একজন নারীর জীবনে একই সময়ে একজন পুরুষ (পৌরাণিক চরিত্র দ্রৌপদীর মত দুয়েকজন ব্যতিক্রম বাদে) পৃথিবীর সব তথাকথিত সভ্য সমাজে সম্মানিত নারীর অবস্থান। এটি বিভিন্ন দেশের সামাজিক ইতিহাসে, পুরাণে, লোক উপখ্যানে বর্ণিত। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে তো এটি আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেগে আছে। গেঁথে আছে। তাহলে সভ্য সমাজে একজন পুরুষের জীবনে একই সময়ে একজন নারীর অস্তিত্ব প্রত্যাশা করা উচিত নয় কি?
বহুল আলোচিত এবং প্রায় সর্বজন সমর্থিত ধারণা, বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষা মনোগ্যামী মানে একগামিতা শুধুই নারীদের বেলায় প্রযোজ্য। শুদ্ধ, বীর্যীয়, জেনেটিক ও রক্তীয় উত্তরাধিকার দেওয়ার জন্য নারীকে সতী সাবিত্রী থাকতে হবে, যদিও সে উত্তরাধিকার নারীটির ধারাবাহিকতা বহন করে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স এর ১২ আগস্ট, ২০১০ এর খবরে প্রকাশ ইরানে ব্যাভিচার এবং স্বামী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন ৪৩ বছর বয়সী সাকিনা মোহাম্মদী আশতিয়ানি ।
আশতিয়ানির মামলাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হৈচৈ হওয়ায় ইরানের কর্মকর্তারা পাথর ছুঁড়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সাময়িকভাবে স্থগিত করে। তবে এখন তাকে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৬ সালের মে মাসে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের এক অপরাধ আদালত দুই পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক এবং স্বামী হত্যার দায়ে আশতিয়ানিকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং পাথর ছুঁড়ে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এর আগে দুইজন পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে দুই সন্তানের মা আশতিয়ানিকে ৯৯ টি দোররা মারা হয়।
টিভি সাক্ষাৎকারে স্বামীকে হত্যার ঘটনা বর্ণনায় আশতিয়ানি তার স্বামীর জ্ঞাতি ভাইয়ের কথা উল্লেখ করেন। আশতিয়ানি বলেন, সে তার স্বামীকে খুন করার কথা বললে তিনি প্রথমত একে কৌতুক মনে করেছিলেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন সে ) জ্ঞাতি ভাই( পেশাদার খুনী । সে–ই বাড়িতে এসে তার স্বামীকে খুন করে বলে জানান আশতিয়ানি।
ওদিকে, ইরানের ইস্ট আজারবাইজান প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধান টেলিভিশন শো’তে বলেন, আশতিয়ানি তার স্বামীকে একটি অ্যানেশথেটিক ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর সে অচেতন হয়ে গেলে আসল খুনী তখন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস দিয়ে তাকে খুন করে।
আদালত এবং রাষ্ট্রও একজন নারীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় ব্যস্ত। দুই জন পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের মত গৌণ বিষয়টির জন্য পাথর মেরে শাস্তি দেওয়া যৌক্তিক নয় বিধায় বর্হিবিশ্বকে ফাঁকি দিতে স্বামী হত্যার বিষয়টিকে যুক্ত করেছে বলে সন্দেহ পোষণ করা অন্যায় হবে না। ইরানের পুরুষটির কি হল? এ বিষয়ে খবরটি নিশ্চুপ। যদি একই সময়ে দুইজনের সাথে যৌন সম্পর্ক ব্যভিচার হয় তবে তা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
আমাদের মত অনেক দেশে পুরুষরা আইনের আশ্রয়ে, ধর্মীয় রীতিনীতির প্রশ্রয়ে বিয়ে নামক প্রহসন ঘটিয়ে অনায়াসে একাধিক নারীকে ভোগ করে। আইন ও ধর্ম পুরুষেকে অনেক যৌন স্বাধীনতা দিয়েছে। আর পুরুষদের এ যৌন স্বাধীনতা যে কোন কোন নারীর জন্য অপমানের ও যন্ত্রণার তা সমাজ ভেবে দেখে না।
প্রবাদ আছে— নারীরা স্বামীকে যমকে দিতে চায় কিন্তু সতীনকে নয়। অর্থাৎ সতীনের সাথে ঘর করার চেয়ে বৈধব্য বরণ করা কম কষ্টকর। এ নিয়ে অনেকে বলতে পারেন নারীদের ছোট মন বলেই স্বামী ভাগাভাগির চেয়ে তার মৃত্যু কামনা করে। আসলে প্রবাদটি নারীর মনোকষ্টের গভীরতা ও ব্যাপকতা বুঝাতেই ব্যবহৃত হয়। উল্লেখিত হয়। তাছাড়া, কিন্তু সামাজিক অবস্থানের কারণে প্রথমা স্ত্রী স্বামীর প্রতি তার দাবি টিকিয়ে রাখতে পারে না। নিজে জ্বলে অথচ জ্বালাতে পারে না। এ অক্ষমতা থেকে বেছে নেয় আত্মহত্যার মত পলায়ন মনোবৃত্তিকে, প্রথমা স্ত্রী সতীনের ঘর না করে সন্তানসহ নিজেই যমের দেশে চলে যায়। নিজের প্রিয়তম সন্তানদের নিরুপায় ভবিষ্যত জীবন কল্পনা করে তাদেরকে নিজের সহযাত্রী করে নেয়।
অথচ কবি হেলাল হাফিজের অচল প্রেমের পদ্য-০৭ এর মতই —
‘আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো,
ইস! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,
ক্ষমা রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপ্টিক দুটো চুমু দিয়ে দেই।‘
নারীকে এ রকম ভূমিকায়ই দেখতে চায় পরিবার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রও?
যেখানে পুরুষ তার স্ত্রীর ন্যুনতম স্খলনও মেনে নেয় না সেখানে আমাদের দেশের বহু নারী চার সতীনের ঘর করছে। যে দুয়েকজন তা মেনে নিতে পারে না তারাই পত্রিকার পাতার খবর হয়।
গত ১২ জুন, ২০১০ তারিখে প্রায় সব গণ মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে ১০ জুন রাতে রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইনে ফারজানা কবির রীতা (৩৭) নাম্মী এক নারী তার দুই শিশুসন্তান পাবন বিন রাশেদ (১৩) ও রাইশা রাশমীন পায়েল (১০) সহ অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি সেবন করে একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছে।
৬ আগষ্ট ২০১০ তারিখে প্রায় সব গণ মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ছে যে গত ৫ আগষ্ট ২০১০, তারিখে আরেক গৃহবধূ বিলাসী আক্তার
(২৭) তার ছেলে রায়হান (৩) ও মেয়ে রজনীকে (৮) সহ গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা ।
গণ মাধ্যমে আলোড়িত না হলেও এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে এবং প্রকাশিত হচ্ছে। নিশ্চয়ই কিছু অপ্রকাশিতও থাকে। আলোড়িত দুইটি কাহিনীর ঘটনা একই। ঘটনার দুইজন নারীর স্বামীই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এবং প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের অবহেলা করে, তাদের উপর অবিচার করে, অত্যাচার করে। পরিণামে স্ত্রী হিসেবে অনন্যোপায় হয়ে সন্তানসহ আত্মহত্যা।
কেন স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত মা সন্তান সহ আত্মহত্যা করে? নিজে মরে গেলে তার অনুপস্থিতিতে তার সন্তানদের অসহায় জীবনের কথা চিন্তা করে একজন ছেলেমেয়েসহ ঘুমের বড়ি খেয়েছে আর অন্যজন ছেলেমেয়েসহ শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়েছে। পোড়া মা বিলাসী তার জবানবন্দিতে বলেছেই যে তার অনুপস্থিতিতে তার সন্তানদের দুঃখময় জীবন কল্পনা করেই সে এ ধরনের ক্রিয়াকলাপ করেছে।
দুজন নারীই আত্মহত্যা করলেও তারা ছেলেমেয়ে হত্যাকারী। কোনমতে তারা বেঁচে গেলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকারীর অভিযোগ আনা হতো। যেমন ঘটেছে লতিফার ক্ষেত্রে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার গাজীরচর ইউনিয়নের খন্দকারকান্দি গ্রামে ১৭জুলাই ২০১০ রাজমিস্ত্রি আওয়াল মিয়ার স্ত্রী লতিফা স্বামীর সাথে ঝগড়ার জের ধরে দুই মেয়ে মহিমা (৫) ও মোহনা (২) কে নিজের শাড়ির সাথে বেঁধে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। ঘটনা ক্রমে তিনজনকেই উদ্ধার করে বাজিতপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে শিশুদেরকে মৃত ঘোষণা করে ও লতিফা বেঁচে যায়। সে এখন সন্তান হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে জেলহাজতে।
প্রথমত রীতা ও বিলাসী নাম্মী নারীদ্বয় কেন ছেলেমেয়েসহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। কারণ দুজনেরই স্বামীই আইন না মেনে প্রথমা স্ত্রীর অনুমতি বিহীন বিয়ে করেছে। এতে তারা আইনের আশ্রয় নিলে তাদের স্বামীর জেল জরিমানা হতে পারত; তবে দ্বিতীয় বিয়েটি বাতিল হতো না। আর স্বাভাবিকভাবেই জেল জরিমানা হলে প্রথমা স্ত্রীর কারণে জেলখাটা স্বামী আর এ স্ত্রী নিয়ে ঘর করত না।
নিজেরা তাই অপমানিত তো বটেই, মৌলিক চাহিদা মেটানোর মত সংস্থানও তাদের নেই। গৃহবধূদ্বয়কে স্বামীর দয়ায়ই চলতে হতো। তাই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। অপমান, অসহায়ত্ব, অবিচার, অত্যাচার ( শারিরীক মানসিক উভয়ই) তাদেরকে জীবন থেকে দূরে নিয়ে যায়। বাস্তবে দেখে সে ছাড়া তার সন্তানদের আর কেউ কোথাও নেই।
স্বামী ও বড়ছেলে রেখে মা মারা গেলে প্রবাদই আছে—-
‘মা মরলে বাপ তালৈ
ভাই হয় বনের বাবুই।’
সেখানে বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকা বাবা তো তালৈ এর চেয়েও পর। পুরুষ বাঘ নিজের সন্তানদের খেয়ে ফেলে। সুস্থ সবল প্রথমা স্ত্রী ও সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করা বাবা তো বাঘের চেয়েও পৈশাচিক। এমতাবস্থায় তাদের অবস্থানে থেকে সন্তানসহ মরণকেই শ্রেয় মনে করা অবাস্তব নয়।
পরিবার ও সমাজ নারীদের অসহায় করে গড়ে তুলে বলেই দুর্বল চিত্তের নারীরা স্বামীর অপরাধের প্রতিরোধ তো দূরে থাক প্রতিবাদও না করে নিজেই দুটো অপরাধ করে বসে। প্রথমত সন্তানদের হত্যা। দ্বিতীয়ত আত্মহত্যা। ধর্ম নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় বেড়ে উঠা সব ধর্মেই আত্মহত্যা মহাপাপ জেনেও দুই গৃহবধূ এ পথকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এ থেকে মুক্তির পথ খোঁজার দায়িত্ব পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের।
নারীদের শৈশব থেকেই পুতুল খেলা দিয়ে তাকে মা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু। মায়ের কোল সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। কাজেই এ সামাজিকীকরণের ফলে, সাথে যুক্ত স্বামীর সন্তানদের প্রতি অবহেলা, মায়ের মন নিজের অনুপস্থিতিতে সন্তানের অসহায়ত্ব চিন্তা করেই এমন সহমরণের ঘটনা। একজন শিশুর দায়িত্ব শুধু মা বাবাকে নয়,পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে, সমাজকে, সর্বোপরি রাষ্ট্রকে গ্রহণ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে ও নৈতিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রীতা ও বিলাসী নিজেরা আত্মহত্যায় প্ররোচিত হলেও সন্তানসহ হবে না। আর রীতা বিলাসীদের আত্মহত্যা বন্ধের জন্য দাবী করচি বহু বিবাহ আইনকে আরও কঠোর করা ও তা প্রয়োগের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।
আর! আর ? আর রীতা বিলাসীদের গড়ে তুলতে হবে সম্পূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে যাতে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েকে সামাজিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে শক্ত মন নিয়ে মোকাবেলা করতে পারে। সর্বোপরি যাতে নারী হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে না হয় এবং হলেও নিজেই প্রতিরোধ করতে পারে।
গীতাদি,
আপনার এই লেখাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধন্যবাদ এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে তুলে আনার জন্য।
‘আর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য যদি কেউ প্রয়োজনীয় মনে করে তবে তারা নিশ্চয়ই কমন মাধ্যমে লেখাটি ছাপাবেন।’
এভাবে দায় এড়াবেন না প্লিজ ! 😕
@মাহমুদা নাসরিণ কাজল,
দায় তো এড়াতে চাই না, তবে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার না করে উপায় কি!
দিদি,
আপনার বর্নিত সংবাদগুলো নিয়ে আমার ভেতরেও অনেক কথা জমেছে। অনেক আলোড়ন হয়েছে। অনেক ভেবেছি। কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু আপনাদের মত লেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি কেবল পড়ি আর ভাবি- সব মেয়েকেই বুঝতে হবে। আপনি যেভাবে লিখেছেন সেভাবে। অন্তত যারা পড়তে পারে তাদেরকে তো অবশ্যই। যারা পড়তে পারেনা, তাদেরকেও জানাতে হবে। যারা পড়তে পারে তারা জানাবার ভার নেবে। কিন্তু কি হচ্ছে? যারা স্কুল কলেজে পড়ছে-তারা ইভ টিজিং সইতে না পেরে আত্নহত্যা করছে। যে মেয়েটি ইভ টিজিং এর বিরুদ্ধে র্যালি করলো, মানব বন্ধন করলো- সপ্তাহ না যেতেই সেও একই কারনে আত্নহত্যা করলো(১৩/০৮/২০১০ প্রথম আলো)! মেনে নিতে কষ্ট হয়। যারা ইভ টিজিং এর পর্যায় পাড়ি দিয়ে বড় হয়ে স্বামীর ঘরে যাবে তারা আবারো এহেন পরিস্থিতিতে এমন ধ্বংসাত্নক সিন্ধান্ত নেবে। বার বার কেন এসব ঘটতেই থাকবে। লেখাপড়া জানা মেয়েরাও কেন মনের দিক দিয়ে সবল ও স্বাবলম্বী হবেনা? সব মেয়েকে স্বাবলম্বী হবার মত করে গড়ে উঠতে হবে। হবেই। এসব বিষয়ে ঘরে, বিদ্যালয়ে, মিডিয়াতে, আড্ডায় আরো কাউন্সিলিং হওয়া প্রয়োজন।
কয়টা মেয়ের ইন্টারনেট দেখার সুযোগ হয়? আপনার এ লেখাটি এমন একটি কমন মাধ্যমে যাওয়া প্রয়োজন যেখান থেকে আপনার কথাগুলো সব বয়সের সবাই পড়তে পারে, জানতে পারে, বুঝতে পারে।
@মাহমুদা নাসরিণ কাজল,
আমার লেখাটি আপনাকে নাড়া দিয়েছে এবং পত্রিকার এ ধরণের খবর আপনাকে নাড়া দেয় জেনে আরেকজন সহযোদ্ধাকে পেলাম। মন্তব্য যেভাবে করলেন সেভাবেই যা নাড়া তা লিখে ফেলুন।
ইন্টারনেটে আমার লেখা পড়ে নারীর প্রতি, নারীর ইস্যুর প্রতি দুয়েকজনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেও আমার লেখা সার্থক। আর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য যদি কেউ প্রয়োজনীয় মনে করে তবে তারা নিশ্চয়ই কমন মাধ্যমে লেখাটি ছাপাবেন। আমার গন্ডি যে এখানেই সীমাবদ্ধ।
ধন্যবাদ কাজল।
@গীতা দি,
খুবই যুক্তিযুক্ত কথা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ+রাষ্ট্র এই সব বিষয়ে আশ্চর্যজনকভাবে নিরব থাকে।
@বিপ্লব রহমান,
সেই নিরবতা ইতিবাচকভাবে ভাঙতে হবে নারী পুরুষকে মিলে যৌথভাবে।
@ গীতা দাস,
নারী বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা-১ পড়েছিলাম। আজ দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। নিবন্ধের শেষে সুন্দর একটি কথা বলেছেন, সর্বোপরি যাতে নারী হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে না হয় এবং হলেও নিজেই প্রতিরোধ করতে পারে।
বাস্তবে আমরা কতটুকু নারীকে সেভাবে সাহায্য করছি? প্রতিরোধ করতে পারার মত ট্রেনিং আমরা কি দিচ্ছি? মানসিকভাবে শক্ত মন নিয়ে মোকাবিলা করবার মত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কি আমরা নিচ্ছি? মানে আমরা বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ করছি কিনা? নাকি এই কথাগুলো শুধু বক্তৃতা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছি? দেশে কিছু কিছু এনজিও নারীর পক্ষে কাজ করে বলে প্রচার করা হয়, কিন্তু বাস্তবে সেরূপ দেখা যায় না। অনেকটা সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে গেছে। কথাটাগুলো শুধু প্রতিবেদনেই থাকবে?
@মাহফুজ,
কথাগলো যাতে শুধু প্রতিবেদনেই না থাকে এ জন্যও তো সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের প্রয়োজন। মানুষকে সচেতন করার জন্য, জনমত সৃষ্টির জন্য, নারীর প্রতি , নারী ইস্যুর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভংগি পাল্টানোর জন্য। আর সব এনজিও সাইনবোর্ড সর্বস্ব নয়। অনেকেই নারীর পক্ষে , নারীকে নিয়ে, নারীর জন্য কাজ করে ।
শেষের বাক্যটি confusing মনে হচ্ছে আমার কাছে। একটু ব্যাখ্যা করলে ভাল হয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
সংক্ষেপে ব্যাখ্যা হল, স্বামী সামাজিক লজ্জা কাটিয়ে, আইনগত বাধা এড়িয়ে/ উপেক্ষা করে, নিজের পুরুষতান্ত্রিক দম্ভ ও ক্ষমতা বলে যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেই ফেলে তবে প্রথমা স্ত্রী কেন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে? সন্তানসহ আত্মহত্যা করবে? নারীরা নিজেকে গড়ে তুলবে স্বাবলম্বীভাবে, এমন স্বামীদের সাথে টেক্কা (বিভিন্নার্থে) দেবে ।
@গীতা দাস,
আমি বহুবার এই সাইটে বলেছি, আবারও বলছি- যেখানে ধর্মীয় কেতাবগুলো স্বামীকে অধিকার দেয় স্ত্রীকে নির্যাতন করতে , নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্বকে সেখানে স্বামীর বা পুরুষের সব দোষ মাফ। তাই মূল সমস্যা ধর্ম।ধর্মকে যতদিন রাষ্ট্রিয় বা সমাজ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নামিয়ে না আনা যাবে কোন আইন , কোন সেমিনার, প্রচার কাজে আসবে না। পশ্চিমা দেশ সমূহে নারীরা যে স্বাধীনতা বা অধিকার ভোগ করে তা সম্ভব হয়েছে তারা ধর্মকে রাষ্ট্রিয় বা সমাজ জীবন থেকে কার্যকর ভাবে ব্যক্তিজীবনে স্থানান্তরিত করতে পেরেছে। তা না হলে সেখানেও আমরা একই চিত্র দেখতে পেতাম।
@ভবঘুরে,
দ্বিমত পোষণ করছি। ধর্মকে রাষ্ট্রিয় বা সমাজ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নামিয়ে আনা নিয়ে নয়। তা আমি শুধু মনে প্রাণে নয়—এজন্য সংগ্রামেও প্রস্তুত।
আমার আপত্তি ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নামিয়ে আনলেও নারী নির্যাতন কমবে না। তাহলে সমাজতান্ত্রিক দেশে নারী আন্দোলন করতে হতো না।সমাজতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের নারী নেত্রীদের মধ্যে নারী বলে হতাশা থাকত না।
দুঃখিত, এখানেও আমার দ্বিমত। ধর্মের অস্তিত্ব ব্যক্তিজীবনে থাকলে গার্হস্থ্য জীবনকে নেতিবাচকভাবেই প্রভাবিত করবে। কাজেই নারীরা সেখানেও পরিপূর্ণ স্বাধীনতা বা অধিকার ভোগ করতে পারবে না এবং পারে না।
@গীতা দাস,
ধর্ম ব্যক্তিজীবনে স্থানান্তর মানে হলো তখন সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের জন্য যে অধিকার ও স্বাধীনতা নির্ধারন করে দেয় তার কিছুটা হলেও পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আইন শৃংখলা বাহিনীও তখন তা বাস্তবায়নে কিছুটা হলেও যত্নবান থাকে। বেশ কয়বার পশ্চিমা দেশ সমূহে ভ্রমনের সুযোগ হয়েছে। সেখানকার পরিবেশ দেখে শুনে যতটুকু বুঝেছি- ওখানকার মেয়েরা যে ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করে তার ১% ও আমাদের দেশের নারীরা ভোগ করে না। অবশ্য ধর্মই যে একমাত্র ফ্যাক্টর তা নয়, আর্থিক ভাবে সাবলম্বীতাও বড় একটা ফ্যাক্টর। আসলে ধর্মকে ব্যাক্তি জীবনে স্থানান্তর ও একই সাথে নারীদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলেই নারীদের সমস্যা অনেকাংশে দুর হয়ে যেত বলে আমার বিশ্বাস। আর পুরুষ মানুষরা নৃতাত্ত্বিকভাবেই নারীদের ওপর একটু কর্তৃত্ব ফলাতে চায়। সেকারনে পশ্চিমা দেশেও নারী নির্যাতন দুর্লভ ঘটনা নয়। তবে আমাদের দেশের মত ফালতু কারনে যে ভাবে নারীরা নির্যাতিত হয় তা লজ্জা জনক। জাতি হিসাবেও এটা আমাদের দীনতার পরিচয় বহন করে।
@ভবঘুরে, :yes:
@গীতা দাস,
ভবঘুরেকে একই কথা লিখে মন্তব্য যখন করবো দেখি আপনি তা বলে দিয়েছেন। আরো অনেকেই বারবার মন্তব্য করেন যে, নারীই নারীর শত্রু, নারীই নারীবাদী আন্দোলনের পথে বাঁধার সৃস্টি করেন, নারী ইচ্ছে করেই ধর্মের বেড়াজালে নিজেকে বন্দী করে রাখতে ভালবাসে, তারা ইচ্ছে করেই হিজাব-বোরখার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চায়না ইত্যাদি। আমি এর কোনটার সাথেই একমত নই। উদাহরণ সহ লিখতে গেলে সাতখন্ড রামায়ন লিখতে হবে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই- পাশাপাশি দুইটা গ্রোসারি দোকান, দুটোতেই রুটি বা ব্রেড একই দামে পাওয়া যায়। একটার মালিক শ্যাম বর্ণের মুসলমান আর একটার মালিক অমুসলিম বা শ্বেত বর্ণের ইংরেজ। একজন বাঙ্গালি মুসলমান কিশোরী বা মহিলাকে যদি বলেন, দোকানের যে কোন একটি থেকে ব্রেড নিয়ে আসার জন্যে, দেখবেন সে অমুসলিম দোকানেই যাবে। কারণটা কী?
যে মুসলমান মহিলা বাঙ্গালি পাড়ায় পর্দা করেন, অবাঙ্গালি যায়গায় তা করেন না কেন? রাস্তায় চলার পথে যে মহিলা শ্যাম বর্ণের একটা পুরুষ দেখে হঠাৎ করেই শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে নিলেন, অথচ শ্বেত বর্ণের হাজারটা পুরুষ দেখেও মোটেই তা করলেন না কেন? এরা আল্লাহকে ডরায়, না মানুষকে?
আমাদের শহরের সেকন্ডারি স্কুলে (১১-১৫বৎসর বয়স) প্রায় ১৫০জন পাকিস্তানি, বাংলাদেশি মুসলমান ছাত্রী আছে। এদের বেশিরভাগ ছাত্রী ঘর থেকে স্কুলে যাওয়া আসার অর্ধেক পথে হিজাব পরে আর খোলে। হিপক্রাসির এই পথ ধরে যারা বড় হয়েছে, অন্যভাবে বললে ভন্ডামির এই পথে যাদেরকে বড় করা হয়েছে, তারা উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ডিপ্লোমা, ডিগ্রি, পিএইচডি করায় আর না করায় তাদের সংস্কৃতির কোন পরিবর্তন হবেনা। পাশাপাশি আরো একটি সেকেন্ডারি স্কুল আছে, সেখানে হিজাব পরা নিষেধ, অথচ সেখানেও বাংলাদেশি সহ অন্যান্য দেশের মুসলমান আছে, কেউ হিজাব পরেনা। সুতরাং একতরফাভাবে ধর্মকে দোষ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবেনা, আর ধর্মকে এত সহজে রাস্ট্র থেকে বিদায় করাও সম্ভব নয়। সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, সরকারকে চাপে রাখতে হবে, কর্তৃত্বের সমতা, কাজের সমতা, শ্রমমূল্যের সমতা, শিক্ষায় সমতার দাবিতে। তা হোক সেমিনার, প্রদর্শনী, সভা মিছিল, এনজিও, অথবা মানব বন্ধনের মাধমে। নারী যেদিন তার ন্যায্য ক্ষমতা ফিরে পাবে, সেদিন পুরুষকে না বলেই হিজাব নিকাব পর্দা ছিড়ে ফেলবে। আল্লাহর দোহাই কেউ খালেদা-হাসিনার উপমা দিবেন না, সে আরেক কাহিনি, ভিন্ন বিষয়।
@আকাশ মালিক, :yes:
@গীতা দাস,
এমন চমৎকার লেখাটা আমি একটু দেরী করে পড়লাম।আসলে আমি একটানা পিসিতে বসা এখন ও সম্ভব হয়ে ওঠেনি তাই গীতা দাশ এর কাছে মাফ চেয়ে নিলাম। আপনি এমন এমন বিষয় উল্লেখ করেছেন যা খুবই দরকারি। অথচ এর থেকে মুক্তির পথ কী আসলে খোলা আছে?কতো কিছু লেখা হচ্ছে তবু ভালো কিছু দেখা যাচ্ছেনা। এমন সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে একটা- :rose2:
@ভবঘুরে,
এ ক ম ত। :yes:
সামাজিক উৎপাদন কর্তৃত্ব নর ও নারীর মধ্যে যার হাতে ন্যস্ত থাকে তিনিই হন সমাজ নিয়ন্ত্রনকারী । ঈশ্বর, ভগবান, গড বা আল্লাহ সমাজ নিয়ন্ত্রনকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী চলেন । নর ও নারীর সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সামাজিক উৎপাদন কর্তৃত্বের সমতা ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
সহমত