আধ্যাত্মিকতা ও মানব-মস্তিষ্ক
অনুবাদক: রাতুল পাল
মূল ইংরেজী রচনা: প্রফেসর অসীম দত্তরায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আলবার্ট আইনস্টাইন উভয়ই সংগীত ও প্রকৃতির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, এবং তারা আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে নিজেদের ভিতর গভীর আলোচনা করেছিলেন। একবার তাদের আলোচনা মোড় নিয়েছিলো ‘সত্য’,‘সুন্দর’ এবং এ-বিষয় দু’টি মানবচেতনা নিরপেক্ষ কিনা সে-প্রশ্নের দিকে। ‘সত্য’ ও ‘সুন্দর’-কে রবীন্দ্রনাথ যখন মানব চেতনা নিরপেক্ষ হিসাবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন, আইনস্টাইনের পাল্টা প্রশ্ন ছিলো, “যদি মানুষ কখনো বিলুপ্ত হয়, তাহলে বেলভাদ্রের অ্যাপোলো কি আর সুন্দর রবে না?”। রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিয়েছিলেন,‘না’। প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন আইনস্টাইন, “সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে আপনার ধারণা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু সত্যের ক্ষেত্রে নয়”। আইনস্টাইনের যুক্তি ছিলো – বৈজ্ঞানিক সত্যকে বাস্তবতা-নিরপেক্ষ হিসাবে গ্রহণ করা উচিৎ। তখন রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিলেন, “যদি এমন কোন সত্য থাকে, যার সাথে আমাদের চেতনার কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা যৌক্তিক সম্পর্ক নেই, তাহলে মানুষের কাছে সেই সত্যের কোন অস্তিত্ব থাকাই সম্ভব নয়”। ‘সত্য’ ও ‘সুন্দর’- এর উপর চেতনার ভূমিকা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের ধারণা পেতে তাঁর ‘আমি’ কবিতাটির অংশবিশেষ উল্লেখ করা যেতে পারে—
“ আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে ।
আমি চোখ মেললুম আকাশে ,
জ্বলে উঠল আলো
পুবে পশ্চিমে ।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’,
সুন্দর হল সে ।
তুমি বলবে , এ যে তত্ত্বকথা ,
এ কবির বাণী নয় ।
আমি বলব , এ সত্য ,
তাই এ কাব্য ।
এ আমার অহংকার ,
অহংকার সমস্ত মানুষের হয়ে ।
মানুষের অহংকার – পটেই
বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প ।
তত্ত্বজ্ঞানী জপ করছেন নিশ্বাসে প্রশ্বাসে ,
না , না , না—
না – পান্না , না – চুনি , না – আলো , না – গোলাপ ,
না – আমি , না – তুমি ।
ও দিকে , অসীম যিনি তিনি স্বয়ং করেছেন সাধনা
মানুষের সীমানায় ,
তাকেই বলে ‘আমি’ । …”
আইনস্টাইন সম্ভবত কিছুটা বিজয়দৃপ্ত হয়ে বলেছিলেন, “তাহলে আমি আপনার চেয়ে বেশি ধার্মিক”।
উপরের আলোচনা থেকে মানব মনের সাথে সৌন্দর্য, সত্য ও আধ্যাত্মিকতা বা ধর্মের সম্পর্ক সম্বন্ধে সহজে ধারণা লাভ করা যায়।
প্রকৃতপক্ষে ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা হলো মানুষের পাঁচটি প্রধান আচরণগত বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভূক্ত, যা আধুনিক মানুষের বিকাশ লাভের সাথে গড়ে উঠেছে, এবং প্রত্যেকটি সংস্কৃতিতে এর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল ভাষা, উন্নততর যন্ত্রসামগ্রী প্রস্তুতকরণ, সংগীত ও কলা। মানব প্রজাতিকে তার ঈশ্বরে বিশ্বাসের দরুণ homo religio বলে আখ্যায়িত করা হয়, যে বিশ্বাসকে সর্বজনীন বললে খুব বেশি ভুল বলা হবে না। ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বা আচরণের অবশ্যই জীববিজ্ঞানভিত্তিক কারণ রয়েছে, যা বংশগতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, ঠিক যেমন ভাবে প্রভাবিত হয় আমাদের বুদ্ধিমত্তা। মানুষ সর্বদাই একটা কিছুর সন্ধানে নিয়োজিত। কিন্তু কখনোই তার সন্ধান মেলে না। এই সন্ধান জীবিকার সন্ধান নয়, সম্পর্কের সন্ধান নয়, এমনকি অর্থেরও নয়। তাহলে কি? উত্তর হলো ঈশ্বর। মানুষ উপলব্ধি করছে, সে যাই করুক না কেনো, তাঁর উপস্থিতি ছাড়া সবকিছুই অপূর্ণ থেকে যায়। অনেকের কাছে ধর্ম ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রকাশ, আবার অনেকে মনে করেন এই বিষয় দু’টি অবিচ্ছেদ্দ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত নয়।
বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখায় ধর্ম ও মানব মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করছেন, যার নাম Neurotheologhy বা Neuropsychology of religion। এই গবেষকদের প্রধান উদ্দেশ্য ঈশ্বরের প্রকৃতি নির্ণয় নয়, বরং ধর্মীয় অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ। ধর্ম একটি আচরণগত ব্যাপার, যাকে অবশ্যই বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ধারণা করা হয় যে মস্তিষ্কে neurochemical dopamine(DA)-এর বিবর্তনকেন্দ্রিক বৃদ্ধির সাথে ধর্মের বিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। Brain imaging technology-এর উন্নতির জন্য গবেষণাকারীরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যকলাপ স্নায়ুর সাথে কিভাবে সম্পর্কিত, সে সম্বন্ধে আরও বেশি করে জানতে পারছেন। ১৯৯৭ সালে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করতে সমর্থ হন, যার সাথে মানুষের তীব্র আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সম্পর্ক রয়েছে, ‘God Spot’ নামে যা গণমাধ্যমে পরিচিতি পায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই আবিষ্কার এটি প্রমাণ করে না যে, ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা শুধুই মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের ভিতর সীমাবদ্ধ; আবার এও প্রমাণ করে না যে, মস্তিষ্ক আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভের জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুতকৃত। তবে এই আবিষ্কার স্নায়বিকবিজ্ঞানের জগতে একটি নতুন দিককে সাফল্যমন্ডিত করেছে, যা বিজ্ঞান ও ধর্মের পারস্পরিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে নতুন ক্ষেত্র । এই গবেষণার আলোকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যকলাপ বিশ্বজগতকে উপলব্ধি করতে কিভাবে সাহায্য করছে মানুষকে, তা আমাদের জানার প্রয়োজন রয়েছে। মানব-মস্তিষ্ক কি বংশগত ভাবেই জটিল ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার জন্য গঠিত? মানুষের অভিজ্ঞতায় বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের পারস্পরিক সম্বন্ধের কি অর্থ থাকতে পারে?
ধর্মের উৎপত্তি উন্নততর অস্ত্রাদি ও শিল্পের সূচনার সাথে সাথে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, এবং এই পর্যায়টিকে মানুষের ক্রমবিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘Big Bang’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে আধুনিক মানুষের সময় (প্রায় ২০০০০০ বছর) ও ‘Big Bang’ পর্যায়ের মধ্যে (৪০০০০ – ৮০০০০ বছর) একটি বড় ব্যবধান রয়েছে, তাই ধরা হয় মস্তিষ্কের আকার ও গঠনের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মানুষের সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে, এমন কি ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও। সাম্প্রতিক কালের একটি বিবর্তন তত্ত্ব দাবী করছে যে, dopaminergic brain system-এর বিকাশ বা বৃদ্ধি বুদ্ধিমত্তা অর্জনের পিছনে প্রধান চলৎশক্তি। এই বৃদ্ধি শুরু হয় শ্রেষ্ঠ স্তন্যপায়ীর বিবর্তনের সময়, যার ফলে সমগ্র মস্তিস্কে সমভাবে DA- এর বন্টন বৃদ্ধি পেতে থাকে, বিশেষ করে উপরের স্তরে।
বেশ অসঙ্গতিপূর্ণ শোনালেও এটি সত্য যে, মানুষ যেমন নিয়ন্ত্রক হতে চায়, তেমনি আবার বর্হিবিশ্বে এমন কিছুর সন্ধান করে, যার দ্বারা সে নিজেই হতে চায় নিয়ন্ত্রিত। বাহ্যজগৎ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি মস্তিস্কে neurochemical গুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। তবে এখানে আরেকটি লক্ষণীয় দিক আছে। মস্তিষ্ক পরিবর্তনশীল এবং এর কার্যাদি বাহ্যপ্রকৃতির দ্বারা অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়। একটি অনিশ্চিত পরিবেশে DA-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আমাদেরকে ওই পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে প্রস্তুত করে তোলে। DA-এর প্রভাবই কারাগারে বা যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষকে প্রবৃত্ত করে ঈশ্বর-চিন্তা করতে বা আধ্যাত্মিক হতে । আমাদের প্রচলিত ঈশ্বর-চিন্তা সৃষ্টি হয়েছে মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক যৌগের প্রতিক্রিয়ায় । তাই মানুষ কর্তৃক ধারণাকৃত ঈশ্বর খুবই সীমিত ও আপেক্ষিক, কেননা তা অনেকাংশে নির্ভর করছে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীলতার উপর। হয়তো জৈবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার দ্বারা সৃষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত এই ঈশ্বরের ধারণার সাথে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার — যদি সত্যিই তাঁর অস্তিত্ব থেকে থাকে — কোনো সম্পর্কই নেই।
সাধারণ ভাবে যাকে ব্যক্তিগত ঘটনা বলে মনে হয়, গবেষণাকারীরা তাকে একটি বিশেষ সমাজের বিশেষ গঠনগত বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখেন। মানুষ প্রাথমিক ভাবে সামাজিক প্রাণী, যার মস্তিষ্কের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে সমাজের, এবং সে বিমূর্ত ধারণার চেয়ে
গোষ্ঠীগত ভাবনা ও আলোচনার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। আধ্যাত্মিকতার সাথে মানুষের চিরকালীন আকাঙ্খার একটি সম্পর্ক রয়েছে। দুঃখের কারণ, পরম প্রাপ্তি, কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ ইত্যাদি বিষয়গুলি এর সাথে জড়িত। সমাজ শুধু ধার্মিকের ধারণাই তৈরি করে না, নির্ধারণ করে তার অভিব্যক্তিকেও। যেমন নেটিভ্ আমেরিকানসহ অন্যান্য কিছু প্রজাতির মানুষ, যারা প্রকৃতির সাথে আধুনিক আমেরিকানদের তুলনায় অধিক নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে দেবতা হিসাবে উপাসনা করে থাকে, যেমন – বজ্রের দেবতা, চন্দ্রের দেবতা, শস্যক্ষেতের দেবতা ইত্যাদি। নেটিভ্ আমিরিকানদের মতো প্রাচীন ধর্মগুলিতে দেব-দেবীর পূজা করা হতো। আমেরিকায় এই ধরণের ধর্মীয় আচার এখন প্রায় লোপ পেয়েছে।
বিবর্তনের সাথে যেমন DA বৃদ্ধি পেয়েছে, neurotransmitter system-এর আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়নি, বা কমে গেছে, যেমন – glutamate, acetylcholine(Ach)। DA-এর প্রাথমিক বৃদ্ধির সাথে মানুষের তাপসহিষ্ণু হবার সম্বন্ধ রয়েছে, আর শেষ পর্যায়ের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্ক রয়েছে মানুষের বিমূর্ত চেতনার ক্ষমতা, সংগীত ও শিল্পকলায় সৃষ্টিশীলতা ও আধ্যাত্মিক আচরণের। বিমূর্ত ও আধ্যাত্মিক চেতনা উভয়ই গড়ে উঠছে মূলত অদৃশ্য কাল ও স্থানের উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে, এবং এই দু’টি বিষয়ই মস্তিষ্কের উপরিভাগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। DA-এর পরবর্তী পর্যায়ের বিকাশের সাথে schizophrenia-এর মতো মানসিক বিকারের যোগাযোগ সুস্পষ্ট, কারণ এই পর্যায়ে DA অধিক ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। আবার ধারণা করা হয় যে, schizophrenia-এর পিছেন যে কারণ কাজ করে, বুদ্ধিমত্তা ও আধ্যাত্মিক অনুভূতির পিছনেও কাজ করে সেই একই কারণ। বিস্ময়কর শোনালেও এটি সত্য যে, বুদ্ধিমত্তা ও বিকারগ্রস্থতা অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত, কারণ দেখা যায় যে schizophrenia আক্রান্তদের বুদ্ধিমত্তার স্তর কমে যায়। তবে কিছু schizophrenia আক্রান্ত মানুষের বিকার-পূর্ববর্তী বুদ্ধিমত্তা আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। DA-এর হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, মেধাবী ও বিকারগ্রস্থ উভয়ই তার ভিতর কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়া অতিশয় মেধাবীদের schizophrenia আক্রান্ত পরিবারেও অনেক ক্ষেত্রে জন্মগ্রহণ করতে দেখা যায় । আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক আচার ও বৈজ্ঞানিক চেতনা, যাদেরকে স্বাভাবিক ভাবে দুই ভিন্ন মেরুর বিষয় বলে মনে হয়, উন্মেষিত হয়েছিল সম্ভবত একই সাথে। এই দু’টি বিষয়ই মূলত নির্ভর করে বিমূর্ত ধারণার উপর। ক্রোল ও শিহানের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে যে, ৭০% schizophrenia আক্রান্ত রোগীর আধ্যাত্মিক কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। এছাড়া দেখা যায় নারীদের তুলনায় পুরুষদের schizophrenia দ্বারা আক্রান্ত হবার পরিমাণ বা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে DA-এর অধিক ক্রিয়াশীলতা হয়তো এর কারণ।
DA আমাদের দূরবর্তী স্থান ও কাল (space & time) সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। দূরবর্তী স্থান মানে শুধুমাত্র বর্হিবিশ্বের স্থান নয়, সুদূরের অদৃশ্যমান স্থানও; দূরবর্তী কাল মানে শুধুমাত্র রৈখিক সময়ই নয়, নিরন্তন-শাশ্বত কালও, এমনকি মৃত্যুর পরবর্তী সময়ও এর অন্তর্ভূক্ত। ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা কিছু বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা ও আচারের সমষ্টি। অতিপ্রাকৃতিক কিছু ব্যাপার এর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। সৃষ্টিতত্ত্ব ও মহাজাগতিক বিষয় সম্বন্ধে মানুষের ধারণা, যা আধ্যাত্মিকতার একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ, DA-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটি শুধু বিষয়গুলি সম্বন্ধে চিন্তা করতেই প্ররোচিত করে না, তাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণও করে। বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার ভিতর সংযোগ খোঁজার প্রবৃত্তি, ও তাকে নিয়ন্ত্রণের পিছনেও রয়েছে এর প্রভাব। এছাড়াও একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক আচরণ, কোনো ফলাফল সম্বন্ধে আগাম ধারণা প্রদান, ভবিষ্যতবাণী করা ইত্যাদিও নিয়ন্ত্রন করে DA। মানুষ সব ঘটনার নিয়ন্ত্রক হতে চায়। সব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা আসলে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই আমাদের উদ্বেগের মাত্রাকে। পরকালে বিশ্বাস মূলত dopamine-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি প্রবণতার ফল, যা মৃত্যুর পরও আমাদের নিয়ন্ত্রক হবার আকাঙ্খার বহিঃপ্রকাশমাত্র।
স্বপ্নকে আধ্যাত্মিকতার অংশ হিসাবে বহুকাল ধরে বিবেচনা করা হয়, এবং এর দ্বারা অতিপ্রাকৃতিক বার্তা গৃহীত হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। Old Testament- এ স্বপ্ন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে, যার অন্যতম সাক্ষ্য বহন করে Genesis-এ
জোসেফের স্বপ্ন। এমনকি অতীতে জাপানী মন্দিরগুলি স্বপ্ন দেখার অনুকূল জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হতো। তাছাড়া প্রাচীন ধর্মগুলিতে বিশ্বাস করা হতো স্বপ্নের সময় আত্মা উন্নীত হয় তুরীয় অবস্থায় । Epilepsy ও paranoid schizophrenia-এর সময় যে hallucinations হয়, তা থেকে উদ্ভূত কিছু অভিজ্ঞতাই বিশ্বের বেশ কিছু প্রধান ধর্ম সৃষ্টির কারণ বলে ভাবা হয়। মনস্তত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু উপাদানের কারণে সৃষ্ট hallucination-এর সাথে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সংযোগ আছে, বিশেষ করে নেটিভ্ আমেরিকানদের ক্ষেত্রে। দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদকদ্রব্য বিভিন্ন রহস্যজনক অভিজ্ঞতালাভে প্রবৃত্ত করে গ্রহণকারীকে। শরীর ত্যাগের(out-of-body) অভিজ্ঞতাও এক ধরণের hallucination, যার উপলব্ধি ঘটে থাকে সাধারণত মৃত্যুপূর্ববর্তী সময়ে। এই বিষয়টিও ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
মত্যুপূবর্বর্তী অভিজ্ঞতা বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রায় একই রকম প্রভাব রাখে, তাই একে বিশ্বজনীন বললে ভুল হবে না। মত্যুপূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে “ভিন্ন জগতে” স্থানান্তর, অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বার সম্মূখীন হওয়া, নিজের দেহকে বাইরে থেকে দেখা(autoscopy) ইত্যাদি। এই অভিজ্ঞতাগুলিকে সাধারণভাবে আধ্যাত্মিক ব্যাপার হিসাবে পরিগণিত করা হয়। হ্রাসকৃত অক্সিজেন ও প্রচন্ড পীড়ন থেতে উদ্ভূত পরিস্থির সাথে মানুষের মানিয়ে নেবার প্রবণতা এই অভিজ্ঞতার অন্যতম কারণ হতে পারে। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত DA সঞ্চারণ Hypoxia (অক্সিজেন ঘাটতি)-এর অন্যতম কারণ, এবং Hypoxia-কে schizophrenia-এর অন্যতম পূর্বলক্ষণ হিসাবে দেখা হয়। এছাড়া যে সব মাদকদ্রব্য রহস্যজনক আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে, তার সাথে DA-এর ক্রিয়াশীলতার সম্বন্ধ রয়েছে।
কিন্তু সব কিছুর পরও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যেটি অস্পষ্ট থেকে গেছে, এবং হয়তো থেকে যাবে চিরকাল, তা হল — আধ্যাত্মিক রূপান্তর কি শুধুই DA বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া, যা মানুষকে প্ররোচিত করে উচ্চতর কোনো শক্তির বিশ্বাসে? নাকি DA-এর বৃদ্ধি মস্তিষ্কে সৃষ্টি করে এমন কোনো পরিবেশ, যা চিরবিরাজমান সেই উচ্চতর সত্ত্বার উপলব্ধির জন্য একান্ত অনুকূল? সৃষ্টিকর্তার কি সত্যিই কোনো ভূমিকা আছে? নাকি ভূমিকা DA-এর? নাকি কোনটিরই নয়? বিজ্ঞানীরা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন এই উত্তর সন্ধানের। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যতই সফল হোক, অধ্যাত্মবাদীরা তার ব্যাখ্যা দেবেন। বিষয়টিকে ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা বা মনস্ত্বাত্বিক ঘটনা যাই বলা হোক না কেনো, মানবিক চেতনার গঠনে এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা থাকুক বা নাই থাকুক, মানুষের মস্তিষ্ক-সৃষ্ট ঈশ্বর বা আধ্যাত্মিকতা বিলীন হবে না, যদি না মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা লুপ্ত না হয়। ভাবনা-ভালোবাসা-সুখ-দুঃখ-আশা-আকাঙ্খার মতো আধ্যাত্মিকতা একটি মস্তিস্কপ্রসূত মানবিক অনুভূতি, যা আমাদের চিরকালের সঙ্গী, এবং এর সাথে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার হয়তো কোনো সম্বন্ধ নেই। প্রচলিত ধর্মগুলি গড়ে উঠেছে প্রাচীন মানুষের অর্জিত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও তাদের মস্তিষ্কের DA ও অন্যান্য যৌগের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে। মানুষের বৃহত্তর উন্নতির জন্য ধর্মকে যথেষ্ট প্রমানসহ বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু কখনোই অশ্লীল আক্রমণ নয়। আধ্যাত্মিকতা বা ঈশ্বর-ভাবনায় মস্তিষ্কের স্নায়ু ক্রিয়া বর্তমান সময়ে আগ্রহের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে, কিন্তু একটি মস্তিষ্কপ্রসূত বিষয় হিসাবে এটি ভাষা-দৃষ্টিগত উপলব্ধি-সংগীত-গণিত ইত্যাদির সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত, সে সম্বন্ধে এখনো যথেষ্ট গবেষণা হয়নি।
(“শাশ্বতিকী” তে প্রকাশিত)
আমার লেখাটির উপর শ্রী অভিজিৎ, জনাব রাসেল, শ্রীমতি বন্যা ও শ্রী রনবীর মন্তব্য করেছেন । আমার লেখা পড়ে জনাব রাসেল ও শ্রী রনবীর তাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন । শ্রী অভিজিৎ ও শ্রীমতি বন্যা আমার কিছু মন্তব্য ব্যক্তি পর্যায় নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন । উপুরি হিসাবে শ্রীমতি বন্যার কাছ থেকে কিছু গালিও শুনলাম । একএক করে সকলের মন্তব্যের উত্তর নিম্নে দেয়া গেল ।
(১) শ্রী অভিজিৎ, একটু ভাবুন, কেন অধ্যাপক অসীমদত্তরায় ও মীজান রহমানকে বিদেশে আসতে হলো এবং তাদের জ্ঞানের ভান্ডার বিদেশীদেরকে উজার করে দিতে হচ্ছে ? তাদের জ্ঞান তারা কেন নিজ দেশের কাজে লাগাতে পারলন না ? তাদের তো দেশ প্রেমের অভাব ছিল না ।
আপনি বলতে পারেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন দেশ বা জাতি নাই । জ্ঞান-বিজ্ঞান দিয়ে সকলেই উপকৃত হয় । এই কথা বলেই উন্নয়নশীল দেশের মেধাকে পুজিবাদ আকৃষ্ট করে । পুজিবাদের উক্ত কথায় আকৃষ্ট হয়ে জাফর ইকবাল একদিন ভাগ্যান্বেষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন । বিষয়টি বুঝতে পেরে একশত বিশ হাজার ডলারের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতে দেশে চলে গেছেন । তবে সবাই তো জাফর ইকবাল নয় ।
শ্রম ও মেধা একাত্রিত হোতে পারলেই দারিদ্র দূর হয় । দেশের উন্নতি হয় ।
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা বা নিউরোলজির মতো বিষয়গুলির প্রান্তিক গবেষণার ফলাফল বিদেশে বসে যতই জানান না কেন, ব্যক্তি বিশেষ উপকৃত হোতে পারে, কিন্তু দেশ ও জাতির কোন উপকারে আসবে না, যতোক্ষণ পর্যান্ত না দেশে জ্ঞান চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি না হয় ।
মধ্যবিত্তের চরিত্রের বৈশিষ্ট আমার বলা বা না-বলার উপর নির্ভরশীল নয় । আমিও একজন মধ্যবিত্তভুক্ত ব্যক্তি । ঐ বৈশিষ্টগুলি আমার মধ্যেও বিদ্যমান । তাই বিষয়টিকে ব্যক্তি পর্যায় নিয়ে আসা আপনার মতো যুক্তিবাদী লোকের জন্য যথাযথ কাজ নয়। প্রায় প্রতি শনি ও রবিবার বেশ কিছু বাংগালির সাথে আমার মিথক্রিয়া ঘটে । তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিবর্তে দেশের জন্য চিন্তিত বেশি । এরাই হলো মননশীল পাঠক । প্রগতিশীলদের দায়ীত্ব হলো বিপদগ্রস্থ অন্য আর এক প্রগতিশীলকে সাহায্য করা । নির্মলদার ব্যাপারে সেই দায়ীত্বটি আপনি পালন করেছেন । কিন্তু বিষয়টি এখানে উল্লেখ করে নিজেকে ছোট করে ফেলেছেন । আপনার আলোচ্য মন্তব্য পড়ে আমার মনে হচ্ছে, আমার সম্পর্কে আপনি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন ।
(২) জনাব রাসেল, ইংরাজীতে একটি কথা আছে, যা প্রকাশিত হয়, তা মুছা যায় না । তাছাড়া শ্রী অভিজিৎ ও শ্রীমতি বন্যার রাগান্বিত মন্তব্য পড়ে থাকবেন ।
(৩) শ্রীমতি বন্যা আহমেদ, সব মানুষ বা গোষ্ঠি অথবা শ্রেনীর প্রয়োজন কিন্তু এক নয় । আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের বস্তাপচা ভুলভাল বাম কথা গুলোর কথা উল্লেখ করেছেন । মার্ক্সিজমে আপনার মতো জ্ঞানী ব্যক্তিরা বাম রাজনীতিতে যুক্ত হয়নি বিধায় আমাদের মতো অজ্ঞ ব্যক্তিরা বাম রাজনীতিতে মার্ক্সিজমের ঝান্ডা উচু করে রেখেছে । তাছাড়া দেশের মানুষ আপনার মতো অতো জ্ঞানী নয় । তারা যতটুক জ্ঞানী আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি ততটুকুই ।
ডারইউন তত্ত্বকে আমি কোথায় গালাগালি করেছি তা দেখাবেন কী? তবে যা আমি বলেছি তা হলো প্রানীর সাধারন উৎস এবং ন্যাচার্যাল সেলেকশন তত্ত্ব ডারইউন কর্তৃক উপস্থাপনের বহু পূর্বেই দার্শনিকেরা বিবর্তন তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছিলেন । ডারইউনের উক্ত তত্ত্ব দার্শনিক কর্তৃক উদ্ভাবিত বিবর্তন তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি । আপনার “কল্পলোকের সীমানা পেরিয়ে – এভো ডেভো (শেষ পর্ব) লেখার উপর মন্তব্যে বলেছিলাম, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং একটি জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয় । আমার মতো সাধারণ পাঠকরা বিষয়টি বুঝবেন না । তাই বিতর্তন তত্ত্ব প্রমানের জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার না করে সাধারন যুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করেছিলাম । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ পাঠকদের মতামত আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় । আপনারা যা ভাবেন সেটাই সঠিক । আমাদেরকে তাই গ্রহন করতে হবে ।
আলোচ্য মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে ভাববাদের প্রতি আপনার যথেষ্ট ঘৃণা । রবিন্দ্রনাথের কবিতা ও গান সবই ভাববাদ । বুঝা যাচ্ছে তার প্রতিও আপনার ঘৃণা । কিন্তু এদেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে । প্রতি বারই বলছেন আমার সাথে তর্কে জড়াতে চান না । কিন্তু প্রতিবারই আমার মতো অজ্ঞের সাথে তর্কে জড়িয়ে যান ।
(৪) শ্রী রণবীর, আমাদের দেশে সম্পদ নাই, এই কথার সাথে আমি একমত নই । সম্পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন শ্রম ও মেধার সংমিশ্রন । দেশে যথোপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় মেধা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে । অর্জিত জ্ঞান বর্হিবিশ্ব তুলে ধরলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির লাভ হোতে পারে, দেশের লাভ হয় না । তাই শ্রম ও মেধার সম্বলিত প্রচেষ্টা দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে ।
Dear All,
Many thanks for your comments. At the moment I am bit busy. Please dont worry.. I will give my views soon.
It seems that Avro does not work in Mac . My apologies..
Regards
Dr. Asim Duttaroy
Faculty of Medicine
University of Oslo
Norway
আমরা যারা ইন্টারনেটে লেখালেখি করি, তারা সকলেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনী থেকে আগত । সমাজ-বিজ্ঞানীদের মতে মধ্যবিত্তরা স্বার্থপর, সুবিধাভোগী এবং নিজ পান্ডিত্য জাহির করার জন্য উদ্গ্রীব ।
বাংলাদেশে ১৫ কোটি লোক । এর মধ্যে ১২ কোটি লোক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করেও তিন বেলার খাওয়া সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে । প্রায় এক কোটি লোক আল্লাহর নাম নিয়ে টাকার পাহাড় সৃষ্টি করে বছরে চার বার হজ্ব করে এবং প্রতিটি গরু পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় ক্রয় করে বেহেশতে নিজ ও তার পরিবারের অবস্থান নির্ধারণ করে রেখেছে । অবশিষ্টরা মধ্যবিত্ত শ্রেনীভুক্ত । এদের একাংশ দালালী, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী এবং সরকারী সম্পদ ও অর্থ লুটপাটে ব্যস্ত, আর একাংশ ধর্মের মদিরা পান করে “আল্লাহু আকবার” জিকির করে বিদেশী অর্থের জন্য লালায়িত হয়ে বসে আছে । বস্তু বা প্রপঞ্চের বিধি, বিপরীতের ঐক্য, অনুযায়ী মধ্যবিত্তের ক্ষুদ্র একটি অংশ আস্তিকের বিপরীতে নাস্তিক হয়ে “ডারইউন” ও “মানবতা” শব্দ উচ্চারণ করে শ্লোগান দিচ্ছে । এরই মধ্যে মস্তিষ্কে স্কিজোফ্রেনিয়া রোগ সংক্রন্ত বিষয় ঢুকে পড়েছে । বর্ণিত বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিউরোলজি সংক্রান্ত ।
বাংলাদেশের সিংহ ভাগ লোক যেখানে বেসিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত, পোষাক শিল্পের মেয়েরাসহ সকল শ্রমিক ও ক্ষেত মজুরেরা পশুর মতো জীবন যাপন করচ্ছে সেখানে নিউরোলজি নিয়ে লেখালেখি করাটা কি ১২ কোটি লোকের সাথে ঠাট্টামস্কারা করা নয় ?
বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ রইলো । তবে আমার এই লেখা পড়ে কেউ যদি কষ্ট পান, তার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
আমার মনে হয়না জ্ঞানকে এভাবে দারিদ্রের দোহাই দিয়ে সীমাবদ্ধ করা উচিৎ। বাংলাদেশের বহু লোক খেতে পায় না বলেই বাকিরা সবাই জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা বন্ধ করে দেবেন, তা যদি মনে করেন তা কিন্তু ঠিক হবে না। আমরা দরিদ্র বলেই কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদা, নিউরোলজির মতো বিষয়গুলোর প্রান্তিক গবেষণার ফলাফল অন্যদের জানানো কি পাপ? দারিদ্রের দোহাই দিয়ে সব কিছু বন্ধ করে দিলে জ্ঞান বিজ্ঞান এগুবে কি করে? অধ্যাপক অসীমদত্তরায়, মীজান রহমান এঁরা তো এই হতদরিদ্র জাতি থেকেই উঠে এসে বিদেশের নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন, তাদেরকেও তো কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি প্রতিযোগিতা করে এমন একটি জায়গায় পৌঁছুতে। তারা যদি নিজেদের অভিজ্ঞতা আর কাজের ভিত্তিতে মননশীল পাঠকদের জন্য লেখা লেখেন, তাদেরকে ঢালাওভাবে “স্বার্থপর, সুবিধাভোগী এবং নিজ পান্ডিত্য জাহির করার জন্য উদ্গ্রীব” বলাটা কি সঠিক, আপনাকেও তা পুনর্বার ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।
আমাদের মত “স্বার্থপর, সুবিধাভোগী্রা”ই যে আবার কিছুদিন আগে অসুস্থ নির্মল সেনের জন্য চাঁদা তুলে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছি সেটা নিশ্চয় আপনি দেখেছেন। কাজেই নিউরোলজি নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি আমরা অনেকেই হাজারো মানবিক কাজও করি, যেগুলো সমাজকে এগিয়ে নেয়। এগুলো করি বলেই আপনিও মুক্তমনাতে বারে বারেই এসে মন্তব্য করেন, এই “স্বার্থপর, সুবিধাভোগী”দের সাথেই আলোচনায় অংশ নেন, নিজের মতামত দিতে পারেন।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
ওস্তাদ এইটুকু লাইন বাদ দিলে বাকিটা পরতে কিন্তু জটিল, উপলব্ধিটাও জটিল।
ধন্যবাদ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন, আপনার সাথে বিতর্ক করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু আপনাদের এই ধরণের কথাবার্তা শুনলে খুব অবাক হই। আপনি কোন মার্ক্সিজম পড়েছেন জানি না, তবে আমার পড়া মার্ক্সিজম কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চাকে নিরুৎসাহিত করে না। আপনার কথা ঠিক হলে মার্ক্স এবং এঙ্গেলস যেভাবে ডারউইনের তত্ত্বকে বরণ করে নিয়েছিলেন তা করতেন না। পৃথিবীজোড়া দারিদ্রের অজুহাত তুলে আপনার মত ডারউইনকে এ্যরিস্ট্রকেট স্নব বলে গালাগালি করতেন। এঙ্গেলসের বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক দর্শন নিয়ে লেখাগুলো কি পরিমাণ আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনষ্ক তা আর নতুন করে বলে দেবার প্রয়োজন পড়েনা। আপনি দেশের দরিদ্রে যে অংশের কথা বলছেন তাদের নেতৃত্বে যারা থাকবেন তাদের জন্য বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানমনষ্কতা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দর্শন বলেই মনে করি। আপনি বব এভাকিয়ানের লেখাগুলো পড়লেও একই জিনিসই দেখতে পারবেন। আমাদের অনেকের পক্ষেই এখন সরাসরি অনেক কাজে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। বসে বসে ইন্টারনেটে কবিতা আর ভাববাদী সাহিত্য লেখার চেয়ে আমার মতে যারা বিজ্ঞানমনষ্কতার চর্চা করছেন তারা অন্তন্ত পক্ষে নিপীড়িত অংশের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেননা, বরং বিভিন্ন সময়েই সাধ্যমত তাদের পাশে দাঁড়ানো চেষ্টা করে্ন। আর আপনি অযথাই এই লেখাগুলোর মধ্যে নাস্তিকতা টেনে আনছেন কেন? এখানে তো বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিভিন্ন ব্যখ্যা দেওয়া হচ্ছে, এখানে আস্তিকতা নাস্তিকতা টেনে এনে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করার কোন কারণ আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। আর আপনার ভালো না লাগলে এগুলো না পড়লেই তো হয়, আপনাকে তো কেউ জোর করছে না এগুলো পড়ার জন্য।
আপনার সাথে আসলেই বিতর্কে জড়াতে চাই না, এটাই আপনাকে দেওয়া আমার শেষ উত্তর। আপনি আমার লেখায়ও অনেকটা একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন তাই আপনাকে এ ব্যাপারে আমার অবস্থানটা জানানো প্রয়োজন মনে করলাম। আপনি ধরেই নেন যে এখানে মার্ক্সের কথা উল্লেখ করলেই সবাই তেড়ে আসবে, আপনার এই ধরাণাটাও যে ঠিক নয় সেটাও বোধ হয় আপনার বোঝা উচিত। আপনাদের এই বস্তাপচা ভুলভাল বাম কথাগুলো শুনলে মার্ক্সবাদের উপর অন্যায় করা হয় মনে হয় বলেই এই কটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করলাম।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
আপনিতো ভাই আমাদের আরও গরীব করে দেবেন। আমরা অর্থের দিক থেকে গরীব হতে পারি, তাই বলে কি মানসিক এবং বৌদ্ধিক দিক থেকেও দরিদ্র থাকব?
দেখুন আমাদের দেশে এমন কোন সম্পদ নেই যার দ্বারা আমরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারব। বর্হিবিশ্বে নিজেদেরকে তুলে ধরার একমাত্র মাধ্যম আমাদের অর্জিত জ্ঞান।
আমরা যদি সমস্যা সমস্যা বলে চিৎকার করি তাহলেতো আর সমস্যার সমাধান হবে না।
ভালো লাগার মত একটি লেখা। আমার মাথায় ক’দিন ধরেই একটা ব্যাপার ঘুরছিল। রবীন্দ্রনাথের কবিতাটা সেই চিন্তাটাকে আরেকটু শানিয়ে গেল। অচিরেই চিন্তাটাকে বোধ এবং যুক্তির কাঠামোতে ফেলতে পারব আশা রাখি।
নিউরোসাইন্স আমার আগ্রহের বিষয়। তবে, খুব বেশীদিন হয়নি এই নিয়ে আমার পড়ালেখা।
একটা প্রশ্ন আছে আমার। যারা মেডিটেশন করে, তারা অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলে। আমি নিজেও মেডিটেশন করতাম একসময়। অন্তত একুটু মানি, যখন অনাকাঙ্খিত ব্যাপারগুলো মানসিক অস্থিরতার কারন হয়, তখন, আমি যা আশা করছি, আমার বিশ্বাস তাই একসময় ঘটবে বা বর্তমানের জটিলতা একসময় শান্ত হয়ে যাবে, এইভাবে নিজেকে বুঝানো বা প্রতারিত করা, সেই মুহূর্তে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন আনার জন্য একটা ভালো উপায় হয়ত। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা ধর্মে বিশ্বাসের মতই, নিজের উপর আস্থা না রাখার সময়ে অনেকটা জোর করে আস্থা রাখা। ব্যাপারটা আমার কাছে ব্যক্তিস্বত্তার সাথে একধরনের স্বপ্রতারনা বলেই মনে হয়। এই মানুষগুলো মনে করে তাদের কিছু আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা আছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের যোগ্যতা আছে, মানতে চায় না তারা, তাদের কিছু অন্ধত্বও আছে।
এই স্ব-প্রতারণার ক্ষেত্রে DA এর ভুমিকা কতখানি?
ESP, Extra sensory perception, এটা আত্মবিশ্বাসের একটা ভিন্ন রূপ, যা ঠিক স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসের চেয়ে আলাদা।ESP হল, একটা কয়েন ছুড়ে দিলে হেড পড়বে না টেইল পড়বে, এই দুই সম্ভাব্যতার মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেয়া, এবং প্রতিবার বেছে নেয়ার সময়ই নিজেকে একধরণের পরীক্ষার মুখোমুখি করা। বারবার পরীক্ষায় জয়ী হলে, ক্রমাগত আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ESP এর ব্যাপারে আমার ব্যাখ্যা এইরকম।
মেডিটেশন বা ESP, কোনটাকেই আমি যুক্তি দিকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবতে পারিনা। যুক্তির বাইরে গিয়ে বিশ্বাস করলে করাই যায়। যুক্তি দিয়ে কি বিশ্বাস করার মত কোন যুক্তি আছে। আমি এখনও খুঁজে পাইনি।
এই মেডিটেশন নামের স্ব-প্রতারনা বা যুক্তির বাইরে গিয়ে বিশ্বাস করার ব্যাপারটাতে DA এর অবদান কি ব্যাখা করা সম্ভব। একটু ভালোভাবে জানতে পারলে ভালো লাগত।
@জওশন আরা,
আমি নিউরোসায়েন্সের কিছুই জানিনা, তবে দেখেছি নিউরো-বিজ্ঞানী স্যাম হ্যারিস নাস্তিক হিসেবে আবার মেডিটেশনে পুরোদস্তুর বিশ্বাস করেন। তাঁর মতে, ব্যাপারটি হল চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন ও কসশাসনেসের স্বরূপ উপলব্ধি, অর্থাৎ দৈহিক ব্যায়ামের মানসিক রূপ।
@রৌরব, মেডিটেশন যে আত্মনিয়ন্ত্রন অর্জন করতে সাহায্য করে, সে আমি মানি। আমি ফলাফল নিয়ে আসলে সন্দিহান না। মেডিটেশনের কৌশলে যেসব অতিরঞ্জন আছে তা নিয়ে। যেমন স্বপ্ন দেখা বা স্বপ্নের মাধ্যমে জানা কিছু কৌশল যা সচেতন অবস্থায় যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে হয়, তাতে দিক নির্দেশনা দিতে পারে, এইধরনের কিছু ব্যাপার যা অযৌক্তিক মনে হয়। মানুষ যখন কোন কিছু নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করে, তখন সেই চিন্তার ধারাবাহিকতা স্বপ্নেও থাকতেই পারে। এইটা স্বাভাবিক। ব্যাপারটা আসলে চিন্তার গভীরতার উপর নির্ভরশীল, সেটা জাগ্রত অবস্থাতেও সম্ভব। প্রাথামিক কিছু ব্যাপার আছে যা মনোদৈহিক ব্যায়ামই আসলে। সেটুকু ঠিক আছে। অতিরঞ্জনেই কেবল আপত্তি আমার। আত্মনিয়ন্ত্রন স্বাগত, কিন্তু যখন নিজের উপর আস্থা রাখতে পারছি না, তখন নিজেকে ভুলিয়ে আস্থা রাখার ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে।
বিশ্বাস তো যেকোনভাবেই করা যায়। যুক্তি দিয়েও করা যায়, যুক্তির বাইরে গিয়েও করা যায়। কোনভাবে করব সেটাই ব্যাপার। 🙂
@জওশন আরা,
মেডিটেশন আমি নিজে করিনি, তাই নির্দিষ্ট ভাবে আত্মপ্রতারণার ব্যাপারটি কিভাবে ঘটে সে ব্যাপারে কৌতুহল বোধ করছি। খেলার আগে বা পরীক্ষার আগে নিজেকে প্রবোধ দেয়া বা “আমি জিতবই” ধরণের অটো সাজেশনের সাথে কি এর কোন মিল আছে?
@রৌরব, হ্যা, সেটাই বলতে চাচ্ছিলাম আসলে। খুব সাধারণ একটা অটোসাজেশন হচ্ছে, “আমি ভালো আছি।”
এই অটোসাজেশনটা আসলে মানুষ তখনই বারবার ব্যবহার করে, যখন সে জানে, আসলে সে ভালো নেই। তখন এই কথাটা বারবার বলা, এটা হচ্ছে, আমি যা সত্য বলে অনুধাবন করছি, ইচ্ছাকৃতভাবে তার উলটো কথাটা বলা, একটা উদ্দেশ্যে, আমি আসলে ভালো থাকতে চাই, সেই ভালো থাকার জন্য আমার কিছু আত্মবিশ্বাস অর্জন করা দরকার। দিনে যখন দশবার এই মিথ্যেটাই নিজেকে বিশ্বাস করাতে চাইছি, তখন বারবার বলতে বলতে মনও একসময় বিশ্বাস করে ফেলে, ভালোই আছি আমি, অথবা, ভালো থাকতে চাইলেই ভালো থাকা যায়, অথবা, আমি বর্তমানে যেমন আছি তেমনটাই ভালো থাকা। এইভাবেই বর্তমান অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া, মানিয়ে নিতে পারলে আত্মবিশ্বাস স্বাভাবিক ভাবেই আগের চেয়ে বেড়ে যায়। এই হল ফলাফল।
কিন্তু ব্যাপার হল, আমি একদম শুরুতে খারাপ থাকা অবস্থায় যখন বারবার নিজেকে বলছিলাম আমি ভালো আছি, তখন কিন্তু নিজের অনুভূতির সাথে প্রতারনা করছিলাম।
আমি অবশ্যই ভালো থাকতে চাই, সেজন্য অনেক পথ অবলম্বন করতে পারি। একটা পথ হতে পারে অটোসাজেশন। আরেকটা পথ হতে পারে, আমি ভালো নেই এটা মেনে নিয়ে ভালো থাকার জন্য যে পরিস্থিতি দরকার, সেই পরিস্থিতি তৈরী করার জন্য উদ্যোগী হওয়া। সেক্ষেত্রে আমি তখনই নিজেকে বলব, আমি ভালো আছি, যখন আমি সত্যি ভালো থাকার মত অবস্থাটা অর্জন করতে পারব। যতক্ষন না পারবো, ততক্ষন আমি জানবো, আমি আমার লক্ষ্য থেকে দূরে আছি, আমি আরো পথ যেতে হবে সামনে, লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য। অটোসাজেশনের চেয়ে এই পথ অবলম্বন করাটা অপেক্ষাকৃত বেশী সাহসের ব্যাপার, ধৈর্যের ব্যাপার। কিন্তু আসলে অটোসাজেশন বস্তুত কিছুই করছে না, পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া ছাড়া। একটা হল, কোনকিছুতে ধাক্কা দিলে বস্তুর সরণ হচ্ছে, আরেকটা হল, আমি ভাবছি, আমি ধাক্কা দিচ্ছি এবং সরণ হচ্ছে। দুইটা তো আসলে কখনই এক নয়।
আর সবচেয়ে ভয়াবহ আমার কাছে যা মনে হয়, মনকে এইভাবে মিছে প্রবোধ দিলে, অযৌক্তিকতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয় এবং মন তখন ঘটনার পিছনের কারণ বা তা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার চেষ্টা না করে অযৌক্তিক চিন্তা নিয়েই জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অভ্যাস তৈরী করা যেমন সময় লাগে, অভ্যাস পরিবর্তন করতেও সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তির প্রয়োজনকে মানষ উপেক্ষা করতে পারে। তা ভালো কিছু নয়।
আমার মূল প্রশ্ন ছিল এই ব্লগে, এই অযৌক্তিক জীবন যাপনে DA এর প্রভাব কত খানি? বা ব্যাপারটা কিভাবে ঘটে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আসলে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে অনেকখানি পড়তে হবে। এইখানে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তাই করে ফেলেছি। 🙂
@জওশন আরা,
ধন্যবাদ, পরিষ্কার হয়েছে। DA ওয়ালারা কেউ রঙ্গমঞ্চে আবির্ভুত হয়ে এসব প্রশ্নের জবাব দিক সেটার জন্য আমিও অপেক্ষা করছি। কিন্তু এর মধ্যে আপনাকে আরেকটা প্রশ্ন করি, যদি কিছু মনে না করেন।
“আমি ভাল আছি” তো একটা মানসিক অবস্থা, এটা তো “আমার টাকা আছে” বা “আমি আকবর বাদশাহ”-র মত অবজেকটিভ সত্য/মিথ্যের ব্যাপার নয়। যদি তাই হয়, তাহলে সেই মানসিক অবস্থাই পৌঁছনোই তো উদ্দেশ্য, যেভাবেই হোক। টাকা না থাকতেও যদি কেউ পাগলের মত “আমার টাকা আছে” ভাবতে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা আত্মপ্রতারণা। কিন্তু “আমি ভাল আছি”-র ক্ষেত্রে কি সেটা খাটে, কারণ ভাল থাকার সংজ্ঞাই হচ্ছে ভাল আছি এটা মনে করা।
@রৌরব, আসলে ভালো আছি বলে আমি কখনও ভালো থাকতে পারিনি। ভালো থাকলে এমনিই বুঝতে পেরেছি, আমি ভালো আছি। একটা বলা, আরেকটা অনুভব করা। আমার কাছে ব্যাপারটা অনেকটা, বলা, “আমি ভালো আছি”, বলে বলে ভালো থাকার চেষ্টা করা, এটা হল, বাইরে থেকে ইনপুট দিয়ে ভিতরের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা। আমি “আমি ভালো আছি” অনুভব করে বলা হল, ভিতরের অবস্থার বাহ্যিক প্রকাশ। সিস্টেমের মোট এন্ট্রপি সব সময় যদি একি থাকে, তাহলে বাইরে থেকে ইনপুট দিয়ে ভিতরে কিছু পরিবর্তন করতে গেলে, ভিতরে আরও কিছু পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কথা, যা আমাদের লক্ষ্য থাকে না।
আমার অনুভূতিশীল এবং যুক্তিবাদী মন অনুভবকেই প্রাধান্য দেয়।যখন অনুভব করতেই পারছি, ভালো নেই আমি, তখন ভালো আছি বলাটা প্রবঞ্চনায় মনে হয়। মেডিটেশন তো আসলে মানসিক ব্যাপারগুলো নিয়েই ঘাটাঘাটি করে। আর ছেড়া স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে নিজেকে আকবর ভাবা তো মনে হয় একধরনের মানসিক অসামঞ্জস্যতা। 🙂
আমার কাছে প্রশ্ন সবসময় স্বাগত। নইলে দ্বিধা দূর হবে কিভাবে? কিছু মনে করার তো সুযোগই নেই আমার। 🙂
@জওশন আরা,
‘আমি ভাল আছি ‘ ব্যাপারটাকে ‘নিজেকে আকবর ভাবার সাথে’ তুলনা করলে সম্ভবতঃ ভুল করবেন। আসলে ‘আমি ভাল আছি’ ব্যাপারটা পুরোপুরি আপেক্ষিক।
আমি নিজে মেডিটেশন নিয়মিত করতাম(এখন অবশ্য নিয়মিত করা হয় না)। এতে অপূর্ব মানসিক প্রশান্তি অন্তরে আসে। এখনও মাঝে মাঝে কোন কারনে মনখারাপ হলে মেডিটেশন করলে অপূর্ব আনন্দ লাভ হয়।
এখন আপনি ধরুন কোন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এখন এক্ষেত্রে যদি আপনি মানসিকভাবে খুব সবল না হন, তাহলে আপনার মন এক্ষেত্রে খুবই বিপর্যস্ত হবে এবং এক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে না গিয়ে আপনি সমস্যাটাকে আরও জটিল করে ফেলতে পারেন। কিন্তু এই সময় যদি আপনি শান্ত থাকেন(এখানে শান্ত থাকার অর্থ কিন্তু এই নয় যে আপনি সমস্যাটা সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন রইলেন), তবেই কেবলমাত্র সমস্যার একটা ভাল সমাধান। মেডিটেশন আসলে এই কাজটাই করে। মেডিটেশন মনের চঞ্চলভাব দূর করে একটা আত্মবিশ্বাসী শান্ত ভাব দেয় যা সমস্যার সমাধানে খুবই কার্যকর।
@রনবীর সরকার, “আমি ভাল আছি” বাক্যটা অন্যভাবে বলতে চাই “self content” আমি যদি self contented হই তা হলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তা থেকে শান্তিভাব আসবে। আপনার মেডিটেশনে যা আসবে তাই আসবে।
আমি মেডিটেশন জীবনে করিনি। কোনদিন করব না সেটা নিশ্চিত। “আমি ভাল আছি” আমাকে সাহায্য করে।
@রনবীর সরকার,
আপনি তো আমাকে লোভ লাগিয়ে দিচ্ছেন। করব নাকি শুরু? এর আগে স্যাম হ্যারিসের কথাবার্তা শুনেও মেডিটেশনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। এদিকে আবার বিপ্লব রহমান চাকমা সুরার লোভ দেখাচ্ছেন। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে, বড় ধরণের সমস্যা :-X :-Y । একটু মেডিটেশন করতে পারলে বোধহয় ভাল হত 😛 ।
যাক এতদিনে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম সব যুগেই কেন কিছু মানুষের মাথায় ক্যাড়া থাকে, কিছুতেই ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতার ব্যাপারগুলো তাদের মাথায় ঢুকে না। DA র অভাবজনিত রোগে ভোগে এরা 🙂 । এই ধর্মহীন মানুষগুলো তো আসলে অসুস্থ!!
যাক আরেকটা বড় প্রশ্নের উত্তর পেলাম। মহিলা নবী আউলিয়াদের অভাবের কারণ হিসেবে এতদিন তো সামাজিক বৈষম্যকে দায়ী করে আসছিলাম। এখন বোঝা গেল এটাও আসলে বিবর্তনেরই কারসাজি :-Y । বহুদিনের দুঃখটা দূর করার জন্য অসীম দত্তরায়কে অনেক অনেক ধন্যবাদ 🙂 ।
@বন্যা আহমেদ,
তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন যারা নবী বা আউলিয়া এর দাবীদার তারা সবাই সিজোফ্রেনিয়া বা হিস্টিরিয়া রোগাক্রান্ত ? অথবা অন্য কথায় সিজোফ্রেনিয়া বা হিস্টিরিয়া রোগাক্রান্তরাই নিজেদেরকে নবী বা আউলিয়া হিসাবে দাবী করে ?
@ভবঘুরে, কি আশ্চর্য, এটা আমি কখন বললাম, আমি তো আরও উলটা কথা বললাম যে ধর্মহীনেরাই আসলে অসুস্থ, DA র অভাবজনিত রোগে ভোগে এরা….. 🙂
@বন্যা আহমেদ,
আহা তাই তো ! আপনি আসলে সে কথা বলেন নি! কিন্তু আপনার কথার মর্মার্থ তো তাই দাড়ায়। 🙂
যাদের মস্তিষ্কে DA এর পরিমান বেশী হয় তারাই বেশী সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভোগে। নারীদের মস্তিষ্কে DA এর পরিমান সাধারনত কম হয়। আর সেকারনে তারা সিজোফ্রেনিয়া রোগে তেমন আক্রান্ত হয় না। আর সেকারনেই নারীদের মধ্যে নবী বা আউলিয়া তেমন নেই। তাহলে বিষয়টা কি দাড়াল ? 😛
অনেক কিছুই জানলাম। ভাল লাগল। বিশেষ করে রবিন্দ্রনাথের কবিতা সেই সাথে আইনষ্টাইনের উক্তি।
খুব ভাল লাগল পড়ে।
ধন্যবাদ
মানব মস্তিষ্কের ওপর Neurochemical dopamine(DA) এর রহস্যময় প্রভাবের ওপর এ লেখাটি মুক্তমনায় দেয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে থাকল আপনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।DA যে আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং আচরণকে কত প্রভাবিত করে তা এককথায় বিস্ময়কর। আধ্যাত্মিকতা , যৌনতা , প্রেম থেকে শুরু করে কোকেন এমনকি কফি আসক্তি পর্যন্ত DA -এর ‘শয়তানী’ উদঘাটিত হয়েছে । Schizophrenia ছাড়াও narcissist personality disorder (NPD) এর পেছনেও রয়েছে এই DA বাবু ।