cover14
হাসানআল আব্দুল্লাহ

বঙ্গীয় উপনিষদ

কৃষক দু’বেলা খেতে পায় না।
আরশের দিকে চোখ তুলে বলে,
কিছু দাও।
মাটি, ঘর, গাছ দোলে।
আকাশ কাঁপানো শব্দ ওঠে: ব।
কৃষক এ ওর দিকে চায়। কর্তা কন, বুঝলা বাঙ্গাল!
সম্মিলিত আওয়াজ আসে, হ হ হ…
আপনি কইছেন: বায়ান্ন।
কর্তা হাসেন, ঠিকই ধরছো।

আরশের দিকে চোখ তুলে কৃষক আবার কয়,
কর্তা কিছু দাও।
আকাশ কাঁপানো শব্দ ওঠে: ব।
কৃষক খিলখিল হাসে, এ ওর দিকে চায়।
কর্তা কন, বুঝলা কিচ্ছু!
হ হ হ…
আপনি কইছেন: বঙ্গবন্ধু।
কর্তা বলেন, ঠিকই ধরছো।

আরশের দিকে চোখ তুলে কৃষক আবারো কয়,
কর্তা কিছু দাও।
আকাশ কাঁপানো শব্দ ওঠে: ব।
কৃষক লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যায়।
কর্তা কন, বুঝলা জোয়ান!
হ হ হ…
আপনি কইছেন: বাংলাদেশ।
কর্তা হাসেন, ঠিকই ধরছো।

বঙ্গীয় ব-দ্বীপ থেকে আওয়াজ ওঠে: ব ব ব।
বায়ান্ন, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ।
২৯.১১.৯৬

মার্চের কবিতাগুলি

মার্চের কবিতাগুলি আস্তে আস্তে মরচে ধরে
ঝুরঝুর পড়ে যাচ্ছে আমাদের ছেঁড়াখোঁড়া পকেটের
দরজা জানালা দিয়ে। আমরা আদ্যন্ত হাহাকার
করে উঠছি কখনো। কেউ কেউ বুঝবার আগেই আবার
ধ্বনিগুলো চুষে নিচ্ছে আবাল বাতাস।

কতোদূরে হেঁটে গেলে কবিতারা আসে?
সদুত্তর দিতে গিয়ে
কানিংহাম শিক্ষকের দিকে ছোঁড়ে
তিনবার থুথু, “গো ফাইন্ড এ টিচার
হু হ্যাজ নো অ্যাকসেন্ট!”

মার্চের শীতও আস্তে আস্তে ঝরে যাচ্ছে
রাস্তার ফাটল আর
আমাদের চেনা জানা পোষাকের অতিরিক্ততার
ঘুলঘুলি দিয়ে। হেসে উঠতে চাইছে গাছ—
আমার গাড়ির বাতি ভাঙা
সত্তরের বুড়ো ফাটাচেরা খুনখুনে;
এবং তারও ডালে ডালে আসন্ন সবুজ—
নিয়মিত দোলার আভাস।

কতোদূরে হেঁটে গেলে স্বাধীনতা আসে?
সদুত্তর দিতে গিয়ে
ম্যান্ডেলা, মুজিব আর…
শোনা গেলো বহুবিধ করাতের কাতর আজান।
৩১.০৩.২০০১

বাংলাদেশ

অতঃপর সদ্য ফোটা গোলাপের মতো বাংলাদেশ
হাতে করে তরতর বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন মুজিব।

কারাগারের পাশেই ওরা খুঁড়েছিলো নির্মম কবর;
তখন খবর পেয়ে
অভুক্ত ছিলেন আমার বাবাও,
গ্রামে গঞ্জে অনেক মানুষ।
অতঃপর প্রত্যাশার সম্ভাব্য সকাল ঝলমল করে উঠেছিলো;
তাঁর অশ্রু
আর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের মিছিলে।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু, পুরো বাঙালী জাতিই
আপনার পরিবার। আর বাংলার প্রতিটি শস্য কণা,
ফুল-ফল, কৃষকের জন্মানো ফসল,
গ্রাম অঞ্চল ও শহরের প্রয়োজনীয় অথবা অপ্রয়োজনীয় আসবাব,
স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়,
সংসদ ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির শোবার ঘরের খাট
সমস্ত কিছুই মুক্তিযোদ্ধাদের।
কারণ, তিরিশ লক্ষের রক্তের দাগ লেগে আছে সবখানে।
২৭.০৩.২০০০

অন্তরাত্মার আহ্বান

আমি শেখ মুজিবর রহমানের কথা বলি
কারণ, তিনি বাঙালী জাতির মুক্তির কথা বলতেন।
আমি উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করি
তাঁর মহত্ত্ব ও অসাধারণ দেশ প্রেমের
জ্বলজ্বলে ইতিহাস। তিনিই বাঙালী
জাতির জনক, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা,
এতে কোনো সন্দেহ নাই।
বাংলার ফুল-পাতা, নদী-নালা
পাহাড়-পর্বতে
একটি নাম সর্বক্ষণ আলোক ছড়ায়;
বস্তুতঃ বাংলাদেশের ডাক নাম শেখ মুজিব।
আমি তাঁর পবিত্র রক্ত ও আদর্শের কাছে
অঙ্গীকারাবদ্ধ
এক বাঙালী-সন্তান। তোমরা বিশ্বাস
করো, হে মুজিব
সন্তানেরা, হে বাংলার মানুষ,
আমি তোমাদের এতোটুকু মিথ্যা বলি নাই।
যদি তোমরা সত্যবাদী হও,
তবে উচ্চারণ করো তাঁর নাম
এবং কিছুতে বিস্মৃত হয়ো না
তোমাদের সত্তা ও আদর্শ, তোমাদের গৌরব ও গর্ব।

আর অশ্রু নয়
এবার মিথ্যাবাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও
এবং স্মরণ করো সেই
উদাত্ত আহ্বান, “তোমাদের যা কিছু আছে
তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো…
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
জয় বাংলা।”
১১.০৮.৯৪

নির্দেশনামা

যা বলবো সরাসরি বলবো, দাঁড়িয়ে ছিনা টান করে
দ্রিমিকি দ্রিমিকি শব্দে
ভুবন কাঁপিয়ে বলবো।
দুই দশকের কুষ্ঠ রোগীর মতন
হাঁপাতে হাঁপাতে কথা বলা আমার স্বভাব নয়,
আমি নই লোলুপ পা-চাটা কোনো
নেড়ি কুত্তা, গৃহস্থের আমন চালের সুগন্ধি ভাতের মাড় আমার উদ্দিষ্ট নয়।
কোনো পিছুটানও আমার নেই,
নপুংসক কোনো পিশাচের করবিষ স্পর্শ করিনি কখনো।
আমি নই রাষ্ট্রপালিত নাদুস
পশুদের কাতারের কেউ। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,
চকচকে রাইফেলের বীভৎস
নলের সামনে শিরদাঁড়া টান করে
যিনি করেছিলেন সুদৃঢ় উচ্চারণ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,
তিনিই আমার পিতা,
তাঁর পবিত্র রক্তের ধারা আমার শিরা ও ধমনীতে বিপুল জাগ্রত।

আমি পৃথিবী নামক গ্রহের অপর পিঠ থেকে
অতিথি পাখির মতন আসিনি উড়ে।
এ মাটির, এ দেশের এক বীরাঙ্গনা মাতার নিষ্পাপ
নিরন্ন জঠরে, তাঁর রক্ত ও মাংসের
সুষম বণ্টনে যে সন্তান বেড়ে উঠেছিলো সে তো আমি;
মাটি ও মাতার সম্ভ্রম রক্ষায়
বজ্রের মতন কঠিন, কঠোর হওয়া আমার স্বভাব।
আমার ভেতরে নেই ন্যাকামি ও ভণ্ডামির মতো ভয়ঙ্কর অন্ধকার।
খারাপের টুঁটি চেপে ধরা
আর ভালোকে অবলীলায় সম্মানের সম্পন্ন আসনে
বসানো আমার মাতৃ ও পিতৃ প্রদত্ত পবিত্র চরিত্র।

না, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রীধারী কোনো
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ নই। তবুও বুঝতে পারি
গন্ধময় নর্দমাই কলুষিত বাতাসের প্রধান কারণ।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী না হলেও জেনে গেছি শ্বসনের
নিয়ম কানুন। আপনাদের উদ্দেশ্যে
তাই গলা উঁচু করে সরাসরি বলছি, এবার
পরিষ্কার করুন নর্দমা, মুক্ত অক্সিজেন আমারও প্রয়োজন।
২৮.০৬.৯৩

ঘোষক

সুযোগ বুঝে নিদেন বাবু
দিলেন মহা ঘোষণা,
ভক্তরা সব ঘোষাল ডাকে
আদতে সে ঘোষ-ও না।

মহান নেতার বরাবরে
পাঠ করেছেন উচ্চস্বরে,
ঘোষাল হতে চাননি তিনি
তাই নিদেনের দোষ-ও না।

চতুর কিছু রাজনীতিকে
মিথ্যা বোনে চারিদিকে।
দেশের হৃদয় ফুঁড়ে জাগে
গভীর অনুশোচনা।

সুযোগ বুঝে নিদেন বাবু
দিলেন মহা ঘোষণা।
১২.০৮.৯২

নাম

হাজার বছরে যে নাম শিখেছি
সে নাম আমার হৃদয়ে আছে,
সুরে ও ছন্দে মহা আনন্দে
সে থাকে আমার অনেক কাছে।

বাতাসে সহসা হেসে উড়ে চলে
জলে ভেসে থাকে কমল, তাজা।
চাঁদে ও সূর্যে তার ছড়াছড়ি
ফুলের বাগানে অমর, রাজা।

প্রজাপতি তার পাখার দু’ধারে
তাকে নিয়ে ঘোরে সারাটা দিন,
শিশুদের মুখে প্রতিদিন ভোরে
সে নাম ছড়ায় হাসি রঙিন।

হাজার বছরে যে নাম শিখেছি
বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে,
বাগানে, পাহাড়ে, ক্ষেতে ও খামারে
সে নাম ধ্বনিত সমস্বরে।

গাছে গাছে ডাকে সব পাখি তাকে
নদী ডেকে চলে আপন মনে,
স্বর্ণ দানায় খচিত সে নাম
বাংলা মায়ের দুই নয়নে।

যুগ যুগ ধরে সবার হৃদয়ে
সে নাম জ্বালায় খুশীর দীপ,
জুলিও কুরি সে, বঙ্গবন্ধু
জাতির জনক শেখ মুজিব।
২৮.০৬.৯২

কবিতায় বঙ্গবন্ধ, হাসানআল আব্দুল্লাহ, শব্দগুচ্ছ প্রেস, প্রথম প্রকাশ ২০০০, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৯