সম্পন্ন করার যে রীতি নির্দেশ করেছেন তাতে সুগৃহিনী যে একটি শিক্ষিত দাসী হয়ে ওঠে সেটাও তিনি বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রোকেয়ার প্রাথমিক শিক্ষার সবকিছুই কোরানে পাওয়া যায় এই মন্তব্যকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন এই বলে যে, রোকেয়াতো অন্তত পিতৃতন্ত্রের সাথে সুর মিলিয়ে বলেন নি যে সব শিক্ষাই পাওয়া যায় ওই গ্রন্থে। ফলে, তাঁর কাছে রোকেয়া ছিলেন পুরুষতন্ত্রের সাথে সামান্য সন্ধি করা পৃথিবীর এক শ্রেষ্ঠ আমূল নারীবাদী। অন্যদিকে, আকিমুন রহমানের কাছে রোকেয়া পুরুষতন্ত্রের কাছে পুরোপুরি সোপর্দ আদ্যপান্তই এক স্ববিরোধী নারী, নারী মুক্তির অগ্রদূত বলে ভুল প্রসিদ্ধি পাওয়া স্বামীর ছাঁচে বিকশিত এক পরিতৃপ্ত বেগমই শুধু।
একমত!
বিধবা একজন মানুষ নিজের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে স্কুল করেছেন!
বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবা মাদের বুঝিয়ে ছাত্রী জোগাড় করেছেন!
বৈরী পরিবেশে সমাজের রক্তচক্ষু অবজ্ঞা করে সাধনা করে গেছেন
আধাঁরে আলো জালাতে!
শত শত আকিমুন রহমানদের চারদিকে প্রভা ছড়ানোর জন্য প্রানপনে পথের কাটাঁ দিবস রজনী দূর করেছেন!
আমরা বাঙালিরা সত্যিসত্যিই গুণীদের কদর করতে জানিনা!
তসলিমা নাসরিন আমাদের এই অভাগা দেশে কোন জনহিতকর কাজ করেছেন বলে জানা নেই,রোকেয়ার সাথে তার মিল লেখালিখি আর নারীবাদের ক্ষেত্রে।
আমি নিজে মনে প্রানে বিশ্বেস করি বোধ করি আরো অনেকেই, রোকেয়ার আলো ছড়ানো পথেই আজ বাংলাদেশের কোটি কোটি মেয়েরা হাটছে!
@লাইজু নাহার,
নিজের সঞ্চয় ? উনি কি এমন কাজ করতেন শুনি ? কত টাজা রোজগার করে এরপর মানুষের মধ্যে বিলিয়েছেন ? নাকি অন্যের পয়সায় ( পিতা/স্বামীর) এতকিছু করে এখন বিখ্যাত ?
শত শত আকিমুনেরা তাদের নিজেদের কারনে আজকে এই অবস্থানে এসেছেন , এইখানে রোকেয়াকে টানা অবান্তর, একেবারেই অবান্তর!
আসলে আমরা গুনীদের কদর একটু বেশি ই করতে জানি, কিন্তু সমালোচনা একটু হলেই নিজেদের বাঙ্গালি পরিচয়ের ওপর রাগ দেখাই।
@অনন্ত নির্বাণ,
আপনি হয়ত জানেন না বাবা বা স্বামীর উত্তরাধীকারী হিসেবে
মেয়েরা যা সম্পদ পায় তা তার একান্ত নিজের।
আইনে তাই আছে।
তসলিমা তো বিদেশে নিজেই হাজার হাজার ডলার পেয়েছেন,
উনি দেশে কি করেছেন বলতে পারবেন?
রোকেয়ার জীবনী পড়ে যতটুকু জেনেছি উনি বাবার এক পয়সাও নেননি।
আর তার বহু জীবনি পড়ে দেখেছি যে কোথাও তার স্বামীদেবতা
মেয়েদের স্কুল করার জন্য নসিহত করেননি!
আমি এটাই বলতে চেয়েছি যে আঠার,উনিশ শতকের মুসলিম মেয়েদের অপরিচিত মহিলাদের সামনে যাওয়া বারন ছিল।
সেই অর্থে আকিমুনদের কথা এসেছে!
সে দলে আমিও পরি।
দেশ,সময়,কাল বিচার করে আমাদের ভাবনা গুলো সাজালে সবারই উপকার হয়।
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
নিজের একটা ফুটো পয়সাও ঢালেন নি রোকেয়া এই স্কুলের পিছনে। আসলে ছিলই না তার কোনো পয়সা-কড়ি। রংপুরের রুকাইয়া খাতুন বাপের বয়সী বিপত্নীক স্বামীকে বিয়ে করে পায়ের উপর পা তুলে বেশ সুখেই ছিলেন কিছু না করেই। স্বামীর আভিজাত্যে গরবিনী রোকেয়া নামের আগে আভিজাত্যের প্রতীক বেগম উপাধি লাগিয়ে নেন আর অচেনা নিজেকে স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত করানোর জন্য নামের শেষে স্বামীর নাম ঝুলিয়ে নেন।
নিজের ইচ্ছায় স্কুল খোলেন নি তিনি। স্বামী টাকা পয়সা আর জমি রেখে গিয়েছিলেন স্কুল করার জন্য। মৃত স্বামীর ইচ্ছাকেই বাস্তবায়ন করেছেন তিনি অনুগত স্ত্রীর মত।
১৯৩২ সালে রোকেয়া যখন মারা যান তখন ওই স্কুলে বাঙালি ছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র দুইজন।
বৈরী পরিবেশ বলছেন কেন? রোকেয়াতো মধ্যযুগের বাংলায় কাজ করেন নি। করেছেন বিংশ শতাব্দীতে। ওই সময় বাংলা অঞ্চল কি অন্ধকারের ডুবে ছিল? এর অর্ধ শতাব্দী আগেইতো বাংলার রেঁনেসা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরাওতো রোকেয়ার অনেক আগেই জ্ঞান সাধনার আলো জ্বালিয়ে গিয়েছেন। নারী জাগরণেও কাজ করেছেন তাঁরা। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েছেন ওই সময়। জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসুদের মত বিশ্বমানের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন তখন বাংলায়। হঠাৎ করেই ওই রকম একটা সৃষ্টিশীল পরিবেশ বৈরী হয়ে গেলো কী করে?
তাই বুঝি? রোকেয়ার কণ্টক বাছা পথ দিয়ে হেঁটে এলে আর আকিমুন রহমানকে পেতাম না আমরা, সুগৃহিনী বেগম আকিমুন রহমানকে পাওয়া যেতো অবশ্য।
এটা ঠিক বলেছেন। এজন্যইতো বাংলাদেশে সুগৃহিনীর কোনো অভাব নেই। পতিদেবতার পদতলে প্রাণপাত করে দিচ্ছেন তারা সারা দিন এবং সারা রাত।
@ফরিদ আহমেদ,
রোকেয়ার বাবার প্রাসাদ ভবন ছিল সাড়ে তিনশত বিঘা জমির ওপর!
নদীর তীরে ছিল জমিদারের হাওয়া খানা,নিজেদের ঘাট!
শত শত দাসদাসী!
– শামসুল আলম(রোকেয়া জীবন ও সাহিত্যকর্ম)
আর আবুল ফজল,মোহিতলাল মজুমদার,গোলাম মুরশিদ,
আবদুল মান্নান সৈয়দ সহ প্রায় ৮০জন তার জীবনীতে তার প্রাপ্য
মূল্যায়ন করে গেছেন।
সূত্র জানতে চাই।
আপনাকে একটু কষ্ট করে আকিমুন রহমানকে জিজ্ঞেস করতে অনুরোধ
করছি যে “আসলেই তার জীবনে রোকেয়ার কোন অবদান
আদৌ আছে কিনা”!
আপনার কাছে সময়,কাল্,সমাজ্,পরিস্থিতি সব বিচার করে নির্মোহ লেখা আশা করি।
ভাল থাকুন!
@লাইজু নাহার,
তাঁর দুশ্চরিত্র, অপব্যায়ী পিতার জমিদারী ছিল বলেই যে রোকেয়ার পয়সা কড়ি থাকবে এবং সেই পয়সা তিনি তাঁর স্কুলের পিছনে ঢালবেন এটা খুব সরল ধরনের একটা যুক্তি হলো। স্বামীর টাকা আইনগতভাবে মেয়েদের এই যুক্তির মত এবারও আপনি হয়তো বলবেন যে, উত্তরাধিকার সূত্রেতো রোকেয়া-ও ওই পয়সারই মালিক।
এনিওয়ে, আপনি কি কোথাও থেকে রেফারেন্স টেনে দেখাতে পারবেন যে এই একাধিক বিবাহিত জমিদার বাবার কাছ থেকে রোকেয়া টাকা পয়সা এনে স্কুলের কাজে লাগিয়েছিলেন?
স্বামীর টাকা দিয়ে এবং স্বামীর ইচ্ছাতেই যে তিনি স্কুল করেছিলেন সেটা কিন্তু আমি প্রমাণ করতে পারবো। 🙂
বাংলা উইকিতে লেখা আছেঃ
অনুবাদে ঘাপলা আছে মনে করলে ইংরেজিটাও দেখতে পারেন এখানে ক্লিক করে।
আকিমুন রহমান তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেনঃ
সাখাওয়াৎ এর মৃত্যুর পরে তাঁরই কোন এক বন্ধুজনের লেখাকে উদ্ধৃত করেছেন আকিমুন তাঁর গ্রন্থে। সেখানেই স্কুলের জন্য সাখাওয়াতের টাকা আলাদা করে রাখার বিষয়টা এসেছে।
আমি নগন্য ব্যক্তি। আকিমুন রহমানের সাথে পরিচয়ের সৌভাগ্য আমার হয় নি। কাজেই এই কষ্টটা আমি করতে পারবো না। আপনার প্রয়োজন থাকলে আপনিই একটু কষ্ট করে তাঁকে জিজ্ঞেস করে নিন। মুক্তমনায় আকিমুনের সাথে ঘনিষ্ট পরিচয়যুক্ত ব্যক্তিরাও আছেন। তাঁদের শরণাপন্ন হতে পারেন।
আশা করতে হবে না। আমি নির্মোহ লেখাই লিখি। নির্মোহ মন থাকলেই সেটা টের পাওয়া যায়।
আপনিও ভাল থাকুন।
@ফরিদ আহমেদ,
সেই যুগে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার আগে দেখা হত পাত্রের ধন-সম্পদ,আভিজাত্য আর বংশপরিচয়!
কে একবরে বা দোজবরে বিচার করা হতনা।
তখনকার ইতিহাসে ও পুরোনো মানুষদের গল্পে তাই জেনেছি।
রাজা,বাদশা,জমিদার আর সম্পদশালীরা একের পর এক ভাল ভাল অভিজাত বংশের সুন্দরী কুমারীদের বিয়ে করে আনতেন!
পাত্রীপক্ষ আনন্দের সাথেই কন্যাদান করতেন!
মনে করতেন সমাজে সম্মান বাড়ল!
আর রোকেয়ার তো ভাগ্য যে সতীনের ঘরে পরেননি!
আর বিয়ের সম্বন্ধটা এনেছিলেন তার কলকাতার “সেন্টজেভিয়ার্স কলেজ”
পড়া উন্নত উদার মানসিকতার বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের।
সেই সময়কার ইতিহাস পড়লে আর পারিপার্শিকতা জানলে অনেক কিছুই বিচার করা সহজ হয়।
@লাইজু নাহার,
আপনার চিন্তা-ভাবনার বৈপ্লবিকত্ব দেখে ক্রমেই মুগ্ধ হচ্ছি আমি। এতদিনে নারীবাদটা বুঝতে পারছি মনে হয়। মেয়েরা যদি এরকম করে মাঝে মাঝে তাঁদের চিন্তা-ভাবনাগুলো আমাদের সাথে ভাগাভাগি করেন তবে আমাদের পুরুষদের জন্য তাঁদেরকে বুঝতে খুব সুবিধে হয়। 😀
আসলেইতো কী চমৎকার ভাগ্য!! বিয়ের আগেইতো সতীন বেচারা পটল তুলেছিল। ফলে সতীনের ঘরেতো তাঁকে পড়তে হয় নি। না হয় স্বামীর আগের ঘরের একটা কন্যা সন্তান ছিলই বা তাতে কি এসে যায়। একবরে না দোজবরে এটা বিচার করে লাভ আছে নাকি? ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে বিয়ে করে তাঁর সম্মান বেড়েছিল, নামের আগে বেগম উপাধি আর নামের পরে স্বামীর নাম লাগাতে পেরেছিলেন এটা কি কম পাওনা নাকি?
আপনার ভাষ্য অনুযায়ীইঃ
রোকেয়ার যখন বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ষোল। সাখাওয়াতের বিয়াল্লিশ। বিপত্নীক। আগের ঘরের একটা কন্যা সন্তান ছিল। রোকেয়ার এত বড় জমিদার বাবাও তাঁর জন্য একটা তরুণ ছেলে সারা বাংলাদেশে খুঁজে পেলো না যে এই বাপের বয়েসী বিহারী লোকের সাথে বিয়ে দিতে হয়েছিল? নাকি ব্রিটিশের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদবীর এমনই জোর যে শত শত বিঘা জমি, দাস-দাসী, জমিদারী সব তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল তখন?
আপনারা যেভাবে বাংলাদেশে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ আর বিংশ শতাব্দীর শুরুকে একেবারে আইয়ামে জাহিলাতের অন্ধকার যুগ বানিয়ে রোকেয়াকে আলোর মশাল বানিয়ে ডিফেন্ড করছেন, তার সাথে আমি একমত না। আগেই উল্লেখ করেছি আমি যে, ওটা ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার রেঁনেসা শুরুরও পঞ্চাশ বছর পরের ঘটনা। বাংলার সবচেয়ে সৃষ্টিশীল সময় তখন, এখনকার চেয়ে চিন্তা-চেতনায় খুব একটা পিছিয়ে ছিল না সেই সময়। হ্যাঁ, মুসলমানরা কিছুটা ছিল, কিন্তু সেই দায় তাদেরই। ঘরের পাশের আলো না দেখে যারা আরব দেশের অন্ধকারকে ডেকে নিয়ে আনে নিজেদের জন্য, তাদের কথা আলাদাই। রোকেয়াও সেই আরব দেশের অন্ধকারকেই দেখেছেন, বাংলার ঝলমল আলোকে দেখেন নি।
সামান্য একটু উদাহরণ দিচ্ছি। বন্যা, অভিজিৎ প্রীতিলতার কথা বলেছেন। প্রীতিলতাতো অনেক পরের ব্যাপার। রোকেয়ার জন্মের সময়ে বা তার আগে বাংলায় মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় কোথায় ছিল দেখি একটু আমরা।
প্রথম যে বাঙালি মহিলাটি এন্ট্রান্স পাশ করেন তিনি চন্দ্রমুখী বসু। দেরাদুন বিদ্যালয় থেকে ১৮৭৬ এ পাশ করেন। তাঁর দুবছর পর ১৮৭৮ এ প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন কাদম্বিনী বসু। মাত্র এক নম্বরের জন্য তিনি প্রথম বিভাগ পান নি। ১৮৮৩ তে চন্দ্রমুখী এবং কাদম্বিনী দুজনেই বি এ পাশ করেন। চন্দ্রমুখী এম এ পাশ করেন ১৮৮৪ তে। আর কাদম্বিনী মেডিকেলে ভর্তি হন ডাক্তার হবার জন্য। ১৯০০ সালের মধ্যেই ২৭ জন নারী বি এ পাশ করেন।
জগদীশচন্দ্র বসুর ছোট বোন হেমপ্রভা বসু। এম এ পাশ ছিলেন। রাজনারায়ন বসুর কন্যা লজ্জাবতী বসু, রাধারাণী লাহিড়ী, সুরবালা ঘোষ এরা সবাই বি এ পাশ। কেউ-ই বিয়ে করেন নি। অস্বীকার করেছিলেন পুরুষতন্ত্রকে।
পাবনার মেয়ে বামাসুন্দরী দেবী ১৮৬৩ সালে মাত্র বিশ-একুশ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠা করেন একটি বালিকা বিদ্যালয়।
সরলা দেবী ১৮৯৫-৯৬ সালে মাসিক ৪৫০ টাকা বেতনে চাকুরি নেন হায়দ্রাবাদের মহারাণীর সহকারী পদের। সেই সময়ে এই বেতন ছিল একটা অসম্ভব বেতন। তাঁর চাকুরির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তিনি নরনারীর স্বায়ত্ব জীবিকা অর্জনে সমান দাবি প্রতিপন্ন করার জন্যই চাকুরি নেন, এবং কিছু দিনের মধ্যেই তা ছেড়ে দেন।
হ্যাঁ, মুসলমান সমাজ সেই সময়ে পিছিয়ে ছিল এটা মানি, অন্ধকারে ছিল তারা এটাও মানি। কিন্তু রোকেয়া যে তাঁর আগের বা সমসাময়িক এই সমস্ত নারীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ দেখি না তাঁর জীবনে। চারপাশের আলো-কে না দেখেই, তিনি ওই অন্ধকারের মধ্যে সামান্য একটা দেশলাই জ্বালিয়েই হয়ে গেছেন বাঙালি রমণীদের আলোকবর্তিকা। অথচ যে স্কুলটা তিনি খুঁলেছিলেন সেটিও ছিল না কোনো বাংলা স্কুল, ছিল উর্দু স্কুল, মূলত অবাঙালিদের জন্য।
খামোখাই আকাশ মালিক, ভবঘুরে, আল্লাচালাইনা আর বোকামেয়েরা মুহাম্মদ আর ইসলামকে গাইল পাড়ে। 😀
@ফরিদ আহমেদ, সেই সময়ের বাস্তবতায় একটা দেশলাই জালানো যদি এতই সহজ হোত তাহলে , আর কেউ তার আগে জ্বালায় নি কেন? ঐ দেশলাই জ্বালানো , প্রাগৈতিহাসিক মানুষের প্রথম চকমকি পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানোর মতৈ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার কথিত ঐ রেঁনেসা শুধু বাঙালি হিন্দু কতিপয় শিক্ষিত পরিবারের
জায়গা করে নিয়েছিল।মুসলিম পরিবারের অন্তপুরে প্রবেশ করতে
পারেনি।সে হিসেবে বলতে পারেন বিয়ের আগে তিনি অতটা আলোকিত
হবার সুযোগ পাননি।
আপনার নিজের কথাতেই তো উঠে এসেছে মুসলিম মেয়েরা অনগ্রসর ছিল।
সেটা মানলেই তো হয়!।
আপনি হচ্ছেন এমন একজন যারা কথা দিয়েই “রাজা,উজির”মারেন।
এমন লোকের অবশ্য বাংলাদেশে অভাব নেই!
তাতে আমি দোষের কিছু দেখিনা।
বরং বলব তাঁর উদারতাই!
পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত নারীই ঐ স্কুলে পড়েছেন ও
শিক্ষকতা করেছেন।
আপনার মত লোকের সঙ্গে তর্ক চালিয়ে যাবার অত মত সময়
আমার নেই!
এসব অর্থহীন!
@লাইজু নাহার,
একেবারেই ‘আপনার মত লোকের’ পর্যায়ে নেমে যাবেন বলে আশা করি নি আমি। ভালই রেগে গেছেন দেখছি। অবশ্য যুদ্ধে নেমে গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে সম্মানজনক পশ্চাদপসরণের আশায় জেনারেলরা এরকম মাটিতে পা ঠুকে রাগ দেখিয়ে প্রতিপক্ষের প্রতি কিছু হেয় কথাবার্তা বলেই তবে পালায়।
ব্যক্তি পূজো দিয়ে সুগৃহিনী হওয়া যায় হয়তো, তর্ক-বিতর্কে জেতা যায় না কিছুতেই।
এসব যে অর্থহীন, সেটা একটু আগে বুঝলে এই অধমেরও কিছুটা সময় বাঁচতো অন্তত।
@লাইজু নাহার,
হ্যাঁ। একমত। আসলেই উন্নত এবং উদার মানসিকতার লোক ছিলেন তিনি। ষোল বছরের কিশোরী বোনের জন্য বাপের বয়েসী বিপত্নীক সন্তানওয়ালা দুলাভাই খুঁজে আনতে হলে বিশাল উদারই হতে হয়। ওনার সাথে মিল পাওয়া যায় ইসলামের আরেক উদার এবং উন্নতমনা খলিফা আবু বকরের সাথে। তিনিও এই রকম উদার মানসিকতা দেখিয়ে তাঁর ছয় বছরের নাবালিকা কন্যাকে ছাপ্পান্ন বছর বয়েসী বহুপত্নীক বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
এই রকম উদার এবং উন্নত মানসিকতার লোক দিয়ে ভরে যাক এই অনুদার পৃথিবী, সেই কামনাই রইলো।
@ফরিদ আহমেদ,আপনার লাইজু নাহারকে করা এই মন্তব্যদুটি পড়ে আমার মনে হোল আসলেই আপনাকে তর্কে পেয়েছে। লাইজু নাহার কি বলতে চাচ্ছেন সেটা মনে হয় তর্কে জেতার জন্য বুঝতে চাচ্ছেন না। সেই সময়ের সামাজিক বাস্তবতায় রোকেয়া যেটুকু করেছেন বা করতে পেরেছেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। আপনি যে শিক্ষিত মহিলাদের কথা বল্লেন , তারা সকলেই হিন্দু সমাজের। তাদের সাথে সেই সময়ের মুসলিম মেয়েদের কোন তুলনায় চলে না।
রোকায়ার নিজের বিয়েতে তার নিজের কোন মতামতের মূল্য ছিল বলে আমার মনে হয় না । অথচ সেই বিয়ের জন্যই আপনি রোকেয়াকে দুষছেন। আজকে কোন অর্থশালী পরিবারের শিক্ষিত ভাই , তার নিজের বোনের জন্য এইরকম বয়সের বিস্তর ব্যাবধানের দোজবরের সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ আনবে বলে কি আপনি করেন? আপনি সেই সময়ের সমাজিক পরিস্থীতি না বুঝেই আবুবকরকেও টেনে আনলেন কাঠ মোল্লাদের মতো মনুষের আবেগকে পূজি করে তর্কে জেতার জন্য। আপনার কাছে আরো বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য ও বিতর্ক আশা করেছিলাম।
@ফারুক,
আপনি যে লাইজু নাহার কী বলতে চেয়েছেন সেটা বুঝেছেন তাতেই খুশি আমি। আমার বুদ্ধিসুদ্ধি একটু কম। বুঝতে সময় লাগে।
আপনাকে আগে কিছু বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য করতে দেখি তারপর না হয় শিখবো কীভাবে বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য করা যায় আর বিতর্ক করা যায়।
@ফারুক,
ভাই যারা সব বুঝেও না বোঝার ভান করে
তাদের সাথে পারা যায়না!
সত্যিকে সত্যি বলে গ্রহন করাতেই এদের যত আপত্তি!
বাংলাদেশ যে কিছুতেই এগুতে পারছেনা তার এটাও
একটা বড় কারণ!
আমরা কথা দিয়ে বিরাট প্রাসাদ গড়ি!
কিন্তু বাস্তবে একটা ইটও হাতে নিতে চাইনা!
সহমর্মিতার জন্য শুভেচ্ছা!
এতো আলোচনা,সমালোচনা,এতো তথ্য,ধরে ধরে যারা সময়ের সবক মারেন তাদেরকে তা রোকেয়ার আগে-পরে এবং সম-সাময়িক ভারতবর্ষের ও ইউরোপের নারী জাগরন ও নারী নেত্রীদের উদাহরন দেখানোর পরও তা নিয়ে যখন তাদের মাথার থলি থেকে যুক্তি আর বের হয় না তখনই ফরিদ ভাইয়ের উপর আধুনিক নব্য নারীবাদি ও পুরুষতন্ত্রবাদিরা(আসলে মন-মানসিকতায় এখনো সামন্ততন্ত্রিয়) একেবারে ব্যক্তি আত্রুমনের উপর সওয়ার হয়ে কোদালের কোপ চালিয়ে যাচ্ছেন।অথচ ফরিদ ভাই সব সময় বলে আসছেন তিনিই নাকি পুরুষবাদী।এইটারেই কয় কপাল।“যার জন্য করলাম চুরি সে কয় চোর “
আসলে বিজ্ঞান পড়লেই যেমন বিজ্ঞান-মনস্ক হওয়া যায় না তেমনি শিক্ষিত হলেই যাকে তাকে জ্ঞানী বলা যায় না , এটা আরেকবার প্রমানিত হলো।
কেউ কেউ বলেন রোকেয়া তার সময়ে নাকি অগ্রসর ছিলেন। এখানে অগ্রসর বলতে তারা কি বুঝান ?অগ্রসরতা বলতে তো বুঝায় যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের সময়ে তাদের সমাজের মানুষের উপর প্রযু্ক্তির ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগির প্রভাব ফেলে আপামর জনতা কে ভবিষ্যৎ জীবনের দিকে ধাবিত করা , না-কি?? রোকেয়া তো সে-সব কিছুই করেননি বরং নারীদের করেছিলেন ঘরের ও বোরকার ভিতর অবরুদ্ধ।শত শত ভালো কথা বা স্বামীর ও বাপের টাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেও।নারী হয়ে নারীর শত্রু আর কাকে বলে
আমাদের ও আমার কাছে তো মনে হয় রোকেয়া ছিলেন তার সময়ে অনগ্রসর এবং নারী জাগরনের অগ্রদূত না বলে বলা উচিৎ বাঙালি নারী জীবনের সকল প্রশ্চাদপ্রদতার কারন যার সামন্ততন্ত্রিয় ও ডাইনেষ্টিয় মনোভাবের প্রভাব বাংলার নারীকে আরো হয়ত ১০০ বছর ভোগতে হতে পারে।
কেউ কেউ বলতে পারেন রোকেয়ার কারনেই তো আজ বাংলাদেশের নারীরা দেশ-বিদেশ, ঘরে -বাইরে বেরিয়ে শিক্ষালাভ ও কাজ-কারবার করছে।একদম ঠিক কথা,এ কথা আমরা সবাই মানি।সত্য কথা হলো রোকেয়া না জন্মালেও বাংলাদেশের নারীরা ঘরের বাইরে বাহির হতো এবং শিক্ষা লাভ করত।কিন্তু যেকথাটা বার বার বলা হচ্ছে তা হলো রোকেয়া যেহেতু স্কুল-কলেজের ও সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনের আইকন তখনই হচ্ছে সব ধরনের সমস্যা।যেটা আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেনী বুঝতে চান না।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
লিংকন ছাড়াও দাসপ্রথার উচ্ছেদ হত, তসলিমা না থাকলে নারীবাদ উঠে যেত না। এমনকি আইনস্টাইন না থাকলেও আপেক্ষিকতাতত্বের উদ্ভব ঘটত। পৃথিবীতে কেউই নির্বিকল্প নয়। একমাত্র ধর্মীয় নবীত্ব বা অবতারবাদে যারা বিশ্বাস করে তারা ছাড়া সবার কাছেই এটা খুবই অবিতর্কিত পয়েন্ট। কিন্তু এর মানে এই নয় যে উপরে উল্লিখিত ব্যক্তি বা রোকেয়ার কোন অবদান নেই। আমার মনে হচ্ছে আপনি স্ট্রম্যানের সাথে লড়ছেন।
সেক্ষেত্রে আইকন-বাজিটা সমস্যা, রোকেয়া নন। নজরুল অপব্যবহৃত হননি মোল্লাদের দ্বারা? শেখ মুজিব, বুদ্ধ, ডারউইন কার ক্ষেত্রে একথা কম বেশি প্রযোজ্য নয়?
রোকেয়া (বা অন্য কেউ) কালাতিক্রান্তভাবে একই ভাবে প্রাসঙ্গিক থেকে যাবেন, নারীর সব সময়কার সব সমস্যার সমাধান তাঁর কাছে মিলে যাবে, এই প্রত্যাশা, এবং এটা না মিললে তাঁকে প্রগতিবিরোধী বলা, এটাও একটা উল্টে ধরা আইকন-বাজি।
@রৌরব,
এত সুন্দর করে উত্তরটা দিতে পারতাম না।
অনেক শুভেচ্ছা!
@লাইজু নাহার,
আপনার বক্তব্যের সাথে আমি সহমত পোষন করছি। ১৮৮০ সালের সাথে ২০১০ এর তুলনা নিতান্তই বালখিল্যতা। বেগম রোকেয়া’কে নিয়ে এতো কথা না বলে নিজে কিছু চর্চা করা দরকার।
কথায় আছে না” আপনি আচরি পরকে শিখাও”
এখনকার অনেক স্মার্ট লেখক মনে করেন এক একটা আগেকার দিনে প্রগতিশীল লেখকদের সমালচনা খুবই একটা স্মার্টনেস।হায় তারা যদি জানতো কার অবদানে আজকের এই সব পথ চলা।
@আফরোজা আলম,
আপনার আর লাইজু নাহারের রোকেয়াকে ডিফেণ্ড করার পদ্ধতির সাথে ধর্মবাদীদের মুহাম্মদকে ডিফেণ্ড করার পদ্ধতির বেশ মিল আছে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি বলেছেন-
আমি এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আপনি না জেনে বুঝে এএমন বিশেষন দিতে পারেন না।
আমি বেগম রোকেয়াকে নিয়ে বক্তব্য রেখেছি।আর আপনি ব্যক্তিগত আক্রমন করছেন।আপনার এমন কথা বলার আগে কি ভাবা উচিৎ ছিলনা? যে যা লিখবে তাই ভালো লাগতেই হবে,ভালো না লাগার পেছনে এমন খোড়া বিশেষন দিলেন।আমি ্তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অনেকেই বাহবা দিচ্ছে আমার না হয় অন্য কিছু বল্লাম।এইটা কী মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র নয়?
@আফরোজা আলম,
প্রতিবাদ করার আগে নিজের মন্তব্যটা আরেকবার পড়ে আসুন আর কীভাবে এটা ব্যক্তিগত আক্রমণ হলো সেটাও ব্যাখা করুন। ভার্চুয়াল জগত আমার কাছে ব্যক্তিগত রাগ-বিদ্বেষের উর্ধ্বে। এখানে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার জন্য বসে নেই আমি। তারপরেও যদি মনে করে থাকেন যে, আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছি, আমার দুঃখ প্রকাশে বিন্দুমাত্রও আপত্তি নেই।
আমার লেখায় শুধু বাহবা দিলেই আমি খুশি আর অন্য কিছু বললেই তাকে আক্রমণ করতে হবে এমন ছেলেমানুষি ভাবনা থেকে উত্তরণ ঘটেছে বহু আগেই। আপনাদের যুক্তির খোঁড়ামি নিয়েই আমি ওই মন্তব্যটা করেছি।
আমার এই লেখার উপর যৌক্তিক যে কোন ধরনের বিরোধিতা করে দেখুন, দেখবেন যুক্তি দিয়েই তা মোকাবেলা করবো আমি। না পারলে হার স্বীকার করে নেবো।
@ফরিদ আহমেদ,
আর আকিমুন আপার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। আমার লেখা বই তিনিই কোলকাতা থেকে এনে আমার হাতে দেন। আজ তাঁর সাথেও কথা হলো তিনি ও খুব বিস্ময় প্রকাশ করলেন। যাই হোক, আমি কোনো ইস্যু করতে রাজী না।
@আফরোজা আলম,
আপনার সাথে আকিমুন আপার ভাল সম্পর্ক আছে যেনে খুশি হলাম। নগন্য মানুষ আমি। আমার সাথে তাঁর কোন পরিচয় নেই। তারপরেও তাঁর ভক্ত আমি মূলত তাঁর ক্ষুরধার লেখা এবং ব্যতিক্রমী চিন্তা-চেতনার কারণে।
তাঁর বিস্ময় প্রকাশের কারণটাও বিস্ময়ই হয়ে রইলো আমার কাছে। রোকেয়া সম্পর্কে তিনি কি তাঁর মূল্যায়ন পরিবর্তন করে ফেলেছেন? আমিতো তাঁর বই থেকেই রেফারেন্স দিচ্ছি।
কিসের ইস্যু সেটা যদিও বুঝি নি, তারপরেও ইস্যু না করার জন্য ধন্যবাদ। ঝামেলা-ঝাটি আর ভাল লাগে না। যত কম হয় ততই মঙ্গল।
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যাঁ, আমাকে আকিমুন আপান বোনের মত স্নেহ করেন। এইবার ভালোলাগলো ফরিদ ভাই, আমাকে ভুল বুঝবেন না। আকিমুন আপা বিস্ময় প্রকাশ মনে হল এই কারনে করেছেন তিনি এতো কিছু লেখা হয়েছে কিছুই জানেন না। আমার কাছেই জানতে পারলেন। আমাকে বললেন মুক্ত-মনার সাইট এসএমএস করে দিতে দিলাম। তিনি হয়তো দেখবেন। আর এইটুকু জানালেন যে মুক্ত চিন্তা সবাই করতে পারে,না করাটাই অস্বাস্থকর। কী চমৎকার কথা। আপনার মত আমিও কিন্তু তাঁর লেখার ভক্ত।অথচ আলোচনা সমালোচনা করা ছাড়িনা।তিনি আমার কবিতা পছন্দ করেন। এইটাই আসল মুক্ত-চিন্তা। তাই না? তবে আপনার এই ভাবনাটাও ভালোলাগলো। 🙂
@আফরোজা আলম,
ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারগুলো দিয়ে আমরা কোন কিছু জাস্টিফাই না করি বরং। আমার সাথেও তার পরিচয় হয়েছিল অঙ্কুর প্রকাশনীতে, সেখানে তার বিবি থেকে বেগম বইটি এবং মুক্তমনায় প্রকাশিত রোকেয়া বিষয়ক লেখাটি নিয়ে আলাপও হয়েছিল। বহু বছর আগের কথা। হয়তো তিনি ভুলে গিয়ে থাকবেন। তিনি সাম্প্রতিক ব্লগের লেখা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতেই পারেন, এতে আমি অবাক হবার মত কোন কিছু দেখছি না। কারণ বাংলাদেশের লেখক সাহিত্যিকেরা সংবাদ পত্রে এবং ছাপা কাগকে লেখালিখি করেন, অনেকেই ইন্টারনেটের ফোরাম বা ব্লগ তেমন একটা দেখেন না। কিন্তু সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল আকিমুন রহমান যে কথা গুলো বলেছেন রোকেয়া সম্বন্ধে সেগুলো তার প্রকাশিত বইয়েই পাওয়া যাবে। আমার কাছে বইটি আছে। রেফারেন্স দিচ্ছি –
বিবি থেকে বেগম : বাঙালি মুসলমান নারীর ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস, অঙ্কুর প্রকাশনী (ISBN -984 464 1225). সেই বইটির স্বামীর ছাঁচে বিকশিত প্রতিভারা (১১৬ – ১৪২ পৃঃ) অধ্যায়টি দেখুন। সেখানেই রোকেয়া সম্বন্ধে তার অভিমত সরাসরি ব্যক্ত করেন।
কাজেই আমরা যারা এখানে আকিমুনের লেখা নিয়ে যা আলোচনা করছি তার নিরিখেই করছি কিন্তু। সাহিত্যেরই আলোচনা সমালোচনা হোক, ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বাইরে রেখে।
@অভিজিৎ,
দুঃখিত আমার আসলে এমন একটা পরিচয়ের কথা বলা ঠিক হয়নি,যাই হোক তবে আপনার মূল্যবান
তত্ত্বের নিরিখে আমি বই গুলো সব পড়ব।
“বিবি থেকে বেগম” বইটা খুব শিঘ্র এসে যাবে। আমি আসলে অনেক্ষণ ধরে কমপিউটারে থাকতে পারিনা। জানেন না হয়তো আমার বাজে একটা অসুখ হয়েছে।
তবে এমি অল্প-অল্প করে পড়ছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@আফরোজা আলম,
আপনার এই মন্তব্যটাও খুব ভাল লাগলো।
মত-অমতের দ্বন্দ্ব থেকেই আসলে মুক্তচিন্তার জন্ম হয়, পরস্পরের পিঠ চাপড়াচাপড়ি থেকে নয়। 🙂
@আফরোজা আলম,
আপনার মন্তব্যে খুব খুশি হয়েছি।
আশা করি সাথে থাকবেন.
আকিমুন যেহেতু রোকেয়ার কড়া সমালোচনা করেছে,
মুক্তমনার অতি আতেঁলদের তাই তাকে এত পছন্দ!
আর আবুল ফজল,মোহিতলাল মজুমদার,গোলাম মুরশিদ,
আবদুল মান্নান সৈয়দ সহ প্রায় ৮০জন তার জীবনীতে তার প্রাপ্য
মূল্যায়ন করে গেছেন।
সেখান থেকে কিন্তু কোট করেন নি!
যেহেতু তা তাদের চিন্তাধারার সাথে মেলেনা!
ভাল থাকুন!
@লাইজু নাহার,
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে সমালোচনা করলে আমি সেখানে বলবই , আর তা ছাড়া আমি জানা মতে তাঁর লেখার পেছনে অবদান আর উৎসাহ তার বড় ভাইয়ের, এমন আরো অনেক কিছু জানি,বেশী বলতে গেলে আলাদা প্রবন্ধ লিখতে হবে।আমি এই মুহুর্তে বেশিক্ষণ পিসিতে বসতে পারিনা। যারা আমাদের আলোর দিশারী তাদের নিয়ে কৃ্তজ্ঞ থাকার বদলে এমন অহেতুক কথা আমার ভালো লাগে না।
আর আকিমুন আপা কিন্তু উদার মনের মানুষ।আমি ব্যাক্তিগত ভাবে জানি তাঁকে তিনি সবার মতামতকে অত্যান্ত গুরুত্ত্ব দিয়ে থাকেন। বরঞ্চ না দেয়াটাই অস্বাস্থকর ভাবেন।
“সীমাহীন স্ববিরোধ ও পুরুষতন্ত্রের প্রথা মান্য করার অন্য নামই হচ্ছে রোকেয়া।” – এই টুকুই আসলে যথেষ্ট আকিমুনের সমগ্র প্রচেষ্টাকে বোঝার জন্য। রবীন্দ্রনাথ ও শেখ মুজিবের নিন্দা ও প্রশংসা করার সময় যেইরকম সীমা ছাড়ায় যায় এই খানেও যথারীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মাত্রা ঠিক করা দরকার।
“critique of language” কে কতটুকু সঠিক সমালোচনা বলা যায় আমি জানি না। তবে মার্টিন লুথারকে আমরা বিপ্লবের হত্যাকারী বলতে পারলেও রোকেয়া কে বলা যাবে না। লুথারের মতন কোন বিপ্লব তিনি আদৌ শুরু করতে পেরেছিলেন কিনা।
গবেষণা কাজে আকিমুন কি কি কাজে লাগিয়েছেন? প্রথমত রোকেয়ার জীবন কাহিনী ও তার ও তার স্বামী সম্বন্ধে বিভিন্ন লোকের মূল্যায়ণ।
আমরা রোকেয়ার ব্যক্তিজীবনের সমালোচনা করতে গিয়ে রোকেয়ার দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ বিবাহ না ঘটা বা অন্য পুরুষের প্রতি রোকেয়ার অনাসক্তি খুঁজে বের করতে পারি।
এর পর রোকেয়ার লেখা থেকে উদ্ধৃতি। “লেখিকার বুদ্ধির দৈন্যের” অজুহাতে রোকেয়া নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছেন, আমরা সেই পথে না যাই।
আমরা রোকেয়াকে চেপে ধরি। “পুরুষের অবনতি” কেমন করে “স্ত্রঈ জাতির অবনতি” হয়ে গেলো এটা আমরা বাদ(overlook) দিয়ে যেতে পারি।
আরেকটা হলো অন্য সমালোচকের মূল্যায়ণ। আমার মতে এইখানে আকিমুন কিছু পারদর্শীতা দেখিয়েছেন এবং নতুন ভাবে রোকেয়াকে পাঠ করার একটা পথ ও দেখিয়েছেন। আমাদেরকে বের করতে হবে, কিভাবে রোকেয়াকে পুরুষতন্ত্র বিকৃত করে উপস্থাপণ করতে সক্ষম হলো। তবে আকিমুন হেটেছেন সোজা পথে।
হ্যা, রোকেয়ার দুর্বলতা ছিল, যার ফলে তার পতিপ্রেম তার প্রগতির বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যায়। সেটা আকিমুনের মত সমালোচকও পারেন, আবার ভারতের মুসলমানও তাকে কাটছাঁট করে নিয়ে উপহার দিতে পারে তার কন্যাকে।
রোকেয়া নিশ্চিত ভাবেই প্রতিভা। তার কাছ থেকে আমরা কি চাই সেটা আগে আমাদের স্থির করা প্রয়োজন।
*রোকেয়া বিপ্লব শুরু করতে পেরেছিলেন কিনা হবে।
বিপ্লব পালের মন্তব্যের সাথে আমি প্রায় সহমত প্রকাশ করি, তবে কাল বিশেষে পন্থা ভিন্ন হতেই পারে। “রোকেয়া কেন মুসলমান নারীকে কোরান পড়তে নিষেধ করেন নাই, কেন পর্দাসহ মেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসতেন?” এই অভিযোগ করা যায়।
সেই ক্ষেত্রে রোকেয়ার মূল লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় নাস্তিকতার প্রচার, যেটি আমার লক্ষ্য হতে পারে, কিন্তু ঐ সময় রোকেয়াকে কাজ করতে হইত।
@স্বাক্ষর শতাব্দ, কোথায় বাঁকা উক্তি করলেন আর কোথায় সোজা কথায় বললেন এটাই তো বোঝা দায় আপনার মন্তব্য থেকে।
কিন্তু কেন :D?
অন্য কথায়, কার সাথে রোকেয়ার তুলনা করছেন — কার তুলনায় তিনি প্রগতিবিরোধী? আমাদের এখনকার মানদণ্ডের তুলনায়? উনার জন্ম ১৮৮০ সালে। হুমায়ুন আজাদ রবীন্দ্রনাথের নারী চিন্তার সমালোচনা করবার সময় দেখিয়েছিলেন ও সময়েরই অন্য লেখকের (যাঁদের অনেকেই নারী) তুলনায় তাঁর প্রগতিবিরোধিতা। থিসিসটা শক্ত হয়েছিল তাতে। রোকেয়ার সমকালীন মুসলিম লেখকদের সাথে তাঁর তুলনাটা শক্ত হত, তসলিমা বা ওলস্টানক্রফ্টের সাথে নয়।
এটা এবং আকিমুন রহমানের পুরো অনুচ্ছেদটি অবান্তর মনে হয়েছে, হয়তবা বিচ্ছিন্ন একটি অংশ পড়ছি বলেই। রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন তাই “পোস্টমাস্টার” বাজে গল্প, সমালোচনাটা এ ধরণের। তার চেয়ে আপনার উদ্ধৃতিগুলি অনেক শক্ত। তবে তারিখ ও রেফারেন্স দিলে খুব ভাল হল, বোঝা যেত রোকেয়ার চিন্তা কোন দিক থেকে কোন দিকে গেছে। নইলে quote mining এর মত শোনাতে পারে, কেবলই ১৮৯৫ থেকে ১৯০৫ এর রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করার মত।
@রৌরব,
একমত। বেগম রোকেয়া হয়তো তাঁর যুগে আজকের যুগের স্বাধীন নারীর মতো চিন্তা চেতনায় এতো অগ্রসরমান ছিলেন না। নারীর স্বাধীন চিন্তা চেতনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা তখনতো সবে শুরু। আর যে আদর্শ মানূষ চিন্তা ভাবনায় লালন করে সেটা বাস্তব ক্ষেত্রে নিজের জীবনে প্রয়োগ করার সাধ্য মানুষ কতটুকু রাখে বা পরিবেশ পরিস্থিতি কতটুকু অনুকুলে থাকে সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। তা বলেতো আর চিন্তা ভাবনার প্রকাশ ঘটানো যাবেনা এমন বলা যায়না।
স্বীকার করি তাঁর অনেক লেখাই বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত কিন্তু তাঁর উক্তিটি
আমার মতে সেই সময়কার জন্য যে একটা অত্যধিক সাহসী উক্তি তা বলাই বাহুল্য। এমনকি বর্তমান সমাজেও কোন নারীর “এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষরচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।” উচ্চারন করা কঠিন বৈকি।
স্ববিরোধীতা না করলে উনি হল স্মরনীয় আর তসলিমা হন ঘৃণিত 🙂 ?
@আদিল মাহমুদ,
তসলিমারও বহু স্ববিরোধিতা আছে ভাইজান। সেগুলো নিয়ে না হয় অন্য এক সময় আলোচনা করা যাবেক্ষণ। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
করার আগে আশা করি পিঠে বস্তা বেধে মাঠে নামবেন।
@আদিল মাহমুদ,
হু, ঠিকই বলছেন। শুনছি তিনি নাকি মুক্তমনায় মাঝে মাঝে ঢু মারেন। এই মন্তব্যটাও করাটা ঠিক হলো কি না কে জানে। ভয়েই আছি। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
বাবা রে!
ভাগ্যিশ এইটা আমার ছদ্মনাম!
তবে ওনাকে ভয় পাওয়ার মত কিছু ঘটে নাই এখনো, অন্ধভক্তদের কিছুটা ভয় পেতে হয়।
লিখে ফেলেন, দরকার হয় আপনার সাহিত্য চর্চার উপকরন আমি গাঁটের পয়সা খরচ করে সাপ্লাই দেব 😀 ।
@আদিল মাহমুদ,
শুধুই তেলা মাথায় “তেল” দেবেন? আমাদের মত উদীয়মান প্রতিভার পেছনেও তো একটা বাজেট থাকা দরকার 😛
@রৌরব,
সেসব উপকরনে অরুচি নাই বললে অবশ্যই জাতির স্বার্থে , সাহিত্যের স্বার্থে সক্রিয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
@আদিল মাহমুদ,
:coffee:
কাপটিকে একটি বাড়িয়ে ধরা খালি কাপ বলে ধরে নিন। এরপর আপনার করণীয় নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না 🙂
@রৌরব,
কাপের চেয়েও এটি উত্তম। :cigarette:
এতেই না হয় কিছু ভরে দিতে বলুন আদিল মাহমুদকে। তাঁর কাছেতো বিশাল কালেকশন আছে বলেই শুনছি। তবে, কোন দিন না আবার ক্যানাডিয়ান পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলে ঢোকে কে জানে। ছদ্মনামও তখন বাঁচাতে পারবে না বলেই মনে হয়। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।
মহৎ সাহিত্যকর্ম রচনার প্রক্রিয়া আমার কাছে এখন পুরোপুরি স্পষ্টঃ
:coffee:
আ…আ…হ….
:cigarette:
ব্যোম শংকর
:coffee:
আ…আ…হ….
:cigarette:
জয় মা তারা
:cigarette: :rose:
(ফুলটি পপি ফুল)
:):)…. :cigarette:..:-(…:cry:…… :cigarette:…..:hahahee:
:coffee:
আ…আ…হ….
:-(…….:rose: :rose: :rose: :rose: :rose: (সরষের ফুল)
….:coffee::cigarette:…….. :-/ :-X 😕 :rotfl:
(প্রতিভা এ পর্যায়ে ঝরে ঝরে পড়ছে)
“ঝুঁকিটা মনে হয় একটু বেশিই নিয়ে ফেলেছি আমি। :coffee::cigarette:হঠাৎ করে মনে হলো আমার।…” 😀
@রৌরব,
হা হা হা। আদিল মাহমুদ কখন সব সাপ্লাই দিলো? প্রতিভার পূর্ণাঙ্গ পোস্ট চাই। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
খবরে জানলাম, অভ্র নাকি ইউনিবিজয় প্রত্যাহার করে নিয়েছে?
তাইলে আপনারা তো বেআইনি কাজ করছেন। ছি, নিজের কাছেই এখন লজ্জা লাগছে, আমরাই কি পাগলামি করলাম? মেহদী কি আরেকটু অপেক্ষা করতে পারতো না?
এনিওয়ে, আপনার এই লেখাটা কিন্তু ধর্মপ্রেমীর লেখা বলে ভুল হচ্ছে, মানে সিদ্ধান্ত আগে, যুক্তি তার পিঠে। রৌরবের নিচের মন্তব্যটাই যৌক্তিক মনে হয়।
আপনার মেল আইডিটা একটু দেবেন?
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
কেন? রোকেয়ার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা আছে বলেতো জানি না। বরং আমার মত পুরুষবাদীদের মনের কথাইতো তিনি বেশ সুন্দর করে বলে গেছেন। দেখেন আব্দুল মান্নান সৈয়দ কী বলেছেন। রোকেয়া যে আসলে পুরুষসত্তার প্রকাশ ছিল কত সুন্দরবভাবে সেটাকে প্রকাশ করেছেন তিনি। 😀
রবীন্দ্রনাথের মত একজন খাস পুরুষবাদীর মধ্যে নারীত্ব গুঞ্জরিত হয়েছিলো শুনলে রমাবাই কী করতেন কে জানে? আত্মহত্যা করতেন মনে হয়। 😀
মর জ্বালা!! দিলামতো একবার। :-Y
এই যে নিন। [email protected]
ধর্মের পথে যারা নারীমুক্তি চেয়েছেন, তাদের সর্বোত ভাবে বর্জন করা উচিত। কারন ধর্ম বিবর্তনের পথে গড়ে ওঠা সেই সামাজিক প্রোডাক্ট যার আসল কাজই ছিল নারীকে পুরুষের দাসী বানানো-কারন এটা না করলে, মেয়েদের কাছ থেকে অধিক সন্তান পাওয়া যেত না। সেই প্রাক আধুনিক যুগে যেখানে শিশুমৃত্যুর হার ছিল খুব বেশী-সেখানে কোন সমাজের পক্ষেই নারীকে স্বাধীন করা সম্ভব ছিল না-বরং প্রয়োজন ছিল তাদেরকে ধর্মের আফিং খাইয়ে আরো সন্তানবতী করা। সেটাই ছিল ধর্মের আসল কাজ।
নারী একই সাথে মুসলমান ও নারীবাদি হতে পারে না-হিন্দু ও নারীবাদি ও হতে পারে না। এধরনের চিন্তা ভাবনা হাস্যকর-কারন ধর্মমাত্রেই নারীবাদের এন্টিথিসিস। মনে রাখতে হবে নারীবাদের সূচনা
ধনতান্ত্রিক সমাজের উদ্ভব থেকেই-যেখান থেকে শিশুমৃত্যুর হার কমে-এবং নারীর কর্মক্ষেত্রে যোগদান [ বা ধনতন্ত্রে যোগদান] অবসম্ভাবী হয়ে ওঠে।
প্রতিটা ধর্মই নারীকে সন্মান দিয়েছে মা হিসাবে। কারন সেই মায়ের মোহে না ভোলালে, নারী ৭-১০ করে সন্তান নিতে চাইবে কেন? আবার এটা ভীষনভাবেই সেকালে দরকার ছিল-নইলে সমাজের বৃদ্ধি ছিল অসম্ভব।
ফলে ধর্মকে নৃতত্ত্ব এবং ইতিহাসের দৃষ্টিতে না দেখলে-কোন নারীবাদিই বুঝতে পারবে না-ইতিহাসের কোন প্রয়োজন থেকে ধর্মের জন্ম এবং কোথা থেকে নারীবাদের জন্ম। এই দুটি প্রয়োজন এতই বিপরীত মুখী যে ধার্মিক নারীবাদি আসলেই কোন নারীবাদি হতে পারে না।
@বিপ্লব পাল,
উইকি রোকেয়াকে ইসলামিস্ট ফেমিনিস্ট বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামিক ফেমিনিস্ট এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে যে, এই নারীবাদীরা ইসলামী মূল্যবোধের কাঠামোর ভিতরে নারীর অধিকার, লৈঙ্গিক সমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করতে চায়।
হালাল সাবানের মত, হালাল নারীবাদও আছে। বুঝছো মিয়া। 😀
আমার সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে মুক্তমনার দুই বিশিষ্ট আঁতেল অভিজিৎ আর স্বাধীনের ঈর্ষাপ্রসূত তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং বিদ্বেষময় মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমি। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
আঁতেল গোত্রের মাঝে আমার নাম ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি 🙁 । এই বৈশিষ্টের জিন কখনই আমার মাঝে বিদ্যমান নহে তাহা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে 😛 ।
@ফরিদ আহমেদ,
আগে রসিকতার ঢংয়ে বলেছিলাম, এখন খুব সিরিয়াসলি বলছি, আপনার গল্পগুলি আমার অসাধারণ মনে হয়েছে।
ভীষণ রকমের সহমত। 😀
এই বক্তব্যেও সহমত। একারণেই “অন্য আলোয় দেখা” ধরণের লেখাগুলোই বেশি পছন্দ করি।
ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ এই সুন্দর লেখাটির জন্য এবং স্বমূর্তিতে ফিরে আসার জন্য। মাঝখানে মনে হয় উনার একাউন্ট হ্যাক হয়েছিল 😀 । সার্ভার মাইগ্রেশনের ত্রুটির জন্য এরকম হতে পারে 😛 । বলা যায় না, কতই কিছু তো ঘটে আল্লাহর এই দুনিয়ায় :-Y ।
এই না হইলো লেখা! কি সব লিখছেন গত দুই পর্ব ধইরা – না পারি গিলতে না পারি উগরাইতে। যাক আবার স্বমূর্তিতে আপনারে দেখা গেল।
রোকেয়ার এই স্ববিরোধিতাটা আমাকেও ভাবায়। আমি সেটা নিয়ে লিখেছিলামও আমার একটা প্রবন্ধে – সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নারী ও যৌনতা : কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা
নারীবাদের ইতিহাসে রোকেয়া একটি অনন্য নাম হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু বলতে হয়, রোকেয়ার মধ্যে স্ব-বিরোধ ছিলো বিস্তর, চোখে পড়ার মতই। পর্দা প্রথার পক্ষে রোকেয়ার স্ব-বিরোধী বক্তব্য এবং এর জাঁকালো ব্যাখ্যা তার প্রমাণ :
আসলে এ ধরনের ‘পর্দানসীন ভদ্রবেশী নারী’ যিনি কিনা মাঝে মাঝে উচ্চকিত হবেন নারীমুক্তির বন্দনায়, কিন্তু নিশি-দিন যাপন করে যাবেন এক প্রথাগ্রস্ত, বিনীত, মান্য করে ধন্য হয়ে যাওয়া ছকে বাঁধা জীবন – এমন ‘অধুনিকা’ নারীরূপ কিন্তু পুরুষতন্ত্রের খুব পছন্দের। রোকেয়া তসলিমা বা মেরি ওলস্টোনক্র্যাফটের মত উগ্র, ঝাঁঝালো, আমূল নারীবাদী নন; তিনি বাঙালী মুসলমান নারী জাগরণের জন্য লিখে গেছেন কিছু অমূল্য রচনা, কিন্তু নিজের জীবনে অনড় করে রেখেছিলেন অন্ধকার, বোরখা ও প্রথার মহিমা। যেহেতু তিনি তুষ্ট করেন পুরুষতন্ত্রের ‘উদারনৈতিক’ সকল চাহিদা, তাই বিনিময়ে পুরুষতন্ত্র আজ তাকে দিয়েছে ‘মহীয়সী’ অভিধা, এখন নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে ‘নারী জাগরনের অগ্রদূত’ হিসেবে। আজ তাই দেখা যায় এমনকি চরম রক্ষণশীল, প্রথাগ্রস্ত পুরুষটিকেও রোকেয়া বন্দনায় মুখর হতে। আসলে এভাবে মহতী নারীর প্রশংসা করে পুরুষতন্ত্র পালন করে তার দীর্ঘদিনের গড়ে তোলা সাম্রাজ্য আর ছকেরই জয়ন্তী উৎসব। তাই ডঃ আকিমুন রহমান যথার্থই বলেছেন :
আসলে আকিমুন রহমান রোকেয়াকে যে দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষণ করেছেন সেটা বাংলা সাহিত্যে খুবই বিরল। আমাদের সংস্কৃতিতে গুরুভক্তি প্রবল। শেখ মুজিবকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি বা রবীন্দ্র বন্দনা দেখলেই তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। আসলে মান্য করে ধন্য হয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে এরকম ক্রিটিকাল দৃষ্টি খুব বেশি চোখে পড়ে না। সেই কথা আমি আকিমুন রহমানকে বলেছিলামও একবার যখন আমার সাথে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশে। বিনয়ী আকিমুন রহমান অবশ্য তখন আমার আলো হাতে চলিয়াছে এই বইটার প্রশংসা করতেই ব্যস্ত ছিলেন। আমি আকিমুনের সামনে দাঁড়িয়ে ,মনে মনে ভাবছিলাম আমিও লিখি আর চামচিকাও পাখি 🙂
যাকগে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে হুমায়ুন আজাদ আর আকিমুনের বাইরে আরেকটি লেখা মুক্তমনায় আছে। গোলাম মুর্শিদের বিশ্লেষণ। আমি দুজনের লেখাই এখানে দিচ্ছি-
বেগম রোকেয়া : প্রথম বাঙালি নারীবাদী – ডঃ গোলাম মুর্শিদ
রোকেয়া : স্বামীর ছাঁচে বিকশিত প্রতিভা (১ | ২ | ৩) ডঃ আকিমুন রহমান